أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১২৬ ) [** الذين كفروا وصدوا عن سبيل اللها যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিয়েছে:- কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা :- *আল্লাহকে সাহায্য করা বলতে কী বুঝায় :-] www.motaher21.net সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। পারা:২৬ ১-৯ নং আয়াত:- তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১২৬ )
[** الذين كفروا وصدوا عن سبيل اللها
যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিয়েছে:-
কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা :-
*আল্লাহকে সাহায্য করা বলতে কী বুঝায় :-]
www.motaher21.net
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। পারা:২৬
১-৯ নং আয়াত:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -১
اَلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ صَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَضَلَّ اَعۡمَالَہُمۡ ﴿۱﴾
যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিয়েছে আল্লাহ তাদের সমস্ত কাজ-কর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -২
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ اٰمَنُوۡا بِمَا نُزِّلَ عَلٰی مُحَمَّدٍ وَّ ہُوَ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّہِمۡ ۙ کَفَّرَ عَنۡہُمۡ سَیِّاٰتِہِمۡ وَ اَصۡلَحَ بَالَہُمۡ ﴿۲﴾
আর যারা ঈমান এনেছে নেক কাজ করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে৪ তা মেনে নিয়েছে- বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা- আল্লাহ‌ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন৫ এবং তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৩
ذٰلِکَ بِاَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوا اتَّبَعُوا الۡبَاطِلَ وَ اَنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّبَعُوا الۡحَقَّ مِنۡ رَّبِّہِمۡ ؕ کَذٰلِکَ یَضۡرِبُ اللّٰہُ لِلنَّاسِ اَمۡثَالَہُمۡ ﴿۳﴾
এটা এজন্যে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে এবং যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের রবের প্রেরিত সত্যের অনুসরণ করেছে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্তসমূহ উপস্থাপন করেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৪
فَاِذَا لَقِیۡتُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فَضَرۡبَ الرِّقَابِ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَثۡخَنۡتُمُوۡہُمۡ فَشُدُّوا الۡوَثَاقَ ٭ۙ فَاِمَّا مَنًّۢا بَعۡدُ وَ اِمَّا فِدَآءً حَتّٰی تَضَعَ الۡحَرۡبُ اَوۡزَارَہَا ۬ۚ۟ۛ ذٰؔلِکَ ؕۛ وَ لَوۡ یَشَآءُ اللّٰہُ لَانۡتَصَرَ مِنۡہُمۡ وَ لٰکِنۡ لِّیَبۡلُوَا۠ بَعۡضَکُمۡ بِبَعۡضٍ ؕ وَ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَلَنۡ یُّضِلَّ اَعۡمَالَہُمۡ ﴿۴﴾
অতএব এসব কাফেরের সাথে যখনই তোমাদের মোকাবিলা হবে তখন প্রথম কাজ হবে তাদেরকে হত্যা করা। এভাবে তোমরা যখন তাদেরকে আচ্ছাতম পর্যুদস্ত করে ফেলবে তখন বেশ শক্ত করে বাঁধো। এরপর (তোমাদের ইখতিয়ার আছে) হয় অনুকম্পা দেখাও, নতুবা মুক্তিপণ গ্রহণ করো যতক্ষণ না যুদ্ধবাজরা অস্ত্র সংবরণ করে। এটা হচ্ছে তোমাদের করণীয় কাজ। আল্লাহ‌ চাইলে নিজেই তাদের সাথে বুঝাপড়া করতেন। কিন্তু (তিনি এ পন্থা গ্রহণ করেছেন এ জন্য) যাতে তোমাদেরকে পরস্পরের দ্বারা পরীক্ষা করেন। আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হবে আল্লাহ‌ কখনো তাদের আমলসমূহ ধ্বংস করবেন না।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৫
سَیَہۡدِیۡہِمۡ وَ یُصۡلِحُ بَالَہُمۡ ۚ﴿۵﴾
তিনি তাদের পথপ্রদর্শন করবেন। তাদের অবস্থা শুধরে দিবেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৬
وَ یُدۡخِلُہُمُ الۡجَنَّۃَ عَرَّفَہَا لَہُمۡ ﴿۶﴾
এবং তাদেরকে সেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পরিচয় তিনি তাদেরকে আগেই অবহিত করেছেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৭
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَنۡصُرُوا اللّٰہَ یَنۡصُرۡکُمۡ وَ یُثَبِّتۡ اَقۡدَامَکُمۡ ﴿۷﴾
হে মুমিনগণ ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় করবেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৮
وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فَتَعۡسًا لَّہُمۡ وَ اَضَلَّ اَعۡمَالَہُمۡ ﴿۸﴾
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে শুধু ধ্বংস। আল্লাহ তাদের কাজ-কর্ম পণ্ড করে দিয়েছেন।
সূরা:৪৭- মুহাম্মাদ। আয়াত -৯
ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ کَرِہُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاَحۡبَطَ اَعۡمَالَہُمۡ ﴿۹﴾
এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল করে দিয়েছেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
(৪৭-মুহাম্মাদ) : নামকরণ:

সূরার ২ নম্বর আয়াতের অংশ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ এটি সেই সূরা যার মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান নামটি উল্লিখিত হয়েছে। এ ছাড়া এ সূরার আরো একটি বিখ্যাত নাম “কিতাল”। এ নামটি ২০নং আয়াতের وَذُكِرَ فِيهَا الْقِتَالُ বাক্যটি থেকে গৃহীত হয়েছে।
(৪৭-মুহাম্মাদ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

সূরার বিষয়বস্তু সাক্ষ্য দেয় যে, সূরাটি হিজরতের পরে এমন এক সময় মদীনায় নাযিল হয়েছিল যখন যুদ্ধ করার নির্দেশ হয়েছিল বটে কিন্তু কার্যত যুদ্ধ তখনও শুরু হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ পরে ৮ নং টীকায় পাওয়া যাবে।

(৪৭-মুহাম্মাদ) : ঐতিহাসিক পটভূমি :

যে সময় এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল সে সময়ের পরিস্থিতি ছিল এই যে, বিশেষ করে পবিত্র মক্কা নগরীতে এবং সাধারণভাবে গোটা আরব ভূমির সর্বত্র মুসলমানদেরকে জুলুম নির্যাতনের লক্ষ্যস্থল বানানো হচ্ছিলো এবং তাদের জীবন অত্যন্ত দূর্বিসহ করে দেয়া হয়েছিলো। মুসলমানগণ সমস্ত অঞ্চল থেকে এসে মদীনার নিরাপদ আশ্রয়ে জড়ো হয়েছিল। কিন্তু কুরাইশ গোত্রের কাফেররা এখানেও তাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিতে প্রস্তুত ছিল না। মদীনার ক্ষুদ্র জনপদটি চারদিক থেকেই কাফেরদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়েছিল। তারা এটিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল। এ পরিস্থিতিতে মুসলমানদের জন্য মাত্র দুটি পথই খোলা ছিল। হয় তারা দ্বীনে হকের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজই শুধু নয় বরং আনুগত্য ও অনুসরণ পরিত্যাগ করে জাহেলিয়াতের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। নয়তো জীবন বাজি রেখে প্রাণপণে লড়াই করবে এবং চিরদিনের জন্য এ বিষয়ের ফায়সালা করে দেবে যে, আরবের মাটিতে ইসলাম থাকবে না জাহেলিয়াত থাকবে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে দৃঢ় সংকল্পের পথ দেখিয়েছেন যেটি ঈমানদারদের একমাত্র পথ। তিনি সূরা হজ্বে (আয়াত ৩৯) প্রথমে তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছেন এবং পরে সূরা বাকারায় (আয়াত ১৯০) যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সে সময় সবাই জানতো যে, এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধের অর্থ কী? মদীনায় ঈমানদারদের একটা ক্ষুদ্র দল ছিল যার যুদ্ধ করার মত পুরো এক হাজার যোদ্ধা সংগ্রহ করার সামর্থও ছিল না। অথচ তাদেরকেই তরবারি নিয়ে সমগ্র আরবের জাহেলিয়াতের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। তাছাড়া যে জনপদে আশ্রয়হীন ও সহায় সম্বলহীন শত শত মুহাজির এখনো পুরোপুরি পুনর্বাসিত হতে পারেনি, আরবের অধিবাসীরা চারদিক থেকে আর্থিক বয়কটের মাধ্যমে যার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল এবং অভুক্ত থেকে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করাও যার পক্ষে কঠিন ছিল এখন তাকেই লড়াই করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
(৪৭-মুহাম্মাদ) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :

এহেন পরিস্থিতিতে সূরাটি নাযিল করা হয়েছিল। ঈমানদারদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা এবং এ বিষয়ে প্রাথমিক পথনির্দেশনা দেয়াই এর আলোচ্য ও বক্তব্য। এ দিকটি বিচার করে এর নাম “সূরা কিতাল”ও রাখা হয়েছে। এতে ধারাবাহিকভাবে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরার প্রথমেই বলা হয়েছে যে, এখন দু’টি দলের মধ্যে মোকাবিলা হচ্ছে। এ দু’টি দলের মধ্যে একটি দলের অবস্থান এই যে, তারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অপর দলটির অবস্থান হলো, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থকে তাঁর বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যে সত্য নাযিল হয়েছিল তা তারা মেনে নিয়েছে। এখন আল্লাহ তা’আলার সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হলো, প্রথমোক্ত দলটির সমস্ত চেষ্টা-সাধনা ও কাজ-কর্ম তিনি নিষ্ফল করে দিয়েছেন এবং শেষোক্ত দলটির অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন।

এরপর মুসলমানদের সামরিক বিষয়ে প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর পথে কুরবানী পেশ করার জন্য তাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাদের এ বলে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, ন্যায় ও সত্যের পথে তাদের প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না। বরং দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই তারা ক্রমান্বয়ে এর অধিক ভাল ফল লাভ করবে।

তারপর কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত। ঈমানদারদের বিরুদ্ধে তাদের কোন প্রচেষ্টাই কার্যকর হবে না। তারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত খারাপ পরিণামের সম্মুখীন হবে। তারা আল্লাহর নবীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়ে মনে করেছিলো যে, তারা বড় রকমের সফলতা লাভ করেছে। অথচ এ কাজ করে তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেরা নিজেদের জন্য বড় রকমের ধ্বংস ডেকে এনেছে।

এরপর মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করে কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বে এসব মুনাফিক নিজেদেরকে বড় মুসলমান বলে জাহির করতো। কিন্তু এ নির্দেশ আসার পরে তারা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ চিন্তায় কাফেরদের সাথে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেছিল যাতে তারা নিজেদেরকে যুদ্ধের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাদেরকে স্পষ্টভাবে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, যারা আল্লাহ এবং তাঁর দ্বীনের সাথে মুনাফিকীর আচরণ করে তাদেরকে কোন আমলই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। এখানে যে মৌলিক প্রশ্নে ঈমানের দাবীদার প্রতিটি ব্যক্তির পরীক্ষা হচ্ছে তা হলো, সে ন্যায় ও সত্যের সাথে আছে না বাতিলের সাথে আছে? তার সমবেদনা ও সহানুভূতি মুসলমান ও ইসলামের প্রতি না কাফের ও কুফরীর প্রতি। সে নিজের ব্যক্তি সত্তা ও স্বার্থকেই বেশী ভালবাসে না কি যে ন্যায় ও সত্যের প্রতি ঈমান আনার দাবি সে করে তাকেই বেশী ভালবাসে? এ পরীক্ষায় যে ব্যক্তি মেকী প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে তার নামায, রোযা এবং যাকাত কোন প্রতিদান লাভের উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া তো দূরের কথা সে আদৌ ঈমানদারই নয়।

অতপর মুসলমানদের উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন নিজেদের সংখ্যাল্পতা ও সহায় সম্বলহীনতা এবং কাফেরদের সংখ্যাধিক্য ও সহায় সম্বলের প্রাচুর্য দেখে সাহস না হারায় এবং তাদের কাছে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ না করে। এতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের দু:সাহস আরো বেড়ে যাবে। বরং তারা যেন আল্লাহর ওপর নির্ভর করে বাতিলকে রুখে দাঁড়ায় এবং কুফরের এ আগ্রাসী শক্তির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আল্লাহ মুসলমানদের সাথে আছেন। তারাই বিজয়ী হবে এবং তাদের সাথে সংঘাতে কুফরী শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।

সর্বশেষে মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার আহবান জানানো হয়েছে। যদিও সে সময় মুসলমানদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। কিন্তু সামনে প্রশ্ন ছিল এই যে, আরবে ইসলাম এবং মুসলমানরা টিকে থাকবে কি থাকবে না। এ প্রশ্নের গুরুত্ব ও নাজুকতার দাবি ছিল এই যে, মুসলমানরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের দ্বীনকে কুফরের আধিপত্যের হাত থেকে রক্ষা করার এবং আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ী করার জন্য তাদের জীবন কুরবানী করবে এবং যুদ্ধ প্রস্তুতিতে নিজেদের সমস্ত সহায় সম্পদ যথা সম্ভব অকৃপণভাবে কাজে লাগাবে। সুতরাং মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, এ মুহুর্তে যে ব্যক্তি কৃপণতা দেখাবে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না, বরং নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ মানুষের মুখাপেক্ষী নন। কোন একটি দল বা গোষ্ঠী যদি তার দ্বীনের জন্য কুরবানী পেশ করতে টালবাহানা করে তাহলে আল্লাহ তাদের অপসারণ করে অপর কোন দল বা গোষ্ঠীকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।

# যারা হযরত মুহাম্মাদ ﷺ যে শিক্ষা ও পথনির্দেশনা পেশ করেছেন তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে।
# মূল আয়াতে صَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ বলা হয়েছে। صَد শব্দটি আরবী ভাষায় সকর্মক ও অকর্মক উভয় ক্রিয়াপদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। তাই এ আয়াতাংশের একটি অর্থ হচ্ছে, তারা নিজেরা আল্লাহর পথে আসা থেকে বিরত থেকেছে এবং আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা অন্যদের আল্লাহর পথে আসতে বাধা দিয়েছে। অন্যদের আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়ার বহু উপায় ও পন্থা আছে। এর একটি পন্থা হলো, জোরপূর্বক কাউকে ঈমান গ্রহণ থেকে বিরত রাখা। দ্বিতীয় পন্থা হলো ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর এমন জুলুম-নির্যাতন চালানো যে, তার পক্ষে ঈমানের ওপর টিকে থাকা এবং এরূপ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে অন্যদের ঈমান গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয় পন্থা হলো, সে নানা উপায়ে দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এবং হৃদয় মনে এমন সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করবে যার দ্বারা মানুষ এ দ্বীন সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করবে। এছাড়াও প্রত্যেক কাফের ব্যক্তিই এ অর্থে আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে, সে তার সন্তান-সন্ততিকে কুফরী রীতিনীতি অনুসারে লালন-পালন করে এবং এ কারণে তার ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যায়। একইভাবে প্রতি কুফরী সমাজ আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টিকারী একটি জগদ্দল পাথরের মত। কারণ, এ সমাজ তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দ্বারা তার সমাজ ব্যবস্থা ও রীতিনীতি এবং সংকীর্ণতা দ্বারা ন্যায় ও সত্য দ্বীনের প্রসারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
# মূল আয়াতে أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের কাজ-কর্মকে বিপথগামী করে দিয়েছেন, পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন ধ্বংস বা পণ্ড করে দিয়েছেন। একথাটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ বহন করে। এর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে তাদের চেষ্টা ও শ্রম সঠিক পথে ব্যয়িত হওয়ার তাওফীক ছিনিয়ে নিয়েছেন। এখন থেকে যে কাজই তারা করবে তা ভ্রান্ত উদ্দেশ্যে ভ্রান্ত পন্থায়ই করবে। আর তাদের সকল চেষ্টা-সাধনা হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীর পথেই ব্যয়িত হবে। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তারা নিজেদের ধারণায় যে কাজ ভাল মনে করে আঞ্জাম দিয়ে আসছে যেমনঃ কা’বা ঘরের তত্ত্বাবধান, হাজীদের খেদমত, মেহমানদের আপ্যায়ন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা এবং অনুরূপ আরো যেসব কাজকে আরবে ধর্মীয় সেবা এবং উন্নত নৈতিক কাজের মধ্য গণ্য করা হতো, তা সব আল্লাহ তা’আলা ধ্বংস করে দিয়েছেন। তারা তার কোন প্রতিদান ও সওয়াব পাবে না। কারণ, যখন তারা আল্লাহর তাওহীদ এবং শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদতের পথ অবলম্বন করতে অস্বীকৃতি জানায় আর অন্যদেরকেও এ পথে আসতে বাধা দেয় তখন তাদের কোন কাজই আল্লাহর কাছে গৃহীত হতে পারে না। তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, ন্যায় ও সত্যের পথকে বন্ধ করতে এবং নিজেরদের কুফরভিত্তিক ধর্মকে আরবের বুকে জীবিত রাখার জন্য তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যে চেষ্টা-সাধনা চালাচ্ছে আল্লাহ তা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এখন তাদের সমস্ত কৌশল একটি লক্ষহীন তীরের মত প্রমাণিত হয়েছে। এসব কৌশল দ্বারা তারা কখনো নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে না।
# الَّذِينَ آمَنُوا বলার পর آمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ বলার প্রয়োজন আর থাকে না। কেননা, ঈমান আনয়ন করার মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিলকৃত শিক্ষাসমূহের প্রতি ঈমান পোষণ করা আপনা থেকেই অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আলাদাভাবে বিশেষ করে এর উল্লেখ করা হয়েছে এ জন্য যে, নবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠানোর পর কোন ব্যক্তি যতক্ষণ না তাঁকে এবং তাঁর আনিত শিক্ষাসমূহকে মেনে না নেবে ততক্ষণ আল্লাহ, আখেরাত, পূর্ববর্তী নবী-রাসূল ও পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ সে যতই মেনে চলুক না কেন তা তার জন্য কল্যাণকর হবে না। একথাটা স্পষ্টভাবে বলা জরুরী ছিল। কারণ, হিজরতের পরে মদীনায় এমন সব লোকের সাথে আদান-প্রদান ও উঠাবসা করতে হচ্ছিলো যারা ঈমানের আর সব আবশ্যকীয় বিষয় মানলেও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলো।
# এর দু’টি অর্থঃ একটি হচ্ছে, তাদের দ্বারা জাহেলী যুগে যে গোনাহর কাজ সংঘটিত হয়েছিল আল্লাহ তাদের হিসেব থেকে বাদ দিয়েছেন। ঐ সব গোনাহর কাজের জন্য এখন আর তাদের কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আকীদা, বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, নৈতিক চরিত্র এবং কাজ-কর্মের যে পঙ্কিলতার মধ্যে তরা ডুবে ছিল আল্লাহ তা’আলা তা থেকে তাদেরকে মুক্ত করেছেন। এখন তাদের মন-মস্তিষ্ক পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। তাদের অভ্যাস ও আচার-আচরণ পরিবর্তিত হয়েছে এবং তাদের জীবন, চরিত্র ও কর্মকাণ্ডও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন তাদের মধ্যে জাহেলিয়াতের পরিবর্তে আছে ঈমান এবং দুষ্কৃতির পরিবর্তে আছে সুকৃতি।
# একথাটিরও দুটি অর্থ। একটি অর্থ হচ্ছে, অতীতের অবস্থা পরিবর্তিত করে আল্লাহ‌ তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথে নিয়ে এসেছেন এবং তাদের জীবনকে সুবিন্যস্ত ও সুসজ্জিত করে দিয়েছেন। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত তারা যে দুর্বল, অসহায় ও নির্যাতিত অবস্থার মধ্যে ছিল তা থেকে আল্লাহ‌ তা’আলা তাদেরকে বের করে এনেছেন। এখন তিনি তাদের জন্য এমন অবস্থা সৃষ্টি করে দিয়েছেন যে, তারা জুলুমের শিকার হওয়ার পরিবর্তে জালেমের মোকাবিলা করবে, শাসিত হওয়ার পরিবর্তে নিজেরাই স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করবে এবং বিজিত না হয়ে বিজয়ী হয়ে থাকবে।
# মূল আয়াতাংশ হচ্ছে, كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ । অর্থাৎ “আল্লাহ তা’আলা এভাবে মানুষের জন্য তাদের উদাহরণ পেশ করেন।” এটি এ আয়াতাংশের শাব্দিক অনুবাদ। কিন্তু শাব্দিক এ অনুবাদ দ্বারা এর প্রকৃত অর্থ স্পষ্ট হয় না। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এভাবে আল্লাহ‌ তা’আলা উভয় দলকে তাদের অবস্থান সঠিকভাবে বলে দেন। তাদের একদল বাতিলের অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর। তাই আল্লাহ‌ তা’আলা তাদের সমস্ত চেষ্টা-সাধনাকে নিষ্ফল করে দিয়েছেন। কিন্তু অপর দল ন্যায়ও সত্যের আনুগত্য গ্রহণ করেছে। তাই আল্লাহ‌ তাদেরকে সমস্ত অকল্যাণ থেকে মুক্ত করে তাদের অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন।
# এ আয়াতের শব্দাবলী এবং যে পূর্বাপর প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হয়েছে তা থেকেও একথা স্পষ্ট জানা যায় যে, আয়াতটি যুদ্ধের নির্দেশ আসার পর কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে নাযিল হয়েছিল। “যখন কাফেরদের সাথে তোমাদের মোকাবিলা হবে” কথাটিও ইঙ্গিত দেয় যে, তখনও মোকাবিলা হয়নি বরং মোকাবিলা হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পূর্বাহ্ণেই দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যে সময় সূরা হজ্জের ৩৯ আয়াতে এবং সূরা বাকারার ১৯০ আয়াতে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং যার কারণে ভয়ে ও আতংকে মদীনার মুনাফিক ও দুর্বল ঈমানের লোকদের অবস্থা দাঁড়িয়েছিল এই যে, মৃত্যু যেন তাদের মাথার ওপর এসে হাজির হয়েছে, ঠিক সেই সময়ই যে, এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল তা এর ২০ আয়াত থেকেই প্রমাণিত হয়।

তাছাড়া সূরা আনফালের ৬৭-৬৯ আয়াতগুলো থেকেও এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, এ আয়াতটি বদর যুদ্ধের আগেই নাযিল হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছেঃ “শত্রুকে যুদ্ধে উচিত মত শিক্ষা দেয়ার আগেই নবীর হাতে তারা বন্দী হবে এমন কাজ কোন নবীর জন্য শোভনীয় নয়। তোমরা পার্থিব স্বার্থ কামনা করো। কিন্তু আল্লাহর বিচার্য বিষয় হচ্ছে আখেরাত। আল্লাহ বিজয়ী ও জ্ঞানী। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি আগেই লিপিবদ্ধ না থাকতো তাহলে তোমরা যা নিয়েছো সে জন্য তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হতো। সুতরাং যে অর্থ তোমরা অর্জন করেছো তা খাও। কারণ, তা হালাল ও পবিত্র।”

এ বাক্যটি এবং বিশেষ করে এর নিচে দাগ টানা বাক্যাংশ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এক্ষেত্রে যে কারণে তিরস্কার করা হয়েছে তা হচ্ছে বদর যুদ্ধে শত্রুদেরকে চরম শিক্ষা দেয়ার আগেই মুসলমানরা শত্রুদের লোকজনকে বন্দী করতে শুরু করেছিল। অথচ যুদ্ধের পূর্বে সূরা মুহাম্মাদে তাদেরকে যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তা হচ্ছেঃ “তোমরা যখন তাদেরকে আচ্ছামত পদদলিত করে ফেলবে তখন বন্দীদের শক্ত করে বাঁধবে।” তা সত্ত্বেও সূরা মাহাম্মাদে যেহেতু মুসলমানদেরকে বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ নেয়ার অনুমতি মোটের ওপর দেয়া হয়েছিল তাই বদর যুদ্ধের বন্দীদের নিকট থেকে যে অর্থ নেয়া হয়েছিল আল্লাহ তা’আলা তা হালাল ঘোষণা করলেন এবং তা গ্রহণ করার জন্য মুসলমানদের শাস্তি দিলেন না। “যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আগেই লিপিবদ্ধ না থাকতো” কথাটি স্পষ্টত এ বিষয়ের প্রতিই ইঙ্গিত দান করে যে, এ ঘটনার পূর্বেই কুরআন মজীদে মুক্তিপণ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। একথাটিও স্পষ্ট যে, কুরআনের সূরা মুহাম্মাদ ছাড়া এমন আর কোন আয়াত নেই যেখানে এ নির্দেশ আছে। তাই একথা মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায়ান্তর নেই যে, এ আয়াতটি সূরা আনফালের পূর্বোল্লিখিত আয়াতের আগে নাযিল হয়েছিল। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন। সুরা আনফালের ব্যাখ্যা, টীকা ৪৯ )। এটি কুরআন মজীদের সর্বপ্রথম আয়াত যাতে যুদ্ধের আইন-কানুন সম্পর্কে প্রাথমিক দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ থেকে যেসব বিধি-বিধান উৎসারিত হয় এবং সে বিধি-বিধান অনুসারে রসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবা কিরাম যেভাবে আমল করেছেন এবং ফিকাহবিদগণ এ আয়াত ও সুন্নাতের আলোকে গবেষণার ভিত্তিতে যেসব হুকুম-আহকাম রচনা করেছেন তার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপঃ

একঃ যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য থাকে শত্রুর সামরিক শক্তি ধ্বংস করা যাতে তার যুদ্ধ করার ক্ষমতা না থাকে এবং যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে শত্রুর লোকজনকে বন্দী করতে লেগে যাওয়া অনুচিত। শত্রু সেনাদেরকে যুদ্ধবন্দী করার প্রতি মনোযোগ দেয়া কেবল তখনই উচিত যখন শত্রুর শক্তির আচ্ছামত মূলোৎপাটন হবে এবং যুদ্ধের ময়দানে তাদের কেবল মুষ্টিমেয় কিছু লোকই অবশিষ্ট থাকবে। প্রারম্ভেই মুসলমানদেরকে এ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল যাতে তারা মুক্তিপণ লাভ অথবা ক্রীতদাস সংগ্রহের লোভে পড়ে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলে না বসে।

দুইঃ যুদ্ধে যারা গ্রেফতার হবে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের ইখতিয়ার আছে। তোমরা ইচ্ছা করলে, দয়াপরবশ হয়ে তাদের মুক্তি দাও অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দাও। এ থেকে এ সাধারণ বিধানের উৎপত্তি হয় যে, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করা যাবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হাসান বসরী, আতা এবং হাম্মাদ এ আইনটিকে অবিকল এরূপ সর্বব্যাপী ও শর্তহীন আইন হিসেবেই গ্রহণ করেছেন এবং তা যথাস্থানে সঠিকও বটে। তারা বলেনঃ যুদ্ধরত অবস্থায় মানুষকে হত্যা করা যেতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে এবং বন্দীরা আমাদের দখলে চলে আসলে তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। ইবনে জারীর এবং আবু বকর জাসসাস বর্ণনা করেছেন যে হাজ্জাজ ইবনে ইউসূফ যুদ্ধ বন্দীদের একজনকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের (রা.) হাতে দিয়ে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং এ আয়াত পড়ে বললেনঃ আমাদেরকে বন্দী অবস্থায় কাউকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। ইমাম মুহাম্মাদ আস সিয়ারুল কাবীর গ্রন্থে এ বিষয়ে একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে আমের হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে (রা.) একজন যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এ যুক্তির ভিত্তিতেই সেই নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করেছিলেন।

তিনঃ কিন্তু এ আয়াতে যেহেতু হত্যা করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়নি তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর এ নির্দেশের অভিপ্রায় বুঝেছেন এই যে, যদি এমন কোন বিশেষ কারণ থাকে যার ভিত্তিকে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক কোন বন্দী অথবা কিছু সংখ্যক বন্দীকে হত্যা করা জরুরী মনে করেন তবে তিনি তা করতে পারেন। এটা কোন স্বাভাবিক ব্যাপকভিত্তিক নিয়ম-বিধি নয়, বরং একটি ব্যতিক্রমী নিয়ম-বিধি যা কেবল অনিবার্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই কাজে লাগানো হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বদর যুদ্ধের বন্দীদের মধ্য থেকে রসূলুল্লাহ ﷺ শুধু উকবা ইবনে আবী ম’আইত এবং নাদ্বর ইবনে হারেসকে হত্যা করেছিলেন। ওহুদ যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে শুধু কবি আবু আযযাকে হত্যা করেছিলেন। বনী কুরাইযা গোত্রের নিজেরাই নিজেদেরকে হযরত সা’দ ইবনে মু’আযের সিদ্ধান্তের ওপর সোপর্দ করেছিল এবং তাদের নিজেদের সমর্থিত বিচারকের রায় ছিল এই যে, তাদের পুরুষদের হত্যা করতে হবে, তাই তিনি তাদের হত্যা করিয়েছিলেন। খায়বার যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে শুধু কিনানা ইবনে আবীল হুকাইককে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ সে বিশ্বাসঘাকতা করেছিল। মক্কা বিজয়ের পরে সমস্ত মক্কাবাসীর মধ্য থেকে শুধু কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তাদের মধ্যে যে-ই বন্দী হবে তাকেই হত্যা করতে হবে। এ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোন যুদ্ধবন্দী হত্যা করা কখনো নবীর ﷺ কর্মনীতি ছিল না। আর খোলাফায়ে রাশেদীনেরও কর্মধারা এরূপ ছিল। তাঁদের শাসন যুগেও যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করার দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়। আর দু একটি দৃষ্টান্ত থাকলেও নির্দিষ্ট কোন কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছিল-কেবল যুদ্ধবন্দী হবার করণে নয়। হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীযও তাঁর গোটা খিলাফত যুগে শুধু একজন যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করেছিলেন। এর কারণ ঐ ব্যক্তি মুসলমানদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল। এ কারণেই অধিকাংশ ফিকাহবিদ এ মত সমর্থন করেছেন যে, ইসলামী সরকার প্রয়োজন মনে করলে বন্দীদের হত্যা করতে পারেন। তবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের। যাকে ইচ্ছা হত্যা করার অধিকার কোন সৈনিকেরই নেই। তবে বন্দী যদি পালিয়ে যাওয়ার কিংবা তার কোন প্রকার কুমতলবের আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তাহলে যিনি এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন তিনি তাকে হত্যা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ইসলামী ফিকাহবিদগণ আরো তিনটি বিষয় পরিষ্কার করে বর্ণনা করেছেন। এক, বন্দী যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে না। দুই, বন্দীকে ততক্ষণ পর্যন্ত হত্যা করা যাবে যতক্ষণ সে সরকারের হাতে থাকবে। বণ্টন বা বিক্রির মাধ্যমে সে যদি অন্য কারো মালিকানাভুক্ত হয়ে যায় তাহলে আর তাকে হত্যা করা যাবে না। তিন, বন্দীকে হত্যা করতে হলে সোজাসুজি হত্যা করতে হবে। কষ্ট দিয়ে হত্যা করা যাবে না।

চারঃ যুদ্ধবন্দীদের সম্পর্কে সাধারণভাবে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, হয় তাদের প্রতি দয়া করো নয় তো মুক্তিপণের আদান প্রদান করো। ইহসানের মধ্যে চারটি জিনিস অন্তর্ভুক্ত। এক, বন্দী থাকা অবস্থায় তার সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। দুই, হত্যা বা স্থায়ীভাবে বন্দী করার পরিবর্তে তাকে দাস বানিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। তিন, জিযিয়া আরোপ করে তাকে জিম্মী অর্থাৎ নিরাপত্তা প্রাপ্ত বানিয়ে নিতে হবে। চার, কোন বিনিময় ছাড়াই তাকে মুক্ত করে দিতে হবে। মুক্তিপণ গ্রহণের তিনটি পন্থা আছে। এক, অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেয়া। দুই, মুক্তি দানের শর্ত হিসেবে বিশেষ কোন সেবা গ্রহণ করার পর মুক্তি দেয়া। তিন, শত্রুদের হাতে বন্দী নিজের লোকদের সাথে বিনিময় করা। এসব বিবিধ পন্থা অনুসারে নবী ﷺ ও সাহাবায়ে কিরাম বিভিন্ন সময়ে সুযোগ মত আমল করেছেন। আল্লাহর দেয়া শরীয়তী বিধান ইসলামী সরকারকে কোন একটি মাত্র উপায় ও পন্থার অনুসরণ বাধ্যতামূলক করে দেয়নি। সরকার যখন যে উপায় ও পন্থাটিকে সর্বাধিক উপযুক্ত মনে করবে সে পন্থা অনুসারে কাজ করতে পারে।

পাঁচঃ নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কিরামের (রা.) আচরণ দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, একজন যুদ্ধবন্দী যতক্ষণ সরকারের হাতে বন্দী থাকবে ততক্ষণ তার খাদ্য, পোশাক ও অসুস্থ বা আহত হলে চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। বন্দীদের ক্ষুধার্ত ও বস্ত্রহীন রাখা কিংবা তাদেরকে শাস্তি দেয়ার কোন বৈধতা ইসলামী শরীয়তে নেই। বরং এর বিপরীত অর্থাৎ উত্তম আচরণ এবং বদান্যতামূলক ব্যবহার করার নির্দেশ যেমন দেয়া হয়েছে তেমনি নবীর বাস্তব কর্মকাণ্ডেও এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। রসূলুল্লাহ ﷺ বদর যুদ্ধের বন্দীদেরকে বিভিন্ন সাহাবার পরিবারে বণ্টন করে দিয়েছিলেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, اسْتَوْصُوا بِالأَسارِى خَيْراً “এসব বন্দীদের সাথে ভাল আচরণ করবে। “তাদের মধ্যে একজন বন্দী ছিলেন আবু আযীয। তিনি বর্ণনা করেনঃ “আমাকে যে আনসারদের পরিবারে রাখা হয়েছিল তারা আমাকে সকাল সন্ধায় রুটি খেতে দিত। কিন্তু নিজেরা শুধু খেজুর খেয়ে থাকতো। “অন্য একজন বন্দী সুহাইল ইবনে আমর সম্পর্কে নবীকে ﷺ জানানো হলো যে, সে একজন অনলবর্ষী বক্তা। সে আপনার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করতো। তার দাঁত উপড়িয়ে দিন। জবাবে নবী (সা.) বললেনঃ “আমি যদি তার দাঁত উপড়িয়ে দেই তাহলে নবী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ আমার দাঁত উপড়িয়ে দেবেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম) ইয়ামামা অঞ্চলের নেতা সুমামা ইবনে উসাল বন্দী হয়ে আসলে সে বন্দী থাকা অবধি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তার জন্য উত্তম খাদ্য ও দুধ সরবরাহ করা হতো। (ইবনে হিশাম) সাহাবায়ে কিরামের যুগেও এ কর্মপদ্ধতি চালু ছিল। তাঁদের যুগেও যুদ্ধবন্দীদের সাথে খারাপ আচরণের কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।

ছয়ঃ বন্দীদের স্থায়ীভাবে বন্দী করে রাখতে হবে-এবং সরকার তাদের থেকে বাধ্যতামূলক শ্রম আদায় করতে থাকবে ইসলাম এমন ব্যবস্থা আদৌ রাখেনি। যদি তাদের সাথে অথবা তাদের জাতির সাথে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের অথবা মুক্তিপণ আদায়ের কোন ব্যবস্থা না হয় সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতি ইহসান করার যে পন্থা রাখা হয়েছে তা হচ্ছে, তাদেরকে দাস বানিয়ে ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দিতে হবে এবং তাদের মালিকদের নির্দেশ দিতে হবে যে, তারা যেন তাদের সাথে উত্তম আচরণ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও এ নীতি অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে, সাহাবায়ে কিরামের যুগেও তা চালু ছিল এবং তা জায়েয হওয়া সম্পর্কে মুসলিম ফিকাহবিদগণ সর্বসম্মতিক্রমে মত প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি জানা থাকা দরকার তাহলো এই যে, বন্দী হওয়ার পূর্বেই যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং পরে কোনভাবে বন্দী হয়েছে তাকে মুক্ত ও স্বাধীন করে দেয়া হবে। কিন্তু কেউ বন্দী হওয়ার পরে ইসলাম গ্রহণ করলে অথবা কোন ব্যক্তির মালিকানাধীনে দিয়ে দেয়ার পরে মুসলমান হলে এভাবে ইসলাম গ্রহণ তার মুক্তির কারণ হতে পারে না। মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম এবং তিরমিযী হাদীস গ্রন্থে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত আছে যে, বনী উকাইল গোত্রের এক ব্যক্তি বন্দী হয়ে আসলো এবং বললো যে, সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। নবী ﷺ বললেনঃ

لَوْ قُلْتَهَا وَأَنْتَ تَمْلِكُ أَمْرَكَ أَفْلَحْتَ كُلَّ الْفَلَاحِ

“যখন তুমি স্বাধীন ছিলে তখন যদি একথাটি বলতে তাহলে তুমি নিঃসন্দেহে সফলকাম হতে।”

হযরত উমর (রা.) বলেছেনঃ اذا اسلم الاسير فى ايدى المسلمين فقد امن من القتل وهو رقيق “বন্দী যদি মুসলমানের হাতে পড়ার পরে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে সে নিহত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, তবে দাস থেকে যাবে।”

এরই ওপরে ভিত্তি করে মুসলিম ফিকাহবিদগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, বন্দী হওয়ার পরে ইসলাম গ্রহণকারী দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে না। (আস সিয়ারুল কাবীর, ইমাম মুহাম্মাদ) একথাটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতও বটে। কারণ, আমাদের আইন যদি এমন হতো যে, বন্দী হওয়ার পর যে ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করবে তাকেই মুক্তি করে দেয়া হবে তাহলে কালেমা পড়ে মুক্তি লাভ করতো না এমন কোন নির্বোধ বন্দী কি পাওয়া যেতো?

সাতঃ ইসলামে বন্দীদের প্রতি ইহসান করার তৃতীয় যে পন্থাটি আছে তা হচ্ছে, জিযিয়া আরোপ করে তাদেরকে দারূল ইসলামের যিম্মী (নিরাপত্তা প্রদত্ত) নাগরিক বানিয়ে নেয়া। এভাবে তারা ইসলামী রাষ্ট্রে ঠিক তেমনি স্বাধীনতা নিয়ে থাকবে যেমন মুসলমানরা থাকে। ইমাম মুহাম্মাদ তাঁর আস সিয়ারুল কাবীর’ নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ “যেসব ব্যক্তিকে দাস বানানো বৈধ তাদের প্রত্যেকের ওপর জিযিয়া আরোপ করে যিম্মী নাগরিক বানানোও বৈধ।” অন্য এক স্থানে লিখেছেনঃ “তাদের ওপর জিযিয়া এবং তাদের ভূমির ওপর ভূমিকর আরোপ করে তাদেরকে প্রকৃতই স্বাধীন ও মুক্ত করে দেয়ার অধিকার মুসলমানদের শাসকের আছে।” বন্দী লোকেরা যে অঞ্চলের অধিবাসী সে অঞ্চল বিজিত হয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলে সে পরিস্থিতিতে সাধারণত এ নীতি-পদ্ধতি অনুসারে কাজ করা হয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায় যে, খায়বারের অধিবাসীদের বেলায় নবী ﷺ এ নীতি অনুসরণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে শহর এলাকার বাইরে ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চল বিজিত হওয়ার পর হযরত উমর (রা.) ব্যাপকভাবে এ নীতি অনুসরণ করেছিলেন। আবু উবায়েদ কিতাবুল আমওয়াল গ্রন্থে লিখেছেন যে, ইরাক বিজিত হওয়ার পর সে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধি দল হযরত উমরের (রা.) দরবারে হাজির হয়ে আবেদন জানালো যে, আমীরুল মু’মিনীন! ইতিপূর্বে ইরানবাসীরা আমাদের ঘাড়ে চেপেছিল। তারা আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে, আমাদের সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেছে এবং আমাদের ওপর নানাভাবে বাড়াবাড়ি ও জুলুম করেছে। এরপর আল্লাহ তা’আলা যখন আপনাদের পাঠালেন তখন আপনাদের আগমনে আমরা খুব খুশী হলাম এবং আপনাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলিনি কিংবা যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করিনি। এখন আমরা শুনছি যে, আপনি আমাদের দাস বানিয়ে নিতে চাচ্ছেন। হযরত উমর (রা.) জবাব দিলেনঃ তোমাদের স্বাধীনতা আছে, তোমরা মুসলমান হয়ে যাও, কিংবা জিযিয়া দিতে স্বীকৃত হয়ে স্বাধীন হয়ে যাও। ঐ সব লোক জিযিয়া প্রদান করতে, স্বীকৃত হন এবং তাদেরকে স্বাধীন থাকতে দেয়া হয়। উক্ত গ্রন্থেরই আরো এক স্থানে আবু উবায়েদ বর্ণনা করেন যে, হযরত উমর (রা.) হযরত আবু মুসা আশ’আরীকে লিখেন, “যুদ্ধে যাদের বন্দী করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে কৃষকদের প্রত্যেককে ছেড়ে দাও।”

আটঃ ইহসান করার চতুর্থ পন্থা হলো, কোন প্রকার মুক্তিপণ বা বিনিময় না নিয়েই বন্দীকে ছেড়ে দেয়া। এটি একটি বিশেষ অনুকম্পা। বিশেষ কোন বন্দীর অবস্থা যখন এরূপ অনুকম্পা প্রদর্শনের দাবী করে কিংবা যদি আশা থাকে যে, এ অনুকম্পা সে বন্দীকে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করবে এবং সে শত্রু না থেকে বন্ধু এবং কাফের না থেকে মু’মিন হয়ে যাবে তাহলে কেবল সে অবস্থায়ই ইসলামী সরকার তা করতে পারে। অন্যথায় এ বিষয়টি সর্বজন বিদিত যে, মুক্তিলাভ করার পর সে পুনরায় আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসবে এ জন্য শত্রুকওমের কোন ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়া কোনক্রমেই যুক্তি দাবী হতে পারে না। এ কারণেই মুসলিম ফিকাহবিদগণ ব্যাপকভাবে এর বিরোধিতা করেছেন এবং এর বৈধতার জন্য শর্ত আরোপ করেছেন যে, যদি মুসলমানদের ইমাম বন্দীদের সবাইকে কিংবা তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যককে ইহসান বা অনুকম্পার ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত মনে করেন তবে তাতে কোন ক্ষতি নেই। (আস সিয়ারূল কাবীর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে এর বহু দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এর প্রায় সব ক্ষেত্রেই যৌক্তিকতা ও উপকারিতার দিকটা সুস্পষ্ট। বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেনঃ

لَوْ كَانَ الْمُطْعِمُ بْنُ عَدِىٍّ حَيًّا ، ثُمَّ كَلَّمَنِى فِى هَؤُلاَءِ النَّتْنَى ، لَتَرَكْتُهُمْ لَهُ

“মুতইম ইবনে আদ্দী যদি জীবিত থাকতো আর সে এসব জঘণ্য লোকগুলো সম্পর্কে আমার সাথে আলোচনা করতো তাহলে আমি তার খাতিরে এদের ছেড়ে দিতাম।” (বুখারী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ) নবী ﷺ একথা এ জন্য বলেছিলেন যে, তিনি যে সময় তায়েফ থেকে মক্কায় ফিরেছিলেন সে সময় মুতইমই তাঁকে নিজের আশ্রয়ে নিয়েছিলেন এবং তার ছেলে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে নিজের হিফাজতে তাঁকে হারাম শরীফে নিয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি এভাবে তার ইহসানের প্রতিদান দিতে চাচ্ছিলেন। বুখারী, মুসলিম এবং মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, ইয়ামামার নেতা সুমাম ইবনে উসাল বন্দী হয়ে আসলে নবী (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ সুমামা, তোমার বক্তব্য কী? সে বললোঃ “আপনি যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করবেনঃ যার রক্তের কিছু মূল্য আছে, যদি আমার প্রতি ইহসান করেন তাহলে এমন ব্যক্তির প্রতি ইহসান করা হবে যে ইহসান স্বীকার করে। আর যদি আপনি অর্থ চান তাহলে তা আপনাকে প্রদান করা হবে।” তিনদিন পর্যন্ত তিনি তাকে একথাটিই জিজ্ঞেস করতে থাকলেন আর সে-ও একই জবাব দিতে থাকলো। অবশেষে তিনি সুমামাকে ছেড়ে দিতে আদেশ দিলেন। মুক্তি পাওয়া মাত্র সে নিকটবর্তী একটি খেজুরের বাগানে গিয়ে গোসল করে ফিরে আসলো এবং কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে বললো, আজকের দিনের আগে আমার কাছে আপনার চেয়ে কোন ব্যক্তি এবং আপনার দ্বীনের চেয়ে কোন দ্বীন অধিক ঘৃণীত ছিল না। কিন্তু এখন আমার কাছে আপনার চেয়ে কোন ব্যক্তি এবং আপনার দ্বীনের চেয়ে কোন দ্বীন অধিক প্রিয় নয়। এরপরে সে উমরা করার জন্য মক্কা গেল এবং সেখানে কুরাইশদের জানিয়ে দিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত আজকের দিনের পরে ইয়ামামা থেকে কোন শস্য তোমরা পাবে না। সে প্রকৃতপক্ষে তাই করলো। ফলে মক্কাবাসীদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে আবেদন জানাতে হলো, তিনি যেন ইয়ামামা থেকে তাদের রসদ বন্ধ করিয়ে না দেন। বনু কুরাইযার বন্দীদের মধ্য থেকে তিনি যাবীর ইবনে বাতা এবং আমর ইবনে সা’দ (অথবা সু’দা) এর মৃত্যুদণ্ড রহিত করে দিলেন। তিনি যাবীরকে মুক্তি দিলেন এ কারণে যে, জাহেলী যুগে বুআস যুদ্ধের সময় সে হযরত সাবেত ইবনে কায়েসকে আশ্রয় দিয়েছিল। তাই তিনি তাকে সাবেতের হাতে তুলে দিলেন যাতে তিনি তাকে তাঁর প্রতি কৃত ইহসানের প্রতিদান দিতে পারেন। আর আমর ইবনে সা’দকে ছেড়ে ছিলেন এ জন্য যে, বনী কুরাইযা গোত্র যখন নবীর ﷺ সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল সে সময় এ ব্যক্তিই তার গোত্রকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে নিষেধ করেছিলো। (কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবায়েদ)।

বনী মুসতালিক যুদ্ধের পর যখন উক্ত গোত্রের বন্দীদের এনে সবার মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হলো তখন হযরত জুয়াইরিয়া যার অংশে পড়েছিলেন নবী ﷺ তাকে তার বিনিময়ে দিয়ে মুক্ত করলেন এবং এরপর নিজেই তাকে বিয়ে করলেন। এতে সমস্ত মুসলমান তাদের অংশের বন্দীদেরও মুক্ত করে দিলেন। কারণ, এখন তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আত্মীয়। এভাবে একশ’টি পরিবারের ব্যক্তিবর্গ মুক্তি লাভ করলো। (মুসনাদে আহমাদ, তাবকাতে ইবনে সা’দ সীরাতে ইবনে হিশাম)।

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মক্কার ৮০ ব্যক্তি তানয়ীমের দিকে এগিয়ে আসে এবং ফজরের নামাযের সময় তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্যাম্পে আকস্মিক আক্রমণ চালানোর সংকল্প করে। তাদের সবাইকে বন্দী করা হয়। কিন্তু নবী ﷺ সবাইকে ছেড়ে দেন যাতে এ নাজুক পরিস্থিতিতে এ বিষয়টি যুদ্ধের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ)।

মক্কা বিজয়ের সময় কতিপয় ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে তিনি অনুগ্রহ করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যাদের বাদ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যেও তিন চারজন ছাড়া কাউকে হত্যা করা হয়নি। মক্কাবাসীরা রসূলুল্লাহ ﷺ এবং মুসলমানদের ওপর কিভাবে জুলুম করেছিল তা আরবরা সবাই জানতো। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে বিজয়লাভ করার পর যে মহৎ উদারতার সাথে নবী (সা.) তাদের ক্ষমা করেছিলেন তা দেখে আরববাসীরা অন্তত এতটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলো যে, তাদের মোকাবিলা কোন নিষ্ঠুর ও কঠোর হৃদয় জালেমের সাথে নয়, বরং অত্যন্ত দয়াবান ও উদার নেতার সাথে। এ কারণেই মক্কা বিজয়ের পর গোটা আরব উপদ্বীপ অনুগত হতে দু’ বছর সময়ও লাগেনি। হুনায়েন যুদ্ধের পর হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল তাদের বন্দীদের মুক্ত করার জন্য যখন হাযির হলো তখন সমস্ত বন্দীদের বণ্টন করা হয়ে গিয়েছিল। নবী ﷺ সমস্ত মুসলমানকে একত্রিত করে বললেনঃ এরা সবাই তাওবা করে হাযির হয়েছে। আমার মত হলো তাদের বন্দীদের তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের বন্দীকে বিনিময় ছাড়াই সন্তুষ্ট চিত্তে ছেড়ে দিতে চায় সে যেন তাই করে। আর যে এর বিনিময় চায় তাকে আমি বায়তুলমালে সর্বপ্রথম যে অর্থ আমদানী হবে তা থেকে পরিশোধ করে দেব। এভাবে ছয় হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দেয়া হলো যারা বিনিময় চেয়েছিলো সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিনিময় প্রদান করা হলো। (বুখারী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, তাবকাতে ইবনে সা’দ) এ থেকে এ বিষয়টিও জানা গেল যে, বণ্টিত হওয়ার পর সরকার নিজে বন্দীদের মুক্ত করে দেয়ার অধিকার রাখে না বরং বন্দীদেরকে যেসব লোকের মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে অথবা বিনিময় দিয়ে তা করা যেতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে সাহাবীদের যুগেও ইহসান করে বন্দীদের মুক্তি দান করার প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। হযরত আবু বকর (রা.) আশয়াস ইবনে কায়েস কিন্দীকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং হযরত উমর (রা.) হুরমুযানকে এবং মানাযির ও মায়াসানের বন্দীদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। (কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবায়েদ)

নয়ঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে অর্থের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেয়ার দৃষ্টান্ত কেবল বদর যুদ্ধের সময় দেখা যায়। সে সময় একজনের বন্দীকে এক হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত মুদ্রা নিয়ে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। (তাবকাতে ইবনে সা’দ, কিতাবুল আমওয়াল) সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। মুসলিম ফিকাহবিদগণ ব্যাপকভাবে এরূপ করা অপছন্দ করেছেন। কারণ, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আমরা অর্থের বিনিময়ে শত্রুদের কাউকে ছেড়ে দেব আর যে পুনরায় আমাদের বিরুদ্ধে তরবারি ধারণ করবে। তবে কুরআন মজীদে যেহেতু মুক্তিপণ গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং রসূলুল্লাহ ﷺ একবার সে অনুযায়ী আমল করেছেন তাই এ কাজ একেবারে নিষিদ্ধ নয়। ইমাম মুহাম্মাদ (র) আস সিয়ারুল কাবীর গ্রন্থে বলেনঃ “প্রয়োজন দেখা দিলে মুসলমানরা অর্থের বিনিময়ে বন্দীদের ছেড়ে দিতে পারেন।”

দশঃ যুদ্ধবন্দীদেরকে কোন সেবা গ্রহণের বিনিময়ে মুক্তি দেয়ার দৃষ্টান্তও বদর যুদ্ধের সময় দেখ যায়। কুরাইশ বন্দীদের মধ্যে যাদের আর্থিক মুক্তিপণ দেয়ার ক্ষমতা ছিল না তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য নবী (সা.) শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, তারা আনসারদের দশজন করে শিশুকে লেখাপড়া শিখিয়ে দেবে। (মুসনাদে আহমাদ, তাবকাতে ইবনে সাদ, কিতাবুল আমওয়াল)।

এগারঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমরা বন্দী বিনিময়ের কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। একবার নবী (সা.) হযরত আবু বকর (রা.) কে একটি অভিযানে পাঠালেন। এতে কয়েকজন বন্দী হয়ে আসলো। তাদের মধ্যে জনৈকা পরমা সুন্দরী নারীও ছিল। সে সালামা ইবনুল আকওয়ার অংশে পড়ে। রসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বার বার বলে মহিলাকে চেয়ে নিলেন এবং তাকে মক্কায় পাঠিয়ে তার বিনিময়ে বহু মুসলমান বন্দীকে মুক্ত করালেন। (মুসলিম, আবু দাউদ, তাহাবী, কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবায়েদ, তাবকাতে ইবনে সা’দ)। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণনা করেনঃ একবার সাকীফ গোত্র দু’জন মুসলমানকে বন্দী করে। এর কিছুদিন পর সাকীফের মিত্র বনী উকাইলের এক ব্যক্তি মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়। নবী (সা.) তাকে তায়েফে পাঠিয়ে তার বিনিময়ে ঐ দুজন মুসলমানকে মুক্ত করে আনেন। (মুসলিম, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ) ফিকাহবিদদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসূফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমাদের মতে বন্দী বিনিময় জায়েজ। ইমাম আবু হানিফার একটি মত হচ্ছে, বিনিময় না করা উচিত। কিন্তু তাঁরও দ্বিতীয় মত হচ্ছে বিনিময় করা যেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, বন্দীদের যে মুসলমান হয়ে যাবে বিনিময়ের মাধ্যমে তাকে কাফেরদের হাতে তুলে দেয়া যাবে না।

এ ব্যাখ্যার দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলাম যুদ্ধবন্দীদের জন্য এমন একটি ব্যাপক আইন রচনা করেছে যার মধ্যে প্রত্যেক যুগে এবং সব রকম পরিস্থিতিতে এ সমস্যার মোকাবিলা করার অবকাশ আছে। যারা কুরআন মজীদের এ আয়াতটির শুধু এ সংক্ষিপ্ত অর্থ গ্রহণ করে যে, যুদ্ধবন্দীদেরকে ইহসান বা অনুকম্পা করে ছেড়ে দিতে হবে অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিতে হবে তারা জানে না যুদ্ধবন্দী সম্পর্কিত বিষয়টি কত ভিন্ন ভিন্ন দিক থাকতে পারে এবং বিভিন্ন যুগে তা কত সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে পারে। ৯) অর্থাৎ বাতিলের পূজারীদের মাথা চূর্ণ করাই যদি আল্লাহ তা’আলার একমাত্র কাজ হতো তাহলে তা করার জন্য তিনি তোমাদের মুখাপেক্ষী হতেন না। তাঁর সৃষ্ট ভূমিকম্প বা ঝড়-তুফান চোখের পলকেই এ কাজ করতে পারতো। কিন্তু তিনি চান মানুষের মধ্যে যারা ন্যায় ও সত্যের অনুসারী তারা বাতিলের অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুক। যাতে যার মধ্যে যে গুণাবলী আছে তা এ পরীক্ষায় সুন্দর ও পরিমার্জিত হয়ে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং প্রত্যেকেই তার কর্মের বিচারে যে অবস্থান ও মর্যাদা লাভের উপযুক্ত তাকে দেয়া যায়।
# আল্লাহর পথে কারো নিহত হওয়ার অর্থ এ নয় যে, কেউ নিহত হলেই তার ব্যক্তিগত সব কাজ-কর্মই ধ্বংস হয়ে গেল। কেউ যদি একথা মনে করে যে, শহীদদের ত্যাগ ও কুরবানী তাদের নিজেদের জন্য উপকারী নয় বরং তাদের পরে যারা এ পৃথিবীতে জীবিত থাকলো এবং তাদের ত্যাগ ও কুরবানী দ্বারা লাভবান হলো তারাই শুধু কল্যাণ লাভ করলো তাদের ভুল বুঝেছে। প্রকৃত সত্য হলো যারা শাহাদাত লাভ করলো তাদের নিজেদের জন্যও এটি লোকসানের নয় লাভের বাণিজ্য।
# বাতিলের পূজারীদের মাথা চূর্ণ করাই যদি আল্লাহ‌ তা’আলার একমাত্র কাজ হতো তাহলে তা করার জন্য তিনি তোমাদের মুখাপেক্ষী হতেন না। তাঁর সৃষ্ট ভূমিকম্প বা ঝড়-তুফান চোখের পলকেই এ কাজ করতে পারতো। কিন্তু তিনি চান মানুষের মধ্যে যারা ন্যায় ও সত্যের অনুসারী তারা বাতিলের অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুক। যাতে যার মধ্যে যে গুণাবলী আছে তা এ পরীক্ষায় সুন্দরও পরিমার্জিত হয়ে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং প্রত্যেকেই তার কর্মের বিচারে যে অবস্থান ও মর্যাদালাভের উপযুক্ত তাকে দেয়া যায়।
# আল্লাহর পথে কারো নিহত হওয়ার অর্থ এ নয় যে, কেউ নিহত হলেই তার ব্যক্তিগত সব কাজ-কর্মই ধ্বংস হয়ে গেল। কেউ যদি একথা মনে করে যে, শহীদদের ত্যাগ ও কুরবানী তাদের নিজেদের জন্য উপকারী নয় বরং তাদের পরে যারা এ পৃথিবীতে জীবিত থাকলো এবং তাদের ত্যাগ ও কুরবানী দ্বারা লাভবান হলো তারাই শুধু কল্যাণ লাভ করলো তাদের ভুল বুঝেছে। প্রকৃত সত্য হলো শাহাদাত লাভ করলো তাদের নিজেদের জন্যও এটি লোকসানের নয় লাভের বাণিজ্য।
#

Leave a Reply