أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৮)
[ *কুরআন থেকে হেদায়েত প্রাপ্তির পূর্বশর্ত : -]
www.motaher21.net
সূরা:- আন-নমল।
পারা:১৯
১- ৬ নং আয়াত:-
২৭:১
طٰسٓ ۟ تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡقُرۡاٰنِ وَ کِتَابٍ مُّبِیۡنٍ ۙ﴿۱﴾
ত্বা-সীন; এগুলো আল-কুরআন এবং সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত,
২৭:২
ہُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ﴿۲﴾
পথনির্দেশ ও সুসংবাদ মুমিনদের জন্য।
২৭:৩
الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ ہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ﴿۳﴾
যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।
২৭:৪
اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ زَیَّنَّا لَہُمۡ اَعۡمَالَہُمۡ فَہُمۡ یَعۡمَہُوۡنَ ؕ﴿۴﴾
নিশ্চয় যারা আখেরাতে ঈমান আনে না, তাদের জন্য তাদের কাজকে আমরা শোভন করেছি , ফলে তারা বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়;
২৭:৫
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَہُمۡ سُوۡٓءُ الۡعَذَابِ وَ ہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ ہُمُ الۡاَخۡسَرُوۡنَ ﴿۵﴾
এদেরই জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট শাস্তি এবং এরাই আখেরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ।
২৭:৬
وَ اِنَّکَ لَتُلَقَّی الۡقُرۡاٰنَ مِنۡ لَّدُنۡ حَکِیۡمٍ عَلِیۡمٍ ﴿۶﴾
আর নিশ্চয় আপনি আল-কুরআন প্রাপ্ত হচ্ছেন প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট থেকে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা : এই সূরা মাক্কী। সূরা শুয়ারার পরই এটা নাযিল হয়। এর বর্ণনাভংগিও সূরা শােয়ারার মতােই। সূরার আলােচ্য বিষয় একইভাবে ভূমিকা ও উপসংহারে স্থান পেয়েছে। একইভাবে ভূমিকা ও উপসংহারের মাঝখানে কিসসা-কাহিনী দ্বারা আলােচ্য বিষয়কে অধিকতর স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব কিসসা-কাহিনীতে মক্কার মােশরেক গােষ্ঠী ও পূর্ববর্তী বিবিধ জাতির চরিত্রের সাদৃশ্য স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যাতে করে আল্লাহর শাশ্বত নীতি এবং ইসলামী দাওয়াত ও আন্দোলনের চিরন্তন রীতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা সম্ভব হয়। অন্যান্য সকল মক্কী সূরার মতােই এই সূরার প্রধান আলােচ্য বিষয় আকীদা বিশ্বাস তথা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও একমাত্র তারই এবাদাত করা, আখেরাত এবং তার শাস্তি ও পুরস্কারে বিশ্বাস করা, ওহীর প্রতি বিশ্বাস করা, অদৃশ্য বিষয় যে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন এবং তিনি ছাড়া কেউ জানে না- একথা বিশ্বাস করা, আল্লাহ তায়ালাই যে একমাত্র স্রষ্টা, জীবিকাদাতা, নেয়ামত ও সম্পদ সম্পত্তির একমাত্র দাতা, তা বিশ্বাস করা, মানুষের ওপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ, আল্লাহ তায়ালাই যে সকল শক্তির উৎস ও মালিক এবং তার ছাড়া আর কারাে কোনাে শক্তি নেই, একথা মেনে নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ। এই সমস্ত বিষয়কে সমর্থন করা, যারা এগুলােতে বিশ্বাস করে তাদের পুরস্কার এবং যারা বিশ্বাস করে না তাদের শাস্তির বর্ণনা দেয়ার জন্যেই স্থানে স্থানে কিসসা কাহিনী আলােচিত হয়েছে। সূরার ভূমিকা অংশের পর পরই হযরত মূসা(আ.)-এর কাহিনীর একাংশ আলােচিত হয়েছে। কাহিনীর এ অংশের বর্ণনা দেয়ার জন্যেই কিসসাটি আলােচিত হয়েছে। সূরার ভূমিকায় কাহিনীর এই অংশে রয়েছে হযরত মূসার আগুন দর্শন ও আগুনের কাছে গমন, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে সম্বােধন ও ফেরাউনের কাছে তাকে নবী হিসেবে যাওয়ার আদেশদান। অতপর অতিদ্রুত গতিতে ফেরাউন ও তার দলবলের পক্ষ থেকে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করার বিষয়টা জানানো হয়েছে। অথচ তারা সবাই নিশ্চিতভাবে জানতাে যে, হযরত মূসা সত্যিই নবী। এই সত্য অস্বীকার করার শাস্তি কী, তাও তারা জানতাে। তারা নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করলাে, অথচ তাদের মন তার প্রতি বিশ্বাসী ছিলাে। তারা এটা করলাে নিছক যুলুম ও ঔদ্ধত্য সহকারে। অতএব, দেখে নাও নৈরাজ্যবাদীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল। পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলাের ব্যাপারেও মক্কার মােশরেকরা অনুরূপ ভূমিকা নিয়েছিলাে। হযরত মূসার কাহিনীর পর পরই এসেছে হযরত দাউদ ও সুলাইমান(আ.)-কে দেয়া আল্লাহর অসাধারণ নেয়ামতের কথা, তারপর রয়েছে পিপড়ে, হুদহুদ পাখি, সাবা জাতি ও তার রাণীর সাথে হযরত সােলায়মানের কাহিনী। এ সূরার মধ্যেই রয়েছে হযরত দাউদ ও সােলায়মানের পাওয়া আল্লাহর নেয়ামত ও তার জন্যে তার শােকরের বিবরণ। তার প্রাপ্ত নেয়ামতসমূহের মধ্যে রয়েছে গভীর জ্ঞান, রাজত্ব, নবুওত এবং জিন ও পাখির তার অনুগত হওয়া। এই সাথে এর ভেতর প্রকাশ করা হয়েছে সেই মৌলিক আকীদা ও আদর্শ, যার প্রতি প্রত্যেক নবী আহ্বান জানাতেন। বিশেষভাবে আলােচিত হয়েছে সাবা জাতি ও তার রাণী কর্তৃক হযরত সােলায়মানের চিঠির প্রতি জাকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনার কথা- যদিও তিনি আল্লাহর বান্দাদেরই একজন। পরিশেষে কোরায়শ কর্তৃক আল্লাহর কিতাবের বিরূপ অভ্যর্থনার কথা। কোরাইশরা নবীকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছিলাে। আর সাবা ও তার রাণী ঈমান এনেছিলো ও বশ্যতা স্বীকার করেছিলাে। হযরত সােলায়মানকে যা কিছু দেয়া হয়েছিলাে, আল্লাহ তায়ালাই তা দিয়েছিলেন, যা কিছু তার অনুগত করা হয়েছিলো আল্লাহ তায়ালাই করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালাই সব কিছুর মালিক, তিনিই সব কিছু জানেন। হযরত সােলায়মানের রাজত্ব ও জ্ঞান আল্লাহর এই সীমাহীন রাজত্ব ও জ্ঞানের সমুদ্রেরই একটা বিন্দু মাত্র ছিলাে! এরপর এসেছে সামুদ জাতির সাথে হযরত সালেহ(আ.)-এর কাহিনী। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে উচ্ছৃংখল ও নৈরাজ্যবাদীদের পক্ষ থেকে হযরত সালেহ ও তার পরিবারকে হত্যার ষড়যন্ত্র। তারপর দেখানাে হয়েছে কিভাবে আল্লাহ তায়ালা সে জাতির বিরুদ্ধে পাল্টা ষড়যন্ত্র করেছেন, সামুদ জাতি ও তার কুচক্রীদের ধ্বংস করেছেন এবং হযরত সালেহ ও তাঁর ওপর ঈমান আনয়নকারীদের রক্ষা করেছেন। কোরায়শও রসূল(স.)-কে হত্যা ও নির্যাতন করার জন্যে চক্রান্ত আঁটতে, যেমনটি আঁটা হতাে হযরত সালেহ ও তার সাথী মোমেনদের বিরুদ্ধে। সূরার কাহিনী অধ্যায় শেষ হয়েছে হযরত লূত ও তার জাতির কাহিনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে। তারা হযরত লূতকে পবিত্র মানুষ হওয়ার অপরাধে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলাে। হযরত লূত যখন তাদের ত্যাগ করে চলে গেলেন, তারপর তাদের কী পরিণতি হয়েছিলাে, সেটা ছিলাে এ সূরার সর্বশেষ কাহিনী কোরায়শও তার হিজরতের সামান্য আগে রসূল(স.)-কে মক্কা থেকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র করেছিলাে। কিসসা-কাহিনী শেষ হয়ে গেলে শুরু হয়েছে উপসংহার । বলল, আল্লাহর জন্যে সকল প্রশংসা এবং তার মনােনীত বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হােক। আল্লাহ তায়ালা ভালাে, না যাদের তারা আল্লাহর সাথে শরীক করে তারা?’ অতপর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও মানব সত্ত্বার ভেতরকার দৃশসমূহ দেখানাে হয়েছে। দেখানাে হয়েছে বিশ্ব বিধাতা, বিশ্বস্রষ্টা, জীবিকা সরবরাহকারী এবং অদৃশ্য বিষয়ে অবগত একমাত্র সত্তা মহান আল্লাহর কুশলী হাতের কৃতিত্ব। বলা হয়েছে যে, সবাইকে একদিন তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। অতপর তাদের কাছে কেয়ামতের একটা আলামত, কেয়ামতের কিছু কিছু দৃশ্য এবং সেদিন কাফেরদের জন্যে যে আযাব নির্দিষ্ট রয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সূরা এমন এক বক্তব্য দিয়ে শেষ করা হয়েছে, যা তার আলােচ্য বিষয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ। বক্তব্যটা হলাে, আমাকে তাে কেবল এই নগরীর প্রতিপালকের এবাদাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাকে তিনি সংরক্ষিত ও সম্মানিত করেছেন, তাঁরই জন্যে সব কিছু, আর আমাকে আত্মসমর্পণকারী হবার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর তােমার প্রভু তােমাদের কাজ সম্পর্কে উদাসীন নন। এ সূরার কেন্দ্রীয় আলােচ্য বিষয় হলো ইলম বা জ্ঞান। প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য যাবতীয় জিনিস, বিশেষত অদৃশ্য বিষয় ও মানুষের কাছে প্রকাশিত প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান, হযরত দাউদ ও সোলায়মান(আ.)-কে প্রদত্ত জ্ঞান, হযরত সুলায়মান(আ.)-কে পাখির ভাষার জ্ঞানদান এবং এ দ্বারা তাকে সম্মানিত করার বিষয়টি এর আওতাভুক্ত। এ জন্যে সূরার ভূমিকায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তােমাকে কুরআন শেখানো হচ্ছে মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞানীর পক্ষ থেকে। আর উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘তুমি বলাে, আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে তা তারা জানে না, বরং আখেরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান লােপ পেয়েছে। ‘তোমার প্রভু যা তারা গােপন করে ও প্রকাশ করে তা জানেন।’ সবার শেষে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করবেন, তখন তােমরা তা জানবে।’ হযরত সুলায়মানের কাহিনীতে বলা হয়েছে, ‘দাউদ ও সােলায়মানকে আমি জ্ঞান দান করেছি’ হযরত সােলায়মানের উক্তি। হে মানবসকল, আমাদের পাখির ভাষা শেখানাে হয়েছে। অনুরূপভাবে হুদহুদের উক্তিতে আল্লাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ যিনি আসমান ও যমীনের সকল গােপন বস্তু বের করে আনেন এবং তােমরা যা গােপন করাে ও যা প্রকাশ করো তা জানেন। আর যখন হযরত সােলায়মান সাবার রাণীর সিংহাসন হাযির করতে চান, তখন একটি জ্বিন জাতীয় দানব সে সিংহাসনকে চোখের পলকে হাযির করতে পারলাে না, বরং আল্লাহ তায়ালা কিতাব সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন একজন জিন এটা চোখের পলকে হাযির করতে পারলাে। এভাবে সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা প্রসংগে জ্ঞানেরই বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং সমগ্র সূরা এই আবহের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হয়েছে। আর এটা অগ্রসর হয়েছে আমাদের ইতিপূর্বে প্রদত্ত ধারাক্রম অনুসাৱেই । এবার বিস্তারিত তাফসীরে আলােচনার পালা।
ত্ব-সীন, এই অক্ষরগুলাের উদ্ধৃতি দেয়ার উদ্দেশ্য হলাে এই সূরা ও সমগ্র কোরাআন যে মূল উপাদান দিয়ে রচিত, সেই আরবী বর্ণমালার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এ বর্ণমালা দিয়ে পুস্তক রচনা করার সুযােগ সকল আরবী ভাষাভাষীরই ছিলাে, কিন্তু চ্যালেঞ্জ দেয়া সত্তেও কেউ এই কোরআনের মতাে কোনাে পুস্তক রচনা করতে পারেনি। এই দৃষ্টি আকর্ষণের পরই কোরআন সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে, এগুলাে হচ্ছে কোরআন ও একটা সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত। (আয়াত-১) এখানে ‘কিতাব’ বা গ্রন্থ বলে খােদ কোরআনকেই বুঝানাে হয়েছে। কোরআনকে ‘কেতাব বলে আলাদাভাবে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, এ দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাবকে মােশরেকরা যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে এবং সাবার রাণী ও তার জাতি হযরত সোলায়মানের কিতাব (বিধি)-কে যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, এই দুই অভ্যর্থনার বৈপরীত্য স্পষ্ট করে দেখাতে চেষ্টা করা হবে। হযরত সােলায়মান আল্লাহর এক বান্দা হওয়া সত্তেও তার বিধি পড়ে সাবার রাণী ও তার জাতি ইসলাম গ্রহণ করে।
পরবর্তী আয়াতে কোরআন বা কিতাবকে বিশেষিত করা হচ্ছে এই বলে, ‘ঈমানদারদের জন্যে পথনির্দেশনা ও সুসংবাদ।'(আয়াত-২) এ কথাটা এতে রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে পথনির্দেশনা ও সুসংবাদ’ বলার চেয়েও তাৎপর্যবহ। এখানে যে কথাটা বলা হয়েছে, তা স্বয়ং কোরআনকেই মােমেনদের জন্যে পথনির্দেশনা ও সুসংবাদে পরিণত করছে। অর্থাৎ কোরআনে পথনির্দেশনা ও সুসংবাদ রয়েছে- তা নয়, বরং খােদ কোরআনই ঈমানদারদের জন্যে পথনির্দেশনা ও সুসংবাদ। কেননা কোরআন ঈমানদারদের প্রত্যেক পথে ও প্রত্যেক পথের মােড়ে দিকনির্দেশনা দেয়। অনুরূপভাবে সে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় সুসংবাদ দান করে। পথনির্দেশনা ও সুসংবাদ শুধুমাত্র ঈমানদারদের জন্যে নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ করার মধ্যে একটা গভীর এবং বিরাট রহস্য রয়েছে। সেটা এই যে, কোরআন কোনাে তাত্ত্বিক বা ফলিত বিদ্যার গ্রন্থ নয় যে, যে কেউ তা অধ্যয়ন করলেই উপকৃত হবে; বরং কোরআন হচ্ছে এমন এক পুস্তক, যা সর্বপ্রথম মানুষের হৃদয়কে সম্বােধন করে এবং একমাত্র সেই মুক্ত হৃদয়কেই সে তার দীপ্তি ও সৌরভ বিতরণ করে, যা বিশ্বাস ও প্রত্যয় সহকারে তাকে গ্রহণ করে। হৃদয় যতােই ঈমানী রসে সিক্ত হবে, ততই তা বেশী করে কোরআনের স্বাদ লাভ করবে, তার সেই সুগভীর মর্ম ও তাৎপর্য উপলব্ধি করবে, যা কোনাে নীরস ও প্রত্যয়হীন হৃদয় উপলব্ধি করতে পারে না, তার জ্যোতি থেকে সে এতাে দিকনির্দেশনা পাবে, যা কোনাে বেঈমান ও অবিশ্বাসী হৃদয় পায় না এবং এর সাহচর্য থেকে এতাে উপকার পাবে, যা কোনাে বিকৃতমনা ও বিবেকবেচা ব্যক্তি পায় না। মানুষ দ্রুততার সাথে উদাসীনভাবে কোরআনের কোনাে আয়াত বা সূরা বহুবার পড়া সত্তেও দেখা যায় তার ভেতরে কোনাে আলােড়ন সৃষ্টি হচ্ছে না, কিন্তু এক সময়ে আকস্মিকভাবে তার হৃদয়ে আলােগুলাে জ্বলে ওঠে। ফলে তার সামনে এমন বহু অভিনব জগত উদ্ভাসিত হয়, যা একটু আগেও তার কল্পনায় আসেনি। সেই আলো তার জীবনে অলৌকিকভাবে নিয়ে আসে আমূল পরিবর্তন। সেই আলাে তাকে এক মতবাদ থেকে আরেক মতবাদে এবং এক জীবন ব্যবস্থা থেকে আর এক জীবন ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত করে। কোরআনে যে আইন, বিধান ও নীতি পদ্ধতি লিপিবদ্ধ হয়েছে, সে সবেরই সর্বপ্রথম ভিত্তি ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যে ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান নেই, যে ব্যক্তি কোরআনকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত ওহী বলে গ্রহণ করে না এবং কোরআনে যা কিছু বিধান আছে তাকে একমাত্র আল্লাহর মনােনীত বিধানরূপে বিশ্বাস করে না। সেই কোরআন দ্বারা যথােচিতভাবে পথনির্দেশনা বা হেদায়াত লাভ করে না এবং এর সুসংবাদগুলােকে যথার্থ সুসংবাদ মনে করে না। পবিত্র কোরআনে হেদায়াত বা পথনির্দেশনা তত্ত্ব ও তথ্য, আদেশ ও নিষেধের বিরাট ভান্ডার রয়েছে। একমাত্র ঈমানই এই ভান্ডারের চাবি। কোরআনের ডান্ডারগুলাে ঈমানের চাবি ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে খােলা যায় না। যারা সত্যিকার ঈমান এনেছে, তারা এই কোরআন দিয়ে বহু অলৌকিক ও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে কোরআন যখন থেকে নিছক সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা শুরু হয়েছে, তখন থেকে তা শুধু কান পর্যন্ত গিয়েই থেমে যায়, হৃদয় পর্যন্ত আর পৌছে না। এখন আর কোরআন থেকে কেউ উপকৃত হয় না এবং কোরআন দিয়ে কোন পরিবর্তন ঘটানো হয় না। কেননা কুরআন এখন এমন একটা ভান্ডার হিসেবে রয়ে গেছে, যা খােলার জন্যে কোনাে চাবি নেই।
*কুরআন থেকে হেদায়েত প্রাপ্তির পূর্বশর্ত : পরবর্তী আয়াতে সেসব মােমেনের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে যারা কোরআনকে হেদায়াত ও সুসংবাদের উৎস হিসাবে মেনে নেয়। ‘যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করে।'(আয়াত-৩) নামায কায়েম করার অর্থ যথােচিতভাবে নামায আদায় করা, নিজেকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত মনে করে একাগ্র চিত্তে নামায পড়া। ‘যাকাত দেয়’ অর্থাৎ যাকাত দিয়ে মনকে কৃপণতার নােংরামি থেকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে, অর্থ সম্পদের মােহ ও আসক্তি থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দেয়, আল্লাহর দেয়া সম্পদের কিছুটা দান করে নিজের দ্বীনী ভাইদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং তারা যে ইসলামী সমাজের সদস্য, সেই ইসলামী সমাজের প্রাপ্য পরিশােধ করে। এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আখেরাতের প্রতি কারাে বিশ্বাস থাকলে সেখানে হিসাবের চিন্তায় মন অস্থির ও উদ্বিগ্ন থাকবে, প্রবৃত্তির লালসা থেকে নিবৃত্ত থাকবে, মন আল্লাহর ভয়ে কম্পিত থাকবে এবং তার সামনে অবাধ্য ও নাফরমান বান্দার মতাে জীবন যাপন করতে লজ্জাবােধ হবে। আল্লাহকে স্মরণকারী, আল্লাহর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালনকারী, তাঁর কাছে জবাবদিহি ও শাস্তির ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত, তার সন্তোষ ও পুরস্কার লাভের আশা পােষণকারী এসব ঈমানদার বান্দার মনই কোরআনের হেদায়াত ও সুসংবাদ গ্রহণের জন্যে উদগ্রীব উন্মুক্ত থাকে। তাই কোরআন তাদের জন্যে হেদায়াত ও সুসংবাদ হয়ে বিরাজ করে। হৃদয়ে প্রেরণার উৎস হিসাবে অবস্থান করে, নিরন্তর সৎ ও পুণ্যময় জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের গন্তব্যে পৌছার জন্যে পথের সম্বল হিসাবে ভূমিকা পালন করে। আখেরাতের উল্লেখ করার পর তার ওপর অধিকতর জোর দিয়ে যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে তাদের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরা হচ্ছে, ‘যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের কাজগুলাে আমি তাদের কাছে সুদৃশ্য বানিয়েছি, ফলে তারা গোমরাহীতেই লিপ্ত থাকে…'(আয়াত ৪-৫) বস্তুত আখেরাতের প্রতি ঈমান মানুষের প্রবৃত্তির উদ্দাম লালসা এবং অদম্য ঝোক নিয়ন্ত্রিত ও দমিত করে এবং জীবনে মধ্যম পন্থা ও ভারসাম্য নিশ্চিত করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখেরাতে বিশ্বাস করে না, সে নিজের প্রবৃত্তির লালসা ও ঝোক কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। সে মনে করে, জীবনে আমােদ প্রমােদ ও ভােগ বিলাসের যেটুকু সুযােগ পাওয়া গেছে, তা আর ফিরে নাও আসতে পারে। সুতরাং লালসা চরিতার্থ করার এ সুযােগ কেনই বা হাতছাড়া করবাে? তাকে যে আল্লাহর কাছে দাঁড়িয়ে এর জন্যে জবাবদিহি করতে হবে, সে চিন্তা তার মাথায়ই আসে না। কেয়ামতের দিনের কোনাে হিসাব নিকাশ ও কর্মফলের আশা বা আশংকা সে করেই না। এ জন্যেই আখেরাতে অবিশ্বাসীর কাছে প্রবৃত্তির লালসা চরিতার্থ করার প্রতিটি কাজই সুন্দর ও চমকপ্রদ মনে হয়। তাই এ ধরনের কাজ করতে কোনাে ভয় বা লজ্জাই তাকে বাধাগ্রস্ত বা দ্বিধাগ্রস্ত করে না। প্রবৃত্তির স্বভাবই এই যে, যা মজাদার ও আরামদায়ক, তা তার কাছে ভালাে লাগে এবং তা সে ভালােবাসে। তবে যে মুহূর্তে সে আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও তাঁর আয়াতসমূহ দ্বারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বিশ্বাস স্থাপন করে, সেই মুহূর্ত থেকেই সে অন্য ধরনের কাজকর্মে স্বাদ ও আনন্দ অনুভব করতে আরজ করে এবং তার সামনে দৈহিক ও ঐন্দ্রিক স্বাদ আনন্দের কাজগুলাে খুবই তুচ্ছ ঘৃণ্য মনে হতে থাকে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মনকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। যদি তা হেদায়াতের সাক্ষ্য প্রমাণগুলােকে সাবলীলভাবে গ্রহণ করে তাহলে তা হেদায়াত লাভে সক্ষম হয়। আর যদি তার উপলব্ধি ও গ্রহণ ক্ষমতা কোনাে কারণে বিকল থাকে, তাহলে তা বিপথগামী হবার যােগ্য হয়। আর যে বিধান অনুসারে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তদনুসারে হেদায়াত ও গােমরাহী উভয় অবস্থায় আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর হয়ে থাকে। এ জন্যেই আখেরাতে যারা বিশ্বাস করে না, তাদের সম্পর্কে কোরআন বলে, ‘তাদের কাজগুলাে আমি সুদৃশ্য বানিয়েছি, ফলে তারা গােমরাহীতেই লিপ্ত আছে।’ অর্থাৎ তারা ঈমান না আনার কারণে আল্লাহর ইচ্ছা ও নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপ ও আবেগ অনুভূতি তাদের জন্যে ভালাে এবং সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে। সুদৃশ্য বানানাের এটাই হচ্ছে তাৎপর্য। তারা গােমরাহীতে এমনভাবে লিপ্ত হয়ে যায় যে, ভালো বা মন্দের বাছবিচার করার কোনাে ক্ষমতা তাদের থাকে না। ফলে তারা সৎপথের সন্ধান পায় না। মন্দ ও খারাপ কাজকে যার কাছে সুদৃশ্য এবং সুন্দর বানানাে হয়, তার পরিণাম যে কি রকম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলা হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্ট আযাব ‘ এই নিকৃষ্ট আযাব দুনিয়াতেও হতে পারে, আখেরাতেও হতে পারে। আর আখেরাতের সর্বাত্মক ক্ষয়ক্ষতি তাে খারাপ কাজে লিপ্ত হবারই ফল। সূরার ভূমিকার সমাপ্তি ঘটছে আল্লাহর সেই উৎস উল্লেখের মাধ্যমে, যেখান থেকে রসূল(স.)-এর কাছে এই কোরআন নাযিল হয়েছে। ‘তােমাকে কুরআন শেখানাে হচ্ছে এক মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞানী সত্তার পক্ষ থেকে।’ ‘তােমাকে শেখানাে হচ্ছে’ এই কথাটা দ্বারা বুঝানাে হয়েছে যে, এই কোরআন মহান আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে, যিনি প্রতিটা কাজ দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে করেন এবং প্রতিটা কাজের ব্যবস্থাপনা করেন বিজ্ঞতার সাথে। তার সেই জ্ঞান ও বিজ্ঞান (ইলম ও হিকমত) এই কোরআন ও কোরআনের আনীত জীবন বিধান এবং আইন কানুনের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশ পেয়েছে এর বিষয়বস্তুর চমৎকার সমন্বয় থেকে। এরপর শুরু হয়েছে কেসসা কাহিনীর পালা, যা আল্লাহর জ্ঞান কুশলতার ও সূক্ষ্মদর্শিতার নিদর্শন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
(২৭-নমল) : নামকরণ:
দ্বিতীয় রুকূ’র চতুর্থ আয়াতে وَادِ النَّمْلِ এর কথা বলা হয়েছে। সূরার নাম এখান থেকেই গৃহীত হয়েছে। অর্থ্যাৎ এমন সূরা যাতে নামল এর কথা বলা হয়েছে। অথবা যার মধ্যে নামল শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
(২৭-নমল) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগীর দিক দিয়ে এ সূরা মক্কার মধ্যযুগের সূরাগুলোর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্য রাখে। হাদীস থেকেও এর সমর্থন মেলে। ইবনে আব্বাস (রা.) ও জাবের ইবনে যায়েদের (রা.) বর্ণনা হচ্ছে, “প্রথমে নাযিল হয় সূরা আশ শু’আরা তারপর আন নামল এবং তারপর আল কাসাস।”
(২৭-নমল) : বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষয় :
এ সূরায় দু’টি ভাষণ সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রথম ভাষণটি শুরু হয়েছে সূরার সূচনা থেকে চতুর্থ রুকূ’র শেষ পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় ভাষণটি পঞ্চম রুকূ’র শুরু থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত।
। প্রথম ভাষণটিতে বলা হয়েছে, কুরআনের প্রথম নির্দেশনা থেকে একমাত্র তারাই লাভবান হতে পারে এবং তার সুসংবাদসমূহ লাভের যোগ্যতা একমাত্র তারাই অর্জন করতে পারে যারা এ কিতাব যে সত্যসমূহ উপস্থাপন করে সেগুলোকে এ বিশ্ব-জাহানের মৌলিক সত্য হিসেবে স্বীকার করে নেয়। তারপর এগুলো মেনে নিয়ে নিজেদের বাস্তব জীবনেও আনুগত্য ও অনুসরনের নীতি অবলম্বন করে। কিন্তু এ পথে আসার ও চলার ক্ষেত্রে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশী প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে সেটি হচ্ছে আখেরাত অস্বীকৃতি। কারণ এটি মানুষকে দায়িত্বহীন, প্রবৃত্তির দাস ও দুনিয়াবী জীবনের প্রেমে পাগল করে তোলে। এরপর মানুষের পক্ষে আল্লাহর সামনে নত হওয়া এবং নিজের প্রবৃত্তির কামনার ওপর নৈতিকতার বাঁধন মেনে নেয়া আর সম্ভব থাকে না। এ ভূমিকার পর তিন ধরনের চারিত্রিক আদর্শ পেশ করা হয়েছে।
। একটি আদর্শ ফেরাউন, সামূদ জাতির সরদারবৃন্দ ও লূতের জাতির বিদ্রোহীদের। তাদের চরিত্র গঠিত হয়েছিল পরকাল চিন্তা থেকে বেপরোয়া মনোভাব এবং এর ফলে সৃষ্ট প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে। তারা কোন নিদর্শন দেখার পরও ঈমান আনতে প্রস্তুত হয়নি। পক্ষান্তরে যারা তাদেরকে কল্যাণ ও সুকৃতির প্রতি আহবান জানিয়েছে তাদেরই তারা শত্রু হয়ে গেছে। যেসব অসৎকাজের জঘন্যতা ও কদর্যতা কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাছে প্রছন্ন নয় সেগুলোকেও তারা আঁকড়ে ধরেছে। আল্লাহর আযাবে পাকড়াও হবার এক মুহূর্ত আগেও তাদের চেতনা হয়নি।
। দ্বিতীয় আদর্শটি হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের। আল্লাহ তাঁকে অর্থ-সম্পদ, রাষ্ট্র-ক্ষমতা, পরাক্রম, মর্যাদা ও গৌরব এত বেশী দান করেছিলেন যে মক্কার কাফেররা তার কল্পনাও করতে পারতো না। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও যেহেতু তিনি আল্লাহর সামনে নিজকে জবাবদিহি করতে হবে মনে করতেন এবং তাঁর মধ্যে এ অনুভূতিও ছিল যে, তিনি যা কিছুই লাভ করেছেন সবই আল্লাহর দান তাই তাঁর মাথা সবসময় প্রকৃত নিয়ামত দানকারীর সামনে নত হয়ে থাকতো এবং আত্ম অহমিকার সামান্যতম গন্ধও তাঁর চরিত্র ও কার্যকলাপে পাওয়া যেতো না।
। তৃতীয় আদর্শ সাবার রানীর। তিনি ছিলেন আরবের ইতিহাসের বিপুল খ্যাতিমান ধনাঢ্য জাতির শাসক। একজন মানুষকে অহংকার মদমত্ত করার জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন তা সবই তাঁর ছিল। যেসব জিনিসের জোরে একজন মানুষ আত্মম্ভরী হতে পারে তা কুরাইশ সরদারদের তুলনায় হাজার লক্ষগুন বেশী তাঁর আয়ত্বাধীন ছিল। তাছাড়া তিনি ছিলেন একটি মুশরিক জাতির অন্তর্ভুক্ত। পিতৃপুরুষের অনুসরণের জন্যও এবং নিজের জাতির মধ্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখার উদ্দেশ্যেও তাঁর পক্ষে শির্ক ত্যাগ করে তাওহীদের পথ অবলম্বন করা সাধারণ একজন মুশরিকের জন্য যতটা কঠিন হতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশী কঠিন ছিল। কিন্তু যখনই তাঁর সামনে সত্য সুস্পষ্ট হয়ে গেছে তখনই তিনি সত্যকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। এ পথে কেউ বাঁধা দিয়ে তাঁকে ঠেকিয়ে রাখেত পারেনি। কারণ তাঁর মধ্যে যে ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তি ছিল নিছক একটি মুশরিকী পরিবেশে চোখ মেলার ফলেই তা সৃষ্টি হয়েছিল। প্রবৃত্তির উপসনা ও কামনার দাসত্ব করার রোগ তাঁকে পেয়ে বসেনি। তাঁর বিবেক আল্লাহর সামনে জবাবদিহির অনুভূতি শূন্য ছিল না।
। দ্বিতীয় ভাষণে প্রথমে বিশ্ব-জাহানের কয়েকটি সুস্পষ্ট ও অকাট্য সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মক্কার কাফেরদেরকে একের পর এক প্রশ্ন করা হয়েছেঃ বলো, যে শির্কে তোমরা লিপ্ত হয়েছো এ সত্যগুলো কি তার সাক্ষ্য দেয় অথবা এ কুরআনে যে তাওহীদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার সাক্ষ্য দেয়? এরপর কাফেরদের আসল রোগের প্রতি অংগুলি নির্দেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে জিনিসটি তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে, যে কারণে তারা সবকিছু দেখেও কিছুই দেখে না এবং সবকিছু শুনেও কিছুই শোনে না সেটি হচ্ছে আসলে আখেরাত অস্বীকৃতি। এ জিনিসটিই তাদের জন্য জীবনের কোন বিষয়েই কোন গভীরতা ও গুরুত্বের অবকাশ রাখেনি। কারণ তাদের মতে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই যখন ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিশে যাবে এবং দুনিয়ার জীবনের এসব সংগ্রাম-সাধনার কোন ফলাফল প্রকাশ পাবে না তখন মানুষের জন্য সত্য ও মিথ্যা সব সমান। তার জীবন ব্যবস্থা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত না অসত্যের ওপর, এ প্রশ্নের মধ্যে তার জন্য আদতে কোন গুরুত্বই থাকে না।
। কিন্তু আসলে এ আলোচনার উদ্দেশ্য হতাশা নয়। অর্থাৎ তারা যখন গাফিলতির মধ্যে ডুবে আছে তখন তাদেরকে দাওয়াত দেয়া নিষ্ফল, এরূপ মনোভাব সৃষ্টি এ আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আসলে নিদ্রিতদেরকে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগানো। তাই ষষ্ঠ ও সপ্তম রুকূ’তে একের পর এক এমন সব কথা বলা হয়েছে যা লোকদের মধ্যে আখেরাতের চেতনা জাগ্রত করে, তার প্রতি অবহেলা ও গাফিলতি দেখানোর ফলাফল সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে এবং তার আগমনের ব্যাপারে তাদেরকে এমনভাবে নিশ্চিত করে যেমন এক ব্যক্তি নিজের চোখে দেখা ঘটনা সম্পর্কে যে তা চোখে দেখেনি তাকে নিশ্চিত করে।
। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে কুরআনের আসল দাওয়াত অর্থাৎ এক আল্লাহর বন্দেগীর দাওয়াত অতি সংক্ষেপে কিন্তু অত্যন্ত প্রভাবশালী ভংগীতে পেশ করে লোকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ দাওয়াত গ্রহণ করলে তোমাদের নিজেদের লাভ এবং একে প্রত্যাখ্যান করলে তোমাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। একে মেনে নেবার জন্য যদি আল্লাহর এমন সব নিদর্শনের অপেক্ষা করতে থাকো যেগুলো এসে যাবার পর আর না মেনে কোন গত্যন্তর থাকবে না, তাহলে মনে রেখো সেটি চূড়ান্ত মীমাংসার সময়। সে সময় মেনে নিলে কোন লাভই হবে না।
# “সুস্পষ্ট কিতাবের” একটি অর্থ হচ্ছে, এ কিতাবটি নিজের শিক্ষা, বিধান ও নির্দেশগুলোর একেবারে দ্ব্যর্থহীন পদ্ধতিতে বর্ণনা করে দেয়। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এটি সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্ট পদ্ধতিতে তুলে ধরে। আর এর তৃতীয় একটি অর্থ এই হয় যে, এটি যে আল্লাহর কিতাব সে ব্যাপারটি সুস্পষ্ট। যে ব্যক্তি চোখ খুলে এ বইটি পড়বে, এটি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের তৈরী করা কথা নয় তা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
# এ আয়াতগুলো হচ্ছে পথনির্দেশ ও সুসংবাদ। “পথনির্দেশকারী” ও “সুসংবাদদানকারী” বলার পরিবর্তে এগুলোকেই বলা হয়েছে “পথনির্দেশ” ও “সুসংবাদ” এর মাধ্যমে পথনির্দেশনা ও সুসংবাদদানের গুণের ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণতার প্রকাশই কাম্য। যেমন কাউকে দাতা বলার পরিবর্তে ‘দানশীলতার প্রতিমূর্তি’ এবং সুন্দর বলার পরিবর্তে ‘আপাদমস্তক সৌন্দর্য’ বলা।
# কুরআন মজীদের এ আয়াতগুলো কেবলমাত্র এমনসব লোকদেরই পথনির্দেশনা দেয় এবং শুভ পরিণামের সুসংবাদও একমাত্র এমনসব লোকদের দান করে যাদের মধ্যে দু’টি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, তারা ঈমান আনে। ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে তারা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত গ্রহণ করে। এক আল্লাহকে নিজেদের একমাত্র উপাস্য ও রব বলে মেনে নেয়। কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে স্বীকার করে নেয়। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য নবী বলে মেনে নিয়ে নিজেদের নেতা রূপে গ্রহণ করে। এ সঙ্গে এ বিশ্বাসও পোষণ করে যে, এ জীবনের পর দ্বিতীয় আর একটি জীবন আছে, সেখানে আমাদের নিজেদের কাজের হিসেব দিতে এবং প্রত্যেকটি কাজের প্রতিদান লাভ করতে হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা এ বিষয়গুলো কেবলমাত্র মেনে নিয়েই বসে থাকে না বরং কার্যত এগুলোর অনুসরণ ও আনুগত্য করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এ উদ্বুদ্ধ হবার প্রথম আলামত হচ্ছে এই যে, তারা নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়। এ দু’টি শর্ত যারা পূর্ণ করবে কুরআন মজীদের আয়াত তাদেরকেই দুনিয়ায় সত্য সরল পথের সন্ধান দেবে। এ পথের প্রতিটি পর্যায়ে তাদেরকে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য বুঝিয়ে দেবে। তার প্রত্যেকটি চৌমাথায় তাদেরকে ভুল পথের দিকে অগ্রসর হবার হাত থেকে রক্ষা করবে। তাদেরকে এ নিশ্চয়তা দান করবে যে, সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন করার ফল দুনিয়ায় যাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত তারই বদৌলতে চিরন্তন সফলতা তারাই অর্জন করবে এবং তারা মহান আলাহর সন্তুষ্টি লাভের সৌভাগ্য লাভে সক্ষম হবে। এটা ঠিক তেমনি একটা ব্যাপার যেমন একজন শিক্ষকের শিক্ষা থেকে কেবলমাত্র এমন এক ব্যক্তি লাভবান হতে পারে যে তার প্রতি আস্থা স্থাপন করে যথার্থই তার ছাত্রত্ব গ্রহণ করে নেয় এবং তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজও করতে থাকে। একজন ডাক্তার থেকে উপকৃত হতে পারে একমাত্র এমনই একজন রোগী যে তাকে নিজের চিকিৎসক হিসেবে গ্রহণ করে এবং ঔষধপত্র ও পথ্যাদির ব্যাপারে তার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী কাজ করে। একমাত্র এ অবস্থায়ই একজন শিক্ষক ও ডাক্তার মানুষকে তার কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করার নিশ্চয়তা দান করতে পারে।
কেউ কেউ এ আয়াতে يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ বাক্যাংশের অর্থ গ্রহণ করেছেন, যারা চারিত্রিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা লাভ করবে। কিন্তু কুরআন মজীদে নামায কায়েম করার সাথে যাকাত আদায় করার শব্দ যেখানেই ব্যবহার করা হয়েছে সেখানেই এর অর্থ হয়েছে যাকাত দান করা। নামাযের সাথে এটি ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। এছাড়াও যাকাতের জন্য ايتاء শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সম্পদের যাকাত দান করার সুনির্দিষ্ট অর্থ ব্যক্ত করে। কারণ আরবী ভাষায় পবিত্রতা অর্জন করার ক্ষেত্রে تزكى শব্দ বলা হয়ে থাকে, ايتاء زكوة বলা হয় না। আসলে এখানে যে কথাটি মনে বদ্ধমূল করে দেয়া উদ্দেশ্য সেটি হচ্ছে এই যে, কুরআনের পথনির্দেশনা থেকে লাভবান হবার জন্য ঈমানের সাথে কার্যত আনুগত্য ও অনুসরণের নীতি অবলম্বন করাও জরুরী। আর মানুষ যথার্থই আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করছে কিনা নামায কায়েম ও যাকাত দান করাই হচ্ছে তা প্রকাশ করার প্রথম আলামত। এ আলামত যেখানেই অদৃশ্য হয়ে যায় সেখানেই বুঝা যায় যে, মানুষ বিদ্রোহী হয়ে গেছে, শাসককে সে শাসক বলে মেনে নিলেও তার হুকুম মেনে চলতে রাজী নয়।
# যদিও আখেরাত বিশ্বাস ঈমানের অঙ্গ এবং এ কারণে মু’মিন বলতে এমনসব লোক বুঝায় যারা তাওহীদ ও রিসালাতের সাথে সাথে আখেরাতের প্রতিও ঈমান আনে কিন্তু এটি আপনা আপনি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও এ বিশ্বাসটির গুরুত্ব প্রকাশ করার জন্য বিশেষ জোর দিয়ে একে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একথাই বুঝানো হয়েছে যে, যারা পরকাল বিশ্বাস করে না তাদের জন্য এ কুরআন উপস্থাপিত পথে চলা বরং এর উপর পা রাখাও সম্ভব নয়। কারণ এ ধরণের চিন্তাধারা যারা পোষণ করে তারা স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের ভালমন্দের মানদণ্ড কেবলমাত্র এমন সব ফলাফলের মাধ্যমে নির্ধারিত করে থাকে যা এ দুনিয়ায় প্রকাশিত হয় বা হতে পারে। তাদের জন্য এমন কোন পথনির্দেশনা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না যা পরকালের পরিণাম ফলকে লাভ-ক্ষতির মানদণ্ড গণ্য করে ভালো ও মন্দ নির্ধারণ করে। কিন্তু এ ধরণের লোকেরা প্রথমত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের শিক্ষায় কর্ণপাত করে না। কিন্তু যদি কোন কারণে তারা মু’মিন দলের মধ্যে শামিল হয়েও যায় তাহলে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস না থাকার ফলে তাদের জন্য ঈমান ও ইসলামের পথে এক পা চলাও কঠিন হয়। এ পথে প্রথম পরীক্ষাটিই যখন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইহকালীন লাভ ও পরকালীন ক্ষতির দাবী তাদেরকে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন দিকে টানতে থাকবে তখন মুখে যতই ঈমানের দাবী করতে থাকুক না কেন নিঃসংকোচে তারা ইহকালীন লাভের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং পরকালীন ক্ষতির সামান্যতমও পরোয়া করবে না।
# এটি আল্লাহর প্রাকৃতিক নিয়ম আর মানবিক মনস্তত্বের স্বাভাবিক যুক্তিবাদিতাও একথাই বলে যে, যখন মানুষ জীবন এবং তার কর্ম ও প্রচেষ্টার ফলাফলকে কেবলমাত্র এ দুনিয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ মনে করবে, যখন সে এমন কোন আদালত স্বীকার করবে না যেখানে মানুষের সারা জীবনের সমস্ত কাজ যাচাই-পর্যালোচনা করে তার দোষ-গুণের শেষ ও চূড়ান্ত ফায়সালা করা হবে এবং যখন সে মৃত্যুর পরে এমন কোন জীবনের কথা স্বীকার করবে না যেখানে দুনিয়ার জীবনের কর্মকাণ্ডের প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা অনুযায়ী যথাযথ পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে তখন অনিবার্যভাবে তার মধ্যে একটি বস্তুবাদী দৃষ্টিভংগী বিকাশ লাভ করবে। তার কাছে সত্য ও মিথ্যা, শিরক ও তাওহীদ, পাপ ও পুণ্য এবং সচ্চরিত্র ও অসচ্চরিত্রের যাবতীয় আলোচনা একেবারেই অর্থহীন মনে হবে। এ দুনিয়ায় যা কিছু তাকে ভোগ, আয়েশ-আরাম, বস্তুগত উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং শক্তি ও কর্তৃত্ব দান করবে, তা কোন জীবন-দর্শন, জীবন-পদ্ধতি ও নৈতিক ব্যবস্থা হোক না কেন, তার কাছে তাই হবে কল্যাণকর। প্রকৃত তত্ত্ব ও সত্যের ব্যাপারে তার কোন মাথাব্যাথা থাকবে না। তার মৌল আকাঙ্ক্ষা হবে কেবলমাত্র দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সাফল্য। এগুলো অর্জন করার চিন্তা তাকে সকল পথে বিপথে টেনে নিয়ে যাবে। এ উদ্দেশ্যে সে যা কিছুই করবে তাকে নিজের দৃষ্টিতে মনে করবে বড়ই কল্যাণকর এবং যারা এ ধরনের বৈষয়িক স্বার্থোদ্ধারে ডুব দেয়নি এবং চারিত্রিক সততা ও অসততা থেকে বেপরোয়া হয়ে স্বেচ্ছাচারীর মত কাজ করে যেতে পারেনি তাদেরকে সে নির্বোধ মনে করবে।
কারো অসৎকার্যাবলীকে তার জন্য শোভন বানিয়ে এ কাজকে কুরআন মজীদে কখনো আল্লাহর কাজ আবার কখনো শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। যখন বলা হয় যে, অসৎকাজগুলোকে আল্লাহ শোভন করে দেন তখন তার অর্থ হয়, যে ব্যক্তি এ দৃষ্টিভংগী অবলম্বন করে তার কাছে স্বভাবতই জীবনের এ সমতল পথই সুদৃশ্য অনুভূত হতে থাকে। আর যখন বলা হয় যে, শয়তান ওগুলোকে সুদৃশ্য করে দেয়। তখন এর অর্থ হয়, এ চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি অবলম্বনকারী ব্যক্তির সামনে শয়তান সবসময় একটি কাল্পনিক জান্নাত পেশ করতে থাকে এবং তাকে এই বলে ভালোভাবে আশ্বাস দিতে থাকে, শাবাশ! বেটা খুব চমৎকার কাজ করছো।
# এ নিকৃষ্ট শাস্তিটি কিভাবে, কখন ও কোথায় হবে। তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। কারণ এ দুনিয়া ও বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও জাতি নানাভাবে এ শাস্তি লাভ করে থাকে। এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার সময় একেবারে মৃত্যুর দ্বারদেশেও জালেমরা এর একটি অংশ লাভ করে। মৃত্যুর পরে “আলমে বরযখে” ও (মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পূর্ববর্তী সময়) মানুষ এর মুখোমুখি হয়। আর তারপর হাশরের ময়দানে এর একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে এবং তারপর এক জায়গায় গিয়ে তা আর কোনদিন শেষ হবে না।
# এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন উড়ো কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের আন্দাজ অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়। বরং এক জ্ঞানবান প্রাজ্ঞ সত্তা এগুলো নাযিল করছেন। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তাঁর জ্ঞান সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
নামকরণ:
النَّمْلِ “নামল” শব্দের অর্থ পিপীলিকা। অত্র সূরার ১৮ নং আয়াতে সুলাইমান (عليه السلام)-এর সাথে পিপীলিকা সংক্রান্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, সেখান থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরার শুরুতে কুরআন মু’মিনদের জন্য সুপথ প্রদর্শক ও সুসংবাদ, পক্ষান্তরে যারা মু’মিন নয় তাদের অশুভ পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। তারপর মূসা (عليه السلام)-এর মিসর প্রত্যাবর্তনে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথোপকথন, সুলাইমান (عليه السلام) ও বিলকীসের বিস্তারিত ঘটনা এবং সালেহ (عليه السلام)-এর জাতি সামূদ ও লূত (عليه السلام)-এর জাতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহ সম্পর্কে এবং কাফিদের পুনরুত্থানকে অসম্ভব মনে করাসহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
১-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
طٰسٓ (ত্বা-সীন)ন এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা বাকারার প্রথেমেই আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
(تِلْكَ اٰيٰتُ الْقُرْاٰنِ وَكِتٰبٍ مُّبِيْنٍ)
অর্থাৎ শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা বলছেন এগুলো কুরআন ও সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত অর্থাৎ এতে হালাল-হারাম, হক-বাতিল সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেগুলোর ব্যাপারে কোন অস্পষ্টতা নেই। যাতে মানুষ কোন সংশয় ও সন্দেহে না থাকে। এ সম্পর্কে সূরা শুআরার প্রথমে আলোচনা করা হয়েছে।
(هُدًي وَّبُشْرٰي لِلْمُؤْمِنِيْنَ)
‘মু’মিনদের জন্য পথপ্রদর্শন ও সুসংবাদ।’ পরের আয়াতে মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মু’মিন হল তারা যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখিরাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার ২-৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল লোকদের শাস্তির কথা বর্ণনা করছেন যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। তাদের জন্য পার্থিব জগতের অসৎ কার্যকলাপ ও দুনিয়ার জীবনকেই আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا الْحَيٰوةُ الدُّنْيَا)
“যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।” (সূরা বাকারাহ ২:১২১) ফলে দুনিয়ার চাকচিক্যে ও মোহে পড়ে তারা ঈমান আনতে পারে না, বরং তারা বিভ্রান্ত লোকদের মত ঘুরপাক খায়। এদের জন্যই রয়েছে নিকৃষ্ট শাস্তি। আর এরাই আখিরাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِه۪ٓ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
“তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি আমিও তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেব।” (সূরা আন‘আম ৬:১১০)
অতএব যারাই আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে, শয়তানের পথ অনুসরণ করবে তারাই আখিরাতে কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে। যে শাস্তি থেকে কোনভাবেই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের উচিত শয়তানের পথ বর্জন করে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের পথে চলা।
(وَإِنَّكَ لَتُلَقَّي الْقُرْاٰنَ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ عَلِيْمٍ)
‘নিশ্চয়ই তোমাকে আল-কুরআন দেয়া হচ্ছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট হতে’ অর্থাৎ কুরআন নাযিল করা হয় প্রজ্ঞাময় ও মহান জ্ঞানী আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে, তারপর তুমি তা গ্রহণ কর। কুরআন কোন শয়তানের কথা নয়, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিজেরও কথা নয়, বরং তা আল্লাহ তা‘আলার কথা। সুতরাং মক্কার কাফিরসহ যারা বলে, মুহাম্মাদ তা রচনা করেছে কিম্বা শয়তান তার কাছে ওয়াহী করে; তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ সম্পর্কে সূরা শু‘আরার ১৯২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনের বিধি-বিধান সুস্পষ্ট এতে কোন প্রকার অস্পষ্টতা নেই।
২. কুরআন তাদের জন্যই সুসংবাদ বয়ে আনবে যারা সালাত আদায় করবে, যাকাত দেবে এবং আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হবে।
৩. যারা কাফির তারা আখিরাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
৪. কুরআন কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয়, বরং সন্দেহাতীতভাবে তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১-৬ নং আয়াতের তাফসীর
সূরাসমূহের শুরুতে যে হুরূফে মুকাত্তাআত বা বিছিন্ন অক্ষরগুলো এসে থাকে সেগুলোর পূর্ণ আলোচনা সূরায়ে বাকারার শুরুতে করা হয়েছে। সুতরাং এখানে ওগুলোর পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এগুলো হলো উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত। এগুলো হলো মুমিনদের জন্যে পথ-নির্দেশ ও সুসংবাদ। কেননা তারাই এগুলোকে বিশ্বাস করতঃ এগুলোর অনুসরণ করে থাকে। তারা কুরআনকে সত্য বলে স্বীকার করে এবং ওর উপর আমল করে থাকে।
এরা তারাই যারা সঠিকভাবে ফরয নামায আদায় করে এবং অনুরূপভাবে ফরয যাকাত প্রদানের ব্যাপারেও কোন ত্রুটি করে না। আর তারা পরকালের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান এবং এরপরে পুরস্কার ও শাস্তিকেও তারা স্বীকার করে থাকে। জান্নাত ও জাহান্নামকে তারা সত্য বলে বিশ্বাস করে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তুমি বল- এই কুরআনি মুমিনদের জন্যে হিদায়াত ও শিফা (রোগমুক্তি), আর যারা মুমিন নয় তাদের কর্ণসমূহে বধিরতা রয়েছে।” (৪১:৪৪) আর এক জায়গায় রয়েছে (আরবি) অর্থাৎ “যেন তুমি এর দ্বারা আল্লাহ-ভীরুদেরকে সুসংবাদ দাও এবং অবাধ্য ও দুষ্ট লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর।” (১৯:৯৭)
এখানেও মহান আল্লাহ বলেনঃ যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকে আমি শোভনীয় করেছি। তাদের কাছে তাদের মন্দ কাজও ভাল মনে হয়। তাই তারা ঔদ্ধত্য ও বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায়। তাদেরই জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আখিরাতে তারাই হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! নিশ্চয়ই তোমাকে আল-কুরআন দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞের নিকট হতে। তাঁর আদেশ ও নিষেধের মধ্যে কি নিপুণতা রয়েছে তা তিনিই ভাল জানেন। ছোট বড় সমস্ত কাজ সম্পর্কে তিনি পূর্ণ অবহিত। সুতরাং কুরআন কারীমের সবকিছুই নিঃসন্দেহে সত্য। এর মধ্যে যেসব আদেশ ও নিষেধ রয়েছে সবই ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের কথা সত্য ও ন্যায় রূপে পূর্ণ হয়ে গেছে।” (৬: ১১৬)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1008)
[The Qur’an is Guidance :-]
www.motaher21.net
Sura:27
Para:19
Sura: An-Noml
Ayat: 1-6
27:1
طٰسٓ ۟ تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡقُرۡاٰنِ وَ کِتَابٍ مُّبِیۡنٍ ۙ﴿۱﴾
Ta, Seen. These are the verses of the Qur’an and a clear Book
The Qur’an is Guidance and Glad Tidings for the Believers, a Warning to the Disbelievers, and it is from Allah
Allah says:
طس
Ta Sin.
In (the comments on) Surah Al-Baqarah, we discussed the letters which appear at the beginning of some Surahs.
تِلْكَ ايَاتُ الْقُرْانِ وَكِتَابٍ مُّبِينٍ
These are the Ayat of the Qur’an, and (it is) a Book (that is) clear.
It is plain and evident.
هُدًى وَبُشْرَى لِلْمُوْمِنِينَ
27:2
ہُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ﴿۲﴾
As guidance and good tidings for the believers
A guide and glad tidings for the believers.
meaning, guidance and good news may be attained from the Qur’an for those who believe in it, follow it and put it into practice.
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَةَ وَيُوْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالاْخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
27:3
الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ ہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ﴿۳﴾
Who establish prayer and give zakah, and of the Hereafter they are certain [in faith].
Those who perform the Salah and give the Zakah and they believe with certainty in the Hereafter.
They establish obligatory prayers, pay Zakah and believe with certain faith in the Hereafter, the resurrection after death, reward and punishment for all deeds, good and bad, and Paradise and Hell.
This is like the Ayat:
قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ هُدًى وَشِفَأءٌ وَالَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ فِى ءَاذَانِهِمْ وَقْرٌ
Say:”It is for those who believe, a guide and a healing. And as for those who disbelieve, there is heaviness (deafness) in their ears…” (41:44)
لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنْذِرَ بِهِ قَوْماً لُّدّاً
that you may give glad tidings to those who have Taqwa, and warn with it the Ludd (most quarrelsome) people. (19:97)
Allah says here
27:4
اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ زَیَّنَّا لَہُمۡ اَعۡمَالَہُمۡ فَہُمۡ یَعۡمَہُوۡنَ ؕ﴿۴﴾
Indeed, for those who do not believe in the Hereafter, We have made pleasing to them their deeds, so they wander blindly.
إِنَّ الَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِالاْخِرَةِ
Verily, those who believe not in the Hereafter,
meaning, those who deny it and think that it will never happen,
زَيَّنَّا لَهُمْ أَعْمَالَهُمْ فَهُمْ يَعْمَهُونَ
We have made their deeds fair seeming to them, so that they wander about blindly.
means, `We have made what they are doing seem good to them, and We have left them to continue in their misguidance, so they are lost and confused.’
This is their recompense for their disbelief in the Hereafter, as Allah says:
وَنُقَلِّبُ أَفْيِدَتَهُمْ وَأَبْصَـرَهُمْ كَمَا لَمْ يُوْمِنُواْ بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ
And We shall turn their hearts and their eyes away, as they refused to believe therein for the first time. (6:110)
27:5
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَہُمۡ سُوۡٓءُ الۡعَذَابِ وَ ہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ ہُمُ الۡاَخۡسَرُوۡنَ ﴿۵﴾
Those are the ones for whom there will be the worst of punishment, and in the Hereafter they are the greatest losers.
أُوْلَيِكَ الَّذِينَ لَهُمْ سُوءُ الْعَذَابِ
They are those for whom there will be an evil torment.
in this world and the Hereafter.
وَهُمْ فِي الاْخِرَةِ هُمُ الاَْخْسَرُونَ
And in the Hereafter they will be the greatest losers.
means, no one but they, among all the people who will be gathered, will lose their souls and their wealth.
وَإِنَّكَ لَتُلَقَّى الْقُرْانَ مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ عَلِيمٍ
27:6
وَ اِنَّکَ لَتُلَقَّی الۡقُرۡاٰنَ مِنۡ لَّدُنۡ حَکِیۡمٍ عَلِیۡمٍ ﴿۶﴾
And indeed, [O Muhammad], you receive the Qur’an from one Wise and Knowing.
And verily, you are being taught the Qur’an from One, All-Wise, All-Knowing.
وَإِنَّكَ
(And verily, you), O Muhammad. Qatadah said:
لَتُلَقَّى
(are being taught) “Are receiving.”
الْقُرْانَ مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ عَلِيمٍ
the Qur’an from One, All-Wise, All-Knowing.
from One Who is Wise in His commands and prohibitions, and Who knows all things, major and minor. Whatever He says is absolute Truth, and His rulings are entirely fair and just, as Allah says:
وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقاً وَعَدْلاً
And the Word of your Lord has been fulfilled in truth and in justice. (6:115
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran