أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৭৩)
[*শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ , যেমন কাজ তেমন ফল : -]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩৭:সাফফাত
পারা:২৩
১-৩৯ নং আয়াত:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
(৩৭-সাফ্ফাত) : নামকরণ:
প্রথম আয়াতের وَالصَّافَّاتِ শব্দ থেকে সূরার নাম গৃহীত হয়েছে।
(৩৭-সাফ্ফাত) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
বিষয়বস্তু ও বক্তব্য উপস্থাপনা পদ্ধতি থেকে মনে হয়, এ সূরাটি সম্ভবত মক্কী যুগের মাঝামাঝি সময়ে বরং সম্ভবত ঐ মধ্য যুগেরও শেষের দিকে নাযিল হয়। বর্ণনাভংগী থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, পশ্চাতভূমিতে বিরোধিতা চলছে প্রচণ্ড ধারায় এবং নবী ও তাঁর সাহাবীগণ অত্যন্ত হতাশাবঞ্জক অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন।
(৩৭-সাফ্ফাত) : বিষয়বস্তু ও মূলবক্তব্য :
বিষয় সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাওহীদ ও আখেরাতের দাওয়াতের জবাব দেয়া হচ্ছিল নিকৃষ্ট ধরনের রঙ-তামাসা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের মাধ্যমে। তাঁর রিসালাতের দাবি জোরে-শোরে অস্বীকার করা হচ্ছিল। এজন্য মক্কার কাফেরদেরকে অত্যন্ত কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং শেষে তাদেরকে এ মর্মে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যে পয়গম্বরকে আজ তোমরা বিদ্রূপ করছো খুব শিগগির তোমাদের চোখের সামনেই তিনি তোমাদের ওপর বিজয় লাভ করবেন এবং তোমরা নিজেরাই আল্লাহর সেনাদলকে তোমাদের গৃহের আঙিনায় প্রবেশ করতে দেখবে। (১৭১-১৭৯ আয়াত) এমন এক সময় এ ঘোষণা দেয়া হয় যখন নবী সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়া সাল্লামের সাফল্যের লক্ষণ বহু দূরেও কোথাও দৃষ্টিগোচর হয়নি। মুসলমানরা (যাদেরকে এ আয়াতে আল্লাহর সেনাদল বলা হয়েছে) ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। তাদের তিন-চতুর্থাংশ দেশ ত্যাগ করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বড় জোর ৪০-৫০ জন সাহাবী মক্কায় থেকে গিয়েছিলেন এবং চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে সব রকমের উৎপীড়ন- নিপীড়ন বরদাশত করে যাচ্ছিলেন। এহেন অবস্থায় বাহ্যিক কার্যকারণগুলো প্রত্যক্ষ করে কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারতো না যে, শেষ পর্যন্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সহায় সম্বলহীন ক্ষুদ্র দলটি বিজয় লাভ করবে। বরং প্রত্যক্ষকারীরা মনে করছিল, এ আন্দোলনের সমাধি মক্কার পার্বত্য উপত্যকার মধ্যেই রচিত হয়ে যাবে। কিন্তু ১৫-১৬ বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হয়নি, মক্কা বিজয়ের সময় ঠিক সে একই ঘটনা ঘটে গেলো যে ব্যাপারে কাফেরদেরকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
। সতর্কবাণী উচ্চারণ করার সাথে সাথে আল্লাহ এ সূরায় পুরোপুরি ভারসাম্য রক্ষা করে বুঝাবার ও উৎসাহিত-উদ্দীপিত করার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাওহীদ ও আখেরাত-বিশ্বাসের নির্ভুলতার সপক্ষে সংক্ষিপ্ত হৃদয়গ্রাহী যুক্তি পেশ করেছেন। মুশরিকদের আকীদা-বিশ্বাসের সমালোচনা করে তারা কেমন বাজে অর্থহীন বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে সে সম্পর্কে তাদেরকে সজাগ করেছেন। তাদের এসব বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার ফল তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ সংগে ঈমান ও সৎকাজের ফল কত মহান ও গৌরবময় তা শুনিয়ে দিয়েছেন। তারপর এ প্রসংগে ইতিহাস থেকে এমন সব উদাহরণ তুলে ধরেছেন যা থেকে জানা যায় আল্লাহ তাঁর নবীদের এবং তাঁদের সম্প্রদায়ের সাথে কি ব্যবহার করেছেন, নিজের বিশ্বস্ত বান্দাদেরকে তিনি কিভাবে পুরস্কৃত করেছেন এবং কিভাবে তাদের প্রতি মিথ্যা আরোপকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন।
। যে ঐতিহাসিক ঘটনাটি এ সূরায় বর্ণনা করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী শিক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পবিত্র জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি যে, আল্লাহর একটি ইশারাতেই তিনি নিজের একমাত্র পুত্রকে কুরবানী দিতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে কেবলমাত্র কুরাইশদের যেসব কাফেররা হযরত ইবরাহীমের (আ) সাথে নিজেদের বংশগত সম্পর্কের জন্য অহংকার করতো তাদের জন্যই শিক্ষা ছিল তা নয় বরং এমন মুসলমানদের জন্যও এ শিক্ষা ছিল যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছিলেন। এ ঘটনা শুনিয়ে তাদেরকে বলা হয়েছে, ইসলামের তাৎপর্য ও তার মূল প্রাণশক্তি কি এবং তাকে নিজেদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থায় পরিণত করার পর একজন সত্যিকার মু’মিনকে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে নিজের সবকিছু কুরবানী করে দেবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
। সূরার শেষ আয়াতগুলো কাফেরদের জন্য নিছক সতর্কবাণীই ছিল না বরং যেসব মু’মিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমর্থন ও তাঁর সাথে সহযোগিতা করে চরম নৈরাশ্যজনক অবস্থার মোকাবিলা করছিলেন তাঁদের জন্যও ছিল সুসংবাদ। তাঁদেরকে এসব আয়াত শুনিয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, কাজের সূচনা করতে গিয়ে তাঁদেরকে যেসব বিপদ আপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাতে যেন তাঁরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে না পড়েন, শেষ পর্যন্ত বিজয় তাঁদেরই পদচুম্বন করবে এবং বাতিলের যে পতাকাবাহীদেরকে বর্তমানে বিজয়ীর আসনে দেখা যাচ্ছে, তারা তাঁদেরই হাতে পরাজিত ও পর্যুদস্ত হবে। মাত্র কয়েক বছর পরেই ঘটনাবলী জানিয়ে দিল, এটি নিছক আল্লাহর সান্ত্বনা বাণীই ছিল না বরং ছিল একটি বাস্তব ঘটনা এবং পূর্বাহ্নেই এর খবর দিয়ে তাদের মনোবল শক্তিশালী ও জোরদার করা হয়েছিল।
# মুফাসসিরদের অধিকাংশ এ ব্যাপারে একমত যে, এ তিনটি দলই হচ্ছে ফেরেশতাদের দল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত কাতাদাহ (রা.), মাসরূক, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইকরামা, মুজাহিদ, সুদ্দী, ইবনে যায়েদ ও রাবী’ ইবনে আনাস থেকেও এ একই তাফসীর উদ্ধৃত হয়েছে। কোন কোন তাফসীরকার এর অন্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে এ ব্যাখ্যাটিই বেশী সামঞ্জস্যশীল বলে মনে হয়।
এখানে “সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো”—-এর মাধ্যমে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনার যেসব ফেরেশতা নিয়েজিত রয়েছে তারা আল্লাহর বান্দা ও গোলাম। তারা সারিবদ্ধভাবে তাঁর বন্দেগী ও আনুগত্য করছে এবং তাঁর হুকুম তামিল করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত রয়েছে। সামনের দিকে গিয়ে ১৬৫ আয়াতে এ বিষয়বস্তুটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। সেখানে ফেরেশতারা নিজেদের সম্পর্কে বলছেঃ
وَإِنَّا لَنَحْنُ الصَّافُّونَ
কোন কোন মুফাসসিরের মতে “ধমক ও অভিশাপ দেবার” অর্থ হচ্ছে, কিছু ফেরেশতা আছে তারা মেঘমালাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং বৃষ্টির ব্যবস্থা করে। যদিও এ অর্থও ভুল নয়, কিন্তু সামনের দিকের বিষয়বস্তুর সাথে যে অর্থ বেশী মানানসই তা হচ্ছে এই যে, ঐ ফেরেশতাদের মধ্যে একটি দল নাফরমানদেরকে ও অপরাধীদেরকে অভিশাপ দিয়ে থাকে এবং তাদের এ অভিশাপ কেবল শাব্দিক হয় না বরং তা মানুষের ওপর বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঐতিহাসিক বিপদ মুসিবতের আকারে বর্ষিত হয়।
“উপদেশবাণী শুনবার” অর্থ হচ্ছে ঐ ফেরেশতাদের মধ্যে এমন ধরনের ফেরেশতাও আছে যারা মানুষকে সত্য বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য উপদেশ দেবার দায়িত্ব পালন করে। সে উপদেশ দুর্যোগ দুর্ঘটনাদির আকারেও হয়, যা থেকে শিক্ষা গ্রহণকারীরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। আবার তা এমন শিক্ষার আকারেও হয়, যা ঐ ফেরেশতাদের মাধ্যমে নবীদের ওপর নাযিল হয়। আবার কখনো তা হয় তাদের মাধ্যমে সৎকর্মশীল লোকদের ওপর নাযিলকৃত ইলহাম অর্থাৎ অভাবনীয় পন্থায় মানুষের মনে আল্লাহ যে প্রেরণার সঞ্চার (Inspiration) করেন তার আকারেও।
এ সত্যটির ভিত্তিতেই উল্লেখিত গুণাবলী সমৃদ্ধ ফেরেশতাদের কসম খাওয়া হয়েছে। অন্য কথায় যেন বলা হয়েছে, এ সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা যা আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে সক্রিয় রয়েছে, এ বিশ্ব-জাহানের এমন সমস্ত নিদর্শন যেগুলো আল্লাহর বন্দেগী বিমূখতার অশুভ ফল মানুষের সামনে তুলে ধরছে এবং বিশ্ব-জাহানের এ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা যার ফলে সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত অবিরাম একই সত্যের কথা বিভিন্নভাবে স্মরণ করানো হচ্ছে—-এ সবকিছুই মানুষের “ইলাহ” যে একজন, তারই সাক্ষ্য পেশ করছে।
“ইলাহ” শব্দটির ব্যবহার হয় দু’টি অর্থে। এক, এমন মাবুদ ও উপাস্য অর্থে, বাস্তবে ও সক্রিয়ভাবে যার বন্দেগী করা হচ্ছে। দুই, সে মাবুদ অর্থে, যিনি এমন মর্যাদার অধিকারী, যার ফলে প্রকৃতপক্ষে তাঁরই ইবাদাত ও বন্দেগী করা উচিত। এখানে ইলাহ শব্দটি দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ প্রথম অর্থে মানুষ তো বহু ইলাহ তৈরি করে রেখেছে। এজন্য আমি ইলাহ শব্দটির অনুবাদ করেছি “প্রকৃত মাবুদ।”
# সূর্য সবসময় একই উদয়স্থল থেকে উদিত হয় না। বরং প্রতিদিন একটি নতুন স্থান থেকে উদিত হয়। তাছাড়া সারা দুনিয়ায় সে একই সময় উদিত হয় না বরং দুনিয়ায় বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময় উদিত হয়। এসব কারণে উদয়স্থলের পরিবর্তে “সমস্ত উদয়স্থল” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং এ সঙ্গে “সমস্ত অস্তস্থল”–এর কথা না বলার কারণ হচ্ছে এই যে, সমস্ত উদয়স্থল শব্দেই অস্তস্থল প্রমাণ করে। তবুও এক জায়গায় رَبِّ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ (উদয়স্থলগুলো ও অস্তস্থলগুলোর রব) শব্দগুলোও এসেছে। (আল মা’আরিজ, ৪০)
# এ আয়তগুলোতে যে সত্যটি বুঝানো হয়েছে সেটি হচ্ছে এই যে, বিশ্ব-জাহানের আসল মালিক ও শাসনকর্তাই মানুষের আসল মা’বুদ। তিনিই প্রকৃতপক্ষে মা’বুদ হতে পারেন এবং তাঁরই মাবুদ হওয়া উচিত। রব (মালিক, শাসনকর্তা ও প্রতিপালক) হবে একজন এবং ইলাহ (ইবাদাত লাভের অধিকারী) হবে অন্যজন, এটা একেবারেই বুদ্ধি বিরোধী কথা। মানুষের লাভ ও ক্ষতি, তার অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ হওয়া, তার ভাগ্য ভাঙা-গড়া বরং তার নিজের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বই যার ক্ষমতার অধীনে তাঁর শ্রেষ্টত্ব ও প্রাধান্য স্বীকার করা এবং তাঁর সমানে নত হওয়া মানুষের প্রকৃতিরই দাবী। এটিই তাঁর ইবাদাতের মৌল কারণ। মানুষ যখন একথাটি বুঝতে পারে তখন আপনা আপনি সে একথটিও বুঝতে পারে যে, ক্ষামতার অধিকারীর ইবাদাত না করা এবং ক্ষমতাহীনের ইবাদাত করা দু’টোই বুদ্ধি ও প্রকৃতির সুস্পষ্ট বিরোধী। কর্তৃত্বশালী ইবাদাত লাভের হকদার হন। কর্তৃত্বহীন সত্তারা এর হকদারও হয় না। তাদের ইবাদাত করে এবং তাদের কাছে কিছু চেয়ে কোন লাভও হয় না। কারণ আমাদের কোন আবেদনের ভিত্তিতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কোন ক্ষমতাই তাদের নেই। তাদের সামনে বিনয়, দীনতা ও কৃতজ্ঞতা সহকারে মাথা নত করা এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করা ঠিক তেমনিই নির্বুদ্ধিতার কাজ যেমন কোন ব্যক্তি কোন শাসনকর্তার সামনে হাজির হয়ে তার কাছে আর্জি পেশ করার পরিবর্তে অন্য প্রার্থীরা যারা সেখানে আবেদনপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্য থেকে কারো হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকে।
# দুনিয়ার আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে নিকটবর্তী আকাশকে, কোন দূরবীনের সাহায্য ছাড়াই খালি চোখে যে আকাশকে আমরা দেখতে পাই। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে যে বিশ্বকে আমরা দেখি এবং আমাদের পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যেসব বিশ্ব এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে “সামা” বা আকাশ কোন নির্দিষ্ট জিনিসের নাম নয়। বরং প্রাচীনতমকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মানুষ এ শব্দটি এবং এর সমার্থক শব্দাবলীকে ঊর্ধ্ব জগতের জন্য ব্যবহার করে আসছে।
# ঊর্ধ্বজগত নিছক মহাশূন্য নয়। যে কেউ চাইলেই তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। বরং এর বাঁধন অত্যন্ত মজবুত। এর বিভিন্ন অংশকে এমন সুদৃঢ় সীমান্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত করা হয়েছে যার ফলে কোন বিদ্রোহী শয়তানের পক্ষে সে সীমানাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব নয়। বিশ্ব-জাহানের প্রত্যেকটি গ্রহ নক্ষত্রের নিজস্ব একটি কক্ষপথ ও আকাশ (Sphere) আছে। তার মধ্যে থেকে কারো বের হয়ে আসা যেমন অত্যন্ত কঠিন তেমনি বাইর থেকে কারো তার মধ্যে প্রবেশ করাও সহজ নয়। বাইরের দৃষ্টি দিয়ে দেখলে নিছক মহাশূন্য ছাড়া সেখানে আর কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু আসলে সে মহাশূন্যের মধ্যে অসংখ্য ও অগণিত অংশকে এমন শক্তিশালী ও সুদৃঢ় সীমানা দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়েছে যার মোকাবিলায় লৌহ প্রাচীর কিছুই নয়। মানুষের কাছের প্রতিবেশী চাঁদে পৌঁছতে মানুষকে যেসব বিচিত্র সমস্যা ও বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা থেকে এ ব্যাপারে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য জীব অর্থাৎ জিনদের ঊর্ধ্বজগতে প্রবেশ করার পথেও এমনি বাধা-প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
# এ বিষয়টি বুঝতে হলে একটি কথা অবশ্যই দৃষ্টি সমক্ষে থাকতে হবে। সে সময় আরবে জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যাপক চর্চা ছিল। বিভিন্ন স্থানে গণক ও জ্যোতিষীরা বসে ভবিষ্যদ্বাণী করতো। অদৃশ্যের সংবাদ দিতো। হারিয়ে যাওয়া জিনিসের সন্ধান দিতো। লোকেরা নিজেদের অতীত ও ভবিষ্যেতের অবস্থা জানান জন্য তাদের দ্বারস্থ হতো। এ গণকদের দাবী ছিল, জ্বীন ও শয়তানরা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তারা তাদেরকে সব ধরনের খবর এনে দেয়। এ পরিবেশে রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নবুওয়াতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন এবং তিনি কুরআন মজীদের আয়াত শুনাতে শুরু করেন। তাতে অতীতের ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে যেসব অবস্থার সৃষ্টি হবে তার খবর দেয়া হয়েছিল। এ সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসব আয়াত নিয়ে আসেন এতে তাঁর বিরোধীরা সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গণক বলে পরিহাস করতে থাকে। তারা লোকদেরকে বলতে থাকে, অন্যান্য গণকদের মতো তাঁর সম্পর্কও এমন কোন শয়তানের সাথে রয়েছে যে ঊর্ধ্বজগত থেকে আড়ি পেতে কিছু শুনে তাঁর কাছে নিয়ে আসে এবং তিনি তাকে আল্লাহর অহী বানিয়ে পেশ করে দেন। এ অপবাদের জবাবে আল্লাহ যে সত্য বিবৃত করছেন তা এই যে, শয়তানরা তো ঊর্ধ্বজগতে পৌঁছতেই পারে না। ফেরেশতাদের কথা শোনা এবং তা নিয়ে এসে কাউকে বলার ক্ষমতা তাদের নেই। আর যদি ঘটনাক্রমে সামান্য একটু ছিটে ফোঁটা তথ্য কোন শয়তানের কানে পড়ে যায় তাহলে সে তা নিয়ে নিচে নেমে আসার আগেই একটি দ্রুতগামী অগ্নিশিখা তার পিছু নেয়। অন্যকথায় এর অর্থ হচ্ছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে বিশ্ব-জাহানের যে বিশাল ব্যবস্থা চলছে তা পুরোপুরি শয়তানদের হস্তক্ষেপ মুক্ত। তাতে হস্তক্ষেপ করাতো দূরের কথা সে সম্পর্কে কিছু জানার ক্ষমতাও তাদের নেই। (আরো বেশী জানতে হলে তাফহীমুল কুরআন সূরা আল হিজর, ৮ থেকে ১২ টীকা দেখুন।)
# আখেরাত সম্পর্কে মক্কার কাফেররা যে সন্দেহ পেশ করতো এটি তার জওয়াব। তাদের মতে আখেরাত সম্ভব নয়। কারণ যেসব মানুষ মরে গেছে তাদের আবার দ্বিতীয়বার জন্মলাভ করা অসম্ভব। এর জবাবে আখেরাতের সম্ভাবনায় যুক্তি পেশ করতে গিয়ে আল্লাহ সর্বপ্রথম তাদের সামনে এ প্রশ্ন রাখেন, তোমাদের মতে যদি মৃত মানুষদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করা অনেক কঠিন কাজ হয়ে থাকে এবং এ সৃষ্টি করার ক্ষমতা আমার না থেকে থাকে তাহলে বলো, এ পৃথিবী ও আকাশ এবং এদের যে অসংখ্য জিনিস রয়েছে এগুলো সৃষ্টি করা কি সহজ কাজ? তোমাদের বুদ্ধি কোথায় হারিয়ে গেছে? যে আল্লাহর জন্য এ বিশাল বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করা কঠিন কাজ ছিল না এবং যিনি তোমাদের নিজেদেরকে একবার সৃষ্টিও করেছেন তাঁর ব্যাপারে তোমরা কেমন করে ভাবতে পারলে যে তোমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করতে তিনি অক্ষম?
# এ মানুষ তো বিরাট জিনিস নয়। মাটি দিয়ে একে তৈরি করা হয়েছে এবং এ মাটি দিয়ে আবার তৈরি করা যেতে পারে। আঠাল কাদামাটি দিয়ে মানুষ তৈরি করার অর্থ এও হতে পারে যে, প্রথম মানুষটিকে সৃষ্টি করা হয়েছিল মাটি দিয়ে এবং তারপর মানুষের বংশধারা ঐ প্রথম মানুষটির শুক্রবীজ থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে। এর অর্থ এও হতে পারে যে, প্রত্যেকটি মানুষ আঠাল কাদামাটির তৈরি। কারণ মানুষের অস্তিত্বের সমস্ত উপাদান মাটি থেকেই লাভ করা হয়। যে বীর্যে তার জন্ম তা খাদ্য থেকে তৈরি এবং গর্ভসঞ্চার থেকে শুরু করে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তার সমগ্র অস্তিত্ব যেসব উপাদানে তৈরি হয় তার খাদ্যই তার সবটুকু সরবরাহ করে। এ খাদ্য পশু ও জীবজন্তু থেকে সরবরাহকৃত হোক বা উদ্ভিদ থেকে মূলত এর উৎস হচ্ছে মাটি, যা পানির সাথে মিশে মানুষের খাদ্য হওয়ার এবং তরকারী ও ফল উৎপন্ন করার যোগ্যতা অর্জন করে এবং জীবজন্তু লালন করারও যোগ্যতা অর্জন করে, যাদের দুধ ও গোশ্ত মানুষ আহার করে।
কাজেই যুক্তির বুনিয়াদ এরই ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, এ মাটি যদি জীবন গ্রহণ করার যোগ্যতা না রাখতো তাহলে তোমরা কেমন করে জীবিত আকারে দুনিয়ার বুকে বিরাজ করছো? আর যদি তার মধ্যে জীবন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে, যেমন তোমাদের অস্তিত্বই এ সম্ভানার দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ পেশ করছে, তাহলে আগামীকাল এ একই মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি অসম্ভব হবে কেন?
# ঐন্দ্রজালিক জগতের কথা। এ ব্যক্তি বলছে কোন ঐন্দ্রজালিক জগতের কথা। সেখানে মৃতরা পুনরুজ্জীবিত হবে। আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে। জান্নাত আবাদ করা হবে। জাহান্নামীদের শাস্তি বিধান করা হবে। অথবা এর এ অর্থও হতে পারে যে, এ ব্যক্তি মন ভুলানো কথা বলছে। এর এ কথাগুলোই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, কেউ এর ওপর যাদু করে দিয়েছে, যার ফলে এ সুস্থ-সচেতন ব্যক্তিটি এখন এ ধরনের আবোল-তাবোল কথা বলছে।
# আল্লাহ তোমাদেরকে যা ইচ্ছা তাই বানাতে পারে। যখন তিনি চাইলেন তখনই তাঁর একটি ইশারাতেই তোমরা অস্তিত্ব লাভ করলে। যখন তিনি চাইবেন তখনই তাঁর একটি ইঙ্গিতেই তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। আবার যখন তিনি চাইবেন সাথে সাথেই তাঁর একটি ইংগতিই তোমাদেরকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে।
# এ ঘটনা সংঘটিত হবার যখন এসে যাবে তখন দুনিয়াকে পুনরায় উত্থিত করা কঠিন কাজ হবে না। একটি মাত্র বিকট ধমক ঘুমন্তদেরকে জাগিয়ে উঠিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট হবে। “বিকট ধমক” শব্দটি বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে মৃতুর পর পুনরুত্থানের এমন কিছু ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে যা থেকে বুঝা যায়, সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ মরে গিয়েছিল সবাই যেন শুয়ে ঘুমোচ্ছে এবং হঠাৎ কেউ ধমক দিয়ে বললো, “উঠে পড়ো” আর সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে তারা সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।
# হতে পারে মু’মিনরা তাদেরকে একথা বলে। এও হতে পারে, এটি ফেরশতাদের উক্তি। এও হতে পারে, হাশরের ময়াদনের সমগ্র পরিবেশ সে সময় সমকালীন পরিস্থিতির মাধ্যমে একথা বলছিল। আবার এও হতে পারে, এটা তাদের নিজেদেরই দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ নিজেদের মনে মনে তারা নিজেদেরকেই সম্বোধন করে বলছিল, এ দুনিয়ায় সারা জীবন তোমরা একথা মনে করতে থেকেছো যে, ফায়সালা করার দিন কখনো আসবে না, কিন্তু এখন তোমাদের সর্বনাশের সময় এসে গেছে, যেদিনকে মিথ্যা বলতে সেদিনটি আজ তোমাদের সামনে উপস্থিত।
# জালেম বলতে কেবল তাদেরকে বুঝানো হয়নি যারা অন্যের প্রতি জুলুম করেছে। বরং কুরআনের পরিভাষায় এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই জালেম যে আল্লাহর মোকাবিলায় বিদ্রোহ, সীমালঙ্ঘন ও নাফরমানির পথ অবলম্বন করেছে।
# মূলে أَزْوَاجَ (আয্ওয়াজ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ তাদের এমন সব স্ত্রীও হতে পারে যারা এ বিদ্রোহে সহযোগী ছিল। আবার এমনসব লোকও হতে পারে যারা তাদেরই মতো বিদ্রোহী সীমালংঘনকারী ও নাফরমান ছিল। এছাড়া এর অর্থ এও হতে পারে যে, এক এক ধরনের অপরাধীকে আলাদা আলাদা জোটের আকারে একত্র করা হবে।
# এখানে মাবুদদের অর্থ দু’ধরনের মাবুদ। এক, এমনসব মানুষ ও শয়তান যাদের নিজেদের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা এ ছিল যে, লোকেরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের বন্দেগী করুক। দুই, এমনসব মূর্তি, গাছ, পাথর ইত্যাদি যাদের পূজায় দুনিয়াবাসীরা লিপ্ত ছিল। এর মধ্যে প্রথম ধরনের মাবুদরা নিজেরাই অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং শাস্তির জন্য তাদেরকে জাহান্নামের পথ দেখানো হবে। আর দ্বিতীয় ধরনের মাবুদদেরকে তাদের ইবাদাতকারীদের সাথে এজন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে যে, তারা এদেরকে দেখে সবসময় লজ্জা অনুভব করবে এবং নিজেদের নির্বুদ্ধিতার অনুশোচনা করতে থাকবে। এরা ছাড়া তৃতীয় আর এক ধরনের মাবুদ হচ্ছে, দুনিয়ায় যাদেরকে পূজা করা হয়েছে কিন্তু তারা কখনো তাদের পূজা-উপাসনা করার প্রতি ইঙ্গিত করেনি। বরং তারা সবসময় মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করতে নিষেধ করেছেন। যেমন ফেরেশতা, আম্বিয়া ও আউলিয়া এ ধরনের মাবুদদেরকে মোটেই অন্যান্য মাবুদদের মতো তাদের উপাসনাকারীদের সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না।
# প্রথম বাক্যটি বলা হবে অপরাধীদেরকে সম্বোধন করে। দ্বিতীয় বাক্যটি উপস্থিত এমনসব সাধারণ ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্যে বলা হবে যারা সেসময় জাহান্নামের পথে অপরাধীদের রওয়ানা হবার দৃশ্য দেখতে থাকবে। এ বাক্যটি নিজেই জানিয়ে দিচ্ছে সেসময় অবস্থাটা কেমন হবে। বড় বড় তাগড়া অপরাধীদের কোমরের বল শেষ হয়ে যাবে। কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে তারা কান ধরে জাহান্নামের দিকে চলে যেতে থাকবে। কোথাও কোন ‘জাহাঁপনা’ ধাক্কা খেতে থাকবে এবং দরবারীদের মধ্য থেকে কেউ সেই “মহামতি মহামহিমকে” উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে না। কোথাও কোন বিশ্ব বিজয়ী ও কোন ডিরেক্টর চরম লাঞ্ছনা সহকারে চলে যেতে থাকবে এবং তার পরাক্রমশালী সেনাদল নিজেরাই তাকে দণ্ড দেবার জন্য এগিয়ে দেবে। কোথাও কোন পীর সাহেব বা গুরুজী অথবা হোলি ফাদার জাহান্নামের শাস্তি লাভ করবে এবং মুরীদদের একজনও “হুজুর আলা’র মর্যাদাহানির কথা ভাববে না। কোথাও কোন জাতীয় নেতা বড়ই হীনতার মধ্যে জাহান্নামের পথে যাত্রা করবে এবং দুনিয়ায় যেসব লোক তার শ্রেষ্টত্ব ও প্রাধান্যের ঝাণ্ডা বুলন্দ করে বেড়াতো তারা সবাই তার দিক থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নেবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, যে প্রেমিক দুনিয়ায় তার প্রেমাম্পদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল সেও তার প্রেমাম্পদের দুরবস্থার দিকে ভ্রুক্ষেপই করবে না। এ অবস্থার চিত্র এঁকে মহান আল্লাহ আসলে একথা বুঝাতে চান যে, দুনিয়ায় মানুষের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক খোদাদ্রোহিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে তা কিভাবে আখেরাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে এবং এখানে যারা নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত হয়ে আছে সেখানে তাদের অহংকারের দেয়াল কিভাবে মিসমার হয়ে যাবে।
# মূলে বলা হয়েছেঃ كُنْتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ الْيَمِينِ “তোমরা আমাদের কাছে আসতে ইয়ামীনের পথে।” ইয়ামীন শব্দটি আরবী ভাষায় বিভিন্ন অর্থে বলা হয়। যদি একে শক্তি অর্থে বলা হয়, তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে তাই তোমরা নিজেদের শক্তি ব্যবহার করে আমাদের গোমরাহীর দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয়, তাহলে এর অর্থ হবে, তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদের ধোঁকা দিয়েছো। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে, যে পথে তোমরা আমাদের চালাচ্ছো এটিই সত্য ও কল্যাণের পথ। তাই আমরা ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয়, তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদের নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করছো তা-ই সত্য।
# নেতা ও অনুসারী এবং গোমরাহ ও গোমরাহকারী উভয়ই একই শাস্তি লাভ করবে। অনুসারীরদের এ ওযর মেনে নেয়া হবে না যে, তারা নিজেরা গোমরাহ হয়নি বরং তাদেরকে গোমরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেতাদের এ ওযরও গ্রহণ করা হবে না যে, গোমরাহ লোকেরা নিজেরাই সরল-সত্য পথের প্রত্যাশী ছিল না।
# রসূলদেরকে সত্য বলে মেনে নেয়ার তিনটি অর্থ রয়েছে এবং এ তিনটি অর্থই এখানে প্রযুক্ত।
এক, তিনি পূর্ববর্তী এমন কোন রসূলের বিরোধিতা করেননি যার অনুসারীদের তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতো। বরং তিনি আল্লাহর সমস্ত পূর্ববর্তী রসূলকে সত্য বলতেন।
দুই, তিনি কোন নতুন ও অভিনব কথা আনেননি। বরং শুরু থেকে আল্লাহর সব রসূল যে কথা বলে আসছিলেন তিনিও সে একই কথা পেশ করতেন।
তিন, পূর্ববর্তী রসূলগণ তাঁর সম্পর্কে যেসব খবর দিয়েছিলেন তিনি সেগুলোর সঠিক প্রয়োগক্ষেত্র ছিলেন।