أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৯০)[*মুসা(আ.) ও খিজির(আ.)-এর ঘটনা :]
(সুরা ১-১৫ নং পারা, তাপসীর শেষ, আল্ হামদু লিল্লাহ।)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৬০-৮২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬০
:- ১৫ নং পারা,
وَ اِذْ قَالَ مُوْسٰى لِفَتٰىهُ لَاۤ اَبْرَحُ حَتّٰۤى اَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَیْنِ اَوْ اَمْضِیَ حُقُبًا
(এদেরকে সেই ঘটনাটি একটু শুনিয়ে দাও যা মূসার সাথে ঘটেছিল) যখন মূসা তার খাদেমকে বলেছিল, দুই দরিয়ার সঙ্গমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সফর শেষ করবো না, অন্যথায় আমি দীর্ঘকাল ধরে চলতেই থাকবো।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬১
فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَیْنِهِمَا نَسِیَا حُوْتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِیْلَهٗ فِی الْبَحْرِ سَرَبًا
সে অনুসারে যখন তারা তাদের সঙ্গমস্থলে পৌঁছে গেলো তখন নিজেদের মাছের ব্যাপারে গাফেল হয়ে গেলো এবং সেটি বের হয়ে সুড়ংগের মতো পথ তৈরি করে দরিয়ার মধ্যে চলে গেলো।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬২
فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتٰىهُ اٰتِنَا غَدَآءَنَا١٘ لَقَدْ لَقِیْنَا مِنْ سَفَرِنَا هٰذَا نَصَبًا
সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর মূসা তাঁর খাদেমকে বললো, “আমাদের নাশতা আনো, আজকের সফরে তো আমরা ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৩
قَالَ اَرَءَیْتَ اِذْ اَوَیْنَاۤ اِلَى الصَّخْرَةِ فَاِنِّیْ نَسِیْتُ الْحُوْتَ١٘ وَ مَاۤ اَنْسٰىنِیْهُ اِلَّا الشَّیْطٰنُ اَنْ اَذْكُرَهٗ١ۚ وَ اتَّخَذَ سَبِیْلَهٗ فِی الْبَحْرِ١ۖۗ عَجَبًا
খাদেম বললো, “আপনি কি দেখেছেন, কি ঘটে গেছে? যখন আমরা সেই পাথরটার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমার মাছের কথা মনে ছিল না এবং শয়তান আমাকে এমন গাফেল করে দিয়েছিল যে, আমি (আপনাকে) তার কথা বলতে ভুলে গেছি। মাছ তো অদ্ভূতভাবে বের হয়ে দরিয়ার মধ্যে চলে গেছে।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৪
قَالَ ذٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ١ۖۗ فَارْتَدَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمَا قَصَصًاۙ
মূসা বললো, “আমরা তো এরই খোঁজে ছিলাম। কাজেই তারা দু’জন নিজেদের পদরেখা ধরে পেছনে ফিরে এলো
# সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৫
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَاۤ اٰتَیْنٰهُ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَ عَلَّمْنٰهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا
এবং সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেলো, যাকে আমি নিজের অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৬
قَالَ لَهٗ مُوْسٰى هَلْ اَتَّبِعُكَ عَلٰۤى اَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
মূসা তাকে বললো, “আমি কি আপনার সাথে থাকতে পারি, যাতে আপনাকে যে জ্ঞান শেখানো হয়েছে তা থেকে আমাকেও কিছু শেখাবেন?”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৭
قَالَ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِیْعَ مَعِیَ صَبْرًا
সে বললো, “আপনি আমার সাথে সবর করতে পারবেন না।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৮
وَ كَیْفَ تَصْبِرُ عَلٰى مَا لَمْ تُحِطْ بِهٖ خُبْرًا
আর তাছাড়া যে ব্যাপারের আপনি কিছুই জানেন না সে ব্যাপারে আপনি সবর করবেনই বা কেমন করে।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৬৯
قَالَ سَتَجِدُنِیْۤ اِنْ شَآءَ اللّٰهُ صَابِرًا وَّ لَاۤ اَعْصِیْ لَكَ اَمْرًا
মূসা বললো, “ইন্শাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারী হিসেবেই পাবেন এবং কোন ব্যাপারেই আমি আপনার হুকুম অমান্য করবো না।”
# সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭০
قَالَ فَاِنِ اتَّبَعْتَنِیْ فَلَا تَسْئَلْنِیْ عَنْ شَیْءٍ حَتّٰۤى اُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا۠
সে বললো, আচ্ছা, “যদি আপনি আমার সাথে চলেন তাহলে আমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্পর্কে আপনাকে বলি।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭১
فَانْطَلَقَا١ٙ حَتّٰۤى اِذَا رَكِبَا فِی السَّفِیْنَةِ خَرَقَهَا١ؕ قَالَ اَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ اَهْلَهَا١ۚ لَقَدْ جِئْتَ شَیْئًا اِمْرًا
অতঃপর তারা দু’জন রওয়ানা হলো। শেষ পর্যন্ত যখন তারা একটি নৌকায় আরোহণ করলো তখন ঐ ব্যক্তি নৌকা ছিদ্র করে দিল। মূসা বললো, “আপনি কি নৌকার সকল আরোহীকে ডুবিয়ে দেবার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন? এতো আপনি বড়ই মারাত্মক কাজ করলেন।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭২
قَالَ اَلَمْ اَقُلْ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِیْعَ مَعِیَ صَبْرًا
সে বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না?”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৩
قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِیْ بِمَا نَسِیْتُ وَ لَا تُرْهِقْنِیْ مِنْ اَمْرِیْ عُسْرًا
মূসা বললো, “ভুল চুকের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না, আমার ব্যাপারে আপনি কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন না।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৪
فَانْطَلَقَا١ٙ حَتّٰۤى اِذَا لَقِیَا غُلٰمًا فَقَتَلَهٗ١ۙ قَالَ اَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِیَّةًۢ بِغَیْرِ نَفْسٍ١ؕ لَقَدْ جِئْتَ شَیْئًا نُّكْرًا
এরপর তারা দু’জন চললো। চলতে চলতে তারা একটি বালকের দেখা পেলো এবং ঐ ব্যক্তি তাকে হত্যা করলো। মূসা বললো, “আপনি এক নিরপরাধকে হত্যা করলেন অথচ সে কাউকে হত্যা করেনি? এটা তো বড়ই খারাপ কাজ করলেন।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৫
قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكَ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِیْعَ مَعِیَ صَبْرًا
সে বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না?”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৬
قَالَ اِنْ سَاَلْتُكَ عَنْ شَیْءٍۭ بَعْدَهَا فَلَا تُصٰحِبْنِیْ١ۚ قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَّدُنِّیْ عُذْرًا
মূসা বললো, “এরপর যদি আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে আপনি আমাকে আপনার সাথে রাখবেন না। এখন তো আমার পক্ষ থেকে আপনি ওজর পেয়ে গেছেন।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৭
فَانْطَلَقَا١ٙ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَتَیَاۤ اَهْلَ قَرْیَةِ اِ۟سْتَطْعَمَاۤ اَهْلَهَا فَاَبَوْا اَنْ یُّضَیِّفُوْهُمَا فَوَجَدَا فِیْهَا جِدَارًا یُّرِیْدُ اَنْ یَّنْقَضَّ فَاَقَامَهٗ١ؕ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَتَّخَذْتَ عَلَیْهِ اَجْرًا
তারপর তারা সামনের দিকে চললো। চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো। কিন্তু তারা তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো। সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল। মূসা বললো, “আপনি চাইলে এ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৮
قَالَ هٰذَا فِرَاقُ بَیْنِیْ وَ بَیْنِكَ١ۚ سَاُنَبِّئُكَ بِتَاْوِیْلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَّلَیْهِ صَبْرًا
সে বললো, “ব্যাস, তোমার ও আমার সঙ্গ শেষ হয়ে গেলো। এখন আমি যে কথাগুলোর ওপর তুমি সবর করতে পারোনি সেগুলোর তাৎপর্য তোমাকে বলবো।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৭৯
اَمَّا السَّفِیْنَةُ فَكَانَتْ لِمَسٰكِیْنَ یَعْمَلُوْنَ فِی الْبَحْرِ فَاَرَدْتُّ اَنْ اَعِیْبَهَا وَ كَانَ وَرَآءَهُمْ مَّلِكٌ یَّاْخُذُ كُلَّ سَفِیْنَةٍ غَصْبًا
সেই নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন গরীব লোকের, তারা সাগরে মেহনত মজদুরী করতো। আমি সেটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ সামনের দিকে ছিল এমন বাদশাহর এলাকা যে প্রত্যেকটি নৌকা জবরদস্তি ছিনিয়ে নিতো।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৮০
وَ اَمَّا الْغُلٰمُ فَكَانَ اَبَوٰهُ مُؤْمِنَیْنِ فَخَشِیْنَاۤ اَنْ یُّرْهِقَهُمَا طُغْیَانًا وَّ كُفْرًاۚ
আর ঐ বালকটির ব্যাপার হচ্ছে এই যে, তার বাপ-মা ছিল মু’মিন। আমাদের আশঙ্কা হলো, এ বালক তার বিদ্রোহাত্মক আচরণ ও কুফরীর মাধ্যমে তাদেরকে বিব্রত করবে।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৮১
فَاَرَدْنَاۤ اَنْ یُّبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَیْرًا مِّنْهُ زَكٰوةً وَّ اَقْرَبَ رُحْمًا
তাই আমরা চাইলাম তাদের রব তার বদলে তাদেরকে যেন এমন একটি সন্তান দেন যে চরিত্রের দিক দিয়েও তার চেয়ে ভাল হবে এবং যার কাছ থেকে সদয় আচরণও বেশী আশা করা যাবে।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৮২
وَ اَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلٰمَیْنِ یَتِیْمَیْنِ فِی الْمَدِیْنَةِ وَ كَانَ تَحْتَهٗ كَنْزٌ لَّهُمَا وَ كَانَ اَبُوْهُمَا صَالِحًا١ۚ فَاَرَادَ رَبُّكَ اَنْ یَّبْلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَ یَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَا١ۖۗ رَحْمَةً مِّنْ رَّبِّكَ١ۚ وَ مَا فَعَلْتُهٗ عَنْ اَمْرِیْ١ؕ ذٰلِكَ تَاْوِیْلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَّلَیْهِ صَبْرًا٢ؕ۠
এবার থাকে সেই দেয়ালের ব্যাপারটি। সেটি হচ্ছে এ শহরে অবস্থানকারী দু’টি এতীম বালকের। এ দেয়ালের নীচে তাদের জন্য সম্পদ লুকানো আছে এবং তাদের পিতা ছিলেন একজন সৎলোক। তাই তোমার রব চাইলেন এ কিশোর দু’টি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাক এবং তারা নিজেদের গুপ্তধন বের করে নিক। তোমার রবের দয়ার কারণে এটা করা হয়েছে। নিজ ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে আমি এটা করিনি। তুমি যেসব ব্যাপারে সবর করতে পারোনি এ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা।”
৬০-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
এ পর্যায়ে কাফের ও মু’মিন উভয় গোষ্ঠীকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য সম্পর্কে সজাগ করাই মূল উদ্দেশ্য। সেই সত্যটি হচ্ছে, দুনিয়ায় যা কিছু ঘটে মানুষের স্থূল দৃষ্টি তা থেকে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ফলাফল গ্রহণ করে। কারণ আল্লাহ যে উদ্দেশ্য ও কল্যাণ সামনে রেখে কাজ করেন তা তার জানা থাকে না। মানুষ প্রতিনিয়ত দেখছে, জালেমরা ষ্ফীত হচ্ছে, উন্নতি লাভ করছে, নিরপরাধরা কষ্ট ও সংকটের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে, নাফরমানদের প্রতি অজস্রধারে অনুগ্রহ বর্ষিত হচ্ছে, আনুগত্যশীলদের ওপর বিপদের পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে, অসৎলোকেরা আয়েশ-আরামে দিন যাপন করছে এবং সৎলোকেদের দূরবস্থার শেষ নেই। লোকেরা নিছক এর গুঢ় রহস্য না জানার কারণে সাধারণভাবে তাদের মনে দোদুল্যমানতা এমন কি বিভ্রান্তিও দেখা দেয়। কাফের ও জালেমরা এ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় যে, এ দুনিয়াটা একটা অরাজকতার মুল্লুক। এখানে কোন রাজা নেই। আর থাকলেও তার শাসন শৃংখলা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখানে যারা যা ইচ্ছা করতে পারে। তাকে জিজ্ঞেস বা কৈফিয়ত তলব করার কেউ নেই। এ ধরনের ঘটনাবলী দেখে মু’মিন মনমরা হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় কঠিন পরীক্ষাকালে তার ঈমানের ভিতও নড়ে যায়। এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালামকে তাঁর নিজের ইচ্ছা জগতের পর্দা উঠিয়ে এক ঝলক দেখিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে সেখানে দিনরাত কি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কি কারণে হচ্ছে এবং ঘটনার বহিরাঙ্গন তার অভ্যন্তর থেকে কেমন ভিন্নতর হয় তা তিনি জানতে পারেন।
হযরত মূসার (আ) এ ঘটনাটা কোথায় ও কবে সংঘটিত হয়? কুরআনে একথা সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি। হাদীসে অবশ্যি আমরা আওফীর একটি বর্ণনা পাই, যাতে তিনি ইবনে আব্বাসের (রা.) উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ফেরাউনের ধ্বংসের পর হযরত মূসা (আ) যখন মিসরে নিজের জাতির বসতি স্থাপন করেন তখন এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু বুখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে যে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী রেওয়ায়েত উদ্ধৃত হয়েছে তা এ বর্ণনা সমর্থন করে না। তাছাড়া অন্য কোন উপায়েও একথা প্রমাণ হয় না যে, ফেরাউনের ধ্বংসের পর হযরত মূসা (আ) কখনো মিসরে গিয়েছিলেন। বরং কুরআন একথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে যে, মিসর ত্যাগ করার পর তার সমস্তটা সময় সিনাই ও তীহ অঞ্চলে কাটে। কাজেই এ রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আমরা দু’টি কথা পরিষ্কার বুঝতে পারি। এক, হযরত মূসাকে (আ) হয়তো তাঁর নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে এ পর্যবেক্ষণ করানো হয়েছিল। কারণ নবুওয়াতের শুরুতেই পয়গম্বরদের জন্য এ ধরনের শিক্ষা ও অনুশীলনের দরকার হয়ে থাকে। দুই, মুসলমানরা মক্কা মু’আয্যমায় যে ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল বনী ইসরাঈলও যখন তেমনি ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছিল তখনই হযরত মূসার জন্য এ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়ে থাকবে। এ দু’টি কারণে আমাদের অনুমান, (অবশ্য সঠিক কথা একমাত্র আল্লাহ জানেন) এ ঘটনার সম্পর্কে এমন এক যুগের সাথে মিসরে বনী ইসরাঈলদের ওপর ফেরাউনের জুলুমের সিলসিলা জারি ছিল এবং মক্কার কুরাইশ সরদারদের মতো ফেরাউন ও তার সভাসদরাও আযাবে বিলম্ব দেখে ধারণা করছিল যে, তাদের ওপর এমন কোন সত্তা নেই যার কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং মক্কার মজলুম মুসলমানদের মতো মিসরের মজলুম মুসলমানরাও অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করছিল, হে আল্লাহ! আর কত দিন এ জালেমদেরকে পুরস্কৃত এবং আমাদের ওপর বিপদের সয়লাব-স্রোত প্রবাহিত করা হবে? এমনকি হযরত মূসাও চিৎকার করে উঠেছিলেনঃ
وَ قَالَ مُوۡسٰی رَبَّنَاۤ اِنَّکَ اٰتَیۡتَ فِرۡعَوۡنَ وَ مَلَاَہٗ زِیۡنَۃً وَّ اَمۡوَالًا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۙ رَبَّنَا لِیُضِلُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِکَ ۚ
“হে পরওয়ারদিগার! তুমি ফেরাউন ও তার সভাসদদেরকে দুনিয়ার জীবনে বড়ই শান-শওকত ও ধন-দৌলত দান করেছো। হে আমাদের প্রতিপালক! এটা কি এজন্য যে, তারা দুনিয়াকে তোমার পথ থেকে বিপথে পরিচালিত করবে?” (ইউনূসঃ ৮৮)
যদি আমাদের এ অনুমান সঠিক হয় তাহলে ধারণা করা যেতে পারে যে, সম্ভবত হযরত মূসার (আ) এ সফরটি ছিল সুদানের দিকে। এক্ষেত্রে দু’দরিয়ার সঙ্গমস্থল বলতে বুঝাবে বর্তমান খার্তুম শহরের নিকটবর্তী নীল নদের দই শাখা বাহরুল আব্ইয়াদ (হোয়াইট নীল) ও বাহরুল আযরাক (ব্লু নীল) সেখানে এসে মিলিত হয়েছে (দেখুন : ( হযরত মূসা (আ) ও খিজিরের (আ) কিসসা সংক্রান্ত মানচিত্র———– ) হযরত মূসা (আ) সারা জীবন যেসব এলাকায় কাঠিয়েছেন সেসব এলাকায় এ একটি স্থান ছাড়া আর কোথাও দু’নদীর সঙ্গমস্থল নেই।
এ ঘটনাটির ব্যাপারে বাইবেল একেবারে নীরব। তবে তালমূদে এর উল্লেখ আছে। কিন্তু সেখানে এ ঘটনাটিকে মূসার (আ) পরিবর্তে ‘রাব্বী ইয়াহুহানান বিন লাভীর’ সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ “হযরত ইলিয়াসের সাথে উল্লেখিত রাব্বীর এ ঘটনাটি ঘটে। হযরত ইলিয়াসকে (আ) দুনিয়া থেকে জীবিত অবস্থায় উঠিয়ে নেয়ার পর ফেরেশতাদের দলভুক্ত করা হয়েছে এবং তিনি দুনিয়ার ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত হয়েছেন।” ( THE TALMUD SELECTIONS , BY H. POLANO. PP. 313-16 ,, original link ) সম্ভবত বনী ইসরাঈলের মিসর ত্যাগের পূর্বেকার ঘটনাবলীর ন্যায় এ ঘটনাটিও সঠিক অবস্থায় সংরক্ষিত থাকেনি এবং শত শত বছর পরে তারা ঘটনার এক জায়গার কথা নিয়ে আর এক জায়গায় জুড়ে দিয়েছে। তালমূদের এ বর্ণনায় প্রভাবিত হয়ে মুসলমানদের কেউ কেউ একথা বলে দিয়েছেন যে, কুরআনের এ স্থানে যে মূসার কথা বলা হয়েছে তিনি হযরত মূসা আলাইহিস সালাম নন বরং অন্য কোন মূসা হবেন। কিন্তু তালমূদের প্রত্যেকটি বর্ণনাকে নির্ভুল ইতিহাস গণ্য করা যেতে পারে না। আর কুরআনে কোন অজানা ও অপরিচিত মূসার উল্লেখ এভাবে করা হয়েছে, এ ধরনের কোন কথা অনুমান করার কোন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তাছাড়া নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহে যখন হযরত উবাই ইবেন কা’বের (রা.) এ বর্ণনা রয়েছে যে, নবী ﷺ এ ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে মূসা (আ) বলতে বনী ইসরাঈলের নবী হযরত মূসাকে (আ) নির্দেশ করেছেন। তখন কোন মুসলমানের জন্য তালামূদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হয় না।
পশ্চিমী প্রাচ্যবিদরা তাদের স্বভাবসিদ্ধ পদ্ধতিতে কুরআন মজীদের এ কাহিনীটিরও উৎস সন্ধানে প্রবৃত্ত হবার চেষ্টা করেছেন। তারা তিনটি কাহিনীর প্রতি অংগুলি নির্দেশ করে বলেছেন যে, এসব জায়গা থেকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটি নকল করেছেন এবং তারপর দাবী করেছেন, আমাকে অহীর মাধ্যমে এ ঘটনা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গিলগামিশের কাহিনী, দ্বিতীয়টি সুরিয়ানী সিকান্দার নামা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে ওপরে যে ইহুদী বর্ণনাটির উল্লেখ আমরা করেছি। কিন্তু এ কুটীল স্বভাব লোকেরা জ্ঞান চর্চার নামে যেসব গবেষণা ও অনুসন্ধান চালান সেখানে পূর্বাহ্ণেই এ সিদ্ধান্ত করে নেন যে, কুরআনকে কোনক্রমেই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বলে মেনে নেয়া যাবে না। কাজেই এখন যে, কোনভাবেই এ বিষয়ের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা কিছু পেশ করেছেন তা অমুক অমুক জায়গা থেকে চুরি করা বিষয়বস্তু ও তথ্যাদি থেকে গৃহীত। এ ন্যক্কারজনক গবেষণা পদ্ধতিতে তারা এমন নির্লজ্জভাবে টানাহেচঁড়া করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপায় যে, তা দেখে স্বতঃষ্ফূর্তভাবে ঘৃণায় মন রি রি করে ওঠে এবং মানুষ বলতে বাধ্য হয়ঃ যদি এর নাম হয় তাত্বিক গবেষণা তাহলে এ ধরনের তত্ব-জ্ঞান ও গবেষণার প্রতি অভিশাপ। কোন জ্ঞানান্বেষণকারী তাদের কাছে যদি কেবলমাত্র চারটি বিষয়ের জবাব চায় তাহলে তাদের বিদ্বেষমূলক মিথ্যাচারের একেবারেই হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে যাবেঃ
এক, আপনাদের কাছে এমন কি প্রমাণ আছে, যার ভিত্তিতে আপনারা দু’চারটে প্রাচীন গ্রন্থে কুরআনের কোন বর্ণনার সাথে কিছুটা মিলে যায় এমন ধরনের বিষয় পেয়েই দাবী করে বসেন যে, কুরআনের বর্ণনাটি অবশ্যই এ গ্রন্থগুলো থেকে নেয়া হয়েছে।
দুই, আপনারা বিভিন্ন ভাষায় যেসব গ্রন্থকে কুরআন মজীদের কাহিনী ও অন্যান্য বর্ণনার উৎস গণ্য করেছেন সেগুলোর তালিকা তৈরী করলে দস্তুরমতো একটি বড়সড় লাইব্রেরীর গ্রন্থ তালিকা তৈরী হয়ে যাবে। এ ধরনের কোন লাইব্রেরী কি সে সময় মক্কায় ছিল এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদকবৃন্দ সেখানে বসে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপাদান সরবরাহ করছিলেন? যদি এমনটি না হয়ে থাকে এবং নবুওয়াত লাভের কয়েক বছর পূর্বে নবী ﷺ আরবের বাইরে, যে দু’তিনটি সফর করেছিলেন শুধুমাত্র তারই ওপর আপনারা নির্ভর করে থাকেন তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, ঐ বাণিজ্যিক সফরগুলোর তিনি কয়টি লাইব্রেরীর বই অনুলিখন বা মুখস্ত করে এনেছিলেন? নবুওয়াতের ঘোষণার একদিন আগেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তায় এ ধরনের তথ্যের কোন চিহ্ন পাওয়া না যাওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ কি?
তিন, মক্কার কাফের সম্প্রদায়, ইহুদী ও খৃস্টান সবাই অনুসন্ধান করে বেড়াচ্ছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ একথাগুলো কোথা থেকে আনেন। আপনারা বলতে পারেন নবীর ﷺ সমকালীনরা তাঁর এ চুরির কোন খবর পায়নি কেন? এর কারণ কি? তাদেরকে তো বারবারই এ মর্মে চ্যালেঞ্জ দেয়া হচ্ছিল যে, এ কুরআন আল্লাহ নাযিল করেছেন, অহী ছাড়া এর দ্বিতীয় কোন উৎস নেই, যদি তোমরা একে মানুষের বাণী বলো তাহলে মানুষ যে এমন বাণী তৈরী করতে পারে তা প্রমাণ করে দাও। এ চ্যালেঞ্জটি নবীর ﷺ সমকালীন ইসলামের শত্রুদের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারা এমন একটি উৎসের প্রতিও অংগুলি নির্দেশ করতে পারেনি যা থেকে কুরআনের বিষয়বস্তু গৃহীত হয়েছে বলে কোন বিবেকবান ব্যক্তি বিশ্বাস করা তো দূরের কথা সন্দেহও করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, সমকালীনরা এ গোয়েন্দাবৃত্তিতে ব্যর্থ হলো কেন? আর হাজার বারোশো বছর পরে আজ বিরোধী পক্ষ এতে সফল হচ্ছেন কেমন করে?
শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে, একথার সম্ভাবনা তো অবশ্যি আছে যে, কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এবং এ কিতাবটি বিগত ইতিহাসের এমনসব ঘটনার সঠিক খবর দিচ্ছে যা হাজার হাজার বছর ধরে শ্রুতির মাধ্যমে বিকৃত হয়ে অন্য লোকদের কাছে পৌঁছেছে এবং গল্পের রূপ নিয়েছে। কোন্ ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের ভিত্তিতে এ সম্ভাবনাটিকে একদম উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং কেন শুধুমাত্র এ একটি সম্ভাবনাকে আলোচনা ও গবেষণার ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে যে, লোকদের মধ্যে গল্প ও মৌখিক প্রবাদ আকারে যেসব কিসসা কাহিনী প্রচলিত ছিল কুরআন সেগুলো থেকেই গৃহীত হয়েছে? ধর্মীয় বিদ্বেষ ও হঠকারিতা ছাড়া এ প্রাধান্য দেবার অন্য কোন কারণ বর্ণনা করা যেতে পারে কি?
এ প্রশ্নগুলো নিয়ে যে ব্যক্তিই একটু চিন্তা-ভাবনা করবে তারই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ছাড়া আর কোন গন্তব্য থাকতে পারে না যে, প্রাচ্যবিদরা “তত্বজ্ঞানের” নামে যা কিছু পেশ করেছেন কোন দায়িত্বশীল শিক্ষার্থী ও জ্ঞানানুশীলনকারীর কাছে তার কানাকড়িও মূল্য নেই।
# আমাদের গন্তব্যের এ নিশানীটিই তো আমাকে বলা হয়েছিল। এ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে, আল্লাহর ইঙ্গিতেই হযরত মূসা (আ) এ সফর করছিলেন। তাঁর গন্তব্য স্থলের চিহ্ন হিসেবে তাঁকে বলে দেয়া হয়েছিল যে, যেখানে তাঁদের নাশ্তার জন্য নিয়ে আসা মাছটি অদৃশ্য হয়ে যাবে সেখানে তাঁরা আল্লাহর সেই বান্দার দেখা পাবেন, যার সাথে সাক্ষ্যাৎ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল।
# সমস্ত নির্ভরযোগ্য হাদীসে এ বান্দার নাম বলা হয়েছে খিযির। কাজেই ইসরাঈলী বর্ণনায় প্রভাবিত হয়ে যারা হযরত ইলিয়াসের (আ) সাথে এ ঘটনাটি জুড়ে দেন তাদের বক্তব্য মোটেই প্রণিধানযোগ্য নয়। তাদের এ বক্তব্য শুধুমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর সাথে সংঘর্ষশীল হবার কারণেই যে ভুল তা নয় বরং এ কারণেও ভুল যে, হযরত ইলিয়াস হযরত মূসার কয়েক’শ বছর পরে জন্মলাভ করেছিলেন। কুরআনে হযরত মূসার (আ) খাদেমের নামও বলা হয়নি। তবে কোন কোন হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি ছিলেন হযরত ইউশা’ বিন নূন। পরে তিনি হযরত মূসার (আ) খলীফা হন।
#এ কাহিনীটির মধ্যে একটি বিরাট জটিলতা আছে। এটি দূর করা প্রয়োজন হযরত খিযির যে তিনটি কাজ করেছিলেন তার মধ্যে তৃতীয় কাজটির সাথে শরীয়াতের বিরোধ নেই কিন্তু প্রথম কাজ দু’টি নিঃসন্দেহে মাবন জাতির সূচনালগ্ন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আল্লাহ যতগুলো শরীয়াত নাযিল করেছেন তাদের প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিরোধী। কারো মালিকানধীন কোন জিনিস নষ্ট করার এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করার অনুমতি কোন শরীয়াত কোন মানুষকে দেয়নি। এমন কি যদি কোন ব্যক্তি ইলহামের মাধ্যমে জানতে পারে যে, সামনের দিকে এ জালেম একটি নৌকা ছিনিয়ে নেবে এবং অমুক বালকটি বড় হয়ে খোদাদ্রোহী ও কাফের হয়ে যাবে তবুও আল্লাহ প্রেরিত শরীয়াতগুলোর মধ্য থেকে কোন শরীয়াতের দৃষ্টিতেই তার জন্য তত্বজ্ঞানের ভিত্তিতে নৌকা ছেঁদা করে দেয়া এবং একটি নিরপরাধ বালককে হত্যা করা জায়েয নয়। এর জবাবে একথা বলা যে, হযরত খিযির এ কাজ দু’টি আল্লাহর হুকুমে করেছিলেন। আসলে এতে এই জটিলতা একটুও দূর হয় না। প্রশ্ন এ নয় যে, হযরত খিযির কার হুকুমে এ কাজ করেছিলেন। এগুলো যে আল্লাহর হুকুমে করা হয়েছিল তা তো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। কারণ হযরত খিযির নিজেই বলছেন, তাঁর এ কাজগুলো তাঁর নিজের ক্ষমতা ইখতিয়ারভূক্ত নয় বরং এগুলো হচ্ছে আল্লাহর দয়া ও করুণা। আর হযরত খিযিরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ তত্বজ্ঞান দেয়া হয়েছিল বলে প্রকাশ করে আল্লাহ নিজেই এর সত্যতার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহর হুকুমে যে এ কাজ করা হয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে যে আসল প্রশ্ন দেখা দেয় সেটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহর এ বিধান কোন্ ধরনের ছিল? একথা সুস্পষ্ট, এগুলো শরীয়াতের বিধান ছিল না। কারণ কুরআন ও পূর্ববতী আসমানী কিতাবসমূহ থেকে আল্লাহর শরীয়াতের যেসব মূলনীতি প্রমাণিত হয়েছে তার কোথাও কোন ব্যক্তিকে এ সুযোগ দেয়া হয়নি যে, সে অপরাধ প্রমাণিত হওয়া ছাড়াই কাউকে হত্যা করতে পারবে। তাই নিশ্চিতভাবে এ কথা মেনে নিতে হবে যে, এ বিধানগুলো প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহর এমন সব সৃষ্টিগত বিধানের সাথে সামঞ্জস্যশীল যেগুলোর আওতাধীনে দুনিয়ার প্রতি মুহূর্তে কাউকে রোগগ্রস্ত করা হয়, কাউকে রোগমুক্ত করা হয়, কাউকে মৃত্যু দান করা হয়, কাউকে জীবন দান করা হয়, কাউকে ধ্বংস করা হয় এবং কারোর প্রতি করুণাধারা বর্ষণ করা হয়। এখন যদি এগুলো সৃষ্টিগত বিধান হয়ে থাকে তাহলে এগুলোর দায়িত্ব একমাত্র ফেরেশতাগণের ওপরেই সোপর্দ হতে পারে। তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে শরীয়াতগত বৈধতা ও অবৈধতার প্রশ্ন ওঠে না। কারণ তারা নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা-ইখতিয়ার ছাড়াই একমাত্র আল্লাহর হুকুম তামিল করে থাকে।
আর মানুষের ব্যাপারে বলা যায়, সে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন সৃষ্টিগত হুকুম প্রবর্তনের মাধ্যমে পরিণত হোক বা ইলহামের সাহায্যে এ ধরনের কোন অদৃশ্য জ্ঞান ও হুকুম লাভ করে তা কার্যকর করুক, সর্বাবস্থায় যে কাজটি সে সম্পন্ন করেছে সেটি যদি শরীয়াতের কোন বিধানের পরিপন্থী হয় তাহলে তার গুনাহগার হওয়া থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। কারণ মানব সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষ শরীয়াতের বিধান মেনে চলতে বাধ্য। কোন মানুষ ইলহামের মাধ্যমে শরীয়াতের কোন বিধানের বিরুদ্ধাচরণের হুকুম লাভ করেছে এবং অদৃশ্য জ্ঞানের মাধ্যমে এ বিরুদ্ধচারণকে কল্যাণকর বলা হয়েছে বলেই শরীয়াতের বিধানের মধ্য থেকে কোন বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা তার জন্য বৈধ হয়ে গেছে, শরীয়াতের মূলনীতির মধ্যে কোথাও এ ধরনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি।
এটি এমন একটি কথা যার ওপর কেবলমাত্র শরীয়াতের আলেমগণই যে একমত তাই নয় বরং প্রধান সুফীগণও একযোগে একথা বলেন। আল্লামা আলুসী বিস্তারিতভাবে আবদুল ওয়াহ্হাব শি’রানী, মুহীউদ্দিন ইবনে আরাবী, মুজাদ্দিদে আলফিসানি, শায়খ আবদুল কাদের জীলানী, জুনায়েদ বাগদাদী, সাররী সাক্তী, আবুল হাসান আন্নুরী, আবু সাঈদ আলখাররায্, আবুল আব্বাস আহমদ আদ্দাইনাওয়ারী ও ইমাম গাযযালীর ন্যায় খ্যাতনামা বুযর্গগণের উক্তি উদ্ধৃত করে একথা প্রমাণ করেছেন যে, তাসাউফপন্থীদের মতেও কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিধান বিরোধী ইলহামকে কার্যকর করা যার প্রতি ইলহাম হয় তার জন্যও বৈধ নয়। এখন কি আমরা মেনে নেবো যে, এ সাধারণ নিয়ম থেকে মাত্র একজন মানুষকে পৃথক করা হয়েছে এবং তিনি হচ্ছেন হযরত খিযির? অথবা আমরা মনে করবো, খিযির কোন মানুষ ছিলেন না বরং তিনি আল্লাহর এমনসব বান্দার দলভুক্ত ছিলেন যারা আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীনে (আল্লাহর শরীয়াতের আওতাধীনে নয়) কাজ করেন?
প্রথম অবস্থাটি আমরা মেনে নিতাম যদি কুরআন স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতো যে, হযরত মূসাকে যে ‘বান্দা’র কাছে অনুশীলন লাভের জন্য পাঠানো হয়েছিল তিনি মানুষ ছিলেন। কিন্তু কুরআন তার মানুষ হবার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখেনি বরং কেবলমাত্র عَبۡدًا مِّنۡ عِبَادِنَاۤ (আমার বান্দাদের একজন) বলে ছেড়ে দিয়েছে। আর একথা সুস্পষ্ট, এ বাক্যাংশ থেকে ঐ বান্দার মানব সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়া অপরিহার্য হয় না। কুরআন মজীদে বিভিন্ন জায়গায় ফেরেশতাদের জন্যও এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যেমন দেখুন সূরা আম্বিয়া ২৬ আয়াত এবং সূরা যুখরুফ ১৯ আয়াত। তাছাড়া কোন সহী হাদীসেও নবী ﷺ থেকে এমন কোন বক্তব্য উদ্ধৃত হয়নি যাতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় হযরত খিযিরকে মানব সম্প্রদায়ের একজন সদস্য গণ্য করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদীসটি সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস থেকে, তিনি উবাই ইবনে কা’ব থেকে এবং তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণের নিকট পৌঁছেছে। সেখানে হযরত খিযিরের জন্য শুধুমাত্র (আরবী———-) (রুজুল) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি যদিও মানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত পুরুষদের জন্য ব্যবহার করা হয় তবু শুধুমাত্র মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয় না। কাজেই কুরআনে এ শব্দটি জিনদের জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন সূরা জিনে বলা হয়েছেঃ (আরবী—————————–) তাছাড়া এ কথা সুস্পষ্ট যে, জিন বা ফেরেশতা অথবা অন্য কোন অদৃশ্য অস্তিত্ব যখন মানুষের সামনে আসবে তখন মানুষের আকৃতি ধরেই আসবে এবং এ অবস্থায় তাকে মানুষই বলা হবে। হযরত মারয়ামের সামনে যখন ফেরেশতা এসেছিল তখন কুরআন এ ঘটনাটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেঃ (আরবী———————————) , কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তি যে “সেখানে তিনি একজন পুরুষকে পেলেন” হযরত খিযিরের মানুষ হবার ব্যাপারটি সুস্পষ্ট করছে না। এরপর এ জটিলতা দূর করার জন্য আমাদের কাছে হযরত খিযিরকে মানুষ নয় ফেরেশতা হিসেবে মেনে নেয়া ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন পথই থাকে না। অথবা তাঁকে আল্লাহর এমন কোন সৃষ্টি মনে করতে হবে যিনি শরীয়াতের বিধানের আওতাধীন নন বরং আল্লাহর ইচ্ছা পুরনের কাজে নিযুক্ত একজন কর্মী। প্রথম যুগের আলেমগণের কেউ কেউও এমত প্রকাশ করেছেন এবং ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীর গ্রন্থে মাওয়ারদীর বরাত দিয়ে তা উদ্ধৃত করেছেন।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*মুসা(আ.) ও খিজির(আ.)-এর ঘটনা : এরপর কোরআন আমাদেরকে নিয়ে যায় ইতিহাসের অন্য একটি অধ্যায়ে। এরশাদ হচ্ছে, ‘স্মরণ করে দেখাে ওই সময়ের কথা যখন মূসা তার যুবক সংগীকে বললাে, দুটি সাগরের সংগম স্থল বা মােহনায় না পৌছানাে পর্যন্ত আমি চলতেই থাকব এমন কি মােহনা না পাওয়া পর্যন্ত জীবনভর চলতে হলেও চলতে থাকব… এই হচ্ছে ব্যাখ্যা সেই সব রহস্যপূর্ণ ঘটনাবলীর যার ব্যাখ্যা দান করার জন্যে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করতে পারনি'(আয়াত ৬০-৬২) এ অধ্যায়ে ইনশাআল্লাহ এই ঘটনার বিস্তারিত আলােচনা করবাে। এটিই হচ্ছে মূসা (আ.)-এর জীবনীর মধ্যে একটি বিশেষ ঘটনা, যার বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায় এই সূরার মধ্যে এবং এ প্রসংগের বর্ণনা যেমন বিস্তারিতভাবে এ সূরার মধ্যে এসেছে এতাে বিস্তারিতভাবে আর কোথাও আসেনি আর আল কোরআনও সুনির্দিষ্টভাবে সাগর সংগম-এর স্থলটিকে চিহ্নিত করেনি, শুধু বলেছে, ‘দুটি সমুদ্রের সংগম স্থল’ এবং মূসা(আ.)-এর জীবনের কোন অধ্যায়ে এই ঘটনাটি ঘটেছিলাে তারও কোনাে নিশ্চিত খবর আল কোরআনে দেয়া নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, মিশর থেকে বনী ইসরাঈলদেরকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কি মিশরে থাকাকালে খিজির(আ.)-এর সাক্ষাতের এ ঘটনাটা ঘটেছিলাে, না পরে? পরে ঘটে থাকলেই বা কখন ঘটেছিলাে? বনী ইসরাঈলদেরকে নিয়ে পবিত্র (ফিলিস্তিন) ভূমির দিকে যাওয়ার সময়ে কি এ ঘটনা ঘটেছিলাে? না ওখানে পৌছে যাওয়ার পর? তার জাতিকে নিয়ে যখন তিনি লজ্জাবনতভাবে ফিলিস্তিনের দ্বারপ্রান্তে অপেক্ষমান ছিলেন তখন কি এ ঘটনাটি ঘটেছিলাে? এ সময়ে কি সেখানে বাস করতাে এক অহংকারী ও শক্তিমান জাতি অথবা সেখানে যখন এক দল থেকে অপর দলকে বিচ্ছিন্ন করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছিলাে তখন কি এ ঘটনা ঘটেছিলাে? এসব বহু প্রশ্ন জাগে । এমনি করে যে নেক ব্যক্তিটির সাথে মূসা(আ.)-এর সাক্ষাত ঘটেছিলাে তার সম্পর্কে আল কোরআন তেমন কোনাে বিবরণ দেয়া হয়নি। তিনি কে ছিলেন? তার নাম কী ছিলাে? তিনি কি নবী ছিলেন, না রসূল? না আলেম, অলী কী ছিলেন। এসব কোনাে কিছুর জবাব আল কোরআনে পাওয়া যায় না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আরাে কয়েকজন সাহাবা থেকে এ বিষয়ে সামান্য কিছু রেওয়ায়াত পাওয়া যায়। তবে আমরা শুধু আল কোরআনের মধ্যে বর্ণিত তথ্যগুলো নিয়ে আলােচনা করবাে, যাতে করে আমরা ‘আল কোরআনের ছায়াতলে’ আছি বলে মনে করতে পারি, আর আমরা বিশ্বাস করি, আল কোরআনে বর্ণিত তথ্যের মধ্যে থাকাই সব থেকে ভালাে, এর থেকে বেশী জানার বাস্তব কোনাে প্রয়ােজন নেই। কোন স্থানে এবং কোন সময়ে তিনি এসেছিলেন, তার নাম কি ছিলাে ইত্যাদি না জানলেও কোনাে অসুবিধা নেই এবং এতে তথ্য না জানানাের পেছনেও অবশ্যই কোনাে যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। সুতরাং, আমরা কোরআনের তথ্যের মধ্যেই থাকাটা পছন্দ করি।(ইমাম বােখারী, কোরআনে বর্ণিত এই কিসসার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, সাঈদ ইবনে জুবায়ের এর ভাষ্যে যায়, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাসকে বললাম, নওফ আল বুকালি মনে করে যে, মুসা(আ.) খিজির আলাইহিস সালামের সাথী ছিলেন, তিনি এবং বনী ইসরাঈলের মূসা এক ব্যক্তি নন। তখন ইবনে আব্বাস বললেন, আল্লাহর ঐ দুশমন মিথ্যা কথা বলেছে। আমাদেরকে উবাই এবনে কা’ব(রা.) জানিয়েছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ(স.)-কে বলতে শুনেছেন, একদিন মুসা(আ.) দাঁড়িয়ে বনী ইসরাঈলদেরকে সম্বােধন করে এক ভাষণ দিলেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলাে, কোন ব্যক্তি বেশী জ্ঞানী। তিনি বললেন, আমি। এতে আল্লাহ তায়ালা তাকে তিরস্কার করলেন, কারণ তার উচিত ছিলাে ‘আল্লাহ তায়ালাই বেশী জ্ঞানী’ একথাটা বলা) এরশাদ হচ্ছে, ‘স্মরণ করে দেখো ওই সময়ের কথা যখন মূসা(আ.) তাঁর যুবক সংগীকে বললাে, আমি চলতেই থাকব সমুদ্রের মােহনাটা না পাওয়া পর্যন্ত। অথবা নাই যদি সেই সংগমস্থল মেলে তাহলে যুগ যুগ ধরে চলতেই থাকব’ এখানেই উল্লিখিত এ দুটি কোন কোন সাগর তা আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন, তবে বেশীর ভাগ লােকের ধারণা এ দুটি হচ্ছে লােহিত সাগর ও ভূমধ্য সাগর এবং এ দুটির সংগম স্থল হচ্ছে সেই স্থানটি যেখনে এ দুটি সাগর মিলিত হয়েছে, অর্থাৎ কৃষ্ণসাগরের হ্রদ সমূহ ও কুম্ভীর হ্রদের মিলন স্থলে অথবা লোহিত সাগরের মধ্যে অবস্থিত সাগরের বিচ্ছিন্ন অংশ হ্রদ ও সুয়েজ খালের সংযােগ স্থল। মিশর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বনী ইসরাঈল কওমের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়। যাই হােক আল কোরআন এ বিষয়টিকে সংক্ষেপে আলােচনা করে ছেড়ে দিয়েছে বিধায় আমরাও এ বিষয়ে বেশী মাথা ঘামাবাে না এবং ওই ঘটনার প্রতি ইংগিত করেই ক্ষান্ত হবাে।(বর্ণিত হয়েছে যে কাতাদা এবং আরাে কয়েকজন বলেছেন, এ দুটি সাগর হচ্ছে, পারস্য সাগর এর পূর্বাংশের সাথে ভুমধ্য সাগরের পশ্চিমাংশের সংযােগ স্থল। আর মােহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী বলেন, দুটি সাগরের মােহনা হচ্ছে তালজাহর কাছে ইউরােপের দুর অভ্যন্তরে অবস্থিত, এসব মতভেদের কারণে আমরা উভয় বর্ণনা থেকেই দূরে থাকাটাই পছন্দ করেছি) এ কাহিনীর বর্ণনা প্রসংগে পরবর্তীতে আমাদের কাছে যে কথাটা গ্ৰহণযোগ্য মনে হয়েছে তা হচ্ছে মূসা(আ.) যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তার পেছনে একটা উদ্দেশ্য ছিলাে, এজন্যে এ সফর যতাে কষ্টকর এবং যতাে দীর্ঘস্থায়ীই হােক না কেন ওই উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত ওই সফর সমাপ্ত করার তার কোনাে অভিপ্রায় ছিলাে না; এজন্যে তিনি তার সফর দৃঢ়তার সাথে চালিয়ে যাবেন বলে তার স্থির সিদ্ধান্তের কথা ওই যুবকের সামনে ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর এই দৃঢ় সংকল্পের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে আল কোরআন বলছে ‘অথবা আমি চলতে থাকবাে যুগযুগ ধরে।’ কেউ কেউ ‘হুকবুন’ শব্দটির অর্থ করেছেন বছরের পর বছর ধরে কেউ বলেছেন এ শব্দটির অর্থ আশি বছর। যাই হােক, একথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত তার প্রচেষ্টা ও সফর অবিরাম চালিয়ে যাওয়ার অংগীকার ব্যক্ত হয়েছে-এই শব্দটি দ্বারা এখানে বিশেষ কোনাে সময়সীমা বেঁধে দেয়াই বড় কথা নয়। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারপর যখন সে পৌছুলাে ওই দুই উপসাগরের সংগম স্থলে, তখন তারা উভয়েই তাদের মাছটির কথা ভুলে গেলাে, অতপর মাছটি সাগরের মধ্যে একটি সুড়ং পথ রচনা করে চলে গেলাে… আর মাছটি বিস্ময়করভাবে সাগরের মধ্যে একটি পথ তৈরী করে চলে গেলাে।'(৬১-৬৩) আর একইভাবে আমাদের কাছে একথাটিই বেশী গ্রহণযােগ্য বলে মনে হয়েছে যে মাছটি ভাজা অবস্থায় ছিলাে; এমতাবস্থায় জীবিত হয়ে সাগরের মধ্যে সুড়ং পথ রচনা করে চলে যাওয়া এ উভয় কাজই ছিলাে মূসা(আ.)-কে দেখানাের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত তার ক্ষমতার বিশেষ নিদর্শন। এ দুটি নিদর্শন দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বিশেষ ক্ষমতার প্রকাশ ঘটালেন এবং মূসা(আ.)-এর সংগী ওই খাদেম যুবকটিও সাগরের মধ্যে মাছটির জীবিত হয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য চরমভাবে বিস্মিত হলো। যদি এমন হতাে যে মাছটি হঠাৎ করে পানির মধ্যে পড়ে গিয়ে গায়েব হয়ে যেতাে তাহলে তেমন বিস্ময়ের কিছু থাকতাে না, বরং আরাে বড় সত্য হচ্ছে যে মূসা(আ.)-এর এ যাত্রাটি সব কিছুই ছিলাে নানা প্রকার বিস্ময়ে ভরা, যেগুলাের মধ্যে মাছ জীবিত হয়ে সাগরের বুকে সুড়ং পথ তৈরী করে উধাও হয়ে যাওয়াটা অন্যতম বিষয়। যুবকের কথাটি শুনে মূসা(আ.) বুঝলেন, যে স্থানটিতে উপরে বর্ণিত নেক বান্দাটির সাথে তার সাক্ষাত হবে বলে তাকে জানানাে হয়েছিলাে সে স্থানটি পেছনে ফেলে আসা হয়েছে এবং সে স্থানটি নিশ্চয়ই ওই ছেড়ে আসা শিলা খন্ডের কাছেই হবে, কাজেই ওখান থেকে আবার তারা পেছন দিকে কিছু দূরে এসে ওই বাঞ্ছিত মানুষটিকে পেয়ে গেলেন। এই তথ্যটিই আল-কোরআন পেশ করতে গিয়ে বলছে, ‘সে বললাে হাঁ, হাঁ, ওই স্থানটিকেই তাে আমরা তালাশ করছিলাম, তারপর তারা উভয়ে পেছনের দিকে ফিরে চলতে শুরু করলাে। অতপর তারা আমার অনুগত বান্দাদের মধ্য থেকে এমন এক বিশেষ বান্দাকে পেয়ে গেলাে, যাকে আমি (আমার নিজের পক্ষ থেকে খাস রহমত দান করেছিলাম এবং দিয়েছিলাম তাকে আমার নিজের পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞান।’ এ ঘটনায় এ কথা প্রকাশ পাচ্ছে যে এই সাক্ষাতকারের ঘটনাটির কথা শুধুমাত্র মূসা(আ.) ও তার রবের মধ্যেই এক বিশেষ গুপ্ত রহস্য আকারে সীমাবদ্ধ ছিলাে, ওই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত ওই যুবকটি এ বিষয়ে কিছুই জানতাে না। আর তার সাথে সাক্ষাত হয়ে যাওয়ার পর যুবকটিকে বিদায় দিয়ে মূসা(আ.) একাকী ওই ব্যক্তির সাথে থেকে গেলেন, যার পূর্ণাংগ বিবরণী নীচে প্রদত্ত হলো। ‘তাকে মুসা বললাে, আপনি যে জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন, তার থেকে আমাকে কিছু শেখাবেন কি এবং এজন্যে কি আমি আপনার অনুসরণ করব?’ দেখুন অনুমতি চাওয়ার এই যে বিশেষ আদবের ভাষা ব্যবহার এবং এমন বিনম্র অনুরােধ-এটা অবশ্যই একজন নবীর যােগ্য শিষ্টাচার । তিনি নম্রতার সাথে অনুরােধ করছেন ঠিকই, কিন্তু একান্ত জরুরী বলে অনুনয় বিনয় করছেন না। তিনি ওই নেক ও পারদর্শী আলেমের কাছ থেকে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্যে শুধু আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু এখানে লক্ষ্যযােগ্য, উল্লেখিত এক ব্যক্তির জ্ঞান, আসলে তার নিজস্ব কোনাে জ্ঞান নয়, এটা সাধারণ মানবীয় জ্ঞান হলে তার পরিণাম সম্পর্কে এভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হতাে না। এ জ্ঞান অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা জ্ঞান। একমাত্র তিনি যাকে এ জ্ঞান দিতে চান সেই এ জ্ঞান পেতে পারে, একারণেই নবী ও রসূল হওয়া সত্তেও অস্বাভাবিক ও অসাধারণ যেসব আচরণ মূসা(আ.)-এর সামনে সংঘটিত হলাে তার রহস্য আল্লাহ তায়ালা তাকে জানাননি বলেই তিনি ধৈৰ্য্য সহকারে শেষ অবধি ওই অসাধারণ অবস্থাগুলাে সহ্য করতে পারলেন না, বিশেষ করে, বাহ্যিকভাবে একাজগুলাে ছিলাে চরম যুক্তি বিরােধী এবং সাধারণ নিয়ম কানুনের সম্পূর্ণ খেলাফ। অবশ্যই, এসব রহস্য বুঝার জন্যে গায়েবী জ্ঞান প্রয়ােজন, তা না হলে কোনাে মানুষের পক্ষে ওই অদ্ভুত ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করার পর অধিকক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকা সম্ভব নয়। এজন্যেই বিশেষ জ্ঞানে ভূষিত আল্লাহর ওই নেক বান্দা, আশংকা করছিলেন যে মূসা তার সংগে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। কারণ যে সব সৃষ্টি ছাড়া কাজ ও ব্যবহার সামনে আসবে তা হবে মানুষের যুক্তি বুদ্ধির বাইরে। তাই যে কথাটা তিনি বললেন আল কোরআন তা উদ্ধৃত করছে, ‘সে বললাে, কিছুতেই তুমি আমার সাথে সবর করে থাকতে পারবে না, আর পারবেই বা কেমন করে, বিষয়টি তো তােমার জ্ঞানের সীমার বাইরে।’ কিন্তু মূসা(আ.) তাে মনকে পুরােপুরিভাবেই বেঁধে এসেছিলেন তাঁর সাথে থাকার জন্যে, এজন্যে দেখুন তিনি সবর করবেন আনুগত্য করবেন বলে দৃঢ়সংকল্প হচ্ছেন এবং আল্লাহর কাছে সবর করার যােগ্যতা লাভ করার জন্যে সাহায্য প্রার্থনা করছেন তার দৃঢ় ইচ্ছাকে ব্যক্ত করতে গিয়ে বলছেন, ‘সে বলল ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আপনি আমাকে সবরকারী (ধৈর্যশীল) হিসাবে দেখতে পাবেন, আর (কথা দিচ্ছি), কোনাে ব্যাপারে আপনার বিরােধিতা করবাে না।’ অতপর, দেখুন, ওই ব্যক্তি জোর দিয়ে বলছেন এবং মূসা(আ.)-এর সবর করাটা কেন কঠিন তা খুলে বলছেন, তারপর সফর শুরু করার পূর্বেই, সংগে থাকলে কি কি শর্ত মেনে চলতে হবে, তা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছেন, জানাচ্ছেন- যে কোনাে ঘটনা সামনে আসুক না কেন কোনাে কথা জিজ্ঞাসা করা যাবে না এবং কোনাে ব্যাপারেই, তিনি নিজে না বলা পর্যন্ত কোনাে কিছু জানতে চাওয়া যাবে না, এ কথাটার উদ্ধৃতি দিয়ে আল কোরআন বলছে, ‘সে বললাে, যদি তুমি আমার সাথে থাকতেই চাও তাহলে, আমি না বলা পর্যন্ত খবরদার কিছু জিজ্ঞাসা করবে না।’ এ কথায় মূসা (আ.) রাযি হয়ে গেলেন এবং এরপর যাত্রা হলাে শুরু, কিন্তু তারপরই আমরা মুখোমুখি হচ্ছি যাত্রাকালের প্রথম দৃশ্যটির, দু’জনে এগিয়ে চলল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জন এক নৌকায় আরােহণ করলাে, আর উঠেই নৌকাটিকে ছিদ্র করে দিলাে’ যে নৌকাটিতে তারা চড়েছিলেন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আরাে কিছু যাত্রীও রয়েছে। নৌকাটি যখন গভীর সমুদ্র দিয়ে অতিক্রম করছে ঠিক সেই সময়েই আমরা দেখতে পাচ্ছি আল্লাহর ওই নেক বান্দাটি নিজ আসন থেকে উঠে আসছে এবং গুঁতাে মেরে নৌকাটি ছিদ্র করে দিচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ওই ভালাে মানুষটি এমন এক কাজ করছে যাতে নৌকাটি বিপদগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে এবং গােটা নৌকার সকল যাত্রীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে, প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে এই বুঝি নৌকাটি ডুবে যাবে, আর এ অবস্থা স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কেন লোকটি এমন জঘন্য এ কাজ করতে উদ্যত হলাে? এমনই এক নাজুক মুহূর্তে মূসা(আ.) ভুলে গেলেন সেই কথাটি যা তিনি সফরের শুরুতে বলেছিলেন। ভুলে গেলেন যা বলেছিলেন তাঁর সংগী ওই নেক ব্যক্তিটি। আসলে আমরা দেখতে পাচ্ছি এমন এক অদ্ভুত ব্যাপার সামনে ঘটতে দেখে তার যুক্তি বুদ্ধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। স্বভাবতই মানুষ সকল কিছুর অর্থ বুঝতে চায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ওই ভালাে মানুষটির এমন অদ্ভূত আচরণের কোনাে যৌক্তিকতা তার বুঝে আসে না! বাস্তবে তিনি যা ঘটতে দেখছেন তার কোনাে বুদ্ধিগ্রাহ্য যুক্তিই তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। তার সামনে এক দিকে রয়েছে এ বিষয়টির কাল্পনিক তাৎপর্য আর অন্যদিকে রয়েছে বাস্তব কাজ ও তার ফলাফলের অভিজ্ঞতা-এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে তার মানবীয় বুদ্ধি খেই হারিয়ে ফেলছে-এইটিই সেই কঠিন অবস্থা যা সামনে আসবে বলে তাকে আগে ভাগেই বলে দেয়া হয়েছিলাে এবং বলা হয়েছিলাে, যে বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে তার কিছু জানা নে, সেই বিষয়ে তিনি কি করে সবর করবেন? তিনি সবর করবেন বলে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন সত্য, ইচ্ছাতে দৃঢ় থাকবেন বলে আল্লাহর সাহায্যও কামনা করেছিলেন, ওয়াদা করেছিলেন কোনাে প্রশ্ন করবেন না বলে এবং তার কাছে দাবীকৃত সব শর্তই তিনি মেনে নিয়েছিলেন, এসবই সত্য কিন্তু তার যুক্তি বুদ্ধি ও বাস্তব কাজের এতাে দিনকার অভিজ্ঞতা সব কিছুর সাথে যখন ওই প্রবীণ ও সৎ লােকের আচরণের সংঘর্ষ বেধে গেলাে তখন তিনি ভীষণভাবে ওই অন্যায় (?) কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলেন ।(দেখুন, ‘আত্তাসবীরুল ফান্নিউ ফিল কুরআন’ কিতাবটির মধ্যে ‘আল কিসসাতু ফিল কোরআন’ অধ্যায়ে)। হাঁ, অবশ্যই এটা সত্য, মূসা(আ.)-এর প্রকৃতিই ছিলাে অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রতিবাদমুখর, যে কোনাে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানােই ছিলাে তার স্বভাব-এমনই এক গরম মেজাজের মানুষের পক্ষে এহেন যুক্তিহীন (?) কাজ বরদাশত করা সম্ভব ছিলাে না, তাই তিনি এই সৃষ্টি ছাড়া কাজ সামনে ঘটতে দেখে তার যাবতীয় সংকল্প, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা শর্তমালা ইত্যাদি সব কথাই ভুলে গিয়ে চীৎকার করে উঠছেন, তার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কাঙ্খিত যৌক্তিকতার দাবীর কারণে তিনি প্রচন্ড আবেগে ফেটে পড়ছেন; তিনি বলে উঠলেন, ‘আপনি কি এই যাত্রীদেরকে ডুবিয়ে মারার জন্যে নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন, অবশ্যই আপনি একটি মারাত্মক অন্যায় কাজ করেছেন।’ কিন্তু দেখুন, কী চমৎকার ধৈর্যের সাথে আল্লাহর ওই নেককার বান্দা জবাব দিচ্ছেন। ডগমগে আবেগে ভরপুর ওই যুবক নবীর কথার জবাবে প্রবীণ ওই নেক লোকটি প্রশান্ত বদনে ও ধীরস্থিরভাবে যাত্রার সময় করা ওয়াদা স্মরণ করাতে গিয়ে বলছেন, দেখুন আল্লাহর বাণী, ‘সে বলছে, বলেছিলাম না, কিছুতেই তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না?’ দেখুন, একথা শােনার সাথে সাথে মুসা(আ.)-এর চেতনা ফিরে আসছে, তার ওয়াদার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এবং তিনি তার ওয়াদার কথা ভুলে যাওয়ার কারণে ওযর খাহী করে ও ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে অনুনয় বিনয় করে বলছেন যেন তার মিনতি কবুল করা হয় এবং তার তারুণ্যের দিকে খেয়াল করে তাকে অপদস্ত না করা হয় ও তাকে ফিরে যেতে বাধ্য না করা হয়। তাই তিনি, বললেন, ‘যে বিষয়টি আমি ভুলে গিয়েছিলাম, দয়া করে আমাকে সে বিষয়ে ধরবেন মেহেরবানী করে, আমার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করবেন না।’ দেখুন, মহান ওই প্রবীণ ভাল মানুষটি সস্নেহে তার ওজরটি কবুল করছেন এবং আমরা দ্বিতীয় দৃশ্যের দিকে ফিরে যাচ্ছি, দেখছি। দুজন তারা পুনরায় যাত্রা শুরু করলাে। অনতিকাল পরেই তারা পথে পেলাে এক বালককে আর অমনি ওই লােকটি আকস্মিক ভাবে আঘাত করে তাকে হত্যা করলাে। প্রথম বারে ঘটলাে জাহাজটির ছিদ্র করার ঘটনা। যার কারণে সমুদ্র যাত্রীদের সলিল সমাধির সমূহ আশংকা দেখা দিয়েছিলাে। এবারে এই দ্বিতীয় ঘটনাটিতে ঘটলো ইচ্ছাকৃতভাবে এক বালককে হত্যা করার ঘটনা এটা তাে কোনাে আকস্মিক ঘটনা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছিলাে না, এটা ছিলাে সম্পূর্ণ সজ্ঞানে বিনা দোষে ও বিনা উস্কানিতে এক বালক হত্যা। অবশ্যই এটা ছিলাে এক মহা ও জঘন্য অপরাধ, মূসা(আ.)-এর পক্ষে এটা সহ্য করা কিছুতেই সম্ভব ছিলাে না, তা তিনি যতােই প্রতিজ্ঞা করে থাকেন না কেন তার ধারণায় বিনা বাধায় বিনা প্রতিবাদে এ মহা অন্যায় মেনে নেয়াও হবে এক সাংঘাতিক অপরাধ তাই তিনি বলে উঠলেন, ‘আপনি কি এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে সে কাউকে হত্যা না করা সত্তেও তাকে হত্যা করলেন? না, আপনি তা বড়ই মারাত্মক কাজ করে বসলেন।’ নিজের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গিয়ে ওই বুযর্গ ব্যক্তির কাজের প্রতিবাদ ভুলক্রমে করলেন বা বে-খেয়ালিতে, আপত্তি জানালেন তাও নয়। এমন যুক্তিহীন কাজের প্রতিবাদ করাকে কর্তব্য মনে করেই তিনি সােচ্চার হয়ে উঠলেন। ছেলেটি তো তার নযরে সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাকে হত্যা করার কোনােই কারণ থাকতে পারে না, বরং সেতাে এমন বয়স্কও হয়নি যার কারণে তার কোনাে আচরণের শাস্তি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু দেখুন, ওই নেক ব্যক্তি তাকে আবার ও তার প্রতি প্রদত্ত শর্ত ও তার প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করাচ্ছেন, স্মরণ করাচ্ছেন তার সেই কথাকে যা তিনি প্রথমবারে বলেছিলেন, তার পরবর্তী অভিজ্ঞতা পূর্ব অভিজ্ঞতার সত্যায়িত করছে, বলা হচ্ছে, ‘সে বললাে, তােমাকে কি বলিনি, যে তুমি আমার সংগে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না’ এবারে তিনি নির্দিষ্ট করে বলে দিচ্ছেন যে তিনি তাকে পরিষ্কার করেই বলেছিলেন, তোমাকে কি আমি বলিনি অর্থাৎ সুনির্দিষ্টভাবেই তাই তােমাকে আমি বলেছিলাম যে তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না, তা সত্তেও তুমি সকল শর্ত কবুল করেই তাে আমার সাথে থাকার জন্যে আবেদন নিবেদন করেছিলে। এবারে দেখা যাচ্ছে মূসা(আ.) তার পূর্বের সকল প্রতিজ্ঞা এবং শর্ত কবুল করার কথা মনে করে চরমভাবে লজ্জিত হচ্ছেন এবং বুঝতে পারছেন যে তিনি দু দুবার ওয়াদা খেলাফ করে বসেছেন এবং অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলেন যে সব শর্ত মেনে নিয়ে তিনি চুক্তি করেছিলেন, তা সবই তিনি ভংগ করেছেন, কাজেই তার বলার মতাে আর কোনাে কথাই নেই এজন্যে শেষবারের মতাে আর একটি সুযােগ দেয়ার জন্যে আবেদন করছেন। সে বললাে, ঠিক আছে, এরপর পুনরায় যদি কোনাে প্রশ্ন করি, তাহলে আর কিছুতেই আমাকে সাথে রাখবেন না, অবশ্যই আমার সকল ওযর আপত্তির সুযােগ শেষ হয়ে আসছে। এরপর ঘটনা প্রবাহ এগিয়ে চলেছে এবং তৃতীয় বারের মতাে আমরা আর একটি ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি, তারপর তারা দুজন আবার এগিয়ে চললাে, যেতে যেতে তারা পৌছে গেলে একটি নিভৃত পল্পীতে। সেখানে পৌছে তারা গ্রামবাসীর কাছে কিছু খাবার চাইলাে কিন্তু তারা কোনাে খাবার দিতে বা কোনাে মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলাে। অতপর তারা পড় পড় অবস্থায় একটি দেয়াল পেয়ে সেটাকে (সারারাত ধরে) মেরামত করে মযবুতভাবে দাঁড় করিয়ে দিলাে। দেখুন এই দুই ব্যক্তির দিকে, ভীষণ ভুখা তারা, আর তারা উপনীত এমন এক গাঁয়ে যার অধীবাসীরা বড়ই কৃপন, কোন অভুক্তকে তারা খেতে দেয় না, কোন মেহমানকেও তারা আপ্যায়ন করে না। এরপর তারা দেখতে পাচ্ছেন একটি দেয়াল, যা ভেংগে পড়ে যাচ্ছিলাে প্রায়। এখানে এমন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যা জীবন্ত কারাে জন্যে ব্যবহার করা হয়, বলা হচ্ছে, পড়ে যেতে চাইছে।’ এমনই সময় ওই আজব মানুষটি তার সাথীকে বাদ দিয়ে, একাই দেওয়ালটি খাড়া করার কাজে লেগে যাচ্ছেন! এ সময় মূসা(আ.) এ কাজটাকে ভীষণভাবে বেখাপ্পা ভাবছেন। তার অন্তরের মধ্যে প্রচন্ডভাবে এ প্রশ্নটি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, কোন কারণে এই লােকটি এই পড় পড় দেওয়ালটিকে মেরামত করার জন্যে এমনভাবে আত্মনিয়ােগ করলাে অনাহার ক্লিষ্ট এই মানুষটি এমন এক গাঁয়ের মধ্যে অবস্থিত দেয়াল মেরামত করার কাজে লেগে যাচ্ছে যার অধিবাসীরা এই দুজন ভুখা মানুষকে এক ওয়াক্ত খানা খাওয়াতেও প্রস্তুত নয়, বরং তাদের মেহমানদারী করতে ওরা পরিষ্কার অস্বীকার করলাে? এ সময়ে এ লােকটা কি অন্ততপক্ষে তার কাজের মজুরীটাও চাইতে পারতাে না, যার দ্বারা কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা যেতাে? তাই প্রতিবাদী কণ্ঠ মুসা(আ.) অস্থির হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন না করে পারলেন না যে, এরশাদ হচ্ছে, সে বললাে, চাইলে তাে অবশ্যই আপনি আপনার কাজের মজুরী নিতে পারতেন। ব্যস, একথার পর এই দুই ব্যক্তির মধ্যে বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে গেলাে, কারণ এখন মূসা(আ.)-এর ওজর পেশ করার মতাে আর কোনাে উপায় থাকলাে না এবং তার এবং ওই লােকটির এক সাথে থাকা এখন অসম্ভব হয়ে গেলাে। তাই এরশাদ হচ্ছে, সে বলল, আমার ও তােমার মধ্যে এবারে বিচ্ছিন্নতা এসে গেলাে, কাজেই শীগ্রই আমি তােমাকে জানাব ওই বিষয়ের ব্যাখ্যা যার ওপর তুমি ধৈর্য ধরে থাকতে পারলে না।(এ পর্যন্ত এসে ১৫ পারা শেষ হয়ে গেলাে, কিন্তু আমরা কিসসাটির শেষ অবধি পৌছে এ প্রসংগের বর্ণনা শেষ করার মনস্থ করেছি) এ পর্যন্ত মূসা(আ.) ও আমরা আল কোরআনের বর্ণনা প্রত্যক্ষ করলাম, কিন্তু মূসা(আ.)-এর মতাে আমরাও বিস্ময়ে হতবাক যে এহেন অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক কার্যাবলী কেন সংঘটিত হলাে এবং আমরা ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আরাে বেশী অজ্ঞ যার দ্বারা এই অদ্ভুত ঘটনাগুলো ঘটানাে হলাে। আল কোরআন আমাদেরকে ওই ব্যক্তির নাম বলছে না, যা হয়তাে আমাদের কৌতুহল দমনে কিছুটা সহায়তা করতে পারতাে, বা তার নামের কিছু তাৎপর্যও বুঝতে পারতাম। আসলে এ সব ঘটনা সংঘটিত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মহাবিস্ময়কর রহস্যভান্ডার থেকে আমাদের যৎকিঞ্চিত অবহিত করতে চেয়েছেন, জানাতে চেয়েছেন এমন নতুন কিছু যা দৃশ্য জগতের বাইরে আমাদের (সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয় এবং আমাদের চিন্তা শক্তিরও উর্ধ্বে। কিন্তু তবুও, আমাদের দৃষ্টি ও চিন্তা শক্তির বাইরের এসব রহস্য আমাদের সামনে তুলে ধরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বহু বহু দূরের কিছু রহস্য আমাদেরকে জানাতে চেয়েছেন, দেখাতে চেয়েছেন এমন কিছু সূক্ষ্ম জিনিস, যা আমাদের সাধারণ মানুষের চোখ আয়ত্ত করতে পারে না। আর ওই নেক ব্যক্তির উল্লেখ না করার পেছনেও অবশ্যই রয়েছে অনুরূপ কোনাে হেকমত। কিসসাটির শুরু থেকে যা কিছু ঘটেছে তা আমাদের সামনে বিস্ময়ের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। একটু খেয়াল করে দেখুন, আল্লাহর ওয়াদাকৃত এই ব্যক্তির সাথে তিনি চাইছেন মূসা(আ.)-এর সাক্ষাত হােক, এজন্যে মূসা(আ.) নেমে পড়ছেন পথে, কিন্তু তার সংগী যুবকটি শিলাখন্ডের কাছে এসে তাদের মধ্যাহ্ন ভােজের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে এ ভুলটি করানাে হচ্ছে যেন তারা আবার ফিরে আসেন এবং ওই কাংখিত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত হয়ে যায়, কিন্তু তার অবস্থানক্ষেত্র এবং আগমন পথ সবই যেন থেকে যায় রহস্যের অন্তরালে ঢাকা। মূসা(আ.) যদি জিজ্ঞাসা না করতেন এবং যুবকটির ভুল যদি ধরা না পড়তাে তাহলে তাে তারা চলতেই থাকতেন এবং মূসা(আ.)-এর এ সফরের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যেতাে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে কোরআনের প্রতিটি পদক্ষেপই অজানা এক রহস্যে ভরা। একইভাবে বুঝা যাচ্ছে কোরআনে কারীমে ওই নেক ব্যক্তির নাম উল্লেখিত না হওয়াও অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। এরপর ওই গােপন রহস্যের দ্বার উদঘাটন করা হচ্ছে যার জন্যে মূসা(আ.)-এর মনটা উন্মুখ হয়েছিলাে। এরশাদ হচ্ছে, ‘ওই যে জাহাজের ব্যাপারটি—এটা কিছু কিছু গরীব লােকের সমিলিত প্রচেষ্টায় তৈরী এক নৌযান। ওরা সমুদ্রে কাজ করতাে (এর সাহায্যে মাছ ধরতে ও বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতাে) অতএব একে ত্রুটিপূর্ণ বানিয়ে দিতে চাইলাম, কারণ ওদের অপর পারে ছিলাে এক (যালেম) বাদশাহ যে প্রত্যেকটি জাহাজ জোর করে কেড়ে নিতো। অতপর, দেখুন, ওই নেক লােকটি জাহাজের মধ্যে যে খুঁতটি বানিয়ে দিলেন তাই ওই জাহাজটিকে যুলুমবাজ রাজার আগ্রাসী হাত থেকে রেহাই দিলাে, আর এই ছােট্ট ক্ষতিটি জাহাজটির মালিকদেরকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাচালাে এটা গায়েবের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জ্ঞান ভান্ডারে নিহিত ছিলাে, যা এই সংকীর্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ বুঝতে অক্ষম। এর শিক্ষা হচ্ছে একটু ক্ষতি হওয়াতে যদি বৃহত্তর বিপদ থেকে বাঁচা যায় তাহলে অবশ্য অবশ্যই অপেক্ষাকৃত ছােটো বিপদকে আলিংগন করতে হবে। আবার এরশাদ হচ্ছে, ওই যে বালকটি (কে হত্যা করা হলাে), সে বিষয়টির রহস্য হচ্ছে, ওই বালকটির পিতা মাতা ছিলাে নিষ্ঠাবান মােমেন। এমতাবস্থায়, আমরা ভয় করতে লাগলাম, ওই বালকটি তার পিতামাতাকে অহংকারী এবং কাফের বানিয়ে ফেলবে, তখন আমরা চাইলাম, ওই বাচ্চার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা ওর থেকে আরাে ভালাে এক বাচ্চা দিবেন যে হবে অধিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সে পবিত্র জীবন যাপন করবে এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’ আপাত দৃষ্টিতে এ ছেলেটির এমন কোনাে ত্রুটি ধরা পড়ছিলাে না, যার জন্যে তাকে হত্যা করা যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার এই নেক বান্দার কাছে গায়েবের যে খবর পৌছে দিয়েছিলেন তার মাধ্যমেই এ ব্যক্তি বুঝতে পেরেছিলেন যে ওই ছেলেটি অচিরেই তার পিতামাতাকে বিপথগামী করে ছাড়বে, অর্থাৎ তার মধ্যে অন্যায় কাজের যে প্রবণতা নিহিত ছিলাে তার কারণে সে নিজে বিপথগামী হতাে কুফুরী করতাে, বিদ্রোহী হতাে ও অপরকে বিপথগামী করতাে। তার পিতা মাতা, অপত্য স্নেহের কারণে তাকে সামাল দিতে ব্যর্থ হতো, অথচ ব্যক্তিগতভাবে তারা ছিলাে বড়ই নেককার । আল্লাহর এমনই নেক বান্দারা পুত্রের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেননি, যার কারণে তাঁরই নির্দেশে বালকটিকে হত্যা করা হয়েছিলাে। গায়েবের এ রহস্য তাে সেই বুঝতে পারে যাকে আল্লাহ তায়ালা বুঝবার তৌফিক দেন। নবীদেরকে তিনি অনেক কিছু অজানা তথ্য জানিয়েছেন একথা যদিও সত্য, কিন্তু এটাও সত্য যে যাকে যতােটা তিনি জানাতে চেয়েছেন সে ততােটাই জেনেছে। নবীদের সকলকে যেমন একইভাবে জানাননি, তেমনি নবী ছাড়া আর কাউকে তার রহস্য সম্পর্কে কিছুই জানাবেন না তাও ঠিক নয়। নবীদের বৈশিষ্ট্য যে তাদের কাছে জিবরাঈল(আ.)-এর মাধ্যমে ওহী আসে, কিন্তু যাকে তিনি চান, কোনাে মাধ্যম ছাড়াই তাকে তার রহস্য ভান্ডার থেকে, নিজ ক্ষমতা বলে অতীতে কিছু দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও দিতে পারেন, এটা তার নিজস্ব এখতিয়ার। কেউ নিজে নিজে এমন জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার দাবী করতে পারে না। অবশ্য এটাও সত্য যে এক বিশেষ কারণে মূসা(আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা কোন বিশেষ ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছিলেন। অন্য কোনাে নবীকে এভাবে নবী ছাড়া অন্য কোনাে ব্যক্তির কাছে জ্ঞান অর্জন করার জন্যে যেতে বলা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নযির দ্বিতীয়টি আর পাওয়া যায় না। যদি মানুষের বাহ্যিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে এ ব্যাপারটিকে বুঝার চেষ্টা করা হতাে তাহলে ওই বালকটিকে হত্যা করার কোনাে যুক্তিই পেশ করা যেতাে না, আর এ ঘটনাকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে এ ধরনের হত্যাকে পরবর্তীতে জায়েয বলা হয়নি এবং আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এমন হত্যাকান্ডকে কেউ কোনাে দিন মেনে নেয়নি, তবে আল্লাহ তায়ালা এর যৌক্তিকতা যাকে জানিয়েছেন একমাত্র তিনিই এটা বুঝেছেন, পরবর্তীকালের কোনাে নবীর শরীয়াতেও এমন কাজকে বৈধ বলা হয়নি। এটা একমাত্র আল্লাহর হুকুমে বিশেষ এক সময়ে এবং বিশেষ এক ঘটনার প্রেক্ষাপটের জন্যেই বিশেষিত ছিলাে। অপর ঘটনা সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, আর দেওয়াল মেরামতের ব্যাপারটা? হা ওটা ছিলাে শহরে বসবাসরত দু’জন ইয়াতীম বালকের। এ দেওয়ালের নীচে সংরক্ষিত ছিলাে তাদের কিছু সম্পদ, আর তাদের বাপ ছিলাে বড় ভাল মানুষ, অতপর তোমার রব চাইলেন যে তারা বয়োপ্রাপ্ত হােক, তাহলে তারা তাদের সম্পদ উদ্ধার করতে সক্ষম হবে, প্রকৃতপক্ষে এটা তােমার রবের পক্ষ থেকে বিশেষ এক রহমত। এটা আমার ইচ্ছায় আমি করিনি। হাঁ, এই হচ্ছে সেই ব্যাখ্যা যার ওপর ধৈর্য ধরা তােমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।’ এই হচ্ছে সেই দেয়াল যাকে খাড়া রাখার জন্যে ওই ব্যক্তিটি নিজেকে এতােখানি কষ্ট দিয়েছিলেন এবং ওই পল্লীবাসীদের কাছে কোনাে মজুরীও দাবী করেননি, যদিও ওঁরা দু’জনেই ছিলেন দারুণ ভুখা এবং এক্ষুধার কথা জানিয়ে খাবার চাওয়া সত্তেও ওই পল্লীবাসীরা তাদের দু’জনকে খাওয়াতে রাযি হয়নি। ওই প্রাচীরের নীচে গুপ্তধন তাে ছিলােই এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের দৃষ্টির আড়ালে দেয়ালের পেছনে দুর্বল দুই ইয়াতীম বালকের বেশ কিছু সম্পদও ছিলাে। যদি দেওয়ালটাকে মেরামত না করে ছেড়ে দেয়া হতাে তাহলে ওই সব সম্পদ প্রকাশ হয়ে পড়ত এবং এতিম বালকদ্বয় কিছুতেই এটা পেত না। অচিরেই এ সম্পদ চলে যেতাে অন্যদের হাতে যেহেতু এদের বাপ মা নেককার লােক ছিলেন এজন্যে এদের শৈশবকালে ও দুর্বলতার সময়ে এদেরকে সাহায্য করার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিয়েছিলেন, তাই তিনি চেয়েছেন যে তারা বড় হােক ও তাদের সম্পদ তারা নিজেরা দেখে শুনে খুঁজে বের করে নিক। এরপর ওই ব্যক্তি এ কাজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন যে এসব কাজে তাঁর কোনাে হাত নেই, যা কিছু করেছেন আল্লাহর হুকুমেই করেছেন। তিনি একথা পরিষ্কার করে জানাচ্ছেন যে দেয়ালটা মেরামত হয়ে যাওয়াটা এটা আল্লাহরই রহমত এটা আল্লাহরই কাজ, তাঁর নিজস্ব কোনাে কাজ নয়। এসময়ে এবং এর পূর্বে তিনি যা জেনেছেন এবং যা করেছেন এটা অবশ্যই অন্য কোনাে মানুষের জানার বিষয় নয় আল্লাহ তায়ালা তাকে জানিয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। আল্লাহ তায়ালাই তাকে এসব কাজে নিয়ােগ করেছিলেন এবং ওই কাজগুলাে সম্পাদন করার তৌফিক তিনিই তাকে দিয়েছিলেন যার জন্যে তার পক্ষে ওগুলাে করা সম্ভব হয়েছে। তাই এরশাদ হচ্ছে, (এগুলাে ছিলাে মূলত) তােমার মালিকের অনুগ্রহ (দ্বারা সম্পাদিত কতিপয় কাজ এর) কোনােটাই কিন্তু আমার নিজের থেকে করিনি। অতপর, ওই অস্বাভাবিক কাজের রহস্য এখন প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে যে এটা আল্লাহরই রহমতের এক নিদর্শন-এ নিদর্শন তিনি দেখান তাকে যাকে তিনি দেখাতে চান। এই মহা রহস্য দ্বার যখন উন্মােচিত হয়ে গেলাে তখন ওই ব্যক্তি তেমন করেই আত্মগােপন করে ফেললেন যেমন তিনি ইতিপূর্বে ছিলেন জনচক্ষুর আড়ালে। তিনি আবারও পৃথিবীবাসীর কাছে অজানা অচেনা হয়ে গেলেন যেমন ইতিপূর্বে ছিলেন। এখন এ ঘটনাটি এক বিরাট জ্ঞান ভান্ডারের দরজা খুলে দিচ্ছে, আর এসব রহস্য নিজে নিজে আত্মপ্রকাশ করে না, ততােটুকু করে যতােটুক আল্লাহ তায়ালা চান। তারপর আবার আল্লাহর জ্ঞান ও রহস্যের আড়ালে এসব গুপ্ত জ্ঞান লুকিয়ে যায়।। আর এভাবে এই সূরাটির মধ্যে মূসা(আ.) ও ওই নেক বান্দাটির ঘটনা এক বিশেষ উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে, যা আসহাবে কাহাফের ঘটনার সাথে বেশ মিল দেখা যায়। কারণ তারাও আজ অজানা রহস্যের অন্তরালে লুকায়িত রয়েছেন এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে তাদের খবর, যা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। এসব ঘটনা এক বিশেষে তাৎপর্যবাহী এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসীম জ্ঞান ভান্ডারের অংশ বিশেষ, এগুলাে মানব সাধারণের জানা শােনার পরিধির উর্ধের বিষয়। আল্লাহর জ্ঞান ভান্ডারের সামনে বহু বহু পর্দা রয়েছে, রয়েছে বহু বাধা, সেগুলাে অতিক্রম করে ওই জ্ঞান রাশি থেকে কেউ কিছু পেতে পারে না তার মেহেরবানী ছাড়া-আর যা তিনি মানুষকে দিয়েছেন তা ওই ভান্ডারের মধ্য থেকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ একটি কণা মাত্র।(এ পর্যন্ত এসে ১৫ পারার তাফসীর শেষ হলো)
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৬০-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (عليه السلام)-এর দু’ সমুদ্রের মিলনস্থলে খাজির (عليه السلام)-এর সাথে যে সাক্ষাত হয়েছিল এবং তাদের মাঝে যে ঘটনা ঘটেছিল সে ঘটনা আলোচনা করেছেন। এ ঘটনা অত্র সূরার এ আয়াতগুলোসহ সহীহ বুখারীর ৩০৪১ ও ৪৭২৫ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা:
উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: একদা মূসা (عليه السلام) জনসম্মুখে ভাষণ প্রদান করছিলেন। জনৈক ব্যক্তি বলল: আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ আছে বলে আপনি জানেন? মূসা (عليه السلام) বললেন: না। এতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তিরস্কার করলেন, কেন এ ব্যাপারের জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করেনি। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: হ্যাঁ, আমার বান্দা খাজির তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (عليه السلام) বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কোথায় পাব? আল্লাহ তা‘আলা বললেন: (مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ) দু’সাগরের মধ্যস্থলে। তখন মূসা (عليه السلام) বললেন: ‘দু’ সমুদ্রের মিলনস্থলে না পৌঁছিয়ে আমি থামব না অথবা আমি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকব।’ মূসা (عليه السلام) ও যুবক ইউশা বিন নূন এ দু’জন খাজির (عليه السلام)-এর কাছে জ্ঞানার্জনের জন্য সাগরের দিকে ভ্রমণ করলেন। فَتَي শব্দের অর্থ যুবক। শব্দটি কোন বিশেষ ব্যক্তির সাথে সম্বন্ধ করা হলে অর্থ হয় খাদেম। এখানে শব্দটিকে মূসা (عليه السلام)-এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। তাই অর্থ হবে মূসা (عليه السلام)-এর খাদেম। এ খাদেমের নাম ইউশা বিন নূন। ইউশা বিন নূন নাবী ছিলেন কি-না তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সঠিক কথা হচ্ছে তিনি নাবী ছিলেন না। (আযওয়াউল বায়ান) খাজির (عليه السلام)-কে সন্ধানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা একটি নিদর্শন দিলেন। তা হল সাথে একটি মাছ নেয়ার নির্দেশ দিলেন, যেখানে মাছ হারিয়ে যাবে সেখানেই তাঁকে পাওয়া যাবে। তারা উভয়ে থলের ভেতর মাছ নিয়ে রওনা দিলেন। পথিমধ্যে একটি প্রস্তুরখন্ডের ওপর মাথা রেখে তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। এখানে হঠাৎ মাছটি নড়াচড়া করতে লাগল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। আল্লাহ তা‘আলা সেপথে পানির স্রোত বন্ধ করে দিলেন। ফলে সেখানে পানির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। ইউশা মাছটিকে সমুদ্রে যেতে দেখেন কিন্তু মূসা (عليه السلام) কে বলতে ভুলে যান। মূসা (عليه السلام) ঘুম থেকে উঠে রওনা দিলেন। একদিন এক রাত অনেক রাস্তা অতিক্রম করার পর যখন খুব ক্ষুধা অনুভব করলেন তখন মূসা (عليه السلام) বললেন: ‘আমাদের সকালের খাবার আন, আমরা আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ তখন ইউশা বললেন: যেখানে আমরা পাথরের ওপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম আর আপনি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে মাছটি থলে থেকে বের হয়ে চলে গেছে। কিন্তু আমি আপনাকে বলতে ভুলে গেছি। আসলে শয়তানই আমাকে ভুলিয়েছে। মূসা (عليه السلام) বললেন: যেখানে মাছটি সুড়ঙ্গ করে চলে গেছে সেখানেই তো আমাদের গন্তব্য। তাই নিজের পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে প্রত্যাবর্তন করে আসলেন এবং দু’ সমুদ্রের মিলনস্থলে ফিরে গেলেন। قَقَصًا অর্থ পদাঙ্ক অনুসরণ করে পেছনে ফিরে আসা। তারা উভয়ে দু’ সমুদ্রের মিলনস্থলে এসে খাজির (عليه السلام) কে পায়। (عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَآ) দ্বারা উদ্দেশ্য খাজির (عليه السلام), খাজির অর্থ সবুজ-শ্যামল। তিনি একদা সাদা জমিনের ওপর বসলে জমিনের সে অংশটুকু সবুজ হয়ে যায়। এ কারণেই তাকে খাজির বলা হয়। (সহীহ বুখারী, সূরা কাহফের তাফসীর) আল্লাহ তা‘আলা খাজির (عليه السلام) কে رَحمةً তথা নবুওয়াত দান করেছেন। যখন তারা তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি মাথা ঢাকা অবস্থায় ছিলেন। মূসা (عليه السلام) সালাম দিলে তিনি মাথা তুলে তাকালেন এবং বললেন: আমি তোমার সালামে সন্তুষ্ট। তিনি বললেন: তুমি কে? মূসা (عليه السلام) বললেন: আমি মূসা। খাজির (عليه السلام) বললেন: বানী ইসলাঈলের মূসা? মূসা (عليه السلام) বললেন: হ্যাঁ। খাজির (عليه السلام) বললেন: কেন এসেছ? তিনি বললেন: আপনার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছি। খাজির (عليه السلام) বললেন: আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে যে তাওরাত প্রদান করেছেন তা কি যথেষ্ট নয়? এ ঘটনা প্রমাণ করে মানুষ যত বড় জ্ঞানী হোক সে আরো অধিক জ্ঞানের মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (قُلْ رَّبِّ زِدْنِيْ عِلْمًا) “বল: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।’’ (সূরা ত্বা-হা ২০:১১৪)
মূসা (عليه السلام) একজন সম্মানিত নাবী, শুধু নাবী নন, উলূল আযম বা শ্রেষ্ঠ রাসূলদের অন্যতম একজন। এতদসত্ত্বেও তিনি অধিক জ্ঞানার্জনের জন্য ভ্রমণ করেছেন। আর খাজির (عليه السلام) শুধু নিজের শরীয়তেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। যখন মূসা (عليه السلام) বললেন: আমি আপনার কাছে জ্ঞানার্জনের জন্য এসেছি। খাজির (عليه السلام) বললেন: (আমার কাছে থেকে জ্ঞানার্জন করতে) তুমি সক্ষম হবে না। মূসা (عليه السلام) বললেন: ইনশা-আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। খাজির (عليه السلام) বললেন: তুমি যদি তাই চাও, তাহলে তোমাকে কিছু না বলা পযর্ন্ত আমাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে না। কিন্তু এমন কিছু দেখতে পাবে যাতে তুমি ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবে না। মূসা (عليه السلام) বললেন: ইনশা-আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
তাঁরা সমুদ্র উপকূল দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। একদা তাদের পাশ দিয়ে নৌকা অতিক্রম করে যাচ্ছিল। খাজির (عليه السلام) ইশারায় নৌকা থামাতে বললে মাঝিরা নৌকা থামাল। কারণ তারা খাজির ও মূসা (عليه السلام) উভয়কে চিনত। ফলে বিনা ভাড়ায় নৌকার মালিক তাদের উভয়কে আরোহন করাল। (পথ অতিক্রমের পর) খাজির (عليه السلام) একটি কুড়াল নিয়ে নৌকা ছিদ্র করে দিলেন এমনকি নৌকাতে পানি উঠতে লাগল। মূসা (عليه السلام) বিস্মিত হলেন, ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বললেন: সুবহানাল্লাহ, তারা আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করল, বিনা ভাড়ায় নৌকায় আরোহন করাল, আর আপনি নৌকাটি নষ্ট করে দিলেন। আপনি এক গুরুতর অন্যায় কাজ করেছেন। (لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا إِمْرًا) আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন!’ (সূরা কাহফ ১৮:৭১) মূসা (عليه السلام) তাকে তিরস্কার করলেন। খাজির (عليه السلام) বললেন:
( أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا)
‘আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?’ (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭২)
মূসা (عليه السلام) বললেন:
(لَا تُؤَاخِذْنِيْ بِمَا نَسِيْتُ وَلَا تُرْهِقْنِيْ مِنْ أَمْرِيْ عُسْرًا)
‘আমার ভুলের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না ও আমার ব্যাপারে অধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’ (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭৩)
অতঃপর তারা কোন একটি এলাকায় অবতরণ করে হাঁটতে লাগলেন এবং একটি ছোট বালককে হাঁটতে দেখলেন। খাজির (عليه السلام) তাকে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করলেন। মূসা (عليه السلام) খুব বিরক্তবোধ করলেন এবং বললেন: সুবহানাল্লাহ, অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যা করলেন। আপনি এক গুরুতর অপরাধ করেছেন। (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭৪)
প্রথম ও দ্বিতীয়বার খাজির (عليه السلام) মূসা (عليه السلام) কে বললেন: ‘আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না? (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭৫) মূসা (عليه السلام) বললেন: এটাই সর্বশেষ, এরপর আপনাকে জিজ্ঞেস করলে আমার ও আপনার মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। এরপর তারা কোন এক গ্রাম বা শহরবাসীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাদের কাছে তারা আপ্যায়নের আবেদন জানালেন। কিন্তু তারা আপ্যায়নের পরিবর্তে তিরস্কার করল এবং তাড়িয়ে দিল। মেহমানের অধিকার আদায় করল না। তারা উভয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম একটি দেয়াল দেখতে পেল। খাজির (عليه السلام) তা মেরামত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং বললেন: এটা অবশ্যই স্থাপন করা আবশ্যক। মূসা (عليه السلام) বললেন: সুবহানাল্লাহ, মানুষেরা আমাদের তিরস্কার করল, মেহমানদারী করল না এতদসত্ত্বেও তাদের কাজ করে দিলেন? খাজির (عليه السلام) বললেন: এখানেই আপনার ও আমার মাঝে সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটল। (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭৮)
এরপর খাজির (عليه السلام) এ বিষয়গুলোর তাৎপর্য বর্ণনা করে দিলেন। যে নৌকা তিনি ছিদ্র করে নষ্ট করে দিয়েছেন তা কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির ছিল যারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। তাদের একজন বাদশা ছিল যে বল প্রয়োগ করে ভাল নৌকা ছিনিয়ে নিত। আমি চাচ্ছিলাম নৌকাটিকে ত্র“টিযুক্ত করে দিতে যাতে নৌকাটি ঐ দরিদ্র ব্যক্তিদের থেকে যায়। যে ছিদ্র আমি করেছিলাম তা বন্ধ করে দেবে ফলে নৌকা ভালই থেকে যাবে। কেননা যে নৌকাতে ত্র“টি থাকে জালিম বাদশা তা নেয় না। আর বালক (যাকে মেরেছি) যদি সে বেঁচে থাকত তাহলে কাফির হত। সে বড় হয়ে পিতামাতার বিরুদ্ধাচরণ করত ও তাদেরকে কুফরীর দিকে নিয়ে যেত। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এর চেয়ে উত্তম সন্তান দান করবেন। আর দেয়াল, (যা আমি মেরামত করেছি) তা ছিল শহরের দু’ ইয়াতীম বালকের। এ দেয়ালের নিচে তাদের গুপ্তধন ছিল। তাদের পিতা একজন সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি। যদি দেয়ালটি এভাবে রেখে দেয়া হতো ফলে ভেঙ্গে পড়ে যেত, এতে তাদের সম্পদ নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু আমি তা মেরামত করে দিয়েছি যাতে তাদের সম্পদ হেফাযতে থাকে এবং তারা সম্পদের জায়গা চিনে নিতে পারে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন:
يَرْحَمُ اللّٰهُ مُوسَي لَوْ كَانَ صَبَرَ لَقُصَّ عَلَيْنَا مِنْ أَمْرِهِمَا
আল্লাহ তা‘আলা মূসার প্রতি রহম করুন। যদি তিনি আরো ধৈর্যধারণ করতেন তাহলে আল্লাহ তা‘আলা উভয়ের ঘটনা আমাদের আরো বর্ণনা করতেন। খাজির (عليه السلام) বললেন: হে মূসা! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে এমন জ্ঞান দান করেছেন যা আমি জানি না, আমাকে আল্লাহ তা‘আলা এমন জ্ঞান দান করেছেন যা আপনি জানেন না। সে সময় একটি চড়–ই পাখি সমুদ্রে ঠোঁট দিয়ে পানি তুলে নিল তখন খাজির (عليه السلام) বললেন: বিশাল সমুদ্র থেকে চড়–ই পাখি ঠোঁট দিয়ে যে পরিমাণ পানি তুলে নিয়েছে আপনার আমার জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানের তুলনায় তেমন অল্প।
(مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ)
বা দু’ সমুদ্রের মিলনস্থল বলতে কোন দু’ সমুদ্রের মিলনস্থলকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়; কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর কোন ইঙ্গিত নেই। কাতাদাহ বলেন: পারস্য উপসাগর ও রোম সাগরের মিলনস্থল। ইবনু আতিয়্যাহ বলেন: আজরবাইজানের নিকটে একটি স্থান। কেউ বলেছেন, জর্ডান নদী ও ভূমধ্যসাগরের মিলনস্থল ইত্যাদি।
খাজির (عليه السلام) এখনো বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন? এ বিষয়ে সঠিক কথা হল তিনি মারা গেছেন। আল্লামা শানকিতী এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। (তাফসীর (আযওয়াউল বায়ান)
অর্থাৎ খাজির (عليه السلام)-এর কাছে এমন জ্ঞান ছিল যা মূসা (عليه السلام)-এর কাছে ছিল না। এটাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে সুফিবাদীরা দাবী করে থাকে নাবী নয় এমন কতক লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ইলমে লাদুন্নী (বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান) দান করে থাকেন। যেমন এ হাদীসেও বলা হয়েছে: খাজির বললেন: হে মূসা! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যে জ্ঞান আপনাকে দেয়া হয়নি, আর আপনাকে এমন জ্ঞান দান করা হয়েছে যা আমাকে দেয়া হয়নি। সুতরাং ইলমে লাদ্ন্নুী বা বাতেনী জ্ঞান বলতে কিছু রয়েছে যা বিশেষ ব্যক্তিদেরকে দেয়া হয়। এ জ্ঞান শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুফীবাদের এ দাবী সঠিক নয়; বরং এটা তাদের অজ্ঞতা ও কুপ্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। কারণ মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় আল্লাহ শরীয়তের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন
(ثُمَّ جَعَلْنٰكَ عَلٰي شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَا۬ءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ)
“এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দীনের সঠিক ও শরীয়তের ওপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ কর, অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না।” (সূরা জাসিয়া ৪৫:১৮) দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তা‘আলা খাজির (عليه السلام) কে বিশেষ জ্ঞান দান করেছেন সে কথা পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন, অথচ অন্য কারো সম্পর্কে এ ধরণের কথা বলা হয়নি। যদি এটাকে ব্যাপক করে দেয়া হয় তাহলে জাদুকর ও ভেল্কিবাজ এ ধরনের দাবী করতে পারে। সুতরাং তাদের এ দাবী অযৌক্তিক।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. বান্দা যতই জ্ঞানী হোক, তার জন্য অহঙ্কার করা শোভা পায় না।
২. বড় জুলুম থেকে বাঁচানোর জন্য কারো ওপরে ছোট-খাট জুলুম করা বৈধ।
৩. ছোটদের কাছেও বড়দের শিক্ষণীয় বিষয় থাকতে পারে।
৪. নাবীরা অন্যায় সহ্য করতে পারতেন না, যেমন মূসা (عليه السلام) পারছিলেন না।
৫. শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য দূরে ভ্রমণ করা বৈধ।
৬. কোন বিষয় না জানলে আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করা উচিত।
৭. যে বিষয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা প্রথমে শুরু করা উচিত, যেমন মূসা (عليه السلام) যখন জানতে পারলেন তাঁর চেয়ে বড় জ্ঞানী রয়েছে তখন তিনি সেটাই আগে জানার জন্য গুরুত্ব দিলেন।
৮. খারাপ কাজ ঘটে গেলে শয়তানের দিকে সোপর্দ করা যায়, যেহেতু সে কুমন্ত্রণা দিয়ে করিয়েছে।
৯. ইলম অর্জনের জন্য উস্তাদের কাছে বিনয়ী হওয়া আবশ্যক।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#890)[ The Story of Musa and Al-Khidr ]
Sura:18
Sura: Kahaf
Ayat: 60-82
www.motaher21.net
18:60
وَ اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِفَتٰىہُ لَاۤ اَبۡرَحُ حَتّٰۤی اَبۡلُغَ مَجۡمَعَ الۡبَحۡرَیۡنِ اَوۡ اَمۡضِیَ حُقُبًا ﴿۶۰﴾
And [mention] when Moses said to his servant, “I will not cease [traveling] until I reach the junction of the two seas or continue for a long period.”
Tafsir Ibne Kasir Said:-
The Story of Musa and Al-Khidr
Allah tells:
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ
And (remember) when Musa said to his boy-servant:
The reason for Musa’s conversation with the boy-servant, Yusha` bin Nun, was that he had been told about one of the servants of Allah at the junction of the two seas, who had knowledge which Musa had not been granted, so he wanted to travel to meet him. So he said to that boy-servant of his:
لَاا أَبْرَحُ
I will not give up,
meaning, I will keep on traveling,
حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ
until I reach the junction of the two seas,
meaning, the place where the two seas met.
أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا
or a Huqub passes.
meaning, even if I have to travel for a very long time.
Ibn Jarir (may Allah have mercy on him) said,
“Some of the scholars of the Arabic language said that Huqub means a year in the dialect of (the tribe of) Qays,”
then he narrated that Abdullah bin Amr said,
“Huqub means eighty years.”
Mujahid said, “Seventy years.”
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said that;
it means a lifetime.
Qatadah and Ibn Zayd said likewise
18:61
فَلَمَّا بَلَغَا مَجۡمَعَ بَیۡنِہِمَا نَسِیَا حُوۡتَہُمَا فَاتَّخَذَ سَبِیۡلَہٗ فِی الۡبَحۡرِ سَرَبًا ﴿۶۱﴾
But when they reached the junction between them, they forgot their fish, and it took its course into the sea, slipping away.
فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوتَهُمَا
But when they reached the junction of the two seas, they forgot their fish,
He had been commanded to carry a salted fish with him, and it had been said to him, when you lose the fish, that will be a sign that you have reached the right place. So they set out and traveled until they reached the junction of the two seas, where there was a spring called `Ayn Al-Hayat (the Spring of Life).
They went to sleep there, and the fish felt the drops of that water, so it came back to life. It was in a vessel with Yusha`, upon him be peace, and it jumped out of the vessel towards the sea. Yusha` woke up and the fish fell into the water and started to swim through the water, leaving a track or channel behind it.
Allah said:
فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ سَرَبًا
and it took its way through the sea as in a tunnel.
meaning, like going through a tunnel on land.
Ibn Jurayj said,
“Ibn Abbas said, `It left a trace as if it were a rock.’
18:62
فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتٰىہُ اٰتِنَا غَدَآءَنَا ۫ لَقَدۡ لَقِیۡنَا مِنۡ سَفَرِنَا ہٰذَا نَصَبًا ﴿۶۲﴾
So when they had passed beyond it, [Moses] said to his boy, “Bring us our morning meal. We have certainly suffered in this, our journey, [much] fatigue.”
فَلَمَّا جَاوَزَا
So when they had passed further on,
means, past the place where they had forgotten the fish.
Forgetfulness is attributed to them both even though it was actually Yusha` who forgot.
This is like the Ayah:
يَخْرُجُ مِنْهُمَا الُّلوْلُوُ وَالمَرْجَانُ
Out of them both come out pearl and coral. (55:22),
although they come from the salt water, according to one of the two opinions.
When they had passed one stage beyond the place where they had forgotten the fish,
قَالَ لِفَتَاهُ اتِنَا غَدَاءنَا لَقَدْ لَقِينَا مِن سَفَرِنَا هَذَا
(Musa) said to his boy-servant:�Bring us our morning meal; truly, we have suffered in this, our journey,
meaning, their journey beyond the place where they should have stopped.
نَصَبًا
Nasaban,
means, exhaustion.
18:63
قَالَ اَرَءَیۡتَ اِذۡ اَوَیۡنَاۤ اِلَی الصَّخۡرَۃِ فَاِنِّیۡ نَسِیۡتُ الۡحُوۡتَ ۫ وَ مَاۤ اَنۡسٰنِیۡہُ اِلَّا الشَّیۡطٰنُ اَنۡ اَذۡکُرَہٗ ۚ وَ اتَّخَذَ سَبِیۡلَہٗ فِی الۡبَحۡرِ ٭ۖ عَجَبًا ﴿۶۳﴾
He said, “Did you see when we retired to the rock? Indeed, I forgot [there] the fish. And none made me forget it except Satan – that I should mention it. And it took its course into the sea amazingly”.
قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنسَانِيهُ إِلاَّ الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ
He said:�Do you remember when we betook ourselves to the rock I indeed forgot the fish; none but Shaytan made me forget to remember it…��
Then he said,
…
وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ
It took its course,
meaning its path,
…
فِي الْبَحْرِ عَجَبًا
18:64
قَالَ ذٰلِکَ مَا کُنَّا نَبۡغِ ٭ۖ فَارۡتَدَّا عَلٰۤی اٰثَارِہِمَا قَصَصًا ﴿ۙ۶۴﴾
[Moses] said, “That is what we were seeking.” So they returned, following their footprints.
قَالَ ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ
�…into the sea in a strange (way)!��
(Musa) said:�That is what we have been seeking.��
meaning, this is what we have been looking for.
فَارْتَدَّا عَلَى اثَارِهِمَا قَصَصًا
So they went back, retracing their footsteps.
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا اتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا
18:65
فَوَجَدَا عَبۡدًا مِّنۡ عِبَادِنَاۤ اٰتَیۡنٰہُ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ عَلَّمۡنٰہُ مِنۡ لَّدُنَّا عِلۡمًا ﴿۶۵﴾
And they found a servant from among Our servants to whom we had given mercy from us and had taught him from Us a [certain] knowledge.
Then they found one of Our servants, on whom We had bestowed mercy from Us, and whom We had taught knowledge from Us.
This was Al-Khidr, peace be upon him, as is indicated by the authentic Hadiths narrated from the Messenger of Allah.
Al-Bukhari recorded that Sa`id bin Jubayr said,
�I said to Ibn Abbas:`Nawf Al-Bikali claims that Musa, the companion of Al-Khidr was not the Musa of the Children of Israel.�
Ibn `Abbas said, `The enemy of Allah has told a lie.�
Ubayy bin Ka`b narrated that he heard the Messenger of Allah say,
إِنَّ مُوسَى قَامَ خَطِيبًا فِي بَنِي إِسْرَايِيلَ فَسُيِلَ أَيُّ النَّاسِ أَعْلَمُ
قَالَ أَنَا
فَعَتَبَ اللهُ عَلَيْهِ إِذْ لَمْ يَرُدَّ الْعِلْمَ إِلَيْهِ
فَأَوْحَى اللهُ إِلَيْهِ إِنَّ لِي عَبْدًا بِمَجْمَعِ الْبَحْرَيْنِ هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ
قَالَ مُوسَى يَا رَبِّ وَكَيْفَ لِي بِهِ
قَالَ تَأْخُذُ مَعَكَ حُوتًا فَتَجْعَلَهُ بِمِكْتَلٍ فَحَيْثُمَا فَقَدْتَ الْحُوتَ فَهُوَ ثَمَّ
فَأَخَذَ حُوتًا فَجَعَلَهُ بِمِكْتَلٍ ثُمَّ انْطَلَقَ وَانْطَلَقَ مَعَهُ فَتَاهُ يُوشَعُ بْنُ نُونٍ عَلَيْهِ السَّلَأمُ حَتَّى إِذَا أَتَيَا الصَّخْرَةَ وَضَعَا رُءُوْسَهُمَا فَنَامَا وَاضْطَرَبَ الْحُوتُ فِي الْمِكْتَلِ فَخَرَجَ مِنْهُ فَسَقَطَ فِي الْبَحْرِ فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ سَرَبًا
وَأَمْسَكَ اللهُ عَنِ الْحُوتِ جِرْيَةَ الْمَاءِ فَصَارَ عَلَيْهِ مِثْلَ الطَّاقِ
فَلَمَّا اسْتَيْقَظَ نَسِيَ صَاحِبُهُ أَنْ يُخْبِرَهُ بِالْحُوتِ فَانْطَلَقَا بَقِيَّةَ يَوْمِهِمَا وَلَيْلَتَهُمَا
حَتَّى إِذَا كَانَ مِنَ الْغَدِ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ
اتِنَا غَدَاءنَا لَقَدْ لَقِينَا مِن سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا
Musa got up to deliver a speech before the Children of Israel and he was asked, �Who is the most learned person among the people?��
Musa replied, �I am.��
Allah rebuked him because he did not refer the knowledge to Allah.
So Allah revealed to him:�At the junction of the two seas there is a servant of Ours who is more learned than you.��
Musa asked, �O my Lord, how can I meet him?��
Allah said, �Take a fish and put it in a vessel and then set out, and where you lose the fish, you will find him.��
So Musa took a fish, put it in a vessel and set out, along with his boy-servant Yusha` bin Nun, peace be upon him, till they reached a rock (on which) they both lay down their heads and slept. The fish moved vigorously in the vessel and got out of it and fell into the sea and there it took its way through the sea (straight) as in a tunnel.
Allah stopped the flow of water on both sides of the way created by the fish, and so that way was like a tunnel.
When Musa got up, his companion forgot to tell him about the fish, and so they carried on their journey during the rest of the day and the whole night.
The next morning Musa said to his boy-servant,
�Bring us our morning meal; truly, we have suffered much fatigue in this, our journey.��
Musa did not get tired till he had passed the place that Allah had ordered him to look for. His boy-servant then said to him,
أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَأ إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّى نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَأ أَنْسَانِيهُ إِلاَّ الشَّيْطَـنُ أَنْ أَذْكُرَهُ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِى الْبَحْرِ عَجَبًا
�Do you remember when we betook ourselves to the rock I indeed forgot the fish; none but Shaytan made me forget to remember it. It took its course into the sea in a strange way.��
There was a tunnel for the fish and Musa and his boy-servant were amazed. Musa said,
ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ فَارْتَدَّا عَلَى ءَاثَارِهِمَا قَصَصًا
�That is what we have been seeking.�� So they went back retracing their footsteps.��
So they went back retracing their steps until they reached the rock. There they found a man covered with a garment.
Musa greeted him.
Al-Khidr said, �Is there such a greeting in your land!��
Musa said, �I am Musa.��
He said, �Are you the Musa of the Children of Israel?��
Musa said, �Yes,�� and added, �I have come to you so that you may teach me something of that knowledge which you have been taught.��
قَالَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِىَ صَبْراً
Al-Khidr said, �You will not be able to have patience with me.
O Musa! I have some of Allah�s knowledge which He has bestowed upon me but you do not know it; and you too, have some of Allah�s knowledge which He has bestowed upon you, but I do not know it.��
Musa said,
سَتَجِدُنِى إِن شَأءَ اللَّهُ صَابِرًا وَلَا أَعْصِى لَكَ أمْراً
�If Allah wills, you will find me patient, and I will not disobey you in aught.��
Al-Khidr said to him,
فَإِنِ اتَّبَعْتَنِى فَلَ تَسْأَلْنى عَن شَىءٍ حَتَّى أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْراً
�Then, if you follow me, ask me not about anything till I myself mention it to you.��
So they set out walking along the shore, until a boat passed by and they asked the crew to let them go on board.
The crew recognized Al-Khidr and allowed them to go on board free of charge.
When they went on board, suddenly Musa saw that Al-Khidr had pulled out one of the planks of the ship with an adz.
Musa said to him, �These people gave us a free ride, yet you have broken their boat so that its people will drown!
Verily, you have done a terrible thing!
قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِىَ صَبْراً
�Al-Khidr said, �Did I not tell you, that you would not be able to have patience with me!��
قَالَ لَا تُوَاخِذْنِى بِمَا نَسِيتُ وَلَا تُرْهِقْنِى مِنْ أَمْرِى عُسْراً
Musa said, �Call me not to account for what I forgot and be not hard upon me for my affair (with you).��
The Messenger of Allah said,
In the first instance, Musa asked Al-Khidr because he had forgotten his promise.
Then a bird came and sat on the edge of the boat, dipping its beak once or twice in the sea. Al-Khidr said to Musa, �My knowledge and your knowledge, in comparison to Allah�s knowledge, is like what this bird has taken out of the sea.��
Then they both disembarked from the boat, and while they were walking on the shore, Al-Khidr saw a boy playing with other boys.
Al-Khidr took hold of the boy�s head and pulled it off with his hands, killing him.
Musa said to him,
فَانْطَلَقَا حَتَّى إِذَا لَقِيَا غُلَمًا فَقَتَلَهُ قَالَ أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَّقَدْ جِيْتَ شَيْياً نُّكْراً
�Have you killed an innocent person who had killed none! Verily, you have committed a thing Nukr!��
قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَّكَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِىَ صَبْراً
He said, �Did I not tell you that you would not be able to have patience with me��
(The narrator) said, “The second blame was stronger than the first one”.
قَالَ إِن سَأَلْتُكَ عَن شَىْءٍ بَعْدَهَا فَلَ تُصَاحِبْنِى قَدْ بَلَغْتَ مِن لَّدُنِّى عُذْراً فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَأ أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَأ أَهْلَهَا فَأَبَوْاْ أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَاراً يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ
Musa said, “If I ask you anything after this, keep me not in your company; you have received an excuse from me.” Then they both proceeded until they came to the people of a town. They asked them for food but they refused to entertain them. (Then) they found there a wall on the point of falling down.
(Al-Khidr) set it up straight with his own hands.
فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَأ أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَأ أَهْلَهَا فَأَبَوْاْ أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَاراً يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ فَأَقَامَهُ قَالَ لَوْ شِيْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْراً
Musa said, “We came to these people, but they neither fed us nor received us as guests. If you had wished, surely, you could have taken wages for it!”
قَالَ هَـذَا فِرَاقُ بَيْنِى وَبَيْنِكَ سَأُنَبِّيُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْراً
(Al-Khidr) said:”This is the parting between you and I. I will tell you the interpretation of (those) things over which you were unable to be patient.”
The Messenger of Allah said:
وَدِدْنَا أَنَّ مُوسَى كَانَ صَبَرَ حَتَّى يَقُصَّ اللهُ عَلَيْنَا مِنْ خَبَرِهِمَا
We wish that Musa was patient so that Allah would have told us more about both of them.
Sa`id bin Jubayr said:
“Ibn Abbas used to recite (Ayah no. 79),
وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَاْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالَحَةٍ غَضْبًا
There was a king before them who seized every good-conditioned ship by force.
and (Ayah no 80)
وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ
As for the boy, he was a disbeliever and his parents were believers.
Then (in another narration) Al-Bukhari recorded a similar account which says:
then Musa set out and with him was his boy-servant Yusha` bin Nun, and they had the fish with them. When they reached the rock, they camped there, and Musa lay down his head and slept. At the base of the rock there was a spring called Al-Hayat; its water never touched a thing but it brought it to life. Some of its water touched the fish, so it began to move and jumped out of the vessel and into the sea. When he woke up, Musa said to his boy-servant:
Bring us our morning meal.
Then he quoted the rest of the Hadith.
Then a bird came and perched on the edge of the ship, and dipped its beak in the sea, and Al-Khidr said to Musa,
“My knowledge and your knowledge and the knowledge of all of creation, in comparison to the knowledge of Allah, is like what this bird has taken from the sea.”
Then he mentioned the rest of the report
18:66
قَالَ لَہٗ مُوۡسٰی ہَلۡ اَتَّبِعُکَ عَلٰۤی اَنۡ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدًا ﴿۶۶﴾
Moses said to him, “May I follow you on [the condition] that you teach me from what you have been taught of sound judgement?”
Musa meeting with Al-Khidr and accompanying Him
Allah tells us what Musa said to that learned man, who was Al-Khidr. He was one to whom Allah had given knowledge that He had not given to Musa, just as He had given Musa knowledge that He had not given to Al-Khidr.
قَالَ لَهُ مُوسَى هَلْ أَتَّبِعُكَ
Musa said to him:”May I follow you…”
This is a question phrased in gentle terms, with no sense of force or coercion. This is the manner in which the seeker of knowledge should address the scholar.
أَتَّبِعُكَ
(I follow you)
means, I accompany you and spend time with you.
عَلَى أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
so that you teach me something of that knowledge which you have been taught.
meaning, teach me something from that which Allah has taught you so that I may be guided by it and learn something beneficial and do righteous deeds.
At this point
18:67
قَالَ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا ﴿۶۷﴾
He said, “Indeed, with me you will never be able to have patience.
قَالَ
He said,
meaning, Al-Khidr said to Musa,
إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا
Verily, you will not be able to have patience with me!
meaning, `You will not be able to accompany with me when you see me doing things that go against your law, because I have knowledge from Allah that He has not taught you, and you have knowledge from Allah that He has not taught me. Each of us has responsibilities before Allah that the other does not share, and you will not be able to stay with me,’
وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَى مَا لَمْ تُحِطْ بِهِ خُبْرًا
18:68
وَ کَیۡفَ تَصۡبِرُ عَلٰی مَا لَمۡ تُحِطۡ بِہٖ خُبۡرًا ﴿۶۸﴾
And how can you have patience for what you do not encompass in knowledge?”
And how can you have patience about a thing which you know not!
`For I know that you will denounce me justifiably, but I have knowledge of Allah’s wisdom and the hidden interests which I can see but you cannot.
18:69
قَالَ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ صَابِرًا وَّ لَاۤ اَعۡصِیۡ لَکَ اَمۡرًا ﴿۶۹﴾
[Moses] said, “You will find me, if Allah wills, patient, and I will not disobey you in [any] order.”
قَالَ
He said,
meaning, Musa said:
سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ صَابِرًا
If Allah wills, you will find me patient,
with whatever I see of your affairs,
وَلَا أَعْصِي لَكَ أَمْرًا
and I will not disobey you in aught.
means, `I will not go against you in anything.’
At that point, Al-Khidr, upon him be peace, set a condition
18:70
قَالَ فَاِنِ اتَّبَعۡتَنِیۡ فَلَا تَسۡـَٔلۡنِیۡ عَنۡ شَیۡءٍ حَتّٰۤی اُحۡدِثَ لَکَ مِنۡہُ ذِکۡرًا ﴿٪۷۰﴾
He said, “Then if you follow me, do not ask me about anything until I make to you about it mention.”
قَالَ فَإِنِ اتَّبَعْتَنِي فَلَا تَسْأَلْنِي عَن شَيْءٍ
Then, if you follow me, ask me not about anything,
do not initiate any discussion of the matter,
حَتَّى أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا
till I myself mention of it to you.
meaning, `until I initiate the discussion, before you ask me about it.
18:71
فَانۡطَلَقَا ٝ حَتّٰۤی اِذَا رَکِبَا فِی السَّفِیۡنَۃِ خَرَقَہَا ؕ قَالَ اَخَرَقۡتَہَا لِتُغۡرِقَ اَہۡلَہَا ۚ لَقَدۡ جِئۡتَ شَیۡئًا اِمۡرًا ﴿۷۱﴾
So they set out, until when they had embarked on the ship, al-Khidh r tore it open. [Moses] said, “Have you torn it open to drown its people? You have certainly done a grave thing.”
Damaging the Boat
Allah tells:
فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا رَكِبَا فِي السَّفِينَةِ خَرَقَهَا قَالَ أَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا
So they both proceeded, till, when they boarded the boat, he (Khidr) damaged it.
Musa said:”Have you damaged it wherein its people will drown!
Allah tells us that Musa and his companion Al-Khidr set out having come to an agreement and reached an understanding. Al-Khidr had made the condition that Musa should not ask him about anything he found distasteful until he himself initiated the discussion and offered an explanation. So they went on board the ship, as described in the Hadith quoted above — the crew recognized Al-Khidr and let them ride on board free of charge, as an honor to Al-Khidr.
When the boat took them out to sea and they were far from the shore, Al-Khidr got up and damaged the boat, pulling out one of its planks and then patching it up again.
Musa, peace be upon him, could not restrain himself from denouncing him, so he said:
أَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا
(Have you damaged it wherein its people will drown).
The grammatical structure of the sentence in Arabic implies that this was the consequence, not the purpose, of his action.
لَقَدْ جِيْتَ شَيْيًا إِمْرًا
Verily, you have committed a thing Imr.
About `Imr’, Mujahid said:
“An evil thing.”
Qatadah said,
“An astounding thing.”
At this point, reminding him of the previously agreed condition,
قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا
18:72
قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا ﴿۷۲﴾
[Al-Khidh r] said, “Did I not say that with me you would never be able to have patience?”
He (Al-Khidr) said:Did I not tell you, that you would not be able to have patience with me!
meaning, `this thing that I did deliberately is one of the things I told you not to denounce me for, because you do not know the full story, and there is a reason and purpose for it that you do not know about.’
قَالَ لَاا تُوَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلَاا تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا
18:73
قَالَ لَا تُؤَاخِذۡنِیۡ بِمَا نَسِیۡتُ وَ لَا تُرۡہِقۡنِیۡ مِنۡ اَمۡرِیۡ عُسۡرًا ﴿۷۳﴾
[Moses] said, “Do not blame me for what I forgot and do not cover me in my matter with difficulty.”
He (Musa) said:Call me not to account for what I forgot, and be not hard upon me for my affair (with you).
meaning, `do not be harsh with me.’
Hence it says in the Hadith quoted above from the Messenger of Allah:
كَانَتِ الاْاُولَى مِنْ مُوسَى نِسْيَانًا
In the first instance, Musa asked Al-Khidr because he had forgotten his promise
18:74
فَانۡطَلَقَا ٝ حَتّٰۤی اِذَا لَقِیَا غُلٰمًا فَقَتَلَہٗ ۙ قَالَ اَقَتَلۡتَ نَفۡسًا زَکِیَّۃًۢ بِغَیۡرِ نَفۡسٍ ؕ لَقَدۡ جِئۡتَ شَیۡئًا نُّکۡرًا ﴿۷۴﴾
So they set out, until when they met a boy, al-Khidh r killed him. [Moses] said, “Have you killed a pure soul for other than [having killed] a soul? You have certainly done a deplorable thing.”
The Story of killing the Boy
Allah tells:
فَانطَلَقَا
Then they both proceeded,
means, after the first incident,
حَتَّى إِذَا لَقِيَا غُلَمًا فَقَتَلَهُ
till they met a boy, and he (Khidr) killed him.
It has been stated previously that this boy was playing with other boys in one of the towns, and that Al-Khidr deliberately singled him out. He was the finest and most handsome of them all, and Al-Khidr killed him. When Musa, peace be upon him, saw that he denounced him even more fervently than in the first case, and said hastily:
قَالَ أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً
He (Musa) said:Have you killed an innocent person,
meaning, a young person who had not yet committed any sin or done anything wrong, yet you killed him
بِغَيْرِ نَفْسٍ
without Nafs,
with no reason for killing him.
لَّقَدْ جِيْتَ شَيْيًا نُّكْرًا
Verily, you have committed a thing Nukr!
meaning, something that is clearly evil.
قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِي صَبْرًا
18:75
قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکَ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا ﴿۷۵﴾
[Al-Khidh r] said, “Did I not tell you that with me you would never be able to have patience?”
He said:”Did I not tell you that you can have no patience with me!”
Once again, Al-Khidr reiterates the condition set in the first place, so Musa says to him
18:76
قَالَ اِنۡ سَاَلۡتُکَ عَنۡ شَیۡءٍۭ بَعۡدَہَا فَلَا تُصٰحِبۡنِیۡ ۚ قَدۡ بَلَغۡتَ مِنۡ لَّدُنِّیۡ عُذۡرًا ﴿۷۶﴾
[Moses] said, “If I should ask you about anything after this, then do not keep me as a companion. You have obtained from me an excuse.”
قَالَ إِن سَأَلْتُكَ عَن شَيْءٍ بَعْدَهَا
He said:If I ask you anything after this,
meaning, `if I object to anything else you do after this,’
فَلَ تُصَاحِبْنِي قَدْ بَلَغْتَ مِن لَّدُنِّي عُذْرًا
keep me not in your company, you have received an excuse from me.
`you have accepted my apology twice.’
Ibn Jarir narrated from Ibn Abbas that Ubayy bin Ka`b said:
“Whenever the Prophet mentioned anyone, he would pray for himself first. One day he said:
رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى مُوسَى لَوْ لَبِثَ مَعَ صَاحِبِهِ لَاَبْصَرَ الْعَجَبَ وَلَكِنَّهُ قَالَ
إِن سَأَلْتُكَ عَن شَيْءٍ بَعْدَهَا
فَلَ تُصَاحِبْنِي قَدْ بَلَغْتَ مِن لَّدُنِّي عُذْرًا
May the mercy of Allah be upon us and upon Musa. If he had stayed with his companion he would have seen wonders, but he said,
`If I ask you anything after this, keep me not in your company, you have received an excuse from me.”
18:77
فَانۡطَلَقَا ٝ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَیَاۤ اَہۡلَ قَرۡیَۃِۣ اسۡتَطۡعَمَاۤ اَہۡلَہَا فَاَبَوۡا اَنۡ یُّضَیِّفُوۡہُمَا فَوَجَدَا فِیۡہَا جِدَارًا یُّرِیۡدُ اَنۡ یَّنۡقَضَّ فَاَقَامَہٗ ؕ قَالَ لَوۡ شِئۡتَ لَتَّخَذۡتَ عَلَیۡہِ اَجۡرًا ﴿۷۷﴾
So they set out, until when they came to the people of a town, they asked its people for food, but they refused to offer them hospitality. And they found therein a wall about to collapse, so al-Khidh r restored it. [Moses] said, “If you wished, you could have taken for it a payment.”
The Story of repairing the Wall
Allah tells:
فَانطَلَقَا
they both proceeded,
after the first two instances,
حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ
till when they came to the people of a town,
Ibn Jarir narrated from Ibn Sirin that this was Al-Aylah.
According to the Hadith;
حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ لِيَامًا
When they came there, the people of the town were mean. i.e., miserly.
اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنقَضَّ فَأَقَامَهُ
they asked them for food, but they refused to entertain them. Then they found therein a wall about to collapse and he (Khidr) set it up straight.
means, he fixed it so it was standing upright properly.
We have already seen in the Hadith quoted above that he set it up with his own hands, supporting it until it was standing straight again, which is something extraordinary.
At this point,
.
قَالَ لَوْ شِيْتَ لَااتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا
(Musa) said:If you had wished, surely you could have taken wages for it!
meaning, because they did not entertain us as guests, you should not have worked for them for free
18:78
قَالَ ہٰذَا فِرَاقُ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنِکَ ۚ سَاُنَبِّئُکَ بِتَاۡوِیۡلِ مَا لَمۡ تَسۡتَطِعۡ عَّلَیۡہِ صَبۡرًا ﴿۷۸﴾
[Al-Khidh r] said, “This is parting between me and you. I will inform you of the interpretation of that about which you could not have patience.
قَالَ هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ
He said:”This is the parting between you and I,
meaning, because you said after the boy was killed that if you asked me anything after that, you would not accompany me any further. So this is the parting of the ways between me and you.
سَأُنَبِّيُكَ بِتَأْوِيلِ
I will tell you the interpretation,
meaning explanation,
مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
of (those) things over which you were not able to be patient.
18:79
اَمَّا السَّفِیۡنَۃُ فَکَانَتۡ لِمَسٰکِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ فِی الۡبَحۡرِ فَاَرَدۡتُّ اَنۡ اَعِیۡبَہَا وَ کَانَ وَرَآءَہُمۡ مَّلِکٌ یَّاۡخُذُ کُلَّ سَفِیۡنَۃٍ غَصۡبًا ﴿۷۹﴾
As for the ship, it belonged to poor people working at sea. So I intended to cause defect in it as there was after them a king who seized every [good] ship by force.
Interpretations of why the Ship was damaged
Khidr gives the explanation of his actions:
أَمَّا السَّفِينَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِينَ يَعْمَلُونَ فِي الْبَحْرِ فَأَرَدتُّ أَنْ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَاءهُم مَّلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصْبًا
“As for the boat, it belonged to poor people working in the sea. So I wished to make a defective damage in it, as there was a king behind them who seized every boat by force.”
This is an explanation of what Musa found so hard to understand, and the appearance of which he condemned.
Allah showed Al-Khidr the hidden reasons, so he said,
“I damaged the ship to make it faulty, because they used to pass by a king who was one of the oppressors, who
يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ
(seized every boat), i.e., every good, sound boat
غَصْبًا
(by force). `So I wanted to prevent him from taking this boat by making it appear faulty, so that its poor owners who had nothing else could benefit from it.’
It was also said that they were orphans
18:80
وَ اَمَّا الۡغُلٰمُ فَکَانَ اَبَوٰہُ مُؤۡمِنَیۡنِ فَخَشِیۡنَاۤ اَنۡ یُّرۡہِقَہُمَا طُغۡیَانًا وَّ کُفۡرًا ﴿ۚ۸۰﴾
And as for the boy, his parents were believers, and we feared that he would overburden them by transgression and disbelief.
Interpretation of why the Boy was killed
Khidr explains about his second action:
وَأَمَّا الْغُلَأمُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُوْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَن يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا
“And as for the boy, his parents were believers, and we feared he would oppress them by rebellion and disbelief.”
Ibn Abbas narrated from Ubayy bin Ka`b that the Prophet said:
الْغُلَمُ الَّذِي قَتَلَهُ الْخَضِرُ طُبِعَ يَوْمَ طُبِعَ كَافِرًا
The boy Al-Khidr killed was destined to be a disbeliever from the day he was created.
It was recorded by Ibn Jarir from Ibn Abbas. He said:
فَكَانَ أَبَوَاهُ مُوْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَن يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا
(his parents were believers, and we feared he would oppress them by rebellion and disbelief).
Their love for him might make them follow him in disbelief.
Qatadah said,
“His parents rejoiced when he was born and grieved for him when he was killed. If he had stayed alive, he would have been the cause of their doom. So let a man be content with the decree of Allah, for the decree of Allah for the believer, if he dislikes it, is better for him than if He were to decree something that he likes for him.”
An authentic Hadith says;
لَاا يَقْضِي اللهُ لِلْمُوْمِنِ مِنْ قَضَاءٍ إِلاَّ كَانَ خَيْرًا لَه
Allah does not decree anything for the believer except it is good for him.
And Allah says:
وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْيًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ
and it may be that you dislike a thing which is good for you. (2:216)
فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا
18:81
فَاَرَدۡنَاۤ اَنۡ یُّبۡدِلَہُمَا رَبُّہُمَا خَیۡرًا مِّنۡہُ زَکٰوۃً وَّ اَقۡرَبَ رُحۡمًا ﴿۸۱﴾
So we intended that their Lord should substitute for them one better than him in purity and nearer to mercy.
So we intended that their Lord should exchange him for them for one better in righteousness and nearer to mercy.
A child who was better than this one, a child for whom they would feel more compassion.
This was the view of Ibn Jurayj
18:82
وَ اَمَّا الۡجِدَارُ فَکَانَ لِغُلٰمَیۡنِ یَتِیۡمَیۡنِ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ وَ کَانَ تَحۡتَہٗ کَنۡزٌ لَّہُمَا وَ کَانَ اَبُوۡہُمَا صَالِحًا ۚ فَاَرَادَ رَبُّکَ اَنۡ یَّبۡلُغَاۤ اَشُدَّہُمَا وَ یَسۡتَخۡرِجَا کَنۡزَہُمَا ٭ۖ رَحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ ۚ وَ مَا فَعَلۡتُہٗ عَنۡ اَمۡرِیۡ ؕ ذٰلِکَ تَاۡوِیۡلُ مَا لَمۡ تَسۡطِعۡ عَّلَیۡہِ صَبۡرًا ﴿ؕ٪۸۲﴾
And as for the wall, it belonged to two orphan boys in the city, and there was beneath it a treasure for them, and their father had been righteous. So your Lord intended that they reach maturity and extract their treasure, as a mercy from your Lord. And I did it not of my own accord. That is the interpretation of that about which you could not have patience.”
Interpretation of why the Wall was repaired for no Charge
Allah says,
وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَأمَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنزٌ لَّهُمَا
“And as for the wall, it belonged to two orphan boys in the town; and there was under it a treasure belonging to them;
In this Ayah there is a proof that the word Qaryah (village) may be used to refer to a city (Madinah), because Allah first says,
حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ
(till when they came to the people of a town (Qaryah)) (18:77), but here He says:
فَكَانَ لِغُلَمَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ
(it belonged to two orphan boys in the town (Al-Madinah);
This is like the Ayat:
وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ هِىَ أَشَدُّ قُوَّةً مِّن قَرْيَتِكَ الَّتِى أَخْرَجَتْكَ
And many a town (Qaryah), stronger than your town which has driven you out We have destroyed. (47:13)
and;
وَقَالُواْ لَوْلَا نُزِّلَ هَـذَا الْقُرْءَانُ عَلَى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
And they say:”Why is not this Qur’an sent down to some great man of the two towns (Al-Qaryatayn),” (43:31)
meaning Makkah and At-Ta’if.
The meaning of the Ayahis:
“I repaired this wall because it belonged to two orphan boys in the city, and underneath it was some treasure belonging to them.”
Ikrimah, Qatadah and others said,
“Underneath it there was some wealth that was buried for them.”
This meaning is apparent from the context of the Ayah, and is the view chosen by Ibn Jarir (may Allah have mercy on him).
وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا
their father was a righteous man,
indicates that a righteous person’s offspring will be taken care of, and that the blessing of his worship will extend to them in this world and in the Hereafter. This will occur through his intercession for them, as well as their status being raised to the highest levels of Paradise, so that he may find joy in them. This was stated in the Qur’an and reported in the Sunnah.
Sa`id bin Jubayr narrated from Ibn Abbas:
“They were taken care of because their father was a righteous man, although it is not stated that they themselves were righteous.”
فَأَرَادَ رَبُّكَ أَنْ يَبْلُغَا أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنزَهُمَا
your Lord intended that they should attain their age of full strength and take out their treasure.
Here will is attributed to Allah, the Exalted, because no one else is able to bring them to the age of full strength and puberty except Allah.
In contrast, He said about the boy:
فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً
(So we intended that their Lord should exchange him for them for one better in righteousness (18:81)) and concerning the ship:
فَأَرَدتُّ أَنْ أَعِيبَهَا
(So I wished to make a defective damage in it, (18:79)).
And Allah knows best.
Was Al-Khidr a Prophet
Khidr tells,
رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِي
as a mercy from your Lord. And I did them not of my own accord.
Meaning, `These three things that I did, come from the mercy of Allah for those we have mentioned, the crew of the ship, the parents of the boy and the two sons of the righteous man; I was only commanded to do these things that were enjoined upon me.’
This is proof and evidence in support of those who say that Al-Khidr, peace be upon him, was a Prophet, along with the Ayah which we have already quoted:
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَأ ءَاتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا
Then they found one of Our servants, on whom We had bestowed mercy from Us, and whom We had taught knowledge from Us. (18:65)
Why he was called Al-Khidr
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah, may Allah be pleased with him, said that the Prophet said concerning Al-Khidr;
إِنَّمَا سُمِّيَ خَضِرًا لاَِنَّهُ جَلَسَ عَلَى فَرْوَةٍ بَيْضَاءَ فَإِذَا هِيَ تَهْتَزُّ مِنْ تَحْتِهِ خَضْرَاء
He was called Al-Khidr because he sat on a barren Farwah that turned white, then it turned green (Khadra’) beneath him.
Imam Ahmad also recorded this from Abdur-Razzaq.
It was also recorded in Sahih Al-Bukhari from Hammam from Abu Hurayrah that the Messenger of Allah said,
إِنَّمَا سُمِّي الْخَضِرَ لاَِنَّهُ جَلَسَ عَلَى فَرْوَةٍ فَإِذَا هِيَ تَهْتَزُّ مِنْ تَحْتِهِ خَضْرَاء
He was called Al-Khidr because he sat on a barren Farwah and it turned green (Khadra’) beneath him.
The meaning of Farwah here is a patch of withered vegetation.
This was the view of Abdur-Razzaq.
It was also said that it means the face of the earth.
Then Khidr said to Musa,
ذَلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
That is the interpretation of those (things) over which you could not be patient.
meaning, `this is the explanation of the things which you could not put up with or be patient with until I took the initiative of explaining them to you.’
When he explained them and made them clear and solved the confusion, he used a milder form of the verb,
تَسْطِع
(you could).
When the matter was still confusing and very difficult, a more intensive form was used,
سَأُنَبِّيُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
(I will tell you the interpretation of (those) things over which you were unable to be patient with). (18:78)
The intensity of the verbal form used reflects the intensity of the confusion felt. This is like the Ayah:
فَمَا اسْطَـعُواْ أَن يَظْهَرُوهُ
So they (Ya`juj and Ma`juj) were not able to scale it, (18:97) which means ascending to its highest point,
وَمَا اسْتَطَـعُواْ لَهُ نَقْبًا
nor are they able to dig through it (18:97) which is more difficult than the former.
The intensity of the verbal form used reflects the difficulty of the action, which has to do with the subtleties of meaning. And Allah knows best.
If one were to ask, what happened to the boy-servant of Musa who appears at the beginning of the story but then is not mentioned?
The answer is that the objective of the story is what happened between Musa and Al-Khidr.
Musa’s boy-servant was with him, following him. It is clearly mentioned in the Sahih Hadiths referred to above that he was Yusha` bin Nun, who was the one who became the leader of the Children of Israel after Musa, peace be upon him
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran