(বই#৮৩৯) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-২] সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ২৫ নং [ رَبُّکُمۡ اَعۡلَمُ بِمَا فِیۡ نُفُوۡسِکُمۡ তোমাদের রব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালো জানেন;] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৩৯) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-২]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
২৫ নং

[ رَبُّکُمۡ اَعۡلَمُ بِمَا فِیۡ نُفُوۡسِکُمۡ
তোমাদের রব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালো জানেন;]
www.motaher21.net

২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, মানুষ অন্তরে যা কিছু গোপন করে সেগুলো তিনি অধিক জানেন। কোন কাজ প্রকাশ্যে করা হোক, অপ্রকাশ্যে করা হোক, আলোতে করা হোক আর অন্ধকারে করা হোক, মানুষ দেখুক আর না-ই দেখুক, সব খবর তিনি রাখেন। তাঁর জ্ঞান থেকে কোন কিছু লুকানোর সুযোগ নেই।

অন্যত্র তিনি বলেন:

(إِنَّ اللّٰهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط إِنَّه۫ عَلِيْمٌۭ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ‏)‏

“নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমান ও জমিনের যাবতীয় অদৃশ্য বিষয় পরিজ্ঞাত। অন্তরে যা কিছু রয়েছে সে সম্বন্ধেও তিনি সবকিছু অবগত।” (সূরা ফাতির ৩৫:৩৮)

اوابِيْنَ শব্দের অর্থ: অভিমুখী হওয়া, ফিরে আসা।

কেউ কেউ বলেন, اوابِيْنَ বলা ঐ সমস্ত সৎ লোকদেরকে যারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল সালাত পড়ে।

কারো মতে, যারা চাশ্তের সালাত আদায় করে তাদেরকেই اوابِيْنَ বলা হয়।

অন্য একদল বলেন, যারা প্রত্যেক পাপ কার্যের পর তাওবা করে তাড়াতাড়ি মঙ্গলের দিকে ফিরে আসে এবং নির্জনে নিজেদের পাপের কথা স্মরণ করে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে اوابِيْنَ বলা হয়।

উবায়েদ (রহঃ) বলেন যে, اوابِيْنَ হচ্ছে তারাই যারা বারবারই কোন মজলিস হতে ওঠার পর এই দু‘আ পাঠ করে:

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا أَصَبْتُ فِيْ مَجْلِسِيْ هَذَا

হে আল্লাহ এ মজলিসে যা ভুল করেছি তা ক্ষমা করে দাও।

ইমাম ইবনে জারীর (রহঃ) বলেন, সঠিক উক্তি হচ্ছে, যারা গুণাহ হতে তাওবা করে অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে যা ঘৃণ্য তা ছেড়ে দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টিমূলক কাজ করে তারাই হল اوابِيْنَ । (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

এখান থেকেই চাশতের সালাতকে আওয়াবিনের সালাত বলা হয়। কারণ এ সময় মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে আসে, যে সময় সাধারণত সকলে কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকে। (সহীহ মুসলিম হা: ৭৪৮)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) আল্লাহ তা‘আলা মানুষের বাহ্যিক জিনিস দেখে বিচার করেন না বরং তার নিয়তের প্রতি লক্ষ্য করেন।
(২) মানুষের অন্তরের খবরও আল্লাহ তা‘আলা রাখেন, তিনি অন্তরযামী।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# এ আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হক ও অগ্রাধিকার হচ্ছে পিতা-মাতার। সন্তানকে পিতা-মাতার অনুগত, সেবা পরায়ণ ও মর্যাদাবোধ সম্পন্ন হতে হবে। সমাজের সামষ্টিক নৈতিক বৃত্তি এমন পর্যায়ের হতে হবে, যার ফলে সন্তানরা বাপ-মায়ের মুখাপেক্ষীহীন হয়ে পড়বে না, বরং তারা নিজেদেরকে বাপ-মায়ের অনুগৃহীত মনে করবে এবং বুড়ো বয়সে তাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে বাপ-মায়ের খিদমত করা শেখাবে যেমনিভাবে বাপ-মা শিশুকালে তাদের পরিচর্যা ও লালন-পালন এবং মান-অভিমান বরদাশত করে এসেছে। এ আয়াতটিও নিছক একটি নৈতিক সুপারিশ নয় বরং এরই ভিত্তিতে পরবর্তী পর্যায়ে বাপ-মায়ের জন্য এমনসব শরয়ী অধিকার ও ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ আমরা হাদীসে ও ফিকাহর কিতাবগুলোতে পাই। তাছাড়া ইসলামী সমাজের মানসিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণ এবং তাদের অধিকারের রক্ষণাবেক্ষণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ জিনিসগুলো চিরকালের জন্য এ নীতি-নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র নিজের আইন-কানুন, ব্যবস্থাপনামূলক বিধান ও শিক্ষানীতির মাধ্যমে পরিবার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও সংরক্ষিত করার চেষ্টা করবে, দুর্বল করবে না।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

২৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তােমাদের প্রতিপালক তােমাদের অন্তরের ভেতরে কী আছে, তা জানেন। তােমরা যদি সৎ হও, তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল।’ অন্যান্য বিধিসমূহ বর্ণনা করার আগে এই কথাটা বলার তাৎপর্য এই যে, প্রতিটি কাজ ও কথা যেন আল্লাহর দিকে লক্ষ্য রেখে করা হয় আর যারা ভুল বা পাপ করে, অতপর তা বর্জন ও তাওবা করতে চায়, তাদের জন্যে তাওবার দুয়ার যেন উন্মুক্ত হয়ে যায়। যতােক্ষণ মানুষের মন সরল ও পাপাসক্তিমুক্ত থাকে, ততােক্ষণ ক্ষমার দরজা খােলা থাকে। ‘আওয়াবিন’ তাদেরকে বলা হয়, যারা গুনাহ করামাত্রই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এর দ্বারা ঐ লোকদের বুঝানো হয়েছে যাদের হঠাৎ করে পিতা-মাতাদের সাথে কোন কথা হয়ে যায় যেটা তাদের নিজের মতে কোন দোষের ও পাপের কথা নয়। তাদের নিয়্যাত ভাল বলে আল্লাহ তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে দেখেন। যারা পিতা-মাতার অনুগত এবং নামাযী, তাদের দোষত্রুটি আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। বলা হয়ছে যে, (আরবি) ঐ সব লোক, যারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন যে, যারা চাশতের নামায আদায় করে থাকে তাদেরকে (আরবি) বলা হয়েছে। তাছাড়া যারা প্রত্যেক পাপ কার্যের পর তাওবা করে তাড়াতাড়ি মঙ্গলের দিকে ফিরে আসে এবং নির্জনে নিজেদের পাপের কথা স্মরণ করে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে (আরবি) বলা হয়েছে।

উবায়েদ (রঃ) বলেন যে, (আরবি) হচ্ছে ওরাই যারা বরাবরই কোন মজলিস হতে উঠবার সময় নিম্নরূপ দুআ পাঠ করেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমার এই মজলিসে যে পাপ হয়েছে তা আপনি ক্ষমা করে দিন।”

ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেনঃ উত্তম উক্তি হচ্ছে এটাই যে, (আরবি) হলো তারাই যারা গুনাহ হতে তাওবা করে অবাধ্যতা হতে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তাআলার কাছে যা অপছন্দনীয় কাজ তা পরিত্যাগ করে। যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট সেই কাজ করতে শুরু করে। এই উক্তিটিই সঠিকতম। কেননা, (আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দ হতে বের হয়েছে এবং এর অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। যেমন আরবের লোকেরা বলে থাকে (আরবি) অর্থাৎ “অমুক ফিরে এসেছে।” আর যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে।” সফর হতে ফিরবার সময় বলতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের প্রতিপালকেরই প্রশংসাকারী।” (৮৯:২৫)।

Leave a Reply