*ঈমান ও ইসলামই হবে মর্যাদা লাভের একমাত্র উপায় :-

*ঈমান ও ইসলামই হবে মর্যাদা লাভের একমাত্র উপায় :-

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# মনে রাখতে হবে, কুরাইশ সরদাররা নবী করীম ﷺ কে মোকাবিলায় যা কিছু করছিল সবই ছিল তাদের নিজেদের ইজ্জত ও মর্যাদার খাতিরে। তাদের ধারণা ছিল, যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা গৃহীত হয়ে যায় তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব তামাম আরব মুল্লুকে আমাদের যে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত আছে তা মাটিতে মিশে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কুফরী করে তোমরা নিজেদের যে মর্যাদা তৈরি করে রেখেছো এ তো একটি মিথ্যা ও ঠুনকো মর্যাদা। মাটিতে মিশে যাওয়াই এর ভাগ্যের লিখন। আসল ও চিরস্থায়ী মর্যাদা, দুনিয়া থেকে নিয়ে আখেরাত পর্যন্ত যা কখনো হীনতা ও লাঞ্ছনার শিকার হতে পারে না, তা বেবলমাত্র আল্লাহর বন্দেগীর মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। তুমি যদি তাঁর হয়ে যাও, তাহলে তাঁকে পেয়ে যাবে এবং যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।

# এ হচ্ছে মর্যাদা লাভ করার আসল উপায়। আল্লাহর কাছে মিথ্যা, কলুষিত ও ক্ষতিকারক কথা কখনো উচ্চ মর্যাদা লাভ করে না। তাঁর কাছে একমাত্র এমন কথা উচ্চ মর্যাদা লাভ করে যা হয় সত্য, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, বাস্তব ভিত্তিক, যার মধ্যে সদিচ্ছা সহকারে একটি ন্যয়নিষ্ঠ আকিদা-বিশ্বাস ও একটি সঠিক চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। তারপর একটি পবিত্র কথাকে যে জিনিসটি উচ্চ মর্যাদার দিকে নিয়ে যায় সেটি হচ্ছে কথা অনুযায়ী কাজ। যেখানে কথা খুবই পবিত্র কিন্তু কাজ তার বিপরীত সেখানে কথার পবিত্রতা নিস্তেজ ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র মুখে কথার খই ফুটালে কোন কথা উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হয় না বরং এজন্য সৎকাজের শক্তিমত্তার প্রয়োজন হয়।

এখানে একথাও অনুধাবন করতে হবে যে, কুরআন মজীদ ভালো কথা ও ভালো কাজকে পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য বিষয় হিসেবে পেশ করে। কোন কাজ নিছক ভালো হতে পারে না যতক্ষন না তার পেছনে থাকে ভালো আকীদা-বিশ্বাস। আর কোন ভালো আকীদা-বিশ্বাস এমন অবস্থায় মোটেই নির্ভরযোগ্য হতে পারে না যতক্ষন না মানুষের কাজ তার প্রতি সমর্থন যোগায় এবং তার সত্যতা প্রমাণ করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে বলতে থাকে, আমি এক ও লা-শরীক আল্লাহকে মাবুদ বলে মানি কিন্তু কার্যত সে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করে, তাহলে এ কাজ তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে মদ হারাম বলতে থাকে এবং কার্যত মদ পান করে চলে, তাহলে শুধুমাত্র তার কথা মানুষের দৃষ্টিতেও গৃহীত হতে পারে না, আর আল্লাহর কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

# বাতিল ও ক্ষতিকর কথা নিয়ে এগিয়ে আসে তারপর শঠতা, প্রতারণা ও মনোমুদ্ধকর যুক্তির মাধ্যমে তাকে সামনের দিকে এগিয়ে দেবার চেষ্টা করে এবং তার মোকাবেলায় সত্য ও হক কথাকে ব্যর্থ করার জন্য সবচেয়ে খারাপ ব্যবস্থা আবলম্বন করতেও পিছপা হয় না।
# এখান থেকে আবার কথার মোড় সাধারণ মানুষের দিকে ঘুরে যাচ্ছে।

# মানুষের সৃষ্টি প্রথমে সরাসরি মাটি থেকে করা হয় তারপর তার বংশধারা চালান হয় তার বীর্য থেকে।

# যে ব্যক্তিই দুনিয়ায় জন্মলাভ করে তার সম্পর্কে প্রথমেই লিখে দেয়া হয় সে দুনিয়ায় কত বছর বাঁচবে। কেউ দীর্ঘায়ু হলে তা হয় আল্লাহর হুকুমে এবং স্বল্পায়ু হলেও হয় আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী। কতিপয় অজ্ঞ ও মূর্খ লোক এর জবাবে এ যুক্তি পেশ করে থাকে যে, পূর্বে নবজাত শিশুদের মৃত্যুহার ছিল বেশী এবং বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি এ মৃত্যুহার কমিয়ে দিয়েছে। পূর্বে লোকদের গড় আয়ু ছিল কম, বর্তমানে চিকিৎসা উপকরণ বৃদ্ধির ফলে আয়ূ দীর্ঘায়িত হতে শুরু হয়েছে। কিন্তু এ যুক্তি কুরআন মজীদের এ বর্ণনার প্রতিবাদে কেবলমাত্র তখনই পেশ করা যেতে পারতো যখন কোন উপায়ে আমরা জানতে পারতাম, যেমন উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ‌ অমুক ব্যক্তির আয়ু লিখেছিলেন দু’বছর এবং আমাদের চিকিৎসা উপকরণ তার মধ্যে একদিনের সময় বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এ ধরনের কোন জ্ঞান যদি কারো কাছে না থেকে থাকে, তাহলে সে কোন সঙ্গত ভিত্তিতে কুরআনের এ উক্তির প্রতিবাদ করতে পারে না। সংখ্যাতত্ব ও গণনার দিক দিয়ে শিশু মৃত্যুর হার এখন কমে গেছে অথবা আগের তুলনায় লোকেরা বেশী আয়ুর অধিকারী হচ্ছে, নিছক এই তথ্যের ভিত্তিতে একথা বলা যায় না যে, মানুষ এবার আল্লাহর ফায়সালা বদলে দেবার শক্তি অর্জন করেছে। আল্লাহ‌ বিভিন্ন যুগে জন্মলাভকারী মানুষের আয়ু বিভিন্নভাবে নির্ধারণ করেছেন এতে অযৌক্তিক কি আছে? এবং এটিও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ফায়সালা যে, অমুক যুগে মানুষকে অমুক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা দান করা হবে এবং অমুক যুগে মানুষকে জীবনী শক্তি বৃদ্ধির অমুক উপায় দান করা হবে।

# এত অসংখ্য সৃষ্টির ব্যাপারে এত বিস্তারিত জ্ঞান থাকা এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এত বিস্তারিত বিধান দেয়া ও ফায়সালা করা আল্লাহর জন্য মোটেই কোন কঠিন কাজ নয়।
# পানির একটি উৎস যা সমুদ্রগুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এবং পানির দ্বিতীয় উৎসটি গড়ে উঠেছে নদী, ঝরণা, হ্রদ ইত্যাদির সমন্বয়ে।
# জলজ প্রাণীর গোশত।
# মুক্তা, প্রবাল এবং কোন কোন নদী-সাগর থেকে হীরা ও সোনা।

# দিনের আলো ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকে এবং রাতের আঁধার বেড়ে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি তাকে ঢেকে ফেলে। এভাবে রাতের শেষ দিকে দিগন্তে হালকা আলোর রেখা জেগে ওঠে। তারপর আস্তে আস্তে তা অগ্রসর হতে হতে আলোকোজ্জ্বল দিনে পরিণত হয়।
# একটি নিয়ম ও বিধানের অধীন করে রেখেছেন।
# মূলে “কিতমীর” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিতমীর বলা হয় খেজুরের আঁটির গায়ে জড়ানো পাতলা ঝিল্লি বা আবরণকে। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, মুশরিকদের মাবুদ ও উপাস্যরা কোন তুচ্ছ ও নগন্য জিনিসেরও মালিক নয়। তাই শাব্দিক তরজমা বাদ দিয়ে আমি এখানে ভাব-তরজমা করেছি।
# এর অর্থ এ নয় যে, তারা তোমাদের দোয়ার জবাবে তোমাদের দোয়া কবুল করা হয়েছে বা হয়নি একথা চিৎকার করে বলতে পারে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তারা তোমাদের আবেদনের ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না। কোন ব্যক্তি নিজের আবেদন যদি এমন কোন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেয় যে শাসনকর্তা নয়, তাহলে তার আবেদন ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ তা যার কাছে পাঠানো হয়েছে তার হাতে আদতে কোন ক্ষমতাই নেই। প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ করার কোন ইখতিয়ার তার নেই তবে এই একই আবেদন আবার যদি যথার্থ শাসনকর্তার কাছে পাঠানো হয়, তাহলে এর ভিত্তিতে নিশ্চিতভাবে কোন না কোন পদক্ষেপ গৃহীত হবেই। তা গৃহীতও হতে পারে আবার প্রত্যাখ্যাতও।
# তারা পরিষ্কার বলে দেবে, আমরা কখনো এদেরকে বলিনি, আমরা আল্লাহর শরীক এবং তোমরা আমাদের ইবাদাত করো। বরং আমরা এও জানতাম না যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীনের সাথে শরীক করছে এবং আমাদের কাছে প্রার্থনা করছে। এদের কোন প্রার্থনা আমাদের কাছে আসেনি এবং এদের কোন নজরানা ও উৎসর্গ আমাদের হস্তগত হয়নি।
# সর্বজ্ঞ বলে আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অন্য কোন ব্যক্তি বড় জোর বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি প্রমাণ পেশ করে শিরক খণ্ডন ও মুশরিকদের মাবুদদের শক্তিহীনতা বর্ণনা করবে। কিন্তু আমি সরাসরি প্রকৃত অবস্থা জানি। আমি নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমাদের জানাচ্ছি, লোকেরা যাদেরকেই আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বের মধ্যে স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন করে রেখেছে তারা সবাই ক্ষমতাহীন। তাদের কাছে এমন কোন শক্তি নেই যার মাধ্যমে তারা কারো কোন কাজ সফল বা ব্যর্থ করে দিতে পারে। আমি সরাসরি জানি, কিয়ামতের দিন মুশরিকদের এসব মাবুদরা নিজেরাই তাদের শিরকে প্রতিবাদ করবে।
# আল্লাহ‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী, তোমরা তাঁকে আল্লাহ‌ বলে মেনে না নিলে তাঁর সার্বভৌম ও একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলবে না এবং তোমরা তাঁর ইবাদাত ও বন্দেগী না করলে তাঁর কোন ক্ষতি হয়ে যাবে, এ ভুল ধারণা পোষণ করো না। আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি যদি তোমাদের জীবিত না রাখেন এবং যেসব উপকরণের সহায়তায় তোমরা দুনিয়ায় বেঁচে থাকো এবং কাজ করতে পারো সেগুলো তোমাদের জন্য সরবরাহ না করেন, তাহলে তোমাদের জীবন এক মুহূর্তের জন্যও টিকে থাকতে পারে না। কাজেই তাঁর আনুগত্য ও ইবাদাতের পথ অবলম্বন করার জন্য তোমাদেরকে যে তাগিদ দেয়া হয় তা এজন্য নয় যে, আল্লাহ‌র এর প্রয়োজন আছে বরং এজন্য যে, এরই ওপর নির্ভর করে তোমাদের দুনিয়ার ও আখেরাতের সাফল্য। এমনটি না করলে তোমরা নিজেদেরই সবকিছুর সর্বনাশ করে ফেলবে, আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
# মূলে বলা হয়েছে “গনী” ও “হামীদ” মানে হচ্ছে, তিনি সবকিছুর মালিক, প্রত্যেকটি জিনিসের অভাবমুক্ত ও অমুখাপেক্ষী। তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন। আর “হামীদ” মানে হচ্ছে, তিনি নিজে নিজেই প্রশংসিত, কেউ তাঁর প্রশংসা করুক বা না করুক প্রশংসা লাভ করার অধিকার একমাত্র তাঁরই আছে। এ দু’টি গুণকে একসাথে বর্ণনা করার কারণ হচ্ছে এই যে, নিছক “গনী” তো এমন ব্যক্তিও হতে পারে যে নিজের ধনাঢ্যতা দ্বারা কারো সাহায্য বা উপকার করে না। এ অবস্থায় সে গনী অবশ্যই হবে কিন্তু হামীদ বা প্রশংসিত হবে না। ‘হামীদ’ সে হতে পারে এমন অবস্থায় যখন সে কারো সাহায্যে নিজে লাভবান হবে না কিন্তু নিজের ধন-সম্পদ থেকে অন্যদেরকে সব ধরনের সহায়তা দান করবে। আল্লাহ‌ যেহেতু এ দু’টি গুণের পূর্ণ আধার তাই বলা হয়েছে, তিনি নিছক ‘গনী’ নন বরং এমন ‘গনী’ যিনি সব রকমের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা লাভের অধিকারী। কারণ তিনি তোমাদের এবং বিশ্ব-জাহানের যাবতীয় জড় ও জীবের প্রয়োজন পূর্ণ করেন।
# তোমরা নিজেদের শক্তিতে এ পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছো না। তোমাদেরকে এখান থেকে বিদায় দেবার এবং তার জায়গায় অন্য কোন জাতিকে এনে বসাবার জন্য তাঁর একটি ইশারাই যথেষ্ট। কাজেই নিজের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং এমন নীতি অবলম্বন করো না যার ফলে শেষ পর্যন্ত জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন কারো ধ্বংসের ফায়সালা এসে যায় তখন সমগ্র বিশ্ব-জাহানে এমন কোন শক্তি নেই যে তাঁর হাত টেনে ধরতে পারে এবং ফায়সালা কার্যকর হবার পথ রোধ করতে সক্ষম হয়।
# “বোঝা” মানে কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের ওপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব আরোপিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচাবার জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে– এরও কোন সম্ভাবনা নেই। একথা এখানে বলার কারণ হচ্ছে এই যে, মক্কা মু’আযযমায় যারা ইসলাম গ্রহণ করছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয় স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলছিল, আমাদের কথায় তোমরা এই নতুন ধর্ম ত্যাগ করো এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যাও, এজন্য পাপ-পুণ্যের বোঝা আমরা বহন করব।
# ওপরের বাক্যে আল্লাহর ন্যায়নীতির বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি একজনের পাপে অন্যকে পাকড়াও করবেন না। বরং প্রত্যেককে তার নিজের পাপের জন্য দায়ী করবেন। তাই এখানে এ বাক্যে বলা হয়েছে, আজ যারা বলছে, তোমরা আমাদের দায়িত্বে কুফরী ও গোনাহের কাজ করে যাও কিয়ামতের দিন তোমাদের গোনাহর বোঝা আমরা নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নেব তারা আসলে নিছক একটি মিথ্যা ভরসা দিচ্ছে। যখন কিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখে নেবে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচাবার ফিকিরে লেগে যাবে। ভাই ভাইয়ের থেকে এবং পিতা পুত্রের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।

# অন্য কথায় হঠকারী ও গোঁয়ারদের ওপর তোমার সতর্কবাণী কার্যকর হতে পারে না। তুমি বুঝালে এমন সব লোক সত্য সঠিক পথে আসতে পারে যাদের দিলে আল্লাহর ভয় আছে এবং যারা নিজের প্রকৃত মালিকের সামনে মাথা নোয়াতে প্রস্তুত।
# উপমাগুলোতে মু’মিন ও কাফেরের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। এক ব্যক্তি প্রকৃত সত্য থেকে চোখ বন্ধ করে আছে। সে একবারও দেখছে না বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থা এবং এমনকি তার নিজের অস্তিত্ব কোন্ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করছে। অন্যদিকে আর এক ব্যক্তির চোখ খোলা আছে। সে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে, তার ভেতরের ও বাইরের প্রত্যেকটি জিনিস আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর সামনে মানুষের জবাবাদিহির ওপর সাক্ষ্য দিচ্ছে। একদিকে এক ব্যক্তি জাহেলী কল্পনা ও ভাববাদ এবং ধারণা, আন্দাজ-অনুমানের অন্ধকারে হাতড়ে মরছে এবং নবীর জ্বালানো প্রদীপের কাছাকাছি ঘেসতেও রাজি নয়। অন্যদিকে অপর ব্যক্তির চোখ একদম খোলা। নবীর জ্বালানো আলোর সামনে আসতেই তার কাছে একথা একেবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মুশরিক, কাফের ও নাস্তিক্যবাদীরা যেসব পথে চলছে সেগুলো ধ্বংসের দিকে চলে গেছে এবং সাফল্য ও মুক্তির পথ একমাত্র সেটিই যেটি আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূল দেখিয়েছন। এখন দুনিয়ায় এদের দু’জনের নীতি এক হবে এবং দু’জনে এক সাথে একই পথে চলতে পারবে, এটা কেমন করে সম্ভব? দু’জনের পরিণতি এক হবে, দু’জনই মরে খতম হয়ে যাবে, একজন তার কুপথগামিতার শাস্তি পাবে না এবং অন্যজন সৎপথে চলার জন্য কোন পুরস্কার পাবে না, এটাই বা কেমন করে সম্ভব? “শীতল ছায়া ও রোদের তাপ সমান নয়” —এর মধ্যে এ পরিণতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন আল্লাহর রহমতের ছায়া আশ্রয় লাভকারী এবং জাহান্নামের উত্তাপে ঝলসানো ব্যক্তি। তোমরা কোন্ উদ্ভট চিন্তায় মেতে আছো, এরা দু’জনা কি একই পরিণাম ভোগ করবে? শেষে মু’মিনকে জীবিতের সাথে এবং হঠকারী কাফেরদেরকে মৃতদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মু’মিন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার মধ্যে অনুভূতি, উপলব্ধি, বিবেচনা, জ্ঞান, বুঝ ও চেতনা আছে এবং তার বিবেক তাকে ভালো ও মন্দের মধ্যকার পার্থক্য থেকে সবসময় সজাগ করছে। এর বিপরীত যে ব্যক্তি কুফরীর অন্ধতায় পুরোপুরি ডুবে গেছে তার অবস্থা এমন অন্ধের চেয়েও খারাপ যে অন্ধকারে পথ হারিয়েছে। তার অবস্থা এমন মৃতের মতো যার মধ্যে কোন অনুভূতিই নেই।

# আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপার তো ভিন্ন। তিনি চাইলে পাথরকেও শ্রবণশক্তি দান করেন। কিন্তু যাদের বক্ষদেশে বিবেকের কবর রচিত হয়েছে তাদের হৃদয়ে নিজের কথা বদ্ধমূল করে দিতে পারা এবং যারা কথা শুনতেই চায় না তাদের বধির কর্ণকূহরে সত্যের ধ্বনি পৌঁছিয়ে দেবার সাধ্য রসূলের নেই। তিনি তো কেবলমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারেন যারা যুক্তিসঙ্গত কথা শুনতে চায়।
# লোকদেরকে সতর্ক করে দেবার চেয়ে বেশী আর কোন দায়িত্ব তোমার নেই। এরপর যদি কেউ সচেতন না হয় এবং নিজের গোমরাহীর মধ্যে ছুটে চলতে থাকে তাহলে এর কোন দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর নেই। অন্ধদের দেখাবার এবং বধিরদের শুনাবার দায়িত্ব তোমার ওপর সোপর্দ করা হয়নি।
# একথাটি কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুনিয়ায় এমন কোন জাতি ও সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যাকে সত্য-সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য আল্লাহ‌ কোন নবী পাঠাননি। সূরা রা’আদে বলা হয়েছেঃ

وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ (ايت: 7) সূরা হিজরে বলা হয়েছেঃ وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ (ايت:10) সূরা নাহলে বলা হয়েছেঃ وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا (ايت:36)

সূরা শূ’আরায় বলা হয়েছেঃ وَمَا أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا لَهَا مُنْذِرُونَ (ايت:208)

কিন্তু এ প্রসঙ্গে দু’টি কথা অনুধাবন করতে হবে। তাহলে আর ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না। প্রথমত হচ্ছে, একজন নবীর প্রচারণা যতদূর পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে ততদূর পর্যন্ত তিনিই যথেষ্ট। প্রত্যেকটি জনপদে ও প্রত্যেকটি জাতির মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে নবী পাঠানো মোটেই জরুরী নয়। দ্বিতীয়ত, একজন নবীর দাওয়াত ও হিদায়াতের প্রভাব এবং তাঁর নেতৃত্বের পদাংক যতদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত অন্য কোন নতুন নবীর প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক বংশ ও প্রত্যেক প্রজন্মের (Generation) জন্য আলাদা নবী পাঠানো অপরিহার্য নয়।
# এমন প্রমাণপত্র যা পরিষ্কারভাবে একথার সাক্ষ্য দিচ্ছিল যে, তাঁরা আল্লাহর রসূল।

# সহীফা ও কিতাবের মধ্যে সম্ভবত একটি বড় পার্থক্য থেকে থাকবে। সেটি হচ্ছে এই যে, সহীফা প্রধানত ছিল উপদেশাবলী ও নৈতিক পথনিদের্শনার সমষ্টি। অন্যদিকে কিতাবে বিধৃত থাকতো একটি পূর্ণাংগ শরীয়াত ব্যবস্থা।

Leave a Reply