أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
[বই#৮৩৩]
সুরা: আল্ বনি ইসরাইল
সুরা:১৭
১২- নং আয়াত:-
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
[ وَ کُلَّ شَیۡءٍ فَصَّلۡنٰہُ تَفۡصِیۡلًا ﴿۱۲﴾
আমি সব কিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।
We have explained everything (in detail) with full explanation.]
www.motaher21.net
وَ جَعَلۡنَا الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ اٰیَتَیۡنِ فَمَحَوۡنَاۤ اٰیَۃَ الَّیۡلِ وَ جَعَلۡنَاۤ اٰیَۃَ النَّہَارِ مُبۡصِرَۃً لِّتَبۡتَغُوۡا فَضۡلًا مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ لِتَعۡلَمُوۡا عَدَدَ السِّنِیۡنَ وَ الۡحِسَابَ ؕ وَ کُلَّ شَیۡءٍ فَصَّلۡنٰہُ تَفۡصِیۡلًا ﴿۱۲﴾
আমি রাত্রি ও দিবসকে করেছি দু’টি নিদর্শন ও রাত্রিকে করেছি আলোকহীন এবং দিবসকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা ও হিসাব স্থির করতে পার।[১] আর আমি সব কিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।
And We have made the night and day two signs, and We erased the sign of the night and made the sign of the day visible that you may seek bounty from your Lord and may know the number of years and the account [of time]. And everything We have set out in detail.
১২ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মাত্র দুটি নিদর্শন বর্ণনা করছেন যা প্রমাণ করে যে, একমাত্র তিনিই রব এবং তিনিই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য, তাঁর কোনই শরীক নেই এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদতের হকদার নয়। এ নিদর্শন দু’টি হল রাত আর দিন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْ اٰيٰتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ)
“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রজনী ও দিবস, সূর্য ও চন্দ্র।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ)
“নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৯০)
এ ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত কুরআনে বিদ্যমান। যেমন সূরা ফুসসিলাত ৩৭ নং, সূরা ইউনুস ৬ নং সূরা মুমিনূনের ৮০ নং আয়াত।
তিনি দিবসকে করেছেন আলোকিত, যাতে করে মানুষ জমিনে বিচরণ করে তাদের জীবিকা উপার্জন করতে পারে, কার্য সম্পাদন করতে পারে এবং রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন যাতে তারা দিবসের ক্লান্তির পর বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে। যদি সর্বদা দিন তথা আলোকোজ্জ্বল থাকত তাহলে মানুষ বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারত না, দিবসে কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে শেষ হয়ে যেত। আর যদি শুধু রাত্রি থাকত তাহলে তাদের একই অবস্থা হত। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বল: ‘তোমরা ভেবে দেখছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন মা‘বূদ আছে, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বল: ‘তোমরা ভেবে দেখছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন মা‘বূদ আছে, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য করেছেন রাত ও দিন, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা ক্বাসাস ২৮:৭১-৭৩) আর এ দিন-রাত পরিবর্তনের মাঝে আরেকটি উপকারিতা হল দিন, সপ্তাহ, মাস ও বৎসর গণনা করে তারিখ নির্ধারণ করা। যদি সর্বদা দিন বা রাত থাকত তাহলে এ হিসাব-নিকাশ করা যেত না। কেননা মাস ও বৎসরের হিসাবের সাথে দুনিয়াবী ও ধর্মীয় অনেক বিধি-বিধান জড়িত। সুতরাং এ সব বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়াটা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও রহমত। এ সম্পর্কেও সূরা ইউনূস এ আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দিন-রাত দুটি নিদর্শন যা প্রমাণ করে আল্লাহ তা‘আলা একক ও সত্য মা‘বূদ।
২. দিন-রাতের পরিবর্তনের মাঝে মানুষের অনেক উপকার নিহিত রয়েছে।
৩. দিন-রাতের পরিবর্তনের সাথে ধর্মীয় অনেক বিধি-বিধান সম্পৃক্ত।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এর অর্থ হচ্ছে, বিরোধ ও বৈষম্যের কারণে ঘাবড়ে গিয়ে সবকিছু সমান ও একাকার করে ফেলার জন্য অস্থির হয়ে পড়ো না। এ দুনিয়ার সমগ্র কারখানাটাই তো বিরোধ, বৈষম্য ও বৈচিত্রের ভিত্তিতে চলছে। এর সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে তোমাদের সামনে প্রতিদিন এ রাত ও দিনের যাওয়া আসা। দেখো, এদের এ বৈষম্য তোমাদের কত বড় উপকার করছে। যদি তোমরা চিরকাল রাত বা চিরকাল দিনের মধ্যে অবস্থান করতে তাহলে কি এ প্রাকৃতিক জগতের সমস্ত কাজ কারবার চলতে পারতো? কাজেই যেমন তোমরা দেখছো বস্তু জগতের মধ্যে পার্থক্য, বিরোধ ও বৈচিত্রের সাথে অসংখ্য উপকার ও কল্যাণ জড়িত রয়েছে অনুরূপভাবে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি, চিন্তা-ভাবনা ও মেজাজ-প্রবণতার মধ্যে যে পার্থক্য ও বৈচিত্র পাওয়া যায় তাও বিরাট কল্যাণকর। মহান আল্লাহ তাঁর অতিপ্রাকৃত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এ পার্থক্য ও বৈষম্য খতম করে সমস্ত মানুষকে জোরপূর্বক মু’মিন ও সৎ বানিয়ে দেবেন অথবা কাফের ও ফাসেকদেরকে ধ্বংস করে দিয়ে দুনিয়ায় শুধুমাত্র মু’মিন ও অনুগত বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবেন, এর মধ্যে কল্যাণ নেই। এ আশা পোষণ করা ঠিক ততটাই ভুল যতটা ভুল শুধুমাত্র সারাক্ষণ দিনের আলো ফুটে থাকার এবং রাতের আঁধার আদৌ বিস্তার লাভ না করার আশা পোষণ করা। তবে যে জিনিসের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হেদায়াতের আলো যাদের কাছে আছে তারা তাকে নিয়ে গোমরাহীর অন্ধকার দূর করার জন্য অনবরত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকবে এবং যখন রাতের মতো কোন অন্ধকারের যুগ শুরু হয়ে যাবে তখন তারা সূর্যের মতো তার পিছু নেবে যতক্ষণ না উজ্জ্বল দিনের আলো ফুটে বের হয়।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মফলের যৌক্তিকতা : যারা কোরআন দ্বারা হেদায়াত লাভ করে না, তারা মানবীয় খেয়ালখুশীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। আর মানুষ স্বভাবতই দ্রুততাপ্রিয়, নিজের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে অজ্ঞ এবং নিশ্চিত অকল্যাণকর জেনেও নিজের ভাবাবেগের গােলাম হয়ে থাকে। ‘আর মানুষ যেভাবে নিজের কল্যাণকে আহ্বান করে, ঠিক সেইভাবে তার অকল্যাণকেও আহ্বান করে। মানুষ বড়ই দ্রুততা প্রিয়।’ কারণ সে কিসের পরিণতি ও শেষফল কী তা জানে না। জানে না বলেই ক্ষতিকর কাজও সে করে এবং তা দ্রুততার সাথে করে। কখনাে কখনাে সে ক্ষতিকর জেনেও করে। কেননা, নিজেকে সংযত করতে পারে না। এ অবস্থাটা তার হতাে না যদি সে কোরআন থেকে হেদায়াত লাভ করতাে। মানুষের ভাবাবেগ আর কোরআনের হেদায়াত-এ দু’য়ের ভেতরে অনেক ব্যবধান। রসূল(স.)-এর নৈশ ভ্রমণ, সেই ভ্রমণের সময় যেসব অলৌকিক ঘটনা ঘটে ও যেসব নিদর্শন তিনি দেখেন, হযরত নূহ(আ.) ও তার সাথে নৌকায় আরােহণকারী মোমেনরা, বনী ইসরাঈলের ঘটনা ও তাদের পরিণতি, এই পরিণতি থেকে আল্লাহর যে প্রাকৃতিক বিধান জানা যায়, কর্মফল সংক্রান্ত যে নীতি জানা যায় এবং সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নির্ভুল বিধানসম্বলিত এই সর্বশেষ কিতাব কোরআনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করার পর নবীদের মােজেযা ও প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী নিয়ে পরবর্তী আয়াতগুলােতে আলােচনা করা হয়েছে। সেই সাথে দেখানাে হয়েছে এই প্রাকৃতিক বিধানের সাথে মানুষের কর্মকান্ড, চেষ্টা, চেষ্টার ফল, আর রােযগার ও হিসাব নিকাশের গভীর সম্পর্ক। দেখানাে হয়েছে যে, আল্লাহর এই প্রাকৃতিক জগত তাঁরই রচিত প্রাকৃতিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও শাসিত, তারই রচিত প্রাকৃতিক নিয়ম ও বিধানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ওই সব নিয়ম কখনাে লংঘিত বা পরিবর্তিত হয় না। রাত ও দিনের আবর্তন ঘটায়। সেই অমােঘ প্রাকৃতিক বিধান। রাত ও দিনের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর পরিকল্পনা ও পরিচালনা অনুসারেই চলে এ মহাবিশ্ব। ‘আমি রাত ও দিনকে দুটো নিদর্শনের আকারে সৃষ্টি করেছি…'(আয়াত ১১-১২) বস্তুত যে প্রাকৃতিক বিধান রাত ও দিনকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার সাথে মানুষের উপার্জন প্রচষ্টা, বর্ষ ও কালের হিসাব, মানুষের ভালাে বা মন্দ কর্ম, ভালো ও মন্দ কাজের ফলাফল, হেদায়াত ও গােমরাহীর ফলাফল, একজন অন্যজনের কর্মফল বহন না করা সংক্রান্ত কঠোর ব্যক্তিগত বিধি, রসূল পাঠানাের আগে কোনাে মানব গােষ্ঠীকে ধ্বংস না করার খােদায়ী বিধান, বিত্তশালী নাগরিকদের পাপাচারের কারণে দেশকে ধ্বংস করার খােদায়ী রীতি এবং যারা দুনিয়া চায় ও যারা আখেরাত চায় তাদের উভয়ের পরিণতি নিবীড়ভাবে সম্পৃক্ত। এগুলো একটা শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় নীতিমালা অনুসারে চলে। এলােমেলাে ও অপরিকল্পিতভাবে চলে না। ‘আমি রাত ও দিনকে দুটো নিদর্শন বানিয়েছি। অতপর রাতের চিহ্ন মুছে ফেলেছি এবং দিনের চিহ্নকে চক্ষুষ্মান করেছি, যাতে তােমরা তােমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ খুঁজতে পারাে এবং বর্ষ সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার। আর প্রতিটি জিনিস আমি সবিস্তারে বর্ণনা করেছি।'(আয়াত ১১) বস্তুত রাত ও দিন দুটো বড় ধরনের প্রাকৃতিক নিদর্শন। এ নিদর্শন দুটো প্রাকৃতিক বিধানকে নির্ভুল ও অব্যর্থ প্রমাণ করে যে, এক মুহূর্তের জন্যেও তাতে কোনাে পরিবর্তন বা অচলাবস্থা দেখা দেয় না। দিন রাত অবিরাম গতিতে সচল ও সক্রিয় থাকে এই মহাবিশ্ব। তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, রাতের চিহ্ন মুছে ফেলা দ্বারা কী বুঝানাে হয়েছে। রাতের চিহ্ন তাে দিনের চিহ্নের মতােই বহাল রয়েছে। এর সঠিক জবাব তাে আল্লাহ তায়ালাই জানেন। তবে আমার মনে হয় এ দ্বারা রাতের অন্ধকারকে বুঝানাে হয়েছে, যার ভেতরে সব জিনিস আচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং সকল বস্তু ও প্রাণীর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ দিনের আলােয় যেভাবে প্রাণী ও বস্তুর নড়াচড়া ও তৎপরতা চলে, তার তুলনায় রাতটা যেন একেবারেই অস্তিত্বহীন। আর দিনের যে আলাে যাবতীয় জিনিসকে আলােকময় করে, সেই আলাে দিয়েই যেন দিন সব কিছুকে দেখতে পায় । রাতের এই নিশ্চিহ্ন হওয়া এবং দিনের এই আলােকময় হওয়ার উদ্দেশ্য এই যে, ‘যেন তােমরা তােমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ খুঁজতে পারাে এবং বর্ষ সংখ্যা ও হিসাব জানতে পারাে।’ রাত হলো বিশ্রামের জন্যে আর দিন কাজের জন্যে ও উপার্জনের জন্যে। রাত ও দিনের মাঝের ব্যবধান থেকেই মানুষ বর্ষ সংখ্যা, লেনদেনের প্রতিশ্রুতির হিসাব ও ঋতু বৈচিত্র সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হতে পারে। ‘প্রতিটি জিনিস আমি সবিস্তারে বর্ণনা করেছি।’ অর্থাৎ মহাবিশ্বে কোনাে জিনিস কাকতালীয়ভাবে এবং আকস্মিকভাবে ঘটে না। প্রাকৃতিক নিয়মের নির্ভুলতা থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহাবিশ্বের পরিচালনা ও পরিকল্পনার ব্যবস্থাও নির্ভুল ও নিখুঁত। এই নির্ভুল ও নিখুঁত প্রাকৃতিক বিধানের সাথে কর্ম ও কর্মফলের নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা তাঁর বড় বড় ক্ষমতার নিদর্শনাবলীর মধ্য হতে দু’টি নিদর্শনের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, দিবস ও রজনীকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে সৃষ্টি করেছেন। রাত্রিকে সৃষ্টি করেছেন আরামের জন্যে এবং দিবসকে সৃষ্টি করেছেন জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে। মানুষ যেন ঐ সময় কাজকর্ম করতে পারে, শিল্পকার্য ও ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে এবং ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করতে পারে। আর পর্যায়ক্রমে দিবস ও রজনীর গমনাগমনের ফলে মানুষ সপ্তাহ, মাস ও বছরের গণনা জানতে পারে, যাতে লেন দেন, পারস্পরিক কার্যকলাপে, ঋণে, মেয়াদের এবং ইবাদতের কাজকর্মে সুবিধা হয়। যদি সময় একটাই থাকতো তবে বড়ই কঠিন হয়ে পড়তো। সত্যি কথা এই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে শুধু রাতই রেখে দিতেন। কারো ক্ষমতা হতো না যে, সে দিন করতে পারে। আর যদি তিনি সর্বদা দিনই রেখে দিতেন তবে কার এমন ক্ষমতা ছিল যে, সে রাত্রি আনতে পারে? মহান আল্লাহর ক্ষমতার এই নিদর্শনগুলি শুনবার ও দেখবার যোগ্যই বটে। এটা একমাত্র তাঁরই রহমত যে, তিনি বিশ্রাম ও শান্তির জন্যে রাত্রি বানিয়েছেন এবং দিবসকে বানিয়েছেন জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে। এ দটি পর্যায়ক্রমে একে অপরের পরে আসতে রয়েছে, যাতে কত্তজ্ঞতা প্রকাশ ও উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা পোষণকারী সফলকাম হতে পারে। তাঁরই হাতে রয়েছে পর্যায়ক্রমে দিবস ও রজনীর গমনাগমন। তিনি রাত্রির পর্দা দিনের উপর এবং দিনের পর্দা রাত্রির উপর চড়িয়ে থাকেন। সূর্য ও চন্দ্র তাঁরই আয়ত্বাধীনে রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের নির্দিষ্ট সময়ের উপর চলতে রয়েছে। ঐ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও চরম ক্ষমাশীল। তিনি আরামদায়ক বানিয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিজ নিজ কাজে নিযুক্ত রেখেছেন, এটা তারই নির্ধারিত পরিমাণ যিনি মহাপরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। রাত্রিকে অন্ধকার ও চন্দ্রের প্রকাশের দ্বারা চেনা যায় এবং দিবসকে আলোক ও সূর্যোদয়ের দ্বারা জানা যায়। সূর্য ও চন্দ্র উভয়ই উজ্জ্বল ও আলোকময়। কিন্তু এ দুটির প্রতিও তিনি পূর্ণ লক্ষ্য রেখেছেন যেন প্রত্যেকটিকে চিনতে পারা যায়। সূর্যকে উজ্জ্বল ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় তিনিই করেছেন। মনযিল সমূহ তিনিই নির্ধারণ করেছেন যাতে হিসাব ও বছর জানা যায়। আল্লাহ তাআলার এই সৃষ্টি সত্য (শেষ পর্যন্ত)। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ “(হে নবী সঃ!) তারা তোমাকে চন্দ্রের (প্রাকৃতিক অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলে দাও, এই চন্দ্র সময় নির্ধারক যন্ত্র বিশেষ, মানুষের জন্যে এবং হজ্জের জন্যে (শেষ পর্যন্ত)।”
রাত্রির অন্ধকার সরে যায় এবং দিনের ঔজ্জ্বল্য এসে পড়ে। সূর্য দিনের লক্ষণ এবং চন্দ্র রাত্রির আলামত। আল্লাহ তাআলা চন্দ্রকে কিছু কালিমাযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তিনি রাত্রির নিদর্শন চন্দ্রকে সূর্যের তুলনায় কিছুটা অস্পষ্ট আলো বিশিষ্ট করেছেন। তাতে তিনি এক প্রকারের কলংক লেপন করেছেন। ইবনুল কাওয়া (রঃ) আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলীকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “চন্দ্রের মধ্যে এই কালিমা কিরূপ?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এরই বর্ণনা নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ “আমি রাত্রির নিদর্শন অর্থাৎ চন্দ্রের মধ্যে অস্পষ্টতা নিক্ষেপ করেছি (অস্পষ্ট আলো বিশিষ্ট করেছি) এবং দিনের নিদর্শন অর্থাৎ সূর্যকে করেছি অধিকতর উজ্জ্বল, এটা চন্দ্র অপেক্ষা উজ্জ্বলতর এবং অনেক বড়। দিন ও রাত্রিকে আমি দু’টি নিদর্শনরূপে নির্ধারণ করেছি। তাঁর সৃষ্টিই এইরূপ।”
(Book# 833)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al- Boni Israyel
Sura: 17
Verses :- 12
[ وَ کُلَّ شَیۡءٍ فَصَّلۡنٰہُ تَفۡصِیۡلًا ﴿۱۲﴾
We have explained everything (in detail) with full explanation.]
www.motaher21.net
وَ جَعَلۡنَا الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ اٰیَتَیۡنِ فَمَحَوۡنَاۤ اٰیَۃَ الَّیۡلِ وَ جَعَلۡنَاۤ اٰیَۃَ النَّہَارِ مُبۡصِرَۃً لِّتَبۡتَغُوۡا فَضۡلًا مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ لِتَعۡلَمُوۡا عَدَدَ السِّنِیۡنَ وَ الۡحِسَابَ ؕ وَ کُلَّ شَیۡءٍ فَصَّلۡنٰہُ تَفۡصِیۡلًا ﴿۱۲﴾
And We have made the night and day two signs, and We erased the sign of the night and made the sign of the day visible that you may seek bounty from your Lord and may know the number of years and the account [of time]. And everything We have set out in detail.
The Night and Day are Signs of the Great Power of Allah
Allah says:
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ايَتَيْنِ فَمَحَوْنَا ايَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا ايَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً
And We have appointed the night and the day as two Ayat (signs). Then, We have obliterated the sign of the night (with darkness) while We have made the sign of the day illuminating,
Allah reminds us of the great signs that He created, including the alternation of the night and day, so that people may rest at night, and go out and earn a living, do their work, and travel during the day, and so that they may know the number of days, weeks, months and years, so they will know the appointed times for paying debts, doing acts of worship, dealing with transactions, paying rents and so on.
Allah says:
لِتَبْتَغُواْ فَضْلً مِّن رَّبِّكُمْ
that you may seek bounty from your Lord,
meaning, in your living and travels etc.
وَلِتَعْلَمُواْ عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ
and that you may know the number of the years and to count.
If time stood still and never changed, we would not know any of these things, as Allah says:
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الَّيْلَ سَرْمَداً إِلَى يَوْمِ الْقِيَـمَةِ مَنْ إِلَـهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَأءٍ أَفَلَ تَسْمَعُونَ
قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَداً إِلَى يَوْمِ الْقِيَـمَةِ مَنْ إِلَـهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ أَفلَ تُبْصِرُونَ
وَمِن رَّحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ الَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُواْ فِيهِ وَلِتَبتَغُواْ مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
Say:”Tell me! If Allah made the night continuous for you till the Day of Resurrection, which god besides Allah could bring you light! Will you not then hear!”
Say:”Tell me! If Allah made the day continuous for you till the Day of Resurrection, which god besides Allah could bring you night wherein you rest! Will you not then see!”
It is out of His mercy that He has made for you the night and the day that you may rest therein and that you may seek of His bounty – and in order that you may be grateful. (28:71-73)
تَبَارَكَ الَّذِى جَعَلَ فِى السَّمَأءِ بُرُوجاً وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجاً وَقَمَراً مُّنِيراً
وَهُوَ الَّذِى جَعَلَ الَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُوراً
Blessed be He Who has placed the big stars in the heaven, and has placed therein a great lamp (sun), and a moon giving light.
And He it is Who has put the night and the day in succession, for such who desires to remember or desires to show his gratitude. (25:61-62)
وَلَهُ اخْتِلَـفُ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ
and His is the alternation of night and day. (23:80)
يُكَوِّرُ الَّيْـلَ عَلَى النَّهَـارِ وَيُكَوِّرُ النَّـهَارَ عَلَى الَّيْلِ وَسَخَّـرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُـلٌّ يَجْرِى لاًّجَـلٍ مُّسَـمًّى أَلا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
He makes the night to go in the day and makes the day to go in the night. And He has subjected the sun and the moon. Each running (on a fixed course) for an appointed term. Verily, He is the All-Mighty, the Oft-Forgiving. (39:5)
فَالِقُ الاِصْبَاحِ وَجَعَلَ الَّيْلَ سَكَناً وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَاناً ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
(He is the) Cleaver of the daybreak. He has appointed the night for resting, and the sun and the moon for reckoning. Such is the measuring of the All-Mighty, the All-Knowing. (6:96)
وَءَايَةٌ لَّهُمُ الَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ
وَالشَّمْسُ تَجْرِى لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَـا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
And a sign for them is the night. We withdraw therefrom the day, and behold, they are in darkness.
And the sun runs on its fixed course for a term (appointed). That is the decree of the All-Mighty, the All-Knowing. (36:37-38)
Allah has made the night a sign having distinguishing features by which it is known. These features include the darkness and the appearance of the moon. The day also has distinguishing features by which it is known; the light and the appearance of the shining sun. He made a distinction between the light of the moon and the light of the sun, so that they may be distinguished from one another, as Allah says:
هُوَ الَّذِى جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَأءً وَالْقَمَرَ نُوراً وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُواْ عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَلِكَ إِلاَّ بِالْحَقِّ
It is He Who made the sun a shining thing and the moon a light and measured out for it stages that you might know the number of years and to count (periods of time). Allah did not create this but in truth. (10:5) until,
لاايَـتٍ لِّقَوْمٍ يَتَّقُونَ
(Ayat for those people who keep their duty to Allah, and fear Him much). (10:6)
يَسْـَلُونَكَ عَنِ الَاهِلَّةِ قُلْ هِىَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
They ask you about the crescent moons.
Say:”These are signs to mark fixed periods of time for mankind and for the pilgrimage.” (2:189)
فَمَحَوْنَا ايَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا ايَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً
Then, We have obliterated the sign of the night (with darkness) while We have made the sign of the day illuminating,
Ibn Jurayj reported that Abdullah bin Kathir commented on this Ayah:
“(It means) the darkness of the night and the twilight of the day.”
Ibn Jurayj reported that Mujahid said:
“The sun is the sign of the day and the moon is the sign of the night.
فَمَحَوْنَا ايَةَ اللَّيْل
(We have obliterated the sign of the night), this refers to the moon’s blackness, which is how Allah has created it.”
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ايَتَيْنِ
And We have appointed the night and the day as two Ayat.
Ibn Abi Najih reported that Ibn Abbas said:
“By night and day, this is how Allah created them, may He be glorified.”
وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلً
And We have explained everything (in detail) with full explanation.
www.motaher21.net