(বই#৮৪৬) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৯ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذا كِلْتُمْ মেপে দেয়ার সময় পূর্ণরূপে মাপো।] সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ৩৫ নং www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৪৬) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৯
وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذا كِلْتُمْ
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণরূপে মাপো।]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৩৫ নং
www.motaher21.net
وَ اَوۡفُوا الۡکَیۡلَ اِذَا کِلۡتُمۡ وَ زِنُوۡا بِالۡقِسۡطَاسِ الۡمُسۡتَقِیۡمِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا ﴿۳۵﴾
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণরূপে মাপো এবং সঠিক দাঁড়ি-পাল্লায় ওজন কর, এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্টতম।

৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*ওয়াদা পালন ও বাণিজ্যিক স্বচ্ছতা : ‘তােমরা প্রতিশ্রুতি পালন করো। প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন এবং প্রতিশ্রুতি ভংগকারীর হিসেব নেবেন। ইসলাম ওয়াদা পালনকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা এর ওপর ব্যক্তির বিবেকের ও সমাজ জীবনের স্থীতি, বিশ্বস্ততা ও পরিচ্ছন্নতা নির্ভরশীল। কোরআন ও হাদীসে ওয়াদা পালনের জন্যে নানাভাবে বারংবার তাগিদ দেয়া হয়েছে-চাই সে ওয়াদা আল্লাহর মানুষের ব্যক্তির সমাজের রাষ্ট্রের শাসকের বা শাসিতের যারই হােক না কেন। ইসলাম তার ইতিহাসে ওয়াদা পালনের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সমগ্র মানবেতিহাসে তার কোনাে তুলনা নেই। ওয়াদা পালনের পরের প্রসংগ হচ্ছে সঠিক মাপ ও ওযন প্রদান, ‘যখন মেপে দেবে, তখন পূর্ণভাবে মেপে দাও। আর সঠিক পাল্লা দিয়ে ওযন করে দাও। এটাই কল্যাণকর ও উত্তম পরিণামবহ।’ বস্তুত ওয়াদা রক্ষা এবং ওযনে ও মাপে সঠিক দেয়ার মাঝে শাব্দিক ও তাত্ত্বিক উভয় দিক দিয়ে সাদৃশ্য বিদ্যমান। মাপে ও ওযনে সঠিক দেয়া লেনদেনের সততা ও মনের পবিত্রতার লক্ষণ। এ দ্বারা সমাজের লেনদেন সুষ্ঠু হয়। পারস্পরিক বিশ্বস্ততা ও সামষ্টিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায় । দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় তা সুফল বয়ে আনে। রাসূল(স.) বলেছেন, ‘কোনাে ব্যক্তি যদি কোন হারাম কাজে সক্ষম হওয়া সত্তেও শুধু আল্লাহর ভয়ে তা থেকে ফিরে থাকে, তবে আল্লাহ আখেরাতের পূর্বে দুনিয়াতেই তাকে ওই জিনিসের বিনিময়ে উৎকৃষ্টতর বিকল্প জিনিস দান করবেন।’ মাপে ও ওযনে কম দেয়া ও বেশী আনার লোভ অন্তরের নােংরামি ও হীনতার বহিপ্রকাশ। পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এটা এমন বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার জন্ম দেয় যে, পারস্পরিক আস্থা একেবারেই নষ্ট হয়ে। এর ফলে সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় ও প্রবৃদ্ধি কমে যায়। আর এই কুফলগুলাে এক সময় ব্যক্তিবর্গকেও ভুগতে হয়। যদিও তারা মাপে ও ওযনে কমবেশী করা দ্বারা লাভবান হবে বলে আশা করে, কিন্তু যে লাভটুকু হয়, তা নিতান্তই সাময়িক ও স্থুল। সমাজে যে সর্বগ্রাসী অচলাবস্থা দেখা দেয়, এক সময় ব্যক্তিগত জীবনেও তার অশুভ প্রভাব পড়ে। এই সত্যটা বাণিজ্যিক জগতের দূরদর্শীরা উপলব্ধি করেছে এবং তারা এটা অনুসরণও করেছে। তবে এর পেছনে কোনা নৈতিক প্রেরণা বা ধর্মীয় উদ্দীপনা সক্রিয় নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা এটা অনুভূত হয়েছে বলেই এর অনুসরণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্যের সঠিক পরিমাপ এবং ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক পরিমাপে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক পরিমাপ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পূরণ করে। আর সেই সাথে অন্তরের পবিত্রতা, পার্থিব জীবনের চেয়ে উচ্চতর জীবন বােধ ও মহত্তর রুচিবােধ অতিরিক্ত প্রাপ্তি হিসাবে অর্জন করা যায়। এভাবেই ইসলাম সব সময়ে একই সাথে পার্থিব জীবনের সকল উদ্দেশ্য ও প্রয়ােজন পূরণ করে। আবার মানুষের আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ নিশ্চিত করে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
#এ নির্দেশটাও নিছক ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক লেনদেন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর হাট, বাজার ও দোকানগুলোতে মাপজোক ও দাঁড়িপাল্লাগুলো তত্বাবধান করা এবং শক্তি প্রয়োগ করে ওজনে ও মাপে কম দেয়া বন্ধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তারপর এখান থেকেই এ ব্যাপক মূলনীতি গৃহীত হয় যে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সব রকমের বেঈমানী ও অধিকার হরণের পথ রোধ করা সরকারের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

# দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই। দুনিয়ায় এর শুভ পরিণামের কারণ হচ্ছে এই যে, এর ফলে পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা দু’জন দু’জনের ওপর ভরসা করে, এর ফলে ব্যবসায়ে উন্নতি আসে এবং ব্যাপক সমৃদ্ধি দেখা দেয়। অন্যদিকে আখেরাতে এর শুভ পরিণাম পুরোপুরি নির্ভর করে ঈমান ও আল্লাহ ভীতির ওপর।

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
#আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা মেপে দেয়ার সময় পরিপূর্ণভাবে মেপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। কারণ এতেই বরকত নিহিত।

আল্লাহ তা‘আলার তা‘আলা বলেন:

(وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ)

“ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওজনে কম দিও না।” (সূরা আর রহমান ৫৫:৯)

এ সম্পর্কে সূরা হুদে আলোচনা করা হয়েছে। শুয়াইব (عليه السلام)-এর জাতিকে এ অপরাধের কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
#ওজনে কম-বেশি করা যাবে না, এতে বাহ্যিক উপকারিতা দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে তাতে লোকসান রয়েছে।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
#মহামহিমান্বিত আল্লাহ মাপ ও ওজন সম্পর্কে সতর্ক করে বলছেনঃ তোমরা কোন কিছু মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে মেপে দেবে। মোটেই কম। করবে না। আর কোন জিনিস ওজন করে দেয়ার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেবে। এখানেও কাউকেও ঠকাবার চেষ্টা করবে না। (আরবি) এর দ্বিতীয় (আরবি) পঠন রয়েছে। মাপ ও ওজন সঠিকভাবে করলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই তোমাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে। দুনিয়াতেও এটা তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে সুনামের বিষয়, আর পরকালেও তোমাদের মুক্তির উপায়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “হে বণিকদের দল! তোমাদেরকে এমন দুটি জিনিস সমর্পণ করা হয়েছে যার কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মাপ ও ওজন (সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে)।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন হারাম জিনিসের উপর ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও আল্লাহর ভয়ে তা ছেড়ে দেয় আল্লাহ তাআলা তাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করবেন।”

Leave a Reply