(বই#৮৬৪) সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ৬৬-৭০ নং আয়াত:- [ أَن يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَى তিনি তোমাদের আরেকবার সাগরে নিয়ে যাবেন না !] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৬৪)
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৬৬-৭০ নং আয়াত:-
[ أَن يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَى
তিনি তোমাদের আরেকবার সাগরে নিয়ে যাবেন না !]
www.motaher21.net

সুরা: বনী ইসরাঈল
আয়াত নং :-৬৬
رَبُّكُمُ الَّذِیْ یُزْجِیْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِی الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ١ؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِیْمًا

তোমাদের (আসল) রব তো তিনিই যিনি সমুদ্রে তোমাদের নৌযান পরিচালনা করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পারো। আসলে তিনি তোমাদের অবস্থার প্রতি বড়ই করুণাশীল।

আয়াত নং :-৬৭
وَ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِی الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّاۤ اِیَّاهُ١ۚ فَلَمَّا نَجّٰىكُمْ اِلَى الْبَرِّ اَعْرَضْتُمْ١ؕ وَ كَانَ الْاِنْسَانُ كَفُوْرًا

যখন সাগরে তোমাদের ওপর বিপদ আসে তখন সেই একজন ছাড়া আর যাকে তোমরা ডাকো সবাই অন্তর্হিত হয়ে যায়। কিন্তু যখন তিনি তোমাদের রক্ষা করে স্থলদেশে পৌঁছিয়ে দেন তখন তোমরা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ সত্যিই বড়ই অকৃতজ্ঞ।

আয়াত নং :-৬৮

اَفَاَمِنْتُمْ اَنْ یَّخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ اَوْ یُرْسِلَ عَلَیْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ وَكِیْلًاۙ

আচ্ছা, তাহলে তোমরা কি এ ব্যাপারে একেবারেই নির্ভীক যে, আল্লাহ কখনো স্থলদেশেই তোমাদেরকে যমীনের মধ্যে প্রোথিত করে দেবেন না অথবা তোমাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী ঘূর্ণি পাঠাবেন না এবং তোমরা তার হাত থেকে বাঁচার জন্য কোন সহায়ক পাবে না?

আয়াত নং :-৬৯

اَمْ اَمِنْتُمْ اَنْ یُّعِیْدَكُمْ فِیْهِ تَارَةً اُخْرٰى فَیُرْسِلَ عَلَیْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّیْحِ فَیُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ١ۙ ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ عَلَیْنَا بِهٖ تَبِیْعًا

আর তোমাদের কি এ ধরনের কোন আশঙ্কা নেই যে, আল্লাহ আবার কোন সময় তোমাদের সাগরে নিয়ে যাবেন এবং তোমাদের অকৃতজ্ঞতার দরুন তোমাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঘূর্ণি পাঠিয়ে তোমাদের ডুবিয়ে দেবেন এবং তোমরা এমন কাউকে পাবে না যে, তাঁর কাছে তোমাদের এ পরিণতির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে?

আয়াত নং :-৭০
وَ لَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِیْۤ اٰدَمَ وَ حَمَلْنٰهُمْ فِی الْبَرِّ وَ الْبَحْرِ وَ رَزَقْنٰهُمْ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَ فَضَّلْنٰهُمْ عَلٰى كَثِیْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِیْلًا۠

—এতো আমার অনুগ্রহ, আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং তাদেরকে জলে-স্থলে সওয়ারী দান করেছি, তাদেরকে পাক-পবিত্র জিনিস থেকে রিযিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি।

৬৬-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# ওপরের ধারাবাহিক বর্ণনার সাথে এর সম্পর্কে বুঝতে হলে এ রুকূ’র শুরুতে যে বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে তার প্রতি আর একবার নজর বুলাতে হবে। সেখানে বলা হয়েছেঃ সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই ইবলিস আদম সন্তানদের পেছনে লেগেছে। সে তাদেরকে আশার ছলনা দিয়ে ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জালে জড়িয়ে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে একথা প্রমাণ করতে চায় যে, আল্লাহ তাদেরকে যে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তারা তার যোগ্য নয়। এ বিপদ থেকে যদি কোন জিনিস মানুষকে বাঁচাতে পারে তাহলে তা হচ্ছে কেবল এই যে, মানুষকে তার রবের বন্দেগীর ওপর অবিচল থাকতে হবে, পথনির্দেশনা ও সাহায্য লাভের জন্য একমাত্র তাঁরই দিকে রুজু করতে হবে এবং একমাত্র তাঁরই প্রতি নির্ভরশীল হতে হবে। এছাড়া দ্বিতীয় যে কোন পথই মানুষ অবলম্বন করবে তার সাহায্যে সে শয়তানের জাল থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। —-এ ভাষণ থেকে আপনা আপনিই একথা বের হয়ে আসে যে, যারা তাওহীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করছে এবং শিরকের ওপর জোর দিয়ে চলছে, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। এ সম্বন্ধের ভিত্তিতেই এখানে তাওহীদের সত্যতা সপ্রমাণ করা হচ্ছে এবং শিরককে বাতিল করে দেয়া হচ্ছে।

# সামূদ্রিক সফরের মাধ্যমে যেসব অর্থনৈতিক, তামাদ্দুনিক, জ্ঞানগত ও চিন্তাগত কল্যাণ লাভ করা যায় তা লাভ করার জন্য চেষ্টা করো।

# এ থেকে একথাই প্রমাণ হয় যে, তোমাদের আসল স্বভাব প্রকৃতি এক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কাউকেই রব বলে স্বীকার করে না এবং তোমাদের নিজেদের অন্তরের গভীর তলদেশে এ চেতনা চিরঞ্জীব রয়েছে যে, লাভ ও ক্ষতি করার আসল ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে রয়েছে। নয়তো যখন আসল সাহায্য করার সময় হয় তখন তোমরা এক আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ সাহায্যকারী আছে বলে মনে করতে পারো না কেন? এর কারণ কি?

# এটা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য যে, কোন জিন, ফেরেশতা বা গ্রহ-নক্ষত্র মানবজাতিকে পৃথিবী ও তার যাবতীয় বস্তুর ওপর কর্তৃত্ব দান করেনি। কোন নবী বা অলী তাঁর নিজ সম্প্রদায়কে এ কর্তৃত্ব দান করেনি। নিশ্চিতভাবেই এটা আল্লাহরই দান এবং তাঁর অনুগ্রহ। তারপর মানুষ এহেন মর্যাদা লাভ করার পর আল্লাহর পরিবর্তে তাঁর সৃষ্টির সামনে মাথা অবনত করবে, মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় বোকামী ও মূর্খতা আর কী হতে পারে?

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
# *শুধু বিপদে পড়লেই আল্লাহকে স্মরণ করা : এইভাবেই শয়তান মানুষের অকল্যাণের জন্যে অহরহ নানা ফাঁদ পেতে চলেছে, মানুষের কষ্টতেই তার আনন্দ। এরপরও দেখা যায় একশ্রেণীর মানুষ এই শয়তানের অন্ধ অনুসরণ করে চলেছে এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে চলেছে, অপর দিকে আল কোরআনের এই আয়াতগুলাের মাধ্যমে আল্লাহর আহ্বান ও পথনির্দেশনা তাদের কাছে পৌছে দেয়া হচ্ছে, কেননা তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা বড়ই মেহেরবান। তাদের গতিপথকে তিনিই ঠিক করে দেন এবং তার ওপর যারা নির্ভর করে, তিনি নিজেই তাদেরকে পরিচালনা করেন ও তাদের জীবিকা আহরণের পথকে সহজ করে দেন, নাজাত দেন তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা থেকে এবং যে কোনাে কঠিন অবস্থা ও সংকটে পড়ে যখন তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কাকুতি-মিনতি করে তখন অবশ্যই তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। এর পরেও দেখা যায়, শয়তানের ধোকায় পড়ে অনেক সময় মানুষ আল্লাহর কাছ থেকেও তার নিয়ম-নীতি থেকে দূরে সরে যায় এবং কুফরী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তােমাদের প্রতিপালক সেই মহান সত্তা, যিনি মহাসাগরের বুকে পরিচালনা করেন জাহাজসমূহকে… আসলে মানুষ চিরদিন বড়ই অকৃতজ্ঞ।’ এখানে এই যে দৃশ্যটি তুলে ধরা হয়েছে তা যে কোনাে অভিজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে বড়ই চমকপ্রদ। কল্পনার চোখে একবার তাকিয়ে দেখুন, উত্তাল তরংগাভিঘাতে মহাসাগর যখন উন্মত্ত-রূপ ধারণ করে আর তার কবলে পড়ে জাহাজের নাবিক ও আরােহীরা যখন, সবার কথা ভুলে গিয়ে কায়মনােবাক্যে সারা বিশ্বের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ডাকে, তখন তাদের অন্তরের মধ্যে লুকায়িত মূল মালিকের চেতনা আত্মপ্রকাশ করে। তখনই তারা গভীরভাবে বুঝে যে সারা বিশ্বে এক আল্লাহ ছাড়া কোথাও কেউ নেই শক্তি-ক্ষমতার মালিক; সুতরাং এ চরম সংকট কালে আর কারও কথা মনে থাকে না, আপনা থেকে মন বিশ্ব-সম্রাটের দরবারে ঝুঁকে পড়ে। এ উদাহরণটা এমনই হৃদয়গ্রাহী, যা যে কোনাে সমুদ্র যাত্রীর মানসপটে ওই সংকটকালের চিত্রটিকে হাযির করে দেয়। অকূল সাগরের বুকে পর্বতময় ঢেউ যখন জাহাজকে পৌছে দেয় সমুদ্রবক্ষ থেকে বহু বহু উর্ধে এবং তার পরক্ষণে যখন তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় পাতাল পুরীতে, কখনও এক মাইল নীচে, কখনও তার কাছাকাছি, কখনও তার থেকেও ওপর বা নীচে, তখন যাত্রী ও নাবিকদের মধ্যে জীবনের আর কোনাে আশা থাকে না; আর সেই মুহূর্তেই মনের মাঝে আল্লাহর আশ্বাসবাণী ‘নিশ্চয়ই তিনি তােমাদের প্রতি বড়ই মেহেরবান’-আশার ক্ষীণ আলাে জ্বালিয়ে দেয়। হতাশার মাঝে আশার এক ক্ষীণ রেখা ফিরে আসে, তখন তাদের মন বলে ওঠে-হে পাক পরওয়ারদেগার, নিজ দয়াগুণে ক্ষমা করে দাও আমাদেরকে আর কখনও তােমার না-ফরমানী করবাে না-একথা বলে তারা পুরােপুরিভাবে নিজেদেরকে আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়। অবশ্যই এটা এমন একটা দৃশ্য যা সাধারণভাবে বুঝা খুবই মুস্কিল, একমাত্র সেই ব্যক্তিই এ কথার মর্ম বুঝতে পারে যার জীবনে এই অবস্থায় পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। নৌযানে যে ব্যক্তি সমুদ্র-যাত্রা করেছে সে ওই দৃশ্যের কথা চিন্তা করে প্রকম্পিত হয়। ঝড়ের দাপটে আছড়ে পড়া জাহাজটির অবস্থা যখন তার মনে পড়ে তখন তার মনে জাগে ঢেউয়ের আঘাতে জাহাজটি যেন ছিলাে তীব্র বাতাসের মুখে হাঁস-মুরগীর একটি পাখনার মতাে। প্রচন্ড ওই ঝড়ের চিত্র আঁকতে গিয়ে বলা হচ্ছে, এহেন ঝড়ের কবলে যখন কোনাে যাত্রীদল পতিত হয়, তখন তাদের কী কঠিন অবস্থা হয়, তার বর্ণনা দান করে জানানাে হচ্ছে যে, তখনকার করুণ অবস্থার দৃশ্য পাঠকের মনে এক ভীষণ কম্পন সৃষ্টি করে। পাঠক তখন অনুভব করে যে, তখনকার ওই কঠিন অবস্থা থেকে বেঁচে ফিরে আসা আল্লাহর অপার করুণা ছাড়া কিছুতেই সম্ভব হতাে না এবং এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে একমাত্র আল্লাহর অদৃশ্য হাত যেন ওই অবস্থায় জাহাজকে পরিচালনা করে ডাংগার দিকে ফিরিয়ে এনেছে। অবশ্যই তিনি তােমাদের প্রতি মেহেরবান। ওই কঠিন অবস্থায় আল্লাহর রহমতের কথা সহজেই বুঝা যায়। এরপর সমুদ্র বক্ষে, ঝড়ের কবলে পতিত এক যাত্রীদলের চিত্র তুলে ধরে, কেমন করে শান্ত সাগর উম্মত ঢেউয়ের রূপ গ্রহণ করলাে এবং জাহাজের যাত্রীরা ওই কঠিন বিপদ ও পেরেশানীর মধ্যে একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া আর সবাইকে ভুলে গেলাে, তাদের স্থলভাগে থাকাকালে সুসময়ে ওরা সাহায্যের জন্যে ডাকত। এ সময়ে ওরা সর্বান্তকরণে আল্লাহর দিকে একাগ্রচিত্তে ঝুঁকে পড়েছিলাে এবং আর কারােও কথাই তাদের মনে ছিলাে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তােমরা ডাকতে সবাই তখন তােমাদের (স্মৃতিপট) থেকে দূর হয়ে গিয়েছিলাে। কিন্তু হায়, মানুষ তাে মানুষই, যখন তার কঠিন দুরবস্থা কেটে যায়, জাহাজ কুলে এসে নােংগর করে, তার পদযুগল মাটির স্পর্শ লাভ করে তুফান থেমে যায় ও বিপদের ঘনঘটা স্তিমিত হয়ে আসে তখন মানুষ ওই ভীষণ করাল গ্রাসের কথা ভুলে যায়, ভুলে যায় ত্রাণকর্তা মহান আল্লাহকে, তখন তার মােহ ও আবেগ তাকে সঠিক বুঝ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, ছেয়ে যায় তার ওপর কুপ্রবৃত্তির তাড়ণ, আর যা কিছু প্রাকৃতিক বিপদ তার বীভৎস রূপ নিয়ে হাযির হয়েছিলাে তার স্মৃতিপটে আঁকা সে কঠিন চিত্র ঢাকা পড়ে যায়; এরশাদ হচ্ছে, ‘যখন তিনি তােমাদেরকে স্থলভাগের দিকে নিয়ে গিয়ে বিপদমুক্ত করলেন তখন তার থেকে তােমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে। আসলে মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।’ তবে আল্লাহর সাথে যার অন্তর জুড়ে আছে তার হৃদয়ে আল্লাহর নূরের ঝলক সর্বদা পরিস্ফূট হয়ে থাকে এবং সুখে-দুঃখে সর্বদা সে নূর আরও সমুজ্জ্বল হতে থাকে।

# এখানকার আলােচনা প্রসংগে সম্বোধন করা হচ্ছে সেই সব ব্যক্তিকে যারা সমুদ্রবক্ষে বিপদসংকুল সফরের অভিজ্ঞতা লাভ করার পর স্থল ভাগে ফিরে এসেছে। তাদের ছেড়ে আসা ওই বিপদজনক পরিস্থিতি আবার তাদের সামনে তুলে ধরে আল্লাহ তায়ালা তার মেহেরবানীর কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, যেহেতু তারা নিরাপদ স্থলভাগে পৌঁছে যাওয়ার পর ফেলে আসা দিনগুলাে ভুলে গিয়ে আবার নাফরমানীতে মেতে উঠেছে। তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে জলভাগ ও স্থলভাগ উভয় স্থানের একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি চাইলে বিপদ যেমন পানিতে আসতে পারে, তেমনি আসতে পারে যমীনেও। বিপদ-আপদ বা নিরাপত্তা সবই আসে তারই ইচ্ছায়। তিনিই নিরাপত্তাদানকারী সর্বস্থানে। চাইলে তিনি যমীনেও বিপদাপন্ন করতে পারেন, আর যদি তিনি পানিতেই কাউকে বিপদ দিতে চান তাহলে তাকে আবার সমুদ্রের বুকে ফিরিয়ে নিতেও সম্পূর্ণ সক্ষম। এসব কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে এ চেতনা দান করা যে সর্বাবস্থায় বিপদ ও নিরাপত্তা উভয়ের মালিক এক আল্লাহ তায়ালা । ভূধরে, সাগরে, শান্ত আবহাওয়ায় বা ঝড় তুফানের সময়ে সদা-সর্বদা তিনিই সব কিছুর নিয়ন্ত্রণকারী। মানুষকে যেমন তিনিই ভাল রাখেন ও নিরাপদ রাখেন মযবুত কেল্লার মধ্যে তেমনি তিনিই তাদেরকে বিপদমুক্ত রাখেন উন্মুক্ত প্রান্তরে-তারই হাতে রয়েছে সকল ক্ষমতার চাবিকাঠি; তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা কি মনে করাে পৃথিবীর স্থলভাগে থাকাকালে যমীনের বুকে বসে যাওয়া থেকে তােমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, …. এর পর তোমরা পাবে না, তােমাদের জন্যে আমার কাছে কোনাে সাহায্যকারী'(আয়াত ৬৮-৬৯) অবশ্যই, সর্বাবস্থায় এবং সকল দেশে মানুষ আল্লাহর কব্জার মধ্যে রয়েছে, স্থলভাগে যেমন তারা রয়েছে আল্লাহর মুঠোর মধ্যে, তেমনি রয়েছে তারা তাঁরই হাতে পানিভাগেও। সুতরাং তার পাকড়াও থেকে তারা নিরাপদ হয় কেমন করে? কেমন করেই বা তারা যমীনের মধ্যে ধসে যাওয়া থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করবে, কেমন করে তারা নিরাপদ মনে করবে ভূমিকম্প থেকে বা যমীনের স্থির থাকাবস্থায়? আর এ দুটি অবস্থা যদি নাও হয়, তাহলে আল্লাহর শক্তি ক্ষমতার মধ্যে আরও যে সব বিপদজনক অবস্থা রয়েছে সেগুলাে থেকেও বা তারা নিজেদেরকে কি করে নিরাপদ ভাববে? অথবা হয়তাে এমন হবে যে স্থির শান্ত আবহাওয়া হঠাৎ করে উন্মত্ত হয়ে উঠবে। প্রচন্ড ঝড় তুফান শুরু হয়ে যাবে, শান্ত-শিষ্ট জ্বালামুখ থেকে বেরিয়ে আসবে জ্বলন্ত আগুন-উত্তপ্ত লাভা, গরম পানি ও গলিত পাথর ও নুড়িসমূহ, যা ধ্বংস করে দেবে আশে পাশের সকল জনপদকে ধ্বংস করে ছাড়বে সবকিছুকে, এ প্রলয়ংকরী ধ্বংসযজ্ঞ থেকে একমাত্র তারাই বাঁচতে পারবে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা নিজ দায়িত্বে হেফাযত করবেন। অথবা তারা কেমন করে মনে করে যে তাদেরকে আবার সাগরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না এবং পুনরায় তাদেরকে প্রচন্ড ঝড়ের মুখােমুখি হতে হবে না? তাদের কুফুরীর কারণে এবং সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে পুনরায় সাগরের বুকে এমন ঝড়ের মুখােমুখি তারা হবে যা তাদেরকে সহ তাদের জাহাজ গুলো ভেংগে চুরমার করে সাগরের অতল তলে ডুবিয়ে দেবে, অতপর এমন কেউ সেখানে এগিয়ে আসবে না, আসার সুযােগ পাবে না, যে বা যারা তাদের ব্যাপারে কাউকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করতে পারে। শােনাে হে ভ্রান্ত মানব গােষ্ঠী, মানুষ যে তাদের রব প্রতিপালক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে এবং কুফরী করে, এটার কারণ গাফলতী ছাড়া আর কিছুই নয়, অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন ও তার সুখ সমৃদ্ধি নিয়ে এমনভাবে মানুষ ব্যস্ত হয়ে রয়েছে যে পরবর্তীতে তার কি অবস্থা হবে তা চিন্তা করার কোনাে অবসর সে পায় না। তাদের এ গাফলতী ও বেওকুফী এতােদূর পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে যে এরপরও তারা মনে করে যে তারা সব রকমের পাকড়াও থেকে এবং আযাব থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। সুখের দিনে তারা আল্লাহর কথা, পরকালের কথা এবং তাদের দুর্মের পরিণতির কথা চিন্তা করে না-একমাত্র তখনই আল্লাহকে স্মরণ করে যখন ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়ে, কিন্তু যখনই বিপদ থেকে মুক্তি পায় তখনই আল্লাহকে ভুলে যায়। ভাবখানা এই, ব্যস আল্লাহ তায়ালা শেষ বারের মত কষ্ট দিয়ে দিয়েছেন, আর কখনও কষ্ট আসবে না।

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৬৬-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:

প্রথম আয়াতে বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা দয়া ও অনুগ্রহের বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও অনুগ্রহে সমুদ্রে নৌকা ও জাহাজ চলাচল করে। মানুষ এসব যানের মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকে। مِنْ فَضْلِه তাঁর অনুগ্রহ বলতে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যে সব রিযিকের ব্যবস্থা রেখেছেন সেসব রিযিক অন্বেষণ করা। পূর্বের যুগের মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অধিকাংশ যাতায়াত নৌ পথে করত। এখনো বড় বড় মালামালগুলো নৌ পথে আমদানি করা হয়ে থাকে। সুতরাং এটা আল্লাহ তা‘আলার একটি অনুগ্রহ। তিনি ইচ্ছা করলে জাহাজসহ মানুষকে ডুবিয়ে দিতে পারতেন। সমুদ্রের এই উত্তাল তরঙ্গ আল্লাহ তা‘আলা নিয়ন্ত্রণ না করলে বান্দার পক্ষে এই সমুদ্র পথে ভ্রমণ করা মোটেও সম্ভব হতনা। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার একটা বড় অনুগ্রহ ।

দ্বিতীয় আয়াতে মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলার আরো একটি নেয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তা হল সমুদ্রে ভ্রমণকালে যখন উত্তাল তরঙ্গ তাদেরকে ঘিরে ফেলে তাদের অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, মনে হয় সেখান থেকে তারা আর রেহাই পাবে না, তখন তাদের মাথা থেকে ضَلَّ তথা এক আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সকল মা‘বূদের কথা চলে যায়, তখন আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মা‘বূদকে আহ্বান করে না। কারণ তারা জানে, এ বিপদ থেকে একক আল্লাহ ছাড়া তাদেরকে কেউ মুক্তি দিতে পারবে না। তাদের কাকুতি-মিনতির ডাক শুনে আল্লাহ সে বিপদ থেকে নাজাত দিলে স্থলে এসে আবার শিরকে লিপ্ত হয় এবং এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ সম্পর্কে সূরা আনআমের ৬৩-৬৪ নং, সূরা ইউনুসের ২২-২৩ নং, সূরা লুকমানের ৩২ নং আয়াতসহ অনেক স্থানে উল্লেখ রয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তোমরা সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া থেকে আল্লাহ তা‘আলার রহমতে বেঁচে যাও, তারপরে স্থলে এসে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যাও, তাঁর সাথে র্শিক কর, তোমরা কি জান না, তিনি তোমাদেরকে স্থলেও শাস্তি দিতে সক্ষম? তিনি তোমদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিতে পারেন অথবা পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করে সমূলে ধ্বংস করে দিবেন। তাহলে তোমরা কোন্ নিরাপত্তার কথা ভেবে আল্লাহ তা‘আলার সাথে স্থলে শিরক কর? তিনি তো আবার তোমাদেরকে কোন প্রয়োজনে সমুদ্রে নিয়ে যেতে পারেন, অতপর প্রবল ঝটিকা বায়ু প্রবাহিত করে জাহাজ ডুবিয়ে তোমাদেরকে মারতে পারেন। তখন তোমরা কোন সাহায্যকারী পাবে না। অতএব আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়ের উপরই ক্ষমতাবান। তাই তাঁর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করা মোটেও ঠিক নয়। সুতরাং তোমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنْ نَّشَأْ نَخْسِفْ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ نُسْقِطْ عَلَيْهِمْ كِسَفًا مِّنَ السَّمَا۬ءِ)

“আমি যদি ইচ্ছা করি তবে তাদেরসহ পৃথিবীকে ধ্বসিয়ে দিতে পারি অথবা তাদের ওপর আকাশের খণ্ডসমূহ পতিত করতে পারি।” (সূরা সাবা ৩৪:৯)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰٓي أَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ أَوْ مِنْ تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ)

“বল:‎ ‘তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে সক্ষম।” (সূরা আনয়াম ৬:৬৫)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের মর্যাদা উল্লেখ করেছেন, তবে এ মর্যাদায় মু’মিন, কাফির সকলে শামিল। কারণ এ মর্যাদা অন্যান্য সৃষ্টিকুল, জীবজন্তু, জড়পদার্থ, উদ্ভিদ ইত্যাদির তুলনায়। তাহল মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা উত্তম আকৃতি ও অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর ভাল-মন্দ বিচার করার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি নেই। দেখা যায় মানুষ দেহ, শক্তি ও অন্যান্য তুলনায় অনেক প্রাণী থেকে নগণ্য ও দুর্বল, তাহলে তাদের থেকে মর্যাদাবান হল কিভাবে? উত্তর, মানুষ জ্ঞান ও বুদ্ধি খাটিয়ে ঐ বিশাল দেহ ও শক্তিশালী প্রাণীকে নিজের করায়ত্ত করে নিচ্ছে। যে পাখি ডানা মেলে ঘন্টার পর ঘন্টা উড়ে হাজার হাজার মাইল চলে যাচ্ছে, মানুষ জ্ঞানের সাহায্যে উড়ো জাহাড় আবিষ্কার করে কম সময়ে আরো বেশি রাস্তা চলে যাচ্ছে। এমনিভাবে বিজ্ঞানের অসংখ্য আবিষ্কার আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক মানুষকে দেয়া জ্ঞানেরই প্রমাণ বহন করে, সেই সাথে প্রমাণ বহন করে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বেরও। সুতরাং অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে আদম সন্তানের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। তবে সাধারণ মানুষের মধ্য হতে যারা মু’মিন তাদের মর্যাদা আরো বেশি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর দেয়া জ্ঞানের সদ্ব্যবহার করার ও মু’মিন হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন, কিন্তু মানুষ সেসব নেয়ামতের সাথে কুফরী করে।
২. মানুষ সৃষ্টির সেরা জাতি, তবে যদি ঈমান ও সৎআমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে যেমন সমুদ্রে ডুবিয়ে মারতে সক্ষম তেমনি তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিতেও সক্ষম। সুতরাং তাঁর আযাব থেকে নিরাপদ হওয়ার সুযোগ নেই, তাই তাঁকে সর্বদা ভয় করে চলতে হবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

# আল্লাহ তাআলা নিজের ইহসান ও অনুগ্রহের কথা বলছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের সুবিধার্থে এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সহজ করণার্থে সমুদ্রে জলযান পরিচালিত করেছেন। তাঁর ফযল ও করম এবং স্নেহ ও দয়ার এটাও একটা নিদর্শন যে, তাঁর বান্দারা বহু দূর দেশে যাতায়াত করতে পারছে এবং আল্লাহর অনুগ্রই অর্থাৎ নিজেদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারছে।
# আল্লাহ তাবারাক ওয়া তাআলা বলছেনঃ বান্দা বিপদের সময় তো আন্তরিকতার সাথে তাদের প্রতিপালকের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং অনুনয় বিনয়ের সূরে তাঁর কাছেই প্রার্থনা করে থাকে। কিন্তু যখনই মহান আল্লাহ তাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তখনই সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মক্কা বিজয়ের সময় যখন আবু জেহেলের পুত্র ইকরামা (রাঃ) আবিসিনিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছায় বেরিয়ে পড়েন এবং একটি নৌকায় আরোহণ করেন তখন ঘটনাক্রমে সমুদ্রে ঝড় তুফান শুরু হয়ে যায় এবং প্রতিকূল বায়ু নৌকাকে পাতার মত হেলাতে থাকে। ঐ সময় ঐ নৌকায় যত কাফির ছিল তারা একে অপরকে বলতে থাকেঃ “এই সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কোনই উপকার করতে পারবে না। সুতরাং এসো, আমরা তাকেই ডাকি।” তৎক্ষণাৎ ইকরামার (রাঃ) মনে খেয়াল জাগলো যে, সমুদ্রে যখন একমাত্র তিনিই উপকার করতে পারেন ,তখন এটা স্পষ্ট কথা যে, স্থলেও তিনি উপকারে লাগবেন। তখন তিনি প্রার্থনা করতে লাগেনঃ “হে আল্লাহ! আমি অঙ্গীকার করছি যে, যদি আপনি আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তবে আমি সরাসরি গিয়ে মুহাম্মদের (সঃ) হাতে হাত দিবো। নিশ্চয়ই তিনি আমার উপর দয়া করবেন।” অতঃপর সমুদ্র পার হয়েই তিনি সরাসরি রাসূলুল্লাহর (সঃ) খিদমতে গিয়ে হাজির হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে তিনি ইসলামের একজন বড় বীর পুরুষরূপে খ্যাতি লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন ও তাঁকে সন্তুষ্ট রাখুন।

তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের অভ্যাস তো এই যে, সমুদ্রে যখন তোমরা বিপদে পতিত হও, তখন আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবূদদেরকে তোমরা ভুলে যাও এবং আন্তরিকতার সাথে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে থাকো। কিন্তু যখনই তিনি ঐ বিপদ সরিয়ে দেন তখনই তোমরা আবার অন্যদের কাছে প্রার্থনা শুরু করে দাও। সত্যি মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ যে, সে আল্লাহর নিয়ামত রাশির কথা ভুলে যায়, এমন কি অস্বীকার করে বসে। হাঁ, তবে আল্লাহ তাআ’লা যাকে বাঁচিয়ে নেন ও ভাল হওয়ার তাওফীক দান করেন সে ভাল হয়ে যায়।”
# বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে গিয়ে বলছেনঃ যে আল্লাহ তোমাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে পারতেন তিনি কি তোমাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিতে সক্ষম নন? নিশ্চয়ই তিনি সক্ষম। তাহলে সমুদ্রে তো তোমরা একমাত্র তাঁকেই ডেকে থাকো। আবার এখানে তাঁর সাথে অন্যদেরকে শরীক করছো, এটা কত বড়ই না অবিচার! তিনি তো তোমাদেরকে তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করে ধ্বংস করতে পারেন, যেমন হযরত লূতের (আঃ) কওমের উপর বর্ষিত হয়েছিল? যার বর্ণনা স্বয়ং কুরআন কারীমের মধ্যে কয়েক জায়গায় রয়েছে।

সূরায়ে মুলকে রয়েছেঃ “তোমরা কি তার হতে যিনি আসমানে রয়েছেন নিশ্চিন্ত রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে যমীনের মধ্যে ধ্বসিয়ে দেন, অতঃপর ঐ যমীন থর থর করতে থাকে? নাকি তোমরা নির্ভয় হয়ে গেছে এটা হতে যে, যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি এক প্রচণ্ড বায়ু প্রেরণ করে দেন? সূতরাং তোমরা অচিরেই জানতে পারবে যে, আমার ভয় প্রদর্শন কিরূপ ছিল।”

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ঐ সময় তোমরা পাবে না কোন সাহায্যকারী, বন্ধু, কর্মবিধায়ক এবং রক্ষক।
# বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে গিয়ে বলছেনঃ যে আল্লাহ তোমাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে পারতেন তিনি কি তোমাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিতে সক্ষম নন? নিশ্চয়ই তিনি সক্ষম। তাহলে সমুদ্রে তো তোমরা একমাত্র তাঁকেই ডেকে থাকো। আবার এখানে তাঁর সাথে অন্যদেরকে শরীক করছো, এটা কত বড়ই না অবিচার! তিনি তো তোমাদেরকে তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করে ধ্বংস করতে পারেন, যেমন হযরত লূতের (আঃ) কওমের উপর বর্ষিত হয়েছিল? যার বর্ণনা স্বয়ং কুরআন কারীমের মধ্যে কয়েক জায়গায় রয়েছে।

সূরায়ে মুলকে রয়েছেঃ “তোমরা কি তার হতে যিনি আসমানে রয়েছেন নিশ্চিন্ত রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে যমীনের মধ্যে ধ্বসিয়ে দেন, অতঃপর ঐ যমীন থর থর করতে থাকে? নাকি তোমরা নির্ভয় হয়ে গেছে এটা হতে যে, যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি এক প্রচণ্ড বায়ু প্রেরণ করে দেন? সূতরাং তোমরা অচিরেই জানতে পারবে যে, আমার ভয় প্রদর্শন কিরূপ ছিল।”

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ঐ সময় তোমরা পাবে না কোন সাহায্যকারী, বন্ধু, কর্মবিধায়ক এবং রক্ষক।
# মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (সঃ) অস্বীকারকারীর দল! সমুদ্রে তোমরা আমার তাওহীদের স্বীকারোক্তি করে পার হয়ে এসেছে। এসেই আবার অস্বীকার করে বসেছো। তাহলে এটা কি হতে পারে না যে, তোমরা পুনরায় সামুদ্রিক সফর করবে এবং আবার প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহিত হয়ে তোমাদের নৌকাকে উলটিয়ে দিবে এবং তোমরা সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে যাবে? আর এইভাবে তোমরা তোমাদের কুফরীর স্বাদ গ্রহণ করবে? এরপর তোমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী তোমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না। আর তোমরা এমন কাউকেও পাবে না যারা তোমাদের জন্য আমার উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে। আমার পশ্চাদ্ধাবনের ক্ষমতা কারো নেই। কার ক্ষমতা যে, আমার কাজের উপর অঙ্গুলি উত্তোলন করে।
# ইবনু আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, ফেরেস্তাগণ বলেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন এবং বান্ আদমেরও সৃষ্টিকর্তা আপনিই। তাদেরকে আপনি খাদ্য ও পানীয় দান করেন। তারা কাপড় পরিধান করে থাকে, বিয়ে শাদী করে, তাদের জন্যে সওয়ারী রয়েছে এবং বিভিন্ন দিক দিয়ে তারা সুখ ও আরাম ভোগ করছে। আমরা এগুলো হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত রয়েছি। ভাল কথা, দুনিয়ায় যখন তাদের জন্যে এগুলো রয়েছে তখন আখেরাতে আমাদেরকে এগুলো দান করুন!” তাঁদের এই প্রার্থনার জবাবে মহান আল্লাহ বলেনঃ “যাকে আমি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি এবং যার মধ্যে নিজের রূহ ফুকে দিয়েছি তার সমকক্ষ আমি ওদেরকে করবো না যাদেরকে আমি বলেছিঃ ‘হও’ আর তেমনই হয়ে গেছে।”

তিবরাণী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে আদম সন্তান অপেক্ষা বেশী মর্যাদাবান আর কেউই হবে না। জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ফেরেশতারাও নয়?”উত্তরে বলেনঃ “না, ফেরেশতারাও নয়। তারা তো বাধ্য, যেমন সূর্য ও চন্দ্র।” (এই রিওয়াইয়াতটি খুবই গরীব বা দুর্বল)

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#864)
Sura:17
Sura: Bony Israyel.
Ayat: 66-70
[ أَن يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَى

That He will not send you back a second time to sea!.]
www.motaher21.net

Leave a Reply