بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (বই#১১০৫) [ **   *মানবজাতির নেতা হিসেবে মােমেনদের কিছু বৈশিষ্ট্য : – **নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, **তাদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করা হলে তার মোকাবিলা করে:-] www.motaher21.net সূরা:৪২:আশ-শূরা পারা:২৫ ৩৭-৪৮ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১১০৫)
[ **   *মানবজাতির নেতা হিসেবে মােমেনদের কিছু বৈশিষ্ট্য : –
**নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়,
**তাদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করা হলে তার মোকাবিলা করে:-]
www.motaher21.net সূরা:৪২:আশ-শূরা পারা:২৫
৩৭-৪৮ নং আয়াত:-
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৩৭
وَ الَّذِیۡنَ یَجۡتَنِبُوۡنَ کَبٰٓئِرَ الۡاِثۡمِ وَ الۡفَوَاحِشَ وَ اِذَا مَا غَضِبُوۡا ہُمۡ یَغۡفِرُوۡنَ ﴿ۚ۳۷﴾
যারা বড় বড় গোনাহ এবং লজ্জাহীনতার কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ক্রোধ উৎপত্তি হলে ক্ষমা করে,
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৩৮
وَ الَّذِیۡنَ اسۡتَجَابُوۡا لِرَبِّہِمۡ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ ۪ وَ اَمۡرُہُمۡ شُوۡرٰی بَیۡنَہُمۡ ۪ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿ۚ۳۸﴾
যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে, নামায কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, আমি তাদের যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৩৯
وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَہُمُ الۡبَغۡیُ ہُمۡ یَنۡتَصِرُوۡنَ ﴿۳۹﴾
এবং তাদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করা হলে তার মোকাবিলা করে।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪০
وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُہَا ۚ فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُہٗ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۴۰﴾
খারাপের প্রতিদান সমপর্যায়ের খারাপ। অতঃপর যে মাফ করে দেয় এবং সংশোধন করে তাকে পুরস্কৃত করা আল্লাহর দায়িত্ব।আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪১
وَ لَمَنِ انۡتَصَرَ بَعۡدَ ظُلۡمِہٖ فَاُولٰٓئِکَ مَا عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ سَبِیۡلٍ ﴿ؕ۴۱﴾
যারা জুলুম হওয়ার পরে প্রতিশোধ গ্রহণ করে তাদের তিরস্কার করা যায় না।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪২
اِنَّمَا السَّبِیۡلُ عَلَی الَّذِیۡنَ یَظۡلِمُوۡنَ النَّاسَ وَ یَبۡغُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۴۲﴾
কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অহেতুক বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪৩
وَ لَمَنۡ صَبَرَ وَ غَفَرَ اِنَّ ذٰلِکَ لَمِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ ﴿٪۴۳﴾
অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪৪
وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ وَّلِیٍّ مِّنۡۢ بَعۡدِہٖ ؕ وَ تَرَی الظّٰلِمِیۡنَ لَمَّا رَاَوُا الۡعَذَابَ یَقُوۡلُوۡنَ ہَلۡ اِلٰی مَرَدٍّ مِّنۡ سَبِیۡلٍ ﴿ۚ۴۴﴾
আল্লাহ নিজেই যাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেন আল্লাহ‌ ছাড়া তাকে সামলানোর আর কেউ নেই। তোমরা দেখতে পাবে এসব জালেমরা যখন আযাব দেখবে তখন বলবে এখন কি ফিরে যাবারও কোন পথ আছে?
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪৫
وَ تَرٰىہُمۡ یُعۡرَضُوۡنَ عَلَیۡہَا خٰشِعِیۡنَ مِنَ الذُّلِّ یَنۡظُرُوۡنَ مِنۡ طَرۡفٍ خَفِیٍّ ؕ وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ الۡخٰسِرِیۡنَ الَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ وَ اَہۡلِیۡہِمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ فِیۡ عَذَابٍ مُّقِیۡمٍ ﴿۴۵﴾
তুমি দেখতে পাবে এদের জাহান্নামের সামনে আনা হলে অপমানে আনত হতে থাকবে এবং দৃষ্টির আড়ালে বাঁকা চোখে তাকে দেখতে থাকবে। যারা ঈমান এনেছিলো সেই সময় তারা বলবেঃ প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা আজ কিয়ামতের দিন নিজেরাই নিজেদেরকে এবং নিজেদের সংশ্লিষ্টদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪৬
وَ مَا کَانَ لَہُمۡ مِّنۡ اَوۡلِیَآءَ یَنۡصُرُوۡنَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ سَبِیۡلٍ ﴿ؕ۴۶﴾
আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে ওদের সাহায্য করার জন্য ওদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং আল্লাহ কাকেও পথভ্রষ্ট করলে তার কোন গতি নেই।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪৭
اِسۡتَجِیۡبُوۡا لِرَبِّکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ یَوۡمٌ لَّا مَرَدَّ لَہٗ مِنَ اللّٰہِ ؕ مَا لَکُمۡ مِّنۡ مَّلۡجَاٍ یَّوۡمَئِذٍ وَّ مَا لَکُمۡ مِّنۡ نَّکِیۡرٍ ﴿۴۷﴾
তোমরা তোমাদের রবের ডাকে সাড়া দাও আল্লাহর পক্ষ থেকে সে দিন আসার আগে, যা অপ্রতিরোধ্য; যেদিন তোমাদের কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের কোন অস্বীকার থাকবে না ।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-৪৮
فَاِنۡ اَعۡرَضُوۡا فَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡہِمۡ حَفِیۡظًا ؕ اِنۡ عَلَیۡکَ اِلَّا الۡبَلٰغُ ؕ وَ اِنَّاۤ اِذَاۤ اَذَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنَّا رَحۡمَۃً فَرِحَ بِہَا ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ فَاِنَّ الۡاِنۡسَانَ کَفُوۡرٌ ﴿۴۸﴾
যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনাকে তো আমরা এদের রক্ষক করে পাঠাইনি। আপনার কাজ তো শুধু বাণী পৌঁছে দেয়া। আর আমরা যখন মানুষকে আমাদের পক্ষ থেকে কোন রহমত আস্বাদন করাই তখন সে এতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের বিপদ-আপদ ঘটে, তখন তো মানুষ হয়ে পড়ে খুবই অকৃতজ্ঞ।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তারা রুক্ষ ও ক্রুদ্ধ স্বভাবের হয় না, বরং নম্র স্বভাব ও ধীর মেজাজের মানুষ হয়। তাদের স্বভাব প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না। তারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে ক্ষমার আচরণ করে এবং কোন কারণে ক্রোধান্বিত হলেও তা হজম করে। এটি মানুষের সর্বোত্তম গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মজীদ একে অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য বলে ঘোষণা করেছে (আল ইমরান, আয়াত ১৩৪ ) এবং একে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাফল্যের বড় বড় কারণসমূহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে (আল ইমরান, ১৫৯ আয়াত)। হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ

وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ فى شئ قط ، إِلاَّ أَنْ تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللَّهِ (بخارى , مسلم)

“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যক্তিগত কারণে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর কোন হুরমত বা মর্যাদার অবমাননা করা হলে তিনি শাস্তি বিধান করতেন।”
# শাব্দিক অনুবাদ হবে “রবের আহবানে সাড়া দেয়।” অর্থাৎ আল্লাহ‌ যে কাজের জন্যই ডাকেন সে কাজের জন্যই ছুটে যায় এবং যে জিনিসের জন্যই আহবান জানান তা গ্রহণ করে।
# এ বিষয়টিকে এখানে ঈমানদারদের সর্বোত্তম গুণাবলীর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে এবং সূরা আল ইমরানে (আয়াত ১৫৯) এজন্য আদেশ করা হয়েছে। এ কারণে পরামর্শ ইসলামী জীবন প্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরামর্শ ছাড়া সামষ্টিক কাজ পরিচালনা করা শুধু জাহেলী পন্থাই নয়, আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। ইসলামে পরামর্শকে এই গুরুত্ব কেন দেয়া হয়েছে? এর কারণসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে আমাদের সামনে তিনটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়।

একঃ যে বিষয়টি দুই বা আরো বেশী লোকের স্বার্থের সাথে জড়িত সেক্ষেত্রে কোন এক ব্যক্তির নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং সংশিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের উপেক্ষা করা জুলুম। যৌথ ব্যাপারে কারো যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার নেই। ইনসাফের দাবী হচ্ছে, কোন বিষয়ে যত লোকের স্বার্থ জড়িত সে ব্যাপারে তাদের সবার মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং তাতে যদি বিপুল সংখ্যক লোকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে তাহলে তাদের আস্থাভাজন প্রতিনিধিদেরকে পরামর্শের মধ্যে শামিল করতে হবে।

দুইঃ যৌথ ব্যাপারে মানুষ স্বেচ্ছাচারিতা করার চেষ্টা করে অন্যদের অধিকার নস্যাত করে নিজে ব্যক্তি স্বার্থ লাভ করার জন্য, অথবা এর কারণ হয় সে নিজেকে বড় একটা কিছু এবং অন্যদের নগন্য মনে করে। নৈতিক বিচারে এই দু’টি জিনিসই সমপর্যায়ের হীন। মু’মিনের মধ্যে এ দু’টির কোনটিই পাওয়া যেতে পারে না। মু’মিন কখনো স্বার্থপর হয় না। তাই সে অন্যদের ওপর হস্তক্ষেপ করে নিজে অন্যায় ফায়দা চাইতে পারে না এবং অহংকারী বা আত্মপ্রশংসিত হতে পারে না যে নিজেকেই শুধু মহাজ্ঞানী ও সবজান্তা মনে করবে।

তিনঃ যেসব বিষয় অন্যদের অধিকার ও স্বার্থের সাথে জড়িত সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা বড় দায়িত্ব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এবং একথা জানে যে এর জন্য তাকে তার রবের কাছে কত কঠিন জবাবদিহি করতে হবে সে কখনো একা এই গুরুভার নিজের কাঁধে উঠিয়ে নেয়ার দুঃসাহস করতে পারে না। এ ধরনের দুঃসাহস কেবল তারাই করে যারা আল্লাহর ব্যাপারে নির্ভিক এবং আখেরাত সম্পর্কে চিন্তাহীন। খোদাভীরু ও আখেরাতের জবাবদিহির অনুভূতি সম্পন্ন লোক কোন যৌথ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কিংবা তাদের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধিদেরকে পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই শরীক করার চেষ্টা করবে যাতে সর্বাধিক মাত্রায় সঠিক, নিরপেক্ষ এবং ইনসাফ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে যদি অজ্ঞাতসারে কোন ত্রুটি হয়েও যায় তাহলে কোন এক ব্যক্তির ঘাড়ে তার দায়দায়িত্ব এসে পড়বে না।

এ তিনটি কারণ এমন যদি তা নিয়ে মানুষ গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে অতি সহজেই সে একথা উপলব্ধি করতে পারবে যে, ইসলাম যে নৈতিক চরিত্রের শিক্ষা দেয় পরামর্শ তার অনিবার্য দাবী এবং তা এড়িয়ে চলা একটি অতি বড় চরিত্রহীনতার কাজ। ইসলাম কখানো এ ধরনের কাজের অনুমতি দিতে পারে না। ইসলামী জীবন পদ্ধতি সমাজের ছোট বড় প্রতিটি ব্যাপারেই পরামর্শের নীতি কার্যকরী হোক তা চায়। পারিবারিক ব্যাপার হলে সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে কাজ করবে এবং ছেলে-মেয়ে বড় হলে তাদেরকেও পরামর্শে শরীক করতে হবে। খা‌ন্দান বা গোষ্ঠীর ব্যাপার হলে সেক্ষেত্রে গোষ্ঠীর সমস্ত বুদ্ধিমান ও বয়োপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করতে হবে। যদি একটি গোত্র বা জ্ঞাতিগোষ্ঠী কিংবা জনপদের বিষয়াদি হয় এবং তাতে সব মানুষের অংশগ্রহণ সম্ভব না হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব এমন পঞ্চায়েত বা সভা পালন করবে যেখানে কোন সর্বসম্মত পন্থা অনুসারে সংশ্লিষ্ট সবার আস্থাভাজন প্রতিনিধিরা শরীক হবে। গোটা জাতির ব্যাপার হলে তা পরিচালনার জন্য সবার ইচ্ছানুসারে তাদের নেতা নিযুক্ত হবে। জাতীয় বিষয়গুলোকে সে এমন সব ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ অনুসারে পরিচালনা করবে জাতি যাদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে করে এবং সে ততক্ষণ পর্যন্ত নেতা থাকবে যতক্ষণ জাতি তাকে নেতা বানিয়ে রাখতে চাইবে। কোন ঈমানদার ব্যক্তি জোরপূর্বক জাতির নেতা হওয়া বা হয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা কিংবা চেষ্টা করতে পারে না। প্রথমে জোরপূর্বক জাতির ঘাড়ে চেপে বসা এবং পরে জবরদস্তি করে মানুষের সম্মতি আদায় করা এমন প্রতারণাও সে করতে পারে না। তাকে পরামর্শ দানের জন্য মানুষ স্বাধীন ইচ্ছানুসারে নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধি নয়, বরং এমন প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে যে তার মর্জি মোতাবেক মতামত প্রকাশ করবে, ‌এমন চক্রান্তও সে করতে পারে না এমন আকাঙ্ক্ষা কেবল সেই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে যার মন অসৎ উদ্দেশ্য দ্বারা কলুষিত। এই আকাংখার সাথে أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ এর বাহ্যিক কাঠামো নির্মাণ এবং তার বাস্তব প্রাণসত্তাকে নিঃশেষ করে দেয়ার প্রচেষ্টা শুধু সেই ব্যক্তিই চালাতে পারে যে আল্লাহ‌ এবং তাঁর সৃষ্টিকে ধোঁকা দিতে ভয় করে না। অথচ না আল্লাহকে ধোঁকা দেয়া সম্ভব না আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ এমন অন্ধ হতে পারে যে, প্রকাশ্য দিবালোকে কেউ ডাকাতি করছে আর মানুষ তা দেখে সরল মনে ভাবতে থাকবে যে, সে ডাকাত নয় মানুষের সেবা করছে। أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ এর নিয়মটি প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে পাঁচটি জিনিস দাবী করেঃ

একঃ যৌথ বিষয়সমূহ যাদের অধিকার ও স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত তাদের মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং কার্যক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে সে বিষয়ে তাদের অবহিত রাখতে হবে। তারা যদি তাদের ব্যাপারগুলোর নেতৃত্বে কোন ত্রুটি, অপরিপক্বতা বা দুর্বলতা দেখায় তাহলে তা তুলে ধরার ও তার প্রতিবাদ করার এবং সংশোধিত হতে না দেখলে পরিচালক ও ব্যবস্থাপকদের পরিবর্তন করার অধিকার থাকতে হবে। মানুষের মুখ বন্ধ করে, হাত পা বেঁধে এবং তাদেরকে অনবহিত রেখে তাদের সামষ্টিক ব্যাপারসমূহ পরিচালনা করা সুস্পষ্ট প্রবঞ্চনা। কেউ-ই এ কাজকে أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ নীতির অনুসরণ বলে মানতে পারে না।

দুইঃ যৌথ বিষয়সমূহ পরিচালনার দায়িত্ব যাকেই দেয়া হবে তাকে যেন এ দায়িত্ব সবার স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে দান করা হয়। জবরদস্তি ও ভয়ভীতি দ্বারা অর্জিত কিংবা লোভ-লালসা দিয়ে খরিদকৃত অথবা ধোঁকা-প্রতারণা ও চক্রান্তের মাধ্যমে লুন্ঠিত সম্মতি প্রকৃতপক্ষে কোন সম্মতি নয়। যে সম্ভাব্য সব রকম পন্থা কাজে লাগিয়ে কোন জাতির নেতা হয় সে সত্যিকার নেতা নয়। সত্যিকার নেতা সেই যাকে মানুষ নিজের পছন্দানুসারে সানন্দ চিত্তে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে।

তিনঃ নেতাকে পরামর্শ দানের জন্যও এমন সব লোক নিয়োগ করতে হবে যাদের প্রতি জাতির আস্থা আছে। এটা সর্বজনবিদিত যে, যারা চাপ সৃষ্টি করে কিংবা অর্থ দ্বারা খরিদ করে অথবা মিথ্যা ও চক্রান্তের সাহায্যে বা মানুষকে বিভ্রান্ত করে প্রতিনিধিত্বের স্থানটি দখল করে তাদেরকে সঠিক অর্থে আস্থাভাজন বলা যায় না।

চারঃ পরামর্শদাতাগণ নিজেদের জ্ঞান, ঈমান ও বিবেক অনুসারে পরামর্শ দান করবে এবং এভাবে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে। এ দিকগুলো যেখানে থাকবে না, যেখানে পরামর্শদাতা কোন প্রকার লোভ-লালসা বা ভীতির কারণে অথবা কোন দালাদলির মারপ্যাঁচের কারণে নিজের জ্ঞান ও বিবেকের বিরুদ্ধে মতামত পেশ করে সেখানে প্রকৃতপক্ষে হবে খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা أَمْرَهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ এর অনুসরণ নয়।

পাঁচঃ পরামর্শদাতাদের ইজমা’র (সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) ভিত্তিতে যে পরামর্শ দেয়া হবে, অথবা যে সিদ্ধান্ত তাদের অধিকাংশের সমর্থন লাভ করবে তা মেনে নিতে হবে। কেননা সবার মতামত জানার পরও যদি এক ব্যক্তি অথবা একটি ছোট্ট গ্রুপকে স্বেচ্ছাচার চালানোর সুযোগ দেয়া হয় তাহলে পরামর্শ অর্থহীন হয়ে যায়। আল্লাহ‌ একথা বলছেন না যে, “তাদের ব্যাপারে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়” বরং বলছেন, ‘তাদের কাজকর্ম পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে চলে।’ শুধু পরামর্শ করাতেই এ নির্দেশ পালন করা হয় না। তাই পরামর্শের ক্ষেত্রে সর্বসম্মত অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজকর্ম পরিচালনা প্রয়োজন।

ইসলামের পরামর্শ ভিত্তিক কাজ পরিচালনা নীতির এই ব্যাখ্যার সাথে এই মৌলিক কথাটার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মুসলমানদের পারস্পরিক বিষয়সমূহ পরিচালনায় এই শূরা স্বেচ্ছাচারী এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নয়, বরং অবশ্যই সেই দ্বীনের বিধি-বিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ আল্লাহ‌ নিজেই যার জন্য বিধান রচনা করেছেন। সাথে সাথে তা সেই মূল নীতিরও আনুগত্য করতে বাধ্য যাতে বলা হয়েছে “যে ব্যাপারেই তোমাদের মধ্যে মতভেদ হবে তার ফায়সালা করবেন আল্লাহ।” এবং “তোমাদের মধ্যে যে বিরোধই বাঁধুক না কেন সেজন্য আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের কাছে ফিরে যাও।” এই সাধারণ সূত্র অনুসারে মুসলমানরা শারয়ী বিষয়ে মূল ধর্মগ্রন্থের কোন অংশের কি অর্থ এবং কিভাবে তা কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ করতে পারে যাতে তার মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়। কিন্তু স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এ উদ্দেশ্যে কোন পরামর্শ করতে পারে না।
# এর তিনটি অর্থঃ

একঃ আমি তাদেরকে যে হালাল রিযিক দান করেছি তা থেকে খরচ করে, নিজের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য হারাম অর্থ-সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না।

দুইঃ আমার দেয়া রিযিককে যক্ষের ধনের মত জমা করে রাখে না, বরং খরচ করে।

তিনঃ তাদের যে রিযিক দেয়া হয়েছে তা থেকে আল্লাহর পথেও ব্যয় করে, সবটাই নিজের জন্য আঁকড়ে ধরে রাখে না। প্রথম অর্থের ভিত্তি হলো, আল্লাহ‌ শুধু হালাল ও পবিত্র রিযিককেই তাঁর দেয়া রিযিক বলে বর্ণনা করেন। অপবিত্র ও হারাম পন্থায় উপার্জিত রিযিককে তিনি তাঁর নিজের দেয়া রিযিক বলেন না। দ্বিতীয় অর্থের ভিত্তি হলো, আল্লাহ‌ মানুষকে যে রিযিক দান করেন তা খরচ করার জন্য দান করেন, জমিয়ে জমিয়ে সাপের মত পাহারা দিয়ে রাখার জন্য দেন না এবং তৃতীয় অর্থের ভিত্তি হলো, কুরআন মজীদে ব্যয় করা বলতে শুধু নিজের সত্তা ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যয় করা বুঝানো হয়নি। এ অর্থের মধ্যে আল্লাহর পথে ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত। এ তিনটি কারণে আল্লাহ‌ এখানে খরচ করাকে ঈমানদারদের সর্বোত্তম গুণাবলীর মধ্যে গণ্য করছেন এবং এজন্য আখেরাতের কল্যাণসমূহ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
# এটাও ঈমানদারদের একটা সর্বোৎকৃষ্ট গুণ। তারা জালেম ও নিষ্ঠুরদের জন্য সহজ শিকার নয়। তাদের কোমল স্বভাব এবং ক্ষমাশীলতা দুর্বলতার কারণে নয়। তাদের ভিক্ষু ও পাদরীদের মত মিসকীন হয়ে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়নি। তাদের ভদ্রতার দাবী হচ্ছে বিজয়ী হলে বিজিতের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। সক্ষম হলে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে মাফ করে এবং অধীনস্ত ও দুর্বল ব্যক্তির দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হলে তা উপেক্ষা করে যায়। কিন্তু কোন শক্তিশালী ব্যক্তি যদি তার শক্তির অহংকারে তার প্রতি বাড়াবাড়ি করে তাহলে বুক টান করে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাকে উচিত শিক্ষা দান করে। মু’মিন কখনো জালেমের কাছে হার মানে না এবং অহংকারীর সামনে মাথা নত করে না। এ ধরনের লোকদের জন্য তারা বড় কঠিন খাদ্য যা চিবানোর প্রচেষ্টাকারীর মাড়িই ভেঙে দেয়।
# এখান থেকে শেষ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত গোটা বক্তব্য পূর্ববর্তী আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
# এটা প্রথম নিয়মতান্ত্রিক বিধান, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে যা মনে রাখা দরকার। প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধ সীমা হচ্ছে কারো প্রতি যতটুকুন অন্যায় করা হয়েছে সে তার প্রতি ঠিক ততটুকুন অন্যায় করবে। তার চেয়ে বেশী অন্যায় করার অধিকার তার নেই।
# এটা প্রতিশোধ গ্রহণের দ্বিতীয় বিধান। এর অর্থ অন্যায়কারী থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ যদিও বৈধ, তবে যেখানে ক্ষমা করে দিলে তা সংশোধনের কারণ হতে পারে সেখানে সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে মাফ করে দেয়া অধিক উত্তম। যেহেতু মানুষ নিজেকে কষ্ট দিয়ে এই ক্ষমা প্রদর্শন করে তাই আল্লাহ‌ বলেন, এর প্রতিদান দেয়া আমার দায়িত্ব। কারণ, সত্য পথ থেকে বিচ্যুত মানুষকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে তুমি এই তিক্ততা হজম করেছো।
# এই সতর্ক বাণীর মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণ সম্পর্কে তৃতীয় আরেকটি বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, অন্যের কৃত জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে করতে কোন ব্যক্তির নিজেরই জালেম না হয়ে যাওয়া উচিত। একটি অন্যায়ের পরিবর্তে তার চেয়ে বড় অন্যায় করে ফেলা বৈধ নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ অপর কাউকে একটি চপটেঘাত করে তাহলে সে তাকে একটি চপেটাঘাতই করতে পারে, অসংখ্য লাথি ও ঘুষি মারতে পারে না। অনুরূপ গোনাহর, প্রতিশোধ গোনাহর কাজের মাধ্যমে নেয়া ঠিক নয় যেমন কোন জালেম যদি কারোর পুত্রকে হত্যা করে তাহলে তার পুত্রকে হত্যা করা জায়েয না। কিংবা কোন দুরাচার যদি কারো বোন বা কন্যার সাথে ব্যাভিচার করে তাহলে সেই ব্যক্তির তার বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করা হালাল হবে না।
# উল্লেখ্য, এ আয়াতগুলোতে ঈমানদারদের যেসব গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে তা সেই সময় বাস্তবে রসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের জীবনে বিদ্যমান ছিল এবং মক্কার কাফেররা নিজ চোখে তা দেখছিলো। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ‌ এভাবে কাফেরদের বুঝিয়েছেন যে, পৃথিবীর স্বল্প দিনের জীবন-যাপনের যে উপায়-উপকরণ লাভ করে তোমরা আত্মহারা হয়ে পড়ছো প্রকৃত সম্পদ ঐ সব উপায়-উপকরণ নয়। বরং কুরআনের পথনির্দেশনা গ্রহণ করে তোমাদের সমাজের এসব ঈমানদার তাদের মধ্যে যে নৈতিক চরিত্র ও গুণাবলী সৃষ্টি করেছে। সেগুলোই প্রকৃত সম্পদ।
# আল্লাহ‌ এসব লোকের হিদায়াতের জন্য কুরআনের মত সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব পাঠিয়েছেন, যা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং অত্যন্ত কার্যকর ও চিত্তাকর্ষক উপায়ে প্রকৃত সত্যের জ্ঞান দান করছে এবং জীবনের সঠিক পথ বলে দিচ্ছে। তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত নবী পাঠিয়েছেন যার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জীবন ও চরিত্রের অধিকারী মানুষ তাদের দৃষ্টি কখনো দেখেনি। আল্লাহ‌ এই কিতাব ও এই রসূলের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুফলসমূহও ঈমান গ্রহণকারীদেরকে তাদের নিজের চোখে দেখিয়ে দিয়েছেন। এসব দেখার পর যদি কোন ব্যক্তি হিদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ‌ পুনরায় তাকে সেই গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করবেন যেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী নয়। আর আল্লাহই যখন তাকে তার দরজা থেকে ঠেলে সরিয়ে দেন তখন তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব কে নিতে পারে?
# আজ যখন ফিরে আসার সুযোগ আছে তখন এরা ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। কিন্তু কাল যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে এবং শাস্তির নির্দেশ কার্যকর হবে তখন নিজেদের দুর্ভাগ্য দেখে এরা ফিরে আসার সুযোগ পেতে চাইবে।
# মানুষের স্বভাব হচ্ছে, কোন ভয়ানক দৃশ্য যখন তার সামনে থাকে এবং সে বুঝতে পারে, চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই সে তার কবলে পড়তে যাচ্ছে তখন প্রথমেই ভয়ের চোটে চোখ বন্ধ করে নেয়। এরপরও যদি তার হাত থেকে রেহাই না পায় তখন দেখার চেষ্টা করে বিপদটা কেমন এবং এখনো তার থেকে কত দূরে আছে। কিন্তু মাথা উঁচু করে ভালভাবে দেখার হিম্মত তার থাকে না। তাই সে বার বার একটু একটু করে চোখ খুলে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখে এবং ভয়ের চোটে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। এ আয়াতে জাহান্নামের দিকে অগ্রসরমান লোকদের এই অবস্থাই এখানে চিত্রিত করা হয়েছে।
# না আল্লাহ‌ নিজে তা ফিরাবেন আর না অন্য কারো তা ফিরানোর ক্ষমতা আছে।
# মূল আয়াতাংশ হচ্ছেوَمَا لَكُمْ مِنْ نَكِيرٍ এই আয়াতাংশের আরো কয়েকটি অর্থ আছে। এক—তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের কোনটিকেই অস্বীকার করতে পারবে না। দুই—তোমরা পোশাক বদল করে কোথাও লুকাতে পারবে না। তিন—তোমাদের সাথে যে আচরণই করা হোক না কেন তোমরা তার কোন প্রতিবাদ এবং তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারবে না। চার—তোমাদেরকে যে পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে তোমরা তা পাল্টিয়ে ফেলতে পারবে না।
# তোমাদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়নি যে, তোমরা অবশ্যই তাদেরকে সঠিক পথে আনবে অন্যথায় তারা সঠিক পথে আসেনি কেন সেজন্য তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
# মানুষ বলতে এখানে সেই নীচমনা ও অদূরদর্শী মানুষদের বুঝানো হয়েছে পূর্ব থেকেই যাদের আলোচনা চলে আসছে। পার্থিব কিছু সম্পদ লাভ করার কারণে যারা গর্বিত হয়ে উঠেছে এবং বুঝিয়ে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা হলে সেদিকে কানই দেয় না কিন্তু নিজেদের কৃতকর্মের কারণেই যদি কোন সময় তাদের দুর্ভাগ্য এসে যায় তাহলে ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকে। আল্লাহ‌ তাদেরকে যেসব নিয়ামত দান করেন তা সবই ভুলে যায় এবং যে অবস্থার মধ্যে সে পতিত হয়েছে তাতে তার নিজের দোষ-ত্রুটি কতটুকু তা বুঝার চেষ্টা করে না। এভাবে না স্বাচ্ছন্দ্য তাদের সংশোধনে কাজে আসে, না দুরবস্থা তাদেরকে শিক্ষা দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারে। বক্তব্যের ধারাবাহিকতার প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যায়, প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল পূর্বোক্ত বক্তব্যের শ্রোতাদের প্রতি একটি বিদ্রূপ। তবে তাদের সম্বোধন করে একথা বলা হয়নি যে, তোমাদের অবস্থা তো এই। বরং বলা হয়েছে, সাধারণত মানুষের মধ্যে এই দুর্বলতা দেখা যায় এবং এটাই তার নষ্টের মূল কারণ। এ থেকে ইসলামের প্রচার কৌশলের একটি দিক এই জানা যায় যে, শ্রোতার দুর্বলতার ওপর সরাসরি আঘাত না করা উচিত। সাধারণভাবে এসব দুর্বলতার উল্লেখ করা উচিত যাতে সে ক্ষিপ্ত না হয় এবং তার বিবেকবোধ যদি কিঞ্চিতও জীবিত থাকে তাহলে ঠাণ্ডা মাথায় নিজের ত্রুটি উপলব্ধি করার চেষ্টা করে।

Leave a Reply