(বই#১০২১)   [   *কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : -] www.motaher21.net সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত পারা:২০ ২৮-৪০ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০২১)
[   *কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : -]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত
পারা:২০
২৮-৪০ নং আয়াত:-
২৯:২৮
وَ لُوۡطًا اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِہٖۤ اِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الۡفَاحِشَۃَ ۫ مَا سَبَقَکُمۡ بِہَا مِنۡ اَحَدٍ مِّنَ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۲۸﴾
আর স্মরণ করুন লূতের কথা, যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের আগে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি।’
২৯:২৯
اَئِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الرِّجَالَ وَ تَقۡطَعُوۡنَ السَّبِیۡلَ ۬ۙ وَ تَاۡتُوۡنَ فِیۡ نَادِیۡکُمُ الۡمُنۡکَرَ ؕ فَمَا کَانَ جَوَابَ قَوۡمِہٖۤ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوا ائۡتِنَا بِعَذَابِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۲۹﴾
তোমরা কি পুরুষের সাথে সমকাম করছ, তোমরা পথ অবরোধ করছ এবং নিজেদের মজলিসে ঘৃণ্য কাজ করছ?’ উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এই বলল যে, ‘আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন কর; যদি তুমি সত্যবাদী হও।’
২৯:৩০
قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ عَلَی الۡقَوۡمِ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿٪۳۰﴾
তিনি বললেন, ‘হে আমার রব ! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন।’
২৯:৩১
وَ لَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَاۤ اِبۡرٰہِیۡمَ بِالۡبُشۡرٰی ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا مُہۡلِکُوۡۤا اَہۡلِ ہٰذِہِ الۡقَرۡیَۃِ ۚ اِنَّ اَہۡلَہَا کَانُوۡا ظٰلِمِیۡنَ ﴿ۚۖ۳۱﴾
যখন আমার প্রেরিত ফিরিশতাগণ সুসংবাদসহ ইব্রাহীমের নিকট এল, তখন তারা বলল, ‘আমরা এ শহরের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। এর অধিবাসিগণ অবশ্যই সীমালংঘনকারী।’
২৯:৩২
قَالَ اِنَّ فِیۡہَا لُوۡطًا ؕ قَالُوۡا نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَنۡ فِیۡہَا ٝ۫ لَنُنَجِّیَنَّہٗ وَ اَہۡلَہٗۤ اِلَّا امۡرَاَتَہٗ ٭۫ کَانَتۡ مِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۳۲﴾
ইবরাহীম বললেন, ‘এ জনপদে তো লূত রয়েছে।’ তারা বলল, ‘সেখানে কারা আছে, তা আমরা ভাল জানি, নিশ্চয় আমরা লূতকে ও তার পরিজনবর্গকে রক্ষা করব, তার স্ত্রীকে ছাড়া ; সে তো পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
২৯:৩৩
وَ لَمَّاۤ اَنۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوۡطًا سِیۡٓءَ بِہِمۡ وَ ضَاقَ بِہِمۡ ذَرۡعًا وَّ قَالُوۡا لَا تَخَفۡ وَ لَا تَحۡزَنۡ ۟ اِنَّا مُنَجُّوۡکَ وَ اَہۡلَکَ اِلَّا امۡرَاَتَکَ کَانَتۡ مِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۳۳﴾
তারপর যখন আমার প্রেরিতগণ লূতের কাছে পৌঁছলো তাদের আগমনে সে অত্যন্ত বিব্রত ও সংকুচিত হৃদয় হয়ে পড়লো। তারা বললো, “ভয় করো না এবং দুঃখও করো না। আমরা তোমাকে ও তোমার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবো, তোমার স্ত্রীকে ছাড়া, সে পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
২৯:৩৪
اِنَّا مُنۡزِلُوۡنَ عَلٰۤی اَہۡلِ ہٰذِہِ الۡقَرۡیَۃِ رِجۡزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا کَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۳۴﴾
‘নিশ্চয় আমরা এ জনপদবাসীদের উপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা পাপাচার করছিল।’
২৯:৩৫
وَ لَقَدۡ تَّرَکۡنَا مِنۡہَاۤ اٰیَۃًۢ بَیِّنَۃً لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿۳۵﴾
আমি এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন ছেড়ে রেখেছি সেই সম্প্রদায়ের জন্য যাদের বোধশক্তি আছে।
২৯:৩৬
وَ اِلٰی مَدۡیَنَ اَخَاہُمۡ شُعَیۡبًا ۙ فَقَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَ ارۡجُوا الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ ﴿۳۶﴾
আর মাদইয়ানের দিকে আমি পাঠালাম তাদের ভাই শু’আইবকে। সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো, শেষ দিনের প্রত্যাশী হও এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী হয়ে বাড়াবাড়ি করে বেড়িও না।”
২৯:৩৭
فَکَذَّبُوۡہُ فَاَخَذَتۡہُمُ الرَّجۡفَۃُ فَاَصۡبَحُوۡا فِیۡ دَارِہِمۡ جٰثِمِیۡنَ ﴿۫۳۷﴾
কিন্তু ওরা তাকে মিথ্যাবাদী মনে করল; অতঃপর ওরা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল; ফলে ওরা নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল।
২৯:৩৮
وَ عَادًا وَّ ثَمُوۡدَا۠ وَ قَدۡ تَّبَیَّنَ لَکُمۡ مِّنۡ مَّسٰکِنِہِمۡ ۟ وَ زَیَّنَ لَہُمُ الشَّیۡطٰنُ اَعۡمَالَہُمۡ فَصَدَّہُمۡ عَنِ السَّبِیۡلِ وَ کَانُوۡا مُسۡتَبۡصِرِیۡنَ ﴿ۙ۳۸﴾
আর আমি আ’দ ও সামূদকে ধ্বংস করেছিলাম; ওদের বাড়ি-ঘরই তোমাদের জন্য এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। শয়তান ওদের কাজকে ওদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল এবং ওদেরকে সৎপথ অবম্বনে বাধা দিয়েছিল; যদিও ওরা ছিল বিচক্ষণ।
২৯:৩৯
وَ قَارُوۡنَ وَ فِرۡعَوۡنَ وَ ہَامٰنَ ۟ وَ لَقَدۡ جَآءَہُمۡ مُّوۡسٰی بِالۡبَیِّنٰتِ فَاسۡتَکۡبَرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا کَانُوۡا سٰبِقِیۡنَ ﴿ۚۖ۳۹﴾
আর আমরা ধ্বংস করেছিলাম কারূন, ফিরআউন ও হামানকে। আর অবশ্যই মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল; অতঃপর তারা যমীনে অহংকার করেছিল; কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি।
২৯:৪০
فَکُلًّا اَخَذۡنَا بِذَنۡۢبِہٖ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡہِ حَاصِبًا ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ اَخَذَتۡہُ الصَّیۡحَۃُ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ خَسَفۡنَا بِہِ الۡاَرۡضَ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ اَغۡرَقۡنَا ۚ وَ مَا کَانَ اللّٰہُ لِیَظۡلِمَہُمۡ وَ لٰکِنۡ کَانُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۴۰﴾
সুতরাং তাদের প্রত্যেককেই আমরা তার অপরাধের জন্য পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমরা পাঠিয়েছিলাম পাথরকুচিসম্পন্ন প্রচণ্ড ঝটিকা , তাদের কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ, কাউকে আমরা প্রোথিত করেছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে আমরা করেছিলাম নিমজ্জিত। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের প্রতি যুলুম করবেন; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*কওমে লূতের চারিত্রিক বিকৃতি ও ধ্বংস : এরপর আসছে হযরত লুতের কাহিনী। হযরত ইবরাহীমের সাথে হিজরত করার পরের এ কাহিনী। তারা উভয়ে জর্দান নদী বিধৌত সমতল ভূমিতে বসতি স্থাপন করলেন, এরপর এক সময় হযরত লুত মৃত সাগরের তীরে একটা গােত্রের কাছে একাকী থেকে গেলেন। পরে এই সাগরের নাম হয় লূত উপসাগর। এই গােত্রটা সাদুম নামক শহরে বাস করতাে। হযরত লূত এই গােত্রে বিয়ে করলেন এবং তাদের সাথে মিলে মিশে জীবন যাপন করতে লাগলেন। সহসা এই জাতির মধ্যে এক ভয়ংকর পাপাচারের প্রাদুর্ভাব ঘটলাে। কোরআন বলছে, মানবেতিহাসে তাদের মধ্যেই সর্বপ্রথম এই পাপাচারের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিলাে। এ হচ্ছে সেই পুরুষের সাথে পুরুষের বিকৃত যৌন মিলন। অথচ এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের জন্যে নারীদেরকেই সৃষ্টি করেছেন যাতে উভয় লিংগের মিলনে স্বাভাবিক উৎপাদক হিসেবে একটি একক তৈরী হয়, যা সকল প্রাণীর মধ্যে অব্যাহত সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালু রাখবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জীবনের ক্রমবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক প্রাণীকে জোড়ায় জোড়ায় তথা নারী ও পুরুষের আকারে সৃষ্টি করেছেন। আর মহান স্রষ্টার ইচ্ছা অনুসারে আদিকাল থেকে এভাবেই জীবজগতের সৃষ্টির একটা ধারাবাহিকতা চলে আসছে। হযরত লূত(আ.)-এর জাতির আগে একই লিংগের মধ্যে এরূপ ভ্রষ্ট ও বিকৃত মিলন আর কখনাে কোথাও হয়নি। ‘আর লূতের কথা স্মরণ করাে, যখন সে তার জাতিকে বললাে, তােমরা এমন গর্হিত অশ্লীল…'(আয়াত ২৮, ২৯, ৩০) উক্ত আয়াতগুলাের মাধ্যমে হযরত লুত তার জাতিকে সম্বোধন করে যে কথা বলেছেন তা থেকে বুঝা যায়, তাদের মধ্যে সব রকমের অনাচার, অপকর্ম ও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছিলাে। তন্মধ্যে একটা হলাে, তারা সমকামে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলাে, যা শুধু মানুষের মধ্যে নয়, সমগ্র সৃষ্টিজগতের কোথাও, কোনাে প্রাণীর মধ্যেই ইতিপূর্বে সংঘটিত হয়নি। তাদের ভেতরে বিশেষত পুরুষে পুরুষে সমকাম প্রচলিত ছিলাে। এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও নােংরা ধরনের এক বিরল কর্ম, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বভাব ও প্রকৃতির সার্বিক বিকৃতিরই লক্ষণ। নারীর সাথে যৌন সম্পর্কেও স্বভাবের বিকৃতি ঘটতে পারে, যদি তা শালীনতা ও পবিত্রতার সীমা অতিক্রম করে যায়। সে ক্ষেত্রেও যৌন সম্পর্ক অশ্লীল অপরাধমূলক কাজ বলে গণ্য হবে, কিন্তু তারপরও সেটা স্বাভাবিকতার গন্ডির মধ্যেই থাকবে। পক্ষান্তরে উপরােক্ত বিরল ও নযিরবিহীন বিকৃতি সমগ্র জীবজগতের স্বাভাবিক নিয়ম লংঘনের শামিল। ওটা দৈহিক ও মানসিক উভয় ধরনের বিকৃতি। কেননা মহান আল্লাহ স্বামী স্ত্রীর যৌন মিলনের স্বাদ ও আনন্দকে জীবনের বৃহত্তর ধারাবাহিকতার সাথে এবং এই মিলনঘটিত স্বাদ আনন্দকে প্রজাতিক বিস্তৃতি ও বংশ বৃদ্ধির সাথে সমন্বিত করেছেন। আর স্বামী স্ত্রী উভয়কে এই মিলনের আনন্দ উপভােগ করার শারীরিক মানসিক যােগ্যতাও অনুরূপ সমন্বিতভাবে দান করেছেন, কিন্তু একই লিংগধারী দু’ব্যক্তির অস্বাভাবিক ও বিরল যৌন মিলনের যেমন কোনাে উদ্দেশ্য নেই, তেমনি উদ্দেশ্যহীনতার কারণে আল্লাহ তায়ালা এই কাজের ভেতরে কোনাে স্বাভাবিক স্বাদ আনন্দও রাখেননি। যদি কেউ এতে কোনাে স্বাদ আনন্দ পায়, তবে বুঝতে হবে যে, তার যােগসূত্র সৃষ্টির স্বাভাবিক ধারা থেকে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তার এমন রুচি বিকৃতি ঘটেছে যে, তাকে আর কোনাে সুস্থ স্বাভাবিক জীব বলা যায় না। তাদের আর একটা দুষ্কৰ্ম ছিলাে সড়ক পথে ডাকাতি ও রাহাজানি। পথচারীদের টাকা পয়সা, সহায় সম্পদ লুণ্ঠন এবং সন্ত্রাস সৃষ্টি ছাড়াও তাদের ওপর পাশবিক বলাৎকার এর অন্তর্ভুক্ত ছিলাে। ছিনতাই, লুণ্ঠন ও দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি এই ডাকাতি রাহাজানি সমকাম ব্যাপকতর করারও মাধ্যম হয়ে ওঠেছিলাে। আর এই সমকামটা তারা করতে প্রকাশ্যে, সম্মিলিতভাবে ও সর্বসম্মতভাবে। কেউ কাউকে দেখে লজ্জা বা সংকোচবােধ করতাে না। এভাবে তারা অশ্লীলতা, স্বভাব বিকৃতি, রুচি বিকৃতি ও ধৃষ্টতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলাে। ফলে তাদের সংশােধনের আর কোনাে আশা ছিলাে না। হযরত লূত(আ.)-এর কাহিনী এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে এসেছে। এটা সুস্পষ্ট যে, প্রথম প্রথম তিনি মিষ্ট ভাষায় তাদের সদুপদেশ দিচ্ছিলেন এবং অশ্লীলতা পরিহার করার আহবান জানাচ্ছিলেন, কিন্তু তারা তাদের অপকর্ম যথারীতি অব্যাহত রাখে। অবশেষে তিনি তাদের আল্লাহর আযাবের ভীতি প্রদর্শন করেন এবং তাদের এই অপকর্মের জঘন্যতা বুঝাতে চেষ্টা করেন। তার জাতির একমাত্র জবাব ছিলাে এই যে, তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহর আযাব নিয়ে এসাে। এ কথাটার মধ্য দিয়ে তাদের যে মনােভাব প্রকাশিত হয়েছে তা হচ্ছে ভীতি প্রদর্শনের মােকাবেলায় চরম ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্য প্রর্দশন; নবীর হুমকিকে মিথ্যা সাব্যস্তকরণের সাথে সাথে চ্যালেঞ্জ প্রদান এবং এমন এক বিদ্রোহ, যা পরিত্যাগ করে আনুগত্যের পথে ফিরে আসার কোনাে আশা নেই। হযরত লূত(আ.) তাদের অনেক বুঝালেন, কিন্তু কোনাে কাজ হলাে না। অবশেষে তিনি আল্লাহর কাছে সর্বশেষ সাহায্যের জন্যে আবেদন জানালেন ‘হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে দুষ্কৃতকারীদের ওপর বিজয়ী করাে।’ হযরত লূত(আ.)-এর এই দোয়ার সাথেই কাহিনীর একটা পর্বের সমাপ্তি ঘটেছে। এ দোয়া কবুল হলাে। দোয়া বাস্তবায়িত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতারা পথিমধ্যে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর সাথে সাক্ষাত করলেন এবং তার যে স্ত্রী এ যাবত বন্ধ্যা ছিলেন তার মাধ্যমেই তাকে একজন সৎ সন্তান দেয়া হবে বলে সুসংবাদ দিলেন। পরবর্তী ৩১-৩২ নং আয়াতে এ বিষয়টার উল্লেখ রয়েছে। হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর সাথে ফেরেশতাদের সাক্ষাত এবং কথাবার্তাও এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, এটা বর্ণনা করা এখানে লক্ষ্য নয়। ইতিপূর্বে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর কাহিনীতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ইসহাক ও ইয়াকুব দান করেছিলেন। আর ইসহাক(আ.)-এর জন্ম এই সুসংবাদের বিষয়বস্তু। তাই সে কাহিনী এখানে বিশদভাবে বর্ণনা করেননি। কেননা মূল উদ্দেশ্য হলাে লূতের কাহিনী পূর্ণ করা। এ জন্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর সাথে ফেরেশতাদের সাক্ষাতের উদ্দেশ্য ছিলাে সুসংবাদ দেয়া। তারপর তারা তাদের প্রথম করণীয় কাজ সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন এই বলে যে, ‘আমরা এই জনপদবাসীকে ধ্বংস করতে যাচ্ছি। এ জনপদের অধিবাসীরা অপরাধী।’ হযরত ইবরাহীম(আ.) নিজের স্বভাবসুলভ দয়া ও মমত্ববােধের কারণে অস্থির হয়ে ফেরেশতাদের স্মরণ করিয়ে দেন, ওখানে তাে লূত রয়েছে। আর লূত তাে সৎমানুষ, সে কোনাে অপরাধী নয়। ফেরেশতারা হযরত ইবরাহীম(আ.)-কে তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে হযরত লূত(আ.) সম্পর্কে আশ্বস্ত করলেন এবং তাকে জানালেন যে, তাদের করণীয় কাজ কী এবং তা কিভাবে সমাধা করা যাবে, সেটা তাদের বেশ জানা আছে। তারা বললাে, ওখানে কে কে আছে, তা আমরা বিলক্ষণ জানি। ‘লূত ও তার পরিবারকে আমরা অবশ্যই রক্ষা করবাে, তবে তার স্ত্রীকে নয়। সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের মধ্যে থাকবে'(আয়াত-৩২) হযরত লুত(আ.)-এর স্ত্রীর অভিরুচি ছিলাে সেই দেশের অধিবাসীদের অনুরূপ। সে তাদের যাবতীয় অন্যায় অনাচার, অপরাধ ও বিকৃতির সমর্থক ছিলাে। ব্যাপারটা বিস্ময়কর বৈ কি। এরপর তৃতীয় দৃশ্যের অবতারণা। এ দৃশ্যে রয়েছেন হযরত লুত এবং তার সাথে এক দল সুদর্শন যুবকের বেশে কতিপয় ফেরেশতা। হযরত লূত তাে তার জাতির নোংরা চরিত্র সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তিনি এই ভেবে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলেন যে, কখন না জানি তার মেহমানদের ওপর সেই উপদ্রব নেমে আসে, যা ঠেকানাের কোনাে ক্ষমতাই তার নেই। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সেই যুবকদের আগমন তার কাছে ভালাে লাগেনি। তিনি এতে বিব্রত বােধ করছিলেন। ৩৩ নং আয়াতে এ বিষয়টাই তুলে ধরা হয়েছে। ‘আমার দূতরা যখন লূত কাছে এলাে, তখন সে অশ্বস্তি ও বিব্রত বােধ করলাে।’ এরপর মেহমানদের ওপর জনতার হুমড়ি খেয়ে পড়া, তাদের সাথে হযরত লুতের বাক্য বিনিময় এবং তাদের বিকৃত রুচির পরিচয়দানের ব্যাপারটা এখানে উহ্য রাখা হয়েছে। শুধু সর্বশেষ ঘটনাটা তুলে ধরা হয়েছে। সেটা এই যে, হযরত লুত এমন উৎকণ্ঠিত ও বিব্ৰত অবস্থায় দেখে যুবকরা নিজেদের আসল পরিচয় ও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে। তারা বললাে, ‘আপনি ভয় পাবেন না এবং চিন্তা করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার স্বজনদেরকে রক্ষা করবাে। তবে আপনার স্ত্রীকে নয়। কারণ সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত'(আয়াত ৩৩-৩৪) এ দুটো আয়াতে সেই জনপদ ও তার সমগ্র অধিবাসীদের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ফুটে ওঠেছে। এ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে হযরত লুত ও তার মােমেন সাথীরা রক্ষা পেয়েছিলেন। কাদা মাটি মাখা পাথর বৃষ্টির মাধ্যমে এ ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছিলাে। খুব সম্ভবত এটা একটা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত জাতীয় ঘটনা ছিলাে এবং তা গােটা এলাকাকে ওলট-পালট করে গ্রাস করে ফেলেছিলাে। এ ধরনের গলিত লাভা বর্ষণ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতেরই অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। এই ধ্বংসযজ্ঞের লক্ষণগুলাে এখনাে বিদ্যমান। চিন্তাশীল ও বুদ্ধিমান লােকদের জন্যে এতে আল্লাহর নিদর্শনাবলী পরিস্ফূট হয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। আল্লাহ তায়ালা ৩৫ নং আয়াতে এ কথাই বলেছেন। বস্তুত নােংরা ও বিকারগ্রস্ত বিষবৃক্ষরূপী এই ঘৃণ্য মানবগােষ্ঠীর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ও বংশ বিস্তারের কোনাে যােগ্যতাই আর অবশিষ্ট ছিলাে না। শুধু ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই ছিলাে ওদের একমাত্র অনিবার্য পরিণতি।

*কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : এরপর হযরত শােয়ায়ব ও মাদইয়ানের কাহিনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে ৩৬ ও ৩৭ নং আয়াতে। হযরত শােয়ায়বের উক্তি- ‘আল্লাহকে ভয় করাে ও আখেরাতের (পুরস্কারের) আশা রাখাে’ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে যে, ইসলামের দাওয়াত ও ইসলামী আদর্শের মৌল বাণী সব সময় এক অভিন্ন। এক আল্লাহর দাসত্ব আনুগত্য আর আখেরাতের শাস্তি ও পুরস্কারের আশা পােষণ ইসলামী আকীদার মূল কথা। যা হযরত শােয়ায়বের জাতি মাপে ও ওযনে কম দেয়া এবং বেশী নেয়ার মাধ্যমে হারাম সম্পদ উপার্জন, তাদের পথ দিয়ে যাতায়াতকারী বণিকদের সম্পদ লুণ্ঠন, মানুষকে ঠকানাে, সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি এবং মানুষের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানাের ন্যায় চারিত্রিক দোষগুলাে সংশােধনের সহায়ক ছিলাে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তাদের রসূলকে ও তার যাবতীয় সদুপদেশকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাে। এ ধরনের প্রত্যাখ্যানকারী জাতিকে ধ্বংস করার চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা যে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, সে কথা ৩৮ নং আয়াতে অতি সংক্ষেপে ব্যক্ত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে জানানাে হয়েছে যে, এই জাতির ওপর দু’পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালার আযাব নাযিল হয়। প্রথমে একটা বিকট চিৎকারের শব্দে সমগ্র দেশবাসী মূর্ছা যায় এবং সবাই নিশ্চল নিথর ও নিস্তব্ধ হয়ে নিজ নিজ বাড়ীতে পড়ে থাকে। ইতিপূর্বে তারা যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দ্বারা মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করতাে এবং তর্জন গর্জন করে মানুষের সর্বস্ব লুন্ঠন করে বেড়াতাে, তারই শান্তি আল্লাহ তায়ালা তাদের এভাবে দিলেন। অনুরূপভাবে আদ ও সামুদ জাতিদ্বয়ের ধ্বংসেরও সংক্ষিপ্ত বিবরণ এসেছে ৩৯ নং আয়াতে। আদ জাতি আরব উপদ্বীপের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত হাযরামাউতের নিকটবর্তী আহকাফ অঞ্চলে বাস করতাে। আর সামুদ বাস করতাে সর্বউত্তরে অবস্থিত ‘ওয়াদিল কোরার নিকটবর্তী ‘আল-হেজরে’। আদ জাতিকে তীব্র গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় দিয়ে এবং সামুদকে দেশ কাপানাে চিৎকারের শব্দ দিয়ে ধবংস করা হয়। তাদের আবাসভূমির ধ্বংসাবশেষ আরবদের কাছে সুপরিচিত ছিলাে। শীত ও গ্রীষ্মের বাণিজ্যিক সফরে যাওয়া আসার সময় তারা সেই জায়গায় প্রত্যক্ষ করে, কিভাবে আল্লাহ তায়ালা একটা জাতিকে ক্ষমতা ও মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে আরােহণ করানাের পর ধ্বংস করে দিয়েছেন। এই সংক্ষিপ্ত আয়াতটাতে তাদের গােমরাহীর মূল কারণ, সেই সাথে অন্যদের গােমরাহীর মূল কারণও তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর শয়তান তাদের কাজগুলােকে সুশােভিত করে তুলে ধরে এবং তাদের বিপথগামী করে। অথচ তারা চক্ষুষ্মান ছিলো’ অর্থাৎ তাদের বিবেক ছিলাে এবং তাদের সামনে সৎপথের সন্ধানও ছিলাে, কিন্তু শয়তান তাদের বিপথগামী করেছে এবং তাদের কার্যকলাপকে ভালাে কাজ হিসাবে সাজিয়েছে। তাদের আত্মম্ভরিতার এই ফাক দিয়ে এবং নিজেদের ভালাে কাজ, শক্তি ও সম্পদের বড়াইয়ের সুযােগ গ্রহণ করে শয়তান তাদের কাছে আসে এবং তাদের হেদায়াত ও ঈমানের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ‘অথচ তারা চক্ষুম্মান ছিলাে।’ অর্থাৎ বুদ্ধিমান ও বিবেকবান ছিলাে। এরপর কারূন, ফেরাউন ও হামানের কথা বলা হয়েছে যে, ‘মূসা সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে তাদের কাছে এসেছিলাে, কিন্তু তারা পৃথিবীতে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করলাে। শেষ পর্যন্ত তারা জয় লাভ করতে পারেনি।’ কারূন হযরত মুসা(আ.)-এর সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলাে। সে নিজের অগাধ সম্পত্তি ও বিদ্যা বুদ্ধির জোরে তাদের বিরুদ্ধে চলে গেলাে এবং সদাচার, ন্যায়সম্মত আচরণ, বিনয়, বিদ্রোহ না করা ও অরাজকতা না ছড়ানাের সমস্ত উপদেশ সে অগ্রাহ্য করলাে, আর ফেরাউন ছিলাে আগ্রাসী একনায়ক। সে জঘন্যতম অপকর্মে লিপ্ত থাকতাে, সাধারণ মানুষকে ব্যংগ-বিদ্রুপ করতাে, তাদের নানা দলে-উপদলে বিভক্ত করে রাখতে, বনী ইসরাঈল গােত্রের পুরুষ সন্তানদের হত্যা করতাে এবং মেয়ে সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতাে। এ সবই সে করতাে নিছক যুলুম অত্যাচার চালানাের নেশায়। তার এই যুলুম অত্যাচারে ও নিত্য নতুন অপকৌশল উদ্ভাবনে সহযােগী ছিলাে তার মন্ত্রী হামান, কিন্তু এতাে শক্তি সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তি তাদের আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে পারেনি, আল্লাহর আযাব থেকে তাদের বাঁচাতে পারেনি; বরং তাদের আক্রান্ত করেছে। তারা দীর্ঘকাল মানুষকে নিষ্ঠুর নির্যাতনে নিষ্পেষিত করার পর আল্লাহ তায়ালা তাদের সবার ওপর আযাব নাযিল করে ধ্বংস করে দেন। পৃথিবীতে টিকে থাকা ও বিজয়ী হওয়ার উপকরণাদি, শক্তি এবং সহায় সম্পদের অধিকারী হয়েও তারা বাঁচতে পারেনি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের সকলকে আমি তাদের অপরাধের দরুন পাকড়াও করেছি…'(আয়াত-৪০) আ’দ জাতিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও সামুদকে বিকট শব্দ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিলাে। কারূনকে তার প্রাসাদসহ মাটিতে ধসিয়ে এবং ফেরাউন ও হামানকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিলাে। ‘আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর যুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছিলাে।’

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আল আ’রাফ ১০ ; হূদ ৭ ; আল হিজর ৪-৫ ; আল আম্বিয়া ৫ ; আশ শু’আরা ১৯ ; আন নামল ৪ ; আস সাফ্‌ফাত ১৪ ও আল কামার ২ রুকু।
# তাদের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হচ্ছো, যেমন সূরা আ’রাফে বলা হয়েছেঃ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ “তোমরা যৌন কামনা পূর্ণ করার জন্য মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে গিয়ে থাকো।”
# এ অশ্লীল কাজটি লুকিয়ে চাপিয়েও করো না বরং প্রকাশ্যে নিজেদের মজলিসে পরস্পরের সামনে বসে করে থাকো। একথাটিই সূরা আন নামলে এভাবে বলা হয়েছেঃ

أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ وَأَنْتُمْ تُبْصِرُونَ

“তোমরা কি এমনই বিগড়ে গিয়েছো যে, প্রকাশ্যে দর্শকমণ্ডলীর সম্মুখেই অশ্লীল কাজ করে থাকো? ”
# সূরা হূদ ও সূরা হিজরে এর যে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে তা হচ্ছে এই যে, লূতের জাতির ওপর আযাব নাযিল করার জন্য যেসব ফেরেশতাকে পাঠানো হয়েছিল তারা প্রথমে হযরত ইবরাহীমের কাছে হাজির হন এবং তাকে হযরত ইসহাকের এবং তার পর হযরত ইয়াকূবের জন্মেও সুসংবাদ দেন তারপর বলেন, লূতের জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের পাঠানো হয়েছে।
# “এ জনপদ” বলে লূত জাতির সমগ্র এলাকাকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ) এ সময় ফিলিস্তিনের জাবরুন (বর্তমান আল খলীল) শহরে থাকতেন। এ শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কয়েক মাইল দূরে মরুসাগরে (dead Sea) অংশ রয়েছে। সেখানে পূর্বে বাস করতো লূত জাতির লোকেরা এবং বর্তমানে এ সমগ্র এলাকা রয়েছে সাগরের পানির তলায়। এ এলাকাটি নিম্নভূমির দিকে অবস্থিত এবং জাবরুনের উঁচু উঁচু পর্বতগুলো থেকে পরিষ্কার দেখা যায়। তাই ফেরেশতারা সেদিকে ইঙ্গিত করে হযরত ইবরাহীমকে বলেন, “আমরা এ জনপদটি ধ্বংস করে দেবো।”(দেখুন সূরা আশ শু’আরাঃ ১১৪ টীকা )
# সূরা হূদে এ কাহিনীর প্রারম্ভিক অংশ এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, প্রথমে হযরত ইবরাহীম (আ) ফেরেশতাদেরকে মানুষের আকৃতিতে দেখে ভয় পেয়ে যান। কারণ এ আকৃতিতে ফেরেশতাদের আগমন কোন ভয়াবহ অভিযানের পূর্বাভাস দেয়। তারপর যখন তারা তাকে সুসংবাদ দান করেন এবং তার ভীতি দূর হয়ে যায় তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, লূতের জাতি হচ্ছে এ অভিযানের লক্ষ। তাই সে জাতির জন্য তিনি করুণার আবেদন জানাতে থাকেনঃ

فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الرَّوْعُ وَجَاءَتْهُ الْبُشْرَى يُجَادِلُنَا فِي قَوْمِ لُوطٍ – إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّاهٌ مُنِيبٌ

“কিন্তু তার এ আবেদন গৃহীত হয়নি এবং বলা হয় এ ব্যাপারে এখন আর কিছু বলো না। তোমার রবের ফয়সালা হয়ে গেছে এ আযাবকে এখন আর ফেরানো যাবে না।”

يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا إِنَّهُ قَدْ جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ وَإِنَّهُمْ آتِيهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُودٍ

এ জবাবের মাধ্যমে হযরত ইবরাহীম (আ) যখন বুঝতে পারেন লূত জাতির জন্য আর কোন অবকাশের আশা নেই তখনই তার মনে জাগে হযরত লূতের চিন্তা। তিনি যা বলেন তা এখানে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেন “সেখানে তো লূত রয়েছে।” অর্থাৎ এ আযাব যদি লূতের উপস্থিতিতে নাযিল হয় তাহলে তিনিও তার পরিবারবর্গ তা থেকে কেমন করে নিরাপদ থাকবেন।
# এ মহিলা সম্পর্কে সূরা তাহরীমের ১০ আয়াতে বলা হয়েছেঃ হযরত লূতের এই স্ত্রী তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না। এ জন্য তার ব্যাপারে এ ফয়সালা করা হয় যে, একজন নবীর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে।

সম্ভবত হিজরত করার পর হযরত লূত জর্দান এলাকায় বসতি স্থাপন করে থাকবেন এবং তখনই তিনি এ জাতির মধ্যে বিয়ে করে থাকবেন। কিন্তু তার সাহচর্যে জীবনের একটি বিরাট অংশ পার করে দেবার পরও এ মহিলা ঈমান আনেনি এবং তার সকল সহানুভূতি ও আকর্ষণ নিজের জাতির ওপরই কেন্দ্রীভূত থাকে। যেহেতু আল্লাহর কাছে আত্মীয়তা ও রক্ত সম্পর্কেও কোন গুরুত্ব নেই, প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে ফয়সালা হয় তার ঈমান ও চরিত্রের ভিত্তিতে, তাই নবীর স্ত্রী হওয়ায় তার কোন লাভ হয়নি। তার পরিণাম তার স্বামীর অনুরূপ হয়নি বরং যে জাতির ধর্ম ও চরিত্র সে গ্রহণ করে রেখেছিল তার অনুরূপ হয়।
# এ বিব্রতবোধ ও সংকুচিত হৃদয় হবার কারণ এই ছিল যে, ফেরেশতারা উঠতি বয়সের সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী রূপ ধরে এসেছিলেন। হযরত লূত নিজের জাতির চারিত্রিক ও নৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাই তাদের আসা মাত্রই পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন এ জন্য যে, তিনি যদি এ মেহমানদেরকে অবস্থান করতে দেন তাহলে ঐ ব্যভিচারী জাতির হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে আর যদি অবস্থান করতে না দেন তাহলে সেটা হবে বড়ই অভদ্র আচরণ। তাছাড়া এআশঙ্কাও আছে, তিনি যদি এ মুসাফিরদেরকে আশ্রয় না দেন তাহলে অন্য কোথাও তাদের রাত কাটাতে হবে এবং এর অর্থ হবে যেন তিনি নিজেই তাদেরকে নেকড়ের মুখে ঠেলে দিলেন। এর পরের ঘটনা আর এখানে বর্ণনা করা হয়নি। সূরা হূদ ও কামারে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এ কিশোরদের আগমন সংবাদ শুনে শহরের বহু লোক হযরত লূতের গৃহে এসে ভীড় জমালো। তারা ব্যভিচার কর্মে লিপ্ত হবার উদ্দেশ্যে মেহমানদেরকে তাদের হাতে সোপর্দ করার জন্য চাপ দিতে লাগলো।
# আমাদের ব্যাপারে। এরা আমাদের কোন ক্ষতি করবে এ ভয়ও করো না এবং এদের হাত থেকে কিভাবে আমাদের বাঁচাবে সে চিন্তাও করো না। এ সময়ই ফেরেশতারা হযরত লূতের কাছে এ রহস্য ফাঁস করেন যে, তারা মানুষ নন বরং ফেরেশতা এবং এ জাতির ওপর আযাব নাযিল করার জন্য তাদেরকে পাঠানো হয়েছে। সূরা হূদে এর বিস্তারিত বিবরণ এভাবে দেয়া হয়েছে, লোকেরা যখন একনাগাড়ে লূতের গৃহে প্রবেশ করে চলছিল এবং তিনি অনুভব করছিলেন এখন আর কোন ক্রমেই নিজের মেহমানদেরকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন না তখন তিনি পেরেশান হয়ে চিৎকার করে বলেনঃ

لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ

“হায়! আমার যদি শক্তি থাকতো তোমাদের সোজা করে দেবার অথবা কোন শক্তিশালী সহায়তা আমি লাভ করতে পারতাম।”

এ সময় ফেরেশতারা বলেনঃ يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَصِلُوا إِلَيْكَ

“হে লূত! আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখ্‌খনো তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না।”
# এই সুস্পষ্ট নিদর্শনটি হচ্ছে মরুসাগর। একে লূত সাগরও বলা হয়। কুরআন মাজীদেও বিভিন্ন স্থানে মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এই জালেম জাতিটির ওপর তার কৃতকর্মের বদৌলতে যে আযাব নাযিল হয়েছিল তার একটি চিহ্ন আজও প্রকাশ্য রাজপথে বর্তমান রয়েছে। তোমরা সিরিয়ার দিকে নিজেদের বাণিজ্য সফরে যাবার সময় দিনরাত এ চিহ্নটি দেখে থাকো। وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُقِيمٍ(الحجر)وَإِنَّكُمْ لَتَمُرُّونَ عَلَيْهِمْ مُصْبِحِينَ – وَبِاللَّيْلِ (الصافات) বর্তমান যুগে একথাটি প্রায় নিশ্চয়তা সহকারেই স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে যে, মরুসাগরের দক্ষিণ অংশটি একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পনজনিত ভূমিধ্বসের মাধ্যমে অস্তিত্বলাভ করেছে এবং এ ধ্বসে যাওয়া অংশেই অবস্থিত ছিল লূত জাতির কেন্দ্রীয় নগরী সাদোম (Sodom)। এ অংশে পানির মধ্যে কিছু ডুবন্ত জনপদের ধ্বংসাবশেষও দেখা যায়। সাম্প্রতিককালে অত্যাধুনিক ডুবুরী সরঞ্জামের সহায়তায় কিছু লোকের নীচে নেমে ঐসব ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো এ প্রচেষ্টাগুলোর ফলাফল জানা যায়নি। (আরো বেশি জানার জন্য দেখুন, সূরা আস শু’আরা ১১৪ টীকা।)
# লূতের জাতির কর্মেও শরীয়াতবিহিত শাস্তির জন্য দেখুন, সূরা আ’রাফ ৬৮ টীকা।
# তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আ’রাফ ১১ ; হূদ ৮ ; এবং আশ শু’আরা ১০ রুকু ।
# এর দু’টো অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে আখেরাতের আগমন কামনা করো। একথা মনে করো না, যা কিছু আছে ব্যস এ দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই এবং এরপর আর এমন কোন জীবন নেই যেখানে তোমাদের নিজেদের যাবতীয় কাজ-কর্মেও হিসেব দিতে হবে এবং তার পুরস্কার ও শাস্তি লাভ করতে হবে। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এমন কাজ করো যার ফলে তোমরা আখেরাতে ভালো পরিণতি লাভের আশা করতে পারো।
# একথা স্বীকার করলো না যে, আল্লাহর রসূল হযরত শু’আইব(আ), যে শিক্ষা তিনি দিচ্ছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং একে না মানলে তাদেরকে আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হতে হবে।
# আরবের যেসব এলাকায় এ দু’ টি জাতির বসতি ছিল আরবের প্রতিটি শিশুও তা জানতো। দক্ষিণ আরবের যেসব এলাকা বর্তমানে আহকাফ, ইয়ামান ও হাদরা মাউত নামে পরিচিত প্রাচীনকালে সে এলাকাগুলোতে ছিল আদ জাতির বসবাস। আরবের লোকেরা একথা জানতো। হিজাযের দক্ষিণ অংশে রাবেগ থেকে আকাবাহ পর্যন্ত এবং মদিনা ও খাইবার থেকে তাইমা ও তাবুক পর্যন্ত সমগ্র এলাকা সামূদ জাতির ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ দেখা যায়। কুরআন নাযিল হবার যুগে এ ধ্বংসাবশেষগুলোর অবস্থা বর্তমানের তুলনায় আরো বেশি সু্‌স্পষ্ট থেকে থাকবে।
# অজ্ঞ ও মূর্খ ছিল না। তারা ছিল তদানীন্তন যুগের শ্রেষ্ঠ সুসভ্য ও প্রগতিশীল লোক। নিজেদের দুনিয়ার কার্যাবলী সম্পাদন করার ব্যাপারে তারা পূর্ণ জ্ঞান বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতো। তাই একথা বলা যাবে না যে, শয়তান তাদের চোখে ঠুলি বেঁধে দিয়ে বুদ্ধি বিনষ্ট করে দিয়ে নিজের পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। বরঞ্চ তারা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে ও খোলা চোখে শয়তান যে পথে পাড়ি জমিয়েছিল এবং এমন পথ পরিহার করেছিল যা তাদের কাছে নীরস, বিস্বাদ এবং নৈতিক বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ হবার কারণে কষ্টকর মনে হচ্ছিল।
# পালিয়ে আল্লাহর পাকড়াও থেকে আত্মরক্ষা করার ক্ষমতা ছিল না। আল্লাহর কৌশল ব্যর্থ করে দেবার ক্ষমতা তাদের ছিল না।
# আদ জাতি। তাদের ওপর অবিরাম সাত রাত ও আট দিন পর্যন্ত ভয়াবহ তুফান চলতে থাকে। (সূরা আল হাককাহ, ৭ আয়াত)
# এ পর্যন্ত যেসব বক্তব্য শুনানো হলো সেগুলোর বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল দুটি। একদিকে এগুলো মু’মিনদেরকে শোনানো হয়েছে, যাতে তারা হিম্মতহারা, ভগ্ন হৃদয় ও হতাশ না হয়ে পড়ে এবং বিপদ ও সংকটের কঠিন আবর্তেও ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তা সহকারে সত্য ন্যায়ের ঝাণ্ডা উঁচু করে রাখে যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর সাহায্য অবশ্যই এসে যাবে, তিনি জালেমদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং সত্যের ঝাণ্ডা উঁচু করে দেবেন। অন্যদিকে এগুলো এমন জালেমদেরকে শুনানো হয়েছে যারা তাদের ধারণামতে ইসলামী আন্দোলকে সমূলে উচ্ছেদ করে দেবার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিল। তাদেরকে সতর্ক দেয়া হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর সংযম ও সহিষ্ণুতার ভুল অর্থ গ্রহণ করছো। তোমরা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বকে একটি অরাজক রাজত্ব মনে করছো। তোমাদের যদি এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ, সীমালংঘন, জুলুম, নিপীড়ন ও অসৎকাজের জন্য পাকড়াও না করা হয়ে থাকে এবং সংশোধিত হবার জন্য অনুগ্রহ করে দীর্ঘ অবকাশ দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা নিজে নিজেই একথা মনে করে বসো না যে, এখানে আদতে কোন ইনসাফকারী শক্তিই নেই এবং এ ভূখণ্ডে লাগামহীনভাবে অনন্তকাল পর্যন্ত যা ইচ্ছে তাই করে যেতে পারবে। এ বিভ্রান্তি শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে এমন পরিণতির সম্মুখীন করবেই ইতিপূর্বে নূহের জাতি, লূতের জাতি ও শু’আইবের জাতি যার সম্মুখীন হয়েছিল, আদ ও সামূদ জাতিকে যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং কারুন ও ফেরাউন যে পরিণতি স্বচক্ষে দেখে নিয়েছিল।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা তার নবী হযরত লূত (আঃ) সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁর কওমকে তাদের বদভ্যাস হতে বাধা দিতে থাকেন। তাদেরকে তিনি বলেনঃ “তোমাদের মত অশ্লীল কর্ম তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউই করেনি। কুফরী, রাসূলকে অবিশ্বাস, আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা ইত্যাদি তো তারা করতোই, কিন্তু তারা পুরুষে উপগত হতো, যে কাজ তাদের পূর্বে ভূ-পৃষ্ঠে কেউ কখনো করেনি।

দ্বিতীয় বদভ্যাস তাদের এই ছিল যে, তারা রাহাজানি করতো, লুটপাট করতো, হত্যা করতো এবং অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করতো। নিজেদের মজলিসে, সভা-সমিতিতে তারা প্রকাশ্যে ঘৃণ্য কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়তো। কেউ কাউকেও বাধা দিতো না। এমন কি কেউ কেউ তো বলেন যে, হস্তমৈথুনও তারা প্রকাশ্যভাবে করতো। তারা পরস্পর গুহ্যদ্বার দিয়ে বায় ছেড়ে দিয়ে হো হো করে হাসতো, ভেড়া লড়াতো, মোরগ লড়াতো এবং এ ধরনের আরো বহু অসার ও বাজে কাজে তারা লিপ্ত থাকতো। প্রকাশ্যভাবে আমোদ-ফুর্তি করে তারা পাপের কাজ করতো। হাদীস শরীফে আছে যে, তারা পথচারীদের সামনে চীৎকার ও হট্টগোল করতো এবং তাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করতো। তারা বাঁশী বাজাতো, কবুতর উড়াতো ও উলঙ্গ হয়ে যেতো। কুফরী, হঠকারিতা এবং ঔদ্ধত্যপনা তাদের এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, নবী (আঃ)-এর উপদেশের জবাবে তাঁকে তারা বলতোঃ “ছেড়ে দাও তোমার উপদেশবাণী। যদি তুমি সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন কর।” শেষে অসহ্য হয়ে হযরত লুত (আঃ) আল্লাহর সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রার্থনা করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন।”
৩১-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত লূত (আঃ)-এর কওম যখন তার কথা মানলো না তখন তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলেন। ফলে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে প্রেরণ করলেন। মানুষের রূপ ধরে ফেরেশতারা প্রথমে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বাড়ীতে মেহমান হিসেবে আগমন করলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে ফেললেন এবং তাদের সামনে তা হাযির করলেন। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন যে, তারা খাদ্যের প্রতি মোটেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন না তখন তিনি মনে মনে ভয় পেয়ে গেলেন। ফেরেশতারা তখন তার মনতুষ্টি করতে গিয়ে বললেন যে, তাঁদের একটি সুসন্তান জন্মগ্রহণ করবে। তাঁর স্ত্রী হযরত সারা (রাঃ), যিনি তথায় উপস্থিত ছিলেন, এ খবর শুনে অত্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করলেন। সূরায়ে হৃদে ও সূরায়ে হিজরে এর বিস্তারিত তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর ফেরেশতারা তাদের আগমনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁদের উদ্দেশ্য অবগত হয়ে ধারণা করলেন যে, যদি হযরত লুত (আঃ)-এর কওমকে আরো কিছুদিন অবকাশ দেয়া হয় তবে হয়তো তারা সুপথে ফিরে আসবে। তাই তিনি ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ “সেখানে তো হযরত লুত (আঃ) রয়েছেন!” উত্তরে ফেরেশতারা বললেনঃ “তাঁর ব্যাপারে আমরা উদাসীন বা অমনোযোগী নই। তাকে ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করতে আমরা আদিষ্ট হয়েছি। তবে তার স্ত্রী অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা, সে তার কওমের সাথে সহযোগিতা করে থাকে। এখান হতে বিদায় গ্রহণ করে তাঁরা হযরত লূত (আঃ)-এর নিকট পৌঁছলেন। তাঁদেরকে দেখেই হযরত লূত (আঃ)-এর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। তাঁর কেঁপে ওঠার কারণ এই যে, যদি তাঁর কওম তাঁর মেহমানদের আগমন সংবাদ শুনতে পায় তবে দৌড়িয়ে তার বাড়ীতে আসবে এবং তাঁকে অপ্রস্তুত ও ব্যতিব্যস্ত করে ফেলবে। যদি তিনি তাঁর এই মেহমানদেরকে তার বাড়ীতে রাখেন তবে তারা এদের হাতে পড়ে যাবেন। তিনি তো তাঁর কওমের বদভ্যাস সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এ জন্যেই তিনি অত্যন্ত চিন্তিত ও লজ্জিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু ফেরেশতারা তার মনোভাব বুঝতে পেরে তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “আপনি ভয় করবেন না, দুঃখও করবেন না। আমরা তো আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা। আপনার কওমকে ধ্বংস করার জন্যে আমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে। আপনাকে ও আপনার পরিবারর্গকে আমরা রক্ষা করবো। তবে আপনার স্ত্রীকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। কেননা, সেও আপনার কওমের সাথে সহযোগিতা করেছে। তাদের উপর আসমানী গযব নাযিল করা হবে এবং তাদের দুষ্কর্মের ফল দেখিয়ে দেয়া হবে।”

অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাদের জনপদকে যমীন হতে উঠিয়ে আসমান পর্যন্ত নিয়ে যান এবং সেখান হতে উল্টিয়ে ফেলে দেন। তারপর তাদের নাম অংকিত পাথর তাদের উপর বর্ষিত হয় এবং যে শাস্তিকে তারা বহু দূরের মনে করছিল তা খুবই নিকটে হয়ে গেল। তাদের বসতি স্থলে একটি তিক্ত ও দুর্গন্ধময় পানির বিল বা জলাশয় রয়ে গেল। এটা লোকদের জন্যে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের মাধ্যম হয়ে গেল। জ্ঞানী লোকেরা তাদের দূরবস্থা ও ধ্বংসলীলার কথা স্মরণ করে যেন আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণের আস্পর্ধা না দেখায়। আরববাসীদের ভ্রমণের পথে রাত-দিন এই দৃশ্য চোখের সামনে পড়তো।

৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত শুআইব (আঃ) মাদইয়ানে স্বীয় কওমকে উপদেশ দেন। তাদেরকে তিনি এক ও অংশীবিহীন আল্লাহর ইবাদত করার হুকুম করেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে ভয় প্রদর্শন করেন। তাদেরকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা বিশ্বাস করাতে গিয়ে তিনি বলেনঃ “ঐদিনের জন্যে তোমরা কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ কর। ঐ দিনের খেয়াল। রেখে লোকদের উপর যুলুম ও অবিচার করা হতে বিরত থাকো। আল্লাহর যমীনে বিপর্যয়, বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টি করো না। অন্যায় ও দুষ্কর্ম হতে দূরে থাকো।”

তাদের মধ্যে একটি দোষ এও ছিল যে, তারা মাপে ও ওজনে কম করতো, মানুষের হক তারা নষ্ট করে দিতো। তারা রাস্তা বন্ধ করে ফেলতো এবং সাথে সাথে তারা আল্লাহ ও তার রাসূল (আঃ)-এর সাথে কুফরী করতো। তারা তাদের নবী (আঃ)-এর উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করেনি। বরং তাকে তারা মিথ্যাবাদী বলে। এর ফলে তাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। কঠিন ভূমিকম্প শুরু হয় এবং সাথে সাথে এমন জোরে শব্দ হয় যে, প্রাণ উড়ে যায়। তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে যায়। তাদের পূর্ণ ঘটনা সূরায়ে আরাফ ও সূরায়ে শুআ’রাতে গত হয়েছে।

৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর

আ’দেরা ছিল হযরত হূদ (আঃ)-এর সম্প্রদায়। তারা আহকাফে বাস করতো। ওটা ছিল ইয়ামনের শহরগুলোর মধ্যে একটি শহর। এটা হারামাউতের নিকটবর্তী ছিল।

সামূদীরা ছিল হযরত সালেহ (আঃ)-এর কওমের লোক। তারা হিজরে বসবাস করতো, যা ওয়াদীকুরার নিকটে ছিল। আরববাসীরা এই দুই সম্প্রদায়ের বাসভূমি সম্পর্কে ছিল পূর্ণ ওয়াকিফহাল।

কারূন ছিল একজন সম্পদশালী লোক, যার পরিপূর্ণ ধনভাণ্ডারের চাবি একদল শক্তিশালী লোককে উঠাতে হতো ।

ফিরাউন ছিল মিসরের বাদশাহ্। আর হামান ছিল তার প্রধানমন্ত্রী। তার যুগেই হযরত মূসা (আঃ)-কে নবীরূপে তার নিকট প্রেরণ করা হয়। ফিরাউন ও হামান উভয়েই কিবতী কাফির। যখন তাদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা চরমে পৌছে, তারা আল্লাহর একত্ববাদকে অস্বীকার করে বসে, রাসূলদেরকে (আঃ) কষ্ট দেয় এবং তাদেরকে অবিশ্বাস করে তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেন। আ’দ সম্প্রদায়ের উপর তিনি প্রবল ঝটিকা প্রেরণ করেন। তারা তাদের শক্তির বড়ই গর্ব করতো। কেউ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে এটা তারা বিশ্বাসই করতো না। আল্লাহ তাআলা তাদের উপর প্রচণ্ড বায়ু প্রেরণ করেন, যা যমীন হতে পাথর উঠিয়ে উঠিয়ে তাদের উপর বর্ষণ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ বায়ু এমন প্রচণ্ড আকার ধারণ করে যে, তাদেরকে একেবারে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং সেখান হতে উল্টো মুখে নীচে নিক্ষেপ করে। মাথার ভরে পড়ে তাদের মাথা দেহ হতে পৃথক হয়ে যায় এবং তাদের এমন অবস্থা হয় যে, যেন খেজুরের গাছ, যার কাণ্ড পৃথক হয়ে গেছে।

সামূদ সম্প্রদায়ের উপরও আল্লাহর হুজ্জত পূর্ণ হয়। তাদেরকে নিদর্শন দেয়া হয়। তাদের দাবী ও চাহিদামত পাথরের মধ্য থেকে তাদের চোখের সামনে উষ্ট্ৰী বের হয়ে আসে। কিন্তু তথাপি তাদের ভাগ্যে ঈমান আসেনি। বরং হঠকারিতায় তারা বাড়তেই থাকে। নবী হযরত সালেহ (আঃ)-কে ভয় প্রদর্শন করতে ও ধমক দিতে থাকে। ঈমানদারদেরকে তারা বলতে শুরু করেঃ “তোমরা আমাদের শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও, অন্যথায় আমরা তোমাদেরকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করে ফেলবো।” ফলে তাদেরকে এক গুরুগম্ভীর শব্দ দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হয়।

কারূন ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। সে মহা-প্রতাপান্বিত আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করতঃ ভূ-পৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। যমীনে সে গর্বভরে চলতে থাকে এবং ধনের গর্বে গর্বিত হয় ও ফুলে ওঠে। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসে। ফলে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে তার দলবল ও প্রাসাদসহ ভূ-গর্ভে প্রোথিত করেন। আজ পর্যন্ত সে প্রোথিত হতেই আছে।

ফিরাউন, হামান এবং তাদের দলবলকে সকাল সকালই একই সাথে একই মুহূর্তে সমুদ্রে নিমজ্জিত করা হয়। তাদের মধ্যে এমন একজনও বাঁচেনি যে তাদের নাম নিতে পারে। আল্লাহ পাক এসব কিছু যে করেছিলেন তা তাদের প্রতি তাঁর যুলুম ছিল না। বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। এটা ছিল তাদের কৃতকর্মেরই ফল।

এই বর্ণনা এখানে ক্রমপর্যায়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমে অবিশ্বাসকারী উম্মতদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারপর তাদের প্রত্যেককে বিভিন্ন আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, সর্বপ্রথম যাদেরকে প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণের দ্বারা ধ্বংস করে দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে তাদের দ্বারা হযরত লুত (আঃ)-এর কওমকে বুঝানো হয়েছে। আর নিমজ্জিত করে দেয়া কওম দ্বারা বুঝানো হয়েছে হযরত নূহ (আঃ)-এর কওমকে। কিন্তু এ উক্তিটি সঠিক নয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটা বর্ণিত আছে বটে, কিন্তু সনদের মধ্যে ইনকিতা বা ছেদ-কাটা আছে। এই দুই সম্প্রদায়ের ধ্বংসের বর্ণনা এভাবেই সবিস্তারে বর্ণিত হয়ে গেছে। অতঃপর বহু দূরত্বের পরে এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। হযরত কাতাদা (রঃ) হতে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, প্রস্তর বৃষ্টি যাদের উপর বর্ষিত হয়েছিল তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হযরত লূত (আঃ)-এর কওম। আর বিকট ও গুরুগম্ভীর শব্দ দ্বারা যাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয় তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত শুআয়েব (আঃ)-এর কওম। কিন্তু এই উক্তিটিও এই আয়াতগুলো হতে দূরে রয়েছে। এসব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।

 

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1021)
[Some History of destroyed nations:-]
www.motaher21.net
Sura:29
Para:20
Sura: Al-Ankabut
Ayat: 28-40
29:28

وَ لُوۡطًا اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِہٖۤ اِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الۡفَاحِشَۃَ ۫ مَا سَبَقَکُمۡ بِہَا مِنۡ اَحَدٍ مِّنَ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۲۸﴾

And [mention] Lot, when he said to his people, “Indeed, you commit such immorality as no one has preceded you with from among the worlds.

 

The preaching of Lut and what happened between Him and His People

Allah tells:

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِينَ
29:29

اَئِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الرِّجَالَ وَ تَقۡطَعُوۡنَ السَّبِیۡلَ ۬ۙ وَ تَاۡتُوۡنَ فِیۡ نَادِیۡکُمُ الۡمُنۡکَرَ ؕ فَمَا کَانَ جَوَابَ قَوۡمِہٖۤ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوا ائۡتِنَا بِعَذَابِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۲۹﴾

Indeed, you approach men and obstruct the road and commit in your meetings [every] evil.” And the answer of his people was not but they said, “Bring us the punishment of Allah, if you should be of the truthful.”

 

أَيِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ

And (remember) Lut, when he said to his people:

“You commit immoral sins which none has preceded you in (committing) it in all creatures. Verily, you practice sodomy with men, and rob the wayfarer!”

Allah tells us that His Prophet Lut, peace be upon him, denounced his people for their evil deed and their immoral actions in having intercourse with males, a deed which none of the sons of Adam had ever committed before them. As well as doing this, they also disbelieved in Allah and rejected and opposed His Messenger, they robbed wayfarers, they would lie in wait on the road, kill people and loot their possessions.

وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنكَرَ

And practice Al-Munkar in your meetings.

This means, `in your gatherings you do and say things that are not befitting, and you do not denounce one another for doing such things.’

Some said that they used to have intercourse with one another in public; this was the view of Mujahid.

Some said that they used to compete in passing gas and laughing. This was the view of A’ishah, may Allah be pleased with her, and Al-Qasim.

Some of them said that they used to make rams fight one another, or organize cockfights. They used to do all of these things, and they were even eviler than that.

فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلاَّ أَن قَالُوا ايْتِنَا بِعَذَابِ اللَّهِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

But his people gave no answer except that they said:”Bring Allah’s torment upon us if you are one of the truthful.”

This is indicative of their disbelief, scornful attitude and stubbornness.

29:30

قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ عَلَی الۡقَوۡمِ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ﴿٪۳۰﴾

He said, “My Lord, support me against the corrupting people.”

 

So Allah’s Prophet asked for help against them, and:

قَالَ

He said:

رَبِّ انصُرْنِي عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِينَ

My Lord! Give me victory over the people who are corrupt.

29:31

وَ لَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَاۤ اِبۡرٰہِیۡمَ بِالۡبُشۡرٰی ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا مُہۡلِکُوۡۤا اَہۡلِ ہٰذِہِ الۡقَرۡیَۃِ ۚ اِنَّ اَہۡلَہَا کَانُوۡا ظٰلِمِیۡنَ ﴿ۚۖ۳۱﴾

And when Our messengers came to Abraham with the good tidings, they said, “Indeed, we will destroy the people of that Lot’s city. Indeed, its people have been wrongdoers.”

 

The Angels went to Ibrahim and then to Lut, may peace be upon them both

Allah tells:

وَلَمَّا جَاءتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى قَالُوا إِنَّا مُهْلِكُو أَهْلِ هَذِهِ الْقَرْيَةِ إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوا ظَالِمِينَ

And when Our messengers came to Ibrahim with the glad tidings they said:”Verily, we are going to destroy the people of this town; truly, its people have been wrongdoers.”

When Lut, peace be upon him, asked Allah to help him against them, Allah sent angels to help him. They first came to Ibrahim in the form of guests, so he offered them hospitality in the appropriate manner. When he saw that they had no interest in the food, he felt some mistrust of them and was fearful of them. They started to calm him down and gave him the news of a righteous son born by his wife Sarah, who was present, and she was astonished by this, as we have already explained in our Tafsir of Surah Hud and Surah Al-Hijr. When they brought this news to Ibrahim and told him that they were sent to destroy the people of Lut, he began to speak up for them, hoping to win more time for them so that they might be guided by Allah. When they said, “We have come to destroy the people of this township,”

قَالَ إِنَّ فِيهَا لُوطًا قَالُوا نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَن فِيهَا لَنُنَجِّيَنَّهُ وَأَهْلَهُ إِلاَّ امْرَأَتَهُ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ

29:32

قَالَ اِنَّ فِیۡہَا لُوۡطًا ؕ قَالُوۡا نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَنۡ فِیۡہَا ٝ۫ لَنُنَجِّیَنَّہٗ وَ اَہۡلَہٗۤ اِلَّا امۡرَاَتَہٗ ٭۫ کَانَتۡ مِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۳۲﴾

[Abraham] said, “Indeed, within it is Lot.” They said, “We are more knowing of who is within it. We will surely save him and his family, except his wife. She is to be of those who remain behind.”

 

(Ibrahim) said:”But there is Lut in it.”

They said:”We know better who is there. We will verily, save him and his family except his wife, she will be of those who remain behind.”

meaning, one of those who will be destroyed, because she used to support them in their disbelief and wrongdoing.

29:33

وَ لَمَّاۤ اَنۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوۡطًا سِیۡٓءَ بِہِمۡ وَ ضَاقَ بِہِمۡ ذَرۡعًا وَّ قَالُوۡا لَا تَخَفۡ وَ لَا تَحۡزَنۡ ۟ اِنَّا مُنَجُّوۡکَ وَ اَہۡلَکَ اِلَّا امۡرَاَتَکَ کَانَتۡ مِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۳۳﴾

And when Our messengers came to Lot, he was distressed for them and felt for them great discomfort. They said, “Fear not, nor grieve. Indeed, we will save you and your family, except your wife; she is to be of those who remain behind.

 

وَلَمَّا أَن جَاءتْ رُسُلُنَا لُوطًا

And when Our messengers came to Lut,

Then the angels left him and visited Lut in the form of handsome young men. When he saw them like that,

سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا

he was grieved because of them, and felt straitened on their account.

means, he was worried since if he had them as guests then he was afraid for them and what his people might do to them, but if he did not host them, he was still afraid of what might happen to them. At that point he did not know who they were.

وَقَالُوا لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلاَّ امْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ

إِنَّا مُنزِلُونَ عَلَى أَهْلِ هَذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِّنَ السَّمَاء بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ

29:34

اِنَّا مُنۡزِلُوۡنَ عَلٰۤی اَہۡلِ ہٰذِہِ الۡقَرۡیَۃِ رِجۡزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا کَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۳۴﴾

Indeed, we will bring down on the people of this city punishment from the sky because they have been defiantly disobedient.”

 

They said:”Have no fear, and do not grieve! Truly, we shall save you and your family except your wife:she will be of those who remain behind.

Verily, we are about to bring down on the people of this town a great torment from the sky, because they have been rebellious.”
Jibril, peace be upon him, uprooted their town from the depths of the earth, lifted it up to the sky, then threw it upside down upon them. Allah rained upon them:

فَلَمَّا جَأءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَـلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنْضُودٍ

مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ وَمَا هِى مِنَ الظَّـلِمِينَ بِبَعِيدٍ

stones of Sijjil, in a well-arranged manner one after another. Marked from your Lord; and they are not ever far from the evil doers. (11:82-83)

Allah turned the place where they had lived into a putrid, stinking lake, which will remain as a lesson to mankind until the Day of Resurrection, and they will be among those who are most severely punished on the Day of Resurrection.

Allah says

29:35

وَ لَقَدۡ تَّرَکۡنَا مِنۡہَاۤ اٰیَۃًۢ بَیِّنَۃً لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿۳۵﴾

And We have certainly left of it a sign as clear evidence for a people who use reason.

 

وَلَقَد تَّرَكْنَا مِنْهَا ايَةً بَيِّنَةً
.

And indeed We have left thereof an evident Ayah i.e., a clear sign,

..
لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

for a folk who understand.

This is like the Ayah,

وَإِنَّكُمْ لَّتَمُرُّونَ عَلَيْهِمْ مُّصْبِحِينَ

وَبِالَّيْلِ أَفَلَ تَعْقِلُونَ

Verily, you pass by them in the morning and at night; will you not then reflect. (37:137-138)

29:36

وَ اِلٰی مَدۡیَنَ اَخَاہُمۡ شُعَیۡبًا ۙ فَقَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَ ارۡجُوا الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ ﴿۳۶﴾

And to Madyan [We sent] their brother Shu’ayb, and he said, “O my people, worship Allah and expect the Last Day and do not commit abuse on the earth, spreading corruption.”

 

Shu`ayb and His People

Allah tells:

وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا فَقَالَ

And to Madyan, We sent their brother Shu`ayb. He said:

Allah tells us that His servant and Messenger Shu`ayb, peace be upon him, warned his people, the people of Madyan, and commanded them to worship Allah Alone with no partner or associate, and to fear the wrath and punishment of Allah on the Day of Resurrection.

He said:

يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَارْجُوا الْيَوْمَ الاْاخِرَ

O my people! Worship Allah and hope for the last Day,

Ibn Jarir said:

“Some of them said that this meant:Fear the Last Day.”

This is like the Ayah,

لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الاٌّخِرَ

for those who look forward to (meeting with) Allah and the Last Day. (60:6)

وَلَا تَعْثَوْا فِي الاَْرْضِ مُفْسِدِينَ

and commit no mischief on the earth as mischief-makers.

This is forbidding them to make mischief on earth by spreading corruption, which means going around doing evil to people. They used to cheat in weights and measures, and ambush people on the road; this is in addition to their disbelief in Allah and His Messenger. So Allah destroyed them with a mighty earthquake that convulsed their land, and the Sayhah (shout) which tore their hearts from their bodies, and the torment of the Day of Shade, when their souls were taken. This was the torment of a great day.

We have already examined their story in detail in Surah Al-A`raf, Surah Hud and Surah Ash-Shu`ara’

29:37

فَکَذَّبُوۡہُ فَاَخَذَتۡہُمُ الرَّجۡفَۃُ فَاَصۡبَحُوۡا فِیۡ دَارِہِمۡ جٰثِمِیۡنَ ﴿۫۳۷﴾

But they denied him, so the earthquake seized them, and they became within their home [corpses] fallen prone.

 

فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ

And they denied him; so the earthquake seized them,

فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ

and they lay, prostrate in their dwellings.

Qatadah said, “They were dead.”

Others said that they were thrown on top of one another

29:38

وَ عَادًا وَّ ثَمُوۡدَا۠ وَ قَدۡ تَّبَیَّنَ لَکُمۡ مِّنۡ مَّسٰکِنِہِمۡ ۟ وَ زَیَّنَ لَہُمُ الشَّیۡطٰنُ اَعۡمَالَہُمۡ فَصَدَّہُمۡ عَنِ السَّبِیۡلِ وَ کَانُوۡا مُسۡتَبۡصِرِیۡنَ ﴿ۙ۳۸﴾

And [We destroyed] ‘Aad and Thamud, and it has become clear to you from their [ruined] dwellings. And Satan had made pleasing to them their deeds and averted them from the path, and they were endowed with perception.

 

The Destruction of Nations Who rejected Their Messengers

Allah tells:

وَعَادًا وَثَمُودَ وَقَد تَّبَيَّنَ لَكُم مِّن مَّسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَكَانُوا مُسْتَبْصِرِينَ

وَقَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَلَقَدْ جَاءهُم مُّوسَى بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الاَْرْضِ وَمَا كَانُوا سَابِقِينَ

29:39

وَ قَارُوۡنَ وَ فِرۡعَوۡنَ وَ ہَامٰنَ ۟ وَ لَقَدۡ جَآءَہُمۡ مُّوۡسٰی بِالۡبَیِّنٰتِ فَاسۡتَکۡبَرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا کَانُوۡا سٰبِقِیۡنَ ﴿ۚۖ۳۹﴾

And [We destroyed] Qarun and Pharaoh and Haman. And Moses had already come to them with clear evidences, and they were arrogant in the land, but they were not outrunners [of Our punishment].

 

And `Ad and Thamud! And indeed (their destruction) is clearly apparent to you from their (ruined) dwellings. Shaytan made their deeds fair seeming to them, and turned them away from the path, though they were intelligent.

And Qarun, Fir`awn, and Haman.

And indeed Musa came to them with clear Ayat, but they were arrogant in the land, yet they could not outstrip Us.

Allah tells us about these nations who disbelieved in their Messengers, and how He destroyed them and sent various kinds of punishments and vengeance upon them.
`Ad, the people of Hud, peace be upon him, used to live in the Ahqaf (curved sand-hills), near Hadramawt, in the Yemen.
Thamud, the people of Salih, lived in Al-Hijr, near Wadi Al-Qura. The Arabs used to know their dwelling place very well, and they often used to pass by it.
Qarun was the owner of great wealth and had the keys to immense treasures.
Fir`awn, the king of Egypt at the time of Musa, and his minister Haman were two Coptics who disbelieved in Allah and His Messenger, peace be upon him.

Allah tells

29:40

فَکُلًّا اَخَذۡنَا بِذَنۡۢبِہٖ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡہِ حَاصِبًا ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ اَخَذَتۡہُ الصَّیۡحَۃُ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ خَسَفۡنَا بِہِ الۡاَرۡضَ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ اَغۡرَقۡنَا ۚ وَ مَا کَانَ اللّٰہُ لِیَظۡلِمَہُمۡ وَ لٰکِنۡ کَانُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۴۰﴾

So each We seized for his sin; and among them were those upon whom We sent a storm of stones, and among them were those who were seized by the blast [from the sky], and among them were those whom We caused the earth to swallow, and among them were those whom We drowned. And Allah would not have wronged them, but it was they who were wronging themselves.

 

فَكُلًّ أَخَذْنَا بِذَنبِهِ

So, We punished each for his sins,

their punishments fit their crimes.

فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا
.

of them were some on whom We sent a Hasib,

This was the case with `Ad, and this happened because they said:”Who is stronger than us!” So, there came upon them a violent, intensely cold wind, which was very strong and carried pebbles which it threw upon them. It carried them through the air, lifting a man up to the sky and then hurling him headlong to the ground, so that his head split and he was left as a body without a head, like uprooted stems of date palms.

وَمِنْهُم مَّنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ

and of them were some who were overtaken by As-Sayhah,

This is what happened to Thamud, against whom evidence was established because of the she-camel who came forth when the rock was split, exactly as they had asked for. Yet despite that they did not believe, rather they persisted in their evil behavior and disbelief, and threatening to expel Allah’s Prophet Salih and the believers with him, or to stone them. So the Sayhah struck them, taking away their powers of speech and movement.

وَمِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الاَْرْضَ

and of them were some whom We caused the earth to swallow,

This refers to Qarun who transgressed, he was evil and arrogant. He disobeyed his Lord, the Most High, and paraded through the land in a boastful manner, filled with self-admiration, thinking that he was better than others. He showed off as he walked, so Allah caused the earth to swallow him and his house, and he will continue sinking into it until the Day of Resurrection.

وَمِنْهُم مَّنْ أَغْرَقْنَا

and of them were some whom We drowned.

This refers to Fir`awn, his minister Haman and their troops, all of whom were drowned in a single morning, not one of them escaped.

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ

It was not Allah Who wronged them,

in what He did to them,

وَلَكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

but they wronged themselves.

that happened to them as a punishment for what they did with their own hands

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply