بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৪০/এবং কাফের-রা বলে -১৩) [*‌‌ আপনি উপদেশ দিতে থাকুন,:- **এ বাণীর মত একটি বাণী তৈরি করে আনুক!!!:- ***কাফেররাই উল্টো নিজেদের ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়বে:- *  *কতিপয় বাজে মন্তব্যের জবাব :- *  *দ্বীনের দাওয়াত হবে নিঃস্বার্থ :-] www.motaher21.net সূরা:৫২-আত-তূর। পারা:২৭ ২৯-৪৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-(৩) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:- ২৯-৪৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-(৪) তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৪০/এবং কাফের-রা বলে -১৩)
[*‌‌ আপনি উপদেশ দিতে থাকুন,:-
**এ বাণীর মত একটি বাণী তৈরি করে আনুক!!!:-
***কাফেররাই উল্টো নিজেদের ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়বে:-
*  *কতিপয় বাজে মন্তব্যের জবাব :-
*  *দ্বীনের দাওয়াত হবে নিঃস্বার্থ :-]
www.motaher21.net
সূরা:৫২-আত-তূর।
পারা:২৭
২৯-৪৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-(৩)
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৯-৪৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-(৪)
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
সূরা:৫২-আত-তূর:-২৯
فَذَکِّرۡ فَمَاۤ اَنۡتَ بِنِعۡمَتِ رَبِّکَ بِکَاہِنٍ وَّ لَا مَجۡنُوۡنٍ ﴿ؕ۲۹﴾
অতএব আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ, আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি গণক নন, উন্মাদও নন।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩০
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ شَاعِرٌ نَّتَرَبَّصُ بِہٖ رَیۡبَ الۡمَنُوۡنِ ﴿۳۰﴾
তারা কি বলতে চায় যে, ‘সে একজন কবি? আমরা তার জন্য কালের বিপর্যয়ের (মৃত্যুর) প্রতীক্ষা করছি।’
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩১
قُلۡ تَرَبَّصُوۡا فَاِنِّیۡ مَعَکُمۡ مِّنَ الۡمُتَرَبِّصِیۡنَ ﴿ؕ۳۱﴾
তাদেরকে বলো, ঠিক আছে অপেক্ষা করতে থাক, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩২
اَمۡ تَاۡمُرُہُمۡ اَحۡلَامُہُمۡ بِہٰذَاۤ اَمۡ ہُمۡ قَوۡمٌ طَاغُوۡنَ ﴿ۚ۳۲﴾
তাদের বিবেক-বুদ্ধি কি তাদেরকে এসব কথা বলতে প্ররোচিত করে, না কি প্রকৃতপক্ষে তারা শত্রুতায় সীমালংঘনকারী লোক?
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৩
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ تَقَوَّلَہٗ ۚ بَلۡ لَّا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿ۚ۳۳﴾
তারা কি বলে যে, এ ব্যক্তি নিজেই কুরআন রচনা করে নিয়েছে? প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে তারা ঈমান গ্রহণ করতে চায় না।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৪
فَلۡیَاۡتُوۡا بِحَدِیۡثٍ مِّثۡلِہٖۤ اِنۡ کَانُوۡا صٰدِقِیۡنَ ﴿ؕ۳۴﴾
তাদের একথার ব্যাপারে তারা যদি সত্যবাদী হয় তাহলে এ বাণীর মত একটি বাণী তৈরি করে আনুক।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৫
اَمۡ خُلِقُوۡا مِنۡ غَیۡرِ شَیۡءٍ اَمۡ ہُمُ الۡخٰلِقُوۡنَ ﴿ؕ۳۵﴾
কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এরা কি নিজেরাই সৃষ্টি হয়েছে? না কি এরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা?
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৬
اَمۡ خَلَقُوا السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ بَلۡ لَّا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿ؕ۳۶﴾
না কি পৃথিবী ও আসমানকে এরাই সৃষ্টি করেছে? প্রকৃত ব্যাপার হলো, তারা বিশ্বাস পোষণ করে না।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৭
اَمۡ عِنۡدَہُمۡ خَزَآئِنُ رَبِّکَ اَمۡ ہُمُ الۡمُصَۜیۡطِرُوۡنَ ﴿ؕ۳۷﴾
তোমার রবের ভাণ্ডারসমূহ কি এদের অধিকারে? নাকি ঐ সবের ওপর তাদের কর্তৃত্ব চলে?
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৮
اَمۡ لَہُمۡ سُلَّمٌ یَّسۡتَمِعُوۡنَ فِیۡہِ ۚ فَلۡیَاۡتِ مُسۡتَمِعُہُمۡ بِسُلۡطٰنٍ مُّبِیۡنٍ ﴿ؕ۳۸﴾
তাদের কাছে কি কোন সিঁড়ি আছে, যাতে আরোহণ করে তারা ঊর্ধ্বজগতের কথা শুনে নেয়? এদের মধ্যে যে শুনেছে সে পেশ করুক কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৩৯
اَمۡ لَہُ الۡبَنٰتُ وَ لَکُمُ الۡبَنُوۡنَ ﴿ؕ۳۹﴾
আল্লাহর জন্য কি কেবল কন্যা সন্তান আর তোমাদের জন্য যত পুত্র সন্তান?
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪০
اَمۡ تَسۡـَٔلُہُمۡ اَجۡرًا فَہُمۡ مِّنۡ مَّغۡرَمٍ مُّثۡقَلُوۡنَ ﴿ؕ۴۰﴾
তুমি কি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবী করছো যে, তাদের ওপর জোরপূর্বক চাপানো জরিমানার বোঝার নীচে তারা নিস্পেষিত হচ্ছে?
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪১
اَمۡ عِنۡدَہُمُ الۡغَیۡبُ فَہُمۡ یَکۡتُبُوۡنَ ﴿ؕ۴۱﴾
তাদের কাছে কি অদৃশ্য সত্যসমূহের জ্ঞান আছে যার ভিত্তিতে তারা লিখছে?
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪২
اَمۡ یُرِیۡدُوۡنَ کَیۡدًا ؕ فَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ہُمُ الۡمَکِیۡدُوۡنَ ﴿ؕ۴۲﴾
তারা কি কোন চক্রান্ত আঁটতে চাচ্ছে?(যদি তাই হয়) তাহলে কাফেররাই উল্টো নিজেদের ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়বে।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৩
اَمۡ لَہُمۡ اِلٰہٌ غَیۡرُ اللّٰہِ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿۴۳﴾
নাকি আল্লাহ ছাড়া ওদের অন্য কোন ইলাহ আছে? তারা যে শির্ক স্থির করে আল্লাহ্‌ তা থেকে পবিত্ৰ !
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৪
وَ اِنۡ یَّرَوۡا کِسۡفًا مِّنَ السَّمَآءِ سَاقِطًا یَّقُوۡلُوۡا سَحَابٌ مَّرۡکُوۡمٌ ﴿۴۴﴾
এরা যদি আসমানের একটি অংশ পতিত হতে দেখে তাহলেও বলবে, এ তো ধাবমান মেঘরাশি।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৫
فَذَرۡہُمۡ حَتّٰی یُلٰقُوۡا یَوۡمَہُمُ الَّذِیۡ فِیۡہِ یُصۡعَقُوۡنَ ﴿ۙ۴۵﴾
অতএব, তাদেরকে আপন অবস্থায় থাকতে দাও। যাতে তারা সে দিনটির সাক্ষাত পায় যেদিন তাদেরকে মেরে ভূপাতিত করা হবে।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৬
یَوۡمَ لَا یُغۡنِیۡ عَنۡہُمۡ کَیۡدُہُمۡ شَیۡئًا وَّ لَا ہُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿ؕ۴۶﴾
সেদিন না তাদের কোন চালাকি কাজে আসবে, না কেউ তাদেরকে সাহায্য করতে এগুবে।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৭
وَ اِنَّ لِلَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا عَذَابًا دُوۡنَ ذٰلِکَ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۴۷﴾
আর সেদিনটি আসার আগেও জালেমদের জন্য একটা আযাব আছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৮
وَ اصۡبِرۡ لِحُکۡمِ رَبِّکَ فَاِنَّکَ بِاَعۡیُنِنَا وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ حِیۡنَ تَقُوۡمُ ﴿ۙ۴۸﴾
আর আপনি ধৈর্যধারণ করুন আপনার রবের সিদ্ধান্তের উপর ; নিশ্চয় আপনি আমাদের চক্ষুর সামনেই রয়েছেন । আপনি আপনার রবের সপ্ৰশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন যখন আপনি দণ্ডায়মান হন ,
সূরা:৫২-আত-তূর:-৪৯
وَ مِنَ الَّیۡلِ فَسَبِّحۡہُ وَ اِدۡبَارَ النُّجُوۡمِ ﴿٪۴۹﴾
তাছাড়া রাত্রিকালেও তাঁর তাসবীহ পাঠ করো। আর তারকারাজি যখন অস্তমিত হয় সে সময়ও।

২৯-৪৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৯-৪২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এ আয়াতগুলোর শুরুতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর কাফির-মুশরিক কর্তৃক আরোপ করা তিনটি খারাপ বৈশিষ্ট্য অপনোদন করছেন-
(১) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি গণক নন। (২) তিনি উন্মাদও নন এবং (৩) তিনি কোন কবিও না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَمَا عَلَّمْنٰھُ الشِّعْرَ وَمَا یَنْۭبَغِیْ لَھ۫ﺚ اِنْ ھُوَ اِلَّا ذِکْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِیْنٌ) ‏

“আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তাঁর জন্য শোভনীয়ও নয়। এটা কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। ” (সূরা ইয়া-সীন ৩৬ :৬৯)

তাই আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উক্ত তিনটি খারাপ বৈশিষ্ট্য অপনোদন করার পর দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।

رَيْبَ -এর অর্থ : বিপর্যয়, দুর্ঘটনা। مَمْنُوْنِ মৃত্যুর নামসমূহের একটি নাম। আয়াতের তাৎপর্য হলো : মক্কার কুরাইশরা এ অপেক্ষায় ছিল যে, হয়তো মুহাম্মাদ কালের কোন দুর্ঘটনায় মারা যাবে, আর আমরা স্বস্তি লাভ করব।

(فَإِنِّيْ مَعَكُمْ مِّنَ الْمُتَرَبِّصِيْنَ)

অর্থাৎ আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রয়েছি। দেখ, কার মৃত্যু আগে আসে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা ৩২-৪৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত অস্বীকৃতিসূচক কাফিরদেরকে প্রশ্ন করছেন, যার না-বোধক উত্তর আসবে।

প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের এই চলমান কৃতকর্মের কারণ জিজ্ঞাসা করছেন যে, তারা এরূপ কেন করছে? তারা কি তাদের বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী এ কাজ করছে? আল্লাহ নিজেই উত্তর দিচ্ছেন যে, না- বিবেক তো আমিই তাদের দিয়েছি, বিবেক খাটিয়ে যদি তারা কাজ করতো তাহলে তারা সঠিক পথ পেত। আসলে তারা হলো অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কুরআন নিয়ে তাদের মন্তব্য ও তার বিপরীতে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, তারা কি বলতে চায় যে, এ কুরআন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিজের রচনা করা গ্রন্থ? যদি তারা তাই মনে করে তাহলে তারাও তার মতোই একটি গ্রন্থ রচনা করে নিয়ে আসুক। এ ব্যাপারে পূর্বে সূরা বাকারাসহ অন্যান্য স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমতা কতটুকু তার প্রতি ইঙ্গত দিচ্ছেন যে, তারা কি এমনিতেই সৃষ্ট না তাদের কোন স্রষ্টা রয়েছে? আসলে স্রষ্টা ব্যতীত যে কোন কিছু সৃষ্টি হয় না তারই কথা আল্লাহ জানালেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বললেন, তারা কি নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? তারা কি আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? তাদের নিকট কি তাদের রবের ভাণ্ডার রয়েছে, নাকি তার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের রয়েছে যে, তারা তা নিয়ন্ত্রণ করছে? নাকি তাদের জন্য আসমানে উঠার সিঁড়ি রয়েছে? যদি থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যে ঐ সিঁড়ি বেয়ে আসমানে উঠে সেখান থেকে কিছু শুনেছে তা দলিল হিসাবে পেশ করুক।

প্রকৃত কথা এই যে, উল্লেখিত কোন কিছুর মালিকই তারা নয়, তবে তারা কিসের অহংকার করছে? যদি তাদের কোন কিছু করার ক্ষমাত না-ই থাকে তাহলে তাদের উচিত আত্মসমর্পণ করা।

এরপর মুশরিকদের একটা ভ্রান্ত বিশ্বাসের বিষয়ে বলছেন যে, তারা বলে : ফিরিশ্তারা আল্লাহর কন্যা। অথচ কন্যা সন্তান তাদেরই অপছন্দের বস্তু। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্য আর পুত্র সন্তান তোমাদের জন্য? এ কেমন বণ্টন?

এরপর আল্লাহ তাদের অস্বীকৃতির কারণ হিসেবে জিজ্ঞাসা করছেন, তুমি কি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাচ্ছ, যে কারণেই তারা তোমার কথা শুনতে চাচ্ছে না? আসল বাস্তবতা তাও নয়। নাকি তারা অদৃশ্যের খরব রাখে, যেজন্য তুমি যা বলছ তা তারা অস্বীকার করছে যে, তুমি যা বলছ তা মিথ্যা যার ফলে তারা বিশ্বাস করে যে, তোমার কথা ঠিক নয়; নাকি তারা ইচ্ছাকৃতই কোন ষড়যন্ত্র করছে আর বাস্তব কথা সেটাই। তাদের জেনে রাখ দরকার যে, তারাই তাদের ষড়যন্ত্রে ধ্বংশ হয়ে যাবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন গণক, জাদুকর বা পাগল নন যা কাফেররা বলে থাকে। দায়ীদের এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কেননা এমন কথা তাদের ক্ষেত্রেও বলা হতে পারে, তাই ধৈর্য ধারন করতে হবে।
২. আল্লাহর মুখলেস বান্দাদের তিনি সবসময় সাহায্য করে থাকেন।
৪৩-৪৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

কাফিরদের অবাধ্যতা ও গোঁড়ামির কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তারা যদি আকাশের কোন খণ্ড ভেঙ্গে পড়তে দেখে তখন তারা বলে- এটাতো মেঘমালা مركوم অর্থাৎ متراكم বা পুঞ্জীভূত হওয়া।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِّنَ السَّمَا۬ءِ فَظَلُّوْا فِيْهِ يَعْرُجُوْنَ ‏ لَقَالُوْآ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُوْرُوْنَ) ‏

“আমি যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার খুলে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে থাকে, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।” (সূরা আল হিজ্র ১৫ :১৪-১৫)

অতএব তাদেরকে কিয়ামত অবধি ছেড়ে দাও; যেদিন তাদের চক্রান্ত কোন কাজে আসবে না। আর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকো।

(وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا)

‘তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ কর; তুমি আমার চোখের সামনেই রয়েছো’ অর্থাৎ তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সব কষ্টের সম্মুুখীন হয়েছো তার জন্য তোমার প্রভুর ফায়সালার অপেক্ষা কর। কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার দৃষ্টির বাইরে নন বরং তিনি সব দেখছেন।

(حِيْنَ تَقُوْمُ)

(দাঁড়ানো) বলতে কোন্ দাঁড়ানোকে বুঝানো হয়েছে? কেউ বলেছেন : সালাতের জন্য দাঁড়ানোর সময় তাসবীহ পাঠ করা। যেমন সালাতের শুরুতে পড়া হয় :

কেউ বলেছেন : নিদ্রা হতে জাগ্রত হয়ে দাঁড়ানো। এ ব্যাপারে সহীহ বুখারীতে ১১৫৪ নং হাদীসেও রয়েছে।

কেউ বলেছেন : মজলিস থেকে উঠে দাঁড়ানো। যেমন হাদীসে এসেছে : যে ব্যক্তি কোন মজলিস থেকে ওঠার সময় এ দু‘আটি পাঠ করবে তার জন্য তা ঐ মজলিসের ভুলত্র“টির কাফফারা হয়ে যাবে। (আবূ দাঊদ হা. ৪৮৫৯) দু‘আটি হলো :

سُبْحَانَك اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إلٰهَ إِلَّاأَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ

(وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ)

‘এবং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর রাত্রিকালে’ অর্থাৎ তাঁর যিক্র কর, সলাত আদায় ও কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর ইবাদত কর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَمِنَ الَّیْلِ فَتَھَجَّدْ بِھ۪ نَافِلَةً لَّکَﺣ عَسٰٓی اَنْ یَّبْعَثَکَ رَبُّکَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًاﮞ)

এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম কর, এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।

(وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ)

ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : মিরাজের পূর্বে সূর্যোদয়ের আগে, ফজরের সময় দু’ রাকআত আর আসরের সময় দু’রাকআত সলাত ফরয ছিল। অতঃপর আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফারয করার মাধ্যমে তা রহিত করে দেন। (ইবনু কাসীর- এ আয়াতের তাফসীর)

জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : একরাতে আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি চৌদ্দ তারিখের রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন : তোমরা যেমন এ চাঁদটি দেখতে পাচ্ছ তেমনিভাবে তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে এবং তাঁকে দেখার ব্যাপারে বাধা বিঘœ হবে না। তাই তোমাদের সামর্থ্য থাকলে সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সালাতের ব্যাপারে পরাজিত হবে না। তারপর তিনি পাঠ করলেন : তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৫১, সহীহ মুসলিম হা. ৬৩৩)

সূর্যোদয়ের পূর্ব বলতে ফজরের সালাত সূর্যাস্তের পূর্বে বলতে ‘আসরের সালাতকে বুঝানো হয়েছে। আর রাতের কিয়দাংশ সালাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা হলো তাহাজ্জুদের সালাত।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কুরাইশ কাফিররা অবাধ্যতার চরমসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।
২. দীনের দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে কেউ কষ্টের সম্মুখীন হলে তাকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিয়েছেন।
৩. জালিমরা দুনিয়াতেই কিছু খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হয়। আর আখিরাতে রয়েছে চরম শাস্তি।
৪. আল্লাহ তা‘আলার চোখ রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।

২৯-৪৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-(৪)
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৯-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন তার রিসালাত তাঁর বান্দাদের নিকট পৌছাতে থাকেন। সাথে সাথে দুষ্ট লোকেরা তাকে যে দোষে দোষী করছে তা হতে তাঁকে তিনি মুক্ত ও পবিত্র বলে ঘোষণা করছেন। কাহেন বা গণক ঐ ব্যক্তিকে বলে যার কাছে মাঝে মাঝে কোন জ্বিন কোন খবর পৌছিয়ে থাকে। তাই আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সঃ)-কে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি উপদেশ দান করতে থাকো। তোমার প্রতিপালক আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি গণকও নও এবং পাগলও নও।

এরপর কাফিরদের উক্তি উদ্ধৃত করা হচ্ছে যে, তারা বলেঃ “মুহাম্মাদ (সঃ) একজন কবি ছাড়া কিছুই নন। তিনি ইন্তেকাল করলে কেই বা তাঁর মত হবে এবং কেই বা তার দ্বীন রক্ষা করবে? তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই তার দ্বীন বিদায় গ্রহণ করবে। তাদের একথার জবাবে মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাও- তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি। ভাল পরিণাম এবং চিরস্থায়ী সফলতা লাভ কার হয় তা দুনিয়া শীঘ্রই জানতে পারবে।

দারুন নাদওয়াতে কুরায়েশরা পরামর্শ করে যে, অন্যান্য কবিদের মত মুহাম্মাদ (সঃ) একজন কবি। সুতরাং তাকে বন্দী করা হোক, যাতে তিনি সেখানে ধ্বংস হয়ে যান। যেমন পরিণাম হয়েছিল কবি যুহায়ের ও কবি নাবেগার, অনুরূপ পরিণাম তারও হবে। তখন এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।

অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা বলেন যে, তবে কি তাদের বুদ্ধি-বিবেক তাদেরকে এই বিষয়ে প্ররোচিত করে, না তারা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। অর্থাৎ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, এরা বড়ই হঠকারী, উদ্ধত এবং বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। হিংসা ও শক্রতার কারণেই তারা জেনে শুনে নবী (সঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করছে। তারা বলে যে, এই কুরআন মুহাম্মাদ (সঃ) স্বয়ং রচনা করেছেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তো তা নয়। কিন্তু তাদের কুফরী তাদের মুখ দিয়ে এই মিথ্যা কথা বের করছে। তারা যদি তাদের এ কথায় সত্যবাদী হয় তবে এর সদৃশ কোন রচনা উপস্থিত করুক না! এই কাফির কুরায়েশরা শুধু নয়, বরং যদি তাদের সাথে সারা বিশ্বের সমস্ত জ্বিন এবং মানুষও যোগ দেয় তবুও তারা এই কুরআনের অনুরূপ কিতাব পেশ করতে অক্ষম হয়ে যাবে। গোটা কুরআন নয়, বরং এর মত দশটি সূরা, এমনকি একটি সূরাও কিয়ামত পর্যন্ত তারা আনতে পারবে না।
৩৫-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা এখানে রবুবিয়্যাত ও তাওহীদে উলুহিয়্যাত সাব্যস্ত করতে গিয়ে বলেনঃ তারা কি কোন স্রষ্টা ছাড়াই সৃষ্ট হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? প্রকৃতপক্ষে এ দু’টোর কোনটাই নয়। বরং তাদের সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ। পূর্বে তারা কিছুই ছিল না। তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।

হযরত জুবায়ের ইবনে মুতইম (রাঃ) বলেনঃ “আমি নবী (সঃ)-কে, মাগরিবের নামাযে সূরায়ে তূর পড়তে শুনি। যখন তিনি (আরবী) পর্যন্ত পৌঁছেন তখন আমার অন্তর উড়ে যাবার উপক্রম হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এই জুবায়ের ইবনে মুতইম (রাঃ) বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর নবী (সঃ)-এর নিকট বদরের বন্দীদেরকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যে এসেছিলেন। ঐ সময় তিনি মুশরিক ছিলেন। এই আয়াতগুলোর শ্রবণই তাঁর ইসলামে প্রবেশের কারণ হয়।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা কি আকাশমণ্ডল না, এটাও নয়। বরং তারা জানে যে, স্বয়ং তাদের ও। একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। এটা জানা সত্ত্বেও তারা তাদের অবিশ্বাস হতে বিরত থাকছে না।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তা’আলার ভাণ্ডার কি তাদের নিকট রয়েছে, না তারা এ সমুদয়ের নিয়ন্তা? অর্থাৎ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা কি তাদের হাতে আছে, না তারা সমস্ত ভাণ্ডারের মালিক? তারাই সারা মাখলুকের রক্ষক? না, প্রকৃত ব্যাপার তা নয়, বরং মালিক ও ব্যবস্থাপক হলেন একমাত্র আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা। তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন।

এরপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ উঁচু আকাশে উঠে যাওয়ার কোন সিঁড়ি তাদের কাছে আছে না কি? যদি থেকে থাকে তবে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেখানে পৌছে কথা শুনে আসে সে তার কথা ও কাজের কোন আসমানী দলীল পেশ করুক না কেন? কিন্তু না তারা কোন দলীল পেশ করতে পারে, না তারা কোন সত্য পথের অনুসারী।

এটাও তাদের একটা বড় অন্যায় কথা যে, তারা বলেঃ ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা (নাউযুবিল্লাহ)। এটা কতই না জঘন্য ব্যাপার যে, তারা নিজেদের জন্যে যে কন্যাদেরকে অপছন্দ করে তাদেরকেই আবার স্থির করে আল্লাহ্ তা’আলার জন্যে! তারা যখন শুনতে পায় যে, তাদের কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে তখন দুঃখে ও লজ্জায় তাদের চেহারা মলিন হয়ে যায়। অথচ ঐ কন্যাদেরকেই তারা সাব্যস্ত করছে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার জন্যে! শুধু তাই নয়, বরং তারা তাদের ইবাদতও করছে! তাই তো প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ অত্যন্ত ধমকের সুরে বলছেনঃ তবে কি কন্যা সন্তান তার জন্যে এবং পুত্র সন্তান তোমাদের জন্যে?

অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! তবে কি তুমি তোমার তাবলীগী কাজের উপর তাদের নিকট পারিশ্রমিক চাচ্ছ যা তাদের উপর ভারী হচ্ছে? অর্থাৎ নবী (সঃ) তো তাঁর তাবলীগী কাজের উপর কোন পারিশ্রমিক চাচ্ছেন না! তাহলে তাদের কাছে তার আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয়াতে তাদের অসন্তুষ্ট হবার কারণ কি? না কি অদৃশ্য বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান আছে যে, তারা এই বিষয়ে কিছু লিখে? না, না, যমীন ও আসমানের সমস্ত সৃষ্টজীবের মধ্যে কেউই অদৃশ্যের খবর রাখে না। এই লোকগুলো আল্লাহর দ্বীন এবং আল্লাহর রাসূল (সঃ) সম্পর্কে আজে-বাজে কথা বলে স্বয়ং রাসূল (সঃ)-কে, মুমিনদেরকে এবং সাধারণ লোকদেরকে প্রতারিত করতে চায়। কাফিরদের এটা জেনে রাখা উচিত যে, পরিণামে তারাই হবে ষড়যন্ত্রের শিকার।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ ছাড়া তাদের অন্য কোন মা’বূদ আছে কি? কেন তারা আল্লাহর ইবাদতে প্রতিমা ও অন্যান্য জিনিসকে শরীক করছে? আল্লাহ তাআলা তো মুশরিকদের এই কাজে চরম অসন্তুষ্ট। তারা যাকে শরীক স্থির করে তিনি তা হতে পবিত্র।
৪৪-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও কাফিরদের হঠকারিতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা তাদের ঔদ্ধত্য, জিদ ও হঠধর্মীতে এতো বেড়ে গেছে যে, আল্লাহর শাস্তি অনুভব করার পরেও তারা ঈমানের তাওফীক লাভ করবে না। তারা যদি দেখতে পায় যে, আকাশের কোন টুকরা শাস্তিরূপে তাদের মাথার উপর পড়ছে তবুও আল্লাহর শাস্তির সত্যতা স্বীকার করবে না। বরং স্পষ্টভাবে তারা বলবে যে, ওটা ঘন মেঘ, যা পানি বর্ষাবার জন্যে আসছে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী)

অথাৎ “যদি আমি তাদের জন্যে আকাশের কোন দরযা খুলেও দিই এবং তারা সেখানে আরোহণও করে তবে তখনো তারা অবশ্যই বলবেঃ আমাদের নরবন্দী করা হয়েছে, বরং আমরা যাদুকৃত হয়েছি।” (১৫:১৪-১৫) অর্থাৎ তারা যে মু’জিযা দেখতে চাচ্ছে তা যদি তাদেরকে দেখিয়ে দেয়াও হয়, এমন কি যদি তাদেরকে আকাশে উঠিয়ে নেয়াও হয় তথাপি তারা কোন কথা বানিয়ে নিয়ে ওটাকে অস্বীকার করে বসবে। তাই মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সাঃ)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ হে নবী (সাঃ)! তুমি তাদেরকে ছেড়ে দাও। কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই জানতে পারবে। সেদিন তাদের ষড়যন্ত্র কোন কাজে আসবে না। সেদিন তারা চালাক-চাতুরী সব ভুলে যাবে। আজ তারা যাদেরকে আহ্বান করছে এবং নিজেদের সাহায্যকারী মনে করছে, ঐ দিন তারা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে। এমন কেউ হবে না যে তাদের সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসবে। তারা এদের পক্ষ থেকে কোন ওরও পেশ করতে পারবে না।

তাদেরকে যে শুধু কিয়ামতের দিনই শাস্তি দেয়া হবে এবং এখানে তারা আরামে ও শান্তিতে থাকবে তা নয়, বরং এই দুবৃত্তদের জন্যে ওর পূর্বে দুনিয়াতেও শাস্তি অবধারিত রয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “গুরু শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি লঘু শাস্তি আস্বাদন করাববা, যাতে তারা ফিরে আসে।” (৩২:২১)

প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। অর্থাৎ তারা যে দুনিয়াতেও ধৃত হবে তা তারা জানে না। এই অজ্ঞতাই তাদেরকে এ কাজে উত্তেজিত করে যে, তারা পাপের উপর পাপ এবং যুলুমের উপর যুলুম করতে থাকে, অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হয় এবং তারা শিক্ষাগ্রহণ করে। কিন্তু যখনই বিপদ কেটে যায় তখনই আবার তাদের হৃদয় কঠোর হয়ে যায়। কোন কোন হাদীসে আছে যে, মুনাফিকের দৃষ্টান্ত উটের মত। উটকে কেন বাধা হয় এবং খোলা হয় তা যেমন সে জানে না বা বুঝে না, অনুরূপভাবে মুনাফিককে কেন রোগগ্রস্ত করা হয় এবং কেন সুস্থ রাখা হয় তা সে জানে না।

আসারে ইলাহীতে রয়েছেঃ “আমি কতবার তোমার অবাধ্যাচরণ করবে এবং তুমি আমাকে শাস্তি দিবে না?” আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি কতবার তোমাকে নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য দান করেছি যার তুমি খবরই রাখো না।”

এরপর আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি ধৈর্যধারণ কর, তাদের দুর্ব্যবহারে ও কষ্ট প্রদানে মনক্ষুন্ন হয়ো না। তাদের পক্ষ হতে কোন বিপদে পড়ার তুমি মোটেই ভয় করো না। জেনে রেখো যে, তুমি আমার হিফাযতে রয়েছে। আমি সব সময় তোমাকে দেখছি। তোমার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমার। সমস্ত শক্র হতে তোমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমারই উপর ন্যস্ত।

অতঃপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ “তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর যখন তুমি শয্যা ত্যাগ কর।’ এর একটি ভাবার্থ এই বর্ণনা করা হয়েছেঃ যখন তুমি নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তখন তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। দ্বিতীয় ভাবার্থঃ যখন রাত্রে জাগ্রত হবে তখন তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস মহিমা ঘোষণা করবে। দুটো ভাবার্থই সঠিক।

হাদীস শরীফে এসেছে যে, নবী (সঃ) নামায শুরু করেই পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আপনারই প্রাপ্য, আপনার নাম কল্যাণ ও বরকতময়, আপনার মর্যাদা সমুচ্চ এবং আপনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদেও এ হাদীসটি রয়েছে)

হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম হতে জেগে নিম্নের কালেমাটি পাঠ করেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব তারই ও প্রশংসাও তারই এবং তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাবান। আল্লাহ্ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লারই জন্যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও মহান, পাপকার্য হতে ফিরার ও পুণ্যকার্য সম্পাদন করার ক্ষমতা আল্লাহর তাওফীক ছাড়া সম্ভব নয়।” এটা পাঠ করার পর সে ক্ষমা প্রার্থনাই করুক বা কিছু যাজ্ঞা করুক, আল্লাহ তা’আলা তা কবুল করে থাকেন। তারপর সে যদি দৃঢ় সংকল্প করে এবং অযু করে নামাযও আদায় করে তবে ঐ নামাযও কবুল করা হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সুনান গ্রন্থসমূহেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে)

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার হুকুম প্রত্যেক মজলিস হতে উঠে যাওয়ার সময়ই রয়েছে। হযরত আবুল আহওয়াস (রঃ)-এরও উক্তি এটাই যে, কেউ কোন মজলিস, হতে উঠে যাওয়ার ইচ্ছা করলে তার নিম্নলিখিত কালেমাটি পাঠ করা উচিতঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি।”

হযরত আবু রাবাহ (রঃ) বলেন যে, যদি ঐ মজলিসে ভাল কথা আলোচিত হয় তবে তো পুণ্য আরো বেড়ে যাবে। আর যদি অন্য কিছু আলোচিত হয় তবে এই কালেমা ওর কাফফারা হয়ে যাবে অর্থাৎ পাপ মোচনের কারণ হবে। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু উসমান ফাকীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছেঃ হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে শিক্ষা দেন যে, যখন তিনি কোন মজলিস হতে উঠে যাবেন তখন যেন পাঠ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও আপনার নিকট তাওবা করছি।” এর বর্ণনাকারী হযরত মা’মার (রঃ) বলেনঃ আমি এও শুনেছি যে, এই কালেমা ঐ মজলিসের কাফফারা হয়ে যায়। (এ হাদীসটি আব্দুর রাযযাক (রঃ) তাঁর জামে’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এটা মুরসাল হাদীস। কিন্তু মুস্তানাদ বহু হাদীসও এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, যার সনদগুলো একে অপরকে সবল করে থাকে)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসে ও বহুকিছু বাক-বিতণ্ডা করে, অতঃপর ঐ মজলিস হতে উঠে যাওয়ার পূর্বে (আরবী)-এই কালেমাটি পাঠ করে, তাহলে ঐ মজলিসে যা কিছু (ভুল-ক্রটি) হয়েছে তার কাফফারা হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইমাম হাকিম (রঃ) এ হাদীসটিকে স্বীয় মুসতাদরাক গ্রন্থে রিওয়াইয়াত করার পর বলেন যে, এর সনদ ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর রয়েছে। তবে ইমাম বুখারী (রঃ) এতে ইল্লাত বের করেছেন। আমি বলি যে, ইমাম আহমাদ (রঃ}, ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু হাতিম (রাঃ), ইমাম আবূ যারআহ্ (র), ইমাম দারকুতনী (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণও এটাকে মাল বলেছেন এবং অহাম বা সন্দেহের সম্পর্ক ইবনে জুরায়েজ (রঃ)-এর দিকে করেছেন। কিন্তু এ রিওয়াইয়াতটি সুনানে আবি দাউদে যে সনদে বর্ণিত হয়েছে তাতে ইবনে জুরায়েজ (রঃ)-এর নামই নেই)

অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর শেষ বয়সে যে মজলিস হতে উঠে যেতেন সেখানে উপরোক্তে কালেমা পাঠ করতেন। এটা দেখে একটি লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি ইতিপূর্বে তো এটা পাঠ করতেন না (সুতরাং এখন পড়ার কারণ কি)?” উত্তরে তিনি বললেনঃ মজলিসে যা কিছু (দোষ-ক্রটি) হয়, এই কালেমা ওর কাফফারা হয়ে যায়।” (এ রিওয়াইয়াতটি মুরসাল সনদেও হযরত আবুল আলিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)

ইমাম নাসাঈ (রঃ) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেনঃ “এই কালেমা এমনই যে, কেউ যদি এগুলোকে কোন মজলিস হতে উঠার সময় পড়ে নেয় তবে তার জন্যে এটা কাফফারা হয়ে যাবে। ভাল মজলিস ও যিকরের মজলিসে এগুলো পড়লে তা মোহরের মত হয়ে যায়।” (এটা সুনানে আবি দাউদ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে রয়েছে)

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, আমি একটি পৃথক অংশে এই সমুদয় হাদীসকে, এগুলোর শব্দগুলোকে ও ওগুলোর সনদগুলোকে একত্রিত করেছি, ওর কারণগুলোও বর্ণনা করেছি এবং ওগুলোর সম্পর্কে যা কিছু লিখার ছিল সবই লিখে দিয়েছি।

এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ তার পবিত্রতা ঘোষণা কর রাত্রিকালে অর্থাৎ নামাযের মাধ্যমে ও তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে রাত্রিকালে তাঁর ইবাদত ও যিকর করতে থাকো। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এবং রাত্রের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।” (১৭:৭৯)

‘তারকার অস্তগমনের পর’ দ্বারা ফজরের ফরয নামাযের পূর্বের দুই রাকআত নামাযকে বুঝানো হয়েছে। তরকা যখন অস্তমিত হবার জন্যে ঝুঁকে পড়ে তখন এই দুই রাকআত নামায পড়া হয়ে থাকে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে মার’ রূপে বর্ণিত আছেঃ “তোমরা ঐ দুই রাকআত সুন্নাত নামায ছেড়ে দিয়ো না যদিও ঘোড়া তোমাদেরকে দলিত করে।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এই হাদীসের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর কতক অনুসারী এই দুই রাকআত সুন্নাত নামাযকে ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা, প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে নবী (সঃ) বলেছিলেনঃ “দিন ও রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায (ফরয করা হয়েছে)।” প্রশ্নকারী আবার প্রশ্ন করেনঃ “এ ছাড়া আমার উপর আর কিছু (ফরয) আছে কি?” জবাবে তিনি বলেনঃ “না, তবে তুমি নফল পড়তে পার।”

সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ফজরের দুই রাকআত নামাযের চেয়ে অন্য কোন নফল নামাযের বেশী পাবন্দী করতেন না।

সহীহ্ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “ফজরের ফরয নামাযের পূর্বের দুই রাকআত সুন্নাত নামায সারা দুনিয়া ও ওর মধ্যস্থিত সমস্ত জিনিস অপেক্ষা উত্তম।”

Leave a Reply