(বই#১০০৯) [প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্বাভাবিক উপায়াদি অবলম্বন করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৯)
[প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্বাভাবিক উপায়াদি অবলম্বন করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়।]
www.motaher21.net
সূরা:- আন-নমল।
পারা:১৯
৭-১৪ নং আয়াত:-
২৭:৭
اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِاَہۡلِہٖۤ اِنِّیۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا ؕ سَاٰتِیۡکُمۡ مِّنۡہَا بِخَبَرٍ اَوۡ اٰتِیۡکُمۡ بِشِہَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّکُمۡ تَصۡطَلُوۡنَ ﴿۷﴾
যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললো “আমি আগুনের মতো একটা বস্তু দেখেছি। এখনি আমি সেখান থেকে কোন খবর আনবো অথবা খুঁজে আনবো কোন অংগার, যাতে তোমরা উষ্ণতা লাভ করতে পারো।”
২৭:৮
فَلَمَّا جَآءَہَا نُوۡدِیَ اَنۡۢ بُوۡرِکَ مَنۡ فِی النَّارِ وَ مَنۡ حَوۡلَہَا ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۸﴾
অতঃপর সে যখন আগুনের নিকট এল তখন তাকে ডেকে বলা হল, ‘যে (এই) আগুনে এবং যারা ওর চারিপাশে আছে তারা বরকতপ্রাপ্ত, বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমার্নিত।
২৭:৯
یٰمُوۡسٰۤی اِنَّہٗۤ اَنَا اللّٰہُ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ۙ﴿۹﴾
‘হে মূসা! নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌ ! পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়,
২৭:১০
وَ اَلۡقِ عَصَاکَ ؕ فَلَمَّا رَاٰہَا تَہۡتَزُّ کَاَنَّہَا جَآنٌّ وَّلّٰی مُدۡبِرًا وَّ لَمۡ یُعَقِّبۡ ؕ یٰمُوۡسٰی لَا تَخَفۡ ۟ اِنِّیۡ لَا یَخَافُ لَدَیَّ الۡمُرۡسَلُوۡنَ ﴿٭ۖ۱۰﴾
তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন সে ওকে সাপের মত ছুটাছুটি করতে দেখল তখন পিছনে না তাকিয়ে সে বিপরীত দিকে ছুটতে লাগল। ‘হে মূসা! ভয় পেয়ো না; আমার কাছে তো রসূলরা ভয় পায় না।
২৭:১১
اِلَّا مَنۡ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسۡنًۢا بَعۡدَ سُوۡٓءٍ فَاِنِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱﴾
‘তবে যে যুলুম করে, [ষ তারপর তারপর মন্দ কাজের পরিবর্তে সৎকাজ করে, তাহলে নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২৭:১২
وَ اَدۡخِلۡ یَدَکَ فِیۡ جَیۡبِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ ۟ فِیۡ تِسۡعِ اٰیٰتٍ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَ قَوۡمِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ ﴿۱۲﴾
আর তোমার হাতটি একটু তোমার বক্ষস্থলের মধ্যে ঢুকাও তো, তা উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই। এ ন’টি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ফেরাউন ও তার জাতির কাছে (নিয়ে যাবার জন্য) তারা বড়ই বদকার।”
২৭:১৩
فَلَمَّا جَآءَتۡہُمۡ اٰیٰتُنَا مُبۡصِرَۃً قَالُوۡا ہٰذَا سِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۚ۱۳﴾
কিন্তু যখন আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের সামনে এসে গেলো তখন তারা বলল, এতো সুস্পষ্ট যাদু।
২৭:১৪
وَ جَحَدُوۡا بِہَا وَ اسۡتَیۡقَنَتۡہَاۤ اَنۡفُسُہُمۡ ظُلۡمًا وَّ عُلُوًّا ؕ فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿٪۱۴﴾
ওরা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলি প্রত্যাখ্যান করল, যদিও ওদের অন্তর এগুলিকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল। দেখ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল?

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

হযরত মূসার কাহিনীর এই সংক্ষিপ্ত অংশটা ‘তোমাকে কোরআন শেখানাে হচ্ছে….’ এই বক্তব্যটার পরে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ দ্বারা প্রকারান্তরে রসূল(স.)-কে বলা হচ্ছে যে, তােমাকেই প্রথম শেখানাে হচ্ছে না, ইতিপূর্বে হযরত মূসা(আ.)-কেও শেখানাে হয়েছে এবং তাকে ফেরাউনের কাছে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানাে হয়েছে, আর তােমার জাতি যে তােমাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে সেটাও নতুন নয়। হযরত মূসা(আ.)-এর জাতিও তাকে সত্যবাদী বলে বুঝতে পেরেও নিছক একগুয়েমি ও হঠকারিতা বলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাে। অতএব বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিলাে দেখাে।’ অর্থাৎ অস্বীকারকারীদের কী পরিণতি হয় তা দেখার জন্যে তােমার জাতি একটু অপেক্ষা করুক।  *মুসা(আ.)-এর সাথে আল্লাহর কথপােকথন : ‘যখন মূসা তার পরিবারকে বললো, আমি আগুন দেখেছি, আমি শিগগিরই তােমাদের কাছে এ সম্পর্কে কোনাে খবর নিয়ে আসবাে…'(আয়াত-৭) সূরা ত্ব-হাতে এই অংশটা এসেছে। সেখানে এই অংশটাকে হযরত মূসার মাদইয়ান থেকে মিসর প্রত্যাবর্তনের সময়কার ব্যাপার বলা হয়েছে। তখন তাঁর স্ত্রী হযরত শােয়বের কন্যা তার। সাথে ছিলেন।[এখানে এই মর্মে কোনাে অকাট্য উক্তি নেই যে, হযরত শােয়ায়েবই সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, যার চাকুরি করে হযরত মূসা তার কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন, তবে কেননা কোরআনের যেখানেই হযরত শোয়ায়েবের কিসসা আসে, সেখানে তার পরই হযরত মূসার কিসসা বর্ণিত হয়। এ থেকে মনে হয়, তাঁরা উভয়ে সমসাময়িক ছিলেন, কিংবা হযরত শােয়ায়েবের পরেই হযরত মূসা নবী হয়েছিলেন] এক হিমেল অন্ধকারময় রাতে তারা চলতে চলতে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এটা প্রমাণিত হয় তাঁর এ উক্তি থেকে, আমি শিগগিরই সে আগুনের জায়গা থেকে তােমাদের জন্যে কোনাে খবর আনতে পারব, অথবা তােমাদের জন্যে কোনাে জ্বলন্ত অংগার আনতে পারবাে, যাতে তােমরা আগুন পােহাতে পারাে। এই আগুনটা তুর পর্বতের দিকে দেখা যাচ্ছিলাে। তৎকালে নৈশকালীন পথচারীদের পথের সন্ধান দেয়ার উদ্দেশ্যে মরুভূমিতে উঁচু চিবির ওপর আগুন জ্বালানাে হতাে। আগুন দেখে পথচারীরা আগুনের কাছে আসতাে এবং সেখানে আগুন পােহায়ে খানিকটা চাংগা হতাে, কিছুটা আপ্যায়নও পেতো অথবা পথের সন্ধান পেতাে। আমি আগুন দেখেছি,’এটা হযরত মূসা(আ.)-এর উক্তি। তিনি দূর থেকে আগুন দেখেছিলেন এবং এই ভেবে আশান্বিত হয়েছিলেন যে, ওখানে গেলে পথের সন্ধান পাওয়া যাবে, নিদেনপক্ষে দু’এক টুকরাে জ্বলন্ত অংগার তাে নিয়ে আসা যাবে, যা দ্বারা মরুভূমিতে এই গভীর রাতে আগুন পােহায়ে তার পরিবার পরিজন চাংগা হতে পারবে। অতপর হযরত মূসা(আ.) যে আগুন দেখেছেন সেদিকে এগিয়ে গেলেন কোনাে খবর পাওয়ার আশায়, কিন্তু সেখানে যাওয়া মাত্রই সর্বোচ্চ মহিমাময়ের আওয়ায শুনতে পেলেন। আগুনের কাছে আসামাত্রই মূসাকে ডেকে বলা হলাে, ‘আগুনের ভেতরে ও আশপাশে যারা আছে, তাদের সকলের কল্যাণ হােক এবং বিশ্বজাহানের প্রভু মহিমান্বিত ও পবিত্র। এটা সেই ডাক, যার প্রতি সমগ্র প্রকৃতি সাড়া দেয়, সমগ্র আকাশ ও পৃথিবী যার সাথে একাত্ম হয়, সমগ্র সৃষ্টিজগত যার প্রতি বিনয়াবনত হয় এবং যে ডাকে প্রত্যেকের অন্তরাত্মা ও বিবেক শিহরিত রােমাঞ্চিত হয়। এটা সেই ডাক, যার মাধ্যমে আকাশ পৃথিবীর সাথে একাত্ম হয়, ক্ষুদ্র কণাও তার মহান স্রষ্টার আহ্বান লাভ করে এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহে দুর্বল ও মরণশীল মানুষ তার সাথে আলাপচারিতায় লিপ্ত হবার মতাে মর্যাদায় উন্নীত হয়। আগুনের কাছে আসামাত্রই মূসাকে ডেকে বলা হলাে ক্রিয়ার কর্তা সুপরিচিত হওয়া সত্তেও তা উহ্য রাখা হয়েছে। যিনি ডেকে বলছেন সেই মহান সত্ত্বার প্রতি সম্মান প্রদর্শনই এর উদ্দেশ্য। ‘ডেকে বলা হলাে যে, আগুনের ভেতরে ও আশেপাশে অবস্থানকারীর কল্যাণ হােক।’ প্রশ্ন হলাে, আগুনের ভেতরে ও আশেপাশে কে অবস্থান করছিলাে? সর্বাধিক অগ্রগণ্য মত এই যে, আমরা সচরাচর যে আগুন জ্বালাই, সে আগুন তা ছিলাে না। বরঞ্চ ওটা ছিলাে মানব জাতির দুনিয়া আখেরাতের সর্ববৃহৎ ও সর্বময় কল্যাণের পথ প্রদর্শনের জন্যে আল্লাহর ফেরেশতাদের আগুনের মতাে দেখা যাচ্ছিলাে এবং পবিত্র আত্মা ফেরেশতারাই তার ভেতরে ছিলেন। আর পাশে ছিলেন হযরত মুসা। কল্যাণ হােক’ কথাটার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বরকত ও কল্যাণের ধারা ফেরেশতা এবং হযরত মুসা(আ.)-এর ওপর বর্ষণের ঘােষণা দেয়া হলাে। আর সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতি এই মহান দানকে লিপিবদ্ধ করে রাখলাে। সেই থেকে এই পূণ্যময় ভূখন্ডটা প্রকৃতির খাতায় কল্যাণময় ও পবিত্র ভূখন্ড হিসেবে লিখিত হয়ে রইলো। আল্লাহর জ্যোতি তার ওপর বিচ্ছুরিত হতে থাকলাে এবং তা সর্বোচ্চ কল্যাণ ও বরকতের আধার হয়ে বিরাজ করতে লাগলো। সমগ্র সৃষ্টিজগত মহান আল্লাহর অবশিষ্ট ঘোষণাটা শুনলাে, আর বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র। ‘হে মূসা, ও ঘােষণাদানকারী আমি, মহাপরাক্রমশালী মহাকুশলী আল্লাহ।’ আল্লাহ নিজ সত্ত্বাকে যাবতীয় কলুষ কালিমা থেকে মুক্ত ও নিজেকে সমগ্র বিশ্ব জাহানের প্রভু ঘোষণা করলেন এবং তার বান্দাকে জানালেন, যে গায়েবী আওয়ায তুমি শুনতে পাচ্ছো ওটা মহান আল্লাহরই আওয়ায। এখানে সমগ্র মানব জাতি হযরত মূসা(আ.)-এর ব্যক্তিসত্ত্বার মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠলাে সেই মহমান্বিত ও জ্যোতির্ময় প্রেক্ষাপটে হযরত মূসা(আ.) যে আগুন দেখেছিলেন তার কাছে গিয়ে খবর একটা পেলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা ছিলাে অতীব গুরুত্বপূর্ণ খবর। অঙ্গার একটা পেলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা ছিলাে সরল সােজা ও সত্য পথের সন্ধানদানকারী হেদায়াতের মশাল। যে আওয়াজটা শােনা গিয়েছিলাে তা ছিলাে হযরত মূসা(আ.)-কে নবীরূপে বরণ করে নেয়ার ঘােষণা। আর এই বরণ করার উদ্দেশ্য ছিলাে হেদায়াতের বাণীসহ সেকালের পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাচারী রাজার কাছে তাকে প্রেরণ করা। তাই তার প্রতিপালক তাকে প্রস্তুত করতে এবং শক্তি সাহস যােগাতে শুরু করলেন, ‘আর তুমি তােমার লাঠিটা ছুঁড়ে মারো।’ এখানে ঘটনাটা সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে। সূরা ত্ব-হাতে হযরত মূসা(আ.)-এর সাথে আল্লাহর যে দীর্ঘ সংলাপ উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা এখানে করা হয়নি। কেননা যে শিক্ষাটা দেয়া এখানে উদ্দেশ্যে, তা হলাে, হযরত মূসাকে ইসলামের দাওয়াত ও প্রচারের দায়িত্বের শিক্ষা দান। যখন মূসা লাঠিকে সাপের মতাে ছুটাছুটি করতে দেখলাে, তখন পেছন ফিরে পালালাে, ফিরেও তাকালাে না। আল্লাহর নির্দেশ মােতাবেক হযরত মূসা(আ.) লাঠি ছুঁড়ে মারতেই তা জান নামক ক্ষুদ্রাকৃতির অথচ দ্রুতগামী সাপের ন্যায় জোরে জোরে দৌড়াতে লাগলাে। হযরত মূসা ছিলেন কিছুটা ভীরু স্বভাবের। তাই তিনি অভাবিত এই আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে গেলেন এবং সাপ থেকে এমনভাবে দূরে ছুটতে লাগলেন যেন ফিরে আসার চিন্তাও করছেন না। এটা এমন এক ধরনের আচরণ, যা হযরত মূসা(আ.)-এর স্বভাবের লোকদের মধ্যে প্রচন্ড আকশ্মিক আতংক ফুটিয়ে তােলে। অতপর আল্লাহ তায়ালা মুসা(আ.)-কে আশ্বস্ত করার জন্যে সম্বোধন করলেন এবং তাকে অচিরেই যে দায়িত্ব দেয়া হবে, তার প্রকৃতি জানিয়ে দিলেন, ‘হে মূসা, ভয় পেয়াে না। আমার কাছে রাসূলের ভয় পায় না।’ অর্থাৎ ভয় পেয়াে না। কারণ তুমি রসূল। আর রসূলরা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে ভয় পায় না। কিন্তু শুধু তারা, যারা অন্যায় করেছে, অতপর খারাপের পর ভালাে কাজ দিয়ে তা পরিবর্তন করেছে। ‘আমি তাদের জন্যে ক্ষমাশীল দয়ালু।’ অর্থাৎ ভয় পায় শুধু তারাই যারা অন্যায় করেছে, আর অন্যায় অত্যাচারের পর ভালাে কাজ করেছে, অত্যাচারকে সুবিচারে, শিরককে ঈমানে এবং অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণত করেছে, তাদের জন্যে আমার ক্ষমা ও দয়া সুপ্রশস্ত। এবার হযরত মুসা(আ.) কিছুটা আশ্বস্ত ও শান্ত হলেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্বিতীয় মােজেযা দিয়ে প্রস্তুত করলেন, কিন্তু তখনাে তিনি হযরত মূসাকে জানাননি কোথায় গিয়ে তাকে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্বিতীয় মােজেযাটা ছিলে, তােমার হাত তােমার পকেটে ঢুকাও, (দেখবে) হাত সাদা হয়ে বেরিয়ে আসবে, কিন্তু সেটা কোনাে অত ব্যাপার হবে না।’ সত্যিই এরূপ ঘটেছিলাে। হযরত মূসা (আ.) তার হাত পকেটে ঢুকালেন। অমনি হাত সাদা হয়ে বেরুলাে। এটা কোনাে রােগব্যাধির কারণে হয়নি। এটা ছিলাে একটা মােজেযা। এ ধরনের নয়টা মোজেযা দিয়ে তার শক্তি বৃদ্ধি করবেন বলে আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই নয়টার মধ্য হতে দুটো হলাে অলৌকিক লাঠি এবং হাত। এই পর্যায়ে আল্লাহ হযরত মূসা(আ.)-কে কী উদ্দেশ্যে ডেকেছেন এবং প্রস্তুত করেছেন, তা জানালেন। নয়টা মােজেযার অন্যতম যা ফেরাউন ও তার জাতির প্রতি পাঠানাে হয়েছিলাে, সে দুটো ছিলাে মূসা(আ.)-এর লাঠি ও তার শুভ্র হাত। এ দুটো মােজেযাসহ তাতে পাঠাতে ফেরাউন ও তার জাতি গােষ্ঠী সম্পর্কে বলে দেয়া হলাে। তারা ফাসেক গােষ্ঠী। এখানে অবশিষ্ট সাতটা মােজেযার উল্লেখ করা হয়নি, সূরা আরাফে করা হয়েছে। সেগুলাে হলাে, দুর্ভিক্ষ, ফসলহানি, বন্যা, পংগপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। এখানে সে সাতটার উল্লেখ না করার কারণ এই যে, এখানে আল্লাহর উদ্দেশ্য শুধু মােজেযার শক্তি, স্পষ্টতা ও ফেরাউনের গােষ্ঠী কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যানের বিবরণদান। ‘অতপর যখন আমার নিদর্শনগুলাে আসলাে, তখন তারা বললাে, এ তাে হচ্ছে প্রকাশ্য যাদু'(আয়াত ১৩,১৪) এই মেসেজগুলা এতে স্পষ্ট ও সত্য উদঘাটক ছিলাে যে, চক্ষুষ্মান ব্যক্তিমাত্রই তা দেখতে পেতাে। এই নিদর্শনগুলাে নিজেকে প্রদর্শনকারী বলে আখ্যায়িত করেছে। কেননা এগুলাে মানুষকে পথ প্রদর্শন ও হেদায়াতের দিকে আকৃষ্ট করতাে। তথাপি তারা বললাে, এটা তাে প্রকাশ্য যাদু।’ এ কথাটা তারা নিশ্চিত হয়ে বা সন্দেহের বশে নয়, বরং হঠকারিতা ও যুলুমবশত বলতাে, অথচ তাদের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস ছিলাে যে, এগুলাে সত্য। তাদের মন এগুলােকে সত্য বলে জানতাে।’ তাহলে তারা কেন বললাে, বললাে নিছক হঠকারিতা ও দম্ত প্রকাশের নিমিত্ত। কারণ তারা ঈমান আনতেই চায়নি, তাই তারা কোনাে সাক্ষ্য প্রমাণেরও দাবী জানায়নি। কারণ তারা নিজেদের সত্যের উর্ধ্বে মনে করতাে এবং এভাবে সত্যের প্রতি ও নিজেদের প্রতি যুলুম করতাে। কোরায়শ নেতারাও কোরআনকে এভাবেই গ্রহণ করতাে। একে নিশ্চিতভাবে সত্য জেনেও অস্বীকার করতাে এবং রসূল(স.) তাদের এক আল্লাহর এবাদাতের যে দাওয়াত দিতেন, তাও প্রত্যাখ্যান করতাে। কারণ যে সমাজ ব্যবস্থার অধীন তারা জীবন যাপন করতাে এবং যেসব কায়েমী স্বার্থ তাদের পৃষ্ঠপােষকতা করতাে, সেগুলােকে তারা তাদের জীবনদর্শন অনুসারে টিকিয়ে রাখতে চাইতাে। এই সমাজ ব্যবস্থা ও কায়েমী স্বার্থ সবটাই টিকেছিলাে বাতিল আকীদা বিশ্বাসের ওপর। তাই ইসলামী দাওয়াতের ফলে এগুলাে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে তারা আশংকা করতাে। তাদের পায়ের নীচের মাটি কাঁপছে বলে তারা অনুভব করতাে। তাদের বিবেক প্রবলভাবে আলােড়িত হতাে এবং সুস্পষ্ট সত্যের হাতুড়ি ভিত্তিহীন বাতিলকে ভেংগে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়ার উপক্রম করতাে। সত্য অস্বীকারকারীরা তা এ জন্যে অস্বীকার করে না যে, তারা একে চেনে না; বরং সত্যকে চেনে বলেই অস্বীকার করে। সত্য সম্পর্কে তাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান থাকার কারণেই তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। কেননা তারা এতে নিজেদের ও নিজেদের সমাজ ব্যবস্থা এবং কায়েমী স্বার্থের নিশ্চিত ধ্বংস দেখতে পেতাে। তাই তারা চরম হঠকারিতার সাথে সত্য প্রতিহত করতে সচেষ্ট হতাে, যা সুস্পষ্ট ও অকাট্য। ‘অতএব দেখে নাও। নৈরাজ্যবাদীদের কী পরিণতি হয়। ফেরাউন ও তার জাতির পরিণতি সুবিদিত। কোরআনের অন্যান্য সূরায় তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শুধু ইংগিত করেই ক্ষান্ত থেকেছে। হয়তাে এটুকুই ইসলাম অস্বীকারকারীদের চেতনা সঞ্চারে যথেষ্ট হবে। ফেরাউন ও তার সাংগ-পাংগদের ধ্বংসের পরিণতি হয়তােবা নব্য নৈরাজ্যবাদীদের একই পরিণতির সম্মুখীন হবার আগে সচকিত করে তুলতে সক্ষম হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এটা তখনকার ঘটনা যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মাদয়ানে আট দশ বছর অবস্থান করার পর নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন বাসস্থানের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। মাদয়ান এলাকাটি ছিল আকাবা উপসাগরের তীরে আরব ও সিনাই উপদ্বীপের উপকূলে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আশ্ শু’আরা, ১১৫ টীকা) সেখান থেকে যাত্রা করে হযরত মূসা সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশে পৌঁছেন। এ অংশের যে স্থানটিতে তিনি পৌঁছেন বর্তমানে তাকে সিনাই পাহাড় ও মূসা পর্বত বলা হয়। কুরআন নাযিলের সময় এটি তুর নামে পরিচিত ছিল। এখানে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে সেটি এরই পাদদেশে সংঘটিত হয়েছিল।

এখানে যে ঘটনাটি বর্ণনা করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ ইতিপূর্বে সূরা “ত্বা-হা”-এর প্রথমে রুকূ’ তে) উল্লিখিত হয়েছে এবং সামনের দিকে সূরা কাসাসেও ( চতুর্থ রুকূ’ ) আসছে।
# আলোচনার প্রেক্ষাপট থেকে মনে হয় যে, এটা ছিল শীতকালের একটি রাত। হযরত মূসা একটি অপরিচিত এলাকা অতিক্রম করছিলেন। এ এলাকার ব্যাপারে তাঁর বিশেষ জানা-শোনা ছিল না। তাই তিনি নিজের পরিবারের লোকদের বললেন, আমি সামনের দিকে গিয়ে একটু জেনে আসি আগুন জ্বলছে কোন্ জনপদে, সামনের দিকে পথ কোথায় কোথায় গিয়েছে এবং কাছাকাছি কোন্ কোন্ জনপদ আছে। তবুও যদি দেখা যায়, ওরাও আমাদের মত চলমান মুসাফির যাদের কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না, তাহলেও অন্ততপক্ষে ওদের কাছ থেকে একটু অংগার তো আনা যাবে। এ থেকে আগুন জ্বালিয়ে তোমরা উত্তাপ লাভ করতে পারবে।

হযরত মূসা (আ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খৃস্টান বাদশাহ কনষ্টানটাইন ৩৬৫ খৃস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ঠিক যে জায়গায় এ ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে একটি গীর্জা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। এর দু’শো বছর পরে সম্রাট জাষ্টিনিয়ান এখানে একটি আশ্রম (Monasterery) নির্মাণ করেন। কনষ্টান্টাইনের গীর্জাকেও এর অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ আশ্রম ও গীর্জা আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। এটি গ্রীক খৃস্টীয় গীর্জার (Greek Orthoox Church) পাদরী সমাজের দখলে রয়েছে। আমি ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাসে এ জায়গাটি দেখি। পাশের পাতায় এ জায়গার কিছু ছবি দেয়া হলো। ( এই এ্যাপের হোমস্ক্রীণে মানচিত্র অধ্যায় দেখুন)

# সূরা কাসাসে বলা হয়েছে, আওয়াজ আসছিল একটি বৃক্ষ থেকেঃ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ এ থেকে ঘটনাটির যে দৃশ্য সামনে ভেসে ওঠে তা হচ্ছে এই যে, উপত্যাকার এক কিনারে আগুনের মতো লেগে গিয়েছিল কিন্তু কিছু জ্বলছিল না এবং ধোঁয়াও উড়ছিল না। আর এ আগুনের মধ্যে একটি সবুজ শ্যামল গাছ দাঁড়িয়েছিল। সেখান থেকে সহসা এ আওয়াজ আসতে থাকে।

আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সাথে এ ধরণের অদ্ভূত ব্যাপার ঘটা চিরাচরিত ব্যাপার। নবী ﷺ যখন প্রথম বার নবুওয়াতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন তখন হেরা গিরিগূহায় একান্ত নির্জনে সহসা একজন ফেরেশতা আসেন। তিনি তাঁর কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাতে থাকেন। হযরত মূসার ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটে। এক ব্যক্তি সফর কালে এক জায়গায় অবস্থান করছেন। দূর থেকে আগুন দেখে পথের সন্ধান নিতে বা আগুন সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে আসেন। অকস্মাৎ সকল প্রকার আন্দাজ অনুমানের ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী স্বয়ং আল্লাহ‌ তাঁকে সম্বোধন করেন। এসব সময় আসলে এমন একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বাইরেও এবং নবীগণের মনের মধ্যেও বিরাজমান থাকে যার ভিত্তিতে তাঁদের মনে এরূপ প্রত্যয় জন্মে যে, এটা কোন জিন বা শয়তানের কারসাজী অথবা তাদের নিজেদের কোন মানসিক ভাবান্তর নয় কিংবা তাঁদের ইন্দ্রিয়ানুভূতিও কোন প্রকার প্রতারিত হচ্ছে না বরং প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভু অথবা তাঁর ফেরেশতাই তাঁদের সাথে কথা বলছেন। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আন নাজম, ১০ নং টীকা )

# এ অবস্থায় “পাক-পবিত্র আল্লাহ” বলার মাধ্যমে আসলে হযরত মূসাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে যে, বিভ্রান্ত চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েই এ ঘটনাটি ঘটছে। অর্থাৎ এমন নয় যে, আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীন এ গাছের ওপর বসে আছেন অথবা এর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এসেছেন কিংবা তাঁর একচ্ছত্র নূর তোমাদের দৃষ্টিসীমায় বাঁধা পড়েছে বা কারো মুখে প্রবিষ্ট কোন জিহ্বা নড়াচড়া করে এখানে কথা বলছে। বরং এ সমস্ত সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন থেকে সেই সত্তা নিজেই তোমার সাথে কথা বলছেন।
# সূরা আ’রাফে ও সূরা শু’আরাতে এজন্য ثُعْبَانٌ (অজগর) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে একে جَانٌّ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। “জান” শব্দটি বলা হয় ছোট সাপ অর্থে। এখানে “জান” শব্দ ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এই যে, দৈহিক দিক দিয়ে সাপটি ছিল অজগর কিন্তু তার চলার দ্রুততা ছিল ছোট সাপদের মতো। সূরা তা-হা-য় حَيَّةٌ تَسْعَى (ছুটন্ত সাপ) এর মধ্যেও এ অর্থই বর্ণনা করা হয়েছে।
# আমার কাছে রসূলদের ক্ষতি হবার কোন ভয় নেই। রিসালাতের মহান মর্যাদায় অভিসিক্ত করার জন্য যখন আমি কাউকে নিজের কাছে ডেকে আনি তখন আমি নিজেই তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে থাকি। তাই যে কোন প্রকার অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেও রসুলকে নির্ভীক ও নিশ্চিন্ত থাকা উচিত। আমি তার জন্য কোন প্রকার ক্ষতিকারক হবো না।
# আরবী ব্যাকরণের সূত্র অনুসারে এ বাক্যাংশের দু’রকম অর্থ হতে পারে। প্রথম অর্থ হলো, ভয়ের কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ যদি থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে, রসূল কোন ভুল করেছেন। আর দ্বিতীয় অর্থ হলো, যতক্ষণ কেউ ভুল না করে ততক্ষণ আমার কাছে তার কোন ভয় নেই।
# অপরাধকারীও যদি তওবা করে নিজের নীতি সংশোধন করে নেয় এবং খারাপ কাজের জায়গায় ভাল কাজ করতে থাকে, তাহলে আমার কাছে তার জন্য উপেক্ষা ও ক্ষমা করার দরজা খোলাই আছে। প্রসঙ্গক্রমে একথা বলার উদ্দেশ্য ছিল একদিকে সতর্ক করা এবং অন্যদিকে সুসংবাদ দেয়াও। হযরত মূসা আলাইহিমুস সালাম অজ্ঞতাবশত একজন কিবতীকে হত্যা করে মিসর থেকে বের হয়েছিলেন। এটি ছিল একটি ত্রুটি। এদিকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়। এ ত্রুটিটি যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল তখন তিনি পরক্ষণেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এই বলেঃ

رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي

“হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমাকে মাফ করে দাও।”

আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে মাফ করে দিয়েছিলেনঃ فغفرله আল্লাহ‌ তাঁকে মাফ করে দিলেন। (আল কাসাস, ১৬) এখানে সেই ক্ষমার সুসংবাদ তাঁকে দেয়া হয়। অর্থাৎ এ ভাষণের মর্ম যেন এই দাঁড়ালোঃ হে মূসা! আমার সামনে তোমার ভয় পাওয়ার একটি কারণ তো অবশ্যই ছিল। কারণ তুমি একটি ভুল করেছিলে। কিন্তু তুমি যখন সেই দুষ্কৃতিকে সুকৃতিতে পরিবর্তিত করেছো তখন আমার কাছে তোমার জন্য মাগফিরাত ও রহমত ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন আমি তোমাকে কোন শাস্তি দেবার জন্য ডেকে পাঠাইনি বরং বড় বড় মু’জিযা সহকারে তোমাকে এখন আমি একটি মহান দায়িত্ব সম্পাদনে পাঠাবো।
# সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হয়েছে মূসাকে আমি সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এমন ধরনের নয়টি নিদর্শন تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ)) দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। সূরা আ’রাফে এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
(১) লাঠি, যা অজগর হয়ে যেতো
(২) হাত, যা বগলে রেখে বের করে আনলে সূর্যের মতো ঝিকমিক করতো।
(৩) যাদুকরদের প্রকাশ্য জনসমক্ষে পরাজিত করা
(৪) হযরত মূসার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়া।
(৫) বন্যা ও ঝড়
(৬) পংগপাল
(৭) সমস্ত শস্য গুদামে শস্যকীট এবং মানুষ-পশু নির্বিশেষে সবার গায়ে উকুন।
(৮) ব্যাঙয়ের আধিক্য
(৯) রক্ত। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আয্ যুখরুফ, ৪৩ টীকা )
# কুরআনের অন্যান্য স্থানে বলা হয়েছে যে, যখন মূসা আলাইহিস সালামের ঘোষণা অনুযায়ী মিসরের উপর কোন সাধারণ বালা-মুসীবত নাযিল হতো তখন ফেরাউন মূসাকে বলতো, আপনার আল্লাহর কাছে দোয়া করে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন তারপর আপনি যা বলবেন তা মেনে নেবো। কিন্তু যখন সে বিপদ সরে যেতো তখন ফেরাউন আবার তার আগের হঠকারিতায় ফিরে যেতো। ( সূরা আ’রাফ, ১৩৪ এবং আয্ যুখরুফ, ৪৯-৫০ আয়াত) তাছাড়া এমনিতেও একটি দেশের সমগ্র এলাকা দুর্ভিক্ষ, বন্যা ও ঘূর্ণি কবলিত হওয়া, সারা দেশের উপর পংগপাল ঝাঁপিয়ে পড়া এবং ব্যাং ও শস্যকীটের আক্রমণ কোন যাদুকরের তেলসমাতি হতে পারে বলে কোনক্রমেই ধারণা করা যেতে পারে না। এগুলো এমন প্রকাশ্য মু’জিযা ছিল যেগুলো দেখে একজন নিরেট বোকাও বুঝতে পারতো যে, নবীর কথায় এ ধরনের দেশ ব্যাপী বালা-মুসীবতের আগমন এবং আবার তাঁর কথায় তাদের চলে যাওয়া একমাত্র আলাহ রব্বুল আলামীনেরই হস্তক্ষেপের ফল হতে পারে। এ কারণে মূসা ফেরাউনকে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেনঃ

لَقَدْ عَلِمْتَ مَا أَنْزَلَ هَؤُلَاءِ إِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ

“তুমি খুব ভালো করেই জানো, এ নিদর্শনগুলো পৃথিবী ও আকাশের মালিক ছাড়া আর কেউ নাযিল করেনি।” (বনী ইসরাঈল, ১০২)

কিন্তু যে কারণে ফেরাউন ও তার জাতির সরদাররা জেনে বুঝে সেগুলো অস্বীকার করে তা এই ছিলঃ

أَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُونَ –

“আমরা কি আমাদের মতই দু’জন লোকের কথা মেনে নেবো, অথচ তাদের জাতি আমাদের গোলাম?” (আল মু’মিনূন, ৪৭)

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৭-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

মূসা (عليه السلام) দীর্ঘদিন মাদইয়ানে অবস্থান করার পর যখন মিশরের উদ্দেশ্যে স্বস্ত্রীক রওনা দিলেন তখন পথিমধ্যে রাত হয়ে যায়, ফলে তারা পথ হারিয়ে ফেলেন, আর তখন ছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তাই মূসা (عليه السلام) স্ত্রীকে লক্ষ্য করে আয়াতে উল্লিখিত কথা বললেন। মূসা (عليه السلام) সেখানে গেলে আল্লাহ তা‘আলা ডাক দিলেন এবং উল্লিখিত কথা বললেন। এর মাধ্যমে মূসা (عليه السلام)-এর নবুওয়াত ও আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা বলা শুরু হয়। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফ ও সূরা ত্ব-হা-র ৯-১৪ নং আয়াতে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, সূরা কাসাসের ৩৯-৩১ নং আয়াতসহ অন্যান্য স্থানেও আলোচনা করা হবে ইনশা-আল্লাহ।

(وَجَحَدُوْا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَآ أَنْفُسُهُمْ)

‘তারা অন্যায় ও ঔদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল’ অর্থাৎ তারা যখন মূসা (عليه السلام)-এর আনীত নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করল তখন দৃঢ়ভাবে জানতে পারল যে, মূসা (عليه السلام) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সত্য ও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন। কিন্তু তারপরেও তারা অন্যায় ও ঔদ্ধত্যতাবশত অস্বীকার করল। সুতরাং সত্যকে জানার পরেও অহংকার, অন্যায় ও ঔদ্ধত্যতাবশত অস্বীকার করা কুফরী কাজ। সত্যকে চেনা ও জানার পরেও অস্বীকার করলে জাহান্নাম ছাড়া কোন পথ নেই।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্বাভাবিক উপায়াদি অবলম্বন করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়।
২. সাধারণ মজলিসে নির্দিষ্ট করে স্ত্রীর আলোচনা না করা, বরং ইশারা-ইঙ্গিতে বলা উত্তম।
৩. সত্যকে জানার পরেও অস্বীকার করা হারাম।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৭-১৪ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় প্রিয় পাত্র হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে হযরত মূসা (আঃ)-এর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি হযরত মূসা (আঃ)-কে মর্যাদাসম্পন্ন নবী বানিয়েছিলেন, তার সাথে কথা বলেছিলেন, তাঁকে বড় বড় মু’জিযা দান করেছিলেন এবং ফিরাউন ও তার লোকদের কাছে তাঁকে নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু ঐ কাফিরের দল তাকে অস্বীকার করে। তারা কুফরী ও অহংকার করে এবং তাঁর অনুসরণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

মহান আল্লাহ বলেন যে, যখন হযরত মূসা (আঃ) নিজের পরিবারবর্গকে নিয়ে চলছিলেন তখন তিনি পথ ভুলে যান। রাত্রি এসে পড়ে এবং চতুর্দিক ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যায়। একদিকে তিনি অগ্নিশিখা দেখতে পান। তখন তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে বলেনঃ “তোমরা এখানে অবস্থান কর। আমি ঐ আলোর দিকে যাচ্ছি। হয়তো সেখানে কেউ রয়েছে, তার কাছে পথ জেনে নেবো, অথবা সেখান হতে কিছু আগুন নিয়ে আসবো। যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। হলোও তাই। সেখান হতে তিনি একটি বড় খবর আনলেন এবং বড় একটা নূর (জ্যোতি) লাভ করলেন।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, যখন হযরত মূসা (আঃ) ঐ আলোর নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি সেখানকার দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি একটি সবুজ রং গাছ দেখলেন যার উপর আগুন জড়িয়ে রয়েছে। অগ্নিশিখা প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে এবং গাছের শ্যামলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরের দিকে তাকিয়ে তিনি দেখতে পান যে, ঐ নূর আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ওটা আগুন ছিল না। বরং জ্যোতি ছিল। সেটা আবার ছিল বিশ্বপ্রতিপালক এক ও শরীকবিহীন আল্লাহর। হযরত মূসা (আঃ) অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন এবং তিনি কোন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। হঠাৎ শব্দ আসলোঃ ধন্য সে ব্যক্তি যে আছে এই অগ্নির মধ্যে এবং যারা আছে ওর চতুষ্পর্শ্বে (অর্থাৎ ফেরেশতামণ্ডলী)।

হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ নিদ্রা যান না এটা তার জন্যে উপযুক্ত নয়। তিনি দাঁড়িপাল্লাকে নীচে নামিয়ে দেন এবং উঁচু করে থাকেন। রাত্রির কাজ দিনের পূর্বেই এবং দিনের কাজ রাত্রির পূর্বেই তাঁর নিকট উঠে যায়। (এ হাদীসটি মুসনাদে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে) “তার পর্দা হলো জ্যোতি অথবা অগ্নি। যদি ওটা সরে যায় তবে তার চেহারার তাজাল্লীতে ঐ সমুদয় জিনিস পুড়ে যাবে যেগুলোর উপর তাঁর দৃষ্টি পড়বে (অর্থাৎ সারা জগত)।” এটুকু মাসঊদী (রঃ) বেশী করেছেন। এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবু উবাইদাহ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করার(আরবি) এ আয়াতটিই পাঠ করেন।

জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। তিনি যা চান তা-ই করে থাকেন। তাঁর সৃষ্টের মধ্যে তাঁর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কেউই নেই। তিনি সমুচ্চ ও মহান। তিনি সমুদয় সৃষ্ট হতে পৃথক। যমীন ও আসমান তাকে পরিবেষ্টন করতে পারে না। তিনি এক, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি মাখলুকের সঙ্গে তুলনীয় হওয়া হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।

এরপর আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি হযরত মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে মূসা (আঃ)! আমি তো আল্লাহ, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “হে মূসা (আঃ)! তুমি তোমার হাতের লাঠিখানা যমীনে ফেলে দাও যাতে তুমি স্বচক্ষে দেখতে পাও যে, আল্লাহ তাআলা স্বেচ্ছাচারী এবং তিনি সবকিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান।” আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ শ্রবণ মাত্রই হযরত মূসা (আঃ) তাঁর লাঠিখানা মাটিতে ফেলে দেন। তৎক্ষণাৎ লাঠিখানা এক বিরাট সাপ হয়ে যায় এবং চলতে ফিরতে শুরু করে। লাঠিকে এরূপ বিরাট জীবন্ত সাপ হতে দেখে হযরত মূসা (আঃ) ভীত হয়ে পড়েন। কুরআন কারীমে (আরবি) শব্দ রয়েছে, এটা হলো এক প্রকার সাপ যা অতি দ্রুত চলতে পারে এবং খুবই ভয়াবহ হয়ে থাকে। একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঘরে অবস্থানকারী সাপকে মেরে ফেলতে নিষেধ করেছেন।

মোটকথা, হযরত মূসা (আঃ) ঐ সাপ দেখে ভীত হয়ে পড়েন এবং ভয়ের কারণে স্থির থাকতে পারেননি, বরং পিঠ ফিরিয়ে সেখান হতে পালাতে শুরু করেন। তিনি এতো ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন যে, একবার মুখ ঘুরিয়েও দেখেননি। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তা’আলা ডাক দিয়ে বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)! ভীত হয়ো না। আমি তো তোমাকে আমার মনোনীত রাসূল ও মর্যাদা সম্পন্ন নবী বানাতে চাই। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তবে যারা যুলুম করার পর মন্দকর্মের পরিবর্তে সৎ কর্ম করে তাদের প্রতি আমি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” এখানে হয়েছে। এই আয়াতে মানুষের জন্যে বড়ই সুসংবাদ রয়েছে। যে কেউই কোন অন্যায় ও মন্দ কাজ করবে, অতঃপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ঐ কাজ ছেড়ে দেবে ও খাটি অন্তরে তাওবা করবে এবং আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা ককূল করে নিবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি ঐ ব্যক্তির উপর অত্যন্ত ক্ষমাশীল যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে অতঃপর হিদায়াত লাভ করে।” (২০:৮২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করে অথবা নিজের নফসের উপর যুলুম করে।” (৪:১১০) এই বিষয়ের আয়াত বহু রয়েছে।

লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া একটি মুজিযা, এর সাথে সাথে হযরত মূসা (আঃ)-কে আর একটি মু’জিযা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবী হযরত মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তোমার হাত তোমার বক্ষপার্শ্বে বস্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করাও, তাহলে এটা বের হয়ে আসবে শুভ্র নির্দোষ হয়ে। এটা ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্তর্গত, যেগুলো দ্বারা আমি সময়ে সময়ে তোমার পৃষ্ঠপোষকতা করবো, যাতে তুমি সত্যত্যাগী ফিরাউন ও তার কওমের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পার ।

এ নয়টি মু’জিয়া এগুলোই ছিল যেগুলোর বর্ণনা, (আরবি) (১৭: ১০১) এই আয়াতে রয়েছে যার পূর্ণ তাফসীর ওখানেই গত হয়েছে।

যখন এই সুস্পষ্ট ও প্রকাশমান মু’জিযাগুলো ফিরাউন ও তার লোকদেরকে দেখানো হলো তখন তারা হঠকারিতা করে বললোঃ “এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। আমরা তোমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাবার জন্যে আমাদের বড় বড় যাদুকরদেরকে আহ্বান করছি। যাদুকরদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো। আল্লাহ তা’আলা সত্যকে জয়যুক্ত করলেন এবং ঐ হঠকারিদের সবকিছুই ব্যর্থ হয়ে গেল। তবুও তারা। বাহ্যিক মুকাবিলা হতে সরলো না। শুধু যুলুম ও ফখরের উপর ভিত্তি করেই তারা সত্যকে অবিশ্বাস করতে থাকলো।

মহান আল্লাহ বলেনঃ দেখো, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কতই না। বিস্ময়কর ও শিক্ষামূলক হয়েছিল। একই বারে একই সাথে সবাই তারা সমদে নিমজ্জিত হয়েছিল। সুতরাং হে শেষ নবী (সঃ)-কে অবিশ্বাসকারীর দল! তোমরা এই নবী (সঃ)-কে অবিশ্বাস করে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে বসো না। কেননা, এই নবী (সঃ) তো হযরত মূসা (আঃ) অপেক্ষাও উত্তম ও শ্রেষ্ঠতর। তার দলীল প্রমাণাদি ও মু’জিযাগুলোও হযরত মূসা (আঃ)-এর মু’জিযাগুলো অপেক্ষা বড় এবং মযবূত। স্বয়ং তাঁর ঐ অস্তিত্ব, তাঁর স্বভাব চরিত্র, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের এবং পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) তাঁর সম্পর্কে শুভ সংবাদ ও তাঁদের নিকট হতে তার জন্য আল্লাহ তা’আলার ওয়াদা অঙ্গীকার গ্রহণ ইত্যাদি সবকিছুই তার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে না মেনে নির্ভয়ে থাকবে এটা মোটেই উচিত নয়।

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1009)
[We should find the means :-]
www.motaher21.net
Sura:27
Para:19
Sura: An-Noml
Ayat: 7-14

27:7

اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِاَہۡلِہٖۤ اِنِّیۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا ؕ سَاٰتِیۡکُمۡ مِّنۡہَا بِخَبَرٍ اَوۡ اٰتِیۡکُمۡ بِشِہَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّکُمۡ تَصۡطَلُوۡنَ ﴿۷﴾

[Mention] when Moses said to his family, “Indeed, I have perceived a fire. I will bring you from there information or will bring you a burning torch that you may warm yourselves.”

 

The Story of Musa and the End of Fir`awn

Here Allah tells His Messenger Muhammad about what happened to Musa, peace be upon him, how Allah chose him, spoke with him and gave him mighty, dazzling signs and overwhelming proof, and sent him to Fir`awn and his people, but they denied the proof, disbelieved in him and arrogantly refused to follow him.

Allah says:

إِذْ قَالَ مُوسَى لاَِهْلِهِ

when Musa said to his household,

meaning, remember when Musa was traveling with his family and lost his way. This was at night, in the dark. Musa had seen a fire beside the mountain, i.e., he had noticed a fire burning brightly, and said,

لاِأَهْلِهِ إِنِّي انَسْتُ نَارًا سَأتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ

to his household:”Verily, I have seen a fire; I will bring you from there some information…”

meaning, `about the way we should take.’

أَوْ اتِيكُم بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ

or I will bring you a burning ember, that you may warm yourselves.

meaning, so that they could keep warm. And it was as he said:

“He came back with great news, and a great light.”

Allah says

27:8

فَلَمَّا جَآءَہَا نُوۡدِیَ اَنۡۢ بُوۡرِکَ مَنۡ فِی النَّارِ وَ مَنۡ حَوۡلَہَا ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۸﴾

But when he came to it, he was called, “Blessed is whoever is at the fire and whoever is around it. And exalted is Allah, Lord of the worlds.

 

فَلَمَّا جَاءهَا نُودِيَ أَن بُورِكَ مَن فِي النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَا

But when he came to it, he was called:”Blessed is whosoever is in the fire, and whosoever is round about it!”

meaning, when he came to it, he saw a great and terrifying sight:the fire was burning in a green bush, and the fire was burning ever brighter while the bush was growing ever more green and beautiful. Then he raised his head, and saw that its light was connected to the clouds of the sky.

Ibn Abbas and others said,

“It was not a fire, rather it was shining light.”

According to one report narrated from Ibn Abbas,

it was the Light of the Lord of the worlds.

Musa stood amazed by what he was seeing, and
نُودِيَ أَن بُورِكَ مَن فِي النَّارِ
(he was called:”Blessed is whosoever is in the fire…”),

Ibn Abbas said,

“This means, Holy is (whosoever is in the fire).”

وَمَنْ حَوْلَهَا
(and whosoever is round about it)

means, of the angels.

This was the view of Ibn Abbas, Ikrimah, Sa`id bin Jubayr, Al-Hasan and Qatadah.

وَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

And glorified be Allah, the Lord of all that exists,

Who does whatever He wills and there is nothing like Him among His creation. Nothing He has made can encompass Him, and He is the Exalted, the Almighty, Who is utterly unlike all that He has created. Heaven and earth cannot contain Him, but He is the One, the Self-Sufficient Master, Who is far above any comparison with His creation.

يَا مُوسَى إِنَّهُ أَنَا اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

27:9

یٰمُوۡسٰۤی اِنَّہٗۤ اَنَا اللّٰہُ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ۙ﴿۹﴾

O Moses, indeed it is I – Allah, the Exalted in Might, the Wise.”

 

O Musa! Verily, it is I, Allah, the All-Mighty, the All-Wise.

Allah told him that the One Who was addressing him was his Lord Allah, the All-Mighty, Who has subjugated and subdued all things, the One Who is Wise in all His words and deeds.

27:10

وَ اَلۡقِ عَصَاکَ ؕ فَلَمَّا رَاٰہَا تَہۡتَزُّ کَاَنَّہَا جَآنٌّ وَّلّٰی مُدۡبِرًا وَّ لَمۡ یُعَقِّبۡ ؕ یٰمُوۡسٰی لَا تَخَفۡ ۟ اِنِّیۡ لَا یَخَافُ لَدَیَّ الۡمُرۡسَلُوۡنَ ﴿٭ۖ۱۰﴾

And [he was told], “Throw down your staff.” But when he saw it writhing as if it were a snake, he turned in flight and did not return. [ Allah said], “O Moses, fear not. Indeed, in My presence the messengers do not fear.

 

وَأَلْقِ عَصَاكَ

“And throw down your stick!”

Then He commanded him to throw down the stick that was in his hand, so that He might show him clear proof that He is the One Who is able to do all things, whatever He wills.

When Musa threw that stick down, it changed into the form of a huge and terrifying snake, moving quickly despite its size.

Allah says:


فَلَمَّا رَاهَا تَهْتَزُّ كَأَنَّهَا جَانٌّ

But when he saw it moving as if it were a Jann (snake).

Jann refers to a type of snake that is the fastest-moving and most agile.

When Musa saw that with his own eyes,


وَلَّى مُدْبِرًا وَلَمْ يُعَقِّبْ

he turned in flight, and did not look back.

meaning, he did not turn around, because he was so afraid.

Allah’s saying:


يَا مُوسَى لَاا تَخَفْ إِنِّي لَاا يَخَافُ لَدَيَّ الْمُرْسَلُونَ

O Musa! Fear not:verily, the Messengers fear not in front of Me.

means, `do not be afraid of what you see, for I want to choose you as a Messenger and make you a great Prophet.’

إِلاَّ مَن ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسْنًا بَعْدَ سُوءٍ فَإِنِّي غَفُورٌ رَّحِيم
27:11

اِلَّا مَنۡ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسۡنًۢا بَعۡدَ سُوۡٓءٍ فَاِنِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱﴾

Otherwise, he who wrongs, then substitutes good after evil – indeed, I am Forgiving and Merciful.

 

Except him who has done wrong and afterwards has changed evil for good; then surely, I am Oft-Forgiving, Most Merciful.

This is an exception of the exclusionary type.

This is good news for mankind, for whoever does an evil deed then gives it up and repents and turns to Allah, Allah will accept his repentance, as He says:

وَإِنِّى لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَامَنَ وَعَمِلَ صَـلِحَاً ثُمَّ اهْتَدَى

And verily, I am indeed forgiving to him who repents, believes and does righteous good deeds, and then Ahtada. (20:82)

وَمَن يَعْمَلْ سُوءاً أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ

And whoever does evil or wrongs himself… (4:110).

And there are many other Ayat which say the same

27:12

وَ اَدۡخِلۡ یَدَکَ فِیۡ جَیۡبِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ ۟ فِیۡ تِسۡعِ اٰیٰتٍ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَ قَوۡمِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ ﴿۱۲﴾

And put your hand into the opening of your garment [at the breast]; it will come out white without disease. [These are] among the nine signs [you will take] to Pharaoh and his people. Indeed, they have been a people defiantly disobedient.”

 

وَأَدْخِلْ يَدَكَ فِي جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَاء مِنْ غَيْرِ سُوءٍ

And put your hand into the opening of your garment, it will come forth white without hurt.

This is another sign, further brilliant proof of the ability of Allah to do whatever He wills. It is also confirmation of the truth of the one to whom the miracle was given.

Allah commanded him to put his hand into the opening of his garment, and when he put his hand in and took it out again, it came out white and shining as if it were a piece of the moon or a flash of dazzling lightning.

فِي تِسْعِ ايَاتٍ

among the nine signs,

means, `these are two of the nine signs which you will be supported with and which will serve as proof for you. ‘

إِلَى فِرْعَوْنَ وَقَوْمِهِ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ

to Fir`awn and his people. Verily, they are a people who are rebellious.

These were the nine signs of which Allah said:

وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ ءَايَـتٍ بَيِّنَاتٍ

And indeed We gave Musa nine clear signs. (17:101) —

as we have stated there

27:13

فَلَمَّا جَآءَتۡہُمۡ اٰیٰتُنَا مُبۡصِرَۃً قَالُوۡا ہٰذَا سِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۚ۱۳﴾

But when there came to them Our visible signs, they said, “This is obvious magic.”

 

فَلَمَّا جَاءتْهُمْ ايَاتُنَا مُبْصِرَةً

But when Our Ayat came to them, clear to see,

i.e., clear and obvious,

قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ

they said:”This is a manifest magic”.

They wanted to oppose it with their own magic, but they were defeated and were returned disgraced

27:14

وَ جَحَدُوۡا بِہَا وَ اسۡتَیۡقَنَتۡہَاۤ اَنۡفُسُہُمۡ ظُلۡمًا وَّ عُلُوًّا ؕ فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿٪۱۴﴾

And they rejected them, while their [inner] selves were convinced thereof, out of injustice and haughtiness. So see how was the end of the corrupters.

 

وَجَحَدُوا بِهَا

And they belied them,

means, verbally,

وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنفُسُهُمْ

though they themselves were convinced thereof.

means, they knew deep down that this was truth from Allah, but they denied it and were stubborn and arrogant.

ظُلْمًا وَعُلُوًّا

wrongfully and arrogantly,

means, wronging themselves because this was the despicable manner to which they were accustomed, and they were arrogant because they were too proud to follow the truth.

Allah said:

فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ

So, see what was the end of the mischief-makers.

meaning, `see, O Muhammad, what were the consequences of their actions when Allah destroyed them and drowned every last one of them in a single morning.’

The point of this story is:beware, `O you who disbelieve in Muhammad and deny the Message that he has brought from his Lord, lest the same thing that befell them befall you also.’

But what is worse, is that Muhammad is nobler and greater than Musa, and his proof is stronger than that of Musa, for the signs that Allah has given him are combined with his presence and his character, in addition to the fact that previous Prophets foretold his coming and took a covenant from the people that they would follow him if they should see him, may the best of blessings and peace from his Lord be upon him

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply