أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (বই#১১০৯/এবং কাফেররা‌ বলে -৫) [ *   এসব কিছু জানা এবং মানার পরেও) এসব লোক :- *ফেরেশতাদের সম্পর্কে পৌত্তলিকদের ভ্রান্ত ধারণা :-] www.motaher21.net সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ পারা:২৫ ১৫-২৫ নং আয়াত:-

Engr Motaher:-

https://motaher21.net/?s=%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B0+

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১১০৯/এবং কাফেররা‌ বলে -৫)
[ *   এসব কিছু জানা এবং মানার পরেও) এসব লোক :-
*ফেরেশতাদের সম্পর্কে পৌত্তলিকদের ভ্রান্ত ধারণা :-]
www.motaher21.net
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ পারা:২৫
১৫-২৫ নং আয়াত:-

সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:১৫
وَ جَعَلُوۡا لَہٗ مِنۡ عِبَادِہٖ جُزۡءًا ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَکَفُوۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ؕ٪۱۵﴾
এসব কিছু জানা এবং মানার পরেও) এসব লোক তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকেই কোন কোন বান্দাকে তাঁর অংশ বানিয়ে দিয়েছে।’প্রকৃত সত্য এই যে, মানুষ সুস্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:১৬
اَمِ اتَّخَذَ مِمَّا یَخۡلُقُ بَنٰتٍ وَّ اَصۡفٰکُمۡ بِالۡبَنِیۡنَ ﴿۱۶﴾
তিনি কি তাঁর সৃষ্টি হতে নিজে কন্যা-সন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন পুত্র সন্তান? [
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:১৭
وَ اِذَا بُشِّرَ اَحَدُہُمۡ بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحۡمٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجۡہُہٗ مُسۡوَدًّا وَّ ہُوَ کَظِیۡمٌ ﴿۱۷﴾
ওরা পরম দয়াময় আল্লাহর প্রতি যে কন্যা-সন্তান আরোপ করে, ওদের কাউকেও সে কন্যা সন্তানের সংবাদ দেওয়া হলে তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:১৮
اَوَ مَنۡ یُّنَشَّؤُا فِی الۡحِلۡیَۃِ وَ ہُوَ فِی الۡخِصَامِ غَیۡرُ مُبِیۡنٍ ﴿۱۸﴾
আল্লাহর ভাগে কি সেই সব সন্তান যারা অলঙ্কারাদির মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং বিতর্ক ও যুক্তি পেশের ক্ষেত্রে নিজের লক্ষ্য পুরোপুরি সুস্পষ্ট করতেও পারে না?’
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:১৯
وَ جَعَلُوا الۡمَلٰٓئِکَۃَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عِبٰدُ الرَّحۡمٰنِ اِنَاثًا ؕ اَشَہِدُوۡا خَلۡقَہُمۡ ؕ سَتُکۡتَبُ شَہَادَتُہُمۡ وَ یُسۡـَٔلُوۡنَ ﴿۱۹﴾
ওরা দয়াময় আল্লাহর ফিরিশতাদেরকে নারী বলে স্থির করে, ওরা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছিল? ওদের উক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং ওদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:২০
وَ قَالُوۡا لَوۡ شَآءَ الرَّحۡمٰنُ مَا عَبَدۡنٰہُمۡ ؕ مَا لَہُمۡ بِذٰلِکَ مِنۡ عِلۡمٍ ٭ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا یَخۡرُصُوۡنَ ﴿ؕ۲۰﴾
এরা বলেঃ “দয়াময় আল্লাহ‌ যদি চাইতেন (যে আমরা তাদের ইবাদত না করি) তাহলে আমরা কখনো পূজা করতাম না। এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য এরা আদৌ জানে না, কেবলই অনুমানে কথা বলে।
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:২১
اَمۡ اٰتَیۡنٰہُمۡ کِتٰبًا مِّنۡ قَبۡلِہٖ فَہُمۡ بِہٖ مُسۡتَمۡسِکُوۡنَ ﴿۲۱﴾
আমি কি এর আগে এদেরকে কোন কিতাব দিয়েছিলাম (নিজেদের এই ফেরেশতা পূজার সপক্ষে) এরা যার সনদ নিজেদের কাছে সংরক্ষন করছে?
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:২২
بَلۡ قَالُوۡۤا اِنَّا وَجَدۡنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤی اُمَّۃٍ وَّ اِنَّا عَلٰۤی اٰثٰرِہِمۡ مُّہۡتَدُوۡنَ ﴿۲۲﴾
তা নয়, বরং এরা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে একটি পন্থার ওপর পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছি।
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:২৩
وَ کَذٰلِکَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ فِیۡ قَرۡیَۃٍ مِّنۡ نَّذِیۡرٍ اِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوۡہَاۤ ۙ اِنَّا وَجَدۡنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤی اُمَّۃٍ وَّ اِنَّا عَلٰۤی اٰثٰرِہِمۡ مُّقۡتَدُوۡنَ ﴿۲۳﴾
এভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই ওদের মধ্যে যারা বিত্তশালী ছিল তারা বলত, ‘আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।’
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:২৪
قٰلَ اَوَ لَوۡ جِئۡتُکُمۡ بِاَہۡدٰی مِمَّا وَجَدۡتُّمۡ عَلَیۡہِ اٰبَآءَکُمۡ ؕ قَالُوۡۤا اِنَّا بِمَاۤ اُرۡسِلۡتُمۡ بِہٖ کٰفِرُوۡنَ ﴿۲۴﴾
প্রত্যেক নবীই তাদের বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের যে পথে চলতে দেখেছো আমি যদি তোমাদের তার চেয়ে অধিক সঠিক রাস্তা বলে দেই তাহলেও কি তোমরা সেই পথেই চলতে থাকবে? তারা সব রসূলকে এই জবাবই দিয়েছে, যে দ্বীনের দিকে আহবান জানানোর জন্য তুমি প্রেরিত হয়েছো, আমরা তা অস্বীকার করি।
সূরা:৪৩: সূরা:- ‌আয-যুখরুফ:২৫
فَانۡتَقَمۡنَا مِنۡہُمۡ فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿٪۲۵﴾
শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে মার দিয়েছি এবং দেখে নাও, অস্বীকারকারীদের পরিণাম কি হয়েছে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# অংশ বানিয়ে দেয়ার অর্থ আল্লাহর কোন বান্দাকে তাঁর সন্তান অংশ বানিয়ে দেয়ার অর্থ আল্লাহর কোন বান্দাকে তাঁর সন্তান ঘোষণা করা। কেননা সন্তান অনিবার্যরূপেই পিতার স্বগোত্রীয় এবং তার অস্তিত্বের একটি অংশ। তাই কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর কন্যা বা পুত্র বলার অর্থ এই যে, তাকে আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তায় শরীক করা হচ্ছে। এছাড়াও কোন সৃষ্টিকে আল্লাহর অংশ বানানোর আরেকটি রূপ হচ্ছে, যেসব গুণাবলী ও ক্ষমতা ইখতিয়ার শুধু আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট সেই সব গুণাবলী ও ক্ষমতা-ইখতিয়ারে তাকেও শরীক করা এবং এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তার কাছে প্রার্থনা করা, কিংবা তার সামনে ইবাদাত-বন্দেগীর অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা, অথবা তার ঘোষিত হালাল ও হারামকে অবশ্য পালনীয় শরীয়ত মনে করে নেয়া। কারণ, ব্যক্তি এক্ষেত্রে ‘উলুহিয়াত’ ও ‘রবুবিয়াত’ কে আল্লাহ‌ এবং বান্দার মধ্যে ভাগ করে দেয় এবং তার একটা অংশ বান্দার হাতে তুলে দেয়।
ঘোষণা করা। কেননা সন্তান অনিবার্যরূপেই পিতার স্বগোত্রীয় এবং তার অস্তিত্বের একটি অংশ। তাই কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর কন্যা বা পুত্র বলার অর্থ এই যে, তাকে আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তায় শরীক করা হচ্ছে। এছাড়াও কোন সৃষ্টিকে আল্লাহর অংশ বানানোর আরেকটি রূপ হচ্ছে, যেসব গুণাবলী ও ক্ষমতা ইখতিয়ার শুধু আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট সেই সব গুণাবলী ও ক্ষমতা-ইখতিয়ারে তাকেও শরীক করা এবং এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তার কাছে প্রার্থনা করা, কিংবা তার সামনে ইবাদাত-বন্দেগীর অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা, অথবা তার ঘোষিত হালাল ও হারামকে অবশ্য পালনীয় শরীয়ত মনে করে নেয়া। কারণ, ব্যক্তি এক্ষেত্রে ‘উলুহিয়াত’ ও ‘রবুবিয়াত’ কে আল্লাহ‌ এবং বান্দার মধ্যে ভাগ করে দেয় এবং তার একটা অংশ বান্দার হাতে তুলে দেয়।
# এখানে আরবের মুশরিকদের বক্তব্যের অযৌক্তিকতাকে একেবারে উলংগ করে দেয়া হয়েছে। তারা বলতোঃ ফেরেশতারা আল্লাহর মেয়ে। তারা মেয়েদের আকৃতি দিয়ে ফেরেশতাদের মূর্তি বানিয়ে রেখেছিলো। এগুলোই ছিলো তাদের দেবী। তাদের পূজা করা হতো। এ কারণে আল্লাহ‌ বলছেনঃ প্রথমত, যমীন ও আসমানের স্রষ্টা আল্লাহ। তিনিই তোমাদের জন্য এ যমীনকে দোলনা বানিয়েছেন। তিনিই আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তোমাদের উপকারার্থে তিনিই এসব জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন, একথা জানা এবং মানা সত্ত্বেও তোমরা তাঁর সাথে অন্যদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছো। অথচ তোমরা যাদের উপাস্য বানাচ্ছো তারা আল্লাহ‌ নয়, বান্দা। এছাড়াও আরো সর্বনাশ করেছে এভাবে যে, কোন কোন বান্দাকে শুধু গুণাবলীতে নয়, আল্লাহর আপন সত্তায়ও শরীক করে ফেলেছে এবং এই আকীদা তৈরী করে নিয়েছে যে, তারা আল্লাহর সন্তান। তোমরা এ পর্যন্ত এসেই থেমে থাকোনি, বরং আল্লাহর জন্য এমন সন্তান স্থির করেছো যাকে তোমরা নিজেদের জন্য অপমান ও লাঞ্চনা মনে করো। কন্যা সন্তান জন্মলাভ করলে তোমাদের মুখ কালো হয়ে যায়। বড় দুঃখভারাক্রান্ত মনে তা মেনে নাও। এমন কি কোন কোন সময় জীবিত কন্যা সন্তনকে মাটিতে পুতে ফেলো। এ ধরনের সন্তান রেখেছো আল্লাহর ভাগে। আর তোমাদের কাছে যে পুত্র সন্তান অহংকারের বস্তু তা তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছে? এরপরও তোমরা দাবী করো, ‘আমরা আল্লাহকে মেনে চলি’।
# এখানে আরবের মুশরিকদের বক্তব্যের অযৌক্তিকতাকে একেবারে উলংগ করে দেয়া হয়েছে। তারা বলতোঃ ফেরেশতারা আল্লাহর মেয়ে। তারা মেয়েদের আকৃতি দিয়ে ফেরেশতাদের মূর্তি বানিয়ে রেখেছিলো। এগুলোই ছিলো তাদের দেবী। তাদের পূজা করা হতো। এ কারণে আল্লাহ‌ বলছেনঃ প্রথমত, যমীন ও আসমানের স্রষ্টা আল্লাহ। তিনিই তোমাদের জন্য এ যমীনকে দোলনা বানিয়েছেন। তিনিই আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তোমাদের উপকারার্থে তিনিই এসব জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন, একথা জানা এবং মানা সত্ত্বেও তোমরা তাঁর সাথে অন্যদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছো। অথচ তোমরা যাদের উপাস্য বানাচ্ছো তারা আল্লাহ‌ নয়, বান্দা। এছাড়াও আরো সর্বনাশ করেছে এভাবে যে, কোন কোন বান্দাকে শুধু গুণাবলীতে নয়, আল্লাহর আপন সত্তায়ও শরীক করে ফেলেছে এবং এই আকীদা তৈরী করে নিয়েছে যে, তারা আল্লাহর সন্তান। তোমরা এ পর্যন্ত এসেই থেমে থাকোনি, বরং আল্লাহর জন্য এমন সন্তান স্থির করেছো যাকে তোমরা নিজেদের জন্য অপমান ও লাঞ্চনা মনে করো। কন্যা সন্তান জন্মলাভ করলে তোমাদের মুখ কালো হয়ে যায়। বড় দুঃখভারাক্রান্ত মনে তা মেনে নাও। এমন কি কোন কোন সময় জীবিত কন্যা সন্তনকে মাটিতে পুতে ফেলো। এ ধরনের সন্তান রেখেছো আল্লাহর ভাগে। আর তোমাদের কাছে যে পুত্র সন্তান অহংকারের বস্তু তা তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছে? এরপরও তোমরা দাবী করো, ‘আমরা আল্লাহকে মেনে চলি’।
# অন্য কথায় যারা কোমল, নাজুক ও দুর্বল সন্তান তাদের রেখেছো আল্লাহর অংশে। আর যারা বুক টান করে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ার মত সন্তান তাদের রেখেছো নিজের অংশে। এ আয়াত থেকে নারীদের গহনা ও অলংকারাদি ব্যবহারের বৈধতা প্রমাণিত হয়। কারণ আল্লাহ‌ তাদের জন্য গহনা ও অলংকারকে একটি প্রকৃতিগত জিনিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদীসসমূহ থেকেও একথাটিই প্রমাণিত হয়। ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী হযরত আলী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ এক হাতে রেশম ও অপর হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেনঃ এ দু’টি জিনিসকে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম। তিরমিযী ও নাসায়ী হযরত আবু মূসা আশআরীর বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন যে, নবী (সা.) বলেছেনঃ রেশম ও স্বর্ণের ব্যবহার আমার উম্মতের নারীদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে। আল্লামা আবু বকর জাসসাস আহকামূল কুরআন গ্রন্থে এ মাসয়ালা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নীচের বর্ণনাসমূহ উদ্ধৃত করেছেন।

হযরত আয়েশা বলেন, একবার যায়েদ ইবনে হারেসার ছেলে উসামা ইবনে যায়েদ আঘাত প্রাপ্ত হন এবং রক্ত ঝরাতে থাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তিনি তার রক্ত চুষে থুথু করে ফেলছিলেন এবং তাকে এই বলে সোহাগ করছিলেন যে, উসামা যদি মেয়ে হতো আমি তাকে অলংকার পরাতাম। উসামা যদি মেয়ে হতো আমি তাকে ভালভাল কাপড় পরাতাম।

হযরত আবু মূসা আশআরী বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ لَيْسَ الْحَرِيرُ وَالذَّهَبُ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِى وَحِلال لإِنَاثِهِمْ

“রেশমী কাপড় এবং স্বর্ণের অলংকার পরিধান আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম এবং নারীদের জন্য হালাল।” হযরত আমর ইবনে আস বর্ণনা করেছেন, একবার দু’জন মহিলা নবীর ﷺ খেদমতে হাজির হলো। তারা স্বর্ণের গহনা পরিহিত ছিল। তিনি তাদের বললেনঃ এর কারণে আল্লাহ‌ তোমাদের আগুনের চুড়ি পরিধান করান তা কি তোমরা চাও? তারা বললো, না। নবী (সা.) বললেন, তাহলে এগুলোর হক আদায় করো অর্থাৎ এর যাকাত দাও। হযরত আয়শার উক্তি হচ্ছে, যাকাত আদায় করা হলে অলংকার পরিধানে কোন দোষ নেই।

হযরত উমর (রা.) হযরত আবু মূসা আশআরীকে লিখেছিলেন তোমার শাসন কর্তৃত্বাধীন অঞ্চলে যেসব মুসলিম মহিলা আছে তাদেরকে তাদের অলংকারাদির যাকাত দেবার নির্দেশ দাও।

আমর ইবনে দীনারের বরাত দিয়ে ইমাম আবু হানিফা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আয়েশা তাঁর বোনদের এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) তাঁর মেয়েদেরকে স্বর্ণের অলংকার পরিয়েছিলেন।

এসব বর্ণনা উদ্ধৃত করার পর আল্লামা জাসসাস লিখছেনঃ নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম হালাল হওয়ার সপক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যেসব হাদীস আছে সেগুলো নাজায়েয হওয়া সম্পর্কিত হাদীসসমূহ থেকে অধিক মশহুর ও সুস্পষ্ট। উপরোল্লেখিত আয়াতও জায়েয হওয়াই প্রমাণ করছে। তাছাড়া নবী ﷺ এবং সাহাবাদের যুগ থেকে আমাদের যুগ (অর্থাৎ চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ যুগ) পর্যন্ত গোটা উম্মতের কার্যধারাও তাই আছে। এ ব্যাপারে কেউ কোন আপত্তি উত্থাপন করেনি। এ ধরনের মাসয়ালা সম্পর্কে “আখবারে আহাদের” ভিত্তিতে কোন আপত্তি গ্রহণ করা যেতে পারে না।
# পুরুষ বা নারী কোনটাই নয়। বক্তব্যের ধরন থেকে আপনা
আপনি এ অর্থ প্রকাশ পাচ্ছে।
# আরেকটি অনুবাদ এও হতে পারে, “এরা কি তাদের সৃষ্টির সময় উপস্থিত ছিল? ”
# নিজেদের গোমরাহীর ব্যাপারে এটা ছিল তাদের “তাকদীর” থেকে প্রমাণ পেশ। এটা অন্যায়কারীদের চিরকালীন অভ্যাস। তাদের যুক্তি ছিল এই যে, আল্লাহ‌ আমাদের করতে দিয়েছেন বলেই তো ফেরেশতাদের ইবাদাত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। তিনি যদি না চাইতেন তাহলে আমরা কি করে এ কাজ করতে পারতাম? তাছাড়া দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এখানে এ কাজ হচ্ছে, কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে সেজন্য কোন আযাব নাযিল হয়নি। এর অর্থ, আমাদের এ কাজ আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় নয়।
# নিজেদের অজ্ঞতার কারণে এসব লোক মনে করে পৃথিবীতে যা হচ্ছে তা যেহেতু আল্লাহর অনুমোদনের অধীনে হচ্ছে, তাই এতে আল্লাহর সম্মতি বা স্বীকৃতি আছে। অথচ এ ধরনের যুক্তি যদি সঠিক হয় তাহলে পৃথিবীতে তো শুধু শিরকই হচ্ছে না, চুরি, ডাকাতি, খুন, ব্যভিচার, ঘুষ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং এ ধরনের আরো অসংখ্য অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে যেগুলোকে কোন ব্যক্তি নেকী ও কল্যাণ মনে করে না। তাছাড়া এ ধরনের যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে কি একথাও বলা যাবে যে, এ কাজ সবই হালাল ও পবিত্র। কারণ, আল্লাহ‌ তাঁর পৃথিবীতে এসব কাজ হতে দিচ্ছেন। আর তিনি যখন এসব হতে দিচ্ছেন তখন অবশ্যই তিনি এসব পছন্দ করেন? পৃথিবীতে যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ জানার মাধ্যম নয়। বরং এ মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, যা তাঁর রসূলের মাধ্যমে আসে। আল্লাহ‌ কোন্ ধরনের আকীদা-বিশ্বাস, কাজকর্ম ও চরিত্র পছন্দ করেন এবং কোন্ ধরনের পছন্দ করেন না তা এই কিতাবে তিনি নিজেই বলে দিয়েছেন। অতএব, এসব লোকের কাছে কুরআনের পূর্বে আগত এমন কোন কিতাব যদি বর্তমান থাকে যেখানে আল্লাহ‌ বলেছেন, আমার সাথে ফেরেশতারাও তোমাদের উপাস্য, তাদের ইবাদাত করাও তোমাদের উচিত, তাহলে এরা তার প্রমাণ দিক। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল আন’আম, টীকা ৭১ , ৭৯ , ৮০ , ১১০ , ১২২ , ১২৫ ; আল আ’রাফ , টীকা ১৬ ; ইউনুস টীকা ১০১ ; হূদ, টীকা ১১৬ ; আর রা’দ টীকা ৪৫ ; আন নাহাল, টীকা ১০ , ৩১ , ৯৪ ; আয যুমার, টীকা ২০ ; আশ শূরা, টীকা ১১ )।
# আল্লাহর কিতাবের কোন সনদ তাদের কাছে নেই। শুধু এই সনদই আছে যে বাপ-দাদা থেকে এরূপই হয়ে আসছে। তাই তাদের অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে তারাও ফেরেশতাদের দেবী বানিয়ে নিয়েছে।
# এটি অত্যন্ত গভীরভাবে ভেবে দেখার বিষয় যে, প্রত্যেক যুগে জাতির সচ্ছল শ্রেণীর লোকেরাই শুধু নবী-রসূলদের বিরুদ্ধে বাপ-দাদার অন্ধ অনুকরণের ঝাণ্ডাবাহী কেন হয়েছে? ন্যায় ও সত্যের বিরোধিতায় এরাই অগ্রগামী হয়েছে, এরাই প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় তৎপর থেকেছে এবং জনগনকে বিভ্রান্ত ও উত্তেজিত করে নবী-রসূলদের বিরুদ্ধে ফিতনা সৃষ্টি এরাই করে এসেছে এর কারণ কি? এর মূল কারণ ছিল দু’টি। একটি হচ্ছে, সুখী ও সচ্ছল শ্রেণী আপন স্বার্থ উদ্ধার ও তা ভোগ করার নেশায় এমনই ডুবে থাকে যে, তাদের মতে তারা হক ও বাতিলের এই অপ্রাসঙ্গিক বিতর্কে মাথা ঘামানোর জন্য প্রস্তুত থাকে না। তাদের আরাম প্রিয়তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসিতা দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে অত্যন্ত নির্লিপ্ত ও নিষ্পৃহ এবং সাথে সাথে কার্যত রক্ষনশীল (Conservative) বানিয়ে দেয় যাতে প্রতিষ্ঠিত যে অবস্থা পূর্ব থেকেই চলে আসছে হক হোক বা বাতিল হোক— তাই যেন হুবহু প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং কোন নতুন আদর্শ সম্পর্কে চিন্তা করার কষ্ট না করতে হয়। অপরটি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার সাথে তাদের স্বার্থ ওতপ্রোতোভাবে জড়িত থাকে। নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামদের পেশকৃত আদর্শ দেখে প্রথম দৃষ্টিতেই তারা বুঝে নেয় যে, এটা প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের মাতব্বরির পার্টও চুকিয়ে দেবে এবং তাদের হারামখুরী ও হারাম কর্ম করার স্বাধীনতা থাকবে না। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল আন’আম টীকা ৯১ ; আল আ’রাফ, টীকা ৪৬ , ৫৩ , ৫৮ , ৭৪ , ৮৮ , ৯২ ; হূদ টীকা ৩১ , ৩২ , ৪১ ; বনী ইসরাঈল, টীকা ৮১ ; আল মু’মিনুন, টীকা ২৬ , ২৭, ৩৫ , ৫৯ ; সূরা সাবা, আয়াত ৩৪ , টীকা ৫৪ )।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*ফেরেশতাদের সম্পর্কে পৌত্তলিকদের ভ্রান্ত ধারণা : এরপর মােশরেকদের ফেরেশতা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি ও তাদেরকে আল্লাহর মেয়ে মনে করে পূজো করার বিষয়টা আলােচিত হচ্ছে। ফেরেশতারা যে আসলে আল্লাহর বান্দা সে কথা এখানে দার্থহীন ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে। (আয়াত ১৫-২৫) কোরআন এই ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারের অপনােদন করে, তাদের স্বীকৃত মূলনীতি, যুক্তি ও বাস্তবতা দিয়ে তা খন্ডন করে এবং অতীতের যারা এই ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা পোষণ ও প্রচার করতো, তাদের শোচনীয় পরিণতি দেখিয়েও তা প্রতিহত করে। প্রথমে বলা হয়েছে, এই ধারণা চরম বিভ্রান্তিকর ও নির্বোধসুলভ এবং এর ভেতরে জাজ্জল্যমান অকৃতজ্ঞতা রয়েছে। তারা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকেই তার শরীক বানিয়েছে। নিশ্চয়ই মানুষ প্রকাশ্যভাবেই অকৃতজ্ঞ।'(আয়াত ১৫) বস্তুত ফেরেশতারা হচ্ছে আল্লাহর বান্দা। তাদেরকে আল্লাহর মেয়ে ঠাওরানাের অর্থ দাঁড়ায় তাদেরকে বান্দার স্তর থেকে ওপরে তালা এবং তাদেরকে আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করা। অথচ তারা অন্যসব বান্দার মতােই বান্দা, সকল দাসের মতােই দাস। তাদের স্রষ্টা ও মনিবের সাথে সম্পর্ক চিহ্নিত করতে গিয়ে তাদেরকে দাসসুলভ বিশেষণ ব্যতীত অন্য কোনাে। বিশেষণে বিশেষিত করার কোনাে স্বার্থকতা নেই। আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাঁর দাস ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। এমতাবস্থায় মানুষ যদি ফেরেশতাকে বা অন্য কোনাে সৃষ্টিকে তার দাস না বলে অন্য কিছু বলে তাহলে সে সন্দেহাতীতভাবে অকৃতজ্ঞ বলে চিহ্নিত হবে। “নিশ্চয়ই মানুষ প্রকাশ্যভাবেই অকৃতজ্ঞ।’ এরপর কোরআন তাদেরই স্বীকৃত যুক্তি ও রীতি প্রথা দিয়ে তাদের দাবির খণ্ডন করে এবং তাদের সেই নির্বোধসুলভ দাবীর প্রতি বিদ্রুপ করে যাতে করে ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর মেয়ে আখ্যায়িত করে। ‘তিনি (আল্লাহ তায়ালা) কি নিজের সৃষ্টির মধ্য থেকে একটা শ্রেণীকে নিজের মেয়েরূপে গ্রহণ করলেন, আর তােমাদেরকে ধন্য করলেন ছেলে দিয়ে?’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ যদি নিজের জন্য কিছু সন্তান-সন্তুতি গ্রহণ করতেই চেয়ে থাকেন, তাহলে এটা কেমন কথা যে, নিজের জন্যে কন্যা সন্তান গ্রহণ করলেন, আর তাদেরকে পুত্র সন্তান দিয়ে কৃতার্থ করলেন? তাদের নিজেদের কন্যা সন্তান হলে তারা যখন বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়, তখন আল্লাহর সম্পর্কে তাদের এরূপ দাবী করা কি শােভা পায়? তারা দয়াময় আল্লাহর ব্যাপারে যে দৃষ্টান্ত দেয়, সেই কন্যা সন্তান সম্পর্কে যখন তাদের কাউকে সংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখ কালাে হয়ে যায় এবং সে ভীষণভাবে মর্মাহত হয়। অর্থাৎ যে জিনিসের ব্যাপারে তাদেরকে খবর দিলে তারা বিরক্ত ও মর্মাহত হয়, এমনকি তাদের মুখ কালাে হয়ে যায় এবং তারা চাপা ক্রোধে ফেটে পড়তে চায়, সেই জিনিসই তার নির্দিধায় আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে- এটা কি আদৌ শোভনীয় ও সম্মানজনক। এটাও কি আদৌ শােভনীয় ও সম্মানজনক যে, তারা আল্লাহর জন্যে এমন সন্তান বরাদ্দ করে, যা অলংকারে মন্ডিত হয়ে পরম আদর-আহ্লাদে প্রতিপালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ক বা লড়াইতে অক্ষম প্রমাণিত হয়? অথচ তারা নিজেরা সর্বদা যুদ্ধের পরিবেশে ও যােদ্ধা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকা পছন্দ করে। এভাবে কোরআন তাদেরই বােধগম্য যুক্তি দিয়ে তাদের দাবীকে খন্ডন করে এবং তাদেরকে এই বলে লজ্জা দিচ্ছে যে, তারা নিজেদের জন্যে যা ঘৃণা করে, সেটাই আল্লাহর জন্যে পছন্দ করছে। তারা যদি একান্তই আল্লাহর জন্যে কোনাে সন্তান নির্ধারণ করতে চায়, তাহলে অন্তত নিজেদের জন্য যা পছন্দ করে, তা কেন আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করে না? এরপর তাদের এই ভ্রান্ত ধারণাকে অন্য এক দৃষ্টিকোণ থেকে খন্ডন করা হচ্ছে। তারা দাবী করে যে, ফেরেশতারা নারী জাতীয়। কিসের ভিত্তিতে তারা এ দাবী করে? ‘যে ফেরেশতারা দয়াময় আল্লাহর দাস মাত্র, তাদেরকে তারা নারী বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা কি তাদের সৃষ্টির সময় উপস্থিত ছিলাে…’(আয়াত ১৯) অর্থাৎ তারা কি তাদের সৃষ্টিকে সচোক্ষে দেখেছে এবং নিশ্চিতভাবে জেনেছে যে তারা নারী জাতীয় সচোক্ষে দেখা একটা নির্ভরযােগ্য প্রমাণ বটে। এর ভিত্তিতে কেউ কোনাে দাবী করতে পারে। অথচ মােশরেকরা দাবী করতে সক্ষম নয় যে, তারা ফেরেশতাদের সৃষ্টি করতে দেখেছে। তবুও তারা না দেখওে এই সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং এই উদ্ভট দাবী করছে। কাজেই উপস্থিত না থেকে সচোক্ষে না দেখে তারা যে সাক্ষ্য দিয়েছে, তার দায়দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে। তাদের সাক্ষ্য লেখা হবে এবং তারা জিজ্ঞাসিত হবে।’ এরপর এই উদ্ভট দাবী অব্যাহত রেখে এর পক্ষে নানা ছলছুতাে ও খোড়া ওজুহাত তৈরী করা হতাে। (আয়াত ২০) অকাটা ও অখন্ডনীয় যুক্তিগুলাের সামনে লা-জবাব হয়ে তারা পালানাের চেষ্টা স্বরূপ আল্লাহর ইচ্ছার খোড়া ওজুহাত দাঁড় করাতো। তারা দাবী করতাে যে, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদের ফেরেশতার উপাসনায় সন্তুষ্ট। তা নাহলে তিনি এটা করতে দিতেন না, বরং বাধা দিতেন। এ উক্তিটা আসলে সত্যকে খন্ডনের অপকৌশল। এ কথা সত্য যে, সৃষ্টি জগতের যেখানে যা | কিছু ঘটে, তা আল্লাহর ইচ্ছাক্রমেই ঘটে। তবে এটাও আল্লাহর ইচ্ছাত্রমেই ঘটেছে যে, তিনি মানুষকে সৎপথ কিংবা অসৎপথ অবলম্বনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাকে সৎপথ অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন এবং তাতেই তিনি সন্তুষ্ট হবেন বলে জানিয়েছেন। আল্লাহর সাথে কুফরি তথা অবাধ্যতা ও বিপথগামিতায় তিনি অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন, যদিও তাকে সুপথগামী অথবা বিপথগামী দুটোই হবার স্বাধীনতা দেয়াও তার ইচ্ছা ছিলাে। মােশরেকরা যখন আল্লাহর ইচ্ছার বরাত দেয়, তখন তাকে নিছক স্ববিরােধিতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। কেননা তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয় যে, আল্লাহ তাদের ফেরেশতার পূজায় সন্তুষ্ট। নিশ্চিত হবেই বা কি করে? তারা তাে চিরকাল আন্দাজ অনুমান করতেই অভ্যস্ত। ‘আমি কি তাদেরকে ইতিপূর্বে কোনাে কিতাব দিয়েছি। যাকে তারা শক্তভাবে ধারণ করেছে।’ অর্থাৎ আমার কিতাবের ওপর নির্ভর করেই কি তারা এ দাবী করে থাকে এবং এবাদত করে থাকে? এভাবে কোরআন এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের পিছু নিয়েছে। সে বলছে যে, আকীদা বিশ্বাস কোনাে আন্দাষ-অনুমানের ব্যাপার নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহর ওহী বা কিতাবই একমাত্র নির্ভুল জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারে। যে ওহী বা কিতাবের বরাত দিয়ে কথা বলে, একমাত্র সেই নিশ্চিত ও অকাট্য সত্যের সন্ধান দিতে পারে। এই পর্যায়ে এসেই কোরআন তাদের এই উদ্ভট বিশ্বাসের একমাত্র উৎস কি তা জানিয়ে দিয়েছে। সে জানিয়ে দিচ্ছে যে, এটা কোনাে চাক্ষুস দর্শনের ফলও নয় কিংবা কোনাে কিতাব বা ওহীর শিক্ষা থেকেও এর উদ্ভব ঘটেনি। বরং তারা বলেছে, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে একটা এই মতাদর্শের ওপর পেয়েছি এবং তাদের পদাংক অনুসরণ করেই আমরা সঠিক গন্তব্যে পৌছাবে। এ কথাটা একদিকে যেমন যুক্তিবিহীন ও দুর্বল, অপরদিকে তেমনি কৌতুকপ্রদ ও হাস্যকরও। এটা কোনাে চিন্তা ভাবনা, বিচার বিবেচনা ও যুক্তি প্রমাণ ছাড়াই নিছক অন্ধ অনুকরণ ব্যতিত কিছু নয়। এটা সেই পশুপালের চিত্র তুলে ধরছে, যাকে যেদিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিকেই চলে যায় এবং কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা জানতেও চায় না। ইসলাম হচ্ছে স্বাধীন চিন্তা এবং মুক্ত ও অবাধ চেতনার আদর্শ। ইসলাম এই অদ্ধ অনুকরণের অনুমতি দেয় না। পূর্ব পুরুষের পদাংক অনুসরণ করে পাপাচার ও প্রবৃত্তির গােলামীকে গর্বের বিষয় মনে করাকে অনুমােদন করে না। ইসলামের প্রথম দৃষ্টিতে যুক্তি, প্রমাণ ও বিচার-বিবেচনা অপরিহার্য। তারপরই বিশ্বাস ও উপলব্ধির ভিত্তিতে একটা পথ অবলম্বন করতে হবে। এই আলােচনার শেষ পর্যায়ে অতীতের সেসব জাতির শােচনীয় পরিণতি তুলে ধরা হচ্ছে, যারা মক্কার কোরায়শের মতাে এ ধরনের উক্তি করেছে, তাদের মতাে অন্ধ অনুকরণ করেছে, নবীর দাওয়াতকে উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও প্রত্যাখ্যান করেছে এবং যথােচিতভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে বলা সত্তেও জিদ ও হঠকারিতা অব্যাহত রেখেছে।(আয়াত ২৩-২৫) এভাবে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, হেদায়াত থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের চরিত্র ও ওজুহাত সকল যুগেই এক ও অভিন্ন। সর্বকালেই তারা পূর্বপুরুষের অন্ধ অনুকরণে অভ্যস্ত এবং কোনাে নতুন দাওয়াতকে তারা গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয় না-তা চাই যতােই উপকারী ও নির্ভুল হােক না কেন, যতােই যুক্তি প্রমাণ দিয়ে তাদের ভুল ধরিয়ে দেয়া হােক না কেন। অবশেষে এই গােয়ার্তুমি ও একগুয়েমি এবং এই জিদ ও হঠকারিতার শেষ পরিণাম ধ্বংস ও চূড়ান্ত বিনাশ ছাড়া আর কিছু হয় না। কেননা কোনােক্রমেই তাদের চোখ খােলে না। কোনাে প্রকারেই তাদের মন ও বিবেক পুনর্বিবেচনায় রাযী হয় না এবং চেতনা ফিরে আসে না। এ হচ্ছে সেই মানব গােষ্ঠীর পরিণতি । এটা এই উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে বর্তমান তাদের চলতি আচরণ পদ্ধতির পরিণাম তাদের জানা হয়ে যায়।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১৫-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

মক্কার কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করত, শুধু তাই নয় বরং তাঁর জন্য কন্যা সন্তান সাব্যস্ত করত। এ আয়াতগুলোতে তাদের সেসব কথার তীব্র সমালোচনা ও ধিক্কার প্রদান করা হয়েছে।

جُزْءًا দ্বারা কারো মতে উদ্দেশ্য হল- কাফিররা তাদের দেব-দেবীর নামে তাদের যে-সব ফসল, চতুষ্পদ জন্তু ইত্যাদির একটি অংশ এবং আল্লাহ তা‘আলার নামে একটি অংশ রেখে দিত।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالْأَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هٰذَا لِلّٰهِ بِزَعْمِهِمْ وَهٰذَا لِشُرَكَا۬ئِنَا)

“আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্য একটি অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য’।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৩৬, ইবনে কাসীর- তাফসীর অত্র আয়াত)

আবার কারো মতে جزءا দ্বারা তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সন্তান-স্ত্রী পরিজন সাব্যস্ত করত তাই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর সা‘দী, তাফসীর মুয়াসসার) মোটকথা তারা বান্দাকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করে।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের ধিক্কার দিয়ে বলেন যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সন্তান সাব্যস্ত করে এমন সন্তান যদি তাদেরকে দান করা হয় তাহলে তাদের চেহারাসমূহ কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃখ-বেদনায় ব্যথিত হয়ে পড়ে। যে সন্তান তারা নিজেদের জন্য পছন্দ করে না সে সন্তান কিভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্য হতে পারে। এটাতো সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক কথা এবং বন্টনের দিক দিয়েও এটা একটি অশুভ বণ্টন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنْثٰي تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيْزٰي ‏)‏

“তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র, আর তাঁর জন্য কন্যা সন্তান? এ প্রকার বন্টন তো অসঙ্গত।” (সূরা নাজম ৫৩ : ২২)

তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সকল অংশীদার ও সন্তান, স্ত্রী-পরিজন সাব্যস্ত করে তা সম্পূর্ণই বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন; এ ব্যাপারে তাদের কোনই দলীল-প্রমাণ নেই। আর আল্লাহ তা‘আলা যদি সন্তান-স্ত্রী-পরিজন গ্রহণ করার চিন্তা-ভাবনা করতেন তাহলে তিনি তাঁর সৃষ্টি হতে উত্তম জিনিসই গ্রহণ করতেন। এ সকল জিনিস গ্রহণ করা থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত আর এটা তাঁর জন্য সমীচীনও নয়।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেন, মেয়েরা পুরুষের তুলনায় যে-সব বিষয়ে দুর্বল তা হলো : তারা তর্ক-বিতর্কে, স্পষ্ট বক্তব্যদান ইত্যাদিতে পুরুষের তুলনায় দুর্বল, আর তাদের বৈশিষ্ট্য হলো : তারা অলংকারে আবৃত হয়ে নিজ বাড়িতে স্বামীর ঘর-সংসার দেখাশোনা করবে, আর পুরুষ বাইরে কাজ-কর্ম করে মহিলাদের সমস্ত ব্যয়ভাব বহন করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, ফিরিশ্তারা আল্লাহর সন্তান নয় এবং তারা নারীও নয়; বরং তারা আল্লাহ তা‘আলার এক প্রকার বান্দা।

মুশরিকরা অন্যান্য বাতিল মা‘বূদের ইবাদত করার স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলে আল্লাহ তা‘আলা চাচ্ছেন তাই আমরা তাদের ইবাদত করি। যেমন অন্যত্র তাদের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(سَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا لَوْ شَا۬ءَ اللّٰهُ مَآ أَشْرَكْنَا وَلَا اٰبَا۬ؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ)

“যারা শির্ক করেছে তারা অচিরেই বলবে, ‘আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ শির্ক করতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করতাম না।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৪৮) তাদের এসব দাবী মিথ্যা ও অযৌক্তিক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কখনো কাউকে নির্দেশ দেননি তিনি ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. আল্লাহ তা‘আলার কোনই শরীক বা অংশীদার নেই আর তিনি সন্তান-স্ত্রী-পরিজন গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।
২. ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার বান্দা, তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার কন্যা নন।
৩. নিজের জন্য যা পছন্দনীয় নয় তা অপরের জন্য নির্ধারণ করা যাবে না।
৪. মহিলাদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানা গেল।
৫. মানুষ যা কিছু করে ও বলে তার সকল কিছুই লিখে রাখা হয়।

২১-২৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত দেব-দেবী, মূর্তি, চন্দ্র-সূর্য, গাছ ইত্যাদির পূজা করে তারা যে মূলত কোন প্রকার দলীল-প্রমাণ ছাড়াই পূর্ব পুরুষের দোহাই দিয়ে এ সকল কার্য-কলাপ করে সে কথাই বলা হয়েছে এ আয়াতগুলোতে। যখনই তাদের নিকট সত্যের দা‘ওয়াত দেয়া হয় তখনই তারা তাদের পূর্ব-পুরুষদের দোহাই দিয়ে সে সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। তারা বলে থাকে আমরা তো ইতোপূর্বে এরূপ কোন কথা শুনিনি। আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যেরূপ করতে দেখেছি সেরূপই করব। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি এবং মিথ্যাবাদী মনে করি। তাই আল্লাহ তা‘আলা এখানে তাদেরকে ভর্ৎসনা করে বলছেন যে, ইতোপূর্বে আমি কি তাদেরকে কোন কিতাব দান করেছি যা তারা আঁকড়ে ধরে আছে? মূলত তা নয়, বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে নিজেদেরকে তাদের অনুসারী বলে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(ثُمَّ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرَا ط كُلَّمَا جَا۬ءَ أُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ فَأَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَّجَعَلْنٰهُمْ أَحَادِيْثَ ج فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ)‏

“অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এক ধ্বংস করলাম। আমি তাদেরকে কাহিনীর বিষয়ে পরিণত করেছি। সুতরাং ধ্বংস সে সম্প্রদায়! যারা ঈমান আনে না (আল্লাহর রহমত হতে তারা অনেক দূরে)!” (সূরা মু’মিনূন ২৩ : ৪৪)

তারা তাদের এ অন্ধ অনুসরণের কারণে সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে, ফলে তারাই হয়েছে জাহান্নামে শাস্তির অধিকারী। সুতরাং যখন যার কাছে সত্য প্রকাশিত হবে তখন উচিত হবে তা দ্বিধা-সংকোচহীনভাবে মেনে নেয়া।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. শরীয়তের যে কোন আমল করতে হলে তার দলীল-প্রমাণ থাকতে হবে। দলীল-প্রমাণ ছাড়া কোন কাজ করা যাবে না।
২. একজন ব্যক্তি যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন এমনকি নিজের পিতা হলেও তার অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না।
৩. প্রত্যেক যুগে সমাজের সমৃদ্ধশালীরাই সত্যের বিরোধিতা করেছে।

১৫-২০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের ঐ অপবাদ ও মিথ্যার খবর দিচ্ছেন যা তারা তাঁর উপর আরোপ করেছিল, যার বর্ণনা সূরায়ে আন’আমের নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্যে এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলেঃ এটা আল্লাহর জন্যে এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্যে। যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌছে; তারা যা মীমাংসা করে তা নিকৃষ্ট।”(৬:১৩৬) অনুরূপভাবে মুশরিকরা ছেলে ও মেয়েদের ভাগ বন্টন করে মেয়েদেরকে সাব্যস্ত করতো আল্লাহর জন্যে, যারা তাদের ধারণায় ঘৃণ্য ছিল, আর ছেলেদেরকে নিজেদের জন্যে পছন্দ করতো। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি পুত্র সন্তান তোমাদের জন্যে এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে? এই প্রকার বন্টন তো অসংগত।”(৫৩:২১-২২)

এখানেও আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে তার অংশ সাব্যস্ত করেছে। মানুষ তো স্পষ্টই অকৃতজ্ঞ।”

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তিনি কি তাঁর সৃষ্টি হতে নিজের জন্যে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন পুত্র সন্তান দ্বারা?” এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের উক্তিকে চরমভাবে অস্বীকার করেছেন। তারপর পূর্ণভাবে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেনঃ দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে তাদের কাউকেও সেই সন্তানের সংবাদ দেয়া হলে তার চেহারা লজ্জায় কালো হয়ে যায়। শরমে সে মানুষকে মুখ দেখায় না। এটা যেন তার কাছে খুবই লজ্জার ব্যাপার। অথচ সে নিজের পূর্ণ নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করে বলে যে, আল্লাহর কন্যা রয়েছে। এটা কতই না বিস্ময়কর ব্যাপার যে, তারা নিজেদের জন্যে যা পছন্দ করে না তাই আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করছে!

অতঃপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করে এমন সন্তান, যে অলংকারে মণ্ডিত হয়ে লালিত পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ক কালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ? অর্থাৎ যে কন্যা সন্তানদেরকে অসম্পূর্ণ মনে করা হয় এবং অলংকারে মণ্ডিত করে যাদের এ অসম্পূর্ণতাকে ঢাকা দেয়া হয় এবং বাল্যাবস্থা হতে মৃত্যু পর্যন্ত যারা সাজ সজ্জারই মুখাপেক্ষী থেকে যায়, আবার ঝগড়া-বিবাদ এবং তর্ক-বিতর্কের সময় যাদের কথাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয় না, এদেরকেই মহামহিমান্বিত আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করা হচ্ছে। যাদের বাহির ও ভিতর ত্রুটিপূর্ণ, যাদের বাহ্যিক ক্রটিকে অলংকারের দ্বারা দূর করার চেষ্টা করা হয়, তাদেরকেই সম্পর্কযুক্ত করা হয় আল্লাহর সাথে। মেয়েদের বাহ্যিক ত্রুটিকে ঢাকা দেয়ার জন্যে অলংকার দ্বারা যে তাদেরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয় এটা আরব কবিদের কবিতার মধ্যেও পাওয়া যায়। যেমন কোন আরব কবি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৌন্দর্যের ক্রটি দূর করার জন্যেই অলংকারের প্রয়োজন হয়, সুতরাং পূর্ণ সৌন্দর্যের জন্যে অলংকারের কি প্রয়োজন?”

মেয়েদের আভ্যন্তরীণ ক্রটিও রয়েছে, যেমন তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে না। না মুখের দ্বারা পারে, না সাহসিকতার দ্বারা পারে। কোন একজন আরববাসী এটাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে শুধু কান্নাকাটির দ্বারা সাহায্য করতে পারে এবং শুধু গোপনে কোন কল্যাণের কার্য করতে পারে।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী গণ্য করেছে।’ অর্থাৎ তারা এটা বিশ্বাস করে নিয়েছে। মহান আল্লাহ তাদের এই উক্তিকে অস্বীকার করে বলেনঃ ‘এদের সৃষ্টি কি তারা প্রত্যক্ষ করেছে?’ অর্থাৎ আল্লাহ যে ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছেন এটা কি তারা দেখেছে? এরপর তিনি বলেনঃ ‘তাদের এই উক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর দ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করা হয়েছে।

এরপর তাদের আরো নির্বুদ্ধিতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না।’ অর্থাৎ “আমরা ফেরেশতাদেরকে নারী মনে করে ওদের মূর্তি বানিয়েছি এবং ওদের পূজা করছি, এটা যদি আল্লাহর ইচ্ছা না থাকতো তবে তিনি আমাদের এবং ওদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারতেন এবং তখন আমরা এদের আর পূজা করতে পারতাম না। সুতরাং আমরা যখন এদের পূজা করছি এবং তিনি আমাদের ও এদের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি তখন এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমরা ভুল করছি না, বরং ঠিকই করছি।” সুতরাং তাদের প্রথম ভুল এই যে, তারা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করেছে। তাদের দ্বিতীয় ভুল হলো এই যে, তারা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করেছে। আর তাদের তৃতীয় ভুল হচ্ছে এই যে, তারা ফেরেশতাদের পূজা শুরু করে দিয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে দলীল প্রমাণ কিছুই নেই। তারা শুধু তাদের পূর্বপুরুষদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করছে। তাদের চতুর্থ ভুল এই যে, তারা এটাকে আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত বলছে এবং এর কারণ এই বের করেছে যে, যদি আল্লাহ তাদের এই কাজে অসন্তুষ্ট থাকতেন তবে তাদের জন্যে এদের পূজা করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এটা তাদের সরাসরি মূর্খতা ও অবাধ্যতা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তাদের এ কাজে চরম অসন্তুষ্ট। এক একজন নবী (আঃ) এটা খণ্ডন করে গেছেন এবং এক একটি কিতাব এর নিকৃষ্টতা বর্ণনা করেছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (একথা বলাবার জন্যে) যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাগূতের (শয়তানের বা অন্যান্যদের) ইবাদত হতে দূরে থাকো, অতঃপর তাদের মধ্যে কতক এমন বের হয় যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেন এবং তাদের মধ্যে কতক এমনও বের হয় যাদের উপর পথভ্রষ্টতা বাস্তবায়িত হয়। সুতরাং ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ কর এবং দেখো যে, অবিশ্বাসকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল।”(১৬:৩৬) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে (রাসূলরূপে) প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস করঃ আমি কি তাদেরকে রহমান (আল্লাহ) ছাড়া অন্যান্যদের ইবাদত করার অনুমতি দিয়েছিলাম? (কখনো নয়)।'(৪৩:৪৫)

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা সবকিছুই নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে। অর্থাৎ তাদের আল্লাহর কুদরত বা ক্ষমতা
সম্পর্কে কোন জ্ঞানই নেই।

২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, যে লোকেরা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের ইবাদত করে তাদের কাছে এ ব্যাপারে দলীল প্রমাণ কিছুই নেই। তাই তিনি বলেনঃ “আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোন কিতাব দান করেছি যা তারা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে? অর্থাৎ তাদের কাছে কি তাদের শিরকের দলীল স্বরূপ কোন কিতাব বিদ্যমান রয়েছে? অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে এরূপ দলীল সম্বলিত কোন কিতাব তাদের কাছে নেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কি তাদের উপর এমন সুলতান অবতীর্ণ করেছি যে তাদেরকে শিরক করতে বলে?”(৩০:৩৫) অর্থাৎ এই রূপ নয়।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘বরং তারা বলে- আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করছি।’ অর্থাৎ শিরকের কোন দলীল তাদের কাছে নেই, শুধুমাত্র দলীল এটাই যে, তাদের পূর্বপুরুষরা এরূপ করতো। তাদেরকেই তারা অনুসরণ করছে। এখানে উম্মত’ দ্বারা দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে।

মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ “এই ভাবে আমি তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন ওর শক্তিশালী ব্যক্তিরা বলতো- আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করছি।’ যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের পূর্ববর্তীদের নিকটও রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে যাদুকর ও পাগল বলেছিল।”(৫১:৫২) সুতরাং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবারই মুখে এই একই কথা ছিল। প্রকৃতপক্ষে ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতায় এরা সবাই সমান।

ঐ সতর্ককারী তাদেরকে বলতেনঃ তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছো, আমি যদি তোমাদের জন্যে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথ-নির্দেশ আনয়ন করি, তবুও কি তোমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করবে? উত্তরে তারা বলতোঃ ‘তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।’ অর্থাৎ তারা যদিও জানতো যে, নবীদের শিক্ষা তাদের পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ হতে বহুগুণে শ্রেয়, তথাপি তাদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা তাদেরকে সত্য কল করতে দেয়নি। তাই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দিলাম। দেখো, মিথ্যাচারীদের পরিণাম কি হয়েছে! অর্থাৎ কাফিরদেরকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং কিভাবে মুমিনরা মুক্তি পেয়েছে তা তুমি লক্ষ্য কর।

Leave a Reply