أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০১৩)
[*আল্লাহর কুদরতে দুশমনের হাতেই মূসা(আ.)-এর লালন পালন :
মিথ্যার পরাজয় অবশ্যই হবে, তা রক্ষা করার যতই কৌশল করা হোক না কেন।:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৮:ক্বাসাস
পারা:২০
১-৪৩ নং আয়াত:-
২৮:১
طٰسٓمّٓ ﴿۱﴾
ত্বা-সীন-মীম;
২৮:২
تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡکِتٰبِ الۡمُبِیۡنِ ﴿۲﴾
এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
২৮:৩
نَتۡلُوۡا عَلَیۡکَ مِنۡ نَّبَاِ مُوۡسٰی وَ فِرۡعَوۡنَ بِالۡحَقِّ لِقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳﴾
আমি মূসা ও ফেরাউনের কিছু যথাযথ বৃত্তান্ত তোমাকে শুনাচ্ছি এমনসব লোকদের সুবিধার্থে যারা ঈমান আনে।
২৮:৪
اِنَّ فِرۡعَوۡنَ عَلَا فِی الۡاَرۡضِ وَ جَعَلَ اَہۡلَہَا شِیَعًا یَّسۡتَضۡعِفُ طَآئِفَۃً مِّنۡہُمۡ یُذَبِّحُ اَبۡنَآءَہُمۡ وَ یَسۡتَحۡیٖ نِسَآءَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿۴﴾
ফিরআউন আপন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে ওদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; সে ওদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিঃসন্দেহে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।
২৮:৫
وَ نُرِیۡدُ اَنۡ نَّمُنَّ عَلَی الَّذِیۡنَ اسۡتُضۡعِفُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ نَجۡعَلَہُمۡ اَئِمَّۃً وَّ نَجۡعَلَہُمُ الۡوٰرِثِیۡنَ ۙ﴿۵﴾
সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা ও দেশের উত্তরাধিকারী করতে ইচ্ছা করলাম।
২৮:৬
وَ نُمَکِّنَ لَہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ نُرِیَ فِرۡعَوۡنَ وَ ہَامٰنَ وَ جُنُوۡدَہُمَا مِنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَحۡذَرُوۡنَ ﴿۶﴾
পৃথিবীতে তাদেরকে কর্তৃত্ব দান করবো। এবং তাদের থেকে ফেরাউন, হামান৮ ও তার সৈন্যদেরকে সে সবকিছুই দেখিয়ে দেবো, যার আশঙ্কা তারা করতো।
২৮:৭
وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اُمِّ مُوۡسٰۤی اَنۡ اَرۡضِعِیۡہِ ۚ فَاِذَا خِفۡتِ عَلَیۡہِ فَاَلۡقِیۡہِ فِی الۡیَمِّ وَ لَا تَخَافِیۡ وَ لَا تَحۡزَنِیۡ ۚ اِنَّا رَآدُّوۡہُ اِلَیۡکِ وَ جَاعِلُوۡہُ مِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۷﴾
মূসার জননীর কাছে অহী পাঠালাম, শিশুটিকে স্তন্যদান কর। যখন তুমি এর সম্পর্কে কোন আশংকা করবে, তখন একে (নীল) দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। নিশ্চয় আমি একে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেব এবং একে একজন রসূল করব।
২৮:৮
فَالۡتَقَطَہٗۤ اٰلُ فِرۡعَوۡنَ لِیَکُوۡنَ لَہُمۡ عَدُوًّا وَّ حَزَنًا ؕ اِنَّ فِرۡعَوۡنَ وَ ہَامٰنَ وَ جُنُوۡدَہُمَا کَانُوۡا خٰطِئِیۡنَ ﴿۸﴾
অতঃপর ফিরআউনের লোকজন মূসাকে উঠিয়ে নিল।প পরিণামে সে ওদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হল। নিশ্চয় ফিরআউন, হামান ও ওদের বাহিনী ছিল অপরাধী।
২৮:৯
وَ قَالَتِ امۡرَاَتُ فِرۡعَوۡنَ قُرَّتُ عَیۡنٍ لِّیۡ وَ لَکَ ؕ لَا تَقۡتُلُوۡہُ ٭ۖ عَسٰۤی اَنۡ یَّنۡفَعَنَاۤ اَوۡ نَتَّخِذَہٗ وَلَدًا وَّ ہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۹﴾
ফির‘আউনের স্ত্রী বলল, ‘এ শিশু আমার ও তোমার নয়ন-প্ৰীতিকর। একে হত্যা করো না, সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।’ প্রকৃতপক্ষে ওরা এর পরিণাম উপলব্ধি করতে পারেনি।
২৮:১০
وَ اَصۡبَحَ فُؤَادُ اُمِّ مُوۡسٰی فٰرِغًا ؕ اِنۡ کَادَتۡ لَتُبۡدِیۡ بِہٖ لَوۡ لَاۤ اَنۡ رَّبَطۡنَا عَلٰی قَلۡبِہَا لِتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۰﴾
মূসা-জননীর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়েছিল। যাতে সে আস্থাশীল হয় সেজন্য তার হৃদয়কে আমি সুদৃঢ় করে না দিলে, সে তার পরিচয় তো প্রকাশ করেই দিত।
২৮:১১
وَ قَالَتۡ لِاُخۡتِہٖ قُصِّیۡہِ ۫ فَبَصُرَتۡ بِہٖ عَنۡ جُنُبٍ وَّ ہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿ۙ۱۱﴾
আর সে মূসার বোনকে বলল, ‘এর পিছনে পিছনে যাও।’ সে দূর থেকে তাকে দেখছিল অথচ তারা তা উপলব্ধি করতে পারছিল না।
২৮:১২
وَ حَرَّمۡنَا عَلَیۡہِ الۡمَرَاضِعَ مِنۡ قَبۡلُ فَقَالَتۡ ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰۤی اَہۡلِ بَیۡتٍ یَّکۡفُلُوۡنَہٗ لَکُمۡ وَ ہُمۡ لَہٗ نٰصِحُوۡنَ ﴿۱۲﴾
আমি পূর্ব হতেই ধাত্রীস্তন্য পানে তাকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার ভগিনী বলল, ‘তোমাদেরকে কি আমি এমন পরিবারের কথা বলব, যারা তোমাদের হয়ে একে লালন-পালন করবে এবং এর হিতাকাঙ্ক্ষী হবে?’
২৮:১৩
فَرَدَدۡنٰہُ اِلٰۤی اُمِّہٖ کَیۡ تَقَرَّ عَیۡنُہَا وَ لَا تَحۡزَنَ وَ لِتَعۡلَمَ اَنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿٪۱۳﴾
অতঃপর আমি তাকে তার জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায়, সে দুঃখ না পায় এবং জানতে পারে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। কিন্তু ওদের অধিকাংশই এ জানে না।
২৮:১৪
وَ لَمَّا بَلَغَ اَشُدَّہٗ وَ اسۡتَوٰۤی اٰتَیۡنٰہُ حُکۡمًا وَّ عِلۡمًا ؕ وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۴﴾
যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে ও পরিণত বয়সে উপনীত হল, তখন আমি তাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম; এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।
২৮:১৫
وَ دَخَلَ الۡمَدِیۡنَۃَ عَلٰی حِیۡنِ غَفۡلَۃٍ مِّنۡ اَہۡلِہَا فَوَجَدَ فِیۡہَا رَجُلَیۡنِ یَقۡتَتِلٰنِ ٭۫ ہٰذَا مِنۡ شِیۡعَتِہٖ وَ ہٰذَا مِنۡ عَدُوِّہٖ ۚ فَاسۡتَغَاثَہُ الَّذِیۡ مِنۡ شِیۡعَتِہٖ عَلَی الَّذِیۡ مِنۡ عَدُوِّہٖ ۙ فَوَکَزَہٗ مُوۡسٰی فَقَضٰی عَلَیۡہِ ٭۫ قَالَ ہٰذَا مِنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّہٗ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۵﴾
সে শহরে এমন সময় প্রবেশ করলো যখন শহরবাসীরা উদাসীন ছিল। সেখানে সে দেখলো দু’জন লোক লড়াই করছে। একজন তার নিজের সম্প্রদায়ের এবং অন্যজন তার শত্রুসম্প্রদায়ের। তার সম্প্রদায়ের লোকটি শত্রুসম্প্রদায়ের লোকটির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য ডাক দিল। মূসা তাকে একটি ঘুষি মারলো এবং তাকে মেরে ফেললো। (এ কাণ্ড ঘটে যেতেই) মূসা বললো, “এটা শয়তানের কাজ, সে ভয়ংকর শত্রুএবং প্রকাশ্য পথভ্রষ্টকারী।”
২৮:১৬
قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ ظَلَمۡتُ نَفۡسِیۡ فَاغۡفِرۡ لِیۡ فَغَفَرَ لَہٗ ؕ اِنَّہٗ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶﴾
তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; কাজেই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২৮:১৭
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ فَلَنۡ اَکُوۡنَ ظَہِیۡرًا لِّلۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۱۷﴾
সে আরও বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ, সুতরাং আমি কখনও অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক হব না।’
২৮:১৮
فَاَصۡبَحَ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ خَآئِفًا یَّتَرَقَّبُ فَاِذَا الَّذِی اسۡتَنۡصَرَہٗ بِالۡاَمۡسِ یَسۡتَصۡرِخُہٗ ؕ قَالَ لَہٗ مُوۡسٰۤی اِنَّکَ لَغَوِیٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۸﴾
দ্বিতীয় দিন অতি প্রত্যুষে সে ভয়ে ভয়ে এবং সর্বদিক থেকে বিপদের আশঙ্কা করতে করতে শহরের মধ্যে চলছিল। সহসা দেখলো কি, সেই ব্যক্তি যে গতকাল সাহায্যের জন্য তাকে ডেকেছিল আজ আবার তাকে ডাকছে। মূসা বললো, “তুমি তো দেখছি স্পষ্টতই বিভ্রান্ত।”
২৮:১৯
فَلَمَّاۤ اَنۡ اَرَادَ اَنۡ یَّبۡطِشَ بِالَّذِیۡ ہُوَ عَدُوٌّ لَّہُمَا ۙ قَالَ یٰمُوۡسٰۤی اَتُرِیۡدُ اَنۡ تَقۡتُلَنِیۡ کَمَا قَتَلۡتَ نَفۡسًۢا بِالۡاَمۡسِ ٭ۖ اِنۡ تُرِیۡدُ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ جَبَّارًا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا تُرِیۡدُ اَنۡ تَکُوۡنَ مِنَ الۡمُصۡلِحِیۡنَ ﴿۱۹﴾
তারপর মূসা যখন শত্রু সম্প্রদায়ের লোকটিকে আক্রমণ করতে চাইলো তখন সে চিৎকার করে উঠলো, “হে মূসা! তুমি কি আজকে আমাকে ঠিক তেমনিভাবে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছো যেভাবে গতকাল একজনকে হত্যা করেছিলে? তুমি তো দেখছি এদেশে স্বেচ্ছাচারী হয়ে থাকতে চাও, সংস্কারক হতে চাও না?”
২৮:২০
وَ جَآءَ رَجُلٌ مِّنۡ اَقۡصَا الۡمَدِیۡنَۃِ یَسۡعٰی ۫ قَالَ یٰمُوۡسٰۤی اِنَّ الۡمَلَاَ یَاۡتَمِرُوۡنَ بِکَ لِیَقۡتُلُوۡکَ فَاخۡرُجۡ اِنِّیۡ لَکَ مِنَ النّٰصِحِیۡنَ ﴿۲۰﴾
নগরীর দূরপ্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এল ও বলল, ‘হে মূসা! (ফিরআউনের) পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র করছে। সুতরাং তুমি বাইরে চলে যাও, আমি অবশ্যই তোমার মঙ্গলকামী।’
২৮:২১
فَخَرَجَ مِنۡہَا خَآئِفًا یَّتَرَقَّبُ ۫ قَالَ رَبِّ نَجِّنِیۡ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿٪۲۱﴾
এ খবর শুনতেই মূসা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো এবং সে দোয়া করলো, “হে আমার রব! আমাকে জালেমদের হাত থেকে বাঁচাও।”
২৮:২২
وَ لَمَّا تَوَجَّہَ تِلۡقَآءَ مَدۡیَنَ قَالَ عَسٰی رَبِّیۡۤ اَنۡ یَّہۡدِیَنِیۡ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ ﴿۲۲﴾
যখন মূসা মাদ্য়্যান অভিমুখে যাত্রা করল, তখন বলল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন।’
২৮:২৩
وَ لَمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدۡیَنَ وَجَدَ عَلَیۡہِ اُمَّۃً مِّنَ النَّاسِ یَسۡقُوۡنَ ۬۫ وَ وَجَدَ مِنۡ دُوۡنِہِمُ امۡرَاَتَیۡنِ تَذُوۡدٰنِ ۚ قَالَ مَا خَطۡبُکُمَا ؕ قَالَتَا لَا نَسۡقِیۡ حَتّٰی یُصۡدِرَ الرِّعَآءُ ٜ وَ اَبُوۡنَا شَیۡخٌ کَبِیۡرٌ ﴿۲۳﴾
যখন সে মাদ্য়্যানের কূপের নিকট পৌঁছল, দেখল একদল লোক তাদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পশ্চাতে দু’জন রমণী তাদের পশুগুলিকে আগলে আছে। মূসা বলল, ‘তোমাদের কি ব্যাপার?’ ওরা বলল, ‘রাখালেরা ওদের পশুগুলিকে নিয়ে সরে না গেলে আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারি না। আর আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ মানুষ।’
২৮:২৪
فَسَقٰی لَہُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤی اِلَی الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ ﴿۲۴﴾
মূসা তখন ওদের পশুগুলিকে পানি পান করাল। তারপর সে ছায়ার নীচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ অবতীর্ণ করবে, নিশ্চয় আমি তার মুখাপেক্ষী।’
২৮:২৫
فَجَآءَتۡہُ اِحۡدٰىہُمَا تَمۡشِیۡ عَلَی اسۡتِحۡیَآءٍ ۫ قَالَتۡ اِنَّ اَبِیۡ یَدۡعُوۡکَ لِیَجۡزِیَکَ اَجۡرَ مَا سَقَیۡتَ لَنَا ؕ فَلَمَّا جَآءَہٗ وَ قَصَّ عَلَیۡہِ الۡقَصَصَ ۙ قَالَ لَا تَخَفۡ ٝ۟ نَجَوۡتَ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۲۵﴾
তখন রমণী দু’জনের একজন লজ্জা-জড়িত পদক্ষেপে তার নিকট এল এবং বলল, ‘আপনি যে আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন।’ অতঃপর মূসা তার নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে সে বলল, ‘ভয় করো না। তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল হতে বেঁচে গেছ।’
২৮:২৬
قَالَتۡ اِحۡدٰىہُمَا یٰۤاَبَتِ اسۡتَاۡجِرۡہُ ۫ اِنَّ خَیۡرَ مَنِ اسۡتَاۡجَرۡتَ الۡقَوِیُّ الۡاَمِیۡنُ ﴿۲۶﴾
মেয়ে দু’জনের একজন তার পিতাকে বললো, “আব্বাজান! একে চাকরিতে নিয়োগ করো, কর্মচারী হিসেবে ব্যক্তিই উত্তম হতে পারে যে বলশালী ও আমানতদার।”
২৮:২৭
قَالَ اِنِّیۡۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اُنۡکِحَکَ اِحۡدَی ابۡنَتَیَّ ہٰتَیۡنِ عَلٰۤی اَنۡ تَاۡجُرَنِیۡ ثَمٰنِیَ حِجَجٍ ۚ فَاِنۡ اَتۡمَمۡتَ عَشۡرًا فَمِنۡ عِنۡدِکَ ۚ وَ مَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اَشُقَّ عَلَیۡکَ ؕ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۲۷﴾
তার পিতা (মূসাকে) বললো,“আমি আমার এ দু’মেয়ের মধ্য থেকে একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই। শর্ত হচ্ছে, তোমাকে আট বছর আমার এখানে চাকরি করতে হবে। আর যদি দশ বছর পুরো করে দাও, তাহলে তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমার ওপর কড়াকড়ি করতে চাই না। তুমি ইনশাআল্লাহ আমাকে সৎলোক হিসেবেই পাবে।
২৮:২৮
قَالَ ذٰلِکَ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَکَ ؕ اَیَّمَا الۡاَجَلَیۡنِ قَضَیۡتُ فَلَا عُدۡوَانَ عَلَیَّ ؕ وَ اللّٰہُ عَلٰی مَا نَقُوۡلُ وَکِیۡلٌ ﴿٪۲۸﴾
মূসা বলল, ‘আপনার ও আমার মধ্যে এ চুক্তিই রইল। এ দুটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী।’
২৮:২৯
فَلَمَّا قَضٰی مُوۡسَی الۡاَجَلَ وَ سَارَ بِاَہۡلِہٖۤ اٰنَسَ مِنۡ جَانِبِ الطُّوۡرِ نَارًا ۚ قَالَ لِاَہۡلِہِ امۡکُثُوۡۤا اِنِّیۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا لَّعَلِّیۡۤ اٰتِیۡکُمۡ مِّنۡہَا بِخَبَرٍ اَوۡ جَذۡوَۃٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّکُمۡ تَصۡطَلُوۡنَ ﴿۲۹﴾
মূসা যখন তার মেয়াদ পূর্ণ করার পর সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তূর পাহাড়ের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিজনবর্গকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য কোন খবর আনতে পারব অথবা একখন্ড জ্বলন্ত আঙ্গার আনতে পারব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’
২৮:৩০
فَلَمَّاۤ اَتٰىہَا نُوۡدِیَ مِنۡ شَاطِیَٴ الۡوَادِ الۡاَیۡمَنِ فِی الۡبُقۡعَۃِ الۡمُبٰرَکَۃِ مِنَ الشَّجَرَۃِ اَنۡ یّٰمُوۡسٰۤی اِنِّیۡۤ اَنَا اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿ۙ۳۰﴾
যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছল, তখন উপত্যকার ডান পাশে পবিত্র ভূমির এক বৃক্ষ হতে তাকে আহবান করে বলা হল, ‘হে মূসা! নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
২৮:৩১
وَ اَنۡ اَلۡقِ عَصَاکَ ؕ فَلَمَّا رَاٰہَا تَہۡتَزُّ کَاَنَّہَا جَآنٌّ وَّلّٰی مُدۡبِرًا وَّ لَمۡ یُعَقِّبۡ ؕ یٰمُوۡسٰۤی اَقۡبِلۡ وَ لَا تَخَفۡ ۟ اِنَّکَ مِنَ الۡاٰمِنِیۡنَ ﴿۳۱﴾
তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন সে একে সাপের মত ছুটাছুটি করতে দেখল, তখন পিছনে না তাকিয়ে সে বিপরীত দিকে ছুটতে লাগল। (তাকে বলা হল,) ‘হে মূসা! অগ্রসর হও, ভয় করো না; নিশ্চয়ই তুমি নিরাপদে রয়েছ।
২৮:৩২
اُسۡلُکۡ یَدَکَ فِیۡ جَیۡبِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ ۫ وَّ اضۡمُمۡ اِلَیۡکَ جَنَاحَکَ مِنَ الرَّہۡبِ فَذٰنِکَ بُرۡہَانٰنِ مِنۡ رَّبِّکَ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَ مَلَا۠ئِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ ﴿۳۲﴾
তোমার হাত বগলে রাখো উজ্জল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই।৪৪ এবং ভীতিমুক্ত হবার জন্য নিজের হাত দু’টি চেপে ধরো। এ দু’টি উজ্জল নিদর্শন তোমার রবের পক্ষ থেকে ফেরাউন ও তার সভাসদদের সামনে পেশ করার জন্য, তারা বড়ই নাফরমান।”
২৮:৩৩
قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ قَتَلۡتُ مِنۡہُمۡ نَفۡسًا فَاَخَافُ اَنۡ یَّقۡتُلُوۡنِ ﴿۳۳﴾
মূসা বললেন, ‘হে আমার রব ! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমি আশংকা করছি তারা আমাকে হত্যা করবে।
২৮:৩৪
وَ اَخِیۡ ہٰرُوۡنُ ہُوَ اَفۡصَحُ مِنِّیۡ لِسَانًا فَاَرۡسِلۡہُ مَعِیَ رِدۡاً یُّصَدِّقُنِیۡۤ ۫ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اَنۡ یُّکَذِّبُوۡنِ ﴿۳۴﴾
আমার ভাই হারূন আমার থেকে বাগ্মী; অতএব তাকে আমার সহযোগীরূপে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন করবে। নিশ্চয় আমি আশংকা করি যে, ওরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’
২৮:৩৫
قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَکَ بِاَخِیۡکَ وَ نَجۡعَلُ لَکُمَا سُلۡطٰنًا فَلَا یَصِلُوۡنَ اِلَیۡکُمَا ۚۛ بِاٰیٰتِنَاۤ ۚۛ اَنۡتُمَا وَ مَنِ اتَّبَعَکُمَا الۡغٰلِبُوۡنَ ﴿۳۵﴾
আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমার ভাই দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে আধিপত্য দান করব। ওরা তোমাদের নিকট পৌঁছতে পারবে না। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শন বলেই ওদের উপর বিজয়ী হবে।’
২৮:৩৬
فَلَمَّا جَآءَہُمۡ مُّوۡسٰی بِاٰیٰتِنَا بَیِّنٰتٍ قَالُوۡا مَا ہٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّفۡتَرًی وَّ مَا سَمِعۡنَا بِہٰذَا فِیۡۤ اٰبَآئِنَا الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۳۶﴾
সুতরাং মূসা যখন ওদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সহ উপস্থিত হল, তখন ওরা বলল, ‘এ তো অলীক যাদু মাত্র! আমাদের পূর্বপুরুষকালে কখনও এরূপ ঘটতে শুনিনি।’
২৮:৩৭
وَ قَالَ مُوۡسٰی رَبِّیۡۤ اَعۡلَمُ بِمَنۡ جَآءَ بِالۡہُدٰی مِنۡ عِنۡدِہٖ وَ مَنۡ تَکُوۡنُ لَہٗ عَاقِبَۃُ الدَّارِ ؕ اِنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۳۷﴾
আর মূসা বললেন, ‘আমার রব সম্যক অবগত, কে তাঁর কাছ থেকে পথনির্দেশ এনেছে এবং আখেরাতে কার পরিণাম শুভ হবে। যালিমরা তো কখনো সফলকাম হবে না।
২৮:৩৮
وَ قَالَ فِرۡعَوۡنُ یٰۤاَیُّہَا الۡمَلَاُ مَا عَلِمۡتُ لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرِیۡ ۚ فَاَوۡقِدۡ لِیۡ یٰہَامٰنُ عَلَی الطِّیۡنِ فَاجۡعَلۡ لِّیۡ صَرۡحًا لَّعَلِّیۡۤ اَطَّلِعُ اِلٰۤی اِلٰہِ مُوۡسٰی ۙ وَ اِنِّیۡ لَاَظُنُّہٗ مِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۳۸﴾
ফিরআউন বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য আছে বলে জানি না! হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং এক সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর; হয়তো আমি এতে মূসার উপাস্যকে উঁকি মেরে দেখতে পারি। তবে আমি অবশ্যই মনে করি, সে মিথ্যাবাদী।’
২৮:৩৯
وَ اسۡتَکۡبَرَ ہُوَ وَ جُنُوۡدُہٗ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ ظَنُّوۡۤا اَنَّہُمۡ اِلَیۡنَا لَا یُرۡجَعُوۡنَ ﴿۳۹﴾
ফিরআউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং ওরা মনে করেছিল যে, ওরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না ।
২৮:৪০
فَاَخَذۡنٰہُ وَ جُنُوۡدَہٗ فَنَبَذۡنٰہُمۡ فِی الۡیَمِّ ۚ فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۴۰﴾
অতএব আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সুতরাং দেখ, সীমালংঘনকারীদের পরিণাম কি ছিল!
২৮:৪১
وَ جَعَلۡنٰہُمۡ اَئِمَّۃً یَّدۡعُوۡنَ اِلَی النَّارِ ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ لَا یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۴۱﴾
ওদেরকে আমি নেতা করেছিলাম; ওরা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহবান করত। কিয়ামতের দিন ওরা কিছু মাত্র সাহায্য পাবে না।
২৮:৪২
وَ اَتۡبَعۡنٰہُمۡ فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا لَعۡنَۃً ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ہُمۡ مِّنَ الۡمَقۡبُوۡحِیۡنَ ﴿٪۴۲﴾
এ পৃথিবীতে আমি তাদেরকে অভিশপ্ত করেছিলাম এবং কিয়ামতের দিন ওরা হবে ঘৃণিত!
২৮:৪৩
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَہۡلَکۡنَا الۡقُرُوۡنَ الۡاُوۡلٰی بَصَآئِرَ لِلنَّاسِ وَ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً لَّعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿۴۳﴾
আমি অবশ্যই পূর্ববর্তী বহু মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করার পর মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম মানব-জাতির জন্য আলোক-বর্তিকা, পথনিদের্শ ও করুণাস্বরূপ; যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
সূরার নামকরণ:
কাসাস শব্দটি কিস্সা এর বহুবচন। কিস্সা অর্থ ঘটনা, কাহিনী ইত্যাদি। এ সূরাতে একাধিক নাবীর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, তাই এ নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ সূরাসমূহের মধ্যে সূরা কাসাস সর্বশেষ সূরা। হিজরতের সময় মক্কা ও জুহফা এর মাঝখানে এ সূরা অবতীর্ণ হয়। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, হিজরতের সফরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জুহফায় পৌঁছেন, তখন জিবরীল (عليه السلام) আগমন করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন: হে মুহাম্মাদ, আপনার মাতৃভূমির কথা আপনার মনে পড়ে কি? তিনি বললেন: হ্যাঁ। অতঃপর জিবরীল (عليه السلام) তাঁকে এ সূরা শুনালেন। এ সূরার শেষভাগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আপনাকে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার পরিণামে মক্কা বিজিত হয়ে আপনার অধিকারভুক্ত হবে, যেমনটি উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র সূরার ৮৫ নং আয়াতে বলেনন
(إِنَّ الَّذِيْ فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْاٰنَ لَرَآدُّكَ إِلٰي مَعَادٍ)
“যিনি তোমার জন্য কুরআনকে করেছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন জন্মভূমিতে।”
সূরা কাসাসে সর্বপ্রথম মূসা (عليه السلام)-এর কাহিনী সংক্ষেপে ও পরে বিস্তারিত বর্র্ণিত হয়েছে। অর্ধেক সূরা পর্যন্ত মূসা (عليه السلام)-এর কাহিনী ফির‘আউনের সাথে এবং শেষভাগে কারূনের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। মূসা (عليه السلام)-এর কাহিনী সমগ্র কুরআনে কোথাও সংক্ষেপে আবার কোথাও বিস্তারিত আকারে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা কাহফে খাজির (عليه السلام)-এর সাথে তাঁর কাহিনী বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর সূরা ত্বা-হা-য় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে এবং এরই কিছু বিবরণ সূরা আন-নামলে অতঃপর সূরা কাসাসে এর পুনরালোচনা রয়েছে।
১-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:
طٰس۬مّ۬ (ত্বা-সীন-মীম) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
এরপর বলেন, এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত, এ সম্পর্কে সূরা শুআরার প্রথমে অর্থাৎ ২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মূসা (عليه السلام)-এর জীবন বৃত্তান্তের বর্ণনা দিচ্ছেন।
(وَأَوْحَيْنَآ إِلٰٓي أُمِّ مُوْسٰٓي)
‘আমি মূসার মায়ের কাছে ওয়াহী করেছি’ এখানে ওয়াহী শব্দটি পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার হয়নি। বরং শাব্দিক অর্থে স্বভাবগত ইলহাম যা মানুষকে করা হয়। এখানে এটাই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-এর মায়ের মনের মাঝে একটি ইলহাম করে দিয়েছিলেন যেন তিনি তার ছেলে মূসা (عليه السلام)-কে বুকের দুধ পান করান। আর যদি ভয় হয় নিজের কাছে থাকলে ফির‘আউন হত্যা করবে তাহলে একটি বাক্সে করে সাগরে ভাসিয়ে দেবে।
الْيَمِّ শব্দের অর্থ সাগর, অর্থাৎ নীল নদে ভাসিয়ে দাও, মারা যাবে বা হারিয়ে যাবে এ ভয় বা আশঙ্কা করবে না। আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং আমি তাকে রাসূল বানাবো।
(فَالْتَقَطَه۫ٓ اٰلُ فِرْعَوْنَ)
অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-কে নীল নদে ভাসিয়ে দিলে ভেসে ভেসে ফির‘আউনের প্রাসাদের কাছে চলে যায়, ফির‘আউনের পরিবার তাকে তুলে নিল এবং ফির‘আউনের স্ত্রী আসিয়া বললন এ শিশু আমাদের নয়ণমনি হবে অতএব তাকে হত্যা করো না। এভাবে আপন গৃহে শত্র“ লালিত পালিত হল কিন্তু তারা বুঝতেও পারল না।
(وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوْسٰي فٰرِغًا)
অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-কে হারিয়ে ফেলে মায়ের মন অস্থির। কিনা কী হয়, মূসা (عليه السلام) যে তার সন্তান এ কথা প্রকাশ করেই দিতেন যদি আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তর ঈমানের বন্ধনে আবদ্ধ না করে দিতেন, যাতে তার এ বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফিরিয়ে দেয়ার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্যে পরিণত হবে। فٰرِغًا অর্থন কেউ বলেছেন: দুনিয়ার সব কিছু থেকে তার মাতা চিন্তামুক্ত, কেবল চিন্তা একটাই মূসা। কেউ বলেছেন: সকল দুশ্চিন্তা থেকে তিনি মুক্ত কারণ তিনি জানেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরত দেবেন, সে ডুবে যাবে না। তারপর মূসা (عليه السلام)-এর বোনকে তার মা বললেন সে যেন তাকে দূর থেকে দেখে দেখে রাখে, কোথা থেকে কোথায় যায়।
(وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ)
অর্থাৎ ফির‘আউনের বাড়িতে মূসা (عليه السلام)-কে নিয়ে যাওয়ার পর দুধ পান করাতে চাইলে কেউ দুধ পান করাতে পারে না। উদ্দেশ্য হল যাতে দুধ পান করানোর জন্য মূসার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে হয়। যা আয়াতেই উল্লেখ রয়েছে।
(وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّه)
অর্থাৎ যখন শক্তি, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তায় পূর্ণ যৌবনে উপনিত হল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত দিলেন। অধিকাংশদের ক্ষেত্রে এ পূর্ণতা চল্লিশ বছর বয়সে হয়ে থাকে। তাই দেখা যায় অধিকাংশ নাবীদেরকে এ বয়সে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে যেমন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
(عَلٰي حِيْنِ غَفْلَةٍ)
‘অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক’ হয় তা দুপুরের সময় যখন মানুষ বিশ্রাম নেয় অথবা অন্য কোন সময় যখন মানুষ বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হতে বিরত থাকে।
(هٰذَا مِنْ شِيْعَتِه۪)
‘একজন তার নিজ দলের’ অর্থাৎ বানী-ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত, (وَهٰذَا مِنْ عَدُوِّه۪) ‘এবং অপর জন তার শত্র“দলের’ অর্থাৎ কিবতী বংশের।
(فَقَضٰي عَلَيْهِ)
অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-এর ঘুষিতে সে মারা যায়। মূসা (عليه السلام) তাকে মেরে ফেলার জন্য ঘুষি দেননি, কিন্তু ঘটনাক্রমে সে আঘাতে মারা যায়। ফলে মূসা (عليه السلام) অনুতপ্ত হন এবং বলেন, নিশ্চয়ই এটা শয়তানের কাজ, তাই তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন।
(فَأَصْبَحَ فِي الْمَدِيْنَةِ خَا۬ئِفًا)
মূসা (عليه السلام) খুব ভীত-শঙ্কিত অবস্থায় তথায় সকাল করলেন আর খুব খেয়াল করছেন যে, ফির‘আউনের পারিষদের কেউ জানতে পারে কি না; কারণ ফির‘আউন ভাল করেই জানে এ কাজ মূসা (عليه السلام) ছাড়া কেউ করার দুঃসাহস রাখে না। এমন সময় মূসা (عليه السلام) শুনতে পেলেন, যে বানী-ইসরাঈলের লোকটাকে গতকাল সাহায্য করেছিল সে আরেকজন কিবতীকে হত্যা করবে বলে চিৎকার করছে। তখন মূসা (عليه السلام) তাকে তিরস্কার করে আয়াতে উল্লিখিত কথা বললেন।
(فَلَمَّآ أَنْ أَرَادَ أَنْ يَّبْطِشَ بِالَّذِيْ هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا)
অর্থাৎ যখন লোকটি এরূপ চিৎকার করল তখন মূসা ইচ্ছা করলেন তাকে ধরে শাস্তি দেবেন। যখন লোকটি বুঝল তাকে মূসা (عليه السلام) মারবে তখন সে বলল: ‘হে মূসা! তুমি যেমন গতকাল এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছ, শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না।’
(هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا)
অর্থাৎ সে বানী ইসরাঈলের লোকটি মূসা (عليه السلام) ও যে কিবতী লোকটিকে মূসা (عليه السلام) হত্যা করেছেন তাদের দুজনেরই শত্র“ হয়ে গেল।
(وَجَا۬ءَ رَجُلٌ) কেউ বলেছেন, লোকটির নাম হিজকিল; কেউ বলেছেন, শামউন।
(وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَا۬ءَ مَدْيَنَ)
শামদেশের একটি শহরের নাম মাদইয়ান। মাদইয়ান ইবনু ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। এ এলাকা ফির‘আউনের ক্ষমতার বাইরে ছিল। মিশর থেকে এর দূরত্ব ছিল আট মনযিল। মূসা (عليه السلام) ফির‘আউন ও তার বাহিনীকে ভয় করে মিশর থেকে মাদইয়ানে চলে আসার ইচ্ছা করলেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়ন মানুষকে যে বিষয়ে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ভয় করা তাওয়াক্কুল ও ঈমানের পরিপন্থী নয়। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করে ফেলবে এ ভয়ে তিনি মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে গেলেন। মূসা (عليه السلام) নিঃসম্বল অবস্থায় মিসর ত্যাগ করলেন। তাঁর সাথে পাথেয় বলতে কিছু ছিল না এবং তিনি রাস্তাও চিননে না। আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করে রওনা দিলেন এবং বললেন ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন।’
(وَلَمَّا وَرَدَ مَا۬ءَ مَدْيَنَ) مَا۬ءَ مَدْيَنَ
বলতে একটি কুপকে বুঝানো হয়েছে। অত্র এলাকাবাসীরা এখান থেকে তাদের জন্তুদের পানি পান করাতো। অর্থাৎ দু’জন মহিলা বলতে শু‘আইব (عليه السلام)-এর কন্যাদ্বয়।
(قَالَ مَا خَطْبُكُمَا)
অর্থাৎ মূসা (عليه السلام) তাদের দাঁড়ানো দেখে বললেন; আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? তারা বলল, পুরুষেরা পানি পান করিয়ে নিয়ে গেলে তারপর আমরা পানি পান করাই। পুরুষদের ভিড়ে পান করাতে পারি না। আমাদের বাবা বৃদ্ধ মানুষ তাই তিনি আসতে পারেন না।
এ ঘটনা থেকে কয়েকটি শিক্ষান ১. দুর্বলদের সাহায্য করা নাবী-রাসূলদের স্ন্নুাত। ২. বেগানা নারীর সাথে প্রয়োজনে কথা বলায় দোষ নেই, যদি কোন ফেতনার আশঙ্কা না থাকে। ৩. প্রয়োজনে নারীরাও বাইরে যেতে পারে তবে অবশ্যই শালিনতা বজায় রাখতে হবে।
(ثُمَّ تَوَلّٰيٓ إِلَي الظِّلِّ)
অর্থাৎ মূসা (عليه السلام) অনাহারে ও ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিলেন এবং এক আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিজের দূরবস্থা ও অভাব পেশ করলেন। এটা দু‘আ করার অন্যতম একটি আদব, আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিজেকে অতি তুচ্ছ ও নগন্য করে তুলে ধরা।
(تَمْشِيْ عَلَي اسْتِحْيَا۬ءٍ)
অর্থাৎ কন্যাদ্বয় বাড়িতে ফিরে গিয়ে শু‘আইব (عليه السلام)-কে ঘটনা খুলে বললে তিনি মূসা (عليه السلام)-কে আমন্ত্রণ জানিয়ে মেয়েকে পাঠান যেন তাকে ডেকে নিয়ে আসে। মেয়েটি লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে সেখানে পৌঁছল এবং পিতার আমন্ত্রণের কথা জানাল।
(إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِيْنُ)
অর্থাৎ শু‘আইব (عليه السلام)-এর এক কন্যা তার পিতাকে বলল: গৃহের কাজের জন্য আপনার একজন কর্মচারীর প্রয়োজন আছে, তাহলে তাকেই নিযুক্ত করে দিন। কারণ তার মাঝে আমরা দুটি গুণ লক্ষ্য করেছি। এক. সে শক্তিশালী, দুই. বিশ্বস্ত। আমরা পানি পান করাতে গিয়ে তার শক্তি এবং পথিমধ্যে আমাদেরকে পশ্চাতে রেখে পথচলা দ্বারা তার বিশ্বস্ততার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
(قَالَ إِنِّيْٓ أُرِيْدُ أَنْ أُنْكِحَكَ)
অর্থাৎ শু‘আইব (عليه السلام) নিজেই নিজের পক্ষ থেকে কন্যাকে মূসা (عليه السلام)-এর সাথে বিবাহ দানের প্রস্তাব করলেন। এ থেকে জানা যায়, উপযুক্ত পাত্র পেলে পাত্রীর অভিভাবকের উচিত পাত্রের প্রস্তাবের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই প্রস্তাব দেয়া। যেমন উমার (رضي الله عنه) নিজ কন্যা হাফসা বিধবা হলে আবূ বকর ও উসমান (رضي الله عنهما) এর কাছে প্রস্তাব দেন। (কুরতুবী)
(فَلَمَّا قَضٰي مُوْسَي الْأَجَلَ)
অর্থাৎ যখন মূসা (عليه السلام) নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ করলেন তখন পরিবার নিয়ে মিসরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
মূসা (عليه السلام) আট বছর কাজ করেছেন নাকি দশ বছর কাজ করেছেন? ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: অধিক মেয়াদকাল পূর্ণ করেছিলেন। নাবীরা যা বলেন তা পূর্ণ করেন।
এ সম্পর্কে পূর্বে সূরা ত্বা-হা-র ৯ নং আয়াত থেকে ৯৩ নং আয়াতসহ আরো একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। মিথ্যার পরাজয় অবশ্যই হবে, তা রক্ষা করার যতই কৌশল করা হোক না কেন।
২। আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, তাঁর ইচ্ছার কোন প্রতিরোধক নেই।
৩। মানুষ স্বভাবতই সন্তানের প্রতি দয়াপরায়ণ, বিশেষ করে যাদের সন্তান নেই তাদের আগ্রহ আরো বেশি।
৪। পুরুষ মহিলাদের পেছনে চলবে না, এতে পর্দা লংঘন হয়। বরং মহিলারা পুরুষের পেছনে পেছনে চলবে।
৫। কন্যার অভিভাবক কাউকে যোগ্য পাত্র মনে করলে সরাসরি প্রস্তাব দিতে পারবে।
৬। অহঙ্কার ও সীমালংঘন ধ্বংস ও পতনের মূল কারণ।
৭। আল্লাহ তা‘আলা উপরে আছেন, এ কথা ফির‘আউনও জানতো। যার ফলে হামানকে সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিল ওপরে উঠে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখবে বলে।
৮। কথা বলা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ। আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন যেমন মূসা (عليه السلام)-এর সাথে কথা বলেছেন।
৯। প্রত্যেক নাবী-রাসূলগণ সমসমায়িক ক্ষমতাসীনদের কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গেছেন।
১০। দীনের কাজে অপরের সহযোগিতা নেয়া ও সহযোগিতা দেয়া উভয়টাই কল্যাণকর।