أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৭১)[রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন?]
সুরা: আল্ বনি ইসরাইল
সুরা:১৭
৮৫-৮৭ নং আয়াত:-
[ وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الرُّوْحِ١ؕ
তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। ]
www.motaher21.net
সুরা: বনী ইসরাঈল
আয়াত নং :-৮৫
وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الرُّوْحِ١ؕ قُلِ الرُّوْحُ مِنْ اَمْرِ رَبِّیْ وَ مَاۤ اُوْتِیْتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ اِلَّا قَلِیْلًا
এরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। বলে দাও, “এ রূহ আমার রবের হুকুমে আসে কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো।”
আয়াত নং :-৮৬
وَ لَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِیْۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِهٖ عَلَیْنَا وَكِیْلًاۙ
আর হে মুহাম্মাদ! আমি চাইলে তোমার কাছ থেকে সবকিছুই ছিনিয়ে নিতে পারতাম, যা আমি অহীর মাধ্যমে তোমাকে দিয়েছি, তারপর তুমি আমার মোকাবিলায় কোন সহায়ক পাবে না, যে তা ফিরিয়ে আনতে পারে।
আয়াত নং :-৮৭
اِلَّا رَحْمَةً مِّنْ رَّبِّكَ١ؕ اِنَّ فَضْلَهٗ كَانَ عَلَیْكَ كَبِیْرًا
এই যে যা কিছু তুমি লাভ করেছো, এসব তোমার রবের হুকুম, আসলে তাঁর অনুগ্রহ তোমার প্রতি অনেক বড়।
৮৫-৮৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
সাধারণভাবে মনে করা হয়ে থাকে যে এখানে রূহ মানে প্রাণ। অর্থাৎ লোকেরা জীবনীশক্তি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, এর প্রকৃত স্বরূপ কি এবং এর জবাবে বলা হয়েছে এটি আল্লাহর হুকুমে আসে। কিন্তু এ অর্থ গ্রহণ করতে আমি কোনক্রমেই সম্মত নই। কারণ এ অর্থ একমাত্র তখনই গ্রহণ করা যেতে পারে যখন পূর্বাপর আলোচনার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে এবং বক্তব্য বিষয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে এ আয়াতকে একটি একক বাক্য হিসেবে নেয়া হবে। নয়তো বক্তব্যের ধারাবহিকতায় রেখে বিচার করলে রূহকে প্রাণ অর্থে গ্রহণ করার ফলে আয়াতে মারাত্মক ধরনের সম্পর্কহীনতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং এ বিষয়টির কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ বুঝা যায় না যে, যেখানে তিনটি আয়াতে কুরআনের নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্র হবার এবং কুরআন অমান্যকারীদের জালেম ও নিয়ামত অস্বীকারকারী হবার কথা বলা হয়েছে এবং যেখানে পরবর্তী আয়াতগুলো আবার কুরআনের আল্লাহর কালাম হবার ওপর প্রমাণ পেশ করা হয়েছে সেখানে কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে এ বিষয়বস্তু এসে গেছে যে, প্রাণীদের মধ্যে প্রাণ আসে আল্লাহর হুকুমে? আলোচনার যোগসূত্রের প্রতি দৃষ্টি রেখে বিচার করলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এখানে রূহ মানে “অহী” বা অহী বাহকারী ফেরেশতাই হতে পারে। মুশরিকদের প্রশ্ন আসলে এ ছিল যে, কুরআন তুমি কোথায় থেকে আনো? একথাই আল্লাহ বলেন, হে মুহাম্মাদ! তোমাকে লোকেরা রূহ অর্থাৎ কুরআনের উৎস অথবা কুরআন লাভ করার মাধ্যম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তাদেরকে বলে দাও, এ রূহ আসে আমার রবের হুকুমে। কিন্তু তোমাদের জ্ঞান এত কম যে, তোমারা মানুষের বাণী এবং আল্লাহর অহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত বাণীর মধ্যে ফারাক করতে পারো না এবং এ বাণীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছো যে, কোন মানুষ এটি তৈরী করছে। শুধু যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ভাষণের সাথে আয়াতের যোগসূত্র রক্ষা করার প্রয়োজনেই এ ব্যাখ্যা প্রাধান্য লাভের যোগ্য তা নয় বরং কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানেও এ বিষয়বস্তুটি প্রায় এসব শব্দ সহকারেই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন সূরা মু’মিনে বলা হয়েছেঃ
رَفِیۡعُ الدَّرَجٰتِ ذُو الۡعَرۡشِ ۚ یُلۡقِی الرُّوۡحَ مِنۡ اَمۡرِہٖ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ لِیُنۡذِرَ یَوۡمَ التَّلَاقِ ﴿ۙ۱۵﴾ “তিনিই নিজের হুকুমে নিজের যে বান্দার ওপর চান রূহ নাযিল করেন, যাতে লোকদের একত্র হবার দিন সম্পর্কে সে সতর্ক করে দিতে পারে।” (১৫ আয়াত)
সূরা শূরায় বলা হয়েছেঃ
وَ کَذٰلِکَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ رُوۡحًا مِّنۡ اَمۡرِنَا ؕ مَا کُنۡتَ تَدۡرِیۡ مَا الۡکِتٰبُ وَ لَا الۡاِیۡمَانُ “আর এভাবেই আমি নিজের হুকুমে তোমার প্রতি একটি রূহ পাঠিয়েছি, তুমি জানতে না কিতাব কি এবং ঈমান কি।” (৫২ আয়াত)
পূর্ববর্তীদের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা.), কাতাদা (রা.) ও হাসান বাস্রীও (রা.) এ ব্যাখ্যা অবলম্বন করেছেন। ইবনে জারীর এ ব্যাখ্যাকে কাতাদার বরাত দিয়ে ইবনে আব্বাসের উক্তি বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি একটি অদ্ভূত কথা লিখেছেন যে, ইবনে আব্বাস গোপনে এ মত ব্যক্ত করতেন। অন্যদিকে তাফসীরে রূহুল মা’আনী এর লেখক হাসান ও কাতাদার এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ “রূহ বলতে জিব্রীলকে বুঝানো হয়েছে এবং প্রশ্ন আসলে এ ছিল যে, তা কিভাবে নাযিল হয় এবং কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে অহী প্রক্ষিপ্ত হয়।”
# বাহ্যত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে আসলে কাফেরদেরকে কষ্ট দেয়া। কারণ তারা বলতো, কুরআন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের তৈরী বা গোপনে অন্য কোন লোকের কাছ থেকে শেখানো বাণী। তাদেরকে বলা হচ্ছেঃ এ বাণী পয়গম্বর রচনা করেননি বরং আমি প্রদান করেছি এবং যদি আমি এ বাণী ছিনিয়ে নিই তাহলে এ ধরনের বাণী রচনা করে নিয়ে আসার ক্ষমতা পয়গম্বরের নেই। তাছাড়া দ্বিতীয় কোন শক্তিও নেই যে এ ব্যক্তিকে এ ধরনের মহাশক্তিধর কিতাব পেশ করার যোগ্য করে তুলতে পারে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*মানুষের বোধ শক্তির সীমাবদ্ধতা : আলােচনা প্রসংগে এখানে আর একটি কথা বলা হচ্ছে। আর তা হলাে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তি ও গােষ্ঠী নিজস্ব মত ও পথ অনুযায়ীই কাজ করে থাকে। কিন্তু কারা সঠিক পথ ও মতের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তার বিচারের ভার এক মাত্র আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত। সে কথাই এখানে বলা হয়েছে।(আয়াত ৮৪) আলােচ্য আয়াতের বক্তব্যে কর্ম ও মতাদর্শের চূড়ান্ত পরিণতির ব্যাপারে একটা প্রচ্ছন্ন সতর্কবাণী রয়েছে। ফলে মানুষ যেন এসব ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে এবং এমন মত ও পথের অনুসরণ করে যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ও তার সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক হয়। কেউ কেউ রসূলুল্লাহ(স.)-কে রুহ বা আত্মা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বসে। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে পবিত্র কোরআন একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু নীতিমালা অবলম্বন করে থাকে। এই নীতিমালার আলােকে পবিত্র কোরআন কেবল ততােটুকুই উত্তর দেয় যতােটুকু মানুষের বাস্তব প্রয়ােজন এবং যতােটুকু অনুধাবন করার মতাে শক্তি ও প্রজ্ঞা তার রয়েছে। অনর্থক ও বেহুদা বিষয়াদি নিয়ে চিন্তা করে আল্লাহ প্রদত্ত মেধা ও বুদ্ধির অপচয় করা হোক এটা পবিত্র কোরআনের আদৌ কাম্য নয়। সে কারণেই যখন রসূলুল্লাহ(স.) আত্মার পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলাে তখন তাঁকে কেবল এতােটুকু বলতে নির্দেশ দেয়া হলাে যে, এটা মহান আল্লাহর আদেশ বিশেষ এবং এর সঠিক পরিচয় ও প্রকৃতি সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। এ বিষয়েই এখানে বলা হয়েছে।(আয়াত ৮৫) এ জাতীয় উত্তর প্রদানের মাধ্যমে মানুষের মেধা, চিন্তাশক্তি ও মননশীলতাকে বিকল করে ফেলা নয়; বরং এর মাধ্যমে মানুষের মেধা ও মননশীলতাকে তার নিজস্ব সীমারেখার মধ্যে থেকে কাজ করার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। যে সকল বিষয় মানুষের চিন্তা ও বােধশক্তির আওতার বাইরে সে সব বিষয় নিয়ে মানুষ, মাথা ঘামিয়ে নিজের মেধা ও শ্রমের অপচয় করুক-এটা যুক্তিযুক্ত নয়। আত্মাও ঠিক তেমনি একটি অদৃশ্য ও অতিন্দ্রীয় রহস্য। এই রহস্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। তিনিই আত্মা নামক এই অতিন্দ্রীয় রহস্যটিকে মানুষসহ আরও অজানা বহু প্রাণীর দেহে স্থাপন করেছেন। আর আমরা সকলেই জানি যে, আল্লাহর অসীম ও নিরংকুশ জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞান খুবই সীমিত ও নগণ্য। কাজেই এই গােটা বিশ্ব চরাচরের অসংখ্য রহস্য ও ভেদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। এই বিশাল জগতের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ভার মানুষের হাতে ন্যস্ত নয়। কারণ তার শক্তি ও সামর্থ এই গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম নয়। মানুষকে তার সীমিত-শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী এবং তার আওতাধীন বিষয়াদির ব্যাপারেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কাজেই সে তার সীমিত জ্ঞান ও সামর্থ অনুযায়ীই আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশ মােতাবেক দুনিয়ার বুকে খেলাফত বা প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করে যাবে। এই পৃথিবীর বুকে মানুষ অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছে, সৃষ্টি করেছে। কিন্তু রুহ বা আত্মার সঠিক পরিচয় উদঘাটন করতে গিয়ে সে খেই হারিয়ে ফেলেছে। এই সূক্ষ্ম ও অদৃশ্য বস্তুটি কিভাবে আসে এবং কিভাবে যায়, এটা কোথায় ছিলাে এবং কোথায় যাবে এসব জটিল প্রশ্নের উত্তর সে কোথাও খুঁজে পায়নি, আর সেটা সম্ভবও নয়। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে আত্মার পরিচয় যতােটুকু ও যেভাবে দিয়েছেন ততােটুকুই মেনে নেয়া ব্যতীত অন্য কোনাে উপায় নেই। কারণ, পবিত্র কোরআনের দেয়া তথ্যই নির্ভুল ও নির্ভরযােগ্য। এই তথ্য স্বয়ং মহান আল্লাহর জ্ঞান হতে উৎসারিত। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মানবজাতিকে এই তথ্য হতে বঞ্চিতও রাখতে পারতেন। এমনকি রাসূল(স.)-কে ওহীর মাধ্যমে যেসব বিষয়াদি ও তথ্যাদি জানানাে হয়েছে, সেগুলােও তিনি ছিনিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তার পরম দয়া ও করুণার ফলে এমনটি করা হয়নি। এই দয়া ও করুণার বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা তার রসূলকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, ওহীর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় অবগত করন, সে বিষয়গুলাে স্থির ও অপরিবর্তিত রাখা নবীর জন্যে এবং গােটা মানব জাতির জন্য একটা বিরাট খােদায়ী করুণা। কারণ এই ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত কোরআনের বদৌলতেই যুগে যুগে মানব জাতি ঐশী রহমত, হেদায়াত ও নেয়ামত লাভে ধন্য হয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(وَيَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الرُّوْحِ…. ) শানে নুযূল:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার জমির ওপর দিয়ে চলছিলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। আমি তাঁর সঙ্গী ছিলাম। ইয়াহূদীদের একটি দল তাঁকে দেখে পরস্পর বলাবলি করে: এস, আমরা তাঁকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করি।” কেউ বলে যে, ঠিক আছে আবার কেউ কেউ বলে: তিনি হয়ত এমন উত্তর দেবেন যা তোমাদের বিপরীত হবে। সুতরাং যেতে দাও, প্রশ্ন করার দরকার নেই। শেষ পর্যন্ত তারা এসে প্রশ্ন করল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি বুঝে নিলাম যে, তাঁর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। আমি নীরবে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন সে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মুসনাদ আহমাদ হা: ৩৬৮৮, সনদ সহীহ)
(وَمَآ أُوْتِيْتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيْلًا)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনি মানুষকে খুবই সামান্য পরিমাণ জ্ঞান দান করেছেন। আর এই জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানের তুলনায় খুবই নগণ্য। সুতরাং এই ‘রূহ’ সম্পর্কে একমাত্র তিনিই ভাল জানেন। তিনি শুধু মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই রূহ কেবল তাঁর একটি নির্দেশ। এ সম্পর্কে আর কিছুই তাদেরকে অবগত করাননি। এ সম্পর্কে সকল জ্ঞান তাঁরই নিকট। তাঁর জ্ঞান অপরিমেয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(قُلْ لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمٰتِ رَبِّيْ لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّيْ وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِه۪ مَدَدًا)
“বল: ‘আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমরা এটার সাহায্যার্থে অনুরূপ আরও সমুদ্র আনলেও। (সূরা কাহফ ১৮:১০৯)
এরূপ সূরা লুকমানের ২৭ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। অতএব রূহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকট।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যে ওয়াহী করেছেন তা তিনি ছিনিয়ে নিতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। এটি কেবল তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
# রূহ আল্লাহ তা‘আলার একটি নির্দেশ, তার প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলার কাছে।
# মানুষের জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানের তুলনায় খুবই নগণ্য।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
#সহীহ বুখারী প্রভৃতি সহীহ হাদীস গ্রন্থে হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনার জমির উপর দিয়ে চলছিলেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। আমি তাঁর সঙ্গী ছিলাম। ইয়াহুদীদের একটি দল তাকে দেখে পরষ্পর বলাবলি করেঃ “এসো, আমরা তাঁকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করি।” কেউ বলে যে, ঠিক আছে, আবার কেউ বাধা দেয়। কেউ কেউ বলেঃ “এতে আমাদের কি লাভ?” আবার কেউ কেউ বলেঃ “তিনি হয়তো এমন উত্তর দিবেন যা তোমাদের বিপরীত হবে। সুতরাং যেতে দাও, প্রশ্ন করার দরকার নেই। শেষ পর্যন্ত তারা এসে প্রশ্ন করেই বসলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি বুঝে নিলাম যে, তাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। আমি নীরবে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন।”
এদ্বারা বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, এটি মাদানী আয়াত। অথচ সম্পূর্ণ সূরাটি মক্কী। কিন্তু হতে পারে যে, মক্কায় অবতারিত আয়াত দ্বারাই এই স্থলে মদীনার ইয়াহূদীদেরকে জবাব দেয়ার ওয়াহী হয়েছিল কিংবা এও হতে পারে যে, দ্বিতীয়বার এই আয়াতটিই অবতীর্ণ হয়েছিল। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত রিওয়াইয়াত দ্বারাও এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়া বুঝা যায়।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কুরায়েশেরা ইয়াহুদীদের কাছে আবেদন করেছিলঃ এমন একটি কঠিন প্রশ্ন আমাদেরকে বলে দাও যা আমরা মুহাম্মদকে (সঃ) জিজ্ঞেস করতে পারি।” তারা তখন এই প্রশ্নটাই বলে দেয়। তারই জবাবে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন এই উদ্ধতরা (ইয়াহূদীরা) বলতে শুরু করেঃ “আমাদের বড় জ্ঞান রয়েছে। আমরা তাওরাত লভি করেছি এবং যার কাছে তাওরাত আছে সে বহু কিছু কল্যাণ লাভ করেছে।” তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “বলঃ প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করবার জন্যে সমুদ্র যদি কালিহয় তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- সাহায্যার্থে এর মত আরেকটি সমুদ্র আনলেও।” (১৮:১০৯)।
ইকরামা (রাঃ) হতে ইয়াহুদীদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া এবং তাদের ঐ অপছন্দনীয় কথার প্রতিবাদে নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া বর্ণিত আছে। আয়াতটি হচ্ছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “সমগ্রজগতে যত বৃক্ষ রয়েছে, যদি তা সমস্তই কলম হয়, আর এই যে সমুদ্র রয়েছে, এটা ছাড়া এইরূপ আরো সাতটি সমুদ্র (কালির স্থল) হয়, তবুও আল্লাহর (গুণাবলীর) বাক্যসমূহ সমাপ্ত হবে না।” (৩১:২৭) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাহান্নাম হতে রক্ষাকারী তাওরাতের জ্ঞান একটা বড় বিষয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় এটা অতি নগণ্য।
ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। যখন নবী (সঃ) হিজরত করে মদীনায় আসেন তখন মদীনার ইয়াহূদী আলেমরা তাঁর কাছে এসে বলেঃ “আমরা শুনেছি যে, আপনি বলে থাকেন? ‘তোমাদেরকে তো অতি সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে এটার দ্বারা কি উদ্দেশ্য আপনার কওম, না আমরা?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তোমরাও এবং তারাও।” তারা তখন বললোঃ “আপনি তো স্বয়ং কুরআনে পাঠ করে থাকেন যে, আমাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছে এবং কুরআনে এও রয়েছে যে, তাওরাতে সব কিছুরই বর্ণনা রয়েছে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের একথার উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় এটাও অতি নগণ্য। হাঁ, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে এটুকু জ্ঞান দিয়েছেন যে, যদি তোমরা এর উপর আমল কর তবে তোমরা অনেক কিছু উপকার লাভ করবে।” তখন (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করে যে, দেহের সাথে রূহের শাস্তি কেন হয়? ওটা তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এসেছে? এই ব্যাপারে তার উপর কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয় নাই বলে তিনি তাদেরকে কোন জবাব দেন নাই। তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এটা শুনে ইয়াহূদীরা তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “এর খবর আপনাকে কে দিলো?” তিনি। জবাবে বলেনঃ হযরত জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে এ খবর নিয়ে এসেছিলেন। তারা তখন বলতে শুরু করলোঃ “জিবরাঈল (আঃ) তো আমাদের শত্রু।” তাদের এই কথার প্রতিবাদে আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতগুলি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি বলঃ যে ব্যক্তি শত্রুতা রাখে জিবরাঈলের (আঃ) সাথে (সে রাখুক), সে পৌঁছিয়েছে এই কুরআনকে তোমার অন্তকরণ পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমে যে অবস্থায় তা স্বীয় পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যতা প্রমাণ করছে, আর হিদায়াত করছে ও সুসংবাদ দিচ্ছে মু’মিনদেরকে। যে ব্যক্তি শত্রু হয় আল্লাহর এবং তাঁর ফেরেশতাদের তাঁর রাসূলদের, জিবরাঈলের (আঃ) এবং মীকাঈলের (আঃ) আল্লাহ এরূপ কাফিরদের শত্রু।” (২:৯৭-৯৮)
একটা উক্তি এও আছে যে, এখানে ‘রূহ’ দ্বারা হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে। এও একটা উক্তি যে, এর দ্বারা এমন বিরাট শান শওকত পূর্ণ ফেরেতাকে বুঝানো হয়েছে যিনি একাই সমস্ত মাখলুকের সমান। একটি হাদীসে এও আছে যে, আল্লাহ তাআলার এক ফেরেস্তা এমনও রয়েছেন যে, যদি তাঁকে সাত যমিন ও সাত আসমান একটা গ্রাস করতে বলা হয় তবে তিনি তাই করবেন (অর্থাৎ একগ্রাসে সমস্ত খেয়ে ফেলবেন)। তাঁর তাসবীহ হলো নিম্নরূপ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন।” (এই হাদীসটি গরীব বা দুর্বল, এমনকি মুনকার বা অস্বীকৃত)
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন ফেরেশতা এমন রয়েছেন। যার সত্তর হাজার মুখ রয়েছে, প্রত্যেক মুখে সত্তর হাজার জিহ্বা রয়েছে’ প্রত্যেক জিহ্বায় আছে সত্তর হাজার ভাষা। তিনি এই সমুদয় ভাষায় আল্লাহ তাআ’লার তাসবীহ পাঠ করে থাকেন। তাঁর প্রত্যেক তাসবীহতে আল্লাহ একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করে থাকেন, যিনি অন্যান্য ফেরেশতাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন কাটিয়ে দেবেন। (এ ‘আসার’ টিও বড়ই বিস্ময়কর ও গারীব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী) সুহাইলীর (রঃ) রিওয়াইয়াতে তো রয়েছে যে, ঐ ফেরেশতার এক লক্ষটি মাথা আছে, প্রত্যেক মাথায় এক লক্ষটি মুখ আছে ,প্রত্যেক মুখে রয়েছে একলক্ষটি ভাষা। বিভিন্ন ভাষায় তিনি আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা ঘোষণা করে থাকেন।
এটাও আছে যে, এর দ্বারা ফেরেশতাদের ঐ দলটিকে বুঝানো হয়েছে যারা মানুষের আকৃতিতে রয়েছেন। একটি উক্তি এটাও আছে যে, এর দ্বারা এ ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা অন্যান্য ফেরেশতাদেরকে দেখতে পান, কিন্তু অন্যান্য ফেরেশতারা তাদেরকে দেখতে পান না। সুতরাং এই ফেরেশতারা অন্যান্য ফেরেশতাদের কাছে সেই রূপ যেই রূপ আমাদের কাছে এই ফেরেশতাগণ।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় নবীকে (সঃ) বলেনঃ “তুমি তাদেরকে জবাবে বলে দাওঃ রূহ্ আমার প্রতিপালকের আদেশে ঘটিত। এর জ্ঞান একমাত্র তাঁরই আছে, আর কারো নেই। তোমাদেরকে যে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তা আল্লাহ তাআলারই দেয়া জ্ঞান। সুতরাং তোমাদের এই জ্ঞান খুবই সীমিত।” সৃষ্টজীবের শুধু ঐ জ্ঞানই রয়েছে যে জ্ঞান তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত খি (আঃ)-এর ঘটনায় আসছে যে, যখন এই দুই বুর্যগ ব্যক্তি নৌকার উপর সওয়ার হয়ে ছিলেন সেই সময় একটি পাখী নৌকার তক্তায় বসে নিজের চঞ্চটি পানিতে ডুবিয়ে উড়ে যায়। তখন হযরত খি (আঃ) বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনার, আমার এবং সমস্ত সৃষ্ট জীবের জ্ঞান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় এতটুকুই যতটুকু পানি নিয়ে এই পাখীটি উড়ে গেল।” কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইয়াহুদীদেরকে তাদের প্রশ্নের জবাব দেন নাই। কেননা, তারা অস্বীকার করা ও হঠকারিতার বশবর্তী হয়েই এ প্রশ্ন করে ছিল। এটাও বলা হয়েছে যে, জবাব হয়ে গেছে। ভাবার্থ এই যে, রূহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত। তোমাদের এ ব্যাপারে মাথা না ঘামানোই উচিত। তোমরা জানতেই পারছো যে, এটা জানবার প্রকৃতিগত ও দর্শনগত কোন পথ নেই, বরং এটা শরীয়তের ব্যাপার। সুতরাং তোমরা শরীয়তকে কবুল করে নাও। কিন্তু আমরা তো এই পন্থাটিকে বিপদমুক্ত দেখছি। এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
অতঃপর সুহাইলী (রঃ) আলেমদের মতভেদ বর্ণনা করেছেন যে, রূহ কি নফস, না অন্য কিছু? এটাকে এভাবে প্রমাণিত করা হয়েছে যে, রূহ দেহের মধ্যে বাতাসের মত চালু রয়েছে এবং এটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম জিনিস, যেমন গাছের শিরায় পানি উঠে থাকে। তার ফেরেশতা যে রূহ মায়ের পেটের বাচ্চার মধ্যে ফুকে থাকেন তা দেহের সাথে মিলিত হওয়া মাত্রই নফস হয়ে যায়। এর সাহায্যে ওটা ভাল মন্দ গুণ নিজের মধ্যে লাভ করে থাকে। হয় আল্লাহর যিকরের সাথে প্রশান্তি আনয়নকারী হয়ে যায়, না হয় মন্দ কার্যের হুকুম দাতা হয়ে যায়। যেমন পানি গাছের জীবন। ওটা গাছের সাথে মিলিত হওয়ার কারণে একটা বিশেষ জিনিস নিজের মধ্যে পয়দা করে নেয়। আঙ্গুর সৃষ্ট হয়, অতঃপর ওর পানি বের করা হয় অথবা মদ তৈরী করা হয়। সুতরাং ঐ আসল পানি অন্য রূপ ধারণ করেছে। এখন ওটাকে আসল পানি বলা যেতে পারে না। অনুরূপভাবে দেহের সাথে মিলিত হওয়ার পর রূহকে আসল রূহ বলা যাবে না এবং নফস ও বলা যাবে না। মোট কথা, রূহ হলো নফস ও মাদ্দার (মূল পদার্থের মূল। আর নফস হলো রূহের এবং ওর দেহের সাথে সংযুক্ত হওয়ার দ্বারা যা হয় সেটাই। সুতরাং রূহটাই নফস। কিন্তু একদিক দিয়ে নয়, বরং সবদিক দিয়েই। এতো হলো মন ভুলানো কথা, কিন্তু এর হাকীকতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। মানুষ এ ব্যাপারে অনেক কিছু বলেছেন এবং এর উপর বড় বড় স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন।
# আল্লাহ তাআলা নিজের ঐ বড় অনুগ্রহ ও ব্যাপক নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছে না যে, নিয়ামত তিনি তাঁর প্রিয় রাসূল (সঃ) এর উপর নাযিল করেছেন। অর্থাৎ তিনি তার উপর ঐ পবিত্র কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যার মধ্যে কখনো কোন মিথ্যা মিশ্রণ অসম্ভব। তিনি ইচ্ছা করলে এই ওয়াহীকে প্রত্যাহারও করতে পারতেন। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, শেষ যুগে সিরিয়ার দিক থেকে এক লাল বায়ু প্রবাহিত হবে। ঐ সময় কুরআনের পাতা থেকে এবং হাফিযদের অন্তর হতে কুরআন ছিনিয়ে নেয়া হবে। এক হরফ বা অক্ষরও বাকী থাকবে না। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন।