(বই#১০৭২) [*কুরআন জীবিতদের জন্যই নাযিল হয়েছে:-] www.motaher21.net সূরা:- ৩৬:ইয়া-সীন পারা:২৩ ৬৮-৮৩ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৭২)
[*কুরআন জীবিতদের জন্যই নাযিল হয়েছে:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩৬:ইয়া-সীন
পারা:২৩
৬৮-৮৩ নং আয়াত:-
ইয়া-সীন:৬৮
وَ مَنۡ نُّعَمِّرۡہُ نُنَکِّسۡہُ فِی الۡخَلۡقِ ؕ اَفَلَا یَعۡقِلُوۡنَ ﴿۶۸﴾
আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে তো জরাগ্রস্ত করে দিই।তবুও কি ওরা বোঝে না?
ইয়া-সীন:৬৯
وَ مَا عَلَّمۡنٰہُ الشِّعۡرَ وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَہٗ ؕ اِنۡ ہُوَ اِلَّا ذِکۡرٌ وَّ قُرۡاٰنٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۙ۶۹﴾
আমি তাকে (রসূলকে) কবিতা শিখাইনি এবং এ তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন;
ইয়া-সীন:৭০
لِّیُنۡذِرَ مَنۡ کَانَ حَیًّا وَّ یَحِقَّ الۡقَوۡلُ عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۷۰﴾
যাতে সে প্রত্যেক জীবিত ব্যক্তিকে সতর্ক করে দিতে পারে এবং অস্বীকারকারীদের ওপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
ইয়া-সীন:৭১
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّا خَلَقۡنَا لَہُمۡ مِّمَّا عَمِلَتۡ اَیۡدِیۡنَاۤ اَنۡعَامًا فَہُمۡ لَہَا مٰلِکُوۡنَ ﴿۷۱﴾
ওরা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি নিজ হাতে যা সৃষ্টি করেছি তার মধ্যে ওদের জন্য সৃষ্টি করেছি পশু এবং ওরাই এগুলির মালিক?
ইয়া-সীন:৭২
وَ ذَلَّلۡنٰہَا لَہُمۡ فَمِنۡہَا رَکُوۡبُہُمۡ وَ مِنۡہَا یَاۡکُلُوۡنَ ﴿۷۲﴾
এবং আমি এগুলিকে ওদের বশীভূত করে দিয়েছি। এগুলির কিছু ওদের সওয়ারী এবং কিছু ওদের খাদ্য।
ইয়া-সীন:৭৩
وَ لَہُمۡ فِیۡہَا مَنَافِعُ وَ مَشَارِبُ ؕ اَفَلَا یَشۡکُرُوۡنَ ﴿۷۳﴾
ওদের জন্য এগুলিতে বহু উপকারিতা আছে; আছে পানীয় বস্তু। তবুও কি ওরা কৃতজ্ঞ হবে না?
ইয়া-সীন:৭৪
وَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اٰلِہَۃً لَّعَلَّہُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿ؕ۷۴﴾
এ সবকিছু সত্ত্বেও এরা আল্লাহ‌কে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে এবং এদেরকে সাহায্য করা হবে এ আশা করছে।
ইয়া-সীন:৭৫
لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ نَصۡرَہُمۡ ۙ وَ ہُمۡ لَہُمۡ جُنۡدٌ مُّحۡضَرُوۡنَ ﴿۷۵﴾
তারা এদের কোন সাহায্য করতে পারে না বরং উল্টো এরা তাদের জন্য সদা প্রস্তুত সৈন্য হয়ে বিরাজ করছে।
ইয়া-সীন:৭৬
فَلَا یَحۡزُنۡکَ قَوۡلُہُمۡ ۘ اِنَّا نَعۡلَمُ مَا یُسِرُّوۡنَ وَ مَا یُعۡلِنُوۡنَ ﴿۷۶﴾
অতএব ওদের কথা তোমাকে যেন কষ্ট না দেয়। আমি তো জানি যা ওরা গোপন করে এবং যা ওরা ব্যক্ত করে।
ইয়া-সীন:৭৭
اَوَ لَمۡ یَرَ الۡاِنۡسَانُ اَنَّا خَلَقۡنٰہُ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ فَاِذَا ہُوَ خَصِیۡمٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۷۷﴾
মানুষ কি দেখে না যে, আমরা তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী।
ইয়া-সীন:৭৮
وَ ضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّ نَسِیَ خَلۡقَہٗ ؕ قَالَ مَنۡ یُّحۡیِ الۡعِظَامَ وَ ہِیَ رَمِیۡمٌ ﴿۷۸﴾
মানুষ আমার ব্যাপারে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়; এবং বলে, অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে; যখন তা পচে-গলে যাবে?
ইয়া-সীন:৭৯
قُلۡ یُحۡیِیۡہَا الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَہَاۤ اَوَّلَ مَرَّۃٍ ؕ وَ ہُوَ بِکُلِّ خَلۡقٍ عَلِیۡمُۨ ﴿ۙ۷۹﴾
বল, তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেক সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।
ইয়া-সীন:৮০
الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنَ الشَّجَرِ الۡاَخۡضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنۡتُمۡ مِّنۡہُ تُوۡقِدُوۡنَ ﴿۸۰﴾
তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপাদন করেন, ফলে তোমরা তা থেকে আগুন প্রজ্বলিত কর।
ইয়া-সীন:৮১
اَوَ لَیۡسَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِقٰدِرٍ عَلٰۤی اَنۡ یَّخۡلُقَ مِثۡلَہُمۡ ؕ؃ بَلٰی ٭ وَ ہُوَ الۡخَلّٰقُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۸۱﴾
যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি ওদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? অবশ্যই। আর তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।
ইয়া-সীন:৮২
اِنَّمَاۤ اَمۡرُہٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیۡئًا اَنۡ یَّقُوۡلَ لَہٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ ﴿۸۲﴾
তাঁর ব্যাপার তো এই যে, তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি কেবল বলেন, ‘হও’; ফলে তা হয়ে যায়।
ইয়া-সীন:৮৩
فَسُبۡحٰنَ الَّذِیۡ بِیَدِہٖ مَلَکُوۡتُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ اِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿٪۸۳﴾
অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যাঁর হাতেই প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব; আর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে ।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৬৮-৭০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আমি তাদের মধ্য থেকে যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি তার স্বাভাবিক গঠনের অবনতি ঘটাই। অর্থাৎ মানুষ শিশু অবস্থায় যেমন তার কোন জ্ঞান থাকে না অনুরূপ সে যখন জীবনের শেষ বেলায় বৃদ্ধ হয় তখন শিশুকালের মতই তারা জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে সূরা নাহ্ল-এর ৭০ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল কাফির-মুশরিকদের কথার প্রত্যুত্তর দিচ্ছেন যারা বলত, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন কবি। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আমি তাকে কাব্য শিখাইনি অর্থাৎ সে কবি নয় এবং কবিতা রচনা করা তার পক্ষে শোভনীয় নয়। শুধুমাত্র তাকে স্পষ্ট কুরআন দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে যেন তিনি জীবিত লোকদেরকে সতর্ক করতে পারেন। অর্থাৎ যাদের অন্তর সত্যাগ্রহী তাদেরকে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(وَأُوْحِيَ إِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِأُنْذِرَكُمْ بِه۪ وَمَنْ….)

“এবং এ কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা আমি সতর্ক করি।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৯)

আর যারা এ সতর্কবাণী শুনার পরও সতর্ক হয় না বরং অবাধ্য থেকেই যায় তাদের জন্যই জাহান্নামের শাস্তি বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(وَمَنْ يَّكْفُرْ بِه۪ مِنَ الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُه۫)

“অন্যান্য দলের যারা একে অস্বীকার করে, অগ্নিই তাদের প্রতিশ্র“ত স্থান।” (সূরা হূদ ১১ : ১৭)

অতএব যারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কুরআন মূলত জীবিতদের জন্যই নাযিল হয়েছে, অতএব মৃতদের পাশে কুরআন পাঠে তাদের কোনই উপকার হবে না।
২. সূরা ইয়াসীনের ফযীলত রয়েছে বলে তা মৃতদের পাশে পাঠ করা হয় যা সঠিক নয়।
৭১-৭৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

(اَوَ لَمْ یَرَ الْاِنْسَانُ….)

-এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সওয়ারের বাহন দিয়ে মানুষের প্রতি অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলোকে মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। সুতরাং এসব নিয়ামত পেয়ে মানুষের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এগুলোর কিছু মানুষ ভক্ষণ করে এবং কিছু বাহন হিসেবে ব্যবহার করে। এ সম্পর্কে সূরা নাহ্ল-এর প্রথম দিকে আলোচনা করা হয়েছে।

(لَا یَسْتَطِیْعُوْنَ نَصْرَھُمْ…..)

এখানে মক্কার কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যে সকল মূর্তির পূজা করত তা মূলত বাতিল ও ভ্রান্ত, এসব মূর্তি তাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখে না, তারা কোন প্রকার সাহায্য করতেও সক্ষম নয় সে কথাই আলোচনা করা হয়েছে এবং সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনাও প্রদান করছেন যে, তিনি যেন এ সকল বাতিল পন্থীদের কথায় মন খারাপ না করেন। এ সকল বিষয় সম্পর্কে পূর্বে একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা প্রত্যেকের জন্য জরুরী।
২. সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের একমাত্র মালিক আল্লাহ।
৭৭-৮৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

(اَوَ لَمْ یَرَ الْاِنْسَانُ… فَاِذَآ اَنْتُمْ مِّنْھُ تُوْقِدُوْنَ)

যারা বস্তুবাদীতে বিশ্বাসী, আখিরাতকে অস্বীকার করে তাদের সংশয় ও ভ্রান্ত বিশ্বাস দূরীকরণে এ আয়াতগুলোই যথেষ্ট। মানুষকে চিন্তা করার উৎসাহ দিয়ে প্রশ্নাকারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? অর্থাৎ প্রথম অবস্থায় সে দুর্বল পানি ছাড়া কিছুই ছিল না, তারপর ক্রমান্বয়ে বড় হয়েছে। অতঃপর সে হয়ে পড়ল প্রকাশ্য বিতর্ককারী। তার জানা থাকা উচিত, যিনি প্রথমবার এ সামান্য পানি থেকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তিনি পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম। এ সম্পর্কে সূরা নাহলের ৪ ও ৮৯ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তিনি সবুজ বৃক্ষ হতে অগ্নি উৎপাদন করেন এবং মানুষ ওটা দ্বারা আগুন প্রজ্জ্বলিত করে। বলা হয়, আরবে দুটি এমন গাছ আছে যার নাম মার্খ ও আফার। এ গাছের দুটি ডাল একত্রিত করে ঘষা দিলে তা থেকে আগুন বের হয়। এখানে সবুজ বৃক্ষ থেকে অগ্নি উৎপাদন বলে ঐ গাছের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।।

(اَوَ لَیْسَ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ… کُلِّ شَیْءٍ وَّاِلَیْھِ تُرْجَعُوْنَ)

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা নিজের ব্যাপক ও সীমাহীন ক্ষমতার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি মানবজাতিকে প্রশ্ন করে বলছেন : যিনি আকাশসমূহ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি এরূপ আরো কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম নন?

আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(لَخَلْقُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ أَكْبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ وَلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ)

“মানব সৃষ্টি অপেক্ষা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি অবশ্যই অনেক বড় কাজ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।” (সূরা মু’মিন ৪০ : ৫৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللّٰهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلٰٓي أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰي ط بَلٰٓي إِنَّه۫ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)‏

“তারা কি এটুকুও বোঝে না, যে আল্লাহ জমিন ও আসমান সৃষ্টি করলেন এবং এগুলো সৃষ্টি করতে তিনি ক্লান্ত হননি, সেই আল্লাহ মৃত্যুকে অবশ্যই জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। কেন নয়? নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর ওপর শক্তিশালী।” (সূরা আহকাফ ৪৬ : ৩৩)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন, হও, আর তা হয়ে যায়। এ সম্পর্কে সূরা নাহ্ল-এর ৪০ নম্বর আয়াতসহ সূরা আল বাক্বারাহ্-তেও আলোচনা করা হয়েছে।

সুতরাং পবিত্রতা বর্ণনা করছি সে প্রতিপালকের যাঁর হাতেই সার্বভৌম ক্ষমতা আর তাঁর দিকেই সকলকে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(قُلْ مَنْۭ بِيَدِه۪ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ يُجِيْرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)

“জিজ্ঞাসা কর‎, ‘সকল কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর ওপর আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জান?’’ (সূরা মু’মিনূন ২৩ : ৮৮)

হাদীসে এসেছে, হুযাইফাহ্ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সাত রাক‘আতে সাতটি লম্বা সূরা পাঠ করলেন। অতঃপর যখন তিনি রুকূ‘ হতে মাথা উঠালেন তখন,

سَمِعَ اللّٰهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

এ দু‘আটি পাঠ করেন এবং এ বাক্যগুলো

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ ذِي الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظْمَةِ

“সেই আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা যিনি যাবতীয় ক্ষমতা, দাপট, বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের মালিক” পাঠ করেন। (মুসনাদ আহমাদ ৫ : ৩৮৮)

সুতরাং সকল কিছুর রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে। তিনি ব্যতীত এগুলোর মালিক ও পরিচালনাকারী আর কেউ নেই, যে এগুলোর ওপর রাজত্ব করবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. মানুষ সহজেই যে-কোন অপরাধের ব্যাপারে আপত্তি পেশ করে থাকে।
২. মানুষ মরে গলে হাড়ে পরিণত হবার পরও তাকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
৩. সমস্ত কিছুর মালিক আল্লাহ তা‘আলা এমনকি আগুনেরও। অন্য কেউ কোন কিছুর মালিক ও স্রষ্টা হতে পারে না। ইবাদত পাওয়ার হকদার তিনিই।
৪. সকলকে মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলার নিকটই ফিরে যেতে হবে।
৫. আল্লাহ তা‘আলা কোন কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলে শুধুমাত্র ‘হও’ বলেন, আর তা হয়ে যায়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা ইবনে আদম সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, যেমন যেমন তাদের যৌবনে ভাটা পড়তে থাকে তেমন তেমন তাদের বার্ধক্য দর্বলতা ও শক্তিহীনতা এসে পড়ে। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল রূপে, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি। করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।”(৩০:৫৪) অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অথাৎ “তোমাদের মধ্যে এমন লোক আছে যাকে খুব বেশী বয়সের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয় (সে অতি বার্ধক্যে পদার্পণ করে), যাতে সে জ্ঞানবান হওয়ার পরে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে।”(২২:৫) সুতরাং আয়াতের ভাবার্থ এই যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী ও স্থানান্তরের জায়গা। এ দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। তবুও কি এ লোকগুলো এ জ্ঞান রাখে না যে, তারা নিজেদের শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্যের উপর চিন্তা-ভাবনা করে এবং হৃদয়ঙ্গম করে যে, এই দুনিয়ার পরে আখিরাত আসবে এবং এই জীবনের পরে আবার নবজীবন লাভ করবে?

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি রাসূল (সঃ)-কে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং কাব্য রচনা তাঁর পক্ষে শোভনীয়ও নয়। কবিতার প্রতি তাঁর ভালবাসা নেই এবং কোন আকর্ষণও নেই। এর প্রমাণ তার জীবনেই প্রকাশমান যে, তিনি কোন কবিতা পাঠ করলে তা সঠিকভাবে শেষ করতে পারতেন না এবং তাঁর পুরোপুরিভাবে তা মুখস্থ থাকতো না। হযরত শা’বী (রঃ) বলেন যে, আবদুল মুত্তালিবের বংশের প্রত্যেক নর ও নারী কবিতা বলতে পারতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) এটা হতে বহু দূরে ছিলেন।” (এটা ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্ন লিখিত কবিতাংশটিঃ (আরবী) এইরূপে পড়েন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেন:“হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কবিতাংশটি এরূপ নয়, বরং নিম্নরূপ হবেঃ (আরবী) অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) অথবা হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। যেহেতু আল্লাহ তা’আলা আপনার ব্যাপারে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয় নয়।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

ইমাম বায়হাকী (রঃ) স্বীয় দালায়েল’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আব্বাস ইবনে মিরদাস সালমী (রাঃ)-কে বলেনঃ “তুমিই তো (আরবী) এ কবিতাংশটি বলেছো?” উত্তরে হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস (রাঃ) বলেনঃ “এটা (আরবী)-এইরূপ হবে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সবই সমান।” অর্থাৎ অর্থের দিক দিয়ে দুটো একই। তার উপর আল্লাহর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

সুহায়লী (রঃ) আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর এভাবে নাম আগে পাছে করার এক বিস্ময়কর কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আকরাকে পূর্বে এবং উইয়াইনাকে পরে এ জন্যেই উল্লেখ করেছেন যে, উইয়াইনা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর খিলাফের যুগে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আকরা ইসলামের উপর অটল ছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

উমুভী (রঃ) তাঁর ‘মাগাযী’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, বদরের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদর যুদ্ধে নিহত কাফিরদের মাঝে চক্কর দিতে দিতে মুখে উচ্চারণ করছিলেনঃ (আরবী) তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) কবিতার পংক্তিটি পূর্ণ করতে গিয়ে বলেনঃ (আরবী) এটা কোন একজন আরবীয় কবির কবিতাংশ। এটা দিওয়ানে হামাসার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কখনো কখনো কবি তুরফার নিম্নের পংক্তিটি পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এমন ব্যক্তি তোমার নিকট সংবাদ বহন করবে যাকে তুমি ভ্রমণ সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করনি।” এর প্রথম মিসরাটি হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “যামানা অতি শীঘ্র অজ্ঞাত বিষয় তোমার নিকট প্রকাশ করে দিবে।”

হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় ? “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবিতা বলতেন কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ তাঁর কবিতার প্রতি সবচেয়ে বেশী ঘৃণা ছিল। হ্যা, তবে তিনি কখনো কখনো বানু কায়েসের কবিতা পাঠ করতেন। কিন্তু তাতেও তিনি ভুল করে বসতেন। আগে পিছে হয়ে যেতো। হযরত আবু বকর (রাঃ) তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরূপ হবে না বরং এইরূপ হবে।

তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “আমি কবিও নই এবং কবিতা রচনা করা আমার জন্যে শোভনীয়ও নয়।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবিতা পড়তেন কি-না এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ না, তবে কবি তুরফার নিম্নের কবিতাংশটি তিনি পড়তেনঃ (আরবী) কিন্তু তিনি (আরবী) এইরূপ পড়েন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ “এটা এই রূপ নয়।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি কবি নই এবং কবিতা রচনা আমার জন্যে শোভনীয়ও নয়।”

সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) খন্দক খননের সময় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)-এর কবিতা পাঠ করেছিলেন। তবে এটা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, তিনি এ কবিতা সাহাবীদের (রাঃ) সাথে পাঠ করেছিলেন। কবিতাটি নিম্নরূপঃ (আরবী) রাসূলুল্লাহ (সঃ) শব্দটি খুব টান দিয়ে উচ্চ স্বরে পড়তেন।

কবিতাটির আনুবাদঃ “কোন চিন্তা নেই, যদি আপনি না থাকতেন তবে আমরা সুপথ প্রাপ্ত হতাম না। আর সাদকাও করতাম না এবং নামাযও পড়তাম না। সুতরাং (হে আল্লাহ!) আমাদের উপর শান্তি নাযিল করুন এবং যদি আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্মুখীন হই তবে আমাদের পাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে অটল ও স্থির রাখুন! এ লোকগুলোই আমাদের উপর হঠকারিতা করেছে, তবে যখন তারা ফিত্নার ইচ্ছা করে তখন আমরা তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করি। অনুরূপভাবে এটাও প্রমাণিত আছে যে, হুনায়েনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) পাঠ করেছিলেনঃ (আরবী)অর্থাৎ “আমি নবী, এটা মিথ্যা নয় এবং আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান (সন্তানের সন্তান বা বংশধর)।”

এ ব্যাপারে এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, ঘটনাক্রমে এমন একটা কথা তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে যা কবিতার ওজনে মিলে গেছে। কিন্তু ইচ্ছা করে তিনি কবিতা বলেননি।

হযরত জুনদুব ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে একটি গুহায় ছিলাম এমতাবস্থায় তাঁর একটি অঙ্গুলী যখমী হয়। তখন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাঃ “তুমি একটি অঙ্গুলী মাত্র এবং তুমি আল্লাহর পথে রক্তাক্ত হয়েছে।” এটাও ঘটনাক্রমে হয়েছে, ইচ্ছাপূর্বক নয়। অনুরূপভাবে (আরবী)-এর তাফসীরে একটি হাদীস আসছে, তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করেন তবে তো আমাদের পাপরাশিই ক্ষমা করবেন, অন্যথায় আপনার কোন বান্দাই তো ছোট ছোট পাপ ও পদস্থলন হতে মুক্ত ও পবিত্র নয়। সুতরাং এ সবগুলো এ আয়াতের বিপরীত নয়। কেননা, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা কবিতা শিক্ষা নয়। বরং এটা তো শুধু এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। এর কাছে বাতিল আসতে পারে না। কুরআন কারীমের এই পবিত্র ছন্দ কবিতা হতে বহু দূরে রয়েছেন এবং এটা হতে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র। এমনিভাবে এ কুরআন গণক এবং যাদুকরের কথা হতেও পুরোপুরিভাবে পবিত্র। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্বভাব ও প্রকৃতি এসব হতে ছিল সম্পূর্ণ নিষ্কলংক।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তিনি বলতে শুনেছেনঃ “আমাকে যা দেয়া হয়েছে তার কাছে আমি বিষের প্রতিষেধক পান করা, তাবীয লটকানো এবং কবিতা রচনাকরণকে মোটেই গ্রাহ্য করি না (কুরআন কারীমের কাছে এগুলো একেবারে মূল্যহীন ও তুচ্ছ)।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, কবিতার প্রতি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রকৃতিগতভাবে ঘৃণা ছিল। দুআয় তিনি ব্যাপক অর্থবোধক কালেমা পছন্দ করতেন এবং এ ছাড়া অন্যগুলো ছেড়ে দিতেন। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের কারো পেট পূজে পরিপূর্ণ হওয়া তার জন্যে কবিতায় তার পেট পূর্ণ হওয়া অপেক্ষা উত্তম।” (ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন:“যে ব্যক্তি ইশার নামাযের পর কবিতার একটি ছন্দ রচনা করে তার ঐ রাত্রির নামায ককূল হয় না।”

তবে এখানে এটা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, কবিতার শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। মুশরিকদের নিন্দে করে কবিতা রচনা করা শরীয়ত সম্মত। হযরত হাসসান ইবনে সাবিত (রাঃ), হযরত কা’ব ইবনে মালিক (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) প্রমুখ বড় বড় মর্যাদাবান সাহাবীগণ মুশরিকদের নিন্দা করে কবিতা রচনা করেছেন। কতকগুলো কবিতা হয় উপদেশ, আদব ও হিকমতে পরিপূর্ণ, যেমন অজ্ঞতার যুগের কবিদের কবিতার মধ্যে পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, উমাইয়া ইবনে সালাতের কবিতার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মন্তব্য করেনঃ “তার কবিতাগুলো তো ঈমান এনেছে। কিন্তু তার অন্তর কাফিরই রয়ে গেছে।”

একজন সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে উমাইয়ার একশটি কবিতা শুনিয়ে দেন। প্রত্যেকটি কবিতার পরেই তিনি বলেনঃ “আরো বলো।”

সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কতকগুলো বর্ণনা যাদুর মত কাজ করে আর কতকগুলো কবিতা হয় হিকমতে পরিপূর্ণ।”

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি রাসূল (সঃ)-কে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয় নয়। এটা তো শুধু এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। যে ব্যক্তি এ সম্পর্কে সামান্য পরিমাণও চিন্তা করবে তার কাছেই এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। এটা এ জন্যেই যে, যেন তিনি দুনিয়ায় জীবিতাবস্থায় বিদ্যমান লোকদেরকে সতর্ক করতে পারেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এটা পৌঁছবে তাদেরকে সতর্ক করতে পারি।” (৬:১৯) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “দলসমূহের মধ্যে যারাই এটাকে মানবে না তারাই জাহান্নামের যোগ্য।”(১১:১৭) এই কুরআন এবং নবী (সঃ)-এর ফরমান তাদের জন্যে ক্রিয়াশীল ও ফলদায়ক হবে যাদের অন্তর জীবিত এবং ভিতর পরিষ্কার। যাদের জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টি রয়েছে। আর শাস্তির কথা তো কাফিরদের উপর বাস্তবায়িত হয়েছে। অতএব, কুরআন কারীম মুমিনদের জন্যে রহমত স্বরূপ এবং কাফিরদের উপর হুজ্জত স্বরূপ।
৭১-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় ইনআম ও ইহসানের বর্ণনা দিয়েছেন যে, তিনি নিজেই এই চতুষ্পদ জন্তুগুলো সৃষ্টি করেছেন ও মানুষের অধিকারভুক্ত করে দিয়েছেন। একটি ছোট ছেলেও উটের লাগাম ধরে তাকে থামিয়ে দিতে পারে। উটের মত শক্তিশালী জন্তুর একশ সংখ্যার একটি দলকে ঐ ছোট ছেলেটি অনায়াসে হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ এগুলোর কতককে মানুষ তাদের বাহন করে থাকে। তাদের পিঠে আরোহণ করে তারা বহু দূরের পথ অতিক্রম করে এবং তাদের আসবাবপত্রও তাদের পিঠের উপর চাপিয়ে থাকে। আর কতকগুলোর গোশত তারা ভক্ষণ করে। অতঃপর ওগুলোর পশম, চামড়া ইত্যাদি দ্বারা বহু উপকার লাভ করে থাকে। তারা এগুলোর দুধ পান করে। আবার ওগুলোর প্রস্রাবও ওষুধ রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো বহু উপকার তারা পায়। এর পরেও কি তাদের আল্লাহর এই নিয়ামতগুলোর জন্যে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত নয়? তাদের কি উচিত নয় যে, তারা শুধু এগুলোর সৃষ্টিকর্তারই ইবাদত করে? তাঁর একত্ববাদকে মেনে নেয়? এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকেও শরীক না করে?
৭৪-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের ঐ বাতিল আকীদাকে খণ্ডন করছেন যা তারা তাদের বাতিল মাবুদদের উপর রাখতো। তারা এই আকীদা বা বিশ্বাস রাখতো যে, আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা ইবাদত করছে তারা তাদের সাহায্য করবে। তারা তাদের তকদীরে বরকত আনয়ন করবে এবং তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তাদের এসব মা’রূদ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম নয়। তাদেরকে সাহায্য করা তো দূরের কথা, তারা নিজেদেরই কোন সাহায্য করতে পারে না। এমন কি এই প্রতিমাগুলো তাদের শত্রুদের আক্রমণ হতে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে না। কেউ এসে যদি তাদেরকে ভেঙ্গে চুরে ফেলে দেয় তবুও তারা তার কোনই ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। তারা তো কথা বলতেও পারে না। কোন বোধ শক্তিও তাদের নেই। এই প্রতিমাগুলো কিয়ামতের দিন একত্রিত জনগণের হিসাব গ্রহণের সময় নিজেদের উপাসকদের সামনে অত্যন্ত অসহায় ও নিরুপায় অবস্থায় বিদ্যমান থাকবে যাতে মুশরিকদের পুরোপুরি লাঞ্ছনা ও অপমান প্রকাশ পায়। আর তাদের উপর হুজ্জত পুরো হয়।

হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ প্রতিমাগুলো তো তাদের কোন প্রকারেরই সাহায্য করতে পারে না, তবুও এই নির্বোধ মুশরিকরা তাদের সামনে এমনভাবে বিদ্যমান থাকছে যে, যেন তারা কোন জীবন্ত সেনাবাহিনী! অথচ এগুলো তাদের কোন উপকারও করতে পারে না এবং কোন বিপদাপদ দূর করতে সক্ষম নয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও এই মুশরিকরা তাদের নামে জীবন দিচ্ছে। তারা এগুলোর বিরুদ্ধে কোন কথা শুনতেও চায় না বরং ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। আমি তো জানি যা তারা গোপন করে এবং যা তারা ব্যক্ত করে। সময় আসছে। খুঁটিনাটিভাবে আমি তাদেরকে প্রতিফল প্রদান করবো।
৭৭-৮০ নং আয়াতের তাফসীর:

মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), উরওয়া ইবনে যুবায়ের (রঃ), সুদ্দী (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, একদা অভিশপ্ত উবাই ইবনে খালফ একটি দুর্গন্ধময় পচা সড়া হাড় হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আসে। হাড়টির ক্ষুদ্রাংশগুলো বাতাসে উড়ছিল। এসে সে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেঃ “বল তো, এগুলোতে আল্লাহ পুনর্জীবন দান করবেন?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্য। আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ধ্বংস করবেন। এরপর তোমাকে তিনি পুনর্জীবিত করবেন এবং তোমার হাশর হবে জাহান্নামে। ঐ সময় এই সূরার শেষের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, সড়া হাড়টি নিয়ে আগমনকারী লোকটি ছিল আসী ইবনে ওয়ায়েল। আর একটি বর্ণনায় আছে যে, এটা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর ঘটনা। কিন্তু এতে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মক্কী সূরা। আর আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তো ছিল মদীনায়। যাই হোক, এ আয়াতগুলো সাধারণভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। (আরবী)-এর উপর যে আলিফ-লাম রয়েছে তা জিনসী। যে কেউই পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারী হবে তার জন্যেই এটা জবাব হবে। ভাবার্থ হলোঃ এ লোকগুলোর নিজেদের সৃষ্টির সূচনার প্রতি চিন্তা করা উচিত যে, তাদেরকে এক ঘৃণ্য ও তুচ্ছ শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এর পূর্বে তো তাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। এর পরেও মহামহিমান্বিত আল্লাহর অসীম ক্ষমতাকে অস্বীকার করার কি অর্থ হতে পারে? মহান আল্লাহ এ বিষয়টিকে আরো বহু আয়াতে বর্ণনা করেছেন। যেমন এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি (শুক্র) হতে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে।”(৭৭:২০-২১) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে।”(৬৭:২)

হযরত বিশর ইবনে জাহহাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় হস্তে থুথু ফেলেন। অতঃপর তিনি তাতে অঙ্গুলী রেখে বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে আদম সন্তান! তোমরা কি আমাকেও অপারগ ও শক্তিহীন করতে পার? আমি তোমাদেরকে এরূপ (থুথুর মত তুচ্ছ)। জিনিস হতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদেরকে ঠিক ঠাক করে দিয়েছি। তারপর তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে চলাফেরা করতে শুরু করেছে এবং ধন-সম্পদ জমা করতে ও দরিদ্রদেরকে সাহায্যদানে বিরত রাখতে চলেছে। অতঃপর প্রাণ যখন কণ্ঠাগত হয়েছে তখন বলতে শুরু করেছেঃ “এখন আমি আমার মাল আল্লাহর পথে সাদকা করছি। কিন্তু এখন সাদকা করার সময় কোথায়?” মোটকথা, নিকৃষ্ট শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্ট মানুষ যুক্তিবাদী হচ্ছে এবং পুনর্জীবনকে অস্বীকার করছে ও অসম্ভব বলছে। তারা এখন ঐ মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর শক্তিকে অস্বীকার করছে যিনি আসমান, যমীন এবং সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। যদি তারা চিন্তা করতো তবে এই আযীমুশশান মাখলুকের সৃষ্টি ছাড়াও নিজেদেরই জন্মলাভকে আল্লাহ তা’আলার দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করার ক্ষমতার এক বড় নিদর্শনরূপে পেতো। কিন্তু তার জ্ঞান চক্ষুর উপর তো পর্দা পড়ে গেছে।

মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বল- এই অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত উকবা ইবনে আমর (রাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ)-কে বলেনঃ “আপনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছেন এমন কোন হাদীস আমাদেরকে শুনিয়ে দিন।” তখন হযরত হুযাইফা (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “একটি লোকের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে সে তার ওয়ারিশদেরকে অসিয়ত করে যে, তারা যেন তার মৃত্যুর পর বহু কাঠ সংগ্রহ করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং তাতে তার মৃত দেহকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়। তারপর যেন ঐ ভষ্ম সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়। তার কথামত ওয়ারিশরা তাই করে। এরপর আল্লাহ তাআলা যখন তার ভঙ্গুলো একত্রিত করতঃ তাকে পুনর্জীবন দান করেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কেন এরূপ করেছিলে?” সে উত্তরে বলেঃ “আপনার ভয়ে (আমি এরূপ করেছিলাম। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। হযরত উকবা ইবনে আমর (রাঃ) তখন বলেনঃ “আমিও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এটা বলতে শুনেছি। পথ চলতে চলতে তিনি এটা বর্ণনা করেছিলেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাদের সহীহ গ্রন্থে এটা তাখরীজ করেছেন)

একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, লোকটি বলেছিলঃ “আমার ভষ্মগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিবে। কিছু বাতাসে উড়াবে এবং কিছু সমুদ্রে ভাসিয়ে দিবে।” সমুদ্রে যতগুলো ভষ্ম ছিল সমুদ্র ওগুলো আল্লাহর নির্দেশক্রমে জমা করে দেয় এবং অনুরূপভাবে বাতাসও তা জমা করে। অতঃপর আল্লাহ পাকের ফরমান হিসেবে লোকটি জীবিতাবস্থায় দাড়িয়ে যায় (শেষ পর্যন্ত)।

এরপর প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ স্বীয় ক্ষমতার আরো নিদর্শন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ হতে অগ্নি উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা দ্বারা প্রজ্বলিত কর। প্রথমে এ গাছ ঠাণ্ডা ও সিক্ত ছিল। অতঃপর আমি ওকে শুকিয়ে দিয়ে তা হতে অগ্নি উৎপাদন করেছি। সুতরাং আমার কাছে কোন কিছুই ভারী ও শক্ত নয়। সিক্তকে শুষ্ক করা, শুষ্ককে সিক্ত করা, জীবিতকে মৃত করা এবং মৃতকে জীবিত করা প্রভৃতি সবকিছুরই ক্ষমতা আমার আছে। একথাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা মিরখ ও ইফার গাছকে বুঝানো হয়েছে যা হিজাযে জন্মে। ওর সবুজ শাখাগুলোকে পরস্পর ঘর্ষণ করলে চকমকির মত আগুন বের হয়। যেমন আরবে একটি বিখ্যাত প্রবাদ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক গাছেই আগুন আছে এবং মিরখ ও ইফার মর্যাদা লাভ করেছে।” বিজ্ঞ ব্যক্তিদের উক্তি এই যে, আঙ্গুর গাছ ছাড়া সব গাছেই আগুন রয়েছে।
৮১-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা নিজের ব্যাপক ও সীমাহীন ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি আসমান এবং ওর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং যমীনকে ও ওর মধ্যকার সমস্ত বস্তুকেও তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যিনি এত বড় ক্ষমতার অধিকারী তিনি মানুষের মত ছোট মাখলুককে সৃষ্টি করতে অপারগ হবেন? এটা তো জ্ঞানেরও বিপরীত কথা। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা মানুষ সৃষ্টি করা হতে বহুগুণে বড় ও কঠিন।” (৪০-৫৭) এখানেও তিনি বলেনঃ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে কি সমর্থ নন? আর এতে যখন তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান তখন অবশ্যই তিনি তাদেরকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তার পক্ষে খুবই সহজ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা কি দেখে না যে, যে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে তিনি ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? হ্যা, নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।” (৪৬:৩৩)।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হ্যা, তিনি নিশ্চয়ই মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন শুধু ওকে বলেনঃ হও, ফলে ওটা হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন কিছুর ব্যাপারে তিনি একবারই মাত্র নির্দেশ দেন, বারবার নির্দেশ দেয়ার ও তাগীদ করার কোন প্রয়োজনই তাঁর হয় না।

হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পাপী, কিন্তু যাদেরকে আমি মাফ করি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। তোমাদের প্রত্যেকেই দরিদ্র, কিন্তু আমি যাদেরকে ধনবান করি। আমি বড় দানশীল এবং আমি বড় মর্যাদাবান। আমি যা ইচ্ছা করি তাই করে থাকি। আমার ইনআম বা পুরস্কারও একটা কালাম বা কথা এবং আমার আযাবও একটা কালাম। আমার ব্যাপার তো শুধু এই যে, যখন আমি কোন কিছুর ইচ্ছা করি তখন ওকে বলিঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

মহান আল্লাহ বলেনঃ অতএব মহান ও পবিত্র তিনি যার হাতে রয়েছে প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি বল- তিনি কে যার হাতে প্রত্যেক জিনিসের সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে?” (২৩:৮৮) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যার করায়ত্ব।” (৬৭:১) সুতরাং (আরবী) ও (আরবী) একই অর্থ। যেমন (আরবী) ও (আরবী) এবং (আরবী) ও -এর অর্থ একই। কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবী) দ্বারা দেহের জগত এবং দ্বারা রূহের জগতকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথমটিই সঠিক উক্তি এবং জমহর মুফাসসিরদেরও উক্তি এটাই।

হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে (তাহাজ্জুদের নামাযে) দাঁড়িয়ে যাই। তিনি রাক’আতগুলোতে সাতটি লম্বা সূরা পাঠ করেন। (আরবী) বলে তিনি রুকূ’ হতে মাথা উত্তোলন করেন এবং (আরবী) এ কালেমাগুলো পাঠ করেন। তাঁর রুকূ দাঁড়ানো অবস্থার মতই দীর্ঘ ছিল এবং সিজদাও ছিল রুকূ’র মতই দীর্ঘ। আমার তো পদদ্বয় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তিনি একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নামায পড়তে দেখেন। তিনি (আরবী) পড়ে সূরায়ে বাকারা সম্পূর্ণ পাঠ করেন এবং এরপর রুকূ’তে যান। রুকূতেও তিনি প্রায় দাঁড়ানোর মতই বিলম্ব করেন এবং (আরবী) পড়তে থাকেন। তারপর তিনি রুকূ’ হতে মাথা উঠান এবং প্রায় ঐ পরিমাণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন এবং (আরবী) পড়তে থাকেন। তারপর সিজদায় যান এবং সিজদাতেও প্রায় দাঁড়ানো অবস্থার সমপরিমাণ সময় পর্যন্ত পড়ে থাকেন এবং সিজদায় তিনি (আরবী) পড়তে থাকেন। অতঃপর তিনি সিজদা হতে মস্তক উত্তোলন করেন। তাঁর অভ্যাস ছিল এই যে, দুই সিজদার মাঝে ঐ সময় পর্যন্ত বসে থাকতেন যে সময়টা তিনি সিজদায় কাটাতেন। ঐ সময় তিনি (আরবী) (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন!) বলতেন। চার রাকআত নামায তিনি আদায় করেন। এই চার রাকআত নামাযে তিনি সূরায়ে বাকারা, সূরায়ে আলে ইমরান, সূরায়ে নিসা এবং সূরায়ে মায়েদাহ তিলাওয়াত করেন।” বর্ণনাকারী শু’বাহ (রাঃ)-এর সন্দেহ হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরায়ে মায়েদাহ অথবা সূরায়ে আনআম পাঠ করেছেন।” (এ মসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আউফ ইবনে মালিক আশজায়ী (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করি। তিনি সূরায়ে বাকারা তিলাওয়াত করেন। রহমতের বর্ণনা রয়েছে এরূপ প্রতিটি আয়াতে তিনি থেমে যেতেন এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট রহমত প্রার্থনা করতেন। তারপর তিনি রুকূ’ করেন এবং এটাও দাড়ানো অবস্থা অপেক্ষা কম সময়ের ছিল না। রুকূতে তিনি (আরবী) পাঠ করেন। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং ওটাও প্রায় দাঁড়ানো অবস্থার সমপরিমাণই ছিল এবং সিজদাতেও তিনি ওটাই পাঠ করেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতে তিনি সূরায়ে আলে-ইমরান পড়েন। এভাবেই তিনি এক এক রাকআতে এক একটি সূরা তিলাওয়াত করেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# আকৃতি বদলে দেয়ার মানে হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ‌ মানুষের অবস্থা শিশুদের মতো করে দেন। ঠিক শিশুদের মতোই তারা চলতে ফিরতে অক্ষম হয়ে পড়ে। অন্যেরা তাদেরকে উঠাতে বসাতে ও সহায়তা দিয়ে চলাফেরা করাতে থাকে। অন্যেরা তাদেরকে পানাহার করায়। তারা নিজেদের কাপড়ে ও বিছানায় পেশাব পায়খানা করে দেয়। বালকসুলভ কথা বলতে থাকে, যা শুনে লোকেরা হেসে ওঠে। মোটকথা যে ধরনের দুর্বলতার মধ্য দিয়ে তারা দুনিয়ার জীবন শুরু করেছিল, জীবন সায়াহ্নে প্রায় সেই একই অবস্থায় পৌঁছে যায়।
# কাফেররা তাওহীদ, আখেরাত, মৃত্যুপরের জীবন ও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে নবী ﷺ এর কথাকে নিছক কাব্য-কথা গণ্য করে নিজেরা তাকে গুরুত্বহীন করে দেবার যে প্রচেষ্টা চালাতো এখানে তারই জবাব দেয়া হয়েছে।
# জীবন বলতে চিন্তাশীল ও বিবেকবান মানুষ বুঝানো হয়েছে। যার অবস্থা পাথরের মতো নির্জীব ও নিষ্ক্রিয় নয়। আপনি তার সামনে যতই যুক্তি সহকারে হক ও বাতিলের পার্থক্য বর্ণনা করেন না কেন এবং যতই সহানুভূতি সহকারে তাকে উপদেশ দেন না কেন সে কিছুই শোনে না, বোঝে না এবং নিজের জায়গা থেকে একটুও নড়ে না।
# হাত শব্দটি আল্লাহ‌র জন্য রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এর অর্থ এ নয় যে, নাউযুবিল্লাহ পবিত্র ও মহান আল্লাহ‌ শরীর ও দেহাবয়বের অধিকারী এবং মানুষের মতো হাত দিয়ে কাজ করেন। বরং এর মাধ্যমে একথাই বুঝানো হয়েছে যে, এ জিনিসগুলো আল্লাহ‌ নিজেই তৈরী করেছেন এবং এগুলোর সৃষ্টিকর্মের অন্য কারো সামান্যতমও অংশ নেই।
# নিয়ামতকে নিয়ামতদাতা ছাড়া অন্য কারো দান মনে করা, এজন্য অন্য কারো অনুগ্রহভাজন হওয়া এবং নিয়ামতদাতা ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে নিয়ামতলাভের আশা করা অথবা নিয়ামত চাওয়া, এ সবকিছুই নিয়ামত অস্বীকারেরই নামান্তর। অনুরূপভাবে নিয়ামতদাতার প্রদত্ত নিয়ামতকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করলেও নিয়ামত অস্বীকার করাই হয়। কাজেই একজন মুশরিক ও কাফের এবং মুনাফিক ও ফাসেক নিছক মুখে ধন্যবাদ শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহ‌র শোকরগুজার বান্দা গণ্য হতে পারে না। এ জন্তু-জানোয়ারগুলোকে আল্লাহ‌ সৃষ্টি করেছেন, একথা মেনে নিতে মক্কার কাফেররা অস্বীকার করতো না। তাদের একজনও এগুলোর সৃষ্টির ব্যাপারে অন্য উপাস্যদের হাত আছে বলে দাবী করতো না। কিন্তু এ সবকিছু মেনে নেবার পরও যখন তারা আল্লাহ‌ প্রদত্ত নিয়ামতের জন্য নিজেদের উপাস্য দেবতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো, তাদের সামনে নজরানা পেশ করতো এবং আরো নিয়ামত দান করার জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করতো, এ সঙ্গে তাদের জন্য বলিদান করতে থাকতো, তখন আল্লাহ‌র কাছে তাদের মৌখিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়তো। এজন্যই আল্লাহ‌ তাদেরকে নিয়ামত অস্বীকারকারী ও অকৃতজ্ঞ বলে অভিহিত করেছেন।
# ঐ মিথ্যা উপাস্য দেবতারা নিজেরাই তাদের অস্তিত্ব, টিকে থাকা, সংরক্ষণ ও প্রয়োজন পূরণের জন্য এসব পূজা উপাসনাকারীর মুখাপেক্ষী। এ সেনাবাহিনী ছাড়া তাদের খোদায়ী এক দিনও চলে না। এরা তাদের সার্বক্ষনিক উপস্থিত দাস। এরা তাদের দরবার বানিয়ে ও সাজিয়ে রাখছে। এরা তাদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা আল্লাহর বান্দদেরকে তাদের ভক্তে-অনুরক্তে পরিণত করছে। তাদের সমর্থনে এরা ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ করছে। তারপরই তাদের খোদায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। নয়তো কেউ তাদের কথা জিজ্ঞেসও করতো না। তারা আসল খোদা নয়। কেউ তাদেরকে মেনে নিক বা না নিক তারা নিজ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সমগ্র বিশ্ব-জাহানে কর্তৃত্ব চালিয়ে যাবে, এমন ক্ষমতা তাদের নেই।
# সম্বোধন করা হয়েছে নবী ﷺ কে। গোপন ও প্রকাশ্য কথা বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মক্কার কাফেরদের বড় বড় সরদাররা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যার ঝড় সৃষ্টি করছিল। তারা ভালোভাবেই জানতো এবং নিজেদের ব্যক্তিগত মজলিসে একথা স্বীকার করতো যে, নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে তারা যেসব অপবাদ দিচ্ছে সেগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন। তারা লোকদের মনে তাঁর বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করার জন্য তাঁকে কবি, গণক, যাদুকর, পাগল এবং আরো না জানি কত কি বলতো। কিন্তু তাদের নিজেদের বিবেক একথা মানতো এবং তারা পরস্পরের সামনে স্বীকারও করতো যে, এসব ডাহা মিথ্যা কথা এবং নিছক তাঁর দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তারা এগুলো তৈরী করছে। তাই আল্লাহ‌ তাঁর নবীকে বলছেন, এদের বাজে কথায় মন খারাপ করো না। যারা মিথ্যা দিয়ে সত্যের মোকাবিলা করে তারা শেষ পর্যন্ত এ দুনিয়ায়ও ব্যর্থ হবে এবং আখেরাতেও নিজেদের অশুভ পরিণতি দেখে নেবে।
# এবার কাফেরদের প্রশ্নের যুক্তিভিত্তিক জবাব দেয়া হচ্ছে। ৪৮ আয়াতে এ প্রশ্নটি উদ্ধৃত হয়েছে। “কিয়ামতের হুমকি কবে পূর্ণ হবে” তাদের এ প্রশ্ন এ জন্য ছিল না যে, তারা কিয়ামত আসার তারিখ জানতে চাচ্ছিল বরং এজন্য ছিল যে, মৃত্যুর পর তারা মানুষদের পুনর্বার উঠানোকে অসম্ভব বরং বুদ্ধি বিরোধী মনে করতো। তাই তাদের প্রশ্নের জবাবে আখেরাতের সম্ভাবনার পক্ষে যুক্তি পেশ করা হচ্ছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ), কাতাদাহ ও সাঈদ ইবনে জুবাইর বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, এ সময় মক্কার কাফের সরদারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি কবরস্থান থেকে কোন লাশের একটি গলিত হাড় নিয়ে আসে এবং নবী ﷺ এর সামনে সেটি ভেঙ্গে ফেলে এবং তার বিচূর্ণিত অংশগুলো বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে বলে, “হে মুহাম্মাদ, তুমি বলছো মৃতদেরকে আবার জীবিত করে উঠানো হবে। বলো, এ পঁচা-গলা হাড়গুলোকে আবার কে জীবিত করবে?” সঙ্গে সঙ্গেই এ আয়াতগুলোতে এর জবাব দেয়া হয়।
# এমন শুক্রবিন্দু যার মধ্যে নিছক একটি প্রাথমিক জীবন-কীট ছাড়া আর কিছুই ছিল না, তাকে উন্নতি দান করে আমি এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছি যার ফলে সে কেবল প্রাণীদের মতো চলাফেরা ও পানাহার করতে থাকেনি বরং এর থেকে অগ্রসর হয়ে তার মধ্যে চেতনা, বুদ্ধি-জ্ঞান এবং তর্ক-বিতর্ক, আলাপ-আলোচনা, যুক্তি প্রদর্শন করা ও বাগ্মীতার এমন সব যোগ্যতা সৃষ্টি হয়ে গেছে যা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে নেই। এমন কি এখন সে নিজের স্রষ্টাকেও বিদ্রূপ করতে এগিয়ে আসছে।
# আমাকে সৃষ্টিকুলের মতো অক্ষম মনে করে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, মানুষ যেমন কোন মৃতকে জীবিত করতে পারে না, ঠিক তেমনি আমিও পারি না।
# একথা ভুলে যায় যে, আমি নিষ্প্রাণ বস্তু থেকে এমন প্রাথমিক জীবন-কীট সৃষ্টি করেছি, যা তার সৃষ্টির উৎসে পরিণত হয়েছে এবং তারপর এ কীটকে লালন করে তাকে এত বড় করে দিয়েছি, যার ফলে সে আজ আমার সামনে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
# এর অর্থ হচ্ছে, তিনি সবুজ বৃক্ষসমূহে এমন দাহ্যবস্তু রেখে দিয়েছেন যা ব্যবহার করে তোমরা কাঠের সাহায্যে আগুন জ্বালিয়ে থাকো। অথবা এর মাধ্যমে ‘মারখ’ ও ‘আফার’ নামক দু’টি গাছের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ গাছ দু’টির কাঁচা ডাল নিয়ে আরবের লোকেরা একটার ওপর আর একটাকে মারতো, ফলে তা থেকে আগুন ঝরে পড়তো। প্রাচীন যুগে গ্রামীণ আরবরা আগুন জ্বালাবার জন্য চকমকি হিসেবে এ ডাল ব্যবহার করতো এবং সম্ভবত আজও করে থাকে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
‘আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তাঁর জন্যে শােভনীয়ও নয়…'(আয়াত ৬৯) সূরার এই শেষ অংশটিতে বেশ কয়টি মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করা হচ্ছে, সেগুলাে আলােচ্য সূরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে। যেমন ওহী কি এবং এর প্রকৃতি কি? মাবুদ বা উপাস্যের গুণাবলী কি? একত্ববাদ বা তাওহীদের দাবী কি? শেষ বিচারের দিনে হাশর-নশর কিভাবে হবে ইত্যাদি বিষয়। বিষয়গুলাে অত্যন্ত জোরালাে ভাষায় ও গভীর ব্যঞ্জনাময় ভংগিতে বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে এই সত্য সুস্পষ্টরূপে ধরা পড়েছে যে, গােটা সৃষ্টি জগতের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের পেছনে একটি অদৃশ্য শক্তিশালী হাত কাজ করছে। সেই হাতটির প্রতিই ইংগিত করে সূরার শেষে বলা হয়েছে, ‘অতএব পবিত্র তিনি, যার হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তােমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ অর্থাৎ এই নিপুণ ও শক্তিধর হাতই মানব জাতির জন্যে চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করে তাদের সেবায় নিয়ােজিত রেখেছে। এই হাতই শুক্রবিন্দু থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছে। এই হাতই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া হাড়গুলাের মাঝে পুনরায় জীবন সঞ্চার করবে, যেমনটি প্রথম বার করেছিলাে। এই হাতই সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপন্ন করেছে। এই হাতই আসমান ও যমীন সৃষ্ট করেছে। পরিশেষে গােটা সৃষ্টিজগতের মালিকানা এই হাতেই ন্যস্ত হবে। আয়াতের শেষ বক্তব্যে এই সত্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।  *ওহী সম্পর্কে কাফেরদের মিথ্যা প্রচারণার অপনােদন : ‘আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি…'(আয়াত ৬৯) আলােচ্য সূরার গোড়াতে ওহীর প্রসংগ নিয়ে আলােচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছিলাে, ‘নিশ্চয়ই তুমি প্রেরিত রসূলদের একজন। সরল পথে প্রতিষ্ঠিত। কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ। যাতে আপানি…'(আয়াত ৩-৬) এখন এই ওহী সম্পর্কিত একটি গুজব ও মিথ্যা প্রচারণার উত্তর দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করতাে এবং প্রচার করে বেড়াতাে, রসূলুল্লাহ(স.) হচ্ছেন একজন কবি এবং তিনি কোরআনের বরাত দিয়ে যা কিছু বলেন ও শুনান সেগুলাে কবিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ কোরায়শ বংশীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বিষয়টি ভালাে করেই জানতো যে, মুহাম্মদ(সা.)-এর কাছে যে বাণী আসছে তার ভাব ও ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাদের ব্যবহৃত ভাষার সাথে এর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া কোরআনের বাণী আর কবিতার ভাষার মধ্যকার পার্থক্য বুঝার মতাে জ্ঞান তাদের ছিলাে এমন নয়। কিন্তু তা সত্তেও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে একটি দল মােহাম্মদ(স.) ও তার নতুন দ্বীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার যুদ্ধ ঘােষণা করে দেয়। এই প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে তারা পবিত্র কোরআনের ছন্দময় ও আবেগপূর্ণ বর্ণনাভংগি ব্যবহার করে। কারণ, এর ফলে জনগণকে বিভ্রান্তির সহজ শিকারে পরিণত করা সম্ভব হতাে। তাদের পক্ষে তখন কোরআনের ভাষা ও কাব্যের ভাষার মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যেতাে। এখানে আল্লাহ তায়ালা অস্বীকার করে বলছেন যে, তিনি তার রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেননি, আর তিনি যদি শিক্ষা নাই দিয়ে থাকেন তা হলে তার পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা যা জানান, ততােটুকুই মানুষ জানতে পারে। এরপর আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছেন যে, কবিতা নবী-রসূলদের জন্যে শােভা পায় না। কারণ, কাব্যের নিয়ম নীতির সাথে নবুওতের নিয়ম নীতির কোনাে মিল নেই। কাব্য হচ্ছে আবেগনির্ভর। এর ভাষাও হয় আবেগধর্মী, আর এটা জানা কথা, আবেগ পরিবর্তনশীল, প্রতি মুহূর্তে এর ওঠানামা হয়। অপরদিকে নবুওত হচ্ছে ওহীনির্ভর, আর এই ওহী হচ্ছে স্থির নিয়ম-নীতি ও সরল-সােজা পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর পেছনে রয়েছে আল্লাহর চিরন্তন বিধান যা গােটা সৃষ্টিজগত নিয়ন্ত্রণ করছে। সাময়িক ভাবাবেগের কারণে এতে কোনাে পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। অপরদিকে কাব্য আবেগ অনুভূতির সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় এবং কোনো এক অবস্থায় টিকে থাকে না। তাছাড়া নবুওত হচ্ছে আল্লাহর সাথে স্থায়ী যােগাযােগের নাম, ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি বাণীপ্রাপ্তির নাম এবং জীবনকে আল্লাহমুখী করার অবিরাম প্রচেষ্টার নাম। অপরদিকে কাব্যের সর্বোচ্চ রূপ হচ্ছে নান্দনিকতা ও পরিপূর্ণতার প্রতি মানবীয় আকাংখার বহিপ্রকাশ, তার মাঝে থাকে মানবীয় দুর্বলতা এবং চিন্তা চেতনার সীমাবদ্ধতা, কিন্তু এই কাব্যই যখন নিচু স্তরে নেমে আসে তখন তা পর্যবসিত হয় নিছক আবেগ ও কামনায়, যাতে থাকে দেহের উল্লাস ও রক্ত মাংসের উদ্যমতা। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, নবুওত ও কাব্য হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটো জিনিস। উচ্চমার্গীয় কাব্যকে বলতে পারি ধূলির ধরা হতে উত্থিত অনুরাগ ও বাসনা। অপরদিকে নবুওতকে বলতে পারি উর্ধ্বলোক হতে প্রেরিত হেদায়াতের আলােকবর্তিকা। বলা হয়েছে, ‘এটা এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন বৈ কিছু নয়'(আয়াত ৬৯) এখানে একই বস্তুর জন্যে দুটো বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে উপদেশ আর অপরটি হচ্ছে কোরআন। অর্থাৎ কার্যকারিতার দিক থেকে এটি উপদেশ আর তেলাওয়াত বা আবৃত্তির দিক থেকে কোরআন। উপদেশ বা স্মরণ হচ্ছে হৃদয়ের ব্যাপার আর তেলাওয়াত বা আবৃত্তি হচ্ছে জিহ্বার ব্যাপার। এই মহাগ্রন্থটি যে বিশেষ উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করা হয়েছে তা হলাে, ‘যেন তিনি সতর্ক করেন জীবিতকে এবং যেন কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযােগ প্রতিষ্ঠিত হয়'(আয়াত ৬০) পবিত্র কোরআন এখানে জীবনের বিপরীতে কুফর শব্দের উল্লেখ করে এ কথা বুঝাতে চায় যে, কুফর হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুরই নামান্তর। অপরদিকে ঈমান হচ্ছে জীবন। এরপর এই মহাগ্রন্থ রসূলুল্লাহ(স.)-এর প্রতি কেন অবতীর্ণ করা হলাে, সে সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে তিনি জীবনী শক্তির অধিকারী লােকদের সতর্ক করবেন। কারণ, জীবনীশক্তির অধিকারী লােকেরাই কেবল কোরআনের হেদায়াত দ্বারা উপকৃত হতে পারবে এবং তাদের সতর্ক করলে কাজ হবে। আর যারা আল্লাহদ্রোহী ও কাফের তারা তাে মৃত। কাজেই সতর্ককারীর কথা তাদের কানে পৌছবে না; বরং তাদের ক্ষেত্রে কোরআনের বাণী হচ্ছে প্রাপ্য শাস্তির ঘােষণাপত্র। এর মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য শাস্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়, প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কাউকে কেবল তখনই শাস্তি দেন যখন তার কাছে ঐশী বাণী পৌছার পরও সে জেনে শুনেই তা অস্বীকার করে। ফলে তার কাছে আর কোনা যুক্তি থাকে না, কোনাে ওযর আপত্তি থাকে না। আর তখনই আল্লাহ তায়ালা তাকে পাকড়াও করেন এবং ধ্বংস করে দেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বিশ্ববাসীকে জানাতে চান যে, কোরআনের প্রশ্নে মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। এক দল এর আহ্বানে সাড়া দেয়; সুতরাং তারা জীবনীশক্তির অধিকারী। আর দ্বিতীয় দল এর আহ্বানে সাড়া দেয় না; সুতরাং তারা জীবনীশক্তি থেকে বঞ্চিত, তারা মৃত। এই দলটির জানা উচিত তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ঘােষণা চূড়ান্ত: আল্লাহর আযাব তাদের ক্ষেত্রে অবধারিত।
# এরপর একক উপাস্যের বিষয়টি আলােচনা করা হচ্ছে। এই আলােচনায় বিভিন্ন মানবগােষ্ঠীর প্রসংগও এসেছে, যাদের অসংখ্য নেয়ামত দান করার পরও তারা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না, তাদের জন্যে আমি নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্ট করেছি…'(আয়াত ৭১-৭৬) তারা কি দেখে না? কারণ এখানে সব কিছুই তো তাদের চোখের সামনে রয়েছে কোনাে কিছু তাে অদৃশ্য নেই, নাগালের বাইরে নেই এবং এমন অস্পষ্ট দুর্বোধ্যও নয় যে, তা বুঝার জন্যে চিন্তা করতে হবে, মাথা ঘামাতে হবে। এই যে চতু্ষ্পদ জস্তু, এগুলাে আল্লাহ তায়ালাই তাে তাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের করায়ত্ত করে দিয়েছেন, তাদের এগুলাের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা এগুলাে নিজেদের বাহন হিসেবে ব্যবহার করে, এগুলাের দুধ পান করে এবং এগুলাে দ্বারা বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হয়। এই সবই তাে আল্লাহরই কুদরত, তারই কর্ম, তাঁরই কৌশল। আর এই কুদরত ও কৌশলের ফলেই তিনি মানুষ এবং চতুষ্পদ জস্তুদের মাঝে দুটো ভিন্ন ভিন্ন গুণ ও যােগ্যতা সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি এবং এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার যােগ্যতা, আর চতুষ্পদ জন্তুর মাঝে সৃষ্টি করেছেন মানুষের নিয়ন্ত্রণে থেকে তার বিভিন্ন প্রয়ােজন মেটানাের যােগ্যতা ও মানসিকতা। এ সবের কোনাে কিছুই করার ক্ষমতা মানুষের মাঝে নেই। কারণ, গােটা মানব জাতি একত্রিত হয়েও একটি মাছি সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে না, এমনকি মাছিকে নিয়ন্ত্রণ করার বা বশে আনার ক্ষমতাও তাদের নেই, যদি মাছির মাঝে সেই বৈশিষ্ট্য ও গুণ আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি না করেন। এতাে সবের পরেও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? মানুষ যখন এ সব বিষয় পবিত্র কোরআনের আলােকে এবং এই বিশেষ দৃষ্টিভংগিতে দেখার চেষ্টা করে, তখন সে তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করতে পারে যে, সে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের মাঝে ডুবে আছে, তার আশপাশের প্রতিটি বস্তুর মাঝে এই নেয়ামতের পরিচয় সে দেখতে পাবে। যে মুহূর্তে সে কোনাে সওয়ারীর ওপর আরােহণ করবে, অথবা এক টুকরো গােশত মুখে তুলে নেবে, অথবা এক চুমুক দুধ পান করবে, অথবা এক টুকরাে মাখন অথবা পনির খাবে, অথবা রেশমী বা পশমী কোনাে কাপড় পরবে, সেই মুহূর্তেই তার মনের মাঝে এক বিশেষ অনুভূতির স্পর্শ অনুভব করবে, যে অনুভূতির মাঝে রয়েছে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি এবং তাঁর রহমত ও নেয়ামতের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি। এই অনুভূতি আরও গভীর হবে যখন সে তার আশপাশের বস্তুগুলাের দিকে তার দৃষ্টি ফেরাবে এবং এই বিশাল জগতের কোনাে জীবন্ত অথবা জড় বস্তু ব্যবহার করবে। শুধু তাই নয়; বরং সে আজীবন আল্লাহর মহিমা ও প্রশংসা বর্ণনা করবে এবং দিন-রাতের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে আত্মনিয়ােগ করবে। কিন্তু মানুষ অকৃতজ্ঞ। আল্লাহর এতাে সব নেয়ামত ভােগ করার পরও এদের অনেকেই দেবদেবীর পূজা অর্চনা করে। তাদেরকেই আল্লাহর পরিবর্তে মাবুদ মনে করে। এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করে নিয়েছে যাতে তারা সাহায্য প্রাপ্ত হতে পারে'(আয়াত ৭৪-৭৫),
*পৌত্তলিকতার বিবিধ রূপ : অতীতে কোনাে মূর্তি বা প্রতিমা অথবা কোনাে বৃক্ষ বা কোনাে গ্রহ বা কোনাে ফেরেশতা বা জ্বিন জাতির পূজা-অর্চনা করা হতাে। পৌত্তলিকতার অস্তিত্ব এখনও পৃথিবীর কোনাে কোনাে অঞ্চলে দেখা যায়, কিন্তু যারা এসবের পূজা-অর্চনা করে না তারাও কিন্তু পুরােপুরি তাওহীদবাদী হতে পারছে না। কারণ এদের অনেকেই আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কোনাে শক্তির ওপর আস্থা রাখে, বিশ্বাস রাখে। তারা গায়রুল্লাহর ওপর ভরসা করে। এগুলােও শিরক। স্থান কালভেদে শিরকেরও পরিবর্তন ঘটে। অতীতে মানুষ নিজেরাই কাল্পনিক দেব দেবীর রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশুনা করতাে। অর্থাৎ তারা নিজেরাই এ সবের রক্ষক ছিলাে, প্রহরী ছিলাে। সে দিকে ইংগিত করেই বলা হয়েছে, তাদের এগুলাের বাহিনীরূপে উপস্থিত করা হবে, কি হাস্যকর ব্যাপার! কি নীচুতা ও দীনতা। বর্তমান যুগে অধিকাংশ মানুষের বাহ্যিক দিক থেকে এই নীচুতার উর্ধ্বে ওঠলেও প্রকৃতপক্ষে তারা এখনও অতীতকালের কাল্পনিক দেব দেবীর পূজা আর্চনার স্তরেই পড়ে রয়েছে। যারা বর্তমান যুগের স্বৈরাচার ও যুলুমবাজ শাসকগােষ্ঠীকে দেবতার পর্যায়ে মনে করে তারা মূর্তিপূজকদের স্তর থেকে খুব বেশী উর্ধে নয়। কারণ, এরাও স্বৈরাচারদের রক্ষক ও প্রহরী এবং একই সাথে তাদের পূজারীও। মােটকথা পৌত্তলিকতা একাধিক রূপে প্রকাশ পায়। তাওহীদের বিশ্বাসে যখনই কোনাে বিশৃংখলা দেখা দেবে তখনই বুঝতে হবে, পৌত্তলিকতার আবির্ভাব ঘটেছে। এই আবির্ভাব কখনও শিরকের আকারে হয় আবার কখনও জাহেলিয়াতের আকারে হয়। তাই নির্ভেজাল ও খাঁটি তাওহীদের বিশ্বাস ব্যতীত মানবতার মুক্তি নেই, রক্ষা নেই। এই বিশ্বাসের ধারক বাহক হয়ে একমাত্র আল্লাহর এবাদাত বন্দেগী করতে হবে, একমাত্র তারই সাহায্য কামনা করতে হবে, একমাত্র তার ওপরই ভরসা করতে হবে, একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করতে হবে এবং সম্মান ও শ্রদ্ধার জন্যে একমাত্র তার সামনেই মাথা নত করতে হবে। পরবর্তী আয়াতে রসূলুল্লাহ(স.)-কে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে, ‘অতএব তাদের কথা যেন তােমাকে দুঃখিত না করে…'(আয়াত ৭৬) এই আয়াতে রসূলকে সান্তনা দেয়া হচ্ছে। যারা গায়রুল্লাহকে মাবুদ মনে করে, যারা আল্লাহর শোকর আদায় করে না এবং যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের অসৎ আচরণ ও কথাবার্তায় রসূল যেন মনােক্ষুন্ন না হন, সে জন্যে তাকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে, ওদের সব কিছুই আল্লাহর সামনে উন্মুক্ত। ওরা যে সব ফন্দি-ফিকির করে, যেসব চক্রান্ত করে তা সবই আল্লাহর চোখের সামনে রয়েছে। কাজেই ওরা রসূলের কোনােই ক্ষতি করতে পারবে না। শক্তিধর মহান আল্লাহ ওদের ঘেরাও করে রেখেছেন। যখন মানুষ আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে এবং বিশ্বাস, করে যে, আল্লাহদ্রোহীদের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব কিছুই আল্লাহর চোখের সামনে রয়েছে, তার হাতের মুঠোর ভেতরে রয়েছে, তখন সে কোনাে কিছুকেই ভয় করে না। আর এভাবেই আপদে বিপদে ও কঠিন মুহর্তে মানুষ সান্তনা খুঁজে পায়।
*মানুষকে তার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কে চিন্তা করার আহবান : পরবর্তী আয়াতে শেষ বিচারের দিনে পুনর্জন্ম ও পুনরুথান কিভাবে ঘটবে এবং তা কতটুকু যুক্তিসংগত, সে ব্যাপারে আলােচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে, অতপর তখনই সে হয়ে গেলাে প্রকাশ্য বাক বিতন্ডাকারী…'(আয়াত ৭৭-৮২) এখানে প্রথমেই মানুষকে তার নিজের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। কিভাবে তার উৎপত্তি হলাে, কি ভাবে তার বিবর্তন ঘটলাে, এসব বিষয় তার জীবনের এক জ্বলন্ত বস্তবতা। এই বাস্তবতা মানুষ তার জীবনে অহরহ প্রত্যক্ষ করছে, অনুভব করছে, কিন্তু এর তাৎপর্য সম্পর্কে সজাগ হচ্ছে না। সে এর দ্বারা বুঝতে চেষ্টা করছে না যে, যে আল্লাহ তাকে জীবন দান করেছেন, তিনিই মৃত্যুর পর তাকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তাকে হাশরের ময়দানে এনে দাঁড় করাবেন, এটা সেই মহান আল্লাহরই ওয়াদা। বলা হয়েছে, ‘মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে?’ যে বীর্যকে মানুষ নিজেদের অস্তিত্বের মূল বলে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করে সেই বীর্যের প্রকৃত রূপটা কি? নিসন্দেহে এটা হচ্ছে এক ফোটা না-পাক তরল পদার্থ । সাধারণত এর কোনাে চাহিদা নেই, কোনাে মূল্য নেই। এর এক একটি ফোটার মাঝে থাকে হাজার হাজার কোষ। এই হাজার হাজার কোষের মধ্য থেকে মাত্র একটি কোষ দ্বারা ভ্রুণের সৃষ্টি হয়। আর এই ভ্রুণই পর্যায়ক্রমে মানুষের রূপ ধারণ করে। অথচ এই মানুষই কিন্তু সৃষ্টির সাথে সাথে স্বয়ং তার স্রষ্টার সাথে তর্ক-বির্তকে লিপ্ত হয় এবং তার কাছেই তার অস্তিত্বের দলীল প্রমাণ দাবী করে। বলাবাহুল্য আল্লাহর সৃজনশীল শক্তিই এই নিকৃষ্ট তরল পদার্থ থেকে সেই প্রকাশ্য বিতর্ককারীকে সৃষ্টি করছে। কি বিরাট ব্যবধান তার উৎপত্তি ও শেষ পরিণতির মাঝে! অথচ সে এই সৃজনশীল শক্তিকেই বিলুপ্তি ও ধ্বংসের পর পুনর্জীবন ও পুনরুথান করার ব্যাপারে অক্ষম বলে মনে করে। ওদের বক্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়…'(আয়াত ৭৮-৭৯) কি সহজ ও স্বাভাবিক যুক্তি। কি চাক্ষুষ ও বাস্তব প্রমাণ! মানুষ কি মনে করে, পচা গলা ও চুর্ণ-বিচূর্ণ হাড়গুলাের তুলনায় এই এক ফোটা বীর্যের মাঝে খুব বেশী কিছু শক্তি, সম্ভাবনা বা মূল্য রয়েছে? সে বীর্য থেকেই কি মানুষের সৃষ্টি হয়নি? এই বীর্যই কি তার প্রথম উৎপত্তির কারণ নয়? যে মহান সত্ত্বা এই এক ফোটা বীর্যকে মানুষে রূপান্তরিত করেছেন এবং তাকে প্রকাশ্য বিতর্ককারী রূপে সৃষ্টি করেছেন সেই সত্ত্বার কি ক্ষমতা নেই, পচা গলা হাড়ের মাঝে পুনরায় জীবন সঞ্চার করার এবং পূর্ণাংগ জীবে পরিণত করার? নিশ্চয়ই আছে। আর এটা এতােই সহজ ও বাস্তব যা প্রশ্নাতীত। এর পরও কেন এতােসব বিতর্ক? এই বিতর্কের জবাবে বলা হচ্ছে, ‘বলাে, যিনি প্রথম বার সেগুলােকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন, তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত'(আয়াত ৭৯) আল্লাহর সৃষ্টির ক্ষমতা ও যােগ্যতার বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরার জন্যে পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘যিনি তােমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন, তখন তােমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও'(আয়াত ৮০) আলােচ্য আয়াতে যে বিষয়টির প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়কর। মানুষ প্রতিদিন এই বিস্ময়কর বিষয়টির সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু সেটা গভীরভাবে তলিয়ে দেখছে না। সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার যে, কাঁচা ও তরতাজা গাছগুলোর পরস্পরের সাথে ঘর্ষণের ফলে আগুনের সৃষ্টি হয়। আবার সেই গাছগুলােই সেই আগুনের ইন্ধনে পরিণত হয়ে পড়ে। গভীর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, বৃক্ষ-তরু-লতা সৌরশক্তি থেকে তাপ শুষে নিয়ে তা জমা করে রাখে। পরবর্তীতে যখন গাছগুলাের মাঝে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তখন তা থেকে আগুন উৎপন্ন হয়, ঠিক যেমন জ্বালানাের ফলে আগুনের সৃষ্টি হয়। অথচ গাছগুলাে থাকে একদম কাঁচা ও তরতাজা। এই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ বিষয়টিকে মানুষের কাছে আরও সুস্পষ্ট এবং আরও জাজ্জল্যমান সত্যরূপে তুলে ধরেছে। বৃক্ষ-তরুলতার মাঝে এই যে দাহ্য ক্ষমতা তা মহান সৃষ্টিকর্তার অপার কুদরতেরই বাস্তব নিদর্শন। তিনি বস্তুনিচয়কে কেবল সৃষ্টিই করেননি; বরং সেগুলােকে স্বধর্মে পরিচালিতও করেছেন, কিন্তু আমরা বস্তুজগতকে এই খােলা দৃষ্টিভংগি নিয়ে দেখি না, এগুলাে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাও করি না, আর সে কারণেই এর বিস্ময়কর রহস্যও আমাদের সামনে উদঘাটিত হয় না এবং জগত স্রষ্টার সন্ধানও আমরা পাই না, কিন্তু আমরা যদি খােলা হৃদয়-মন নিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যেতাম তাহলে এই প্রকৃতিই আমাদের সামনে উন্মােচিত করে দিতাে না জানা অনেক তথ্য ও রহস্য এবং আমরা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারতাম প্রকৃতির নিরবিচ্ছিন্ন প্রার্থনা ও গুণ কীর্তন। পরবর্তী আয়াতে গােটা মানব জাতির সামনে আল্লাহর শক্তি ক্ষমতার নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে এবং জন্ম ও পুনর্জন্মের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘যিনি নভােমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হাঁ, তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ'(আয়াত ৮১) ইহজগত ও উর্ধ্বজগত্ হচ্ছে এক বিস্ময়কর জগত বিশাল জগত, এবং রহস্যময় জগত। এই যে পৃথিবী, যার বুকে আমরা বাস করছি এবং আমাদের সাথে আরও কোটি কোটি প্রাণী বাস করছে, এর আয়তন সম্পর্কে আমরা কতােটুকু জানতে পারি? এর প্রকৃতি সম্পর্কে কতোটুকু জানতে পেরেছি? এ পর্যন্ত যতােটুকু জানতে পেরেছি তা নিতান্তই নগণ্য। এই পৃথিবীটা হচ্ছে সূর্যের অধীনস্থ একটি ছােট্ট গ্রহ মাত্র। সূর্যের আলাে ও তাপের মাঝেই টিকে আছে পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহটি। আর এই সূর্যটা কি? সূর্যটা হচ্ছে একটিমাত্র ছায়াপথের অধীন দশ কোটি নক্ষত্রের মধ্যে একটি নক্ষত্র, সে নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের নিকটবর্তী জগত। এই ছায়াপথ ছাড়াও মহাশূন্যে আরও অনেক ছায়াপথের অস্তিত্ব রয়েছে। জ্যোতির্বিদরা তাদের সীমিত দূরত্বের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এ পর্যন্ত দশ কোটি ছায়াপথের সন্ধান পেয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে যদি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধি পায়। আমাদের ছায়াপথ এবং তার নিকটবর্তী ছায়াপথের মধ্যকার দূরত্ব হচ্ছে প্রায় সাত শত পঞ্চাশ হাজার আলােকবর্ষ (এক আলােকবর্ষ হচ্ছে ছাব্বিশ বিলিয়ন মাইলের সমান)। এ ছাড়াও বিশাল বিশাল বলয় দেখতে পাওয়া যায় যেগুলাে কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলাে হচ্ছে নক্ষত্রপুঞ্জ। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে ও সীমিত দৃষ্টিশক্তিতে এই বিশাল সৌরজগতের এই সামান্য অংশই ধরা পড়েছে। এই অগণিত সৌরজগতের প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব কক্ষপথ, যাকে কেন্দ্র করে এগুলাে আবর্তিত হচ্ছে। আবার এদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে অন্যান্য গ্রহ। যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী আবর্তিত হচ্ছে। এগুলাে অবিরামভাবে ঘুরে চলেছে, ছুটে চলেছে, এক মুহূর্তের জন্যেও বিরাম নেই, বিরতি নেই এবং কোনাে বিশৃংখলা নেই, গােলযােগ নেই। যদি তাই হতাে, তাহলে এই দৃশ্যমান জগত ধ্বংস হয়ে যেতাে এবং সংঘর্ষ বেধে যেতাে মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল নক্ষত্রপুঞ্জগুলাের মাঝে। এই যে মহাশূন্য যেখানে ছােট ছােট কণার মতাে কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র ভেসে বেড়াচ্ছে, এর চিত্রায়ন এবং কল্পনাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এর বিশালতার কথা চিন্তা করতে গেলে মাথা ঘুরে যায়। যে মহান সত্ত্বা এই বিশাল জগত সৃষ্টি করে রেখেছেন তিনি কি মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে পারেন না? এই বিশাল জগতের তুলনায় মানুষের অস্তিত্ব কতােটুকু? নিশ্চয়ই তিনি মহান স্রষ্টা, মহান জ্ঞানী। তিনি সব কিছুই পারেন। তার পক্ষে কোনাে কিছুই অসম্ভব নয়। ছােট বড় সব কিছুই তার আওতাধীন। কাজেই কোনাে কিছুই সৃষ্টি করতে তাকে কোনাে বেগ পেতে হয় না, কোনাে কষ্ট করতে হয় না। কারণ, তিনি কেবল হও নির্দেশ করতেই সব কিছু হয়ে যায়। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনি যখন কোনাে কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ আর তখনই তা হয়ে যায়।'(আয়াত ৮২) এই কোনাে কিছু বলতে আকাশ হতে পারে অথবা পৃথিবী হতে পারে। তেমনিভাবে একটি মশাও হতে পারে এবং পিপড়াও হতে পারে। মােটকথা, আল্লাহর নির্দেশ ‘হও’,এর ক্ষেত্রে সব কিছুই সমান। আল্লাহর নির্দেশের সামনে, আল্লাহর ইচ্ছার সামনে কঠিন বলতে কিছু নেই, সহজ বলতেও কিছু নেই, কাছে বলতে কিছু নেই এবং দূরে বলতেও কিছু নেই। কোনাে কিছুর অস্তিত্ব আল্লাহর কাম্য হলে তার জন্যে তার ইচ্ছা ও নির্দেশই যথেষ্ট। তবে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বুঝানাের জন্যে তার সীমিত জ্ঞান ও বিবেক বুদ্ধির উপযােগী পন্থাই গ্রহণ করে থাকেন।
আলােচ্য সূরার শেষ পর্যায়ে এসে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিজগতের মধ্যকার সম্পর্কের প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘অতএব পবিত্র তিনি, যার হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তারই দিকে তােমরা প্রত্যাবর্তিত হবে'(আয়াত ৮৩) আয়াতে রাজত্ব শব্দ ব্যবহার করে গােটা সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বস্তুর একচ্ছত্র মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ যে মহান আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত, সেই কঠিন বাস্তব সত্যটির প্রতিই এখানে ইংগিত করা হয়েছে। এখানে আরও বলা হয়েছে যে, এই শক্তিধর ও ক্ষমতাধর সত্ত্বার কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে।

Leave a Reply