(বই#৮৮৪) সূরা:- আল-কাহাফা। সুরা:১৮  ২৭-৩১ নং আয়াত:- [ اَوَ اتۡلُ مَاۤ  اُوۡحِیَ  اِلَیۡکَ مِنۡ  کِتَابِ رَبِّکَ ۚؕ তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব আবৃত্তি কর; ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(বই#৮৮৪)

সূরা:- আল-কাহাফা।

সুরা:১৮

২৭-৩১ নং আয়াত:-

[ اَوَ اتۡلُ مَاۤ  اُوۡحِیَ  اِلَیۡکَ مِنۡ  کِتَابِ رَبِّکَ ۚؕ

তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব আবৃত্তি কর; ]

www.motaher21.net

وَ اتۡلُ مَاۤ  اُوۡحِیَ  اِلَیۡکَ مِنۡ  کِتَابِ رَبِّکَ ۚؕ  لَا مُبَدِّلَ لِکَلِمٰتِہٖ ۚ۟ وَ لَنۡ تَجِدَ مِنۡ دُوۡنِہٖ  مُلۡتَحَدًا ﴿۲۷﴾

তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব আবৃত্তি কর;  তার বাক্য পরিবর্তন করার কেউই নেই। আর তুমি কখনই তিনি ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।

وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ  وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ  وَ لَا  تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ  الدُّنۡیَا ۚ وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ  اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ  ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ  وَ کَانَ   اَمۡرُہٗ   فُرُطًا ﴿۲۸﴾

আর আপনি নিজেকে ধৈর্যের সাথে রাখবেন তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় ডাকে তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে  এবং আপনি দুনিয়ার জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না । আর আপনি তার আনুগত্য করবেন না— যার চিত্তকে আমরা আমাদের স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে ও যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।

وَ قُلِ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۟ فَمَنۡ شَآءَ فَلۡیُؤۡمِنۡ وَّ مَنۡ شَآءَ  فَلۡیَکۡفُرۡ ۙ اِنَّاۤ اَعۡتَدۡنَا لِلظّٰلِمِیۡنَ نَارًا ۙ اَحَاطَ بِہِمۡ سُرَادِقُہَا ؕ وَ اِنۡ یَّسۡتَغِیۡثُوۡا یُغَاثُوۡا بِمَآءٍ کَالۡمُہۡلِ یَشۡوِی الۡوُجُوۡہَ ؕ بِئۡسَ الشَّرَابُ ؕ وَ سَآءَتۡ  مُرۡتَفَقًا ﴿۲۹﴾

আর বলুন, ‘সত্য তোমাদের রব-এর কাছ থেকে; কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে কুফরী করুক।’ নিশ্চয় আমরা যালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি আগুন, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, য তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; এটা নিকৃষ্ট পানীয়! আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল।

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اِنَّا  لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ مَنۡ اَحۡسَنَ عَمَلًا ﴿ۚ۳۰﴾

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে— আমরা তো তার শ্রমফল নষ্ট করি না- যে উত্তমরূপে কাজ সম্পাদন করেছে।

اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہِمُ الۡاَنۡہٰرُ یُحَلَّوۡنَ فِیۡہَا مِنۡ اَسَاوِرَ مِنۡ ذَہَبٍ وَّ یَلۡبَسُوۡنَ ثِیَابًا خُضۡرًا مِّنۡ سُنۡدُسٍ وَّ اِسۡتَبۡرَقٍ مُّتَّکِئِیۡنَ فِیۡہَا عَلَی الۡاَرَآئِکِ ؕ نِعۡمَ الثَّوَابُ ؕ وَ حَسُنَتۡ  مُرۡتَفَقًا ﴿٪۳۱﴾

তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেথায় তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কণে অলঙ্কৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ণ ও স্থূ্ল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর সে পুরস্কার ও কত উত্তম সে আশ্রয়স্থল।

২৭-৩১ নং আয়াতের তাফসীর:

 

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

২৭-৩১ নং আয়াতের তাফসীর:

 

আল্লাহ তা‘আলা গুহাবাসীর ঘটনা বর্ণনা করার পর তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি যেন তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তেলাওয়াত করেন। এখানে তেলাওয়াতের অর্থ হল ওয়াহী অনুসরণ করা, আদেশ-নিষেধগুলো পালন করা। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

 

(اِتَّبِعْ مَآ أُوْحِيَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ ج لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ ج وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ)‏

 

“তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা ওয়াহী হয় তুমি তারই অনুসরণ কর, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই এবং মুশরিকদের হতে মুখ ফিরিয়ে নাও।” (সূরা আনয়াম ৬:১০৬)

 

আল্লাহ তা‘আলার বাণীর পরিবর্তন করার মত কেউ নেই। কেননা আল্লাহ তা‘আলার এই বাণী বা নির্দেশ সত্য ও ন্যায়সঙ্গত। এতে কোন প্রকার মিথ্যা বা বাতিল কোন কিছুর নির্দেশ প্রদান করা হয়নি। যার ফলে এ বাণী সুপ্রতিষ্ঠিত ও অপরিবর্তনীয়। সুতরাং যদি কেউ তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও থেকে কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ই হলেন একমাত্র আশ্রয় দাতা, তিনি ছাড়া আর কোন আশ্রয়দাতা নেই।

 

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে সকলকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাদের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখ যারা সকাল-সন্ধ্যা নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে মগ্ন রাখে। তারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করে। আর তাদের সঙ্গ বর্জন করে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দুনিয়ার সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টিপাত কর না।

 

যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

 

(وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه۫ ط مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ وَّمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ)‏

 

“যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে তুমি বিতাড়িত কর না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে; করলে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আন‘আম ৬:৫২)

 

তাই সর্বদা সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করতে হবে, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।

 

কেননা যারা কুফরী করবে তারা আখিরাতে নাজাত লাভ করবে না। তারা তথায় আগুনের মধ্যে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। আর তথায় পানীয় হিসেবে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়। যেমনটি সূরা ইউনুসে আলোচনা করা হয়েছে।

 

আর যারা ভাল কাজ করবে ও ঈমান আনবে তারা নহরসমূহ প্রবাহিত চিরস্থায়ী জান্নাতে বসবাস করবে। তারা তথায় স্বর্ণের কংকন দ্বারা অলংকৃত হবে এবং তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থ’ুল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা আসবে সূরা গাশিয়ায় ইনশা-আল্লাহ তা‘আলা।

 

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

 

১. মানুষের মাঝে দীনি তাবলীগ করতে হবে তবে বৈধ পন্থায়, অবৈধ পন্থায় নয়।

২. নিজেকে সৎ লোকদের সংস্পর্শে রাখতে হবে।

৩. যারা অসৎ লোক তাদের অনুসরণ করা যাবে না।

৪. যারা কুফরী করবে তারা জাহান্নামে যাবে আর যারা ভাল কাজ করবে তারা জান্নাতে যাবে এবং সেখানে অফুরন্ত নেয়ামত লাভ করে।

 

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

 

# আসহাবে কাহফের কাহিনী শেষ হবার পর এবার এখান থেকে দ্বিতীয় বিষয়বস্তুর আলোচনা শুরু হচ্ছে। এ আলোচনায় মক্কায় মুসলমানরা যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন সে সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে।

 

 

# এর মানে এ নয় যে, নাউযুবিল্লাহ! সে সময় নবী ﷺ মক্কার কাফেরদের স্বার্থে কুরআনে কিছু পরিবর্তন করার এবং কুরাইশ সরদারদের সাথে কিছু কমবেশীর ভিত্তিতে আপোস করে নেবার কথা চিন্তা করছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে এ কাজ করতে নিষেধ করছিলেন। বরং মক্কার কারফেরদেরকে উদ্দেশ্য করে এর মধ্যে বক্তব্য রাখা হয়েছে, যদিও বাহ্যত সম্বোধন করা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফেরদেরকে একথা বলা যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর কালামের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু কমবেশী করার অধিকার রাখেন না। তাঁর কাজ শুধু এতটুকু, আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেছেন তাকে কোন কিছু কমবেশী না করে হুবহু মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তুমি যদি মেনে নিতে চাও তাহলে বিশ্ব-জাহানের প্রভু আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দ্বীন পেশ করা হয়েছে তাকে পুরোপুরি হুবহু মেনে নাও। আ যদি না মানতে চাও তাহলে সেটা তোমার খুশী তুমি মেনে নিয়ো না। কিন্তু কোন অবস্থায় এ আশা করো না যে, তোমাকে রাজী করার জন্য তোমার খেয়াল-খুশী মতো এ দ্বীনের মধ্যে কোন আংশিক পর্যায়ের হলেও কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করা হবে। কাফেরদেরক পক্ষ থেকে বার বার এ মর্মে যে দাবী করা হচ্ছিল যে, আমরা তোমার কথা পুরোপুরি মেনে নেবো এমন জিদ ধরে বসে আছো কেন? আমাদে পৈতৃক দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস ও রীতি-রেওয়াজের সুবিধা দেবার কথাটাও একটু বিবেচনা করো। তুমি আমাদেরটা কিছু মেনে নাও এবং আমরা তোমারটা কিছু মেনে নিই। এর ভিত্তিতে সমঝোতা হতে পারে এবং এভাবে গোত্রীয় সম্প্রীতি ও ঐক্য অটুট থাকতে পারে। এটি হচ্ছে কাফেরদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত এই দাবীর জওয়াব। কুরআনে একাধিক জায়গায় তাদের এ দাবী উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর এ জওয়াবই দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ সূরা ইউনূসের ১৫ আয়াতটি দেখুন। বলা হয়েছেঃ

 

وَ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ اٰیَاتُنَا بَیِّنٰتٍ ۙ قَالَ الَّذِیۡنَ لَا یَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا ائۡتِ بِقُرۡاٰنٍ غَیۡرِ ہٰذَاۤ اَوۡ بَدِّلۡہُ ؕ

 

“যখন আমার আয়াত তাদেরকে পরিষ্কার শুনিয়ে দেয়া হয় তখন যারা কখনো আমার সামনে হাযির হবার আকাঙ্ক্ষা রাখে না তারা বলে, এছাড়া অন্য কোন কুরআন নিয়ে এসো অথবা এর মধ্যে কিছু কাটছাঁট করো।”

# ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনা অনুযায়ী কুরাইশ সরদাররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো, বেলাল (রা.), সোহাইব (রা.), আম্মার (রা.), খব্বাব (রা.) ও ইবনে মাসউদের (রা.) মতো গরীব লোকেরা তোমার সাথে বসে, আমরা ওদের সাথে বসতে পারি না। ওদেরকে হটাও তাহলে আমরা তোমার মজলিসে আসতে পারি এবং তুমি কি বলতে চাও তা জানতে পারি। একথায় মহান আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমার চারদিকে জমায়েত হয়েছে এবং দিনরাত নিজেদের রবকে স্মরণ করছে তাদেরকে তোমার কাছে থাকতে দাও এবং এ ব্যাপারে নিজের মনে কোন দ্বিধা-দন্দ্ব আসতে দিও না এবং তাদের দিক থেকে কখনো দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। তুমি কি এ আন্তরিকতা সম্পন্ন লোকদেরকে ত্যাগ করে চাও যে, এদের পরিবর্তে পার্থিব জৌলুসের অধিকারী লোকেরা তোমার কাছে বসুক? এ বাক্যেও বাহ্যত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু আসলে কুরাইশ সরদারদেরকে শুনানোই এখানে মূল উদ্দেশ্য যে, তোমাদের এ লোক দেখানো জৌলুস, যার জন্য তোমরা গর্বিত। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে এগুলোর কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই। যেসব গরীব লোকের মধ্যে আন্তরিকতা আছে এবং যারা নিজেদের রবের স্মরণ থেকে কখনো গাফিল হয় না তারা তোমার চাইতে অনেক বেশী মূল্যবান। হযরত নূহ (আ) ও তাঁর সরদারদের মধ্যেও ঠিক এ একই ব্যাপার ঘটেছিল। তারা হযরত নূহকে (আ) বলতোঃ

 

وَ مَا نَرٰىکَ اتَّبَعَکَ اِلَّا الَّذِیۡنَ ہُمۡ اَرَاذِلُنَا بَادِیَ الرَّاۡیِ ۚ

 

“আমরা তো দেখছি আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের লোক, তারাই না বুঝে সুজে তোমার পেছনে জড়ো হয়েছে।”

 

হযরত নূহের (আ) জবাব ছিলঃ

 

وَ مَاۤ اَنَا بِطَارِدِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ

 

“যারা ঈমান এনেছে আমি তাদের তাড়িয়ে দিতে পারি না।” এবং

 

وَّ لَاۤ اَقُوۡلُ لِلَّذِیۡنَ تَزۡدَرِیۡۤ اَعۡیُنُکُمۡ لَنۡ یُّؤۡتِیَہُمُ اللّٰہُ خَیۡرًا

 

“যাদেরকে তোমরা তাচ্ছিল্যের নজরে দেখো তাদের সম্বন্ধে আমি এ কথা বলতে পারি না যে, আল্লাহ তাদেরেকে কোন কল্যাণ দান করেননি।” (হুদ ২৭ , ২৯ , ৩১ আয়াত, আন’আম ৫২ এবং আল হিজর ৮৮ আয়াত)

 

 

# তার কথা মেনো না, তার সামনে মাথা নত করো না, তার ইচ্ছা পূর্ণ করো না এবং তার কথায় চলো না। এখানে আনুগত্য শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

( فُرُطًا ) এর একটি অর্থ তাই যা আমি অনুবাদে গ্রহণ করেছি। এর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, “যে ব্যক্তি সত্যকে পেছনে রেখে এবং নৈতিক সীমারেখা লংঘন করে লাগামহীনভাবে চলে।” উভয় অবস্থায় মূল কথা দাঁড়ায়। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নিজের নফসের বান্দা হয়ে যায় তার প্রত্যেকটি কাজে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং আল্লাহর সীমারেখা সম্পর্কে তার কোন জ্ঞানই থাকে না। এ ধরনের লোকের আনুগত্য করার মানে এ দাঁড়ায় যে, যে আনুগত্য করে সেও আল্লাহর সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ ও অচেতন থেকে যায়, আর যার আনুগত্য করা হয় সে বিভ্রান্ত হয়ে যেখানে যেখানে ঘুরে বেড়ায় আনুগত্যকারীও সেখানে সেখানে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে।

 

# এখানে এসে পরিষ্কার বুঝা যায় আসহাবে কাহফের কাহিনী শুনাবার পর কোন্ উপলক্ষ্যে এ বাক্যটি এখানে বলা হয়েছে। আসহাবে কাহফের যে কাহিনী ওপরে বর্ণনা করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছিল, তাওহীদের প্রতি ঈমান আনার পর তারা কিভাবে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলে দেন, “আমাদের রব তো একমাত্র তিনিই যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রব।” তারপর কিভাবে তারা নিজেদের পথভ্রষ্ট জাতির সাথে কোনভাবেই আপোস করতে রাযী হননি বরং পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে বলে দেন, “আমরা তাঁকে ছড়া অন্য কোন ইলাহকে ডাকবো না। যদি আমরা এমনটি করি তাহলে তা হবে বড়ই অসঙ্গত ও অন্যায় কথা।” কিভাবে তারা নিজেদের জাতি ও তার উপাস্যদের ত্যাগ করে কোন প্রকার সাহায্য-সহায়তা ও সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াই গুহার মধ্যে লুকিয়ে জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করেছিল কিন্তু সত্য থেকে এক চুল পরিমাণও সরে গিয়ে নিজের জাতির সাথে আপোস করতে প্রস্তুত হয়নি। তারপর যখন তারা জেগে উঠলেন তখনও তারা যে বিষয়ে চিন্তান্বিত হয়ে পড়লেন সেটি হচ্ছে এই যে আল্লাহ না করুন, যদি তাদের জাতি কোনভাবে তাদেরকে নিজেদের ধর্মের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় তাহলে তারা কখনো সাফল্য লাভ করতে পারবে না। এসব ঘটনা উল্লেখ করার পর এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে— আর আসলে ইসলাম বিরোধীদেরকে শুনাবার উদ্দেশ্যেই তাঁকে বলা হচ্ছে যে, এ মুশরিক ও সত্য অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর সাথে আপোস করার আদৌ কোন প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে তাকে হুবহু তাদের সামনে পেশ করে দাও। যদি তারা মানতে চায় তাহলে মেনে নিক আর যদি না মানতে চায় তাহলে নিজেরাই অশুভ পরিণামের মুখোমুখি হবে। যারা মেনে নিয়েছে তারা কম বয়েসী যুবক অথবা অর্থ ও কপর্দকহীন ফকীর, মিসকীন, দাস বা মজুর যেই হোক না কেন তারাই মহামূল্যবান হীরার টুকরা এবং তাদেরকেই এখানে প্রিয়ভাজন করা হবে। তাদেরকে বাদ দিয়ে এমন সব বড় বড় সরদার ও প্রধানদেরকে কোন কাজেই গ্রাহ্য করা হবে না তারা যত বেশী দুনিয়াবী শান-শওকতের অধিকারী হোন না কেন, তারা আল্লাহ থেকে গাফিল এবং নিজেদের প্রবৃত্তির দাস।

 

 

# ‘সুরাদিক’ শব্দের আসল মানে হচ্ছে তাঁবুর চারদিকের ক্যাস্বিস কাপড়ের ঘের। কিন্তু জাহান্নামের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে বিচার করলে মনে হয় ‘সুরাদিক’ মানে হবে তার লেলিহান শিখার বিস্তার এবং উত্তাপের প্রভাব বাইরের এলাকায় যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে সেই সমগ্র এলাকার সীমানাই হচ্ছে ‘সুরাদিক’। আয়াতে বলা হয়েছে, “তার সুরাদিক তাদেরকে ঘিরে নিয়েছে।” কেউ কেউ এটিকে ভবিষ্যত অর্থে নিয়েছে। অর্থাৎ এর মানে এ বুঝেছে যে, পরলোকে জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। কিন্তু আমি মনে করি এর মানে হবে, সত্য থেকে যে জালেম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে এখান থেকেই জাহান্নামের লেলিহান অগ্নিশিখার আওতাভুক্ত হয়ে গেছে এবং তার হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে পালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।

 

 

# ‘মুহল’ শব্দে বিভিন্ন অর্থ আরবী অভিধানগুলোয় বর্ণনা করা হয়েছে। কেউ কেউ এর মানে লিখেছেন তেলের তলানি। কারোর মতে এ শব্দটি “লাভা” অর্থে ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, গলিত ধাতু। আবার কারোর মতে এর মানে পুঁজ ও রক্ত।

 

# প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহরা সোনার কাঁকন পরতেন। জান্নাতবাসীদের পোশাকের মধ্যে এ জিনিসটির কথা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা জানিয়ে দেয়া যে, সেখানে তাদেরকে রাজকীয় পোশাক পরানো হবে। একজন কাফের ও ফাসেক বাদশাহ সেখানে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে এবং একজন মু’মিন ও সৎ মজদুর সেখানে থাকবে রাজকীয় জৌলুসের মধ্যে।

 

 

# ‘আরইক’ শব্দটি বহুবচন। এর একবচন হচ্ছে “আরীকাহ” আরবী ভাষায় আরীকাহ এমন ধরনের আসনকে বলা হয় যার ওপর ছত্র খাটানো আছে। এর মাধ্যমেও এখানে এ ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, সেখানে প্রত্যেক জান্নাতী রাজকীয় সিংহাসনে বসে থাকবে।

 

 

 

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

 

সংক্ষিপ্ত আলোচনা (২৮-৪৬) : এই সমগ্র অধ্যায়টা জুড়ে ইসলামী আকীদা ও আদর্শভিত্তিক মূল্যবােধের বিবরণ রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত সম্পদ অর্থ, সম্পত্তি, পদমর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নয়। অনুরূপভাবে তা পার্থিব জীবনের ভােগবিলাসও নয়। এসবগুলােই নশ্বর ও কৃত্রিম সম্পদ। এগুলাের মধ্যে যা পবিত্র তাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করে না। তবে সেগুলােকে মানব জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করে না। এ সব পার্থিব সম্পদকে যদি কেউ ভােগ করতে চায়, তবে তাতে আপত্তি নেই। যতাে খুশী ভােগ করতে পারে। কিন্তু সেই ভােগও হওয়া চাই ওই সম্পদ যে আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন তাকে স্মরণ করা ও সৎ কাজের মাধ্যমে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে। কেননা সৎ কাজই সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী সম্পদ। এই অধ্যায়ের শুরুতে রসূল(স.)-কে এই মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর ভক্ত ও অনুগত বান্দাদের সাথে যেন ধৈর্যের সাথে অবস্থান করেন এবং যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে ও উদাসীন থাকে, তাদেরকে যেন এড়িয়ে চলেন। এরপর এই উভয় শ্রেণীর মানুষের জন্যে উদাহরণ হিসাবে দুই ব্যক্তিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন ধন সম্পদ ও পদমর্যাদাকে গৌরব ও সম্মানের উপকরণ মনে করে। অপর জন খালেছ ঈমানের সম্পদ দ্বারাই নিজেকে গৌরবান্বিত ও ঐশ্বর্যশালী মনে করে এবং আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিদানের প্রত্যাশা করে। তারপর উপসংহারে গােটা পার্থিব জীবনের জন্যে একটা উদাহরণ দেয়। এই উদাহরণে দেখানাে হয়েছে যে, পার্থিব জীবন হচ্ছে সেই ক্ষণস্থায়ী শুকনাে তৃণলতার মতাে, যাকে বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। সর্বশেষে তুলে ধরে চিরস্থায়ী ও শাশ্বত সত্যকে। ‘ধনসম্পদ ও সন্তান সন্তুতি পার্থিব জীবনের অলংকার বিশেষ। কিন্তু চিরস্থায়ী সৎ কাজগুলাে তােমার প্রতিপালকের কাছে উৎকৃষ্টতম ফলপ্রসূ এবং উৎকৃষ্টতম আশাব্যঞ্জক।'(আয়াত ৪৬)  *তাফসীর : ২৮-৩১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৩১ নং আয়াতে পড়ুন।

 

#   *ইসলামের আপােষহীন মূল্যবোধ : ‘যারা সকাল বিকাল তাদের প্রভুকে ডাকে ও তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের সাথে তুমি ধৈর্য ধারণ করাে…'(আয়াত ২৮-২৯) বর্ণিত আছে, কোরায়শ সরদাররা যখন রাসূল(স.)-কে অনুরােধ জানালাে যে, তিনি যদি চান কোরায়শ সরদাররা ঈমান আনুক, তাহলে তিনি যেন তার কাছ থেকে বেলাল, সােহায়েব, আম্মার, খাব্বাব ও ইবনে মাসউদের ন্যায় দরিদ্র মুসলমানদের তাড়িয়ে দেন কিংবা সরদারদের জন্যে পৃথক বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। কেননা ওই সব গরীব মুসলমানদের পােশাক পরিচ্ছদ থেকে ঘামের গন্ধ আসে, যা কোরায়শ সরদারদের জন্যে বিরক্তিকর। আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূল(স.) ওই সরদারদের ঈমান আনার প্রতি খুবই আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং তাদের দাবী মেনে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। এই অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা এ দুটো আয়াত নাযিল করেন। এ আয়াতদ্বয় নাযিল হয়ে প্রকৃত সম্পদ ও প্রকৃত মূল্যবােধ কী, তা চিহ্নিত করে এবং জীবনের নির্ভুল মানদন্ড প্রতিষ্ঠা করে। ‘এরপর যার ইচ্ছা হয়, সে ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা হয় কুফুরি করুক।’ বস্তুত ইসলাম কাউকে তােষামােদ বা সাধাসাধি করে না, মানুষকে সে আদিম জাহেলিয়াতের মানদন্ডেও বিচার করে না, কিংবা ইসলামের বিপরীত মানদন্ডধারী অন্য কোনাে জাহেলিয়াতের মানদন্ডেও সে মানুষকে পরিমাপ করে না। ‘তুমি ধৈর্যধারণ করাে’ অর্থাৎ ক্লান্ত, বিরক্ত ও অস্থির হয়ো না এবং তাড়াহুড়াে করো না। তাদের সাথে, যারা সকালে বিকালে তাদের প্রতিপালককে ডাকে, তারা তার সন্তোষ কামনা করে। কেননা আল্লাহই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এজন্যে সকালে ও বিকালে তার দিকে মনােনিবেশ করে, তার দিক থেকে কখনাে ফিরে দাঁড়ায় না এবং তার সন্তুষ্টি ছাড়া তারা আর কিছুই কামনা করে না। আর তারা যা কামনা করে, তা দুনিয়া পূজারীরা যা কামনা করে তার চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠতর। তাদের সাথে ধৈর্যধারণ করতে বলার অর্থ হলাে তাদের সাথে অবস্থান করতে থাকো ও তাদেরকে শিক্ষা দিতে থাকো। কেননা তাদের মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সততা এবং তাদের মতাে লােকদের দ্বারাই দাওয়াত সফল হয়। যারা দাওয়াত বিজয়ী হবে মনে করে তা গ্রহণ করে, যারা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব পাবে মনে করে তা গ্রহণ করে, যারা নিজেদের পার্থিব লােভ ও কামনা বাসনা চরিতার্থ হবে মনে করে তা গ্রহণ করে এবং যারা এ দ্বারা ব্যবসা করে লাভবান হবে মনে তা গ্রহণ করে, তাদের দ্বারা দাওয়াত সফল হয় না। দাওয়াত সফল ও বিজয়ী হয় কেবল এই সব নিষ্ঠাবান লােকদের দ্বারা, যারা খালেছ মনে আল্লাহর দিকে রুজু হয়, যারা সম্মান চায় না, পদ চায় না কিংবা পার্থিব লাভ চায় না তারা চায় শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি। ‘তােমার চোখ দুটো যেন তাদের দিক থেকে ফিরে না যায়…’ অর্থাৎ তুমি এই দরিদ্র নিষ্ঠাবান মােমেনদের প্রতি গুরুত্ব কম দিয়ে ভােগবিলাসী লােকদের ভােগের উপকরণগুলাের দিকে ঝুঁকে পড়ো না। কেননা পার্থিব জীবনের এসব বিলাস ও সাজসজ্জা সেই উচ্চ মার্গে উপনীত হতে পারে না, যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সকালে বিকালে আল্লাহকে স্মরণকারীদের মনােযােগ কেন্দ্রীভূত। ‘আনুগত্য করাে না তাদের যাদের মনকে আমি আমার স্মরণ থেকে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসারী এবং সীমা অতিক্রমকারী…’ অর্থাৎ এ ধরনের লােকদের অন্যায় দাবী মেনে নিও না যে, তাদের মাঝে ও দরিদ্রদের মাঝে পার্থক্য ও বৈষম্য সৃষ্টি করা হােক। তারা যদি আল্লাহকে স্মরণ করতাে, তাহলে তারা তাদের অহংকারকে সংযত করত, আল্লাহর বড়ত্বকে উপলব্ধি করত যার অধীনে সবাই সমান এবং আকীদা বিশ্বাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে যা গ্রহণ করার পর সবাই ভাই হয়ে যায়। কিন্তু তারা তা করে না। তারা কেবল নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে, নিজেদের জাহেলী প্রবৃত্তির আনুগত্য করে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের জাহেলী মানদন্ডে পরিমাপ ও মূল্যায়ন করে। তাই তারা ও তাদের কথাবার্তা এমন নির্বোধসুলভ যে, তা অবজ্ঞারই যােগ্য। আর এটা আল্লাহ তায়ালা স্মরণ থেকে তাদের উদাসীন থাকারই শাস্তি। ইসলাম এসেছে আল্লাহর চোখে তার সকল বান্দাকে সমান করে দিতে। তাই বংশ, পদমর্যাদা ও ধন সম্পদের ভিত্তিতে কাউকে কারাে ওপর প্রাধান্য দেয়ার সুযােগ নেই। ধন সম্পদ, পদমর্যাদা, বংশীয় আভিজাত্য ইত্যাদি হল ক্ষণস্থায়ী বৈশিষ্ট্য। প্রাধান্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্য কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে এই বৈশিষ্ট্যগুলাের অবস্থান কিরূপ, তার ওপর নির্ভরশীল। এই বৈশিষ্ট্যগুলাে কতােখানি আল্লাহমুখী ও আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধনে নিবেদিত, তা দ্বারাই নির্ণিত হবে আল্লাহর কাছে তার অবস্থান। আল্লাহমুখী আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধনে নিবেদিত নাহলে ওগুলাে নিছক নির্বুদ্ধিতা, বাতিল উপসর্গ ও অর্থহীন ভাবাবেগ ছাড়া আর কিছু নয়। ‘তার আনুগত্য করাে না, যার মনকে আমি উদাসীন করে দিয়েছি…’ মানুষ যখন নিজের দিকে, নিজের সম্পত্তির দিকে, নিজের সন্তানাদির দিকে, নিজের ভােগবিলাস, আমােদ প্রমােদ ও আনন্দ উল্লাসের দিকে ঝুকে পড়ে, তখনই আল্লাহ তায়ালা তার মনকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে দেন। কেননা তখন আর তার মনে আল্লাহর জন্যে কোনাে স্থান থাকে না। যার মন এসব জিনিসের মধ্যে ডুবে যায় এবং এগুলােকে জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করে, সে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না হয়ে পারে না। তখন আল্লাহ তায়ালা তার উদাসীনতা আরাে বাড়িয়ে দেন, তাকে আরাে শিথিল করে দেন, শেষ পর্যন্ত তার আয়ুঙ্কাল ফুরিয়ে যায় এবং তার মতাে অপরাধীদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে পরিণতি নির্ধারণ করে রেখেছেন সেই পরিণতির সম্মুখীন হয়। ‘আর বলাে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য উপস্থিত। অতএব যার ইচ্ছা ঈমান আনুক, যার ইচ্ছা কুফরি করুক।’ সর্বাত্মক তেজস্বীতা, স্পষ্টবাদিতা ও আপােষহীনতা সহকারে এ ঘােষণা দেয়া উচিত। কেননা সত্য কখনাে মাথা নোয়ায় না, আপােষ করে না। সে তার সােজা পথে চলে নির্ডিক চিত্তে ও জোর কদমে। কাউকে তােয়াজ ও তােষামােদ করে চলে না। যা বলার তা সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে। যার ঈমান আনতে ইচ্ছা হয় আনুক, যার কুফরি করতে ইচ্ছা হয় করুক-তার কোনােই পরােয়া নেই। সত্য যার মনকে মুগ্ধ করে না, সে যেখানে ইচ্ছা চলে যাক। যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তি ও ইচ্ছা আকাংখাকে আল্লাহর দেয়া বিধানের অনুগত করে না। তার সাথে আকীদা বিশ্বাস ও আদর্শের প্রশ্নে কোনাে আপােষ নেই। আল্লাহর প্রতাপ ও পরাক্রমের সামনে যে নিজের অহংকারকে দমন করে না তার কোনাে আকীদা বিশ্বাসের প্রয়ােজন নেই। আকীদা বিশ্বাস কারাে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে, তার ব্যাপারে কারাে সাথে আপােষ করা যাবে। এটা আল্লাহর সম্পত্তি। তিনি জগতের কোথাও কারো মুখাপেক্ষী নন। যারা ইসলামী আদর্শকে আন্তরিকভাবে চায় না এবং তা অবিকৃতভাবে গ্রহণ করে না, তাদের ইসলাম গ্রহণে ইসলাম সম্মানিত ও গৌরবান্বিত হয় না। যারা খােদাভীরু একনিষ্ঠ মােমেনদের চেয়ে নিজেদেরকে উচ্চতর, শ্রেষ্ঠত্বর ও অভিজাত মনে করে, তাদের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের কোনাে কল্যাণ আশা করা যায় না।  *জান্নাত জাহান্নামের চিত্র : এরপর আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের জন্যে দোজখে কী শাস্তি এবং মােমেনদের জন্যে কী পুরস্কার নির্ধারণ করে রেখেছেন তা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ‘আমি অপরাধীদের জন্যে আগুন তৈরী করে রেখেছি…’ অর্থাৎ তৈরী করে উপস্থিত করে রেখেছি আগুনকে। আগুনকে জ্বালাতে কোনাে কষ্ট হয় না এবং খুব বেশী সময়ও লাগেনা। যদিও কোনাে কিছু সৃষ্টি করতে আল্লাহর শুধু ‘কুন’ (হও) শব্দটা বলার প্রয়ােজন হয়, তথাপি ‘প্রস্তুত করে রেখেছি’ বাক্যটা দ্রুততার অর্থ বুঝায়। অর্থাৎ তাদেরকে গ্রহণ করার জন্যে জাহান্নামকে উদগ্রীব করে রাখা হয়েছে এবং সেখানে তাদেরকে ত্বরিত গতিতে সরাসরি পাঠিয়ে দেয়া হবে। জাহান্নাম হচ্ছে চতুর্দিকে প্রাচীর বেষ্টিত। অপরাধীদেরকে তা দিয়ে ঘিরে রাখা হবে। তাই তারা সেখান থেকে পালাতে ও অব্যাহতি লাভ করতে পারবে না। জাহান্নামের প্রচন্ড দহন ও পিপাসায় কাতর হয়ে তারা যদি সাহায্য চায়, তাহলে তাদেরকে সাহায্য করা হবে ফুটন্ত তেলের মতাে বা উত্তপ্ত পুঁজের মতাে নােংরা পানি খেতে দিয়ে। সে পানির ধারে কাছে গেলেই মুখমন্ডল ঝলসে যাবে। এরপরও যারা তা মুখে নেবে ও গিলবে, তাদের কী অবস্থা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘কী জঘন্য পানীয়।’ যা দিয়ে দোযখে দগ্ধিভূত লােকদেরকে আপ্যায়ন করা হবে। ‘আর জাহান্নাম ও তার প্রাচীরই বা আশ্রয়ের স্থল হিসাবে কত নিকৃষ্ট!’ জাহান্নামের প্রাচীরকে আশ্রয় হিসাবে উল্লেখ করা তিক্ত শ্লেষাত্মক। কেননা জাহান্নামবাসী সেখানে বসবাস করতে নয়, বরং ভুনা হতে যাবে। তবে এটা সৎকর্মশীল মােমেনদের জান্নাতে বসবাসের বিপরীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুই বসবাসে যে আকাশ পাতালের ব্যবধান, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা যখন জাহান্নামে ভুনা হতে থাকবে, তখন সৎকর্মশীল মােমেনরা চিরস্থায়ী সুখের নিবাস জান্নাতে অবস্থান করবে। আর জান্নাতের আবাসভূমিকে পানি সিঞ্চনের মাধ্যমে চির শ্যামল রাখা, সেখানকার দৃশ্যকে মনােরম করে রাখা এবং বাতাসকে আরামদায়ক রাখার জন্যে তাদের নীচ দিয়ে নদনদী বইতে থাকবে। জান্নাতবাসী সেখানে যথার্থই বসবাসের জন্যে থাকবে। বালিশে হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে। রকমারি রেশমের পােশাক পরে তারা গর্বে বুক ফুলিয়ে চলবে। কখনাে হালকা মােলায়েম সুনদুস এবং কখনাে ঘন মােটা মখমল জাতীয় পোশাক পরবে। সেই সাথে যুক্ত হবে অধিকতর সৌন্দর্যমণ্ডিত ও অধিকতর বিলাসময় স্বর্ণালংকার। ‘কতই না সুন্দর প্রতিদান এবং চমৎকার বাসস্থান।’ যার ইচ্ছা গ্রহণ করুক। যার মনে চায় ঈমান আনুক, যার মন চায় কুফরি করুক। যার ইচ্ছা দরিদ্র মােমেনদের সাথে ওঠাবসা করুক, যার ইচ্ছা দরিদ্র মােমেনদের জামা থেকে ঘামের গন্ধ বেরুনাের কারণে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকুক। আল্লাহর স্মরণে পবিত্র হয়ে যাওয়া ওই সৎলােকদের জামার ঘামের গন্ধ যাদের সহ্য হয় না, তারা জাহান্নামের ওই প্রাচীর বেষ্টনীতে আশ্রয় নিক এবং সেখানকার তেলের বা পুঁজের নােংরা গন্ধ পেয়ে ধন্য হােক।

 

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

 

২৭-২৮ নং আয়াতের তাফসীর:

 

আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নিজের কালাম পাঠ ও ওর তাবলীগের কাজে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। তার কথাগুলি কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না, মুলতুবী রাখতে সক্ষম হবে না এবং এদিক ওদিক করার ক্ষমতা রাখবে না। তুমি জেনে নাও যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো কাছে তুমি আশ্রয় পাবে না। সুতরাং যদি তুমি তিলাওয়াত ও তাবলীগের কাজ ছেড়ে দাও, তবে তোমার রক্ষার কোন পথ নেই। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “হে রাসূল (সঃ)! তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তুমি তা প্রচার করতে থাকো; যদি তুমি তা ন্য কর, তবে তাঁর রিসালাতের হক আদায় করলে না। আল্লাহ তোমাকে লোকদের অন্যায় থেকে রক্ষা করবেন। আর এক আয়াতে আছেঃ

 

অর্থাৎ “যিনি তোমার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন। তিনি তোমাকে অবশ্যই স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন।” (২৮:৮৫) সুতরাং তুমি আল্লাহর যিকর, তাসবীহ, প্রশংস্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনাকারীদের পার্শ্বে উঠা বসা করতে থাকো, যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকরে লেগে থাকে। তারা ফকীর হোক বা আমীরই হোক, ইতর হোক বা ভদ্রই হোক এবং সবল হোক বা, দুর্বলই হোক না কেন। কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আবেদন করেছিলঃ “আপনি ছোট লোকদের মজলিসে উঠা-বসা করবেন না, যেমন হযরত বিলাল (রাঃ), হযরত আম্মার (রাঃ), হযরত সুহাইব (রাঃ), হযরত খাব্বাব (রাঃ), হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গ। বরং আপনি আমাদের মজলিসে উঠাবসা করবেন।” তখন আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করার নিদের্শ দেন। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি ঐ লোকদেরকে তোমার মজলিস হতে সরিয়ে দিয়ো না যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকে।” (৬:৫২)।

 

সাহাবীগণ বলেনঃ “আমরা ছয়জন গরীব শ্রেণীর লোক রাসূলুল্লাহর (সঃ) মজলিসে বসে ছিলাম। যেমন হযরত সা’দ ইবনু আবি আক্কাস (রাঃ),হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) এবং আর দু’টি লোক। এমন সময় সেখানে সম্রান্ত মুশরিকরা আগমন করে এবং বলেঃ “এসব লোককে এরূপ সাহসিকতার সাথে আপনার মজলিসে বসতে দিবেন না। এতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) মনোভাব কি হয়েছিল তা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। তবে তৎক্ষণাৎ (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

 

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, একজন বক্তা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তথায় আগমন করেন, তখন তিনি নীরব হয়ে যান। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি বক্তৃতা চালিয়ে যাও। আমি ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই মজলিসেই বসে থাকলে তো আমার জন্যে এটাকে চারটি গোলাম আযাদ করার চাইতেও উত্তম মনে করি।”

 

একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর যিরে নিমগ্ন ব্যক্তিদের সাথে ফজরের নামায থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে যাওয়া আমার কাছে সারা দুনিয়া হতেও বেশী প্রিয়। আর আসরের নামাযের পর থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করা আমার নিকট অটিটি গোলাম আযাদ করা অপেক্ষাও বেশী প্রিয়। যদিও ঐ গোলাম গুলি হযরত ইসমাঈলের (আঃ) সন্তানদের চাইতেও বেশী মূল্যবান হয় এবং যদিও তাদের

 

এক একজনের মুক্তিপণ বার হাজার হয়।” (এই রিওয়াইয়াতটি আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তাহলে মোট মূল্য ছিয়ানব্বই হাজারে দাঁড়ায়। কেউ কেউ চারজন গোলামের কথা বলে থাকেন। কিন্তু হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সঃ) আট জন গোলামের কথাই বলেছেন।

 

বর্ণিত আছে যে, একটি লোক সূরায়ে কাহফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেখানে এসে পড়েন। তাঁকে দেখে লোকটি পড়া বন্ধ করে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এটাই ঐলোকদের মজলিস যেখানে অবস্থান করার নির্দেশ আমার প্রতিপালক আমাকে প্রদান করেছেন। (এটা মুসনাদে বাযারে বর্ণিত আছে)

 

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, লোকটি সূরায়ে হজ্জ অথবা সূরায়ে কাহফ পাঠ করছিলেন।

 

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যিরুল্লাহর জন্যে যে মজলিস অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ মজলিসে উপস্থিত লোকদের নিয়ত ভাল হয়, তবে আকাশ থেকে ঘোষণাকারী ঘোষণা করেনঃ “ওঠো, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তোমাদের মন্দ কাজ ভাল কাজে পরিবর্তিত হয়েছে।”

 

ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ঘরে অবস্থান করছিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এইরূপ লোকদের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। এমন কতকগুলি লোককে তিনি যিরুল্লাহতে নিমগ্ন দেখতে পেলেন যাদের চুল ছিল এলোমেলো এবং দেহের চামড়া ছিল শুষ্ক। বহু কষ্টে তারা এক একটি কাপড় সংগ্রহ করেছিল। তখনই তিনি ঐ মজলিসে বসে পড়েন এবং বলতে থাকেনঃ “আমি মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোক রেখেছেন যাদের মজলিসে বসার আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”

 

এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) উপদেশ দিচ্ছেনঃ “তুমি তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আল্লাহর যিকরকারীদেরকে ছেড়ে দিয়ে ঐ সম্পদশালীদের খোজে লেগে থেকো না। যারা দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত হতে দূরে সরে রয়েছে, যাদের পাপকার্য বেড়ে চলেছে এবং যাদের আমলগুলি নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ। তুমি তাদের অনুসরণ করো না, তাদের রীতিনীতি পছন্দ করো না এবং তাদের সম্পদের প্রতি হিংসাপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না আর তাদের সুখ সম্ভোগের প্রতি লালসাপূর্ণ দেখে না; যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি যে তাদেরকে পার্থিব সুখ শান্তি দিয়ে রেখেছি,এটা শুধু তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে; সুতরাং তুমি লালসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে দেখো না, প্রকৃতপক্ষে তোমার প্রতিপালকের কাছে যে জীবনোপকরণ রয়েছে। তা অতি উত্তম ও চিরস্থায়ী।” (২০:১৩১)

 

# আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেন যে, তিনি যেন জনগণকে বলে দেনঃ আমি আমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা কিছু আনয়ন করছি তাই হক ও সত্য। তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এখন যার ইচ্ছা হবে, সে মানবে এবং যার মন চাইবে না সে মানবে না। যারা মানবে না, তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রয়েছে। ওর চার প্রাচীরের জেলখানার মধ্যে তারা সম্পূর্ণ শক্তিহীনভাবে অবস্থান করবে। হাদীসে আছে যে, জাহান্নামের চার প্রাচীরের প্রশস্ততা চল্লিশ বছরের পথ। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) আর ঐ প্রাচীরগুলিও আগুনের তৈরী।

 

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, সমুদ্রও জাহান্নাম। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। তারপর তিনি বলেনঃ “আল্লাহর কসম! জীবিত থাকা। পর্যন্ত আমি সেখানে যাবে না এবং না ওর কোন ফোটা আমার কাছে পৌঁছবে।” (আরবী) বলা হয় মোটা পানিকে। যেমন যায়তুন তেলের তলানি এবং যেমন রক্ত ও পূজ, যা অত্যন্ত গরম। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ)। একবার সোনা গলিয়ে দেন। যখন ওটা পানির মত হয়ে যায় ও ফুটতে থাকে তখন তিনি বলেনঃ (আরবী) এর সাদৃশ্য এতে রয়েছে।” জাহান্নামের পানিও কালো, জাহান্নাম নিজেও কালো এবং জাহান্নামীও কালো। (আরবী) হলো কালো রঙ বিশিষ্ট। দুর্গন্ধময় মোটা মালিন্য কঠিন গরম জিনিস। চেহারার কাছে যাওয়া মাত্রই চেহারা দগ্ধিভূত করে, মুখ পুড়িয়ে দেয়। মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, ওটা কাফিরের মুখের কাছে যাওয়া মাত্রই তার চেহারা পুড়িয়ে দিয়ে তার মধ্যে এসে পড়বে। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ “তাদেরকে পুঁজ পান করানো হবে। অতি কষ্টে ওটা তাদের গলা থেকে নামবে। চেহারার কাছে। আসা মাত্রই চামড়া পুড়ে গিয়ে খসে পড়বে। ওটা পান করা মাত্রই নাড়ি কুঁড়ি ছিড়ে ফেটে যাবে। তারা তখন হায়! হায়! করে চীকার করতে থাকবে। তখন তাদেরকে এই পানি পান করতে দেয়া হবে। ক্ষুধার অভিযোগের সময় তাদেরকে যাককুম গাছ খেতে দেয়া হবে। এর ফলে তাদের দেহের চামড়া দেহ থেকে এমনভাবে ছুটে পড়বে যে, তাদের পরিচিত লোকেরা ঐ চামড়াগুলি দেখেও তাদেরকে চিনে ফেলবে। পিপাসার অভিযোগে তাদেরকে কঠিন গরম উত্তপ্ত পানি পান করতে দেয়া হবে, যা তাদের মুখের কাছে পৌঁছা মাত্রই গোশত পুড়িয়ে ভেজে দেবে। হায়! কি জঘন্য পানি! তাদেরকে ঐ গরম পানি পান করতে দেয়া হবে যা তাদের নাড়িভূড়ি কেটে ছিড়ে ফেলবে। কঠিন গরম প্রবাহিত নালা হতে তাদেরকে পানি পান করানো হবে। তাদের ঠিকানা, তাদের ঘর, তাদের বাসস্থান এবং তাদের বিশ্রাম স্থলও অতি জঘন্য।” যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয় ওটা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসেবে কতই না নিকৃষ্ট।” (২৫:৬৬)

 

#  ৩০-৩১ নং আয়াতের তাফসীর:

 

পাপীদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করার পর এখানে মহান আল্লাহ পুণ্যবানদের পরিণামের বর্ণনা দিচ্ছেন। এরা আল্লাহ ও তার রাসূলকে (সঃ) মান্যকারী এবং তাদের কিতাবকেও মান্যকারী। তারা সকার্যাবলী সম্পাদনকারী। সূতরাং তাদের জন্যে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। এই জান্নাতের প্রাসাদ ও বাগ-বাগিচার নিম্নদেশ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত রয়েছে। তাদেরকে অলংকার, বিশেষ করে সোনা কংকনও পরানো হবে। ঐ পোষাকগুলির কোনটি হবে নরম পাতলা এবং কোনটি হবে নরম মোটা। সেখানে তারা গদির আসনে হেলান লাগিয়ে অত্যন্ত শানশওকতের সাথে পরম সুখে বসবাস করবে। বলা হয়েছে যে, চার জানু হয়ে বসাকেও (আরবী) বলে। খুব সম্ভব এখানে অর্থ এটাই হবে। যেমন হাদীসে রয়েছে যে, (আরবী) করে অর্থাৎ চার জানু হয়ে বসে খানা খাওয়া ঠিক নয়। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহু বচন। এর অর্থ হচ্ছে চৌকি, ছাপর খাট ইত্যাদি।

 

মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদের পুরস্কার কতই না উত্তম এবং ওটা কতই না আরামদায়ক জায়গা! এটা জাহান্নামীদের বিপরীত। তাদেরকে সেখানে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদের বাসস্থান কতই না জঘন্য ও নিকৃষ্ট! সূরায়ে ফুরকানেও এই দুই দলের বর্ণনা এ রকমই পরস্পর বিরোধী রূপে দেয়া হয়েছে।

 

 

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book#884)

Sura:18

Sura: Kahaf

Ayat: 27-31

[   وَ اتۡلُ مَاۤ  اُوۡحِیَ  اِلَیۡکَ مِنۡ  کِتَابِ رَبِّکَ ۚؕ

The Command to recite the Qur’an.]

www.motaher21.net

 

18:27

 

وَ اتۡلُ مَاۤ  اُوۡحِیَ  اِلَیۡکَ مِنۡ  کِتَابِ رَبِّکَ ۚؕ  لَا مُبَدِّلَ لِکَلِمٰتِہٖ ۚ۟ وَ لَنۡ تَجِدَ مِنۡ دُوۡنِہٖ  مُلۡتَحَدًا ﴿۲۷﴾

 

And recite, [O Muhammad], what has been revealed to you of the Book of your Lord. There is no changer of His words, and never will you find in other than Him a refuge.

 

18:28

 

وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ  وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ  وَ لَا  تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ  الدُّنۡیَا ۚ وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ  اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ  ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ  وَ کَانَ   اَمۡرُہٗ   فُرُطًا ﴿۲۸﴾

 

And keep yourself patient [by being] with those who call upon their Lord in the morning and the evening, seeking His countenance. And let not your eyes pass beyond them, desiring adornments of the worldly life, and do not obey one whose heart We have made heedless of Our remembrance and who follows his desire and whose affair is ever [in] neglect.

 

18:29

 

وَ قُلِ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۟ فَمَنۡ شَآءَ فَلۡیُؤۡمِنۡ وَّ مَنۡ شَآءَ  فَلۡیَکۡفُرۡ ۙ اِنَّاۤ اَعۡتَدۡنَا لِلظّٰلِمِیۡنَ نَارًا ۙ اَحَاطَ بِہِمۡ سُرَادِقُہَا ؕ وَ اِنۡ یَّسۡتَغِیۡثُوۡا یُغَاثُوۡا بِمَآءٍ کَالۡمُہۡلِ یَشۡوِی الۡوُجُوۡہَ ؕ بِئۡسَ الشَّرَابُ ؕ وَ سَآءَتۡ  مُرۡتَفَقًا ﴿۲۹﴾

 

And say, “The truth is from your Lord, so whoever wills –  let him believe; and whoever wills –  let him disbelieve.” Indeed, We have prepared for the wrongdoers a fire whose walls will surround them. And if they call for relief, they will be relieved with water like murky oil, which scalds [their] faces. Wretched is the drink, and evil is the resting place.

 

18:30

 

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اِنَّا  لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ مَنۡ اَحۡسَنَ عَمَلًا ﴿ۚ۳۰﴾

 

Indeed, those who have believed and done righteous deeds –  indeed, We will not allow to be lost the reward of any who did well in deeds.

 

18:31

 

اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہِمُ الۡاَنۡہٰرُ یُحَلَّوۡنَ فِیۡہَا مِنۡ اَسَاوِرَ مِنۡ ذَہَبٍ وَّ یَلۡبَسُوۡنَ ثِیَابًا خُضۡرًا مِّنۡ سُنۡدُسٍ وَّ اِسۡتَبۡرَقٍ مُّتَّکِئِیۡنَ فِیۡہَا عَلَی الۡاَرَآئِکِ ؕ نِعۡمَ الثَّوَابُ ؕ وَ حَسُنَتۡ  مُرۡتَفَقًا ﴿٪۳۱﴾

 

Those will have gardens of perpetual residence; beneath them rivers will flow. They will be adorned therein with bracelets of gold and will wear green garments of fine silk and brocade, reclining therein on adorned couches. Excellent is the reward, and good is the resting place.

 

 

 

The Command to recite the Qur’an and to patiently keep Company with the Believers

 

Allah says,

 

وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ

 

And recite what has been revealed to you (O Muhammad) of your Lord’s Book.

 

Commanding His Messenger to recite His Holy Book and convey it to mankind, Allah says,

 

لَاا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ

 

None can change His Words,

 

meaning, no one can alter them, distort them or misinterpret them.

 

وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا

 

 

 

and none will you find as a refuge other than Him.

 

It was reported that Mujahid said,

 

“A shelter,”

 

and that Qatadah said,

 

“A helper or supporter.”

 

Ibn Jarir said:

 

“Allah is saying, `if you O Muhammad, do not recite what is revealed to you of the Book of your Lord, then you will have no refuge from Allah.”‘

 

As Allah says:

 

يَـأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَأ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ

 

O Messenger! Proclaim (the Message) which has been sent down to you from your Lord. And if you do not, then you have not conveyed His Message. Allah will protect you from mankind. (5:67)

 

إِنَّ الَّذِى فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْءَانَ لَرَادُّكَ إِلَى مَعَادٍ

 

Verily, He Who has given you the Qur’an, will surely bring you back to the place of return. (28:85)

 

meaning, `He will call you to account for the duty of conveying the Message which He entrusted you with.

 

 

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ

 

And keep yourself patiently with those who call on their Lord morning and afternoon, seeking His Face;

 

meaning, sit with those who remember Allah, who say “La Ilaha Illallah”, who praise Him, glorify Him, declare His greatness and call on Him, morning and evening, all the servants of Allah, whether rich or poor, strong or weak.

 

It was said that this was revealed about the nobles of Quraysh when they asked the Prophet to sit with them on his own, and not to bring his weak Companions with him, such as Bilal, `Ammar, Suhayb, Khabbab and Ibn Mas`ud. They wanted him to sit with them on his own, but Allah forbade him from doing that, and said,

 

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ

 

And turn not away those who invoke their Lord, morning and afternoon. (6:52)

 

Allah commanded him to patiently content himself with sitting with those people (the weak believers), and said:

 

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ

 

 

And keep yourself patiently with those who call on their Lord morning and afternoon…

 

Imam Muslim recorded in his Sahih that Sa`d bin Abi Waqqas who said:

 

“There was a group of six of us with the Prophet. The idolators said, `Tell these people to leave so they will not offend us.’

 

There was myself, Ibn Mas`ud, a man from Hudayl, Bilal and two other men whose names I have forgotten.

 

Allah’s Messenger thought to himself about whatever Allah willed he should think about, then Allah revealed:

 

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ

 

And turn not away those who invoke their Lord, morning and afternoon seeking His Face). (6:52)

 

Only Muslim reported this; excluding Al-Bukhari.

 

وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا

 

and let not your eyes overlook them, desiring the pomp and glitter of the life of the world;

 

Ibn Abbas said,

 

`(this means) do not favor others over them, meaning do not seek the people of nobility and wealth instead of them.’

 

وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا

 

and obey not him whose heart We have made heedless of Our remembrance,

 

means, those who are distracted by this world from being committed to the religion and from worshipping their Lord.

 

وَاتَّبَعَ هَوَاهُ

 

and who follows his own lusts,

 

وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا

 

 

 

and whose affair (deeds) has been lost.

 

means, his actions and deeds are a foolish waste of time. Do not obey him or admire his way or envy what he has.

 

As Allah says elsewhere:

 

وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَجاً مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَى

 

And strain not your eyes in longing for the things We have given for enjoyment to various groups of them, the splendor of the life of this world, that We may test them thereby. But the provision of your Lord is better and more lasting. (20:131)

 

The Truth is from Allah, and the Punishment of Those Who do not believe in it

 

Allah says,

 

وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ

 

And say:”The truth is from your Lord.”

 

Allah says to His Messenger Muhammad:”Say to the people, `What I have brought to you from your Lord is the truth, in which there is no confusion or doubt.”‘

 

فَمَن شَاء فَلْيُوْمِن وَمَن شَاء فَلْيَكْفُرْ

 

Then whosoever wills, let him believe; and whosoever wills, let him disbelieve.

 

This is a type of threat and stern warning, after which Allah says,

 

إِنَّا أَعْتَدْنَا

 

Verily, We have prepared,

 

meaning made ready,

 

لِلظَّالِمِينَ

 

for the wrongdoers,

 

meaning those who disbelieve in Allah, His Messenger and His Book,

 

نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا

 

a Fire whose walls will be surrounding them.

 

Ibn Jurayj said that Ibn Abbas said,

أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا

(a Fire whose walls will be surrounding them),

 

“A wall of fire.”

 

وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاء كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ

 

And if they ask for drink, they will be granted water like Al-Muhl, that will scald their faces.

 

Ibn Abbas said;

 

“Al-Muhl is thick water which is similar to the sediment in oil.”

 

Mujahid said,

 

“It is like blood and pus.”

 

Ikrimah said,

 

“It is the thing that is heated to the ultimate temperature.”

 

Others said:

 

“It is everything that is melted.”

 

Qatadah said,

 

“Ibn Mas`ud melted some gold in a grove, and when it became liquid and foam rose to the top, he said, this is the thing that is most like Al-Muhl.”

 

Ad-Dahhak said:

 

“The water of Hell is black, and it itself is black and its people are black.”

 

There is nothing contradictory in these comments, for Al-Muhl includes all of these unpleasant characteristics, it is black, evil-smelling, thick and hot, as Allah said,

 

يَشْوِي الْوُجُوهَ

((it) will scald their faces),

 

meaning because of its heat. When the disbeliever wants to drink it and brings it close to his face, it will scald it so that the skin of his face falls off into it.

 

Sa`id bin Jubayr said,

 

“When the people of Hell get hungry, they will ask for relief from it, and they will be given the tree of Zaqqum from which they will eat. The tree will tear off the skin of their faces, and if anyone who knew them were to pass by, he would recognize the skin of their faces in the tree. Then they will feel thirsty, so they will ask for drink, and they will be granted water like Al-Muhl, that is what has been heated to the ultimate temperature. When it is brought near their mouths, the flesh of their faces from which the skin has been torn off will be baked.”

 

After describing this drink in these horrifying qualities, Allah says:

 

بِيْسَ الشَّرَابُ

 

Terrible is the drink,

 

meaning, how awful this drink is.

 

Similarly, He says in another Ayah:

 

وَسُقُواْ مَأءً حَمِيماً فَقَطَّعَ أَمْعَأءَهُمْ

 

and be given to drink boiling water so that it cuts up their bowels. (47:15)

 

تُسْقَى مِنْ عَيْنٍ ءَانِيَةٍ

 

They will be given to drink from a boiling spring. (88:5)

 

وَبَيْنَ حَمِيمٍ ءَانٍ

 

They will go between it (Hell) and the fierce boiling water. (55:44)

 

وَسَاءتْ مُرْتَفَقًا

 

 

 

and an evil Murtafaq!

 

means, how evil a place is the Fire to dwell and rest and gather.

 

As Allah says elsewhere:

 

إِنَّهَا سَأءَتْ مُسْتَقَرّاً وَمُقَاماً

 

Evil indeed it (Hell) is as an abode and as a place to rest in. (25:66).

The Reward of those Who believe and do Righteous Deeds

 

Allah says,

 

إِنَّ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلً

 

 

 

 

 

 

أُوْلَيِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ

 

Verily, as for those who believed and did righteous deeds, certainly We shall not make the reward of anyone to be lost who does his (righteous) deeds in the most perfect manner. These! For them will be Jannatu `Adn;

 

When Allah mentions the state of those who are doomed, He follows that by mentioning the blessed who believed in Allah and believed what His Messengers brought, those who did the righteous deeds that they commanded them to do. They will have Jannatu `Adn.

`Adn means lasting.

 

تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الاَْنْهَارُ

 

wherein rivers flow beneath them,

 

means, from beneath its rooms and dwellings.

 

Fir`awn said:

 

وَهَـذِهِ الاٌّنْهَـرُ تَجْرِى مِن تَحْتِى

 

and these rivers flowing beneath me… (43:51)

 

يُحَلَّوْنَ

 

they will be adorned,

 

means, with jewelry.

 

فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ

 

with bracelets of gold,

 

Allah says elsewhere:

 

وَلُوْلُواً وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ

 

and pearls and their garments therein will be of silk. (22:23)

 

This is explained in more detail here, where Allah says:

 

وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ

 

and they will wear green garments of Sundus and Istabraq.

Sundus refers to a fine garment, like a shirt and the like, and

Istabraq is thick and shiny velvet.

 

مُّتَّكِيِينَ فِيهَا عَلَى الاَْرَايِكِ

 

They will be Muttaki’in therein on Ara’ik.

 

The word Muttaki’in implies lying down, or it was said that it means sitting with one’s legs crossed, which is closer to the meaning here.

 

In a Sahih Hadith, the Prophet said:

 

أَمَّا أَنَا فَلَ اكُلُ مُتَّكِيًا

 

As for me, I do not eat sitting with legs crossed (Muttaki’an).

Ara’ik is the plural of Arikah, which is a bed under a canopy.

 

And Allah knows best.

 

نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا

 

 

 

How good is the reward, and what an excellent place of rest (Murtafaq)!

 

means, how blessed is Paradise as a reward for their good deeds.

 

And what an excellent Murtafaq means, and how good a place to dwell and rest and stay.

 

Previously, Allah had said of Hell,

 

بِيْسَ الشَّرَابُ وَسَأءَتْ مُرْتَفَقًا

 

Terrible is the drink, and an evil place of rest (Murtafaq)! (18:29)

In a similar way, He contrasts the two (Paradise and Hell) in Surah Al-Furqan, where He says:

 

إِنَّهَا سَأءَتْ مُسْتَقَرّاً وَمُقَاماً

 

Evil indeed it (Hell) is as an abode, and as a place to rest in. (25:66)

 

Then He mentions the qualities of the believers, then says:

 

أُوْلَـيِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَـماً

 

خَـلِدِينَ فِيهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرّاً وَمُقَاماً

 

Those will be rewarded with the highest place because of their patience. Therein they shall be met with greetings and the word of peace and respect. Abiding therein excellent it is as an abode, and as a place to rest in. (25:75-76)

 

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply