(বই#১০১৪)   [শান্তি ও নিরাপত্তা কোথায় পাওয়া যায়:-] www.motaher21.net সূরা:- ২৮:ক্বাসাস পারা:২০ ৪৪-৫১ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০১৪)
[শান্তি ও নিরাপত্তা কোথায় পাওয়া যায়:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৮:ক্বাসাস
পারা:২০
৪৪-৫১ নং আয়াত:-
২৮:৪৪
وَ مَا کُنۡتَ بِجَانِبِ الۡغَرۡبِیِّ اِذۡ قَضَیۡنَاۤ اِلٰی مُوۡسَی الۡاَمۡرَ وَ مَا کُنۡتَ مِنَ الشّٰہِدِیۡنَ ﴿ۙ۴۴﴾
মূসাকে যখন আমি বিধান দিয়েছিলাম, তখন তুমি পর্বতের পশ্চিম পাশে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।
২৮:৪৫
وَ لٰکِنَّاۤ اَنۡشَاۡنَا قُرُوۡنًا فَتَطَاوَلَ عَلَیۡہِمُ الۡعُمُرُ ۚ وَ مَا کُنۡتَ ثَاوِیًا فِیۡۤ اَہۡلِ مَدۡیَنَ تَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِنَا ۙ وَ لٰکِنَّا کُنَّا مُرۡسِلِیۡنَ ﴿۴۵﴾
বস্তুত আমরা অনেক প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম; তারপর তাদের উপর বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর আপনি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন না যে তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন । মূলতঃ আমরাই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।
২৮:৪৬
وَ مَا کُنۡتَ بِجَانِبِ الطُّوۡرِ اِذۡ نَادَیۡنَا وَ لٰکِنۡ رَّحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ لِتُنۡذِرَ قَوۡمًا مَّاۤ اَتٰىہُمۡ مِّنۡ نَّذِیۡرٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿۴۶﴾
মূসাকে যখন আমি আহবান করেছিলাম, তখন তুমি ত্বুর পর্বত-পার্শ্বে উপস্থিত ছিলে না। বস্তুতঃ এ সংবাদ তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে করুণাস্বরূপ, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি; যেন ওরা উপদেশ গ্রহণ করে।
২৮:৪৭
وَ لَوۡ لَاۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُوۡا رَبَّنَا لَوۡ لَاۤ اَرۡسَلۡتَ اِلَیۡنَا رَسُوۡلًا فَنَتَّبِعَ اٰیٰتِکَ وَ نَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۴۷﴾
আর রাসূল না পাঠালে তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের উপর কোন বিপদ হলে তারা বলত, ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠালেন না কেন? পাঠালে আমরা আপনার নিদর্শন মেনে চলতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’
২৮:৪৮
فَلَمَّا جَآءَہُمُ الۡحَقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡا لَوۡ لَاۤ اُوۡتِیَ مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی ؕ اَوَ لَمۡ یَکۡفُرُوۡا بِمَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی مِنۡ قَبۡلُ ۚ قَالُوۡا سِحۡرٰنِ تَظٰہَرَا ۟ٝ وَ قَالُوۡۤا اِنَّا بِکُلٍّ کٰفِرُوۡنَ ﴿۴۸﴾
কিন্তু যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের কাছে পৌঁছে গেলো তখন তারা বলতে লাগলো, মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল কেন তাকে সেসব দেয়া হলো না? এর আগে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? তারা বললো, “দু’টোই যাদু, যা একে অন্যকে সাহায্য করে।” আর বললো, “আমরা কোনটাই মানি না।”
২৮:৪৯
قُلۡ فَاۡتُوۡا بِکِتٰبٍ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ہُوَ اَہۡدٰی مِنۡہُمَاۤ اَتَّبِعۡہُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۴۹﴾
বলুন, ‘তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে এক কিতাব নিয়ে আস, যা পথনির্দেশে এ দু‘টি থেকে উৎকৃষ্ট হবে; আমি সে কিতাব অনুসরণ করব।’
২৮:৫০
فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿٪۵۰﴾
এখন যদি তারা তোমার এ দাবী পূর্ণ না করে, তাহলে জেনে রাখো, তারা আসলে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? আল্লাহ‌ এ ধরনের জালেমদেরকে কখনো হিদায়াত দান করেন না।
২৮:৫১
وَ لَقَدۡ وَصَّلۡنَا لَہُمُ الۡقَوۡلَ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿ؕ۵۱﴾
আর আমি অবশ্যই ওদের নিকট বার বার আমার বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি;যাতে ওরা উপদেশ গ্রহণ করে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

পূর্ববর্তী অধ্যায়ে হযরত মূসা(আ.)-এর কাহিনী শেষ হয়েছে। কাহিনীটার শিক্ষাও সেখানে আলােচিত হয়েছে। আর বর্তমান অধ্যায়ে শুরু হচ্ছে সেই কাহিনীর ওপর পর্যালােচনা। এরপর সূরার বাকী অংশ সূরার কেন্দ্রীয় আলােচ্য বিষয় নিয়েই এগিয়ে গেছে। শান্তি ও নিরাপত্তা কোথায় পাওয়া যায় এবং অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতাই বা কোথায় থাকে, সে কথা এ প্রসংগে আলােচিত হয়েছে। ইসলামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারী, এর বিরুদ্ধে নানারকম ছলছুতাে ও আপত্তি উত্থাপনের মাধ্যমে প্রতিরােধকারী মােশরেকদের সম্পর্কেও আলােচনা এসেছে, তাদের দৃষ্টির সামনে প্রকৃতির বিভিন্ন দৃশ্য, কেয়ামতের দৃশ্য ও তাদের কার্যকলাপের নমুনা তুলে ধরা হয়েছে। রসূল(স.) তাদের কাছে যে দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তার সত্যতার প্রমাণাদিও পেশ করা হয়েছে। মােশরেকরা এ দাওয়াত অস্বীকার করলে আহলে কিতাবের কিছু লােক যে তার ওপর ঈমান এনেছে, সে কথা জানানাে হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, যে রসূল(স.)-কে তারা প্রত্যাখ্যান করছে, তিনি যে তাদের জন্যে কত বড় করুণা এবং তার কারণেই যে তারা আযাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে, সে কথা তারা উপলব্ধি করলে খুবই ভালাে করতাে।   *কোরআনের যুক্তি ও কাফেরদের গোয়ার্তুমি : এ কাহিনীর পর্যালােচনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম তার দাবির সত্যতা প্রমাণে এ কাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। রসূল(স.) তাদের কাছে মূসা(আ.) ও ফেরাউনের কাহিনী এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যেমন একজন প্রত্যক্ষদর্শী তুলে ধরে। অথচ তিনি সেসব ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত ওহীই তিনি পড়ে শুনান। এর উদ্দেশ্য তার জাতির প্রতি করুণা প্রদর্শন, যেন শিরকের কারণে তাদের ওপর আযাব না এসে পড়ে। আর আযাব এলে তা তারা বলতে পারে, ‘হে আমাদের প্রভু, (আযাব দেয়ার আগে) আমাদের কাছে এজন্যে রসূল পাঠালে না কেন, তাহলে তাে আমরা তােমার আয়াতগুলাে অনুসরণ করতাম এবং মােমেন হয়ে যেতাম।’ মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না…'(আয়াত ৪৪-৫১) ‘পশ্চিম প্রান্ত’ দ্বারা এখানে তুর পর্বতের পশ্চিম প্রান্ত বুঝানাে হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসার জন্যে নির্ধারিত চল্লিশ রাতের মেয়াদের সময় এখানেই তাঁর মিকাত বা অবস্থানস্থল স্থির করেন। এই মেয়াদ ছিলাে প্রথমে ত্রিশ দিন, পরে তা বাড়িয়ে চল্লিশ দিন করা হয় । (সূরা আরাফ দ্রষ্টব্য) এই মিকাতেই হযরত মূসার জন্যে পটে লেখা বিধান দেয়া হয়, যাতে তা বনী ইসরাঈলের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত হয়। রসূল(স.) এই মিকাতে উপস্থিত ছিলেন না যে, তার এত বিশদ তথ্য জানবেন যেমনটি কোরআনে রয়েছে। তাছাড়া রসূল(স.) ও সেই ঘটনার মাঝে মানব জাতির বহু প্রজন্ম অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু আমি বহুসংখ্যক প্রজন্ম সৃষ্টি করেছি। ‘ফলে তাদের বয়স দীর্ঘ হয়ে গেছে।’ সুতরাং এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যিনি তাঁকে এসব তথ্য জানিয়েছেন, তিনি সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ নন, যিনি তাঁর কাছে ওহী যোগে কুরআন নাযিল করেছেন। কোরআন মাদইয়ান সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে। জানিয়েছে সেখানে হযরত মূসা(আ.)-এর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যও। কোরআনের এই তথ্যই রসূল(স.) পড়ে শুনিয়েছেন। অথচ তিনি মাদইয়ানের অধিবাসী ছিলেন না যে, তাদের কাছ থেকে এতাে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবেন; যেমনটি কোরআন ও এর মধ্যে বর্ণিত অতীতের তথ্যাবলী আমিই ওহীযােগে নাযিল করেছি। অনুরূপভাবে কোরআন খুবই স্পষ্টভাবে ও নির্ভুলভাবে তূর পর্বতের দিক থেকে শ্রুত মহান আল্লাহর সংলাপ ও সম্বােধন তুলে ধরেছে। কোরআন বলছে, ‘আমি যখন সম্বোধন করেছিলাম, তখন তুমি তূর পর্বতের কাছে ছিলে না।’ বস্তুত রসূল(স.) আল্লাহর সেই সম্বােধন শােনেননি এবং তার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে সংরক্ষণও করেননি। এটা নিছক তাঁর জাতির ওপর আল্লাহর করুণা যে, তিনি তাদের সেসব খবর জানিয়েছেন, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূল(স.) তাদের যে দাওয়াত দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ সত্য। যেহেতু তার জাতির কাছে দীর্ঘকাল যাবত এমনকি তাদের পিতা হযরত ইসমাঈলের পর আর কোনাে নবী আসেননি, তাই তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে তিনি এসেছেন এবং অতীতের এ সব খবর অবহিত করছেন। অথচ তাদের প্রতিবেশী বনী ইসরাঈল জাতির কাছে বহু নবী ও রসূল এসেছেন। কোরআনের এসব তথ্য ও কাহিনী আরববাসীর জন্যে একদিকে যেমন করুণাস্বরূপ, অপরদিকে তেমনি এ দ্বারা তাদের ওযর-আপত্তির পথও রুদ্ধ হয়ে গেছে। তারা আর একথা বলতে পারবে না যে, আযাবের পূর্বে সতর্ক না করে তাদের হঠাৎ করেই পাকড়াও করা হয়েছে, কিংবা জাহেলিয়াত, শিরক ও পাপাচারে লিপ্ত থাকার কারণে তারা যে আযাবের যােগ্য হয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তাদের সাবধান না করেই আযাব নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা চেয়েছিলেন, ঈমান আনার পথে তাদের যেন কোনাে বাধা না থাকে এবং তারা কোনাে ওযর দেখাতে না পারে। সে জন্যেই অতীতের এসব ঘটনা তাদের অবহিত করেছেন। তাদের ওপর যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন কোনাে বিপদ আসতাে তাহলে তারা বলতাে যে, হে আমাদের প্রভু, আমাদের কাছে রসূল পাঠালে না কেন, তাহলে তাে আমরা তােমার আয়াতগুলাের অনুসরণ করতাম এবং মােমেন হয়ে যেতাম।'(আয়াত-৪৭) অনুরূপভাবে তাদের কাছে কোনাে নবী রসূল না এলে এবং এই রসূলের সাথে অকাট্য নিদর্শনাবলী না থাকলে তারা এ কথা ভবিষ্যতেও বলতাে, কিন্তু যখনই তাদের কাছে রসূল এলেন এবং তার সাথে সেসব অকাট্য সত্যও এলাে যাতে কোনাে সন্দেহের অবকাশ নেই, তখন তারা তার অনুসরণ করলাে না। ৪৮ নং আয়াতে এ কথাই বলা হয়েছে, যখন তাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে সত্য এলাে, তারা বললো, মূসা(আ.)-কে যা দেয়া হয়েছিলাে তার মতাে জিনিস তাকে দেয়া হলাে না কেন?…’ অর্থাৎ লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া ইত্যাকার দৃশ্যমান অলৌকিক নিদর্শন, কতকগুলাে ফলকে লেখা সমগ্ৰ তাওরাত এক সাথে নাযিল হওয়া ইত্যাদি। মােটকথা, এভাবে তারা সত্যের প্রতি ঈমান আনলাে না, বরং নানারকম খোড়া ওযর দিতে লাগলাে। অথচ মােশরেকরা তাদের যুক্তির ব্যাপারে যেমন সত্যবাদী ছিলাে না, তেমনি তাদের আপত্তির ব্যাপারেও আন্তরিক ছিলাে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ইতিপূর্বে মূসাকে যে কিতাব দেয়া হয়েছিলাে, তারা কি তাকেও অমান্য করেনি।’ আরবে ইহুদীরা ছিলাে। তাদের কাছে তাওরাতও ছিলাে, কিন্তু আরবরা তার ওপরও ঈমান আনেনি। মােশরেকরা জেনেছিলাে যে, তাওরাতে মুহাম্মদ(স.)-এর বিবরণ লিখিত রয়েছে। তারা কোনাে কোনাে ইহুদীকে জিজ্ঞেসও করেছিলাে এবং তারা বলেছিলাে যে, মােহাম্মদ(স.)-এর বক্তব্য সত্য এবং তাদের কাছে যে কিতাব রয়েছে, তার সাথে তার মিল রয়েছে। অথচ তারা এসব কথায় বিশ্বাস করেনি; বরং বলেছে, তাওরাতও যাদু, কোরআনও যাদু। তাই দুটোতে মিল রয়েছে এবং একটা অপরটার সমর্থক। তারা বললাে, দুই যাদু স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। তারা বললাে, আমরা কোনােটাই মানি না।’ সুতরাং নিছক তর্ক ও গােয়ার্তুমিই বাধা। যুক্তি প্রমাণের অভাব বা দুর্বলতা ঈমান আনার পথে কোনাে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেনি। এতদসত্তেও কোরআন আরাে একধাপ অগ্রসর হয়ে তাদের যুক্তি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। সে বলেছে, ‘ঠিক আছে, তােমাদের কাছে কোরআন ও তাওরাত কোনােটাই যদি ভালাে লাগে, তাহলে তােমাদের কাছে এই উভয় কিতাবের চেয়ে সত্যপন্থী অন্য কোনাে কিতাব যদি থেকে থাকে, তবে তা নিয়ে এসাে। আমি তার অনুসরণ করবাে'(আয়াত-৪৯) এ হচ্ছে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। এ হচ্ছে যুক্তিতর্কের দীর্ঘতম পথ পাড়ি দেয়ার নমুনা। ‘এরপর যে ব্যক্তি সত্যের প্রতি ঈমান আনে না সে আসলে হঠকারী ও গোয়ার। সে কোনাে যুক্তির ধার ধারে না'(আয়াত-৫০) কোরআনের সত্য খুবই স্পষ্ট। ইসলামের সপক্ষের যুক্তি অত্যন্ত ধারালাে ও অকাট্য। এ যুক্তি একমাত্র সে-ই অগ্রাহ্য করতে পারে যে নিজের আবেগ ও হুজুগের কাছে পরাজিত এবং একমাত্র গােয়ার্তুমিই তাকে ঈমান আনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এখানে দু’টো পথই খােলা আছে, তৃতীয় কোনাে পথ খােলা নেই। হয় সত্যের প্রতি একনিষ্ঠ হতে হবে এবং গােয়ার্তুমি ও হঠকারিতা ত্যাগ করতে হবে। আর তা করলে ঈমান আনা ও আল্লাহর দ্বীনের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। অন্যথায় প্রবৃত্তির দাসত্ব ও সত্যের ব্যাপারে বিতর্ক- এপথ ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করার, তার সাথে শত্রুতা পােষণ করার পথ। আকীদা ও আদর্শের ব্যাপারে জড়তা অস্পষ্টতার আর কোনাে অবকাশ নেই। ‘যদি তারা তােমার দাওয়াত গ্রহণ না করে, তাহলে জেনে রাখাে যে, তারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও ভাবাবেগের অনুসারী…’ এভাবে দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহর ঘােষণা সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। তার কথায় কোনাে হেরফের বা রদবদল নেই। যারা আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করে না তারা স্বার্থপর, তাদের কোনাে ওযর আপত্তি গ্রহণযােগ্য নয়। তারা প্রবৃত্তির গােলাম এবং সুস্পষ্ট সত্যের বিরােধী। ‘যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে গোমরাহ কে আছে। তারা এক্ষেত্রে বিদ্রোহী ও যালেম, আল্লাহ তায়ালা যালেমদের সুপথ দেখান না।’ এই স্পষ্টোক্তির পর কোরআন না বুঝা বা ইসলাম না জানার ওযর দেয়ার কোনাে সুযােগ থাকে না। ইসলামের দাওয়াত পৌছলেই হলাে, আর কোনাে ওজর পেশ করার অবকাশ নেই। কেননা ইসলাম একেবারেই সহজবােধ্য, সুস্পষ্ট। স্বার্থপর, প্রবৃত্তি পূজারী ও পাপাচারী ব্যতীত কেউ তা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। মক্কার কুরাইশদের ক্ষেত্রেও একথা প্রযােজ্য। তাদের কাছে ইসলাম পৌছে গেছে। এখন আর তাদের কোনাে ওযর পেশ করার অবকাশ নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আমি তাদের কাছে কথা পৌছিয়ে দিয়েছি, হয়তাে তারা স্মরণ করবে।'(আয়াত-৫১)

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতগুলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াত ও রিসালাতের সত্যতার প্রমাণ বহন করে এমন একটি দিক বর্ণনা করা হয়েছে। الْغَرْبِيِ অর্থাৎ পশ্চিম, অর্থাৎ যখন মূসা (عليه السلام) এর সাথে আমি আল্লাহ তা‘আলা কথা বলি এবং তাঁকে নবুওয়াত প্রদান করি তখন তুমি তূর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না। শু‘আইব (عليه السلام)-এর এলাকা মাদইয়ান, যা মূসা (عليه السلام)-এর শশুর বাড়ি, সেখানেও তুমি উপস্থিত ছিলে না, এতদসত্ত্বেও তুমি মূসা (عليه السلام)-এর জীবন বৃত্তান্তসহ পূর্ববর্তীদের জীবন কাহিনী কিভাবে জানলে? নিশ্চয়ই এটা তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যে, তিনি ওয়াহীর মাধ্যমে তোমাকে সব জানিয়েছেন। তোমার কাছে যদি ওয়াহী না করা হত, তুমি যদি রাসূল না হতে তাহলে কখনো তা জানতে পারতে না। এতো পুরনো ঘটনা সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(تِلْكَ مِنْ أَنْۭبَا۬ءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَآ إِلَيْكَ ج مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَآ أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَا ط فَاصْبِرْ ط إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ)‏

“এ সমস্ত‎ অদৃশ্যের সংবাদন আমি তোমাকে ওয়াহী দ্বারা অবহিত করছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়ও জানত না। সুতরাং ধৈর্য ধারণ কর‎, শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই জন্য।’’ (সূরা হূদ ১১:৪৯) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(كَذٰلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْۭبَا۬ءِ مَا قَدْ سَبَقَ ج وَقَدْ اٰتَيْنٰكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا)

“পূর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ।” (সূরা ত্বা-হা- ২০:৯৯)

সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের সত্যতায় কোন সংশয় নেই। যারা সংশয় করবে তারা কাফির হয়ে যাবে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেনন তিনি কোন জাতিকে সতর্ক করার জন্য রাসূল না পাঠিয়ে ধ্বংস করেন না বা শাস্তি প্রদান করেন না। কারণ যদি এভাবে শাস্তি প্রদান করা হত তাহলে তারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নিকট কোন সতর্ককারী প্রেরণ করা হল না কেন? তাহলে আমরা তার অনুসরণ করতাম।

এ কথা যেন বলতে না পারে তাই তাদের নিকট তোমাকে সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

‏(اَنْ تَقُوْلُوْٓا اِنَّمَآ اُنْزِلَ الْکِتٰبُ عَلٰی طَا۬ئِفَتَیْنِ مِنْ قَبْلِنَاﺕ وَاِنْ کُنَّا عَنْ دِرَاسَتِھِمْ لَغٰفِلِیْنَﯫاَوْ تَقُوْلُوْا لَوْ اَنَّآ اُنْزِلَ عَلَیْنَا الْکِتٰبُ لَکُنَّآ اَھْدٰی مِنْھُمْﺆ فَقَدْ جَا۬ءَکُمْ بَیِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّکُمْ وَھُدًی وَّرَحْمَةٌﺆ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ کَذَّبَ بِاٰیٰتِ اللہِ وَصَدَفَ عَنْھَاﺚ سَنَجْزِی الَّذِیْنَ یَصْدِفُوْنَ عَنْ اٰیٰتِنَا سُوْ۬ئَ الْعَذَابِ بِمَا کَانُوْا یَصْدِفُوْنَ)

“(এটা নাযিল করার কারণ এই যে,) যাতে তোমরা না বলতে পার, (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বে দুই সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছিল; আমরা তাদের পঠন-পাঠন সম্বন্ধে তো গাফিল ছিলাম’, অথবা যাতে এ কথা বলতে না পার, ‘যদি কিতাব আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হত তবে আমরা তো তাদের অপেক্ষা অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম।’ এখন তো তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসেছে, অতএব (এরপর আল্লাহ তা‘আলার) আয়াতকে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং তা থেকে এড়িয়ে থাকবে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? যারা আমার আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলবে তাদেরকে আমি এই এড়িয়ে চলার কারণে অতিসত্বর কঠিন শাস্তি দেব।” (সূরা আন‘আম ৬:১৫৬-১৫৭)

সুতরাং ঈমান না আনার পেছনে কোন ওযর আপত্তি পেশ করা যাবে না। আর তা গ্রহণও করা হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পূর্বেই ওযর পেশ করার সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য রাসূল তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
২. সতর্ককারী প্রেরণ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ধ্বংস করেন না।
৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর:

মক্কার কাফির-মুশরিকরা ঈমান না আনার জন্য বিভিন্ন ওযর-আপত্তি পেশ করত। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যখন কুরআন প্রয়োজন অনুপাতে খণ্ড খণ্ড আকারে নাযিল হতে লাগল তখন তারা বলতে শুরু করল: ‘মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, তাকে সেরূপ দেয়া হল না কেন?’

অর্থাৎ মূসা (عليه السلام)-এর ওপর যেমন একত্রে কিতাব নাযিল করা হয়েছে মুহাম্মাদের ওপর কেন একত্রে নাযিল হয় না? সুতরাং এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিল করা কিতাব নয়। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথার জবাব দিয়ে বলেন: মূসা (عليه السلام) যা নিয়ে এসেছিল তা কি তোমরা অস্বীকার করনি? অথচ তা একত্রে নাযিল করা হয়েছিল।

যখন দেখল কুরআন ও তাওরাতের বিষয়বস্তু অভিন্ন তখন তারা বলতে লাগলন

(سِحْرٰنِ تَظَاهَرَا)

অর্থাৎ কুরআন ও তাওরাত উভয়টি যাদু, একে অপরকে যাদু প্রকাশে সহযোগিতা করেছে। তাই আমরা সব অস্বীকার করলাম, কিছুই বিশ্বাস করতে পারছিনা।

আল্লাহ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলে দিতে বললেনন তোমরা যদি অস্বীকারই করে থাক, আর ঈমান না আনতে পারো, তাহলে তোমরা সত্যবাদী হলে কুরআন ও তাওরাতের চেয়ে উত্তম কিতাব আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে নিয়ে আসো। স্বয়ং আমি তার অনুরসণ করব। তারা যদি নিয়ে না আসতে পারে, আর কখনো তা পারবেও না, সুতরাং তুমি জেনে রেখো, তারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে তাদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কেউ নেই।

মূলত তারা ঈমান নিয়ে আসত না। তারা কেবল তাদের প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে এ সকল কাজ করত। আর এ ব্যাপারে তাদের কোনই দলীল-প্রমাণ ছিল না। তারা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কেবল নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রবৃত্তির পূজো বাদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর সঠিক ধর্মের অনুসরণ করা যা আখিরাতে নাজাতের মাধ্যম হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কুরআনই সর্বশ্রেষ্ঠ সুপথ প্রদর্শনকারী গ্রন্থ; এর চেয়ে অধিক সঠিক আর কোন গ্রন্থ নেই।
২. প্রবৃত্তিপূজো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. কোন একটি আসমানী কিতাব বা রাসূলকে অস্বীকার করা সকল কিতাব ও রাসূলকে অস্বীকার করার শামিল।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# পশ্চিম প্রান্ত বলতে সিনাই উপদ্বীপের যে পাহাড়ে মূসাকে শরীয়াতের বিধান দেয়া হয়েছিল সেই পাহাড় বুঝানো হয়েছে। এ এলাকাটি হেজাযের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
# বনী ইসরাঈলের সত্তর জন প্রতিনিধি যাদেরকে শরীয়াতের বিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করার জন্য মূসার সাথে ডাকা হয়েছিল। (সূরা আ’রাফের ১৫৫ আয়াতে এ প্রতিনিধিদের ডেকে নেবার কথা উল্লেখিত হয়েছে এবং বাইবেলের যাত্রা পুস্তকের ২৪ অধ্যায়েও এর আলোচনা করা হয়েছে।)
# সরাসরি এ তথ্যগুলো লাভ করার কোন উপায় তোমাদের ছিল না। আজ দু’হাজার বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পরও যে, তোমরা এ ঘটনাবলীকে এমনভাবে বর্ণনা করছো যেন তোমাদের চোখে দেখা ঘটনা, আল্লাহর অহীর মাধ্যমে এসব তথ্য তোমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া এর আর কোন কারণ নেই।
# যখন মূসা মাদয়ানে পৌঁছেন, তাঁর সাথে সেখানে যা কিছু ঘটে এবং দশ বছর অতিবাহিত করে যখন তিনি সেখান থেকে রওয়ানা দেন তখন সেখানে কোথাও তোমার কোন পাত্তাই ছিল না। তুমি আজ মক্কার অলিতে গলিতে যে কাজ করে বেড়াচ্ছো সে সময় মাদয়ানে জনবসতিগুলোতে সে কাজ করতেন না। আপনি চোখে দেখে এ ঘটনাবলীর উল্লেখ করছো না বরং আমার মাধ্যমেই তোমরা এ জ্ঞানও লাভ করছো।
# এ তিনটি কথাই পেশ করা হয়েছে মুহাম্মাদ (সঃ) এর নবুওয়াতের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে। যখন এ কথাগুলো পেশ করা হয়েছিল তখন মক্কার সমস্ত সরদার ও সাধারণ কাফেররা কোন প্রকারে তাঁকে অ-নবী এবং নাউযুবিল্লাহ নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ইয়াহুদী উলামা ও খৃস্টান ‘রাহিব’ তথা সংসারত্যাগী-যোগী সন্ন্যাসীরাও হেজাযের জনপদগুলোতে উপস্থিত ছিল। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কোন মহাশূন্য থেকে এসে কুরআন শুনিয়ে যেতেন না। বরং তিনি ছিলেন সেই মক্কারই বাসিন্দা। তাঁর জীবনের কোন একটি দিকও তাঁর জনপদ ও গোত্রের লোকদের কাছে গোপন ছিল না। এ কারণেই যখন এ প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের আকারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ এ তিনটি কথা বলা হলো তখন মক্কা, হেজায এবং সারা আরবের কোন এক ব্যক্তিও উঠে এমন বেহুদা কথা বলেনি যা আজকের পাশ্চাত্য প্রাচ্যবিদরা বলছেন। যদিও মিথ্যা তৈরি করার ব্যাপারে তারা এদের চেয়ে কম যেতো না তবুও যে ডাহা মিথ্যা এক মুহূর্তের জন্যও চলতে পারে না তা তারা বলতো কেমন করে। তারা কেমন করে বলতো, হে মুহাম্মাদ, তুমি অমুক অমুক ইহুদী আলেম ও খৃস্টান রাহেবের কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে এনেছো! কারণ সারাদেশে এ উদ্দেশ্যে তারা কোন একজনেরও নাম নিতে পারতো না। তারা কারো নাম নেবার সাথে সাথেই প্রমাণ হয়ে যেত যে, নবী (সঃ) তার কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করেননি। তারা কেমন করে বলতো, হে মুহাম্মাদ! বিগত ইতিহাস এবং সাহিত্য ও যাবতীয় বিদ্যার গ্রন্থরাজি সম্বলিত একটি লাইব্রেরী তোমার আছে! সেই গ্রন্থরাজির সহায়তায় তুমি এসব বক্তৃতা দিচ্ছো। কারণ লাইব্রেরী তো দূরের কথা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেপাশে কোথাও থেকে তারা এসব তথ্য সম্বলিত একটি কাগজের টুকরোও বের করতে সক্ষম ছিল না। মক্কার প্রতিটি শিশুও জানতো, মুহাম্মাদ ﷺ লেখাপড়া জানা লোক নন। আবার কেউ একথাও বলতে পারতো না যে, তিনি কিছু অনুবাদক নিযুক্ত করে রেখেছেন, তারা হিব্রু, সুরিয়ানী ও গ্রীক গ্রন্থরাজি থেকে তরজমা করে তাঁকে দেয়। তারপর তাদের সবচেয়ে বড় বেহায়া লোকটিও এ দাবী করার সাহস করতো না যে, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের বাণিজ্য সফরে গিয়ে আপনি এ তথ্যাবলী সংগ্রহ করে এনেছিলেন। কারণ এ সফরে তিনি একা ছিলেন না। মক্কারই বাণিজ্যিক কাফেলা প্রত্যেক সফরে তাঁর সাথে থাকতো। যদি তখন কেউ এ ধরণের দাবী করতো তাহলে শত শত জীবিত সাক্ষী এ সাক্ষ্য দিতো যে, সেখানে তিনি কারো কাছ থেকে কোন পাঠ নেননি। আর তাঁর ইন্তিকালের পর তো দু’বছরের মধ্যেই রোমানদের সাথে মুসলমানরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। যদি মিথ্যা-মিথ্যাই সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে কোন খৃস্টান রাহেব বা ইহুদী রব্বির সাথে নবী (সঃ) কোন আলাপ আলোচনা করে থেকে থাকতেন তাহলে রোমান সরকার তিলকে তাল করে দিতো এবং এ প্রপাগান্ডা করতে একটুও পিছপাও হতো না যে, মুহাম্মাদ (সঃ) (নাউযুবিল্ল্‌হ) সবকিছু এখান থেকে শিখে গেছেন এবং এখান থেকে মক্কায় গিয়ে নবী সেজে বসেছেন। মোটকথা যে যুগে কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ কুরাইশদের কাফের ও মুশরিকদের জন্য মৃত্যুর বারতা ঘোষণা করতো এবং তাকে মিথ্যা বলার প্রয়োজন বর্তমান যুগের পাশ্চাত্য প্রাচ্যবিদদের তুলনায় তাদের জন্য ছিল অনেক বেশি, সে যুগে কোন ব্যক্তিও কোথাও থেকে এমন কোন উপাদান সংগ্রহ করে আনতে পারেনি যা থেকে একথা প্রমাণ হতে পারতো যে, মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে ওহী ছাড়া এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করার দ্বিতীয় এমন কোন মাধ্যম আছে যার উল্লেখ করা যেতে পারে।

একথাও জেনে রাখা উচিত, কুরআন এই চ্যালেঞ্জ শুধু এখানেই দেয়নি বরং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাহিনী প্রসঙ্গে দিয়েছে। হযরত যাকারিয়া ও হযরত মারয়ামের কাহিনী বর্ণনা করে বলেছেঃ

ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَامَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ

“এ হচ্ছে অদৃশ্য খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমাকে দিচ্ছি। তুমি তাদের আশেপাশে কোথাও ছিলে না যখন তারা মারয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে একথা জানার জন্য তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল। তুমি তখনও উপস্থিত ছিলে না যখন তারা ঝগড়া করছিল। (আলে ইমরানঃ ৪৪)

হযরত ইউসূফের কাহিনী বর্ণনা করার পর বলা হচ্ছেঃ

ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ

“এ হচ্ছে গায়েবের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমাকে দিচ্ছি। তুমি তাদের (অর্থাৎ ইউসূফের ভাইদের) আশেপাশে কোথাও উপস্থিত ছিলে না। যখন তারা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করেছিল এবং যখন তারা ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিল।” (ইউসূফঃ ১০২)

অনুরূপভাবে হযরত নূহের বিস্তারিত কাহিনী বর্ণনা করে বলা হয়েছেঃ تِلْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَذَا

“এ কথাগুলো গায়েবের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়েছি। তোমার ও তোমার জাতির ইতিপূর্বে এর কোন জ্ঞান ছিল না।” (হুদঃ ৪৯)

এ জিনিসটির বার বার পুনরাবৃত্তি থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন মজীদ যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ যে আল্লাহর রসূল তার একটি প্রধান যুক্তি এই ছিল যে, শত শত হাজার হাজার বছর আগে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা আসছে একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মুখ থেকে। ওহী ছাড়া সেগুলো জানার কোন উপায় তাঁর করায়ত্ত নেই। যেসব গুরুত্বপূর্ণ কারণের ভিত্তিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন লোকেরা বিশ্বাস করতে চলেছিল যে, যথার্থই তিনি আল্লাহর নবী এবং তাঁর কাছে আল্লাহর ওহী আসে এ জিনিসটি ছিল তাঁর অন্যতম। এখন যে কোন ব্যক্তি নিজেই ধারণা করতে পারে, ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীদের জন্য সে যুগে এ চ্যালেঞ্জের প্রতিবাদ করা কতটা গুরুত্ববহ হয়ে থাকতে পারে এবং তারা এর বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য কিভাবে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া এটাও অনুমান করা যেতে পারে যে, যদি এ চ্যালেঞ্জের মধ্যে সামান্যতমও কোন দুর্বলতা থাকতো তাহলে তাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা সমকালীন লোকদের জন্য কঠিন হতো না।
# আরবে হযরত ইসমাঈল ও হযরত শো’আইব আলাইহিমাস সালাম ছাড়া আর কোন নবী আসেননি। প্রায় দু’হাজার বছরের এ সুদীর্ঘ সময়ে বাইরের নবীদের দাওয়াত অবশ্যই সেখানে পৌঁছেছে। যেমন হযরত মূসা, হযরত সুলাইমান ও হযরত ঈসা আলাইহিমুস সালামের দাওয়াত। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কোন নবীর আবির্ভাব সেখানে ঘটেনি।
# এ জিনিসটিকেই কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে রসূল পাঠাবার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কিন্তু এ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সঠিক হবে না যে, এ উদ্দেশ্যে সব সময় প্রত্যেক জায়গায় একজন রসূল আসা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ায় একজন রসূলের পয়গাম তার সঠিক আকৃতিতে বিদ্যমান থাকে এবং লোকদের কাছে তা পৌঁছে যাবার মাধ্যমও অপরিবর্তিত থাকে ততক্ষণ কোন নতুন রসূলের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি আগের নবীর আনীত শরীয়াতের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি করার এবং কোন নতুন বিধান দেবার প্রয়োজন হয়, তাহলে নতুন রসূল আসেন। অবশ্যই যখন নবীদের পয়গাম বিলুপ্ত হয়ে যায় অথবা গোমরাহীর মধ্যে এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে যায় যে, তা থেকে হেদায়াত লাভের কোন উপায় থাকে না। তখন লোকদের জন্য এ ওজর পেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় যে, আমাদের হক ও বাতিলের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন করার ও সঠিক পথ দেখাবার কোন ব্যবস্থাই আদতে ছিল না, এ অবস্থায় আমরা কেমন করে হেদায়াত লাভ করতে পারতাম! এ অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করার জন্য মহান আল্লাহ এ ধরণের অবস্থায় নবী পাঠান, যাতে এর পর যে ব্যক্তিই ভুল পথে চলবে তাকে সেজন্য দায়ী করা সম্ভব না হয়।
# হযরত মূসাকে (আ) যেসব মু’জিযা দেয়া হয়েছিল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে সবগুলো দেয়া হলো না কেন? ইনিও লাঠিকে সাপ বানিয়ে আমাদের দেখাতেন। এঁর হাতও বগল থেকে বের করার পর সূর্যের মতো উজ্জ্বল বিকিরণ করতো। এঁর ইশারায়ও অস্বীকারকারীদের ওপর একের পর এক তুফান এবং আকাশ ও পৃথিবীর বালা-মুসীবত নাযিল হতো। ইনিও পাথরের গায়ে লিখিত বিধান এনে আমাদের দিতেন।
# এ হচ্ছে তাদের অভিযোগের জবাব। এর অর্থ হচ্ছে মু’জিযা সত্ত্বেও তোমরা কি মূসা (আঃ) প্রতি ঈমান এনেছিলে? তাহলে আজ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সেগুলোর দাবী করছো কেন? তোমরা নিজেরাই বলছো, মূসাকে এসব মু’জিযা দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারপরও তোমরা তাঁকে নবী বলে মেনে নিয়ে কোনদিন তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করোনি। সূরা সাবার ৩১ আয়াতেও মক্কার কাফেরদের এ উক্তি উদ্বৃত করা হয়েছেঃ “আমরা এই কুরআনও মানবো না, এর আগের কিতাবগুলোকেও মানবো না।”
# আমাকে তো হিদায়াতের অনুসরণ করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, তা কারো মনগড়া হলে হবে না। বরং হতে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকৃত ও যথার্থ হিদায়াত। যদি তোমাদের কাছে এমন কোন কিতাব থাকে যা কুরআন ও তাওরাতের চাইতে ভালো পথনির্দেশনা দিতে পারে তাহলে তোমরা তাকে লুকিয়ে রেখেছো কেন? তাকে সবার সামনে নিয়ে এসো। আমি বিনা দ্বিধায় তার বিধান মেনে চলবো।
# উপদেশের ব্যাপারে আমি কোন কসুর করিনি। এ কুরআনে আমি অনবরত উপদেশ বিতরণ করে এসেছি। কিন্তু যে জিদ ও একগুঁয়েমি পরিহার করে হৃদয়কে বিদ্বেষমুক্ত রেখে সত্যকে সোজাসুজি গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়ে যায় সে-ই একমাত্র হিদায়াত লাভ করতে পারে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় শেষ নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের দলীল দিচ্ছেন যে, তিনি এমন একজন লোক যার কোন আক্ষরিক জ্ঞান নেই, যিনি একটি অক্ষরও কারো কাছে শিক্ষা করেননি, পূর্ববর্তী কিতাবগুলো যাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত, যার কওমের সবাই বিদ্যাচর্চা ও অতীতের ইতিহাস হতে সম্পূর্ণ বে-খবর, তিনি স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে এবং পূর্ণ বাকপটুতার সাথে ও সঠিকভাবে অতীতের ঘটনাবলী এমনভাবে বর্ণনা করছেন যে, যেন তিনি সেগুলো স্বচক্ষে দর্শন করেছেন এবং তিনি যেন সেগুলো সংঘটিত হওয়ার সময় তথায় বিদ্যমান ছিলেন। এটা কি একথার প্রমাণ নয় যে, তাঁকে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে শিক্ষাদান করা হয়েছে, স্বয়ং আল্লাহ অহীর মাধ্যমে ওগুলো তাকে জানিয়ে দিয়েছেন? হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়েও এটা পেশ করেছেন এবং বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! মারইয়াম (আঃ)-এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে এর জন্যে যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল তুমি তখন তাদের নিকট ছিলে না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলে না।” (৩:৪৪) সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বিদ্যমান না থাকা এবং অবহিত থাকা সত্ত্বেও এ ঘটনাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যেন তিনি তথায় বিদ্যমান ছিলেন এবং তাঁর সামনেই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল, এটা তাঁর নবুওয়াতের স্পষ্ট দলীল ও পরিষ্কার নিদর্শন যে, তিনি অহীর মাধ্যমে এগুলোর খবর দিয়েছেন। অনুরূপভাবে হযরত নূহ (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “এগুলো অদৃশ্যের সংবাদ যেগুলো আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, ইতিপূর্বে এগুলো না তুমি জানতে, না তোমার কওম জানতো, সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং জেনে রেখো যে, শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদেরই।” (১১:৪৯) সূরায়ে ইউসুফেরও শেষে ইরশাদ হয়েছে (আরবি)

অর্থাৎ “এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি অহীর দ্বারা অবহিত করছি; ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌছেছিল, তখন তুমি তাদের সাথে ছিলে না।” (১২:১০২) সূরায়ে তোয়াহা-তে রয়েছে (আরবি)

অর্থাৎ “পূর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এইভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি।” (২০:৯৯) অনুরূপভাবে এখানেও হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম, নবুওয়াতের সূচনা ইত্যাদি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বলেনঃ “(হে মুহাম্মদ সঃ!) যখন আমি মূসা (আঃ)-কে বিধান দিয়েছিলাম তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না। বস্তুতঃ আমি অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম; অতঃপর তাদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়েছে। তুমি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না তাদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করবার জন্যে। আমিই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী। আর হে নবী (সঃ)! যখন আমি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলাম তখন তুমি তূর পর্বত পার্শ্বে হাযির ছিলে না।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আওয়ায দেয়া হয়ঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মত! তোমাদের চাওয়ার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে প্রদান করেছি এবং তোমরা দু’আ করবে তার পূর্বেই আমি ককূল করে নিয়েছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আবদুর রহমান আন নাসাঈ (রঃ) তার সুনান গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন)

হযরত মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমরা যখন তাদের বাপ-দাদাদের পৃষ্ঠদেশে ছিলে তখনই আমি তাদেরকে ডাক দিয়েছিলাম যে, আমি যখন তোমাকে নবী করে প্রেরণ করবো তখন তারা তোমার অনুসরণ করবে।”

কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো: “আমি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলাম। এটাই বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা, উপরেও এরই বর্ণনা রয়েছে। উপরে সাধারণভাবে বর্ণনা ছিল এবং এখানে বিশিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন তোমার প্রতিপালক মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করলেন।” (২৬:১০) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তার প্রতিপালক যখন তাকে পবিত্র ভূর উপত্যকায় আহ্বান করেন।” (৭৯:১৬) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর একটি আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তাকে আমি আহ্বান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আলাপে তাকে নিকটবর্তী করেছিলাম।” (১৯:৫২)

মহান আল্লাহ বলেনঃ এগুলোর মধ্যে একটি ঘটনাও তোমার উপস্থিতকালে এবং তোমার চোখের সামনে সংঘটিত হয়নি, বরং তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে দয়া স্বরূপ, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে। এটা এ জন্যেও যে, তাদের কাছে যেন কোন দলীল বাকী না থাকে এবং ওর করারও কিছু না থাকে যে, তাদের কাছে কোন রাসূল আসেননি এবং তাদেরকে কেউ সুপথ প্রদর্শন করেননি, করলে অবশ্যই তারা আল্লাহর নিদর্শন মেনে চলতো এবং তারা মুমিন হতো।

যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় স্বীয় পবিত্র কিতাব কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করার পর বলেনঃ “এটা এই জন্যে যে, তোমরা যেন বলতে না পারকিতাব তো আমাদের পূর্বে দুটি দলের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা তো এর পাঠ ও শিক্ষাদান হতে ছিলাম সম্পূর্ণ উদাসীন। যদি এ কিতাব আমাদের উপর অবতীর্ণ করা হতো তবে অবশ্যই আমরা তাদের চেয়ে বেশী সুপথগামী হতাম। এখন জেনে রেখো যে, তোমাদের কাছেও তোমাদের প্রতিপালকের দলীল, হিদায়াত ও রহমত এসে গেছে। অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ “এরা হলো সুসংবাদদাতা ও ভয়-প্রদর্শনকারী রাসূল যাতে লোকদের জন্যে রাসূলদের পরে কোন হুজ্জত বাকী না থাকে। আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে রাসূলশূন্য যুগে আমার রাসূল এসে গেছে যে তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, যাতে তোমরা বলতে না পার- আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসেনি, কারণ এখন তো তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভয়-প্রদর্শনকারী এসে গেছে।” (৫:১৯) এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে।

৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর

ইতিপূর্বে আল্লাহ তা’আলা বর্ণনা করেছেনঃ যদি নবীদেরকে প্রেরণ করার পূর্বে আমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করতাম তবে তাদের একথা বলার অধিকার থাকতো যে, তাদের কাছে নবী আগমন করলে তবে অবশ্যই তারা তাদেরকে মেনে চলতো। এজন্যেই আমি রাসূল প্রেরণ করেছি। বিশেষ করে আমি শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে পাঠিয়েছি। যখন তিনি জনগণের নিকট আগমন করেন তখন তারা চক্ষু ফিরিয়ে নেয়, মুখ ঘুরিয়ে নেয় এবং অত্যন্ত দর্পভরে বলেঃ হযরত মূসা (আঃ)-কে যেমন বহু মুজিযা দেয়া হয়েছিল যথা-লাঠি, হাতের ঔজ্জ্বল্য, তুফান, ফড়িং, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত এবং শস্য ও ফলের হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি, যেগুলো দেখে আল্লাহর শত্রুরা বিচলিত হয়ে পড়ে এবং সমুদ্রকে বিভক্ত করা, মেঘ দ্বারা ছায়া করা ও মান্না-সালওয়া অবতীর্ণ হওয়া ইত্যাদি, যেগুলো ছিল বড় বড় মুজিযা, তেমনিভাবে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে কেন দেয়া হয় না? তাদের একথার জবাবে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এ লোকগুলো যে ঘটনাকে উদাহরণ রূপে পেশ করছে এবং যেসব মুজিযা দেখতে চাচ্ছে এসব মু’জিযা হযরত মূসা (আঃ)-এর থাকা সত্ত্বেও কয়জন লোক তার উপর ঈমান এনেছিল? তারা তো পরিষ্কারভাবে বলেছিলঃ “মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) এ দুই ভাই যাদুকর ছাড়া কিছুই নয়। তারা আমাদের হতে শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে চায়। সুতরাং আমরা কখনো তাদের কথা মানতে পারি না। এভাবে তারা ঐ দুই নবী (আঃ)-কে অবিশ্বাস করে, ফলে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা বলেছিল, “এই দুই ভাই যাদুকর, তারা একত্রিত হয়ে আমাদেরকে খাটো করার জন্যে ও নিজেদেরকে বড় মানিয়ে নেয়ার জন্যেই এসেছে। আমরা তাদের প্রত্যেককেই প্রত্যাখ্যান করি।”

এখানে শুধু হযরত মূসা (আঃ)-এর উল্লেখ রয়েছে বটে, কিন্তু তারা দু ভাই এমনভাবে মিলে গিয়েছিলেন যে, যেন তারা দুজন এক। এ জন্যে একজনের উল্লেখই অপরজনের জন্যে যথেষ্ট মনে করা হয়। যেমন কবি বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন আমি কোন জায়গার ইচ্ছা করি তখন সেখানে আমার লাভ হবে কি ক্ষতি হবে তা আমি জানি না। এখানে কবি শুধু লাভের কথা উল্লেখ করেছেন, ক্ষতির কথা উল্লেখ করেননি। কেননা, লাভ ও ক্ষতি, ভাল ও মন্দ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটির সাথে অপরটি থাকা অপরিহার্য। এজন্যেই কবি শুধু কল্যাণের উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন, অনিষ্টের উল্লেখ তিনি করেননি।

মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ইয়াহূদীরা কুরায়েশদেরকে বলে যে, তারা যেন মুহাম্মাদ (সঃ)-কে এ কথা বলে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের কথার প্রতিবাদে বলেনঃ পূর্বে মূসা (আঃ)-কে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিলঃ উভয়ই যাদু, একে অপরকে সমর্থন করে, অর্থাৎ হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ)। তারা এই উত্তর পেয়ে নীরব হয়ে যায়। একটি উক্তি এও আছে যে, দু’জন যাদুকর দ্বারা হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। আর একটি উক্তি এটাও যে, দু’জন যাদুকর দ্বারা হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় উক্তি অপেক্ষা প্রথম উক্তিটিই বেশী দৃঢ় ও উত্তম। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। (আরবি) এর কিরআতের উপর এই ভাবার্থ। আর (আরবি) যাদের কিরআত তারা বলেন যে, এর দ্বারা তাওরাত ও কুরআন উদ্দেশ্য। এ দু’টি একটি অপরটির সত্যতা প্রতিপাদনকারী। কারো কারো মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাওরাত ও ইঞ্জীল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা ইঞ্জীল ও কুরআন উদ্দেশ্য। কোনটি সঠিক কথা তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। তবে এই কিরআতেও যাহেরী তাওরাত ও কুরআনের অর্থ সঠিক। কেননা এর পরেই আল্লাহ পাকের উক্তি রয়েছেঃ “তোমরাই তাহলে এ দু’টো অপেক্ষা বেশী হিদায়াত দানকারী কোন কিতাব আল্লাহ তা’আলার নিকট হতে নিয়ে এসো, যার আনুগত্য আমি করবো?” কুরআন কারীমে তাওরাত ও কুরআনকে অধিকাংশ জায়গায় একই সাথে আনয়ন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তুমি বল- কে ঐ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা নিয়ে মূসা (আঃ) এসেছিল, যা লোকদের জন্যে জ্যোতি ও হিদায়াত স্বরূপ?” (৬:৯২) এর পরেই তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এই কিতাবকেও (কুরআনকেও) আমি বরকতময় ও কল্যাণময় রূপে অবতীর্ণ করেছি। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমরা আমার অবতারিত এই কল্যাণময় কিতাবের অনুসরণ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তোমাদের উপর দয়া করা হবে।” (৬:১৫৬) জ্বিনেরা বলেছিলঃ “আমরা এমন এক কিতাব শ্রবণ করেছি যা মূসা (আঃ)-এর পরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা ওর পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যতা প্রতিপাদনকারী।” অরাকা ইবনে নওফল (রাঃ) বলেছিলেনঃ “এটা আল্লাহর রহস্যবিদ যাকে হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল।” চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় শাস্ত্রে গভীরভাবে মনোনিবেশকারী ব্যক্তির কাছে এটা স্পষ্ট যে, আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এই কুরআন মজীদ ও ফুরকান হামীদই বটে। এটা প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় দয়ালু নবী (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। এরপর তাওরাত শরীফের মর্যাদা, যাতে নূর ও হিদায়াত ছিল, যা অনুসারে নবীরা ও তাদের অনুসারীরা হুকুম জারী করতেন। ইঞ্জীল তো শুধু তাওরাতকে পূর্ণকারী এবং কোন কোন হারামকে হালালকারী ছিল। এজন্যেই এখানে বলা হয়েছেঃ তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহর নিকট হতে এক কিতাব আনয়ন কর, যা পথ-নির্দেশে এতদুভয় হতে উৎকৃষ্টতর হবে; আমি সে কিতাব অনুসরণ করবো। অতঃপর হে নবী (সঃ)! তারা যদি এতে অপারগ হওয়া সত্ত্বেও তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবে যে, তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর পথ-নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? এভাবে যারা নিজেদের নফসের উপর যুলুম করে সে শেষ পর্যন্ত সঠিক পথ লাভে বঞ্চিত হয়। আমি তো তাদের কাছে বিস্তারিতভাবে আমার বাণী পৌছিয়ে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। তাদের দ্বারা বলতে মুজাহিদ (রঃ) ও অন্যান্যদের মতে কুরায়েশদেরকে বুঝানো হয়েছে। স্পষ্ট ও প্রকাশমান কথা এটাই। কারো কারো মতে এদের দ্বারা রিফাআহ্ ও তার সঙ্গী নয়জন লোককে বুঝানো হয়েছে।

রিফাআহ্ ছিল হযরত সুফিয়া বিন্তে হুইয়াই (রাঃ)-এর মামা, যে তামীমাহ্ বিতে অহাবকে তালাক প্রদান করেছিল, যার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল আবদুর রহমান ইবনে যুবায়েরের সাথে।

أعوذ باللّٰه من الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1014)
[Where you can get peace:-]
www.motaher21.net
Sura:28
Para:20
Sura: Al-Qasas
Ayat: 44-51
28:44

وَ مَا کُنۡتَ بِجَانِبِ الۡغَرۡبِیِّ اِذۡ قَضَیۡنَاۤ اِلٰی مُوۡسَی الۡاَمۡرَ وَ مَا کُنۡتَ مِنَ الشّٰہِدِیۡنَ ﴿ۙ۴۴﴾

And you, [O Muhammad], were not on the western side [of the mount] when We revealed to Moses the command, and you were not among the witnesses [to that].

Proof of the Prophethood of Muhammad

Allah says:

وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا إِلَى مُوسَى الاَْمْرَ وَمَا كُنتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ

And you were not on the western side (of the Mount), when We made clear to Musa the commandment, and you were not among the witnesses.

Allah points out the proof of the Prophethood of Muhammad, whereby he told others about matters of the past, and spoke about them as if he were hearing and seeing them for himself. But he was an illiterate man who could not read books, and he grew up among a people who knew nothing of such things. Similarly, Allah told him about Maryam and her story, as Allah said:

وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُون أَقْلَـمَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ

You were not with them, when they cast lots with their pens as to which of them should be charged with the care of Maryam; nor were you with them when they disputed, (3:44),

meaning, `you were not present then, but Allah has revealed this to you.’

Similarly, Allah told him about Nuh and his people, and how He saved Nuh and drowned his people, then He said:

تِلْكَ مِنْ أَنْبَأءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَأ إِلَيْكَ مَا كُنتَ تَعْلَمُهَأ أَنتَ وَلَا قَوْمُكَ مِن قَبْلِ هَـذَا فَاصْبِرْ إِنَّ الْعَـقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ

This is of the news of the Unseen which We reveal unto you; neither you nor your people knew it before this. So, be patient. Surely, the (good) end is for those who have Taqwa. (11:49)

And at the end of the same Surah (Hud) Allah says:

ذَلِكَ مِنْ أَنْبَأءِ الْقُرَى نَقُصُّهُ عَلَيْكَ

That is some of the news of the towns which We relate unto you. (11:100)

And here, after telling the story of Musa from beginning to end and how Allah began His revelation to him and spoke with him,

Allah says:

وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا إِلَى مُوسَى الاَْمْرَ

And you were not on the western side (of the Mount), when We made clear to Musa the commandment,

meaning, `you — O Muhammad — were not on the western side of the mountain where Allah spoke to Musa from the tree which was to the east of it, in the valley.’

وَمَا كُنتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ

and you were not among the witnesses.

`to that event, but Allah has revealed this to you,’

so that it may be evidence and proof of events which happened centuries ago, for people have forgotten the evidence that Allah established against them and what was revealed to the earlier Prophets.

28:45

وَ لٰکِنَّاۤ اَنۡشَاۡنَا قُرُوۡنًا فَتَطَاوَلَ عَلَیۡہِمُ الۡعُمُرُ ۚ وَ مَا کُنۡتَ ثَاوِیًا فِیۡۤ اَہۡلِ مَدۡیَنَ تَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِنَا ۙ وَ لٰکِنَّا کُنَّا مُرۡسِلِیۡنَ ﴿۴۵﴾

But We produced [many] generations [after Moses], and prolonged was their duration. And you were not a resident among the people of Madyan, reciting to them Our verses, but We were senders [of this message].

 

وَلَكِنَّا أَنشَأْنَا قُرُونًا فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ

But We created generations, and long were the ages that passed over them.

وَمَا كُنتَ ثَاوِيًا فِي أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُو عَلَيْهِمْ ايَاتِنَا

And you were not a dweller among the people of Madyan, reciting Our Ayat to them.

meaning, `you were not living among the people of Madyan reciting Our Ayat to them, when you started to tell about Our Prophet Shu`ayb and what he said to his people and how they responded.’

وَلَكِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ

But it is We Who kept sending.

means, `but We revealed that to you and sent you to mankind as a Messenger.’

28:46

وَ مَا کُنۡتَ بِجَانِبِ الطُّوۡرِ اِذۡ نَادَیۡنَا وَ لٰکِنۡ رَّحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ لِتُنۡذِرَ قَوۡمًا مَّاۤ اَتٰىہُمۡ مِّنۡ نَّذِیۡرٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿۴۶﴾

And you were not at the side of the mount when We called [Moses] but [were sent] as a mercy from your Lord to warn a people to whom no warner had come before you that they might be reminded.

 

وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا

And you were not at the side of At-Tur when We called.

Qatadah said that:
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا
(And you were not at the side of At-Tur when We did call), refers to Musa, and this — and Allah knows best — is like the Ayah:

وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِىِّ إِذْ قَضَيْنَأ إِلَى مُوسَى الاٌّمْرَ

And you were not on the western side (of the Mount), when We made clear to Musa the commandment,

Here Allah puts it in a different and more specific way by describing it as a call.

This is like the Ayat:

وَإِذْ نَادَى رَبُّكَ مُوسَى

And (remember) when your Lord called Musa. (26:10)

إِذْ نَادَاهُ رَبُّهُ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى

When his Lord called him in the sacred valley of Tuwa. (79:16).

وَنَـدَيْنَـهُ مِن جَانِبِ الطُّورِ الاٌّيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيّاً

And We called him from the right side of At-Tur, and made him draw near to Us for a talk with him. (19:52)

وَلَكِن رَّحْمَةً مِّن رَّبِّكَ

But (you are sent) as a mercy from your Lord,

means, `you were not a witness to any of those things, but Allah has revealed them to you and told you about them as a mercy from Him to you and to His servants, by sending you to them,’

لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أَتَاهُم مِّن نَّذِيرٍ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

to give warning to a people to whom no warner had come before you, in order that they may remember or receive admonition.

means, `so that they may be guided by that which you bring from Allah.’

28:47

وَ لَوۡ لَاۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُوۡا رَبَّنَا لَوۡ لَاۤ اَرۡسَلۡتَ اِلَیۡنَا رَسُوۡلًا فَنَتَّبِعَ اٰیٰتِکَ وَ نَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۴۷﴾

And if not that a disaster should strike them for what their hands put forth [of sins] and they would say, “Our Lord, why did You not send us a messenger so we could have followed Your verses and been among the believers?”…

 

وَلَوْلَا أَن تُصِيبَهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولاً

And if (We had) not (sent you to the people of Makkah) — in case a calamity should seize them for (the deeds) that their hands have sent forth, they would have said:”Our Lord! Why did You not send us a Messenger!

meaning:`and We have sent you to them to establish proof against them, and to give them no excuse when the punishment of Allah comes to them because of their disbelief, lest they offer the excuse that no Messenger or warner came to them.’

This is like what Allah says about the situation after He revealed His blessed Book the Qur’an:

أَن تَقُولُواْ إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَى طَأيِفَتَيْنِ مِن قَبْلِنَا وَإِن كُنَّا عَن دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِينَ

أَوْ تَقُولُواْ لَوْ أَنَّا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَى مِنْهُمْ

فَقَدْ جَاءكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ

Lest you should say:”The Book was sent down only to two sects before us, and for our part, we were in fact unaware of what they studied.”

Or lest you should say:”If only the Book had been sent down to us, we would surely have been better guided than they.”

So, now has come unto you a clear proof from your Lord, and a guidance and a mercy… (6:156-157)

رُّسُلً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِيَلَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ

Messengers as bearers of good news as well as warning in order that mankind should have no plea against Allah after the Messengers. (4:165)

يَـأَهْلَ الْكِتَـبِ قَدْ جَأءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلَى فَتْرَةٍ مَّنَ الرُّسُلِ أَن تَقُولُواْ مَا جَأءَنَا مِن بَشِيرٍ وَلَا نَذِيرٍ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَشِيرٌ وَنَذِيرٌ

O People of the Scripture!

Now has come to you Our Messenger making (things) clear unto you, after a break in (the series of) Messengers, lest you say:”There came unto us no bringer of glad tidings and no warner.” But now has come unto you a bringer of glad tidings and a warner. (5:19)

And there are many similar Ayat.

فَنَتَّبِعَ ايَاتِكَ وَنَكُونَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ

We would then have followed Your Ayat and would have been among the believers.

28:48

فَلَمَّا جَآءَہُمُ الۡحَقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡا لَوۡ لَاۤ اُوۡتِیَ مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی ؕ اَوَ لَمۡ یَکۡفُرُوۡا بِمَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی مِنۡ قَبۡلُ ۚ قَالُوۡا سِحۡرٰنِ تَظٰہَرَا ۟ٝ وَ قَالُوۡۤا اِنَّا بِکُلٍّ کٰفِرُوۡنَ ﴿۴۸﴾

But when the truth came to them from Us, they said, “Why was he not given like that which was given to Moses?” Did they not disbelieve in that which was given to Moses before? They said, “[They are but] two works of magic supporting each other, and indeed we are, in both, disbelievers.”

 

The stubborn Response of the Disbelievers

Allah tells:

فَلَمَّا جَاءهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُوا

But when the truth has come to them from Us, they say:

Allah tells us that if people were to be punished before proof was established against them, they would use the excuse that no Messenger came to them, but when the truth did come to them through Muhammad, in their stubbornness, disbelief, ignorance and misguided thinking, they said:

لَوْلَا أُوتِيَ مِثْلَ مَا أُوتِيَ مُوسَى

Why is he not given the like of what was given to Musa,

Meaning — and Allah knows best — many signs like the staff, the hand, the flood, the locusts, the lice, the frogs, the blood, the destruction of crops and fruits — which made things difficult for the enemies of Allah — and the parting of the sea, the clouds (following the Children of Israel in the wilderness and) shading them, the manna and quails, and other clear signs and definitive proof, miracles which Allah wrought at the hands of Musa as evidence and proof against Fir`awn and his chiefs and the Children of Israel. But all of this had no effect on Fir`awn and his chiefs; on the contrary, they denied Musa and his brother Harun, as Allah tells us:

أَجِيْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ ءابَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَأءُ فِى الاٌّرْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُوْمِنِينَ

Have you come to us to turn us away from what we found our fathers following, and that you two may have greatness in the land We are not going to believe you two! (10:78)

فَكَذَّبُوهُمَا فَكَانُواْ مِنَ الْمُهْلَكِينَ

So they denied them both and became of those who were destroyed. (23:48)
The Rebellious do not believe in Miracles

Allah says here:

أَوَلَمْ يَكْفُرُوا بِمَا أُوتِيَ مُوسَى مِن قَبْلُ

Did they not disbelieve in that which was given to Musa of old!

Did not mankind disbelieve in those mighty signs which were given to Musa!

قَالُوا سِحْرَانِ تَظَاهَرَا

They say:”Two kinds of magic, each helping the other!”

cooperating or working one with the other.

وَقَالُوا إِنَّا بِكُلٍّ كَافِرُونَ

And they say:”Verily, in both we are disbelievers.”

meaning, `we disbelieve in each of them.’ Because of the close relationship between Musa and Harun, mention of one includes the other.
False Accusation that Musa and Harun (peace be upon them both) practiced Magic

Mujahid bin Jabr said,

“The Jews told Quraysh to say this to Muhammad, then Allah said:

`Did they not disbelieve in that which was given to Musa of old! They say:Two kinds of magic, each helping the other!’

This refers to Musa and Harun, may the peace and blessings of Allah be upon them both,
تَظَاهَرَا
(each helping the other) i.e., working together and supporting one another.”

This was also the view of Sa`id bin Jubayr and Abu Razin that the phrase “two kinds of magic” referred to Musa and Harun.

This is a good suggestion.

And Allah knows best.
The Response to this False Accusation

About the Ayah
سِحْرَانِ تَظَاهَرَا
(Two kinds of magic, each helping the other!) Ali bin Abi Talhah and Al-Awfi reported that Ibn Abbas said:

“this refers to the Tawrah and the Qur’an, because Allah says next:

قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ مِّنْ عِندِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَى مِنْهُمَا أَتَّبِعْهُ
.

Then bring a Book from Allah, which is a better guide than these two, that I may follow it…

قُلْ مَنْ أَنزَلَ الْكِتَابَ الَّذِي جَاء بِهِ مُوسَى نُورًا وَهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُونَهُ قَرَاطِيسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيرًا وَعُلِّمْتُم مَّا لَمْ تَعْلَمُواْ أَنتُمْ وَلَا ابَاوُكُمْ قُلِ اللّهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِي خَوْضِهِمْ يَلْعَبُونَ

وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ

Say :”Who then sent down the Book which Musa brought, a light and a guidance to mankind which you (the Jews) have made into (separate) paper sheets, disclosing (some of it) and concealing much. And you were taught that which neither you nor your fathers knew.”

Say:”Allah (sent it down).”

Then leave them to play in their vain discussions.

And this is a blessed Book which We have sent down, (6:91-92)

And at the end of the same Surah, Allah says:

ثُمَّ ءاتَيْنَا مُوسَى الْكِتَـبَ تَمَامًا عَلَى الَّذِى أَحْسَنَ

Then, We gave Musa the Book, to complete (Our favor) upon those who would do right. (6:154)

وَهَـذَا كِتَـبٌ أَنزَلْنَـهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

And this is a blessed Book which We have sent down, so follow it and have Taqwa of Allah, that you may receive mercy. (6:155)

And the Jinn said:

إِنَّا سَمِعْنَا كِتَـباً أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوسَى مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ

Verily, we have heard a Book sent down after Musa, confirming what came before it. (46:30)

Waraqah bin Nawfal said,

“This is An-Namus, who came down to Musa.”

And those who are possessed of insight know instinctively that among the many Books which He has sent down to His Prophets, there is no Book more perfect, more eloquent or more noble than the Book which He revealed to Muhammad, which is the Qur’an.

Next to it in status and greatness is the Book which Allah revealed to Musa bin Imran, which is the Book concerning which Allah says:

إِنَّأ أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالاٌّحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُواْ مِن كِتَـبِ اللَّهِ وَكَانُواْ عَلَيْهِ شُهَدَاءَ

Verily, We did send down the Tawrah, therein was guidance and light, by which the Prophets, who submitted themselves to Allah’s will, judged for the Jews. And the rabbis and the priests, for to them was entrusted the protection of Allah’s Book, and they were witnesses thereto. (5:44)

The Injil was revealed as a continuation and complement of the Tawrah and to permit some of the things that had been forbidden to the Children of Israel.

Allah says:

قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ مِّنْ عِندِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَى مِنْهُمَا أَتَّبِعْهُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
28:49

قُلۡ فَاۡتُوۡا بِکِتٰبٍ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ہُوَ اَہۡدٰی مِنۡہُمَاۤ اَتَّبِعۡہُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۴۹﴾

Say, “Then bring a scripture from Allah which is more guiding than either of them that I may follow it, if you should be truthful.”

 

Then bring a Book from Allah, which is a better guide than these two, that I may follow it, if you are truthful.

meaning, `in your efforts to refute the truth with false arguments.

28:50

فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿٪۵۰﴾

But if they do not respond to you – then know that they only follow their [own] desires. And who is more astray than one who follows his desire without guidance from Allah ? Indeed, Allah does not guide the wrongdoing people.

 

فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ

But if they answer you not,

means, `if they do not respond to what you tell them, and do not follow the truth,’

فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءهُمْ

then know that they only follow their own lusts.

means, with no basis or evidence.

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ

And who is more astray than one who follows his own lusts, without guidance from Allah,

means, with no guidance taken from the Book of Allah.

إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

Verily, Allah guides not the people who are wrongdoers

28:51

وَ لَقَدۡ وَصَّلۡنَا لَہُمُ الۡقَوۡلَ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿ؕ۵۱﴾

And We have [repeatedly] conveyed to them the Qur’an that they might be reminded.

 

وَلَقَدْ وَصَّلْنَا لَهُمُ الْقَوْلَ

And indeed now We have conveyed the Word,

Mujahid said:

“We have explained the Word to them.”

As-Suddi said something similar.

Qatadah said:

“Allah is saying, `He has told them what He did in the past and what He will do in the future.”‘

لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

in order that they may remember.

Mujahid and others said:

وَصَّلْنَا لَهُمُ
(We have conveyed the Word) means, to Quraysh

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply