أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০২)
[জাতির সবচেয়ে অসৎ দুষ্কৃতিকারীরা তার নেতৃত্বের আসনে বসেছিল।]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
১৪১-১৫৯ নং আয়াত:-
২৬:১৪১
کَذَّبَتۡ ثَمُوۡدُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۚۖ
সামূদ সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।
২৬:১৪২
اِذۡ قَالَ لَہُمۡ اَخُوۡہُمۡ صٰلِحٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۴۲﴾ۚ
যখন তাদের ভাই সালিহ তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না?
২৬:১৪৩
اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۴۳﴾ۙ
আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল।
২৬:১৪৪
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۴۴﴾ۚ
অতএব আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর।
২৬:১৪৫
وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۴۵﴾ؕ
এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান প্রত্যাশী নই। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।
২৬:১৪৬
اَتُتۡرَکُوۡنَ فِیۡ مَا ہٰہُنَاۤ اٰمِنِیۡنَ ﴿۱۴۶﴾ۙ
এখানে যেসব জিনিস আছে সেগুলোর মাঝখানে কি তোমাদের এমনিই নিশ্চিন্তে থাকতে দেয়া হবে?
২৬:১৪৭
فِیۡ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوۡنٍ ﴿۱۴۷﴾ۙ
এসব উদ্যান ও প্রস্রবনের মধ্যে?
২৬:১৪৮
وَّ زُرُوۡعٍ وَّ نَخۡلٍ طَلۡعُہَا ہَضِیۡمٌ ﴿۱۴۸﴾ۚ
এসব শস্যক্ষেত ও রসালো গুচ্ছ বিশিষ্ট খেজুর বাগানের মধ্যে?
২৬:১৪৯
وَ تَنۡحِتُوۡنَ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا فٰرِہِیۡنَ ﴿۱۴۹﴾ۚ
তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।
২৬:১৫০
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۵۰﴾ۚ
সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আমার আনুগত্য কর
২৬:১৫১
وَ لَا تُطِیۡعُوۡۤا اَمۡرَ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۵۱﴾ۙ
এবং সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না;
২৬:১৫২
الَّذِیۡنَ یُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا یُصۡلِحُوۡنَ ﴿۱۵۲﴾
‘যারা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং সংশোধন করে না।’
২৬:১৫৩
قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مِنَ الۡمُسَحَّرِیۡنَ ﴿۱۵۳﴾ۚ
তারা জবাব দিল, “তুমি নিছক একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি।
২৬:১৫৪
مَاۤ اَنۡتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا ۚۖ فَاۡتِ بِاٰیَۃٍ اِنۡ کُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۵۴﴾
তুমি আমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কি? কোন নিদর্শন আনো, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো।”
২৬:১৫৫
قَالَ ہٰذِہٖ نَاقَۃٌ لَّہَا شِرۡبٌ وَّ لَکُمۡ شِرۡبُ یَوۡمٍ مَّعۡلُوۡمٍ ﴿۱۵۵﴾ۚ
সালেহ বলল, ‘এ যে উটনী, এর জন্য রয়েছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত দিনে পানি পানের পালা।
২৬:১৫৬
وَ لَا تَمَسُّوۡہَا بِسُوۡٓءٍ فَیَاۡخُذَکُمۡ عَذَابُ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ﴿۱۵۶﴾
‘আর তোমরা এর কোন অনিষ্ট সাধন করো না; করলে মহাদিনের শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে।’
২৬:১৫৭
فَعَقَرُوۡہَا فَاَصۡبَحُوۡا نٰدِمِیۡنَ ﴿۱۵۷﴾ۙ
কিন্তু ওরা ওকে হত্যা করল, পরিণামে ওরা অনুতপ্ত হতে হল।
২৬:১৫৮
فَاَخَذَہُمُ الۡعَذَابُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۵۸﴾
অতঃপর শাস্তি তাদেরকে গ্ৰাস করল। এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।
২৬:১৫৯
وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۵۹﴾٪
আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব হচ্ছেন পরাক্রমশালী এবং দয়াময়ও।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
এখানেও হযরত সালেহ এর যে দাওয়াত উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা সর্বকালের সকল নবী ও রাসূলের দাওয়াত। প্রত্যেক রাসূল তার জাতিকে যে দাওয়াত দিয়েছেন, কোরআন তা হুবহু উদ্ধৃত করেছে। এর উদ্দেশ্য নবুওত ও রেসালাত যে মূলত সর্বকালে একই ছিলাে তা প্রমাণ করা। রেসালাতের মূল কথা সব সময় এই ছিলাে যে, আল্লাহর ওপর ঈমান আনাে, তাকে ভয় করাে এবং আল্লাহর কাছ থেকে আগত নবী বা রসূলের আনুগত্য করাে। এখানে অভিন্ন মূল দাওয়াত তুলে ধরার পর সামুদ জাতির স্বতন্ত্র অবস্থা ও প্রেক্ষাপট এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় আলােচিত হয়েছে। সামুদ জাতির ভাই হযরত সালেহ তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কতাে সম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন। সেই সাথে তাদেরকে সতর্ক করিয়ে দিয়েছেন যে, তারা যদি এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছ থেকে তা ছিনিয়েও নিতে পারেন। পরবর্তীতে এই মর্মেও হুঁশিয়ার করেছেন যে, তাদের প্রতিটা নেয়ামতের হিসাব নেয়া হবে। তোমাদেরকে কি দুনিয়ার সব নিয়ামত সম্ভারের মধ্যে নিরাপদে ছেড়ে রাখা হবে?(আয়াত ১৪৬-১৪৯) এ আয়াত ক’টায় হযরত সালেহ যেসব নেয়ামত সামগ্রীর উল্লেখ করেছেন, সামুদ জাতি সে সব নেয়ামত সামগ্রী ভােগ করে মহা আন্দে উদাসীনভাবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিলাে। কখনাে ভেবে দেখতে না কে তাদেরকে এ সব নেয়ামতকে দিলাে ও কী উদ্দশ্যে দিলাে। আর এ সব নেয়ামতের দাতার প্রতি কখনাে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতাে না। এ জন্যই তাদের নবী তাদের এসব সামগ্রীর নাম ধরে ধরে উল্লেখ করছেন, যাতে তারা এগুলাে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে, এগুলাের মূল্য উপলব্ধি করে এবং এগুলো হারানাের ভয়ে ভীত থাকে। হযরত সালেহ কথাগুলােতে সামুদ জাতির সুপ্ত বিবেক জাগিয়ে তােলার এবং তাদের মধ্যে যুগপৎভাবে ভীতি ও আশার সঞ্চার করার উপাদান রয়েছে। ‘তােমাদেরকে কি দুনিয়ার এসব নেয়ামত সম্ভারের মধ্যে নিরাপদে ছেড়ে রাখা হবে?’ অর্থাৎ তােমরা কি মনে করাে যে, তােমরা যেভাবে ভােগবিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে রয়েছো, সেভাবে থাকবার জন্যে এবং উত্তরােত্তর বেড়ে ওঠার জন্যে তোমাদের লাগামহীন করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে? তােমরা কি এরূপ নিশ্চিন্ত মনে থাকতে পারবে যে, তোমাদের জীবন ও ধন সম্পদের কোনাে কিছুই হাতছাড়া হবে না, কমবে না বা পরিবর্তিত হবে না? রকমারি বাগান ও ফসলের ক্ষেত, খেজুরের বাগান এবং সুদৃশ্য ও সহজপ্রাপ্য ফলমূলের বাগান ইত্যাদি নিয়েই তােমরা নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে থাকবে। পাহাড়ের ভেতর খােদাই করে চমকপ্রদ বাড়ীঘর তৈরী করে নিজেদের দক্ষতা ও নৈপুণ্যের প্রদর্শনী করে আনন্দে ও গর্বে মেতে থাকবে? আর এভাবে মেতে থাকার জন্যেই কি তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে। হযরত সালেহ এসব কথা দ্বারা তাদের সুপ্ত বিবেককে একটা ঝাকি দিয়ে পরবর্তী আয়াত কটাতে তাদেরকে আল্লাহর ভয় ও রসূলের আনুগত্যের আহ্বান জানান এবং যারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত ও অন্যায় ও বিশৃংখলার দিকে ধাবিত, তাদের বিরােধিতা করার উপদেশ দেন। ‘অতএব আল্লাহকে ভয় করাে, আমার আনুগত্য করাে এবং যারা পৃথিবীতে সংস্কার ও গঠনমূলক কাজের পরিবর্তে বিশৃংখলা ও নাশকতার কাজ করে, সেসব নৈরাজ্যবাদীর অনুগত্য করাে না।’ কিন্তু এসব আহ্বান সেসব বিবেকহীন মানুষের মন গলাতে পারলাে না। ‘তারা বললাে, তুমি তাে যাদুকৃত ব্যক্তি। তুমি আমাদের মতাে একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নও।’ অর্থাৎ তােমার বিবেক বুদ্ধি যাদুর প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই যা জানাে না তার কথা এতাে উচ্ছসিতভাবে বলছাে। ভাবখানা এই যে, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়াটা যেন কেবল পাগলদের কাজ! ‘তুমি তাে আমাদেরই মতাে একজন মানুষ ছাড়া কিছু নও। এটাই সেই বক্তব্য, যা পৃথিবীতে একজন রসূল এলেই মানুষকে সন্দেহ সংশয় ও দ্বিধাদ্বন্দে ফেলে দেয়। মানুষ সবসময় নবী ও রসূল সম্পর্কে আজগুবি ধ্যান ধারণা পােষণ করে থাকে। মানুষ রসূল হয়ে দুনিয়ায় আসে এর পেছনে আল্লাহর কী যুক্তি ও কৌশল রয়েছে, তা মানুষ বােঝে। মানুষকে কেন নবী ও রাসূল হিসেবে নিয়ােগ করার জন্যে নির্বাচন করা হয়, কেন মানুষকে মানব জাতির সেই সব নেতা বানানাে হয় যারা হেদায়াত ও আলাের উৎসের সাথে সংযুক্ত, তাও মানুষ উপলব্ধি করে না। মানুষ চিরকালই ভেবেছে নবী ও রসূল বুঝি মানবজাতি বহির্ভূত কোনাে সৃষ্টি হয়ে থাকে, অথবা হওয়া উচিত অন্তত যখন তিনি আকাশের ও অদৃশ্য জগতের খবর মানুষের কাছে পৌঁছান। কেননা মানুষ কখনাে বুঝতে চেষ্টা করেনি যে, নবুওত ও রেসালাত দিয়ে মানুষকে সম্মানিত করার রহস্য কী। সেই রহস্যটা হলাে এই যে, এই পৃথিবীতে বসবাস করে, এই পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে, বিয়ে শাদী করে, বাজারে চলাফেরা ও কেনাকাটা করে এবং অন্য সকল মানুষ যে সব আবেগ জড়িত কর্মকান্ডে জড়িত হয়, তার সব কিছুতে জড়িত থেকেও আল্লাহর সাথে ও ঊর্ধজগতের সাথে সম্পর্ক ও সংযােগ রক্ষা করার ক্ষমতা ও যােগ্যতা একমাত্র মানুষকেই দেয়া হয়েছে। সকল যুগেই মানুষ নবী ও রসূলের কাছে দাবী জানাতাে যে, তিনি যে সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী ও রসূল, তা প্রমাণ করার মতাে একটা অলৌকিক নিদর্শন বা মােজেযা দেখান। ‘তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে একটা নিদর্শন নিয়ে এসাে।’ সামুদ জাতিও অনুরূপ দাবী জানিয়েছিলাে এবং এই দাবী অনুসারে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দা হযরত সালেহের জন্যে একটা উষ্ট্রীর আকারে অলৌকিক নিদর্শন মঞ্জুর করেন। এই উষ্ট্রীর বৈশিষ্ট্য কী কী ছিলাে, তা নিয়ে প্রাচীন মােফাসসেররা অনেক মাথা ঘামালেও আমি ঘামাবাে না। কেননা এসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনাে নির্ভুল প্রমাণ নেই। আমরা শুধু এতােটুকু বলাই যথেষ্ট মনে করি যে, সামুদ জাতির দাবী মােতাবেক ওটা একটা অস্বাভাবিক ও অলৌকিক উষ্ট্রীই ছিলাে। ‘সালেহ বললাে, এই যে একটা উষ্ট্ৰী, এর জন্যে রইলাে একদিন পানি ব্যবহারের পালা, আর তােমাদের জন্যেও রইলাে একটা নির্দিষ্ট দিন পানি ব্যবহারের পালা'(আয়াত ১৫৫-১৫৬) তাদের কাছে উষ্ট্ৰীটা এসেছিলােই এই শর্তে যে, তারা যে জলাশয় থেকে পানি ব্যবহার করে, সেটা একদিন সে উষ্ট্রীর এবং একদিন সমগ্র জাতির জন্যে পালাক্রমে নির্দিষ্ট থাকবে। তার পালার দিনে কেউ তাকে উত্যক্ত করবে না, অন্যদের পালার দিনে উষ্ট্রী সেখানে যাবে না এবং উভয় পক্ষের কারাে সাথে কারাে পানি ব্যবহারের পালা একই দিনে হবে না। তিনি এই মর্মেও স্বজাতিকে সাবধান করে দিলেন যে, কেউ যেন উষ্ট্রীর কোনাে রকম ক্ষতি সাধন না করে। অন্যথায় তাদের ওপর ভয়ংকর আযাব নেমে আসবে। এই অলৌকিক নিদর্শন কি সে হঠকারি জাতির কোনাে উপকার করতে পেরেছিলাে? না, এ নিদর্শন তাদের অন্ধকার হৃদয়ে ঈমানের আলাে জ্বালাতে পারেনি। এই নিদর্শনকে কেন্দ্র করে তাদেরকে কঠোর চ্যালেঞ্জ ও চাপ প্রদান সত্তেও তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ও শর্ত পর্যন্ত পালন করেনি, তারা উষ্ট্ৰীটাকে হত্যা করে ফেললাে। এর ফলে তাদেরকে অনুতপ্ত হতে হলাে। জাতির উচ্ছৃংখল, নৈরাজ্যবাদী ও নাশকতাবাদী লােকেরাই তাকে হত্যা করে। হযরত সালেহ তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু তারা সতর্ক হয়নি। তাই এ পাপের দায়-দায়িত্ব সবার ওপরই বর্তেছিলাে এবং সবাইকেই শাস্তি দেয়া হয়েছিলাে। জাতি এই অপকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হয়েছিলাে। কিন্তু সময় হাতছাড়া হওয়ার পর এবং হুমকি বাস্তবায়িত হওয়ার পর হয়েছিলাে। তাই আযাব তাদেরকে পাকড়াও করলাে। আযাবটা কি ধরনের ছিলাে, তা এখানে ব্যাখ্যা করা হয়নি সংক্ষেপ করণের উদ্দেশ্যে। এরপর পুনরায় সেই একই মন্তব্য, ‘নিশ্চয়ই এ ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে। তাদের অধিকাংশই ঈমান আনেনি। তােমার প্রভুই মহা প্রতাপশালী ও দয়ালু।’
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আল আ’রাফ ৭৩-৭৯ আয়াত, হূদ ৬১-৬৮ আয়াত , আল হিজর ৮০-৮৪ আয়াত এবং বনী ইসরাঈল ৫৯ আয়াত । আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত স্থানগুলোঃ আন্ নামল ৪৫-৫৯ , আয্ যারিয়াত ৪৩-৪৫ , আল কামার ২৩-৩১ , আল হাক্কাহ ৪-৫ , আল ফজ র ৯ এবং আশ্ শামস ১১ আয়াত। এ জাতিটি সম্পর্কে কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তা থেকে জানা যায়, আদ জাতির পরে দুনিয়ায় এ সামূদ জাতিই উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِ عَادٍ (الاعراف: 74) কিন্তু তাদের সভ্যতার অগ্রগতিও শেষ পর্যন্ত আদ জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির মতো একই রূপ পরিগ্রহ করে। অর্থাৎ জীবন যাত্রার মান উন্নত থেকে উন্নততর এবং মনুষ্যত্বের মান নিম্ন থেকে নিম্নতর হতে থাকে। একদিকে সমতল এলাকায় সুউচ্চ ও সুরম্য প্রাসাদোপম অট্টালিকা এবং পার্বত্য এলাকায় অজন্তা-ইলোরার পর্বত গূহার মতো সূরম্য প্রাসাদ নির্মিত হতে থাকে। আর অন্যদিকে সমাজে শিরক ও মূর্তি পূজার প্রবল জোয়ার চলতে থাকে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠ ভরে উঠতে থাকে জুলুম-নিপীড়নের প্রাবল্যে। জাতির সবচেয়ে অসৎ দুষ্কৃতিকারীরা তার নেতৃত্বের আসনে বসেছিল। হযরত সালেহের সত্যের দাওয়াত কেবলমাত্র নিম্ন শ্রেণীর দুর্বল লোকদেরকেই প্রভাবিত করছিল। উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা শুধুমাত্র এ কারণেই তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল যে, إِنَّا بِالَّذِي آمَنْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ “যে বিষয়ের প্রতি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছো তা আমরা মেনে নিতে পারি না।”
# হযরত সালেহের বিশ্বস্ততা ও আমানতদারী এবং অসাধারণ যোগ্যতার সাক্ষ্য তাঁর জাতির লোকদের মুখ দিয়ে কুরআন মজীদের ভাষায় নিম্নোক্তভাবে ব্যক্ত হয়েছেঃ
قَالُوا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَذَا
“তারা বললো, হে সালেহ! এর আগে তুমি আমাদের মধ্যে এমন লোক ছিলে যার ওপর আমাদের অনেক আশা ভরসা ছিল।” (হূদঃ ৬২ আয়াত)
# তোমরা কি মনে করো, তোমাদের এ আয়েশ-আরাম স্থায়ী ও চিরন্তন? এসব কোন দিন বিনষ্ট হবে না? তোমাদের থেকে কখনো এসব নিয়ামতের হিসাব নেয়া হবে না? তোমরা যেসব কাজ কারবার করে যাচ্ছো কখনো এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না?
# মূলে هَضِيمٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে খেঁজুরের এমন কাঁদি যা ফলভারে নুয়ে পড়েছে এবং যার ফল পেকে যাবার পর রসালো ও কোমল হবার কারণে ফেটে যায়।
# আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ) অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ
الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।”
এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ
تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)
এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।
সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (aughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।
# তোমাদের যেসব রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং শাসকদের নেতৃত্বে এ ভ্রান্ত বিকৃত জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে তাদের আনুগত্য পরিহার করো। এরা সব লাগাম ছাড়া। নৈতিকতার সমস্ত সীমা লংঘন করে এরা লাগামহীন পশুতে পরিণত হয়েছে। এদের দ্বারা সমাজ-সভ্যতার কোন সংস্কার হতে পারে না। এরা যে ব্যবস্থা পরিচালনা করবে তার মধ্যে বিকৃতিই ছড়িয়ে পড়বে। তোমাদের জন্য কল্যাণের কোন পথ যদি থাকে তাহলে তা কেবলমাত্র একটিই। অর্থাৎ তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করো এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আনুগত্য পরিহার করে আমার আনুগত্য করো। কারণ আমি আল্লাহর রসূল। আমার আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে তোমরা পূর্ব থেকেই অবগত আছো। আমি একজন নিস্বার্থ ব্যক্তি। নিজের কোন ব্যক্তিগত লাভের জন্য আমি এ সংস্কারমূলক কাজে হাত দেইনি— এ ছিল হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের ঘোষণাপত্রের সংক্ষিপ্ত সার। নিজের জাতির সামনে তিনি এটি পেশ করেছিলেন। এর মধ্যে শুধু ধর্মীয় প্রচারণাই ছিল না বরং একই সঙ্গে তামাদ্দুনিক ও নৈতিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক বিপ্লবের দাওয়াতও ছিল।
# “যাদুগ্রস্ত” অর্থাৎ দিওয়ানা ও পাগল তথা যার বুদ্ধি ভ্রষ্ঠ হয়ে গেছে। প্রাচীনকালের ধারণা অনুযায়ী জ্বীনের বা যাদুর প্রভাবে পাগলামি দেখা দেয়। তাই তারা যাকে পাগল বলতে চাইতো তাকে বলতো “মাজনুন” (জ্বীনগ্রস্ত) বা “মাসহুর” (যাদুগ্রস্ত) ও মুসাহহার।
# আমরা তোমাকে আল্লাহর প্রেরিত বলে মেনে নেব বাহ্যত তোমার ও আমাদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য চিহ্ন তো আমরা দেখছি না। কিন্তু যদি তুমি নিজেকে আল্লাহর নিযুক্ত ও তাঁর প্রেরিত বলে দাবী করো, তাহলে এমন কোন চাক্ষুস মু’জিযা পেশ করো, যা থেকে এ বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা এবং পৃথিবী ও আকাশের মালিক মহান আল্লাহ যে তোমাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন সে ব্যাপারে আমাদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যায়।
# মু’জিযার দাবীর জবাবে উটনী হাজির করার ফলে পরিষ্কার বুঝা যায়, সেটি নিছক সেখানে সাধারণ আরবদের কাছে যেমন উটনী পাওয়া যেত সে ধরণের একটি কোন সাধারণ উটনী ছিল না। বরং মু’জিযা দেখাবার দাবীর জবাবে পেশ করা যায় এমন কোন জিনিস নিশ্চয়ই তার জন্ম ও প্রকাশ বা সৃষ্টির মধ্যে ছিল। যদি হযরত সালেহ তাদের দাবীর জবাবে এমনই কোন একটি সাধারণ উটনী ধরে এনে দাঁড় করিয়ে দিতেন তাহলে এটা হতো অবশ্যই একটি অর্থহীন কাজ। কোন নবী তো দূরের কথা একজন সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তির কাছ থেকেও এ ধরণের আচরণ আশা করা যেতে পারে না। এখানে তো একথা শুধুমাত্র বক্তব্যের প্রেক্ষাপট থেকেই অনুধাবন করা যায়। কিন্তু অন্যান্য স্থানে কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় এ উটনীর অস্তিত্বকে মু’জিযা গণ্য করা হয়েছে। সূরা আ’রাফ ও সূরা হূদে বলা হয়েছেঃ
هَذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً এ হলো আল্লাহর উটনী, তোমাদের জন্য রইলো নিদর্শন হিসেবে।” আর সূরা বনী ইসরাঈলে এর চাইতেও বেশী বলিষ্ঠ ভাষায় বলা হয়েছেঃ
وَمَا مَنَعَنَا أَنْ نُرْسِلَ بِالْآيَاتِ إِلَّا أَنْ كَذَّبَ بِهَا الْأَوَّلُونَ وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا –
“পূর্ববর্তী লোকদের নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাকে নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত রাখে। সামূদদের সামনে আমি চোখে দেখা উটনী নিয়ে আসি। তবুও তারা তাঁর ওপর জুলুম করে। নিদর্শন তো আমি পাঠাই ভয় দেখাবার জন্য (তামাসা দেখাবার জন্য না)।” (৫৯ আয়াত)
উটনীকে মাঠে-ময়দানে ছেড়ে দেবার পর এ কাফের জাতিকে যে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয় তা ছিল এর অতিরিক্ত। কেবলমাত্র একটি মু’জিযা পেশ করেই এ ধরণের একটি চ্যালেঞ্জ দেয়া যেতে পারে।
# পালাক্রমে একদিন এ উটনী একাই তোমাদের কূয়া ও প্রস্রবনগুলো থেকে পানি পান করবে এবং একদিন জাতির সমস্ত লোকজন ও জন্তু-জানোয়ার পানি পান করবে। সাবধান, তার পানি পান করার দিন যেন কোন ব্যক্তি পানি নেবার জায়গায় না যায়। এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আরবের বিশেষ অবস্থায় কোন ব্যক্তির জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন চ্যালেঞ্জ হতে পারতো না। সেখানে তো পানিই ছিল জীবনের মুখ্য বিষয় এবং এ বিষয়টি নিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি করে খুনাখুনি হয়ে যেতো। গোত্রগুলো পারস্পরিক যুদ্ধে লিপ্ত হতো। তারপর প্রাণের বিনিময়ে কেউ কোন ঝরণা বা কূয়া থেকে পানি নেবার অধিকার লাভ করতো। সেখানে জাতির এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, একদিন শুধুমাত্র আমার উটনী একাই সমস্ত কূয়া ও ঝরণা থেকে পানি পান করবে এবং জাতির সমস্ত লোক ও জন্তু-জানোয়াররা কেবলমাত্র দ্বিতীয় দিনেই পানি নিতে পারবে। তাঁর একথা বলার ছিল এই যে, তিনি যেন সমগ্র জাতিকে যুদ্ধ করার জন্য চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন। একটি বিরাট ও পরাক্রমশালী সেনাবাহিনী ছাড়া আরবে কোন ব্যক্তি এ ধরণের কথা মুখে উচ্চারণ করতে পারতো না। অন্যদিকে কোন জাতি যতক্ষণ না স্বচক্ষে দেখতে পেতো, চ্যালেঞ্জদানকারীর পেছনে এত বিপুল সংখ্যক তরবারী ও এতবড় তীরন্দাজ বাহিনী রয়েছে যারা প্রতিপক্ষের যে কোন পদক্ষেপকে পিষে গুড়িয়ে দিতে পারে। ততক্ষণ তার একথা শুনতে প্রস্তুত হতো না। কিন্তু হযরত সালেহ (আ) কোন সেনাবাহিনীর শক্তি ছাড়াই একাকী দাঁড়িয়ে নিজের জাতিকে এ চ্যালেঞ্জ দিলেন এবং জাতি কেবল কান পেতে তা শুনলই না বরং বহুদিন পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে তা পালনও করতে থাকলো।
সূরা আ’রাফ ও হূদে এর ওপর আরো এতটুকু বাড়ানো হয়েছেঃ هَذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ
“এ হচ্ছে আল্লাহর উটনী, তোমাদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ। একে আল্লাহর জমীনে চরে বেড়াবার জন্য ছেড়ে দাও। কখনো খারাপ মতলবে এর গায়ে হাত দিয়ো না।”
অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ কেবল এতটুকুই ছিল না যে, কেবল একদিন পর পর উটনীটি একাই হবে সারাদিন সমস্ত এলাকার পানির ইজারাদার বরং এর ওপর বাড়তি চ্যালেঞ্জ ছিল এই যে, সে সারাদিন তোমাদের ক্ষেতে-খামারে, ফলের বাগানে, খেজুর উদ্যানে ও চারণক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে চরে বেড়াবে, যেখানে চাইবে যাবে, যা ইচ্ছা খাবে, খবরদার! তোমরা কেউ তার গায়ে হাত দিতে পারবে না।
# এর অর্থ এ নয় যে, সালেহের এ চ্যালেঞ্জ শোনার সাথে সাথেই তারা উটনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার পায়ের রগ কেটে দেয়। বরং দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ উটনীটি সমগ্র জাতির জন্য একটি সমস্যা হয়ে থাকে। লোকেরা মনে মনে এর বিরুদ্ধে ফুঁসতে থাকে। পরামর্শ করতে থাকে। শেষমেশ জাতিকে এ আপদমুক্ত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে একজন কাণ্ডজ্ঞানহীন সরদার। সূরা আশ্ শামসে এ ব্যক্তির উল্লেখ এভাবে করা হয়েছেঃ إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا
“যখন এ জাতির সবচেয়ে বড় পাপিষ্ঠ লোকটি উদ্যোগী হলো” এবং সূরা আল কামারে বলা হয়েছেঃ
فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطَى فَعَقَرَ
তারা নিজেদের সাথীকে আহ্বান জানালো, শেষ পর্যন্ত সে একাজটি নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিল এবং সে গিঁঠের রগ কেটে দিল।”
# কুরআনের অন্যান্য স্থানে এ ঘটনার যে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে তা হচ্ছে এই যে, উটনীকে মেরে ফেলার পর সালেহ ঘোষণা করেনঃ
تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ
“তিনদিন নিজেদের গৃহে আয়েশ করে নাও” (হূদ ৬৫ আয়াত)
এ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হবার পর রাতের শেষ প্রহরে ভোরের কাছাকাছি সময়ে একটি প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ ঘটে। এ সঙ্গে সংঘটিত হয় ভয়াবহ ভূমিকম্প। ফলে মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র জাতি ধ্বংস হয়ে যায়। সকাল হবার পর চারদিকে লাশের পর লাশ এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল যেন মনে হচ্ছিল, শুকনো লতাগুল্ম জন্তু-জানোয়ারের পদদলনে বিধ্বস্ত ও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাদের সুরম্য প্রাসাদ এবং পার্বত্য গূহাগুলো তাদেরকে এ ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ صَيْحَةً وَاحِدَةً فَكَانُوا كَهَشِيمِ الْمُحْتَظِرِ-(القمر-31) فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ-(الأعراف-78) فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ – فَمَا أَغْنَى عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ-(الحجر-83-84)
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৪১-১৪৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত সালেহ (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করছেন যে, তাঁকে তাঁর কওম সামূদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা ছিল আরবীয় লোক। তারা হিজর নামক শহরে বাস করতো। ওটা ছিল দারুল কুরা ও শাম দেশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। তাদের আবির্ভাব ঘটেছিল কওমে হ্রদের (অর্থাৎ আ’দের) পরে এবং কওমে ইবরাহীমের পূর্বে। শাম অভিমুখে যাওয়ার পথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এখান দিয়ে গমন করার কথা সূরায়ে আ’রাফের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে। সামূদ সম্প্রদায়কে তাদের নবী হযরত সালেহ (আঃ) আল্লাহর দিকে আহ্বান করে বলেনঃ “আমি তোমাদের নিকট এক বিশ্বস্ত রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য স্বীকার করে নাও।’ কিন্তু তারা তার কথা মানতে অস্বীকার করলো এবং কুফরীর উপরই কায়েম থাকলো। তারা হযরত সালেহ (আঃ)-কে অবিশ্বাস করলো এবং তার উপদেশ সত্ত্বেও তারা পরহেযগারী অবলম্বন করলো না। বিশ্বস্ত রাসূলের উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা হিদায়াতের পথে আসলো না। অথচ নবী (আঃ)। তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বললেনঃ আমি এ কাজের জন্যে তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। তারপর তিনি তাদেরকে আল্লাহর নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যেগুলো আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন
১৪৬-১৫২ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত সালেহ (আঃ) স্বীয় কওমের মধ্যে ওয়াজ করতে রয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহর নিয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখিয়ে বলেনঃ যিনি তোমাদের জীবিকায় প্রশস্ততা দান করেছেন, যিনি তোমাদের জন্যে বাগান, প্রস্রবণ, শস্যক্ষেত্র, ফলমূল ইত্যাদি সরবরাহ করেছেন, শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে যিনি তোমাদের জীবনের দিনগুলো পূর্ণ করতে রয়েছেন, তোমরা তাঁর অবাধ্যাচরণ করে এসব নিয়ামত এবং শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে কালাতিপাত করে যেতে পারবে এটা মনে করে নিয়েছো কি? আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এখন যে মৰূত দূর্গ, সুউচ্চ ও সুন্দর প্রাসাদে বাস করতে দিয়েছেন, তোমরা কি মনে করেছে যে, তাঁর নাফরমানীর পরেও এগুলোর সবই ঠিক থাকবে? বড়ই আফসোসের বিষয় যে, তোমরা আল্লাহর নিয়ামতরাজির মর্যাদা দিলে না। তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছে, কিন্তু তোমরা যে কাজ করতে রয়েছে তাতে এসব যে ধ্বংস হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এসব চাকচিক্যময় প্রাসাদ তোমরা তৈরী করছো। শুধুমাত্র তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তি প্রকাশ করার জন্যে। এতে কোনই লাভ নেই, বরং এর শাস্তি তোমাদের নিজেদেরকে ভোগ করতে হবে। সুতরাং তোমাদের আল্লাহকে ভয় করা এবং আমার আনুগত্য করা উচিত। তোমাদের উচিত তোমাদের সৃষ্টিকর্তা, আহার্যদাতা, নিয়ামতদাতা এবং অনুগ্রহকারীর ইবাদত করা এবং তার হুকুম মান্য করা ও তাঁর একত্ববাদ স্বীকার করে নেয়া। তাহলে তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সুফল প্রাপ্ত হবে। তোমাদের তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাসবীহ তাহলীল করা একান্ত কর্তব্য। সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের তাঁরই ইবাদত করা উচিত এবং তোমাদের বর্তমান নেতৃবর্গকে মান্য করা মোটেই উচিত নয়। তারা সীমালংঘন করেছে। তাওহীদের অনুসরণ করা তারা। ভুলে গেছে। তারা ভূ-পৃষ্ঠে শান্তি স্থাপন না করে শুধু অশান্তিই সৃষ্টি করছে। তারা নিজেরা নাফরমানী, পাপ ও অন্যায় কাজে লিপ্ত রয়েছে এবং অন্যদেরকেও সেদিকে আহ্বান করছে। সত্যের আনুকূল্য করে নিজেদের সংশোধিত করার চেষ্টা তারা মোটেই করছে না।
১৫৩-১৫৯ নং আয়াতের তাফসীর
সামূদ সম্প্রদায় তাদের নবীকে উত্তর দেয়ঃ ‘তোমার উপর কেউ যাদু করেছে। যদিও এর একটি অর্থ এও করা হয়েছেঃ তুমি তো সৃষ্টদের একজন এবং এর দলীল হিসেবে নিম্নের কবিতাংশটি পেশ করা হয়েছেঃ (আারবি)
অর্থাৎ “তুমি যদি আমাদের সম্পর্কে প্রশ্ন কর তবে জেনে রেখো যে, আমরা এই সৃষ্ট মানব জাতির চড়ুই পাখী তুল্য।” কিন্তু প্রথম অর্থটি বেশী প্রকাশমান।
এর সাথে সাথেই তারা বললোঃ “তুমি তো আমাদের মতই একজন মানুষ, সুতরাং আমাদের মধ্যে আর কারো উপর অহী না এসে শুধু তোমার উপর অহী আসবে এটা অসম্ভব। এটা তোমার বানানো কথা ছাড়া কিছুই নয়। তুমি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছো এবং আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছো। আচ্ছা, আমরা এখন বলি যে, তুমি যদি সত্যিই নবী হও তবে কোন মু’জিযা দেখাও তো দেখি?” ঐ সময় তাদের ছোট বড় সবাই একত্রিত ছিল এবং একবাক্যে তারা হযরত সালেহ (আঃ)-এর কাছে মু’জিযা দেখতে চেয়েছিল। হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কি মুজিযা দেখতে চাও?” তারা উত্তর দেয়ঃ “এই যে আমাদের সামনে বিরাট পাহাড়টি রয়েছে এটা ফাটিয়ে দিয়ে এর মধ্য হতে এরূপ এরূপ রংএর ও এরূপ আকৃতির একটি গর্ভবতী উষ্ট্ৰী বের কর।” তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করি এবং তিনি তোমাদের আকাঙ্ক্ষিত মুজিযাই আমার হাত দ্বারা দেখিয়ে দেন তবে তোমরা আমাকে নবী বলে স্বীকার করবে তো?” তারা তখন তার কাছে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করলো যে, যদি তিনি এ মু’জিযা দেখাতে পারেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে নবী বলে স্বীকার করে নেবে। হযরত সালেহ (আঃ) তৎক্ষণাৎ নামায শুরু করে দিলেন এবং ঐ মু’জিযার জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট দু’আ করলেন। ঐ সময়ই ঐ পাহাড় কেটে গেল এবং ওর মধ্য হতে ঐ ধরনেরই উষ্ট্ৰী বেরিয়ে আসলো। কিছু লোক তো তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী মুমিন হয়ে গেল, কিন্তু অধিকাংশ লোকই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কাফিরই রয়ে গেল।
তিনি তাদেরকে বললেনঃ “দেখো, একদিন আমার এই উষ্ট্ৰীর পানি পান করার পালা এবং অপরদিন তোমাদের জন্তুগুলোর পানি পান করার পালা থাকলো। সাবধান! তোমরা আমার এ উষ্ট্রর কোন প্রকার অনিষ্ট করবে না, নচেৎ কঠিন শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে।” কিছুদিন পর্যন্ত তারা এটা মেনে চললো। উষ্ট্রীটি তাদের মধ্যেই অবস্থান করতে থাকলো। ওটা ঘাস-পাতা খেতো এবং ওর পালার দিন পানি পান করতো। ঐদিন তারা ওর দুগ্ধ পান করে পরিতৃপ্ত হতো। কিন্তু কিছুকাল পর তাদের দুষ্কার্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। তাদের এক বড় অভিশপ্ত ব্যক্তি উষ্ট্ৰীটিকে মেরে ফেলার ইচ্ছা করলো এবং সমস্ত শহরবাসী তাকে সমর্থন করলো। অতঃপর ঐ দুরাচার উজ্জ্বীটির পা কেটে ফেলে ওকে হত্যা করলো। যার ফলে তাদেরকে কঠিনভাবে লজ্জিত হতে হলো। আকস্মিকভাবে তাদের উপর আল্লাহর আযাব আপতিত হলো এবং তাদেরকে গ্রাস করলো। তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের এই ধ্বংসলীলা পরবর্তী লোকদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে গেল। এরূপ বড় বড় নিদর্শন স্বচক্ষে দেখেও তাদের অধিকাংশ লোকই ঈমান আনয়ন করেনি। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1002)
[The most corrupt leaders took place.]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 141-159
26:141
کَذَّبَتۡ ثَمُوۡدُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۚۖ
Thamud denied the messengers
Salih and the People of Thamud
Allah tells:
كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ
إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ
26:142
اِذۡ قَالَ لَہُمۡ اَخُوۡہُمۡ صٰلِحٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۴۲﴾ۚ
When their brother Salih said to them, “Will you not fear Allah ?
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
26:143
اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۴۳﴾ۙ
Indeed, I am to you a trustworthy messenger.
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
26:144
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۴۴﴾ۚ
So fear Allah and obey me.
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ
إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ
26:145
وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۴۵﴾ؕ
And I do not ask you for it any payment. My payment is only from the Lord of the worlds.
Thamud denied the Messengers. When their brother Salih said to them:”Will you not have Taqwa! I am a trustworthy Messenger to you. So, have Taqwa of Allah, and obey me. No reward do I ask of you for it; my reward is only from the Lord of Al-`Alamin.”
Here Allah tells us about His servant and Messenger Salih, whom He sent to his people Thamud. They were Arabs living in the city of Al-Hijr — which is between Wadi Al-Qura and Greater Syria. Their location is well known.
In our explanation of Surah Al-A`raf, we mentioned the Hadiths which tell how the Messenger of Allah passed by their dwelling place when he wanted to launch a raid on Syria. He went as far as Tabuk, then he went back to Al-Madinah to prepare himself for the campaign. Thamud came after `Ad and before Ibrahim, peace be upon him. Their Prophet Salih called them to Allah, to worship Him alone with no partner or associate, and to obey whatever commands were conveyed to them, but they refused, rejecting him and opposing him. He told them that he did not seek any reward from them for his call to them, but that he would seek the reward for that with Allah. Then he reminded them of the blessings of Allah
26:146
اَتُتۡرَکُوۡنَ فِیۡ مَا ہٰہُنَاۤ اٰمِنِیۡنَ ﴿۱۴۶﴾ۙ
Will you be left in what is here, secure [from death],
A Reminder to Them of their Circumstances and the Blessings
Salih warns:
أَتُتْرَكُونَ فِي مَا هَاهُنَا امِنِينَ
فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
26:147
فِیۡ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوۡنٍ ﴿۱۴۷﴾ۙ
Within gardens and springs
وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ
26:148
وَّ زُرُوۡعٍ وَّ نَخۡلٍ طَلۡعُہَا ہَضِیۡمٌ ﴿۱۴۸﴾ۚ
And fields of crops and palm trees with softened fruit?
“Will you be left secure in that which you have here, In gardens and springs. And crops and date palms with soft clusters.”
They enjoyed Salih preached to them, warning them that the punishment of Allah could overtake them and reminding them of the blessings that Allah had bestowed upon them, by giving them ample provision and making them safe from all kinds of dangers, giving them gardens and flowing springs, and bringing forth for them crops and fruits.
وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ
and date palms with soft clusters.
Al-Awfi narrated from Ibn Abbas,
“Ripe and rich.”
Ali bin Abi Talhah narrated from Ibn Abbas that:
this meant growing luxuriantly.
Ismail bin Abi Khalid narrated from `Amr bin Abi `Amr — who met the Companions — from Ibn Abbas that this means,
“When it becomes ripe and soft.”
This was narrated by Ibn Abi Hatim, then he said:”And something similar was narrated from Abu Salih.”
وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ
26:149
وَ تَنۡحِتُوۡنَ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا فٰرِہِیۡنَ ﴿۱۴۹﴾ۚ
And you carve out of the mountains, homes, with skill.
And you hew out in the mountains, houses with great skill.
Ibn Abbas and others said,
“With great skill.”
According to another report from him:
“They were greedy and extravagant.”
This was the view of Mujahid and another group.
There is no contradiction between the two views, because they built the houses which they carved in the mountains as a form of extravagant play, with no need for them as dwelling places. They were highly skilled in the arts of masonry and stone-carving, as is well known to anyone who has seen their structures.
So, Salih said to them:
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
26:150
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۵۰﴾ۚ
So fear Allah and obey me.
So, have Taqwa of Allah, and obey me.
Pay attention to that which could benefit you in this world and the Hereafter; worshipping your Lord Who created you, who granted you provisions so that you could worship Him alone and glorify Him morning and evening.
وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ
26:151
وَ لَا تُطِیۡعُوۡۤا اَمۡرَ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۵۱﴾ۙ
And do not obey the order of the transgressors,
الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الاَْرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ
26:152
الَّذِیۡنَ یُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا یُصۡلِحُوۡنَ ﴿۱۵۲﴾
Who cause corruption in the land and do not amend.”
And follow not the command of the extravagant, who make mischief in the land, and reform not.
meaning, their chiefs and leaders, who called them to Shirk, disbelief and opposition to the truth
26:153
قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مِنَ الۡمُسَحَّرِیۡنَ ﴿۱۵۳﴾ۚ
They said, “You are only of those affected by magic.
The Response of Thamud, Their Demand for a Sign, and Their Punishment
Allah tells us how Thamud responded to their Prophet Salih, upon him be peace, when he called them to worship their Lord, may He be glorified.
قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ
They said:”You are only of those bewitched!”
Mujahid said,
“They meant he was one affected by witchcraft.”
Then they said
26:154
مَاۤ اَنۡتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا ۚۖ فَاۡتِ بِاٰیَۃٍ اِنۡ کُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۵۴﴾
You are but a man like ourselves, so bring a sign, if you should be of the truthful.”
مَا أَنتَ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُنَا
You are but a human being like us.
meaning, `how can you receive Revelation when we do not!’
This is like the Ayah where they are described as saying:
أَءُلْقِىَ الذِّكْرُ عَلَيْهِ مِن بَيْنِنَا بَلْ هُوَ كَذَّابٌ أَشِرٌ
سَيَعْلَمُونَ غَداً مَّنِ الْكَذَّابُ الاٌّشِرُ
“Is it that the Reminder is sent to him alone from among us! Nay, he is an insolent liar!”
Tomorrow they will come to know who is the liar, the insolent one! (54:26-27)
فَأْتِ بِأيَةٍ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
Then bring us a sign if you are of the truthful.
Then they asked him for a sign to prove that what he brought to them from their Lord was the truth. A crowd of them gathered and demanded that he immediately bring forth from the rock a she-camel that was ten months pregnant, and they pointed to a certain rock in their midst.
Allah’s Prophet Salih made them promise that if he responded to their request, they would believe in him and follow him. So they agreed to that.
The Prophet of Allah Salih, peace be upon him, stood and prayed, then he prayed to Allah to grant them their request. Then the rock to which they had pointed split open, revealing a she-camel that was ten months pregnant, exactly as they had requested.
So some of them believed, but most of them disbelieved.
قَالَ هَذِهِ نَاقَةٌ لَّهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ
26:155
قَالَ ہٰذِہٖ نَاقَۃٌ لَّہَا شِرۡبٌ وَّ لَکُمۡ شِرۡبُ یَوۡمٍ مَّعۡلُوۡمٍ ﴿۱۵۵﴾ۚ
He said, “This is a she-camel. For her is a [time of] drink, and for you is a [time of] drink, [each] on a known day.
He said:”Here is a she-camel:it has a right to drink (water), and you have a right to drink (water) (each) on a day, known.
meaning, `she will drink from your water one day, and on the next day you will drink from it.’
وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيمٍ
26:156
وَ لَا تَمَسُّوۡہَا بِسُوۡٓءٍ فَیَاۡخُذَکُمۡ عَذَابُ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ﴿۱۵۶﴾
And do not touch her with harm, lest you be seized by the punishment of a terrible day.”
And touch her not with harm, lest the torment of a Great Day should seize you.
He warned them of the punishment of Allah if they should do her any harm.
The she-camel stayed among them for a while, drinking the water, eating leaves and grazing, and they benefited from her milk which they took in sufficient quantities for every one to drink his fill. After this had gone on for a long time, and the time for their destruction drew near, they conspired to kill her:
فَعَقَرُوهَا فَأَصْبَحُوا نَادِمِينَ
26:157
فَعَقَرُوۡہَا فَاَصۡبَحُوۡا نٰدِمِیۡنَ ﴿۱۵۷﴾ۙ
But they hamstrung her and so became regretful.
26:158
فَاَخَذَہُمُ الۡعَذَابُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۵۸﴾
And the punishment seized them. Indeed in that is a sign, but most of them were not to be believers.
فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ
But they killed her, and then they became regretful. So, the torment overtook them.
Their land was shaken by a strong earthquake, and there came to them an overwhelming Sayhah (shout) which took their hearts from their places. They were overtaken by events which they were not expecting, so they were left (dead), lying prostrate in their homes.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّوْمِنِينَ
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
26:159
وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۵۹﴾٪
And indeed, your Lord – He is the Exalted in Might, the Merciful.
Verily, in this is indeed a sign, yet most of them are not believers. And verily your Lord, He is indeed the All-Mighty, the Most Merciful.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran