أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৬৬)
সুরা: আল্ বনি ইসরাইল
সুরা:১৭
৭৩-৭৫ নং আয়াত:-
[ اِلَیۡکَ لِتَفۡتَرِیَ عَلَیۡنَا غَیۡرَہٗ ٭ۖ
তা হতে তারা তোমার পদস্খলন প্রায় ঘটিয়েই ফেলেছিল!,]
www.motaher21.net
وَ اِنۡ کَادُوۡا لَیَفۡتِنُوۡنَکَ عَنِ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ لِتَفۡتَرِیَ عَلَیۡنَا غَیۡرَہٗ ٭ۖ وَ اِذًا لَّاتَّخَذُوۡکَ خَلِیۡلًا ﴿۷۳﴾
আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি, তা হতে তারা তোমার পদস্খলন প্রায় ঘটিয়েই ফেলেছিল, যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে ওর বিপরীত কিছু মিথ্যা উদ্ভাবন কর; আর তা করলে, তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।
وَ لَوۡ لَاۤ اَنۡ ثَبَّتۡنٰکَ لَقَدۡ کِدۡتَّ تَرۡکَنُ اِلَیۡہِمۡ شَیۡئًا قَلِیۡلًا ﴿٭ۙ۷۴﴾
আমি তোমাকে অবিচলিত না রাখলে তুমি তাদের দিকে কিছুটা প্রায় ঝুঁকে পড়তে।
اِذًا لَّاَذَقۡنٰکَ ضِعۡفَ الۡحَیٰوۃِ وَ ضِعۡفَ الۡمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَکَ عَلَیۡنَا نَصِیۡرًا ﴿۷۵﴾
তাহলে আমি অবশ্যই তোমাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম,আর তখন আমার বিরুদ্ধে তোমার জন্য কোন সাহায্যকারী পেতে না।
৭৩-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৭৩-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
(خَلِيْلًا……. وَإِنْ كَادُوْا)
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, উমাইয়া বিন খালফ, আবু জাহাল বিন হিশাম এবং কুরাইশদের কিছু লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল: হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাদের উপাস্যগুলোকে একটু হাত বুলিয়ে দাও, আমরা তোমার ধর্মে প্রবেশ করব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাঁর সম্প্রদায়ের বিচ্ছিন্ন হওয়াটা কষ্টকর মনে হল, আর তিনি তাদের ইসলাম গ্রহণ করাটাকে সমর্থন করছিলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
উক্ত আয়াতগুলোতে মূলত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অনুগ্রহে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাফিরদের সকল চক্রান্ত থেকে হেফাযত রেখেছেন সে কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বিভিন্ন সময় দাবী করত আর বলত, এটা এনে দিতে পারলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করব। কখনো বলত, আমাদের মা‘বূদের এক বছর ইবাদত কর পরের বছর আমরা তোমার মা‘বূদের ইবাদত করব।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, ‘অন্য এক কুরআন আন এটা ছাড়া, অথবা এটাকে বদলাও।’ বল: ‘নিজ হতে এটা বদলান আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওয়াহী হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি।” (সূরা ইউনুস ১০:১৫)
অর্থাৎ যদি আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দীনের উপর অটল না রাখতেন, তাহলে তিনি তো তাদের হিদায়াতের আশায় তাদের দিকে ঝুঁকেই পড়তেন। আর যদি তা হয়ে যেত তাহলে নাবীকে দুনিয়া ও আখিরাতে দ্বিগুণ শাস্তি পেতে হতো। সুতরাং অধিকাংশ মানুষের হিদায়াতের আশায় বা সমঝোতার লক্ষ্যে সত্যের সাথে মিথ্যাকে সংমিশ্রণ করা বা মিলমিশ করে চলার চিন্তাধারা সঠিক নয়। বরং সত্যের সাথে একজন থাকলেও তাকে নিয়েই চলতে হবে। এতেই সফলতা নিহিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অসত্যের আহ্বানে সাড়া দেয়া যাবে না।
২. যার যত মর্যাদা বেশি, তার অপরাধের কারণে শাস্তিও তত বেশি হবে।
৩. সত্য-মিথ্যা সংমিশ্রণ করে সকলে মিলমিশ হয়ে চলার চিন্তাধারা ঠিক নয়, বরং সত্যের সাথে চলতে গিয়ে অন্যরা শত্র“ হলেও তাতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা(৭৩-১১১) : বর্তমানের এই শেষ অধ্যায়টিতে যে বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে আলােকপাত করা হয়েছে তাই এই সূরার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সে বিষয়টি হচ্ছে রসূলুল্লাহ(স.)-এর ব্যক্তিত্ব, তার জাতির দৃষ্টিভংগী তিনি আল কোরআন নামক যে পবিত্র কিতাবটি নিয়ে এসেছেন। সেই কোরআন এবং সে কোরআনের বৈশিষ্ট্যসমূহ। আলােচ্য অধ্যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানাচ্ছেন মােশরেকরা রসূলুল্লাহ(স.)-কে আল কোরআনের মধ্যে অবতীর্ণ কথাগুলাের মধ্যে কোনাে কোনাে বিষয়ের প্রতি ইংগীত করে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করছিলাে এবং তারা ষড়যন্ত্র করছিলাে রসূলল্লাহ(স.)-কে মক্কা থেকে বের করে দিতে, কিন্তু তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ও নানা প্রকার কুচক্রের জাল ছিন্ন করে আল্লাহ তায়ালা তাকে নিরাপদ রাখলেন এবং অতীতে এমনই ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর যেসব আযাব নাযিল হয়েছিলাে সেই সামগ্রিক আযাব থেকেও তাদেরকে রেহাই দিয়েছেন। তবে তারা যদি রসূলুল্লাহ(স.)-কে দেশ থেকে বের করে দিত তাহলে অবশ্যই তাদেরকে পূর্ববর্তীদের মতাে কঠিন আযাবে ঘেরাও হয়ে যেতে হতাে। কারণ আল্লাহর নিয়ম বরাবর এটাই থেকেছে যে যখনই কোনাে জাতি তাদের রসূলকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে তখনই সামগ্রিক আযাব নাযিল হয়ে তাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর এ নিয়ম চিরদিন একই থেকেছে। এই জন্যেই আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালা তার রসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তিনি তার রব-এর সন্তুষ্টির জন্যে নামায আদায় করতে থাকেন, আল কোরআন পাঠ করেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে একথা বলে দোয়া করেন যেন আল্লাহ তায়ালা তাকে সত্য সহকারে ও মান-ইযযতের সাথে সত্যপ্রিয় অধিবাসী সম্বলিত কোনাে স্থানে প্রবেশ করান এবং কোনাে এলাকা থেকে যদি বের করেন তাহলেও যেন ইযযতের সাথে বের করে নেন আর তাকে যেন আল্লাহ তায়ালা তার নিজ ক্ষমতা বলে কোনাে রাষ্ট্রীয় শক্তির সহায়তা দান করেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে আরও নির্দেশ দিচ্ছেন, (বিজয়ী বেশে) যখন তিনি পুনরায় নিজ দেশে আগমন করবেন তখন যেন সত্যের বিজয়ডংকা বাজিয়ে দেন এবং অসত্যের পরাজয়ের কথা ঘােষণা করে দেন। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এটাই হচ্ছে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের শেষ ফল। বান্দা যখন আল্লাহর সাথে এই ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে তখন তিনি নিজেই হয়ে যান তার সেই মহা অস্ত্র যা তাকে বাঁচায় সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে এবং সাহায্য ও রাষ্ট্রীয় শক্তি তার পেছনে তার যমীন হিসাবে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর আল কোরআনের দায়িত্ব সম্পর্কে কথা আসছে, আর তা হচ্ছে অবশ্যই এ মহাগ্রস্থ একটি আরােগ্য দানকারী ওষুধ সেই সব লােকের জন্যে যারা এ কিতাবকে বিশ্বাস করে, কিন্তু যারা এ পবিত্র কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মানে না তাদের জন্যে এ কিতাব হচ্ছে শাস্তি ও প্রতিশােধ গ্রহণের সংবাদ বহনকারী। ওই সব লােকদের সম্পর্কে এ কিতাব জানায় যে দুনিয়াতে যেমন তাদেরকে নানা প্রকার আযাব ভােগ করতে হবে তেমনি আখেরাতেও রয়েছে তাদের জন্যে কঠিন শাস্তি। এরপর বলা হচ্ছে যে রহমত ও আযাব এই দুই অবস্থার মধ্যে পতিত হয়ে মানুষের এক শ্রেণীর মধ্যে দেখা যায়, তারা সুদিনে, অর্থাৎ স্বচ্ছলতার অবস্থায় অহংকারী হয়ে যায়, আর এর ফলে এক সময় তাকে হতাশা পেয়ে বসে এবং তার নিজের আপনজন এবং অন্যান্য মানুষও তার থেকে দুরে সরে চলে যায়। যারা অহংকারপূর্ণ জীবন যাপন করে, দুনিয়ায় তারা মানুষ কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়। পরিশেষে তার পরকালীন জীবনের জন্যে নির্ধারিত রয়েছে বড়ই কঠিন শাস্তি। এরপর জানানাে হচ্ছে, যে দুনিয়ায় মানুষ যে জ্ঞান অর্জন করে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জ্ঞানের কাছে অত্যন্ত তুচ্ছ-তার কাছে এ কথা পরিস্ফূট হয়ে যায় সেই মুহূর্তে যখন তাদের কাছ থেকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন আসে। এ বিষয়টি বুঝবার জন্যে তাদের শক্তি এতােই দুর্বল যে কিছুতেই তারা এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বুঝতে পারে না, এ কারণে তাদেরকে শুধু এতােটুকু জানানাে হচ্ছে যে এ রহস্যপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আল্লাহর গােপন রহস্য ভান্ডারের মধ্যে একটি অত্যন্ত সূক্ষ বিষয় যার অবস্থা ও প্রকৃতি কোনাে মানুষের পক্ষে কিছুতেই বুঝা সম্ভব নয়। এ রহস্য দ্বারা সঠিকভাবে উন্মােচিত হয়েছে একমাত্র আল্লাহর রাসূলের কাছে, তাও এতে রাসূলের নিজের কোনাে কৃতিত্ব নেই। আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করে তাকে জানিয়েছেন, তাই তিনি কিছু জানেন, ইচ্ছা করলে যে কোনাে সময়ে তাকে প্রদত্ত এ জ্ঞান এবং এ মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা তুলে নিতে পারেন, যার কোনাে প্রতিকার তিনি করার যােগ্যতা রাখেন না। রসূল(স.)-এর এ জ্ঞান অবশ্যই তার প্রতি আল্লাহর খাস রহমত। *আল কুরআন একটি চিরন্তন মোজেযা : এরপর জানানাে হচ্ছে যে এ মহাগ্রন্থ আল কোরআন এমন এক কঠিন ও সুরক্ষিত দূর্গ যার সুকঠিন প্রাচীর ডিংগিয়ে কোনাে মানুষ বা জিন এর মধ্যে অবস্থিত কোনাে বিষয়ের কোনাে ক্ষতিই করতে পারে না। আর তারা সবাই মিলে যদি অনুরূপ কোনাে কিতাব রচনা করতে চায় তাও তারা কোনাে দিন পারবে না। অনুরূপ কোনাে জ্ঞানগর্ভ কথা আনতে পারবে না যুক্তি-প্রমাণ এবং সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে আল কোরআন যে খবর দিয়েছে তার মতাে নিশ্চিত কোনাে খবরদানকারী কোনাে খবর দিতে পারবে না মানব রচিত অন্য কোনাে গ্রন্থ থেকে। এটা তকালীন মানুষেরা যথাযথভাবেই বুঝেছিলাে। তবুও কোরআন কোরায়শ কাফেরদের কোনাে কাজে আসেনি এবং তারা কোনাে ফায়দাই এ কিতাব থেকে গ্রহণ করতে পারেনি। এ জন্যেই দেখা যায়, তারা রসূলুল্লাহ(স.)-এর কাছে মােজেযা দেখানাের জন্য বারবার দাবী জানিয়েছে। তাদের দাবী, সাধারণ মানুষের বােধগম্য জিনিস দ্বারা মোজেজা দেখাতে হবে, যেমন পৃথিবীতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করা, অথবা স্বর্ণের ঘর তৈরী করে দেয়, তারা জিদ ধরেছে এমন কিছু করতে যা সাধারণ মানুষ করতে পারে না, যেমন তাদের সামনে আকাশে উড়তে হবে এবং ধরা-ছোঁয়া যায় আকাশ থেকে এমন কোনাে পুস্তক নামিয়ে আনতে হবে যেন তা দেখে দেখে তারা পড়তে পারে অথবা এসব করতে চাইলে বা না পারলে আকাশের কোনাে একটা টুকরাে কেটে এনে দিতে পারলে তা দিয়ে তাদেরকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলুক-এইভাবে তাদের জিদ ও কুফরী বাড়তেই থাকলাে এবং এতাে বেশী বেড়ে গেলাে যে তারা আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেশতাদেরকে তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্যে দাবী করে বসল। আর এখানে কেয়ামতের দৃশ্যাবলীর মধ্যে থেকে এমন একটি দৃশ্য পেশ করা হচ্ছে যে যার দ্বারা তাদের ভয়ানক পরিণতি ছবির মতাে ফুটে উঠেছে, আর এ পরিণতি আসবে তাদের ভুল ও অন্যায় পথে জিদ ধরে টিকে থাকার প্রতিদান হিসাবে, আখেরাত অস্বীকার করার কারণে এবং হাড় ও দেহের অংশগুলাে ভেংগে চুরমার হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়ার পর পুনরায় জীবিত হতে হবে-এটাকে উপেক্ষা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শাস্তি স্বরূপ। ওদের এসব নানা প্রকার প্রস্তাবের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে আন্তরিকতা ছিলাে না, বরং জিদের বশবর্তী হয়ে তারা এই তাচ্ছিল্যপূর্ণ প্রস্তাবগুলাে দিচ্ছিলাে। তারা আল্লাহর রহমতের ডান্ডারও যদি পায় তবুও তাদের মধ্যে যে মানবীয় দুর্বলতা ও সংকীর্ণতা আছে তার কারণে তাদের সর্বদা ভয় লেগে থাকে যে, এসব সম্পদ ফুরিয়ে যাবে এবং ফুরিয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না। এ সংকীর্ণতার কারণে তাদের চাহিদার কোনাে শেষ নেই এবং তাদের বিভিন্ন প্রকার দাবী-দাওয়ারও কোনাে সীমা নেই। মক্কার কুরাইশদের মােজেযা দেখানো এসব অযৌক্তিক দাবী-দাওয়া সম্পর্কে আলােচনা করতে গিযে অতীতের সেই মােজেযাগুলাের কথাও উল্লেখ করা হচ্ছে যা মূসা(আ.)-এর কাছে এসেছিলাে। এতােসব মােজেযা দেখা সত্তেও তাকেও তাে ফেরাউন ও তার জাতি মিথ্যাবাদী বানিয়ে ছেড়েছিলাে, যার পরিণতি হয়েছিলাে এই যে আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী, নবীদের মিথ্যাবাদী বানানাের সাজা স্বরূপ তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলাে। অতীতের মােজযার মতাে মােজেযা মােহাম্মদুর রসূলুল্লাহ(স.)-কে না দেয়া হলেও তাকে দেয়া হয়েছে আল কোরআন, যা সকল কিতাবের আসল রূপ, নির্ভুল, নির্ভেজাল, অপরিবর্তনীয় ও সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সন্দেহের উর্ধ্বে, যার প্রতিটি কথা, ভাষার সৌন্দর্য, অর্থের ব্যাপকতা, হৃদয়গ্রাহী বর্ণনাভংগী ও যার মধ্যে বিদ্যমান আবেগপূর্ণ সূরের মূর্ছনা যে কোনাে পাঠক বা শ্রোতার মন গলিয়ে দেয়। কিন্তু সমগ্র কোরআন একই সময়ে এবং একই সাথে নাযিল হয়নি বরং প্রয়ােজন অনুসারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাণে নাযিল হয়েছে। আর এ কিতাবের যথার্থতা বুঝতে পেরেছে বিশেষভাবে সেই সব বিশ্বাসী মানুষ যারা পূর্বের কিতাবগুলাে থেকে প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছে, এ কারণে যখনই তারা এ কিতাবের কথা জানতে পেরেছে, সংগে সংগে তারা সাক্ষ্য দিয়েছে, মেনে নিয়েছে এবং বিনয় বিনম্র তার সাথে আত্মসমর্পণ করেছে। পরিশেষে, এ সূরাটি জানিয়েছে যে রসূলুল্লাহ(স.) নিজে সর্বান্তকরণে ও একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দাসত্ব করে চলেছেন, তার প্রশংসা ও পবিত্রতা প্রকাশের কাজে সদা-সর্বদা মগ্ন রয়েছেন। সূরাটি যেভাবে আল্লাহর গুণগান দিয়ে শুরু হয়েছিলাে সেইভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
#বিগত দশ বারো বছর থেকে নবী ﷺ মক্কায় যে অবস্থার সাথে যুঝছিলেন এখানে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তিনি যে তাওহীদের দাওয়াত পেশ করছিলেন মক্কার কাফেররা তাকে স্তব্ধ করে দেবার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। তারা চাচ্ছিল তিনি তাদের শিরক ও জাহেলী রসম রেওয়াজের সাথে কিছু না কিছু সমঝোতা করে নেবেন। এ উদ্দেশ্যে তারা তাঁকে ফিতনার দিকে ঠেলে দেবার চেষ্টা করলো। তাঁকে ধোঁকা দিল, লোভ দেখালো, হুমকি দিল এবং মিথ্যা প্রচারণার তুফান ছুটালো। তারা তাঁর প্রতি জুলুম-নিপীড়ন চালালো ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করলো। তাঁকে সামাজিকভাবে বয়কট করলো। একটি মানুষের সংকল্পকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবার জন্য যা কিছু করা যেতে পারে তা সবই তারা করে ফেললো।
# এ সমগ্র কার্যবিবরণীর ওপর মন্তব্য প্রসঙ্গে আল্লাহ দু’টি কথা বলেছেন। এক, যদি তুমি সত্যকে সত্য জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতে তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার ওপর নেমে পড়তো এবং তোমাকে দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো। দুই, মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা তাঁর সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না। শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই নবী ﷺ সত্য ও ন্যায়ের ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাঁকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৭৩-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা চক্রান্তকারী ও পাপীদের চালাকি ও চক্রান্ত হতে স্বীয় রাসূলকে (সঃ) সর্বদা রক্ষা করেছেন। তাঁকে তিনি রেখেছেন নিস্পাপ ও স্থির। তিনি নিজেই তার সাহায্যকারী ও অভিভাবক রয়েছেন। সর্বদা তিনি তাঁকে নিজের হিফাযতে ও তত্ত্বাবধানে রেখেছেন। তাঁর দ্বীনকে তিনি দুনিয়ার সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত রেখেছেন। তার শত্রুদের উঁচু বক্র বাসনাকে নীচু করে দিয়েছেন। পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত তাঁর কালেমাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই দু’টি আয়াতে এরই বর্ণনা রয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলের (সঃ) উপর অসংখ্য দরূদও সালাম বর্ষন করতে থাকুন। আমীন!