(বই#৮৩৮) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-১] সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ২২-২৪ নং আয়াত:- [ لااَّ تَجْعَل مَعَ اللّهِ إِلَـهًا اخَرَ আল্লাহর সাথে অপর কোন উপাস্য স্থির করো না; Set not up with Allah any other ilah .] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৩৮) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-১]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
২২-২৪ নং আয়াত:-
[ لااَّ تَجْعَل مَعَ اللّهِ إِلَـهًا اخَرَ
আল্লাহর সাথে অপর কোন উপাস্য স্থির করো না;
Set not up with Allah any other ilah .]
www.motaher21.net
لَا تَجۡعَلۡ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتَقۡعُدَ مَذۡمُوۡمًا مَّخۡذُوۡلًا ﴿٪۲۲﴾
আল্লাহর সাথে অপর কোন উপাস্য স্থির করো না; করলে নিন্দিত ও নিঃসহায় হয়ে যাবে।
Do not make [as equal] with Allah another deity and [thereby] become censured and forsaken.
وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡہَرۡہُمَا وَ قُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا ﴿۲۳﴾
আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে । তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল।
And your Lord has decreed that you not worship except Him, and to parents, good treatment. Whether one or both of them reach old age [while] with you, say not to them [so much as], “uff,” and do not repel them but speak to them a noble word.
وَ اخۡفِضۡ لَہُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَ قُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ﴿ؕ۲۴﴾
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’
And lower to them the wing of humility out of mercy and say, “My Lord, have mercy upon them as they brought me up [when I was] small.”

২২-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

(لَا تَجْعَلْ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ…. )

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে সকলকে এ নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এ বিশ্বাস কর না যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ ইবাদত পাওয়ার হকদার আছে, অথবা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কেউ ইবাদত পাওয়ার হকদার আছে। বরং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার, তাঁর জন্যই সকল ইবাদত করতে হবে। যদি এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত না করে, অন্য কোন মা‘বূদের ইবাদত কর তাহলে অবশ্যই নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হবে। দুনিয়াতে তোমাকে তোমার বাতিল মা‘বূদেরা কোন উপকার করবে না, আখিরাতেও তারা কোন উপকার করতে পারবে না, তাদেরকে নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। এই শিরক ও তার পরিণতি সম্পর্কে সূরা নিসায় আলোচনা করা হয়েছে।

(وَقَضٰي رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوْا….)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের প্রত্যেক স্থানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের হকের (একমাত্র তাঁর ইবাদতের নির্দেশের) সাথে সাথে মানুষের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি সৎ ব্যবহার পাওয়ার হকদার তথা পিতা-মাতা তাদের কথা উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاعْبُدُوا اللّٰهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِه۪ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا)

“তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক কর না; এবং পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার কর” (সূরা নিসা ৪:৩৬)

এরূপ কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেখানে পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি যদি পিতা-মাতা মুশরিকও হয় তাহলেও তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে হবে, তবে আল্লাহর আনুগত্য বহির্ভূত কোন কাজ বা তাঁর সাথে শিরক করার নির্দেশ দিলে তাদের কথা মানা যাবে না, কিন্তু বিআদবীও করা যাবে না, সুন্দরপন্থায় বর্জন করতে হবে। হাদীসেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর ইবাদতের পর পিতা-মাতার হকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন কবীরাহ গুনাহ হল আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮৭০, সহীহ মুসলিম হা: ৮৭)

বিশেষ করে তারা উভয়ে বা একজন বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে, তাদের খেদমত করতে হবে এবং তাদের কথায় বা আচরণে কষ্ট পেয়ে মুখ দিয়ে উফ শব্দটিও উচ্চারণ করবে না, এমন কি ধমকস্বরেও কথা বলবে না। এসময় তারা খেদমতের বেশি মুখাপেক্ষী থাকে, কারণ নিজেরা স্বয়ংসম্পন্নভাবে চলতে ফিরতে পারে না, ঔষধ-ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়, কাপড় নষ্ট করে ফেলে ইত্যাদি। তাই এ সময়টির কথা আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। এবং সর্বদা তাদের সাথে উত্তম ভাষায় সম্মান দিয়ে কথা-বার্তা বলতে হবে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষায় পিতা-মাতা সন্তানের জান্নাতে ও জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম। কেউ যদি তাদের সেবা করে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন, আর সে জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে আর যদি কেউ তাদেরকে কষ্ট দেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও কষ্ট পান, এ জন্য তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। হাদীসে এসেছে

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা মিম্বরে আরোহণ করে তিনবার বললেন, আমীন, আমীন, আমীন। তখন সাহাবারা এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন । তিনি বললেন: আমার নিকট জিবরীল এসেছিল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ! ঐ ব্যক্তির নাক ধূলোমলিন হোক যার নিকট আমার নাম স্মরণ করার পর সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না। বলুন আমীন। আমি বললাম, আমীন। অতঃপর সে বলল: ঐ ব্যক্তির নাক ধূলোমলিন হোক যার কাছে রমযান মাস এসেছে আবার চলেও গেছে কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হয়নি। বলুন আমীন। আমি বললাম, আমীন। অতঃপর সে আবার বলল: ঐ ব্যক্তির নাক ধূলোমলিন হোক যে, তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে তার জীবদ্দশায় পেয়েছে কিন্তু সে জান্নাতে যেতে পারল না। বলুন আমীন। আমি বললাম, আমীন। (তিরমিযী-৩৫৪৫, যাওয়ায়েদুল মুসনাদ হা: ৭৪৪৪, সহীহ)

(جَنَاحَ الذُّلِّ) ‘নম্রতার বাহু’ অর্থাৎ পাখি যখন তার বাচ্চাদেরকে নিজ করুণার ছায়ায় রাখতে চায়, তখন তাদের জন্য নিজের ডানাকে নত করে দেয়। অর্থাৎ তুমিও তোমার পিতা-মাতার সাথে ঐরূপ উত্তম এবং করুণাসিক্ত আচরণ কর। আর তাদের ঐরূপ সেবাযত্ন কর যেরূপ সেবা-যত্ন তারা তোমার শিশুকালে করেছিল। আর তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করে বল:

(رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا)

‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর‎ যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ)

‘হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসেব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মু’মিনগণকে ক্ষমা করে দাও।’ (সূরা ইবরাহীম ১৪:৪১)

তবে যদি পিতা-মাতা বিধর্মী হয় তাহলে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। যেমনিভাবে ইবরাহীম (عليه السلام) তাঁর পিতার অবস্থা জানার পর তার জন্য দু‘আ করা থেকে বিরত থাকলেন। (তাওবা ৯:১০৩) তবে ভাল ব্যবহার করতে হবে এবং সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে অন্যের ইবাদত করা যাবে না।
২. পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। তাদের অবাধ্য হওয়া যাবে না।
৩. পিতা-মাতা বিধর্মী হলে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না, তবে ভাল আচরণ করতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# এ বাক্যাংশটির অন্য একটি অনুবাদ এভাবে করা যেতে পারে আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ তৈরী করে নিয়ো না অথবা অন্য কাউকে ইলাহ গণ্য করো না।
# এখানে এমন সব বড় বড় মূলনীতি পেশ করা হয়েছে যার ওপর ভিত্তি করে ইসলাম মানুষের সমগ্র জীবন ব্যবস্থার ইমারত গড়ে তুলতে চায়। একে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আন্দোলনের ঘোষণাপত্র বলা যায়। মক্কী যুগের শেষে এবং আসন্ন মাদানী যুগের প্রারম্ভ লগ্নে এ ঘোষণাপত্র পেশ করা হয়। এভাবে এ নতুন ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের বুনিয়াদ কোন্ ধরনের চিন্তামূলক, নৈতিক, তামাদ্দুনিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত মূলনীতির ওপর রাখা হবে তা সারা দুনিয়ার মানুষ জানতে পারবে। এ প্রসঙ্গে সূরা আন’আমের ১৯ রুকূ’ এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট টীকার ওপরও একবার চোখ বুলিয়ে নিলে ভাল হয়।
#সুরা: আল-আনয়াম
আয়াত নং :-151
টিকা নং:127, 128, 129, 130, 131,

قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَیْكُمْ اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا١ۚ وَ لَا تَقْتُلُوْۤا اَوْلَادَكُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍ١ؕ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَ اِیَّاهُمْ١ۚ وَ لَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ مَا بَطَنَ١ۚ وَ لَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالْحَقِّ١ؕ ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ

হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন।১২৭ (এক) তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না।
#(দুই) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।
# (তিন) দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো। (চার) প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না।# (পাঁচ) আল্লাহ‌ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায় সঙ্গতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না।# তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে।

# তোমরা যেসব বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছো সেগুলো তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আরোপিত বিধি-নিষেধ নয়। বরং মানুষের জীবনকে সুসংগঠিত ও সুসংবদ্ধ করার জন্য আল্লাহ‌ যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন এবং যেগুলো সর্বকালে ও সর্বদেশে আল্লাহর দেয়া শরীয়াতের মৌল বিষয় হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে সেগুলোই হচ্ছে আসল বিধি-নিষেধ। (তুলনামূলক আলোচনার জন্য বাইবেলের যাত্রা পুস্তক ২০ অধ্যায় দেখুন)।

# আল্লাহর সত্তায়, তাঁর গুণাবলীতে, তাঁর ক্ষমতা-ইখতিয়ারে বা তাঁর অধিকারে কোন ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করো না।

আল্লাহর সত্তায় শরীক করার অর্থ হচ্ছে, ইলাহী সত্তার মৌল উপাদানে কাউকে অংশীদার করা। যেমন খৃস্টানদের ত্রিত্ববাদের আকীদা, আরব মুশরিকদের ফেরেশতাদের আল্লাহর কণ্যা গণ্য করা এবং অন্যান্য মুশরিকদের নিজেদের দেব-দেবীদেরকে এবং নিজেদের রাজ পরিবারগুলোকে আল্লাহ বংশধর বা দেবজ ব্যক্তিবর্গ হিসেবে গণ্য করা-এসবগুলোই আল্লাহর সত্তায় শরীক করার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহর গুণাবলীতে শরীক করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর গুণাবলী আল্লাহর জন্য যে অবস্থায় থাকে ঠিক তেমনি অবস্থায় সেগুলোকে বা তার কোনটিকে অন্য কারোর জন্য নির্ধারিত করা। যেমন কারোর সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা যে, সমস্ত অদৃশ্য সত্য তার কাছে দিনের আলোর মতো সুস্পষ্ট। অথবা সে সবকিছু দেখে ও সবকিছু শোনে। অথবা সে সব রকমের দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা মুক্ত একটি পবিত্র সত্তা।

ক্ষমতা –ইখতিয়ারের ক্ষেত্রে শিরক করার অর্থ হচ্ছে, সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন ইলাহ হবার কারণে যে সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত সেগুলোকে বা সেগুলোর মধ্য থেকে কোনটিকে আল্লাহ ছাড়া আর কারোর জন্য স্বীকার করে নেয়া। যেমন অতি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কাউকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করা, কারোর অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ করা, কাউকে সাহায্য করা, কারোর হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, কারোর প্রার্থনা শোনা, ভাগ্য ভাঙ্গাগড়া করা। এছাড়া হারাম–হালাল ও জায়েয-নাজায়েযের সীমানা নির্ধারণ করা এবং মানব জীবনের জন্য আইন-বিধান রচনা করা। এসবই আল্লাহর বিশেষ ক্ষমতা ও ইখতিয়ার। এর মধ্য থেকে কোন একটিকেও আল্লাহ ছাড়া আর কারোর জন্য স্বীকার করা শিরক।

অধিকারের ক্ষেত্রে শিরক করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ হবার কারণে বান্দাদের ওপর আল্লাহর বিশেষ অধিকার রয়েছে। সে অধিকারসমূহ বা তার মধ্য থেকে কোন একটি অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারোর জন্য মেনে নেয়া। যেমন রুকূ ও সিজদা করা, বুকে হাত বেঁধে বা হাত জোড় করে দাঁড়ানো, সালামী দেয়া ও আস্তানা চুম্বন করা, নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ নযরানা ও কুরবানী পেশ করা, প্রয়োজন পূরণ ও সংকট দূর করার জন্য মানত করা, বিপদ-আপদে সাহায্যের জন্য আহবান করা এবং এভাবে পূজা-আর্চনা, সম্মান ও মর্যাদা দান করার জন্য অন্যান্য যাবতীয় পদ্ধতি একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত অধিকার। অনুরূপভাবে কাউকে এমন প্রিয় জ্ঞান করা যে, তার প্রতি ভালবাসার মোকাবিলায় অন্য সমস্ত ভালবাসাকে উৎসর্গ করে দেয়া হয় এবং কাউকে এমন ভয় করা যে, গোপনে ও প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় তার অসন্তোষকে ভীতির নজরে দেখা-এসবও একমাত্র আল্লাহর অধিকার। আল্লাহর শর্তহীন আনুগত্য করা, তাঁর নির্দেশকে ভুল ও নির্ভুলের মানদণ্ড মনে করা এবং এমন কোন আনুগত্যের শৃংখল নিজের গলায় পরিধান না করা যা আল্লাহর আনুগত্যের শৃংখলমুক্ত একটি স্বতন্ত্র আনুগত্য এবং যার নির্দেশের পেছনে আল্লাহর নির্দেশের সনদ নেই-এসবও আল্লাহর অধিকার। এ অধিকারগুলোর মধ্য থেকে যে কোন একটি অধিকারও কাউকে দেয়া হলে, তাকে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট নামগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি নাম না দিলেও তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করা হবে।

# আদব, সম্মান, আনুগত্য, সন্তুষ্টি বিধান, সেবা সবকিছুই সদ্ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের সর্বত্র পিতামাতার এ অধিকারকে তাওহীদের বিধানের পরপরই বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহর পর বান্দার অধিকারের দিক দিয়ে মানুষের ওপর তার পিতামাতার অধিকার সর্বাগ্রগণ্য।

# এখানে আসল শব্দ হচ্ছেفَوَاحِشَ এ শব্দটি এমন সব কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যেগুলো সুস্পষ্ট খারাপ কাজ হিসেবে পরিচিত। কুরআনে ব্যভিচার, সমকাম (পুরুষ কামিতা), উলংগতা, মিথ্যা দোষারোপ এবং পিতার বিবাহিত স্ত্রীকে বিয়ে করাকে ফাহেশ কাজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাদীসে চুরি ও মদপানের সাথে সাথে ভিক্ষাবৃত্তিকেও ফাহেশ ও অশ্লীল কাজের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অন্যান্য সমস্ত নির্লজ্জতার কাজও ফাহেশের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে এ ধরনের কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনভাবেই করা যাবে না।

# মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রাণকে হারাম ও মর্যাদা সম্পন্ন ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে ন্যায় ও সত্যের খাতিরে ছাড়া কোনক্রমেই ধ্বংস করা যাবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ “ন্যায়সঙ্গতভাবে” বা “ন্যায় ও সত্যের খাতিরে” এর অর্থ কি? কুরআনে আর তিনটি পর্যায় বর্ণিত হয়েছে এবং নবী ﷺ এর ওপর আরো দু’টি পর্যায় বৃদ্ধি করেছেন। কুরআনে বর্ণিত তিনটি পর্যায় হচ্ছেঃ

(১) যখন এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তিকে জেনে বুঝে হত্যা করার অপরাধ করে এবং হত্যাকারীর ওপর কিসাস বা রক্তপণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

(২) যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় এবং তার সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

(৩) যখন কোন ব্যক্তি দারুল ইসলামের সীমানার মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পতন ঘটাবার চেষ্টা করে।

হাদীসে বর্ণিত অন্য পর্যায় দু’টি হচ্ছেঃ
(৪)কোন ব্যক্তি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যিনা করলে।

(৫)কোন ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে গেলে এবং মুসলিম সমাজ ত্যাগ করলে। এ পাঁচটি পর্যায়ে ও অবস্থা ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় একজন মানুষ আর একজন মানুষকে হত্যা করতে পারে না। সে মু’মিন, যিম্মী বা সাধারণ কাফের যেই হোক না কেন, কোন ক্ষেত্রেই তার রক্ত হালাল নয়।

# এর অর্থ কেবল এতটুকুই নয় যে, আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো পূজা-উপাসনা করো না বরং এ সঙ্গে এর অর্থ হচ্ছে, বন্দেগী, গোলামী ও দ্বিধাহীন আনুগত্য একমাত্র আল্লাহরই করতে হবে। একমাত্র তাঁরই হুকুমকে হুকুম এবং তাঁরই আইনকে আইন বলে মেনে নাও এবং তাঁর ছাড়া আর কারো সার্বভৌম কর্তৃত্ব স্বীকার করো না। এটি কেবলমাত্র একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত কর্মধারার জন্য একটি পথনির্দেশনাই নয় বরং নবী ﷺ মদীনা তাইয়েবায় পৌঁছে কার্যত যে রাজনৈতিক, তামাদ্দুনিক ও নৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন এটি হচ্ছে সেই সমগ্র ব্যবস্থার ভিত্তি প্রস্তরও। এ ইমারতের বুনিয়াদ রাখা হয়েছিল এ মতাদর্শের ভিত্তিতে যে, মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহই সমগ্র বিশ্বলোকের মালিক ও বাদশাহ ‌ এবং তাঁরই শরীয়াত এ রাজ্যের আইন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

পূর্ববর্তী অধ্যায়ে কর্ম ও কর্মফল, হেদায়াত ও গােমরাহী এবং উপার্জন ও তার হিসাব-নিকাশের নীতিমালাকে দিন ও রাতের আবর্তন বিবর্তন করার প্রাকৃতিক বিধানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আর এই অধ্যায়ে নৈতিক আচরণ এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়দায়িত্বকে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের যাবতীয় সম্পর্ক ও বন্ধনকেও এই অবিচ্ছেদ্য ও অটুট সূত্রের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।  *শিরকের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা : পূর্ববর্তী অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, ‘এই কোরআন সবচেয়ে মযবুত ও নিখুঁত পথের সন্ধান দেয় এবং আমি সকল জিনিস সবিস্তারে বর্ণনা করেছি।’ বর্তমান অধ্যায়ে কোরআন সেসব বিধির কিছু অংশ তুলে ধরেছে, যা সবচেয়ে মযবুত ও নিখুঁত পথের সন্ধান দেয়। বর্ণনা করা হয়েছে সমাজ জীবনের সেসব আচরণবিধি, যা কোরআনের অন্যতম আলােচ্য বিষয়। এ অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে শিরক নিষিদ্ধ ও এককভাবে শুধু আল্লাহর এবাদাত অপরিহার্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এরপরই একে একে জারী হয়েছে মৌলিক বিধিসমূহ, যথা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, আত্মীয় স্বজন, দরিদ্র ও পথিকের প্রাপ্য দান করা, অপচয় ও অপব্যয় বন্ধ করা, বংশনিধন রোধ করা, ব্যাভিচার, হত্যা ও এতীমের সম্পত্তি আত্মসাতে নিষেধাজ্ঞা, ওয়াদা পালনের হুকুম, মাপে ও ওযনে কমবেশী করা, সত্য ও ন্যায়ের ওপর অবিচল থাকা, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিত্যাগ করা। সব শেষে পুনরায় শিরক থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ালাে এই যে, সব কটা আদেশ, নিষেধ ও নির্দেশ অধ্যায়ের সূচনা সমাপ্তি বক্তব্য তথা তাওহীদী আকীদা ও আদর্শের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং তার সাথে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ আর এই তাওহীদী আকীদা ও আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে মুসলমানদের গােটা জীবনের ভিত্তি। ‘আল্লাহর সাথে আর কোনাে মাবুদকে শরীক করাে না। তাহলে তুমি অবশ্যই ধিকৃত ও লাঞ্ছিত হয়ে বসে থাকবে।'(আয়াত ২২) এ আয়াতে শিরকে লিপ্ত হতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি তার পরিণতি সম্পর্কেও সাবধান করা হয়েছে। আদেশটা যদিও সার্বজনীন ও সর্বাত্মক, তথাপি একবচন ব্যবহার করে একে ব্যক্তিগত পর্যায়ের নির্দেশের রূপ দেয়া হয়েছে, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি অনুভব করে যে, আদেশটা তার জন্যেই এবং তার ওপরই জারীকৃত। প্রকৃতপক্ষে আকীদা বিশ্বাস মাত্রই ব্যক্তিগত বিষয় এবং প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবেই এর জন্যে দায়ী। আর যে ব্যক্তি তাওহীদ বিশ্বাস থেকে বিপথগামী হয়, তার জন্যে এই পরিণতিই অপেক্ষা করছে যে, সে তার এই নিন্দনীয় কাজের কারণে ধিকৃত ও নিন্দিত হবে, আর এ কারণে এতাে লাঞ্ছিত হবে যে, তার কোনাে সাহায্যকারীও থাকবে না। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা যার সাহায্যকারী হন না, তার আর যতাে সাহায্যকারীই থাকুক তাকে লাঞ্ছিত হতেই হবে। ‘বসে থাকবে’ কথাটা দ্বারা লাঞ্ছিত ও ধিকৃত মােশরেকের অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ লাঞ্ছনা ও ধিক্কার কুড়াতে কুড়াতে সে যেন দিশেহারা হয়ে বসে পড়েছে। ‘বসা’র অবস্থাটা দুর্বলতার লক্ষণ। কেননা মানুষের দুর্বলতম অবস্থা হলাে বসা অবস্থা। এটা লাঞ্ছনা-গঞ্জনার দীর্ঘস্থায়ীত্বের লক্ষণও বটে। কেননা ‘বসার অর্থই হলাে, পরিবর্তনহীনতা, স্থবিরতা ও নিস্তব্ধতা। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, এ শব্দটা যে অর্থ বুঝাচ্ছে, আসলে সেই অর্থটাই এখানে কাংখিত।
# তোমার প্রতিপালক ফয়সালা করে দিয়েছেন যে, তােমরা তার ছাড়া আর কারাে ইবাদাত করবে না।’ শিরককে নিষিদ্ধ করার পর এটা হচ্ছে তাওহীদের পক্ষে আদেশ। এ আদেশ চূড়ান্ত ফয়সালার আকারে উচ্চারিত হয়েছে এবং অত্যন্ত কঠোর তাকীদ সহকারে উচ্চারিত হয়েছে। এভাবে ভিত্তি স্থাপিত ও মূলনীতি নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পর ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের করণীয় কাজগুলাে একে একে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কাজগুলাের প্রত্যেকটার মূলে উৎসাহ যােগায় তাওহীদ সংক্রান্ত বদ্ধমূল বিশ্বাস । এই বিশ্বাস মানুষের যাবতীয় কাজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কে একীভূত করে।    *পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : আকীদা বিশ্বাসের সংযােগের পর সবচেয়ে অগ্রগণ্য বিষয় হলাে পরিবারের সাথে সংযােগ । এ জন্যে পিতামাতার সাথে সদাচার ও সদ্ব্যবহার আল্লাহর একত্বের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলাে, আল্লাহর কাছে এই সদ্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে যদি তােমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সামনে উহু করো না, তাদেরকে কষ্ট পাওয়ার মতাে কিছু বলোনা এবং তাদের দুজনের সাথে সসম্মানে কথা বলাে…'(আয়াত ২৩-২৪) মৃদু ও কোমল ভাষায় উচ্চারিত এই নির্দেশসমূহ এবং এই তাৎপর্যময় দৃশ্যসমূহ দ্বারা কোরআন সন্তানদের হৃদয়ে দয়া ও সহানুভূতির আবেগ সৃষ্টি করেছে। শুধু সন্তানদের নয় গােটা নতুন প্রজন্মের মনােযােগ আকর্ষন করে পিতা মাতা তথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রতি। এভাবে নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে পূর্ববর্তী প্রজন্ম তথা পিতামাতার প্রতি দয়া ও মমতা জাগ্রত হওয়া খুবই প্রয়ােজন। পিতা মাতা জন্মগতভাবেই সন্তানদের প্রতি দয়ার্দ্র। তারা সন্তান লালন পালনের জন্যে সব কিছু এমনকি প্রয়ােজনে নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। সবুজ-গাছের চারা যেমন বীজের সমস্ত খাদ্য খেয়ে উজাড় করে, মুরগীর বাচ্চা যেমন ভিমের ভেতরে সমস্ত খাদ্য নিঃশেষ করে দেয়, তেমনি সন্তানরাও পিতা মাতার সমস্ত সুখ শান্তি নিজেরাই উপভোগ করে পিতামাতার জন্যে রেখে দেয় বার্ধক্য। এই বার্ধক্য নিয়ে তারা যে কয়দিন সন্তানদের সাহচর্য দেয়ার অবকাশ পায়, তাতেই তারা সুখী। পক্ষান্তরে সন্তানরা খুব দ্রুত এসব ভুলে যায়। তারা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মেতে থাকে। এভাবেই জীবন একে একে নিঃশেষ হয়ে যায়। এ কারণে পিতা মাতা সন্তানদের জন্যে কোনাে ওসীয়ত লেখার প্রয়ােজন অনুভব করেন না। বরং অনুভব করেন তাদের ভাবাবেগ প্রচন্ডভাবে জাগিয়ে তােলার, যাতে তাদের বাবা মা তাদের জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করেছে সে কথা তারা মনে রাখে। এখানে আল্লাহর ইবাদতের আদেশের পরেই এসেছে পিতামাতার প্রতি সদাচরণের আদেশ। এরপর আয়াতে গোটা পরিবেশকে অত্যন্ত আবেগময় করে তােলা হয়েছে। শৈশবকাল স্নেহমমতার দৃশ্য তুলে ধরে আবেগ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ‘যদি তাদের কোনাে একজন কিংবা উভয়ে তােমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়…’ বার্ধক্যের একটা সহজাত গাম্ভীর্য রয়েছে, আর বার্ধক্যের দুর্বলতারও কিছু দাবী রয়েছে। ‘তােমার জীবদ্দসায়’ কথাটা দ্বারা বুঝানাে হয়েছে যে, বার্ধক্যের দুর্বল ও অসহায় সময়টাতে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়ােজন রয়েছে। ‘তাহলে তাদের সামনে বিরক্তিসূচক কোনাে কথা বলাে না এবং তাদেরকে ধমক দিও না।’ এ হচ্ছে সদাচরণ ও আদবের প্রথম ও নুন্যতম স্তর যে, সন্তানের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্রও বিরক্তি, বেআদবী ও অসম্মানের ভাব প্রকাশ পাবে না। ‘তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বার্তা বলো।’ এ হচ্ছে ইতিবাচক সম্মান ও আদবের সর্বোচ্চ স্তর। ‘তুমি তাদের উভয়ের জন্যে দয়া ও বিনয়ের ডানা নামিয়ে দাও।’ এ বাক্যটার বাচনভংগী এতাে সূক্ষ্ম ও স্বচ্ছ যে তা হৃদয়ের গভীরতম প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে এবং আবেগকে নাড়া দেয়। দয়া যেন মানুষের এক বিগলিত ও বিনম্র রূপ। দয়া যেন বিনয়েরই এমন এক রূপ, যার অধিকারী মানুষ চোখ তুলে তাকায় না এবং কোনাে ন্যায়সংগত বিষয়কেই প্রত্যাখ্যান করে না। বিনয়ের যেন ডানা আছে, যা নামিয়ে শান্তি ও আত্ম সমর্পণের ঘােষণা দেয়া হয়। ‘আর বলাে, হে আমার প্রতিপালক, তুমি তাদের উভয়কে ঠিক সেইভাবে দয়া করাে, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন।’ এ হলাে, আবেগবিজড়িত স্মৃতি। শৈশবের অসহায় ও দুর্বল অবস্থায় পিতামাতা কর্তৃক সন্তান পালনের স্মৃতি। আজ তারা উভয়ে একই ধরনের অসহায় অবস্থায় নিপতিত এবং একই ধরনের সাদর ও সস্নেহ লালন পালনের মুখাপেক্ষী। এ কারণেই আল্লাহর কাছে দয়া ও করুণা প্রার্থনা করা হয়েছে। কেননা আল্লাহর দয়াই সবচেয়ে প্রশস্ত। আল্লাহর তদারকীই সবচেয়ে ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী। আল্লাহর আশ্রয়ই প্রশস্ততম। পিতামাতা সন্তানের জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার প্রতিদান দেয়া সন্তানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের ত্যাগের যথাযথ প্রতিদান একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই দিতে পারেন। হাফেয আবু বকর আল বাযযার হযরত বারীদার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি তার মাকে ঘাড়ে করে তাওয়াফ করছিলাে। সে রাসূল(স.)-কে জিজেস করলাে, আমি কি মায়ের প্রাপ্য পরিশোধ করতে পেরেছি? রাসূল(স.) বললেন, ‘না, এমনকি সন্তানের জন্যে মা যতােবার কান্নাকাটি করেছে, তার কোনাে একবারের ঋণও এতে পরিশোধ হয়নি।’ যেহেতু আলােচ্য আয়াতগুলােতে মানুষের আবেগ ও কার্যকলাপকে আকীদা বিশ্বাসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, তাই এতে সব কিছুকে আল্লাহর জ্ঞানের আওতাধীন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যিনি অন্তর্যামী এবং কথা ও কাজের আড়ালে যা কিছু থাকে তা সম্পর্কে অবহিত।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

# ইবাদতের চাপ যাদের উপর রয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই আল্লাহ তাআলা এখানে সম্বোধন করেছেন। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সমস্ত উম্মতকেই তিনি সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো। তাঁর ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করো না। যদি এরূপ কর তবে লাঞ্ছিত হয়ে যাবে এবং তোমাদের উপর থেকে আল্লাহর সাহায্য সরে যাবে। এ সময় তোমাদেরকে তারই কাছে সমর্পণ করা হবে যার তোমরা ইবাদত করবে। আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ লাভ ও ক্ষতির মালিক নয়। আল্লাহ এক ও অংশীবিহীন।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ক্ষুধার্ত হয় এবং লোকদের কাছে ঐ ক্ষুধা মিটাবার জন্যে প্রার্থনা করতে চায়, আল্লাহ তার ক্ষুধা নিবারণ করেন না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে, তিনি তাকে সম্পদশালী করে দেন, তাড়াতাড়ি হোক অথবা বিলম্বেই হোক।” (এই হাদীসটি সুনানে আবি দাউদ ও জামে ও তিরমিযীতেও রয়েছে। সহীহ ও গারীব বলা হয়েছে)

# এখানে (আরবি) শব্দের অর্থ আদেশ করা। আল্লাহ তাআলার গুরুত্বপূর্ণ আদেশ যা কখনো নড়বার নয়। তা এটাই যে, ইবাদত হবে শুধু আল্লাহর এবং পিতা-মাতার আনুগত্যে যেন তিল পরিমাণও ত্রুটি না হয়। হযরত উবাই ইবনু (রাঃ) কাব, ইবনু মাসউদ (রাঃ) এবং যহহাক ইবনু মাযাহিমের কিরআতে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) রয়েছে। এই দুটো হুকুম একই সাথে যেমন এখানে রয়েছে, অনুরূপভাবে আরো বহু আয়াতেও রয়েছে। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর আমার এবং তোমার পিতামাতার।” বিশেষ করে তাদের বার্ধক্যের সময় তাদের সাথে ভদ্রতাপূর্ণ আচরণ করা, কোন বড় কথা মুখ দিয়ে বের না করা, এমনকি তাদের সামনে কোন বিরক্তি সূচক কথা উচ্চারণ না করা, না এমন কোন কাজ করা যা তারা খারাপ মনে করে, বেআদবীর সাথে নিজের হাত তাদের দিকে না বাড়ানো, বরং আদব ও সম্মানের সাথে কথাবার্তা বলা, ভদ্রতার সাথে কথোপকথন করা, তারা যে কাজে সন্তুষ্ট থাকে সেই কাজ করা, তাদেরকে দুঃখ না দেয়া, তাদের সামনে বিনয় প্রকাশ করা, তাদের বার্ধক্যের সময় এবং মৃত্যুর পর তাদের জন্যে দুআ করা অবশ্য কর্তব্য। বিশেষ করে নিম্নরূপ দুআ করতে হবেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।

তবে কাফিরদের জন্যে দুআ করতে মুমিনদেরকে নিষেধ করে দেয়াহয়েছে। যদিও তারা পিতা-মাতাও হয়। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করার হাদীস অনেক রয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা মিম্বরের উপর উঠে তিনবার আমীন বলেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ) এসেছিলেন। এসে তিনি বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! ঐ ব্যক্তির নাক ধূলা মলিন হোক, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হয়, অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না। বলুন, আমীন।” সুতরাং আমি আমীন বললাম। আবার তিনি বললেনঃ “ঐ ব্যক্তির নাসিকা ধূলায় ধুসরিত হোক যার জীবনে রমযান মাস আসলো এবং চলেও গেল, অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। বলুন, আমীন।” আমি আমীন বললাম। পুনরায় তিনি বললেনঃ“ঐ ব্যক্তিকেও আল্লাহ ধ্বংস করুন, যে তার পিতামাতা উভয়কে পেলে অথবা কোন একজনকে পেলো, অথচ তাদের খিদমত করে জান্নাতে যেতে পারলো না; আমীন বলুন।” আমি তখন আমীন বললাম।”

মুসনাদে আহমদে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমান পিতা-মাতার পিতৃহীন সন্তানদেরকে লালন-পালন করে পানাহার করায় যে পর্যন্ত না তারা ‘ অমুখাপেক্ষী হয়, নিঃসন্দেহে তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমান গোলামকে আযাদ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম হতে আযাদ করবেন, তার এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তাঁর এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। এই হাদীসেরই একটি সনদে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের কোন একজনকে পেলো অথচ জাহান্নামে চলে গেল, আল্লাহ তাআলা তাকে স্বীয় রহমত হতে দূর করবেন।” মুসনাদে আহমাদের অন্য একটি রিওয়াইয়াতে এই তিনটির বর্ণনা একই সাথে আছে। অর্থাৎ গোলাম আযাদ করা, পিতা-মাতার খিদমত করা এবং পিতৃহীনকে লালন-পালন করা। একটি রিওয়াইয়াতে পিতামাতার সম্পর্কে এও রয়েছেঃ আল্লাহ তাকে দূর করুন এবং তাকে ধ্বংস করুন। একটি বর্ণনায় তিনবার তাকে বদ দুআ করা হয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) নাম শুনে দুরূদ পাঠ না কারী ব্যক্তি, রমযান মাসে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি এবং পিতা-মাতার খিদমত করে ও তাদেরকে সন্তুষ্ট করে বেহেশতে যেতে পারলো না এমন ব্যক্তির জন্যে রাসূলুল্লাহর (সঃ) বদুআ করা বর্ণিত হয়েছে।

একজন আনসারী এসে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার পিতা-মাতার ইন্তেকালের পরেও কি তাদের সাথে। সদাচরণের কোন সুযোগ আছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, চারটি আচরণ রয়েছে। তাদের জানাযার নামায পড়া, তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের ওয়াদা পূরণ করা, তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখা। এটা এ আচরণ যা তুমি তাদের মৃত্যুর পরেও তাদের সাথে করতে পারো। (এ হাদীসটি সুনানে আবি দাউদ ও সুনানে ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে)

একটি লোক এসে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি জিহাদের ইচ্ছায় আপনার খিদমতে সুসংবাদ নিয়ে এসেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার মা (বেঁচে) আছে কি?” উত্তরে সে বললোঃ “হাঁ, আছে।” তখন তিনি লোকটিকে বললেনঃ “যাও, তারই খিদমতে লেগে থাকো। বেহেশত তার পায়ের কাছে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে লোকটি দু’বার, তিনবার এই কথাটারই পুনরাবৃত্তি করে এবং রাসূলুল্লাহ ও (সঃ) এই জবাবেরই পুনরাবৃত্তি করেন। (সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনু মাজাহ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে এটা বর্ণিত আছে)

বলা হয়েছেঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে অসিয়ত করেছেন, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতাদের সম্পর্কে অসিয়ত করেছেন। পরবর্তী বাক্যটিকে তিনি তিন বার বর্ণনা করে বলেনঃ তিনি তোমাদেরকে তোমাদের নিকটতম আত্মীয়দের ব্যাপারে অসিয়ত করেছেন, প্রথমে সর্বাপেক্ষা নিকটতমদের ব্যাপারে এবং এরপর তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে (অসিয়ত করেছেন)। (সুনানে ইবনু মাজাহ ও সুনানে আহমাদে এটা বর্ণিত আছে)

নবী (সঃ) বলেছেনঃ “দাতার হাত উপরে। তোমরা সদাচরণ কর তোমাদের মাতাদের সাথে। পিতাদের সাথে, বোনদের সাথে, ভাইদের সাথে এবং এরপর এর পরবর্তী নিকটতম আত্মীয়দের সাথে এইভাবে স্তরের পর স্তর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, একটি লোক তার মাতাকে পিঠে উঠিয়ে নিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিল। এ সময় সে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “এখন আমি আমার মাতার হক আদায় করতে পেরেছি কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ না, এক অণু পরিমাণও নয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বাযার (রঃ) দুর্বল সনদে স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)।

(Book# 838)[Your Lord worded =:-1]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al- Boni Israyel
Sura: 17
Verses :- 22-24
[ لااَّ تَجْعَل مَعَ اللّهِ إِلَـهًا اخَرَ
Set not up with Allah any other ilah .]
www.motaher21.net
لَا تَجۡعَلۡ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتَقۡعُدَ مَذۡمُوۡمًا مَّخۡذُوۡلًا ﴿٪۲۲﴾
Do not make [as equal] with Allah another deity and [thereby] become censured and forsaken.
وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡہَرۡہُمَا وَ قُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا ﴿۲۳﴾
And your Lord has decreed that you not worship except Him, and to parents, good treatment. Whether one or both of them reach old age [while] with you, say not to them [so much as], “uff,” and do not repel them but speak to them a noble word.
وَ اخۡفِضۡ لَہُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَ قُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ﴿ؕ۲۴﴾
And lower to them the wing of humility out of mercy and say, “My Lord, have mercy upon them as they brought me up [when I was] small.”

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 838)[Your Lord worded =:-1]
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al- Boni Israyel
Sura: 17
Verses :- 22-24
[ لااَّ تَجْعَل مَعَ اللّهِ إِلَـهًا اخَرَ
Set not up with Allah any other ilah .]
www.motaher21.net

Do not associate Anything in Worship with Allah

Allah says,

لااَّ تَجْعَل مَعَ اللّهِ إِلَـهًا اخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا مَّخْذُولااً

Set not up with Allah any other ilah (god), or you will sit down reproved, forsaken (in the Hellfire).

Addressing those who are responsible among this Ummah, Allah says, “Do not admit any partner into your worship of your Lord.”

فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا
(or you will sit down reproved),

meaning, because of associating others with Him.

مَّخْذُولاً
(forsaken),

means, because the Lord, may He be exalted, will not help you; He will leave you to the one whom you worshipped, and he has no power either to benefit or to harm, because the Only One Who has the power to benefit or to harm is Allah alone, with no partner or associate.

Imam Ahmad reported that Abdullah bin Mas`ud said:

“The Messenger of Allah said:

مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ أَرْسَلَ اللهُ لَهُ بِالْغِنَى إِمَّا اجِلً وَإِمَّا غِنىً عَاجِلً

Whoever is afflicted with poverty and goes and asks people for help, will never get rid of his poverty, but if he asks Allah for help, then Allah will grant him the means of independence sooner or later.

This was also recorded by Abu Dawud and At-Tirmidhi, who said, “Hasan Sahih Gharib”
The Command to Worship Allah Alone and to be Dutiful to One’s Parents

Allah says,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ

And your Lord has Qada (decreed) that you worship none but Him.

Allah commands us to worship Him alone, with no partner or associate.

The word Qada (normally having the meaning of decree) here means “commanded”.

Mujahid said that;

وَقَضَى
(And He has Qada) means enjoined.

This is also how Ubayy bin Ka`b, Ibn Mas`ud and Ad-Dahhak bin Muzahim recited the Ayah as:

وَوَصَّي رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ

“And your Lord has Wassa (enjoined) that you worship none but Him.”

The idea of worshipping Allah is connected to the idea of honoring one’s parents.

Allah says:

وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

And that you be dutiful to your parents.

Here He commands good treatment of parents, as He says elsewhere:

أَنِ اشْكُرْ لِى وَلِوَلِدَيْكَ إِلَىَّ الْمَصِيرُ

give thanks to Me and to your parents. Unto Me is the final destination. (31:14)

إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَهُمَا فَلَ تَقُل لَّهُمَأ أُفٍّ

If one of them or both of them attain old age in your life, say not to them a word of disrespect,

means, do not let them hear anything offensive from you, not even say “Uff!” which is the mildest word of disrespect,

وَلَا تَنْهَرْهُمَا

and do not reprimand them,

means, do not do anything horrible to them.

Ata’ bin Rabah said that it meant,

“Do not raise your hand against them.”

When Allah forbids speaking and behaving in an obnoxious manner, He commands speaking and behaving in a good manner, so He says:

وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

but address them in terms of honor.

meaning gently, kindly, politely, and with respect and appreciation.
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ

And lower unto them the wing of submission and humility through mercy,

means, be humble towards them in your actions.

وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

and say:”My Lord! Bestow on them Your Mercy as they did bring me up when I was young.”

means, say this when they grow old and when they die.

Ibn Abbas said:”But then Allah revealed:

مَا كَانَ لِلنَّبِىِّ وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ

It is not (proper) for the Prophet and those who believe to ask Allah’s forgiveness for the idolators. ..” (9:13)

There are many Hadiths which speak about honoring one’s parents, such as the Hadith narrated through a number of chains of narration from Anas and others, which states that the Prophet climbed up on the Minbar, and then said,
Amin, Amin, Amin.
It was said, “O Messenger of Allah, why did you say Amin.”

He said:

أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتَ عِنْدَهُ فَلَمْمُيصَلِّ عَلَيْكَ قُلْ امِينَ فَقُلْتُ امِينَ ثُمَّ قَالَ رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ شَهْرُ رَمَضَانَ ثُمَّ خَرَجَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ قُلْ امِينَ فَقُلْتُ امِينَ ثُمَّ قَالَ رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ قُلْ امِينَ فَقُلْتُ امِين

Jibril came to me and said,

“O Muhammad, he is doomed who hears you mentioned and does not say Salla upon you.” He said, “Say Amin,” so I said Amin.

Then he said,

“He is doomed who sees the month of Ramadan come and go, and he has not been forgiven.” He said, “Say Amin,” so I said Amin.

Then he said,

“He is doomed who grows up and both his parents or one of them are still alive, and they do not cause him to enter Paradise.” He said, “Say Amin,” so I said Amin.
Another Hadith

Imam Ahmad reported from Abu Hurayrah that the Prophet said:

رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَدْرَكَ أَحَدَ أَبَوَيْهِ أَوْ كِلَيْهِمَا عِنْدَ الْكِبَرِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّة

He is doomed, he is doomed, he is doomed, the man whose parents, one or both of them, reach old age while he is alive and he does not enter Paradise.

This version is Sahih although no one recorded it other than Muslim.
Another Hadith

Imam Ahmad recorded Mu`awiyah bin Jahimah As-Salami saying that Jahimah came to the Prophet and said:

“O Messenger of Allah, I want to go out to fight and I have come to seek your advice.”

He said,

فَهَلْ لَكَ مِنْ أُم

Do you have a mother?

He said, “Yes.”

The Prophet said,

فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلَيْهَا

Then stay with her, for Paradise is at her feet.

Similar incidents were also recorded by others. This was recorded by An-Nasa’i and Ibn Majah.
Another Hadith

Imam Ahmad recorded that Al-Miqdam bin Ma`dikarib said that the Prophet said:

إِنَّ اللهَ يُوصِيكُمْ بِأبَايِكُمْ

إِنَّ اللهَ يُوصِيكُمْ بِأُمَّهَاتِكُمْ

إِنَّ اللهَ يُوصِيكُمْ بِأُمَّهَاتِكُمْ

إِنَّ اللهَ يُوصِيكُمْ بِأُمَّهَاتِكُمْ

إِنَّ اللهَ يُوصِيكُمْ بِالاَْقْرَبِ فَالاَْقْرَب

Allah enjoins you concerning your fathers,

Allah enjoins you concerning your mothers,

Allah enjoins you concerning your mothers,

Allah enjoins you concerning your mothers,

Allah enjoins you concerning your close relatives then the next in closeness.

This was recorded by Ibn Majah from the Hadith of Abdullah bin Ayyash.
Another Hadith

Ahmad recorded that a man from Banu Yarbu said:

“I came to the Prophet while he was talking to the people, and I heard him saying,

يَدُ الْمُعْطِي الْعُلْيَا

أُمَّكَ وَأَبَاكَ

وَأُخْتَكَ وَأَخَاكَ

ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاك

The hand of the one who gives is superior.

(Give to) your mother and your father,

your sister and your brother,

then the closest and next closest.”.

Leave a Reply