(টপিক#১০৪৬) [দৃঢ়প্রত্যয় ও ধৈর্যশীলদেরকে স্বজাতির নেতৃত্বে অভিষিক্ত করা:-] www.motaher21.net সূরা:- ৩২:আস-সাজদাহ পারা:২১ ২৩-৩০ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৪৬)
[দৃঢ়প্রত্যয় ও ধৈর্যশীলদেরকে স্বজাতির নেতৃত্বে অভিষিক্ত করা:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩২:আস-সাজদাহ
পারা:২১
২৩-৩০ নং আয়াত:-
৩২:২৩
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ فَلَا تَکُنۡ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّنۡ لِّقَآئِہٖ وَ جَعَلۡنٰہُ ہُدًی لِّبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ﴿ۚ۲۳﴾
আমি তো মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম, অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ বিষয়ে সন্দেহ করো না। আমি একে বনী ইস্রাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম।
৩২:২৪
وَ جَعَلۡنَا مِنۡہُمۡ اَئِمَّۃً یَّہۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُوۡا ۟ؕ وَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿۲۴﴾
আর যখন তারা সবর করে এবং আমার আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এমন নেতা সৃষ্টি করে দেই যারা আমার হুকুম অনুসারে পথপ্রদর্শন করতো।
৩২:২৫
اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ یَفۡصِلُ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۲۵﴾
ওরা নিজেদের মধ্যে যে বিষয়ে মতবিরোধ করত, অবশ্যই তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন তার ফায়সালা করে দেবেন।
৩২:২৬
اَوَ لَمۡ یَہۡدِ لَہُمۡ کَمۡ اَہۡلَکۡنَا مِنۡ قَبۡلِہِمۡ مِّنَ الۡقُرُوۡنِ یَمۡشُوۡنَ فِیۡ مَسٰکِنِہِمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ ؕ اَفَلَا یَسۡمَعُوۡنَ ﴿۲۶﴾
এটাও কি তাদেরকে হেদায়াত করলো না যে, আমরা তাদের পূর্বে ধ্বংস করেছি বহু প্রজন্মকে —যাদের বাসভূমিতে তারা বিচরণ করে থাকে? নিশ্চয় এতে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি তারা শুনবে না?
৩২:২৭
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّا نَسُوۡقُ الۡمَآءَ اِلَی الۡاَرۡضِ الۡجُرُزِ فَنُخۡرِجُ بِہٖ زَرۡعًا تَاۡکُلُ مِنۡہُ اَنۡعَامُہُمۡ وَ اَنۡفُسُہُمۡ ؕ اَفَلَا یُبۡصِرُوۡنَ ﴿ؓ۲۷﴾
আর এরা কি কখনো এ দৃশ্য দেখেনি যে, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানির ধারা প্রবাহিত করি এবং তারপর এমন জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করি যেখান থেকে তাদের পশুরাও খাদ্য লাভ করে এবং তারা নিজেরাও খায়? তবুও কি এরা কিছুই দেখে না?
৩২:২৮
وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡفَتۡحُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۲۸﴾
ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, এ বিচার-ফায়সালা কবে হবে?’
৩২:২৯
قُلۡ یَوۡمَ الۡفَتۡحِ لَا یَنۡفَعُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِیۡمَانُہُمۡ وَ لَا ہُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ ﴿۲۹﴾
এদেরকে বলে দাও, “যারা কুফরী করেছে ফায়সালার দিন ঈমান আনা তাদের জন্য মোটেই লাভজনক হবে না এবং এরপর এদের কোন অবকাশ দেয়া হবে না।”
৩২:৩০
فَاَعۡرِضۡ عَنۡہُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّہُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ ﴿٪۳۰﴾
অতএব আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করুন এবং অপেক্ষা করুন, তারাও তো অপেক্ষামান।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

যে কর্মফল দিবস সম্পর্কে কাফেররা সন্দেহ পােষণ করতে, সেই দিন এই দুই গােষ্ঠীর মধ্যে কাদের কী দশা হবে, তা এখনে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর সূরার পরবর্তী অধ্যায়ের সূচনা করা হয়েছে হযরত মূসা, তার জাতি ও তার রেসালাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণের মধ্য দিয়ে। এটা এতাে সংক্ষিপ্ত যে কোরআনকে যেমন সমগ্র মুসলিম উম্মার জন্য পথনির্দেশিকা বানানো হয়েছে, তেমনি হযরত মূসার কিতাবকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশিকা বানানাের কথা, কুরআন ও তাওরাতের একই মূলনীতি ও একই চিরন্তন আকীদার ব্যাপারে একমত হওয়ার কথা এবং মূসার জাতির মধ্য থেকে দৃঢ়প্রত্যয় ও ধৈর্যশীলদেরকে স্বজাতির নেতৃত্বে অভিষিক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাতে তৎকালীন মুসলমানদের ধৈর্য ও ঈমানী দৃঢ়তার প্রেরণায় উজ্জীবিত করা যায় এবং পৃথিবীতে নেতৃত্ব ও শাসন ক্ষমতা লাভের প্রয়ােজনীয় গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি'(আয়াত ২৩-২৫) অতএব তার মিলিত হওয়া সম্পর্কে তুমি সন্দেহ পােষণ করাে না এই আনুষংগিক বাক্যটার অর্থ হলাে, মােহাম্মদ(স.)-এর সেই শাশ্বত সত্যের ওপর অবিচল থাকা উচিত, যার ওপর তিনি ও মূসা(আ.) এবং তাদের উভয়ের কিতাব দুটোও একমত হয়েছে। আমার মতে, এই ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য। অন্য একদল তাফসীরকার বলেছেন যে, এটা পবিত্র মেরাজের রাতে হযরত মূসার সাথে রসূলুল্লাহ(স.)-এর সাক্ষাতের দিকে ইংগিত। কেননা চিরস্থায়ী সত্য ও সম্মিলিত আকীদা বিশ্বাসই উল্লেখের দাবী রাখে। কারণ এটাই সেই মূল বিষয়, যার জন্য রসূল(স.) ক্রমাগত উপেক্ষা ও প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হচ্ছিলেন, যার জন্য তাকে দৃঢ়তা অবলম্বনের উপদেশ দেয়াটা প্রাসংগিক ছিলাে, কেননা এ জন্য মুসলমানরাও কঠিন উৎপীড়ন ভােগ করছিলাে। পরবর্তী আয়াতের সাথেও এই ব্যাখ্যা সংগতিপূর্ণ, তাদের মধ্য থেকে আমার বিধানের দিকে পথ প্রদর্শনকারী কিছু লােককে আমি তখনই নেতা বানিয়েছি, ‘যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছে ও আমার আয়াতগুলােতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছে’ এভাবে তৎকালীন মক্কার মুষ্টিমেয়সংখ্যক মুসলমানদের বনী ইসরাঈলের নেতৃত্বের জন্য বাছাইকৃত ব্যক্তিবর্গের ন্যায় ধৈর্য ধারণে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে এবং তাদেরই মতাে দৃঢ়চেতা হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যাতে করে তাদের মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তি মুসলিম জাতির নেতা ও পথ প্ৰদৰ্শকরূপে তৈরী হতে পারে, যেমন তারা হয়েছিল বনী ইসরাঈলের নেতা। এ আয়াতের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের দুটো অপরিহার্য গুণ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এবং তা হচ্ছে ধৈর্য ও দৃঢ় প্রত্যয়।

*ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা : পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে যে, পরবর্তীকালে বনী ইসরাঈল যে বিভেদের শিকার হয়েছিলাে, সে ব্যাপারটা আল্লাহ তায়ালার হাতেই ন্যস্ত রয়েছে, ‘তােমার প্রতিপালকই কেয়ামতের দিন তাদের মতভেদের মীমাংসা করে দেবেন। হযরত মুসা ও বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়ার পর অতীতের ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাতিগুলাের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে পরবর্তী আয়াতে, ‘তাদের পূর্বে কত জাতিকে যে আমি ধ্বংস করেছি, এটা কি তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করে না?'(আয়াত ২৬) পূর্ববর্তী জাতিগুলাের ধ্বংসের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালার বিধান প্রত্যাখ্যানকারীদের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি কী। আল্লাহর এই নীতি অমোঘ, অলংঘনীয় এবং কাউকে তা খাতির করে না। মানবজাতি তার উত্থান ও পতনে, উন্নতিতে ও অবনতিতে এবং সবলতায় ও দুর্বলতায় কিছু শাশ্বত নিয়ম কানুনের অধীন। পবিত্র কোরআন এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছে যে, এসব নিয়ম-কানুন ও আল্লাহ তায়ালার উল্লেখিত নীতিমালা চিরস্থায়ী। সে অতীতের জাতিগুলাের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস থেকে পরবর্তী প্রজন্মগুলােকে শিক্ষা দেয়, আল্লাহ তায়ালার পাকড়াও থেকে তাদের আত্মরক্ষার তাগিদ দেয়। বিবেক ও মনকে জাগ্রত ও সচকিত করে এবং চেতনাকে শানিত ও সংবেদনশীল করে। এসব কোরআন আল্লাহ তায়ালার শাশ্বত নীতিমালা ও প্রাকৃতিক নিয়মের বাস্তব উদাহরণ হিসাবেও তুলে ধরে এবং এ দ্বারা মানুষের অনুধাবন ক্ষমতা ও মূল্যায়নের মানদন্ডকেও উন্নত ও শানিত করে। ফলে স্থান ও কাল যাই হােক না কেন, কোন জাতি বা প্রজন্ম এ শিক্ষা ও প্রেরণাকে অবহেলা করতে পারে না এবং মানব জীবনে আবহমানকাল ধরে সক্রিয় এই বিধিকে ভুলে যেতে পারে না। অবশ্য এ কথা সত্য যে, অনেকেই এ শিক্ষা ভুলে গিয়ে একই অবধারিত পরিণাম ভােগ করে থাকে। সচেতন মন ও সজাগ অনুভূতিসম্পন্ন লােকদের জন্য প্রাচীন ধ্বংসাবশেষে যথেষ্ট ভীতিপ্রদ ও চিন্তার খােরাক জোগানাের সংকেত রয়েছে। রয়েছে মেরুমজ্জায় শিহরণ, বিবেকে ঝাঁকুনি ও অন্তরাত্মায় কম্পন সৃষ্টি করার মতাে শিক্ষার উপকরণ। যে আরব জাতিকে সর্ব প্রথম এ আয়াতে সম্বােধন করা হয়েছিল, তারা আ’দ, সামুদের আবাসভূমির পাশ দিয়ে যাতায়াত করতাে এবং হযরত লুত জাতির বিধ্বস্ত আবাসভূমির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেতাে। কোরআন তাদেরকে দিয়েছে যে, এই সব জাতির ধ্বংসাবশেষ এদের তাদের জনপদ এদের চোখের সামনে উপস্থিত থাকা এবং সেগুলাের পাশ দিয়ে তারা প্রতিনিয়ত চলাচল করা সত্তেও তাদের অন্তরে কোনাে চেতনা সঞ্চারিত হয় না, তাদের অনুভূতিতে কোনাে ধাক্কা লাগে না, তাদের স্নায়ূতে কোন শিহরণ অনুভূত হয় না, তাদের বিবেকে আল্লাহর ভীতি জাগে না, একই ধরনের পরিণতি থেকে আত্মরক্ষা করার প্রেরণা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় না, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাদেরকে শাস্তিযােগ্য ও সংহারযােগ্য প্রতিপন্নকারী কোনাে ঘােষণা আসার আগে তারা সাবধান হয় না এবং সৎ পথ অবলম্বন করে না। এই ধিক্কারবাণীই প্রতিফলিত হয়েছে আয়াতের শেষাংশে। ‘এতে রয়েছে অনেক নিদর্শন। তারা কি শুনতে পায় না?’ অর্থাৎ সেই সব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির কাহিনী কি তারা শুনে না, অথবা সেই ধ্বংসযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আগে তারা কি এই সতর্কবাণী শুনবে না?

*হৃদয়ে নাড়া দেয়ার মতাে দুটি বিষয় : অতীতের জাতিগুলাের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিবৃত্ত ও তার ফলে বিবেক ও মনে সঞ্চারিত ভীতি ও কাঁপুনির বর্ণনা দেয়ার পর পরবর্তী আয়াতে নির্জীব ভূমিতে জীবনী শক্তির উত্থানের প্রসংগ আলােচিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে জীবন্ত জনপদগুলোর মৃত্যু ও ধ্বংসের উল্লেখ করার পর এখন তােলা হচ্ছে ঠিক তার বিপরীত মৃত যমীনে প্রাণ সঞ্চারের প্রসংগ। ‘তারা কি দেখে না যে আমি নির্জলা ভূমিতে পানি নিয়ে আসি এবং তা দিয়ে শস্য উৎপন্ন করি?…'(আয়াত ২৭) তারা প্রতিনিয়তই দেখতে পায় যে, মহান আল্লাহ এসব অনুর্বর যমীনে উর্বরা শক্তি। সঞ্চারকারী পানি বর্ষণ করে সহসাই তাকে সুজলা সুফলা প্রাণােচ্ছল শস্যক্ষেত্রে পরিণত করেন। সেই শস্য থেকে তাদের ও তাদের পালিত পশুদের খাদ্য উৎপন্ন হয়। অনুর্বর জমিতে পানি বর্ষিত হওয়ায় তার শস্য শামল ক্ষেতে রূপান্তরিত হওয়ার দৃশ্য মানব হৃদয়ের বন্ধ জানালাগুলাে খুলে দেয় এবং তার ফলে তার কাছে জীবনের পদধ্বনি অনুভূত হয়। সেই সাথে অনুভূত হয় বিশ্ব প্রকৃতিতে এই জীবনী শক্তির সঞ্চারকারী মহান স্রষ্টার সীমাহীন ক্ষমতা ও তার প্রতি ভালাবাসা, অন্তরংগতা ও মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। এভাবে কোরআন মানুষের মানসপটে ধ্বংস ও পতনের দৃশ্য অংকন করে, যাতে উভয় ক্ষেত্রে তার চেতনা উজ্জীবিত করতে পারে, তাকে তার সরলতা ও স্থবিরতা থেকে জাগিয়ে তুলতে ও সচল করতে পারে। প্রকৃতির দৃশ্যাবলী ও জীবনের দুর্ভেদ্য রহস্যসমূহের মাঝে ও তার মাঝে বিদ্যমান আড়ালগুলাে অপসারণ করতে পারে এবং তাকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের যােগ্য বানাতে পারে। সবার শেষে সূরার শেষ অংশে কাফেরদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত আযাবকে তাড়াতাড়ি সংঘটিত করার আবদার ও তাদেরকে প্রদত্ত হুঁশিয়ারী ও হুমকির সত্যতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর জবাবে তাদেরকে পাল্টা হুমকি দিয়ে সাবধান করা হয়েছে যে, তারা যে আযাবের বায়না ধরেছে, তা যে কোন দিন এসে যেতে পারে, আর যেদিন তা আসবে, সেদিন কিন্তু তারা ঈমান আনলেও কোন লাভ হবে না এবং আত্মশুদ্ধির কোন অবকাশ তারা পাবে না। অতপর রসূল(সঃ)-কে তাদের নিয়ে মাথা না ঘামানাের এবং তাদেরকে তাদের অবধারিত পরিণতির হাতে সঁপে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে, ‘তারা বলে যে, এই ফায়সালা কখন আসবে…?'(আয়াত ২৮-৩০) আয়াতে উল্লেখিত ‘আল-ফাত’ শব্দটার অর্থ হলাে, দুই পক্ষের বিরােধের মীমাংসা করা এবং সেই হুমকির বাস্তবায়ন, যার সম্পর্কে তারা ভাবতাে যে, ওটা তাড়াতাড়ি আসছে না। এ ধরনের ধারণা জন্মানাের কারণ, আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তাঁর হুমকিকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করার প্রকৃত রহস্য তারা জানে না। তাদের তাড়াহুড়ােতে এই সময়ের আগপাছ যেমন হবে না, তেমনি তা যখন এসে পড়বে তখন তা ঠেকানাের ও তা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনাে ক্ষমতাও তাদের থাকবে না। ‘বলো, মীমাংসার দিন কাফেররা ঈমান আনলেও তাদের কোন লাভ হবে না এবং তাদেরকে কোনাে অবকাশও দেয়া হবে না।’ এই মীমাংসার দিনটা দুনিয়াতেও সংঘটিত হতে পারে। তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পাকড়াও করতে পারেন। তখন তাদেরকে আর অবকাশও দেয়া হবে না এবং এবং ঈমান আনলেও তারা তা থেকে উদ্ধার পাবে না। আর এই দিনটা আখেরাতেও আসতে পারে। তখন তারা দুনিয়ায় ফেরত পাঠানাের আবদার জানাবে, কিন্তু পাঠানাে হবে না। হৃদয়ে চূড়ান্ত হতাশা ও মেরুমজ্জায় প্রচন্ড কাঁপুনি সৃষ্টিকারী এই জবাবের পর সূরার শেষ উক্তি হলাে, অতএব তাদেরকে এড়িয়ে যাও এবং অপেক্ষা করো, তারাও অপেক্ষমান। এ উক্তির ভেতরে অপেক্ষার ফল সম্পর্কে সূক্ষ্ম হুমকি দেয়া হয়েছে। রসূল(স.) কর্তৃক তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়া ও তাদের অনিবার্য পরিণতির হাতে সােপর্দ করার পরও তারা এই ফল থেকে রেহাই পাবে না। একাধিক অধ্যায় বা পর্বে প্রােথিত, বহু প্রেরণাদায়ক বক্তব্যসম্বলিত, বহু দৃশ্যপট সংযােজিত এবং সর্বদিক দিয়ে মানব মনের ওপর চাপ ও প্রভাব সৃষ্টিকারী বহু মূল্যবান বাণী বিধৃত এ সূরা এখানে এই গভীর আবেদনময় বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হচ্ছে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# আপাতত দৃষ্টিতে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু আসলে বক্তব্যের লক্ষ হচ্ছে তারা, যারা নবী (সা.) এর রিসালাত এবং তার প্রতি আল্লাহর কিতাব নাযিল হবার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। সূরার শুরুতে ২ ও ৩ আয়াতে যে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়েছে এখান থেকে সেদিকেই বক্তব্যের মোড় ফিরে যাচ্ছে। মক্কার কাফেররা বলছিল, মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব আসেনি, তিনি নিজেই সেটি রচনা করেছেন এবং এখন দাবী করছেন এটি আল্লাহ‌ নাযিল করেছেন। এর একটি জবাব প্রথম দিকের আয়াতে দেয়া হয়েছিল, এখন দ্বিতীয় জবাব দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যে প্রথম কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হে নবী! এই মূর্খ লোকেরা তোমার প্রতি আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়া অসম্ভব মনে করছে এবং তারা চাচ্ছে প্রতি দু’জনে একজন এটি অস্বীকার না করলেও অন্তত যেন এ ব্যাপারে সন্দেহেই লিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু এক বান্দার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাযিল হওয়াতো মানুষের ইতিহাসে কোন নতুন ঘটনা নয়। এর আগে বহু নবীর প্রতি কিতাব নাযিল হয়েছিল, এগুলোর মধ্যে মূসা (আ) কে প্রদত্ত কিতাবটি ছিল সবচেয়ে খ্যাতিমান। কাজেই একই ধরনের আর একটি জিনিস আজ তোমাদের দেয়া হয়েছে। তাহলে অযথা এর মধ্যে সন্দেহ করার মতো এমন নতুন কি তোমরা দেখলে?
# সে কিতাবটিকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশ লাভের মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছিল এবং এ কিতাবটিকে ঠিক তেমনি তোমাদের পথনির্দেশ লাভের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগেই তিন আয়াতে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। এ উক্তির পূর্ণ তাৎপর্য এর ঐতিহাসিক পটভূমি দৃষ্টিসম্মুখে রাখার পরই অনুধাবণ করা যেতে পারে। একথা ইতিহাস থেকে প্রমাণিত এবং মক্কার কাফেরদের কাছেও একথা অজানা ছিল না যে, বনী ইসরাঈল কয়েকশো বছর থেকে মিসরে চরম লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত জীবন যাপন করে আসছিল। এ অবস্থায় আল্লাহ‌ তাদের মধ্যে মূসার (আ) জন্ম দেন। তার মাধ্যমে এ জাতিকে দাসত্বমুক্ত করেন। তারপর তাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেন এবং তার বদৌলতে সেই অনুন্নত ও নিষ্পেষিত জাতি পথের দিশা লাভ করে দুনিয়ার বুকে একটি খ্যাতিমান জাতিতে পরিণত হয়। এ ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে আরববাসীদেরকে বলা হচ্ছে, যেভাবে বনী ইসরাঈলকে পথের দিশা দান করার জন্য সেই কিতাব পাঠানো হয়েছিল ঠিক তোমাদেরকে পথের দিশা দান করার জন্য এ কিতাব পাঠানো হয়েছে।
# এ কিতাব বনী ইসরাঈলকে যে শ্রেষ্ঠ জাতিসত্তায় পরিণত করে এবং তাদেরকে উন্নতির যে উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয় তা নিছক তাদের মধ্যে কিতাব এসে যাওয়ার ফল ছিল না। এ কিতাব কোন তাবীজ বা মাদুলী ধরনের কিছু ছিল না যে, এ জাতির গলায় ঝুলিয়ে দেবার সাথে সাথেই তারা উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে থাকে। বরং আল্লাহর আয়াতের প্রতি তারা যে দৃঢ় প্রত্যয় স্থাপন করে এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলার ব্যাপারে যে সবর ও অবিচল নিষ্ঠা প্রদর্শন করে, এ সমস্ত অলৌকিকতা ছিল তারই ফল। স্বয়ং বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে তারাই নেতৃত্ব লাভ করে যারা তাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাবের প্রতি প্রকৃত বিশ্বস্ত ছিল এবং যারা বৈষয়িক স্বার্থোদ্ধার ও স্বাদ আস্বাদনের সীমা ছাড়িয়ে যেত না। সত্যপ্রিয়তার খাতিরে তারা যখন দৃঢ়ভাবে প্রত্যেকটি বিপদের মোকাবিলা করে, প্রত্যেকটি ক্ষতি ও কষ্ট বরদাশত করে এবং নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা থেকে নিয়ে বহিরাগত দ্বীনের শত্রুদের পর্যন্ত প্রত্যেকের বিরূদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয় তখনই তারা দুনিয়ায় নেতৃত্বের আসনে বসে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আরবের কাফেরদেরকে এ মর্মে সতর্ক করা যে, আল্লাহর কিতাবের অবতরণ যেমন বনী ইসরাঈলের ভাগ্যের ফায়সালা করেছিল তেমনিভাবে এ কিতাবের অবতরণও আজ তোমাদের ভাগ্যের ফায়সালা করে দেবে। এখন তারাই নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করবে যারা একে মেনে নিয়ে ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে সত্যের অনুসরণ করে চলবে। যারা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের ভাগ্য বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
# এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে বনী ইসরাঈলের সর্বব্যাপী কোন্দল ও দলাদলির প্রতি। এসব কোন্দলে তারা লিপ্ত হয়েছিল ঈমান ও প্রত্যয়ের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবার, নিজেদের সত্যপন্থী নেতাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করার ও বৈষয়িক স্বার্থপূজারী হয়ে যাবার পর। এ অবস্থার একটি ফল তো সুস্পষ্ট। বনী ইসরাঈল কোন্ ধরনের লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হয়েছিল, তা সারা দুনিয়া দেখছে। দ্বিতীয় ফলটি এখন দুনিয়াবাসীরা জানে না এবং তা কিয়ামতের দিন প্রকাশিত হবে।
# যে জাতির মধ্যেই নবী এসেছে তার ভাগ্যের ফয়সালা সেই নবীর ব্যাপারে সে যে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেছে তার ভিত্তিতেই হয়ে গেছে। রসূলকে প্রত্যাখ্যান করার পর আর কোন জাতি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। তাদের মধ্যে থেকে যারা ঈমান এনেছে একমাত্র তারাই টিকে গেছে। প্রত্যাখ্যান কারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি লাভ করে চিরকালের জন্য শিক্ষণীয় বস্তুতে পরিণত হয়ে গেছে। ইতিহাসের এ ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা থেকে তারা কি কোন শিক্ষা লাভ করেনি?
# পূর্বাপর আলোচনা সামনে রাখলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এখানে মৃত্যুপরের জীবনের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করার জন্য এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি যেমন কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণভাবে করা হয়েছে বরং এ প্রসঙ্গে অন্য একটি উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে। আসলে এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ের প্রতি যে, একটি অনুর্বর পতিত জমি দেখে যেমন কেউ ধারণা করতে পারে না যে, এটিও কোনদিন সবুজ-শ্যামল ক্ষেতে পরিণত হবে। কিন্তু আল্লাহর পাঠানো এক পশলা বৃষ্টিধারাই এর কায়া পাল্টে দেয়। ঠিক তেমনি ইসলামের দাওয়াতও তোমাদের চোখে বর্তমানে একটি অচল জিনিস বলে প্রতিভাত হচ্ছে কিন্তু আল্লাহর কুদরাতের একটি ঝলকানি তাকে এমন উন্নতি ও অগ্রগতি দান করবে যে, তোমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে।
# তোমরা যে বলছো, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য এসে যাবে এবং আমাদেরকে যারা মিথ্যুক বলছে তাদের ওপর আল্লাহর গযব পড়বে, এ সময়টা কখন আসবে? কবে আমাদের ও তোমাদের ফয়সালা হয়ে যাবে?
# এটা এমন কি জিনিস যে জন্য তোমরা অস্থির হয়ে পড়েছো? আল্লাহর আযাব একবার এসে গেলে তখন তো আর তোমরা সংযত হবার সুযোগ পাবে না। আযাব আসার আগে তোমরা যে অবকাশটা পাচ্ছো এটাকে দুর্লভ মনে করো। আযাবকে সরাসরি সামনে দেখার পর ঈমান আনলে কোন লাভ হবে না।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৩-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

পূর্বের আয়াতে আল্লাহর নিদর্শন তথা কুরআনে যা নাযিল হয়েছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর, তার কথা উল্লেখ করার পর এ আয়াতে বলছেন, এ কুরআন কোন নতুন কিতাব নয়, বরং ইতোপূর্বে মূসা (عليه السلام)-কে তাওরাত প্রদান করা হয়েছিল যা কুরআনকে সত্যায়নকারী। সুতরাং তুমি মূসা (عليه السلام)-এর সাথে মিরাজের রাতে যে সাক্ষাত করেছ তা নিয়ে কোন সংশয় করো না। ইবনু আববাস (رضي الله عنه) বলেন:

(مِّنْ لِّقَا۬ئِه۪) -দ্বারা মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (عليه السلام)-এর সাথে যে সাক্ষাত করেছেন তা উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মিরাজের রাতের সাক্ষাতে মূসা (عليه السلام) আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন, ফলে মূসা (عليه السلام)-এর সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকবার সাক্ষাত হয়েছিল। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৯, সহীহ মুসলিম হা: ১৬২)

হাসান বাসরী (رحمه الله)-এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, মূসা (عليه السلام)-কে তাওয়াত প্রদানের দরুন রযেভাবে মানুষ তাঁকে দুঃখ-কষ্ট দিয়েছে তোমাকেও এসব কিছুর সম্মুখীন হতে হবে বলে নিশ্চিত থাকো। তাই কাফিরদের প্রদত্ত দুঃখ-যন্ত্রণার ফলে তুমি মনক্ষুণ্ন হবে না বরং নাবীদের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক রীতি মনে করে তুমিও তা বরদাশত করবে। (কুরতুবী)

جَعَلْنٰهُ এখানে “ه” সর্বনাম দ্বারা তাওরাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ তাওরাত বানী ইসরাঈলের হিদায়াত লাভ করার জন্য দান করা হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاٰتَيْنَا مُوْسَي الْكِتٰبَ وَجَعَلْنٰهُ هُدًي لِّبَنِيْٓ إِسْرَا۬ئِيْلَ أَلَّا تَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِيْ وَكِيْلًا)‏

“আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও তাকে করেছিলাম বানী ইস্রাঈলের জন্য পথনির্দেশক। (আমি আদেশ করেছিলাম) তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাউকেও কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ কর না; (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:২)

ইসরাঈল বংশের আলেমদের থেকে কতককে জাতির নেতা ও পুরোধার মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছিল। এর কারণ দুটি: এ আয়াতে দুটি কারণ বর্ণিত হয়েছেন (এক) ধৈর্য ধারণ করা। (দুই) আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহের ওপর অটুট বিশ্বাস স্থাপন করা। এখানে ধৈর্য ধারণ করা হল আল্লাহ তা‘আলার আদেশ পালন ও নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত বিষয় থেকে বিরত থাকার ধৈর্য ধারণ করা। এ ধৈর্যের গুণে তারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাদের ধৈর্য ও আল্লাহ তা‘আলার আয়াতের ওপর দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে তিনি তাদেরকে নেতা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَلَقَدْ اٰتَيْنَا بَنِيْٓ إِسْرَآئِيْلَ الْكِتٰبَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنٰهُمْ مِّنَ الطَّيِّبٰتِ وَفَضَّلْنٰهُمْ عَلَي الْعٰلَمِيْنَ وَاٰتَيْنٰهُمْ بَيِّنٰتٍ مِّنَ الْأَمْرِ)

“আমি বানী ইসরাইলকে কিতাব (তাওরাত), (সে অনুযায়ী) বিধান ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক এবং তাদেরকে বিশ্বজগতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। এবং তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দান করেছিলাম দীন সম্পর্কে।” (সূরা জাসিয়া ৪৫:১৬-১৭)

মোট কথা: আল্লাহ তা‘আলা নেতৃত্ব ও পৌরোহিত্যের যোগ্য তাদেরকেই করেন যারা ধৈর্যশীল ও আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী। তাই ইবনু কাসীর (رحمه الله) অত্র আয়াতের তাফসীরে অনেক মনিষীদের উক্তি নিয়ে এসেছেন: তার মধ্যে অন্যতম হল

بالصبر واليقين تنال الامامة في الدين

অর্থাৎ ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমেই দীনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের মর্যাদা লাভ করা যায়।

কিন্তু যখন তারা ধৈর্য হারা হয়ে গেল ও আল্লাহ তা‘আলার আয়াতের পরিবর্তন করতে শুরু করল তখন তাদের এ সম্মান কেড়ে নেয়া হল। এরপর তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেল

সুতরাং ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। যারাই আল্লাহ তা‘আলার সাথে নাফরমানী করেছে এবং রাসূলদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে তারাই যুগে যুগে লাঞ্ছিত হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মিরাজের রাতে মূসা (عليه السلام)-এর সাথে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাত হয়েছিল।
২. ধৈর্যের ফযীলত জানা গেল যে, ধৈর্যধারণ করলে সবকিছুই পাওয়া সম্ভব।
৩. কিয়ামতের দিন বিচারক থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা আর তিনি সকলের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন।
২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর:

মক্কার কাফির-মুশরিকসহ সকল যুগের কাফির-বেইমানদেরকে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী অবাধ্য ও নাফরমান জাতির দিকে দৃষ্টিপাত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হয়েছিল, নাবী রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ সমস্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় তোমরা চলাচল করছ, স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করছ। এসব দেখেও কি তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে না? অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَكَأَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنٰهَا وَهِيَ ظٰلِمَةٌ فَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰي عُرُوْشِهَا ز وَبِئْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَّقَصْرٍ مَّشِيْدٍ -‏ أَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِي الْأَرْضِ فَتَكُوْنَ لَهُمْ قُلُوْبٌ يَّعْقِلُوْنَ بِهَآ أَوْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَا ج فَإِنَّهَا لَا تَعْمَي الْأَبْصَارُ وَلٰكِنْ تَعْمَي الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِي الصُّدُوْرِ)‏

“আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ যেগুলোর বাসিন্দা ছিল জালিম। এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল ও কত সূদৃঢ় প্রাসাদ! তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন হৃদয় ও শ্র“তিশক্তি সম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” (সূরা হাজ্জ ২২:৪৫-৪৬)

আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতিদের ধ্বংসাবশেষ এ জন্য রেখে দিয়েছেন যাতে পরবর্তী যুগের নাফরমানরা তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। সুতরাং এরা এ সকল ঘটনা দেখে যদি সতর্ক না হয় তাহলে তাদের অবস্থাও তাদের মতই হবে।

আল্লাহ তা‘আলা যে সত্যিকার প্রতিপালক, তিনি মানুষের কল্যাণ চান, তিনি চান সবাই তাঁর বিধান মেনে জান্নাতে প্রবেশ করুক তার প্রমাণ এ আয়াত। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, তোমাদের ফসলের জমি যা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয় তাতে আমি পানি দিয়ে ফসল উৎপন্ন করে দিই, যা থেকে তোমরা খাও এবং চতুষ্পদ জন্তু খায়, এসব কি তোমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছ না? তারপরেও ঈমান আনবে না? এ সম্পর্কে সূরা ত্বাহার ৫৩-৫৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। الْجُرُزِ বলা হয় শুষ্ক ভূমিকে যেখানে কোন বৃক্ষলতা উদ্গত হয় না।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করা মানুষের সমীচীন নয়, যারা কুফরী করবে তারা জেনে শুনেই কুফরী করবে, আল্লাহ তা‘আলাকে কোন দোষ দিতে পারবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির ধ্বংসাবশেষ দেখে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত, আমরা তাদের মত অবাধ্য হলে আমাদেরকে তাদের মতই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
২. মানুষ জেনে শুনেই আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রমাণাদি দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন।

২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:

কাতাদাহ (رحمه الله) বলেন:

উক্ত আয়াতের الْفَتْحُ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ‘ফয়সালা’। মুজাহিদ বলেন: ‘কিয়ামতের দিন’, উভয়ের উদ্দেশ্য একই। অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে বলত, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি আমাদেরকে যে দিনের প্রতিশ্রতি দিয়েছ এবং তোমার সঙ্গী-সাথীদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে থাক সে ফয়সালা বা কিয়ামত দিবস কখন আসবে? তাদের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যখন ঐ সময় উপস্থিত হবে অর্থাৎ কিয়ামত সংঘঠিত হবে তখন কাফিরদের ঈমান কোনই উপকারে আসবে না এবং তাদেরকে তাওবা করার অবকাশ দেয়া হবে না যে, তারা শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(فَلَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا قَالُوْآ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَحْدَه۫ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِه۪ مُشْرِكِيْنَ- فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ إِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا ط سُنَّتَ اللّٰهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ فِيْ عِبَادِه۪ ج وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكٰفِرُوْنَ)

“অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন বললো, আমরা এক আল্লাহতেই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। আল্লাহর এই বিধান পূর্ব হতেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং সে ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” (সূরা মু’মিন ৪০:৮৪-৮৫)

এভাবে আরো অনেক আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফিররা কিয়ামতের দিন ঈমান আনবে কিন্তু তাদের সে ঈমান কোন কাজে আসবে না।

অতএব হে মুহাম্মাদ, যখন তারা পরিহাসচ্ছলে তোমার দাওয়াত বর্জন করল এবং তোমাকে মিথ্যা মনে করে দ্রুত ফয়সালা কামনা করছে তখন তোমার দায়িত্ব হল তাদেরকে উপেক্ষা করে চলা এবং ফয়সালার দিনের জন্য অপেক্ষা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَمْ يَقُوْلُوْنَ شَاعِرٌ نَّتَرَبَّصُ بِه۪ رَيْبَ الْمَنُوْنِ – قُلْ تَرَبَّصُوْا فَإِنِّيْ مَعَكُمْ مِّنَ الْمُتَرَبِّصِيْنَ)

“তারা কি বলতে চায় যে, সে একজন কবি? আমরা তার জন্য কালের বিপর্যয়ের (মৃত্যুর) অপেক্ষা করছি। বল, তোমরা অপেক্ষা কর, অবশ্য আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা তূর ৫২:৩০-৩১)

সুতরাং একজন আল্লাহ তা‘আলার পথে আহ্বানকারী যখন মানুষকে আহ্বান করবেন তখন তিনি বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন, তাতে মনোবল না হারিয়ে যথাসাথ্য দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যেতে হবে, হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা এর মাঝে কোন কল্যাণ রেখেছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. শাস্তি বা মৃত্যু এসে গেলে তখন ঈমান আনয়নে কোন ফায়দা হবে না।
২. কেউ যদি ইসলামের বিরোধিতা করে তাহলে তাকে ঘৃণা করা দোষের কিছু নয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

২৩-২৫ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁকে তাঁর কিতাব তাওরাত দান করেন। সুতরাং নবী (সঃ) যেন তার সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ না করেন। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা মিরাজের রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে মিরাজের রাত্রে হযরত মূসা ইবনে ইমরান (আঃ)-কে দেখানো হয়েছে। তিনি গোধুম বর্ণের দীর্ঘ দেহ ও কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট লোক ছিলেন। তিনি দেখতে শিনওয়াহ গোত্রের লোকের মত ছিলেন। ঐ রাত্রে আমি হযরত ঈসা (আঃ)-কেও দেখেছি। তিনি মধ্যম দেহ বিশিষ্ট সাদা ও লাল মিশ্রিত রং-এর ছিলেন। তাঁর চুলগুলো ছিল সোজা ও লম্বা। ঐ রাত্রেই আমি হযরত মালেক (আঃ)-কেও দেখেছি যিনি ছিলেন জাহান্নামের দারোগা। আর আমি দাজ্জালকে দেখেছি। এগুলো হলো ঐসব নিদর্শন যেগুলো আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দেখিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং তুমি তার সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সন্দেহ করো না।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) অবশ্যই হযরত মূসা (আঃ)-কে দেখেছেন। এবং তার সাথে তাঁর আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এটা মিরাজের রাত্রের ঘটনা।

মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলের জন্যে পথ-নির্দেশক করেছিলাম। আবার এ অর্থও হতে পারে- আমি মূসা (আঃ)-কে প্রদত্ত কিতাবকে পথ-নির্দেশক বানিয়েছিলাম। যেমন সূরায়ে বানী ইসরাঈলে রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি মূসা (আঃ)-কে কিতাব দিয়েছিলাম এবং ওকে করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্যে পথ-নির্দেশক। আমি আদেশ করেছিলামঃ তোমরা আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকেও কর্মবিধায়ক রূপে গ্রহণ করো না।” (১৭:২)

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদের মধ্যে যারা আমার হুকুম পালন করেছিল, আমার নিষেধকৃত কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়েছিল, আমার কথার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল, আমার রাসূলদের অনুসরণে ধৈর্য সহকারে দৃঢ় থেকেছিল, তাদেরকে আমি নেতা মনোনীত করেছিলাম। তারা আমার আহকাম জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দিতো এবং মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করতো এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখতো। কিন্তু তারা যখন আল্লাহর কালামে পরিবর্তন-পরিবর্ধন শুরু করে দিলো তখন আমি তাদের এ পদ-মর্যাদা ছিনিয়ে নিলাম ও তাদের অন্তর শক্ত করে দিলাম। ভাল আমল ও সঠিক বিশ্বাস তাদের থেকে দূর হয়ে গেল। পূর্বে তারা দুনিয়ার লোভ-লালসা হতে বেঁচে থাকতো।

সুফিয়ান (রঃ) বলেনঃ ‘এ লোকগুলো এরূপই ছিল। মানুষের জন্যে এটা উচিত নয় যে, তারা এমন নেতার অনুসরণ করবে যে দুনিয়ার লোভ-লালসা হতে বেঁচে থাকে না। তিনি আরো বলেনঃ “দ্বীনের জন্যে ইলম অপরিহার্য যেমন দেহের জন্যে খাদ্য অপরিহার্য।

হযরত আলী (রাঃ)-এর উক্তি রয়েছেঃ “ঈমানের মধ্যে সবর বা ধৈর্যের স্থান এমন যেমন দেহের মধ্যে মাথার স্থান। তুমি কি আল্লাহ পাকের এ উক্তি শুননি? তিনি বলেন- আমি তাদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ-প্রদর্শন করতো, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল তখন তারা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।” হযরত সুফিয়ান (রঃ)-কে হযরত আলী (রাঃ)-এর উপরোক্ত উক্তির তাৎপর্য জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “এর ভাবার্থ হচ্ছে- যেহেতু তারা সমস্ত কাজের মূলকে গ্রহণ করেছে সেহেতু আল্লাহ তাদেরকে নেতা বানিয়ে দিয়েছেন। কোন কোন আলেম বলেছেন যে, ধৈর্য ও বিশ্বাস দ্বারা দ্বীনের নেতৃত্ব লাভ করা যায়। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “অবশ্যই আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করেছি এবং তাদেরকে উৎকৃষ্ট ও পবিত্র খাবার খেতে দিয়েছি, আর তাদেরকে সারা দুনিয়ার উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি।” (৪৫:১৬) যেমন তিনি এখানে। বলেনঃ তারা নিজেদের মধ্যে যে বিষয়ে (অর্থাৎ বিশ্বাস ও আমলের বিষয়ে) মতবিরোধ করছে, তোমার প্রতিপালকই তো কিয়ামতের দিন ওর ফায়সালা করে দিবেন।

২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা বলছেনঃ এসব দেখার পরেও কি এই অবিশ্বাসকারীরা সত্য পথের অনুসারী হবে না? তাদের পূর্ববর্তী কত পথভ্রষ্টদেরকে তো আমি ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছি। আজ কেউ তাদের খোঁজ-খবরও নেয় না। তারাও রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল এবং আল্লাহর কথা হতে বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। সবাই তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তুমি কি তাদের কাউকেও দেখতে পাও অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও কি?” (১৯:৯৮) এজন্যেই আল্লাহ তাআলা এখানে বলেনঃ যাদের বাসভূমিতে এরা বিচরণ করে থাকে। অর্থাৎ এই অবিশ্বাসকারীরা ঐ অবিশ্বাসকারীদের বাসভূমিতে চলাফেরা করে, কিন্তু তাদের কাউকেও এরা দেখতে পায় না। যারা তাদের বাসভূমিতে চলাফেরা করতো, বসবাস করতো। তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও এর থেকে এরা শিক্ষা গ্রহণ করছে না। এই কথাটিকেই কুরআন হাকীমে কয়েক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “ঐ তো তাদের ঘরবাড়ীগুলো তাদের যুলুমের কারণে ধ্বংসস্থূপে পরিণত হয়েছে।” (২৭:৫২) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ যেগুলোর বাসিন্দা ছিল যালিম, এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল এবং কত সুদৃঢ় প্রাসাদও! তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারতো। বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” (২২:৪৫-৪৬) এ জন্যেই এখানে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি এরা শুনবে না?

এরপর আল্লাহ তা’আলা স্বীয় স্নেহ, প্রেম-প্রীতি, দয়া, অনুগ্রহ, ইহসান ও ইনআমের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি ঊষর ভূমির উপর পানি প্রবাহিত করে ওর সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা হতে আহার্য গ্রহণ করে তাদের চতুষ্পদ জন্তুগুলো এবং তারা নিজেরাও, তারা কি তবুও লক্ষ্য করবে না?

তাফসীরকারদের এও উক্তি আছে যে, জুর হচ্ছে মিসরের যমীন। কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য তা নয়। মিসরেও যদি এরূপ ভূমি থাকে তো থাক। এই আয়াতে জুর দ্বারা এ সমুদয় ভূমিকে বুঝানো হয়েছে যা শুষ্ক হয়ে গেছে এবং পানির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে ও শক্ত হয়ে গেছে। অবশ্য মিসরের জমিও এরূপই বটে। নীল নদের পানি দ্বারা ওকে সিক্ত করা হয়। আবিসিনিয়ার বৃষ্টির পানি নিজের সাথে লাল মাটিও বয়ে নিয়ে যায়। মিসরের মাটি কিছুটা লবণাক্ত ও বালুকাময়। কিন্তু ওটা এই পানি ও মাটির সাথে মিশে চাষাবাদের যোগ্য হয়ে ওঠে। এ কারণে তারা প্রতি বছর প্রতিটি ফসল পেয়ে থাকে। এ সবকিছুই এই বিজ্ঞানময়, করুণাময়, স্নেহময় এবং দয়ালু আল্লাহরই মেহেরবানী। তাঁর সত্তাই প্রশংসার যোগ্য।

বর্ণিত আছে যে, যখন মিসর বিজিত হলো তখন মিসরবাসীরা আজমের ‘বাউনাহ্’ মাসে হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো এবং বললো: “আমাদের প্রাচীন প্রথা আছে যে, আমরা এ মাসে নীল নদে উৎসর্গ বা বলি দিয়ে থাকি। এটা না করলে নদীতে পানি থাকে না। আমাদের প্রথা এই যে, আমরা এ মাসের বারো তারিখে একটি কুমারী মেয়েকে সাথে নিই, যে মেয়েটি হবে তার পিতার একমাত্র কন্যা। তার পিতাকে টাকা পয়সা দিয়ে সম্মত করি। অতঃপর মেয়েটিকে সুন্দর পোশাক ও অলংকার পরিয়ে নীল নদে নিক্ষেপ করি। এর পর থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। এরূপ না করলে নীল নদে পানি বাড়ে না। ইসলামের সেনাপতি মিসর বিজয়ী হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) তাদেরকে উত্তর দেনঃ “এটা একটি অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ প্রথা। ইসলামে এর অনুমতি নেই। ইসলাম তো এরূপ অভ্যাস ও প্রথাকে মিটিয়ে দেয়ার জন্যেই এসেছে। তোমরা আর এরূপ করতে পারবে না। তারা তখন একাজ থেকে বিরত থাকে। কিন্তু নীল নদের পানি বাড়লো না। পুরো মাস কেটে গেলো। কিন্তু নদী শুষ্কই রয়ে গেল। মিসরের জনগণ বিরক্ত হয়ে মিসর ছেড়ে চলে যেতে মনস্থ করলো। মিসর বিজয়ীর খেয়াল হলো যে, খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত উমার ফারুক (রাঃ)-কে এ ঘটনা অবহিত করা হালে। তিনি তাই করলেন। ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই হযরত উমার (রাঃ) আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখলেন। পত্রে লিখা ছিল : “আপনি যা করেছেন ভালই করেছেন। এখন আমি একটি পত্র নীল নদের নামে পাঠাচ্ছি। আপনি ওটাকে নীল নদে নিক্ষেপ করবেন।” হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) পত্রটি বের করে পাঠ করলেন। তাতে লিখিত ছিলঃ “এ পত্রটি আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমার (রাঃ)-এর পক্ষ হতে মিসরবাসীর নীল নদের নিকট। হামদ ও দরূদের পর কথা এই যে, তুমি যদি নিজের পক্ষ হতে নিজের ইচ্ছামত চলে থাকো তবে বেশ, তুমি চলো না। আর যদি এক মহা-প্রতাপশালী আল্লাহ তোমাকে জারী রেখে থাকেন তবে আমি তাঁর নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন।” পত্রটি নিয়ে গিয়ে সেনাপতি ওটা নীল নদে নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর একটি রাত্রি অতিবাহিত না হতেই নীল নদে ষােল হাত গভীর হয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করলো এবং ক্ষণেকের মধ্যেই মিসরের শুষ্কতা আদ্রর্তায় পরিবর্তিত হলো। বাজারের চড়া দর নিম্নমুখী হলো। পত্রের সাথে সাথেই সমগ্র মিসরভূমি উর্বরতা লাভ করলো এবং চারদিক সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠলো। নীল নদ পূর্ণ গতিতে চলতে লাগলো। ইতিপূর্বে প্রতি বছর নীল নদে যে একটি করে জীবন বলি দেয়া হতো তা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। এটা হাফেয আবুল কাসেম লালকায়ী তাবারী (রঃ) তাঁর কিতাবুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

এই আয়াতের বিষয়ের অনুরূপ নিম্নের আয়াতটিওঃ (আারবি) অর্থাৎ “মানুষের তার খাদ্যের দিকে তাকানো উচিত যে, আমি বৃষ্টি বর্ষণ করি ও মাটি ফেরে শস্য ও ফল উৎপাদন করি।” (৮০:২৪-২৫) অনুরূপভাবে এখানেও বলেন যে, এর পরও কি তারা লক্ষ্য করবে না?

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, জুরূ হলো ঐ ধরনের জমি যা বৃষ্টির পানিতে সম্পূর্ণ সিক্ত হয় না। পরে নদী-নালার পানি দ্বারা জলপূর্ণ হয়। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ইয়ামনে এই ধরনের জমি রয়েছে। হাসান (রঃ) বলেন যে, এ ধরনের জমি ইয়ামন ও সিরিয়ায় আছে। ইবনে যায়েদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এগুলো ঐ প্রকারের জমি যাতে ফসল উৎপাদিত হয় না এবং ধূলি-ধূসরিত হয়ে থাকে। আর এটা আল্লাহ তা’আলার নিম্নের উক্তির মত (আরবি) অর্থাৎ তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি সঞ্জীবিত করি।

২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের তাড়াহুড়ার খবর দিচ্ছেন যে, তারা তাচ্ছিল্যের সাথে বলতোঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি যে বলে থাকো এবং তোমার সঙ্গীসাথীদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে থাকো যে, তুমি আমাদের উপর বিজয় লাভ করবে এবং আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, সে সময় কখন আসবে? আমরা তো তোমাকে বহুদিন থেকেই পরাজিত, অধীনস্থ ও দুর্বল দেখতে পাচ্ছি। এখন তুমি আমাদেরকে আমাদের উপর তোমার বিজয় লাভের সময়টা বলে দাও।” তাদের একথার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহর আযাব যখন এসে যাবে এবং যখন তাঁর গযব ও ক্রোধ পতিত হবে, তা দুনিয়াতেই হালে বা আখিরাতেই হালে, তখন না ঈমান আনয়নে কোন উপকার হবে, না তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ দলীল-প্রমাণসহ আসলো তখন তাদের কাছে যে জ্ঞান আছে তা নিয়ে তারা খুশী হয়ে গেল (দু’টি আয়াত পর্যন্ত)।” (৪০:৮৩)। এর দ্বারা মক্কা বিজয় উদ্দেশ্য নয়। কেননা, মক্কা বিজয়ের দিন তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাফিরদের ইসলাম গ্রহণ ককূল করে নিয়েছিলেন এবং প্রায় দু’হাজার লোক ইসলাম কবুল করেছিল। যদি এই বিজয় দ্বারা মক্কা বিজয় উদ্দেশ্য হতো তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের ইসলাম গ্রহণ ককূল করতেন না। যেমন এখানে বলা হয়েছে যে, সেই দিন কাফিরদের ঈমান আনয়ন তাদের কোন কাজে আসবে না। এখানে (আরবি)-এর অর্থ হচ্ছে ফায়সালা। যেমন কুরআন কারীমের এক জায়গায় আছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তুমি আমার ও তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দাও।” (২৬:১১৮) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি বল- আল্লাহ আমাদেরকে একত্রিত করবেন, অতঃপর আমাদের মধ্যে তিনি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবেন।” (৩৪:২৬) আর একটি আয়াতে আছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তারা ফায়সালা প্রার্থনা করছে এবং যারা উদ্ধত ও হঠকারী তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।” (১৪:১৫) আরো এক জায়গায় আছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “এর পূর্বে তারা কাফিরদের উপর বিজয় প্রার্থনা করতো।” (২:৮৯) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তোমরা ফায়সালা কামনা কর তবে ফায়সালা তো তোমাদের কাছে এসেই গেছে।” (৮:১৯)

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর এবং অপেক্ষা কর, তারাও অপেক্ষা করছে।” অর্থাৎ তুমি এই মুশরিকদেরকে উপেক্ষা কর এবং তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে থাকো। যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অহী করা হয়েছে তার তুমি অনুসরণ কর, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।” (৬:১০৭)

মহান আল্লাহ বলেনঃ তুমি তোমার প্রতিপালকের ওয়াদাকে সত্য বলে মেনে নাও। তাঁর কথা অপরিবর্তনীয়, তাঁর কথা সত্য। সত্বরই তিনি তোমাকে তোমার বিরুদ্ধাচারীদের উপর বিজয় দান করবেন। তিনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। তারাও অপেক্ষমান রয়েছে। তারা চায় যে, তোমার উপর কোন বিপদ আপতিত হালে। কিন্তু তাদের এ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে না। আল্লাহ তা’আলা নিজের লোকদেরকে ভুলেন না। তাদেরকে তিনি পরিত্যাগও করেন না। যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে এবং তাঁর ফরমান অন্যদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয় তারা আল্লাহর সাহায্য হতে বঞ্চিত হতে পারে না। কাফির ও মুশরিকরা মুমিনদের উপর যে বিপদ-আপদ দেখতে চায় তাই তিনি তাদের উপরই নাযিল করে থাকেন। তারা আল্লাহর আযাবের শিকার হবেই। আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1046)
[Essential requirements for Leadership of the Nation:-]
www.motaher21.net
Sura:32:As-Sajda
Para:21
Ayat: – 23-30
32:23

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ فَلَا تَکُنۡ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّنۡ لِّقَآئِہٖ وَ جَعَلۡنٰہُ ہُدًی لِّبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ﴿ۚ۲۳﴾

And We certainly gave Moses the Scripture, so do not be in doubt over his meeting. And we made the Torah guidance for the Children of Israel.

 

The Book of Musa and the Leadership of the Children of Israel

Allah says;

وَلَقَدْ اتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ

And indeed We gave Musa the Scripture.

Allah tells us that He gave the Book — the Tawrah — to His servant and Messenger Musa, peace be upon him.

فَلَ تَكُن فِي مِرْيَةٍ مِّن لِّقَايِهِ

So, be not you in doubt of meeting him.

Qatadah said,

“This refers to the Night of Isra’,”

then he narrated that Abu Al-Aliyah Ar-Riyahi said,

“The cousin of your Prophet, meaning Ibn Abbas, told me that the Messenger of Allah said:

أُرِيتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي مُوسى بْنَ عِمْرَانَ رَجُلً ادَمَ طِوَالاً جَعْدًا كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَرَأَيْتُ عِيسى رَجُلً مَرْبُوعَ الْخَلْقِ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ سَبْط الرَّأْسِ وَرَأَيْتُ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ وَالدَّجَّال

On the night of Isra’, I saw Musa bin Imran, a tall, brown-skinned man with curly hair, looking like the men of Shanu’ah; and I saw `Isa, a man of medium stature and ruddy white skin, and with lank hair. And I saw Malik the Keeper of Hell, and the Dajjal.

Among the signs which Allah showed him were:
فَلَ تَكُن فِي مِرْيَةٍ مِّن لِّقَايِهِ
(So, be not you in doubt of meeting him). i.e., he saw Musa and met with him on the Night of Isra’.”

وَجَعَلْنَاهُ

And We made it

means, `the Book which We gave to him, ‘

هُدًى لِّبَنِي إِسْرَايِيلَ

a guide to the Children of Israel.

This is similar to what Allah says in Surah Al-Isra’:

وَءَاتَيْنَأ مُوسَى الْكِتَـبَ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِى إِسْرَءِيلَ أَلاَّ تَتَّخِذُواْ مِن دُونِى وَكِيلً

And We gave Musa the Scripture and made it a guidance for the Children of Israel (saying):”Take none other than Me as Trustee.” (17:2)

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَيِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِأيَاتِنَا يُوقِنُونَ

32:24

وَ جَعَلۡنَا مِنۡہُمۡ اَئِمَّۃً یَّہۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُوۡا ۟ؕ وَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿۲۴﴾

And We made from among them leaders guiding by Our command when they were patient and [when] they were certain of Our signs.

 

And We made from among them, leaders, giving guidance under Our command, when they were patient and used to believe with certainty in Our Ayat.

means, because they were patient in adhering to the commands of Allah and avoiding what He prohibited, and they believed in His Messengers and followed what they brought, there were among them leaders who guided others to the truth by the command of Allah, calling for goodness, enjoining what is right and forbidding what is wrong. Then when they changed (the Words of Allah), twisting and distorting them, they lost that position and their hearts became hard. They change the words from their places, so they do no righteous deeds and have no correct beliefs.

Allah says:

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَيِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا

And We made from among them (Children of Israel), leaders, giving guidance under Our command, when they were patient,

Qatadah and Sufyan said:

“When they patiently shunned the temptations of this world.”

This was also the view of Al-Hasan bin Salih.

Sufyan said,

“This is how these people were. A man cannot be an example to be followed unless he shuns the temptation of this world.”

Allah says:

وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا بَنِى إِسْرَءِيلَ الْكِتَـبَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَـهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَـتِ وَفَضَّلْنَـهُمْ عَلَى الْعَـلَمينَ وَءاتَيْنَـهُم بَيِّنَـتٍ مِّنَ الاٌّمْرِ

And indeed We gave the Children of Israel the Scripture, and the understanding of the Scripture and its laws, and the Prophethood; and provided them with good things, and preferred them above the nations. And We gave them clear proofs in matters. (45:16-17)

And He says here:

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

32:25

اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ یَفۡصِلُ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۲۵﴾

Indeed, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection concerning that over which they used to differ.

 

Verily, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection, concerning that wherein they used to differ.

meaning, with regard to beliefs and actions

32:26

اَوَ لَمۡ یَہۡدِ لَہُمۡ کَمۡ اَہۡلَکۡنَا مِنۡ قَبۡلِہِمۡ مِّنَ الۡقُرُوۡنِ یَمۡشُوۡنَ فِیۡ مَسٰکِنِہِمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ ؕ اَفَلَا یَسۡمَعُوۡنَ ﴿۲۶﴾

Has it not become clear to them how many generations We destroyed before them, [as] they walk among their dwellings? Indeed in that are signs; then do they not hear?

 

Learning the Lessons of the Past

Allah says;

أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّنَ الْقُرُونِ

Is it not guidance for them:how many generations We have destroyed before them

Allah says:will these people who deny the Messengers not learn from the nations who came before them, whom Allah destroyed for their rejection of His Messengers and their opposition to what the Messengers brought them of the straight path. No trace is left of them whatsoever.

هَلْ تُحِسُّ مِنْهُمْ مِّنْ أَحَدٍ أَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزاً

Can you find a single one of them or hear even a whisper of them. (19:98)

Allah says:

يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ

in whose dwellings they do walk about,

meaning, these disbelievers walk about in the places where those disbelievers used to live, but they do not see any of those who used to live there, for they have gone —

كَأَن لَّمْ يَغْنَوْاْ فِيهَأ

As if they had never lived there. (11:68)

This is like the Ayat:

فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُواْ

These are their houses in utter ruin, for they did wrong. (27:52)

فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا وَبِيْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَّشِيدٍ أَفَلَمْ يَسِيرُواْ فِى الاٌّرْضِ

And many a township did We destroy while they were given to wrongdoing, so that it lie in ruins, and (many) a deserted well and lofty castle! Have they not traveled through the land! until:

وَلَـكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِى فِى الصُّدُورِ

but it is the hearts which are in the breasts that grow blind. (22:45-46)

Allah says here:

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ

Verily, therein indeed are signs.

meaning, in the fact that these people are gone and have been destroyed, and in what happened to them because they disbelieved the Messengers, and how those who believed in them were saved, there are many signs, proofs and important lessons.

أَفَلَ يَسْمَعُونَ

Would they not then listen!

means, to the stories of those who came before and what happened to them.
The Revival of the Earth with Water is Proof of the Resurrection to come

Allah says;

32:27

اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّا نَسُوۡقُ الۡمَآءَ اِلَی الۡاَرۡضِ الۡجُرُزِ فَنُخۡرِجُ بِہٖ زَرۡعًا تَاۡکُلُ مِنۡہُ اَنۡعَامُہُمۡ وَ اَنۡفُسُہُمۡ ؕ اَفَلَا یُبۡصِرُوۡنَ ﴿ؓ۲۷﴾

Have they not seen that We drive the water [in clouds] to barren land and bring forth thereby crops from which their livestock eat and [they] themselves? Then do they not see?

 

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاء إِلَى الاَْرْضِ الْجُرُزِ

Have they not seen how We drive water to the dry land,

Here Allah explains His kindness and goodness towards them by His sending water to them, whether from the sky or from water flowing through the land, water carried by rivers down from the mountains to the lands that need it at particular times.

Allah says:
إِلَى الاَْرْضِ الْجُرُزِ
(to the dry land) which means the land where nothing grows, as in the Ayah,

وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيداً جُرُزاً

And verily, We shall make all that is on it a bare dry soil. (18:8)

i.e., barren land where nothing grows.

Allah says here:

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاء إِلَى الاَْرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنفُسُهُمْ أَفَلَ يُبْصِرُونَ

Have they not seen how We drive water to the dry land that has no vegetation, and therewith bring forth crops providing food for their cattle and themselves. Will they not then see!

This is like the Ayah,

فَلْيَنظُرِ الاِنسَـنُ إِلَى طَعَامِهِ أَنَّا صَبَبْنَا الْمَأءَ صَبّاً

Then let man look at his food:We pour forth water in abundance. (80:24-25)

Allah says here:

أَفَلَ يُبْصِرُونَ

Will they not then see

32:28

وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡفَتۡحُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۲۸﴾

And they say, “When will be this conquest, if you should be truthful?”

 

How the Disbelievers sought to hasten on the Punishment, and what happened to Them

Allah tells us how the disbelievers sought to hasten on the punishment, and to bring the wrath and vengeance of Allah upon themselves, because they thought this punishment would never happen, and because of their disbelief and stubbornness.

وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْفَتْحُ

They say:”When will this Fath be…”

meaning, `when will you prevail over us, O Muhammad, since you claim that there will be a time when you will gain the upper hand over us and take your revenge on us, so when will that happen! All we see of you and your companions is that you are hiding, afraid and humiliated.’

إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

if you are telling the truth”

Allah says

32:29

قُلۡ یَوۡمَ الۡفَتۡحِ لَا یَنۡفَعُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِیۡمَانُہُمۡ وَ لَا ہُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ ﴿۲۹﴾

Say, [O Muhammad], “On the Day of Conquest the belief of those who had disbelieved will not benefit them, nor will they be reprieved.”

 

قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ

Say:”On the Day of Al-Fath…”

meaning, `when the wrath and punishment of Allah befall you, in this world and the next,’

لَاا يَنفَعُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِيمَانُهُمْ وَلَاا هُمْ يُنظَرُونَ

no profit will it be to those who disbelieve if they (then) believe! Nor will they be granted a respite.

This is like the Ayah,

فَلَمَّا جَأءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَـتِ فَرِحُواْ بِمَا عِندَهُمْ مِّنَ الْعِلْمِ

Then when their Messengers came to them with clear proofs, they were glad with that which they had of the knowledge… (40:83-85)

Those who claim that this refers to the conquest of Makkah go too far, and have made a grievous mistake, for on the day of the conquest of Makkah, the Messenger of Allah accepted the Islam of the freed Makkan prisoners-of-war, who numbered nearly two thousand. If what was meant by this Ayah was the conquest of Makkah, he would not have accepted their Islam, because Allah says:

قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنفَعُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِيمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ

Say:”On the Day of Al-Fath, no profit will it be to those who disbelieve if they (then) believe! Nor will they be granted a respite.”

What is meant by Al-Fath here is Judgement, as in the Ayat:

فَافْتَحْ بَيْنِى وَبَيْنَهُمْ فَتْحاً

(Nuh said:) So Aftah (judge) between me and them. (26:118)

and:

قُلْ يَجْمَعُ بَيْنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفْتَحُ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ

Say:”Our Lord will assemble us all together, then He will judge between us with truth.” (34:26)

وَاسْتَفْتَحُواْ وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ

And they sought judgement and every obstinate, arrogant dictator was brought to a complete loss and destruction. (14:15)

وَكَانُواْ مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُواْ

although aforetime they had invoked Allah to pass judgement over those who disbelieved. (2:89)

إِن تَسْتَفْتِحُواْ فَقَدْ جَأءَكُمُ الْفَتْحُ

If you ask for a judgement, now has the judgement come unto you? (8:19)

Then Allah says:

فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانتَظِرْ إِنَّهُم مُّنتَظِرُونَ

32:30

فَاَعۡرِضۡ عَنۡہُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّہُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ ﴿٪۳۰﴾

So turn away from them and wait. Indeed, they are waiting.

 

So turn aside from them and await, verily, they (too) are awaiting.

meaning, `turn away from these idolators, and convey that which has been revealed to you from your Lord.’

This is like the Ayah,

اتَّبِعْ مَأ أُوحِىَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ

Follow what has been revealed to you from your Lord, there is no God but Him. (6:106)

`Wait until Allah fulfills that which He has promised you, and grants you victory over those who oppose you, for He never breaks His promise.’

عَنْهُمْ وَانتَظِرْ
(verily, they (too) are awaiting).

means, `you are waiting, and they are waiting and plotting against you,’

أَمْ يَقُولُونَ شَاعِرٌ نَّتَرَبَّصُ بِهِ رَيْبَ الْمَنُونِ

Or do they say:”A poet! We await for him some calamity by time!” (52:30)

`You will see the consequences of your patience towards them, and the fulfillment of the promise of your Lord in your victory over them, and they will see the consequences of their wait for something bad to befall you and your Companions, in that Allah’s punishment will come upon them.’

Sufficient unto us is Allah, and He is the Best Disposer of affairs.

This is the end of the Tafsir of Surah Al-Sajdah; all praise is due to Allah and all the favors come from Him Alone

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply