أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৫)
[ নিঃসন্দেহে কুরআন বিশ্বজগতের প্রতিপালকের অবতীর্ণকৃত (গ্রন্থ)।]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
১৯২-২১২ নং আয়াত:-
২৬:১৯২
وَ اِنَّہٗ لَتَنۡزِیۡلُ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۹۲﴾ؕ
নিঃসন্দেহে কুরআন বিশ্বজগতের প্রতিপালকের অবতীর্ণকৃত (গ্রন্থ)।
২৬:১৯৩
نَزَلَ بِہِ الرُّوۡحُ الۡاَمِیۡنُ ﴿۱۹۳﴾ۙ
বিশ্বস্ত রূহ (জিব্রাঈল) তা নিয়ে অবতরণ করেছে,
২৬:১৯৪
عَلٰی قَلۡبِکَ لِتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُنۡذِرِیۡنَ ﴿۱۹۴﴾
আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
২৬:১৯৫
بِلِسَانٍ عَرَبِیٍّ مُّبِیۡنٍ ﴿۱۹۵﴾ؕ
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
২৬:১৯৬
وَ اِنَّہٗ لَفِیۡ زُبُرِ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۱۹۶﴾
পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে অবশ্যই এর উল্লেখ আছে।
২৬:১৯৭
اَوَ لَمۡ یَکُنۡ لَّہُمۡ اٰیَۃً اَنۡ یَّعۡلَمَہٗ عُلَمٰٓؤُا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ﴿۱۹۷﴾ؕ
বনী-ইস্রাঈলের পন্ডিতগণ এ অবগত আছে –এ কি ওদের জন্য নিদর্শন নয়?
২৬:১৯৮
وَ لَوۡ نَزَّلۡنٰہُ عَلٰی بَعۡضِ الۡاَعۡجَمِیۡنَ ﴿۱۹۸﴾ۙ
যদি এ কোন অনারবের প্রতি আমি অবতীর্ণ করতাম,
২৬:১৯৯
فَقَرَاَہٗ عَلَیۡہِمۡ مَّا کَانُوۡا بِہٖ مُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۹۹﴾ؕ
এবং এটা সে তাদের কাছে পাঠ করত, তবে তারা তাতে ঈমান আনত না;
২৬:২০০
کَذٰلِکَ سَلَکۡنٰہُ فِیۡ قُلُوۡبِ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۲۰۰﴾ؕ
এভাবেই আমি অপরাধিগণের অন্তরে তা (অবিশ্বাস) সঞ্চার করেছি।
২৬:২০১
لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِہٖ حَتّٰی یَرَوُا الۡعَذَابَ الۡاَلِیۡمَ ﴿۲۰۱﴾ۙ
তারা এতে ঈমান আনবে না যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখতে পাবে;
২৬:২০২
فَیَاۡتِیَہُمۡ بَغۡتَۃً وَّ ہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۲۰۲﴾ۙ
এ ওদের নিকট আকস্মিকভাবে এসে পড়বে, ওরা কিছুই বুঝতে পারবে না।
২৬:২০৩
فَیَقُوۡلُوۡا ہَلۡ نَحۡنُ مُنۡظَرُوۡنَ ﴿۲۰۳﴾ؕ
তখন তারা বলবে, ‘আমাদেরকে কি অবকাশ দেয়া হবে?’
২৬:২০৪
اَفَبِعَذَابِنَا یَسۡتَعۡجِلُوۡنَ ﴿۲۰۴﴾
ওরা কি তবে আমার শাস্তি ত্বরান্বিত করতে চায়?
২৬:২০৫
اَفَرَءَیۡتَ اِنۡ مَّتَّعۡنٰہُمۡ سِنِیۡنَ ﴿۲۰۵﴾ۙ
আপনি ভেবে দেখুন, যদি আমরা তাদেরকে দীর্ঘকাল ভোগ-বিলাস করতে দেই!
২৬:২০৬
ثُمَّ جَآءَہُمۡ مَّا کَانُوۡا یُوۡعَدُوۡنَ ﴿۲۰۶﴾ۙ
এবং তারপর আবার সেই একই জিনিস তাদের ওপর এসে পড়ে যার ভয় তাদেরকে দেখানো হচ্ছে,
২৬:২০৭
مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یُمَتَّعُوۡنَ ﴿۲۰۷﴾ؕ
তখন যা তাদের ভোগ-বিলাসের উপকরণ হিসেবে দেয়া হয়েছিল তা তাদের কি উপকারে আসবে?
২৬:২০৮
وَ مَاۤ اَہۡلَکۡنَا مِنۡ قَرۡیَۃٍ اِلَّا لَہَا مُنۡذِرُوۡنَ ﴿۲۰۸﴾٭ۖۛ
আমি কোন জনপদকে সতর্ককারী প্রেরণ না করে ধ্বংস করিনি।
২৬:২০৯
ذِکۡرٰی ۟ۛ وَ مَا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۲۰۹﴾
এ উপদেশস্বরূপ, আর আমি অন্যায় করতে পারি না।
২৬:২১০
وَ مَا تَنَزَّلَتۡ بِہِ الشَّیٰطِیۡنُ ﴿۲۱۰﴾
শয়তান তা নিয়ে অবতরণ করেনি।
২৬:২১১
وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَہُمۡ وَ مَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ ﴿۲۱۱﴾ؕ
ওরা এ কাজের যোগ্য নয় এবং এর সামর্থ্যও রাখে না।
২৬:২১২
اِنَّہُمۡ عَنِ السَّمۡعِ لَمَعۡزُوۡلُوۡنَ ﴿۲۱۲﴾ؕ
তাদেরকে তো এর শ্রবণ থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
‘এই কোরআন তাে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ…'(আয়াত ১৯২)। রসূলদের ও তাদের রেসালাত সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা আপাতত শেষ হলাে, এসব ঘটনায় আমরা আল্লাহদ্রোহী সম্প্রদায়ের অস্বীকৃতি দেখতে পাই। দেখতে পাই তাদের প্রতি আল্লাহর কঠিন শাস্তির স্বরূপ। আলােচ্য সূরার ভূমিকায় পরক্ষণেই এসব ঘটনার বিবরণ আরম্ভ করা হয়। ভূমিকায় বিশেষভাবে রসূল(স.) ও মক্কার মােশরেকদের বিষয় স্থান পেয়েছে। শুরুতেই বলা হয়েছিলাে, তারা বিশ্বাস করে না বলে তুমি হয়তাে মর্মব্যথায় আত্মঘাতী হবে।…'(আয়াত ৩-৬) এরপর রসূলদের ঘটনাবলীর বিবরণ আরম্ভ হয়। তাতে এমন সব জাতি ও সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর বাণীর প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করতাে, বিদ্রুপ প্রকাশ করতাে। *আল কুরআন এক মহা সত্য : ঘটনার বিবরণ শেষ হওয়ার পর এখানে আলােচ্য সূরার মূল বক্তব্য আবার ফিরে এসেছে। এই বক্তব্য হচ্ছে পবিত্র কোরআন সম্পর্কিত। এতে অত্যন্ত জোরালােভাবে বলা হচ্ছে যে, এই কোরআন স্বয়ং বিশ্বজাহানের পালনকর্তার পক্ষ থেকেই নাযিল করা হয়েছে। এতে অতীতকালের বিভিন্ন ঘটনাবলীর উল্লেখ রয়েছে, এসব ঘটনাবলীর সত্যতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে স্বয়ং বনী ইসরাঈলের পন্ডিত ব্যক্তিরাও জানে। কারণ, এসব ঘটনাবলীর উল্লেখ তাদের ঐশী গ্রন্থেও রয়েছে। কিন্তু মােশরেক সম্প্রদায় এসব প্রমাণিত ও প্রকাশ্য বিষয়গুলােকে অস্বীকার করে। ওরা মনে করে, এসব যাদু অথবা কল্পনাপ্রসূত কাব্য। এমনকি, এই কোরআন যদি কোনাে অনারব, যে মােটেও আরবী জানেনা, তার ওপর নাযিল হতাে এবং সে তা ওদের সামনে পাঠ করে শুনাতাে তাতেও ওরা বিশ্বাস করতাে না, ঈমান গ্রহণ করতাে না। এটা কোনাে দলীল প্রমাণের দুর্বলতার কারণে নয়, বরং ওদের গােয়ার্তুমীর কারণেই ওরা ঈমান গ্রহণ করে না। ওদের জানা উচিত, এই পবিত্র বাণী মােহাম্মদ(স.)-এর কাছে কোনাে জ্বীন-পরী বা কোনাে দৈত্য-দানবের পক্ষ থেকে আসেনি, যা সাধারণত গণক ঠাকুরদের কাছে এসে থাকে। ওদের আরাে জানা থাকা উচিত, যে এই পবিত্র বাণী কোনাে কাব্য সম্ভার নয়। কারণ, এর একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতি রয়েছে। অথচ কবিতা হচ্ছে একদল কল্পনা বিলাসী কবিদের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনার সমাহার। এতে বাস্তবতার পরিবর্তে কল্পনার প্রাধান্য থাকে বেশী। কিন্তু পবিত্র কোরআন এমনটি নয়। কারণ, আল্লাহদ্রোহী তথা মােশরেক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দেয়ার জন্যে এবং কঠিন আযাবে আক্রান্ত হওয়ার আগেই তাদেরকে সাবধান করে দেয়ার জন্যে এই পবিত্র কোরআন স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে। অন্যথায় তাদেরকে করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে, ‘নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ?’ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এই কোরআন তাে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ, বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে…'(আয়াত ১৯১-১৯৫) অর্থাৎ জিবরাঈল(আ.) যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআন রসূল(আ.)-এর আত্মার প্রতি নাযিল করেছেন তিনি অত্যন্ত বিশ্বস্ত একজন ফেরেশতা। তিনি কেবল বিশ্বস্তই নন, বরং যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে বহন করে এনেছেন তার যথার্থ হেফাযতও করেছেন। আর তার কাছ থেকে সরাসরি আল্লাহর নবী সেই ঐশী বাণী গ্রহণ করেছেন এবং যথাযথভাবে ও প্রত্যক্ষরূপে তা ধারণও করেছেন। উদ্দেশ্য হলাে, তিনি যেন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ এই ঐশী বাণীর মাধ্যমে তার জাতিকে সতর্ক করতে পারেন, দিক নির্দেশনা করতে পারেন। যেহেতু এই বাণীর ভাষা ছিলো তাদেরই মাতৃভাষা আরবী, কাজেই এর মর্ম ও বক্তব্য বুঝা তাদের পক্ষে কঠিন কিছু ছিলাে না। তারা সহজেই বুঝতে পেরেছিলাে, এই বাণী কখনাে মানুষের মুখের বাণী হতে পারে না। কারণ, এর বাক্য গঠন রীতি, বর্ণনা ভংগি, অর্থ ও বক্তব্যের সুবিন্যস্ততাই প্রমাণ করে এর উৎস মানুষ নয়। এরপর আর একটি বাহ্যিক প্রমাণের প্রতি ইংগিত করে বলা হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই এর উল্লেখ রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে…'(আয়াত ১৯৬-১৯৭) পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে রসূল(স.)-এর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। সে কারণেই বনী ইসরাঈলের আলেমরা রাসূল(স.)-এর আগমনের প্রত্যাশী ছিলেন। তারা মনে করতেন প্রত্যাশিত রসূলের আগমন কাল ঘনিয়ে এসেছে। এটা নিয়ে তারা পরস্পর বলাবলিও করতেন। বিশিষ্ট সাহাবী সালমান ফারেসী ও আবদুল্লাহ ইবনে সালাম(রা.)-এর মাধ্যমে এই বক্তব্য জানা যায়। এ সংক্রান্ত তথ্যগুলােও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত । তা সত্তেও কেবল অহংকার ও গোঁড়ামির বশবর্তী হয়ে মক্কার মোশরেক সম্প্রদায় এই পবিত্র বাণীকে আল্লাহর বাণী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। এমন কি কোনাে অনারবও যদি তাদেরকে আরবী ভাষায় এই বাণী আবৃত্তি করে শুনাতাে, তাতেও তারা এটাকে আল্লাহর বাণী হিসেবে গ্রহণ করতাে না, বিশ্বাস করতাে না। তাই বলা হয়েছে, ‘যদি আমি একে কোনাে ভিন্নভাষীর প্রতি অবতীর্ণ করতাম অতপর তিনি তা তাদের কাছে পাঠ করতেন, তবে তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করতাে না।'(আয়াত ১৯৮-১৯৯) এই আয়াতে একদিকে রাসূল(স.)-কে সান্তনা জানানাে হচ্ছে এবং অপরদিকে মােশরেকদের সীমাহীন অহংকার ও গোঁড়ামীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এরা কোনাে যুক্তি প্রমাণেরই ধার ধারে না। এদের স্বভাবই হচ্ছে, সত্যকে অস্বীকার করা। তবে এই অস্বীকৃতির শাস্তি তাদেরকে অবশ্যই ভােগ করতে হবে।
যখন আল্লাহর হুকুমে আযাব আসবে তখন তারা বুঝতেও পারবে না, কিভাবে কি হলো। সে কথাই আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে, তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে না যে পর্যন্ত তারা মমন্তুদ আযাব (সামনে) দেখতে পাবে। অতপর তা আকস্মিকভাবে তাদের কাছে এসে পড়বে, তারা তা বুঝতেও পারবে না'(আয়াত ২০১-২০২) আলােচ্য আয়াতের বর্ণনাভংগির মাধ্যমে মােশরেকদের চিরাচরিত একটা স্বভাবকে চাক্ষুসভাবে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, ঈমান গ্রহণ না করা এবং কোরআনকে অস্বীকার করা ওদের মজ্জাগত স্বভাব। এই স্বভাবের কোনাে পরিবর্তন হবে না। আল্লাহর গযব বা অন্য কোনাে কারণে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তারা এই স্বভাবের ওপরই অটল থাকে। অনেকে আবার মৃত্যুর কারণে অথবা হত্যার মাধ্যমে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে যায়, কিন্তু নিজের এই স্বভাবকে ত্যাগ করতে পারে না। আবার জীবন সায়াহ্নে এসে অনেকে চৈতন্য ফিরে পায়। তখন বলে ওঠে, ‘আমরা কি অবকাশ পাবাে না?’ অর্থাৎ আমাদের কি আর একবার সংশােধনের সুযােগ দেয়া হবে না? কিন্তু না, তেমন কোনাে সুযােগ তখন আর থাকবে না। ওরা অনেকটা তাচ্ছিল্য ও বিদ্রুপের বশবর্তী হয়েই নিজেদের ওপর আসমানী গযবকে দ্রুত আসার জন্যে আব্দার করতাে। ভােগ বিলাসিতার মাঝে ডুবে থাকার কারণে ওদের চেতনা ও অনুভূতি ভোতা হয়ে গিয়েছিলাে। যার ফলে ওরা কল্পনাই করতে পারতাে না যে, আল্লাহর গযবও ওদের ওপর নেমে আসতে পারে, ঠিক সম্পদশালীরা যেমনটি করে থাকে। কারণ, সম্পদশালীরা কদাচিৎ মনে করে থাকে যে, তাদের সম্পদ একদিন শেষ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এদেরকে হুঁশিয়ায় করে দিয়ে বলছেন, ‘তারা কি আমার শাস্তিকে দ্রুত কামনা করে? তুমি ভেবে দেখাে তো, যদি আমি বছরের পর বছর…'(আয়াত ২০৪-২০৬) একদিকে আল্লাহর শাস্তি দ্রুত কামনা করা হচ্ছে, অপরদিকে সেই শাস্তি আকস্মিকভাবেই তাদের ওপর পতিত হচ্ছে। ফলে বিদ্রোহীদের এই জীবন চুরমার হয়ে পড়ছে, নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ছে। কোনাে কিছুই তাদেরকে রক্ষা করতে পারছে না। কোনো কিছুই তাদের শাস্তিকে লঘু করতে পারছে না। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, কাফেরদেরকে জাহান্নামের আগুনের মাঝে একবার ঠেসে ধরে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কখনাে কি ভালো কিছু দেখেছো? কখনাে কি কোনাে নেয়ামত দেখেছাে? সে বলবে, আল্লাহর কসম কখনাে না। এর পর আর একজন লােককে হাযির করা হবে সে পৃথিবীতে অনেক দুঃখ কষ্ট দেখেছে। তাকে জান্নাতের মাঝে একবার ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে, ‘তুমি কি কখনাে কোনাে দুঃখ কষ্ট দেখেছাে?’ সে বলবে, কখনাে না হে আমার প্রভু।’ (তাফসীরে ইবনে কাসীর) এরপর আল্লাহ তায়ালা ওদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলছেন যে, ‘আমি কোনাে জনপদ ধ্বংস করিনি যার জন্যে কোনাে সতর্ককারী (নবী) পাঠানাে হয়নি…'(আয়াত ২০৮-২০৯) আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির কাছ থেকে একটা স্বভাবজাত অংগীকার নিয়েছিলেন। সেটা হচ্ছে মানব জাতি তাওহীদের বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে একমাত্র তাঁরই এবাদাত বন্দেগী করবে। কেননা প্রকৃতি নিজেও একক স্রষ্টার প্রমাণ বহন করে। এমনকি সুস্থ মানব স্বভাবও একক স্রষ্টার অনুভূতি লালন করে থাকে। সাথে সাথে গােটা সৃষ্টি জগতও এই একক স্রষ্টারই প্রমাণ বহন করে চলছে। তাই মানুষ যখন স্বভাবজাত অংগীকারের কথা ভুলে যায় এবং ঈমানী চেতনা সৃষ্টিকারী আল্লাহর নির্দ্শনগুলাের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন তাদেরকে সতর্ক করে দেয়ার জন্যে নবী রসূলদের আগমন ঘটে। তাই নবুওত ও রেসালত হচ্ছে মূলত আত্মভােলা ও গাফেল মানুষদেরকে সতর্ক করার একটা উপায় ও পন্থা। এর মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও ইনসাফেরই বহিপ্রকাশ ঘটে। এর পরও যারা সতর্ক হয় না তাদেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিলে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে যুলুম হিসেবে বিবেচিত হবে না। বরং সত্য ও ন্যায় পথ থেকে বিচ্যুতির ন্যায্য শাস্তি হিসেবেই গণ্য হবে।
# এর পর পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই কুরআন শয়তানরা অবতীর্ণ করেনি। তার এ কাজের উপযুক্ত নয় এবং তারা এর সামর্থ্য রাখে না…'(আয়াত ২১০-২১২) পূর্বে বলা হয়েছিলাে যে, এই কোরআন বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল করা। এখন কাফের মােশরেকদের ভ্রান্ত দাবী খন্ডন করে বলা হচ্ছে, এই কোরআন শয়তানী পদ্ধতিতে নাযিলকৃত কোনাে গণক বা জ্যোতিষীর মুখনিসৃত বাণী নয়। এটা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহর পবিত্র বাণী যার ধারে কাছে পৌছার ক্ষমতাও কোনাে শয়তানের নেই। এই বাণী মানুষকে সত্য পথের সন্ধান দেয়, সততার প্রতি আহবান করে এবং ঈমানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, অথচ শয়তানরা সম্পূর্ণ এর বিপরীত কাজ করে। তারা মানুষকে ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, অমঙ্গলের পথে ডাকে এবং আল্লাহদ্রোহিতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনের মতাে কোনাে বাণী পেশ করার মতাে ক্ষমতা শয়তানের নেই। কারণ, ওহীর উৎস থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। এই বাণীর বাহক তাে একজন সম্মানিত ও বিশ্বস্ত ফেরেশতা, যিনি আল্লাহর নির্দেশেই এই বাণী বহন করে রসূলের কাছ পৌছান। এই মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার ক্ষমতা কি কোনাে শয়তানের থাকতে পারে?
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১৯২-১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন, কাফির মুশরিকরা যে সন্দেহ করত এবং বলত এ কুরআন পূর্ববর্তীদের উপকথা যা মুহাম্মাদ নিজেই রচনা করেছে। তাদের এ কথা খণ্ডন করণার্থে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কুরআন বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, এটা কোন মানব রচিত কিতাব নয়। যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিল না হত তাহলে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ববর্তী এসব জাতির খবর কিভাবে জানলেন? এসব খবর তিনিই দিতে পারেন যিনি সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন । যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(تَنْزِيْلُ الْكِتٰبِ مِنَ اللّٰهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ)
“এ কিতাব নাযিল হয়েছে প্রতাপশালী মহাবিজ্ঞ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে।” (সূরা যুমার ৩৯:১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(مَآ أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْاٰنَ لِتَشْقٰٓي لا – إِلَّا تَذْكِرَةً لِّمَنْ يَّخْشٰي لا – تَنْزِيْلًا مِّمَّنْ خَلَقَ الْأَرْضَ وَالسَّمٰوٰتِ الْعُلٰي)
“তুমি কষ্ট পাবে এজন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি, বরং যে ভয় করে কেবল তার উপদেশ লাভের জন্য, যিনি পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট হতে এটা অবতীর্ণ, (সূরা ত্বা-হা- ২০:২-৪)
আর এ কুরআন নাযিল করা হয়েছে জিবরীল আমীন এর মাধ্যমে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَإِنَّه۫ نَزَّلَه۫ عَلٰي قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللّٰهِ)
“তুমি বলন যে ব্যক্তি জিবরীলের সাথে শত্র“তা রাখে (সে হিংসায় মরে যাক) সে তো আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে এ কুরআনকে তোমার অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।” (সূরা বাকারাহ ২:৯৭)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কুরআনকে নাযিল করা হয়েছে মানুষকে পরকালের শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُنْزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِه۪ وَذِكْرٰي لِلْمُؤْمِنِيْنَ)
“তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতএব তোমার মনে যেন এ সম্পর্কে কোন সঙ্কোচ না থাকে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে এবং মু’মিনদের জন্য এটা উপদেশ।” (সূরা আ‘রাফ ৭:২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّآ أُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ)
“যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে, যাদের পূর্বপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৬)
আর এ কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল করা হয়েছে যাতে মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ)
“কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবি।” (সূরা নাহল ১৬:১০৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(كِتٰبٌ فُصِّلَتْ اٰيٰتُه۫ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ)
“এটা (এমন) এক কিতাব, বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এর আয়াতসমূহ, আরবি ভাষায় কুরআনরূপে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।” (হা-মীম-সাজদাহ ৪১:৩)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষকে সতর্ক করার জন্য।
২. কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ।
১৯৬-১৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে বর্ণনা করা হয়েছে, এ কুরআন সম্পর্কে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও সংবাদ দেয়া হয়েছে, যে বিষয়ে বানী ইসরাঈলের পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ অবগত আছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ قَالَ عِيْسَي ابْنُ مَرْيَمَ يٰبَنِيْٓ إِسْرَا۬ئِيْلَ إِنِّيْ رَسُوْلُ اللّٰهِ إِلَيْكُمْ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرٰةِ وَمُبَشِّرًاۭبِرَسُوْلٍ يَّأْتِيْ مِنْۭ بَعْدِي اسْمُه۫ٓ أَحْمَدُ)
“(স্মরণ কর) যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল: হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদদাতা।” (সূরা সাফ ৬১:৬)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করার কারণ বর্ণনা করেছেন। এ কুরআন আরবি ভাষায় এবং আরবি ভাষাভাষী নাবীর ওপর নাযিল করার কারণ হল যাতে মক্কার কাফিররা ঈমান নিয়ে আসে। যদি এ কুরআন অনারবদের প্রতি নাযিল করা হত তাহলে তারা এতে বিশ্বাস করত না বা ঈমান আনত না। যার ফলে এ কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনের বর্ণনা পূর্ববর্তী কিতাবে দেয়া হয়েছে।
২. ঈমানদার আরবদের মর্যাদা অবগত হলাম।
২০০-২০৯ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে মূলত কাফিররা যে বিভিন্ন ওযর পেশ করে ঈমান আনে না এবং তারা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন আফসোস করে বলবে তাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য কিন্তু তাদেরকে আর অবকাশ দেয়া হবে নান এ কথাই আলোচনা করা হয়েছে।
তারা ঈমান না আনার জন্য বিভিন্ন ওযর পেশ করবে, এক পর্যায়ে দেখা যাবে যে, হঠাৎ করে তাদের নিকট শাস্তি এসে যাবে তখন তারা আর ঈমান নিয়ে আসার সুযোগ পাবে না। যেমন ফির‘আউন বলেছিল:
(حثج اِذَآ اَدْرَکَھُ الْغَرَقُﺫ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّھ۫ لَآ اِلٰھَ اِلَّا الَّذِیْٓ اٰمَنَتْ بِھ۪ بَنُوْٓا اِسْرَا۬ءِیْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ)
“পরিশেষে যখন সে ডুবতে শুরু করল তখন বলল: ‘আমি ঈমান এনেছি যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই যাঁর প্রতি ঈমান এনেছে বানী ইসরাঈল এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ ‘এখন! ইতোপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।” (সূরা ইউনুস ১০:৯০-৯১) আর মুমূর্ষু অবস্থায় ঈমান আনলেও তা কোন কাজে আসবে না। যেমন ফির‘আউনের ঈমান নিয়ে আসা ফলদায়ক হয়নি। এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَفَبِعَذَابِنَا يَسْتَعْجِلُوْنَ)
(তারা শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করত।) এ সম্পর্কে সূরা রাদের ৬ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি কোন সম্প্রদায়কে সতর্ক না করা পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করেন না। এ সম্পর্কে সূরা ইসরায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّي نَبْعَثَ رَسُولًا)
“আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দেই না।” (সূরা ইসরা ১৭:১৫)
আর আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি জুলুম করেন না, বরং প্রত্যেককে তার কর্মের উপযুক্ত প্রতিদান দেবেন। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের ৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা যাদের জন্য হিদায়াত রাখেননি তাদেরকে শত সতর্ক করলেও কোন কাজে আসবে না।
২. মুমূর্ষু অবস্থায় ঈমান আনলে তা কুবল করা হবে না।
৩. কোন জাতিকে সতর্ক না করে আল্লাহ তা‘আলা শাস্তি দেন না।
৪. পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
মানুষ যাতে সন্দেহ পোষণ করতে না পারে সে জন্য প্রথমে আল্লাহ তা‘আলা বলে দিচ্ছেন যে, শয়তানের পক্ষে এ কুরআন নাযিল করা সম্ভব নয়। এমনকি সে এর শ্রবণ থেকেও বিতাড়িত। কারণ কুরআনের যা উদ্দেশ্য তা হল কল্যাণ ও পুণ্যের আদেশ ও তার প্রচার-প্রসার করা। কিন্তু শয়তানের উদ্দেশ্য এর বিপরীত। যার ফলে তার থেকে এ কুরআনকে দূরে রাখা হয়েছে। বরং কুরআন নাযিলের মাধ্যম ছিলেন রূহুল আমীন জিবরীল (عليه السلام) যাঁর গুণাবলী সূরা নাজমে উল্লেখ রয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সতর্ক করে বলছেন যে, তুমি কখনো আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করো না। যদি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে মা‘বূদ হিসেবে ডাক তাহলে তোমাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لَا تَجْعَلْ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُوْمًا مَّخْذُوْلًا)
“আল্লাহ তা‘আলার সাথে অপর কোন ইলাহ্ সাব্যস্ত কর না; করলে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।” (সূরা ইসরা ১৭:২২) শির্ক সম্পর্কে সূরা নিসার ৪৮ নং আয়াতসহ আরো একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# ঐতিহাসিক বর্ণনা শেষ করে এবার আলোচনার ধারা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এমন এক বিষয়ের দিকে যার মাধ্যমে সূরার সূচনা করা হয়েছিল। এ বিষয়টি বুঝতে হলে আর একবার পেছন ফিরে প্রথম রুকু’টি দেখে নেয়া উচিত।
# এ “সুস্পষ্ট কিতাব” টি যার আয়াত এখানে শোনানো হচ্ছে এবং এ “কথা” যা থেকে লোকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এটা কোন মানুষের মনগড়া জিনিস নয়। মুহাম্মাদ ﷺ নিজে রচনা করেননি। বরং রব্বুল আলামীন নাযিল করেছেন।
# জিব্রীল আলাইহিস সালাম, যেমন কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ “বলে দাও, যে ব্যক্তি জিব্রীলের সাথে শত্রুতা রাখে তার জানা উচিত, সে-ই এ কুরআন আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে নাযিল করেছে।” (আল বাকারাহঃ ৯৭ আয়াত)
এখানে তাঁর নাম না নিয়ে তাঁর জন্য “রূহুল আমীন” (আমানতদার বা বিশ্বস্ত রূহ) পদবী ব্যবহার করে একথা ব্যক্ত করতে চাওয়া হয়েছে যে, রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এ নাযিলকৃত জিনিসটি নিয়ে কোন বস্তুগত শক্তি আসেনি, যার মধ্যে পরিবর্তন ও অবক্ষয়ের সম্ভাবনা আছে বরং এসেছে একটি নির্ভেজাল রূহ। তাঁর মধ্যে বস্তুবাদিতার কোন গন্ধ নেই। তিনি পুরোপুরি আমানতদার। আল্লাহর বাণী যেভাবে তাঁকে সোপর্দ করে দেয়া হয় ঠিক তেমনি হুবহু তিনি তা পৌঁছিয়ে দেন। নিজের পক্ষ থেকে কিছু বাড়ানো বা কমানো অথবা নিজেই কিছু রচনা করে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
# এ বাক্যটির সম্পর্ক “আমানতদার রূহ অবতরণ করেছে” এর সাথেও হতে পারে আবার “যারা সতর্ককারী হয়” এর সাথেও হতে পারে। প্রথম অবস্থায় এর অর্থ হবে, সেই আমানতদার রূহ তাকে এনেছেন পরিষ্কার আরবী ভাষায় এবং দ্বিতীয় অবস্থায় এর অর্থ হবে নবী ﷺ এমন সব নবীদের অর্ন্তভূক্ত যাদেরকে আরবী ভাষার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ নবীগণ ছিলেন হূদ, সালেহ, ইসমাঈল ও শো’আইব আলাইহিমুস সালাম। উভয় অবস্থায় বক্তব্যের উদ্দেশ্য একই এবং তা হচ্ছে রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এ শিক্ষা কোন মৃত ভাষায় বা জ্বীনদের ভাষায় আসেনি এবং এর মধ্যে ধাঁধাঁ বা হেঁয়ালী মার্কা কোন গোলমেলে ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। বরং এটা এমন প্রাঞ্জল, পরিষ্কার ও উন্নত বাগধারা সম্পন্ন আরবী ভাষায় রচিত, যার অর্থ ও বক্তব্য প্রত্যেক আরবী ভাষাভাষী ও আরবী জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি অতি সহজে ও স্বাভাবিকভাবে অনুধাবন করতে পারে। তাই যারা এর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তারা এর শিক্ষা বুঝতে পারেনি তাদের দিক থেকে এ ধরণের ওজর পেশ করার কোন সুযোগ নেই। বরং তাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও অস্বীকার করার কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র এই যে, তারা মিসরের ফেরাউন, ইব্রাহীমের জাতি, নূহের জাতি, লূতের জাতি, আদ ও সামূদ জাতি এবং আইকাবাসীদের মতো একই রোগে ভূগছিল।
# একথা, এ অবতীর্ণ বিষয় এবং এ আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা ইতিপূর্বেকার আসমানী কিতাবগুলোতে রয়েছে। এক আল্লাহর বন্দেগীর একই আহ্বান, পরকালের জীবনের এই একই বিশ্বাস নবীদের পথ অনুসরণের একই পদ্ধতি সেসব কিতাবেও পেশ করা হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব কিতাব এসেছে সেগুলো শিরকের নিন্দাই করে। সেগুলো বস্তুবাদী জীবনাদর্শ ত্যাগ করে এমন সত্য জীবনাদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানায় যেগুলোর ভিত্তি আল্লাহর সামনে মানুষের জবাবদিহিতার ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সে সকল কিতাবের অভিন্ন দাবী এই যে, মানুষ নিজের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি ও ক্ষমতা পরিত্যাগ করে নবীদের আনীত আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে চলুক। এসব কথার মধ্যে কোনটাই নতুন নয়। দুনিয়ায় কুরআনই প্রথমবার একথাগুলো পেশ করছে না। কোন ব্যক্তি বলতে পারবে না, তোমরা এমনসব কথা বলছো যা পূর্বের ও পরের কেউ কখনো বলেনি।
ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি পুরাতন অভিমতের সপক্ষে যেসব যুক্তি দেখানো হয়ে থাকে এ আয়াতটি তার অন্যতম। ইমাম সাহেবের মতটি হচ্ছেঃ
যদি কোন ব্যক্তি নামাজে কুরআনের অনুবাদ পড়ে নেয় সে আরবীতে কুরআন পড়তে সক্ষম হলেও বা না হলেও, তার নামাজ হয়ে যায়। আল্লামা আবু বকর জাসসাসের ভাষায় এ যুক্তির ভিত্তি হলো, আল্লাহ এখানে বলছেন, এ কুরআন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর মধ্যেও ছিল। আর একথা সুস্পষ্ট, সে কিতাবগুলোতে কুরআন আরবী ভাষার শব্দ সমন্বয়ে ছিল না। অন্য ভাষায় কুরআনের বিষয়বস্তু উদ্ধৃত করে দেয়া সত্ত্বেও তা কুরআনই থাকে। কুরআন হওয়াকে বাতিল করে দেয় না। (আহকামুল কুরআন, তৃতীয় খণ্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা) কিন্তু এ যুক্তির দুর্বলতা একেবারেই সুস্পষ্ট। কুরআন মজীদ বা অন্য কোন আসমানী কিতাবের কোনটিরও নাযিল হবার ধরণ এমন ছিল না যে, আল্লাহ নবীর অন্তরে কেবল অর্থই সঞ্চার করে দিয়েছেন এবং তারপর নবী তাকে নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। বরং প্রত্যেকটি কিতাব যে ভাষায় এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে শব্দ ও বিষয়বস্তু উভয়টি সহকারেই এসেছে। পূর্ববর্তী যেসব কিতাবে কুরআনের শিক্ষা ছিল মানবিক ভাষা সহকারে নয় বরং আল্লাহর ভাষা সহকারেই ছিল এবং সেগুলোর কোনটির অনুবাদকেও আল্লাহর কিতাব বলা যেতে পারে না এবং তাকে আসলের স্থলাভিষিক্ত করাও সম্ভব নয়। আর কুরআন সম্পর্কে বার বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে তার প্রতিটি শব্দ আরবী ভাষায় হুবহু নাযিল হয়েছেঃ
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا-(يوسف-2)
“নিশ্চিতভাবে আমি তা নাযিল করেছি আরবী ভাষায় কুরআন আকারে।”
وَكَذَلِكَ أَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا “আর এভাবে আমি তা নাযিল করেছি একটি নির্দেশ আরবী ভাষায়।” قُرْآنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِي عِوَجٍ (الزمر-28)
“আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতা মুক্ত।” (আয্ যুমারঃ ২৮) তারপর আলোচ্য আয়াতের সাথে সংযুক্ত পূর্ববর্তী আয়াতেই বলা হয়েছে, রূহুল আমীন আরবী ভাষায় একে নিয়ে নাযিল হয়েছেন। এখন তাঁর সম্পর্কে কেমন করে এ কথা বলা যেতে পারে যে, কোন মানুষ অন্য ভাষায় তার যে অনুবাদ করেছে তাও কুরআনই হবে এবং তার শব্দাবলী আল্লাহর শব্দাবলীর স্থলাভিষিক্ত হবে। মনে হচ্ছে যুক্তির এ দুর্বলতাটি মহান ইমাম পরবর্তী সময়ে উপলব্ধি করে থাকতে পারেন। তাই নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এ কথা উদ্ধৃত হয়েছে যে, এ বিষয়ে নিজের অভিমত পরিবর্তন করে তিনি ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মত গ্রহণ করে নিয়েছিলেন অর্থাৎ যে ব্যক্তি আরবী ভাষায় কিরআত তথা কুরআন পড়তে সক্ষম নয় সে ততক্ষণ পর্যন্ত নামাজে কুরআনের অনুবাদ পড়তে পারে যতক্ষণ সে আরবী শব্দ উচ্চারণ করার যোগ্যতা অর্জন না করে। কিন্তু যে ব্যক্তি আরবীতে কুরআন পড়তে পারে সে যদি কুরআনের অনুবাদ পড়ে তাহলে তার নামাজ হবে না। আসলে ইমামদ্বয় এমন সব আজমী তথা অনারব নওমুসলিমকে এ সুযোগটি দেবার প্রস্তাব করেছিলেন যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরপরই আরবী ভাষায় নামাজ পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারতো না। এ ব্যাপারে কুরআনের অনুবাদও কুরআন এটা তাদের যুক্তির ভিত্তি ছিল না। বরং তাদের যুক্তি ছিল, ইশারায় রুকূ-সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য জায়েয ঠিক তেমনি আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় নামাজ পড়াও এমন ব্যক্তির জন্য জায়েয যে আরবী হরফ উচ্চারণ করতে অক্ষম। অনুরূপভাবে যেমন অক্ষমতা দূর হবার ইশারায় রুকূ- সিজদাকারীর নামাজ হবে না ঠিক তেমনি কুরআন পড়ার ক্ষমতা অর্জন করার পর অনুবাদ পাঠকারীর নামাযও হবে না। (এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সারখসী লিখিত মাবসূত, প্রথম খণ্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা এবং ফাতহুল কাদীর ও শারহে ইনায়াহ আলাল হিদায়াহ প্রথম খণ্ড, ১৯০-২০১ পৃষ্ঠা)
# বনী ইসরাঈলের আলেমরা একথা জানে যে, কুরআন মজীদে যে শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা ঠিক সেই একই শিক্ষা যা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোতে দেয়া হয়েছিল। মক্কাবাসীরা কিতাবের জ্ঞান না রাখলেও আশেপাশের এলাকায় বনী ইসরাঈলের বিপুল সংখ্যক আলেম ও বিদ্বান রয়েছে। তারা জানে, মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ আজ প্রথমবার তাদের সামনে কোন অভিনব ও অদ্ভূত ‘কথা’ রাখেননি বরং হাজার হাজার বছর থেকে আল্লাহর নবীগণ এই একই কথা বারবার এনেছেন। এ নাযিলকৃত বিষয়ও সেই একই রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এসেছে যিনি পূর্ববর্তী কিতাবগুলো নাযিল করেছিলেন, এ কথাটি কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ততা অর্জন করার জন্য যথেষ্ট নয়?
সীরাতে ইবনে হিশাম থেকে জানা যায়, এ আয়াতগুলো নাযিল হবার কাছাকাছি সময়ে হাবশা (বর্তমানে ইথিয়োপিয়া) থেকে হযরত জা’ফর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দাওয়াত শুনে ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দল মক্কায় আসে। তারা মসজিদে হারামে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের সামনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহিত মোলাকাত করে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কি শিক্ষা নিয়ে এসেছেন? তিনি জবাবে কুরআনের কিছু আয়াত শুনান। এগুলো শুনে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে এবং তারা তখনই তাঁর প্রতি ঈমান আনে। তারপর যখন তারা তাঁর কাছ থেকে উঠে যায় তখন আবু জাহেল কয়েকজন কুরাইশকে সাথে নিয়ে তাদের সাথে দেখা করে এবং তাদেরকে কঠোরভাবে তিরষ্কার করে। সে বলে “তোমাদের চেয়ে বেশী নির্বোধ কাফেলা কখনো এখানে আসেনি। হে হতভাগার দল! তোমাদের দেশের লোকেরা তোমাদের এখানে পাঠিয়েছিল এ ব্যক্তির অবস্থা অনুসন্ধান করে তাদের কাছে সঠিক তথ্য নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু তোমরা তো তাঁর সাথে সাক্ষাত করার সাথে সাথেই নিজেদের ধর্ম বিসর্জন দিয়ে বসলে?” তারা ছিল ভদ্র ও শরীফ লোক। আবু জাহেলের এ নিন্দাবাদ ও ভর্ৎসনায় বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে তারা সালাম দিয়ে সরে গেল এবং বলতে থাকলোঃ আমরা আপনার সাথে বিতর্ক করতে চাই না। আপনার ধর্ম আপনার ইচ্ছা ও আপনার ক্ষমতার আওতাধীন এবং আমাদের ধর্মও আমাদের ইচ্ছা ও আমাদের ক্ষমতার আওতাধীন। যে জিনিসের মধ্যে নিজেদের কল্যাণ দেখেছি সেটিই আমরা গ্রহণ করে নিয়েছি। (দ্বিতীয় খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠা) সূরা কাসাসে এ ঘটনার আলোচনা এভাবে এসেছেঃ
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِهِ هُمْ بِهِ يُؤْمِنُونَ – وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ ………………. وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ
“এর আগে যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছিলাম তারা এ কুরআনের প্রতি ঈমান আনে এবং যখন তাদেরকে তা শুনানো হয় তখন বলে, আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি। এ হচ্ছে আমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য। আমরা এর আগেও এই দ্বীন ইসলামের ওপর ছিলাম। ………আর যখন তারা অর্থহীন কথাবার্তা শুনলো তখন বিতর্ক এড়িয়ে গেলো এবং বললো আমাদের কাজ আমাদের জন্য এবং তোমাদের কাজ তোমাদের জন্য। তোমাদের সালাম জানাই। আমরা মূর্খদের পদ্ধতি পছন্দ করি না। (অর্থাৎ তোমরা আমাদের দু’টি কথা শুনালে জবাবে আমরাও তোমাদের দু’টি কথা শুনালাম)
# এখন তাদেরই জাতির এক ব্যক্তি পরিষ্কার আরবী ভাষায় এ কালাম পড়ে শুনাচ্ছেন। এতে তারা বলছে, এ ব্যক্তি নিজেই এ কালাম রচনা করেছে। আরবী ভাষীর মুখ থেকে আরবী ভাষণ উচ্চারিত হবার মধ্যে অলৌকিকতার কি আছে যে, তাকে আল্লাহর কালাম বলে মেনে নিতে হবে? কিন্তু এ উচ্চাংগের আরবী কালাম যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনারব ব্যক্তির ওপর অলৌকিক কার্যক্রম হিসেবে নাযিল করা হতো এবং সে এসে আরবদের কাছে অত্যন্ত নির্ভুল আরবীয় কায়দায় তা পড়ে শুনাতো তাহলে তারা ঈমান না আনার জন্য অন্য কোন বাহানা তালাশ করতো। তখন তারা বলতো, এর ওপর কোন জিন ভর করেছে, সে আজমীর কন্ঠে আরবী বলে যাচ্ছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ ৫৪-৫৮ টীকা) আসল জিনিস হচ্ছে, সত্য প্রিয় ব্যক্তির সামনে যে কথা পেশ করা হয় সে তার ওপর চিন্তা করে এবং ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে কথাটা ন্যায় সঙ্গত কি-না সে ব্যাপারে অভিমত প্রতিষ্ঠিত করে। আর যে ব্যক্তি হঠকারী হয়, না মেনে নেয়ার ইচ্ছাই যে প্রথম থেকে লালন করে রেখেছে সে আসল বিষয় বস্তুর দিকে দৃষ্টি দেয় না বরং তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য নানান টালবাহানা তালাশ করতে থাকে। তার সামনে কথা যেভাবেই পেশ করা হোক না কেন সে তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য কোন না কোন অজুহাত বা ছুতো তৈরি করে নেবেই। কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের এই হঠকারীতার পর্দা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উন্মোচন করা হয়েছে এবং তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, তোমরা কোন্ মুখে ঈমান আনার জন্য মুজি’যা দেখাবার শর্ত আরোপ করছো? তোমরা তো এমন লোক যাদেরকে যে কোন জিনিস দেখিয়ে দেয়া হলেও তারা তা মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য কোন না কোন বাহানা তালাশ করে নেবেই। কারণ তোমাদের মধ্যে সত্য কথা মেনে নেবার প্রবণতা নেইঃ
وَلَوْ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ كِتَابًا فِي قِرْطَاسٍ فَلَمَسُوهُ بِأَيْدِيهِمْ لَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ
“যদি আমি তোমাদের ওপর কোন কাগজে লেখা কিতাব নাযিল করে দিতাম এবং এরা হাত দিয়ে তা ছুঁয়েও দেখে নিতো, তাহলেও যাদের না মানার তারা বলতো, এতো পরিষ্কার যাদু।” (আল আন’আমঃ ৭ আয়াত) وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ – لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَسْحُورُونَ
“আর যদি আমি তাদের ওপর আকাশের কোন দরজাও খুলে দিতাম এবং তারা তার মধ্যে চড়তে থাকতো, তাহলে তারা বলতো আমাদের চোখ প্রতারিত হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে।” (আল হিজরঃ ১৪-১৫)
# এটা সত্যপন্থীদের দিলে যেমন আত্মিক প্রশান্তি ও হৃদয়ের সান্তনা হয়ে দেখা দেয় তাদের দিলে এর প্রতিক্রিয়া ঠিক সেভাবে হয় না। বরং একটি গরম লোহার শলাকা হয়ে এটা তাদের হৃদয়ে এমনভাবে বিদ্ধ হয় যে, তারা অস্থির হয়ে ওঠে এবং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে তার প্রতিবাদ করার উপায় খুঁজতে থাকে।
# ঠিক তেমনি আযাব যেমন বিভিন্ন জাতি দেখেছে বলে এ সূরায় ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
# আযাব সামনে দেখেই অপরাধীরা বিশ্বাস করতে থাকে যে, নবী যা বলেছিলেন তা ছিল যথার্থ সত্য। তখন তারা আক্ষেপ সহকারে হাত কচলাতে থাকে এবং বলতে থাকে, হায় যদি আমরা এখন কিছু অবকাশ পাই। অথচ অবকাশের সময় পার হয়ে গেছে।
# এ বাক্যটি ও এর আগের বাক্যটির মাঝখানে একটি সূক্ষ্ম শূন্যতা রয়ে গেছে। শ্রোতা একটু চিন্তা-ভাবনা করলে নিজেই এ শূন্যতা ভরে ফেলতে পারে। আযাব আসার কোন আশঙ্কা তারা করতো না, তাই তারা তাড়াতাড়ি আযাব আসার জন্য হৈ চৈ করছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, যেমন সুখের বাঁশি এ পর্যন্ত তারা বাঁজিয়ে এসেছে তেমনি তারা চিরকালই তা বাজাতে থাকবে। এ ভরসায় তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চ্যালেঞ্জ দিতো এ মর্মে যে, যদি সত্যি আপনি আল্লাহর রসূল হন এবং আমরা আপনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে আল্লাহর আযাবের হকদার হয়ে থাকি, তাহলে নিন আমরা তো আপনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলাম, এবার নিয়ে আসুন সেই আযাব, যার ভয় আমাদের দেখিয়ে আসছেন। এ কথায় বলা হচ্ছে, ঠিক আছে, যদি ধরে নেয়া যায় তাদের এ ভরসা সঠিকই হয়ে থাকে, যদি তাদের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে কোন আযাব না আসে, যদি দুনিয়ার আয়েশী জীবন যাপন করার জন্য তারা একটি সুদীর্ঘ অবকাশই পেয়ে যায়, যার আশায় তারা বুক বেঁধেছে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, যখনই তাদের ওপর আদ, সামূদ বা লূতের জাতি অথবা আইকাবাসীদের মতো আকস্মিক বিপর্যয় আপতিত হবে, যার হাত থেকে নিরাপদ থাকার নিশ্চয়তা কারো কাছে নেই অথবা অন্য কিছু না হলেও অন্তত মৃত্যুর শেষ মূহুর্তই এসে পৌঁছবে, যার বেষ্টনী ভেদ করে পালাবার সাধ্য কারোর নেই, তাহলে সে সময় দুনিয়ার আয়েশ-আরাম করার এ কয়েকটি বছর তাদের জন্য কি লাভজনক প্রমাণিত হবে?
# যখন তারা সতর্ককারীদের সতর্কবাণী এবং উপদেশ দাতাদের উপদেশ গ্রহণ করেনি এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম তখন এ কথা সুস্পষ্ট যে, এটা আমার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কোন জুলুম ছিল না। ধ্বংস করার আগে তাদেরকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনার চেষ্টা না করা হলে অবশ্য তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে একথা বলা যেতো।
# প্রথমে এ বিষয়টির ইতিবাচক দিকের কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটি রব্বুল আলামীনের নাযিলকৃত কিতাব এবং রূহুল আমীন এটা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। এখন নেতিবাচক দিক বর্ণনা করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, শয়তানরা একে নিয়ে অবতীর্ণ হয়নি, যেমন সত্যের দুশমনরা দোষারোপ করছে। কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যে মিথ্যার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল সেখানে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছিল এই যে, কুরআনের আকারে যে বিস্ময়কর বাণী মানুষের সামনে আসছিল এবং তাদের হৃদয়ের গভীরে অনুপ্রবেশ করে চলছিল তার কি ব্যাখ্যা করা যায়। এ বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাবার পথ বন্ধ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। লোকদের মনে এ সম্পর্কে কুধারণার সৃষ্টি করা এবং এর প্রভাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য কি ব্যবস্থা অবলম্বন করা যায়, এটাই ছিল এখন তাদের জন্য একটি পেরেশানীর ব্যাপার। এ পেরেশানীর অবস্থার মধ্যে তারা জনগণের মধ্যে যেসব অপবাদ ছড়িয়েছিল তার মধ্যে একটি ছিল এই যে, মুহাম্মাদ ﷺ (নাউযুবিল্লাহ) একজন গণক এবং একজন সাধারণ গণকদের মতো তাঁর মনের মধ্যেও এ বাণী শয়তানরা সঞ্চার করে দেয়। এ অপবাদটিকে তারা নিজেদের সবচেয়ে বেশী কার্যকর হাতিয়ার বলে মনে করতো। তাদের ধারণা ছিল, এ বাণী কোন ফেরেশতা নিয়ে আসে না বরং নিয়ে আসে শয়তান, কারো কাছে একথা যাচাই করার কি মাধ্যমই বা থাকতে পারে এবং শয়তান মনের মধ্যে সঞ্চার করে দেয়, এ অভিযোগের প্রতিবাদ যদি কেউ করতে চায় তাহলে কিভাবে করবে?
# এ বাণী এবং এ বিষয়বস্তু শয়তানের মুখে তো সাজেই না। যে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজেই বুঝতে পারে, কুরআনে যেসব কথা বর্ণনা করা হচ্ছে সেগুলো কি শয়তানের পক্ষ থেকে হতে পারে? তোমাদের জনপদগুলোতে কি গণৎকার নেই এবং শয়তানদের সাথে যোগসাজস করে যেসব কথা এ ব্যক্তি বলছেন তা কখনো তোমরা কোথাও শুনেছো? তোমরা কি কখনো শুনেছো, কোন শয়তান কোন গণৎকারের মাধ্যমে লোকদেরকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আল্লাহকে ভয় করার শিক্ষা দিয়েছে? শিরক ও মূর্তিপূজা থেকে বিরত রেখেছে? পরকালে জিজ্ঞাসাবাদ করার ভয় দেখিয়েছে? জুলুম-নিপীড়ন, অসৎ-অশ্লীল কাজ ও নৈতিকতা বিগর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে? সৎ পথে চলা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন এবং আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সদাচার করার উপদেশ দিয়েছে? শয়তানরা এ প্রকৃতি কোথায় পাবে? তাদের স্বভাব হচ্ছে তারা মানুষের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং তাদেরকে অসৎকাজে উৎসাহিত করে। তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী গণকদের কাছে লোকেরা যে কথা জিজ্ঞেস করতে যায় তা হচ্ছে এই যে, প্রেমিক তার প্রেমিকাকে পাবে কি না? জুয়ায় কোন্ দাঁওটা মারলে লাভ হবে? শত্রুকে হেয় করার জন্য কোন চালটা চালতে হবে? অমুক ব্যক্তির উট কে চুরি করেছে? এসব সমস্যা ও বিষয় বাদ দিয়ে গণক ও তার পৃষ্ঠপোষক শয়তানরা আবার কবে থেকে আল্লাহর সৃষ্টির কল্যাণ ও সংস্কারের শিক্ষা এবং অসৎ কাজে বাঁধা দেবার ও সেগুলো উৎখাত করার চিন্তা-ভাবনা করেছে?
# শয়তানরা করতে চাইলেও একাজ করার ক্ষমতাই তাদের নেই। সামান্য সময়ের জন্যও নিজেদেরকে মানুষের যথার্থ শিক্ষক ও প্রকৃত আত্মশুদ্ধিকারীর স্থানে বসিয়ে কুরআন যে নির্ভেজাল সত্য ও নির্ভেজাল কল্যাণের শিক্ষা দিচ্ছে সে শিক্ষা দিতে তারা সক্ষম নয়। প্রতারণা করার জন্যও যদি তারা এ কৃত্রিম রূপে আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তাদের কাজ এমন মিশ্রণমুক্ত হতে পারে না, যাতে তাদের মূর্খতা ও তাদের মধ্যে লুকানো শয়তানী স্বভাবের প্রকাশ হবে না। যে ব্যক্তি শয়তানদের ‘ইলহাম’ তথা আসমানী প্রেরণা লাভ করে নেতা হয়ে বসে তার জীবনেও তার শিক্ষার মধ্যে অনিবার্যভাবে নিয়তের ত্রুটি, সংকল্পের অপবিত্রতা ও উদ্দেশ্যের মালিন্য দেখা দেবেই। নির্ভেজাল সততা ও নির্ভেজাল সৎকর্মশীলতা কোন শয়তান মানুষের মনে সঞ্চার করতে পারে না এবং শয়তানের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী কখনো এর ধারক হতে পারে না। এরপর আছে শিক্ষার উন্নত মান ও পবিত্রতা এবং এর উপর বাড়তি সুনিপুন বাগধারা ও সাহিত্য-অলংকার এবং গভীর তত্ত্বজ্ঞান, যা কুরআনে পাওয়া যায়। এরই ভিত্তিতে কুরআনে বারবার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, মানুষ ও জিনেরা মিলে চেষ্টা করলেও এ কিতাবের মতো কিছু একটা রচনা করে আনতে পারবে নাঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوابِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍظَهِيرًا-(بنى اسرائيل-88) قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ-(يونس-38) (সূরা ইউনূসঃ ৩৮)
# কুরআনের বাণী হৃদয়ে সঞ্চার করার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহুল আমীন তা নিয়ে চলতে থাকেন এবং যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনোরাজ্যে তিনি তা নাযিল করেন তখন এ সমগ্র ধারাবাহিক কার্যক্রমের কোন এক জায়গায়ও শয়তানদের কান লাগিয়ে শোনারও কোন সুযোগ মেলে না। আশেপাশে কোথাও তাদের ঘুরে বেড়াবার কোন অবকাশই দেয়া হয় না। কোথাও থেকে কোনভাবে কিছু শুনে টুনে দু’একটি কথা চুরি করে নিয়ে গিয়ে তারা নিজেদের বন্ধু বান্ধবদের বলতে পারতো না যে, আজ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বাণী শুনাবেন অথবা তাঁর ভাষণে অমুক কথা বলা হবে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন আল হিজর ৮-১২ ও আস্ সাফফাত ৫-৭ টীকা , সূরা আল জিন ৮-৯ ও ২৭ আয়াত )
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৯২-১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর
সূরার শুরুতে কুরআন কারীমের বর্ণনা এসেছিল, ওরই বর্ণনা আবার বিস্তারিতভাবে দেয়া হচ্ছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন কারীম আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। রূহুল আমীন দ্বারা হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে যিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অহী নিয়ে আসতেন। রূহুল আমীন দ্বারা যে হযরত জিবরাঈল (আঃ) উদ্দেশ্য এটা পূর্বযুগীয় বহু গুরুজন হতে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত আতিয়্যা (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত যুহরী (রঃ) হযরত ইবনে জুরায়েজ (রঃ) প্রমুখ। হযরত যুহরী (রঃ) বলেন যে, এটা আল্লাহ তা’আলার নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবি)
অর্থাৎ “বল-যে কেউ জিবরীল (আঃ)-এর শত্রু এই জন্যে যে, সে আল্লাহর নির্দেশক্রমে তোমার হৃদয়ে কুরআন পৌছিয়ে দিয়েছে, যা ওর পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক।” (২:৯৭) এ ফেরেশতা এমন সম্মানিত যে, তাঁর শত্রু আল্লাহও শত্রু। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, রুহুল আমীন (আঃ) যার সাথে কথা বলেন তাঁকে যমীনে খায় না। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! এই বুযর্গ ও মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতা, যে ফেরেশতাদের নেতা, তোমার হৃদয়ে আল্লাহর ঐ পবিত্র ও উত্তম কথা অবতীর্ণ করে যা সর্ব প্রকারের ময়লা-মলিনতা, হ্রাস-বৃদ্ধি এবং বক্রতা হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত, যেন তুমি পাপীদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচাবার পথ প্রদর্শন করতে পার। আর যাতে তুমি আল্লাহর অনুগত বান্দাদের তাঁর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিতে পার। এটা সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতারিত যাতে সবাই এটা বুঝতে এবং পড়তে পারে, তাদের যেন ওজর কবার কিছুই অবশিষ্ট না থাকে। আর যাতে এ কুরআন কারীম প্রত্যেকের উপর হুজ্জত হতে পারে।
হযরত ইবরাহীম তাইমী (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একদা বাদলের দিনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীদের সাথে ছিলেন এমন সময় তিনি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় মেঘের গুণাবলী বর্ণনা করেন। তখন একজন লোক তাকে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তো সর্বাপেক্ষা বাকপটু ও প্রাঞ্জল ভাষী!” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমার ভাষা এরূপ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত এবং প্রাঞ্জল হবে না কেন? কুরআন কারীমও তো আমার ভাষাতেই অবতীর্ণ হয়েছে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, অহী আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রত্যেক নবী তাঁর কওমের জন্যে তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন। কিয়ামতের দিন সুরইয়ানী ভাষা হবে। আর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আরবী ভাষায় কথা বলবে।
১৯৬-১৯৯ নং আয়াতের তাফসীর
মহান আল্লাহ বলেন যে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর মধ্যেও এই শেষ পবিত্র কিতাব আল-কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী, এর সত্যতা এবং বিশেষণ বিদ্যমান রয়েছে। পূর্ববর্তী নবীরাও এর সুসংবাদ দিয়েছেন, এমনকি এই সব নবী (আঃ)-এর শেষ নবী, যার পরে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পর্যন্ত আর কোন নবী ছিলেন না, অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে একত্রিত করে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি বলেছিলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “স্মরণ কর, যখন মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ) বলেছিলঃ হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমাদ (সঃ) নামে যে রাসূল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা।” (৬১:৬)
(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন। (আরবি) হযরত দাউদ (আঃ)-এর কিতাবের নাম। (আরবি)শব্দটি এখানে কিতাবসমূহের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা যা কিছু করছে সবই কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। (৫৪: ৫২)
অতঃপর বলা হচ্ছেঃ যদি তারা বুঝে ও হঠকারিতা না করে তবে এটা কি করআন কারীমের সত্যতার কম বড় দলীল যে, স্বয়ং বানী ইসরাঈলের আলেমরা এটা মেনে থাকে? যারা সত্যবাদী ও যারা হঠকারী নয় তারা তাওরাতের ঐ আয়াতগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করছে যেগুলোতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রেরিতত্ব, কুরআনের উল্লেখ এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতার সংবাদ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ), হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) এবং তাদের ন্যায় সত্য উক্তিকারী মহোদয়গণ দুনিয়ার সামনে তাওরাত ও ইঞ্জীলের ঐ সমুদয় আয়াত রেখে দেন যেগুলো নবী (সঃ)-এর মাহাত্ম ও গুণাবলী প্রকাশকারী।
পরবর্তী আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি যদি এই কালাম কোন আজমীর উপর অবতীর্ণ করতাম এবং সে ওটা মুশরিকদের নিকট পাঠ করতো তবে তখনো তারা এতে ঈমান আনতো না। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেছেনঃ “আমি যদি তাদের জন্যে আকাশের দরও খুলে দিতাম এবং তারা আকাশে চড়েও যেতো তবুও তারা বলতো-আমাদেরকে নেশা পান করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমাদের চোখের উপর পর্দা ফেলে দেয়া হয়েছে।” আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ “যদি তাদের কাছে ফেরেশতারাও এসে পড়তে এবং যদি মৃতরাও কথা বলে উঠতো তবুও তারা ঈমান আনতো না। তাদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তাদের জন্যে হিদায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তারা ঈমান আনবে না।
২০০-২০৯ নং আয়াতের তাফসীর
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অবিশ্বাস, কুফরী, অস্বীকার ও অমান্যকরণ এই অপরাধীদের অন্তরে সঞ্চার করে দেয়া হয়েছে। তারা যে পর্যন্ত না শাস্তি স্বচক্ষে দেখবে ঈমান আনবে না। ঐ সময় যদি তারা ঈমান আনয়ন করে তবে তা বিফলে যাবে। সেই সময় তারা অভিশপ্ত হয়েই যাবে। না অনুশোচনা করে কোন কাজ হবে, না ওজর করে কোন উপকার হবে। তাদের অজ্ঞাতে আকস্মিকভাবে তাদের উপর আযাব চলে আসবে। ঐ সময় তারা কামনা করবে যে, যদি তাদেরকে ক্ষণেকের জন্যে অবকাশ দেয়া হতো তবে তারা সৎ হয়ে যেতো! শুধু তারা কেন, প্রত্যেক যালিম, পাপী, ফাসেক, কাফির ও বদকার শাস্তি প্রত্যক্ষ করা মাত্রই সোজা হয়ে যাবে এবং শাস্তি হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে অনুনয় বিনয় করতে থাকবে, কিন্তু সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেই দিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর, তখন যালিমরা বলবে-হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছুকালের জন্যে অবকাশ দিন, আমরা আপনার আহ্বানে সাড়া দিবো এবং রাসূলদের অনুসরণ করবো। (উত্তরে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই?” (১৪:৪৪)
ফিরাউনের অবস্থা দেখা যায় যে, হযরত মূসা (আঃ) তার জন্যে বদদু’আ করেন এবং তা কবূল করা হয়। আল্লাহর শাস্তি দেখে ডুবন্ত অবস্থায় সে বলেঃ “এখন আমি মুসলমান হচ্ছি।” কিন্তু উত্তরে বলা হয় যে, এখন ঈমান আনয়নে কোনই লাভ হবে না। অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যখন তারা আমার শাস্তি দেখলো তখন বললো-আমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম (শেষ পর্যন্ত)।”
এরপর তাদের আর একটি দুষ্কৃতির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা তাদের নবীকে বলেছিলঃ “তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর আযাব নিয়ে এসো।’ মহান আল্লাহ বলেনঃ “যদি আমি তাদেরকে দীর্ঘকাল ভোগ-বিলাসের সুযোগ দিই এবং পরে তাদের উপর আমার ওয়াদাকৃত শাস্তি এসে পড়ে তবে ঐ সময় তাদের ভোগ-বিলাসের উপকরণ তাদের কোন কাজে আসবে কি?” ঐ সময় তো এরূপই মনে হবে যে, সে হয়তো এক সকাল বা এক সন্ধ্যাই দুনিয়ায় অবস্থান করেছে। যেমন অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তাদের একজন এটা কামনা করে যে, যদি তাকে এক হাজার বছর আয়ু দেয়া হতো! যদি তাকে এই আয়ু দেয়াও হয় তবুও তা তাকে শাস্তি হতে দূরে রাখতে পারবে না।” (২: ৯৬) এখানেও তিনি একথাই বলেন যে, তাদের ভোগ-বিলাসের উপকরণ সেদিন তাদের কোন উপকারে আসবে না। সেই দিন যখন তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তাদের শক্তি ও দাপট সব হারিয়ে যাবে।
সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন কাফিরকে আনয়ন করা হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামের আগুনে ডুবিয়ে দেয়ার পর উঠানো হবে এবং বলা হবেঃ তুমি কখনো সুখ ও নিয়ামত পেয়েছিলে কি? সে উত্তরে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার শপথ! আমি কখনোই সুখ-শান্তি পাইনি।” অপর একটি লোককে আনয়ন করা হবে যে সারা জীবনে কখনো সুখ-শান্তির স্বাদ গ্রহণ করতে পায়নি, তাকে জান্নাতের বাতাসে ভ্রমণ করানোর পর জিজ্ঞেস করা হবেঃ
“তুমি জীবনে কখনো দুঃখ-কষ্ট পেয়েছিলে কি?” সে জবাবে বলবেঃ “আপনার সত্তার কসম! আমি জীবনে কখনো দুঃখ-কষ্ট ভোগ করিনি।” হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নের কবিতাংশটি পাঠ করতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তুমি তোমার আকাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে গেলে তখন যেন তুমি কখনো দুঃখ-কষ্টের নামও শুননি।”
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ নিজের ন্যায়পরায়ণতার খবর দিচ্ছেন যে, তিনি। এমন কোন জনপদ ধ্বংস করেননি যার জন্যে তিনি কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেননি। তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেন, কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেন এবং সতর্ক করে থাকেন। এরপরেও যারা অমান্য করে তাদের উপর তিনি বিপদের পাহাড় চাপিয়ে দেন। এ জন্যেই তিনি বলেনঃ এরূপ কখনো হয়নি যে, নবীদেরকে প্রেরণ না করেই আমি কোন উম্মতের উপর শাস্তি পাঠিয়েছি। প্রথমে আমি ভয়-প্রদর্শক প্রেরণ করি এবং সে উম্মতকে ভয় প্রদর্শন করে ও উপদেশ দেয়। এভাবে আমি তাদের ওযর করবার কিছুই বাকী রাখি না। কিন্তু এতদসত্তেও যখন তারা তাদের নবীকে অবিশ্বাস করে তখন তাদের উপর শাস্তি আপতিত হয়।
যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি শাস্তি প্রদানকারী নই যে পর্যন্ত না আমি রাসূল প্রেরণ করি।” (১৭: ১৫) আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক কোন জনপদকে ধ্বংস করেন না যে পর্যন্ত না তিনি জনপদগুলোর মূল জনপদে কোন রাসূল প্রেরণ করেন যে তাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনায়।”
২১০-২১২ নং আয়াতের তাফসীর
মহান আল্লাহ বলেন যে, এটা এমন এক পবিত্র কিতাব যার আশে পাশে মিথ্যা আসতে পারে না। কিতাব (আল-কুরআন) মহাবিজ্ঞানময় ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতারিত। এটাকে শক্তিশালী ফেরেশতা রূহুল আমীন (হযরত জিবরাঈল আঃ) আনয়ন করেছেন, শয়তান আনয়ন করেনি।
অতঃপর শয়তান যে এটা আনয়ন করেনি তার তিনটি কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে। যে, সে এর যোগ্যতাই রাখে না। তার কাজ হলো মাখলুককে পথভ্রষ্ট করা, সরল-সঠিক পথে আনয়ন করা নয়। ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ এই কিতাবের বৈশিষ্ট্য। অথচ শয়তান এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এই কিতাব হলো জ্যোতি ও হিদায়াত এবং এটা হলো দলীল। আর শয়তানরা এই তিনটিরই উল্টো। তারা অন্ধকার-প্রিয়। তারা ভ্রান্তপথ প্রদর্শক এবং অজ্ঞতার পাগল। সুতরাং এই কিতাব ও শয়তানদের মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য রয়েছে। কোথায় তারা এবং কোথায় এই কিতাব! দ্বিতীয় কারণ এই যে, সে তো এটা বহন করার যোগ্যতাই রাখে না এবং তার মধ্যে এ শক্তিই নেই। এটা এমনই সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন বাণী যে, যদি এটা কোন বড় পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ হয় তবে ওকে ফাটিয়ে চৌচির করে ফেলবে।
এরপর তৃতীয় কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, এই কুরআন অবতীর্ণ করার সময় শয়তানদেরকে তো সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা তো ওটা শুনতেই পায়নি। আকাশের চতুর্দিকে প্রহরী নিযুক্ত ছিল। শুনবার জন্যে যখনই তারা আকাশে উঠতে যাচ্ছিল তখনই তাদের প্রতি অগ্নি বর্ষিত হচ্ছিল। এর একটি অক্ষরও শুনবার ক্ষমতা তার ছিল না। এর ফলে আল্লাহর কালাম নিরাপদ ও সুরক্ষিত পন্থায় তাঁর নবী (সঃ)-এর নিকট পৌঁছে যায় এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর মাখলুকের কাছে এটা পৌঁছে। এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। যেমন তিনি স্বয়ং জ্বিনদের উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শুনবার জন্যে বসতাম কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্যে প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়। আমরা জানি না জগদ্বাসীর অমঙ্গলই অভিপ্রেত, না তাদের প্রতিপালক তাদের মঙ্গল চান।” (৭২: ৮-১০)।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1005)
[The Qur’an was revealed by Allah .]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 192-212
26:192
وَ اِنَّہٗ لَتَنۡزِیۡلُ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۹۲﴾ؕ
And indeed, the Qur’an is the revelation of the Lord of the worlds.
The Qur’an was revealed by Allah
Here Allah tells us about the Book which He revealed to His servant and Messenger Muhammad.
وَإِنَّهُ
And truly, this
refers to the Qur’an, which at the beginning of the Surah was described as
وَمَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمَنِ مُحْدَثٍ
(and never comes there unto them a Reminder as a recent revelation from the Most Gracious…) (26:5)
لَتَنزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ
is a revelation from the Lord of Al-`Alamin.
means, Allah has sent it down to you and revealed it to you.
نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الاَْمِينُ
26:193
نَزَلَ بِہِ الرُّوۡحُ الۡاَمِیۡنُ ﴿۱۹۳﴾ۙ
The Trustworthy Spirit has brought it down
Which the trustworthy Ruh has brought down.
This refers to Jibril, peace be upon him.
This was the view of more than one of the Salaf:Ibn Abbas, Muhammad bin Ka`b, Qatadah, Atiyyah Al-`Awfi, As-Suddi, Ad-Dahhak, Az-Zuhri and Ibn Jurayj.
This is an issue concerning which there is no dispute.
Az-Zuhri said,
“This is like the Ayah:
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ
Say:”Whoever is an enemy to Jibril — for indeed he has brought it down to your heart by Allah’s permission, confirming what came before it…” (2:97)
26:194
عَلٰی قَلۡبِکَ لِتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُنۡذِرِیۡنَ ﴿۱۹۴﴾
Upon your heart, [O Muhammad] – that you may be of the warners –
عَلَى قَلْبِكَ
Upon your heart,
`O Muhammad, free from any contamination, with nothing added or taken away.’
لِتَكُونَ مِنَ الْمُنذِرِينَ
that you may be of the warners,
means, `so that you may warn people with it of the punishment of Allah for those who go against it and disbelieve in it, and so that you may give glad tidings with it to the believers who follow it.’
بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُّبِينٍ
26:195
بِلِسَانٍ عَرَبِیٍّ مُّبِیۡنٍ ﴿۱۹۵﴾ؕ
In a clear Arabic language.
In the plain Arabic language.
meaning, `this Qur’an which We have revealed to you, We have revealed in perfect and eloquent Arabic, so that it may be quite clear, leaving no room for excuses and establishing clear proof, showing the straight path.
26:196
وَ اِنَّہٗ لَفِیۡ زُبُرِ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۱۹۶﴾
And indeed, it is [mentioned] in the scriptures of former peoples.
The Qur’an was mentioned in the Previous Scriptures
Allah says:
وَإِنَّهُ لَفِي زُبُرِ الاْإَوَّلِينَ
And verily, it is in the Zubur of the former people.
Allah says:this Qur’an was mentioned and referred to in the previous Scriptures that were left behind by their Prophets who foretold it in ancient times and more recently.
Allah took a covenant from them that they would follow it, and the last of them stood and addressed his people with the good news of Ahmad:
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يبَنِى إِسْرَءِيلَ إِنِّى رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِى مِن بَعْدِى اسْمُهُ أَحْمَدُ
And (remember) when `Isa, son of Maryam, said:”O Children of Israel! I am the Messenger of Allah unto you, confirming the Tawrah before me, and giving glad tidings of a Messenger to come after me, whose name shall be Ahmad. (61:6)
Zubur here refers to Books;
Zubur is the plural of Az-Zabur, which is also the name used to refer to the Book given to Dawud.
Allah says:
وَكُلُّ شَىْءٍ فَعَلُوهُ فِى الزُّبُرِ
And everything they have done is noted in the Az-Zubur. (54:52),
meaning, it is recorded against them in the books of the angels.
Then Allah says:
أَوَلَمْ يَكُن لَّهُمْ ايَةً أَن يَعْلَمَهُ عُلَمَاء بَنِي إِسْرَايِيلَ
26:197
اَوَ لَمۡ یَکُنۡ لَّہُمۡ اٰیَۃً اَنۡ یَّعۡلَمَہٗ عُلَمٰٓؤُا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ﴿۱۹۷﴾ؕ
And has it not been a sign to them that it is recognized by the scholars of the Children of Israel?
Is it not a sign to them that the learned scholars of the Children of Israel knew it!
meaning, is it not sufficient witness to the truth for them that the scholars of the Children of Israel found this Qur’an mentioned in the Scriptures which they study! The meaning is:
the fair-minded among them admitted that the attributes of Muhammad and his mission and his Ummah were mentioned in their Books, as was stated by those among them who believed, such as Abdullah bin Salam, Salman Al-Farisi and others who met the Prophet.
Allah said:
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِىَّ الاُمِّىَّ
Those who follow the Messenger, the Prophet who can neither read nor write (7:157)
The Intense Disbelief of Quraysh
Then Allah tells us how intense the disbelief of Quraysh was, and how stubbornly they resisted the Qur’an. If this Book with all its eloquence had been revealed to a non-Arab who did not know one word of Arabic, they still would not have believed in him.
Allah says:
وَلَوْ نَزَّلْنَاهُ عَلَى بَعْضِ الاَْعْجَمِينَ
26:198
وَ لَوۡ نَزَّلۡنٰہُ عَلٰی بَعۡضِ الۡاَعۡجَمِیۡنَ ﴿۱۹۸﴾ۙ
And even if We had revealed it to one among the foreigners
فَقَرَأَهُ عَلَيْهِم مَّا كَانُوا بِهِ مُوْمِنِينَ
26:199
فَقَرَاَہٗ عَلَیۡہِمۡ مَّا کَانُوۡا بِہٖ مُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۹۹﴾ؕ
English – Sahih International
And he had recited it to them [perfectly], they would [still] not have been believers in it.
And if We had revealed it unto any of the non-Arabs, and he had recited it unto them, they would not have believed in it.
And Allah says:
وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَاباً مِّنَ السَّمَاءِ فَظَلُّواْ فِيهِ يَعْرُجُونَ
لَقَالُواْ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَـرُنَا
And even if We opened to them a gate from the heaven and they were to keep on ascending thereto. They would surely say:”Our eyes have been dazzled…” (15:14-15)
وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَأ إِلَيْهِمُ الْمَلَـيِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَى
And even if We had sent down unto them angels, and the dead had spoken unto them… (6:111)
إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَا يُوْمِنُونَ
Truly, those, against whom the Word of your Lord has been justified, will not believe. (10:96)
26:200
کَذٰلِکَ سَلَکۡنٰہُ فِیۡ قُلُوۡبِ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۲۰۰﴾ؕ
Thus have We inserted disbelief into the hearts of the criminals.
The Deniers will never believe until They see the Torment
Allah says:
كَذَلِكَ سَلَكْنَاهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ
Thus have We caused it to enter the hearts of the criminals.
`thus We caused denial, disbelief, rejection and stubbornness to enter the hearts of the sinners.
26:201
لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِہٖ حَتّٰی یَرَوُا الۡعَذَابَ الۡاَلِیۡمَ ﴿۲۰۱﴾ۙ
They will not believe in it until they see the painful punishment.
لَاا يُوْمِنُونَ بِهِ
They will not believe in it,
i.e., the truth,
حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الاَْلِيمَ
until they see the painful torment.
means, when their excuses will be of no avail, and the curse will be upon them, and theirs will be an evil abode
26:202
فَیَاۡتِیَہُمۡ بَغۡتَۃً وَّ ہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۲۰۲﴾ۙ
And it will come to them suddenly while they perceive [it] not.
فَيَأْتِيَهُم بَغْتَةً
It shall come to them of a sudden,
means, the punishment of Allah will come upon them suddenly,
وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
فَيَقُولُوا هَلْ نَحْنُ مُنظَرُونَ
26:203
فَیَقُوۡلُوۡا ہَلۡ نَحۡنُ مُنۡظَرُوۡنَ ﴿۲۰۳﴾ؕ
And they will say, “May we be reprieved?”
while they perceive it not. Then they will say:”Can we be respited!”
means, when they see the punishment, then they will wish they had a little more time so that they can obey Allah — or so they claim.
This is like the Ayah:
وَأَنذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَأْتِيهِمُ الْعَذَابُ فَيَقُولُ الَّذِينَ ظَلَمُواْ رَبَّنَا أَخِّرْنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ أَوَلَمْ تَكُونُواْ أَقْسَمْتُم مِّن قَبْلُ مَا لَكُم مِّن زَوَالٍ
And warn mankind of the Day when the torment will come unto them; then the wrongdoers will say:”Our Lord! Respite us for a little while, we will answer Your call and follow the Messengers!” (It will be said:) “Had you not sworn aforetime that you would not leave (the world for the Hereafter).” (14:44)
When every sinner and evildoer sees his punishment, he will feel intense regret. Such was the case of Fir`awn, when Musa prayed against him:
رَبَّنَا إِنَّكَ اتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلهُ زِينَةً وَأَمْوَالاً فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَ يُوْمِنُواْ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الَالِيمَ
قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا
Our Lord! You have indeed bestowed on Fir`awn and his chiefs splendor and wealth in the life of this world, our Lord! That they may lead men astray from Your path. Our Lord! Destroy their wealth, and harden their hearts, so that they will not believe until they see the painful torment.’
Allah said:”Verily, the invocation of you both is accepted. (10:88-89)
This supplication had an effect on Fir`awn:he did not believe until he saw the painful torment:
حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ امَنتُ أَنَّهُ لا إِلِـهَ إِلاَّ الَّذِي امَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَايِيلَ وَأَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
الانَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ
till when drowning overtook him, he (Fir`awn) said:”I believe that none has the right to be worshipped but He in Whom the Children of Israel believe, and I am one of the Muslims.” Now (you believe) while you refused to believe before and you were one of the mischief-makers. (10:90-91)
And Allah says:
فَلَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا قَالُوا امَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ
فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا سُنَّتَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ فِي عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُونَ
So when they saw Our punishment, they said:”We believe in Allah Alone and reject (all) that we used to associate with Him as (His) partners.”
Then their Faith could not avail them when they saw Our punishment. (Like) this has been the way of Allah in dealing with His servants. And there the disbelievers lost utterly. (40:84-85)
And Allah says:
أَفَبِعَذَابِنَا يَسْتَعْجِلُونَ
26:204
اَفَبِعَذَابِنَا یَسۡتَعۡجِلُوۡنَ ﴿۲۰۴﴾
So for Our punishment are they impatient?
Would they then wish for Our torment to be hastened on!
This is a denunciation and a threat, because they used to say to the Messenger, by way of denial, thinking it unlikely ever to happen:
ايْتِنَا بِعَذَابِ اللَّهِ
Bring Allah’s torment upon us. (29:29)
This is as Allah said:
وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ
And they ask you to hasten on the torment… (29:53-55)
Then Allah says:
أَفَرَأَيْتَ إِن مَّتَّعْنَاهُمْ سِنِينَ
26:205
اَفَرَءَیۡتَ اِنۡ مَّتَّعۡنٰہُمۡ سِنِیۡنَ ﴿۲۰۵﴾ۙ
Then have you considered if We gave them enjoyment for years
ثُمَّ جَاءهُم مَّا كَانُوا يُوعَدُونَ
26:206
ثُمَّ جَآءَہُمۡ مَّا کَانُوۡا یُوۡعَدُوۡنَ ﴿۲۰۶﴾ۙ
And then there came to them that which they were promised?
مَا أَغْنَى عَنْهُم مَّا كَانُوا يُمَتَّعُونَ
26:207
مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یُمَتَّعُوۡنَ ﴿۲۰۷﴾ؕ
They would not be availed by the enjoyment with which they were provided.
Think, if We do let them enjoy for years, and afterwards comes to them that which they had been promised, all that with which they used to enjoy shall not avail them.
meaning, `even if We delay the matter and give them respite for a short while or for a long time, then the punishment of Allah comes upon them, what good will their life of luxury do them then.’
كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُواْ إِلاَّ عَشِيَّةً أَوْ ضُحَـهَا
The Day they see it, (it will be) as if they had not tarried (in this world) except an afternoon or a morning. (79:46)
And Allah says:
يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ
Everyone of them wishes that he could be given a life of a thousand years. But the grant of such life will not save him even a little from punishment. (2:96)
وَمَا يُغْنِى عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى
And what will his wealth avail him when he goes down. (92:11)
Allah says here:
مَا أَغْنَى عَنْهُم مَّا كَانُوا يُمَتَّعُونَ
All that with which they used to enjoy shall not avail them.
According to an authentic Hadith:
يُوْتَى بِالْكَافِرِ فَيُغْمَسُ فِي النَّارِ غَمْسَةً ثُمَّ يُقَالُ لَهُ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ هَلْ رَأَيْتَ نَعِيمًا قَطُّ فَيَقُولُ لَا وَاللهِ يَا رَبِّ وَيُوتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُوْسًا كَانَ فِي الدُّنْيَا فَيُصْبَغُ فِي الْجَنَّةِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ لَهُ َهلْ رَأَيْتَ بُوْسًا قَطُّ فَيَقُولُ لَا وَاللهِ يَا رَب
The disbelievers will be brought and once dipped into the Fire, then it will be said to him:
“Did you ever see anything good!
Did you ever see anything good!”
He will say, “No, O Lord!”
Then the most miserable person who ever lived on earth will be brought, and he will be put in Paradise for a brief spell, then it will be said to him, “Did you ever see anything bad!”
He will say, “No, O Lord.”
meaning:as if nothing ever happened.
Then Allah tells us of His justice towards His creation, in that He does not destroy any nation until after He has left them with no excuse, by warning them, sending Messengers to them and establishing proof against them.
He says:
وَمَا أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ إِلاَّ لَهَا مُنذِرُونَ
26:208
وَ مَاۤ اَہۡلَکۡنَا مِنۡ قَرۡیَۃٍ اِلَّا لَہَا مُنۡذِرُوۡنَ ﴿۲۰۸﴾٭ۖۛ
And We did not destroy any city except that it had warners
ذِكْرَى وَمَا كُنَّا ظَالِمِينَ
26:209
ذِکۡرٰی ۟ۛ وَ مَا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۲۰۹﴾
As a reminder; and never have We been unjust.
And never did We destroy a township but it had its warners by way of reminder, and We have never been unjust.
This is like the Ayat:
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولاً
And We never punish until We have sent a Messenger. (17:15)
وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَى حَتَّى يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولاً يَتْلُو عَلَيْهِمْ ايَاتِنَا
وَمَا كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَى إِلاَّ وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ
And never will your Lord destroy the towns until He sends to their mother town a Messenger reciting to them Our Ayat.
And never would We destroy the towns unless the people thereof are wrongdoers. (28:59)
26:210
وَ مَا تَنَزَّلَتۡ بِہِ الشَّیٰطِیۡنُ ﴿۲۱۰﴾
And the devils have not brought the revelation down.
The Qur’an was brought down by Jibril, not Shaytan
Allah tells us about His Book, which falsehood cannot approach from before or behind it, sent down by the All-Wise, Worthy of all praise.
He states that it has been brought down by the trustworthy Ruh (i.e., Jibril) who is helped by Allah,
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِينُ
And it is not the Shayatin who have brought it down.
Then He tells us that it could not be the case for three reasons that the Shayatin brought it down. One is that it would not suit them, i.e., they have no desire to do so and they do not want to, because their nature is to corrupt and misguide people, but this contains words enjoining what is right and forbidding what is evil, and light, guidance and mighty proofs. There is a big difference between this and the Shayatin, Allah says
26:211
وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَہُمۡ وَ مَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ ﴿۲۱۱﴾ؕ
It is not allowable for them, nor would they be able.
وَمَا يَنبَغِي لَهُمْ
Neither would it suit them,
وَمَا يَسْتَطِيعُونَ
nor are they able.
meaning, even if they wanted to, they could not do it.
Allah says:
لَوْ أَنزَلْنَا هَـذَا الْقُرْءَانَ عَلَى جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَـشِعاً مُّتَصَدِّعاً مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ
Had We sent down this Qur’an on a mountain, you would surely have seen it humbling itself and rent asunder by the fear of Allah. (59:21)
Then Allah explains that even if they wanted to and were able to bear it and convey it, they still would not be able to achieve that, because they were prevented from hearing the Qur’an when it was brought down, for the heavens were filled with guardians and shooting stars at the time when the Qur’an was being revealed to the Messenger of Allah, so none of the Shayatin could hear even one letter of it, lest there be any confusion in the matter.
This is a part of Allah’s mercy towards His servants, protection of His Laws, and support for His Book and His Messenger.
Allah says:
إِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُولُونَ
26:212
اِنَّہُمۡ عَنِ السَّمۡعِ لَمَعۡزُوۡلُوۡنَ ﴿۲۱۲﴾ؕ
Indeed they, from [its] hearing, are removed.
Verily, they have been removed far from hearing it.
This is like what Allah tells us about the Jinn:
وَأَنَّا لَمَسْنَا السَّمَاء فَوَجَدْنَاهَا مُلِيَتْ حَرَسًا شَدِيدًا وَشُهُبًا
وَأَنَّا كُنَّا نَقْعُدُ مِنْهَا مَقَاعِدَ لِلسَّمْعِ فَمَن يَسْتَمِعِ الاْأنَ يَجِدْ لَهُ شِهَابًا رَّصَدًا
وَأَنَّا لَاأ نَدْرِي أَشَرٌّ أُرِيدَ بِمَن فِي الاْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَدًا
And we have sought to reach the heaven; but we found it filled with stern guards and flaming fires. And verily, we used to sit there in stations, to (steal) a hearing, but any who listens now will find a flaming fire watching him in ambush. And we know not whether evil is intended for those on the earth, or whether their Lord intends for them guidance.’ (72:8-10)
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran