أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৫৭)
[*সহবাসপূর্ব তালাক ও তার বিধান :-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩৩:আহযাব
পারা:২২
৪৯-৫২ নং আয়াত:-
৩৩: ৪৯
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نَکَحۡتُمُ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ طَلَّقۡتُمُوۡہُنَّ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَمَسُّوۡہُنَّ فَمَا لَکُمۡ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ عِدَّۃٍ تَعۡتَدُّوۡنَہَا ۚ فَمَتِّعُوۡہُنَّ وَ سَرِّحُوۡہُنَّ سَرَاحًا جَمِیۡلًا ﴿۴۹﴾
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বিশ্বাসী রমণীদেরকে বিবাহ করার পর ওদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্য তাদের কোন পালনীয় ইদ্দত নেই। সুতরাং তোমরা ওদেরকে কিছু সামগ্রী প্রদান কর এবং সৌজন্যের সাথে ওদেরকে বিদায় কর।
৩৩:৫০
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَحۡلَلۡنَا لَکَ اَزۡوَاجَکَ الّٰتِیۡۤ اٰتَیۡتَ اُجُوۡرَہُنَّ وَ مَا مَلَکَتۡ یَمِیۡنُکَ مِمَّاۤ اَفَآءَ اللّٰہُ عَلَیۡکَ وَ بَنٰتِ عَمِّکَ وَ بَنٰتِ عَمّٰتِکَ وَ بَنٰتِ خَالِکَ وَ بَنٰتِ خٰلٰتِکَ الّٰتِیۡ ہَاجَرۡنَ مَعَکَ ۫ وَ امۡرَاَۃً مُّؤۡمِنَۃً اِنۡ وَّہَبَتۡ نَفۡسَہَا لِلنَّبِیِّ اِنۡ اَرَادَ النَّبِیُّ اَنۡ یَّسۡتَنۡکِحَہَا ٭ خَالِصَۃً لَّکَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ؕ قَدۡ عَلِمۡنَا مَا فَرَضۡنَا عَلَیۡہِمۡ فِیۡۤ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ لِکَیۡلَا یَکُوۡنَ عَلَیۡکَ حَرَجٌ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۵۰﴾
হে নবী! আমরা আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীগণকে, যাদের মাহর আপনি দিয়েছেন এবং বৈধ করেছি ফায় হিসেবে আল্লাহ আপনাকে যা দান করেছেন তাদের মধ্য থেকে যারা আপনার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে। আর বিয়ের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা আপনার সঙ্গে হিজরত করেছে এবং এমন মুমিন নারীকে (বৈধ করেছি) যে নবীর জন্যে নিজেকে সমৰ্পণ করে, যদি নবী তাকে বিয়ে করতে চায়— এটা বিশেষ করে আপনার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; যাতে আপনার কোন অসুবিধা না হয়। আমরা অবশ্যই জানি মুমিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীগণ সম্বন্ধে তাদের উপর যা নির্ধারিত করেছি । আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৩৩:৫১
تُرۡجِیۡ مَنۡ تَشَآءُ مِنۡہُنَّ وَ تُــٔۡوِیۡۤ اِلَیۡکَ مَنۡ تَشَآءُ ؕ وَ مَنِ ابۡتَغَیۡتَ مِمَّنۡ عَزَلۡتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکَ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ تَقَرَّ اَعۡیُنُہُنَّ وَ لَا یَحۡزَنَّ وَ یَرۡضَیۡنَ بِمَاۤ اٰتَیۡتَہُنَّ کُلُّہُنَّ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا فِیۡ قُلُوۡبِکُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ عَلِیۡمًا حَلِیۡمًا ﴿۵۱﴾
আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছে আপনার কাছে স্থান দিতে পারেন । আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই । এ বিধান এ জন্যে যে, এটা তাদের চোখ জুড়ানোর অধিক নিকটবর্তী এবং তারা দুঃখ পাবে না আর তাদেরকে আপনি যা দেবেন তাতে তাদের প্রত্যেকেই খুশী থাকবে । আর তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
৩৩:৫২
لَا یَحِلُّ لَکَ النِّسَآءُ مِنۡۢ بَعۡدُ وَ لَاۤ اَنۡ تَبَدَّلَ بِہِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَکَ حُسۡنُہُنَّ اِلَّا مَا مَلَکَتۡ یَمِیۡنُکَ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ رَّقِیۡبًا ﴿٪۵۲﴾
এরপর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়; যদিও ওদের রূপ-সৌন্দর্য তোমাকে মোহিত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা (৪৯-৬২) : সূরার এই অধ্যায়টাতে পরিবার গঠন সংক্রান্ত কোরআনী বিধানের একটা সাধারণ বিধি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই বিধিটা সহবাসের পূর্বে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের সাথে সংশ্লিষ্ট। এরপরে আসছে স্বয়ং রাসূল(স.)-এর দাম্পত্য জীবন, তার স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক, অন্যান্য পুরুষদের সাথে নবীপত্নীদের সম্পর্ক, নবী পরিবারের সাথে সাধারণ মুসলমানদের সম্পর্ক এবং আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেশতাদের কাছে রসূল(স.)-এর সম্মান ও মর্যাদা সংক্রান্ত আলাচনা ও বিধিমালা। সবার শেষে রয়েছে একটা সাধারণ বিধি, যা নবী পত্নীরা, নবী কন্যারা ও অন্যান্য মুসলমানদের স্ত্রী কন্যা ভগ্নিদের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযােজ্য। এই বিধিতে সকল মুসলিম নারীকে জরুরী কাজে বাইরে বেরুতে হলে সমস্ত শরীর একটা চাদরে ঢেকে বেরুতে বলা হয়েছে। সর্বাংগ আচ্ছাদনকারী এই বিশেষ পােশাকের কল্যাণে তারা একদিকে যেমন অন্যান্য মহিলাদের মধ্য থেকে স্বাতন্ত্র ও বিশিষ্টতা লাভ করবেন, তেমনি সবার কাছে তারা পরিচিতিও হবেন। ফলে খারাপ চরিত্রের অধিকারী মােনাফেক, পাপাচারী ও অপবাদ রটনাকারীরা তাদের কাছে ঘেঁষতে সাহস করবে না। উপসংহারে এসব মােনাফেক ও অপবাদ রটনাকারী মুসলিম নারীদের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, তাদেরকে উত্যক্ত করা ও সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে বিরত না হলে তাদেরকে অবিলম্বে মদীনা থেকে বিতাড়িত করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। এ সমস্ত আইনগত বিধি ও নির্দেশনাবলী হচ্ছে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থারই অংশ বিশেষ। এ ক্ষেত্রে রসূল(স.)-এর ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলাে আলােচিত হওয়ার কারণ এই যে, আল্লাহ তায়ালা এই পুন্যময় গৃহের জীবনধারাকে পরবর্তী প্রজন্মগুলাের সামনে উন্মুক্ত করে দিতে চান। এ জন্যেই পৃথিবীর সর্বত্র সর্বকালে যে কোরআন চিরদিন পঠিত হতে থাকবে, নবী জীবনের এই একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়কেও তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ দ্বারা একথাও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা শুধু যে এই পরিবারের তত্ত্বাবধান নিজেই করেন তা নয়, বরং এ পরিবারটাকে তিনি এতাে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন যে, তাঁর চিরস্থায়ী গ্রন্থ কোরআনে সমগ্র মানব জাতির জ্ঞাতার্থে এ পরিবার সংক্রান্ত আলােচনা সংরক্ষণও করেছেন।
*সহবাসপূর্ব তালাক ও তার বিধান : ‘হে মােমেনরা! তােমরা যখন মােমেনা নারীদের বিয়ে করবে এবং তাদেরকে স্পর্শ করার আগে তালাক দেবে, তখন তাদের কোনাে ইদ্দত পালন করতে হবে না…'(আয়াত ৪৯) ইতিপূর্বে সূরা বাকারার ২৩৬ ও ২৩৭ নং আয়াতেও সহবাসের আগে তালাক দেয়া স্ত্রীদের পালনীয় বিধি বর্ণনা করা হয়েছে। বিধিটা হলাে, সহবাসের আগে যে স্ত্রীকে তালাক দেয়া হয়, তার জন্যে যদি বিয়ের সময় মােহরানা নির্ধারিত করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সেই নির্ধারিত মােহরানার অর্ধেক দিতে হবে। আর যদি কোনাে মােহরানা নির্ধারণ না করা হয়ে থাকে, তাহলে তালাকদাতার সামর্থ অনুযায়ী সে কিছু জিনিসপত্র পাবে। এখানে সূরা আহযাবের এ আয়াতে এই তালাকপ্রাপ্তার ইদ্দত সংক্রান্ত বিধানটাও বাড়তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সূরা বাকারার আয়াত দুটোতে নেই। এখানে ঘোষণা করা হয়েছে যে, তার আর কোনাে ইদ্দত পালন করার দরকার নেই। কেননা তার সাথে সহবাস করা হয়নি। ইদ্দত পালন করা হয় কেবল জরায়ূকে সম্ভাব্য গর্ভ থেকে মুক্ত করার জন্যে এবং সাবেক বিয়ের প্রভাব থেকে সে মুক্ত এ কথা নিশ্চিত করার জন্যে। সন্তানের বংশ পরিচয় যাতে একাকার হয়ে না যায় গর্ভের সন্তান যে পুরুষের ঔরষজাত সন্তান নয়, তাকে তার সন্তান বলে পরিচয় দেয়া এবং যে পুরুষের ঔরষজাত সন্তান তার কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেয়া যাতে হয়, সে জন্যেই ইদ্দত পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু যে তালাকপ্রাপ্তার সাথে সহবাস করা হয়নি, তার জরায়ূ গর্ভমুক্ত। ‘সুতরাং কোনাে ইদ্দত পালন বা অন্য কিছুর অপেক্ষা করা নিষ্প্রয়ােজন। তাদেরকে কিছু সামগ্রী দিয়ে দাও।’ অর্থাৎ মোহরানা নির্ধারিত থেকে থাকলে তার অর্ধেক, নচেত স্বামীর আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী যে কোনাে জিনিস দিতে হবে। ‘এবং তাদেরকে শােভনীয় পন্থায় বিদায় দাও।’ অর্থাৎ কোনােরকম কষ্ট দিও না, বাধা বিপত্তি ও জটিলতার সৃষ্টি করাে না এবং তাদের নতুন দাম্পত্য জীবন পুনরারম্ভ করাকে বাধাগ্রস্ত করার কোনাে ইচ্ছা বা আগ্রহ পােষণ করাে না। এ হচ্ছে মুসলিম সমাজের জীবন পুনর্গঠন সংক্রান্ত সাধারণ বিধি যা এ সূরায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরপর রসূল(স.)-কে জানানাে হয়েছে তাকে ক’জন স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিসত্ত্বার ও পরিবারের বিশেষত্ব কতখানি তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে সূরা নিসার ৩ নং আয়াতে স্ত্রীর সর্বোচ্চ সংখ্যা চারের মধ্যে সীমিত করা হয়েছে। এ সময়ে রসূল(স.)-এর স্ত্রীর সংখ্যা ছিলাে নয় জন। তিনি এদের প্রত্যেককে কোনাে না কোনাে বিশেষ কারণে বিয়ে করেছিলেন । ১. হযরত আয়েশা ছিলেন রসূল (স.)-এর ঘনিষ্ঠ সহচর হযরত আবু বকরের কন্যা ২. হযরত হাফসা ছিলেন তাঁর অপর ঘনিষ্ঠ সহচর হযরত ওমরের কন্যা। ৩. আবু সুফিয়ানের মেয়ে উম্মে হাবীবা, ৪. উম্মে সালমা, ৫. সওদা বিনতে যময়া ও ৬. যয়নব বিনতে খুযায়মা-এরা সবাই ছিলেন স্বামী হারানাে মােহাজের, এদের কোনাে রূপ যৌবন ছিলাে না, নিছক তাদেরকে সম্মানিত করাই ছিলাে এই বিয়ের উদ্দেশ্য। ৭. যয়নব বিনতে জাহশের বিয়ের কাহিনী আমরা ইতিপূর্বে বলে এসেছি। রসূল(স.)-এর সাথে তার বিয়ে হয়েছিলাে যায়েদের কাছ থেকে তালাক পাওয়ার পর। যায়দের সাথে যয়নাবের এই বিয়েটা রসূল(স.)-ই দিয়েছিলেন। কিন্তু সে বিয়ে সফল হয়নি। সফল না হওয়ার পেছনে আল্লাহর ইচ্ছা ও ফয়সালাই ছিলো প্রধান কারণ। এ বিষয়টা আমরা তার কাহিনীতে বিশদভাবে আলােচনা করেছি। ৮. এরপর বনু মোসতালিক গােত্রের জুয়াইরিয়া বিনতে হারেছ এবং ৯. বনু নযীর গােত্রের সুফিয়া বিনতে হুয়াই ইবনে আখতার। এরা দুজনেই ছিলে যুদ্ধবন্দী। পরে রসূল(স.) তাদের উভয়কে মুক্তি দিয়ে স্বাধীন মানুষে পরিণত করেন এবং তারপর তাদেরকে একের পর এক বিয়ে করেন। এই দুটো বিয়েরও উদ্দেশ্য ছিলাে গােত্রগুলাের সাথে রসূল(স.)-এর সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং মহিলাদ্বয়কে সসম্মানে পুনর্বাসিত করা। উভয়ের গােত্রের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হবার পর তারা ইসলাম গ্রহণ করেন। এই মহিলারাই উম্মুল মােমেনীনে পরিণত হন, রাসূল(স.)-এর নৈকট্য লাভ করে ধন্য হন এবং তাদেরকে দুনিয়ার সুখ ও আখেরাতের সুখ এই দুটোর যে কোনাে একটা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা প্রদান সংক্রান্ত দুটো আয়াত নাযিল হবার পর তারা আল্লাহ তায়ালা তার রসূলের সন্তুষ্টি এবং আখেরাতের সুখ বেছে নেন। স্ত্রীর সংখ্যা চারজনে সীমিতকরণ সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হবার পর রাসুল(স.) তাদেরকে পরিত্যাগ করলে সেটা তাদের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়তাে। আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি দৃষ্টি দিলেন এবং রসূল(স.)-কে চারজনে সীমাবদ্ধতা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ব্যতিক্রমী বিধান জারী করলেন। তার এ যাবত বিয়ে করা সকল স্ত্রীকে তার জন্যে হালাল ও বৈধ করে দিলেন। তারপর একটা আয়াত নাযিল হয়ে তাকে আর কোনাে স্ত্রী গ্রহণ না করার কিংবা তাদের কাউকে অন্য কোনাে স্ত্রী দ্বারা বদলানাে থেকে বিরত থাকার আদেশ দেয়া হলাে। কেননা এই ব্যতিক্রমধর্মী বিধান কেবল মাত্র এই ক’জন মহিলার জন্যেই দেয়া হয়েছে, যাতে তারা আল্লাহ তায়ালা ও তার রসূলের সন্তুষ্টি এবং আখেরাতের সুখ বেছে নেয়ার পর তাদেরকে রসূল(স.) এর সাথে সম্পর্কের সম্মান থেকে বঞ্চিত করা না হয়। সূরা ৫০ নং থেকে ৫২ নং পর্যন্ত তিনটি আয়াতে এ বিষয়ই আলােচিত হয়েছে। এখানে রসূল(স.)-এর জন্যে যেসব মহিলাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাদের বিবরণ দেয়া হয়েছে। যদিও তাদের সংখ্যা চারজনের বেশী। অথচ এরপ করা তিনি ছাড়া আর সবার জন্যে হারাম। এই সকল মহিলার শ্রেণী বিন্যাস করা হয়েছে এভাবে, যাদেরকে তিনি যথারীতি মােহরানা দিয়ে বিয়ে করেছেন, যারা যুদ্ধবন্দীনী হিসাবে তার দাসীতে পরিণত হয়েছিলেন, তার সাথে মক্কা থেকে হিজরত করে আসা চাচাতাে, খালাতাে, মামাতাে ও ফুফাতাে বােনেরা-মােহাজের হিসাবে সম্মানের প্রতীক স্বরূপ, যে কোনাে মহিলা কোনােরূপ মােহরানা ও অভিভাবক ছাড়া তার স্ত্রী হবার জন্যে নিজেকে পেশ করলে এবং রসূল(স.) তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হলে তা হবে আরেক শ্রেণী। (সর্বশেষ শ্রেণীর মধ্য থেকে রসূল(স.) কাউকে বিয়ে করেছেন কিনা, সে ব্যাপারে প্রচুর মতভেদ রয়েছে। বেশীর ভাগ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, যে সকল মহিলা এভাবে তার স্ত্রী হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তাদেরকে তিনি অন্য সাহাবীর সাথে বিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা এ অধিকারটা একমাত্র রসূল(স.)-এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কেননা তিনি সকল মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক। অন্যান্য পুরুষদের কথা আলাদা। তারা তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দিষ্ট বিধান মেনে চলতে বাধ্য। রসূল(স.)-এর জন্য ব্যতিক্রমী বিধান দেয়ার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি তার স্ত্রীদেরকে যেন স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখতে বাধার সম্মুখীন না হন এবং তার ব্যক্তিত্বকে ঘিরে সৃষ্ট বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অসুবিধায় না পড়েন। এরপর রসূল(স.)-কে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, যে সকল মহিলা তার স্ত্রী হবার জন্যে নিজেদেরকে পেশ করেছে তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তিনি বিয়ে করতে পারেন। সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করতে পারেন কিংবা দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন। যাকে তিনি দূরে সরিয়ে রেখেছেন, তার কাছে আবার তিনি ফিরেও যেতে পারেন। আর স্ত্রীদের মধ্য থেকে যার সাথে তিনি ইচ্ছা করেন সহবাস করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও করতে পারেন। ‘এতে অধিক আশা করা যায় যে, তাদের চোখ জুড়াবে, তারা দুশ্চিন্তায় পড়বে না এবং তুমি তাদেরকে যা দাও তাতে তারা সবাই সন্তুষ্ট থাকবে। এভাবে রসূল(স.)-এর ব্যক্তিত্বকে ঘিরে যে পরিস্থিতি ও পরিবেশ গড়ে উঠেছে, তার সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তােলার যে আকাংখা তৈরী হয়েছে, তার সাথে সংগতি ও সমন্বয় বিধানের জন্যেই তাকে এ ধরনের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা জানেন তােমাদের অন্তরে কী আছে এবং তিনি সর্বজ্ঞ ও সহনশীল। এরপর আল্লাহ তায়ালা তার বর্তমান স্ত্রীদের ছাড়া আর কোনাে স্ত্রী গ্রহণ করাকে তার জন্যে নিষিদ্ধ করেছেন। সংখ্যার দিক থেকে নয়, বরং তাদের জায়গায় অন্য কোনাে স্ত্রী গ্রহণ করাও চলবে না। এই নিষেধাজ্ঞা জারী হওয়ার আগে রসূল(স.) অতিরিক্ত আর কোনাে স্ত্রী গ্রহণ করেছেন কিনা জানা যায় না। ৫২ নং আয়াত দ্রষ্টব্য। হযরত আয়েশা(রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা রসূল (স.)-এর ইন্তেকালের প্রাক্কালে বাতিল করা হয়েছিলাে এবং তাকে বিয়ে করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলাে। কিন্তু রসূল(স.) এই অনুমতি পাওয়ার পরও আর বিয়ে করেননি। তাই উল্লেখিত নয় জনই উম্মুল মােমেনীন হিসাবে বহাল থাকেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ বাক্যটিতে একথা সুস্পষ্ট যে, এখানে ‘নিকাহ’ তথা বিবাহ শব্দটি থেকে শুধুমাত্র বিবাহ বন্ধনের কথাই প্রকাশ হয়েছে। আরবী ভাষায় ‘নিকাহ’ শব্দটির আসল অর্থ কি অভিধানবিদদের মধ্যে এ ব্যাপারে বহুতর মতবিরোধ দেখা গেছে। একটি দল বলে, এ শব্দটির মধ্যে শাব্দিকভাবে সঙ্গম ও বিয়ে উভয় অর্থ প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে। তৃতীয় একটি দল বলে, এর আসল অর্থ হচ্ছে এক জোড়া মানব মানবীর বিবাহ এবং সঙ্গমের জন্য একে রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়। চতুর্থ দলটি বলে, এর আসল অর্থ হচ্ছে সঙ্গম এবং বিয়ের জন্য একে রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর প্রমাণ হিসেবে প্রত্যেক দল আরবীয় প্রবাদ ও বাগধারা থেকে দৃষ্টান্ত পেশ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাগেব ইস্ফাহানী অত্যন্ত জোরের সাথে দাবী করেছেনঃ اصل النكاح العقد ثم استعير للجماع ومحال ان يكون فى الاصل للجماع ثم استعير للعقد- “নিকাহ শব্দটির আসল অর্থ হচ্ছে বিয়ে, তারপর এ শব্দটিকে রূপক অর্থে সহবাসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটা একবারেই অসম্ভব যে, এর আসল অর্থ হবে সহবাস এবং একে রূপক অর্থে বিয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।” এর সপক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, আরবী ভাষায় বা দুনিয়ার অন্যান্য ভাষায় সহবাস-এর জন্য প্রকৃতপক্ষে যতগুলো শব্দ তৈরী করা হয়েছে তার সবই অশ্লীল। কোন রুচিশীল ব্যক্তি কোন ভদ্র মজলিসে সেগুলো মুখে উচ্চারণ করাও পছন্দ করেন না। এখন যে শব্দটিকে প্রকৃতপক্ষে এ কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে মানুষের সমাজ তাকে বিয়ের জন্য রূপক হিসেবে ব্যবহার করবে, এটা কেমন করে সম্ভব? এ অর্থটি প্রকাশ করার জন্য তো প্রত্যেক ভাষায় রুচিশীল শব্দই ব্যবহার করা হয়, অশ্লীল শব্দ নয়। কুরআন ও সুন্নাতের ব্যাপারে বলা যায়, সেখানে ‘নিকাহ’ একটি পারিভাষিক শব্দ। সেখানে এর অর্থ হচ্ছে নিছক বিবাহ অথবা বিবাহোত্তর সঙ্গম। কিন্তু বিবাহ বিহীন সঙ্গম অর্থে একে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এ ধরনের সঙ্গমকে তো কুরআন ও সুন্নাত বিয়ে নয়, যিনা ও ব্যভিচার বলে।
# এটি একটি একক আয়াত। সম্ভবত সে সময় তালাকের কোন সমস্যা সৃষ্টি হবার কারণে এটি নাযিল হয়েছিল। তাই পূর্ববর্তী বর্ণনা ও পরবর্তী বর্ণনার ধারাবাহিকতার মধ্যে একে রেখে দেয়া হয়েছে। এ বিন্যাসের ফলে একথা স্বতস্ফূর্তভাবেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এটি পূর্ববর্তী ভাষণের পরে এবং পরবর্তী ভাষণের পূর্বে নাযিল হয়।
এ আয়াত থেকে যে আইনগত বিধান বের হয় তার সার সংক্ষেপ হচ্ছেঃ
একঃ আয়াতে যদিও “মু’মিন নারীরা” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা থেকে বাহ্যত অনুমান করা যেতে পারে যে, এখানে যে আইনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে কিতাবী (ইহুদী ও খৃস্টান) নারীদের ব্যাপারে সে আইন কার্যকর নয়। কিন্তু উম্মাতের সকল উলামা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, পরোক্ষভাবে কিতাবী নারীদের জন্যও এ একই হুকুম কার্যকার হবে। অর্থাৎ কোন আহলি কিতাব নারীকে যদি কোন মুসলমান বিয়ে করে তাহলে তার তালাক, মহর, ইদ্দত এবং তাকে তালাকের পরে কাপড়-চোপড় দেবার যাবতীয় বিধান একজন মু’মিন নারীকে বিয়ে করার অবস্থায় যা হয়ে থাকে তাই হবে। উলামা এ ব্যাপারে একমত, আল্লাহ এখানে বিশেষভাবে যে কেবলমাত্র মু’মিন নারীদের কথা বলেছেন এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কেবলমাত্র এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা যে, মুসলমানদের জন্য মু’মিন নারীরাই উপযোগী। ইহুদি ও খৃস্টান নারীদেরকে বিয়ে করা অবশ্যই জায়েয কিন্তু তা সঙ্গত ও পছন্দীয় নয়। অন্যকথায় বলা যায়, কুরআনের এ বর্ণনারীতি থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মু’মিনগণ মু’মিন নারীদেরকে বিয়ে করবে আল্লাহ এটাই চান।
দুইঃ “স্পর্শ করা বা হাত লাগানো।” এর আভিধানিক অর্থ তো হয় নিছক ছুঁয়ে দেয়া। কিন্তু এখানে এ শব্দটি রূপক অর্থে সহবাসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ দিক দিয়ে আয়াতের বাহ্যিক অর্থের দাবী হচ্ছে এই যে, যদি স্বামী সহবাস না করে থাকে, তাহলে সে স্ত্রীর সাথে একান্তে (খালওয়াত) অবস্থান করলেও বরং তার গায়ে হাত লাগালেও এ অবস্থায় তালাক দিলে ইদ্দত অপরিহার্য হবে না। কিন্তু ফকীহগণ সতর্কতামূলকভাবে এ বিধান দিয়েছেন যে, যদি “খালওয়াতে সহীহা” তথা সঠিক অর্থে একান্তে অবস্থান সম্পন্ন হয়ে গিয়ে থাকে (অর্থাৎ যে অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম সম্ভব হয়ে থাকে) তাহলে এরপর তালাক দেয় হলে ইদ্দত অপরিহার্য হবে এবং একমাত্র এমন অবস্থায় ইদ্দত পালন করতে হবে না যখন খালওয়াতের (একান্তে অবস্থান) পূর্বে তালাক দিয়ে দেয়া হবে।
তিনঃ খালওয়াতের পূর্বে তালাক দিলে ইদ্দত নাকচ হয়ে যাবার অর্থ হচ্ছে, এ অবস্থায় পুরুষের রুজু করার অর্থাৎ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার খতম হয়ে যায় এবং তালাকের পরপরই যাকে ইচ্ছা বিয়ে করার অধিকার নারীর থাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ বিধান শুধুমাত্র খালওয়াতের পূর্বে তালাক দেবার সাথে সংশ্লিষ্ট। যদি খালওয়াতের পূর্বে স্বামী মারা যায় তাহলে এ অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুরপর যে ইদ্দত পালন করতে হয় তা বাতিল হয়ে যাবে না বরং বিবাহিতা স্বামীর সাথে সহবাস করেছে এমন স্ত্রীর জন্য চারমাস দশ দিনের ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব হয় তাই তার জন্যও ওয়াজিব হবে। (ইদ্দত বলতে এমন সময়কাল বুঝায় যা অতিবাহিত হবার পূর্বে নারীর জন্য দ্বিতীয় বিবাহ জায়েয নয়)
চারঃ مَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ (তোমাদের জন্য তাদের ওপর কোন ইদ্দত অপরিহার্য হবে না।) এ শব্দগুলো একথা প্রকাশ করে যে, ইদ্দত হচ্ছে স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার। কিন্তু এর এ অর্থ নয় যে, এটা শুধুমাত্র পুরুষের অধিকার। আসলে এর মধ্যে রয়েছে আরো দু’টি অধিকার। একটি হচ্ছে সন্তানের অধিকার এবং অন্যটি আল্লাহর বা শরীয়াতের অধিকার। পুরুষের অধিকার হচ্ছে এজন্য যে, এ অন্তরবর্তীকালে তার রুজু করার অধিকার থাকে। তাছাড়া আরো এজন্য যে, তার সন্তানের বংশ প্রমাণ ইদ্দত পালনকালে স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। সন্তানের অধিকার এর মধ্যে শামিল হবার কারণ হচ্ছে এই যে, পিতা থেকে পুত্রের বংশ-ধারা প্রমাণিত হওয়া তার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য জরুরী এবং তার নৈতিক মর্যাদাও তার বংশধারা সংশয়িত না হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তারপর এর মধ্যে আল্লাহর অধিকার (বা শরীয়াতের অধিকার) এজন্য শামিল হয়ে যায় যে, যদি লোকদের নিজেদের ও নিজেদের সন্তানদের অধিকারের পরোয়া না-ই বা হয় তবুও আল্লাহর শরীয়াত এ অধিকারগুলোর সংরক্ষণ জরুরী গণ্য করে। এ কারণেই কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে একথা লিখে দেয় যে, আমার মৃত্যুর পর অথবা আমার থেকে তালাক নেবার পর তোমার ওপর আমার পক্ষ থেকে কোন ইদ্দত ওয়াজিব হবে না তবুও শরীয়াত কোন অবস্থায়ই তা বাতিল করবে না।
পাঁচঃ فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا (এদেরকে কিছু সম্পদ দিয়ে ভালো মতো বিদায় করে দাও) এ হুকুমটির উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে হবে দু’টি পদ্ধতির মধ্য থেকে কোন একটি পদ্ধতিতে। যদি বিয়ের সময় মহর নির্ধারিত হয়ে থাকে এবং তারপর খালওয়াতের (স্বামী স্ত্রীর একান্ত অবস্থান) পূর্বে তালাক দেয়া হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে এ অবস্থায় অর্ধেক মহর দেয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে যেমন সূরা বাকারার ২৩৭ আয়াতে বলা হয়েছে এর বেশী কিছু দেয়া অপরিহার্য নয় কিন্তু মুস্তাহাব। যেমন এটা পছন্দনীয় যে, অর্ধেক মহর দেবার সাথে সাথে বিয়ের কনে সাজাবার জন্য স্বামী তাকে যে কাপড় চোপড় দিয়ে ছিল তা তার কাছে থাকতে দেবে অথবা যদি আরো কিছু জিনিসপত্র বিয়ের সময় তাকে দেয়া হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো ফেরত নেয়া হবে না। কিন্তু যদি বিয়ের সময় মহর নির্ধারিত না করা হয়ে থাকে তাহলে এ অবস্থায় স্ত্রীকে কিছু না কিছু দিয়ে বিদায় করে দেয়া ওয়াজিব। আর এ কিছু না কিছু হতে হবে মানুষের মর্যাদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী। যেমন সূরা বাকারার ২৩৬ আয়াতে বলা হয়েছে। আলেমগণের একটি দল এ মতের প্রবক্তা যে, মহর নির্ধারিত থাকা বা না থাকা অবস্থায়ও অবশ্যই “মুতা-ই-তালাক” দেয়া ওয়াজিব। (ইসলামী ফিকাহর পরিভাষায় মুতা-ই-তালাক এমন সম্পদকে বলা হয় যা তালাক দিয়ে বিদায় করার সময় নারীকে দেয়া হয়।)
ছয়ঃ ভালোভাবে বিদায় করার অর্থ কেবল “কিছু না কিছু” দিয়ে বিদায় করা নয় বরং একথাও এর অন্তর্ভুক্ত যে, কোন প্রকার অপবাদ না দিয়ে এবং বেইজ্জত না করে ভদ্রভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া। কোন ব্যক্তির যদি স্ত্রী পছন্দ না হয় অথবা অন্য কোন অভিযোগ দেখা দেয় যে কারণে সে স্ত্রীকে রাখতে চায় না, তাহলে ভালো লোকদের মতো সে তালাক দিয়ে বিদায় করে দেবে। এমন যেন না হয় যে, সে তার দোষ লোকদের সামনে বলে বেড়াতে থাকবে এবং তার বিরুদ্ধে এমনভাবে অভিযোগের দপ্তর খুলে বসবে যে অন্য কেউ আর তাকে বিয়ে করতে চাইবে না। কুরআনের এ উক্তি থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়ে যায় যে, তালাকের প্রয়োগকে কোন পঞ্চায়েত বা আদালতের অনুমতির সাথে সংশ্লিষ্ট করা আল্লাহর শরীয়াতের জ্ঞান ও কল্যাণনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ এ অবস্থায় “ভালোভাবে বিদায় দেবার” কোন সম্ভাবনাই থাকে না। বরং স্বামী না চাইলেও অপমান, বেইজ্জতি ও দুর্নামের ঝাক্কি পোহাতে হবেই। তাছাড়া পুরুষের তালাক দেবার ইখতিয়ার কোন পঞ্চায়েত বা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষ হবার কোন অবকাশই আয়াতের শব্দাবলীতে নেই। আয়াত একদম স্পষ্টভাবে বিবাহকারী পুরুষকে তালাকের ইখতিয়ার দিচ্ছে এবং তার ওপরই দায়িত্ব আরোপ করছে, সে যদি হাত লাগাবার পূর্বে স্ত্রীকে ত্যাগ করতে চায় তাহলে অবশ্যই অর্ধেক মহর দিয়ে বা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু সম্পদ দিয়ে তাকে বিদায় করে দেবে। এ থেকে পরিষ্কারভাবে আয়াতের এ উদ্দেশ্য জানা যায় যে, তালাককে খেলায় পরিণত হওয়ার পথ রোধ করার জন্য পুরুষের ওপর আর্থিক দায়িত্বের একটি বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সে নিজের তালাকের ইখতিয়ার ভেবে চিন্তে ব্যবহার করবে এবং পরিবারের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের কোন হস্তক্ষেপও হতে পারবে না। বরং স্বামী কেন স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছে একথা কাউকে বলতে বাধ্য হবার কোন সুযোগই আসবে না।
সাতঃ ইবনে আব্বাস (রা.), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব, হাসান বাসরী আলী ইবনুল হোসাইন (যয়নুল আবেদীন) ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল আয়াতের “যখন তোমরা বিয়ে করো এবং তারপর তালাক দিয়ে দাও” শব্দাবলী থেকে এ বিধান নির্ণয় করেছেন যে, তালাক তখনই সংঘটিত হবে যখন তার পূর্বে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। বিয়ের পূর্বে তালাক কার্যকর হয় না। কাজেই যদি কোন ব্যক্তি বলে, আমি অমুক মেয়েকে বা অমুক গোত্র বা জাতির মেয়েকে অথবা কোন মেয়েকে বিয়ে করলে তাকে তালাক” তাহলে তার এ উক্তি অর্থহীন পেশ করা যায়, রসূলে করীম ﷺ বলেছেনঃ আরবী لاطلاق لابن ادم فى مالا يملك “ইবনে আদম যে জিনিসের মালিক নয় তার ব্যাপারে তালাকের ইখতিয়ার ব্যবহার করার অধিকার তার নেই। আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ। তিনি আরো বলেছেনঃ ماطلاق قبل النكاح “বিয়ের পূর্বে কোন তালাক নেই” (ইবনে মাজাহ) কিন্তু ফকীহদের একটি বড় দল বলেন, এ আয়াত ও এ হাদীসগুলো কেবলমাত্র এখনই প্রযুক্ত হবে যখন কোন ব্যক্তি তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি এমন কোন মেয়েকে এভাবে বলে, তোমাকে তালাক অথবা আমি তোমাকে তালাক দিলাম। এ উক্তি যদি সে এভাবে বলে, যদি আমি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে তোমাকে তালাক”, তাহলে এটা বিয়ে করার পূর্বে তালাক দেয়া নয় বরং আসলে সে এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং ঘোষণা করছে যে, যখন সেই মেয়েটির সাথে তার বিয়ে হবে তখন তার ওপর তালাক অনুষ্ঠিত হবে। এ উক্তি অর্থহীন, উদ্ভট ও প্রভাবহীন হতে পারে না। বরং যখনই মেয়েটিকে সে বিয়ে করবে তখনই তার ওপর তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে। যেসব ফকীহ এ মত অবলম্বন করেছেন তাঁদের মধ্যে আবার এ বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে যে, এ ধরনের তালাকের প্রয়োগ সীমা কতখানি।
ইমাম আবু হানীফা মুহাম্মাদ ও ইমাম যুফার বলেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মেয়ে, কোন জাতি বা কোন গোত্র নির্দেশ করে বলে অথবা উদাহরণস্বরূপ সাধারণ কথায় এভাবে বলে, “যে মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো তাকেই তালাক।” তাহলে উভয় অবস্থায়ই তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে। আবু বকর জাসসাস এ একই অভিমত হযরত ওমর (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), ইবরাহীম নাখাঈ, মুজাহিদ ও উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহেমাহুমুল্লাহ থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
সুফিয়ান সওরী ও উসমানুল বাত্তী বলেন, তালাক কেবলমাত্র তখনি হবে যখন বক্তা এভাবে বলবে, “যদি আমি অমুক মেয়েকে বিয়ে করি তাহলে তার ওপর তালাক সংগঠিত হবে।”
হাসান ইবনে সালেহ, লাইস ইবনে সা’দ ও আমেরুশ শা’বী বলেন, এ ধরনের তালাক সাধারণভাবেও সংঘটিত হতে পারে, তবে শর্ত এই যে, এর প্রয়োগক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট হতে হবে। যেমন এক ব্যক্তি এভাবে বললোঃ “যদি আমি অমুক পরিবার, অমুক গোত্রে, অমুক শহর, অমুক দেশ বা অমুক জাতির মেয়ে বিয়ে করি, তাহলে তার ওপর তালাক কার্যকর হবে।”
ইবনে আবী লাইলা ও ইমাম মালেক ওপরে উদ্ধৃত মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করে অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করেন এবং বলেন, এর মধ্যে সময়-কালও নির্ধারিত হতে হবে। যেমন, যদি এক ব্যক্তি এভাবে বলে, “যদি আমি এ বছর বা আগামী দশ বছরের মধ্যে অমুক মেয়ে বা অমুক দলের মেয়েকে বিয়ে করি, তাহলে তার ওপর তালাক কার্যকর হবে অন্যথায় তালাক হবে না। বরং ইমাম মালেক এর ওপর আরো এতটুকু বৃদ্ধি করেন যে, যদি এ সময়-কাল এতটা দীর্ঘ হয় যার মধ্যে ঐ ব্যক্তির জীবিত থাকার আশা করা যায় না তাহলে তার উক্তি অকার্যকর হয়ে যাবে।
# যারা আপত্তি করে বলতো, “মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো অন্যদের জন্য একই সময় চারজনের বেশী স্ত্রী রাখতে নিষেধ করেন কিন্তু তিনি নিজে পঞ্চম স্ত্রী গ্রহণ করলেন কেমন করে,” এখানে আসলে তাদের জবাব দেয়া হয়েছে। এ আপত্তির ভিত্তি ছিল এরই ওপর যে, হযরত যয়নবকে (রা.) বিয়ে করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী ছিলেন চারজন। এদের একজন ছিলেন হযরত সওদা (রা.)। তাঁকে তিনি বিয়ে করেছিলেন হিজরাতের ৩ বছর আগে। দ্বিতীয় ছিলেন হযরত আয়েশা (রা.) তাঁকেও হিজরাতের ৩ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু হিজরী প্রথম বছরের শওয়াল মাসে তিনি স্বামীগৃহে আসেন। তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন হযরত হাফসা (রা.) ৩ হিজরীর শাবান মাসে তাঁকে বিয়ে করেন। চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন হযরত উম্মে সালামাহ (রা.)। ৪ হিজরীর শওয়াল মাসে নবী করীম ﷺ তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। এভাবে হযরত যয়নব (রা.) ছিলেন তাঁর পঞ্চম স্ত্রী। এর বিরুদ্ধে কাফের ও মুনাফিকরা যে আপত্তি জানাচ্ছিল তার জবাব আল্লাহ এভাবে দিচ্ছেনঃ হে নবী! তোমার এ পাঁচজন স্ত্রী, যাদের মহর আদায় করে তুমি বিয়ে করেছো, তাদেরকে আমি তোমার জন্য হালাল করে দিয়েছি। অন্যকথায় এ জবাবের অর্থ হচ্ছে, সাধারণ মুসলমানদের জন্য চার-এর সীমা নির্দেশও আমিই করেছি এবং নিজের নবীকে এ সীমার ঊর্ধ্বেও রেখেছি আমিই। যদি তাদের জন্য সীমা নির্দেশ করার ইখতিয়ার আমার থেকে থাকে, তাহলে নবীকে সীমার ঊর্ধ্বে রাখার ইখতিয়ার আমার থাকবে না কেন?
এ জবাবের ব্যাপারে আবার একথা মনে রাখতে হবে যে, এর সাহায্যে কাফের ও মুনাফিকদেরকে নিশ্চিন্ত করা এর উদ্দেশ্য নয় বরং এমন মুসলমানদেরকে নিশ্চিন্ত করা এর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম বিরোধীরা যাদের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল। তারা যেহেতু বিশ্বাস করতো, কুরআন আল্লাহর কালাম এবং আল্লাহর নিজের শব্দসহই এ কুরআন নাযিল হয়েছে, তাই কুরআনের একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য সম্বলিত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ এ ঘোষণা দিয়েছেনঃ নবী নিজেই নিজেকে চারজন স্ত্রী রাখার সাধারণ আইনের আওতার বাইরে রাখেননি বরং এ ব্যবস্থা আমিই করেছি।
# পঞ্চম স্ত্রীকে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য হালাল করা ছাড়াও আল্লাহ এ আয়াতে তাঁর জন্য আরো কয়েক ধরনের মহিলাদেরকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছেনঃ
একঃ আল্লাহ প্রদত্ত বাঁদীদের মধ্য থেকে যারা তাঁর মালিকানাধীন হয়। এ অনুমতি অনুযায়ী তিনি বনী কুরাইযার যুদ্ধবন্দিনীদের মধ্য থেকে হযরত রাইহানাকে (রা.), বনিল মুসতালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের মধ্য থেকে হযরত যুওয়াইরাকে (রা.), খয়বরের যুদ্ধবন্দিনীদের মধ্য থেকে হযরত সফীয়াকে (রা.) এবং মিসরের মুকাওকিস প্রেরিত হযরত মারিয়া কিবতিয়াকে (রা.) নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নেন। এদের মধ্য থেকে প্রথমোক্ত তিনজনকে তিনি মুক্তি দান করে তাদেরকে বিয়ে করেন। কিন্তু হযরত মারিয়া কিবতিয়ার (রা.) সাথে মালিকানাধীন হবার ভিত্তিতে সহবাস করেন। তিনি তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করেন একথা তার সম্পর্কে প্রমাণিত নয়।
দুইঃ তাঁর চাচাত, মামাত, ফুফাত ও খালাত বোনদের মধ্য থেকে যারা হিজরাতে তাঁর সহযোগী হন। আয়াতে তাঁর সাথে হিজরত করার যে কথা এসেছে তার অর্থ এ নয় যে, হিজরাতের সফরে তাঁর সাথেই থাকতে হবে বরং এর অর্থ ছিল, ইসলামের জন্য তাঁরাও আল্লাহর পথে হিজরত করেন। তাঁর ওপরে উল্লেখিত মুহাজির আত্মীয়দের মধ্য থেকেও যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করার ইখতিয়ারও তাঁকে দেয়া হয়। কাজেই এ অনুমতির ভিত্তিতে তিনি ৭ হিজরী সালে হযরত উম্মে হাবীবাকে (রা.) বিয়ে করেন। (পরোক্ষভাবে এ আয়াতে একথা সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, চাচা, মামা, ফুফী ও খালার মেয়েকে বিয়ে করা একজন মুসলমানের জন্য হালাল। এ ব্যাপারে ইসলামী শরীয়াত খৃস্ট ও ইহুদী উভয় ধর্ম থেকে আলাদা। খৃস্টীয় বিধানে এমন মহিলাকে বিয়ে করা অবৈধ যার সাথে সাত পুরুষ পর্যন্ত পুরুষের বংশধারা মিলে যায়। আর ইহুদীদের সমাজে সহোদর ভাইঝি ও ভাগনীকেও বিয়ে করা বৈধ।)
তিনঃ যে মু’মিন নারী নিজেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য ‘হিবা’ তথা দান করে অর্থাৎ মহর ছাড়াই নিজেকে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে তৈরি হয়ে যায় এবং নবী (সা.) তা গ্রহণ করা পছন্দ করেন। এ অনুমতির ভিত্তিতে তিনি ৭ হিজরীর শওয়াল মাসে হযরত মায়মুনাকে (রা.) নিজের সহধর্মিনী রূপে গ্রহণ করেন। কিন্তু মহর ছাড়া তার হিবার সুযোগ নেয়া পছন্দ করেননি। তাই তার কোন আকাঙ্ক্ষা ও দাবী ছাড়াই তাঁকে মহর দান করেন। কোন কোন তাফসীরকার বলেন, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন হিবাকারিনী স্ত্রী ছিল না। কিন্তু এর অর্থ আসলে হচ্ছে এই যে, তিনি হিবাকারিনী কোন স্ত্রীকেও মহর থেকে বঞ্চিত করেননি।
# এ বাক্যটির সস্পর্ক যদি নিকটের বাক্যের সাথে মেনে নেয়া হয়, তাহলে এর অর্থ হবে, অন্য কোন মুসলমানের জন্য কোন মহিলা নিজেকে তার হাতে হিবা করবে এবং সে মহর ছাড়াই তাকে বিয়ে করবে, এটা জায়েয নয়। আর যদি ওপরের সমস্ত ইবারতের সাথে এর সম্পর্ক মেনে নেয়া হয়, তাহলে এর অর্থ হবে, চারটির বেশী বিয়ে করার সুবিধাও একমাত্র নবী করীমের ﷺ জন্যই নির্দিষ্ট, সাধারণ মুসলমানের জন্য নয়। এ আয়াত থেকে একথাও জানা যায় যে, কিছু বিধান নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে, উম্মাতের অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে তাঁর সাথে শরীক নেই। কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে তাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিয়ে এ ধরনের বহু বিধানের কথা জানা যায়। যেমন নবী করীমের ﷺ জন্য তাহাজ্জুদের নামায ফরয ছিল এবং সমগ্র উম্মাতের জন্য তা নফল। তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্য সাদকা নেয়া হারাম এবং অন্য কারোর জন্য তা হারাম নয়। তাঁর মীরাস বণ্টন হতে পারতো না কিন্তু অন্য সকলের মীরাস বন্টনের জন্য সূরা নিসায় বিধান দেয়া হয়েছে। তাঁর জন্য চারজনের অধিক স্ত্রী হালাল করা হয়েছে। স্ত্রীদের মধ্যে সমতাপূর্ণ ইনসাফ তাঁর জন্য ওয়াজিব করা হয়নি। নিজেকে হিবাকারী নারীকে মহর ছাড়াই বিয়ে করার অনুমতি তাঁকে দেয়া হয়েছে। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণকে সমগ্র উম্মাতের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমন একটি বিশেষত্ত্বও নেই যা নবী করীম ﷺ ছাড়া অন্য কোন মুসলমানও অর্জন করেছে। মুফাসসিরগণ তাঁর আর একটি বৈশিষ্ট্যও বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছে এই যে, আহলি কিতাবের কোন মহিলাকে বিয়ে করাও তাঁর জন্য নিষিদ্ধ ছিল। অথচ উম্মাতের সবার জন্য তারা হালাল।
# সাধারণ নিয়ম থেকে মহান আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে আলাদা রেখেছেন তার মধ্যে রয়েছে এ সুবিধা ও কল্যাণ। “যাতে সংকীর্ণতা ও অসুবিধা না থাকে”-এর অর্থ এ নয় যে, নাউযুবিল্লাহ তাঁর প্রবৃত্তির লালসা খুব বেশী বেড়ে গিয়েছিল বলে তাঁকে বহু স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়া হয়, যাতে শুধুমাত্র চারজন স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে তিনি সংকীর্ণতা ও অসুবিধা অনুভব না করেন। এ বাক্যাংশের এ অর্থ কেবলমাত্র এমন এক ব্যক্তি গ্রহণ করতে পারে যে বিদ্বেষ ও সংকীর্ণ স্বার্থপ্রীতিতে অন্ধ হয়ে একথা ভুলে যায় যে, মুহাম্মাদ ﷺ ২৫ বছর বয়সে এমন এক মহিলাকে বিয়ে করেন যার বয়স ছিল তখন ৪০ বছর এবং পুরো ২৫ বছর ধরে তিনি তাঁর সাথে অত্যন্ত সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করতে থাকেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তিনি অন্য একজন অধিক বয়সের বিগত যৌবনা মহিলা হযরত সওদাকে (রা.) বিয়ে করেন। পুরো চার বছর পর্যন্ত তিনি একাই ছিলের তাঁর স্ত্রী। এখন কোন বুদ্ধিমান বিবেকবান ব্যক্তি একথা কল্পনা করতে পারে যে, ৫৩ বছর পার হয়ে যাবার পর সহসা তাঁর যৌন কামনা বেড়ে যেতে থাকে এবং তাঁর অনেক বেশী সংখ্যক স্ত্রীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে? আসলে “সংকীর্ণতা ও অসুবিধা না থাকে”-এর অর্থ অনুধাবন করতে হলে একদিকে নবী করীমের ﷺ ওপর আল্লাহ যে মহান দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন তার প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং অন্যদিকে যে অবস্থার মধ্যে আল্লাহ তাঁকে এ মহান দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন তা অনুধাবন করা জরুরী। সংকীর্ণ স্বার্থপ্রীতি থেকে মন-মানসিতকাকে মুক্ত করে যে ব্যক্তিই এ দু’টি সত্য অনুধাবন করবেন তিনিই স্ত্রী গ্রহণের ব্যাপারে তাঁকে ব্যাপক অনুমতি দেয়া কেন জরুরী ছিল এবং চারের সীমারেখা নির্দেশের মধ্যে তাঁর জন্য কি সংকীর্ণতা ও অসুবিধা ছিল তা ভালোভাবেই জানতে পারবেন।
নবী করীমকে ﷺ যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই যে, তিনি একটি অসংগঠিত ও অপরিপক্ব জাতিকে, যারা কেবল ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই নয় বরং সাধারণ সভ্যতা সংস্কৃতির দৃষ্টিতেও ছিল অগোছালো ও অগঠিত, তাদেরকে জীবনের প্রতিটি বিভাগে শিক্ষা ও অনুশীলনের মাধ্যমে একটি উন্নত পর্যায়ের সুসভ্য, সংস্কৃতিবান ও পরিচ্ছন্ন জাতিতে পরিণত করবেন। এ উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র পুরুষদেরকে অনুশীলন দেয়া যথেষ্ট ছিল না বরং মহিলাদের অনুশীলনও সমান জরুরী ছিল। কিন্তু সভ্যতা ও সংস্কৃতির যে মূলনীতি শিখাবার জন্য তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন তার দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ ছিল এবং এ নিয়ম ভংগ করা ছাড়া তাঁর পক্ষে মহিলাদেরকে সরাসরি অনুশীলন দান করা সম্ভবপর ছিল না। তাই মহিলাদের মধ্যে কাজ করার কেবলমাত্র একটি পথই তাঁর জন্য খোলা ছিল এবং সেটি হচ্ছে, বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন বৃদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা সম্পন্ন মহিলাদেরকে তিনি বিয়ে করতেন, নিজে সরাসরি তাদেরকে অনুশীলন দান করে তার নিজের সাহায্য সহায়তার জন্য প্রস্তুত করতেন এবং তারপর তাদের সাহায্যে নগরবাসী ও মরুচারী এবং যুবতী, পৌঢ় ও বৃদ্ধা সব ধরনের নারীদেরকে দ্বীন, নৈতিকতা ও কৃষ্টি সংস্কৃতির নতুন নীতিসমূহ শিখাবার ব্যবস্থা করতেন।
এছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পুরাতন জাহেলী জীবন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে তার জায়গায় কার্যত ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। এ দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য জাহেলী জীবন ব্যবস্থার প্রবক্তা ও পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। এ সংঘাত এমন একটি দেশে শুরু হতে যাচ্ছিল যেখানে গোত্রীয় জীবনধারা নিজের বিশেষ বিশেষ সাংস্কৃতিক অবয়বে প্রচলিত ছিল। এ অবস্থায় অন্যান্য ব্যবস্থার সাথে বিভিন্ন পরিবারে বিয়ে করে বহুবিধ বন্ধুত্বকে পাকাপোক্ত এবং বহুতর শত্রুতাকে খতম করার ব্যবস্থা করা তাঁর জন্য জরুরী ছিল। তাই যেসব মহিলাকে তিনি বিয়ে করেন তাঁদের ব্যক্তিগত গুণাবলী ছাড়াও তাঁদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও কমবেশী জড়িত ছিল। হযরত আয়েশা (রা.) ও হযরত হাফসাকে (রা.) বিয়ে করে তিনি হযরত আবুবকর (রা.) ও হযরত উমরের (রা.) সাথে নিজের সম্পর্ককে আরো বেশী গভীর ও মজবুত করে নেন। হযরত উম্মে সালামাহ (রা.) ছিলেন এমন এক পরিবারের মেয়ে যার সাথে ছিল আবু জেহেল ও খালেদ ইবনে ওলিদের সম্পর্ক। হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) ছিলেন আবু সুফিয়ানের মেয়ে। এ বিয়েগুলো সংশ্লিষ্ট পরিবার গুলোর শত্রুতার জের অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। বরং হযরত উম্মে হাবীবার সাথে নবী করীমের ﷺ বিয়ে হবার পর আবু সুফিয়ান আর কখনো তাঁর মোকাবিলায় অস্ত্র ধরেননি। হযরত সুফিয়া (রা.), হযরত জুওয়াইরিয়া (রা.) ও হযরত রাইহানা (রা.) ইহুদি পরিবারের মেয়ে ছিলেন। তাঁদেরকে মুক্ত করে দিয়ে যখন নবী করীম (রা.) তাঁদেরকে বিয়ে করেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিদের তৎপরতা স্তিমিত হয়ে পড়ে। কারণ সে যুগের আরবীয় নীতি অনুযায়ী যে ব্যক্তির সাথে কোন গোত্রের মেয়ের বিয়ে হতো তাকে কেবল মেয়েটির পরিবারেরই নয় বরং সমগ্র গোত্রের জামাতা মনে করা হতো এবং জামাতার সাথে যুদ্ধ করা ছিল বড়ই লজ্জাকর।
সমাজের কার্যকর সংশোধন এবং তার জাহেলী রসম রেওয়াজ নির্মূল করাও তাঁর নবুওয়াতের অন্যতম দায়িত্ব ছিল। কাজেই এ উদ্দেশ্যেও তাঁকে একটি বিয়ে করতে হয়। সূরা আহযাবে এ বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা হয়ে গেছে।
এসব বিষয় বিয়ের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য কোন রকম সংকীর্ণতা ও অসুবিধা না রাখার তাগাদা করছিল। এর ফলে যে মহান দায়িত্ব তাঁর প্রতি অর্পিত হয়েছিল তার প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিয়ে করতে পারতেন।
যারা মনে করেন একাধিক বিয়ে কেবলমাত্র কয়েকটি বিশেষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই বৈধ এবং সেগুলো ছাড়া তা বৈধ হবার পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, এ বর্ণনা থেকে তাদের চিন্তার বিভ্রান্তিও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। একথা সুস্পষ্ট যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক বিয়ে করার পেছনে তা স্ত্রীর রুগ্নতা, বন্ধ্যাত্ব বা সন্তানহীনতা অথবা এতিম প্রতিপালনের সমস্যা ছিল না। এসব সীমাবদ্ধ ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া তিনি সমস্ত বিয়ে করেন প্রচার ও শিক্ষামূলক প্রয়োজনে অথবা সমাজ সংস্কারার্থে কিংবা রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্যে। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন আজ হাতেগোনা যে কয়টি বিশেষ উদ্দেশ্যের কথা বলা হচ্ছে আল্লাহ নিজেই সেগুলোর জন্য একাধিক বিয়েকে সীমাবদ্ধ করে রাখেননি এবং আল্লাহর রসূল এগুলো ছাড়া অন্যান্য বহু উদ্দেশ্যে একাধিক বিয়ে করেছেন তখন অন্য ব্যক্তি আইনের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কতিপয় শর্ত ও বিধি-নিষেধ আরোপ করার এবং সে শরীয়াত অনুযায়ী এ নির্ধারণ করছে বলে দাবী করার কী অধিকার রাখে? আসলে একাধিক বিয়ে মূলতই একটি অপকর্ম, এই পাশ্চত্য ধারণাটি উক্ত সীমা নির্ধারণের মূলে কাজ করছে। উক্ত ধারণার ভিত্তিতে এ মতবাদেরও জন্ম হয়েছে যে, এ হারাম কাজটি যদি কখনো হালাল হয়েও যায় তাহলে তা কেবলমাত্র অপরিহার্য প্রয়োজনের জন্যই হতে পারে। এখন এ বাইর থেকে আমদানী করা চিন্তার ওপর ইসলামের জাল ছাপ লাগাবার যতই চেষ্টা করা হোক না কেন কুরআন ও সুন্নাহ এবং সমগ্র উম্মাতে মুসলিমার সাহিত্য এর সাথে মোটেই পরিচিত নয়।
# নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সংসার জীবনের সংকটমুক্ত করাই ছিল এ আয়াতটির উদ্দেশ্য। এর ফলে তিনি পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ততার সাথে নিজের কাজ করতে পারতেন। যখন আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় তাঁকে পবিত্র স্ত্রীদের মধ্য থেকে যার সাথে তিনি যেমন ব্যবহার করতে চান তা করার ইখতিয়ার দিয়ে দেন তখন এ মু’মিন ভদ্রমহিলাদের তাঁকে কোনভাবে পেরেশান করার অথবা পরস্পর ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতার কলহ সৃষ্টি করে সমস্যার মুখোমুখি করার আর কোন সম্ভাবনাই থাকে না। কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে এ ইখতিয়ার লাভ করার পরও নবী করীম (রা.) সকল স্ত্রীদের মধ্যে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ কায়েম করেন, কাউকেও কারো ওপর প্রাধান্য দেননি এবং যথারীতি পালা নির্ধারণ করে কায়েম করেন, তিনি সবার কাছে যেতে থাকেন। মুহাদ্দিসদের মধ্যে একমাত্র আবু রাযীন বর্ণনা করেন, নবী করীম (রা.) কেবলমাত্র চারজন স্ত্রীর (হযরত আয়েশা, হযরত হাফসাহ, হযরত যয়নব ও হযরত উম্মে সালামাহ) জন্য পালা নির্ধারণ করেন, বাকি অন্য সকল স্ত্রীর জন্য কোন পালা নির্দিষ্ট করেননি। কিন্তু অন্য সকল মুহাদ্দিস ও মুফাসসির এর প্রতিবাদ করেন। তাঁরা অত্যন্ত শক্তিশালী রেওয়ায়াতের মাধ্যমে এ প্রমাণ পেশ করেন যে, এ ইখতিয়ার লাভ করার পরও নবী করীম (রা.) সকল স্ত্রীর কাছে পালাক্রমে যেতে থাকেন এবং সবার সাথে সমান ব্যবহার করতে থাকেন। বুখারী, তিরমিযী, নাসাঈ ও আবু দাউদ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হযরত আয়েশার এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ “এ আয়াত নাযিলের পর নবী করীমের ﷺ রীতি এটিই ছিল যে, তিনি আমাদের মধ্য থেকে কোন স্ত্রীর পালার দিন অন্য স্ত্রীর কাছে যেতে হলে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তবে যেতেন।” আবু বকর জাসসাস হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইরের (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, হযরত আয়েশা (রা.) তাঁকে বলেনঃ “রসূলুল্লাহ ﷺ পালা বন্টনের ক্ষেত্রে আমাদের কাউকে কারো ওপর প্রাধান্য দিতেন না। যদিও এমন ঘটনা খুব কমই ঘটতো যে, তিনি একই দিন নিজের সকল স্ত্রীর কাছে যাননি। তবুও যে স্ত্রীর পালার দিন হতো সেদিন তাকে ছাড়া আর কাউকে স্পর্শও করতেন না। হযরত আয়েশা (রা.) এ হাদীসটিও বর্ণনা করেছেনঃ যখন নবী ﷺ তাঁর শেষ রোগে আক্রান্ত হন এবং চলাফেরা করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে তখন তিনি সকল স্ত্রীদের থেকে অনুমতি চান এই মর্মে, আমাকে আয়েশার কাছে থাকতে দাও। তারপর যখন সবাই অনুমতি দেন তখন তিনি শেষ সময়ে হযরত আয়েশার (রা.) কাছে থাকেন। ইবনে আবি হাতেম ইমাম যুহরীর উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন স্ত্রীকে পালা থেকে বঞ্চিত করার কথা প্রমাণিত নয়। একমাত্র হযরত সওদা (রা.) এর ব্যতিক্রম। তিনি সানন্দে নিজের পালা হযরত আয়েশাকে (রা.) দিয়ে দেন। কারণ তিনি অনেক বয়োবৃদ্ধা হয়ে পড়েছিলেন।
এখানে কারো মনে এ ধরনের কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে, আল্লাহ এ আয়াতে তাঁর নবীর জন্য নাউযুবিল্লাহ কোন অন্যায় সুবিধা দান করেছিলেন এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণের অধিকার হরণ করেছিলেন। আসলে যেসব মহৎ কল্যাণ ও সুবিধার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারটি সাধারণ নিয়মের বাইরে রাখা হয়েছিল নবীকে সাংসারিক জীবনে শান্তি দান করা এবং যেসব কারণে তাঁর মনে পেরেশানী সৃষ্টি হতে পারে সেগুলোর পথ বন্ধ করে দেয়া ছিল সেসব কল্যাণ ও সুবিধারই দাবী। নবীর পবিত্র স্ত্রীগণের জন্য এটা ছিল বিরাট মর্যাদার ব্যাপার। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ন্যায় মহামহিম ব্যক্তিত্বের স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এরই বদৌলতে তাঁরা ইসলামী দাওয়াত ও সংস্কারের এ মহিমান্বিত কর্মে নবী করীমের ﷺ সহযোগী হতে সক্ষম হয়েছিলেন, যিনি কিয়ামত পর্যন্ত মানবতার কল্যাণের মাধ্যমে পরিণত হতে যাচ্ছিলেন। এ উদ্দেশ্যে নবী ﷺ যেমন অসাধারণ ত্যাগ ও কুরবানীর পথ অবলম্বন করেছিলেন এবং সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের সামর্থ্যের শেষ সীমা পর্যন্ত কুরবানী করে চলছিলেন ঠিক তেমনি ত্যাগ স্বীকার করা নবীর ﷺ পবিত্র স্ত্রীগণেরও কর্তব্য ছিল। তাই নবী করীমের ﷺ সকল স্ত্রী মহান আল্লাহর এ ফায়সালা সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন।
# এটি নবী করীমের ﷺ পবিত্র স্ত্রীগণের জন্যও সতর্কবাণী এবং অন্য সমস্ত লোকদের জন্যও। পবিত্র স্ত্রীগণের জন্য এ বিষয়ের সতর্কবাণী যে, আল্লাহর এ হুকুম এসে যাবার পর যদি তাদের হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে তারা পাকড়াও থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে না। অন্য লোকদের জন্য এর মধ্যে এ সতর্কবাণী রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে যদি তারা কোন প্রকার ভুল ধারণাও নিজেদের মনে পোষণ করে অথবা চিন্তা-ভাবনার কোন পর্যায়েও কোন প্ররোচনা লালন করতে থাকে, তাহলে আলাহর কাছে তাদের এ প্রচ্ছন্ন দুস্কৃতি গোপন থাকবে না। এই সাথে আল্লাহর সহিষ্ণুতা গুণের কথাও বলে দেয়া হয়েছে। এভাবে মানুষ জানবে, নবী সম্পর্কে গোস্তাখীমূলক চিন্তা যদিও কঠিন শাস্তিযোগ্য তবুও যার মনে কখনো এ ধরনের প্ররোচনা সৃষ্টি হয় সে যদি তা বের করে দেয়, তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের আশা আছে।
# এ উক্তিটির দু’টি অর্থ রয়েছে। এক ওপরে ৫০ আয়াতে নবী করীমের ﷺ জন্য যেসব নারীকে হালাল করে দেয়া হয়েছে তারা ছাড়া আর কোন নারী এখন আর তার জন্য হালাল নয়। দুই, যখন তার পবিত্র স্ত্রীগণ অভাবে অনটনে তার সাথে থাকবেন বলে রাজী হয়ে গেছেন এবং আখেরাতের জন্য তারা দুনিয়াকে বিসর্জন দিয়েছেন আর তিনি তাদের সাথে যে ধরনের আচরণ করবেন তাতেই তারা খুশী তখন এক্ষেত্রে আর তার জন্য তাদের থেকে কাউকে তালাক দিয়ে তার জায়গায় অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা হালাল নয়। এ উক্তিটির দু’টি অর্থ রয়েছে। এক ওপরে ৫০ আয়াতে নবী করীমের ﷺ জন্য যেসব নারীকে হালাল করে দেয়া হয়েছে তারা ছাড়া আর কোন নারী এখন আর তাঁর জন্য হালাল নয়। দুই, যখন তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণ অভাবে অনটনে তাঁর সাথে থাকবেন বলে রাজী হয়ে গেছেন এবং আখেরাতের জন্য তাঁরা দুনিয়াকে বিসর্জন দিয়েছেন আর তিনি তাঁদের সাথে যে ধরনের আচরণ করবেন তাতেই তাঁরা খুশী তখন এক্ষেত্রে আর তাঁর জন্য তাঁদের মধ্য থেকে কাউকে তালাক দিয়ে তাঁর জায়গায় অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা হালাল নয়।
# এ আয়াতটি পরিষ্কার করে একথা বর্ণনা করছে যে, বিবাহিতা স্ত্রীগণ ছাড়া মালিকানাধীন নারীদের সাথেও মিলনের অনুমতি রয়েছে এবং তাদের ব্যাপারে কোন সংখ্যা-সীমা নেই। সূরা নিসার ৩ আয়াতে, সূরা মু’মিনূনের ৬ আয়াতে এবং সূরা মা’আরিজের ৩০ আয়াতে এ বিষয়বস্তুটি পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে। এ সমস্ত আয়াতে মালিকানাধীন মহিলাদেরকে বিবাহিতা নারীদের মোকাবিলায় একটি আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তারপর তাদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনকে বৈধ গণ্য করা হয়েছে। এছাড়াও সূরা নিসার ৩ আয়াত বিবাহিতা স্ত্রীদের জন্য ৪ জনের সীমারেখা নির্ধারণ করে। কিন্তু সেখানে আল্লাহ মালিকানাধীন মহিলাদের কোন সংখ্যাসীমা বেঁধে দেননি এবং এতদসংক্রান্ত অন্য আয়াতগুলোতেও কোথাও এ ধরনের কোন সীমার প্রতি ইঙ্গিতও করেননি। বরং এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে, আপনার জন্য এরপর অন্য মহিলাদেরকে বিয়ে করা অথবা কাউকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী নিয়ে আসা হালাল নয়। তবে মালিকানাধীন মহিলারা হালাল। এ থেকে পরিষ্কার প্রকাশ হয় মালিকানাধীন মহিলাদের ব্যাপারে কোন সংখ্যা-সীমা নির্ধারিত নেই।
কিন্তু এর অর্থ এ নয়, ইসলামী শরীয়াত ধনীদের অসংখ্য বাঁদী কিনে আয়েশ করার জন্য এ সুযোগ দিয়েছে। বরং আসলে প্রবৃত্তি পূজারী লোকেরা এ আইনটি থেকে অযথা সুযোগ গ্রহণ করেছে। আইন তৈরি করা হয়েছিল মানুষের সুবিধার জন্য। আইন থেকে এ ধরনের সুযোগ গ্রহণের জন্যও তা তৈরি করা হয়নি। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঠিক তেমনি যেমন শরীয়াত একজন পুরুষকে চারজন পর্যন্ত মহিলাকে বিয়ে করার অনুমতি দেয় এবং তাকে নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করারও অনুমতি দেয়। মানুষের প্রয়োজন সামনে রেখে এ আইন তৈরি করা হয়েছিল। এখন যদি কোন ব্যক্তি নিছক আয়েশ করার জন্য চারটি মহিলাকে বিয়ে করে কিছুদিন তাদের সাথে থাকার পর তাদেরকে তালাক দিয়ে আবার নতুন করে চারটি বউ ঘরে আনার ধারা চালু করে, তাহলে এটা তো আইনের অবকাশের সুযোগ গ্রহণ করাই হয়। এর পুরো দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপরই বর্তাবে, আল্লাহর শরীয়াতের ওপর নয়। অনুরূপভাবে যুদ্ধে গ্রেফতারকৃত মহিলাদেরকে যখন তাদের জাতি মুসলিম বন্দীদের বিনিময়ে ফিরিয়ে নিতে অথবা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসে না তখন ইসলামী শরীয়াত তাদেরকে বাঁদী হিসেবে গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় তাদের ঐ সব মহিলার সাথে সঙ্গম করার অধিকার দিয়েছে। এর ফলে তাদের অস্তিত্ব সমাজে নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। তারপর যেহেতু বিভিন্ন যুদ্ধে গ্রেফতার হয়ে আসা লোকদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে না, তাই আইনগতভাবে এক ব্যক্তি একই সঙ্গে ক’জন গোলাম বা বাঁদী রাখতে পারে, এরও কোন সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। গোলাম ও বাঁদীদের বেচাকেনাও এজন্য বৈধ রাখা হয়েছে যে, যদি কোন গোলাম বা বাঁদীর তার মালিকের সাথে বনিবনা না হয় তাহলে সে অন্য মালিকের অধীনে চলে যেতে পারবে এবং এক ব্যক্তির চিরন্তন মালিকানা মালিক ও অধীনস্থ উভয়ের জন্য আযাবে পরিণত হবে না। শরীয়াত এ সমস্ত নিয়ম ও বিধান তৈরি করেছিল মানুষের অবস্থা ও প্রয়োজন সামনে রেখে তার সুবিধার জন্য। যদি ধনী লোকেরা একে বিলাসিতার মাধ্যমে পরিণত করে নিয়ে থাকে তাহলে এজন্য শরীয়াত নয়, তারাই অভিযুক্ত হবে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
# ৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বে যায়েদ কর্তৃক যায়নাবকে তালাক দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যায়েদ ও যায়নাবের দৈহিক মিলন হয়েছিল। যায়নাবের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এ আয়াতে বিবাহোত্তর দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দিলে স্ত্রীর বিধান কী হবে সে কথাই আলোচনা করা হয়েছে। বিবাহোত্তর দৈহিক মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত পালন করতে হবে না। সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে যে শ্রেণির তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত পালনের কথা বলা হয়েছে তা থেকে এ শ্রেণির নারী ভিন্ন। যা এ আয়াত থেকে স্পষ্টই বুঝা যায়। এমতাবস্থায় সে চাইলে কোন প্রকার ইদ্দত ছাড়াই অন্য স্বামীর নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তবে যদি বিবাহের পর দৈহিক মিলনের পূর্বে স্বামী মারা যায় তাহলে ঐ স্ত্রীকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতেই হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَّعَشْرًا)
“আর তোমাদের মধ্যে স্ত্রী রেখে যারা মারা যায় তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।” (সূরা বাকরাহ ২:২৩৪)
এক্ষেত্রে আরো একটি বিধান হল যে, বিবাহের পর স্ত্রীকে যদি দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দেয় তাহলে স্ত্রী তার নির্ধারিত মাহরের অর্ধেক পাবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَإِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّآ أَنْ يَّعْفُوْنَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِيْ بِيَدِه۪ عُقْدَةُ النِّكَاحِ)
“আর যদি তোমরা তাদের মাহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও তবে যা নির্ধারণ করেছ তার অর্ধেক (স্ত্রী) পাবে। তবে যদি তারা ক্ষমা করে অথবা যার হাতে বিয়ের বন্ধন সে ক্ষমা করে।” (সূরা বাকরাহ ২:২৩৭)
আর যদি মাহর নির্ধারণ না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সাধ্যানুসারে তাদেরকে কিছু অর্থ সামগ্রী দিয়ে দিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا جُنَاحَ عَلَیْکُمْ اِنْ طَلَّقْتُمُ النِّسَا۬ئَ مَا لَمْ تَمَسُّوْھُنَّ اَوْ تَفْرِضُوْا لَھُنَّ فَرِیْضَةًﺊ وَّمَتِّعُوْھُنَّﺆ عَلَی الْمُوْسِعِ قَدَرُھ۫ وَعَلَی الْمُقْتِرِ قَدَرُھ۫ﺆ مَتَاعًۭا بِالْمَعْرُوْفِﺆ حَقًّا عَلَی الْمُحْسِنِیْنَﰻ)
“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করার আগে এবং তাদের জন্য মাহর ধার্য করার আেেগ যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। তোমরা তাদের কিছু খরচ দেবে, ধনীরা তাদের সাধ্যমত দেবে এবং গরীবরাও তাদের সাধ্য অনুযায়ী দেবে। ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ প্রদান করা সৎ কর্মশীলদের ওপর দায়িত্ব।” (সূরা বাকারাহ ২:২৩৬)
হাদীসে এসেছে, সাহল বিন সা‘দ ও আবী উসাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমুনাহ বিনতে শারাহীল -কে বিবাহ করলেন। অতঃপর সে যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল তখন তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। কিন্তু সে যেন এটা অপছন্দ করল। তখন তিনি আবূ উসাইদ (রাঃ)-কে হুকুম করলেন যে, তার বিদায়ের সামান তৈরী করে দেয়া হোক এবং মূল্যবান দু‘খানা কাপড় তাকে পরিয়ে দেয়া হোক। (সহীহ বুখারী হা: ৫২৫৬-৭)
কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে, ইজ্জত ও সম্মানের সাথে কিছু দিয়ে বিদায় করে দেয়াটাই হচ্ছে সৌজন্যর সাথে বিদায় করে দেয়া।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দৈহিক মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না, তবে যদি স্বামী মারা যায় তাহলে চার মাস দশদিন তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে।
২. দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দিলে স্ত্রী নির্ধারিত মাহরের অর্ধেক পাবে। আর যদি মাহর নির্ধারিত না হয় তাহলে সাধ্যানুসারে যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়ে দেবে।
৫০-৫১ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতদ্বয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবাহের কিছু বিধি-বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো কেবল তার নিজের জন্যই নির্দিষ্ট, অন্য কোন মু’মিন ব্যক্তিবর্গের জন্য নয়।
(إِنَّآ أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللّٰاتِيْٓ اٰتَيْتَ أُجُوْرَهُنَّ)
‘আমি তোমার জন্য তোমার সেই স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদের মাহর তুমি প্রদান করেছ’ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সকল স্ত্রীদেরকে মাহর দিয়ে বিবাহ করেছেন তারা সকলেই তাঁর জন্য বৈধ। যদিও এ বিধান সকল মু’মিনদের জন্য; কিন্তু মু’মিনরা মাহর দিয়েও চারের অধিক স্ত্রী একত্রে রাখতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যত স্ত্রীকে মাহর দিয়েছিলেন সকলেই তাঁর জন্য বৈধ ছিল। কেননা এ বিধান যখন অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী চারের অধিক ছিল। আর এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্যই নির্দিষ্ট।
(وَمَا مَلَكَتْ يَمِيْنُكَ مِمَّآ أَفَا۬ءَ اللّٰهُ عَلَيْكَ)
‘সেই নারীদেরকেও যাদেরকে আল্লাহ তোমার মালিকানাধীন করেছেন গণিমতরূপে’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অধীনে যে সকল দাসী রয়েছে তারা সকলেই তাঁর জন্য বৈধ। যদিও এখানে ‘‘ফাই” এর মাল হিসেবে যে দাসী হস্তগত হয় তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ”ফাই” এর মাল ছাড়াও তার অধিনস্ত যে কোন দাসী তাঁর জন্য বৈধ করা হয়েছে। এটা শুধু রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং সকল মু’মিনদের জন্যই এটা বৈধ যে, তাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করা। এমনকি সাধারণ লোকদের দাসী অন্যের হস্তগত হলে সে তার সঙ্গে সহবাস করতে পারবে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীরা যেমন অন্যের জন্য বৈধ নয় তদ্রƒপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাসীরাও অন্যের জন্য বৈধ নয়। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে অনেকে চুক্তিভিত্তিক কাজের মেয়েদের তৎকালীন দাসীদের সাথে তুলনা করে এদের সাথেও ঐরুপ আচরণ করতে চায় যা কখনোই সঠিক হবেনা, কারণ তাদের অধিকাংশই মুসলিম স্বাধীন নারী যারা অভাবের তাড়নায় অন্যের বাড়ীতে কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করে তারা যেকোন মূহুর্তে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে কিন্তু তৎকালীন দাসীদের এ ক্ষমতা ছিলনা। বিধায় বর্তমানে কাজের মেয়ে হিসেবে যারা অন্যের বাড়ীতে কাজ করে তারা দাসী নয় এবং তাদের সাথে দাসীদের আচরণও করা যাবেনা। তবে অবশ্যই বিবাহের মাধ্যমে তাদের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলে কোন সমস্যা নেই।
(وَبَنٰتِ عَمِّكَ وَبَنٰتِ عَمّٰتِكَ)
অর্থাৎ হে নাবী! যেসকল স্ত্রীদেরকে মাহর দিয়েছ ও যারা দাসী হিসেবে তোমার অধিনস্থ হয়েছে তাদের ন্যায় তোমার চাচা, ফুফু এবং মামা ও খালার কন্যাদেরকে বিবাহ করা বৈধ করা হয়েছে। এতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই, কারণ সাধারণ মু’মিনরাও তো তাদের বিবাহ করতে পারবে। বিশেষত্ব হল এসব নারীদের মধ্যে যারা মদীনাতে হিজরত করে এসেছে তাদেরকেই বিবাহ করতে পারবে। সারকথা এই যে, সাধারণ উম্মাতের জন্য পিতৃ ও মাতৃকুলের এসব কন্যা কোন শর্ত ছাড়াই বিবাহ করা বৈধন হিজরত করুক আর না-ই করুক। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য কেবল তারাই হালাল যারা তাঁর সাথে হিজরত করেছে। “সাথে হিজরত” করার জন্য সফরের সঙ্গে থাকা অথবা একই সাথে হিজরত করা জরুরী নয়। বরং যে কোন প্রকারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ন্যায় হিজরত করাই উদ্দেশ্য। ফলে এসব কন্যার মধ্যে যারা কোন কারণে হিজরত করেনি তাদেরকে বিবাহ করার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বৈধ নয়।
(وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِنْ وَّهَبَتْ نَفْسَهَا…..)
‘আর কোন মু’মিন নারী যদি নাবীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে’ এখানে আরো একটি বিধান হল যদি কোন মু’মিন মহিলা নিজেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য হেবা করে দেয়, তাহলে নাবী চাইলে তাকে বিবাহ করতে পারেন। এতে কোন মোহরের প্রয়োজন হবে না।
এটা শুধু রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য নির্দিষ্ট, অন্য কোন মানুষের জন্য নয়। তাদেরকে শরয়ী নিয়ম অনুসারেই মাহর দিয়ে বিবাহ করতে হবে।
হাদীসে এসেছে: সাহল বিন সাদ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক মহিলা এসে বলল: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আমার নিজেকে আপনার জন্য হেবা বা দান করে দিলাম। অতঃপর মহিলাটি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তখন একটি লোক দাঁড়িয়ে বলল। হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার যদি তাকে প্রয়োজন না থাকে তাহলে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমার নিকট এমন কিছু আছে কি যা তুমি তাকে মাহর হিসেবে দেবে? লোকটি বলল: আমার এই লুঙ্গি ব্যতীত আর কিছুই নেই। যদি তুমি তাকে লুঙ্গি দিয়ে দাও তাহলে তোমার পরার কোন লুঙ্গি থাকবে না। তুমি কিছু খুঁজে দেখ। তখন লোকটি খুঁজে বলল: আমি কিছুই পাইনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি একটি লোহার আংটি হলেও খোঁজ কর। লোকটি খুঁজে কিছুই পেল না। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন: তোমার কি কুরআন মুখস্ত আছে? সে বলল: হ্যাঁ অমুক অমুক সূরা। (সে সূরাগুলোর নাম বলল।) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আমি তোমাকে তার সাথে বিবাহ দিলাম তোমার কুরআনের মুখস্থ সূরাগুলো শিক্ষা দেয়ার বিনিময়ে। (সহীহ বুখারী হা: ৫১২১, সহীহ বুখারী হা: ১৪২৫)
ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: বিবাহ বন্ধন অথবা অধীনস্থ দাসী ছাড়া নিজেকে হেবা করেছে এমন কোন নারী ছিলেন না। কেউ বলেছেন; ছিল। ইমাম কুরতুবী (رحمه الله) বলেন, দ্বিতীয় মত সমর্থনে বুখারী মুসলিমে হাদীস রয়েছে, আয়িশাহ (رضي الله عنها) বলেন: আমি ঐ সকল নারীদের প্রতি ঈর্ষা করতাম যারা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য হেবা করত। আমি বলতাম: মহিলাদের কি লজ্জা হয় না তারা একজন পুরুষের জন্য নিজেকে হেবা করে দেয়। এমনকি নাযিল হল-
(تُرْجِيْ مَنْ تَشَا۬ءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِيْٓ إِلَيْكَ مَنْ تَشَا۬ءُ)
-‘তুমি তোমার স্ত্রীদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পৃথক রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পার’ আয়িশাহ (رضي الله عنها) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আপনার প্রভু দেখি আপনার মতানুপাতেই ফয়সালা দিয়ে থাকেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৮৮, সহীহ মুসলিম হা: ১৪৬৪) আয়িশাহ (رضي الله عنها) বলেন: খাওলাহ বিনতে হাকীম (رحمه الله) ঐ সকল নারীদের অন্তর্ভুক্ত যারা নিজেদেরকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য হেবা করেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫১১৩)
আয়াতে مؤمنة শব্দ দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, সাধারণ মানুষের জন্য আহলে কিতাবের মেয়েদেরকে বিবাহ করা বৈধ হলেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য এটা বৈধ ছিল না। বরং এক্ষেত্রে ঈমানদার হওয়া প্রধান শর্ত।
(تُرْجِيْ مَنْ تَشَا۬ءُ مِنْهُنَّ…….) শানে নুযূল:
আয়িশাহ (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ঐ সকল মহিলাদের ওপর হিংসা করতাম যারা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য হেবা করত এবং আমি বলতাম, মহিলারা বিনা মাহরে নিজেকে হেবা করে? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৮৮, সহীহ মুসলিম হা: ১৪৬৩, ১৪৭৬)
تُرْجِيْ শব্দটি ارجاء থেকে উদ্ভূত, অর্থ পেছনে রাখা, আর وَتُؤْوِيْ শব্দটি ايواء থেকে উদ্ভূত, অর্থ নিকটে আনা। আয়াতের অর্থ হচ্ছে: তুমি স্ত্রীগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারবে এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারবে। এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য নির্দিষ্ট একটি বিধান যা উম্মতের জন্য প্রযোজ্য নয়। সাধারণ উম্মতের মধ্যে কারো একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মাঝে সমতা বিধান করা জরুরী এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করা হারাম। সমতার মানে ভরণ-পোষণ ও রাত্রি যাপনের সমতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সমান সংখ্যক রাত্রি যাপন করতে হবে, কম-বেশি করা যাবে না এবং সমান ভরণ-পোষণ দিতে হবে। কিন্তু‘ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে, ইচ্ছা করলে পালা বণ্টন না করলেও কোন অপরাধ হবে না। তিনি যার সাথে ইচ্ছা তার সাথেই রাত্রি যাপন করতে পারবেন। কারো পালা আসলে তার সাথে রাত্রি যাপন না করে অন্যের সাথে রাত্রি যাপন করলে বা যার পালা আসেনি তার সাথে রাত্রি যাপন করাতে তাঁর কোনই অপরাধ নেই। আয়াতের শেষাংশে আরও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, তুমি যে স্ত্রীকে একবার দূরে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছ, ইচ্ছা করলে তাকে পুনরায় কাছে রাখতে পারবে। (وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكَ) বাক্যের অর্থও তাই।
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মানার্থে তাকে স্ত্রীদের মাঝে সমতা বিধান করার হুকুম থেকে মুক্ত রেখেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতদসত্বেও তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে পালা বণ্টন করে দিতেন। আর এ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে, যাতে করে তাঁর স্ত্রীরা তাঁর ওপর সন্তুষ্ট থাকেন। কোন প্রকার মনোমালিন্য না হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. চারের অধিক স্ত্রী একসঙ্গে রাখা কেবল রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বৈধ, কিন্তু উম্মাতের জন্য চারটির অধিক বৈধ নয়।
২. রাসূলের স্ত্রীগণ যেমন অন্যের জন্য বৈধ নয়, অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাসীগণও অন্যের জন্য বৈধ নয়।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন মহিলা নিজেকে হেবা করলে কোন প্রকার মাহর ছাড়াই তাকে বিবাহ বৈধ, সাধারণ মু’মিনদের জন্য মাহর দেয়া ওয়াজিব।
৪. মু’মিন ছাড়া আহলে কিতাবের মেয়েদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বিবাহ করা বৈধ ছিল না।
৫. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পালা বণ্টন করাটা অবশ্যক ছিল না। তথাপি তিনি পালা বণ্টন করে নিতেন।
৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের মাঝে পালা ভাগ না করার এখতিয়ার দেয়ার পর যখন তাঁর স্ত্রীরা দুনিয়াবী সকল প্রকার আরাম-আয়েশের পরিবর্তে সন্তুষ্ট চিত্তে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বসবাস করাকে পছন্দ করেছিলেন তখন তাদের এ কর্মের বদৌলতে তাদের মর্যাদা এভাবে দিলেন যে, অত্র আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিদ্যমান স্ত্রীগণ ছাড়া অন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করা বা তাদের কাউকে তালাক দিয়ে তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে বিবাহ করতে নিষেধ করে দিলেন। অবশ্য পরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আর কোন বিবাহ করেননি (ইবনে কাসীর)। তবে দাসীদের ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। তিনি চাইলে আরো দাসী গ্রহণ করতে পারেন। এ ব্যাপারে তাঁকে নিষেধ করা হয়নি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর সন্তুষ্ট হলে উত্তম বিনিময় পাওয়া যায়।