بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১২০৩/হে মানুষ:-১৩) [# জীবন মানেই পরিশ্রম:- # ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার:-] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২০৩/হে মানুষ:-১৩)
[# জীবন মানেই পরিশ্রম:-
# ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার:-]
www.motaher21.net

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২০৩/হে মানুষ:-১৩)
[# জীবন মানেই পরিশ্রম:-
# ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ
পারা:৩০
১-২০ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১
لَاۤ اُقۡسِمُ بِہٰذَا الۡبَلَدِ ۙ﴿۱﴾
শপথ করছি এই (মক্কা) নগরের।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-২
وَ اَنۡتَ حِلٌّۢ بِہٰذَا الۡبَلَدِ ۙ﴿۲﴾
আর অবস্থা হচ্ছে এই যে (হে নবী!) তোমাকে এই নগরে হালাল করে নেয়া হয়েছে।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৩
وَ وَالِدٍ وَّ مَا وَلَدَ ۙ﴿۳﴾
কসম খাচ্ছি বাপের এবং তার ঔরসে যে সন্তান জন্ম নিয়েছে তার।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৪
لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡ کَبَدٍ ؕ﴿۴﴾
আসলে আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৫
اَیَحۡسَبُ اَنۡ لَّنۡ یَّقۡدِرَ عَلَیۡہِ اَحَدٌ ۘ﴿۵﴾
সে কি মনে করে যে, কখনো তার উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না?
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৬
یَقُوۡلُ اَہۡلَکۡتُ مَالًا لُّبَدًا ؕ﴿۶﴾
সে বলে, ‘আমি রাশি রাশি অর্থ উড়িয়ে দিয়েছি।’
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৭
اَیَحۡسَبُ اَنۡ لَّمۡ یَرَہٗۤ اَحَدٌ ؕ﴿۷﴾
সে কি ধারণা করে যে, তাকে কেউই দেখে নি?
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৮
اَلَمۡ نَجۡعَلۡ لَّہٗ عَیۡنَیۡنِ ۙ﴿۸﴾
আমি কি তার জন্য সৃষ্টি করিনি চক্ষুযুগল?
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-৯
وَ لِسَانًا وَّ شَفَتَیۡنِ ۙ﴿۹﴾
আর জিহ্বা ও দুই ঠোঁট ?
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১০
وَ ہَدَیۡنٰہُ النَّجۡدَیۡنِ ﴿ۚ۱۰﴾
আমি কি তাকে দু’টি সুস্পষ্ট পথ দেখাইনি?
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১১
فَلَا اقۡتَحَمَ الۡعَقَبَۃَ ﴿۫ۖ۱۱﴾
কিন্তু সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করার সহস করেনি।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১২
وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡعَقَبَۃُ ﴿ؕ۱۲﴾
কি জানো সেই দুর্গম গিরিপথটি কি?
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৩
فَکُّ رَقَبَۃٍ ﴿ۙ۱۳﴾
তা হচ্ছে ক্রীতদাসকে মুক্তি প্রদান।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৪
اَوۡ اِطۡعٰمٌ فِیۡ یَوۡمٍ ذِیۡ مَسۡغَبَۃٍ ﴿ۙ۱۴﴾
অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্যদান —
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৫
یَّتِیۡمًا ذَا مَقۡرَبَۃٍ ﴿ۙ۱۵﴾
পিতৃহীন আত্মীয়কে।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৬
اَوۡ مِسۡکِیۡنًا ذَا مَتۡرَبَۃٍ ﴿ؕ۱۶﴾
বা ধূলি মলিন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৭
ثُمَّ کَانَ مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡمَرۡحَمَۃِ ﴿ؕ۱۷﴾
তদুপরি অন্তর্ভুক্ত হওয়া তাদের যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের ও দয়া দাক্ষিণ্যের।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৮
اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡمَیۡمَنَۃِ ﴿ؕ۱۸﴾
এরাই ডানপন্থী।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-১৯
وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا ہُمۡ اَصۡحٰبُ الۡمَشۡـَٔمَۃِ ﴿ؕ۱۹﴾
পক্ষান্তরে যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হল হতভাগ্য।
সুরা: ৯০ : আল্ – বালাদ:-২০
عَلَیۡہِمۡ نَارٌ مُّؤۡصَدَۃٌ ﴿٪۲۰﴾
তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ আগুনে।

সুরা: আল-বালাদ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

* ভূমিকা:৯০

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

(৯০-বালাদ) : নামকরণ:

প্রথম আয়াতে (آ اٌقْسِمُ بِهآذَا الْبَلَدِ ) এর আল বালাদ শব্দটি থেকে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

(৯০-বালাদ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

এই সূরার বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গী মক্কা মু’আযয্‌মার প্রথম যুগের সূরাগুলোর মতোই। তবে এর মধ্যে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা থেকে জানা যায়, এই সূরাটি ঠিক এমন এক সময় না্যিল হয়েছিল যখন মক্কায় কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতায় উঠে পড়ে লেগেছিল এবং তাঁর ওপর সব রকমের জুলুম নিপীড়ন চালানো নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছিল।

(৯০-বালাদ) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

একটি অনেক বড় বিষয়বস্তুকে এই সূরায় মাত্র কয়েকটি ছোট ছোট বাক্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি পূর্ণ জীবন দর্শন; যা বর্ণনার জন্য একটি বিরাট গ্রন্থের কলেবরও যথেষ্ঠ বিবেচিত হতো না তাকে এই ছোট্ট সূরাটিতে মাত্র কয়েকটি ছোট ছোট বাক্যে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি কুরআনের অলৌকিক বর্ণনা ও প্রকাশ পদ্ধতির পূর্ণতার প্রমান। এর বিষয়বস্তু হচ্ছে, দুনিয়ায় মানুষের এবং মানুষের জন্য দুনিয়ার সঠিক অবস্থান, মর্যাদা ও ভূমিকা বুঝিয়ে দেয়া। মানুষকে একথা জানিয়ে দেয়া যে আল্লাহ মানুষের জন্য সৌভাগ্যের ও দুর্ভাগ্যের উভয় পথই খুলে রেখেছেন, সেগুলো দেখার ও সেগুলোর ওপর দিয়ে চলার যাবতীয় উপকরণও তাদেরকে সরবরাহ করেছেন। এবং মানুষ সৌভাগ্যের পথে চলে শুভ পরিণতি লাভ করবে অথবা দূর্ভাগ্যের পথে চলে অশুভ পরিণতির মুখোমুখি হবে, এটি তার নিজের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে।

প্রথমে মক্কা শহরকে, এর মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেসব বিপদের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলোকে এবং সমগ্র মানব জাতির অবস্থাকে এই সত্যটির সপক্ষে এই মর্মে সাক্ষী হিসেবে পেশ করা হয়েছে যে, এই দুনিয়াটা মানুষের জন্য কোন আরাম-আয়েশের জায়গা নয়। এখানে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে আনন্দ উল্লাস করার জন্য তাকে পয়দা করা হয়নি। বরং এখানে কষ্টের মধ্যে তার জন্ম হয়েছে। এই বিষয়বস্তুটিকে সূরা আন নাজমের لَيْسَ لِلاِنْسَا نِ اِلاَّمَاسَعىا (মানুষ যতটুকু প্রচেষ্টা চালাবে ততটুকুর ফলেরই সে অধিকারী হবে।) আয়াতটির সাথে মিলিয়ে দেখলে একথা একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, দুনিয়ার এই কর্মচাঞ্চল্যে মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার কর্মতৎপরতা, প্রচেষ্টা, পরিশ্রম ও কষ্টসহিষ্ণুতার ওপর।

এরপর মানুষই যে এখানে সবকিছু এবং তার ওপর এমন কোন উচ্চতর ক্ষমতা নেই যে তার কাজের তত্ত্বাবধান করবে এবং তার কাজের যথাযথ হিসেব নেবে, তার এই ভুল ধারণা দূর করে দেয়া হয়েছে।

তারপর মানুষের বহুতর জাহেলী নৈতিক চিন্তাধারার মধ্য থেকে একটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ গ্রহণ করে দুনিয়ায় সে অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের যেসব ভুল মানদণ্ডের প্রচলন করে রেখেছে তা তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তি নিজের বড়াই করার জন্য বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ ব্যয় করে সে নিজেও নিজের এই বিপুল ব্যয় বহরের জন্য গর্ব করে এবং লোকেরা তাকে বাহবা দেয়। অথচ যে সর্বশক্তিমান সত্ত্বা তার কাজের তত্ত্বাবধান করছেন তিনি দেখতে চান, সে এই ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে এবং কিভাবে, কি উদ্দেশ্যে এবং কোন মনোভাব সহকারে এসব ব্যয় করছে।

এরপর মহান আল্লাহ বলছেন, আমি মানুষকে জ্ঞানের বিভিন্ন উপকরণ এবং চিন্তা ও উপলব্ধির যোগ্যতা দিয়ে তার সামনে ভালো ও মন্দ দু’টো পথই উন্মুক্ত করে দিয়েছি। একটি পথ মানুষকে নৈতিক অধ:পাতে নিয়ে যায়। এ পথে চলার জন্য কোন কষ্ট স্বীকার করতে হয় না। বরং তার প্রবৃত্তি সাধ মিটিয়ে দুনিয়ার সম্পদ উপভোগ করতে থাকে। দ্বিতীয় পথটি মানুষকে নৈতিক উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। এটি একটি দুর্গম গিরিপথের মতো। এ পথে চলতে গেলে মানুষকে নিজের প্রবৃত্তি ওপর জোর খাটাতে হয়। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কারণে মানুষ এই গিরিপথে ওঠার পরিবর্তে গভীর খাদের মধ্যে গড়িয়ে পড়াই বেশী পছন্দ করে।

তারপর যে গিরিপথ অতিক্রম করে মানুষ ওপরের দিকে যেতে পারে সেটি কি তা আল্লাহ বলেছেন। তা হচ্ছে: গর্ব ও অহংকার মূলক এবং লোক দেখানো ও প্রদর্শনী মূলক ব্যয়ের পথ পরিত্যাগ করে নিজের ধন-সম্পদ এতিম ও মিসকিনদের সাহায্যার্থে ব্যয় করতে হবে। আল্লাহর প্রতি ও তাঁর দ্বীনের প্রতি ঈমান আনতে হবে আর ঈমানদারদের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এমন একটি সমাজ গঠনে অংশ গ্রহণ করতে হবে, যা ধৈর্য সহকারে সত্যপ্রীতির দাবি পূরণ এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি করুণা প্রদর্শন করবে। এই পথে যারা চলে তারা পরিণামে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়। বিপরীত পক্ষে অন্যপথ অবলম্বনকারীরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। সেখান থেকে তাদের বের হবার সমস্ত পথই থাকবে বন্ধ।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1, 2,

لَاۤ اُقْسِمُ بِهٰذَا الْبَلَدِۙ

না,১ আমি কসম খাচ্ছি এই নগরের।২

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১) ইতিপূর্বে সূরা কিয়ামাহর ১ টীকায় “না” বলে বক্তব্য শুরু করে তারপর কসম খেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছি। সেখানে আমি বলেছি, এভাবে বক্তব্য শুরু করার মানে হয়, লোকেরা কোন ভুল কথা বলছিল, তার প্রতিবাদ করে বলা হয়েছে, আসল কথা তা নয় যা তোমরা মনে করছো বরং আমি অমুক অমুক কসম খেয়ে বলছি আসল ব্যাপার হচ্ছে এই। এখন প্রশ্ন দেখা দেয়, যে কথার প্রতিবাদে এই ভাষণটি নাযিল হয়েছে সেটি কি ছিল? এর জবাবে বলা যায়, পরবর্তী আলোচ্য বিষয়টি একথা প্রকাশ করছে। মক্কার কাফেররা বলছিল, আমরা যে ধরনের জীবনধারা অবলম্বন করেছি তাতে কোন দোষ নেই, কোন গলদ নেই। খাও-দাও ফূর্তি করো, তারপর একদিন সময় এলে টুপ করে মরে যাও, ব্যাস, এই তো দুনিয়ার জীবন! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খামখা আমাদের এই জীবনধারাকে ত্রুটিপূর্ণ গণ্য করছেন এবং আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন, এসব ব্যাপারে আবার নাকি আমাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে এবং নিজেদের কাজের জন্য আমাদের শাস্তি ও পুরস্কার লাভ করতে হবে।

টিকা:২) অর্থাৎ মক্কা নগরের। এখানে এই নগরের কসম কেন খাওয়া হচ্ছে সে কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না। মক্কাবাসীরা নিজেরাই তাদের নগরের পটভূমি জানতো। তারা জানতো, কিভাবে পানি ও বৃক্ষলতাহীন একটি ধূসব উপত্যকায় নির্জন পাহাড়ের মাঝখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজের এক স্ত্রী ও একটি দুধের বাচ্চাকে এখানে এনে নিঃসঙ্গভাবে ছেড়ে গিয়েছিলেন। কিভাবে এখানে একটি ঘর তৈরি করে হজ্জের ঘোষণা শুনিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ বহু দূর-দূরান্তে এই ঘোষণা শোনারও কেউ ছিল না। তারপর কিভাবে একদিন এই নগরটি সমগ্র আরবের কেন্দ্রে পরিণত হলো এবং এমন একটি ‘হারম’-সম্মানিত স্থানে হিসেবে গণ্য হলো, যা শত শত বছর পর্যন্ত আরবের সরজমিনে, যেখানে আইনশৃংখলার কোন অস্তিত্বই ছিল না সেখানে এই নগরটি ছাড়া আর কোথাও শান্তি ও নিরাপত্তার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেতো না।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-2
টিকা নং:3,

وَ اَنْتَ حِلٌّۢ بِهٰذَا الْبَلَدِۙ

আর অবস্থা হচ্ছে এই যে (হে নবী!) তোমাকে এই নগরে হালাল করে নেয়া হয়েছে।৩

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৩) মূলে বলা হয়েছে اَنْتَحِلُّ بِحآذَ الْبَلَدِ । মুফাসসিরগণ এর তিনটি অর্থ বর্ণনা করেছেন। এক, তুমি এই শহরে মুকীম অর্থাৎ মুসাফির নও। তোমার ‘মুকীম’ হবার কারণে এই শহরের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে বেড়ে গেছে। দুই, যদিও এই শহরটি ‘হারম’ তবুও এমন এক সময় আসবে যখন কিছুক্ষণের জন্য এখানে যুদ্ধ করা তোমার জন্য হালাল হয়ে যাবে। তিন, এই শহরের বনের পশুদের পর্যন্ত মেরে ফেলা এবং গাছপালা পর্যন্ত কেটে ফেলা আরববাসীদের নিকট হারাম এবং সবাই এখানে নিরাপত্তা লাভ করে। কিন্তু অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে হে নবী, তোমার জন্য এখানে কোন নিরাপত্তা নেই। তোমাকে কষ্ট ও যন্ত্রনা দেয়া এবং তোমাকে হত্যা করার উপায় উদ্ভাবন করা হালাল করে নেয়া হয়েছে। যদিও এখানে ব্যবহৃত শব্দের মধ্যে তিনটি অর্থেরই অবকাশ রয়েছে তবুও পরবর্তী বিষয়বস্তু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, প্রথম অর্থ দু’টি এর সাথে কোন সম্পর্কই রাখে না এবং তৃতীয় অর্থটির সাথে এর মিল দেখা যায়।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-3
টিকা নং:4,

وَ وَالِدٍ وَّ مَا وَلَدَۙ

কসম খাচ্ছি বাপের এবং তার ঔরসে যে সন্তান জন্ম নিয়েছে তার।৪

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৪) যেহেতু বাপ ও তার ঔরসে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানদের ব্যাপারে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সামনের দিকে মানুষের কথা বলা হয়েছে, তাই বাপ মানে আদম আলাইহিস সালামই হতে পারেন। আর তাঁর ঔরসে জন্ম গ্রহণকারী সন্তান বলতে দুনিয়ায় বর্তমানে যত মানুষ পাওয়া যায়, যত মানুষ অতীতে পাওয়া গেছে এবং ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে সবাইকে বুঝানো হয়েছে।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-4
টিকা নং:5,

لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِیْ كَبَدٍؕ

আসলে আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।৫

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৫) ওপরে যে কথাটির জন্য কসম খাওয়া হয়েছে এটিই সেই কথা। মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করার মানে হচ্ছে এই যে, এই দুনিয়ায় আনন্দ উপভোগ করার ও আরামের শুয়ে শুয়ে সুখের বাঁশী বাজাবার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তার জন্য এ দুনিয়া পরিশ্রম, মেহনত ও কষ্ট করার এবং কঠিন অবস্থার মোকাবেলা করার জায়গা। এই অবস্থা অতিক্রম না করে কোন মানুষ সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এই মক্কা শহর সাক্ষী, আল্লাহর কোন এক বান্দা এক সময় কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন বলেই আজ এই শহরটি আবাদ হয়েছে এবং আরবের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই শহরে মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা সাক্ষ্য দিচ্ছে, একটি আদর্শের খাতিরে তিনি নানা প্রকার বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন।

বন্য পশুদের পর্যন্ত এখানে নিরাপত্তা আছে কিন্তু তাঁর প্রাণের কোন নিরাপত্তা নেই। আর মায়ের গর্ভে এক বিন্দু শুক্র হিসেবে অবস্থান লাভের পর থেকে নিয়ে মৃত্যুকালে শেষ নিঃশ্বাসটি ত্যাগ করা পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষের জীবন এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, তাকে প্রতি পদে পদে কষ্ট, পরিশ্রম, মেহনত, বিপদ ও কঠিন অবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়। যাকে তোমরা দুনিয়ায় সবচেয়ে লোভনীয় অবস্থায় দেখছো সেও যখন মায়ের পেটে অবস্থান করছিল তখন সর্বক্ষণ তার মরে যাওযার ভয় ছিল। সে মায়ের পেটেই মরে যেতে পারতো। অথবা গর্ভপাত হয়ে তার দফারফা হয়ে যেতে পারতো। প্রসবকালে তার মৃত্যু ও জীবনের মধ্যে মাত্র এক চুলের বেশী দূরত্ব ছিল না। জন্মলাভ করার পর সে এত বেশী অসহায় ছিল যে, দেখাশুনা করার কেউ না থাকলে সে একাকী পড়ে মরে যেতো। একটু হাঁটা চলার ক্ষমতা লাভ করার পর প্রতি পদে পদে আছাড় খেয়ে পড়তো। শৈশব থেকে যৌবন এবং তারপর বার্ধক্য পর্যন্ত তাকে এমন সব শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে যে, এর মধ্য থেকে কোন একটি পরিবর্তনও যদি ভুল পথে হতো তাহলে তার জীবন বিপন্ন হতো। সে যদি বাদশাহ বা একনায়ক হয় তাহলে কোন সময় কোথাও তার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র না হয় এই ভয়ে সে এক মুহূর্ত নিশ্চিন্তে আরাম করতে পারে না। সে বিশ্ববিজয়ী হলেও তার সেনাপতিদের মধ্য থেকে কেউ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে বসে এই ভয়ে সে সর্বক্ষণ তটস্থ থাকে। সে নিজের যুগে কারুনের মতো ধনী হলেও কিভাবে নিজের ধন-সম্পদ আরো বাড়াবে এবং কিভাবে তা রক্ষা করবে, এই চিন্তায় সবসময় পেরেশান থাকে। মোটকথাকোন ব্যক্তিও নির্বিবাদে শান্তি, নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ততার নিয়ামত লাভ করেনি। কারণ মানুষের জন্মই হয়েছে কষ্ট, পরিশ্রম, মেহনত ও কঠিন অবস্থার মধ্যে।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-5
টিকা নং:6,

اَیَحْسَبُ اَنْ لَّنْ یَّقْدِرَ عَلَیْهِ اَحَدٌۘ

সে কি মনে করে রেখেছে, তার ওপর কেউ জোর খাটাতে পারবে না?৬

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৬) অর্থাৎ এসব অবস্থার মধ্যে যে মানুষ ঘেরাও হয়ে আছে সে কি এই অহংকারে মত্ত হয়েছে যে, দুনিয়ায় সে যা ইচ্ছা করে যাবে, তাকে পকড়াও করার ও তার মাথা নীচু করাবার মতো কোন উচ্চতর কর্তৃপক্ষ নেই? অথচ আখেরাত আসার আগে এই দুনিয়াতেই সে প্রতি মুহূর্তে দেখছে, তার তাকদীরের ওপর অন্য একজনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তাঁর সিদ্ধান্তের সামনে তার নিজের সমস্ত জারিজুরি, কলা-কৌশল পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের একটি ধাক্কা, ঘূর্ণিঝড়ের একটি আঘাত এবং নদী ও সাগরের একটি জলোচ্ছ্বাস তাকে একথা বলে দেবার জন্য যথেষ্ট যে, আল্লাহর শক্তির তুলনায় সে কতটুকু ক্ষমতা রাখে। একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা একজন সুস্থ সবল সক্ষম মানুষকে পঙ্গু করে দিয়ে যায়। ভাগ্যের একটি পরিবর্তন একটি প্রবল পরাক্রান্ত বিপুল ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তিকে আকাশ থেকে পাতালে নিক্ষেপ করে। উন্নতির উচ্চতম শিখরে অবস্থানকারী জাতিদের ভাগ্য যখন পরিবর্তিত হয় তখন এই দুনিয়ায় যেখানে তাদের চোখে চোখ মেলাবার হিম্মত কারোর ছিল না সেখানে তারা লাঞ্ছিত ও পদদলিত হয়। এহেন মানুষের মাথায় কেমন করে একথা স্থান পেলো যে, তার ওপর কারোর জোর খাটবে না?

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-6
টিকা নং:7,

یَقُوْلُ اَهْلَكْتُ مَالًا لُّبَدًاؕ

সে বলে, আমি প্রচুর ধন সম্পদ উড়িয়ে দিয়েছি।৭

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৭) اَنْفَقْتُ مَا لاًلٌّبَدًا “আমি প্রচুর ধন সম্পদ খরচ করেছি বলা হয়েনি। বরং বলা হয়েছে اَهْلَكَتُ مَالاًلٌّبَدًا “আমি প্রচুর ধন সম্পদ উড়িয়ে দিয়েছে। এই শব্দগুলোই প্রকাশ করে, বক্তা তার ধন সম্পদের প্রাচুর্যে কী পরিমাণ গর্বিত। যে বিপুল পরিমাণ ধন সে খরচ করেছে নিজের সামগ্রিক সম্পদের তুলনায় তার কাছে তার পরিমাণ এত সামান্য ছিল যে, তা উড়িয়ে বা ফুঁকিয়ে দেবার কোন পরোয়াই সে করেনি। আর এই সম্পদ সে কোনো কাজে উড়িয়েছে? কোন প্রকৃত নেকীর কাজে নয়, যেমন সামনের আয়াতগুলো থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। বরং এই সম্পদ সে উড়িয়েছে নিজের ধনাঢ্যতার প্রদর্শনী এবং নিজের অহংকারও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করার জন্য। তোশামোদকারী কবিদেরকে সে বিপুলভাবে পুরস্কৃত করেছে। বিবাহ ও শোকের মজলিসে হাজার হাজার লোককে দাওয়াত দিয়ে আহার করিয়েছে। জুয়া খেলায় গো-হারা হেরে বিপুল পরিমাণ অর্থ খুইয়েছে। জুয়ায় জিতে শত শত উট জবাই করে ইয়ার বন্ধুদের ভুরি ভোজন করিয়াছে। মেলায় ধূমধাম করে গিয়েছে এবং অন্যান্য সরদারদের চাইতে অনেক বেশী জাঁকজমক ও আড়ম্বর দেখিয়েছে। উৎসব অঢেল খাবার তৈরি করেছে এবং যে চায় সে এসে খেয়ে যেতে পারে বলে সব মানুষকে খাবার জন্য সাধারণ আহবান জানিয়েছে অথবা নিজের বাড়িতে প্রকাশ্য লঙ্গরখানা খুলে দিয়েছে, যাতে দূর-দূরান্তে একথা ছড়িয়ে পড়ে যে, অমুক ধনীর দানশীলতার তুলনা নেই। এসব এবং এই ধরনের আরো অনেক প্রদর্শনীমূলক ব্যয় বহর ছিল যেগুলোকে জাহেলীযুগে মানুষের দানশীলতাও ঔদার্যের নিদর্শন এবং তার শ্রেষ্ঠত্বের নিশানী মনেকরা হতো। এসবের জন্য তাদের প্রশংসার ডঙ্কা বাজতো, তাদের প্রশংসার কবিতা রচিত ও পঠিত হতো এবং তারা নিজেরাও এজন্য অন্যের মোকাবেলায় নিজেদের গৌরব করে বেড়াতো।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-7
টিকা নং:8,

اَیَحْسَبُ اَنْ لَّمْ یَرَهٗۤ اَحَدٌؕ

সে কি মনে করে কেউ তাকে দেখেনি?৮

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৮) অর্থাৎ এই গৌরবকারী কি দেখে না ওপরে আল্লাহও একজন আছেন? তিনি দেখেছেন সবকিছু। কোন পথে সে এ ধন সম্পদ উপার্জন করেছে, কোনো কাজে ব্যয় করেছে এবং কি উদ্দেশ্যে, কোন নিয়তে ও স্বার্থে সে এসব কাজ করেছে তা তিনি দেখছেন। সে কি মনে করে, আল্লাহর ওখানে এই অমিতব্যয়িতা, খ্যাতি লাভের আকাঙ্ক্ষা ও অহংকারের কোন দাম হবে? সে কি মনে করে, দুনিয়ায় মানুষ যেমন তার কাজেকর্মে প্রতারিত হয়েছে তেমনি আল্লাহও প্রতারিত হবেন?

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-9
টিকা নং:9,

وَ لِسَانًا وَّ شَفَتَیْنِۙ

একটি জিহ্বা ও দু’টি ঠোঁট দেইনি?৯

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৯) এর অর্থ হচ্ছে, আমি কি তাকে জ্ঞান ও বুদ্ধির উপকরণগুলো দেইনি? দু’টি চোখ মানে গরু ছাগলের চোখ নয়, মানুষের চোখ। যে চোখ মেলে তাকালে চারদিকে এমন সব নিশানী নজরে পড়বে, যা মানুষকে প্রকৃত সত্যের সন্ধান দেবে এবং তাকে ভুল ও নির্ভুল এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝিয়ে দেবে। জিহবা ও ঠোঁট মানে নিছক কথা বলার যন্ত্র নয় বরং যে ব্যক্তি কথা বলে এবং ঐ যন্ত্রগুলোর পেছনে বসে যে ব্যক্তি চিন্তা যোগায় তারপর মনের কথা প্রকাশ করার জন্য তার সাহায্য গ্রহণ করে।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-10
টিকা নং:10,

وَ هَدَیْنٰهُ النَّجْدَیْنِۚ

আমি কি তাকে দু’টি সুস্পষ্ট পথ দেখাইনি?১০

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১০) অর্থাৎ শুধুমাত্র বুদ্ধি ও চিন্তার শক্তিদান করে তাকে নিজের পথ নিজে পথ নিজে খুঁজে নেবার জন্য ছেড়ে দেইনি। বরং তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। তার সামনে ভালো ও মন্দ করে তার মধ্য থেকে নিজ দায়িত্বে যে পথটি ইচ্ছা সে গ্রহণ করতে পারে। সূরা দাহরেও এই একই কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ “আমি মানুষকে একটি মিশ্রিত বীর্য থেকে পয়দা করেছি, যাতে তার পরীক্ষা নেয়া যায় এবং এ উদ্দেশ্যে আমি তাকে শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তির অধিকারী করেছি। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে সে শোকরকারী হতে পারে বা কুফরকারী।” (২-৩ আয়াত) আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আদ দাহর ৩–৫ টীকা।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-11
টিকা নং:11,

فَلَا اقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ٘ۖ

কিন্তু সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করার সহস করেনি।১১

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১১) মূল বাক্যটি হচ্ছে, لاَ اقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ ‏ এখানে ইকতিহাম (اِقنحا م ) মানে হচ্ছে, নিজেকে কোন কঠিন ও পরিশ্রম সাধ্য কাজে নিযুক্ত করা। আর পর্বতশৃঙ্গে যাবার জন্য পাহাড়ের মধ্যদিয়ে যে দুর্গম পথ অতিক্রম করতে হয় তাকে বলা হয় আকাবাহ (عقبه )। অর্থাৎ এখানে বলা হচ্ছে, দু’টি পথ আমি তাকে দেখিয়েছি। একটি গেছে ওপরের দিকে। কিন্তু সেখানে যেতে হলে খুব কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। সে পথটি বড়ই দুর্গম। সে পথে যেতে হলে মানুষকে নিজের প্রবৃত্তি ও তার আখাংকা এবং শয়তানের প্ররোচনার সাথে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়। আর দ্বিতীয় পথটি বড়ই সহজ। এটি খাদ্যের মধ্যে নেমে গেছে। এই পথ দিয়ে নেমে যাবার জন্য কোন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়না। বরং এ জন্য শুধুমাত্র নিজের প্রবৃত্তির বাঁধনটা একটু আলগা করে দেয়াই যথেষ্ট। তারপর মানুষ আপনা আপনি গড়িয়ে যেতে থাকেব। এখন এই যে ব্যক্তিকে আমি দু’টি পথই দেখিয়ে দিয়েছিলাম সে ঐ দু’টি পথের মধ্য থেকে নীচের দিকে নেমে যাবার পথটি গ্রহণ করে নিয়েছে এবং ওপরের দিকে যে পথটি গিয়েছে সেটি পরিত্যাগ করেছে।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-16
টিকা নং:12,

اَوْ مِسْكِیْنًا ذَا مَتْرَبَةٍؕ

বা ধূলি মলিন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো।১২

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১২) ওপরে তার অমিতব্যয়িতার কথা বলা হয়েছে। নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রদর্শনী ও অহংকার প্রকাশ করার জন্য সে অর্থের অপচয় করতো। তাই এখানে তার মোকাবেলায় এমন ব্যয় ও ব্যয়ক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে যা মানুষের নৈতিক অধঃপতন রোধ করে তাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু এতে প্রবৃত্তির কোন সুখানুভব নেই। বরং এ জন্য মানুষকে প্রবৃত্তির ওপর জোর খাটিয়ে ত্যাগের মহড়া দিতে হয়। নিজেই কোন দাসকে দাসত্বমুক্ত করে সেই ব্যয়ের দৃষ্টান্ত পেশ করা যায়। অথবা তাকে আর্থিক সাহায্য করা যেতে পারে। তার ফলে সে নিজের মুক্তিপণ আদায় করে মুক্ত হতে পারে। অথবা অর্থ সাহায্য করে কোন গরীবের গলাকে ঋণমুক্ত করা যেতে পারে। অথবা কোন অসচ্ছল ব্যক্তি যদি কোন অর্থদণ্ডের বোঝার তলায় চাপা পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাকে তা থেকে উদ্ধার করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে কোন নিকটবর্তী (অর্থাৎ আত্মীয় বা প্রতিবেশী) এতিম এবং এমন কোন ধরনের অসহায় অভাবীকে আহার করিয়ে এই অর্থ ব্যয় করা যায় যাকে দারিদ্র ও উৎকট অর্থহীনতা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে এবং যাকে হাত ধরে তোলার কেউ নেই। এই ধরনের লোকদের সাহায্য করলে মানুষের খ্যাতির ডঙ্কা বাজে না। এদেরকে খাওয়ালে কারো ধনাঢ্যতাও বদান্যতার তেমন কোন চর্চা হয়না। বরং হাজার হাজার সচ্ছল ব্যক্তি ও ধনীদের জন্য শানদার জিয়াফতের ব্যবস্থা করে তার তুলনায় অনেক বেশী শোহরতের অধিকারী হওয়া যায়। কিন্তু নৈতিক উন্নতির পথটি এই দুর্গম গিরিপথটি অতিক্রম করেই এগিয়ে গেছে।

এই আয়াতগুলোতে যেসব সৎকাজের উল্লেখ করা হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিভিন্ন বাণীর মাধ্যমে সেগুলোর বিপুল মর্যাদাও সওয়াবের কথা ঘোষণা করেছেন। فَكُّ رَقَبَةٍ (গলাকে দাসত্বমুক্ত করা) সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আবু হুরাইরা (রা.)। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি একজন মু’মিন গোলামকে আযাদ করে আল্লাহ‌ ঐ গোলামের প্রতিটি অঙ্গের বদলে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবেন। হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা এবং লজ্জাস্থানের বদলে লজ্জাস্থান। (মুসনাদে আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ।) হযরত আলী ইবনে হুসাইন (ইমাম যইনুল আবেদীন) এই হাদীসের বর্ণনাকারী সা’দ ইবনে মারজানাহকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি নিজে আবু হুরাইরার (রা.) কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনেছো? তিনি জবাব দেন, হাঁ। কথা শুনে ইমাম যুইনল আবেদ্বীন নিজের সবচেয়ে মূল্যবান গোলামটিকে ডাকেন এবং সেই মুহূর্তেই তাকে আযাদ করে দেন। মুসলিম শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে, এই গোলামটির জন্য লোকেরা তাঁকে দশ হাজার দিরহাম দিতে চেয়েছিল। ইমাম আবু হানীফা(র) ও ইমাম শা’বী (র) এই আয়াতের ভিত্তিতে বলেন, গোলাম আযাদ করা সাদকার চাইতে ভালো। কারণ আল্লাহ‌ সাদকার কথা বলার আগে তার কথা বলেছেন। মিসকিনদের সাহায্য করার ফজিলত সম্পর্কে ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী ও অসংখ্য হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে এর মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ

السَّاعِى عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالْساعى فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَأَحْسِبُهُ قَالَ وَكَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُوكا لصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ-

“বিধবা ও মিসকিনদের সাহায্যার্থে যে ব্যক্তি প্রচেষ্টা চালায় সে আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তির সমতুল্য। (আর হযরত আবু হুরাইরা বলেনঃ) আমার মনে হচ্ছে, রসূলুল্লাহ ﷺ একথাও বলেন যে, সে ঠিক সেই ব্যক্তির মতো যে নামাযে রত আছে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে নামায পড়ে যাচ্ছে, আরাম করছে না এবং সেই রোযাদারের মতো যে অনবরত রোযা রেখে যাচ্ছে, কখনো রোযা ভাঙে না।” (বুখারী ও মুসলিম)

এতিমদের সম্পর্কেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য বাণী রয়েছে। হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন আত্মীয় বা অনাত্মীয় এতিমের ভরণ পোষণ করে সে ও আমি জান্নাতে ঠিক এভাবে থাকবো। একথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলী দু’টি পাশাপাশি রেখে দেখান এবং দু’টি আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রাখেন।” (বুখারী)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীটি উদ্ধৃত করেছেন, “মুসলমানদের বাড়িগুলোর মধ্যে যে বাড়িতে কোন এতিমের সাথে সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিই সর্বোত্তম বাড়ি এবং যে বাড়িতে কোন এতিমের সাথে অসদ্ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি সবচেয়ে খারাপ বাড়ি।” (ইবনে মাজাহ, বুখারী ফিল আদাবিল মুফরাদ)।

হযরত আবু উমামাহ বলেছেন, রসূলূল্লাহ ﷺ বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন এতিমের মাথার হাত বুলায় এবং নিছক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে হাত বুলায়, সে ঐ এতিমের মাথায় যতগুলো চুলের উপর হাত বুলিয়েছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য নেকী লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি কোন এতিম ছেলে বা মেয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করে সে ও আমি জান্নাতে এভাবে থাকবো। একথা বলে তিনি নিজের দু’টি আঙ্গুল মিলিয়ে দেখান। (মুসনাদে আহমাদ ও তিরমিযী)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজের পানাহারে কোন এতিমকে শামিল করে আল্লাহ‌ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তবে সে ব্যক্তি যদি ক্ষমার অযোগ্য কোন গোনাহ করে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। (শারহুস সুন্নাহ)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করেন, “আমার মন বড় কঠিন।” রসূলুল্লাহ ﷺ জবাবে বলেন, “এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকিনকে আহার করাও।” (মুসনাদে আহমাদ)।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-17
টিকা নং:13, 14,

ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ تَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَ تَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِؕ

তারপর (এই সঙ্গে) তাদের মধ্যে শামিল হওয়া যারা ঈমান এনেছে১৩ এবং যারা পরস্পরকে সবর ও (আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি) রহম করার উপদেশ দেয়।১৪

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১৩) অর্থাৎ ওপরে উল্লেখিত গুণাবলী অর্জনের সাথে সাথে তার জন্য মু’মিন হওয়াও জরুরী। কারণ ঈমান ছাড়া কোনো কাজ সৎকাজ হিসেবে চিহ্নিত হতে এবং আল্লাহর কাছে ও গৃহীত হতে পারে না। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ঈমান সহকারে যে সৎকাজ করা হয় একমাত্র সেটিই নেকী ও মুক্তির উপায় হিসেবে গৃহীত হয়। যেমন সূরা নিসায় বলা হয়েছেঃ “পুরুষ বা নারী যে ব্যক্তিই সৎকাজ করে সে যদি মু’মিন হয়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” ( ১২৪ আয়াত ) সূরা নাহলে বলা হয়েছেঃ “পুরুষ বা নারী যে ব্যক্তিই সৎকাজ করবে সে যদি মু’মিন হয় তাহলে আমি তাকে পবিত্র জীবন যাপন করাবো এবং এই ধরনের লোকদেরকে তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুযায়ী প্রতিদান দেবো।”( ৯৭ আয়াত ) সুরা মু’মিনে বলা হয়েছেঃ “পুরুষ বা নারী যেই সৎকাজ করবে সে যদি মু’মিন হয় তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাকে দেয়া হবে বেহিসেব রিযিক।” ( ৪০ আয়াত ) যেকোন ব্যক্তিই কুরআন মজীদ অধ্যয়ন করলে দেখতে পাবেন এ কিতাবের যেখানেই সৎকাজ ও তার উত্তম প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেই অবশ্যই তার সাথে ঈমানের শর্ত লাগানো হয়েছে। ঈমান বিহীন আমল আল্লাহর কাছে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। কোথাও এ ধরনের কাজের বিনিময়ে কোন প্রতিদানের আশ্বাস দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, আয়াতে একথা বলা হয়নি, “তারপর সে ঈমান এনেছে।” বরং বলা হয়েছে “তারপর সে তাদের মধ্যে শামিল হয়েছে যারা ঈমান এনেছে।” এর অর্থ হয়, নিছক এক ব্যক্তি হিসেবে তার নিজের ঈমান আনাই কেবলমাত্র এখানে উদ্দেশ্য নয় বরং এখানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি ঈমান এনেছে সে দ্বিতীয় ব্যক্তি যে ঈমান এনেছে তার সাথে শামিল হয়ে যাবে। এর ফলে ঈমানদারদের একটি জামায়াত তৈরি হয়ে যাবে। মু’মিনদের একটি সমাজ গড়ে উঠবে। সামগ্রিক ও সমাজবদ্ধভাবে নেকী, সততা ও সৎবৃত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, যেগুলো প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল ঈমানের দাবী। অন্যদিকে অসৎবৃত্তি ও পাপ নির্মূল হয়ে যাবে, যেগুলো খতম করাই ছিল ঈমানের মৌলিক চাহিদার অন্তর্ভুক্ত।

টিকা:১৪) এখানে মুসলিম সমাজের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টকে দু’টি ছোট ছোট বাক্যে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই সমাজের সদস্যরা পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দেবে এবং দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা পরস্পরকে রহম ও পরস্পরের প্রতি স্নেহার্দ্র ব্যবহারের উপদেশ দান করবে।

সবরের ব্যাপারে ইতিপূর্বে আমি বারবার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি, কুরআন মজীদ যে ব্যাপক অর্থে এই শব্দটির ব্যবহার করেছে সে দৃষ্টিতে বিচার করলে মু’মিনের সমগ্র জীবনকেই সবরের জীবন বলা যায়। ঈমানের পথে পা রাখার সাথে সাথেই মানুষের সবরের পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ‌ যেসব ইবাদাত ফরয করেছেন, সেগুলো সম্পাদন করতে গেলে সবরের প্রয়োজন। আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ও সঠিকভাবে মেনে চলার জন্যও সবরের দরকার। আল্লাহ‌ যেসব জিনিস হারাম করেছেন সবরের সাহায্য ছাড়া সেগুলোর হাত থেকে রেহাই পাওয়াও কঠিন। নৈতিক অসৎবৃত্তি পরিহার করা ও সৎবৃত্তি অবলম্বন করার জন্য সবরের প্রয়োজন। প্রতি পদে পদে গোনাহ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। তার মোকাবেলা করা সবর ছাড়া সম্ভব নয়। জীবনের এমন বহু সময় আসে যখন আল্লাহর আইনের আনুগত্য করলে বিপদ-আপদ, কষ্ট, ক্ষতি ও বঞ্চণার সম্মুখীন হতে হয়। আবার এর বিপরীত পক্ষে নাফরমানির পথ অবলম্বন করলে লাভ, ফায়দা, আনন্দও ভোগের পেয়ালা উপচে পড়তে দেখা যায়। সবর ছাড়া কোন মু’মিন এ পর্যায়গুলো নির্বিঘ্নে অতিক্রম করতে পারে না। তারপর ঈমানের পথ অবলম্বন করতেই মানুষ বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। নিজের সন্তান-সন্তুতির, পরিবারের, সমাজের, দেশের, জাতিরও সারা দুনিয়ায় মানুষ ও জ্বিন শয়তানদের। এমনকি তাকে আল্লাহর পথে হিজরত এবং জিহাদও করতে হয়। এসব অবস্থায় একমাত্র সবরের গুণই মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল রাখতে পারে। একথা সুস্পষ্ট যে, এক একজন মু’মিন একা একা যদি এই ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে, তাহলে তার সবসময় পরাজিত হবার ভয় থাকে। অতি কষ্টে হয়তো সে কখনো সাফল্য লাভ করতে পারে। বিপরীত পক্ষে যদি মু’মিনদের এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত থাকে, যার প্রত্যেকটি সদস্য সবরকারী হয় এবং এই সমাজের সদস্যরা সবরের এই ব্যাপকতর পরীক্ষায় পরস্পরকে সাহায্য সহায়তা দান করতে থাকে তাহলে সাফল্যের ডালি এই সমাজের পদতলে লুটিয়ে পড়বে। সেখানে পাপও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সীমাহীন শক্তির প্রবাহ সৃষ্টি হবে। এভাবে মানুষের সমাজকে ন্যায়, সততা ও নেকীর পথে আনার জন্য একটি জবরদস্ত শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি হয়ে যাবে।

আর রহমের ব্যাপারে বলা যায়, ঈমানদারদের সমাজের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এই যে, এটা কোন জালেম, নির্দয়, বেরহম, পাষাণ হৃদয় ও হৃদয়হীনদের সমাজ হয় না। বরং সমগ্র মানবতার জন্য এটি হয় একটি স্নেহশীল, কারুণা প্রবণ এবং নিজেদের পরস্পরের জন্য সহানুভূতিশীল ও পরস্পরের দুঃখে-শোকে-বেদনা অনুভবকারী একটি সংবেদনশীল সমাজ। ব্যক্তি হিসেবেও একজন মু’মিন হয় আল্লাহর করুণার মূর্ত প্রকাশ এবং দলগতভাবে ও মু’মিনদের দল আল্লাহর এমন এক নবীর প্রতিনিধি যার প্রশংসায় বলা হয়েছেঃ

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ

(বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও করুণা হিসেবেই তোমাকে পাঠিয়েছি। আম্বিয়াঃ ১০৭ )

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের উম্মাতের মধ্যে এই রহম ও করুণাবৃত্তিটির মতো উন্নত নৈতিক বৃত্তিটিকেই সবচেয়ে বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করতে চেয়েছেন। দৃষ্টান্ত স্বরূপ তাঁর নিম্নোক্ত বাণী গুলো দেখুন। এগুলো থেকে তাঁর দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব কি ছিল তা জানা যাবে। হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রেওয়ায়াত করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

لاَ يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ

“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি রহম করে না, আল্লাহ‌ তার প্রতি রহম করেন না।” (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَانُ – ارْحَمُوا مَنْ فِى الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ-

“রহমকারীদের প্রতি আল্লাহ‌ রহম করেন। পৃথিবীবাসীদের প্রতি রহম করো। আকাশবাসী তোমার প্রতি রহম করবেন।”(আবু দাউদ ও তিরমিযী)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেনঃ مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يَرْحَمُ

“যে ব্যক্তি রহম করে না তার প্রতি রহম করা হয় না।” (বুখারী ফিল আদাবিল মুফরাদ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيُوَقِّرْ كَبِيرَنَا

“যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি রহম করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (তিরমিযী) ইমাম আবু দাউদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমরের বরাত দিয়ে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছেনঃ

مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا ويعرف حق كَبِيرَنَا فلَيْسَ مِنَّا

“যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি রহম করে না এবং আমাদের বড়দের হক চেনে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমি আবুল কাসেম (নবী করীম) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ

لاَ تُنْزَعُ الرَّحْمَةُ إِلاَّ مِنْ شَقِىٍّ

“হতভাগ্য ব্যক্তির হৃদয় থেকেই রহম তুলে নেয়া হয়।” মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী)

হযরত ঈয়ায ইবনে হিমার (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ধরনের লোক জান্নাতী। তার মধ্যে একজন হচ্ছেঃ

رَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِى قُرْبَى وَمُسْلِمٍ

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক আত্মীয় ও প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দয়ার্দ্র হৃদয় ও কোমল প্রাণ” (মুসলিম)

হযরত নু’মান ইবনে বশীর বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِى تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى

“তোমরা মু’মিনদেরকে পরস্পরের মধ্যে রহম, ভালোবাসা ও সহানুভূতির ব্যাপারে একটি দেহের মতো পাবে। যদি একটি অঙ্গে কোন কষ্ট অনুভূত হয় তাহলে সারা দেহ তাতে নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রা.) বর্ণনা করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ ، يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا

“মু’মিন অন্য মু’মিনের জন্য এমন দেয়ালের মতো যার প্রতিটি অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে।” (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীটি উদ্ধৃত করেছেনঃ

الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ ، وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِى حَاجَتِهِ ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

“মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না বরং তাকে সাহায্য করতেও বিরত হয় না। যে ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের কোন প্রয়োজন পূরণ করার কাজে লেগে থাকবে আল্লাহ‌ তার প্রয়োজন পূরণ করার কাজে লেগে থাকবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করবে মহান আল্লাহ‌ কিয়ামতের দিনের বিপদগুলোর মধ্যে থেকে একটি বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করবে আল্লাহও কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন।” (বুখারী ও মুসলিম) সৎকর্মকারীদেরকে ঈমান আনার পর ঈমানদারদের দলে শামিল হবার যে নির্দেশ কুরআন মজীদে এই আয়াতে দেয়া হয়েছে তার ফলে কোন্ ধরনের সমাজ গঠন করতে চাওয়া হয়েছে, তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উক্তিগুলো থেকে জানা যায়।

সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-19
টিকা নং:15,

وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِاٰیٰتِنَا هُمْ اَصْحٰبُ الْمَشْئَمَةِؕ

আর যারা আমার আয়াত মানতে অস্বীকার করেছে তারা বামপন্থী।১৫

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১৫) ডানপন্থী ও বামপন্থীর ব্যাখ্যা আমি ইতিপূর্বে সূরা ওয়াকি’আর তাফসীরে করে এসেছি। দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল ওয়াকি’আ ৫ – ৬ টীকা।
সুরা: আল-বালাদ
আয়াত নং :-20
টিকা নং:16,

عَلَیْهِمْ نَارٌ مُّؤْصَدَةٌ۠

এদের ওপর আগুন ছেয়ে থাকবে। ১৬

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১৬) অর্থাৎ আগুন তাদেরকে চারদিক থেকে এমনভাবে ঘিরে থাকবে যে তা থেকে বের হবার কোন পথ থাকবে না।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ:

الْبَلَدِ শব্দের অর্থ শহর, নগর ইত্যাদি। তবে এখানে শহর বলতে মক্কা নগরীকে বুঝানো হয়েছে। প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الْبَلَدِ শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরাতে কয়েকটি বিষয়ে শপথ করার পর মানুষকে প্রদত্ত অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে কয়েকটি নেয়ামতের কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং ফলাফলের ভিত্তিতে তাদেরকে সৌভাগ্যবান ও হতভাগা দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১-১০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা মক্কা নগরীর শপথ করে বলছেন : হে নাবী (সাঃ)! তুমি এ নগরীর জন্য বৈধ। অর্থাৎ তোমার জন্য এ নগরীতে যুদ্ধ করা বৈধ। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা রাসূলের জন্য কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ করা বৈধ করে দিয়েছিলেন। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : যেদিন আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই আল্লাহ তা‘আলা এ শহরকে (যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে) হারাম করেছেন। এ হারাম কিয়ামত অবধি বিদ্যমান থাকবে। এখানের কোন গাছ কাটা যাবে না এবং কোন কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না। আমার জন্য শুধুমাত্র দিনের কিছু সময় বৈধ করে দেয়া হয়েছে, প্রাক্কালের হারামের মত আজও তা হারাম হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী হা. ১০৪, সহীহ মুসলিম হা; ১৩৫৪) এ ঘটনা ছিল মক্কা বিজয়ের সময়।

(وَوَالِدٍ وَّمَا وَلَدَ)

এখানে পিতা ও সন্তান বলতে আদম (আঃ) ও তাঁর সন্তানাদি উদ্দেশ্য। আবার কেউ বলেছেন: শব্দটা ব্যাপক, তাই সকল পিতা ও সন্তান উদ্দেশ্য।

(لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْ كَبَدٍ)

এটা হলো পূর্বের আয়াতসমূহের শপথের জবাব। অর্থাৎ মানুষের জীবন পরিশ্রম ও দুঃখ-কষ্টে পরিপূর্ণ। ইমাম তাহাবী (রহঃ) এ অর্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

(أَيَحْسَبُ الْإِنْسَانَ)

অর্থাৎ মানুষ কি ধারণা করে, সে যে সম্পদ একত্রিত করেছে আল্লাহ তা‘আলা তা পাকড়াও করে নিতে পারবেন না। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: বানী আদম কি ধারণা করে যে, তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না, সে কোথা থেকে উপার্জন করেছে আর কোথায় ব্যয় করেছে? অর্থাৎ আদম সন্তান যা কিছু করুক তাকে সবকিছুর হিসাব দিতে হবে।

(مَالًا لُّبَدًا) শব্দের অর্থ: প্রচুর, রাশি রাশি। অর্থাৎ দুনিয়াতে অন্যায় ও অশ্লীল কাজে অনেক সম্পদ ব্যয় করে অতঃপর গর্বের সাথে সে কথা মানুষের সামনে বলে বেড়ায়। অন্যায় ও খারাপ কাজে সম্পদ ব্যয় করাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ ধ্বংস করা বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা এসব কাজে ব্যয় করলে কোন উপকার তো দূরের কথা আফসোস ও ধ্বংস ছাড়া কিছুই নিয়ে আসবে না। যারা অন্যায় কাজে সম্পদ ব্যয় করে গর্ব করে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: মানুষ কি মনে করে তাকে কেউ দেখছে না? না, বরং আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু দেখছেন, শুনছেন এবং প্রত্যেকের কর্মানুয়াযী প্রতিদান দেবেন। এবার আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত মানুষের শরীরে কয়েকটি নেয়ামতের কথা জিজ্ঞাসা করছেন: আমি কি তার দুটি চোখ দেইনি? যার দ্বারা সে দেখে, আমি কি তার জিহ্বা দেইনি? যার দ্বারা কথা বলে, এবং তাকে কি দুটি ঠোট দেইনি? যার দ্বারা কথা বলা ও খাওয়ার সহযোগিতা নেয়। এছাড়া তা চেহারা ও মুখমন্ডলের সৌন্দর্যের কারণও বটে।

(وَهَدَيْنٰهُ النَّجْدَيْنِ)

ইবনু মাসউদ (রাঃ)-সহ প্রমুখ সাহাবী বলেন: ভাল-মন্দের উভয় পথ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّا هَدَيْنٰهُ السَّبِيْلَ إِمَّا شَاكِرًا وَّإِمَّا كَفُوْرًا)‏

“আমি তাকে পথ দেখিয়েছি এরপর হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, নয়তো হবে অকৃতজ্ঞ।” (সূরা দাহার ৭৬: ৩)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَمَنْ شَا۬ءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَا۬ءَ فَلْيَكْفُرْ)

“সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক ও যার ইচ্ছা কুফরী করুক।’ (সূরা কাহ্ফ ১৮ : ২৯)
সুতরাং যে আল্লাহ এতসব নেয়ামত দান করেছেন শুকরিয়াস্বরূপ সর্বদা তাঁকে মেনে চলা উচিত।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মক্কা নগরীর মর্যাদা জানলাম।
২. মক্কায় পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই যুদ্ধবিগ্রহ হারাম এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে।
৩. অন্যায় কাজে সম্পদ ব্যয় করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ।
৪. আল্লাহ প্রদত্ত সকল নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
৫. মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা ভাল-মন্দের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর কেউ জেনে শুনে ঈমান ও সত্য বর্জন করলে তা নিজের ওপরই বর্তাবে।
১১-২০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:

الْعَقَبَةَ বলা হয় পাহাড়ের মাঝে মাঝে রাস্তা বা গিরিপথকে। সাধারণত এ ধরনের পথ বন্ধুর। এটা মানুষের সেই শ্রম ও কষ্টকে স্পষ্ট করে বুঝানোর জন্য একটি উদাহরণ যা নেক কাজ করার পথে শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং মনের কামনা বাসনার বিরুদ্ধে করতে হয়। যেমন পাহাড়ের ঐ পথের চূড়া অত্যন্ত কঠিন, তেমনি নেক কাজ করাও বড় কঠিন। (ফাতহুল কাদীর)। তবে আয়াতের অর্থ হলো: সম্পদ ব্যয় করে তারা কেন আখিরাতের দুঃখ-কষ্ট পার হওয়ার চেষ্টা করে না? ফলে সে নিরাপদে থাকবে।

(وَمَآ أَدْرَاكَ مَا الْعَقَبَةُ)

অর্থাৎ তুমি কি জান, আখিরাতের দুঃখ-কষ্ট কী এবং কিসে তা অতিক্রমে সহযোগিতা করবে? তাহলো : মু’মিন দাস আযাদ করা অথবা ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো। দাস আযাদ করার ফযীলত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো : আবূ নাজীহ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে মুসলিম কোন মুসলিম দাসকে আযাদ করল আল্লাহ তা‘আলা তার এক একটি হাড়ের বিনিময়ে ঐ মুক্তকারীর এক একটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন। আর যে মুসলিম নারী কোন মুসলিম দাসীকে আযাদ করল আল্লাহ তা‘আলা তার এক একটি হাড়কে ঐ মুক্তিপ্রাপ্ত দাসীর এক একটি হাড়ের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। (ইবনু জারীর ৩০/১২৯, হাদীসটি মুরসাল।) তাই ইসলাম দাস প্রথার প্রতি উৎসাহ দেয় না বরং বিলুপ্তির জন্য উৎসাহ দেয়।

(يَوْمٍ ذِيْ مَسْغَبَةٍ)

অর্থাৎ ক্ষুধার দিন। ذَا مَقْرَبَةٍ অর্থাৎ এমন ইয়াতীম যে সম্পর্কের দিক হতে আত্মীয় হয়। এমনিতেই তো ইয়াতীমদের প্রতিপালন করা ও তাদের সহযোগিতা করা নেকীর কাজ কিন্তু এখানে বিশেষভাবে বলা হয়েছে সে ইয়াতীম যদি নিকটাত্মীয় ও বিপদগ্রস্থ হয় তাহলে তাকে সহযোগিতা করা আরো নেকীর কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : মিসকীনকে দান করায় সাদকাহর নেকী রয়েছে। আর নিকটাত্মীয় হলে দ্বিগুণ নেকীÑ একটি দান করার জন্য অপরটি আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য। (তিরমিযী হা. ৬৫৮, ইবনু মাযাহ হা. ১৮৪৪, সনদ সহীহ) অন্যত্র তিনি বলেন: হে মানুষ! সালাম প্রসার কর, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখ, তোমরা খাদ্য খাওয়াও, মানুষ ঘুমিয়ে গেলে সালাত আদায় কর তাহলে শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযী হা. ২৪৮৫, সহীহ)

ذَا مَتْرَبَةٍ অর্থ : মাটি মাখা বা ধূলোয় ধূসরিত। অর্থাৎ এমন দরিদ্র যে নিঃস^ হওয়ার কারণে মাটি বা ধূলোর ওপর পড়ে থাকে। তার নিজ ঘর বাড়ি বলেও কিছু নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাস্তায় পতিত ব্যক্তি, যার নিজস্ব কোন ঘর-বাড়ি নেই, ইকরিমা (রহঃ) বলেন : সে হল ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : সবগুলোই কাছাকাছি অর্থ দিয়ে থাকে।

(ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا)

অর্থাৎ উপরোল্লিখিত সৎ আমলগুলো যখন ঈমানের সাথে করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে নেকীর আশা রাখবে।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(وَمَنْ اَرَادَ الْاٰخِرَةَ وَسَعٰی لَھَا سَعْیَھَا وَھُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰ۬ئِکَ کَانَ سَعْیُھُمْ مَّشْکُوْرًا)

“আর যারা মু’মিন অবস্থায় আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।” (সূরা ইসরা ১৭: ১৯)

আর যারা পরস্পর ধৈর্য ধারণের ও সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়ার উপদেশ দেয় তারাই কিয়ামত দিবসে ডান হাতে আমলনামা পাবে। ধৈর্য ধারণ তিন প্রকার : বিপদে ধৈর্য ধারণ করা, পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করা। এরূপ ধৈর্যশীলদের পুরস্কারের শেষ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(أُولٰ۬ئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلٰمًا خٰلِدِيْنَ فِيْهَا ط حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا)

“তাদেরকে প্রতিদানস্বরূপ দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ বালাখানা যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেথায় অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। সেথায় তারা চিরস্থায়ী থাকবে। আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে তা কতই না উৎকৃষ্ট!” (সূরা ফুরকান ২৫: ৭৫)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : মুসলিম দুনিয়াতে যেসব বিপদ, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট বা মনোবেদনা ভোগ করে এমনকি যদি তার শরীরে কোন কাঁটাও ফুটে (আর সে যদি তাতে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির ওপর থাকে) তাহলে এর দ্বারা তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম হা. ২৫৭২)

সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ، ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ

দয়াশীলদেরকে দয়াময় আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর, আকাশের ওপর যিনি আছেন তিনি তোমাদের ওপর দয়া করবেন। (আবূ দাঊদ হা. ৪৯৪১, সহীহ) মূলত পরস্পরকে দয়া করা এবং ধৈর্য ধারণ করা ও সৎকাজের উপদেশ দেয়া ঈমানের অন্যতম একটি প্রধান দাবী।

(أَصْحٰبُ الْمَيْمَنَةِ)

অর্থাৎ ডান হাতে আমলনামা পাবে। এরা জান্নাতী। সূরা ওয়াকিয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর যারা কাফির তারাই বাম সারির লোক, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।

مُؤْصَدَةٌ অর্থ مغلقة বা বদ্ধ। অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন তাদের আবদ্ধ করে নেবে ফলে কখনও তা হতে বের হতে পারবে না। মু’মিনদের জন্য দুনিয়ার জীবন কষ্টের আধার। শত কষ্টের মধ্যেও তাকে ঈমান ও সৎআমলে অটল থাকতে হবে। সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং মানুষের প্রতি দয়াশীল হতে হবে। তাহলে সফলকাম ও সৌভাগ্যবান বান্দা হওয়া সম্ভব অন্যথায় হতভাগা ছাড়া কিছুই হওয়া যাবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. দাস আযাদ করার ফযীলত জানলাম।
২. গরীব-মিসকীন বিশেষ করে নিকটাত্মীয় ইয়াতীমদেরকে খাবার খাওয়ানো ঈমানের দাবী এবং ফযীলতের কাজ।
৩. ডান হাতে যারা আমলনামা পাবে তাদের বৈশিষ্ট্য জানলাম।
৪. ধৈর্য ধারণের প্রতিদান অনেক মহৎ।

তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

১-১০ নং আয়াতের তাফসীর

সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ এখানে জনবসতিপূর্ণ শান্তির সময়ের মক্কা মুআমার শপথ করছেন। তিনি শপথ করে বলেছেনঃ হে নবী (সঃ) এখানে একবার তোমার জন্যে যুদ্ধ বৈধ হবে, তাতে কোন পাপ বা অন্যায় হবে না। আর ঐ যুদ্ধে যা কিছু পাওয়া যাবে সেগুলো তোমার জন্যে শুধু ঐ সময়ের জন্যে বৈধ হবে। সহীহ্ হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, এই বরকত পূর্ণ শহর মক্কাকে আল্লাহ্ তাআ’লা প্রথম দিন থেকেই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। এই সম্মান ও মর্যাদা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কতকগুলো কাজ এখানে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন তথাকার কোন গাছ কাটা যাবে না, কোন কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না। আমার জন্যে শুধুমাত্র একটি দিনের এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে বৈধ করা হয়েছিল, আজ আবার আমার জন্যেও নিষিদ্ধ সম্পর্কিত আদেশ পূর্বের মতই বলবৎ থাকবে। প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তির দায়িত্ব হলো অনুপস্থিত লোকদের নিকট খবর পৌছিয়ে দেয়া।”

একটি হাদীসে আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “এখানে (মক্কায়) যুদ্ধ-বিগ্রহের বৈধতা সম্বন্ধে কেউ আমার যুদ্ধকে যুক্তি হিসেবে পেশ করলে তাকে বলে দিতে হবেঃ আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্য অনুমতি দিয়েছেন, তোমাদের জন্যে দেননি।”

এরপর আল্লাহ্ তাআ’লা পিতা এবং সন্তানের শপথ করেছেন। কারো কারো মতে (আরবি) শব্দের (আরবি) শব্দটি আরবী ব্যাকরণের পরিভাষায় (আরবি) বা নেতিবাচক (আরবি)। অথাৎ যার সন্তান আছে তার এবং যে নিঃসন্তান তার শপথ। আর যদি ব্যাকরণের পরিভাষায় (আরবি) কে (আরবি) মনে করা হয় তাহলে অর্থ হবেঃ পিতার এবং সন্তানদের শপথ। পিতা দ্বারা হযরত আদম (আঃ)-কে এবং সন্তান দ্বারা সমগ্র মানব জাতিকে বুঝানো হয়েছে। এই উক্তিটিই উত্তম বলে অনুভূত হচ্ছে কেননা, এর পূর্বে মক্কাভূমির শপথ করা হয়েছে যা সমস্ত জমীন ও বস্তিসমূহের জননী। অতঃপর মক্কার অধিবাসীদের শপথ করা হয়েছে অর্থাৎ মানুষের মূল বা শিকড় হযরত আদম (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের শপথ করা হয়েছে। আবু ইমরান (রঃ) বলেন যে, এখানে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, এখানে সাধারণভাবে সকল পিতা এবং সকল সন্তানের কথা বলা হয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ আমি মানুষকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর, সুষম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছি। মায়ের পেটেই তাকে এই পবিত্র গঠন-বিন্যাস এবং উন্নত আকৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)

“হে মানুষ! কিসে তোমাকে ভোমার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করলো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং সুসমঞ্জস করেছেন। যেই আকৃতিতে চেয়েছেন তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (৮২ ৬-৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অথাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।” (৯৫:৪) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি তাকে শক্তি-সামর্থ সম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছি। মানুষের উচিত তার নিজের প্রতি লক্ষ্য করা,তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা, তার দাঁত বের হওয়া ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য করা। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, মানুষ প্রথমে ছিল বীর্য বা শুক্র, তারপরে হয়েছে রক্তপিন্ড এবং এরপরে হয়েছে গোশতটুকরা। মোটকথা, মানুষের জন্ম খুবই বিস্ময়কর এবং কষ্টকরও বটে, যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে বহন করেছে এবং কষ্ট করে প্রসব করেছে।” (৪৬:১৫) মা সন্তানকে দুধ পান করানোতে এবং লালন-পালন করাতেও কঠিন কষ্ট স্বীকার করেছে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হচ্ছেঃ কঠিন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হলোঃ কঠিন অবস্থায় এবং দীর্ঘ সময়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। দাঁড়ানো অবস্থার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে এমনিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কষ্ট সহ্য করতে হয়। হযরত আদম (আঃ) যেহেতু আসমানে সৃষ্ট হয়েছিলেন এ কারণেই এটা বলা হয়েছে।

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না? অর্থাৎ তারা ধারণা করে যে, তাদের ধন-মাল নিতে কেউ সক্ষম নয়? তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কারো কর্তৃত্ব নেই? তারা কি জিজ্ঞাসিত হবে না যে, তারা কোথা থেকে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? নিঃসন্দেহে তাদের উপর আল্লাহর কর্তৃত্ব রয়েছে এবং আল্লাহ তাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। তারা বলে বেড়ায়ঃ আমরা বহু ধনমাল খরচ করে ফেলেছি। তারা কি মনে করে যে, তাদেরকে কেউ দেখছে না? অর্থাৎ তারা কি নিজেদেরকে আল্লাহর দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য মনে করে?

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি কি মানুষকে দেখার জন্যে দুটি চক্ষু প্রদান করিনি? মনের কথা প্রকাশ করার জন্যে কি আমি তাদেরকে জিহ্বা দিইনি? কথা বলার জন্যে, পানাহারের জন্যে, চেহারা ও মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে কি আমি তাদেরকে দুটি ওষ্ঠ প্রদান করিনি?

নবী করীম (সঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে অসংখ্য বড় বড় নিয়ামত দান করেছি যেগুলো তোমরা গণনা করে শেষ করতে পারবে না। ওগুলোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তিও তোমাদের নেই। আমি তোমাদেরকে দেখার জন্যে দুটি চক্ষু দান করেছি। তারপর সেই চোখের উপর গিলাফ সৃষ্টি করেছি। কাজেই হালাল জিনিসের প্রতি সেই চোখ দ্বারা তাকাও এবং হারাম বা নিষিদ্ধ জিনিস সামনে এলে চক্ষু বন্ধ করে ফেলো। আমি তোমাদেরকে জিহ্বা দিয়েছি এবং ওর গিলাফও দিয়েছি। সুতরাং আমার সন্তুষ্টিমূলক কথা মুখ থেকে বের কর এবং অসন্তুষ্টিমূলক কথা থেকে জিহ্বাকে বিরত রাখো। আমি তোমাদেরকে লজ্জাস্থান দিয়েছি এবং ওর মধ্যে পর্দা দিয়েছি। কাজেই বৈধ ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করো, কিন্তু অবৈধ ক্ষেত্রে পর্দা স্থাপন করো। হে আদম সন্তান! আমার অসন্তুষ্টি সহ্য করার মত শক্তি তোমাদের নেই। আমার শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতাও তোমাদের নেই।” (এ হাদীসটি হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেনঃ আমি তাদেরকে ভালো মন্দ দুটি পথই দেখিয়েছি। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “(ভালো ও মন্দ) এ দু’টি পথ, মন্দ পথকে তোমাদের নিকট তিনি ভালো পথ হতে পছন্দনীয় ও প্রিয় করেননি। কিন্তু এ হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। তবে মুরসালরূপেও এ হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, দুই নাজদ দ্বারা দুই স্তনকে বুঝানো হয়েছে। আরও কতিপয় তাফসীরকার এ কথাই বলেছেন। ইমাম ইবনে জারীর (রাঃ) বলেন যে, প্রথম উক্তিটিই সঠিক। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র বিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করবার জন্যে, এ জন্যে আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” (৭৬:২-৩)

১১-২০ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, আকাবা হলে জাহান্নামের একটি পাহাড়ের নাম। হযরত কাব আহবার (রাঃ) বলেন যে, ওটা হলো জাহান্নামের সত্তরটি সোপান। কাতাদা (রঃ) বলেনঃ এটা প্রবেশ করার শক্ত ঘাঁটি, আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের মাধ্যমে তাতে প্রবেশ কর। এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ তোমার কি জানা আছে, এ ঘাঁটি কি? অতঃপর বলেনঃ গোলাম আযাদ করা এবং আল্লাহর নামে অন্নদান করা।

ইবনে যায়েদ বলেনঃ অর্থাৎ ওরা মুক্তি ও কল্যাণের পথে চলেনি কেন? তারপর মানুষকে সর্তক করতে গিয়ে বলা হচ্ছেঃ তোমরা কি জান আকাবা কি? কোন গর্দানকে মুক্ত করা বা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা। আয়াতাংশ (আরবি) অথবা (আরবি) দু’ভাবে পড়াই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ (আরবি) এর সাথেও পড়া হয়েছে, আবার (আরবি) কে (আরবি) এবং (আরবি) সর্বনামকে এবং কে করেও পড়া হয়েছে। এই দুটো কিরআতই বিশুদ্ধ।

মুসনাদে আহমদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মু’মিন গর্দান কে অর্থাৎ কোন মু’মিন গোলামকে মুক্ত করে, আল্লাহ তা’আলা ঐ গোলামের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি দান করে থাকেন। এমন কি, হাতের বিনিময়ে হাত, পায়ের বিনিময়ে পা এবং লজ্জাস্থানের বিনিময়ে লজ্জাস্থান।”

হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) এ হাদীসটি শোনার পর এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মারজানা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি স্বয়ং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর মুখে এ হাদীসটি শুনেছেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা।” তখন হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) তার গোলাম মাতরাফকে ডেকে বলেনঃ “যাও, তুমি আল্লাহর নামে মুক্ত।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী এবং সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত আছে) সহীহ্ মুসলিমে এ কথাও রয়েছে যে ঐ গোলামটিকে দশ হাজার দিরহামে ক্রয় করা হয়েছিল।

হযরত আবু নাজীহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যে মুসলমান কোন মুসলমান (দাস) কে মুক্ত করে, আল্লাহ্ তা’আলা তার এক একটি হাড়ের বিনিময়ে ঐ মুক্তকারীর এক একটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করেন। আর যে মুসলমান নারী কোন মুসলমান নারী (দাসী) কে আযাদ করে, আল্লাহ্ তা’আলা তার এক একটি হাড়কে ঐ মুক্তি প্রাপ্তা দাসীর এক একটি হাড়ের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

মুসনাদে আহমদে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকরের উদ্দেশ্যে মসজিদ বানিয়ে দেয়, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে ঘর বানিয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমান দাসকে মুক্ত করে, আল্লাহ ওটাকে ঐ মুক্তকারীর ফিদইয়া (মুক্তিপণ) হিসেবে গণ্য করেন এবং তাকে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি দান করে থাকেন। যে ব্যক্তি ইসলামে বার্ধক্যে উপনীত হয় তাকে কিয়ামতের দিন নূর দেয়া হবে।”

অন্য এক রিওয়াইয়াতে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করবে, ঐ তীর (লক্ষ্য স্থলে) লাগুক বা নাই লাগুক, সে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরের মধ্য হতে একটি দাস মুক্ত করার সওয়াব লাভ করবে।”

আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মুসলমানের তিনটি সন্তান বালেগ হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, আল্লাহ্ তাকে স্বীয় রহমতের গুণে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দুই জোড়া দান করবে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দিবেন, যে দরজা দিয়ে সে খুশি প্রবেশ করবে।” ২. এ হাদীসগুলো মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর সনদ খুবই উত্তম।

সুনানে আবী দাউদে হযরত আ’রীফ ইবনে আইয়াশে দাইলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমরা হযরত ওয়ায়েলা’ ইবনে আশকা’র (রাঃ) কাছে গিয়ে বললামঃ আমাদেরকে এমন একটি হাদীস শুনিয়ে দিন যাতে বেশি কম কিছু না থাকে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ঘরে রক্ষিত কুরআন মাজীদ পাঠ করে তবে সে কি তাতে কম-বেশী করে? আমরা বললামঃ জনাব! আমরা এরূপ বলতে চাইনি, বরং আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হতে যে হাদীস শুনেছেন তা আমাদেরকে শুনান। তিনি তখন বললেনঃ একবার আমি আমার এক সঙ্গীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর দরবারে আগমন করি। আমার ঐ সঙ্গী হত্যার মাধ্যমে নিজের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব করে নিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “তার পক্ষ থেকে দাস মুক্ত করে দাও। আল্লাহ্ তা’আলা ঐ দাসের এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে মুক্তকারীর একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন। অর্থবোধক (এ হাদীসটি সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত হয়েছে)

অন্য একটি হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি কারো গর্দান মুক্ত করবে, আল্লাহ্ তা’আলা ঐ কাজকে তার জন্যে ফিদিয়া’ রূপে গণ্য করবেন। এ ধরনের আরও বহু হাদীস রয়েছে।

মুসনাদে আহমদে হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবে।” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “অল্প কথায় তুমি খুব বড় প্রশ্ন করে বসেছো। দাস মুক্ত কর, গর্দান মুক্ত কর।” বেদুইন বললোঃ “হে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! এ দু’টি কি একাৰ্থবোধক নয়?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “না। দাস মুক্ত করার অর্থ হলো এই যে, তুমি একাকী একটি দাস মুক্ত করে দিবে। আর (আরবি) এর অর্থ হলোঃ দাসমুক্ত করার ব্যাপারে কম বেশী সাহায্য করা, দুধেল পশু দুধ পানের জন্যে কোন মিসকীনকে দেয়া, অত্যাচারী আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা, এসবই হলো জান্নাতে প্রবিষ্ট করার মত কাজ। যদি তুমি এসব করতে সক্ষম না হও তবে ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, পিপাসার্তকে পানি দাও, ন্যায়ের আদেশ কর এবং অন্যায় হতে বিরত রাখো। যদি তুমি এতেও সক্ষম না হও তবে পুণ্য ও ন্যায়ের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা মুখ হতে বের করো না।”

(আরবি) এর অর্থ হলো ক্ষুধাতুর। অর্থাৎ ক্ষুধার সময়ে খাদ্য খাওয়ানো। এটাও আবার ঐ শিশুকে যে ইয়াতীম বা পিতৃহীন হয়েছে। আর তার সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। যেমন মুসনাদে আহমদে হযরত সালমান ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “মিসকীনকে সাদকা দেয়া হলো শুধু সাদকা আর আত্মীয় স্বজনকে সাদকা করলে একই সাথে দু’টি কাজের সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হলো সাদকার সওয়াব এবং আর একটি হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক মিলিত রাখার সওয়াব।”

অথবা এমন মিসকিনকে আহার্যদান করা যে ধূলালুণ্ঠিত, পথের উপর পড়ে আছে, বাড়িঘর নেই, বিছানাপত্র নেই। ক্ষুধার জ্বালায় পেট মাটির সাথে লেগে আছে। যে নিজের গৃহ হতে দূরে রয়েছে। যে মুসাফির, ফকীর, মিসকীন, পরমুখাপেক্ষী, ঋণী, কপর্দকহীন, খবরাখবর নেয়ার মত যার কেউ নেই। যার পরিবার-সদস্য অনেক অথচ সম্পদ কিছুই নেই। এসবই প্রায় একই

তদুপরি এই ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সেইসব কাজের জন্যে আল্লাহর কাছে বিনিময় প্রত্যাশা করে। সেই পুরস্কৃত হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি আখেরাতের ইচ্ছা রাখে এবং সে জন্য চেষ্টা করে, আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়, তার প্রচেষ্টাসমূহ আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ, “বিশ্বাসীদের মধ্যে যে নারী-পুরুষ পুণ্য কাজ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে জান্নাতের রিযক লাভ করবে।” (৪০:৪০)

তারপর তাদের আরো বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ তারা লোকদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার এবং তাদের প্রতি পরস্পর সহানুভূতি এবং অনুগ্রহ করার জন্যে একে অপরকে নসীহত করে। যেমন হাদীস শরীফে রয়েছেঃ “তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি অনুগ্রহ কর, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।” অন্য এক হাদীসে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হয় না।”

সুনানে আবি দাউদে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি অনুগ্রহ করে এবং আমাদের বড়দের অধিকার উপলব্ধি করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ এ সব লোক তারাই যাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। আর আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা বলে অবিশ্বাস করেছে তাদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে। তারা অগ্নি পরিবেষ্টিত হবে। ঐ অগ্নি হতে কোন দিন মুক্তিও পাওয়া যাবে না এবং অব্যাহতিও মিলবে না। ঐ আগুনের দরজা তাদের উপর অবরুদ্ধ থাকবে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা সূরা (আরবি) এর মধ্যে আসবে ইনশাআল্লাহ। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তার মধ্যে কোন জানালা। থাকবে না, ছিদ্র থাকবে না। সেই জায়গা হতে কখনো বের হওয়া সম্ভব হবে না।

হযরত আবু ইমরান আলী জুদী (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক বিদ্রোহীকে, প্রত্যেক শয়তানকে এবং ঐ ব্যক্তিকে, যাদের অত্যাচারে পৃথিবীতে মানুষ ভীত ও অতিষ্ঠ থাকতো, তাদের প্রত্যেককে লোহার শিকলে শক্ত করে বেঁধে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিবেন। তারপর জাহান্নামকে অবরুদ্ধ করে দেয়া হবে। আল্লাহর কসম! তারা তা থেকে কখনো স্থানান্তরিত হবে না। আল্লাহর কসম! তারা কখনো আকাশ দেখতে পাবে না। আল্লাহর কসম! কিছুটা আরামে কখনো তাদের দু’চোখের পাতা বন্ধ হবে না (অর্থাৎ ক্ষণিকের জন্যেও তারা এমন শান্তি লাভ করবে না যার ফলে তাদের নিদ্রা আসতে পারে) আল্লাহর শপথ! তারা কখনো সুস্বাদু খাবার খেতে পাবে না।

Leave a Reply