أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৩১)
[ আল্লাহর কয়েকটি নিদর্শন:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩০:আর্-রূম
পারা:২১
১৯-২৭ নং আয়াত:-
৩০:১৯
یُخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ یُخۡرِجُ الۡمَیِّتَ مِنَ الۡحَیِّ وَ یُحۡیِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ وَ کَذٰلِکَ تُخۡرَجُوۡنَ ﴿٪۱۹﴾
তিনি জীবিত থেকে মৃত্যুকে বের করেন এবং মৃত থেকে জীবিত কে বের করে আনেন এবং ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। অনুরূপভাবে তোমাদেরও (মৃত অবস্থা থেকে) বের করে নিয়ে যাওয়া হবে।
৩০:২০
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ ﴿۲۰﴾
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছ।
৩০:২১
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡہَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যের পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।
৩০:২২
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ خَلۡقُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافُ اَلۡسِنَتِکُمۡ وَ اَلۡوَانِکُمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّلۡعٰلِمِیۡنَ ﴿۲۲﴾
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শনঃ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।
৩০:২৩
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ مَنَامُکُمۡ بِالَّیۡلِ وَ النَّہَارِ وَ ابۡتِغَآؤُکُمۡ مِّنۡ فَضۡلِہٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿۲۳﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তোমাদের অন্বেষণ তাঁর অনুগ্রহ হতে। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা শোনে।
৩০:২৪
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ یُرِیۡکُمُ الۡبَرۡقَ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا وَّ یُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَیُحۡیٖ بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿۲۴﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তিনি তোমাদের দেখান বিদ্যুৎচমক ভীতি ও লোভ সহকারে। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তারপর এর মাধ্যমে জমিকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। অবশ্যই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন লোকদের জন্য যারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে।
৩০:২৫
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ تَقُوۡمَ السَّمَآءُ وَ الۡاَرۡضُ بِاَمۡرِہٖ ؕ ثُمَّ اِذَا دَعَاکُمۡ دَعۡوَۃً ٭ۖ مِّنَ الۡاَرۡضِ ٭ۖ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ تَخۡرُجُوۡنَ ﴿۲۵﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, আকাশ ও পৃথিবী তাঁর হুকুমে প্রতিষ্ঠিত আছে। তারপর যখনই তিনি পৃথিবী থেকে তোমাদের আহ্বান জানিয়েছেন তখনই একটি মাত্র আহ্বানেই সহসা তোমরা বের হয়ে আসবে।
৩০:২৬
وَ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ کُلٌّ لَّہٗ قٰنِتُوۡنَ ﴿۲۶﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই; সকলেই তাঁর আজ্ঞাবহ।
৩০:২৭
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یَبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ یُعِیۡدُہٗ وَ ہُوَ اَہۡوَنُ عَلَیۡہِ ؕ وَ لَہُ الۡمَثَلُ الۡاَعۡلٰی فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿٪۲۷﴾
তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তার পুনরাবর্তন করবেন এবং এটি তাঁর জন্য সহজতর। আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে তাঁর গুণাবলী শ্রেষ্ঠ মর্যাদাসম্পন্ন এবং তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
# আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন যেমন মৃত ডিম থেকে জীবিত বাচ্চা বের করেন, মৃত বীর্য থেকে জীবিত মানুষ সৃষ্টি করেন ইত্যাদি। আবার জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন যেমন জীবিত প্রাণী থেকে মৃত বাচ্চা জন্ম দেন, মুরগী থেকে ডিম বের করেন ইত্যাদি। অনুরূপভাবে মৃত মানুষকে হিসাব-নিকাশের জন্য জীবিত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَا۬ءِ مَا۬ءًۭ بِقَدَرٍ ج فَأَنْشَرْنَا بِه۪ بَلْدَةً مَّيْتًا ج كَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ)
“এবং যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন পরিমিতভাবে এবং আমি তার দ্বারা জীবিত করি নির্জীব ভূ-খণ্ডকে। এভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:১১)
সুতরাং আমরা যেমন স্বচক্ষে মৃত জমিনকে জীবিত হওয়া প্রত্যক্ষ করতে পারছি তেমনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করা হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আকাশ-জমিনের সবাই আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে।
২. জীবন ও মৃত্যু সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৩. মৃত্যুর পর মানুষকে তার হিসাব-নিকাশের জন্য পুনরুজ্জীবিত করা হবে।
২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার আটটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের বিষদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
প্রথম নিদর্শন হল:
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মানবাকৃতিতে পৃথিবীতে তাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام)-কে একমুষ্টি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন যা সমস্ত জমিন থেকে নিয়েছেন। ফলে আদম সন্তান সে মাটি অনুপাতেই। কেউ ফর্সা, কেউ লাল, কেউ কাল এবং কেউ উভয়ের মিশ্রিত বর্ণে। কেউ ভাল স্বভাবের, কেউ মন্দ স্বভাবের আবার কেউ উভয়ের মাঝামাঝি স্বভাবের। (তিরমিযী হা: ২৯৫৫, সহীহ)
এ সৃষ্টি সম্পর্কে সূরা হাজ্জের ৫ নং আয়াতে, সূরা ত্বহার ৫৫ নং এবং সূরা মু’মিনের ১২-১৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় নিদর্শন:
আল্লাহ তা‘আলা পুরুষদের মধ্য থেকেই তাদের জীবনসঙ্গিণী স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। আরবিতে زوج এর অর্থ হলো সঙ্গী বা জোড়া। অতএব পুরুষ নারীর ও নারী পুরুষের সঙ্গী বা জোড়া। নারীদেরকে পুরুষদের মধ্য হতেই সৃষ্টি করার অর্থ হলো পৃথিবীর প্রথম নারী মা হাওয়াকে আদম (عليه السلام)-এর বাম পার্শ্বের (পাঁজরের) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর তাদের দুজন হতে মানুষের জন্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীর মাঝে এমন একটি উপকরণ রেখে দিয়েছেন যখন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে গমন করে তখন তার কাছে শান্তি পায়। আর উভয়ের মাঝে এমন ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন যা পৃথিবীর অন্য কোন দুই ব্যক্তির মাঝে লক্ষ্য করা যায় না। বলা বাহুল্য, মানুষ এ শান্তি ও অগাধ প্রেম ভালবাসা সে দাম্পত্যের মাঝে লাভ করতে পারে যার সম্পর্কের ভিত্তি শরীয়তসম্মত বিবাহের ওপর প্রতিষ্ঠিত। পরন্তু ইসলাম একমাত্র বিবাহসূত্রের মাধ্যমেই আবদ্ধ দম্পতিকেই জোড়া বলে স্বীকার করে। অন্যথায় শরীয়ত বিরোধী দাম্পত্যের (লিভ টুগেদার) সম্পর্ককে ইসলাম জোড়া বলে স্বীকার করে না। বরং তাদেরকে ব্যভিচারী আখ্যায়িত করে এবং তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান প্রদান করেছে।
তৃতীয় নিদর্শন:
আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন। চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। এগুলো পৃথিবীতে আলো প্রদান করে থাকে। পক্ষান্তরে পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পাহাড়-পর্বত, প্রশস্ত মাঠ, বন-জঙ্গল, নদী-নালা, সাগর-উপসাগর। উঁচু উঁচু টিলা, পাথর, বড় বড় গাছ ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ ক্ষমতার নিদর্শন।
চতুর্থ নিদর্শন:
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে মাত্র দুজন মানুষ আদম ও হাওয়া (عليه السلام) থেকে সৃষ্টি করার পরও তাদের মধ্যে ভাষার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ কথা বলে বাংলায়, কেউ আরবি, কেউ উর্দু-ফারসি, হিন্দি, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষায়। এমনকি একই মানব থেকে সৃষ্টি হওয়ার পরও তাদের আকৃতি ও বর্ণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কেউ কাল, কেউ শ্যামলা বর্ণের আবার কেউ সাদা বর্ণের। কারো সাথে কারো কোন প্রকারের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি কখনো কখনো সহোদর ভাইয়ের সাথেও কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলো স্পষ্টভাবে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতার ওপর প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللّٰهَ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَا۬ءِ مَا۬ءً ج فَأَخْرَجْنَا بِه۪ ثَمَرٰتٍ مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا ط وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌۭبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ)
“তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথন সাদা, লাল ও ঘোর কাল।” (সূরা ফাতির ৩৫:২৭)
পঞ্চম নিদর্শন:
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের নিদ্রা ও জীবিকা অন্বেষণ করার জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব অন্বেষণ করার মাধ্যমে যেন আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ বা দয়া কামনা করে। এ সম্পর্কে সূরা বানী ইসরাঈলের ১২ নং আয়াতসহ অন্যান্য আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
ষষ্ঠ নিদর্শন:
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে বিজলী দ্বারা বিদ্যুৎ প্রদর্শন করেন ভয় ও আশা সঞ্চারকরূপে। এ সম্পর্কে সূরা রা‘দের ১২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
সপ্তম নিদর্শন:
সপ্তম নিদর্শন হল, আল্লাহ তা‘আলা আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে মৃত ভূমিকে জীবিত করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاٰیَةٌ لَّھُمُ الْاَرْضُ الْمَیْتَةُﺊ اَحْیَیْنٰھَا وَاَخْرَجْنَا مِنْھَا حَبًّا فَمِنْھُ یَاْکُلُوْنَﭰ وَجَعَلْنَا فِیْھَا جَنّٰتٍ مِّنْ نَّخِیْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِیْھَا مِنَ الْعُیُوْنِﭱﺫ)
“আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে ঝরণাধারা।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৩-৩৪) এখানে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন হল-মৃত জমিনকে বৃষ্টির পানি দ্বারা যেমন জীবিত করা হয় তেমনি আল্লাহ তা‘আলা মানুষের কর্মের হিসাব নেয়ার জন্য পুনরুত্থিত করবেন।
অষ্টম নিদর্শন:
ল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে আকাশ ও জমিন স্থিতিশীল রয়েছে। আমরা জানি প্রথমে জমিন কম্পিত হচ্ছিল, তারপর আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে পাহাড় বদ্ধমূল করে দিলেন। ফলে জমিন স্থিতিশীল হয়েছে । আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللّٰهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِيْ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِه۪ ط وَيُمْسِكُ السَّمَا۬ءَ أَنْ تَقَعَ عَلَي الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِه۪ ط إِنَّ اللّٰهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ)
“তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তৎসমুদয়কে এবং তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে? আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তা পতিত না হয় পৃথিবীর ওপর তাঁর অনুমতি ব্যতীত। আল্লাহ নিশ্চয়ই মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।” (সূরা হাজ্জ ২২:৬৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ يُمْسِكُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ أَنْ تَزُوْلَا ﹰ وَلَئِنْ زَالَتَآ إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّنْۭ بَعْدِه۪ط إِنَّه۫ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا)
“নিশ্চয়ই আল্লাহই আসমান ও জমিনকে স্থির রাখেন, যাতে তা টলে না যায়। যদি এরা টলে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে স্থির রাখবে? তিনি অতিশয় সহনশীল, পরম ক্ষমাশীল।” (সূরা ফাতির ৩৫:৪১)
(ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً)
অর্থাৎ যখন তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উঠানোর জন্য একবার আহ্বান করবেন তথা শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন সকলেই সেখান থেকে উঠে আল্লাহ তা‘আলার দিকে ছুটে আসবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(يَوْمَ يَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِيْبُوْنَ بِحَمْدِه۪ وَتَظُنُّوْنَ إِنْ لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيْلًا)
‘যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন, এবং তোমরা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্প সময়ই (দুনিয়াতে) অবস্থান করেছিলে।’ (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৫২)
অতএব মানুষ আল্লাহ তা‘আলার এ সকল নিদর্শন বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক সর্বশেষে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সম্মুখেই উপস্থিত হতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. মানুষ সৃষ্টির মূল উপাদান হল মাটি, অতঃপর পিতা-মাতার মিলনে সৃষ্টির পরম্পরা বহাল রয়েছে।
৩. জীবন ও মৃত্যু সকল কিছুর ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলারই হাতে।
৪. ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের বন্ধনকে স্বীকার করে কিন্তু লিভ-টুগেদারকে স্বীকার করে না।
২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আকাশ ও জমিনে যত মাখলুকাত আছে; মানুষ, জিন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বতসহ সকল কিছুর ওপর আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমতাবান ও সবকিছুই তাঁর কর্তৃত্বাধীন। তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা এবং যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করতে পারেন। আর সকলেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَفَغَيْرَ دِيْنِ اللّٰهِ يَبْغُوْنَ وَلَه۫ٓ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّإِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ)
“আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে তারা কি অন্য কিছুর সন্ধান করছে অথচ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আকাশ এবং পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ও তাঁরই দিকে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” (সূরা আলি ইমরান ৩:৮৩)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন বা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন আবার তিনিই সৃষ্টির মৃত্যুর পর পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর এ পুনরায় সৃষ্টি করা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিকতর সহজ। হাদীসে এসেছে:
আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: বানী আদম আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ এটা করা তাদের উচিত নয়। তারা আমাকে গালি দেয়, অথচ এটা করা তাদের জন্য সমীচীন নয়। তারা (মিথ্যা প্রতিপন্ন করে) বলে, আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে প্রথমবার আমাকে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নন। অথচ প্রথমবারের সৃষ্টি অপেক্ষা দ্বিতীয়বারের সৃষ্টি অধিকতর সহজ। তারা গালি দেয়, তারা বলেন আল্লাহ তা‘আলা সন্তান গ্রহণ করেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এক ও অভাবমুক্ত। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। (সহীহ বুখারী হা: ৪৯৭৪)
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে এমন অবস্থায় যে, তখন তোমরা থাকবে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায়। (সহীহ বুখারী হা: ৬১৬০)
অতএব আল্লাহ তা‘আলা প্রথমবারের মতই পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করতে সক্ষম। বরং তা আরো অধিকতর সহজ এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র তিনিই।
(وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلٰي)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সকল গুণে গুণান্বিত তাতে তিনি পরিপূর্ণ। তাঁর গুণের সাথে কোন তুলনা নেই, তাঁর সদৃশ কেউ নেই। তিনি নিজের জন্য যে সকল গুণ সাব্যস্ত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে যে সকল গুণ উল্লেখ করেছেন তা আল্লাহ তা‘আলার শানে যেমন উপযোগী তেমনি। তাঁর কোন উপমা নেই, তিনি সকল উপমার ঊর্ধ্বে। ইবনু আব্বাস < বলেন: এ আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলার ঐ কথার মত:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْر)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (সূরা শুরা ৪২:১১) কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলার উপমা হলো তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই এবং তিনি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকলের উচিত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য স্বীকার করা।
২. মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে। আর এ সৃষ্টি প্রথমবারের তুলনায় সহজ।
৩. সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৪. আল্লাহ তা‘আলা সকল উপমার ঊর্ধ্বে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# যে আল্লাহ প্রতিমূহুর্তে তোমাদের সামনে একাজ করছেন তিনি মানুষের মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করতে অক্ষম হতে পারেন কেমন করে? তিনি সবসময় জীবিত মানুষ ও জন্ম-জানোয়ারদের মধ্য থেকে বর্জ্য পদার্থ (Waste Matter) বের করছেন যেগুলোর মধ্যে জীবনের সামান্যতম গন্ধ নেই। তিনি প্রতি মুহূর্তে নিষ্প্রাণ বস্তুর (dead Matter) মধ্যে জীবনসঞ্চার করে অসংখ্য পশু, উদ্ভিদ ও মানুষ সৃষ্টি করে চলছেন। অথচ যেসব উপাদান থেকে এ জীবন্ত সত্ত্বাগুলোর শরীর গঠিত হচ্ছে তাদের মধ্যে সামান্যতমও জীবনের চিহ্ন নেই। তিনি প্রতি মুহূর্তে তোমাদের এ দৃশ্য দেখিয়ে চলছেন যে, অনুর্বর, অনুন্নত, অনাবাদি পতিত জমিতে বৃষ্টির পানি পড়ার সাথে সাথেই সহসা সেখানে প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনের বিপুল সমারোহ দেখা যায়। এ সবকিছু দেখার পরও যদি কোন ব্যক্তি মনে করে সৃষ্টির এ কারখানা পরিচালনাকারী আল্লাহ মানুষের মৃত্যুর পর তাকে পুনরায় জীবিত করতে অক্ষম, তাহলে আসলে তার বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। তার বাইরের চোখ দু’টি যে বাহ্যিক দৃশ্যাবলী দেখে থাকে, তার বুদ্ধির চোখ তার মধ্যে দৃশ্যমান উজ্জ্বল সত্য দেখতে পায় না।
# মনে রাখতে হবে এখান থেকে রুকুর শেষ অবধি মহান আল্লাহর যেসব নিদর্শন বর্ণনা করা হচ্ছে, সেগুলো তো একদিকে বক্তব্য পরম্পরার সাথে সম্পর্ক রেখে পরকালীন জীবনের সম্ভাবনা ও অস্তিত্বশীলতার কথা প্রমাণ করে এবং অন্যদিকে এ নিদর্শনগুলোই প্রমাণ করে যে, এ বিশ্ব-জাহান ইলাহ বিহীন নয় বরং এর ইলাহও বহু নয় বরং এক ও একক ইলাহই এর স্রষ্টা, পরিচালক, মালিক ও শাসক। তিনি ছাড়া মানুষের আর কোন মাবুদ হওয়া উচিত নয়। অনুরূপভাবে এ রুকুটি বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে পূর্বের ও পরের উভয় ভাষণের সাথে সম্পৃক্ত।
# মানুষের সৃষ্টি রহস্য এছাড়া আর কি যে, কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার, যেগুলো এ পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায়। যেমন কিছু কার্বন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং এ ধরনের আরো কিছু উপাদান। এগুলোর রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্ত্বা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমন সব অদ্ভূত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খূঁজে পাওয়া যেতে পারে না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় যে, হঠাৎ একজন মানুষ এমনি ধরনের এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে বরং তার মধ্যে এমন সব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যার বদৌলতে কোটি কোটি মানুষ সে একই কাঠামো এবং যোগ্যতার অধিকারী হয়ে অসংখ্য উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং সীমাসংখ্যাহীন ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। তোমার বুদ্ধি কি এ সাক্ষ্য দেয়, এ চূড়ান্ত জ্ঞানময় সৃষ্টি কোনো জ্ঞানী স্রষ্টার সৃষ্টিকর্ম ছাড়াই আপনা আপনিই অস্তিত্বশীল হয়েছে? তুমি কি সজ্ঞানে ও সচেতন অবস্থায় একথা বলতে পারো, মানুষ সৃষ্টির মতো মহত্তম পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা এবং পৃথিবী ও আকাশের সংখ্যাব্যতীত শক্তিকে মানব জীবন গঠনের উপযোগী করে দেয়া, এগুলো কি বহু ইলাহর চিন্তা ও ব্যবস্থাপনার ফল হতে পারে? আর তোমরা যখন মনে করতে থাকো, যে আল্লাহ মানুষকে নিরেট অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি সেই মানুষকে মৃত্যু দান করার পর পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না তখন তোমাদের মস্তিষ্ক কি সঠিক অবস্থায় থাকে?
# স্রষ্টার প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে এই যে, তিনি মানুষকে শুধুমাত্র একটি জাতি (sexes) সৃষ্টি করেননি বরং তাকে দু’টি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন। মানবিকতার দিক দিয়ে তারা একই পর্যায়ভুক্ত। তাদের সৃষ্টির মূল ফরমুলাও এক। কিন্তু তারা উভয়ই পরস্পর থেকে ভিন্ন শারীরিক আকৃতি, মানসিক ও আত্মিক গুণাবলী এবং আবেগ-অনুভূতি ও উদ্যোগ নিয়ে জন্মলাভ করে। আবার তাদের মধ্যে এমন বিস্ময়কর সম্বন্ধ ও সামঞ্জস্য সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যার ফলে তারা প্রত্যেকে পুরোপুরি অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকের শরীর এবং প্রবৃত্তি ও উদ্যোগসমূহ অন্যের শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব। এছাড়াও সেই প্রাজ্ঞ স্রষ্টা ও উভয় জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই বরাবর ও আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে চলবেন। আজ পর্যন্ত কখনো দুনিয়ার কোনো জাতির মধ্যে বা কোনো এলাকায় কেবলমাত্র পুত্র সন্তানই জন্মলাভ করে চলছে এমন কথাও শোনা যায় নি। এটা এমন একটা জিনিস যার মধ্যে কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ বা বুদ্ধি-কৌশল প্রয়োগের সামান্যতম অবকাশই নেই। মানুষ এ ব্যাপারে সামান্যতমও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না যে, মেয়েরা অনবরত এমনি মেয়েলী বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মলাভ করতে থাকবে এবং ছেলেরা অনবরত এমন পুরুষালী বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মলাভ করতে থাকবে যা তাদের পরস্পরকে যথার্থ জোড়ায় পরিণত করবে। আর নারী ও পুরুষের জন্ম এমনি ধারাবাহিকভাবে একটি আনুপাতিক হারে হয়ে যেতে থাকবে, এ ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার করার কোন মাধ্যম তার নেই। হাজার হাজার বছর থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভ এ কৌশল ও ব্যবস্থার এমনই সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না আবার বহু ইলাহর সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও এটা নয়। এ জিনিসটি সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণ করে যে, একজন বিজ্ঞানী আর শুধুমাত্র একজন মহা বিজ্ঞানী স্রষ্টাই তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান ও শক্তির মাধ্যমে শুরুতে পুরুষ ও নারীর একটি সর্বাধিক উপযোগী ডিজাইন তৈরি করেন। তারপর তিনি এ ডিজাইন অনুযায়ী অসংখ্য পুরুষ ও অসংখ্য নারীর তাদের পৃথক ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য সহকারে সারা দুনিয়ায় একটি আনুপাতিক হারে জন্মলাভ করার ব্যবস্থা করেন।
# এটা কোন অপরিকল্পিত ব্যবস্থা নয়। বরং স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে অস্তিত্ব দান করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। যদি এ দু’টি জাতিকে নিছক দু’টি পৃথক ডিজাইনে তৈরি করা হতো এবং তাদের মধ্যে এমন অস্থিরতা সৃষ্টি না করা হতো, যা তাদের পারস্পরিক সংযোগ ও সম্পর্ক ছাড়া প্রশান্তিতে পরিণত হতে পারতো না, তাহলে সম্ভবত ছাগল ভেড়ার মতো মানুষের বংশধারাও এগিয়ে যেতো কিন্তু তাদের সাহায্যে কোনো সভ্যতা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব লাভ করার কোন সম্ভাবনাই থাকতো না। স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাহায্যে পুরুষ ও নারীর জন্য এমন পরস্পরের চাহিদা, তৃষ্ণা ও অস্থিরতার অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছেন যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না। সমগ্র প্রাণীজগতের বিপরীতে মানব জাতির মধ্যে এটিই হচ্ছে সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশ লাভের মৌলিক কারণ। এ শান্তির অন্বেষায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে। এরই বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। এর ফলে মানুষের জীবনে সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে। এ বিকাশে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা অবশ্যই সহায়ক হয়েছে। কিন্তু তা তার আসল উদ্যোক্তা নয়। আসল উদ্যোক্তা হচ্ছে এ অস্থিরতা, যাকে পুরুষ ও নারীর অস্তিত্বের মধ্যে সংস্থাপিত করে তাদেরকে ‘ঘর’ বাঁধতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ কথা ভাবতে পারেন যে, এ বিপুল প্রজ্ঞা প্রকৃতির অন্ধ শক্তিসমূহ থেকে হঠাৎ এমনিই সৃষ্টি হয়ে গেছে? অথবা বহু সংখ্যক ইলাহ কি এমনি ধরনের একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারতো, যার ফলে তারা এ গভীর জ্ঞানময় উদ্দেশ্য সামনে রেখে হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি করে যেতে থাকতো? এ তো একজন জ্ঞানীর এবং মাত্র একজন জ্ঞানীরই প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন। কেবলমাত্র বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তিই এটি দেখতে অস্বীকার করতে পারে।
# ভালোবাসা বলতে এখানে কামশক্তি ভালোবাসার (sexual love) কথা বলা হয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে এটি আকর্ষণের প্রাথমিক উদ্যোক্তায় পরিণত হয়। তারপর তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে রাখে। আর ‘রহমত’ তথা দয়া মানে হচ্ছে এমন একটি আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে। এর বদৌলতে তারা দু’জনে দু’জনার কল্যাণকাঙ্ক্ষী, দু’জনের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং উভয়ের সুখে দুঃখে শরীক হয়ে যায়। এমনকি এমন এক সময় আসে যখন কামসিক্ত ভালোবাসা পিছনে পড়ে থাকে এবং বার্ধক্যে এ জীবনসাথী যৌবনকালের চাইতে অনেক বেশি অগ্রসর হয়ে পরস্পরের জন্য দয়া, স্নেহ ও মমতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে থাকে। মানুষের মধ্যে শুরুতেই যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল তাকে সাহায্য করার জন্য স্রষ্টা মানুষের মধ্যে এ দু’টি ইতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করে দেন। এ অস্থিরতা তো শুধুমাত্র শান্তির প্রত্যাশী এবং এর সন্ধানে সে নারী ও পুরুষকে পরস্পরের দিকে নিয়ে যায়। এরপর এ দু’টি শক্তি অগ্রসর হয়ে তাদের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্বের এমন একটি সম্পর্ক জুড়ে দেয় যা দু’টি পৃথক পরিবেশে লালিত আগন্তুকদেরকে একসাথে মিলিয়ে গভীরভাবে সংযুক্ত করে দেয়। এ সংযোগের ফলে সারা জীবনে তারা মাঝ দরিয়ায় নিজেদের নৌকা একসাথে চালাতে থাকে। একথা সুস্পষ্ট, কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনে এই যে ভালোবাসা ও দয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করছে এগুলো কোন নিরেট বস্তু নয়। এগুলোকে ওজন ও পরিমাপ করা যেতে পারে না। মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে তাদের মধ্যে কোথাও এদের উৎস চিহ্নিত করা যেতে পারে না। কোন ল্যাবরেটরীতেও এদের জন্ম ও বিকাশ সাধনের কারণসমূহ অনুসন্ধান করা যেতে পারে না। এছাড়া এর আর কোন ব্যাখ্যাই করা যেতে পারে না যে, একজন প্রাজ্ঞ স্রষ্টা স্বেচ্ছাকৃতভাবে একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন।
# তাদের অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব লাভ করা, একটি অপরিবর্তনীয় নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং অসংখ্য শক্তির পরম সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য সহকারে কাজ করা-এগুলো নিজের অভ্যন্তরে এ বিষয়ের এমন বহু নিদর্শন রাখে যা থেকে জানা যায় যে, এ সমগ্র বিশ্ব-জাহানকে মাত্র একজন স্রষ্টাই অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তিনিই এ বিশাল ব্যবস্থা পরিচালনা করেছেন। একদিকে যদি একথা চিন্তা করা যায় যে, এ প্রাথমিক শক্তি (Energy) কোথা থেকে এসে বস্তুর আকার ধারণ করেছে? বস্তুর এ বিভিন্ন উপাদান কেমন করে গঠিত হয়েছে এ উপাদানগুলোকে এহেন বৈজ্ঞানিক কৌশলে সংমিশ্রিত করে বিস্ময়কর সামঞ্জস্য সহকারে এ অত্যদ্ভূত বিশ্বব্যবস্থা গঠিত হয়েছে কেমন করে? এখন কোটি কোটি বছর ধরে একটি মহাপরাক্রমশালী প্রাকৃতিক আইনের আওতাধীনে এ ব্যবস্থাটি কিভাবে চলছে? এ অবস্থায় প্রত্যেক নিরপেক্ষ বুদ্ধিবৃত্তি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছবে যে, এসব কিছু একজন সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানীর প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছাড়া নিছক ঘটনাক্রমে বা অকস্মাৎ ঘটতে পারে না। আবার অন্যদিকে যদি দেখা যায় যে, পৃথিবী থেকে নিয়ে বিশ্ব-জাহানের দূরবর্তী নক্ষত্রগুলো পর্যন্ত সবাই একই ধরনের উপাদানে গঠিত এবং একই প্রাকৃতিক আইনের নিয়ন্ত্রণে তারা চলছে, তাহলে হঠকারিতামুক্ত প্রতিটি বুদ্ধিবৃত্তিই নিঃসন্দেহে একথা স্বীকার করবে যে, এ সবকিছু বহু ইলাহর কর্মকুশলতা নয় বরং একজন ইলাহ এ সমগ্র বিশ্ব-জাহানে স্রষ্টা ও প্রতিপালক।
# যদিও তোমাদের বাকশক্তি সমান নয়, মুখ ও জিহ্বার গঠনেও কোন ফারাক নেই এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতিও একই রূপ তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন হয়ে গেছে। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতি আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টি উপাদান এবং তোমাদের গঠন প্রক্রিয়া একই। কিন্তু তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একেক জাতির কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও একই হয় না। এখানে নমুনা হিসেবে কেবলমাত্র দু’টি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এ দিক থেকে সামনে অগ্রসর হয়ে দেখুন, দুনিয়ায় সকল দিকেই আপনি এত বেশি বৈচিত্র্য (variety) দেখতে পাবেন যে, তাদের সবগুলোকে একত্র করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য সমস্ত জিনিসের যে কোনো একটি শ্রেণীকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটি এককের মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য বিভিন্নতা বিরাজ করছে। এমন কি কোনো এক শ্রেণীর একটি এককও অন্য একটি এককের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল নয়। এমন কি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ জিনিসটি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ দুনিয়ায় এমন কোনো কারখানা নেই যেখানে স্বয়ংক্রিয় মেশিনপত্র চলছে এবং বিপুল উৎপাদনের (Mass production) পদ্ধতিতে সব রকমের জিনিসের এক একটি ছাঁচ থেকে ঢালাই হয়ে একই ধরনের জিনিস বের হয়ে আসছে। বরং এখানে একজন জবরদস্ত কারিগর কাজ করছেন যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে পূর্ণ ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগ সহকারে একটি নতুন ডিজাইনে, নতুন নকশায় ও কারুকাজে, নতুন সৌষ্ঠবে এবং নতুন গুণাবলী সহকারে তৈরি করেন। তাঁর তৈরি করা প্রত্যেকটি জিনিস স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সবসময় সব জিনিসের একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। তাঁর শিল্পকারিতা একটি ডিজাইনকে দ্বিতীয়বার সামনে নিয়ে আসাকে নিজের পূর্ণতার জন্য অবমাননাকর মনে করে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে কখনো এ ধরনের মূর্খতা সুলভ ধারণা পোষণ করতে পারে না যে, এ বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা একবার এ কারখানাটি চালিয়ে দিয়ে তারপর নিজে কোথাও গিয়ে ঘুমাচ্ছেন, তিনি যে প্রতি মুহূর্তে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর ব্যক্তিগত দৃষ্টি দিচ্ছেন, এতো একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
# অনুগ্রহ সন্ধান করা অর্থ জীবিকার জন্য সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা চালানো। মানুষ যদিও সাধারণত রাতের বেলা ঘুমায় এবং দিনের বেলায় জীবিকার জন্য চেষ্টা-মেহনত করে তবুও শতকরা একশো ভাগ লোক এমনটি করে না। বরং বহুলোক দিনের বেলায় ঘুমায় এবং রাতে জীবিকা উপার্জনের জন্য মেহনত করে। তাই রাত দিনকে একসাথে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ দু’টি সময়ে তোমরা ঘুমাও এবং নিজেদের জীবিকা উপার্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকো।
এটিও এমন ধরনের নিদর্শনাবলীর অন্যতম যেগুলো থেকে একজন মহাজ্ঞানী স্রষ্টার ব্যবস্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায়। বরং এছাড়াও এ জিনিসটি এও চিহ্নিত করে যে, তিনি নিছক স্রষ্টা নন বরং নিজের সৃষ্টির প্রতি তিনি বড়ই করুণাশীল ও স্নেহময় এবং তার প্রয়োজন ও কল্যাণের জন্য তার চেয়ে বেশি তিনি চিন্তা করেন। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। বরং প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা মেহনতের পর তাকে কয়েক ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হয়। এভাবে আবার সে কয়েক ঘন্টা মেহনত করার শক্তি পাবে। এ উদ্দেশ্যে মহাজ্ঞানী ও করুণাময় স্রষ্টা মানুষের মধ্যে কেবলমাত্র ক্লান্তির অনুভূতি এবং কেবলমাত্র বিশ্রামের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি বরং “নিদ্রা”র এমন একটি জবরদস্ত চাহিদা তার অস্তিত্বের মধ্যে রেখে দিয়েছেন যার ফলে তার ইচ্ছা ছাড়াই এমন কি তার বিরোধিতা সত্ত্বেও আপনা আপনিই কয়েক ঘণ্টার জাগরণ ও মেহনতের পর তা তাকে পাকড়াও করে, কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে তাকে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে আপনা আপনিই তাকে ত্যাগ করে। এ নিদ্রার স্বরূপ ও অবস্থা এবং এর মৌল কারণগুলো আজও মানুষ অনুধাবন করতে পারেনি। এটি অবশ্যই জন্মগতভাবে মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে, এটা একথার সাক্ষ্য পেশ করার জন্য যথেষ্ট যে, এটি কোন আকস্মিক ঘটনা নয় বরং কোন মহাজ্ঞানী সত্ত্বা একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুসারে এ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে একটি বিরাট জ্ঞান, কল্যাণ ও উদ্দেশ্য সক্রিয় দেখা যায়। এছাড়াও এ নিদ্রা একথারও সাক্ষ্যবহ যে, যিনি মানুষের মধ্যে এ বাধ্যতামূলক উদ্যোগ রেখে দিয়েছেন তিনি নিজেই মানুষের জন্য তার চেয়ে বেশি কল্যাণকামী। অন্যথায় মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নিদ্রার বিরোধিতা করে এবং জোরপূর্বক জেগে থেকে এবং অনবরত কাজ করে কেবল নিজের কর্মশক্তিই নয় জীবনী শক্তিও ক্ষয় করে।
তারপর জীবিকার অন্বেষণের জন্য “আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান” শব্দাবলীর ব্যবহার করার মাধ্যমে নিদর্শনাবলীর অন্য একটি ধারাবাহিকতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যদি পৃথিবী ও আকাশের বিপুল ও অগণিত শক্তি সম্ভারকে জীবিকার কার্যকারণ ও উপায় উপকরণ সৃষ্টি করার কাজে না লাগিয়ে দেয়া হতো এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য উপায়-উপকরণ সৃষ্টি না করা হতো, তাহলে মানুষ এ জীবিকার সন্ধানই বা কোথায় করতে পারতো। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং জীবিকার এ অনুসন্ধান এবং তা উপার্জন এমন অবস্থায়ও সম্ভব হতো না যদি এ কাজের জন্য মানুষকে সর্বাধিক উপযোগী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতা না দান করা হতো। কাজেই মানুষের মধ্যে জীবিকা অন্বেষণের যোগ্যতা এবং তার অস্তিত্বের বাইরে জীবিকার উপকরণাদি বিদ্যমান থাকা পরিষ্কারভাবে একজন দয়াশীল ও মর্যাদাবান সত্ত্বার অস্তিত্বের সন্ধান দেয়। বুদ্ধিবৃত্তি অসুস্থ না হলে কখনো কেউ এ ধারণা করতে পারতো না যে, এ সবকিছু অকস্মাৎ হয়ে গেছে অথবা এসব বহু ইলাহর ইলাহিত্বের ফল কিংবা কোনো নির্দয় অন্ধশক্তি এ অনুগ্রহ ও দানের উৎস।
# তাঁর মেঘ গর্জন ও বিদ্যুৎ চমক থেকে তো একদিকে আশা হয় বৃষ্টি হবে এবং মাঠ শস্যে ভরে যাবে। কিন্তু সাথে সাথে এ ভয়ও জাগে যে, কোথাও বিজলী পড়ে বা অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে বানের তোড়ে সবকিছু ভাসিয়ে না নিয়ে যায়।
# এ জিনিসটি একদিকে মৃত্যু পরের জীবনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে এবং অন্যদিকে এ জিনিসটিই একথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ আছেন এবং এক আল্লাহই পৃথিবী ও আকাশের পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। জমি থেকে যা উৎপন্ন হয় তার ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর অসংখ্য সৃষ্টির খাদ্য। এ উৎপাদন নির্ভর করে জমির উর্বরতা ও শস্য উৎপাদন ক্ষমতার ওপর। আবার এ উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের ওপর। সরাসরি জমির ওপর এ বৃষ্টিপাত হতে পারে। অথবা পানির বিশাল ভাণ্ডার জমির উপরিভাগে স্থান লাভ করতে পারে। কিংবা ভূগর্ভস্থ ঝরণা ও কূপের রূপ লাভ করতে পারে। অথবা পাহাড়ের ওপর বরফের আকারে জমাটবদ্ধ হয়ে নদ-নদীর সাহায্যে প্রবাহিত হতে পারে। তারপর এ বৃষ্টিপাত আবার নির্ভর করে সূর্যের উত্তাপ, মৌসুম পরিবর্তন, মহাশূন্যের তাপমাত্রা ও শৈত্য, বাতাসের আবর্তন এবং এমন বিদ্যুতের ওপর যা মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করে। এই সঙ্গে বৃষ্টির পানির মধ্যে এক ধরনের প্রাকৃতিক লবণাক্ততারও সৃষ্টি করে দেয়। পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত এসব বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া, তারপর এসবের অসংখ্য ও বিচিত্র ধরনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনের জন্য সুস্পষ্টভাবে উপযোগী হওয়া এবং হাজার হাজার লাখো লাখো বছর পর্যন্ত এদের পূর্ণ একাত্মতা সহকারে অনবরত সহযোগিতার ভূমিকা পালন করে যেতে থাকা, এ সবকিছু কি নিছক ঘটনাক্রমিক হতে পারে? এ সবকিছু কি একজন স্রষ্টার জ্ঞানবত্তা, তাঁর সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং শক্তিশালী কৌশল ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই হয়ে গেছে? এ সবকিছু কি একথার প্রমাণ নয় যে, পৃথিবী, সূর্য, বাতাস, পানি, উত্তাপ ও শৈত্য এবং পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টির স্রষ্টা ও রব একজনই?
# তাঁর হুকুমে একবার অস্তিত্ব লাভ করেছে শুধু এতটুকু নয় বরং তাদের সবসময় প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং তাদের মধ্যে একটি বিশাল নির্মাণ কারখানার প্রতিনিয়ত সচল থাকাও তাঁরই হুকুমের বদৌলতে সম্ভব হয়েছে। এক মুহূর্তের জন্যও যদি তাঁর হুকুম তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত না রাখে, তাহলে এ সমগ্র ব্যবস্থা এক নিমিষেই ওলট-পালট হয়ে যাবে।
# বিশ্বজাহানের স্রষ্টা ও পরিচালকের পক্ষে তোমাদেরকে পুনর্বার জীবিত করে উঠিয়ে নিয়ে আসা তেমন কোনো বড় কাজ নয়। এ জন্য তাকে কোনো বড় রকমের প্রস্তুতি নিতে হবে না। বরং তাঁর মাত্র একটি আহ্বানেই সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানুষ দুনিয়ায় জন্মলাভ করেছে এবং ভবিষ্যতে জন্ম নেবে তারা সবাই একসাথে পৃথিবীর সকল দিক থেকে বের হয়ে আসতে থাকবে।
# প্রথমবার সৃষ্টি করাটা যদি তাঁর জন্য কঠিন না হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা কেমন করে ধারণা করতে পারলে যে, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তাঁর জন্য কঠিন হবে? প্রথমবারের সৃষ্টির মধ্যে তো তোমরা সশরীরেই উপস্থিত আছো। তাই এটা যে কঠিন নয় তা তো সুস্পষ্ট। এখন এটি একটি সহজ বুদ্ধির ব্যাপার যে, একবার যিনি কোনো একটি জিনিস তৈরি করেন সে জিনিসটি পুনর্বার তৈরি করা তাঁর জন্য তুলনামূলকভাবে আরো অনেক বেশি সহজ হওয়ার কথা।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় এ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার দিন-রাতের যা কিছু নষ্ট হয়েছে তা ফিরে পাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তিনিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান এবং তিনিই জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটিয়ে থাকেন। প্রত্যেক জিনিসের উপর এবং ওর উল্টোর উপর তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি বীজ হতে গাছ, গাছ। হতে বীজ, মুরগী হতে ডিম, ডিম হতে মুরগী, বীর্য হতে মানুষ ও মানুষ হতে বীর্য, মুমিন হতে কাফির ও কাফির হতে মুমিন বের করে থাকেন। মোটকথা, তিনি প্রত্যেক বিষয় ও তার প্রতিপক্ষ বিষয়ের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখেন। শুষ্ক মাটিতে তিনি আর্দ্রতা আনয়ন করেন এবং অনুর্বর ভূমি থেকেও তিনি ফসল উৎপাদন করেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি সঞ্জীবিত করি এবং যা হতে উৎপন্ন করি শস্য যা তারা ভক্ষণ করে। তাতে আমি সৃষ্টি করি খর্জুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং উৎসারিত করি প্রস্রবণ।” (৩৬:৩৩-৩৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, অতঃপর তাতে আমি বারি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ …… যারা কবরে আছে তাদেরকে আল্লাহ নিশ্চয়ই পুনরুত্থিত করবেন।” (২২:৫-৭) আরো বহু জায়গায় এ ধরনের আয়াত কোথাও সংক্ষিপ্ত আবার কোথাও বিস্তারিতভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন। এখানে আল্লাহ পাক বলেনঃ এভাবেই তোমরাও সবাই মৃত্যুর পরে (কবর হতে) উথিত হবে।
২০-২১ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন অনেক রয়েছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আর সমগ্র মানব জাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু অপবিত্র পানি (বীর্য) দ্বারা। অতঃপর মানুষকে তিনি খুবই সুদর্শন করে তুলেছেন। শুক্রকে তিনি জমাট রক্তে, অতঃপর গোশতে পরিণত করেছেন ও তার উপর অস্থি তৈরী করেছেন। আর অস্থিগুলোকে তিনি গোশতের আবরণ দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। তারপর তিনি তাতে রূহ ফুকে দিয়েছেন। এরপর নাসিকা, কর্ণ, চক্ষু সৃষ্টি করেছেন এবং মায়ের পেট হতে নিরাপদে বের করে এনেছেন। অতঃপর দুর্বলতা দূর করে দিয়ে সবলতা প্রদান করেছেন। দিন দিন শক্তিকে আরো মযবূত করেছেন। বেশ ক্ষমতাবান করে গড়ে তুলেছেন। আয়ু দান করেছেন এবং নড়াচড়া করার ও আরামের শক্তি দিয়েছেন। নানা প্রকার উপকরণ ও শারীরিক কলকজা দান করেছেন। তাদেরকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা করেছেন। এখান থেকে সেখানে এবং সেখান থেকে এখানে আসার শক্তি যুগিয়েছেন।
সাগরের পানিতে, মাটির উপরে ঘুরে বেড়াবার জন্যে নানা প্রকার। আরোহণযোগ্য যন্ত্র ও জন্তুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, প্রচেষ্টা চালাবার ক্ষমতা, ধ্যান, গবেষণা ইত্যাদির জন্যে মস্তিষ্ক দান করেছেন। তিনি পার্থিব কাজ কারবার বুঝবার ক্ষমতা দিয়েছেন। আখিরাতে পরিত্রাণ লাভের জ্ঞান দান করেছেন এবং আমল শিখিয়েছেন। পবিত্রময় ঐ আল্লাহ যিনি মানব জাতিকে প্রত্যেক কাজের অনুমান করার শক্তি দিয়েছেন, প্রত্যেককে এক এক মর্যাদায় রেখেছেন। দৈহিক গঠন ও আকৃতি, কথাবার্তা, ধনী-নির্ধন, জ্ঞানী-অজ্ঞান, ভাল-মন্দ নির্বাচন শক্তি, দয়া-দাক্ষিণ্য, দানশীলতা ও কার্পণ্য ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে প্রত্যেককে পৃথক পৃথক করেছেন। যাতে প্রত্যেকে মহান প্রতিপালকের বহু নিদর্শন নিজের মধ্যে ও অন্যের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে দেখে নিতে পারে।
হযরত আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা সমগ্র পৃথিবী হতে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তা দিয়ে হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। অতএব পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মাটির রঙ এর ন্যায় মানুষের রঙ হয়ে থাকে। কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ লাল, কেউ অত্যন্ত খারাপ স্বভাবের, কেউ অত্যন্ত ভাল স্বভাবের, কেউ খুব মিশুক, কেউ বদমেজাযী ইত্যাদি নানা প্রকারের হয়ে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন)
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এও রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “আল্লাহ তিনিই যিনি তোমাদেরকে একই নফস হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।”
আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ)-এর বাম দিকের ক্ষুদ্র বক্ষাস্থি হতে হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। অতএব এটা চিন্তার বিষয় যে, যদি মহান আল্লাহ মানুষের সঙ্গিনী মানুষ হতে সৃষ্টি না করে অন্য প্রাণী হতে সৃষ্টি করতেন তবে মানুষ এখন যেমন স্ত্রী নিয়ে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা লাভ করে থাকে তা কখনো লাভ করতে পারতো না। প্রেম ও ভালবাসা শুধুমাত্র একই প্রকারের মৌলিক বস্তু হতে লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ পাক স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। স্বামী তো ভালবাসার কারণেই স্ত্রীর দেখা শোনা করে থাকে, তার প্রতি দয়া করে এবং তাকে সদা খেয়ালে রাখে। কারণ তার থেকে তার সন্তান জন্মেছে। তাদের দেখা শোনা তাদের উভয়ের মেলামেশার উপর নির্ভরশীল। মোটকথা, আল্লাহ তা’আলা তাদের মধ্যে অনেক কারণ এনে দিয়েছেন যার ফলে তাদের মধ্যে প্রেম-প্রীতি দৃঢ় হয়েছে। এ কারণেই মানুষ নিজ নিজ জীবন-সঙ্গিনী নিয়ে আরাম ও সুখে জীবন যাপন করছে। এগুলোও রাম্বুল আলামীনের একটা মেহেরবানী এবং তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতার একটা বড় নিদর্শন। সামান্য চিন্তা করলেই এ মহান কীর্তি-কলাপ মানুষের চরম জ্ঞানের মূল দেশে পৌঁছে যায়।
২২-২৩ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে আল্লাহ তা’আলা তাঁর মহাশক্তির নিদর্শন বর্ণনা করছেন। এ মহা প্রশস্ত আকাশের সৃষ্টি এবং তা তারকামণ্ডলী দ্বারা সুসজ্জিতকরণ, এগুলোর চাকচিক্য, এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আবর্তনশীল, কোন কোনটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে থাকে, পৃথিবীকে একটি মযবূত রূপদান করে সৃষ্টি করা, তাতে ঘনঘন বৃক্ষরাজি সষ্টি করা, তাতে পাহাড়-পর্বত, প্রশস্ত মাঠ, বন-জঙ্গল, নদ-নদী, সাগর-উপসাগর, উঁচু উঁচু টিলা, পাথর, বড় বড় গাছ ইত্যাদি সৃষ্টি করা, মানুষের ভাষা ও রং-এর বিভিন্নতা, আরবের ভাষা তাতারীরা বুঝে না, কুর্দিদের ভাষা রোমকরা বুঝে না, ইংরেজদের ভাষা তুর্কিরা বুঝে না, বার্বারদের ভাষা হাবশীরা বুঝতে পারে না, ভারতীয়দের ভাষা ইরাকীরা বুঝে না, ইনতাকালিয়া, আরমানিয়া, জাযীরিয়া ইত্যাদি, আল্লাহ জানেন আরো কত ভাষা আছে যা আদম সন্তানরা বলে থাকে। এগুলো বিশ্ব প্রতিপালকের মহাশক্তির নিদর্শন নয় কি?” ভাষার বিভিন্নতার পরে আসে রঙ-এর পার্থক্য। এগুলো নিঃসন্দেহে আল্লাহর ব্যাপক ক্ষমতার বিকাশ ও অসীম শক্তির নিদর্শন।
একটু চিন্তা-গবেষণা করলেই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়তে হবে যে, কোথাও হয়তো লক্ষ লক্ষ লোক একত্রিত হলো। সবাই একই বংশের, একই গোত্রের, একই দেশের এবং একই ভাষাভাষী লোক হতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন দিক দিয়েই কোন পার্থক্য থাকবে না এটা সম্ভব নয়। অথচ মানবীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিসেবে তাদের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। সবারই দু’টি চক্ষু, দু’টি পলক, একটি নাক, দু’টি কান, একটি কপাল, একটি মুখ, দু’টি ঠোট, দু’টি গণ্ড ইত্যাদি রয়েছে। এতদসত্ত্বেও একজন অপরজন হতে পৃথক। কোন না কোন এমন গুণ বা বিশেষণ রয়েছে যদ্দ্বারা একজনকে অপরজন হতে অবশ্যই পৃথক করা যাবে। যেমন গাম্ভীর্য, স্বভাব-চরিত্র, কথাবার্তা বলার ভঙ্গিমা ইত্যাদি সবারই একরূপ নয়। যদিও তা কোন কোন সময় গুপ্ত ও হালকা হয়ে থাকে। কেউ খুবই সুন্দর, কেউ বদমেজাযী, সুতরাং রূপ ও আকারে একই মনে হলেও ভালভাবে লক্ষ্য করলে পার্থক্য পরিলক্ষিত হবেই। হয়তো প্রত্যেকেই জ্ঞানী, বড় শক্তিশালী, বড় কারিগর, কিন্তু এতদসত্ত্বেও তাদের কীর্তিকলাপের মাধ্যমে তাদেরকে পৃথক করা যাবেই।
নিদ্রা কুদরতের একটি নিদর্শন। এর দ্বারা মানুষ তার ক্লান্তি দূর করে থাকে। এবং আরাম ও শান্তি লাভ করে। এজন্যেই পরম করুণাময় আল্লাহ রাত্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আবার কাজ কামের জন্যে, দুনিয়ার লাভালাভের জন্যে, আয়-উপার্জনের, জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে মহামহিমান্বিত আল্লাহ দিবস বানিয়েছেন। দিবস রজনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। অবশ্যই জ্ঞানী-বুদ্ধিমানদের জন্যে এগুলো আল্লাহ তা’আলার পূর্ণ ক্ষমতার বড় নিদর্শন।
হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাত্রে আমার ঘুম হতো না। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এটা বললাম। তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি নিম্নের দু’আটি পাঠ করবেঃ (আরবি)
আমি দুআটি পড়তে থাকলাম। তখন আমার অসুখ সেরে গেলো এবং নিদ্রা হতে লাগলো।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
২৪-২৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলার বিরাট সত্তার দলীল স্বরূপ এখানে আর একটি নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। আকাশে তাঁরই আদেশে বিদ্যুৎ চমকায়। তা দেখে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয় যে, না জানি হয়তো বিদ্যুতের ঝটকা তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে। তাই তারা কামনা করে যে, বিদ্যুৎ যেন তাদের উপর পতিত না হয়। আবার মানুষ কখনো আশান্বিত হয় যে, ভালই হয়েছে, এখন বৃষ্টি হবে এবং পানি থৈ থৈ করবে, চারদিকে পানি বয়ে চলবে ইত্যাদি ধরনের আশায় আশান্বিত হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা’আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, এর ফলে যে ভূমি শুষ্ক হয়ে পড়েছিল, যাতে মোটেই রস ছিল না, ওকে তিনি পুনর্জীবিত করে তোলেন। কচি ঘাস জমিতে ঢেউ খেলে যায়। জমিতে নানাবিধ ফসল উৎপন্ন হতে শুরু করে। এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে আল্লাহর অসীম শক্তির নিদর্শন রয়েছে।
তাঁর আর একটি নিদর্শন এই যে, যমীন ও আসমান তাঁরই হুকুমে স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি আকাশকে পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়তে দেন না। আসমান যমীনকে ধরে আছে এবং ওকে ধ্বংস হতে রক্ষা করছে।
হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) যখন কোন কিছু বিশ্বাস করানোর জন্যে শপথ করতেন তখন বলতেনঃ “সেই আল্লাহর কসম, যিনি আসমান ও যমীনকে ধারণ করে আছেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন যমীন ও আসমানকে পরিবর্তন করে দিবেন। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “অতঃপর যখন তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে উঠবার জন্যে একবার আহ্বান করবেন তখন তোমরা উঠে আসবে।” যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যেই দিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন, অতঃপর তাঁর প্রশংসা করতঃ তোমরা সাড়া দেবে এবং তোমরা ধারণা করবে যে, অতি অল্প সময়ই তোমরা অবস্থান করেছিলে।” (১৭:৫২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “এটা তো শুধু এক বিকট শব্দ, তখনই ময়দানে তাদের অবির্ভাব হবে।” (৭৯:১৩-১৪) আরো এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “এটা তো শুধু একটা মহানাদ, তখনই তাদের সবকে হাযির করা হবে আমার সামনে।” (৩৬:৫৩)।
২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আসমান ও যমীনের যাবতীয় সৃষ্টবস্তুর অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। সবাই তার দাসী অথবা দাস। সবকিছুর অধিপতি একমাত্র তিনিই। তাঁর সামনে সবকিছুই অসহায়।
হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে মারফু’রূপে বর্ণিত আছেঃ “কুরআন কারীমে যেখানে কুনূতের উল্লেখ আছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে আনুগত্য।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ “তিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর তিনি এটাকে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন।”
পুনর্বারের সৃষ্টি সাধারণতঃ প্রথমবারের সৃষ্টি অপেক্ষা সহজতর হয়ে থাকে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ তা করা তাদের উচিত নয়। তারা আমাকে গালি দেয়, অথচ এটা তাদের জন্যে মোটই সমীচীন নয়। তাদের আমাকে মিথা প্রতিপন্ন করা এই যে, তারা বলে‘আল্লাহ তা’আলা যেভাবে আমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে পারবেন না। অথচ প্রথমবারের সৃষ্টি অপেক্ষা দ্বিতীয়বারের সৃষ্টি সহজতর। আর তাদের আমাকে গালি দেয়া এই যে, তারা বলে- ‘আল্লাহর সন্তান আছে। অথচ আল্লাহ এক ও অভাব মুক্ত। তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন এবং তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মোটকথা, উভয় সৃষ্টিই তার কর্তৃত্বাধীন ও আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে। কোন কাজই তার জন্যে কঠিন নয় বা তার শক্তি বহির্ভূত নয়)
এটাও হতে পারে যে, সর্বনামটি (আরবি)-এর দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। এখানে (আরবি) দ্বারা আল্লাহ তা’আলার তাওহীদে উলুহিয়্যাত ও তাওহীদে রুবুবিয়্যাত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মা’রূদ হিসেবে তিনি একক এবং প্রতিপালক হিসেবেও তিনি একক। এখানে (আরবি) দ্বারা (আরবি) বা তুলনা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা’আলা তো অতুলনীয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেন (আরবি) অর্থাৎ “তাঁর মত বা তাঁর সাথে তুলনীয় কোন কিছুই নেই।” (৪২:১১)
এই আয়াতটি বর্ণনা করার সময় কোন কোন তাফসীরকার আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে নিম্নের কবিতাটি রচনা করেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি পুকুরে জমা থাকে ও প্রাতঃসমীরণ ঐ পানিকে আন্দোলিত না করে তবে তাতে আকাশের প্রতিচ্ছবি পরিষ্কারভাবে পরিলক্ষিত হবে এবং সূর্য ও তারকাগুলোকেও ওর মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তরও ঠিক তদ্রুপ যে, তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, মহিমা ও মর্যাদা সদা অন্তর্চক্ষু দিয়ে দেখতে পান।”
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তাঁর উপর কারো অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সবাই তার অধীনস্থ। প্রত্যেকেই তাঁর সামনে শক্তিহীন ও অসহায়। তার শক্তি ও সার্বভৌম রাজত্ব সমুদয় বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তাঁর কথায়, তাঁর কর্মে, তাঁর আইনে, তাঁর নির্বাচনে, এক কথায় সর্বক্ষেত্রেই তিনি একচ্ছত্র অধিপতি। মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রঃ) বলেছেন যে, (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো। (আরবি) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1031)
[Among the Signs of Allah :-]
www.motaher21.net
Sura:30
Para:21
Sura: Ar-Roum
Ayat: – 19-27
30:19
یُخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ یُخۡرِجُ الۡمَیِّتَ مِنَ الۡحَیِّ وَ یُحۡیِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ وَ کَذٰلِکَ تُخۡرَجُوۡنَ ﴿٪۱۹﴾
He brings the living out of the dead and brings the dead out of the living and brings to life the earth after its lifelessness. And thus will you be brought out.
يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ
He brings out the living from the dead, and brings out the dead from the living.
This is what we see of His power to create things and their opposites.
These Ayat which come one after the other are all of the same; in each of them Allah mentions the creation of things and their opposites, to indicate to His creation the perfection of His power. Thus He creates the plant from the seed and the seed from the plant; He creates the egg from the chicken and the chicken from the egg; He creates man from sperm and sperm from man; He creates the believer from the disbelievers and the disbeliever from the believers.
وَيُحْيِي الاَْرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
And He revives the earth after its death.
This is like the Ayat:
وَءَايَةٌ لَّهُمُ الاٌّرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَـهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبّاً فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ
And a sign for them is the dead land. We give it life, and We bring forth from it grains, so that they eat thereof. until:
وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ الْعُيُونِ
and We have caused springs of water to gush forth therein. (36:33-34)
وَتَرَى الاٌّرْضَ هَامِدَةً فَإِذَا أَنزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَأءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
And you see the earth barren, but when We send down water on it, it is stirred, and it swells and puts forth every lovely kind. until:
وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَن فِى الْقُبُورِ
and certainly, Allah will resurrect those who are in the graves. (22:5-7)
وَهُوَ الَّذِى يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرىً بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِ حَتَّى إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالاً
And it is He Who sends the winds as heralds of glad tidings, going before His mercy. Till when they have carried a heavy-laden cloud, until:
لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
so that you may remember or take heed. (7:57)
Allah says here:
وَكَذَلِكَ تُخْرَجُونَ
And thus shall you be brought out.
30:20
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ ﴿۲۰﴾
And of His signs is that He created you from dust; then, suddenly you were human beings dispersing [throughout the earth].
Among the Signs of Allah
Allah says:
وَمِنْ ايَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ
And among His signs is this that He created you from dust, —
which speak of His might and power, is the fact that He created your father Adam out of dust.
ثُمَّ إِذَا أَنتُم بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ
and then — behold you are human beings scattered!
So man’s origins lie in dust, then in a despised liquid, then he is formed and becomes a clot, then a lump of flesh, then bones in the form of a human being. Then Allah clothes the bones with flesh. Then the soul is breathed into him and he can hear and see. Then he comes forth from his mother’s womb, small and weak, but the longer he lives, the stronger he becomes, until he reaches the age where he can build cities and strongholds, and he travels to different lands and across the seas, earning a living and amassing wealth, and he is smart and intelligent and crafty, with ideas and opinions of his own, and each one is able to achieve great things in this world and in the Hereafter according to his individual means.
Glory be to the One Who has enabled them and made it easy for them to learn all kinds of skills for earning a living, and has caused them to vary in their levels of knowledge and intellectual ability, and in how handsome or ugly, rich or poor they are, and in whether they are blessed and doomed.
Allah says:
وَمِنْ ايَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ إِذَا أَنتُم بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ
And among His signs is this that He created you from dust, and then — behold you are human beings scattered!
Imam Ahmad recorded that Abu Musa said,
“The Messenger of Allah said:
إِنَّ اللهَ خَلَقَ ادَمَ مِنْ قَبْضَةٍ قَبَضَهَا مِنْ جَمِيع الاَْرْضِ فَجَاءَ بَنُو ادَمَ عَلَى قَدْرِ الاَْرْضِ جَاءَ مِنْهُمُ الاَْبْيَضُ وَالاَْحْمَرُ وَالاَْسْوَدُ وَبَيْنَ ذَلِكَ وَالْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَالسَّهْلُ وَالْحَزْنُ وَبَيْنَ ذَلِك
Allah created Adam from a handful taken from throughout the earth. Hence the sons of Adam vary as the earth varies, so they are white and red and black and (colors) in between, evil and good, easy-going or difficult — or something in between.”
This was also recorded by Abu Dawud and At-Tirmidhi, who said, “This Hadith is Hasan Sahih.”
Allah said
30:21
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡہَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾
And of His signs is that He created for you from yourselves mates that you may find tranquillity in them; and He placed between you affection and mercy. Indeed in that are signs for a people who give thought.
وَمِنْ ايَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا
And among His signs is this that He created for you wives from among yourselves,
meaning, `He created females of your own kind, to be wives for you.’
لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا
that you may find repose in them,
This is like the Ayah,
هُوَ الَّذِى خَلَقَكُمْ مِّن نَّفْسٍ وَحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا
It is He Who has created you from a single person, and He has created from him his wife, in order that he might enjoy the pleasure of living with her. (7:189)
This refers to Hawwa’. Allah created her from Adam, from the short rib on his left. If Allah had made all of Adam’s progeny male, and created the females from another kind, such as from Jinn or animals, there would never have been harmony between them and their spouses. There would have been revulsion if the spouses had been from a different kind.
وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً
and He has put between you affection and mercy.
Out of Allah’s perfect mercy He made their wives from their own kind, and created love and kindness between them. For a man stays with a woman because he loves her, or because he feels compassion towards her if they have a child together, or because she needs him to take care of her, etc.
And Allah reminds:
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
Verily, in that are indeed signs for a people who reflect.
30:22
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ خَلۡقُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافُ اَلۡسِنَتِکُمۡ وَ اَلۡوَانِکُمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّلۡعٰلِمِیۡنَ ﴿۲۲﴾
And of His signs is the creation of the heavens and the earth and the diversity of your languages and your colors. Indeed in that are signs for those of knowledge.
Allah said:
وَمِنْ ايَاتِهِ
And among His signs,
indicating His magnificent power.
خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ
is the creation of the heavens and the earth,
The heavens with their vast height and brightness and beauty of the stars and planets, and the earth with its density and its mountains, valleys, seas, plains, animals and trees.
وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ
and the difference of your languages and colors,
So, we see that some speak Arabic, and the Tatars have their own language, as do the Georgians, Romans, Franks, Berbers, Tou Couleurs (of Sudan), Ethiopians, Indians, Persians, Slavs, Khazars, Armenians, Kurds and others. Only Allah knows the variety of languages spoken among the sons of Adam.
And the difference of their colors mentioned here refers to their appearance, for all the people of this world, from the time that Allah created Adam, and until the Hour begins, each of them has two eyes, two eyebrows, a nose, a forehead, a mouth and two cheeks, but none of them looks like another; there is bound to be some difference in posture, appearance and speech, whether it is apparent or is hidden and can only be noticed with careful observation. Each face has its own characteristics and does not look like another; even if there was a group of people who looked alike, having a beautiful or ugly characteristic in common, there would still be a difference between one person and the next.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ
Verily, in that are indeed signs for men of sound knowledge
30:23
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ مَنَامُکُمۡ بِالَّیۡلِ وَ النَّہَارِ وَ ابۡتِغَآؤُکُمۡ مِّنۡ فَضۡلِہٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿۲۳﴾
And of His signs is your sleep by night and day and your seeking of His bounty. Indeed in that are signs for a people who listen.
وَمِنْ ايَاتِهِ مَنَامُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاوُكُم مِّن فَضْلِهِ
And among His signs is your sleep by night and by day, and your seeking of His bounty.
Among His signs is the cycle of sleep that He has created during the night and the day, when people are able to cease moving and rest, so that their tiredness and exhaustion will go away. And He has enabled you to seek to earn a living and to travel about during the day, this is the opposite of sleep.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
Verily, in that are indeed signs for a people who listen.
meaning, understand
30:24
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ یُرِیۡکُمُ الۡبَرۡقَ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا وَّ یُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَیُحۡیٖ بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿۲۴﴾
And of His signs is [that] He shows you the lightening [causing] fear and aspiration, and He sends down rain from the sky by which He brings to life the earth after its lifelessness. Indeed in that are signs for a people who use reason.
Allah says,
وَمِنْ ايَاتِهِ
And among His signs,
which speak of His greatness,
…
يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا
He shows you the lightning, for fear and for hope,
Sometimes you fear the heavy rain and destructive thunderbolts that follow it, and sometimes you feel hope, when you see a flash of lightning, that much-needed rain will come.
Allah says:
…
وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاء مَاء فَيُحْيِي بِهِ الاَْرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
and He sends down water from the sky, and therewith revives the earth after its death.
After it was barren, with nothing growing there, then the water comes to it and
اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
it is stirred, and it swells and puts forth every lovely kind (of growth). (22:5)
In this is a clear sign and proof of the resurrection and the coming of the Hour.
Allah says:
…
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
Verily, in that are indeed signs for a people who understand.
Then Allah says:
30:25
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ تَقُوۡمَ السَّمَآءُ وَ الۡاَرۡضُ بِاَمۡرِہٖ ؕ ثُمَّ اِذَا دَعَاکُمۡ دَعۡوَۃً ٭ۖ مِّنَ الۡاَرۡضِ ٭ۖ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ تَخۡرُجُوۡنَ ﴿۲۵﴾
And of His signs is that the heaven and earth remain by His command. Then when He calls you with a [single] call from the earth, immediately you will come forth.
وَمِنْ ايَاتِهِ أَن تَقُومَ السَّمَاء وَالاَْرْضُ بِأَمْرِهِ
And among His signs is that the heaven and the earth stand by His command.
This is like the Ayat:
وَيُمْسِكُ السَّمَأءَ أَن تَقَعَ عَلَى الاٌّرْضِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
He withholds the heaven from falling on the earth except by His leave. (22:65)
إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضَ أَن تَزُولَا
Verily, Allah grasps the heavens and the earth lest they should move away from their places. (35:41)
Whenever Umar bin Al-Khattab, may Allah be pleased with him, swore an emphatic oath, he would say,
“No, by the One by Whose command the heaven and the earth stand,”
i.e., they stand firm by His command to them and His subjugation of them. Then, when the Day of Resurrection comes, the Day when the earth will be exchanged with another earth and the dead will come forth from their graves, brought back to life by His command and His call to them,
ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً مِّنَ الاَْرْضِ إِذَا أَنتُمْ تَخْرُجُونَ
Then afterwards when He will call you by a single call, behold, you will come out from the earth.
This is like the Ayat:
يَوْمَ يَدْعُوكُمْ فَتَسْتَجِيبُونَ بِحَمْدِهِ وَتَظُنُّونَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلاَّ قَلِيلً
On the Day when He will call you, and you will answer with His praise and obedience, and you will think that you have stayed but a little while! (17:52)
فَإِنَّمَا هِىَ زَجْرَةٌ وَحِدَةٌ
فَإِذَا هُم بِالسَّاهِرَةِ
But it will be only a single Zajrah. When behold, they find themselves on the surface of the earth alive after their death. (79:13-14)
إِن كَانَتْ إِلاَّ صَيْحَةً وَحِدَةً فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ
It will be but a single Sayhah, so behold they will all be brought up before Us! (36:53)
30:26
وَ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ کُلٌّ لَّہٗ قٰنِتُوۡنَ ﴿۲۶﴾
And to Him belongs whoever is in the heavens and earth. All are to Him devoutly obedient.
Allah says:
وَلَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ
To Him belongs whatever is in the heavens and the earth.
means, He owns it and it is enslaved to Him.
كُلٌّ لَّهُ قَانِتُونَ
All are obedient to Him.
they are humble before Him and submit to Him, whether willingly or unwillingly.
Repeating the Creation is easier for Allah
Allah’s saying
30:27
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یَبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ یُعِیۡدُہٗ وَ ہُوَ اَہۡوَنُ عَلَیۡہِ ؕ وَ لَہُ الۡمَثَلُ الۡاَعۡلٰی فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿٪۲۷﴾
And it is He who begins creation; then He repeats it, and that is [even] easier for Him. To Him belongs the highest attribute in the heavens and earth. And He is the Exalted in Might, the Wise.
وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ
And He it is Who originates the creation, then He will repeat it; and this is easier for Him.
Ibn Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,
“This means it is easier for Him.”
Mujahid said:
“Repeating it is easier for Him than originating it, and originating it is easy for Him.”
This was also the view of Ikrimah and others.
Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah, may Allah be pleased with him, said that the Prophet said:
قَالَ اللهُ
كَذَّبَنِي ابْنُ ادَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ فَأَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لَنْ يُعِيدَنِي كَمَا بَدَأَنِي وَلَيْسَ أَوَّلُ الْخَلْقِ بِأَهْوَنَ عَلَيَّ مِنْ إِعَادَتِهِ وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا وَأَنَا الاَْحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد
Allah says;
“The son of Adam denied Me, and he had no right to do so. And he reviled Me, and he had no right to do so.
As for his denying Me, it is his saying:`He will not remake me as He originated me’ — while originating the creation is not easier for Me than re-creating him.
As for his reviling Me, it is his saying:`Allah has taken to Himself a son,’ while I am the One, the Self-Sufficient Master; I beget not, nor was I begotten, and there is none comparable to Me.”
This was recorded only by Al-Bukhari.
وَلَهُ الْمَثَلُ الاَْعْلَى فِي السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ
His is the highest description in the heavens and in the earth.
Ali bin Abi Talhah reported Ibn Abbas said,
“This is like the Ayah:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَىْءٌ
There is nothing like Him. (42:11)”
Qatadah said:
“His description is La ilaha illallah, and there is no Lord but He.”
وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
And He is the All-Mighty, the All-Wise.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran