أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৭২)[যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কুরআনের,]
সুরা: আল্ বনি ইসরাইল
সুরা:১৭
৮৮ নং আয়াত:-
[قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَ الْجِنُّ
বলে দাও, যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে,]
www.motaher21.net
সুরা: বনী ইসরাঈল
আয়াত নং :-৮৮
قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَ الْجِنُّ عَلٰۤى اَنْ یَّاْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا یَاْتُوْنَ بِمِثْلِهٖ وَ لَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِیْرًا
বলে দাও, যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কুরআনের মতো কোন একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়ে গেলেও।
৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# ইতিপূর্বে কুরআন মজীদের আরো তিন জায়গায় এ চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে। সূরা বাকারার ৩ রুকূ’ , সূরা ইউনসের ৪ রুকূ’ এবং সূরা হূদের ২ রুকূ’তে এ চ্যালেঞ্জ এসেছে। সামনে সূরা তূরের ২ রুকূ’ তেও এ বিষয়বস্তু আসছে। এসব জায়গায় কাফেরদের যে অপবাদের জবাবে একথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে এই যে, মুহাম্মাদ ﷺ নিজেই কুরআন রচনা করেছেন এবং অযথা এটাকে আল্লাহর কালাম বলে পেশ করছেন। এছাড়াও সূরা ইউনূসের ১৬ আয়াতে এ অপবাদ খণ্ডন করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ
قُلْ لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا تَلَوْتُهُ عَلَيْكُمْ وَلَا أَدْرَاكُمْ بِهِ ۖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِنْ قَبْلِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলো, আমি তোমাদের এ কুরআন শুনাবো এটা যদি আল্লাহ না চাইতেন, তাহলে আমি কখনোই শুনাতে পারতাম না বরং তোমাদের এর খবরও দিতে পারতাম না। আমি তো তোমাদের মধ্যেই জীবনের সুদীর্ঘকাল কাটিয়ে আসছি। তোমরা কি এতটুকুও বোঝ না?
এ আয়াতগুলোতে কুরআন মজীদ আল্লাহর কালাম হবার সপক্ষে যে যুক্তি পেশ করা হয়েছে তা আসলে তিন ধরনেরঃ একঃ এ কুরআন স্বীয় ভাষা, বর্ণনা পদ্ধতি, বিষয়বস্তু, আলোচনা, শিক্ষা ও গায়েবের খবর পরিবেশনের দিক দিয়ে একটি মু’জিযা। এর নজির উপস্থাপনা করার ক্ষমতা মানুষের নেই। তোমরা বলছো একজন মানুষ এটা রচনা করেছে। কিন্তু আমি বলছি, সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষ মিলেও এ ধরনের একটি কিতাব রচনা করতে পারবে না। বরং মুশরিকরা যে জিনদেরকে নিজেদের মাবুদ বানিয়ে রেখেছে এবং এ কিতাব যাদের মাবুদ হবার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আঘাত হানছে তারাও যদি কুরআন অস্বীকারকারীদেরকে সাহায্য করার জন্য একাট্টা হয়ে যায় তাহলে তারাও এদেরকে এ কুরআনের সমমানের একটি কিতাব রচনা করে দিয়ে এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার যোগ্য করতে পারবে না।
দুইঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম হঠাৎ তোমাদের মধ্যে বাইর থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। বরং এ কুরআন নাযিলের পূর্বেও ৪০ বছর তোমাদের মধ্যেই বসবাস করেছেন। নবুওয়াত দাবী করার একদিন আগেও কি কখনো তোমরা তাঁর মুখে এই ধরনের কালাম এবং এই ধরনের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য সম্বলিত বাণী শুনেছিলে? যদি না শুনে থাকো এবং নিশ্চিতভাবেই শুনোনি তাহলে কোন ব্যক্তির ভাষা, চিন্তাধারা, তথ্যজ্ঞান এবং চিন্তা ও বর্ণনা ভংগীতে হঠাৎ রাতারাতি এ ধরনের পরিবর্তন সাধিত হতে পারে না, একথা কি তোমরা বুঝতে পারছো?
তিনঃ মুহাম্মাদ ﷺ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে দিয়ে কোথাও অদৃশ্য হয়ে যান না বরং তোমাদের মধ্যেই থাকেন। তোমরা তাঁর মুখে কুরআন শুনে থাকো এবং অন্যান্য আলোচনা ও বক্তৃতাও শুনে থাকো। কুরআনের ভাষা ও বর্ণনা ভংগীর মধ্যে পার্থক্য এত বেশী যে কোন এক ব্যক্তির এ ধরনের দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্টাইল কোনক্রমে হতেই পারে না। এ পার্থক্যটা শুধুমাত্র নবী ﷺ যখন নিজের দেশের লোকদের মধ্যে বাস করতেন তখনই ছিল না বরং আজও হাদীসের কিতাবগুলোর মধ্যে তাঁর শত শত উক্তি ও ভাষণ অবিকৃত রয়েছে এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। এগুলোর ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গীর সাথে কুরআনের ভাষা ও বর্ণনাভংগীর এত বেশী পার্থক্য লক্ষণীয় যে, ভাষা ও সাহিত্যের কোন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও সমালোচক এ দু’টিকে এক ব্যক্তির কালাম বলে দাবী করতে পারেন না।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*মানুষ ও জ্বীনের প্রতি আল্লাহর চ্যালেঞ্জ : আত্মার প্রকৃত রহস্যের জ্ঞান যেরূপ কেবল আল্লাহর মাঝেই সীমাবদ্ধ, তদ্রুপ কোরআন সৃষ্টির ব্যাপারটিও তার একক সত্তার মাঝেই সীমাবদ্ধ। কোনাে প্রাণীই এমন সৃষ্টির অনুকরণ করার ক্ষমতা ও শক্তি রাখে না। মানুষ ও জ্বীন এই দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় শ্রেণীর প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয় এমন একটি বাণী রচনা করে দেখানো। এমনকি তারা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালালেও তাদের পক্ষে সেটা সম্ভবপর হবে না। এ কথাই এখানে বলা হয়েছে, তুমি এদের বলাে যদি সমস্ত মানুষ ও জ্বীন এ কাজের জন্যে একত্রি হয় যে, তারা এই কোরআনের মতাে কিছু রচনা করবে এই পবিত্র কোরআন কেবল কিছু শব্দ আর বাক্যের সমষ্টির নামই নয় যে, তা মানুষ বা জ্বিন জাতি অনুকরণ করতে সক্ষম হবে। এই কোরআন হচ্ছে আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টিরই অন্যতম সৃষ্টি যা গােটা জগতবাসীর জন্যে অসাধ্য ও অসম্ভব। এটা আত্মার মতােই একটা খােদায়ী নির্দেশ যার পূর্ণ রহস্য উদঘাটন করা কোনাে সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে এর কোনাে কোনাে বৈশিষ্ট্য বা গুণ বা প্রভাব সম্পর্কে কেউ কিছুটা অনুধাবন করে থাকলে করতেও পারে। এই গুণটির সাথে সাথে পবিত্র কোরআনের আরও একটি গুণ ও বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা হচ্ছে পবিত্র কোরআন একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এই জীবন বিধানে প্রাকৃতিক নিয়ম নীতির প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রাখা হয়েছে যা মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে এবং প্রতিটি পর্যায়ে কার্যকর; যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ও বিভিন্ন পর্যায়ে মানব সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, পবিত্র কোরআন ব্যক্তি সমস্যারও সমাধান করে এবং আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত সামাজিক সমস্যারও সমাধান করে। আর এই সমাধান করতে গিয়ে পবিত্র কোরআন এমন কিছু নিয়ম নীতি ও বিধি বিধানের আশ্রয় নেয় যা মানব সমাজের গভীরে প্রােথিত স্বভাব প্রকৃতির সাথে সকল দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সময়ােচিত। এই সমাধান দিতে গিয়ে কোরআনী বিধানের দৃষ্টির আড়ালে এমন সব বিষয়াদি থাকে না যা ব্যক্তি জীবনে এবং সামষ্টিক জীবনে দেখা দিতে পারে। কারণ যিনি এই বিধানের প্রবর্তক ও স্রষ্টা তিনি জীবন ও প্রকৃতির প্রতিটি স্তর ও অবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ওয়াকিফহাল। অপর দিকে মানব রচিত আইনে এই বৈশিষ্ট্য নেই। এতে মানবীয় ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এ কারণেই মানব রচিত আইন একই সময় সকল সম্ভাবনা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখতে পারে না। ফলে এই আইন কোনাে ব্যক্তি সমস্যা বা সামাজিক সমস্যার সমাধানে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে বহু নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে এবং সে গুলাের জন্যে পুনরায় নতুন সমাধানের প্রয়ােজন দেখা দেয় । শব্দ, অর্থ এবং বিষয়বস্তু সব দিক থেকেই পবিত্র কোরআন একটি অতুলনীয় ও অনুকরণীয় গ্রন্থ। অনুরূপ কোনাে গ্রন্থ রচনা করা বা এর সমতুল্য বাণী সৃষ্টি মানুষ এবং জ্বিন জাতির সাধ্যাতীত ব্যাপার। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র কোরআনের অনুরূপ কোনাে জীবন ব্যবস্থা ও বিধি-বিধান রচনা করাও এই উভয়ই শ্রেণীর মাখলুকের পক্ষে সম্ভব নয়।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
#আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআনের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করে বলেন: সকল জিন এবং মানুষ মিলিত হয়েও যদি চেষ্টা করে তারপরও এ রকম একটি গ্রন্থ আনয়ন করতে পারবে না। মক্কার মুশরিকরা অনেক চেষ্টা করেছিল এরূপ কথা বানানোর জন্য কিন্তু তারা নিজেরা বানিয়ে নিজেরাই পছন্দ করেনি। সুতরাং এতে কুরআনের মর্যাদা এবং নির্ভুলতার প্রমাণ বহন করে, কুরআন আসমানী কিতাব; কোন গণক, জ্যোতিষী বা কবির কথা নয় তাও প্রমাণিত হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতার প্রমাণ মেলে। এ সম্পর্কে পূর্বে সূরা বাকারার ২৩ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
#মহান আল্লাহ নিজের ফল ও করম এবং অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তার এই পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠত্বের এক বড় প্রমাণ হচ্ছেঃ সমস্ত মাখলুক এর মুকাবিলা করতে অপারগ হয়ে গেছে। কারো ক্ষমতা নেই, এর মত ভাষা প্রয়োগ করতে পারে। আল্লাহ তাআ’লা নিজে যেমন নযীর বিহীন ও তুলনা বিহীন, অনুরূপভাবে তাঁর কালামও অতুলনীয়।
ইবনু ইসহাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একবার ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে বলেঃ “আমরাও এই কুরআনের মত কালাম বানাতে পারি।” এ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (কিন্তু আমরা এটা মানতে পারি না। কেননা, এই সূরাটি মক্কী সূরা। আর এর সমস্ত বর্ণনা কুরায়েশদের সম্পর্কেই রয়েছে এবং তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। মক্কায় ইয়াহুদীর সাথে নবীর (সঃ) মিলন ঘটে নাই। মদীনায় এসে তাদের সাথে মিলন হয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানান)