(বই#৮৬৯)[আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। ] সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ৮০-৮১ নং আয়াত:- [اجْعَلْ لِّیْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطٰنًا نَّصِیْرًا তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৬৯)[আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। ]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৮০-৮১ নং আয়াত:-
[اجْعَلْ لِّیْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطٰنًا نَّصِیْرًا
তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। ]
www.motaher21.net
সুরা: বনী ইসরাঈল
আয়াত নং :-৮০
وَ قُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِیْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّ اَخْرِجْنِیْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّ اجْعَلْ لِّیْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطٰنًا نَّصِیْرًا

আর দোয়া করোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো। এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও।

আয়াত নং :-৮১

وَ قُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَ زَهَقَ الْبَاطِلُ١ؕ اِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا

আর ঘোষণা করে দাও, “সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, মিথ্যার তো বিলুপ্ত হবারই কথা।”

৮০-৮১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ দোয়ার নির্দেশ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, হিজরতের সময় তখন একেবারে আসন্ন হয়ে উঠেছিল তাই বলা হয়েছে, তোমাদের এ মর্মে দোয়া করা উচিত যে, সত্যতা ও ন্যায়নিষ্ঠা যেন কোনক্রমেই তোমাদের হাতছাড়া না হয়। যেখানে থেকেই বের হও সততা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার খাতিরেই বের হও এবং যেখানেই যাও সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে যাও।

# তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই। হাসান বাস্রী ও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন। ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরই সমর্থন পাওয়া যায়ঃ “আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না।”

এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দণ্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।
# এ ঘোষণা এমন এক সময় করা হয়েছিল যখন বিপুল সংখ্যক মুসলমান মক্কা ত্যাগ করে হাবশায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং বাদবাকি মুসলমানরা চরম অসহায় ও মজলুম অবস্থার মধ্যে মক্কা ও আশপাশের এলাকায় জীবন যাপন করছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের অবস্থাও সব সময় বিপদ সংকুল ছিল। সে সময় বাহ্যত বাতিলেরই রাজত্ব চলছিল। হকের বিজয়ের কোন দূরবর্তী সম্ভাবনাও কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুকুম দেয়া হলো, তুমি বাতিল পন্থীদের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দাও যে, হক এসে গেছে এবং বাতিল খতম হয়ে গেছে। এ সময় এ ধরনের ঘোষণা লোকদের কাছে নিছক কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। তারা একে ঠাট্টা-মস্করা মনে করে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরপর মাত্র ৯টি বছর অতিক্রান্ত না হতেই নবী ﷺ বিজয়ীর বেশে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন এবং কা’বা ঘরে প্রবেশ করে সেখানে তিনশো ষাটটি মূর্তির আকারে যে বাতিলকে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল তাকে খতম করে দিলেন। বুখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সা.) কা’বার মূর্তিগুলোকে আঘাত করছিলেন এবং বলছিলেনঃ আরবী————————–

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

‘(আর হে রসূল তুমি) বলো, হে আমার রব, আমাকে সত্যের পতাকা হাতে নিয়ে সত্য-সঠিক গন্তব্যস্থলে… আমার জন্য কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে সাহায্যকারী।’ এ হচ্ছে এমন একটি দোয়া যা আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার নবীকে শিখিয়েছেন যেন নবী এই দোয়ার দ্বারা তাঁকে ডাকেন এবং আল্লাহকে ডাকার জন্যে তাঁর উম্মতকেও যেন তিনি দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং জানিয়ে দেন কেমন করে করুণাময় পরওয়ারদেগারকে ডাকতে হবে। লক্ষ্য করুন এ দোয়াটির মধ্যে দুটি কথা আছে, এক. এমন সত্য সুন্দর দেশে প্রবেশ করাও যার অধিবাসীরা হবে সত্যানুসন্ধিৎসু ও সত্যপ্রিয়; আর বের করে আনো এমন এক সত্য-সঠিক স্থান দিয়ে যেখানকার পরিবেশ হয় বের হওয়ার জন্যে উপযােগী ও অনুকূল। একথায় যে ইংগিত পাওয়া যায় তা হচ্ছে, সফরটা যেন হয় নিরাপদ এবং এ সফরের সংগী যে বা যারাই হােক না কেন তারাও যেন হয় সত্য-সঠিক দ্বীন-এর জন্য নিবেদিত। এ সফরের গুরু-শেষ, প্রথম ও পরবর্তী অবস্থা এবং সফর শুরু করা থেকে নিয়ে পরবর্তী অবস্থার মধ্যের যে সময়টি রয়েছে তাও যেন হয় সুন্দর ও সম্মানজনক। এখানে বুঝানাে হয়েছে যে সত্যের জন্যে অবশ্যই উপযুক্ত মূল্য রয়েছে, যা খতম করে দেওয়ার জন্যে মােশরেকরা নানাভাবে চেষ্ট করেছিলাে। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য অনেককেই নিজেদের পূজনীয় বানিয়ে নবী(স.)-কে ঘাবড়ে দিতে চেয়েছিলাে। অনুরূপভাবে সত্যের জন্যে রয়েছে সমাজের বুকে এক বিশেষ স্থান; আর তা হচ্ছে, যেখানেই সততা-সত্যবাদিতা ও পরােপকারিতা আছে সেখানেই দৃঢ়তা, প্রশান্তি, পরিচ্ছন্নতা ও নিষ্ঠা আছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমার পক্ষ থেকে আমাকে একটি সাহায্যকারী রাষ্ট্রশক্তি দাও।’ অর্থাৎ, এমন সাহায্যকারী বানিয়ে দাও যার শক্তি ও ক্ষমতার দাপট পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত থাকবে মােশরেকদের ওপর যারা হবে প্রভাবশালী । তারপরের কথাটি খেয়াল করুন, দোয়াকারী আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্ককে এতাে ঘনিষ্ঠ ও গভীর মনে করে যে, তার ভাষার মধ্যে একটা দাবী ও নৈকট্য পরিস্ফূট হয়ে ওঠে এবং সে সরাসরি বলে ফেলে-অন্য কারও পক্ষ থেকে নয়, আর কারও মাধ্যমেও নয়-একমাত্র তােমার কাছ থেকেই আমি চাই, আমার চাওয়া-পাওয়ার বিষয় ও বস্তু এবং শুধু তােমার কাছে আমি আশ্রয় চায় চাই-সাহায্য চাই জীবনের সর্ববিষয়ে। আর এটাও একটা বাস্তব সত্য বটে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়ে দোয়া করতে থাকে সে অবশ্যই বিশ্বাস করে যে ক্ষমতার মালিক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই এবং একথাও বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারও কিছু দেয়ার মতাে ক্ষমতা নেই। তার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি ছাড়া আশ্রয় বা সুখ-শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আর কারও নেই। তিনি চাইলে সাহায্য করেন অথবা সাহায্য পাওয়ার সকল পথ বন্ধ করে দেন এবং এটা অতীব সত্য কথা, যতাে দিন পর্যন্ত তার মনােযােগ আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট না হয় ততােদিন আল্লাহর সাহায্য পাওয়া সম্ভব নয়। কাকুতি-মিনতি বা আবেদন-নিবেদন করা এমন একটি বিষয় যা একটি দাবী হিসাবে যে কোনাে ক্ষমতাবান মানুষের কাছে বিবেচনাযােগ্য হয়। তখন তারা ওই ক্ষমতাধরদের সেনাবাহিনী বা খাদেম হিসাবে স্বীকৃতি পায়, যার ফলে তারা নানাভাবে সফলতাও অর্জন করে; কিন্তু কেউ কোনাে বাদশাহের সেনাদলের সদস্য বা তার নওফর-চাকর হলেই যে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এর কোনাে নিশ্চয়তা নেই; কারণ কারও কিছু পাওয়া সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হুকুমের ওপর নির্ভর করে। অনুরূপভাবে কেউ দুনিয়ার কোনাে শাসকের কাছে সাহায্য চাইলে বা কোনাে শাসক সাহায্য করতে চাইলেই যে কেউ সাহায্যপ্রাপ্ত হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নাই।

#   *সত্য সমাগত মিথ্যা দূরীভূত : তার ইতিহাস সাক্ষ দেয়, সত্য যখন স্বমহীমায় হাযির হয় মিথ্যা তখন দুরিভূত হতে বাধ্য। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর বল, সত্য সমাগত হয়েছে এবং মিথ্যার অবসান হয়েছে; নিশ্চয়ই মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা জানাচ্ছেন যে, সত্যকে জয়ী করার সুদূর প্রসারী ও সর্বব্যাপক ক্ষমতা একমাত্র তারই হাতে। অতএব হে রসূল, ঘােষণা করে দাও যে সত্য তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে, এবং সততা পরিপূর্ণ দৃঢ়তা নিয়ে সমাগত হয়েছে এবং সাথে সাথে হয়েছে মিথ্যার পরাজয় ও বিপর্যয়। সত্যের প্রদীপ্ত বাতির সামনে মিথ্যা ম্লান হয়ে গেছে, পর্দার আড়ালে ফিরে গিয়ে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। ‘মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।’… এ হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি-ক্ষমতার অমােঘ দাবী কোরআনে করীমে যার জোরদার ঘােষণা দেয়া হয়েছে। যদিও আপাত দৃষ্টিতে মিথ্যার জোর দেখা যায় এবং মিথ্যার মাধ্যমে অনেক সুখ-সম্পদ আহরণ করা যায় বলে মনে হয়, কিন্তু অবশেষে তা পরাজিত হতে বাধ্য। অবশ্যই অনেক সময় বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখা যায় সাময়িকভাবে হলেও বাতিল শক্তি ফুলে ফেঁপে উঠেছে; কিন্তু এর স্থায়িত্ব নাই। কারণ তা কোনাে স্থায়ী বুনিয়াদের ওপর এটা প্রতিষ্ঠিত নয়। এ জন্য মিথ্যার দাপট সাময়িকভাবে চোখকে ধাধা লাগিয়ে দিতে চায়। কিন্তু এর সফলতাকে যতােই বিরাট ও প্রভাবপূর্ণ মনে হােক না কেন, মিথ্যার শক্তি ও তার অভ্যন্তরে ভাগ হচ্ছে অত্যন্ত দুর্বল ও অবশ্যই খুব শীর্ণ তা ধ্বংস হতে বাধ্য, যেমন শুকনা খড়ের গাদায় আগুন ধরে গেলে তা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে এবং খােলা মাঠে সে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়, বাতাসের চাপে হঠাৎ করে বহু ওপরে উঠে গেছে; কিন্তু অতি অল্প সময়েই সে আগুন নিঃশেষে নিভে যায়, থেকে যায় ছাইয়ের এক স্তূপ, অপর দিকে কয়লার ডগভগে আগুন যেমন হয় উত্তপ্ত অনেক বেশী, তেমনি তার স্থায়িত্বও অনেক দীর্ঘ। একইভাবে মিথ্যা ও অন্যায় শক্তির প্রাবল্য সাময়িকভাবেও হঠাৎ করে অপ্রতিরােধ্য বলে মনে হলেও তার দাপট বেশীক্ষণ থাকে না; কিন্তু কয়লার আগুনের মতাে সত্যের আলাে জ্বলতে সময় লাগলেও তার আগুন দীর্ঘ সময় ধরে মানুষকে তাপ দিতে থাকে; আবার মিথ্যাকে তুলনা করা যায় পানির ওপরে উথিত বুদবুদের সাথে, যা বাতাসের সামান্য দোলায় পানির সাথে মিশে যায় এবং ঢেউয়ের লাগাতার আছড়ে পড়ার কারণে ওপরে ছেয়ে থাকা বুদবুদ বা ফেনা সাময়িকভাবে পানিকে ঢেকে রাখলেও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তা মিলিয়ে যায় এবং অবশেষে স্বচ্ছ পানি থেকে যায়। তাই বলা হচ্ছে, অবশ্যই মিথ্যা ধ্বংস হতে বাধ্য… কারণ এর মধ্যে স্থায়ীভাবে টিকে থাকার কোনাে উপাদান নেই। এর সাময়িক অস্তিত্ব বাহ্যিক কোনাে কিছুর প্রভাবে নযরকে ধাধিয়ে দেয় বটে, কিন্তু এটা প্রকৃতি-বিরুদ্ধ কৃত্রিম কিছু  জিনিসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু কৃত্রিম ওই সব উপায় উপকরণ এবং নির্ভর করার মতাে ব্যক্তি বা বিষয়গুলাে অতি শীঘ্রই দুর্বল হয়ে যায় এবং পরিশেষে ধ্বংসের অতল তলে তলিয়ে যায়, সত্যের প্রকৃতিই হচ্ছে এই যে তার মধ্যে অবস্থিত উপায়-উপাদানগুলাে দীর্ঘস্থায়ী ও মযবুত বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এর বিরুদ্ধে মানুষের সাময়িক আবেগ প্রবণতা বাধার প্রাচীর খাড়া করে দেয় এবং এর বিরুদ্ধে কায়েমী স্বার্থবাদী শাসক ও শােষক শ্রেণী দাড়িয়ে যায়। এসত্তেও সত্য দৃঢ়তার সাথে ও নিরুদ্বেগে নিজ গতিতে এগিয়ে চলে, নিজের মযবুত ঘাঁটি রচনা করে নেয় এবং তার স্থায়িত্বকে নিশ্চিত করে, কেননা এতাে আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে আগত ব্যবস্থা যাকে তিনি ‘সত্য’ রূপে বানিয়েছেন এবং এ সত্যকে তার চিরন্তন নাম ও চিরস্থায়ী অস্তিত্বের সাথে বিজড়িত করেছেন, যা কোনাে দিন শেষ হয়ে যাবার নয়। অপর দিকে ঘোষণা আসছে ‘নিশ্চয়ই মিথ্যার পরাজয় অনিবার্য’ কারণ এর পেছনে রয়েছে শয়তান ও তার ক্ষণস্থায়ী শক্তি রয়েছে বর্তমান পৃথিবীর শাসক পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার সহায়তা, কিন্তু যে-ই তাদের পেছনে শক্তি যােগাক না কেন এবং যতাে ক্ষমতা নিয়েই তাদেরকে সহায়তা দান করুক না কেন সত্যকে বিজয়ী করার জন্যে আল্লাহর দেয়া ওয়াদা আরও বড় সত্য, তার শক্তি-ক্ষমতা আরও বেশী জোরালাে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর ওপর যে ব্যক্তিই ঈমান এনেছে সে অবশ্যই মহান আল্লাহর দেয়া এ ওয়াদার মিষ্টি-মধুর স্বাদ পেয়েছে এবং অনুভব করেছে আল্লাহর ওয়াদার সত্যতাকে। আর সবারই চিন্তা করা উচিত কে আছে এমন যে আল্লাহ রাব্বুল ইযযত থেকে বেশী ওয়াদাপূরণকার, কে আছে এমন যার কথা তার থেকে অধিক সত্য?

 

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

(وَقُلْ رَّبِّ أَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ)

‘বল: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে’ কেউ বলেছেন, এটা হিজরতের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদীনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল। কেউ বলেছেন: এর অর্থ হল সত্যের ওপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের ওপর আমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করো। আবার কেউ বলেছেন: সত্যতার সাথে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কিয়ামতের দিন সত্যতার সাথে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি। ইমাম শাওকানী বলেছেন: এটা যেহেতু দু‘আ, বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

الْحَقُّ সত্য হল তাওহীদ, সত্য হল ইসলাম এবং সত্য হল আল্লাহ তা‘আলা যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ওয়াহী করেছেন যা কোন দিন দূরীভূত হওয়ার নয় ও মুছে যাওয়ার নয়। আর মিথ্যা হল শিরক ও ইসলামদ্রোহী যাবতীয় কাজ। সত্যের মুকাবেলায় বাতিল সর্বদা বিপর্যস্ত ও পরাভূত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَي الْبَاطِلِ فَيَدْمَغُه۫ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٌ)

“কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার ওপর; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ“ হয়ে যায়।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১৮)

হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করেন এমতাবস্থায় যে, তখন কা‘বার চারপাশে তিনশত ষাটটি মূর্তি ছিল। তখন তিনি তাঁর হাতের লাঠি দ্বারা সেগুলোকে ভাঙ্গতে লাগলেন এবং এই আয়াতটি পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী: ৪৭২০, সহীহ মুসলিম: ১৭৮১)

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন: এ আয়াতে দলীল রয়েছে যে, যদি কোন এলাকার ওপর মুসলিমরা জয়ী হয়, অথবা তাদের কর্র্তৃত্বে চলে আসে তাহলে তারা সে এলাকার মুশরিকদের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলবে এবং যত ভাস্কর্য রয়েছে ও ইবাদত করা হয় এমন প্রতিমা রয়েছে সব ভেঙ্গে চূরমার করে দেবে। (তাফসীর কুরতুবী)

#সত্য সর্বদা বিজয়ী হয় এবং মিথ্যা সর্বদা পরাভূত হয়।
# রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা জানতে পারলাম।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# ৮০-৮১ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) মক্কায় ছিলেন, অতঃপর তাঁর প্রতি হিজরতের হুকুম হয় এবং এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটি হাসান সহীহবলেছেন)

হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ মক্কার কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) হত্যা করার অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার কিংবা বন্দী করার পরামর্শ করে। তখন আল্লাহ তাআলা মক্কাবাসীকে তাদের দুষ্কর্যের স্বাদ গ্রহণ করাবার ইচ্ছা করেন এবং স্বীয় নবীকে (সঃ) মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। এই আয়াতে এরই বর্ণনা রয়েছে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে মক্কা হতে বের হওয়া ও মদীনায় প্রবেশ করা। এই উক্তিটিই সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ।

ইবনু আইয়ায (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, শুভ ও সন্তোষজনক ভাবে প্রবেশ দ্বারা মৃত্যু এবং শুভ ও সন্তোষজনকভাবে বের হওয়ার দ্বারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো উক্তি রয়েছে, কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতম। ইমাম ইবনু জারীরও (রঃ) এটাকেই গ্রহণ করেছেন।
এরপর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “বিজয় লাভ ও সাহায্যের জন্যে আমারই নিকট প্রার্থনা কর। এই প্রার্থনার কারণে আল্লাহ তাআলা পারস্য ও রোম দেশ বিজয় এবং সম্মান প্রদানের ওয়াদা করেন। এটা তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) জানতেই পেরেছিলেন যে, বিজয় লাভ ছাড়া দ্বীনের প্রচার, প্রসার এবং শক্তিলাভ সম্ভবপর নয়। এ জন্যেই তিনি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য ও বিজয় কামনা করেছিলেন যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব, তাঁর হুদৃদ, শরীয়তের কর্তব্যসমূহ এবং দ্বীনের প্রতিষ্ঠা চালু করতে পারেন। এই বিজয় দানও আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ রহমত। এটা না হলে একে অপরকে খেয়ে ফেলতো এবং সবল দুর্বলকে শিকার করে নিতো। কেউ কেউ বলেছেন যে, ‘সুলতান নাসীর’ দ্বারা স্পষ্ট দলীল’ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী উত্তম। কেননা, সত্যের সাথে বিজয় ও শক্তিও জরুরী। যাতে সত্যের বিরোধীরা জব্দ থাকে। এই জন্যেই আল্লাহ তাআলা লোহা অবতীর্ণ করার অনুগ্রহকে কুরআন কারীমে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন।

একটি হাদীসে আছে যে, “সালতানাত বা রাজত্বের কারণে আল্লাহ তাআলা এমন বহু মন্দ কার্য বন্ধ করে দেন যা শুধুমাত্র কুরআনের মাধ্যমে বন্ধ করা যেতো না। এটা চরম সত্য কথা যে, কুরআন কারীমের উপদেশাবলী, ওর ওয়াদা, ভীতি প্রদর্শন তাদেরকে তাদের দুষ্কার্য হতে সরাতে পারতো না। কিন্তু ইসলামী শক্তি দেখে ভীত হয়ে তারা দুষ্কার্য হতে বিরত থাকে।

এরপর কাফিরদের সতর্ক করা হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সত্যের আগমন ঘটেছে, যাতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। কুরআন,ঈমান এবং লাভজনক সত্য ইলম আল্লাহর পক্ষ হতে এসে গেছে এবং কুফরী ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়েছে। ওটা সত্যের মুকাবিলায় হাত পা হীন দুর্বল সাব্যস্ত হয়েছে। হক। বাতিলের মস্তক চূণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। তাই বাতিলের কোন অস্তিত্বই নেই।

সহীহ বুখরীতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কায় (বিজয়ী বেশে। প্রবেশ করেন। সেই সময় বায়তুল্লাহর আশে পাশে তিনশ ষাটটি প্রতিমা ছিল। তিনি তাঁর হাতের লাঠিটি দ্বারা ওগুলিকে আঘাত করেছিলেন এবং মুখে এই আয়াতটি উচ্চারণ করেছিলেন। অর্থাৎ “সত্যের আগমন ঘটেছে এবং মিথ্যা বিদূরিত হয়েছে, মিথ্যা বিদূরিত হয়েই থাকে।”

মুসনাদে আবি ইয়ালায় বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে মক্কায় আগমন করি। ঐ সময় বায়তুল্লাহর আশে পাশে তিন শ ষাটটি মূর্তি ছিল, যেগুলির পূজা অর্চনা করা হতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিলেনঃ “এগুলিকে উপুড় করে ফেলে দাও।” অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন।”

Leave a Reply