(বই#১০২৬)   [ *ঈমান বাঁচানাের জন্যে হিজরত করা :-] www.motaher21.net সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত পারা:২১ ৫৬-৬৩ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০২৬)
[ *ঈমান বাঁচানাের জন্যে হিজরত করা :-]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত
পারা:২১
৫৬-৬৩ নং আয়াত:-
২৯:৫৬
یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ اَرۡضِیۡ وَاسِعَۃٌ فَاِیَّایَ فَاعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾
হে আমার মুমিন বান্দাগন! নিশ্চয় আমার যমীন প্রসস্ত ; কাজেই তোমরা আমারই ইবাদাত কর।
২৯:৫৭
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ۟ ثُمَّ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۵۷﴾
প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে।
২৯:৫৮
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَنُبَوِّئَنَّہُمۡ مِّنَ الۡجَنَّۃِ غُرَفًا تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ نِعۡمَ اَجۡرُ الۡعٰمِلِیۡنَ ﴿٭ۖ۵۸﴾
যারা ঈমান এনেছে এবং যারা সৎকাজ করেছে তাদেরকে আমি জান্নাতের উঁচুও উন্নত ইমারতের মধ্যে রাখবো, যেগুলোর নিচে দিয়ে নদী বয়ে যেতে থাকবে। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। কতই না উত্তম প্রতিদান কর্মশীলদের জন্য।
২৯:৫৯
الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا وَ عَلٰی رَبِّہِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ ﴿۵۹﴾
যারা ধৈর্য ধারন করে এবং তাদের রব-এর উপরই তাওয়াক্কুল করে।
২৯:৬০
وَ کَاَیِّنۡ مِّنۡ دَآبَّۃٍ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَہَا ٭ۖ اَللّٰہُ یَرۡزُقُہَا وَ اِیَّاکُمۡ ۫ۖ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۶۰﴾
এমন বহু জীব-জন্তু আছে যারা নিজেদের রুযী বহন করে না; আল্লাহই ওদেরকে এবং তোমাদেরকে রুযী দান করেন। আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
২৯:৬১
وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰہُ ۚ فَاَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۶۱﴾
যদি তুমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র-সূর্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন?’ ওরা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ। তাহলে ওরা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?’
২৯:৬২
اَللّٰہُ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ وَ یَقۡدِرُ لَہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۶۲﴾
আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে তার রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছে সীমিত করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
২৯:৬৩
وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ مَّنۡ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡیَا بِہِ الۡاَرۡضَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَوۡتِہَا لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰہُ ؕ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ ﴿٪۶۳﴾
যদি তুমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘ভূমি মৃত হওয়ার পর কে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে ওকে সঞ্জীবিত করে?’ ওরা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।’ কিন্তু ওদের অধিকাংশই জ্ঞান করে না।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*ঈমান বাঁচানাের জন্যে হিজরত করা : ‘হে ঈমানদার বান্দারা, তােমরা ভালােভাবে জেনে নাও যে, আমার যমীন প্রশস্ত, সুতরাং আমারই দাসত্ব করো… তিনি তাদের রিযিক দেন আর তােমাদেরও রিযিক দেন এবং তিনিই একমাত্র সব কিছু শুনেন সব কিছু জানেন।'(আয়াত ৫৬-৬০) এ আয়াতগুলাে থেকে বুঝা গেলাে, এসব মানুষের অন্তরের যিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি সবার অন্তরের মধ্যস্থিত সকল খবর সম্পর্কে ওয়াকেফহাল এবং তিনি মনের কন্দরে লুকিয়ে থাকা সব তথ্য জানেন। তিনি জানেন তাদের ওই সব চিন্তা সম্পর্কে যা নিশিদিন তাদের মনের মধ্যে আনাগােনা করে এবং যা গড়ে ওঠে হৃদয়ের গ্রন্থিগুলাের মধ্যে। অবশ্যই এসব হৃদয়ের সৃষ্টিকর্তা ওদের বড় মহব্বতপূর্ণ ভাষা দ্বারা সম্বােধন করছেন। হে আমার ঈমানদার বান্দারা; এভাবে ডাক দিয়ে তিনি তাদের তার নিজের জীবন বিধান নিয়ে হিজরত করার আহবান জানাচ্ছেন। যাতে করে একেবারে প্রথম মুহূর্ত থেকে তারা তাদের দ্বীন (আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান)-এর তাৎপর্য বুঝতে পারে। বুঝতে পারে যেন রবের সাথে তার সম্পর্কের কথা এবং যেন তারা তাঁর কালামের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে। তাই বলা হচ্ছে, হে আমার বান্দাহ। ওপরের বাক্যগুলাের মধ্যে এটাই প্রথম অংশ এবং দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে, নিশ্চয়ই আমার যমীন প্রশস্ত, অর্থাৎ, তােমরা আমার বান্দা, এটা আমারই যমীন- এটা প্রশস্ত, এতােটা প্রশ্ন যে, তােমাদের সবার পদভার সহ্য করতে প্রস্তুত, কিন্তু এতদসত্তেও বলো না দেখি কে আছে এমন যে তােমাদের নিজ নিজ সংকীর্ণ অবস্থানে ধরে রাখতে পারে। কে আছে এমন যে তােমাদের এতাে কঠিন বিপদে ফেলতে পারে যার কারণে তােমরা তােমাদের দ্বীন থেকে সরে যাবে এবং তােমাদের আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতে অক্ষম হয়ে যাবে? সত্যই যদি কোনাে যমীন এতাে সংকীর্ণ ও সংকটপূর্ণ হয়ে যায় তােমাদের জন্যে, যেখানে আল্লাহর হকুমমতাে চলতে পারাে না এবং আল্লাহর দরবারে নিজেদের নিবেদন করতে পারাে না, তাহলে ছেড়ে দাও সে এলাকা এবং চলে যাও এমন কোনাে এলাকার দিকে যেখানে আল্লাহর হুকুম মতাে যিন্দেগী যাপন করা সহজ বলে বুঝবে। একবার সেই দেশের দিকে রওয়ানা হয়েই দেখো না, দেখবে, সেখানে আল্লাহর মেহেরবানীতে বহু প্রশস্ততা এবং বিস্তর স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে। অতএব (হে আমার বান্দারা), আমারই দাসত্ব করাে। হ্যা, মানুষের মধ্যে মাতৃভূমির জন্যে দুর্বলতা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। মাতৃভূমি ছাড়ার কথা মনে আসার সাথে সাথে এমনই এক দুশ্চিন্তা মানুষকে পেয়ে বসে যে, নিজ মাতৃভূমির শিকড় ছিড়ে গেলে অর্থনৈতিক সুযােগ সুবিধা ও জীবনের সকল আশা ভরসা থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যাবে। তার মনে হয়, আজন্ম যাদের দরদী হিসেবে পেয়েছে তাদের বিচ্ছেদ অন্য কেউ পূরণ করতে পারবে । এ জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীম সীমাহীন মর্ম্পর্শী ভাষায় এবং অত্যন্ত মহব্বতের সাথে সে দুটি বিষয় পূরণ করে দেবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। আবার পৃথিবীর মধ্যে সচ্ছলতা ও প্রশস্তার নিশ্চয়তা দিতে গিয়ে বলছেন, ‘হে আমার বান্দারা’, নিশ্চয়ই আমার যমীন প্রশস্ত, অতএব, তােমরা আমারই ইবাদত করবে।’ অর্থাৎ এই শেষের কথাটির মাধ্যমে এই সরল ও চিরসত্য কথাটাই তুলে ধরছেন যে, গােটা পৃথিবীটা তাে তাঁরই রাজ্য; সুতরাং তাঁর কাছে প্রিয়তম সেই এলাকাটি, যেখানে একমাত্র তারই বন্দেগী করার জন্যে প্রশস্ততা ও সুযােগ সুবিধা রয়েছে। যেখানে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারাে দাসত্ব করা হয় না। এরপর, দেশ ত্যাগ করলে যেসব ভয়-ভীতি, অসুবিধা, অভাব অভিযােগ ও সংকট-সমস্যা হাযির হয় এবং যেসব বিপদ আপদের সম্মুখীন হতে হয়, সেসবসহ মানুষকে মৃত্যুর বিভীষিকাও পেয়ে বসে, কিন্তু মক্কী যিন্দেগীতে মােমেনদের অবস্থা ছিলো এই যে, মােশরেকরা চাইতাে পাখীকে খাঁচায় পুরে রেখেই জব্দ করা হােক। তারা মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করবে এবং এই পাখীগুলাে তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে, এটা তাদের বরদাশতের বাইরে ছিলাে। এ জন্যে যখনই তারা জানতে পেরেছে কেউ হিজরত করার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে, সংগে সংগে তাকে আটকে ফেলেছে। এরপর দেশত্যাগে ইচ্ছুক লােকদের জন্যে তাদের যাত্রাপথ তারা নানাভাবে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। এসব নানাবিধ কারণে হিজরত করাটা ভীষণ কঠিন হয়ে গিয়েছিলাে। এই জন্যে দ্বিতীয় কঠিন অবস্থাটার কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, ‘সকল ব্যক্তিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, তারপর আমার কাছেই তাে তােমাদের ফিরে আসতে হবে।’ আসলে সকল এলাকার সকল মানুষের জন্যে মৃত্যু হচ্ছে এক চরম ও অমােঘ পরিণতি। সুতরাং কোনাে আহবানকারী এমন নেই তাদের পক্ষে হিসাব দেয়ার দায়িত্ব নেবে, আর প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষ জানে না যে তাদের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি, জানে না কখন এবং কোন কোন কারণে তাদের মৃত্যু আসবে? তবে অবশেষে তার কাছেই যে ফিরে যেতে হবে এবং তার কাছেই হবে শেষ আশ্রয়, এ বিষয়ে তাদের মনে কোনাে সন্দেহ নেই। এ জন্যে তার দিকেই তাদের হিজরত করতে হবে, তাহলেই তারা দেখতে পাবে সেখানে তাদের জন্যে মাথা গোঁজার যথেষ্ট প্রশস্ত যমীন রয়েছে এবং একথা তারা অবশ্যই বিশ্বাস করে যে, এ জীবনের সফর শেষে তারা তার কাছেই ফিরে যাবে। তারা জানে ও বিশ্বাস করে, তারা একমাত্র আল্লাহরই সেসব বান্দা যাদের তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে তার একান্ত সান্নিধ্যে আশ্রয় দান করবেন। সুতরাং কে আছে এমন যে তাদের নানা প্রকার ভয়-ভীতির যিনজীরে আবদ্ধ করে রাখবে? অথবা কে আছে এমন শক্তিমান, যে আল্লাহর এসব সাহায্যের আশ্বাস বাণী শােনানাের পরেও মােমেনদের অন্তরে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী সৃষ্টি করতে পারবে? এ সব আশ্বাস বাণীর সাথে সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মক্কা থেকে আগত মােহাজেরদের প্রত্যেকের জন্যে মদীনা শরীফে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিলাে তাই নয়; বরং এই পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে তাদের জন্যে অন্যান্য প্রয়ােজনীয় সকল কিছুও যােগাড় করে দেয়া হয়েছিলাে এবং তারা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন যে, নিজেদের দেশ পরিত্যাগ করার কারণে তাদের যেসব সংকট সমস্যা ও অন্তর্দাহ সৃষ্টি হয়েছিলাে, সেসব ব্যথা-বেদনা দূর করার সাথে সাথে তাদের জীবন যাপনের জন্য মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার প্রশস্ততা ও সচ্ছলতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এভাবে গৃহহীন হওয়ার সকল অভাব পূরণ করার পর পরওয়ারদিগারে আলম তাদের জন্যে বাড়তি বরাদ্দ হিসেবে বাগ-বাগিচায় ভরা এমন জান্নাত মঞ্জুর করবেন বলে ওয়াদা করছেন, ‘যার নীচ অথবা পাশ দিয়ে স্রোতস্বিনী ছােট ছােট নহর প্রবাহিত হতে থাকবে।’ অর্থাৎ এ জীবনে হৃত সম্পদ সম্পত্তি পূরণ করার পর তাদের পরকালীন যিন্দেগীতে অতিরিক্ত আরও অনেক বড় জিনিস পুরস্কার হিসেবে দান করা হবে। আল্লাহর ঘােষণা, ‘আর যারা ঈমান আনবে এবং ভালাে কাজসমূহ করবে, (তাদের) আমি মহান আল্লাহ প্রদান করব জান্নাতের মধ্যে সুউচ্চ ঘরসমূহ, যেগুলাের তলদেশ বা পাশ দিয়ে ছােট ছােট নদী প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।’ এখানে তাদের কাজ, সবর ও তাওয়াক্কুলের কারণে তাদের অভিনন্দন জানানাে হবে। বলা হবে, ‘অতি চমৎকার (হবে) সৎ কর্মীদের প্রতিদান, যারা সর্বাবস্থায় সবর করেছে এবং তাদের রবের ওপর সকল বিষয়ে তাওয়াক্কুল করে।’ ওপরের এই ছােট বাক্যটি দ্বারা বিদগ্ধ সেসব হৃদয়গুলােকে কী সুন্দরভাবে আল্লাহ রব্বুল আলামীন মযবুত বানাচ্ছেন এবং কতাে চমৎকারভাবে তাদের উৎসাহিত করছেন, তার একটি অতি উজ্জ্বল ঝলক ফুটে উঠেছে এমনই এক কঠিন সময়ে, যখন তারা গৃহহারা হওয়ার বেদনায় জর্জরিত এবং নানা প্রকার ভয়-ভীতি ও অভাবের চিন্তায় পেরেশান। নিজেদের দেশ, সম্পদ-সম্পত্তি, কর্মক্ষেত্রসমূহ, প্রিয় কর্মস্পৃহা ও বিশেষ বিশেষ কাজের প্রতি অনুরাগ এবং যােগ্যতা বিকাশের সুপরিচিত ক্ষেত্রসমূহ, এসব কিছু ছেড়ে আসার কারণে উদ্ভুত পেরেশানী ও নানাবিধ জীবন সামগ্রীর অভাববােধ তাদের হৃদয় মনকে অতি চুপিসারে দুর্বল করে ফেলছে, এহেন ক্রান্তিলগ্নে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদের অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিচ্ছেন না; বরং অতি সুন্দর ভাষা ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তি দ্বারা তাদের আশ্বাস দিতে গিয়ে বলছেন, ‘তাকিয়ে দেখাে একবার সে জীবজন্তুগুলাের দিকে ওদের মধ্যে তাে অনেকেই আছে যারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের সামগ্রী নিজেরা বহন করে আনে না, তাদের যেমন করে আল্লাহ তায়ালা রিযিক দান করেন তােমাদেরও তাে তিনি রিযিক দিয়ে থাকেন।’ -এটা হচ্ছে এমন এক কথা, যা অন্তরকে জাগিয়ে দেয় এবং জীবনের বাস্তবতা তাদের সামনে এক জীবন্ত প্রাণীর মতাে ফুটিয়ে তােলে। আল্লাহর দুনিয়ায় কতাে প্রাণী এমন আছে যারা নিজেদের খাদ্য খাবার, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা নিজেরা করে না, এসব তারা জমা করেও রাখে না, নিজেদের প্রয়ােজনীয় দ্রব্যসম্ভার তারা বহন করে নিয়েও বেড়ায় না বা এ নিয়ে কোনাে চিন্তা ভাবনাও করে না, তারা এটাও জানে না যে, এসব কেমন করে বৃদ্ধি পায় এবং এগুলাে কিভাবে কাজে লাগানাে যায়, জানে না কেমন করে এসব খাদ্য খাবার তাদের কাছে পৌছানাে হয় এবং কিভাবে তাদের তিনি হেফাযত করেন। সব কিছুর ওপরে যে চিন্তাটা তাদের করা দরকার তা হচ্ছে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাদের খাওয়াচ্ছেন এবং অভুক্ত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করার জন্যে তাদের যে পরিত্যাগ করছেন তা নয়। একইভাবে সকল মানুষের জন্যেও তিনিই রিযিক বরাদ্দ করছেন। যদি কখনাে তাদের ধারণায় এমন আসে যে, তাদের রিযিকের ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করে নিচ্ছে এবং এ রিযিক আহরণের জন্যে তাদের চেষ্টা-তদবীরকে তারা নিজেরা কাছে লাগাচ্ছে, তাহলে তাদের চিন্তা করা দরকার তাদের জীবন ধারণের জন্যে প্রয়ােজনীয় উপায়-উপাদান তাে তিনিই দিচ্ছেন এবং এসব উৎপাদনের জন্যে তাদের যােগ্যতা ও বুদ্ধি দান করা সব তাে তারই মেহেরবানী। কাজেই এসব কিছুর প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা দান তাে তারই দেয়া রিযিক। আল্লাহর কাছে পৌছুনাের কোন ক্ষমতা তাদের নেই এবং তারই মেহেরবানী ও ক্ষমতা দান ছাড়া নিজের জীবনের জন্যে প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করা তাদের কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং তাদের জানানাে হচ্ছে যে, হিজরতের সময় রিযিক সম্পর্কে চিন্তা করার কোন প্রয়ােজন তাদের নেই। তারা তাে আল্লাহর (অনুগত) বান্দা, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তার যে রাজ্য, সে রাজ্যেরই তারা নাগরিক। এ রাজ্যের এক অংশ থেকে আর এক অংশে তারা যাচ্ছে। সুতরাং তার নাগরিকদের যাবতীয় প্রয়ােজন মেটানাে এটা তাে তারই দায়িত্ব। যেখানেই তারা থাকুক না কেন তাদের তিনি প্রয়ােজনীয় দ্রবাদি সরবরাহ করবেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে তাদের এই মহব্বতের সম্পর্ক এটা চূড়ান্ত রূপে নেমে আসবে তখন যখন তারা তার সাথে মিলিত হবে। তখনই প্রকৃতপক্ষে তারা বুঝতে পারবে তাদের প্রতি আল্লাহর মেহেরবানী ও তার পরিচালনার কথা। সুতরাং আজকে তাদের বুঝা দরকার যে, তিনি অবশ্যই তাদের কথা শােনেন ও তাদের অবস্থা জানেন এবং তাদের তিনি কিছুতেই একাকী অবস্থায় ছেড়ে দেবেন না। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই (সকল কিছু শুননেওয়ালা জাননেওয়ালা।’ এখানে এই ছােট্ট ভাষণটি শেষ হচ্ছে। ছােট্ট হলেও এর মধ্যে মােহাজেরদের সকল ব্যাকুলতা তুলে ধরা হয়েছে এবং এর মধ্যে জানানাে হয়েছে যে, জন্মভূমি পরিত্যাগের সময় তাদের মনের মধ্যে যতাে প্রকার সংকট সমস্যা ও দুশ্চিন্তা এসেছে, সব কিছু পরম করুণাময় আল্লাহ পাক নিজ ক্ষমতা ও মেহেরবানী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করেছেন। সেই মেহেরবান আল্লাহ তায়ালা তাদের যাবতীয় ভয় ভীতি ও দুশ্চিন্তাকে পরম প্রশান্তি ও নিশ্চিন্ততায় রূপান্তরিত করে দিয়েছেন। পেরেশানী ও অস্থিরতার স্থলে এনে দিয়েছেন অবিচলতা ও স্থিরতা। তাদের সকল ক্লান্তি দূর করে এনে দিয়েছেন আরাম ও তৃপ্তির আনন্দ। আর মহান আল্লাহর সাহায্য ও আশ্রয় ধন্য হওয়ার কারণে আত্মীয়স্বজন, জমি-জায়গা, ছাগল-ভেড়া, নিরাপত্তার প্রশ্ন ইত্যাদি সবই তাদের কাছে সেদিন গৌণ হয়ে দেখা দিয়েছিলাে এবং এভাবে তারা আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করেছিলেন। সে কঠিন সফরের সময় সান্তনা দান করা হয়েছিলাে তারই পক্ষ থেকে, যিনি বিশ্বলােকের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা।
*মোশরেকদের বিশ্বাসের ধরণ : মােমেনদের সম্পর্কে এতটুকু আলােচনা করার পর এ প্রসংগ শেষ হচ্ছে এবং পরবর্তী প্রসংগে মােশরেকদের ভূমিকা ও তাদের ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে। জানানাে হচ্ছে যে, তারা অবশ্যই স্বীকার করে, সুউচ্চ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সবাই আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টি করেছেন, তিনি তার নিয়ন্ত্রণে রেখে পরিচালনা করছেন সূর্য ও চাঁদকে, আকাশ থেকে তিনিই বর্ষণ করছেন প্রয়ােজনীয় বৃষ্টি, যার দ্বারা যমীন মরে যাওয়ার পর আবার যিন্দা করে তুলেছেন। আর এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কখনাে তাদের জন্যে জীবন ধারণ সামগ্রী প্রচুর পরিমাণে যােগাড় করে দিচ্ছেন, আবার কখনাে সংকীর্ণ করছেন এবং এটাও ঠিক যে, যে কোনাে কঠিন সংকট ও ভয়ের মুহূর্তে তারা একমাত্র আল্লাহর কাছেই প্রার্থনার হাত প্রসারিত করে, কিন্তু এরপরও তারা আল্লাহর ক্ষমতায় অন্য কেউ শরীক আছে বলে মনে করে, যারা একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করে তাদের কষ্ট দেয়, যে আকীদা বিশ্বাস সম্পর্কে বিতর্কের কোনাে সুযােগ নেই, নেই কোন সন্দেহ- সেই বিষয়েও তারা মােমেনদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়, পবিত্র কাবা গৃহের মােতাওয়াল্লী ও প্রতিবেশী হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা যেসব নেয়ামত তাদের দিয়েছেন, যে নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ত এই ঘরের কারণেই দিয়েছেন, সেই পবিত্র ঘরেই তারা তার বান্দাদের ভয় দেখায়। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর যদি তাদের জিজ্ঞেস করাে, কে সৃষ্টি করেছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং কে নিয়ন্ত্রণ করেছে সূর্য ও চাঁদকে, তখন ওরা বলে, আল্লাহ…'(৬১-৬৩) এ আয়াতগুলাের মধ্যে ছবির মতো ফুটে ওঠছে তৎকালীন আরবদের মধ্যে বিরাজমান আকীদা বিশ্বাসের নমূনা এবং জানানাে হচ্ছে যে, তাদের অন্তরের গভীরে এক আল্লাহর অস্তিত্বের কথা প্রােথিত হয়েছিলাে, কিন্তু (কিছু স্বার্থান্বেষী লােকের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার হীন মানসিকতার কারণে) পরবর্তীতে তাদের এ আকীদার মধ্যে বিভ্রান্তি অনুপ্রবেশ করে। আর এটা বিচিত্র নয় যে, তাদের অন্তরের মধ্যে সুপ্ত হলেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন সম্পর্কে গভীর বিশ্বাস বিদ্যমান ছিলাে। তা ছিলাে এই জন্যে যে, তারা জানতো ও বিশ্বাস করতাে যে, তারা ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম(আ.)-এর বংশধর এবং এ জন্যে এই আরব উপদ্বীপের মধ্যে পাশাপাশি বাস করা সত্তেও তারা মূসা ও ঈসা(আ)-এর ধর্ম এবং তাদের অনুসারীদের সাথে মিলে মিশে না গিয়ে বরাবর নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলতাে। আর বাস্তবে তারা বিশ্বাস করতাে যে, তারা ইবরাহীম(আ.)-এর দ্বীনের অনুসারী এবং এ জন্যে তারা গৌরবও বােধ করতাে। এ সময়ে স্বার্থান্বেষী নেতৃবৃন্দের ভ্রান্ত পরিচালনায় তারা কোন সময়ে এবং কিভাবে যে এ মূল আকীদা থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাে তা তারা জানতেও পারেনি। তাদের যখন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হতাে, জিজ্ঞেস করা হতাে এ সবের নিয়ন্ত্রণকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হতাে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণকারী সম্পর্কে এবং এই পানি দিয়ে মুর্দা যমীনকে যিন্দা করনেওয়ালা সম্পর্কে… তখন তারা অকপটে স্বীকার করতাে যে অবশ্যই এ সব কিছুর নির্মাণকারী আল্লাহ তায়ালা; অথচ এ সব সত্তেও তারা মূর্তি পূজা করতাে, পূজা করতো জ্বিনদের, অথবা পূজা করতাে ফেরেশতাদের এবং পূজা অর্চনা ও ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যাপারে তারা আল্লাহর সাথে আরও অনেককে শরীক করে নিতাে। যদিও সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় এদের কারও কোনাে ভূমিকা আছে বলে তারা মনে করতাে না। এটা বড়ই বিস্ময়কর বৈপরীত্য। তাদের কাজ ও কথার মধ্যে এই যে অদ্ভুত গরমিল ছিলাে, তারই কারণে আল্লাহ রব্বুল আলামীনও আলােচ্য আয়াতগুলােতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘তাহলে কোথায় তাদের বিভ্রান্ত করে নিয়ে বেড়ানাে হচ্ছে’ অর্থাৎ, এই আজব গরমিলজনক কাজ ও আচরণের মাধ্যমে তাদের কেমন করে সত্য থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ‘বরং (আসল ব্যাপার হচ্ছে) তাদের মধ্যে অধিকাংশই বােঝে না (বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না)’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই গােলমেলে অবস্থাকে যুক্তিপূর্ণ বলে মেনে নেয় এবং এই ভ্রান্তির মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকে সে আসলে কিছু বুঝে না। কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, কে সূর্য ও চাদের নিয়ন্তা, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণকারী এবং যমীন মরে যাওয়ার পর তাকে কে আবার জীবিত করে। মানুষের মনে যখন এ সব প্রশ্ন জাগে, তখন বুঝা যায় সবারই মনের মধ্যে এ কথাটা লুকিয়ে আছে যে, আল্লাহ তায়ালাই যার জন্যে চান, তার নেয়ামতের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেন এবং যার জন্যে চান, তার রুযি সংকুচিত করে দেন। এর দ্বারা বুঝা গেলাে যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির যে নিয়ম এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টি ও তার ক্ষমতার যেসব চিহ্ন চতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে, তার সাথে রুযি রােজগারের ব্যাপারটা ওৎপ্রােতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আর এসব কিছুর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছেই রয়েছে। সে জন্যেই তিনি বলছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু সম্পর্কে ওয়াকেফহাল। আর মানব জীবনের জন্যে যতাে প্রকার দ্রব্য সম্ভারের প্রয়ােজন, সেসব কিছুই সম্পৃক্ত নভােমন্ডলের আবর্তনের সাথে।’ শুধু তাই নয়, বরং পৃথিবীর বুকে অবস্থিত সকল প্রকার জীবজন্তু, পানি, ফসল, গাছপালা, তরুলতা, শাকসবজি সব কিছুরই অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে শূন্যলােকে আবর্তনশীল ছায়ালােকের সাথে এবং এর বাড়ানাে কমানাে একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারাধীন। একথাটাই ওপরে বর্ণিত আয়াতসমূহে বিশেষভাবে ফুটে ওঠেছে। সুতরাং এটা সুস্পষ্টভাবে জানা গেলাে যে, প্রাণী জগতের জন্যে যা কিছু প্রয়ােজন তা আসে পানি থেকে, যা বৃষ্টি আকারে আকাশ থেকে নেমে আসে, আসে প্রবাহমান নদী নালার পানি থেকে পৃথিবীতে উৎপন্ন গাছ-পালা ও ফসলাদি থেকে, প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে যে জীবজন্তু তার থেকে এবং খনিজদ্রব্য ও পৃথিবীর গভীরে অবস্থিত অশােধিত ধাতব পদার্থ থেকে, আরও আসছে স্থলভাগ ও পানি ভাগের মধ্যে শিকারযােগ্য নানাবিধ প্রাণী থেকে…. সবশেষে সেই উৎসের কথা চিন্তা করতে হবে যা সকল উৎসের মূল উৎস আর তা হচ্ছে ওই নিয়ম-কানুন, যার অধীনে চলছে আসমানসমূহ ও যমীন আর এই মহাকাশের মধ্যে যা সরাসরি আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে তা হচ্ছে সূর্য ও চাঁদ। যদি কোনাে সময় এই আইনের মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তন হতাে তাহলে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়তাে গােটা বিশ্বজগতের ওপর। আসলে এটা খেয়াল করার বিষয়, সারা জগতের জন্যে আল্লাহ রব্বুল আলামীন যে আইন করে দিয়েছেন তা এমনই অমােঘ এবং এমন উপযােগী যে, তার মধ্যে সামান্য কোনাে পরিবর্তন হলেই সবখানে এমন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে যা ঠেকানাের ক্ষমতা কারও নেই। এতে বুঝা যায়, সৃষ্টির সব কিছু একটি মাত্র সূতায় গাঁথা, যার মধ্যে কোনাে জায়গায় কোনাে প্রকার অসুবিধা দেখা দিলে তার প্রতিক্রিয়া গােটা বিশ্বজগতের জন্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে, এমনকি পৃথিবীর পেটের মধ্যে অবস্থিত কোন গােপন পদার্থও এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না। অবশ্য সৃষ্টির প্রয়ােজনে সব কিছু বাস্তবায়িত হওয়া, কোনাে স্থানে সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়া এবং পৃথিবীবাসীর প্রয়ােজন মেটাতে গিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় সম্পদ স্থানান্তরিত হওয়া, সব কিছুই সূর্য ও চাঁদের প্রভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, আর এ সবকিছুই মহান রব্বল আলামীনের ইচ্ছা ও জ্ঞানের মধ্যে সংঘটিত হচ্ছে । (দেখুন, সুরা ফোরকান-এর মধ্যে, ‘ওয়া খালাকা কুল্লা শাইইন ফাকাদ্বারাহু তাক্বদীরা’-এই আয়াতটির তাফসীর) মহাগ্রন্থ এই আল কোরআনের সত্যতার প্রমাণ হচ্ছে এই বিশাল সৃষ্টিজগত এবং এর মধ্যে অবস্থিত যাবতীয় দৃশ্যাবলী। এগুলাে সবই এ মহান কিতাবের প্রমাণ হিসেবে আমাদের সবার সামনে ভাসছে। এ পাক কালামের মধ্যে বর্ণিত সকল কিছু যে কোন চিন্তাশীল ব্যক্তির মধ্যে চিন্তা জাগায়। যখন মানুষ প্রকৃতির বুকে বিরাজমান রহস্যরাজির মুখােমুখি হয়, এ সব কিছু নিয়ে ভাবতে শুরু করে, এসব কিছুর সৃষ্টিকর্তাকে বুঝতে চায় এবং তার কুদরতকে তখন দেখতে পায় সবকিছুর মধ্যে একই নিয়ম-কানুন বিরাজমান, দেখে সব কিছুর মধ্যে পূর্ণ নিয়ম শৃংখলা এবং তখন সে আল্লাহর শক্তি ক্ষমতা বুঝার জন্যে আর কোনাে বড় জ্ঞান সাধনা করার প্রয়ােজন বােধ করে না। তাই মহান রব্বুল আলামীনকে জানা ও বুঝার জন্যে প্রয়ােজন শুধু জাগ্রত অনুভূতি ও দৃষ্টিওয়ালা অস্তর। এমনই সজাগ ও যিন্দা-দিল মানুষ যখন সৃষ্টি জগতের মধ্যে আল্লাহর ক্ষমতার কোনাে নিদর্শন দেখতে পায় তখন বিমােহিতভাবে গেয়ে ওঠে আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসা গীতি। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘(হে রসূল) বলাে, যাবতীয় প্রশংসা ও কৃতিত্ব আল্লাহর, বরং অধিকাংশ মানুষ বােঝে না এবং তার জ্ঞান কাজে লাগায় না।’

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫৬-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:

সূরার প্রথম থেকে এ পর্যন্ত মুসলিমদের প্রতি কাফিরদের শত্র“তা, তাওহীদ ও রিসালাত অস্বীকার এবং সত্য ও সত্যপন্থীদের পথে নানা রকম বাধা-বিঘœ ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে মুসলিমদের জন্য কাফিরদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা, সত্য প্রচার করা এবং আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে কোন বাধা বিঘœ থাকবে না এমন একটি কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। এ কৌশলের নাম হিজরত।

(يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ…..)

উক্ত আয়াতে মূলত আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদেরকে হিজরত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। অর্থাৎ যদি মু’মিনরা এমন এলাকায় বাস করে যেখানে আল্লাহ তা‘আলার দীন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না, অথবা কাফিররা প্রতিনিয়ত তাদের কষ্ট দিচ্ছে, যথাযথভাবে আল্লাহ র ইবাদত করা যাচ্ছে না তাহলে জেনে রাখ হে মু’মিনগণ, আল্লাহ তা‘আলার জমিন প্রশস্ত। যে জায়গায় গেলে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, কাফিরদের নির্যাতন থেকে রেহাই পাবে এবং আল্লাহার ইবাদত করতে কোন বাধা থাকবে না সেখানে হিজরত করবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীগণ হিজরত করেছেন। এ অর্থে কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হল: আল্লাহ বলেন:

(إِنَّ الَّذِيْنَ تَوَفّٰهُمُ الْمَلٰٓئِكَةُ ظَالِمِيْٓ أَنْفُسِهِمْ قَالُوْا فِيْمَ كُنْتُمْ ط قَالُوْا كُنَّا مُسْتَضْعَفِيْنَ فِي الْأَرْضِ ط قَالُوْآ أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللّٰهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوْا فِيْهَا)

“যারা নিজেদের ওপর জুলুম করে তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতাগণ বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে ‘দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম।’ তারা বলে, ‘আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিল না যেখানে তোমরা হিজরত করতে?’’ (সূরা নিসা ৪:৯৭)

সুতরাং কোথাও ইসলামের বিধান পালন করতে গিয়ে যদি বাধা আসে আর ঐ বাধা প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে সেখানের চেয়ে এমন উত্তম স্থান যদি থাকে যেখানে হিজরত করলে যাবতীয় ইবাদত পালনে কোন বাধা থাকবে না তখন সেখানে হিজরত করা আবশ্যক।

স্বদেশ পরিত্যাগ করে অন্যত্র যাওয়ার মধ্যে মানুষ স্বভাবত ভয় করতে পারে যে, হয়তো পথিমধ্যে স্থানীয় কাফিররা বাধা দেবে এবং প্রাণে মেরে ফেলবে। তাই পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: জীবন মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেউ পৃথিবীতে স্থায়ী হবে না। সে জন্য প্রাণের ভয়ে মু’মিন কখনো আল্লাহ তা‘আলার বিধান পালন করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(كُلُّ نَفْسٍ ذَا۬ئِقَةُ الْمَوْتِ ط وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ)

“সকল আত্মাই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী এবং নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১৮৫)

বিশেষতঃ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশাবলী পালন করা অবস্থায় মৃত্যু হলে অনেক মর্যাদা রয়েছে। সেজন্য পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেনন যারা সৎ আমল করবে, ধৈর্য ধারণ করবে ও আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করবে তারাই মৃত্যুর পর তলদেশে নহর প্রবাহিত হয় এমন জান্নাতে বসবাস করবে। যেখানে থাকবে শুধু আরাম-আয়েশ, কোন দুঃখ-কষ্ট সেখানে তাদেরকে স্পর্শ করবে না।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, পৃথিবীর স্থলে ও জলে এমন কতক জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য বহন করে নিয়ে চলে না এবং মজুত করে রাখে না। আল্লাহ তা‘আলাই তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা সকালে খালি পেটে বাসা থেকে বের হয়ে যায় আবার সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে। তাদের জীবিকার জন্য কোনই চিন্তা করতে হয় না। অথচ তাদের কী পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয় যার ব্যবস্থা করেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَي اللّٰهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ط كُلٌّ فِيْ كِتٰبٍ مُّبِيْنِ)

“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে (লাওহে মাহফূজ) সব কিছুই লিপিবদ্ধ আছে।” (সূরা হূদ ১১:৬)

মানুষও যদি আল্লাহ তা‘আলার ওপর সত্যিকার ভরসা করে, তাহলে তাদেরকে এভাবেই রিযিক দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَوَكَّلُونَ عَلَي اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزِقْتُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا

তোমরা যদি আল্লাহ তা‘আলার ওপর যথাযথ ভরসা কর যেমন ভরসা করা উচিত তাহলে তোমাদেরকে তেমনভাবে রিযিক দেবেন যেমনভাবে পাখিদেরকে রিযিক দিয়ে থাকেন। পাখিরা খালি পেটে সকালে বের হয় আর ভরা পেটে বাসায় ফিরে আসে। (তিরমিযী হা: ২৩৪৪, সহীহ)

অতএব সকল প্রাণীর রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, সৃষ্টি করার পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা রিযিক নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই রিযিকের চিন্তা না করে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে দীনের সকল বিধি বিধান যথাযথভাবে পালন করলে আল্লাহ তা‘আলা কোথা থেকে রিযিক দেবেন তা বুঝতেও পারবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষের রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. জীব মাত্রই মৃত্যুবরণ করতে হবে।
৩. বিপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে, অধৈর্য হওয়া যাবে না।
৪. কোথাও আল্লাহ তা‘আলার বিধান পালন করতে বাধাগ্রস্ত হলে সেখান থেকে উত্তম স্থান পেলে সেখানে হিজরত করতে হবে।
# (وَلَئِنْ سَاَلْتَھُمْ مَّنْ خَلَقَ…. بَلْ اَکْثَرُھُمْ لَا یَعْقِلُوْنَ)

মক্কার মুশরিকরাও বিশ্বাস করত মহান আল্লাহ আকাশ-জমিনের সৃষ্টিকর্তা, চন্দ্র-সূর্যের নিয়ন্ত্রণকারী, তিনি রিযিকদাতা, তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে মৃত জমিনকে জীবিত করেন। অর্থাৎ তাওহীদে রুবুবিয়্যাতে তাদের পূর্ণ বিশ্বাস ছিল সে কথাই এখানে প্রতীয়মান হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ বলছেনন তুমি যদি মক্কার মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, আকাশ-জমিনের সৃষ্টিকর্তা কে, আকাশ থেকে কে বৃষ্টি দেন তাহলে তারা বলবে আল্লাহ। কিন্তু যখন কোন কিছুর প্রয়োজন হয় তখন তারা সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছে চায় না। বিভিন্ন দেবতা, মূর্তি ইত্যাদির কাছে ধরণা ধরে। তাই তাওহীদে রুবুবিয়্যাহর প্রতি বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও তারা কাফির-মুশরিক। সুতরাং কোন ব্যক্তি এ বিশ্বাস করলেই মু’মিন হবে না যে, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, হায়াত-মউতের মালিক ইত্যাদি, যতক্ষণ না সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখানে হিজরতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যদি মক্কায় আল্লাহর বন্দেগী করা কঠিন হয়ে থাকে, তাহলে দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও। আল্লাহর পৃথিবী সংকীর্ণ নয়। যেখানেই তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে বসবাস করতে পারো সেখানে চলে যাও। তোমাদের জাতি ও দেশের নয় বরং আল্লাহর বন্দেগী করা উচিত। এ থেকে জানা যায়, আসল জিনিস জাতি ও দেশ নয় বরং আল্লাহর বন্দেগী। যদি কখনো জাতি ও দেশ প্রেমের দাবী এবং আল্লাহর বন্দেগীর দাবীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে তাহলে সেটিই হয় মু’মিনের ঈমানের পরীক্ষার সময়। যে সাচ্চা মু’মিন হবে, সে আল্লাহর বন্দেগী করবে এবং দেশ ও জাতিকে পরিত্যাগ করবে। আর যে মিথ্যা ঈমানের দাবীদার হবে, সে ঈমান পরিত্যাগ করবে এবং নিজের দেশ ও জাতিকে আঁকড়ে ধরবে। এ আয়াতটি এ ব্যাপারে একেবারে সুস্পষ্ট যে, একজন সত্যিকার আল্লাহর অনুগত ব্যক্তি দেশ ও জাতি প্রেমিক হতে পারে কিন্তু দেশ ও জাতি পূজারী হতে পারে না। তার কাছে আল্লাহর বন্দেগী হয় সব জিনিসের চেয়ে প্রিয় এবং দুনিয়ার সমস্ত জিনিসকে সে এর কাছে বিকিয়ে দেয় কিন্তু দুনিয়ার কোন জিনিসের কাছে একে বিকিয়ে দেয় না।
# প্রাণের কথা ভেবো না। এ তো কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কিভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তাযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কিভাবে পূরণ করা যাবে। শেষ পর্যন্ত তোমাদের ফিরে আমার দিকে আসতে হবে। যদি দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচাবার জন্য ঈমান হারিয়ে চলে আসো তাহলে এর ফল হবে ভিন্ন কিছু। আর ঈমান বাঁচাবার জন্য যদি প্রাণ হারিয়ে চলে আসো তাহলে এর পরিণাম হবে অন্য রকম। কাজেই আমার কাছে যখন ফিরে আসবে তখন কি নিয়ে ফিরে আসবে, কেবল একথাটিই চিন্তা করো। প্রাণের জন্য উৎসর্গীত ঈমান, না ঈমানের জন্য উৎসর্গীত প্রাণ নিয়ে?
# ধরে নেয়া যাক যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে তোমরা দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিত ও হয়ে যাও এবং পার্থিব দৃষ্টিকোন থেকে পুরোপুরি ব্যর্থতার মুত্যু বরণও করে থাকো তাহলে বিশ্বাস করো অবশ্যই এ ক্ষতিপূরণ হবে এবং নিছক ক্ষতিপূরণই হবে না বরং সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে।
# যারা সব রকমের সমস্যা, সংকট, বিপদ-আপদ, ক্ষতি ও কষ্টের মোকাবিলায় ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। যারা ঈমান আনার বিপদ নিজের মাথায় তুলে নিয়েছে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। ঈমান ত্যাগ করা, উপকারিতা ও মুনাফা যারা নিজের চোখে দেখেছে এবং এরপরও তার প্রতি সামান্যতমও ঝুঁকে পড়েনি। যারা কাফের ও ফাসেকদেরকে নিজেদের সামনে ফুলে ফেঁপে উঠতে দেখেছে এবং তাদের ধন-দৌলত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তির দিকে ভুলেও নজর দেয়নি।
# যারা নিজেদের সহায়-সম্পত্তি, কাজ-কারবার ও বংশ-পরিবারের ওপর ভরসা করেনি বরং নিজেদের রবের ওপর ভরসা করেছে। যারা দুনিয়াবী উপায়-উপাদানের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিছক নিজেদের রবের ভরসায় ঈমানের খাতিরে প্রত্যেকটি বিপদ সহ্য করার এবং প্রয়োজনে প্রত্যেকটি শক্তির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবার জন্য তৈরি হয়ে যায় এবং সময় এলে বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ে। যারা নিজেদের রবের প্রতি এতটুকু আস্থা রাখে যে, ঈমান ও নেকীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রতিদান তার কাছে কখনো নষ্ট হবে না এবং বিশ্বাস রাখে যে, তিনি নিজের মু’মিন ও সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে এ দুনিয়ায় সহায়তা দান করবেন এবং আখেরাতেও তাদের কার্যক্রমের সর্বোত্তম প্রতিদান দেবেন।
# হিজরত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তার মতো জীবিকার চিন্তায়ও পেরেশান হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে এই যে অসংখ্য পশুপাখি ও জলজপ্রাণী জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, এদের মধ্য থেকে কে তার জীবিকা বহন করে ফিরছে? আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে এরা কোন না কোনো প্রকারে জীবিকা লাভ করেই থাকে। কাজেই তোমরা একথা ভেবে সাহস হারিয়ে বসো না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাবো কি? আল্লাহ‌ যেখান থেকে তার অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরও দেবেন। ঠিক একথা সাইয়্যিদিনা মসীহ আলাইহিস সালাম তার সাথীদেরকে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “কেহই দুই কর্তার দাসত্ব করিতে পারে না, কেননা সে হয়ত একজনকে দ্বেষ করিবে, আর একজনকে প্রেম করিবে, নয়ত একজনের অনুরক্ত হইবে, আর একজনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না। এইজন্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, “কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিংবা ‘কি পরিব’ বলে শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না; ভক্ষ্য হতে প্রাণ ও বস্ত্র হতে শরীর কি বড় বিষয় নয়? আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর? তাহারা বুনেওনা, কাটেওনা, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ নও? আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হয়ে আপন বয়স এক হস্ত মাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে? আর বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল শ্রম করে না, সূতাও কাটেনা; তথাপি আমি তোমাদিগকে বলতেছি শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটির ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না। ভাল ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তা যদি ঈশ্বর এরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্প বিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না? অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, “কি ভোজন করিব? ” বা “কি পান করিব? ” বা “কি পরিব? ” কেননা পরজাতীয়েরাই এ সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা-ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাহার রাজ্য ও তার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদের দেওয়া হইবে। অতএব কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় ভাবিত হইবে; দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট।” (মথি ৬: ২৪-৩৪) কুরআন ও বাইবেলের এ উক্তিগুলোর পটভূমি অভিন্ন। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায়ে এসে যায় যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের জগতের সমস্ত সহায় ও নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিছক আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা অংক কষে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়াবার আগে প্রাণ রক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। আসলে এ ধরনের অবস্থা পরিবর্তিত হয় এমন সব লোকের শক্তির জোরে যারা প্রতিমুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সব ধরনের বিপদ মাথা পেতে নেবার জন্য নির্দ্ধিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন সময় আসে যখন আল্লাহর কালেমা বুলন্দ হয়ে যায় এবং তার মোকাবিলায় অন্য সমস্ত মত পথ অবনমিত হয়।
# এখান থেকে আবার মক্কায় কাফেরদের প্রতি বক্তব্যের মোড় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
# এখানে “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য” শব্দগুলোর দু’টি অর্থ প্রকাশিত হচ্ছে। একটি অর্থ হচ্ছে, এসব যখন আল্লাহরই কাজ তখন একমাত্র তিনিই প্রশংসার অধিকারী। অন্যেরা প্রশংসালাভের অধিকার অর্জন করলো কোথায় থেকে? দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, আল্লাহর শোকর, তোমরা নিজেরাও একথা স্বীকার করছো।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫৬-৬০ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে আল্লাহ্ তা’আলা মুমিনদেরকে হিজরত করার নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যেখানে তারা দ্বীনকে কায়েম রাখতে পারবে না সেখান থেকে তাদেরকে এমন জায়গায় চলে যেতে হবে যেখানে তারা দ্বীনের কাজ স্বাধীনভাবে চালিয়ে যেতে পারবে। আল্লাহর যমীন খুব প্রশস্ত। সুতরাং যেখানে তারা আল্লাহর নির্দেশ মুতাবেক তাঁর ইবাদতে লেগে থেকে তাঁর একত্ববাদ ঘোষণা করতে পারবে সেখানেই তাকে হিজরত করতে হবে।

হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “সমস্ত শহর আল্লাহর শহর এবং সমস্ত বান্দা আল্লাহর দাস। যেখানে তুমি কল্যাণ লাভ করবে সেখানেই অবস্থান করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

সাহাবায়ে কিরামের জন্যে মক্কায় অবস্থান যখন কষ্টকর হয়ে গেল তখন তাঁরা। হিজরত করে হাবশায় চলে গেলেন, যাতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেন। তথাকার বুদ্ধিমান ও দ্বীনদার বাদশাহ্ সাহমাহ্ নাজ্জাশী (রঃ) পূর্ণভাবে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা করেন। সেখানে তাঁরা মর্যাদা ও পরম আনন্দের সাথে বসবাস করতে থাকেন। এরপর আল্লাহ তা’আলার অনুমতিক্রমে অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) ও স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় হিজরত করেন।

অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী, অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের সবকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে এবং আমার সামনে তোমাদেরকে হাযির হতে হবে। কাজেই তোমাদের জীবন আল্লাহর আনুগত্যের কাজে ও তাকে সন্তুষ্ট করার কাজে কাটিয়ে দেয়া উচিত যাতে মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে গিয়ে বিপদে পড়তে না হয়। মুমিন ও সৎ লোকদেরকে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে আদনের সুউচ্চ প্রসাদে পৌঁছিয়ে দিবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। সকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না উত্তম! সেখান হতে তাদেরকে কখনো বের করা হবে না। না থাকার নিয়ামতরাজি কখনো শেষ হবে, না কিছু হ্রাস পাবে। মুমিনদের সত্ত্বার্যের বিনিময়ে তাদেরকে যে জান্নাতী প্রাসাদ দেয়া হবে তা সত্যিই পরম আরামদায়ক। যারা ধৈর্য অবলম্বন করে ও তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে এবং আল্লাহর পথে হিজরত করে। যারা আল্লাহর শত্রুদেরকে পরিত্যাগ করে এবং তাঁর পথে নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারবর্গকে বিসর্জন দেয় এবং তাঁর নিয়ামত ও পুরস্কারের আশায় পার্থিব সুখ-শান্তির উপর লাথি মারে।

আবু মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে এমন অট্টালিকা রয়েছে যার বাইরের দিক ভিতরের দিক হতে এবং ভিতরের দিক বাইরের দিক হতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আল্লাহ তা’আলা তা এমন লোকদের জন্যে বানিয়েছেন যারা (মানুষকে) খাদ্য খেতে দেয়, ভাল কথা বলে, নিয়মিতভাবে নামায পড়ে ও রোযা রাখে এবং রাত্রে দাঁড়িয়ে ইবাদত করে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে। আর তারা পার্থিব ও পারলৌকিক সর্বক্ষেত্রে তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে থাকে। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ খবর দিচ্ছেন যে, রিযিক কোন জায়গার সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং আল্লাহর বন্টনকৃত রিযিক সাধারণভাবে সর্বজায়গায় বিদ্যমান রয়েছে। যে যেখানে থাকে সেখানেই তার রিযিক পৌঁছে যায়। মুহাজিরদের (রাঃ) হিজরতের পর তাঁদের রিযিকের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা এত বরকত দেন যে, তারা দুনিয়ার দূর দূর প্রান্তের মালিক হয়ে যান। তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ এমন কত জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য জমা রাখার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তাআলাই ওগুলোকে খাদ্য দান করে থাকেন এবং মানুষেরও খাদ্যের ব্যবস্থা তিনিই করে থাকেন। তিনি কোন সৃষ্টজীবকে কখনো ভুলে যান না। পিঁপড়াকে ওর গর্তে, পাখীকে আসমান ও যমীনের ফাঁকা জায়গায় এবং মাছকে পানির মধ্যেই তিনি খাদ্য পৌছিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সবারই জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই; তিনি ওদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে।” (১১:৬)

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ “একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে চলছিলাম। মদীনার বাগানসমূহের একটি বাগানে তিনি গেলেন এবং মাটিতে পড়ে থাকা খারাপ খেজুরগুলো পরিষ্কার করে করে তিনি খেতে লাগলেন এবং আমাকেও খেতে বললেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই (খারাপ) খেজুরগুলো খেতে আমার মন চায় না। তিনি বললেনঃ আমার তো এগুলো খেতে খুব ভাল লাগছে। কেননা, আজ চতুর্থ দিনের সকাল, এ পর্যন্ত আমি কিছুই খাইনি এবং না খাওয়ার কারণ এই যে, আমার খাবার জুটেনি। আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা জানাতাম তবে তিনি আমাকে কিসরা (পারস্য সম্রাট) এবং কায়সারের (রোমক সম্রাট) মালিক করে দিতেন। হে ইবনে উমার (রাঃ)! তোমার কি অবস্থা হবে যখন তুমি এমন লোকদের মধ্যে অবস্থান করবে যারা কয়েক বছরের খাদ্য জমা করে রাখবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করবে। আমি তো ঐ অবস্থাতেই রয়েছি এমন সময় (আারবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ মহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে দুনিয়ার ধন-ভাণ্ডার জমা করার এবং কু-প্রবৃত্তির পিছনে লেগে পড়ার নির্দেশ দেননি। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ধন-ভাণ্ডার জমা করে এবং এর দ্বারা চিরস্থায়ী জীবন কামনা করে, তার বুকে নেয়া উচিত যে, চিরস্থায়ী জীবন তো আল্লাহর হাতে। জেনে রেখো যে, না আমি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) জমা করবো, না কালকের জন্যে আজ খাদ্যপ জমা রাখবো।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা গারীব হাদীস। এর বর্ণনাকারী আবুল আতৃক জারী দুর্বল)

বর্ণনা করা হয় যে, কাকের ডিম হতে যখন বাচ্চা বের হয়, তখন বাচ্চাগুলোর পালক ও ললাম সাদা হয়। এই দেখে কাক ওগুলোকে ঘৃণা করে পালিয়ে যায়। কিছুদিন পর ঐ শাবকগুলোর পালক কালো বর্ণ ধারণ করে। তখন ওদের মা-বাপ ওদের কাছে ফিরে আসে এবং আহার দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় যখন ওদের বাপমা ওদেরকে ঘৃণা করে ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কাছেও আসে না তখন আল্লাহ তাআলা ঐ ছোট ছোট মশাগুলো ঐ বাচ্চাগুলোর নিকট পাঠিয়ে দেন এবং ঐ মশাগুলোই ওদের খাদ্য হয়ে যায় ।

নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সফর কর, তোমাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং রিযিক প্রাপ্ত হবে।”
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সফর কর, তাহলে তোমাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং তোমরা গনীমত (যুদ্ধলব্ধ মাল) লাভ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সফর কর, তাহলে তোমরা লাভবান হবে, রোযা রাখা, তোমরা সুস্থ থাকবে এবং যুদ্ধ কর, গনীমত লাভ করবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছেঃ “তোমরা ভাগ্যবান ও স্বচ্ছলদের সাথে সফর কর।”

মহান আল্লাহর উক্তিঃ তিনি সর্বশ্রোতা অর্থাৎ তিনি স্বীয় বান্দাদের কথাগুলো শ্রবণকারী এবং তিনি সর্বজ্ঞ, অর্থাৎ বান্দাদের অঙ্গভঙ্গী সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল।

৬১-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা এটা সাব্যস্ত করছেন যে, সঠিক ও প্রকৃত মা’দ তিনিই। স্বয়ং মুশরিকরাও এটা স্বীকার করে যে, আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, সূর্য ও চন্দ্রকে নিজ নিজ কাজে নিয়োজিতকারী, দিবস ও রজনীকে পর্যায়ক্রমে আনয়নকারী, সৃষ্টিকর্তা, আহার্যদাতা এবং জীবন ও মৃত্যুর উপর ক্ষমতাবান একমাত্র আল্লাহ। ধনী হওয়ার হকদার কে এবং দরিদ্র হওয়ার হকদার কে তা তিনিই ভাল জানেন। বান্দাদের উপযোগিতা সম্পর্কে তিনিই ভাল খবর রাখেন।

সুতরাং মুশরিকরা নিজেরাই যখন স্বীকার করে যে, সমস্ত জিনিসের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ এবং সবকিছুরই উপর তিনিই পূর্ণ ক্ষমতাবান, তখন তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের উপাসনা কেন করছে? আর কেনই বা তারা অন্যদের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে? রাজ্যের মালিক যখন একমাত্র তিনিই তখন ইবাদতের যোগ্যও একমাত্র তিনিই হবেন। পালনকর্তা হিসেবে তাকে এক মেনে নিয়ে তারা উপাস্য হিসেবে তাঁকে এক মানছে না। এটা অতি বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। কুরআন কারীমের মধ্যে তাওহীদে রুবুবিয়্যাতের সাথে সাথেই তাওহীদে উলুহিয়্যাতের বর্ণনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রয়েছে। কেননা, মক্কার মুশরিকরা তাওহীদে রুবুবিয়্যাতকে স্বীকার করতো। তাই তাদেরকে বিবেচক হতে বলে তাওহীদে উলুহিয়্যাতের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে। মুশরিকরা হজ্ব ও উমরার সময় ‘লাব্বায়েক’ বলার মাধ্যমেও আল্লাহকে অংশীবিহীন স্বীকার করতো। তারা বলতোঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমরা হাযির আছি। আপনার কোন অংশীদার নেই, কিন্তু এমন অংশীদার রয়েছে যার মালিক এবং যার রাজ্যেরও মালিক আপনি।”

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1026)
[Advice to migrate for the sake of Iman:-]
www.motaher21.net
Sura:29
Para:21
Sura: Al-Ankabut
Ayat: – 56-63
29:56

یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ اَرۡضِیۡ وَاسِعَۃٌ فَاِیَّایَ فَاعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾

O My servants who have believed, indeed My earth is spacious, so worship only Me.

 

Advice to migrate and the Promise of Provision and a Goodly Reward

Allah commands His believing servants to migrate from a land in which they are not able to establish Islam, to the spacious earth of Allah where they can do so, by declaring Allah to be One and worshipping Him as He has commanded.

Allah says:

يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ امَنُوا إِنَّ أَرْضِي وَاسِعَةٌ فَإِيَّايَ فَاعْبُدُونِ

O My servants who believe! Certainly, spacious is My earth. Therefore worship Me.

When things became too difficult for the believers in Makkah who were in a weak position and were oppressed, they left and migrated to Ethiopia, where they were able to practice their religion. The Muslims found Ethiopia the best place for guest; where Ashamah, the Negus or king, may Allah have mercy on him, gave them refuge, helped them, supported them, and honored them in his land.

Later, the Messenger of Allah and his remaining Companions migrated to Al-Madinah, formerly known as Yathrib, may Allah protect it.

Then Allah says:

كُلُّ نَفْسٍ ذَايِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

29:57

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ۟ ثُمَّ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۵۷﴾

Every soul will taste death. Then to Us will you be returned.

 

Everyone shall taste death. Then unto Us you shall be returned.

meaning, `wherever you are, death with catch up with you, so always obey Allah and be where Allah commands you to be, for this is better for you. Death is inevitable and there is no escape from it, and then you will return to Allah, and whoever was obedient to Him will have the best reward.’

Allah says

29:58

وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَنُبَوِّئَنَّہُمۡ مِّنَ الۡجَنَّۃِ غُرَفًا تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ نِعۡمَ اَجۡرُ الۡعٰمِلِیۡنَ ﴿٭ۖ۵۸﴾

And those who have believed and done righteous deeds – We will surely assign to them of Paradise [elevated] chambers beneath which rivers flow, wherein they abide eternally. Excellent is the reward of the [righteous] workers

 

وَالَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّيَنَّهُم مِّنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الاْاَنْهَارُ

And those who believe and do righteous good deeds, to them We shall surely give lofty dwellings in Paradise, underneath which rivers flow,

meaning, `We shall cause them to dwell in lofty homes in Paradise under which various kinds of rivers flow — water, wine, honey and milk — which they can direct and cause to flow wherever they wish.’

خَالِدِينَ فِيهَا

to live therein forever.

means, they will remain there forever, never wanting to leave.

نِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ

Excellent is the reward for the workers.

these rooms will be a blessed reward for the good deeds of the believers

29:59

الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا وَ عَلٰی رَبِّہِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ ﴿۵۹﴾

Who have been patient and upon their Lord rely.

 

الَّذِينَ صَبَرُوا

Those who are patient,

in adhering to their religion, who migrated for the sake of Allah and fought the enemy, leaving behind their families and relatives to seek Allah’s Face, and hoping for that which is with Him, believing His promise.

Ibn Abi Hatim, may Allah have mercy on him, recorded from Abu Mu`aniq Al-Ash`ari that Abu Malik Al-Ash`ari told him that the Messenger of Allah told him:

إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرَفًا يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا أَعَدَّهَا اللهُ تَعَالَى لِمَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَطَابَ الْكَلَمَ وَتَابَعَ الصَّلَةَ وَالصِّيَامَ وَقَامَ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَام

In Paradise there are rooms whose outside can be seen from the inside, and their inside can be seen from the outside; Allah has prepared them for those

who feed others,

who speak well,

who pray and fast continually,

and who stand in prayer at night while people are asleep.

وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

and put their trust in their Lord.

in all their affairs, spiritual and worldly alike.

Then Allah tells us that provision is not limited only to one place, but it is given to all His creatures no matter where they are. Indeed, when the Muhajirin migrated, their provision was greater and better than before, because after a short time they became rulers in the land, in all regions.

Allah says

29:60

وَ کَاَیِّنۡ مِّنۡ دَآبَّۃٍ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَہَا ٭ۖ اَللّٰہُ یَرۡزُقُہَا وَ اِیَّاکُمۡ ۫ۖ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۶۰﴾

And how many a creature carries not its [own] provision. Allah provides for it and for you. And He is the Hearing, the Knowing.

 

وَكَأَيِّن مِن دَابَّةٍ لَا تَحْمِلُ رِزْقَهَا

And so many a moving creature carries not its own provision!

meaning, it does not have the ability to gather its provision and save it for tomorrow.

اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ

Allah provides for it and for you.

means, Allah allots its provision to it even though it is weak, and makes it easy for it. He sends provision to every creature in the appropriate manner, even the ants in the depths of the earth, the birds in the air and the fish in the sea.

Allah says:

وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الاٌّرْضِ إِلاَّ عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِى كِتَابٍ مُّبِينٍ

And no moving creature is there on earth but its provision is due from Allah. And He knows its dwelling place and its deposit. All is in a Clear Book. (11:6)

وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

And He is the All-Hearer, the All-Knower.

means, He hears all that His servants say and He knows their every movements

29:61

وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰہُ ۚ فَاَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۶۱﴾

If you asked them, “Who created the heavens and earth and subjected the sun and the moon?” they would surely say, ” Allah .” Then how are they deluded?

 

Evidences of Tawhid

Allah says:

وَلَيِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُوْفَكُونَ

اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

29:62

اَللّٰہُ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ وَ یَقۡدِرُ لَہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۶۲﴾

Allah extends provision for whom He wills of His servants and restricts for him. Indeed Allah is, of all things, Knowing.

 

وَلَيِن سَأَلْتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَحْيَا بِهِ الاَْرْضَ مِن بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

29:63

وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ مَّنۡ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡیَا بِہِ الۡاَرۡضَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَوۡتِہَا لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰہُ ؕ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ ﴿٪۶۳﴾

And if you asked them, “Who sends down rain from the sky and gives life thereby to the earth after its lifelessness?” they would surely say ” Allah .” Say, “Praise to Allah “; but most of them do not reason.

 

And if you were to ask them:”Who has created the heavens and the earth and subjected the sun and the moon!” They will surely reply:”Allah.” How then are they deviating!

Allah expands the provision for whom He wills of His servants, and straitens it for whom (He wills). Verily, Allah is the All-Knower of everything.

And if you were to ask them:”Who sends down water from the sky, and gives life therewith to the earth after its death!” They will surely reply:”Allah.”

Say:”All the praises and thanks be to Allah!”

Nay, most of them have no sense.

Allah states that there is no God but He.

The idolators who worshipped others besides Him recognized that He was the sole creator of the heavens and earth, the sun and the moon, alternating the night and day.

They acknowledged that He was the Creator Who provided for His servants and decreed how long they should live. He made them and their provision different, so that some were rich and some were poor, and He knew best what was suitable for each of them, who deserved to be rich and who deserved to be poor.

So, Allah stated that He has alone created everything, and that He alone is controlling them — if this is how it is, then why worship anyone else?

Why put one’s trust in anyone else?

Since dominion is His Alone, then let worship be for Him Alone.

Allah often establishes His divinity by referring to their acknowledgement of His Unique Lordship, because the idolators used to acknowledge His Lordship, as they said in their Talbiyah (during Hajj and `Umrah):”At Your service, You have no partner, except the partner that You have, and You possess him and whatever he has.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply