(বই#৮৭৫) সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ৯৭-৯৯ নং আয়াত:- [ وَ مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِ ۚ আল্লাহ যাদেরকে পথ-নির্দেশ করেন, তারা তো পথপ্রাপ্ত।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৭৫)
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৯৭-৯৯ নং আয়াত:-
[ وَ مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِ ۚ
আল্লাহ যাদেরকে পথ-নির্দেশ করেন, তারা তো পথপ্রাপ্ত।]
www.motaher21.net
وَ مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَلَنۡ تَجِدَ لَہُمۡ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِہٖ ؕ وَ نَحۡشُرُہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عَلٰی وُجُوۡہِہِمۡ عُمۡیًا وَّ بُکۡمًا وَّ صُمًّا ؕ مَاۡوٰىہُمۡ جَہَنَّمُ ؕ کُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنٰہُمۡ سَعِیۡرًا ﴿۹۷﴾
আল্লাহ যাদেরকে পথ-নির্দেশ করেন, তারা তো পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কাউকেও তাদের অভিভাবক পাবে না। আর কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়; কানা, বোবা ও কালা করে। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবে, তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নি বৃদ্ধি করে দেব।
ذٰلِکَ جَزَآؤُہُمۡ بِاَنَّہُمۡ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ قَالُوۡۤاءَ اِذَا کُنَّا عِظَامًا وَّ رُفَاتًاءَ اِنَّا لَمَبۡعُوۡثُوۡنَ خَلۡقًا جَدِیۡدًا ﴿۹۸﴾
এটাই তাদের প্রতিফল। কারণ তারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছিল ও বলেছিল, ‘আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হব?’
اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ قَادِرٌ عَلٰۤی اَنۡ یَّخۡلُقَ مِثۡلَہُمۡ وَ جَعَلَ لَہُمۡ اَجَلًا لَّا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ فَاَبَی الظّٰلِمُوۡنَ اِلَّا کُفُوۡرًا ﴿۹۹﴾
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ; যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান? তিনি তাদের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই। তথাপি সীমালংঘনকারীরা সত্য প্রত্যাখ্যান করা ব্যতীত ক্ষান্ত হল না।

৯৭-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৯৭-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:

(دُوْنِه۪….. وَمَنْ يَّهْدِ اللّٰهُ)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা দিচ্ছেন যে, হিদায়াত দানের মালিক একমাত্র তিনিই, তিনি যাকে হিদায়াত দেন সেই হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কোন অলী-আওলিয়া, গাউস-কুতুব, পীর-ফকীর এমনকি নাবী-রাসূলগণও হিদায়াত দিতে পারে না। তার জ্বলন্ত প্রমাণ হল আবূ তালেব, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা। যিনি রাসূলের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে কাফিরদের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচার মুখ থেকে একবারও কালেমা পাঠ করাতে পারলেন না। তার শেষ বিদায় হল বাপ-দাদার ধর্মের ওপর। (সহীহ বুখারী হা: ১৩৬০)

এ প্রকার হিদায়াত হল

(هداية التوفيق)

হিদায়াতুত তাওফীক:

সরল সঠিক পথের দিশা দান করতঃ তার ওপর মজবুত ও অটুট থাকার তাওফীক দান করা, যা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ দিতে পারে না।

সুতরাং সঠিক পথ পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করতে হবে, শুধু বাপ-দাদার দোহাই দিলে হবে না। এ সম্পর্কে সূরা হূদ এর ১১৮ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

(وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ…. )

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, কাফির-মুশরিকরা যেমনিভাবে দুনিয়াতে সত্য গ্রহণ করার ব্যাপারে অন্ধ, বোবা ও বধির ছিল আখিরাতেও আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অনুরূপ অবস্থায় তাদের মুখের ওপর ভর দিয়ে উঠাবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اَلَّذِيْنَ يُحْشَرُوْنَ عَلٰي وُجُوْهِهِمْ إِلٰي جَهَنَّمَ لا أُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّأَضَلُّ سَبِيْلًا) ‏

“যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, তারা অবস্থানের দিক দিয়ে অতি নিকৃষ্ট এবং অধিক পথভ্রষ্ট।”(সূরা ফুরক্বান ২৫:৩৪)

হাদীসে এসেছে, আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহ তা‘আলার নবী কিয়ামতের দিন কিভাবে কাফিরদেরকে তাদের চেহারার ওপর ভর দিয়ে উঠানো হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যিনি দুনিয়াতে দু’ পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের ওপর ভর দিয়ে উঠাতে সক্ষম নন?” কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ তিনি তাতে সক্ষম। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৬০, সহীহ মুসলিম হা: ২৮০৬)

অতএব কিয়ামতের দিন কাফির-মুশরিকদেরকে তাদের মুখের ওপর ভর দিয়ে উল্টো অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা হাশরের ময়দানে উপস্থিত করবেন। আর তারা তথায় কোন প্রকার শান্তি লাভ করবে না।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, অস্বীকারকারীদের নিকট এটি একটি আশ্চর্যজনক বিষয় যে, মানুষ মৃত্যুর পর যখন মাটিতে পরিণত হবে তখন তাকে আবার জীবিত করা হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَلَئِنْ قُلْتَ إِنَّكُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ مِنْۭ بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُوْلَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْآ إِنْ هٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ) ‏

“তুমি যদি বল:‎ ‘মৃত্যুর পর তোমরা অবশ্যই উত্থিত হবে’, কাফিররা নিশ্চয়ই বলবে, ‘এটা তো সুস্পষ্ট জাদু।’’ (সূরা হূদ ১১:৭)

আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে বলেন: ‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান?’ সুতরাং তারা কেন অস্বীকার করছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি বা জীবিত করতে পারবেন না? এদেরকে সৃষ্টি করা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার চেয়ে অধিক সহজ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَخَلْقُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ أَكْبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ وَلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ)‏

“মানব সৃজন অপেক্ষা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি অবশ্যই অনেক বড় কাজ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।” (সূরা মু’মিন ৪০:৫৭)

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম যেমনিভাবে তিনি আকাশ, জমিন ও তাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. হেদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
২. মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন।
৩. সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৪. মানুষকে দুনিয়াতে একটি নির্দিষ্ট কালের জন্য পাঠানো হয়েছে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
#যার ভ্রষ্টতা প্রীতি ও হঠকারিতার কারণে আল্লাহ তার জন্য সঠিক পথের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং যাকে আল্লাহ এমনসব ভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন যেদিকে সে যেতে চাচ্ছিল, তাকে এখন সঠিক পথের দিকে নিয়ে আসার ক্ষমতা আর কার আছে? যে ব্যক্তি সত্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মিথ্যার ওপর নিশ্চিন্ত ও সন্তুষ্ট হয়ে যেতে চেয়েছে এবং যার এ দুর্মতি দেখে আল্লাহও তার জন্য এমন সব কার্যকারণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে সত্যের প্রতি তার ঘৃণা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি আরো বেড়ে গেছে, তাকে দুনিয়ার কোন্ শক্তি মিথ্যা থেকে দূরে সরিয়ে নিতে এবং সত্যের ওপর বহাল করতে পারে? যে নিজে ভুল পথে চলতে চায় তাকে জোর করে সঠিক পথে নিয়ে আসা আল্লাহর নিয়ম নয়। আর মানুষের মনের পরিবর্তন সাধন করার ক্ষমতা আল্লাহর ছাড়া আর কারো নেই।

# দুনিয়ায় তারা যে অবস্থায় ছিল, সত্যকে দেখতে পেতো না, সত্য কথা শুনতে পেতো না এবং সত্য কথা বলতো না, ঠিক তেমনিভাবেই কিয়ামতেও তাদেরকে উঠানো হবে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
#কাফেরদের লজ্জাজনক পরিণতি : আলোচ্য আয়াতে এক ধরনের সতর্কবাণীর আভাস পাওয়া যায়। কারণ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে নিচের আয়াতে সুস্পষ্ট রূপে যা বলা হয়েছে তা থেকে অবিশ্বাসীদের কঠিন পরিণতির বক্তব্যই প্রতিভাত হয়ে উঠে।(আয়াত ৯৭-৯৯) হেদায়াত ও গােমরাহীর ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু নিয়ম-নীতি নির্ধারিত করা আছে। এই নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলার ব্যাপারে মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এই স্বাধীনতার ফলাফল ও শেষ পরিণতিও তাকেই ভােগ করতে হবে। উক্ত নীতির একটি হচ্ছে এই যে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে হেদায়াত ও গোমরাহী উভয়টির জন্যেই প্রস্তুত। সে নিজ আগ্রহ ও চেষ্টায় এর যে কোনাে একটি গ্রহণ করতে পারে। তাই যখন কোনাে মানুষ নিজ চেষ্টা ও সাধনার দ্বারা হেদায়াতের উপযুক্ত বলে আল্লাহর কাছে বিবেচিত হয়, তখনই আল্লাহ তায়ালা তাকে হেদায়াত দান করেন, আর এরূপ ব্যক্তিই সত্যিকার অর্থে হেদায়াতপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবে। কারণ সে আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করেছে। পক্ষান্তরে যারা হেদায়াত বা আল্লাহর নির্দেশিত পথের বিভিন্ন প্রমাণ ও চিহ্ন দেখেও তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তারাই গােমরাহী বা ভ্রান্ত পথের পথিক হয়ে থাকে। এ জাতীয় মানুষকে আল্লাহর আযাব থেকে কেউই রক্ষা করতে পারে না। পরকালে তাদেরকে অত্যন্ত লজ্জাকর ও বিব্রতকর আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে। অন্ধ, বােবা ও বধির করে তাদেরকে কেয়ামতের ময়দানে সবার সামনে হাযির করা হবে। শুধু তাই নয়, এর পর তাদেরকে জাহান্নামের লেলিহান অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হবে। সেটাই হবে তাদের সর্বশেষ ও স্থায়ী ঠিকানা। এ কথাই বলা হয়েছে নিচের আয়াতে, ‘যাকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত দান করেন, সে-ই মূলত হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়, আর যাকে তিনি গােমরাহ করেন এমন লােকদের (হেদায়াত দানের) জন্যে তুমি আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কাউকেই সাহায্যকারী পাবে না, এমন সব গােমরাহ লােকদের আমি কেয়ামতের দিন মুখের ওপর ভর দিয়ে চলা অবস্থায় একত্রিত করবাে, এরা তখন হবে অন্ধ বােবা ও বধির। এদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এই জাহান্নামে প্রতিবার যখন (আগুন) স্তিমিত হয়ে আসবে তখন আমি (তাকে) তাদের জন্যে আরাে প্রজ্বলিত করে দেবাে।'(আয়াত ৯৭) এটা নিসন্দেহে একটা ভয়ানক পরিণতি এবং বিভীষিকাময় শাস্তি। এই পরিণতি ও শাস্তি তাদের নিজেদেরই কৃতকর্মের ফল। কারণ ওরা আল্লাহর সুস্পষ্ট ও জাজ্জল্যমান নিদর্শনগুলােকে অস্বীকার করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। শুধু তাই নয়, বরং তারা পরকালকেও অস্বীকার করেছে, পুনরুত্থানের বিষয়টিকেও অস্বীকার করেছে। এগুলােকে অসম্ভব বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যখন আমরা (মৃত্যুর পর গলে) হাড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবাে তখনও কি আমরা নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হব?'(আয়াত ৯৮) পরকালে যা ঘটবে সেটাকে চাক্ষুস এবং প্রত্যক্ষ একটা ঘটনার রূপ দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে মনে হচ্ছে, সে পৃথিবীতে ওই সকল কাফেরদের বাস ছিলাে সেটা যেন বিলীন হয়ে গেছে এবং অতীতের গহ্বরে তলিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে পবিত্র কোরআনের বর্ণনাভংগিরই একটা অন্যতম রূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কোনাে ঘটনাকে চাক্ষুস ঘটনার রূপে উপস্থাপন করেন। এর ফলে মানুষের মনে গভীর একটা প্রভাব সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা মানুষ সতর্ক হয়। এরপর আল্লাহ তায়ালা ওই কাফের গােষ্ঠীর সাথে যুক্তি ও তর্কের ভাষায় কথা বলছেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করছেন। (আয়াত ৯৯) অর্থাৎ এই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা যদি আল্লাহ তায়ালাই হয়ে থাকেন এবং এটা তারা বিশ্বাসও করে থাকে তাহলে তাদের মতাে মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে আল্লাহর অসুবিধা কোথায়? মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা পুনরায় মানুষকে জীবিত করে কেয়ামতের ময়দানে একত্রিত করবেন। এতে বিস্ময়ের কী আছে? কারণ, এই বিশাল সৃষ্টি জগত ও জড় জগত তাে তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কাজেই, মৃত্যুর পর মানুষকে পুনরায় জীবিত করার বিষয়ে কোনােই সন্দেহ সংশয় থাকা উচিত নয়। এর পরও যদি ওরা বিশ্বাস করতে না চায়, তাহলে তুমি ওদের শেষ পরিণতির জন্যে অপেক্ষা করাে। ওদের জন্যে সময় নির্ধারিত আছে। সে সময় অনুযায়ীই ওদের বিচার হবে। এতে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

#আল্লাহ তাআলা এখানে এই বিষয়ের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সমস্ত সৃষ্ট জীবের সব ব্যবস্থাপনা শুধু তাঁর হাতেই রয়েছে। তাঁর কোন হুকুম টলে না। তিনি যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে হাশরের ময়দানে। মুখে ভর করে চলা অবস্থায় একত্রিত করবো। রাসুলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “এটা কি করে হতে পারে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যিনি পায়ের ভরে চালিয়ে থাকেন তিনি মাথার ভরেও চালাতে পারবেন।” মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত আবু যার (রাঃ) দণ্ডায়মান অবস্থায় তাঁর গোত্রীয় লোকদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে বানূ গিফার গোত্রের লোক সকল! আর শপথ করো না। সত্যবাদী ও সত্যায়িত রাসূল (সঃ) আমাকে শুনিয়েছেনঃ “লোকদেরকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করে হাশরের ময়দানে আনয়ন করা হবে। এক শ্রেণীর লোক পানাহারকারী ও পোশাক পরিধানকারী হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক চলতে ও দৌড়াতে থাকবে এবং তৃতীয় শ্রেণীর লোককে ফেরেশতারা মুখের ভরে টেনে জাহান্নামের সামনে একত্রিত করবে।” জনগণ জিজ্ঞেস করলোঃ “দুই শ্রেণীর লোকদেরতো আমরা বুঝতে পারলাম। কিন্তু যারা চলবে ও দৌড়াবে তাদেরকে যে বুঝতে পারলাম না? তিনি জবাবে বললেনঃ “সওয়ারীর উপর বিপদ এসে যাবে। এমন কি প্রত্যেক লোক তার সুন্দর বাগের বিনিময়ে জিন বা গদী বিশিষ্ট উষ্ট্রী ক্রয় করতে চাইবে। কিন্তু পাবে না। তারা এ সময় অন্ধ, মূক, বধির হয়ে যাবে। মোট কথা, তাদের বিভিন্ন অবস্থা হবে। পাপের পরিমাণ অনুযায়ী তাদেরকে পাকড়াও করা হবে। দুনিয়ায় তারা ছিল সত্য হতে বধির, অন্ধ ও বোবা। আজ কঠিন প্রয়োজন ও অভাবের দিনে তারা সত্য সত্যই অন্ধ, বধির ও বোবা হয়ে যাবে। তাদের প্রকৃত ঠিকানা ও ঘোরা ফেরার জায়গা হবে জাহান্নাম।” প্রবল পরাক্রম আল্লাহ বলেনঃ জাহান্নাম যখন স্তিমিত হবে তখন ওর অগ্নি তাদের জন্যে প্রজ্জ্বলিত করে দেয়া হবে। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা শান্তির স্বাদ গ্রহণ কর, শাস্তি ছাড়া তোমাদের আর কিছুই বৃদ্ধি করা হবে না। (৭৮:৩০)।
# ৯৮-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অস্বীকারকারীদের যে শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারা ওরই যোগ্য ছিল। তারা আমার দলীল প্রমাণাদিকে মিথ্যা মনে করতো এবং পরিষ্কারভাবে বলতোঃ আমরা পচা অস্থিতে পরিণত হওয়ার পরেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হবো? এটাতো আমাদের জ্ঞানে ধরে না। তাদের এই প্রশ্নের জবাবে মহামহিমান্বিত আল্লাহ একটি দলীল এই পেশ করেছেন যে, বিরাট আসমানকে বিনা নমুনাতেই প্রথমবার সৃষ্টি করতে পেরেছেন, যার প্রবল ক্ষমতা এই উচ্চ ও প্রশস্ত এবং কঠিন মাখলুককে সৃষ্টি করতে অপারগ হয় নাই, তিনি কি তোমাদেরকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে অপারগ হয়ে যাবেন? আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা তোমাদের সৃষ্টি অপেক্ষা অনেক কঠিন ছিল। এগুলি সৃষ্টি করতে তিনি যখন ক্লান্ত ও অপারগ হন নাই, তিনি মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করতে অপারগ হয়ে যাবেন? আসমান ও যমীনের যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনি কি মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? অবশ্যই তিনি সক্ষম। তিনি মহাস্রষ্টা, অতিশয় জ্ঞানী। যখন তিনি কোন বস্তুকে (সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তার দস্তুর এই যে, তিনি এ বস্তুকে বলেনঃ হয়ে যা, তেমনি তা হয়ে যায়। বস্তুর অস্তিত্বের জন্যে তার হুকুমই যথেষ্ট। কিয়ামতের দিন তিনি মানুষকে দ্বিতীয় বার নতুন ভাবে সৃষ্টি অবশ্যই করবেন। তিনি তাদেরকে কবর হতে বের করার ও পুনরুজ্জীবিত করার সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন। এ সময় এগুলো সবই হয়ে যাবে। এখানে কিছুটা বিলম্বের কারণ হচ্ছে শুধু ঐ সময়কে পুর্ণ করা। বড়ই আফসোসের বিষয় এই যে, এতো স্পষ্ট ও প্রকাশমান দলীলের পরেও মানুষ কুফরী ও ভ্রান্তিকে পরিত্যাগ করে না।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#875)
Sura:17
Sura: Bony Israyel.
Ayat: 97-99
[ وَ مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِ ۚ
Whoever Allah guides – he is the [rightly] guided;]
www.motaher21.net

17:97

وَ مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَلَنۡ تَجِدَ لَہُمۡ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِہٖ ؕ وَ نَحۡشُرُہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عَلٰی وُجُوۡہِہِمۡ عُمۡیًا وَّ بُکۡمًا وَّ صُمًّا ؕ مَاۡوٰىہُمۡ جَہَنَّمُ ؕ کُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنٰہُمۡ سَعِیۡرًا ﴿۹۷﴾

And whoever Allah guides – he is the [rightly] guided; and whoever He sends astray – you will never find for them protectors besides Him, and We will gather them on the Day of Resurrection [fallen] on their faces – blind, dumb and deaf. Their refuge is Hell; every time it subsides We increase them in blazing fire.

17:98

ذٰلِکَ جَزَآؤُہُمۡ بِاَنَّہُمۡ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ قَالُوۡۤاءَ اِذَا کُنَّا عِظَامًا وَّ رُفَاتًاءَ اِنَّا لَمَبۡعُوۡثُوۡنَ خَلۡقًا جَدِیۡدًا ﴿۹۸﴾

That is their recompense because they disbelieved in Our verses and said, “When we are bones and crumbled particles, will we [truly] be resurrected [in] a new creation?”

17:99

اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ قَادِرٌ عَلٰۤی اَنۡ یَّخۡلُقَ مِثۡلَہُمۡ وَ جَعَلَ لَہُمۡ اَجَلًا لَّا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ فَاَبَی الظّٰلِمُوۡنَ اِلَّا کُفُوۡرًا ﴿۹۹﴾

Do they not see that Allah, who created the heavens and earth, is [the one] Able to create the likes of them? And He has appointed for them a term, about which there is no doubt. But the wrongdoers refuse [anything] except disbelief.

 

 

 

Guidance and Misguidance are in the Hands of Allah

Allah tells:

وَمَن يَهْدِ اللّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ

And he whom Allah guides, he is led aright;

Allah tells us how He deals with His creation and how His rulings are carried out. He tells us that there is none who can put back His judgement, for whomever He guides cannot be led astray,

وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاء مِن دُونِهِ

and whomever He leaves astray can never find helpers other than Him.

to guide him.

As Allah says:

مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا

He whom Allah guides, he is the rightly-guided; but he whom He sends astray, for him you will find no Wali (guiding friend) to lead him. (18:17)
The Punishment of the People of Misguidance

Allah tells:

وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ

and We shall gather them together on the Day of Resurrection on their faces,

Imam Ahmad recorded from Anas bin Malik that the Prophet was asked,

“O Messenger of Allah, how will the people be gathered on their faces!” He said,

الَّذِي أَمْشَاهُمْ عَلَى أَرْجُلِهِمْ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُمْ عَلَى وُجُوهِهِم

The One Who made them walk on their feet is able to make them walk on their faces.

It was also reported (by Al-Bukhari and Muslim) in the Two Sahihs.

عُمْيًا

blind, (means, unable to see).

وَبُكْمًا

dumb, (means, unable to speak).

وَصُمًّا

deaf, (means, unable to hear).

They will be in this state as a punishment for the way they were in this world, blind, dumb and deaf to the truth. This will be their recompense when they are gathered on the Day of Resurrection, at the time when they need these faculties most of all.

مَّأْوَاهُمْ

their abode,

means, their destination.

جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ

will be Hell; whenever it abates,

Ibn Abbas said,

“(This means) calms down,”

Mujahid said,

“(It means) is extinguished,”

زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا

We shall increase for them the fierceness of the Fire.

meaning, increasing its flames and heat and coals, as Allah says:

فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِيدَكُمْ إِلاَّ عَذَاباً

So taste you (the results of your evil actions). No increase shall We give you, except in torment. (78:30).
Allah says:

ذَلِكَ جَزَاوُهُم بِأَنَّهُمْ كَفَرُواْ بِأيَاتِنَا

That is their recompense, because they denied Our Ayat,

Allah says:`This punishment, being resurrected blind, dumb and deaf, is what they deserve, because they disbelieved,
بِأيَاتِنَا
(Our Ayat), i.e., Our proof and evidence, and did not think that the resurrection could ever happen.’

وَقَالُواْ أَيِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا

and said:”When we are bones and fragments…”

meaning, when we have disintegrated and our bodies have rotted away,

أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا

shall we really be raised up as a new creation!

meaning, after we have disintegrated and disappeared and been absorbed into the earth, will we come back a second time Allah established proof against them and told them that He is able to do that, for He created the heavens and the earth, so raising them up again is easier for Him than that, as He says:

لَخَلْقُ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ أَكْـبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ

The creation of the heavens and the earth is indeed greater than the creation of mankind; (40:57)

أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّ اللَّهَ الَّذِى خَلَقَ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ وَلَمْ يَعْىَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلَى أَن يُحْىِ الْمَوْتَى

Do they not see that Allah, Who created the heavens and the earth, and was not wearied by their creation, is able to give life to the dead. (46:33)

أَوَلَـيْسَ الَذِى خَلَقَ السَّمَـوتِ وَالاٌّرْضَ بِقَـدِرٍ عَلَى أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُم بَلَى وَهُوَ الْخَلَّـقُ الْعَلِيمُ

نَّمَأ أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْياً أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

Is not He Who created the heavens and the earth, able to create the like of them.

Yes, indeed! He is the All-Knowing Supreme Creator. Verily, His command, when He intends a thing, is only that He says to it, “Be!” and it is! (36:81-82)

And Allah says here

 

 

أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّ اللّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضَ قَادِرٌ عَلَى أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ

See they not that Allah, Who created the heavens and the earth, is able to create the like of them.

meaning, on the Day of Resurrection, He will recreate and restore their bodies, as He created them in the first place.

وَجَعَلَ لَهُمْ أَجَلً لاَّ رَيْبَ فِيهِ

And He has decreed for them an appointed term, whereof there is no doubt.

means, He has set a time for them to be re-created and brought forth from their graves, an appointed time which must surely come to pass.

As Allah says:

وَمَا نُوَخِّرُهُ إِلاَّ لاًّجَلٍ مَّعْدُودٍ

And We delay it only for a term (already) fixed. (11:104)

فَأَبَى الظَّالِمُونَ

But the wrongdoers refuse,

— after the proof has been established against them,

إَلاَّ كُفُورًا

(and accept nothing) but disbelief.

means, they persist in their falsehood and misguidance

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply