بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৩১ / এবং কাফির রা বলে -৯) [*  *বিজয়ের স্পষ্ট ওয়াদা :- *যারা কুফরী করে, মসজিদে হারামে যেতে বাধা দেয়:- *আল্লাহ‌ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন:- *সমস্ত জীবন বিধানের ওপর ইসলাম জয়যুক্ত হবে:- মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল(সঃ) আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন:-] www.motaher21.net সূরা:৪৮-ফাত্হ।পারা:২৬ ২০-২৯ নং আয়াত:- তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৩১ / এবং কাফির রা বলে -৯)
[*  *বিজয়ের স্পষ্ট ওয়াদা :-
*যারা কুফরী করে, মসজিদে হারামে যেতে বাধা দেয়:-
*আল্লাহ‌ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন:-
*সমস্ত জীবন বিধানের ওপর ইসলাম জয়যুক্ত হবে:-
মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল(সঃ) আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন:-]
www.motaher21.net
সূরা:৪৮-ফাত্হ।পারা:২৬
২০-২৯ নং আয়াত:-
তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

সূরা:৪৮-ফাত্হ-২০
وَعَدَکُمُ اللّٰہُ مَغَانِمَ کَثِیۡرَۃً تَاۡخُذُوۡنَہَا فَعَجَّلَ لَکُمۡ ہٰذِہٖ وَ کَفَّ اَیۡدِیَ النَّاسِ عَنۡکُمۡ ۚ وَ لِتَکُوۡنَ اٰیَۃً لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ یَہۡدِیَکُمۡ صِرَاطًا مُّسۡتَقِیۡمًا ﴿ۙ۲۰﴾
আল্লাহর তোমাদরকে অঢেল গনীমতের সম্পদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তোমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিজয় দিয়েছেন এবং তোমাদের বিরুদ্ধে মানুষের হাত উত্তোলনকে থামিয়ে দিয়েছেন যাতে মু’মিনদের জন্য তা একটি নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আল্লাহ‌ তোমাদেরকে সোজা পথের হিদায়াত দান করেন।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২১
وَّ اُخۡرٰی لَمۡ تَقۡدِرُوۡا عَلَیۡہَا قَدۡ اَحَاطَ اللّٰہُ بِہَا ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرًا ﴿۲۱﴾
আরো বহু সম্পদ রয়েছে, যা এখনো তোমরা অধিকারভুক্ত করতে পারনি, তা তো আল্লাহর আয়ত্তে আছে। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২২
وَ لَوۡ قٰتَلَکُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَوَلَّوُا الۡاَدۡبَارَ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡنَ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیۡرًا ﴿۲۲﴾
যারা কুফরী করেছে তারা যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তবে তারা অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, তারপর তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৩
سُنَّۃَ اللّٰہِ الَّتِیۡ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلُ ۚۖ وَ لَنۡ تَجِدَ لِسُنَّۃِ اللّٰہِ تَبۡدِیۡلًا ﴿۲۳﴾
এটাই আল্লাহ্‌র বিধান—পূর্ব থেকেই যা চলে আসছে, আপনি আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবেন না।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৪
وَ ہُوَ الَّذِیۡ کَفَّ اَیۡدِیَہُمۡ عَنۡکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ عَنۡہُمۡ بِبَطۡنِ مَکَّۃَ مِنۡۢ بَعۡدِ اَنۡ اَظۡفَرَکُمۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرًا ﴿۲۴﴾
তিনিই সেই সত্তা যিনি মক্কা ভূমিতে তাদের হাত তোমাদের থেকে আর তোমাদের হাত তাদের থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের ওপর তোমাদেরকে আধিপত্য দান করার পর। তোমরা যা কিছু করছিলে আল্লাহ‌ তা দেখছিলেন।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৫
ہُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ صَدُّوۡکُمۡ عَنِ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ وَ الۡہَدۡیَ مَعۡکُوۡفًا اَنۡ یَّبۡلُغَ مَحِلَّہٗ ؕ وَ لَوۡ لَا رِجَالٌ مُّؤۡمِنُوۡنَ وَ نِسَآءٌ مُّؤۡمِنٰتٌ لَّمۡ تَعۡلَمُوۡہُمۡ اَنۡ تَطَـُٔوۡہُمۡ فَتُصِیۡبَکُمۡ مِّنۡہُمۡ مَّعَرَّۃٌۢ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ۚ لِیُدۡخِلَ اللّٰہُ فِیۡ رَحۡمَتِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ لَوۡ تَزَیَّلُوۡا لَعَذَّبۡنَا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡہُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا ﴿۲۵﴾
এরাই তো সেসব লোক যারা কুফরী করেছে, তোমাদেরকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা দিয়েছে এবং কুরবানীর উটসমূহকে কুরবানী গাহে পৌঁছতে দেয়নি। যদি (মক্কায়) এমন নারী পুরুষ না থাকতো যাদেরকে তোমরা চিন না অজান্তে তাদেরকে পদদলিত করে ফেলবে এবং তাদের কারণে তোমরা বদনাম কুড়াবে এমন আশঙ্কা না থাকতো (তাহলে যুদ্ধ থামানো হতো না। তা বন্ধ করা হয়েছে এ কারণে) যে, আল্লাহ‌ যাকে ইচ্ছা যেন তাঁর রহমতের মধ্যে স্থান দেন। সেসব মু’মিন যদি আলাদা হয়ে যেতো তাহলে (মক্কাবাসীদের মধ্যে) যারা কাফের ছিল আমি অবশ্যই তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতাম।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৬
اِذۡ جَعَلَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ قُلُوۡبِہِمُ الۡحَمِیَّۃَ حَمِیَّۃَ الۡجَاہِلِیَّۃِ فَاَنۡزَلَ اللّٰہُ سَکِیۡنَتَہٗ عَلٰی رَسُوۡلِہٖ وَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ اَلۡزَمَہُمۡ کَلِمَۃَ التَّقۡوٰی وَ کَانُوۡۤا اَحَقَّ بِہَا وَ اَہۡلَہَا ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا ﴿٪۲۶﴾
যখন কাফিররা তাদের অন্তরে পোষন করেছিল গোত্রীয় অহমিকা — অজ্ঞতার যুগের অহমিকা । তখন আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন ; আর তাদেরকে তাকওয়ার কালেমায় সুদৃঢ় করলেন, আর তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আর আল্লাহ্‌ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৭
لَقَدۡ صَدَقَ اللّٰہُ رَسُوۡلَہُ الرُّءۡیَا بِالۡحَقِّ ۚ لَتَدۡخُلُنَّ الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ اٰمِنِیۡنَ ۙ مُحَلِّقِیۡنَ رُءُوۡسَکُمۡ وَ مُقَصِّرِیۡنَ ۙ لَا تَخَافُوۡنَ ؕ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُوۡا فَجَعَلَ مِنۡ دُوۡنِ ذٰلِکَ فَتۡحًا قَرِیۡبًا ﴿۲۷﴾
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ‌ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন- যা ছিল সরাসরি হক। ইনশাআল্লাহ তোমরা পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে। নিজেদের মাথা মুণ্ডন করবে, চুল কাটাবে এবং তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। তোমরা যা জানতে না তিনি তা জানতেন। তাই স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করার পূর্বে তিনি তোমাদেরকে এ আসন্ন বিজয় দান করেছেন।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৮
ہُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَہٗ بِالۡہُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡہِرَہٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّہٖ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًا ﴿ؕ۲۸﴾
তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, অন্য সমস্ত দ্বীনের উপর একে জয়যুক্ত করার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
সূরা:৪৮-ফাত্হ-২৯
مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ تَرٰىہُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاہُمۡ فِیۡ وُجُوۡہِہِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ وَ مَثَلُہُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔہٗ فَاٰزَرَہٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِہٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ الۡکُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿٪۲۹﴾
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল ; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল ; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট ; এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জীলে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নিৰ্গত হয় কচিপাতা, তারপর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*বিজয়ের স্পষ্ট ওয়াদা : এরপর বলা হয়েছে, ‘এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন…’ এখানে প্রথমে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে বিজয় বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ এই সন্ধির মাধ্যমেই তাদের কাংখিত বিজয়ের সূচনা হয়েছিলাে। এই বিজয়ের একটি হচ্ছে খায়বার যুদ্ধের বিজয়। এই বিজয়কেই অধিকাংশ মুফাসসিরগণ ‘আসন্ন বিজয়’ এর ব্যাখ্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হুদায়বিয়া সন্ধির পর পরই আল্লাহ তায়ালা এটা মােমেনদেরকে দান করেছিলেন। এরপর বলা হয়েছে, ‘এবং বিপুল পরিমাণে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যা তারা লাভ করবে…’ বিপুল পরিমাণের যুদ্ধলব্ধ মালামাল হয় তারা বিজয়ের সাথে সাথে লাভ করবে। (যেটা খায়বার যুদ্ধের সময় তারা লাভ করেছিলাে) অথবা হুদায়বিয়ার সন্ধির পরবর্তীকালে লাভ করবে। যদি এখানে বিজয় বলতে হােদায়বিয়ার সন্ধিকেই বুঝানাে হয়ে থাকে তাহলে এই হবে তার অর্থ। কারণ, এই সন্ধির পর মুসলমানরা বেশ কিছু যুদ্ধের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে নিতে পেরেছিলাে ফলে তাদের পক্ষে একাধিক যুদ্ধে বিজয় লাভ করার সুযােগ হয়েছিলাে। এরপর বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ এই মন্তব্যটি পূর্ববর্তী আয়াতগুলাের মর্মার্থের সাথে একান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, সন্তুষ্টি, বিজয় ও যুদ্ধলব্ধ মালামালের প্রতিশ্রুতির মাঝে শক্তি ও ক্ষমতা প্রকাশ পায়। তদ্রুপ এসব বিষয়ে প্রজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও প্রকাশ পায়। কারণ এ দুটো গুণ না থাকলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারতেন না। আগের আয়াতগুলােতে রসূলের হাতে হাত মিলিয়ে শপথ গ্রহণকারী সৌভাগ্যবান মােমেনদের সম্পর্কে রসূলকে অবহিত করার পর এখন স্বয়ং সেই মােমেনদেরকে লক্ষ্য করেই আল্লাহ তায়ালা কথা বলছেন, এই সন্ধি সম্পর্কে আলােচনা করছেন এবং সেই বিজয় সম্পর্কেও আলােচনা করছেন, যে বিজয় লাভ করতে গিয়ে তাদেরকে ধৈর্য ও সাহসের পরিচয় দিতে হয়েছিলাে। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকে বিপুল পরিমাণে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তােমরা লাভ করবে। তিনি তা তােমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন…'(আয়াত ২০-২১) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঘােষিত এই শুভসংবাদটি মােমেন বান্দারা নিজ কানে শুনেছিলাে এবং তা তারা বিশ্বাস করেছিলাে। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছিলাে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য বিপুল পরিমাণের যুদ্ধলব্ধ মালামাল ব্যবস্থা করে রেখে দিয়েছেন। যতােদিন তারা জীবিত ছিলাে ততােদিন তারা এই ওয়াদার সত্যতার প্রমাণ নিজ চোখে দেখেছে। এখানে তাদেরকে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সে যুদ্ধলব্ধ মালামাল অতিসত্বরই দান করবেন। তাই বলা যায়, হুদায়বিয়ার সন্ধিই এখানে তাদের জন্য যুদ্ধলব্ধ মালামাল হিসেবে এসেছে, ইবনে আব্বাস(রা.)-এর পক্ষ থেকে এই ব্যাখ্যাটিই বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাও তাই সাক্ষ্য দেয় এবং স্বয়ং রসূলুল্লাহ(স.)-এর একটি হাদীসও এই মতটিকেই প্রতিষ্ঠিত করে। ইতিপূর্বে হাদীসটি আমরা উল্লেখ করেছি। অথবা বলা যায়, যুদ্ধলব্ধ এই মালামাল বলতে খায়বার বিজয়ের মাধ্যমে লন্ধ মালামাল বুঝানাে হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটা মত বিশিষ্ট তাবেয়ী মােজাহেদ এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে। কারণ, হুদায়বিয়া সন্ধির পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে কাছাকাছি যুদ্ধটি ছিলাে খায়বার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুসলমানরা প্রচুর পরিমাণে গনীমতের মাল লাভ করেছিলাে। তবে প্রথম মতটিই সর্বাধিক যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযােগ্য। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মােমেনদের প্রতি তার অন্যতম কৃপার কথা স্মরণ করিয়ে বলছেন যে, ‘তিনি তােমাদেরকে শক্রদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।’ আসলেই আল্লাহ তায়ালা মােমেনদেরকে মক্কার মােশরেকদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী আরাে অন্যান্য শত্রুদের হাত থেকেও তিনি তাদেরকে রক্ষা করেছেন। শত্রুদের তুলনায় তাদের সংখ্যা সব সময়ই কম ছিলাে। কিন্তু তা সত্তেও তারা নবীর সাথে করা শপথ পূর্ণ করে দেখিয়েছে এবং তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বও পুরােপুরি পালন করেছে। আর তাই আল্লাহ তায়ালা ও তাদেরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এরপর বলা হয়েছে, ‘যাতে এটা মােমেনদের জন্য একটা নিদর্শন হয়’ অর্থাৎ যে হুদায়বিয়ার সন্ধি প্রথম তাদের কাছে অপছন্দনীয় মনে হয়েছিলাে এবং তাদের মনের ওপর একটা বােঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাে সেটা সম্পর্কেই আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, পরবর্তীতে সেটা তাদের জন্য একটা নিদর্শন হয়ে থাকবে এবং এর মাঝেই তাদের শুভ পরিণতি ও উত্তম প্রতিদান নিহিত থাকবে। যেহেতু এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি তাদের আনুগত্য ও আত্মনিবেদন প্রকাশ পাবে, তাই এর পরিণতি ও প্রতিদান শুভ হবে উত্তম হবে। এই সত্যটি জানার পর তাদের মনে শান্তি বিরাজ করবে, স্থিতি ফিরে আসবে এবং বিশ্বাস ও আস্থা জন্মাবে। আলােচ্য আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে, ‘এবং তােমাদেরকে পরিচালিত করবেন’ অর্থাৎ তােমাদের আনুগত্য, আত্মসমর্পণ, সততা ও নিষ্ঠার প্রতিদানস্বরূপ তােমাদেরকে তিনি সরল পথে পরিচালিত করবেন, আর এভাবেই তারা নিজেদের আনুগত্য ও সততার প্রতিদানস্বরূপ গনীমতের মালামালও লাভ করবে এবং সৎ পথের সন্ধানও পাবে। ফলে সবদিক থেকেই তারা লাভবান হবে। এর দ্বারা বান্দাদেরকে আল্লাহ তায়ালা একথাই শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তার ইচ্ছা ও পছন্দই হচ্ছে চূড়ান্ত, আর বান্দার দায়িত্ব হচ্ছে এই ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণ করা এবং তা বাস্তবায়নে আত্মনিয়ােগ করা।
“আল্লাহর পক্ষ থেকে আরাে একটি সুসংবাদ : পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আর একটি অনুগ্রহের সুসংবাদ দিচ্ছেন, আর সেটা হচ্ছে একটি বিজয়ের সুসংবাদ। এই বিজয় লাভ করা মােমেনদের ক্ষমতাবলে সাধ্যাতীত ছিলাে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে এবং নিজ শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়ােগ করে তাদের জন্যে এ বিজয়টি এনে দেন। আয়াতের নিজস্ব ভাষায় বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আরও একটি বিজয় রয়েছে যা এখনও তােমাদের অধিকারে আসেনি, আল্লাহ তায়ালা তা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান'(আয়াত ২১) আলােচ্য আয়াতে কোনাে বিজয়টির কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়েও বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেন, এটি হলাে মক্কা বিজয়ের ঘটনা। কেউ বলেন, খায়বার বিজয়ের ঘটনা। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা পারস্য ও রােম বিজয়ের সুসংবাদ। আবার অনেকে মনে করেন, এর দ্বারা হুদায়বিয়া সন্ধি পরবর্তী সকল বিজয়ের কথাই বুঝানাে হয়েছে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযােগ্য এবং প্রসঙ্গের সাথে সামঞ্জপূর্ণ রায়টি হচ্ছে এই যে, এর দ্বারা মক্কা বিজয়ের কথা বুঝানাে হয়েছে। কারণ, মক্কা বিজয়ের ঘটনা এই সন্ধি চুক্তি লংঘন করার কারণেই ঘটেছিলাে। উল্লেখ্য যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি দুই বছরের বেশী টিকেনি। দুই বছরের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়াই মুসলমানরা মক্কা জয় করে নেয়। অথচ এই মক্কা জয় করা ছিলাে তাদের জন্য একটা কঠিন বিষয়। এই মক্কাতেই তারা কাফেরদের আক্রমণ ও নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছিলাে। হেদায়বিয়ার সন্ধির বছরে সেখান থেকেই তাদেরকে ফিরে আসতে হয়েছিলাে। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এই মক্কাকে যুদ্ধ ছাড়াই মুসলমানদের হাতে ফিরিয়ে দেন। কারণ, তিনি সব কিছুই পারেন এবং সব কিছুই তার ক্ষমতার আওতাধীন। আসলে এখানে সুসংবাদটিকে রহস্যময় করে বর্ণনা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে ও খােলাসা করে কিছুই বলা হয়নি। কারণ, এই সুসংবাদসম্বলিত আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয় তখন বিষয়টি ছিলাে সম্পূর্ণ অজানা ও অদৃশ্য। কাজেই এখানে সেটা আকারে ইংগিতে বর্ণনা করা হয়েছে। এর ফলে বিষয়টির প্রতি আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসা জন্ম নেবে। সাথে সাথে মােমেনদের অন্তরে একধরনের সান্তনা ও প্রশান্তিও জন্ম নেবে। হুদায়বিয়া সন্ধির ফলে মােমেন বান্দারা তাৎক্ষণিকভাবে এবং ভবিষ্যতে কি কি ফল লাভ করবে তা উল্লেখ করার পর প্রসঙ্গক্রমে পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছে যে, এই চুক্তির দ্বারা প্রকৃতপক্ষে মােমেন-রাই বিজয় হয়েছে। তারা দুর্বল এবং প্রতিপক্ষ শক্তিশালী বলে এই সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরের নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কোনাে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ কাফেরের দল যদি মুমিনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতো তাহলে সেই কাফেরের দলই হেরে যেত। কারণ, এটাই আল্লাহ তায়ালার চিরন্তন নিয়ম। যখনই কোনাে চূড়ান্ত মুহুর্তে মােমেন ও কাফেররা মুখােমুখি হয়েছে তখনই এই নিয়ম অনুসারে কাফেরদের পরাজয় ঘটেছে। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি কাফেররা তােমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতাে, তবে অবশ্যই তারা পেছন ফিরে পালিয়ে যেতাে। তখন তারা কোনাে অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেতাে না। এটাই আল্লাহ তায়ালার নীতি যা পূর্ব থেকে চলে আসছে। তুমি আল্লাহ তায়ালার নীতিতে আদৌ কোনাে পরিবর্তন পাবে না।'(আয়াত ২২-২৩) আর এই অপরিবর্তনীয় নীতির ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়েছে মােমেনদের বিজয় ও কাফেরদের পরাজয়। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এই নীতিটি যখন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঘােষণা করা হচ্ছিলাে তখন মােমেনদের অন্তরে কি ধরনের বিশ্বাস, আস্থা ও প্রশান্তি জন্ম নিয়েছিলাে? হ্যা, এটাই হচ্ছে চিরন্তন ও শাশ্বত নীতি। তবে এর বাস্তবায়নে মাঝে মধ্যে বিলম্ব ঘটে থাকে। এর পেছনে অবশ্য অনেক কারণ থাকতে পারে। এই কারণ কখনও সঠিক পথ ও সঠিক নীতির ওপর অটল থাকা না থাকার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। আবার কখনও মােমেনদের বিজয় আর কাফেরদের পরাজয় নিশ্চিত করার মতাে পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা না করার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। এসব কারণ সম্পর্কে সঠিকভাবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন। তবে আল্লাহ তায়ালার এই শাশ্বত ও চিরন্তন নিয়মের ব্যত্যয় অবশ্যই ঘটে না। কারণ আল্লাহ তায়ালার কথা কখনও অসত্য হতে পারে না। আর তিনিই বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নীতিতে তুমি কখনও পরিবর্তন পাবে না।’
*আল্লাহ তায়ালার একটি অনুগ্রহ : এরপর আল্লাহ তায়ালা মােমেনদের সামনে তার আর একটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন, আর সেটা হলাে, কাফেরদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করা আল্লাহর ওয়াদা। এটা ঘটেছিলাে কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর যখন মােমেনদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিজয়ী করেছিলেন তখন। এই আয়াত দ্বারা মক্কা বিজয়ের সময় ঘটে যাওয়া একটা বিশেষ ঘটনার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। এই ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, চল্লিশজন বা এর কম ও বেশীসংখ্যক মােশরেক মুসলমানদের শিবিরে ঢুকে তাদের ক্ষতি করতে চেয়েছিলাে। কিন্তু মুসলমানরা তাদেরকে পাকড়াও করে ফেলে এবং তাদেরকে রসূলুল্লাহ(স.)-এর সামনে নিয়ে হাযির করে। তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। এ সম্পর্কেই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনিই মক্কা শহরে তাদের হাত তােমাদের থেকে এবং তােমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের ওপর তােমাদেরকে বিজয়ী করার পর'(আয়াত ২৪) ঘটনাটি ঘটে গেছে এবং সবাই তা জেনেও নিয়েছে। তারপরও আল্লাহ তায়ালা সে ঘটনাটি এই বিশেষ ভঙ্গিতে বর্ণনা করছেন। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বুঝাতে চান এবং প্রমাণ করতে চান যে, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে ও হচ্ছে তার পেছনে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও তদবীর কার্যকর। এই সত্যটি জানার পর মােমন বান্দার মনে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে, সে তখন বিশ্বাস করবে যে, সব কিছু আল্লাহই করেন, তিনিই তাকে চালান, তিনিই তার মনকে নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই তাঁর প্রতিই পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করতে হবে, তার হাতেই নির্দ্বিধায় নিজেকে সঁপে দিতে হবে, তার মনােনীত বিধানেই তাকে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হবে, গােটা আবেগ অনুভূতি নিয়ে, হৃদয় মন দিয়ে এবং সকল ধ্যান ধারণা দিয়ে এই ইসলামকে গ্রহণ করতে হবে, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, হুকুমদাতা একমাত্র আল্লাহই, আল্লাহ তায়ালার পছন্দই সঠিক পছন্দ, তাঁর নির্ধারিত তাকদির ও ইচ্ছা অনুযায়ী তার পছন্দ ও অপছন্দমাফিক মানুষকে চালানাে হয়, তবে তিনি সব সময়ই মানুষের মঙ্গল চান। তাই মানুষ যখন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তায়ালার হাতে সঁপে দেয় তখন খুব সহজেই সে মঙ্গলের পথে ধাবিত হয়। তিনি মানুষের সব বিষয় সম্পর্কে অবগত। তিনি তাদের গােপন ও প্রকাশ্য সকল বিষয়ই দেখেন ও জানেন। তাই যখন তিনি তাদের জন্য কোনাে কিছু মনােনীত করেন তখন তা জেনে ও বুঝেই করেন। তিনি এর দ্বারা কখনও তাদের অমঙ্গল কামনা করেন না। তিনি যা ফয়সালা করেন তা জেনে ও বুঝেই করেন। তিনি এর দ্বারা কখনও তার বান্দাদের অমঙ্গল কামনা করেন না এবং তাদের কোনাে প্রাপ্যই তিনি ব্যর্থ যেতে দেন না। তাই আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, তােমরা যা কিছু করাে তা আল্লাহর তায়ালা দেখেন।
“আল্লাহর কাছে বিধর্মীদের স্থান : পরবর্তী আয়াতে মুসলমানদের শত্রুদের সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার মাপকাঠিতে তাদের স্থান কোথায় তা বলা হয়েছে। এদের কার্যকলাপ, মুসলমানদের সাথে এদের আচরণ এবং আল্লাহ তায়ালার ঘর থেকে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার মতাে যে জঘন্য কাজ এরা করে তা আল্লাহ তায়ালা কোন দৃষ্টিতে দেখেন সে বিষয়েও আলােচনা করা হয়েছে। খােদ মােমেনদের আল্লাহ তায়ালা কোনাে দৃষ্টিতে দেখেন সেটাও এখানে আলােচিত হয়েছে। যেমন আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারাই তাে কুফরী করেছে এবং অবস্থানরত কোরবানীর জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌঁছতে…'(আয়াত ২৫) অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে ও তার মাপকাঠিতে ওরা প্রকৃতভাবেই কাফের ও বেঈমান। তাই তিনি তাদের জন্য এই ঘৃণ্য ও অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন যে, ‘ওরাই তাে কুফরী করেছে’- এই মন্তব্য দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বুঝাতে চেয়েছেন- এই বিশেষণের উপযুক্ত একমাত্র ওরাই এবং এই বিশেষণ যেন ওদের অস্থি মজ্জায় মিশে রয়েছে। কাজেই তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত ঘৃণ্য জাতি। কারণ, তিনি কুফরীকে ঘৃণা করেন এবং কাফেরদেরকেও ঘৃণা করেন। ওদের আরাে একটি ঘৃণ্য কাজের কথা আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন। আর তা হলাে আল্লাহর মুমিন বান্দাদেরকে তারই ঘর থেকে ওরা ফিরিয়ে রাখে এবং কোরবানীর জন্তুগুলােকে যথাস্থানে পৌছার পথে ওরা বাধার সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালার ঘরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া এবং কোরবানীর পশুগুলােকে কোরবানীর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করা জাহেলী যুগেও বিরাট পাপের বিষয় ছিলাে এবং ইসলামেও তা জঘন্য পাপ বলে বিবেচিত। শুধু তাই নয়, বরং তখনকার আরব উপদ্বীপে প্রচলিত ও পরিচিত সকল ধর্ম, প্রথা ও রীতি নীতিতেও তা ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজ বলে বিবেচিত ছিলাে। অর্থাৎ মুসলিম ও কাফের নির্বিশেষে সকলের দৃষ্টিতেই কাজটি ঘৃণ্য কাজ হিসেবে গণ্য। তাহলে বুঝা গেলাে যে, কাফেরদের হাত থেকে মােমেনদেরকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য কেবল তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করাই নয়, বরং এর পেছনে আরাে একটি মহান উদ্দেশ্য নিহিত আছে। সেটার প্রতি ইংগিত করে পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, যদি সেদিন মক্কা নগরীতে এমন কিছু মােমেন নরনারী না থাকতাে- যাদেরকে তােমরা জানতে না। তাছাড়া এই আশঙ্কা যদি না হতাে যে, না জেনে তাদেরকে পদদলিত করার পর তােমরা অনুতপ্ত হবে তাহলে এ যুদ্ধ কিছুতেই বন্ধ করা হতাে না। আয়াতে বলা হয়েছে যে, মক্কায় বেশ কিছু অসহায় ও দুর্বল মুসলিম নরনারী ছিলাে যারা তখনও মদীনায় হিজরত করতে পারেনি। মােশরেকদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গােপন রেখেছিলাে। যদি মক্কা বিজয়ের দিন যুদ্ধ বেধে যেতাে, আর মুসলমানরা মক্কায় আক্রমণ করতাে তাহলে মক্কার সেই অজ্ঞাত ও অপরিচিত মুসলমানদের ওপরও তারা চড়াও হতাে এবং তাদেরকে হত্যা করতাে। তখন মানুষ বলাবলি করার সুযােগ পেতাে যে, মুসলমানরা মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, বরং পরবর্তীতে এই ভুলবশত হত্যার জন্য তাদেরকে রক্তপণও দিতে হতাে। এখানে আরাে একটি উদ্দেশ্য নিহিত আছে। আর তাহলাে, যেসব কাফেরও ছিলাে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা জানতেন যে, এরা পরে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। এখন যদি এই লােকগুলাে আসল ও প্রকৃত কাফেরদের থেকে স্বতন্ত্র থাকতাে এবং তাদের ভিন্ন কোনাে পরিচয় থাকতাে তাহলে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দিতেন। আর তখন তারা কাফেরদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে পারতাে। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যেন আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে দাখিল করে নেন। যদি তারা সরে যেতাে, তবে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিতাম।’
“কাফেরদের অহংকার ও গােড়ামী : এখানে আল্লাহ তায়ালা তার মনােনীত, অনন্য ও সৌভাগ্যবান মােমেন বান্দাদের সামনে তার কর্ম ও সিদ্ধান্তের পেছনে লুকায়িত রহস্য ও উদ্দেশ্যবলীর দু’একটি দিক তুলে ধরেছেন। এরপর পুনরায় কাফেরদের স্বভাব চরিত্র ও তাদের মন মানসিকতার প্রতি ইংগিত করে বলেন, ‘কেননা, কাফেররা তাদের অন্তরে জাহেলী যুগের জেদ পােষণ করত।'(আয়াত ২৬) বলা বাহুল্য, তাদের এই জেদ কোনাে বিশ্বাস বা মতাদর্শের কারণে ছিলাে না। বরং এই জেদ ছিলাে নিতান্তই অহংকার, গোড়ামী ও গােয়ার্তুমীর কারণে। এই জেদের বশবর্তী হয়েই তারা রসূলুল্লাহ(স.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেছে, সাহাবাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার ঘরে প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং কোরবানীর জন্য আনীত পশুগুলােকে কোরবানীর নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যেতে দেয়নি। আর এই কাজগুলাে করতে গিয়ে তারা প্রচলিত সব ধরনের রীতিনীতি ও আদর্শের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছে। তাদের এই মূর্খতা ও বর্বরতাপূর্ণ আদর্শের খাতিরে তারা সব ধরনের প্রথাবিরােধী ও ধর্মবিরােধী জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বরং এর খাতিরে তারা সেই পবিত্র ঘরটির পবিত্রতা নষ্ট করেছে যার পবিত্রতার দোহাই দিয়ে তারা মক্কায় নিরাপদে বসবাস করছিলাে। এমনকি তারা এই বর্বরতাপূর্ণ আদর্শের খাতিরে সেই নিষিদ্ধ মাসগুলাের পবিত্রতাও নষ্ট করেছে যার পবিত্রতা জাহেলী ও বর্বর যুগেও রক্ষিত হয়েছে এবং ইসলামী যুগেও রক্ষিত হয়েছে। তাদের এই জেদ কেবল মুসলমানদের বিরুদ্ধেই ছিলাে না, বরং যারাই তাদেরকে শান্তির প্রস্তাব দিয়েছে এবং রসূলুল্লাহ(স.) ও তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালার ঘরে প্রবেশে বাধা দেয়ার জন্য মন্দ বলেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ছিলাে। এই জেদের কারণেই তারা সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগেই সােহায়ল বিন আমরকে রসূলের হাতে সমর্পণ করতে, চুক্তিনামায় আল্লাহ তায়ালার নাম লিখতে এবং মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ(স.) লিখতে আপত্তি জানায়। অহেতুক গোঁড়ামী ও মূর্খতাপূর্ণ জেদের বশবর্তী হয়েই তারা এসব করেছিলাে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা জানতেন যে ওদের অন্তরে সত্যকে মেনে নেয়ার মত উদারতা নেই এবং সত্যের সাথে আপােস করার মতাে যােগ্যতাও ওদের মাঝে নেই, তাই ওদের মনে এ জাতীয় জেদ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। অপরদিকে এ জাতীয় জেদ থেকে মােমেনদেরকে মুক্ত রেখেছিলেন। এর পরিবর্তে বরং তাদের মনে শান্তি, স্বস্তি ও আল্লাহভীতির গুণ সৃষ্টি করেছিলেন। এ সম্পর্কে আয়াতে বলা হয়েছে, অতপর আল্লাহ তায়ালা তার রসূল ও মােমেনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুত তারাই ছিলাে এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। সাকীনাহ শব্দ দ্বারা এখানে স্থিরতা ও গাম্ভীর্য বুঝানাে হয়েছে। আর ‘তাকওয়া’ শব্দ দ্বারা বুঝানাে হয়েছে সতর্কতা ও আনুগত্য। আর এ দুটো গুণ কেবল সেসব অন্তরের জন্যই প্রযােজ্য যে অন্তর বিশ্বাসী ও স্রষ্টার সাথে যুক্ত এবং আস্থা ও স্থিতিশীলতার গুণে গুণান্বিত। যে দু’টো গুণ কেবল সেই অন্তরেই থাকতে পারে যে অন্তর প্রতিটি কাজে, প্রতিটি পদক্ষেপে নিজ প্রভুর অস্তিত্ব অনুভব করে, যে অন্তরে কোনাে অহংকার নেই, দম্ভ নেই। যে অন্তর নিজের জন্য নয়, বরং নিজ ধর্ম ও নিজ স্রষ্টার জন্য রাগান্বিত হয়। তাই এই জাতীয় অন্তরকে শান্ত ও স্থির হওয়ার নির্দেশ দিলে তা পালন করে এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকে। আর সে কারণেই মােমেন বান্দাদেরকে তাকওয়া ও সংযমের জন্য অধিকতর যােগ্য ও উপযুক্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রভুর পক্ষ থেকে দেয়া এটা হচ্ছে তাদের জন্য আর একটি বিশেষণ। আল্লাহ তায়ালার বিচারে ও তার মাপকাঠিতে মােমেন বান্দারা এই বিশেষণসহ অপরাপর বিশেষণের উপযুক্ত বলে সাব্যস্ত হয়েছে। এটা নিসন্দেহে তাদের জন্য একটা অতিরিক্ত সম্মান। তিনি বান্দাদের সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত আছেন বলেই এই ঘােষণা দিয়েছেন। তাই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’
*দ্বীনের বিজয় সুনিশ্চিত : ইতিপূর্বে আলােচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি যে, যারা রসূলুল্লাহ(স.)-এর দেখা সত্য স্বপ্নের সুসংবাদ পেয়ে তার কাছ থেকে চলে এসেছিলাে তাদের কারাে কারাে মনে আশংকা সৃষ্টি হয়েছিলাে যে, এই স্বপ্নের ফলাফল খুব সম্ভবত সেই বছরেই বাস্তব হয়ে দেখা দেবে না এবং তাদেরকে হয়তাে আল্লাহ তায়ালার ঘর ওমরাহ না করেই ফিরে আসতে হবে। তাই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘােষণা দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, রসূলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবেই এবং সবার মনের আশা পূর্ণ হবেই। কেবল আল্লাহ তায়ালার ঘরে প্রবেশ করেই তারা ক্ষান্ত হবে না বরং এর চেয়েও বড় একটা একটা কাজ সেদিন তারা সমাধা করবে। আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ’আল্লাহ তায়ালা তার রসুলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তােমরা অবশ্যই মাসজিদে হারামে প্রবেশ করবে, নিরাপদে মাথা মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তােমরা কাউকে ভয় করবে না। অতপর তিনি জানেন যা তােমরা জানােনা। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তােমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।'(আয়াত ২৭)। আলােচ্য আয়াতে দুটো সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। এর একটি হলাে, রসূলের স্বপ্ন সত্য বলে প্রমাণিত হওয়া, নিরাপদে আল্লাহ তায়ালার ঘরে প্রবেশ করা এবং নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে হজ্জ বা ওমরাহ আদায় করার পর মাথা মুন্ডানাে অথবা চুল কাটা। এই সুসংবাদটি এক বছর পরেই ফলেছিলাে। আর দ্বিতীয় সুসংবাদটি হলাে মক্কা বিজয়। হােদায়বিয়ার সন্ধির মাত্র দু’ বছর পরই এটিও মহা সমারােহে ও অত্যন্ত ঘটা করে বলেছিলে। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে গােটা আরব জাহানে আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের বিজয় সুচিত হয়।  *ইনশাআল্লাহ বলা : আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘আল্লাহ তায়ালা চাইলে তােমরা অবশ্যই মাসজিদে হারামে প্রবেশ করবে’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মােমেনদেরকে ঈমানী শিষ্টাচার শিক্ষা দিচ্ছেন। কারণ, কাবা ঘরে প্রবেশ করার বিষয়টি সুনিশ্চিত ও সুনির্ধারিত হওয়া সত্তেও এখানে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে শর্ত হিসেবে পেশ করা হয়েছে। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মােমেন বান্দাদের অন্তরে এই সত্যটিকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চান যে, তার ইচ্ছা অবাধ, শর্তহীন ও নিরঙ্কুশ এবং এই ইচ্ছাই চূড়ান্ত। এই সত্যটিকে পবিত্র কোরআন বারবার তুলে ধরে, এমনকি যেখানে ওয়াদার কথা বলা হয়েছে, সেখানেও এই ইচ্ছার শর্তটি আরােপ করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ তায়ালার ওয়াদার কখনও বরখেলাপ হয় না। তবে এই ওয়াদার সাথেও তার স্বাধীন ইচ্ছার সম্পর্ক চিরন্তন। এই সত্যটিকে মােমেনদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা গেঁথে দিতে চান, যেন এটাকে তারা ইসলামের অন্যতম শিষ্টাচার হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।  *ঘটনার মুল প্রেক্ষাপট : এখন আমরা মূল ঘটনার দিকে যাচ্ছি। একাধিক বর্ণনায় দেখা যায় যে, হােদায়বিয়ার সন্ধির পরের বছর অর্থাৎ সপ্তম হিজরীর যিলকদ মাসে রসূলুল্লাহ(স.) হুদায়বিয়া বায়াত গ্রহণকারী সাহাবাদেরকে নিয়ে ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় রওয়ানা হন। তিনি ‘যুল হােলাইফা’ নামক মিকাত থেকে এহরাম বাঁধেন এবং কোরবানীর পশু সাথে করে নিয়ে যান, যেমনটি তিনি এর আগের বছর করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম(রা.) তার সাথে তালবিয়া পড়তে পড়তে অগ্রসর হচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ(স.) যখন মাররুজ জাহরান নামক স্থানের কাছে পৌঁছলেন, তখন ঘােড়া ও অস্ত্রসহ মােহাম্মদ বিন মাসলামাকে মক্কা পাঠিয়ে দিলেন। মক্কার মােশরেক বাসিন্দারা তাকে দেখে অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মনে করে যে, রসূলুল্লাহ(স.) তাদের ওপর আক্রমণ করবেন। তারা আরাে মনে করলাে যে, দশ বছর মেয়াদী যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি তার সাথে করা হয়েছিলো তা তিনি ভঙ্গ করেই মক্কায় আক্রমণ করতে এসেছেন। তাই তারা মক্কার সকল বাসিন্দার কাছে এই আক্রমণের খবর পৌছে দিলাে। রসূলুল্লাহ(স.) মাররুজ জাহরানে যখন পৌঁছলেন, সেখান থেকে তিনি তখন আল্লাহ তায়ালার ঘর দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি সকল অস্ত্রসস্ত্র ও তীর ধনুক ইয়াজেজ নামক উপত্যকায় পাঠিয়ে দিলেন এবং খাপবন্দি তলােয়ার সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন। মক্কার দিকে চলার সময় কোরায়শ নেতারা তার কাছে মিকরায বিন হাফস নামক একজন লােককে পাঠায়। সে রাসূল(স.)-কে লক্ষ্য করে বললো, ‘মোহাম্মদ! তুমি কখনও চুক্তি ভঙ্গ করেছো বলে আমাদের জানা নেই। তখন রসূলুল্লাহ(স.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার?’ সে বললাে, তুমি অন্ত্রশস্ত্র ও তীর ধনুক নিয়ে আমাদের এখানে প্রবেশ করেছো। উত্তরে রসূলুল্লাহ(স.) বললেন, ‘তােমার কথা ঠিক নয়, আমাদের অস্ত্রগুলাে ইয়াজেজ উপত্যকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। তখন লােকটি বললাে, ‘এটাই আমরা জানতাম, কারণ তুমি একজন সৎ ও নীতিবান লােক।’ রসূলের আগমনের খবর পেয়ে মক্কার নেতৃস্থানীয় কাফেররা অত্যন্ত ক্রোধ ও ক্ষোভ নিয়ে রাসূল(স.) ও তাঁর সাথীদের দেখার জন্য রাজপথে বের হয়ে এলাে। মক্কার সাধারণ নারী পুরুষ ও শিশুরা রাস্তার দু’ধারে এবং বাড়ীর ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে রসূল(স.)-এর আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিলাে। রসূলুল্লাহ(স.) মক্কায় প্রবেশ করলেন, সাহাবায়ে কেরাম তালবিয়া পড়তে পড়তে তার সামনে চলছিলেন। কোরবানীর পশুগুলাে ‘যী-তুয়া’ নামক স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন আল্লাহর রসূল(স.) যে উটে আরােহণ করেছিলেন, আজও সেই একই উটে আরােহণ করে মক্কায় প্রবেশ করলেন। উটটির লাগাম ছিলাে আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা আনসারী(রা.)-এর হাতে । তিনিই উটটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর এভাবেই রসূলুল্লাহ(স.)-এর স্বপ্ন সত্য হয় এবং আল্লাহ তায়ালার দেয়া ওয়াদাও পূর্ণ হয়। মক্কা বিজিত হয়, আল্লাহ তায়ালার দ্বীন বিজয়ী হয় এবং গােটা আরব উপদ্বীপে এর প্রসার ঘটে।
এরপর আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ ওয়াদাও বাস্তবায়িত হয়। সে ওয়াদাটা হলাে এই, “তিনিই তার রসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত জীবন বিধানের ওপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট।'(আয়াত ২৮) আল্লাহ তায়ালার এই ওয়াদা পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে। সত্য দ্বীনের জয় হয়েছে। এই বিজয় কেবল আরব উপদ্বীপ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং অর্ধ শতাব্দীর কম সময়ের মধ্যেই গােটা পৃথিবীতে এর বিস্তার ঘটে। গােটা পারস্য সম্রাজ্যে এর বিস্তার ঘটে, রােমান সাম্রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় এর বিস্তার ঘটে । এমনকি ভারত ও চীনসহ দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপ (ইন্দোনেশিয়া) পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ঘটে। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগ ও গােটা ষষ্ট শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীতে এসব এলাকাতেই আবাদ ছিলাে। আল্লাহ তায়ালার এই সত্য বিধানের বিজয় এখনও অব্যাহত রয়েছে। এমনকি এর বিজিত অধিকাংশ এলাকায় বিশেষ করে ইউরােপ ও ভূমধ্যসাগরের দ্বীপগুলােতে এর রাজনৈতিক পতনের পরও এবং গােটা বিশ্বে অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলিম জাতির প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাস পাওয়া সত্তেও ইসলামের প্রাধান্য অব্যাহত রয়েছে। এটা মানতেই হবে যে, জীবন বিধান হিসেবে পৃথিবীর বুকে অন্যসব মতাদর্শের তুলনায় ইসলামের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্য এখনও অল্লান রয়ে গেছে। কারণ, মূল হিসেবে এটা একটা শক্তিশালী ব্যবস্থা এবং প্রকৃতির দিক থেকেও এটা একটা শক্তিশালী বিধান। এই বিধান তলােয়ার বা কামানের জোরে চলে না। বরং চলে এর অন্তর্নিহিত শক্তি, বৈশিষ্ট ও স্বভাবমুখীতার গুণে। এই বিধানের মাঝে দেহ ও আত্মার প্রয়ােজন মেটানাের মতাে যােগ্যতা রয়েছে। এর মাঝে জাগতিক উন্নতি ও অগ্রগতির প্রয়ােজন মেটানাের মতাে যােগ্যতা রয়েছে এবং সকল পরিবেশ ও সকল শ্রেণীর মানুষের প্রয়ােজন মেটানাের মত যােগ্যতাও রয়েছে। এই বিধানে কুঁড়েঘরে বসবাসকারী একজন দরিদ্র মানুষের চাহিদা মেটানাের উপাদান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সুউচ্চ অট্টালিকায় বসবাসকারী একজন বিত্তশালীর চাহিদাও। কোনো বিধর্মী বিদ্বেষমুক্ত হয়ে এটাকে জানার চেষ্টা করে তাহলে সে এর যথার্থতা, এর অন্তর্নিহিত শক্তি, এর দিকদর্শনের ক্ষমতা এবং মানুষের বহুবিধ ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানাের যােগ্যতা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। তাই বলা হয়েছে, ‘এসব বিষয়ের স্বাক্ষী হিসেবে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট’ আল্লাহ তায়ালার এই ওয়াদা বাহ্যিক রাজনৈতিক রূপে প্রকাশ পেয়েছে রসুলুল্লাহ(স.)-এর নবুওত লাভের পর থেকে এক শতাব্দী পূর্ণ হওয়ার আগেই। তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার এই ওয়াদা এখনও বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং সেটা হচ্ছে নৈর্ব্যক্তিক রূপে। অন্যান্য ধর্মের ওপর এই সত্য ধর্মের প্রাধান্য এখনও অব্যাহত আছে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ইসলামই একমাত্র শ্বাশ্বত জীবন বিধান যা সব ধরনের পরিস্থিতিতে কাজ করতে এবং নেতৃত্বদানে সক্ষম। আমার মনে হয় ইসলামের এই বাস্তব গুণটি আজ যারা অনুধাবন করতে পারছে না তারা স্বয়ং এই দ্বীনের অনুসারীরা। অন্যথায় বিধর্মীরা এটা ঠিকই অনুধাবন করতে পারে, ইসলামকে তারা ভয়ও করে এবং সে কারণেই তাদের প্রতিটি পলিসি ও নীতি নির্ধারণের সময় ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখে।

*সাহাবায়ে কেরামদের গুণাবলী : এখন আমরা আলােচ্য সূরার শেষ দিকে এসে গেছি। এখানে আমরা সাহাবায়ে কেরামের একটা উজ্জ্বল ও অনন্য রূপের সন্ধান পাচ্ছি যা কোরআনের অনুপম বর্ণনায় জীবন্ত ও চাক্ষুষ হয়ে উঠেছে। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দীপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবান এই দলটির ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআন বলছে, ‘মােহাম্মাদ আল্লাহ তায়ালার রসূল এবং তার সহচরদের বৈশিষ্ট হলাে যে, তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখতে পাবে। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন…’ (আয়াত ২৯) পবিত্র কোরআনের অনুপম বর্ণনাশৈলীতে সাহাবায়ে কেরামের কি অপূর্ব চিত্র ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। এই চিত্রে সাহাবায়ে কেরামের প্রধান কয়েকটি অবস্থার প্রতিকৃতি ধরা পড়েছে। এখানে তাদের প্রকাশ্য অবস্থাও ধরা পড়েছে এবং গোপন অবস্থাও ধরা পড়েছে। এখানে কাফেরদের সাথে তাদের আচরণের দিকটিও এসেছে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্কের দিকটিও এসেছে। বলা হয়েছে, ‘কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল’ অপরদিকে এবাদাত বন্দেগীতে তাদের অবস্থা কি দাঁড়ায়, তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের স্বভাব চরিত্রে, আচার আচরণে এবং তাদের বাহ্যিক অবয়বে কি প্রভাব ও চিহ্ন রাখে তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন এবং তাদের এই বিশেষ চিহ্নটির বর্ণনা তাওরাত ও ইঞ্জিলেও এসেছে।’ বিশেষ করে ইঞ্জিলে তাদের পরিচিতিটা এভাবে এসেছে, ‘তাদের অবস্থা যেমন একটি চারাগাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতপর তা শক্ত ও মযবুত হয় এবং কান্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাড়ায় চাষীদেরকে আনন্দে অভিভূত করে যাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন।’ শেষের এই আয়াতগুলােয় প্রথমেই মুহাম্মাদ(স.)-এর প্রধান পরিচয় ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ সােহায়ল বিন আমর সহ অন্যান্য মােশরেকের দল হুদায়বিয়ার চুক্তিনামায় এই বিশেষণটি যােগ করার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলাে। তাই আলােচ্য আয়াতে এই বিশেষণটি আরাে জোরালােভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সাথে সাথে অপূর্ব বর্ণনাভঙ্গিতে সাহাবায়ে কেরামের উজ্জল প্রতিকৃতি অংকন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মােমেনদের অবস্থা ও পরিস্থিতির বিভিন্ন রূপ ছিলাে। তবে এখানে তাদের সর্বাধিক পরিচিত অবস্থাগুলাে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের জীবনের এই প্রধান প্রধান অবস্থাগুলাে উল্লেখ করে প্রকারান্তরে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও সম্মানের কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম কারণটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং পরস্পর সহানুভূতিশীল…’ কাফেরদের প্রতি কঠোর হওয়ার অর্থ কাফের পিতামাতা, ভাই বােনদের, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের প্রতি কঠোর হওয়া। তাই দেখা যায়, কুফরির কারণে তারা আপনজনদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো। অপরদিকে তারা পরস্পর ছিলাে সহানুভূতিশীল ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবব্ধ। এই ভ্রাতৃত্ব রক্তের নয়, বরং আদর্শের। তাদের কঠোরতা ছিলাে আল্লাহ তায়ালার খাতিরে এবং সহানুভূতি ও মমত্ববােধও ছিলাে আল্লাহর খাতিরেই । তাদের জিঘাংসা ছিলাে আদর্শের খাতিরে এবং উদারতাও ছিলাে আদর্শের খাতিরে। তাদের নিজের জন্য কিছু ছিলাে না এবং নিজেদের স্বার্থেও কিছু ছিলাে না। তারা একমাত্র আদর্শের জন্যেই নিজেদের আবেগ অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতাে এবং এই আদর্শের জন্যেই নিজেদের আচার আচরণ ও সম্পর্ককেও নিয়ন্ত্রণ করতাে। এই আদর্শের কারণেই তারা শত্রুদের প্রতি কঠোর হতাে এবং এই আদর্শের কারণেই পরস্পরের প্রতি সদয় হতাে। মােটকথা আমিত্ব বলতে তাদের মাঝে কিছুই ছিলাে না। আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারাে জন্য তারা আবেগ প্রবণ হতাে না। আল্লাহ তায়ালার সাথে তাদের যে বন্ধন ছিলাে সেটাই ছিলাে অপরাপর সকল বন্ধনের মাপকাঠি। সাহাবায়ে কেরামের প্রতি যে বিশেষ সম্মান দেখানাে হয়েছে তার আর একটি কারণ হচ্ছে, একনিষ্ট এবাদাত বন্দেগী । বলা হয়েছে, তাদেরকে তুমি রুকু ও সেজদারত দেখতে পাবে এখানে যে বর্ণনাভঙ্গি ও ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তাতে বুঝা যায় যে, তারা যেন সকল অবস্থায় ও সকল স্থানে এবাদাত বন্দেগীতেই মত্ত আছে। রুকু ও সেজদা শব্দ দুটো সামগ্রিক এবাদাতের অর্থ প্রকাশ করছে। আর এবাদতের অর্থ হচ্ছে আনুগত্য ও দাসত্ব। তাই এ শব্দ দুটো দিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মনের প্রকৃত অবস্থাটা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের গােটা জীবনটাই কেটেছে আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী ও আনুগত্যের মধ্য দিয়ে। সাহাবায়ে কেরামের তৃতীয় যে চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে সেটি হচ্ছে তাদের মনজগতের চিত্র। এ চিত্র সামগ্রিক আবেগ অনুভূতির স্থায়ী চিত্র। এ চিত্র তাদের আশা আকাংখা ও কামনা বাসনার প্রকৃত চিত্র। কারণ, তাদের একমাত্র কামনা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি। এই অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির বাইরে তাদের আর কিছুই চাওয়ার ছিলােনা, তাই তাদের সকল চিন্তা এবং তাদের সকল চাওয়া পাওয়া এই অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতাে। সাহাবায়ে কেরামের চতুর্থ চিত্রটি হচ্ছে তাদের এবাদত বন্দেগীর বাহ্যিক প্রভাবের চিত্র। এই চিত্রে আমরা তাদের মুখমন্ডলের উজ্জ্বলতা, দীপ্তি, পরিচ্ছন্নতা ও স্বচ্ছতা দেখতে পাই। আরাে দেখতে পাই এবাদত রিয়াযতের ফলে সৃষ্ট শুভ্র ও স্নিগ্ধ দ্যুতি। এটা কপালের সেই কালাে চিহ্ন নয় যা সিজদার কারণে শব্দটি পাঠ করার সাথে সাথে মনে আসে। এখানে সেজদা বলতে সামগ্রিক এবাদত বুঝানাে হয়েছে। আর যেহেতু সিজদার মাঝে আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভয়, ভক্তি, বিনয় আনুগত্য ও দাসত্বের পরিপূর্ণ রূপ প্রকাশ পায়, তাই এবাদাত বন্দেগীর অর্থ প্রকাশ করার জন্য এই সিজদা শব্দটাই ব্যবহার করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, চেহারায় সিজদার চিহ্ন বলতে এই ভয় ভক্তি ও বিনয়ের চিহ্নই বুঝায়। তাই যারা মনে প্রাণে আল্লাহ তায়ালার এবাদাত বন্দেগী করে। তাদের চেহারায় অহংকার, দাম্ভিকতা ও রুঢ়তার ভাব থাকে না। বরং এর পরিবর্তে চেহারায় জন্ম নেয় ভদ্রতাসূলভ বিনয়, নির্মল স্বচ্ছতা, সমৃদ্ধ দীপ্তি এবং হাল্কা বিমর্ষতা যার ফলে মােমেনের চেহারায় উজ্জ্বলতা কোমলতা ও ভদ্রতা আরও বৃদ্ধি পায় । এই দৃশ্যগুলােতে যে চির ভাস্বর রূপটি ফুটে উঠেছে তা নতুন কিছু নয়, বরং তা চিরন্তন ও আদি। আর সে কারণেই এ চিত্রটির সন্ধান তাওরাতেও পাই। আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের এই বৈশিষ্ট ও গুণাবলী তাদের আবির্ভাবের আগেই মূসা(আ.)-এর ওপর নাযিল করা কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে তাদের আগমনের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। ইঞ্জিল কিতাবে মুহাম্মদ(স.)-এর আগমন ও তার সাহাবাদের গুন বৈশিষ্ট আলােচনা করা হয়েছে, তাদের বিভিন্ন গুণাবলী ও চিহ্ন বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে সাহাবাদের এই জামায়া’ত একটা মযবুত বাড়ন্ত চারাগাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে, এই চারাগাছ থেকে কচি পাতা জন্ম নেয়। কিন্তু তাতে করে চারাগাছটি দুর্বল হয় না, বরং আরাে শক্ত হয়, মযবুত হয়, ভরাট হয় এবং নিজ কান্ডের ওপর সােজা হয়ে দাঁড়ায়। এতে কোনাে বক্রতা থাকে না এবং কোনােরূপ ক্রটিও থাকে না। আলােচ্য আয়াতে চিত্রায়িত দৃশ্যটির এটাই হচ্ছে বাহ্যিক রূপ। কিন্তু যারা কৃষিকার্যে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ, যারা জানে কোনটি বাড়ন্ত চারা, আর কোনটি রুগ্ন চারা তারা এ দৃশ্যটি দেখে আনন্দিত হয়, অভিভূত হয়। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যা চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে’… এখানে চাষী শব্দ দ্বারা রসূলুল্লাহ(স.)-কে বুঝানাে হয়েছে। কারণ, ইসলাম নামক বাগানে তিনি যে চারা লাগিয়েছিলেন, সেই চারা বড় শক্তিশালী হয়ে এবং পুষ্ট হয়ে বাগানের শােভা বর্ধন করেছিলাে। এই শক্তিশালী বৃক্ষরাজী সাহাবায়ে কেরাম ব্যতীত আর কেউ নয়। তাই এদেরকে দেখে প্রিয়নবী আনন্দিত হন। অপরদিকে এই শস্য শ্যামল ও সমৃদ্ধ বাগান দেখে কাফেরদের মনে হিংসা, বিদ্বেষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যাতে আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন…’ এখানে অন্তর্জালা সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা সেই কথাই বুঝানাে হয়েছে যে, এই বাগান মূলত আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তার রসূলের হাতে আবাদ করা বাগান, আর এই বাগান আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল(স.)-এর শত্রুদের মনে ক্ষোভ ও যন্ত্রণা সৃষ্টি হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাে। এই দৃষ্টান্ত আকম্মিক ঘটে যাওয়া কোনাে বিষয় নয়, বরং এর অস্তিত্ব তকদিরের পাতায়ই রয়ে গেছে। এরপরও রসূলুল্লাহ(স.) ও তাঁর সাহাবাদের আগমনের অনেক আগেই পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি নাযিল করা কিতাব এর উল্লেখ এসেছে। ইঞ্জিলে রাসূল(স.)-এর আগমনের সুসংবাদ প্রদানের পাশাপাশি তার সাহাবাদের গুণাবলীও উল্লেখ করা হয়েছে। তেমনিভাবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার অমর গ্রন্থ আল কোরআনে রসূল(স.)-এর পুন্যাত্মা সাহাবাদের মনােনীত দলটির গুণাবলীর উল্লেখ করে তাদের স্মৃতিকে অমর ও অক্ষয় করে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এর ফলে তাদের স্মৃতি গােটা সৃষ্টিজগতে অক্ষয় হয়ে থাকবে এবং যতােদিন আল্লাহ তায়ালার এই অমরবাণী পাঠ করা হবে ততােদিন কুলমাখলুক এই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে এবং তা স্মরণ রাখবে। শুধু তাই নয়, বরং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য এই স্মৃতি একটা আদর্শ হয়ে টিকে থাকবে এবং তাদের মাঝেও অনুরূপ গুণাবলী সৃষ্টির প্রেরণা যােগাবে, ফলে তাদের মাঝে ঈমানের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। সাহাবায়ে কেরামের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, তার চেয়েও বড় আর একটি সম্মান তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। আর সেটা হলাে, ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। যদিও আয়াতে এই ক্ষমা ও প্রতিদানের ওয়াদা ঈমান ও সৎকাজের গুণে গুণান্বিত সকলের জন্য করা হয়েছে, তারপরও সাহাবায়ে কেরামরাই সর্বপ্রথম এই ওয়াদার ফল ভােগ করবেন। কারণ, ঈমান ও সৎকাজের গুণ তাদের মাঝে ছিলাে পূর্ণাংগরূপে। ক্ষমা ও মহা প্রতিদান নিজেই একটা বড় সম্মানের বিষয়। তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিও একটা বড় সম্মানের বিষয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার দান তাে অসীম, তার অনুগ্রহ তাে অসীম। দীর্ঘ চৌদ্দশত বছর পর আমি আবার সেই সৌভাগ্যবান দলটির চেহারা ও তাদের মনের অবস্থাটা অনুভব করতে চেষ্টা করছি। আল্লাহর রহম, সন্তুষ্টি, সম্মান ও মহান ওয়াদার ধারা একের পর এক যখন তাদেরকে প্লাবিত করছিলাে, তখন তাদের অবস্থাটা কী ছিলাে, সেটাই আমি অনুভব করার চেষ্টা করছি। যখন আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে, আল্লাহ তায়ালার মাপকাঠিতে এবং আল্লাহ তায়ালার কিতাবে নিজেদের মান মর্যাদার কথা তারা জানতে পারছিলাে, শুনতে পাচ্ছিলাে তখন তাদের মনের অবস্থা কি দাঁড়িয়েছিলাে, সেটাই আমি এই চৌদ্দশত বছর পরে অনুভব করতে চেষ্টা করছি। আমি আমার কল্পনার দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি, তারা হুদায়বিয়া থেকে ফিরছে, আর তখনই তাদের সামনে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলাে, সাথে সাথে তাদেরকে তা পড়ে শুনানাে হলাে, তার মাঝে তারা নিজেদের মন, আত্মা, আবেগ ও অনুভূতি এবং বৈশিষ্ট ও স্বকীয়তার পূর্ণ ছাপ দেখতে পাচ্ছে। এরপর তারা একজন আর একজনের চেহারার দিকে তাকাচ্ছে এবং যে নেয়ামতের প্রভাব মনের মাঝে অনুভব করছে সেটাকে নিজের গােটা অস্তিত্বের মাঝেই দেখতে পাচ্ছে। সাহাবায়ে কেরাম উর্ধজগতের যে মহা উৎসবের মাঝে বিচরণ করেছিলেন সেই আনন্দঘন ও পবিত্র মুহূর্তগুলাে আমি এখানে বসে অনুভব করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু সশরীরে যে মানুষটি সেই উৎসবে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেনি, তার পক্ষে সেই অপার্থিব আনন্দ অনুভব করা কি করে সম্ভব? তাই দূরে বসে শুধু কল্পনাই করা। তবে আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন এবং সাহাবায়ে কেরামের গুণে গুণান্বিত করেন তাদের জন্য এই দূরত্ব ও ব্যবধান অপসারিত করে দেন। তাই মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনো বাক্যে ফরিয়াদ জানাচ্ছি, হে মাবুদ! তুমি জানো, আমি গােনাহগার, আমি তােমার এই পাথেয়র দিকেই তাকিয়ে আছি!

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# খায়বার বিজয়ের পর মুসলমানরা ক্রমাগত আর যেসব বিজয় লাভ করে এর দ্বারা সেসব বিজয়কে বুঝানো হয়েছে।
# এর অর্থ হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি। এ চুক্তিকেই সূরার প্রারম্ভে ফাতহুম মুবীন’ (সুস্পষ্ট বিজয়) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
# তিনি কাফের কুরাইশদের এতটা সাহস দেননি যে, হুদাইবিয়াতে তারা তোমাদের সাথে লড়াই বাধিয়ে বসতে পারতো। অথচ সমস্ত বাহ্যিক অবস্থার দিক থেকে তারা অনেক ভাল অবস্থানে ছিল এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে তোমাদের পাল্লা তাদের চেয়ে অনেক বেশী দুর্বল বলে মনে হচ্ছিলো। এছাড়াও এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে, সে সময় কোন শত্রুশক্তি মদীনার ওপর আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। অথচ যুদ্ধক্ষম চৌদ্দ শ’ যোদ্ধা পুরুষ মদীনার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে মদীনার যুদ্ধক্ষেত্র অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলো এবং ইহুদী ও মুশরিক ও মুনাফিকরা এ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারতো।
# যারা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের নীতিতে স্থির সংকল্প থাকে এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা করে ন্যায় ও সত্যের পক্ষ অবলম্বনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। আল্লাহ‌ তাদের কতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দান করেন পুরস্কৃত করেন তার নিদর্শন।
# তোমরা আরো দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করবে। ভবিষ্যতেও এভাবেই আল্লাহ‌ ও রসূলের আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে ন্যায় ও সত্যের পথে অগ্রসর হতে থাকবে। আর এসব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাদান করবে যে, আল্লাহর দ্বীন যে পদক্ষেপের দাবী করছে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মু’মিনের কাজ। আমার শক্তি কতটা এবং বাতিলের শক্তি কত প্রবল এ বাছ বিচার ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে যেন সে পড়ে না থাকে।
# খুব সম্ভবত এখানে মক্কা বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত দান করা হয়েছে। কাতাদাও এ মত পোষণ করেছেন এবং ইবনে জারীরও এটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আল্লাহর একথাটার উদ্দেশ্য যা বুঝা যায় তা হচ্ছে, মক্কা এখনো তোমাদের করায়ত্ত হয়নি। তবে তাকে আল্লাহ‌ পরিবেষ্টিত করে রেখেছেন এবং হুদাইবিয়ার এ বিজয়ের ফলশ্রুতিতে তাও তোমাদের করায়ত্ত হবে।
# হুদাইবিয়াতে যুদ্ধ হলে তোমাদের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আল্লাহ‌ এ জন্য সেখানে যুদ্ধ সংঘটিত হতে দেননি তা নয়, বরং এর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন কিছু যা পরবর্তী আয়াতসমূহে বর্ণনা করা হচ্ছে। সে উদ্দেশ্য ও কৌশল যদি বাধা না হতো এবং আল্লাহর তা’আলা এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হতে দিতেন তাহলে নিশ্চিতভাবে কাফেররাই পরাজয় বরণ করতো এবং পবিত্র মক্কা তখন বিজিত হতো।
# এখানে আল্লাহর বিধান বলতে বুঝানো হয়েছে, যেসব কাফের আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে আল্লাহ‌ তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন এবং তাঁর রসূলকে সাহায্য করেন।
# ইসলামের জন্য যে আন্তরিকতা নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে তোমরা জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলে এবং বিনা বাক্যে যেভাবে রসূলের আনুগত্য করেছিলে আল্লাহ‌ তা দেখেছিলেন। তিনি এও দেখেছিলেন যে, কাফেররা সত্যিই বাড়াবাড়ি করছে। তোমাদের হাতে তৎক্ষণাৎ সেখানেই তাদেরকে শাস্তি দেয়া ছিল পরিস্থিতির দাবী। কিন্তু এসব সত্ত্বেও একটি বৃহত্তর কল্যাণের জন্য তিনি তোমাদের হাতে তাদের ওপর এবং তাদের হাত তোমাদের ওপর উত্তোলিত হওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন।

টিকা:৪৪) আল্লাহ তা’আলা যে উদ্দেশ্য ও কৌশলের কারণে হুদাইবিয়াতে যুদ্ধ হতে দেননি এটাই সে উদ্দেশ্য ও কৌশল। এ উদ্দেশ্য ও কৌশলের দু’টি দিক আছে। একটি হচ্ছে সে সময় মক্কায় এমন অনেক নারী ও পুরুষ বর্তমান ছিলেন। যারা হয় তাদের ঈমান গোপন রেখেছিলেন নয়তো তাদের ঈমান গ্রহণ সম্পর্কে সবার জানা থাকলেও নিজেদের অসহায়ত্বের কারণে হিজরত করতে সক্ষম ছিলেন না এবং জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলো। যদি এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধ সংঘটিত হতো এবং মুসলমানরা কাফেরদেরকে চরমভাবে পর্যুদস্ত করে পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করতো তাহলে অজানা ও অচেনা হওয়ার কারণে কাফেরদের সাথে এ মুসলমানরাও নিহত হতো। এ কারণে মুসলমারা নিজেরও দুঃখ ও পরিতাপে দগ্ধ হতো এবং আরবের মুশরিকরাও একথা বলার সুযোগ পেয়ে যেতো যে, যুদ্ধের ময়দানে নিজেদের দ্বীনি ভাইয়ের হত্যা করতেও এসব লোক দ্বিধাবোধ করেনা। তাই আল্লাহ‌ তা’আলা অসহায় এ মুসলমানদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে এবং সাহাবীদেরকে মনোকষ্ট ও বদনাম থেকে রক্ষার জন্য এক্ষেত্রে যুদ্ধ সংঘটিত হতে দেননি। এ উদ্দেশ্য ও কৌশলের আরেকটি দিক এই যে, আল্লাহ‌ তা’আলা কুরাইশদেরকে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করে মক্কা বিজিত করাতে চাচ্ছিলেন না। বরং তিনি চাচ্ছিলেন, দুই বছরের মধ্যে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে এমন অসহায় করে ফেলবেন যেন কোন প্রতিরোধ ছাড়াই তারা পরাজিত হয় এবং সমগ্র গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রহমের মধ্যে প্রবেশ করে। মক্কা বিজয়ের সময় এ ঘটনাটিই ঘটেছিল।

এক্ষেত্রে একটি আইনগত বিতর্ক দেখা দেয়। যদি আমাদের এ কাফেরদের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে এবং কাফেরদের কব্জায় কিছু সংখ্যক মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ থাকে আর তাদেরকে তারা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামনে নিয়ে আসে কিংবা আমরা কাফেরদের যে শহরের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছি সেখানে কিছু মুসলিম বসতি থেকে থাকে, কিংবা কাফেরদের যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণের পাল্লায় এসে পড়ে এবং কাফেররা তার মধ্যে কিছু সংখ্যক মুসলমানকে রেখে দেয় তাহলে এরূপ পরিস্থিতিতে আমরা কি তাদের ওপর গোলাবর্ষণ করতে পারি? এ প্রশ্নের জবাবে ফকীহগণ যেসব সিদ্ধান্ত ও মতামত দিয়েছেন তা নিম্নরূপঃ

ইমাম মালেক (র) বলেন, এরূপ পরিস্থিতিতে গোলাবর্ষণ না করা উচিত। এ আয়াতটিকে তিনি এর দলীল হিসেবে পেশ করেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ‌ তা’আলা মুসলমানদের রক্ষার জন্যই তা হুদাইবিয়াতে যুদ্ধ হতে দেননি। (আহকামুল কুরআন-ইবনুল আরাবী)। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা একটা দুর্বল দলীল। আয়াতের মধ্যে এমন কোন শব্দ নেই যা থেকে এ বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, এরূপ পরিস্থিতিতে হামলা করা হারাম ও না জায়েয। এর দ্বারা বড় জোর এতটুকু কথা প্রমাণিত হয় তা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য হামলা করা থেকে বিরত থাকা যেতে পারে, যদি বিরত থাকার ক্ষেত্রে এআশঙ্কা সৃষ্টি না হয় যে, কাফেররা মুসলামানদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করবে, কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় লাভ করার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে।

ইমাম আবু হানীফা (রা.), ইমাম আবু ইউসূফ (র), ইমাম যুফার (র) এবং ইমাম মুহাম্মাদ (র) বলেন, এ পরিস্থিতিতে গোলাবর্ষণ করা সম্পূর্ণরূপে জায়েয। এমনকি কাফেররা যদি মুসলমানদের শিশুদেরকেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামনে খাড়া করে তবুও তাদের ওপর গোলা বর্ষণ করায় কোন দোষ নেই। এ অবস্থায় যেসব মুসলমান মারা যাবে তাদের জন্য কাফ্ফারা বা রক্তপণও মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব হবে না। (আহকামুল কুরআন-জাসসাস, ইমাম মুহাম্মাদের কিতাবুস সিয়ার, অনুচ্ছেদঃ কাতউল মায়ে আন আহলিল হারব)।

ইমাম আওযায়ী এবং লাইস ইবনে সা’দ বলেন, কাফেররা যদি মুসলমানদের ঢাল বানিয়ে সামনে ধরে তাহলে তাদের ওপর গুলি চালানো উচিত নয়। অনুরূপ আমরা যদি জানতে পারি যে, তাদের যুদ্ধ জাহাজে আমাদের বন্দীও আছে তাহলে সে অবস্থায় উক্ত যুদ্ধ জাহাজ না ডুবানো উচিত। কিন্তু আমরা যদি তাদের কোন শহরের ওপর আক্রমণ চালাই এবং জানতে পারি যে, ঐ শহরে মুসলমানও আছে তাহলেও তাদের ওপর গোলাবর্ষণ করা জায়েয। কারণ, আমাদের গোলা কেবল মুসলমানদের ওপরই পড়বে তা নিশ্চিত নয়। আর কোন মুসলমান যদি এ গোলাবর্ষনের শিকার হয়ও তাহলে তা আমাদের পক্ষ থেকে মুসলমানদের উদ্দেশ্যমূলক হত্যা হবে না, বরং তা হবে আমাদের ইচ্ছা বাইরের একটা দুর্ঘটনা। (আহকামুল কুরআন-জাসসাস)।

এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ীর (র) মাযহাব হলো, এ অবস্থায় যদি গোলাবর্ষণ অনিবার্য না হয় তাহলে ধ্বংসের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার চেষ্টা চালানো উত্তম যদিও এক্ষেত্রে গোলাবর্ষণ করা হারাম নয় তবে নিঃসন্দেহে মাকরূহ। তবে প্রকৃতই যদি গোলাবর্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং সন্দেহ থাকে যে, এরূপ না করা হলে যুদ্ধ পরিস্থিতি কাফেরদের জন্য লাভজনক এবং মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর হবে তাহলে সে ক্ষেত্রে গোলাবর্ষণ করা জায়েয। তবে এ পরিস্থিতিতে ও মুসলমানদের রক্ষা করার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাছাড়া ইমাম শাফেয়ী এ মতও পোষণ করেন যে, যদি কাফেররা যুদ্ধের ময়দানে কোন মুসলমানকে ঢাল বানিয়ে ধরে এবং কোন মুসলমান তাকে হত্যা করে তাহলে তার দু’টি অবস্থা হতে পারেঃ এক, হত্যাকারীর জানা ছিল যে, সে মুসলমান। দুই, সে জানতো না যে, সে মুসলমান। প্রথম অবস্থায় রক্তপণ ও কাফ্ফারা উভয়টিই তার ওপর ওয়াজিব এবং দ্বিতীয় অবস্থায় শুধু কাফ্ফারা ওয়াজিব। (মুগনিউ মুহতাজ)।
# জাহেলী সংকীর্ণতা অর্থ হলো, এক ব্যক্তির শুধু তার মর্যাদা রক্ষার জন্য কিংবা নিজের কথার মর্যাদা রক্ষার জন্য জেনে শুনে কোন অবৈধ কাজ করা। মক্কার কাফেররা জানতো এবং মানতো যে, হজ্জ ও উমরার জন্য বায়তুল্লাহর যিয়ারত করার অধিকার সবারই আছে। এ ধর্মীয় কর্তব্য পালনে বাধা দেয়ার অধিকার করো নেই। এটা ছিল আরবের সুপ্রাচীন ও সর্বজন স্বীকৃত আইন। কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদেরকে অন্যায় ও অসত্যের অনুসারী এবং মুসলমানদেরকে সম্পূর্ণ ন্যায় ও সত্যের অনুসারী বলে জানা সত্ত্বেও শুধু নিজেদের মর্যাদা রক্ষার খাতিরে মুসলমানদের উমরা করতে বাধা দান করে। এমনকি মুশরিকদের মধ্যেও যারা সত্যানুসারী ছিল তারাও বলেছিলো যে, যারা ইহরাম অবস্থায় কুরবানীর উট সাথে নিয়ে উমরা পালন করতে এসেছে তাদেরকে বাধা দেয়া একটি অন্যায় কাজ। কিন্তু কুরাইশ নেতারা শুধু একথা ভেবে বাধা দিতে বদ্ধপরিকর ছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ যদি এত বড় দলবল নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন তাহলে সমগ্র আরবে আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। এটাই ছিল তাদের জাহেলী সংকির্ণতা।
# এখানে سَّكِينَةَ অর্থ ধৈর্য ও মর্যাদা যা দিয়ে নবী ﷺ এবং মুসলমানগন কাফের কুরাইশদের এ জাহেলী সংকীর্ণতার মোকাবিলা করেছিলেন। তাঁরা তাদের এ হঠকারিতা ও বাড়াবাড়িতে উত্তেজিত হয়ে সংযম হারিয়ে ফেলেছিলেন না এবং তাদের মোকাবিলায় এমন কোন কথাও তারা বলেননি যা ন্যায়ের সীমা ছাড়িয়ে যায় ও সত্যের পরিপন্থী হয় কিংবা যার কারণে কাজ সুন্দর ও সার্থকভাবে সম্পাদিত হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশী এলোমেলো ও বিশৃংখল হয়ে যায়।
# যে প্রশ্নটি মুসলমানদের মনে বারবার খটকা সৃষ্টি করেছিলো এটি তারই জবাব। তারা বলতো, রসূলুল্লাহ ﷺ তো স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন। কিন্তু কি হলো, যে, আমরা উমরা আদায় করা ছাড়াই ফিরে যাচ্ছি। এর জবাবে রসূলুল্লাহ ﷺ যদিও বলেছিলেন যে, স্বপ্নে তো এ বছরই উমরা আদায় করার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু না কিছু উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা মুসলমানদের মনের মধ্যে দেখিয়েছিলাম আর তা ছিল পুরোপুরি সত্য এবং নিশ্চিতভাবেই তা পূরণ হবে।
# এখানে আল্লাহ‌ তা’আলা নিজে তাঁর প্রতিশ্রুতির সাথে ইনশাআল্লাহ কথাটি ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে যে, আল্লাহ‌ নিজেই যখন এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তখন তাকে আল্লাহর চাওয়ার সাথে শর্তযুক্ত করার অর্থ কি? এর জবাব হচ্ছে, এখানে যে কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ‌ যদি না চান তাহলে তিনি এ প্রতিশ্রুতি পালন করবেন না। বরং যে প্রক্ষিতে এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এর সম্পর্ক তার সাথে। মক্কার কাফেররা যে ধারণার বশবর্তী হয়ে মুসলমানদেরকে উমরা থেকে বিরত রাখার জন্য এ খেলা খেলছিলো তা হচ্ছে আমরা যাকে উমরা করতে দিতে চাইবো সে-ই কেবল উমরা করতে পারবে এবং যখন করতে দিব তখনই মাত্র করতে পারবে। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ‌ বলেছেন, এটা তাদের ইচ্ছার ওপর নয়, বরং আমার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এ বছর উমরা হতে না পারার কারণ এটা নয় যে, মক্কার কাফেররা তাই চেয়েছিলো। বরং তা হয়েছে এ জন্য যে, আমি তা হতে দিতে চাইনি। আমি যদি চাই তাহলে ভবিষ্যতে এ উমরা হবে, কাফেররা তা হতে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করুক না করুক। সাথে সাথে একথার মধ্যে এ অর্থও প্রচ্ছন্ন আছে যে, মুসলমানরা যে উমরা করবে তাও নিজের ক্ষমতায় করবে না। আমি যেহেতু চাইবো যে তারা উমরা করুক তাই তারা উমরা করবে আমার ইচ্ছা যদি এর পরিপন্থী হয় তাহলে নিজেরাই উমরা আদায় করে ফেলবে এতটা শক্তি-সমর্থ তাদের মধ্যে নেই।
# পরের বছর ৭ম হিজরীর যুল-কা’দা মাসে এ প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়। ইতিহাসে এ উমরা উমরাতুল কাযা নামে খ্যাত।
# একথা থেকে প্রমাণিত হয় উমরা ও হজ্জ আদায়ের সময় মাথা মুণ্ডন আবশ্যিক নয়, বরং চুল ছেঁটে নেয়াও জায়েয। তবে মাথা মুণ্ডন উত্তম। কারণ, আল্লাহ‌ তা’আলা তা প্রথমে বর্ণনা করেছেন এবং চুল ছাঁটার কথা পরে উল্লেখ করেছেন।
# এখানে একথা বলার কারণ হলো যখন হুদাইবিয়াতে সন্ধিচুক্তি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছিলো সে সময় মক্কার কাফেররা নবীর ﷺ সম্মানিত নামের সাথে রসূলুল্লাহ কথাটি লিখতে আপত্তি জানিয়েছিলো, তাদের একগুঁয়েমির কারণে নবী (সা.) নিজে চুক্তিপত্র থেকে একথাটি মুছে ফেলেছিলেন। তাই আল্লাহ‌ তা’আলা বলেছেন, আমার রসূলের রসূল হওয়া একটি অনিবার্য সত্য, কারোর মানা বা না মানাতে তাতে কোন পার্থক্য সূচিত হয় না। কিছু লোক যদি তা না মানে না মানুক। তা সত্য হওয়ার জন্য আমার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। তাদের অস্বীকৃতির কারণে এ সত্য পরিবর্তিত হয়ে যাবে না। তাদের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও এ রসূল আমার পক্ষ থেকে যে হিদায়াত ও দ্বীন নিয়ে এসেছেন তা অন্য সব দ্বীনের ওপর বিজয় লাভ করবে। তা ঠেকিয়ে রাখার জন্য এসব অস্বীকারকারীরা যত চেষ্টাই করুক না কেন।

‘সব দ্বীন’ বলতে বুঝানো হয়েছে সেসব ব্যবস্থাকে যা দ্বীন হিসেবে গণ্য। আমরা পূর্বেই তাফহীমুল কুরআন সূরা যুমারের ব্যাখ্যায় :-
# এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ আয়াতটি পড়ার সময় অমনোযোগী হওয়া উচিত নয়। বরং এর অর্থ ও প্রতিপাদ্য বিষয়টি ভালভাবে বুঝার চেষ্টা করা উচিত। এর মৌলিক বিষয় দু’টি। এ দু’টি বিষয় বুঝে নেয়া ছাড়া আয়াতটির অর্থ অনুধাবন সম্ভব নয়। একটি বিষয় হচ্ছে, এখানে আল্লাহ‌র ইবাদাত করতে বলা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সে ইবাদাত হবে এমন যা আনুগত্যকে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে করা হয়।

ইবাদাত শব্দের শব্দমূল বা ধাতু হচ্ছে عبد । এ শব্দটি আরবী ভাষায় ‘স্বাধীন’ শব্দের বিপরীত শব্দ হিসেবে ‘দাস’ বা ‘ক্রীতদাস’ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এ অর্থের দিক দিয়ে ‘ইবাদাত’ শব্দের মধ্যে দু’টি অর্থ সৃষ্টি হয়েছে। একটি অর্থ হচ্ছে পূজা-অর্চনা। আরবী ভাষার বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ আছে عبد الله অর্থাৎ التنسك , والتعبد , تأله له । আরেকটি অর্থ হচ্ছে সবিনয় আনুগত্য এবং সন্তুষ্টি ও সাগ্রহ আদেশ পালন। যেমন “লিসানুল আরবে” বলা হয়েছেঃ

الطاعة – العبادة ومعنى العبادةِ في اللغة الطاعةُ مع الخُضُوعِ – وكلُّ من دانَ لملك فهو عابد له (وقومهما لنا عابدون) والعابد , الخاضع لربه المستسلم المُنْقاد لأَمره- عبدَ الطاغوتَ , أَطاعه يعني الشيطانَ فيما سَوّلَ له وأَغواه- إِياك نعبد, أَي نُطِيعُ الطاعةَ التي يُخْضَعُ معها- اعبدوا ربكم , أَطيعوا ربكم-

সুতরাং অভিধানের এসব নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা অনুসারে আল্লাহর ইবাদাত করা অর্থ শুধু তাঁর পূজা-অর্চনার দাবী করাই নয়, বরং বিনা বাক্যে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন, তাঁর শরয়ী আইন-কানুন সন্তুষ্ট চিত্তে সাগ্রহে মেনে চলা এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মনে প্রাণে অনুসরণ করার দাবীও বুঝায়। আরবী ভাষায় دين (দ্বীন) শব্দ কতিপয় অর্থ ধারণ করেঃ

একটি অর্থ হচ্ছে, আধিপত্য ও ক্ষমতা, মালিকানা ও প্রভুত্বমূলক মালিকানা, ব্যবস্থাপনা ও সার্বভৌম ক্ষমতা এবং অন্যদের ওপর সিদ্ধান্ত কার্যকারী করা। তাই “লিসানুল আরবে” আছেঃ

دان الناسَ أَي قَهَرَهم على الطاعة- دِنْتُهم أَي قَهرْتهم- دِنْتُه ¸ سُسْته و مَلَكْتُه- وفي الحديث : الكيِّس من دانَ نَفْسَه , أَي أَذلها واستعبدها- الديان , القاضى , الحكم , القهار , ولا انت اى لست بقاهرلى فتسوس امرى- ما كان ليأخذ اخاه فى دين الملك , اى فى تضاء الملك-

দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আনুগত্য, আদেশ পালন ও দাসত্ব। লিসানুল আরব অভিধানে আছেঃ

الدين , الطاعة – دنته ودنت له , اى اطعته – والدين الله , انما هو طاعته والتعبد له – فى الحديث اريد من قريش كلمة تدين لهم بها العرب , اى تطيعهم وتخضع لهم – ثم دانت بعد الرباب , اى ذلت له واطاعته – يمرقون من الدين , اى انهم يخرجون من طاعة الامام المفترض الطاعة , المدين , العبد – فلولا ان كنتم غير مدينين , اى غير مملوكين – الدين , العادة والشأن – يقال ما زال ذلك دينى وديدنى , اى عادتى الدين , الطاعة – دنته ودنت له , اى اطعته – والدين الله , انما هو طاعته والتعبد له – فى الحديث اريد من قريش كلمة تدين لهم بها العرب , اى تطيعهم وتخضع لهم – ثم دانت بعد الرباب , اى ذلت له واطاعته – يمرقون من الدين , اى انهم يخرجون من طاعة الامام المفترض الطاعة , المدين , العبد – فلولا ان كنتم غير مدينين , اى غير مملوكين –

তৃতীয় অর্থ হচ্ছে অভ্যাস ও পন্থা-পদ্ধতি—- মানুষ যা অনুসরণ করে। লিসানুল আরবে আছে, الدين , العادة والشأن – يقال ما زال ذلك دينى وديدنى , اى عادتى এ তিনটি অর্থের প্রতি খেয়াল এ আয়াতে ‘দ্বীন’ শব্দটি এমন কর্মপদ্ধতি ও আচরণকে বুঝায় যা মানুষ কারো শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার এবং কারো আনুগত্য গ্রহণ করার মাধ্যমে অবলম্বন করে। আর “দ্বীন”কে শুধু আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে তাঁর দাসত্ব করার অর্থ হলো “আল্লাহর দাসত্বের সাথে মানুষ আর কাউকে শামিল করবে না বরং শুধু তাঁরই পূজা করবে, তাঁরই অনুসরণ এবং তাঁরই হুকুম আহকাম ও আদেশ পালন করবে।”

Leave a Reply