أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৩৩)
[ সুদ এর নিষেধাজ্ঞা:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩০:আর্-রূম
পারা:২১
৩৭-৪০ নং আয়াত:-
৩০:৩৭
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳۷﴾
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ্ যার জন্য ইচ্ছে রিযিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন? এতে তো অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ঈমান আনে।
৩০:৩৮
فَاٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّہٗ وَ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ ابۡنَالسَّبِیۡلِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَ اللّٰہِ ۫ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۸﴾
কাজেই (হে মুমিন!) আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফির কে (দাও তাদের অধিকার) । এ পদ্ধতি এমন লোকদের জন্য ভালো যারা চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তারাই সফলকাম হবে।
৩০:৩৯
وَ مَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ رِّبًا لِّیَرۡبُوَا۠ فِیۡۤ اَمۡوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرۡبُوۡا عِنۡدَ اللّٰہِ ۚ وَ مَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ زَکٰوۃٍ تُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَ اللّٰہِ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُضۡعِفُوۡنَ ﴿۳۹﴾
যে সুদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না। আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে।
৩০:৪০
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ ثُمَّ رَزَقَکُمۡ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ ؕ ہَلۡ مِنۡ شُرَکَآئِکُمۡ مَّنۡ یَّفۡعَلُ مِنۡ ذٰلِکُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ سُبۡحٰنَہٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿٪۴۰﴾
আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রুযী দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পরে তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের এমন কেউ আছে কি, যে এ সমস্তের কোন একটি করতে পারে? ওরা যাদেরকে শরীক স্থাপন করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মানুষের নৈতিক চরিত্রের ওপর কুফর ও শিরক কি প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং এর বিপরীত পক্ষে আল্লাহর প্রতি ঈমানের নৈতিক পরিণাম কি, মু’মিনরা এ থেকে সে শিক্ষা লাভ করতে পারে। যে ব্যক্তিই নিষ্ঠা সহকারে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং তাকেই রিযিকের সমুদয় ভাণ্ডারের মালিক মনে করে, সে কখনো আল্লাহকে ভুলে থাকা লোকদের মতো সংকীর্ণ হৃদয়বৃত্তির পরিচয় দিতে পারে না। সে প্রসারিত রিযিক লাভ করলে অহংকারে মত্ত হয় না। বরং আল্লাহর শোকর আদায় করে, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মমতা ও ঔদার্যপূণ্য ব্যবহার করে এবং আল্লাহর সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করে না। সংকীর্ণ জীবিকা লাভ করুক বা অনাহারে থাকুক সর্বাবস্থায় সে সবর করে, কখনো বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দেয় না এবং শেষ সময় পর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের আশায় বসে থাকে। কোনো নাস্তিক বা মুশরিক এ নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে না।
# আত্মীয়-স্বজন, মিসকিন ও মুসাফিরদেরকে দান করার কথা বলা হয়নি। বরং বলা হচ্ছে, এ তাঁর অধিকার এবং অধিকার মনে করেই তোমাদের এটা দেয়া উচিত। এ অধিকার দিতে গিয়ে তোমার মনে এ ধারণা না জন্মে যে, তাঁর প্রতি তুমি অনুগ্রহ করছো এবং তুমি কোনো মহান দানশীল সত্ত্বা আর সে কোন একটি সামান্য ও নগণ্য সৃষ্টি, তোমার অনুগ্রহের কণা ভক্ষণ করেই সে জীবিকা নির্বাহ করে। বরং একথা ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে যাওয়া উচিত যে, সম্পদের আসল মালিক যদি তোমাকে বেশি এবং অন্য বান্দাদেরকে কম দিয়ে থাকেন, তাহলে এ বর্ধিত সম্পদ হচ্ছে এমন সব লোকের অধিকার যাদেরকে তোমার আওতাধীনে তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য দেয়া হয়েছে। তুমি তাদেরকে এ অধিকার দান করছো কি করছো না এটা তোমার মালিক দেখতে চান।
আল্লাহর এ ভাষণ এবং এর আসল প্রাণসত্ত্বা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা-ভাবনা করবে সে একথা অনুভব না করে থাকতে পারে না যে, কুরআন মজীদ মানুষের জন্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির যে পথ নির্ধারণ করে সেজন্য একটি মুক্ত সমাজ ও মুক্ত অর্থনীতি যেখানে মানুষের মালিকানা অধিকার খতম করে দেয়া হয়, রাষ্ট্র সমস্ত উৎপাদন ও উপকরণের একচ্ছত্র মালিক হয়ে যায় এবং ব্যক্তিবর্গের মধ্যে জীবিকা বণ্টনের যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারী কর্মকর্তাদের করায়ত্ত থাকে। এমন কিকোন ব্যক্তি অধিকার চিহ্নিত করার পরও তা তাকে দিতে পারে না এবং অন্য ব্যক্তি কারো থেকে কিছু গ্রহণ করে তাঁর জন্য নিজের মনের মধ্যে কোনো শুভেচ্ছার অনুভূতি লালন করতে পারে না। এভাবে নির্ভেজাল কমিউনিস্ট সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আজকাল আমাদের দেশে “কুরআনী রবুবীয়াত ব্যবস্থা”র গালভরা নাম দিয়ে জবরদস্তি কুরআনের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কুরআনের নিজস্ব পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ এর মধ্যে ব্যক্তিগত নৈতিক বৃত্তির বিকাশ ও উন্মেষ এবং ব্যক্তি চরিত্র গঠন ও উন্নয়নের দুয়ার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কুরআনের পরিকল্পনা এমন জায়গায় কার্যকর হতে পারে যেখানে ব্যক্তিরা সম্পদের কিছু উপায়-উপকরণের মালিক হয়, সেগুলো স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে এবং এরপর স্বেচ্ছায় ও স্বাগ্রহে আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকার আন্তরিকতা সহকারে প্রদান করে। এ ধরনের সমাজে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি লোকের মধ্যে একদিকে সহানুভূতি, দয়া-মায়া, মমতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সত্যনিষ্ঠ ও সত্য পালন করার উন্নতর গুণাবলী সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা দেখা দেয় এবং অন্যদিকে যেসব লোকের সাথে সদাচার করা হয় তাদের মনে সদাচারীদের জন্য শুভেচ্ছা ও অনুগৃহীত হবার মনোভাব এবং অনুগ্রহের বিনিময়ে অনুগ্রহ করার পবিত্র অনুভূতি বিকাশ লাভ করে। শেষ পর্যন্ত এমন একটি আদর্শ ও মহৎ পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে যায় যেখানে অন্যায়ের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং ন্যায়ের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া কোনো স্বৈরাচারী শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয় না বরং লোকেরা নিজেদের আত্মিক শুদ্ধতা ও সদিচ্ছাবশেই এ দায়িত্ব মাথা পেতে নেয়।
# এর দ্বারা একথা বুঝানো হচ্ছে না যে, কেবলমাত্র মিসকীন, মুসাফির ও আত্মীয়-স্বজনদের অধিকার দিয়ে দিলেই সাফল্য লাভ করা যাবে এবং এছাড়া সাফল্য লাভ করার জন্য আর কোন জিনিসের প্রয়োজন নেই। বরং এর অর্থ হচ্ছে, যেসব লোক এ অধিকারগুলো জানে না এবং এ অধিকারগুলো প্রদান করে না তারা সাফল্য লাভ করবে না। বরং সাফল্য লাভ করবে এমনসব লোক যারা একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টিঅর্জনের জন্য অধিকারগুলো জানে এবং এগুলো প্রদান করে।
# সুদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন সূচক এটিই প্রথম আয়াত। এখানে শুধুমাত্র এতটুকু কথা বলা হয়েছে যে, তোমরা তো একথা মনে করে সুদ দিয়ে থাকো যে, যাকে আমি এ অতিরিক্ত সম্পদ দিচ্ছি তাঁর ধন-দৌলত বেড়ে যাবে। কিন্তু আসলে আল্লাহর কাছে সুদের মাধ্যমে ধন-দৌলত বৃদ্ধি হয় না বরং যাকাতের মাধ্যমে বৃদ্ধি হয়। সামনের দিকে এগিয়ে যখন মদিনা তাইয়েবায় সুদ হারাম হবার হুকুম নাযিল করা হয় তখন সেখানে অতিরিক্ত একথা বলা হয়يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ “আল্লাহ সুদকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন এবং সাদকাকে বিকশিত করেন।” (পরবর্তী বিধানের জন্য দেখুন সূরা আলে ইমরান ১৩০ আয়াত এবং আল বাকারাহ ২৭৫ আয়াত থেকে ২৮১ আয়াত।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ দু’দলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদল বলেন, এখানে রিবা শব্দের এমন সুদের কথা বলা হয়নি যাকে শরীয়াতের দৃষ্টিতে হারাম করা হয়েছে বরং এমন ধরনের দান, তোহফা ও হাদিয়াকে সুদ বলা হয়েছে যা গ্রহীতা পরবর্তীকালে ফেরত দেবার সময় তা বর্ধিত আকারে ফেরত দেবে, এরূপ সংকল্প সহকারে দেয়া হয়। অথবা একথা মনে করে দেয়া হয় যে, তা দাতার কোনো ভাল কাজে লাগবে অথবা তাঁর আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা দাতার নিজের জন্য ভালো হবে। এটি ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ (রা.), দ্বাহহাক (রা.), কাতাদাহ, ইকরামাহ, মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী ও শা’বীর উক্তি। আর সম্ভবত তারা এ ব্যাখ্যা এ জন্য করেছেন যে, আয়াতে এ কর্মের ফল হিসেবে কেবলমাত্র এতটুকু বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে ব্যাপারটি তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট হতো তাহলে ইতিবাচক ভাবে বলা হতো, আল্লাহর দরবারে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
দ্বিতীয় দলটি বলেন, না, শরীয়াত যে রিবাকে হারাম গণ্য করেছে এখানে তাঁর কথাই বলা হয়েছে। এ মত প্রকাশ করেছেন হযরত হাসান বাসরী ও সুদ্দী এবং আল্লামা আলূসীর মতে আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এটিই। কারণ আরবী ভাষায় রিবা শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। মুফাসসির নিশাপুরীও এ ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করেছেন।
আমার মতে এ দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিই সঠিক। কারণ পরিচিত অর্থ পরিত্যাগ করার জন্য ওপরে প্রথম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। সূরা রুম যে সময় নাযিল হয় সে সময় কুরআন মজীদ সুদ হারাম হওয়ার কথা ঘোষণা করেনি। তাঁর কয়েক বছর পর একথা ঘোষিত হয়। এ জন্য সে পূর্ব থেকেই মন-মানসিকতা তৈরি করার কাজে লিপ্ত হয়। মদের ব্যাপারেও পূর্বে শুধুমাত্র এতটুকু বলা হয়েছিল যে, এটা পবিত্র রিযিক নয় ( আন নাহল ৬৭ আয়াত ) তারপর বলা হয়, এর ক্ষতি এর লাভের চেয়ে বেশি। ( আল বাকারাহ ২১৯ ) এরপর হুকুম দেয়া হয়, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের ধারে কাছে যেয়ো না। ( আন নিসা ৪৩ ) তারপর এটিকে পুরোপুরি হারাম করার ঘোষণা দেয়া হয়। অনুরূপভাবে এখানে সুদের ব্যাপারেও কেবলমাত্র এতটুকু বলেই থেমে যাওয়া হয়েছে যে, এটা এমন জিনিস নয় যার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি বরং সম্পদ প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি হয় যাকাতের মাধ্যমে। এরপর চক্র বৃদ্ধি হারে সুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ( আল ইমরান, ১৩০ ) এবং সবশেষে সুদকেই চূড়ান্ত ভাবে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে ( আল বাকারাহ, ২৭৫ )
# এ বুদ্ধির কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। যে ধরনের ঐকান্তিক সংকল্প, গভীর ত্যাগের অনুভূতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা সহকারেকোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে অনুরূপভাবেই আল্লাহ তাকে বেশি বেশি প্রতিদানও দেবেন। তাই একটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি খেজুরও দান করে তাহলে আল্লাহ তাকে বাড়িয়ে ওহোদ পাহাড়ের সমান করে দেন।
# এখান থেকে আবার মুশরিকদের বোঝাবার জন্য বক্তব্যের ধারা তাওহীদ ও আখেরাতের বিষয়বস্তুর দিকে ফিরে এসেছে।
# পৃথিবীতে তোমাদের রিযিকের জন্য যাবতীয় উপায়-উপকরণ সরবরাহ করেছেন এবং এমন ব্যবস্থা করেছেন যার ফলে রিযিকের আবর্তনের মাধ্যমে প্রত্যেকে কিছু না কিছু অংশ পেয়ে যায়।
# তোমাদের তৈরি করা উপাস্যদের মধ্যে কেউ কি সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা? জীবন ও মৃত্যু দান করা কি কারো ক্ষমতার আওতাভুক্ত আছে? অথবা মরার পর সে আবার কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে? তাহলে তাদের কাজ কি? তোমরা তাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছো কেন?
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*সুখ দুঃখ, সচ্ছলতা অসচ্ছলতা সবই আল্লাহ তায়ালার নিয়ন্ত্রণে : এরপর আসছে অত্যন্ত অপ্রিয় এক প্রশ্ন। যার মাধ্যমে ওদের কাজের প্রতি ভীষণ বিস্ময় প্রকাশ করা হচ্ছে। বিস্ময় প্রকাশ হচ্ছে তাদের দৃষ্টিভংগির প্রতি তারা সংকীর্ণতা, দূরদৃষ্টির অভাব নিজেরা নাফরমান হওয়ার এবং ক্ষুদ্র অস্তিত্ব ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভংগিসম্পন্ন হওয়ার কারণে তারা বড় কোনাে আশা করতে পারে না। কিন্তু সুখে দুঃখে, সুদিন দুর্দিনে, সচ্ছলতা ও অভাবের দিনে যারা আল্লাহর পথে খরচ করে, তাদের হৃদয়ের মধ্যে তাদের অজান্তেই এমন এক দাবী সৃষ্টি হয়ে যায় যে, তাদের আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ক্ষমা ও পুরস্কারের নেয়ামত দান করবেন, যেহেতু মহা দয়াময় আল্লাহর এটাই চিরন্তন নিয়ম । তারা আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে রুজু হয়ে থাকে, এ জন্যে তাদের অন্তর তার রহমত লাভের আশায় সর্বদা ভরপুর থাকে। তারা বিশ্বাস করে, যত কঠিন পরীক্ষাই তাদের জীবনে আসুক না কেন, একদিন না একদিন তাদের এ পরীক্ষার অবসান হবেই এবং তখনই তাদের ওপর মহান আল্লাহর অপার করুণারাশি নেমে আসবে। তারা আরও বিশ্বাস করে, রিযিক প্রশস্ত করা ও সংকীর্ণ করা- এটা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের চিরন্তন এক নিয়ম ও হিকমত অনুযায়ী চক্রাকারে আসে, সব সময়ে হয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলেই বুঝে না। ওরা কি দেখছে না যে, আল্লাহ তায়ালা রিযিক প্রশস্ত করেন এবং তিনিই সংকীর্ণ করেন। সুতরাং সচ্ছলতা ও প্রশস্ততার সময়ে লাগাম ছাড়া ফুর্তি করা বা অহংকার করা তার কাজ নয়, আর অভাব অভিযােগের সময় হতাশ হয়ে যেতে হবে এবং হাল ছেড়ে দেয়া হবে- এটাও কোনাে বুদ্ধিমানের জন্যে উপযােগী হতে পারে না। এটা করা হলে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের হিকমতের একটি দিকই দেখা হবে মাত্র। অন্য দিকটি নযরের বাইরে থেকে যাবে। একজন মােমেন অবশ্যই একথা জানে ও বুঝে যে, সব কিছুর চূড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া, আর এ অবস্থার মধ্যে যতাে পরিবর্তনই আসুক না কেন, অবশেষে আল্লাহর নিয়মই টিকে থাকবে এবং তারই ব্যবস্থা বিরাজ করবে সর্বত্র। এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই রয়েছে এর মধ্যে বহু নিদর্শন সে জাতির জন্যে যারা ঈমান রাখে।’ আর যখন আল্লাহ রব্বুল আলামীনই রিযকের দুয়ার খুলে দেন এবং তিনিই বন্ধ করেন। তখন এটাও বুঝা সহজ হয় যে, তাঁর নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী তিনিই দান করেন এবং (যার জন্যে ইচ্ছা, তার জন্যে) তিনি রিযিকের ভান্ডার সংকুচিত করে দেন। তিনি মানুষকে জানান তাদের ধন সম্পদ বৃদ্ধির উপায়সমূহ সম্পর্কে এবং কিভাবে তারা লাভবান হবে সে পস্থাও তিনিই তাদের জানিয়ে দেন। এটা তাদের খেয়াল খুশীমতাে হবার নয়; বরং যেভাবে আল্লাহ তায়ালা চাইবেন ও তাদের পরিচালনা করবেন সেভাবেই তা হবে। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘সুতরাং আত্মীয় পরিজনের হক, সর্বহারা ব্যক্তির হক আদায় করাে… তারাই হবে এমন ব্যক্তি, যাদের দ্বিগুণ পুরস্কার দেয়া হবে।’ যত সম্পদ পৃথিবীতে আছে সব কিছুর মালিক এক আল্লাহ তায়ালা, তিনি এ সম্পদ তার কোনাে কোনাে বান্দাকে (পর্যাপ্ত পরিমাণে) দেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মালিক হিসেবে সম্পদের ব্যবহারকারী প্রথম পক্ষ তিনি। কাজেই তিনি এসব কিছু বিভিন্নভাবে বন্টন করতে গিয়ে তার বান্দাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লােকের জন্যে কিছু হিসসা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং সেই হিসসার নাম রেখেছেন হক বা অধিকার। অতপর সে পাওনাদারদের অভিহিত করেছেন, যাল-কোরবা, মিসকীন ও ইবনে সাবীল বলে। এর পর যাকাত দান নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক (সম্পদশালী) লােকের জন্যে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হতাে না আর তার পাওনাদারদেরও সীমিত করে দেয়া হতাে না, যদি না প্রথম ও মূল সত্যটা প্রকাশ করা হতাে যে, সম্পদ সম্পত্তি সব কিছুর মালিক আল্লাহ তায়ালা। এই মালিকানা থেকেই তাে তিনি সবার জন্যে রিযিক সরবরাহ করেন। অপরদিকে অভাবগ্রস্ত দলটিকে মূল মালিকের কাছ থেকে তিনি হকদার বা পাওনাদার বানিয়েছেন। সত্যিকারের সেই সম্পদ তিনি অন্য কারাে হাত দিয়ে ওদের কাছে পৌছে দেন। এই সম্পদ বন্টনের ব্যাপারে ইসলামী মূলনীতি রয়েছে। এই মূলনীতি সামনে রেখেই ইসলামী ব্যবস্থায় সম্পদ বন্টনের শাখা-প্রশাখাগত আইনগুলাে প্রণয়ন করা হয়েছে। অতপর যতােদিন সম্পদের মালিক আল্লাহ তায়ালা আছেন, ততােদিন এভাবেই তিনি প্রথম পক্ষ হিসেবে সম্পদ তাঁর বান্দাদের মধ্যে বন্টনের কাজ চালু রাখবেন। কখনও তাদের দেবেন নতুন নতুন সম্পদ এবং কখনও বর্তমান সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন, অথবা কখনও তাদের দ্বারা খরচ করাবেন, কিন্তু এমন কখনও হবে না যে, তারা স্বাধীনভাবে এবং নিজেদের ইচ্ছামতাে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে। বর্তমান প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা সম্পদশালীদের তাদের সম্পদ বাড়ানাের এবং সফলতা লাভ করার জন্যে সর্বোত্তম পদ্ধতি জানাচ্ছেন, যাতে করে তাদের দেয়া আমানতের হক তারা সুন্দরভাবে আদায় করতে পারে, আর সেই পদ্ধতিটি হচ্ছে, আত্মীয়স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের দান করা, আর খরচ করা আল্লাহর পথে তথা এক সার্বজনীন খাতে। এরশাদ হচ্ছে, এটাই হচ্ছে সেসব লােকদের জন্যে উত্তম যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এবং প্রকৃতপক্ষে তারাই হচ্ছে সাফল্যমন্ডিত। ওদের মধ্যে অনেকে আছে যারা তেলা মাথায় তেল দিয়ে তাদের সম্পদ বাড়াতে চায়, অর্থাৎ তারা সম্পদ বৃদ্ধির জন্যে সচ্ছল লােকদের উপহার উপঢৌকন দান করে, এভাবে বিত্তশালীদের সম্পদ আরাে বহুগুণ বাড়তে থাকে। এর ফলে সত্যিকারে কোনাে অগ্রগতি লাভ করা যায় না। এ বিষয়ে এরশাদ হচ্ছে, ‘আর যা কিছু সূদ মানুষের সম্পদ আরাে বাড়ানাের জন্যে তােমরা দিয়েছে, তার দ্বারা কিছু বাড়লেও বাড়তে পারে, কিন্তু তার দ্বারা আল্লাহর কাছে কিছুই বাড়বে না।’ আসলে এই মূল কথাটাই বিভিন্ন রেওয়ায়াতের মাধ্যমে বুঝানাে হয়েছে যে, সকল সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি যখন কারাে সম্পদ বাড়াতে চান তখনই তা বাড়ে। মানুষ তার বিধানের বাইরে অন্য যে কোনাে পদ্ধতিতেই সম্পদ বাড়াতে চাক না কেন তা পারবে না । মানুষ তাে মনে করে, সূদভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পদ বাড়ে, কিন্তু সে এটা চিন্তা করতে পারে না যে, সম্পদ বাড়ানাের বহু পদ্ধতির মধ্যে এটা একটা পদ্ধতি হতে পারে, এটাকেই একমাত্র পদ্ধতি মনে করাটা এক মারাত্মক ভুল ও শয়তানী অসঅসা। আর এ পদ্ধতি হারাম বলে ঘােষণা করার সাথে সাথে তাদের সামনে সম্পদ বৃদ্ধির সঠিক ও সুন্দর পদ্ধতি পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে যাকাত তােমরা দাও, তােমাদের মধ্যে এসব লােকেরাই সম্পদ বৃদ্ধিকারী হয়।’ সম্পদ বৃদ্ধির জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে পন্থা জানিয়েছেন তা হচ্ছে, কোনাে প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশায় নয়, বরং আল্লাহ তায়ালা চান, নিছক তার সন্তুষ্টিপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সম্পদ খরচ করা বা কাউকে দান করা হােক। এখন চিন্তা করার বিষয়, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর রেযামন্দি হাসিল করার উদ্দেশ্যেই সম্পদ ব্যবহার করবে, তার সম্পদ বৃদ্ধি করতে কি মহান পরওয়ারদেগার সক্ষম নন? তিনিই সকল মানুষকে দান করেন না, আর কারও থেকে সম্পদের দরজা বন্ধ করতে চাইলে তিনি কি তা পারেন না? অবশ্যই তিনি তা করতে পারেন। সুতরাং সহজেই আমরা এটা বুঝতে পারি যে, তিনি তাদের সম্পদ সম্পত্তি বৃদ্ধি করতে পারেন ও করেন যারা তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যয় করে। যেসব সূদখাের মানুষের সন্তুষ্টি চায় তাদের সম্পদ আল্লাহ তায়ালা (শেষ পর্যন্ত) কমিয়ে দেন। এ তাে গেলাে দুনিয়ার পরিণতি, তারপর তাে রয়েছে আখেরাতের শাস্তি। সেখানে এ শাস্তি বহু বহু গুণে বাড়িয়ে তাদের কষ্ট দেয়া হবে। এই হচ্ছে এখানে ও ওখানে তাদের লাভজনক ব্যবসা। কিভাবে মানুষ রিযিক লাভ করে এবং কিভাবে মানুষ উপার্জন করে, সে বিষয় থেকে বুঝা যায় তাদের শিরকের দৃষ্টিভংগি কি। এই শিরকের প্রভাবে মানুষের জীবনে নেমে আসে কি দুঃখ দুর্দশা ও অশান্তি, তা তাদের দিকে ও তাদের পূর্ববর্তী লােকদের দিকে তাকালে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়। ইতিপূর্বে মােশরেকদের পরিণতি যা হয়েছে তার দিকে তাকালে বুঝা যায় তাদের ভবিষ্যৎ কতাে কঠিন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন তােমাদের, তারপর তােমাদের রিযিক দিয়েছেন, এরপর তিনিই তােমাদের মৃত্যু দেবেন। তারপর তিনিই তােমাদের যিন্দা করবেন… বলাে, পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করাে, অতপর দেখাে, কেমন হয়েছে পরিণতি সেসব লােকের, যারা ইতিপূর্বে গুজরে গেছে। তাদের অধিকাংশ মােশরেক ছিলেন।’ তিনি পূর্বেকার সেসব অভিশপ্ত ও শাস্তিপ্রাপ্ত লােকদের কথা পেশ করছেন এবং তাদের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে হাল যমানার মােশরেকদের সম্বােধন করছেন, যেহেতু তারা জানে না, বুঝে না। এবং চিন্তাও করে না যে, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তাদের বাস্তবে অস্তিত্ব দান করেছেন, অথবা একথাও তারা ধারণা করতে পারে না যে, তাদের দাবী করা মাবুদদের ক্ষমতায় আর কারও অংশ আছে। এ জন্যে তাদের সম্বােধন করে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালাই তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রুযির ব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। তিনিই তাদের মৃত্যু দেবেন এবং তিনিই তাদের পুনরায় যিন্দা করবেন। গােটা সৃষ্টি জগতের সবাই একথা স্বীকার করে যে, তাদের রিযিক দেয়ার ক্ষমতা। আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারাে হাতে নেই। আর সম্পদ সম্পত্তি যা মানুষ পেয়েছে এসব তাে আল্লাহর দেয়া অমানত। এ ব্যাপারে কোরআনের দলীল ছাড়া অন্য কোনাে প্রমাণ তারা হাযির করতে পারে না। এখন রইলাে মৃত্যুর পরে আবার তাদের যিন্দা করে তােলার কথা। এ বিষয়ে তারা চিন্তা করে যে, এটা সংঘটিত হতেও পারে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন মরণ পারের যিন্দেগীকে তাদের দিকে টেনে আনছেন বলে তারা বুঝতে পারে। তাদের মধ্যে আল্লাহ রব্বুল আলামীন যে চেতনা দান করেছেন তাতে তারা বুঝতে পারে যে, সকল কিছুরই প্রতিক্রিয়া আছে। দুনিয়ায় যা কিছু তারা করছে তার পূর্ণ প্রতিক্রিয়া এখানে সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং এ প্রতিক্রিয়ার প্রয়ােজনেই মৃত্যুর পর আর একটি যিন্দেগী দরকার। তারপর তাদের তিনি জিজ্ঞেস করছেন, ‘এসব কাজ করার মতাে কেউ কি আছে তােমাদের কাল্পনিক মাবুদদের মধ্যে?’ এ কথার কোনাে জওয়াব আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে চান না। কারণ, এক, তাদের কোনাে জওয়াব নেই। দুই, তাদের এই যুক্তিহীন কাজের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করার জন্যেই তাদের এসব বলা হচ্ছে। এরপর যাবতীয় দুর্বলতা ও অক্ষমতা থেকে তার পবিত্রতার কথা ঘােষণা করার জন্যেই আল্লাহ তায়ালা, নাযিল করছেন, ‘মহান আল্লাহ পবিত্র সেসব ব্যক্তির সাহায্য নেয়ার দুর্বলতা থেকে, যাদের ওরা তার সাথে শরীক বানায়।’
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে যে, রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি যার জন্য ইচ্ছা করেন রিযিক বাড়িয়ে দেন, যার জন্য ইচ্ছা করেন রিযিক কমিয়ে দেন। এ থেকে জানা গেল, কেউ যদি আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত খাতে রিযিক ব্যয় করে তাহলে তার কারণে রিযিক কমে না। পক্ষান্তরে কেউ যদি কৃপণতা করে এবং নিজের ধন-সম্পদ সংরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে তবে এর ফলে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় না। এ বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেনন তোমরা আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের হক আদায় করে দাও। এটা তাদের হক, আর প্রাপকের হক পরিশোধ করা তো ইনসাফের দাবী, এটা কোন অনুগ্রহ নয়।
মুজাহিদ বলেন: যে ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন গরীব, সে তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের দান করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহণীয় হবে না। কেবল আর্থিক সাহায্য আত্মীয়-স্বজনের প্রাপ্য নয়, বরং তাদের দেখাশুনা করা, দৈহিক সেবা করা, মৌখিক সহানূভুতি ও সান্ত্বনা দেয়া এবং অসুস্থ হলে দেখা করা ইত্যাদি সবই শামিল। (কুরতুবী) আত্মীয়-স্বজনের পরেই মিসকীন ও মুসাফিরের প্রাপ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এটাও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ও পরকালের নাজাতের আশা করে তাদের উচিত নিকটাত্মীয়, মিসকীন ও মুসাফিরসহ সকলকে তাদের যথাযথ প্রাপ্য দিয়ে দেয়া।
الربا শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত, বেশি। অর্থাৎ মানুষকে দান করা, সহযোগিতা করা এবং কর্য দেয়া এ আশায় যে, আমি তাদের সহযোগিতা করলে বা কর্য দিলে ভবিষ্যতে বেশি কিছু পাব, এমন আশায় দান করলে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তার প্রতিদান বেশি পাওয়া যাবে না। কারণ সে অসৎ উদ্দেশ্যে দান করেছে বা কর্য দিয়েছে, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য দান করেনি। যে ব্যক্তি বেশি পাওয়ার আশায় বা মানুষকে দেখানোর জন্য দান করবে বা কর্য দেবে এমন দানের নেকী আল্লাহ তা‘আলার কাছে বৃদ্ধি পায় না।
অতএব দান করাতে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু অধিক পাবার আশায় দান করলে তাতে কোন কিছুই বৃদ্ধি পায় না। অধিকন্তু আরো সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা এমনটি করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ)
“অধিক লাভের আশায় দান (ইহ্সান) কর না।” (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪:৬)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, রিযিক দিয়েছেন, আর আয়ু শেষ হয়ে গেলে মৃত্যু দান করবেন। অতঃপর পুনরায় হিসাব-নিকাশের জন্য জীবিত করবেন। এসকল কাজে তিনি একক, অন্য কারো হাত নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদেরকে প্রশ্নাকারে জিজ্ঞাসা করছেন: তোমাদের মা‘বূদেরা এসবের কোন একটি কাজ করতে পারবে? না, কখনো পারবে না। অতএব এরূপ অক্ষম মা‘বূদ আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার হবে তা থেকে তিনি পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে। অতএব যিনি এত সব জিনিসের ওপর ক্ষমতাবান তিনিই প্রভু এবং তিনিই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য, অন্য কেউ নয়। সুতরাং যারা অক্ষম মা‘বূদ তারা কখনো উপাসনা পাওয়ার যোগ্য হতে পারে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেককে তার যথাযথ প্রাপ্য প্রদান করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
২. বেশি পাওয়ার আশায় দান করা যাবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য দান করতে হবে।
৩. সকল কিছুর ওপর একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমতাবান, অন্য কেউ নয়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা তার রিযক প্রশস্ত করেন অথবা সীমিত করেন? তিনিই মালিক মুখতার। তিনি স্বীয় কৌশল অনুযায়ী দুনিয়াকে সাজিয়েছেন। তিনি কাউকে প্রচুর রিযক দান করেন এবং কাউকে অভাব-অনটনে রাখেন। কেউ অভাবের জীবন বয়ে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, আবার কেউ প্রাচুর্যের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে অবশ্যই মুমিনদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
# ৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার ও সম্পর্ক যুক্ত রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। মিসকীন তাকে বলা হয় যার কাছে কিছু না কিছু থাকে। কিন্তু তা তার প্রয়োজনের পক্ষে যথেষ্ট হয় না। তাদের সাথেও সদ্ব্যবহারের ও তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শনের আদেশ করা হয়েছে। যে মুসাফির বিদেশে গিয়ে খরচ পরিমাণ পয়সার অভাবে পড়েছে তার প্রতিও দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এগুলো তার জন্যে উত্তম কাজ যে আশা পোষণ করে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ লাভ ঘটবে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জন্যে এর চেয়ে বড় নিয়ামত আর কিছুই নেই। এ ধরনের লোকই দুনিয়া ও আখিরাতে নাজাত পাবে।
দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), যহহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন লোক এ নিয়ত করে দান করে যে, লোকেরা তাকে তার চেয়ে বেশী দান করবে, এ নিয়তে দান করা জায়েয হলেও তাতে তার কোন সওয়াব হবে না। আল্লাহ তা’আলার কাছে তার জন্যে এর কোনই বিনিময় নেই। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে এর থেকেও নিষেধ করেছেন।
এ অর্থে এ আদেশ রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর জন্যেই নির্দিষ্ট হবে। যহহাক (রঃ) আল্লাহ তা’আলার উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “বেশী প্রাপ্তির নিয়তে কারো প্রতি অনুগ্রহ করো না।” (৭৪:৬)। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, সুদ দুই প্রকারের রয়েছে। এক হলো ব্যবসায় সুদ। এটা তো হারাম। দ্বিতীয় সুদ হলো এই যে, বেশী পাওয়ার নিয়তে কাউকে কিছু দান করা। এটা বৈধ। অতঃপর তিনি (আরবি) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন এবং বলেন যে, আল্লাহ তা’আলার কাছে যাকাত আদায়ের সওয়াব তো আছেই। যাকাত প্রদানকারীকে খুবই বরকত দেয়া হয়। এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো তা-ই বৃদ্ধি পায় ও তারাই সমৃদ্ধশালী।” অর্থাৎ তাদের জন্যে সওয়াব ও প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছেঃ “হালাল উপার্জন দ্বারা একটি মাত্র খেজর সাদকা করা হলে আল্লাহ রাহমানুর রাহীম স্বীয় দক্ষিণ হস্তে তা গ্রহণ করেন এবং তা এমনভাবে প্রতিপালন করেন ও বাড়িয়ে দেন, যেমনভাবে তোমাদের কেউ ঘোড়া বা উটের বাচ্চা প্রতিপালন করে থাকে, এমনকি শেষ পর্যন্ত একটি খেজুর উহুদ পাহাড় অপেক্ষাও বড় হয়ে যায়।”
আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, আহারদাতা। মানুষ মায়ের পেট হতে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় উলঙ্গ, অজ্ঞ, শ্রবণশক্তিহীন, দৃষ্টিশক্তিহীন, শারীরিক শক্তিহীন অবস্থায় থাকে। আল্লাহ তাআলা তাকে এ সবকিছু দান করেন। ধন-দৌলত দেন, মালিকানা দেন, উপার্জনক্ষম করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করার বুদ্ধি দান করেন। মোটকথা, অসংখ্য নিয়ামত দান করেন।
হযরত খালেদ (রাঃ)-এর দুই পুত্র হযরত হাব্বাহ (রাঃ) ও হযরত সাওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তারা বলেন, আমরা একদা নবী (সঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। ঐ সময় তিনি কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা তাঁকে তাঁর কাজে সাহায্য করলাম। তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো, তোমরা রিযক থেকে নিরাশ হয়ো না যে পর্যন্ত তোমাদের মাথা নড়তে থাকে (অর্থাৎ তোমরা জীবিত থাকো)। মানুষ উলঙ্গ ও অভুক্ত অবস্থায় দুনিয়ায় আসে। একটি ছাল বা বাকলও তার পরনে থাকে না। কিন্তু মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাকে রিযিক দান করেন।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তিনি এই জীবনের অবসানের পর তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত করবেন। তোমাদের দেব-দেবীগুলোর এমন কেউ আছে কি, যে এসবের কোন একটিও করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান। তাঁর মহান পবিত্রতম সত্তা এসব হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তাঁর শরীক হালে এ হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। অথবা তার সমকক্ষ কেউ হালে, তার সন্তানাদি ও পিতা-মাতা থাক, তা হতে তিনি বহু ঊর্ধে। তিনি একক, তিনি অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত। তার সমকক্ষ কেউই নেই।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1033)
[Prohibition of Riba :-]
www.motaher21.net
Sura:30
Para:21
Sura: Ar-Roum
Ayat: – 37-40
30:37
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳۷﴾
Do they not see that Allah extends provision for whom He wills and restricts [it]? Indeed, in that are signs for a people who believe.
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاء وَيَقْدِرُ
Do they not see that Allah expands the provision for whom He wills and straitens (it for whom He wills).
He is the One Who is controlling and doing that, by His wisdom and justice, so He expands the provision for some people and restricts it for some.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّقَوْمٍ يُوْمِنُونَ
Verily, in that are indeed signs for a people who believe
30:38
فَاٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّہٗ وَ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ ابۡنَالسَّبِیۡلِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَ اللّٰہِ ۫ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۸﴾
So give the relative his right, as well as the needy and the traveler. That is best for those who desire the countenance of Allah, and it is they who will be the successful.
The Command to uphold the Ties of Kinship and the Prohibition of Riba Allah commands giving:
Allah says:
فَأتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ
So, give to the kindred his due,
his due of respect and upholding the ties of kinship.
وَالْمِسْكِينَ
and to Al-Miskin,
the one who has nothing to spend on his needs, or he has something but it is not enough.
وَابْنَ السَّبِيلِ
and to the wayfarer.
the traveler who is in need of money and other things during his journey.
ذَلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ
That is best for those who seek Allah’s Face;
meaning; to look upon Him on the Day of Resurrection, which is the ultimate aim.
وَأُوْلَيِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
and it is they who will be successful.
means, in this world and the Hereafter.
Then Allah says
30:39
وَ مَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ رِّبًا لِّیَرۡبُوَا۠ فِیۡۤ اَمۡوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرۡبُوۡا عِنۡدَ اللّٰہِ ۚ وَ مَاۤ اٰتَیۡتُمۡ مِّنۡ زَکٰوۃٍ تُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَ اللّٰہِ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُضۡعِفُوۡنَ ﴿۳۹﴾
And whatever you give for interest to increase within the wealth of people will not increase with Allah . But what you give in zakah, desiring the countenance of Allah – those are the multipliers.
وَمَا اتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَ يَرْبُو عِندَ اللَّهِ
And that which you give in Riba, in order that it may increase from other people’s property, has no increase with Allah;
This means, that which is given as a gift to others in the hope that they will give back more than they were given. There is no reward for this with Allah.
This is how this Ayah was interpreted by Ibn Abbas, Mujahid, Ad-Dahhak, Qatadah, Ikrimah, Muhammad bin Ka`b and Ash-Sha`bi.
Allah says:
وَمَا اتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَيِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ
but that which you give in Zakah seeking Allah’s Face, then those they shall have manifold increase.
Those are the ones for whom Allah will multiply the reward.
It was reported in the Sahih:
وَمَا تَصَدَّقَ أَحَدٌ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ إِلاَّ أَخَذَهَا الرَّحْمَنُ بِيَمِينِهِ فَيُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهَا كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ فَصِيلَهُ حَتَّى تَصِيرَ التَّمْرَةُ أَعْظَمَ مِنْ أُحُد
No person gives in charity the equivalent of a date which was earned in a lawful manner, but the Most Merciful takes it in His Right Hand and takes care of it for its owner, just as any one of you takes care of his foal or young camel, until the date becomes the size of Mount Uhud.
Creation, Provision, Life and Death are all in the Hand of Allah
Allah says
30:40
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ ثُمَّ رَزَقَکُمۡ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ ؕ ہَلۡ مِنۡ شُرَکَآئِکُمۡ مَّنۡ یَّفۡعَلُ مِنۡ ذٰلِکُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ سُبۡحٰنَہٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿٪۴۰﴾
Allah is the one who created you, then provided for you, then will cause you to die, and then will give you life. Are there any of your “partners” who does anything of that? Exalted is He and high above what they associate with Him.
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ
Allah is He Who created you, then provided food for you,
means, He is the Creator and Provider.
He brings man forth from his mother’s womb naked and knowing nothing, not able to see or hear, and having no strength. Then He provides him with all these things, giving him household effects, clothing, wealth, possessions and earnings.
ثُمَّ يُمِيتُكُمْ
then will cause you to die,
means, after this life.
ثُمَّ يُحْيِيكُمْ
then (again) He will give you life.
means, on the Day of Resurrection.
هَلْ مِن شُرَكَايِكُم
Is there any of your partners,
means, those whom you worship instead of Allah,
مَّن يَفْعَلُ مِن ذَلِكُم مِّن شَيْءٍ
that do anything of that,
meaning, none of them are able to do any of that. But Allah is the One Who is Independent in His powers of creation, provision, and giving life and death. Then He will resurrect His creation on the Day of Resurrection. This is why, after all this He says:
سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
Glory be to Him! And Exalted be He above all that they associate.
meaning, exalted and sanctified and glorified be He far above having any partner, peer, equal, son or father, for He is the One, the Unique, the Self-Sufficient Master, Who begets not nor was He begotten, and there is none comparable unto Him
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran