(বই#৮৩৭) সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ১৭-২১ নং আয়াত:- [ وَكَفَى بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًَا بَصِيرًا বান্দাদের গুনাহ সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন এবং তিনি সবকিছু দেখছেন। Sufficient is your Lord as All-Knower and Seer of the sins of His servants.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৩৭)
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
১৭-২১ নং আয়াত:-

[ وَكَفَى بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًَا بَصِيرًا
বান্দাদের গুনাহ সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন এবং তিনি সবকিছু দেখছেন।
Sufficient is your Lord as All-Knower and Seer of the sins of His servants.]
www.motaher21.net
وَ کَمۡ اَہۡلَکۡنَا مِنَ الۡقُرُوۡنِ مِنۡۢ بَعۡدِ نُوۡحٍ ؕ وَ کَفٰی بِرَبِّکَ بِذُنُوۡبِ عِبَادِہٖ خَبِیۡرًۢا بَصِیۡرًا ﴿۱۷﴾
দেখো, কত মানব গোষ্ঠী নূহের পরে আমার হুকুমে ধ্বংস হয়ে গেছে। তোমার রব নিজের বান্দাদের গুনাহ সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন এবং তিনি সবকিছু দেখছেন।
And how many have We destroyed from the generations after Noah. And sufficient is your Lord, concerning the sins of His servants, as Acquainted and Seeing.
مَنۡ کَانَ یُرِیۡدُ الۡعَاجِلَۃَ عَجَّلۡنَا لَہٗ فِیۡہَا مَا نَشَآءُ لِمَنۡ نُّرِیۡدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَہٗ جَہَنَّمَ ۚ یَصۡلٰىہَا مَذۡمُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا ﴿۱۸﴾
কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি; সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।
Whoever should desire the immediate – We hasten for him from it what We will to whom We intend. Then We have made for him Hell, which he will [enter to] burn, censured and banished.
وَ مَنۡ اَرَادَ الۡاٰخِرَۃَ وَ سَعٰی لَہَا سَعۡیَہَا وَ ہُوَ مُؤۡمِنٌ فَاُولٰٓئِکَ کَانَ سَعۡیُہُمۡ مَّشۡکُوۡرًا ﴿۱۹﴾
আর যারা মুমিন হয়ে আখিরাতের কামনা করে করে এবং আখিরাতের জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।
But whoever desires the Hereafter and exerts the effort due to it while he is a believer – it is those whose effort is ever appreciated [by Allah ].
کُلًّا نُّمِدُّ ہٰۤؤُلَآءِ وَ ہٰۤؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّکَ ؕ وَ مَا کَانَ عَطَـآءُ رَبِّکَ مَحۡظُوۡرًا ﴿۲۰﴾
আপনার রবের দান থেকে আমরা এদের ও ওদের প্রত্যেককে সাহায্য করি এবং আপনার রবের দান অবারিত।
To each [category] We extend – to these and to those – from the gift of your Lord. And never has the gift of your Lord been restricted.
اُنۡظُرۡ کَیۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ وَ لَلۡاٰخِرَۃُ اَکۡبَرُ دَرَجٰتٍ وَّ اَکۡبَرُ تَفۡضِیۡلًا ﴿۲۱﴾
লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে তাদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। আর নিশ্চয়ই পরকাল মর্যাদায় বৃহত্তর ও মাহাত্ম্যেও শ্রেষ্ঠতর।
Look how We have favored [in provision] some of them over others. But the Hereafter is greater in degrees [of difference] and greater in distinction.

১৭-২১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতে أَمَرْنَا এর তিনটি অর্থ হতে পারে। যেমন

(১) কেউ কেউ বলেন: এখানে أَمَرْنَا দ্বারা ভাগ্যের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(أَتٰهَآ أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا)

“তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে।” (সূরা ইউনুস ১০:২৪)

আবার কেউ বলেন: এখানে أَمَرْنَا দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন কিন্তু তারা তা অমান্য করে অসৎ কাজে লিপ্ত হয় আর এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি এসে পড়ে।

(২) আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত লোকদেরকে সমাজের প্রধান বানিয়ে দেন। আর তারা অপরাধ করে ও সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে ফলে তাদের ওপর শাস্তি এসে যায়। আল্লাহ বলেন,

(وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا فِيْ كُلِّ قَرْيَةٍ أَكٰبِرَ مُجْرِمِيْهَا لِيَمْكُرُوْا فِيْهَا)

“অনুরূপভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানের অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।” (সূরা আন‘আম ৬:১২৩)

(৩) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: এর অর্থ এমনও হতে পারে যে, আমি তাদের শত্র“দের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেই এবং সেখানে তারা পাপাচারের শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। তখন তাদের ওপর শাস্তি এসে পড়ে। (ইবনে কাসীর ৫/৬৪)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যারা শুধু পার্থিব জীবন কামনা করে, পার্থিব জীবন তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তাদের সবাই চাহিদানুযায়ী পার্থিব জীবন পায় না। আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য যতটুকু ইচ্ছা তাকে কেবল ততটুকু দিয়ে থাকেন। কিন্তু আখিরাতে সে নিন্দনীয় ও ভর্ৎসনার সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(مَنْ کَانَ یُرِیْدُ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَا وَزِیْنَتَھَا نُوَفِّ اِلَیْھِمْ اَعْمَالَھُمْ فِیْھَا وَھُمْ فِیْھَا لَا یُبْخَسُوْنَﭞاُولٰ۬ئِکَ الَّذِیْنَ لَیْسَ لَھُمْ فِی الْاٰخِرَةِ اِلَّا النَّارُﺘ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوْا فِیْھَا وَبٰطِلٌ مَّا کَانُوْا یَعْمَلُوْنَ)

“যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেথায় তাদেরকে কম দেয়া হবে না। তাদের জন্য আখিরাতে অগ্নি ব্যতীত অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা নিরর্থক।” (সূরা হূদ ১১:১৫-১৬)

পক্ষান্তরে যারা ঈমানের সাথে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রেখে সেদিনের সফলতার জন্য ভাল কাজের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালায় তাদের প্রচেষ্টাকে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করা হয় এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে জান্নাত।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(مَنْ کَانَ یُرِیْدُ حَرْثَ الْاٰخِرَةِ نَزِدْ لَھ۫ فِیْ حَرْثِھ۪ﺆ وَمَنْ کَانَ یُرِیْدُ حَرْثَ الدُّنْیَا نُؤْتِھ۪ مِنْھَا ﺫ وَمَا لَھ۫ فِی الْاٰخِرَةِ مِنْ نَّصِیْبٍﭣ) ‏

“যে আখিরাতে ফসল কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বর্ধিত করে দেই এবং যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে এরই কিছু দেই, আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না।” (সূরা শুরা ৪২:২০)

সুতরাং প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির উচিত প্রতিটি সৎ আমলের দ্বারা আখিরাতের সফলতা কামনা করবে, দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ হাসিলের জন্য করবে না।

আর আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে রুযী ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কম-বেশি সবাইকে দিয়ে থাকেন। যারা দুনিয়া চায় তাদেরকে এবং যারা আখিরাত চায় তাদেরকেও দান করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা তার সকল বান্দার ওপরই নেয়ামত বর্ষণ করেন কেউ তার নিয়ামতসমূহ থেকে বঞ্চিত নয়। যে নেয়ামত ভোগ করে শুকরিয়া আদায় করবে তার জন্যই উত্তম প্রতিদান আর যারা কুফরী করবে তারাই হবে জাহান্নামী।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অযথা ধ্বংস করেন না; বরং তাদের কৃতকর্মের কারণেই তাদেরকে ধ্বংস করেন।
২. দুনিয়ার ওপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৩. সৎ আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হল ঈমান থাকতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# আশু লাভের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, যে জিনিস দ্রুত পাওয়া যায়। কুরআন মজীদে একে পারিভাষিক অর্থে দুনিয়ার জন্য ব্যবহার করেছে, অর্থাৎ যার লাভ ও ফলাফল এ দুনিয়ার জীবনেই পাওয়া যায়। এর বিপরীতার্থক পরিভাষা হচ্ছে “আখেরাত”, যার লাভ ও ফলাফল মৃত্যু পরবর্তী জীবন পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয়েছে।

# এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আখেরাত বিশ্বাস করে না অথবা আখেরাত পর্যন্ত সবর করতে প্রস্তুত নয় এবং শুধুমাত্র দুনিয়া এবং দুনিয়াবী সাফল্য ও সমৃদ্ধিকেই নিজের যাবতীয় প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে, সে যা কিছু পাবে এ দুনিয়াতেই পাবে। আখেরাতে সে কিছুই পেতে পারে না। আর শুধু যে আখেরাতে সে সমৃদ্ধি লাভ করবে না, তা নয়। বরং দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও আখেরাতে জবাবদিহির দায়িত্বের ব্যাপারে বেপরোয়া মনোভাব তার কর্মধারাকে মৌলিকভাবে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করবে, যার ফলে সে উল্টা জাহান্নামের অধিকারী হবে।
# তার কাজের কদর করা হবে। যেভাবে যতটুকুন প্রচেষ্টা সে আখেরাতের কামিয়াবীর জন্য করে থাকবে তার ফল সে অবশ্যই পাবে।

# দুনিয়ায় জীবিকা ও জীবন উপকরণ দুনিয়াদাররাও পাচ্ছে এবং আখেরাতের প্রত্যাশীরাও পাচ্ছে। এসব অন্য কেউ নয়, আল্লাহই দান করছেন। আখেরাতের প্রত্যাশীদেরকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা দুনিয়া পূজারীদের নেই এবং দুনিয়া পূজারীদের কাছে আল্লাহর নিয়ামত পৌঁছার পথে বাধা দেবার ক্ষমতা আখেরাত প্রত্যাশীদেরও নেই।

# আখেরাত প্রত্যাশীরা যে দুনিয়া পূজারীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী দুনিয়াতেই এ পার্থক্যটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ পার্থক্য এ দৃষ্টিতে নয় যে, এদের খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি-বাড়ি ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ঠাটবাট ও জৌলুস ওদের চেয়ে বেশী। বরং পার্থক্যটা এখানে যে, এরা যা কিছু পায় সততা, বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথে পায় আর ওরা যা কিছু লাভ করে জুলুম, নিপীড়ন, ধোঁকা, বেঈমানী এবং নানান হারাম পথ অবলম্বনের কারণে লাভ করে। তার ওপর আবার এরা যা কিছু পায় ভারসাম্যের সাথে খরচ হয়। এ থেকে হকদারদের হক আদায় হয়। এ থেকে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের অংশও দেয়া হয়। আবার এ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অন্যান্য সৎকাজেও অর্থ ব্যয় করা হয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া পূজারীরা যা কিছু পায় তা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বিলাসিতা, বিভিন্ন হারাম এবং নানান ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজে দু’হাতে ব্যয় করা হয়ে থাকে। এভাবে সব দিক দিয়েই আখেরাত প্রত্যাশীদের জীবন আল্লাহভীতি ও পরিচ্ছন্ন নৈতিকতার এমন আদর্শ হয়ে থাকে যা তালি দেয়া কাপড়ে এবং ঘাস ও খড়ের তৈরী কুঁড়ে ঘরেও এমনই ঔজ্জ্বল্য বিকীরণ করে, যার ফলে এর মোকাবিলায় প্রত্যেক চক্ষুষ্মানের দৃষ্টিতে দুনিয়া পূজারীদের জীবন অন্ধকার মনে হয়। এ কারণেই বড় বড় পরাক্রমশালী বাদশাহ ও ধনাঢ্য আমীরদের জন্যও তাদের সমগোত্রীয় জনগণের হৃদয়ে কখনো নিখাদ ও সাচ্চা মর্যাদাবোধ এবং ভালোবাসা ও ভক্তির ভাব জাগেনি। অথচ এর বিপরীতে অভুক্ত, অনাহরী ছিন্ন বস্ত্র ধারী, খেজুর পাতার তৈরী কুঁড়ে ঘরের অধিবাসী আল্লাহ ভীরু মর্দে দরবেশের শ্রেষ্টত্ব মেনে নিতে দুনিয়া পূজারীরা নিজেরাই বাধ্য হয়েছে। আখেরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য এ দু’দলের মধ্যে কার ভাগে আসবে এ সুস্পষ্ট আলামতগুলো সেই সত্যটির প্রতি পরিষ্কার ইঙ্গিত করছে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*দুনিয়া পুজারীদের পরিণতি : অনিবার্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সমাজ ব্যবস্থার সংশোধনে জাতির দায়িত্ব কতােখানি এবং দুষ্কর্মকারীদের প্রতিরােধ করে সমাজ থেকে পাপাচার নির্মূল ও ধ্বংসযজ্ঞের হুমকি থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী, তা এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হযরত নূহ(আ.)-এর পরবর্তী সকল জাতির ক্ষেত্রে এই নিয়ম যুগ যুগ কাল ধরে কার্যকরী থেকেছে। কোনাে সমাজে যখনই আল্লাহর নাফরমানী ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই তা এই ভয়াবহ পরিণতি অনিবার্য করে তুলেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নূহের পর আমি বহু জাতিকে ধ্বংস করেছি। তােমার প্রতিপালকই তার বান্দাদের গুনাহ জানা ও দেখার জন্যে যথেষ্ট'(আয়াত ১৭)  যারা একমাত্র দুনিয়ার জীবনের সুখ সমৃদ্ধিই চায় এবং এই দুনিয়ার উর্ধ্বে কী আছে, তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না, তাদের দুনিয়ার জীবনের সুখ আল্লাহ তায়ালা ও যার জন্যে যতােটুকু ইচ্ছা করেন ত্বরিত দিয়ে দেন। অতপর আখেরাতে তার জন্যে জাহান্নাম থাকে অপেক্ষমান এবং সেটাই তার যােগ্য পরিণাম। কেননা দুনিয়ার জীবনের ওপারের কথা যারা ভাবে না, তারা দুনিয়ার নােংরামিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকে, পশুর মতাে ভােগ বিলাসে মত্ত হয়ে যায় এবং প্রবৃত্তির লােভ লালসার কাছে আত্মসমর্পণ করে। ফলে পার্থিব জীবনের সুখ ভােগের জন্যে এমন সব কাজ করে, যা জাহান্নামকে অবধারিত করে তােলে। ১৮ নং আয়াতে এ কথাই বলা হয়েছে। ‘যে ব্যক্তি ইহকালের সুখ চায় আমি সেই সুখ যাকে যতােটুকু দিতে চাই-দেবাে, অতপর তার জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত করবাে, যেখানে সে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় জ্বলবে।’ অর্থাৎ কৃত কু-কর্মের জন্যে নিন্দিত এবং আযাব দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়া হলাে তার প্রাপ্ত কর্মফল। ‘আর যে ব্যক্তি আখেরাত চায় এবং মােমেন অবস্থায় তার জন্যে যথােপযুক্ত চেষ্টা সাধনা করে, তার চেষ্টার যথােপযুক্ত মূল্য দেয়া হবে।'(আয়াত ১৮)। বস্তুত যে ব্যক্তি  আখেরাত চায় তাকে তার জন্যে যথাযথ চেষ্টা করতেই হবে, তার জন্যে প্রয়ােজনীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে, তার দাবী পূরণ করতে হবে এবং এতদসংক্রান্ত সমস্ত চেষ্টা সাধনার ভিত্তি রাখতে হবে ঈমানের ওপর। আর ঈমান শুধু কামনা বাসনার নাম নয়। ঈমান হচ্ছে হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত সেই বিশ্বাসের নাম, যা তার কার্যকলাপ দ্বারা সত্য বলে প্রমাণিত হয়। আখেরাতের জন্যে করণীয় চেষ্টা সাধনা মানুষকে দুনিয়ার ন্যায়সংগত সুখ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে না, বরং তার দৃষ্টিকে উচ্চতর মার্গে সম্প্রসারিত করে মাত্র। ফলে দুনিয়ার সম্পদটাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় না। মানুষ যখন নিজেকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে, তখন দুনিয়ার সম্পদ ভােগে কোনাে ক্ষতি হয় না। কেননা সে সম্পদের গােলাম হয়ে যায় না। যে ব্যক্তি দুনিয়ার সুখ ও সম্পদ চায়, তার শেষ পরিণতি লাঞ্ছনা গঞ্জনায় পূর্ণ জাহান্নাম, সেখানে যে ব্যক্তি আখেরাতের সুখ চায় ও তার জন্যে যথােপযুক্ত চেষ্টা সাধনা করে, তার চেষ্টাকে যথােচিত মূল্য দেয়া হবে এবং তাকে ফেরেশতাদের মধ্যে সম্মানিত করা হবে। কারণ সে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাে। নিছক দুনিয়ার জন্যে যে জীবন যাপন করা হয়, তা পােকা মাকড় ও পশু পাখীর জীবনের চেয়ে উন্নত কিছু নয়। পক্ষান্তরে আখেরাতের জন্যে যে জীবন যাপন করা হয়, তা আল্লাহর কাছে পরম সম্মানাই জীবন। যে আল্লাহ তায়ালা তাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাকে আত্মা দিয়েছেন, যা যা তাকে আকাশে উত্তোলন করে যদিও সে পৃথিবীতে অবস্থান করে। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, যারা দুনিয়া চায় এবং যারা আখেরাত চায়, সেই উভয় গােষ্ঠী নিজ নিজ কাংখিত জিনিস যদি পায়, তবে তা অবশ্যই আল্লাহর দান হিসাবেই পায়। আর আল্লাহর দানকে কেউ ঠেকাতে পারে না। এ দান অবারিত ও উন্মুক্ত। আল্লাহ তায়ালা যাকেই দিতে চান দিতে পারেন। ২০ নং আয়াত দেখুন ‘আমি উভয় গােষ্ঠীকেই সাহায্য করি তােমার প্রভুর দান থেকেই। তােমার প্রভুর দান কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।’ এই উভয় শ্রেণীর মানুষের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তা তাদের সহায় সম্পদ, কাজকর্ম ও উপায় উপকরণ দ্বারা বুঝা যায়। অথচ পৃথিবীর উপায় উপকরণ ও ভূমি সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ। জগতেই যখন ব্যবধানটা টের পাওয়া যায়, তখন আখেরাতের সেই সুপরিসর জগতে ব্যবধানটা কতাে বড়াে হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। যে আখেরাতের সামনে দুনিয়া একটা মাছির ডানার সমান, সেই আখেরাতে এ দুই শ্রেণীর ব্যবধানও হবে বিশালকায়। ২১ নং আয়াত দেখুন ‘দেখাে, আমি কিভাবে তাদের এক দলকে অপর দলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। অবশ্যই আখেরাত উচ্চতর মর্যাদা সম্পন্ন এবং অগ্রাধিকারযােগ্য।’ এখন যে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠতর মর্যাদা চায়, তার প্রাপ্য রয়েছে আখেরাতে। সেখানে রয়েছে সুপ্রশস্ত জায়গা, যার সীমা কতদূর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। অতএব দুনিয়ার তুচ্ছ সম্পদের জন্যে নয়, আখেরাতের সেই অতুল বৈভবের জন্যেই প্রতিযােগিতা করা উচিত।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
মক্কার কুরায়েশদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে কুরায়েশের দল! তোমরা জ্ঞান ও বিবেকের সাথে কাজ কর এবং আমার এই সম্মানিত রাসূলকে (সঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না এবং এভাবে নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত হয়ে যেয়ো না। তোমাদের পূর্ববর্তী হযরত নূহের (আঃ) পরযুগের লোকদের কথা চিন্তা করে দেখো যে, রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করার। থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর দ্বারা এটাও জানা যাচ্ছে যে,হযরত নূহের (আঃ) পূর্বে হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত মানুষ দ্বীনে ইসলামের উপর ছিল। সুতরাং হে কুরায়েশরা! তোমরা তাদের অপেক্ষা বেশী সাজ-সরঞ্জাম, শক্তি এবং সংখ্যার অধিকারী নও। এতদসত্ত্বেও তোমরা নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) অবিশ্বাস করছো! কাজেই তোমরা আরো বেশী শাস্তির যোগ্য হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাআলার কাছে তার কোন বান্দার কোন কাজ গোপন নেই। ভাল ও মন্দ সবই তাঁর কাছে প্রকাশমান। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবই তিনি জানেন। প্রত্যেক আমল তিনি দেখতে রয়েছেন।
#
আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, যেব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে তার যে সব চাহিদাই পূর্ণ হবে তা নয়। বরং তিনি যার যে চাহিদা পূর্ণ করতে চান পূর্ণ করে থাকেন। হাঁ, তবে এইরূপ লোক পরকালে সম্পূর্ণরূপে শূন্য হস্ত রয়ে যাবে। সেখানে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। সেখানে সে অত্যন্ত লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় থাকবে। কেননা, এখানে সে একথাই বলেছিল। সে ধ্বংসশীলকে চিরস্থায়ীর উপর এবং দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়েছিল। এই জন্যেই সেখানে সে আল্লাহর করুণা হতে দূরে থাকবে।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর, পরকালে যার কোন ঘর নেই। এটা ঐ ব্যক্তিই জমা করে যার কোন বিবেক বুদ্ধি নেই।” হাঁ, তবে আখেরাতের সাক্ষাৎ যে কামনা করে এবং সঠিক পন্থায় আখেরাতের কাজে লাগে এরূপ পূণ্য অর্জন করে এবং তার অন্তরেও পূর্ণ মাত্রায় আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস থাকে, শাস্তি পুরস্কার ও ওয়াদাকে সঠিক বলে মনে করে এবং বিশ্বাস রাখে, তার চেষ্টা বিফলে যাবে না আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন।
#
আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, যেব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে তার যে সব চাহিদাই পূর্ণ হবে তা নয়। বরং তিনি যার যে চাহিদা পূর্ণ করতে চান পূর্ণ করে থাকেন। হাঁ, তবে এইরূপ লোক পরকালে সম্পূর্ণরূপে শূন্য হস্ত রয়ে যাবে। সেখানে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। সেখানে সে অত্যন্ত লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় থাকবে। কেননা, এখানে সে একথাই বলেছিল। সে ধ্বংসশীলকে চিরস্থায়ীর উপর এবং দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়েছিল। এই জন্যেই সেখানে সে আল্লাহর করুণা হতে দূরে থাকবে।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর, পরকালে যার কোন ঘর নেই। এটা ঐ ব্যক্তিই জমা করে যার কোন বিবেক বুদ্ধি নেই।” হাঁ, তবে আখেরাতের সাক্ষাৎ যে কামনা করে এবং সঠিক পন্থায় আখেরাতের কাজে লাগে এরূপ পূণ্য অর্জন করে এবং তার অন্তরেও পূর্ণ মাত্রায় আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস থাকে, শাস্তি পুরস্কার ও ওয়াদাকে সঠিক বলে মনে করে এবং বিশ্বাস রাখে, তার চেষ্টা বিফলে যাবে না আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন।
#
অর্থাৎ এই দুই প্রকারের লোকদেরকে আমি (আল্লাহ) বাড়িয়ে দিয়ে থাকি। এক প্রকার হলো তারা, যারা শুধু দুনিয়াই কামনা করে। আর দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো তারা, যারা পরকাল চায়। এদের যারা যেটা চায়, তার জন্যে সেটাই বৃদ্ধি করে থাকি। হে নবী (সঃ)! এটা তোমার প্রতিপালকের বিশেষ দান। তিনি এমন দানকারী ও এমন বিচারক যিনি কখনো জুলুম করেন না। ভাগ্যবানকে সৌভাগ্যবান এবং হতভাগ্যকে তিনি দুর্ভোগ দিয়ে থাকেন। তাঁর আহকাম কেউ খণ্ডন করতে পারে না। তোমার প্রতিপালকের দান অসাধারণ। তা কারো বন্ধ করার দ্বারা বন্ধও হয় না এবং কেউ সরাবার চেষ্টা করলে তা সরেও যায় না। তাঁর দান অফুরন্ত, তা কখনো কমে যায় না।

মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘দেখো, দুনিয়ায় আমি মানুষের বিভিন্ন শ্রেণী রেখেছি। তাদের মধ্যে ধনীও আছে, ফকীরও আছে এবং মধ্যবিত্ত আছে। কেউ। বাল্যবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করছে, কেউ পূর্ণ বার্ধক্যে উপনীত হয়ে মারা যাচ্ছে, আবার কেউ এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সে মারা যাচ্ছে। শ্রেণী বিভাগের দিক দিয়ে আখেরাত দুনিয়ার চেয়েও বেড়ে রয়েছে। কেউ তো শৃংখল পরিহিত হয়ে জাহান্নামের গর্তে অবস্থান করবে এবং কেউ জান্নাতে চরম সুখে কালাতিপাত। করবে। তারা তথায় বিরাট অট্টালিকায় নিয়ামত, শান্তিতে আরামের মধ্যে থাকবে। জান্নাতীদের মধ্যেও আবার শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। এক একটি শ্রেণী ও স্তরের মধ্যে আকাশ পাতালের ব্যবধান ও তারতম্য রয়েছে। জান্নাতের মধ্যে এইরূপ একশটি শ্রেণী রয়েছে। যারা সর্বোচ্চ শ্রেণীতে অবস্থান করবে তারা ইল্লীঈনকে এমনই দেখবে যেমন তোমরা কোন উজ্জ্বল তারকাকে উচ্চাকাশে দেখে থাকো। সুতরাং আখেরাত শ্রেণী ও ফজীলতের দিক দিয়ে খুবই বড়। তিবরানীর (রঃ) হাদীসে রয়েছে যে, যে বান্দা দুনিয়ায় যে দরজা বা শ্রেণী বাড়াতে চাইবে এবং নিজের চাহিদা পূরণে সফলকাম হবে, সে তার আখেরাতের দরজা বা শ্রেণীর মান কমিয়ে দেবে এবং তার দুনিয়ার চাহিদায় সে কৃতকার্য হবে। ফলে তার আখেরাতের শ্রেণীর মান হ্রাস পাবে, যা দুনিয়ার তুলনায় অনেক বড়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 837)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al- Boni Israyel
Sura: 17
Verses :- 17-21
[ وَكَفَى بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًَا بَصِيرًا
Sufficient is your Lord as All-Knower and Seer of the sins of His servants.]
www.motaher21.net

A Threat to Quraysh

Allah says;

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُونِ مِن بَعْدِ نُوحٍ

And how many generations have We destroyed after Nuh!

Warning the disbelievers of the Quraysh for rejecting His Messenger Muhammad, Allah says that He destroyed other nations who rejected the Messengers after Nuh.

This indicates that during the centuries between Adam and Nuh, humans were following Islam, as Ibn Abbas said:

“Between Adam and Nuh there were ten generations, during all of which humans were following Islam.”

The meaning (of the Ayah) is:

“You disbelievers are not more dear to Allah than they were, and you have rejected the most noble of the Messengers and the best of creation, so you are more deserving of punishment.”

وَكَفَى بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًَا بَصِيرًا

And sufficient is your Lord as All-Knower and Seer of the sins of His servants.

means, He knows everything they do, good and evil, and nothing at all is hidden from Him, may He be glorified and exalted.
The Reward of Those who desire this World and Those who desire the Hereafter

Allah says:

مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ

Whoever desires the quick-passing (transitory enjoyment of this world),

Allah tells us that not everyone who desires this world and its luxuries gets what he wants. That is attained by those whom Allah wants to have it, and they get what He wills that they should get.

This Ayah narrows down the general statements made in other Ayat.

Allah says:

عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاء لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ

We readily grant him what We will for whom We like. Then, afterwards, We have appointed for him Hell;

meaning, in the Hereafter,

يَصْلهَا

he will burn therein,

means, he will enter it until it covers him on all sides,

مَذْمُومًا

disgraced,

means, blamed for his bad behavior and evil deeds, because he chose the transient over the eternal,

مَّدْحُورًا

rejected,

means, far away (from Allah’s mercy), humiliated and put to shame.
وَمَنْ أَرَادَ الاخِرَةَ

And whoever desires the Hereafter,

wanting the Hereafter and its blessings and delights,

وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا

and strives for it, with the necessary effort due for it,

seeking it in the right way, which is following the Messenger.

وَهُوَ مُوْمِنٌ

while he is a believer,

means, his heart has faith, i.e., he believes in the reward and punishment,

فَأُولَيِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا

then such are the ones whose striving shall be appreciated, (rewarded by Allah).
Allah says:

كُلًّ نُّمِدُّ هَـوُلاء وَهَـوُلاء

On each these as well as those We bestow

كُلًّ
(On each) meaning,

on each of the two groups, those who desire this world and those who desire the Hereafter, We bestow what they want,

مِنْ عَطَاء رَبِّكَ

from the bounties of your Lord.

means, He is the One Who is in control of all things, and He is never unjust. He gives to each what he deserves, whether it is eternal happiness or doom. His decree is unstoppable, no one can withhold what He gives or change what He wants.

Allah says:

وَمَا كَانَ عَطَاء رَبِّكَ مَحْظُورًا

And the bounties of your Lord can never be forbidden.

meaning, no one can withhold or prevent them.

Qatadah said,

“(It means) they can never decrease.”

Al-Hasan and others said,

“(It means) they can never be prevented.”

Then Allah says.
انظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ

See how We prefer one above another,

meaning in this world, so that some are rich and some are poor, and others are in between; some are beautiful, some are ugly and others are in between; some die young while others live to a great age, and some die in between.

وَلَلخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلً

and verily, the Hereafter will be greater in degrees and greater in preferment.

means, the differences between them in the Hereafter will be greater than the differences between them in this world. Some of them will be in varying levels of Hell, in chains and fetters, while others will be in the lofty degrees of Paradise, with its blessings and delights.

The people of Hell will vary in their positions and levels, just as the people of Paradise will.

In Paradise there are one hundred levels, and the distance between one level and another is like the distance between heaven and earth.

It is recorded in the Two Sahihs that the Prophet said:

إِنَّ أَهْلَ الدَّرَجَاتِ الْعُلَى لَيَرَوْنَ أَهْلَ عِلِّيِّينَ كَمَا تَرَوْنَ الْكَوْكَبَ الْغَابِرَ فِي أُفُقِ السَّمَاء

The people of the highest levels (of Paradise) will see the people of `Illiyin as if they are looking at distant stars on the horizon.

Leave a Reply