(বই#১০২৩)   [  নিশ্চিতভাবেই নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।] www.motaher21.net সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত পারা:২১ ৪৫ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০২৩)
[  নিশ্চিতভাবেই নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত
পারা:২১
৪৫ নং আয়াত:-
২৯:৪৫
اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ ﴿۴۵﴾
আপনি তেলাওয়াত করুন কিতাব থেকে যা আপনার প্রতি ওহী করা হয় এবং সালাত কায়েম করুন । নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে । আর আল্লাহ্র স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ । তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা জানেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# আপাত দৃষ্টিতে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু আসলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্যে করেই বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের ওপর সে সময় যেসব জুলুম-নিপীড়ন চালানো হচ্ছিল এবং ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাদের যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল সে সবের মোকাবিলা করার জন্য পিছনের চার রুকুতে অনবরত সবর, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার উপদেশ দেবার পর এখন তাদেরকে বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে কুরআন তেলাওয়াত ও নামায কায়েম করার কথা বলা হচ্ছে। কারণ এ দু ’টি জিনিসই মু’মিনকে এমন সুগঠিত চরিত্র ও উন্নতর যোগ্যতার অধিকারী করে যার সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল বন্যা এবং দুষ্কৃতির ভয়াবহ ঝনঝার মোকাবিলায় শুধু মাত্র টিকে থাকতে নয় বরং তার গতি ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু কুরআন তেলাওয়াত ও নামাযের মাধ্যমে এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে যখন সে কুরআনের তেলাওয়াত শুধুমাত্র শব্দগুলো পাঠ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে সেগুলোকে সঞ্চারিত করে যেতে থাকে এবং তার নামায কেবলমাত্র শারীরিক কসরতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তার অন্তরের প্রতিধ্বনি এবং চরিত্র ও কর্মেও সক্রিয় শক্তিতে পরিণত হয়। সামনের দিকের বক্তব্যে কুরআন মাজীদ নিজেই নামাযের কাঙ্ক্ষিত গুণ বর্ণনা করছে। আর কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে এতটুকু জানা দরকার যে, মানুষের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে তার হৃদয়তন্ত্রীতে যে তেলাওয়াত আঘাত হানতে পারে না তা তাকে কুফরীর বন্যা প্রবাহের মোকাবেলায় শক্তি তো দূরের কথা ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার শক্তিও দান করতে পারে না। যেমন হাদীসে একটি দল সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ ، ولاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ

“তারা কুরআন পড়বে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীল নীচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।” (বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা) আসলে যে তেলাওয়াতের পরে মানুষের মন-মানস, চিন্তা-চেতনা ও চরিত্র কর্মনীতিতেও কোন পরিবর্তন আসে না বরং কুরআন পড়ার পরও কুরআন যা নিষেধ করে মানুষ তা সব করে যেতে থাকে তা একজন মু’মিনের কুরআন তেলাওয়াত হতেই পারে না। এ সম্পর্কে তো নবী (সা.) পরিষ্কার বলেনঃ مَا آمَنَ بِالْقُرْآنِ مَنِ اسْتَحَلَّ مَحَارِمَهُ “কুরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি।” (তিরমিযী) এ ধরনের তেলাওয়াত মানুষের আত্মিক সংশোধন এবং তার আত্মায় শক্তি সঞ্চার করার পরিবর্তে তাকে আল্লাহর মোকাবিলায় আরো বেশি বিদ্রোহী এবং নিজের বিবেকের মোকাবেলায় আরো বেশি নির্লজ্জ করে তোলে। এ অবস্থায় তার মধ্যে চরিত্র বলে কোন জিনিসেরই আর অস্তিত্ব থাকে না। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে মেনে নেয়, তা পাঠ করে তার মধ্যে আল্লাহ‌ তাকে কি নির্দেশ দিয়েছেন তা জানতেও থাকে এবং তারপর তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে যেতে থাকে, তার ব্যাপারটা তো দাঁড়ায় এমন একজন অপরাধীর মতো যে আইন না জানার কারণে নয় বরং আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পর অপরাধমূলক কাজ করে। এ অবস্থাটিকে মহানবী (সা.) একটি ছোট্ট বাক্যেও মধ্য দিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে সুস্পষ্ট করে তোলে ধরেছেনঃ الْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ “কুরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ।” (মুসলিম) অর্থাৎ যদি কুরআনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা হয় তাহলে তা তোমার জন্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ হবে। দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত যেখানেই তোমাকে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে সেখানেই তুমি নিজের সাফাই হিসেবে কুরআনকে পেশ করতে পারবে। অর্থাৎ তুমি বলতে পারবে, আমি যা কিছু করেছি এ কিতাব অনুযায়ী করেছি। যদি তোমার কাজ যথার্থই কুরআন অনুযায়ী হয়ে থাকে তাহলে দুনিয়ায় ইসলামের কোন বিচারক তোমাকে শাস্তি দিতে পারবেন না এবং আখেরাতে হাশরের ময়দানেও তোমাকে পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু যদি এ কিতাব তোমার কাছে পৌঁছে গিয়ে থাকে এবং তা পড়ে তুমি জেনে নিয়ে থাকো তোমার রব তোমাকে কি বলতে চান, তোমাকে কোনো কাজের হুকুম দেন, কোনো কাজ করতে নিষেধ করেন এবং আবার তুমি তার বিরোধী কর্মনীতি অবলম্বন করো, তাহলে এ কিতাব তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর আদালতে এ কিতাব তোমার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলাকে আরো বেশি জোরদার করে দেবে। এরপর না জানার ওজর পেশ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া অথবা হালকা শাস্তি লাভ করা তোমার জন্য সম্ভব হবে না।
# নামাযের বহু গুণের মধ্যে এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গুণ। পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটিকে সুস্পষ্ট করে এখানে পেশ করা হয়েছে। মক্কার বিরুদ্ধ পরিবেশে মুসলমানরা যে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার মোকাবিলা করার জন্য তাদের বস্তুগত শক্তির চাইতে বেশি প্রয়োজন ছিল নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির উদ্ভব ও তার বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমে দু’টি ব্যবস্থা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয় নামায কায়েম করা। এরপর এখানে বলা হচ্ছে, নামায কায়েম করা হচ্ছে এমন পদ্ধতি যার মাধ্যমে তোমরা এমনসব দুষ্কৃতি থেকে মুক্ত হতে পারো ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে যেগুলোতে তোমরা নিজেরাই লিপ্ত ছিলে এবং যেগুলোতে বর্তমানের লিপ্ত আছে তোমাদের চারপাশের আরবীয় ও অনারবীয় জাহেলী সমাজ।

এ পর্যায়ে নামাযের এই বিশেষ উপকারিতার কথা বলা হয়েছে কেন, একটু চিন্তা করলে একথা অতি সহজে অনুধাবন করা যেতে পারে। একথা সুস্পষ্ট যে, নৈতিক দুষ্কৃতিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী লোকেরা এর মাধ্যমে কেবলমাত্র দুনিয়ায় ও আখেরাতেই লাভবান হয় না বরং এর ফলে তারা অনিবার্যভাবে এমন সব লোকদের ওপর ব্যাপক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে যারা নানান নৈতিক দুষ্কৃতির শিকার হয়ে গেছে এবং এসব দুষ্কৃতির লালনকারী জাহেলিয়াতের পুতিগন্ধময় অপবিত্র ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অশ্লীল ও অসৎকাজ বলতে যেসব দুষ্কৃতি বুঝায় মানুষের প্রকৃতি সেগুলোকে খারাপ বলে জানে এবং সবসময় সকল জাতি ও সকল সমাজের লোকেরা, কার্যত তারা যতই বিপথগামী হোক না কেন, নীতিগত ভাবে সেগুলোকে খারাপই মনে করে এসেছে। কুরআন নাযিল হওয়ার সময় আরবের সমাজ মানসও এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ছিল না। সে সমাজের লোকেরাও নৈতিকতার পরিচিত দোষ-গুণ সম্পর্কে সচেতন ছিল। তারা অসৎকাজের মোকাবিলায় সৎকাজের মূল্য জানতো। কদাচিত হয়তো এমন কোন লোকও তাদের মধ্যে থেকে থাকবে যে অসৎকাজকে ভালো মনে করে থাকবে এবং ভালো কাজকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে থাকবে। এ অবস্থায় এ বিকৃত সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয় যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট সমাজের ব্যক্তিবর্গ নিজেরাই নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং নিজেদের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে নিজেদের সমকালীন লোকদের থেকে সুস্পষ্ট উন্নতি লাভ করে, তাহলে অবশ্যই সে তার প্রভাব বিস্তার না করে থাকতে পারে না। এটা কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিল না যে, আরবের সাধারণ লোকেরা অসৎকাজ নির্মূলকারী এবং সৎ ও পবিত্র-পরিচ্ছন্ন মানুষ গঠনকারী এ আন্দোলনের নৈতিক প্রভাব মোটেই অনুভব করবে না এবং এর মোকাবিলায় নিছক জাহেলিয়াত প্রীতির অন্তঃসারশূন্য শ্লোগানের ভিত্তিতে এমনসব লোকদের সাথে সহযোগিতা করে যেতে থাকবে যারা নিজেরাই নৈতিক দুষ্কৃতিতে লিপ্ত ছিল এবং জাহেলিয়াতের যে ব্যবস্থা শত শত বছর থেকে সে দুষ্কৃতিগুলো লালন করে চলছিল তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। এ কারণেই কুরআন এ অবস্থায় মুসলমানদের বস্তুগত উপকরণাদি ও শক্তিমত্তা সংগ্রহ করার পরামর্শ দেবার পরিবর্তে নামায কায়েম করার নির্দেশ দিচ্ছে। এর ফলে মুষ্টিমেয় মানুষের এ দলটি এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে যার ফলে তারা মানুষের মন জয় করে ফেলবে এবং তীর ও তরবারির সাহায্য ছাড়াই শত্রুকে পরাজিত করবে।

এ আয়াতে নামাযের যে গুণ বর্ণনা করা হয়েছে তার দু’টি দিক রয়েছে। একটি তার অনিবার্য গুণ। অর্থাৎ সে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে। আর দ্বিতীয় তার কাঙ্ক্ষিত গুণ। অর্থাৎ নামায আদায়কারী কার্যক্ষেত্রে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুক। বিরত রাখার ব্যাপারে বলা যায়, নামায অবশ্যই এ কাজ করে। যে ব্যক্তিই নামাযের ধরনের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যত ধরনের ব্রেক লাগানো সম্ভব তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ব্রেক নামাযই হতে পারে। এর চেয়ে বড় প্রভাবশালী নিরোধক আর কী হতে পারে যে, মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য আহ্বান করা হবে এবং তার মনে একথা জাগিয়ে দেয়া হবে যে, তুমি এ দুনিয়ায় স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী নও বরং এক আল্লাহর বান্দা এবং তোমার আল্লাহ‌ হচ্ছেন তিনি যিনি তোমার প্রকাশ্য ও গোপন সকল কাজ এমনকি তোমার মনের ইচ্ছা ও সংকল্পও জানেন এবং এমন একটি সময় অবশ্যই আসবে যখন তোমাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজের যাবতীয় কাজের জবাবদিহি করতে হবে। তারপর কেবলমাত্র একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত থাকলে চলবে না বরং কার্যত প্রত্যেক নামাযের সময় যাতে লুকিয়ে লুকিয়েও সে আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য না করে তার অনুশীলনও করতে হবে। নামাযের জন্য ওঠার পর থেকে শুরু করে নামায খতম হওয়া পর্যন্ত মানুষকে অনবরত এমনসব কাজ করতে হয় যেগুলো করার সময় সে আল্লাহর হুকুম মেনে চলছে অথবা তার বিরুদ্ধাচরণ করছে এ কথা সে এবং তার আল্লাহ‌ ছাড়া তৃতীয় কোন সত্ত্বা জানতে পারে না। যেমন, যদি কারো ওযু ভেঙ্গে গিয়ে থাকে এবং সে নামায পড়তে দাঁড়ায়, তাহলে তার যে অযু নেই একথা সে এবং আল্লাহ‌ ছাড়া আর কে-ই বা জানতে পারবে। মানুষ যদি নামাযের নিয়তই না করে এবং বাহ্যত রুকু, সিজদা ও উঠা-বসা করে নামাজের সূরা-কেরাত, দোয়া-দরুদ ইত্যাদি পড়ার পরিবর্তে নিরবে গজল পড়তে থাকে তাহলে সে যে আসলে নামায পড়েনি সে এবং আল্লাহ‌ ছাড়া আর কে এ রহস্য উদঘাটন করতে পারবে? এ সত্ত্বেও যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন থেকে শুরু করে নামাযের আরকান ও সূরা-কেরাত-দোয়া-দরূদ পর্যন্ত সবকিছু সম্পন্ন করে আল্লাহ‌ নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী প্রতিদিন পাঁচবার নামায পড়ে তখন তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, এ নামাযের মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েকবার তার বিবেকে প্রাণ সঞ্চার করা হচ্ছে, তার মধ্যে দায়িত্বের অনুভূতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাকে দায়িত্বশীল মানুষে পরিণত করা হচ্ছে এবং যে আইনের প্রতি সে ঈমান এনেছে তা মেনে চলার জন্য বাইরে কোন শক্তি থাক বা না থাক এবং বিশ্ববাসী তার কাজের অবস্থা জানুক বা না জানুক নিজের আনুগত্য প্রবণতার প্রভাবাধীনে গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় সে সেই আইন মেনে চলবে-কার্যত তাকে এরই অনুশীলন করানো হচ্ছে।

এ দৃষ্টিতে বিচার করলে একথা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না যে, নামায কেবলমাত্র মানুষকে অশ্লীল ও অসৎকাজ থেকেই বিরত রাখে না বরং আসলে দুনিয়ার দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে এত বেশি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, মানুষ নিয়মিত নামায পড়ার পর কার্যতও দুষ্কৃতি থেকে দূরে থাকে নি। জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে যে ব্যক্তি আত্মিক সংশোধন ও পরিশুদ্ধির অনুশীলন করছে তার ওপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হবার সংকল্প করে এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে নামাযের সংশোধনমূলক প্রভাব তার ওপর পড়বে। অন্যথায় দুনিয়ার কোন সংশোধন ব্যবস্থা এমন ব্যক্তির ওপর কার্যকর হতে পারে না যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুতই নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দিতে থাকে। এর দৃষ্টান্ত যেমন দেহের পরিপুষ্টি ও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে খাদ্যের অনিবার্য বিশেষত্ব। কিন্তু এ ফল তখনই লাভ করা সম্ভবপর হতে পারে যখন মানুষ তাকে শরীরের অংশে পরিণত হবার সুযোগ দেবে। যদি কোন ব্যক্তি প্রত্যেক বারে খাবার পরে বমি করে সমস্ত খাবার বের করে দিতে থাকে তাহলে এ ধরনের আহার তার জন্য মোটেই উপকারী হতে পারে না। এ ধরনেরকোন ব্যক্তিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে যেমন একথা বলা চলে না যে, খাদ্য দ্বারা দেহের পরিপুষ্টি হয় না। কারণ, দেখা যাচ্ছে অমুক ব্যক্তি আহার করার পরও শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এমন একজন নামাযী যে অসৎকাজ করে যেতেই থাকে, তার দৃষ্টান্ত পেশ করেও একথা বলা যেতে পারে না যে, নামায অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে না। কারণ, অমুক ব্যক্তি নামায পড়ার পরও খারাপ কাজ করে। এ ধরনের নামাযী সম্পর্কে তো একথা বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে যে, সে আসলে নামায পড়ে না যেমন যে ব্যক্তি আহার করে বমি করে তার সম্পর্কে একথা বলা বেশি যুক্তিযুক্ত যে, সে আসলে আহার করে না।

ঠিক একথাই বিভিন্ন হাদীসে নবী ﷺ এবং অনেক নেতৃস্থানীয় সাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণনা করেন, নবী ﷺ বলেছেনঃمن لم تنهه صلاته عن الفحشاء والمنكر فلا صلاة له-

“যার নামায তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেনি তার নামাযই হয়নি।”(ইবনে আবী হাতেম) ইবনে আব্বাস (রা.) নবী (সা.) এর এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে,

من لم تنهه صلوته عن الفحشاء والمنكر لم يزدد بها من الله الابعدا-

“যার নামায তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেনি তাকে তার নামায আল্লাহ‌ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে।” হাসান বসরী (র) একই বস্তু সম্বলিত হাদীস নবী (সা.) থেকে মুরসাল রেওয়ায়াতের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। (ইবনে জারীর ও বাইহাকী) ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে নবী করীমের ﷺ এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছেঃ

لاصلوة لمن لم يطع الصلوة وطاعة الصلوة ان تنهى عن الفحشاء والمنكر-

“যে ব্যক্তি নামাযের আনুগত্য করেনি তার নামাযই হয়নি আর নামাযের আনুগত্য হচ্ছে, মানুষ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে।” (ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতেম)

একই বক্তব্য সম্বলিত একাধিক উক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হাসান বাসরী, কাতাদাহ, আ’মাশ ও আরো অনেকের থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম জাফর সাদেক বলেন, যে ব্যক্তি তার নামায কবুল হয়েছে কিনা জানতে চায় তার দেখা উচিত তার নামায তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে কি পরিণাম বিরত রেখেছে। যদি নামাযের বাধা দেবার পর সে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত হয়ে থাকে, তাহলে তার নামায কবুল হয়ে গেছে। (রুহুল মা’আনী)

# এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। একঃ আল্লাহর যিকির (অর্থাৎ নামায) এর চেয়ে বড়। এর প্রভাব কেবল নেতিবাচকই নয়। শুধুমাত্র অসৎকাজ থেকে বিরত রেখেই সে ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী হবার জন্য মানুষকে উদ্যোগী করে। দ্বিতীয় অর্থঃ আল্লাহর স্মরণ নিজেই অনেক বড় জিনিস, সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। মানুষের কোনো কাজ এর চেয়ে বেশি ভালো নয়। এর তৃতীয় অর্থঃ তোমার আল্লাহকে স্মরণ করার চাইতে আল্লাহর তোমাকে স্মরণ করা অনেক বেশি বড় জিনিস। কুরআনে মহান আল্লাহ‌ বলেনঃفَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ “তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমি তোমাদের স্মরণ করবো।” (আল বাকারাহ ১৫২) কাজেই বান্দা যখন নামাযে আল্লাহকে স্মরণ করার তুলনায় আল্লাহর বান্দাকে স্মরণ করা অনেক বেশি উচ্চমানের। এ তিনটি অর্থ ছাড়া আরো একটি সূক্ষ্ম অর্থও এখানে হয়। হযরত আবু দারদা (রা.) এর সম্মানিতা স্ত্রী এ অর্থটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর স্মরণ নামায পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং তার সীমানা এর চাইতেও বহুদূর বিস্তৃত। যখন মানুষ রোযা রাখে, যাকাত দেয় বা অন্য কোন সৎকাজ করে তখন অবশ্যই সে আল্লাহকে স্মরণই করে, তবেই তো তার দ্বারা ঐ কাজটি সম্পাদিত হয়। অনুরূপভাবে যখন কোন ব্যক্তি কোন অসৎকাজ করার সুযোগ পাওয়ার পর তা থেকে দূরে থাকে তখন এটাও হয় আল্লাহর স্মরণেরই ফল। এ জন্য আল্লাহর স্মরণ একজন মু’মিনের সমগ্র জীবনে পরিব্যাপ্ত হয়।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
এ অধ্যায়ের সর্বশেষ আয়াতটাতে আল্লাহ তায়ালা কোরআন, নামায আল্লাহর যিকিরকে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিহিত সত্য ন্যায়ের সাথে এবং হযরত নূহ (আ.) থেকে চলে আসা ইসলামী দাওয়াতের ধারার সাথে যুক্ত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি তােমার কাছে যে কিতাব ওহী করা হয়েছে তা পড়ে শােনাও…’ কেননা এই কিতাব তােমার ইসলামী আন্দোলনের পথপ্রদর্শক, এর সাথে সংযুক্ত আল্লাহর নিদর্শনাবলীর সহযােগী, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে নিহিত ন্যায় ও সত্যের সাথে সমন্বিত। ‘আর নামায কায়েম করাে। নামায অশ্লীলতা ও অসততা থেকে বিরত রাখে।’ বস্তুত আল্লাহ তায়ালার সাথে সার্বক্ষণিক যােগাযােগই বান্দার ভেতরে এই লজ্জার সৃষ্টি করে যা তাকে বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীলতা সাথে নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত রাখে। কেননা নামায এমন এক পবিত্রাবস্থা, যার সাথে অশ্লীলতা ও পাপাচারের নােংরামির কোনই সাযুজ্য নেই। ইমাম ইবনে জরীর বর্ণনা করেছেন যে, রসূল(স.) বলেছেন যে ব্যক্তি নামায পড়ে, অথচ সেই নামায তাকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, সে সেই নামায দ্বারা আল্লাহর কাছ থেকে দূরত্ব ও অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করে না। অর্থাৎ সে নামায যথারীতি কায়েম করে না, কেবল আদায় করে মাত্র। নামায আদায় করা ও কায়েম করার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। নামায যখন কায়েম করা হয় তখন তা আল্লাহর যিকির বা স্মরণে পরিণত হয়। ‘আল্লাহর যিকির সর্বশ্রেষ্ঠ।’ অর্থাৎ সর্বদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠতম সব রকমের আবেগ, উচ্ছাস, এবাদাত ও বিনয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ‘তােমরা যা করাে, তা আল্লাহ তায়ালা জানেন।’ অর্থাৎ তার কাছ থেকে কিছুই গােপন থাকে না। তার কাছে কিছুই অজানা থাকে না। তােমাদের সবাইকে একদিন তার কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তােমাদের কৃতকর্মের ফল পাবে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:

(اُتْلُ مَآ أُوْحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتٰبِ)

আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর ওপর অবতীর্ণ কিতাব কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তেলাওয়াতের অর্থ হলন পাঠ করা, অর্থ অনুধাবন করা, যে সকল বিষয়ে সংবাদ দেয়া হয়েছে তা বিশ্বাস করা, কুরআনের হিদায়াত গ্রহণ করা, যা আদেশ করা হয়েছে তা পালন করা এবং যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকা। (তাফসীর সা‘দী) এ সম্পর্কে সূরা কাহফের ২৭ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

(وَالْمُنْكَرِ…… وَأَقِمِ الصَّلٰوةَ)

আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে সকলকে সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অতঃপর সালাত আদায় করার ফযীলত বর্ণনা করে বলেন: সালাত ব্যক্তিকে অশ্লীল ও মন্দ কার্য হতে রক্ষা করে। الْفَحْشَا۬ءِ হলন এমন অশ্লীল গুনাহের কাজ যা মানুষের কুপ্রবৃত্তি কামনা করে। وَالْمُنْكَرِ হল- ঐসকল গুনাহ যা ধর্মীয় ও স্বাভাবিক জ্ঞান অপছন্দ করে। সালাত এ উভয়টি হতে বাধা দেয়ার কারণ হলন যে ব্যক্তি সালাতের রুকন, শর্তসমূহ যথাযথভাবে ঠিক রেখে আদায় করে তখন সালাত তার অন্তরকে আলোকিত ও পবিত্র করে। ফলে সে ব্যক্তির ঈমান ও তাক্বওয়া এবং ভাল কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। অপর দিকে খারাপ কাজের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়। সুতরাং সালাত আদায় করার জন্য জরুরী হচ্ছে রুকন-আরকানসহ শর্তাবলী সর্বদা সংরক্ষন করা।

(وَلَذِكْرُ اللّٰهِ أَكْبَرُ)

‘আল্লাহ তা‘আলার স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ’ আব্দুল্লাহ বিন রবী‘আহ বলেন: ইবনু আব্বাস আমাকে বললেন: তুমি কি জান আল্লাহর

(وَلَذِكْرُ اللّٰهِ أَكْبَرُ)

এ কথার অর্থ কী? আমি বললাম হ্যাঁ, তিনি বললেনন তা কী? আমি বললাম: সালাতে তাসবীহ, তাকবীর, প্রশংসা করা ও কুরআন তেলাওয়াত করা। তিনি বললেন: তুমি একটি আশ্চর্যজনক কথা বলেছো। বিষয়টি এরূপ নয়, বরং আল্লাহ বলেছেন: প্রত্যেক আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কুরআন তেলাওয়াত করার অর্থ হল তা পাঠ করা, অর্থ বুঝা ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
২. সালাত কায়েম প্রত্যেকের ওপর আবশ্যক, কেননা সালাত ব্যক্তিকে অশ্লীল ও মন্দ কার্য থেকে বিরত রাখে।
৩. আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করলে আল্লাহ তা‘আলাও তার বান্দাকে স্মরণ করেন।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে ও মুমিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তাঁরা যেন কুরআন কারীম নিজেরা পাঠ করেন এবং অন্যদেরকেও শুনিয়ে দেন। আর তাঁরা যেন নিয়মিতভাবে নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ কার্য হতে বিরত রাখে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তির নামায তাকে অশ্লীল ও মন্দ কার্য হতে বিরত রাখে না সে আল্লাহ হতে বহু দূরে রয়ে যায়।”

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে (আরবি) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “যার নামায তাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে না, (তাহলে জানবে যে,) তার নামায নাই (অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে তার নামায কবুল হয় না)। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার নামায তাকে অশ্লীল ও মন্দ কার্য হতে বিরত রাখে না, সে আল্লাহ হতে বহু দূরে চলে যায়।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ও তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

একটি মাওকূফ রিওয়াইয়াতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ভাল কাজ করে না ও মন্দ কাজ হতে বিরত থাকে না, তার নামায তাকে আল্লাহ হতে (ক্রমে ক্রমে) দূর করতেই থাকে। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নামাযের আনুগত্য করে না তার নামায নাই।” (এ হাদীসটিও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) নামাযের আনুগত্য এই যে, নামায নামাযীকে অশ্লীল ও দুষ্কর্ম হতে বিরত রাখবে।

হযরত শুআয়েব (আঃ)-কে তাঁর কওম বলেছিলঃ “হে শুআয়েব (আঃ)! তোমার প্রভু কি তোমাকে আদেশ করে?” হযরত সুফইয়ান (রঃ)-এর তাফসীরে বলেনঃ “হ্যা, আল্লাহর কসম! নামায আদেশ করে এবং নিষেধও করে।”

হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে কোন একজন লোক বলেঃ “অমুক লোক দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়ে থাকে। তিনি তখন বলেনঃ “নামায তারই উপকার করে যে ওর আনুগত্য করে।” আমি তাহকীক করে যা বুঝেছি তা এই যে, উপরে যে মার’ রিওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে তা মাওকুফ হওয়াই বেশী সঠিক। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “হে আল্লাহর নবী (সঃ)! অমুক লোক নামায পড়ে, কিন্তু চুরিও করে।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “অতিসত্বরই তার নামায তার এ মন্দ কাজ ছাড়িয়ে দেবে। (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন) নামায় আল্লাহর যিকরের নাম, এ জন্যেই এর পরেই বলা হয়েছেঃ আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।

আবুল আলিয়া (রঃ) বলেনঃ “নামাযে তিনটি জিনিস রয়েছে। এ তিনটি জিনিস না থাকলে নামায হবে না। প্রথম হলো ইখলাস বা আন্তরিকতা, দ্বিতীয় হলো আল্লাহর ভয় এবং তৃতীয় হলো আল্লাহর যিকর। ইখলাস দ্বারা মানুষ সৎ হয়ে যায়। আল্লাহর ভয়ের কারণে মানুষ পাপকার্য পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহর যিকর অর্থাৎ কুরআন মানুষকে ভাল ও মন্দ বলে দেয় এবং আদেশও করে, নিষেধও করে।”

ইবনে আউন আনসারী (রঃ) বলেনঃ “যখন তুমি নামাযে থাকো তখন ভাল কাজে থাকো এবং নামায তোমাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কার্য হতে বিরত রাখে। আর ওর মধ্যে যে যিকর তুমি কর তা তোমার জন্যে বড়ই উপকারের বিষয়।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের ভাবার্থ বলেনঃ “নামাযের অবস্থায় কমপক্ষে তুমি তো মন্দ কার্য হতে বেঁচে থাকবে। যে বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন।

(আরবি) মহান আল্লাহর এই উক্তির ভাবার্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “তোমার আহারের সময় ও শয়নের সময় আল্লাহকে স্মরণ করা। তার এ তাফসীর শুনে একটি লোক তাঁকে বলেনঃ “আমার একজন সঙ্গী রয়েছেন যিনি আপনার অর্থের বিপরীত অর্থ করে থাকেন। তিনি তখন প্রশ্ন করলেনঃ “সে কি অর্থ করে?” উত্তরে লোকটি বলেন, তিনি বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “যখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করবে তখন তিনিও তোমাদেরকে স্মরণ করবেন। আর এটা খুব বড় জিনিস। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো।” (২:১৫২) এ কথা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “সে ঠিকই বলেছে। দু’টি ভাবার্থই সঠিক। অর্থাৎ তারটাও ঠিক, আমারটাও ঠিক।” আর স্বয়ং ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এরূপ তাফসীর বর্ণিত আছে। একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাবীআহ্ (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি এই বাক্যটির ভাবার্থ কি বুঝেছো?” জবাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাবীআহ (রঃ) বলেনঃ “এর ভাবার্থ হচ্ছে- নামাযে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি বলা।” তাঁর এ উত্তর শুনে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি তো এক বিস্ময়কর কথা বললে! ভাবার্থ এটা নয়। বরং এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আদেশ ও নিষেধ করার সময় আল্লাহর তোমাদেরকে স্মরণ করা। তোমাদের আল্লাহর যিকর করা বড়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত আবু দারদা (রাঃ), হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এটাই পছন্দ করেছেন।

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1023)
[Indeed, prayer prohibits immorality and wrongdoing, ]
www.motaher21.net
Sura:29
Para:21
Sura: Al-Ankabut
Ayat: 45

29:45

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ ﴿۴۵﴾

Recite, [O Muhammad], what has been revealed to you of the Book and establish prayer. Indeed, prayer prohibits immorality and wrongdoing, and the remembrance of Allah is greater. And Allah knows that which you do.

 

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ

Recite what has been revealed to you of the Book,

Allah commands His Messenger and the believers to recite the Qur’an, which means both reciting it and conveying it to people.

وَأَقِمِ الصَّلَأةَ إِنَّ الصَّلَأةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ

and perform the Salah. Verily, the Salah prevents from Al-Fahsha’ and Al-Munkar and the remembrance of Allah is greater indeed.

Prayer includes two things:

the first of which is giving up immoral behavior and evil deeds, i.e., praying regularly enables a person to give up these things.

Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said:

“A man came to the Prophet and said, `So-and-so prays at night, but when morning comes, he steals.’

The Prophet said:

إِنَّهُ سَيَنْهَاهُ مَا تَقُول

What you are saying (i.e., the Salah) will stop him from doing that.”

Prayer also includes the remembering of Allah, which is the higher objective, Allah says:
وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ
(and the remembrance of Allah is greater indeed), more important than the former.

وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

And Allah knows what you do.

means, He knows all that you do and say.

Abu Al-`Aliyah commented on the Ayah:
إِنَّ الصَّلَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ
(Verily, the Salah prevents from immoral sins and evil wicked deeds),

“Prayer has three attributes, and any prayer that contains none of these attributes is not truly prayer:

Being done purely and sincerely for Allah alone (Ikhlas),

fear of Allah, and remembrance of Allah. Ikhlas makes a person do good deeds, fear prevents him from doing evil deeds,

and the remembrance of Allah is the Qur’an which contains commands and prohibitions.”

Ibn Awn Al-Ansari said:

“When you are praying, you are doing good, it is keeping you away from immoral sins and evil wicked deeds and what you are doing is part of the remembrance of Allah which is greater.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply