(বই#১০৩০)   [ পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ এর সময়:-] www.motaher21.net সূরা:- ৩০:আর্-রূম পারা:২১ ১৭- ১৮ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৩০)
[ পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ এর সময়:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩০:আর্-রূম
পারা:২১
১৭- ১৮ নং আয়াত:-
৩০:১৭
فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ حِیۡنَ تُمۡسُوۡنَ وَ حِیۡنَ تُصۡبِحُوۡنَ ﴿۱۷﴾
কাজেই আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় এবং যখন তোমাদের সকাল হয়।
৩০:১৮
وَ لَہُ الۡحَمۡدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ عَشِیًّا وَّ حِیۡنَ تُظۡہِرُوۡنَ ﴿۱۸﴾
আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে তাঁর জন্যই প্রশংসা এবং (তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো) তৃতীয় প্রহরে এবং যখন তোমাদের কাছে এসে যায় যোহরের সময়।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখানে “কাজেই” শব্দটি এ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে যে, যখন তোমরা জানতে পারলে ঈমান ও সৎকাজের এহেন পরিণাম হবে এবং কুফরী ও মিথ্যা আরোপের এহেন পরিণাম হবে তখন তোমাদের এ ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তাছাড়া “কাজেই” শব্দটির এ অর্থও হয় যে, মুশরিক ও কাফেররা পরকালীন জীবনকে অসম্ভব গণ্য করে আল্লাহকে মূলত অক্ষম ও অপারগ ঘোষণা করছে। কাজেই এর মোকাবিলায় তুমি আল্লাহর প্রশংসা করো, তাঁর মহিমা প্রচার করো এবং এ দুর্বলতা থেকে তিনি মুক্ত একথা ঘোষণা করে দাও। এখানে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাঁর মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে সমগ্র মু’মিন সমাজকে।
# আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে এই যে, মুশরিকরা নিজেদের শিরক ও আখেরাত অস্বীকারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি যেসব দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা আরোপ করে থাকে সেই অনন্য মহামহিম সত্ত্বাকে তা থেকে পাক-পবিত্র ঘোষণা করা এবং একথা প্রকাশ করা। এ ঘোষণা ও প্রকাশের সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে নামায। এরই ভিত্তিতে ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ, ইবনে যায়েদ ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে “তাসবীহ পাঠ” তথা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ নামায পড়া। এ তাফসীরের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের এ আয়াতের মধ্যেই রয়ে গেছে অর্থাৎ এখানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার জন্য কয়েকটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট, আল্লাহ‌ সমস্ত দোষ-ত্রুটিমুক্ত-এ আকীদা পোষণ করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে এ জন্য আবার সকাল-সাঁঝে এবং দুপুরে(জোহর) ও রাতের (ঈশা) নামাযের সময় নির্ধারণের প্রশ্নই উঠতো না। কারণ এ আকীদা তো মুসলমানদের সবসময়ই পোষণ করতে হবে। এভাবে যদি শুধুমাত্র মুখেই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলেও এ সময়গুলো নির্ধারণ করার কোন অর্থ হয় না। কারণ মুসলমানকে তো সবসময় এ আকীদা প্রকাশ করতে হবে। এভাবে যদি নিছক কণ্ঠের মাধ্যমে আল্লাহর পবিত্রতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলেও এসময়গুলো নির্ধারণ করা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ মুসলমানকে তো সর্বক্ষণ একথা প্রকাশ করতে হবে। তাই সময় নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে আল্লাহর গুণ ও মহিমা প্রচার করার হুকুম নিঃসন্দেহে তাঁর একটি বিশেষ কার্যকর কাঠামোর প্রতিই ইঙ্গিত করে। আর এ কার্যকর কাঠামোটি নামায ছাড়া আর কিছুই নয়।
# এ আয়াতে চারটি সময়ের প্রতি ইশারা করা হয়েছেঃ ফজর, মাগরিব, আসর ও যোহর। এছাড়াও নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরো যেসব ইশারা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ

أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ

“নামায কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠ করো।” (বনী ইসরাঈল ৭৮) وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ

“আর নামায কায়েম করো দিনের দুই মাথায় এবং রাতের কিছু অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর।” (হুদ, ১১৪ আয়াত) وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ

“আর তোমার রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো সূর্য উদিত হবার আগে এবং তার অস্ত যাবার আগে। আর রাতের কিছু সময়ও আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং দিনের প্রান্তভাগেও।” (ত্বাহা, ১৩০ আয়াত)

এর মধ্যে থেকে প্রথম আয়াতটি বলছেঃ নামাযের সময়সীমা হচ্ছে সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ঈশা পর্যন্ত এবং এরপর হচ্ছে ফজরের সময়। দ্বিতীয় আয়াতে দিনের দুই প্রান্ত অর্থ ফজর ও মাগরিবের সময় এবং কিছু রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পরের সময়টি হচ্ছে ঈশার ওয়াক্ত। তৃতীয় আয়াতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে অর্থ ফজরের সময় এবং অস্তমিত হওয়ার পূর্বে অর্থ আসরের সময়। রাতের সময়ের মধ্যে মাগরিব ও ঈশা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। আর দিনের প্রান্ত হচ্ছে তিনটিঃ এক, সকাল। দুই, সূর্য ঢলে পড়া এবং তিন, মাগরিব। এভাবে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা আজ যে পাঁচটি সময়ে নামায পড়ে থাকে কুরআন মাজীদ বিভিন্ন স্থানে সে সময়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছে। কিন্তু একথা স্পষ্ট শুধুমাত্র এ আয়াতগুলো পাঠ করেকোন ব্যক্তিও নামাযের সময় নির্ধারণ করতে পারতো না। মহান আল্লাহর নিযুক্ত কুরআনের শিক্ষক মুহাম্মাদ ﷺ নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে এ ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনা না দিলে তাদের পক্ষে সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া সম্ভবপর ছিল না।

এখানে একটু থেমে হাদীস অস্বীকারকারীদের ধৃষ্ঠতার কথা ভাবুন। তারা “নামায পড়া” কে বিদ্রূপ করে এবং বলে, মুসলমানরা বর্তমানে যে নামায পড়ছে এটা আদতে সে জিনিসই নয় কুরআনে যার হুকুম দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কুরআন তো নামায কায়েম করার হুকুম দেয় এবং তার অর্থ নামায পড়া নয় বরং “রবুবিয়াতের ব্যবস্থা” কায়েম করা। এখন তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করুন, রবুবিয়াতের এ অভিনব ব্যবস্থাটি কোন্ ধরনের যাকে সূর্য উদিত হবার পূর্বেই কায়েম করা যেতে পারে অথবা আবার সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে কিছু রাত অতিবাহিত হওয়া পর্যন্তও কায়েম করা যায়? আর কোন্ ধরনের রবুবিয়াত ব্যবস্থা বিশেষ করে জুমার দিন কায়েম করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে?

إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ

আর বিশেষ ধরনের এমন কি রবুবিয়াত ব্যবস্থা আছে যা কায়েম করার জন্য মানুষ যখন অগ্রসর হয় তখন প্রথমে মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে ফেলে গাঁট পর্যন্ত আর সেই সাথে মাথাও মসেহ করে নেয়, অন্যথায় তাকে কায়েম করা যেতে পারে না? إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ আর রবুবিয়াত ব্যবস্থার মধ্যে এমন কি বিশেষত্ব আছে, যার ফলে যদি মানুষ নাপাকির অবস্থায় থাকে, তাহলে যতক্ষণ গোসল না করে নেয় ততক্ষণ তাকে কায়েম করতে পারে না? لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا আর এটাই বা কেমন ব্যাপার, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে মিলন করে এবং সেখানে পানি না পাওয়া যায় তাহলে এ অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থাকে কায়েম করার জন্য পাক-পবিত্র মাটিতে হাত ঘসে নিয়ে সেই হাত মুখমণ্ডলের ওপর ঘষতে হবে? أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ منه- আর এ কেমন ধরনের অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থা যে, যদি কখনো সফর করতে হয় তাহলে মানুষ তাকে পুরোপুরি কায়েম করার পরিবর্তে অর্ধেকটাই কায়েম করে? وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ আর এটা কোন্ ধরনের কৌতুকপ্রদ ব্যাপার যে, যদি মুসলিম সেনাদল শত্রুর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তাহলে সেনাদলের অর্ধেক সিপাহী অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে “রবুবিয়াত ব্যবস্থা” কায়েম করতে থাকবে এবং বাকি অর্ধেক ময়দানে শত্রুর মোকাবিলা করতে থাকবে? তারপর যখন প্রথম দলটি ইমামের পেছনে রবুবিয়াত ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে একটি সিজদা করে নেবে তখন উঠে দাঁড়িয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি তাদের জায়গায় এসে ইমামের পেছনে “রবুবিয়াত ব্যবস্থা” কায়েম করতে থাকবে? وَإِذَا كُنْتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ কুরআন মাজীদের এ আয়াতগুলো একথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছে যে নামায কায়েম করার অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের নামায কায়েম করা যা সারা দুনিয়ার মুসলমানরা পড়ে থাকে। কিন্তু হাদীস অস্বীকারকারীদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা নিজেরা পরিবর্তিত না হয়ে ইসলামকে পরিবর্তিত করার জন্য চাপ দিয়ে চলছে। আসলে যতক্ষণকোন ব্যক্তি মহান আল্লাহর মোকাবিলায় একেবারেই শঙ্কাহীন ও নির্লজ্জ না হয়ে যায় ততক্ষণ সে তাঁর বাণীর সাথে এ বিদ্রূপাত্মক আচরণ করতে পারে না, যা এরা করছে। অথবা এমন এক ব্যক্তি কুরআনের সাথে এ তামাশা করতে পারে যে নিজের মনে কুরআনকে আল্লাহর কালাম বলে স্বীকৃতি দেয় না এবং নিছক ধোঁকা দেবার জন্য কুরআন কুরআন বলে চিৎকার করে মুসলমানদেরকে গোমরাহ করতে চায়।
# আল্লাহর দিকে ফেরা এবং তাঁর গযবের ভয় করা-এ দু’টিই মানসিক কর্ম। এ মানসিক অবস্থাটির প্রকাশ এবং এর সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠার জন্য অনিবার্যভাবে এমন কোনো দৈহিক কর্মের প্রয়োজন যার মাধ্যমে বাইরেও প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে অমুক ব্যক্তি যথার্থই এ লা-শারীক আল্লাহর বন্দেগীর দিকে ফিরে এসেছে। মানুষের নিজের মনের মধ্যেও এ আল্লাহ‌ ভীতির দিকে ফিরে আসার অবস্থাটি একটি কার্যকর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনবরত বিকাশ লাভ করতে থাকে। তাই মহান আল্লাহ‌ এই মানসিক পরিবর্তনের হুকুম দেবার পর সাথে সাথেই এ দৈহিক কর্ম অর্থাৎ নামায কায়েম করার হুকুম দেন। মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো চিন্তা নিছক চিন্তার পর্যায়েই থাকে ততক্ষণ তার মধ্যে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এ চিন্তা ভাটা পড়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে এবং এ চিন্তার পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সে সেই অনুযায়ী কাজ করতে থাকে তখন তার মধ্যে এ চিন্তা শিকড় গেড়ে বসে যেতে থাকে এবং যতই সে তদনুযায়ী কাজ করতে থাকে ততই তা শক্তিমত্তা ও দৃঢ়তা বেড়ে যেতে পেতে থাকে। এমন কি এ আকীদা ও চিন্তা পরিবর্তিত হওয়া এবং এতে ভাটা পড়ে যাওয়া ক্রমেই দুষ্কর হয়ে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে আল্লাহ‌ অভিমুখী হওয়া এবং আল্লাহ‌ ভীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার চাইতে বেশি কার্যকর আর কোনো কাজ নেই। কারণ অন্য যে কোনো কাজই হোক না কেন তা বিলম্বে আসে অথবা নামায এমন একটি কাজ যা নিয়মিতভাবে কয়েক ঘণ্টা পরপর একটি নির্দিষ্ট আকৃতিতে মানুষকে স্থায়ীভাবে পালন করতে হয়। কুরআন ঈমান ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ যে পাঠ মানুষকে দিয়েছে তা যাতে সে ভুলে না যায় এ জন্য বারবার তার পুনরাবৃত্তি করতে হয়। তাছাড়া মানবগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কারা বিদ্রোহের নীতি পরিহার করে রবের প্রতি আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছে, কাফের ও মু’মিনদের কাছে একথা এ জন্য প্রকাশ হওয়া দরকার যে, এর ফলে একটি সমাজ ও দল গঠিত হতে পরে। তারা আল্লাহর পথে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। ঈমান ও ইসলামের সাথে যখনই তাদের দলেরকোন ব্যক্তির সম্পর্ক ঢিলা হয়ে যেতে থাকে তখনই কোন আলামত সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র মু’মিন সমাজকে তার অবস্থা জানিয়ে দেয়। কাফেরদের কাছে এর প্রকাশ হওয়া এ জন্য প্রয়োজন যে, এর ফলে তাদের হৃদয় অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতি তার নিজের শ্রেণীর মানুষদেরকে আসল ইলাহ রব্বুল আলামীনের দিকে বার বার ফিরে আসতে দেখে জেগে উঠবে এবং যতক্ষণ তারা জাগবে না ততক্ষণ আল্লাহর অনুগতদের কর্ম তৎপরতা দেখে তাদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হতে থাকবে। এ দু’টি উদ্দেশ্যর জন্যও নামাজ কায়েম করাই হবে সব চেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম।

এ প্রসঙ্গে একথাটিও সামনে রাখতে হবে যে, নামায কায়েম করার এ হুকুমটি মক্কা মু’আয্‌যমায় এমন এক যুগে দেয়া হয় যখন মুষ্টিমেয় কয়েক জন মুসলমানের ক্ষুদ্র দলটি কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের জুলম ও নিপীড়নের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছিল এবং এরপরও ন’বছর পর্যন্ত এ নিষ্পেষণের ধারা অব্যাহত ছিল। সে সময় দূরের কোথাও ইসলামী রাষ্ট্রের নাম নিশানা ছিল না। যদি ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া নামায অর্থহীন হয়ে থাকে, যেমন কতিপয় নাদান মনে করে থাকেন, অথবা ইকামাতে সালাত অর্থ আদতে নামায কায়েম করা না থাকে বরং “রবুবিয়াত ব্যবস্থা” পরিচালনা হয়ে থাকে, যেমন হাদীস অস্বীকারকারীরা দাবী করে থাকেন, তাহলে এ অবস্থায় কুরআন মজীদের এ ধরনের হুকুম দেয়ার অর্থ কী? আর এ হুকুম আসার পর ৯ বছর পর্যন্ত নবী ﷺ ও মুসলমানরা এ হুকুমটি কিভাবে পালন করতে থাকেন?

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
فَسُبْحَانَ اللّٰهِ)

অর্থাৎ এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সংবাদ যে, তিনি সকল অপূর্ণতা, মন্দ ও সাদৃশ্য থেকে পবিত্র। তিনি সকল প্রকার অপূর্ণাঙ্গ গুণ, কোন সৃষ্টির সদৃশ হওয়া থেকে ঊর্ধ্বে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করা ও একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করার। ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে; বলা হল কোথায়ন তিনি বললেন:

(حِيْنَ تُمْسُوْنَ)

এখানে মাগরীব ও ইশার সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

(وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ)

এখানে ফজরের সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে। وَعَشِيًّا এখানে আসর সালাতের সময় উল্লেখ করা হয়েছে। (وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ) আর এখানে যোহরের সালাতের সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ إِلٰي غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ط إِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا)

“সূর্য ঢলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত‎ সালাত কায়েম কর এবং কায়েম কর ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৭৮)

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

সেই আল্লাহ তাআলার একচ্ছত্র আধিপত্য এবং সার্বভৌম ও সীমাহীন রাজত্বের প্রকাশ ঘটবে তার তাসবীহ পাঠ ও প্রশংসা কীর্তনের মাধ্যমে। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দাদেরকে সে দিকেই পথ নির্দেশ করেছেন। তিনি যে মহান ও পবিত্র এবং তিনি যে প্রশংসার যোগ্য তারই বর্ণনা তিনি দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় যখন ঘনঘটা অন্ধকার বয়ে আনে তখন এরপর দিন জ্যোতির্ময় আলোক নিয়ে হাযির হয়। এতোটুকু বর্ণনা করার পর তার পরবর্তী বাক্য বর্ণনা করার আগেই এ কথাগুলো প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, দুনিয়া ও আসমানে প্রশংসার যোগ্য একমাত্র তিনিই। তাঁর সৃষ্টিই স্বয়ং তার মর্যাদার ও বুযুর্গীর দলীল। সকাল ও সন্ধ্যার তাসবীহ পাঠের কথা বলার পর এশা ও যোহরের সময়ের কথা তিনি জুড়ে দিয়েছেন। রাত্রি হলো কঠিন অন্ধকারের সময় এবং এশা ও যোহর হলো পূর্ণ অন্ধকার ও আলোকোজ্জ্বলের সময়। নিশ্চয়ই সমস্ত পবিত্রতা ও মহিমা তাঁরই জন্যে শোভনীয় যিনি রাত্রির অন্ধকার ও দিনের ঔজ্জ্বল্য সষ্টিকারী। তিনিই সকালকে প্রকাশকারী ও রাত্রিকে বিশ্রামের জন্যে সৃষ্টিকারী। এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “শপথ দিবসের, যখন ওটা (সূর্য) ওকে প্রকাশ করে এবং শপথ রজনীর, যখন ওটা ওকে আচ্ছাদিত করে।” (৯১:৩-৪) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “শপথ পূর্বাহের এবং শপথ রজনীর যখন ওটা হয় নিঝুম।” (৯৩:১-২)।

হযরত মুআয ইবনে আনাস আলজুহনী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে বিশ্বস্ত বন্ধু আখ্যায় কেন আখ্যায়িত করেছেন এ খবর কি দেবো না? কারণ এই যে, সকালে ও সন্ধ্যায় তিনি এই কালেমাগুলো পাঠ করতেন।” অতঃপর তিনি(আরবি) হতে পর্যন্ত দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় এ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার দিন-রাতের যা কিছু নষ্ট হয়েছে তা ফিরে পাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তিনিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান এবং তিনিই জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটিয়ে থাকেন। প্রত্যেক জিনিসের উপর এবং ওর উল্টোর উপর তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি বীজ হতে গাছ, গাছ। হতে বীজ, মুরগী হতে ডিম, ডিম হতে মুরগী, বীর্য হতে মানুষ ও মানুষ হতে বীর্য, মুমিন হতে কাফির ও কাফির হতে মুমিন বের করে থাকেন। মোটকথা, তিনি প্রত্যেক বিষয় ও তার প্রতিপক্ষ বিষয়ের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখেন। শুষ্ক মাটিতে তিনি আর্দ্রতা আনয়ন করেন এবং অনুর্বর ভূমি থেকেও তিনি ফসল উৎপাদন করেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবি)

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1030)
[The Command to pray Five Times Daily :-]
www.motaher21.net
Sura:30
Para:21
Sura: Ar-Roum
Ayat: – 17-18

30:17

فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ حِیۡنَ تُمۡسُوۡنَ وَ حِیۡنَ تُصۡبِحُوۡنَ ﴿۱۷﴾

So exalted is Allah when you reach the evening and when you reach the morning.

 

The Command to pray Five Times Daily

Allah says:

فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ

So glorify Allah, when you enter the evening, and when you enter the morning.

Here Allah glorifies Himself and commands His servants to glorify and praise Him at these times which come one after the other and are indicative of His might and power in the heavens. This is when the night comes with its darkness, then in the morning the day comes with its light.

This glorification is followed by befitting praise, as Allah says

30:18

وَ لَہُ الۡحَمۡدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ عَشِیًّا وَّ حِیۡنَ تُظۡہِرُوۡنَ ﴿۱۸﴾

And to Him is [due all] praise throughout the heavens and the earth. And [exalted is He] at night and when you are at noon.

 

وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ

And His is all the praise in the heavens and the earth;

meaning, He is the One who is to be praised for what He has created in the heavens and on earth.

Then Allah says:

وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ

and in `Ashiyya and when Tuzhirun. —

the `Ashiyy is the time when the darkness is most intense, and Izhar is the brightest point of the day.

Glory be to the One Who created both of them, the Cleaver of the daybreak and the One Who makes night a time of rest.

Allah says:

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّـهَا

وَالَّيْلِ إِذَا يَغْشَـهَا

By the day as it shows up its brightness. By the night as it conceals it. (91:3-4)

وَالَّيْلِ إِذَا يَغْشَى

وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى

By the night as it envelops. By the day as it appears in brightness. (92:1-2)

وَالضُّحَى

وَالَّيْلِ إِذَا سَجَى

By the forenoon (after sunrise). By the night when it darkens. (93:1-2)

And there are many similar Ayat

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply