أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৯২)[إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ
য়্যা’জূজ ও মা’জূজ ।]
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৯৩-৯৮ নং আয়াত:-
[إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ
য়্যা’জূজ ও মা’জূজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে;]
www.motaher21.net
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৩
حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ بَیْنَ السَّدَّیْنِ وَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمَا قَوْمًا١ۙ لَّا یَكَادُوْنَ یَفْقَهُوْنَ قَوْلًا
এমনকি যখন দু’পাহাড়ের মধ্যখানে পৌঁছলো তখন সেখানে এক জাতির সাক্ষাত পেলো। যারা খুব কমই কোন কথা বুঝতে পারতো।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৪
قَالُوْا یٰذَا الْقَرْنَیْنِ اِنَّ یَاْجُوْجَ وَ مَاْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِی الْاَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلٰۤى اَنْ تَجْعَلَ بَیْنَنَا وَ بَیْنَهُمْ سَدًّا
তারা বললো, “হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আমরা কি তোমাকে এ কাজের জন্য কোন কর দেবো, তুমি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবে?”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৫
قَالَ مَا مَكَّنِّیْ فِیْهِ رَبِّیْ خَیْرٌ فَاَعِیْنُوْنِیْ بِقُوَّةٍ اَجْعَلْ بَیْنَكُمْ وَ بَیْنَهُمْ رَدْمًاۙ
সে বললো, “আমার রব আমাকে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন তাই যথেষ্ট। তোমরা শুধু শ্রম দিয়ে আমাকে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করে দিচ্ছি।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৬
اٰتُوْنِیْ زُبَرَ الْحَدِیْدِ١ؕ حَتّٰۤى اِذَا سَاوٰى بَیْنَ الصَّدَفَیْنِ قَالَ انْفُخُوْا١ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَعَلَهٗ نَارًا١ۙ قَالَ اٰتُوْنِیْۤ اُفْرِغْ عَلَیْهِ قِطْرًاؕ
আমাকে লোহার পাত এনে দাও।” তারপর যখন দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা সে পূর্ণ করে দিল তখন লোকদের বললো, এবার আগুন জ্বালাও। এমনকি যখন এ (অগ্নি প্রাচীর) পুরোপুরি আগুনের মতো লাল হয়ে গেলো তখন সে বললো, “আনো, এবার আমি গলিত তামা এর উপর ঢেলে দেবো।”
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৭
فَمَا اسْطَاعُوْۤا اَنْ یَّظْهَرُوْهُ وَ مَا اسْتَطَاعُوْا لَهٗ نَقْبًا
(এ প্রাচীর এমন ছিল যে) ইয়াজুজ ও মাজুজ এটা অতিক্রম করেও আসতে পারতো না এবং এর গায়ে সুড়ংগ কাটাও তাদের জন্য আরো কঠিন ছিল।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৮
قَالَ هٰذَا رَحْمَةٌ مِّنْ رَّبِّیْ١ۚ فَاِذَا جَآءَ وَعْدُ رَبِّیْ جَعَلَهٗ دَكَّآءَ١ۚ وَ كَانَ وَعْدُ رَبِّیْ حَقًّاؕ
যুলকারনাইন বললো, “এ আমার রবের অনুগ্রহ। কিন্তু যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতির নির্দিষ্ট সময় আসবে তখন তিনি একে ধূলিস্মাত করে দেবেন৭১ আর আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।”
৯৩-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# যেহেতু সামনের দিকে বলা হচ্ছে যে, এ দু’পাহাড়ের বিপরীত পাশে ইয়াজুজক মাজুজের এলাকা ছিল তাই ধরে নিতে হয় যে, এ পাহাড় বলতে কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্যবর্তী সুবিস্তীর্ণ ককেসীয় পবর্তমালাকে বুঝানো হয়েছে।
# যুলকারনাইন ও তার সাথীদের জন্য তাদের ভাষা ছিল প্রায়ই অপরিচিত ও দুর্বোধ্য। ভীষণভাবে সভ্যতার আলো বিবর্জিত ও বন্য হওয়ার কারণে তাদের ভাষা কেউ জানতো না এবং তারাও কারোর ভাষা জানতো না।
# ইয়াজুজ মা’জুজ বলতে বুঝায়, যেমন ওপরে ৬২ টীকায় ইশারা করা হয়েছে যে, এশিয়ার উত্তর পূর্ব এলাকার এমন সব জাতি যারা প্রাচীন যুগে সুসভ্য দেশগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক হামলা চালাতে অভ্যস্ত ছিল এবং মাঝে মধ্যে এশিয়া ও ইউরোপ উভয় দিকে সয়লাবের আকারে ধ্বংসের থাবা বিস্তার করতো। বাইবেলের আদি পুস্তক (১০ অধ্যায়) তাদেরকে হযরত নূহের (আ) পুত্র ইয়াফেসের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকগণও এ একই কথা বলেছেন। হিযকিয়েল (যিহিষ্কেল) পুস্তিকায় (৩৮ অধ্যায় ও ৩৯ অধ্যায়) তাদের এলাকা বলা হয়েছে রোশ (রুশ) তূবল (বর্তমান তোবলস্ক) ও মিস্ক (বর্তমান মস্কো) কে। ইসরাঈলী ঐতিহাসিক ইউসীফুস তাদেরকে সিথীন জাতি মনে করেন এবং তার ধারণা তাদের এলাকা কৃষ্ণসাগরের উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। জিরোম এর বর্ণনা মতে মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে।
#শাসককর্তা হিসেবে আমার প্রজাদেরকে লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য। এ কাজের জন্য তোমাদের ওপর আলাদা করে কোন কর বসানো আমার জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ দেশের যে অর্থ ভাণ্ডার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন এ কাজ সম্পাদনের জন্য তা যথেষ্ট। তবে শারিরীক শ্রম দিয়ে তোমাদের আমাকে সাহায্য করতে হবে।
# যদিও নিজের সামর্থ্য মোতাবেক আমি অত্যন্ত মজবুত ও সৃদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করেছি তবুও এটি কোন অক্ষয় জিনিস নয়। যতদিন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন এটি প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তারপর এর ধ্বংসের জন্য আল্লাহ যে সময় নির্ধারিত করে রেখেছেন তা যখন এসে যাবে তখন কোন জিনিসই একে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। “প্রতিশ্রুতির সময়” —এর দু’ অর্থ হয়। এর অর্থ প্রাচীরটি ধ্বংস হবার সময়ও হয় আবার প্রত্যেকটি জিনিসের মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য আল্লাহ যে সময়টি নির্ধারিত করে রেখেছেন সে সময়টিও হয় অর্থাৎ কিয়ামত।
যুলকারনাইন নির্মীত প্রাচীর সম্পর্কে কিছু লোকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। তারা সুপরিচিত চীনের প্রাচীরকে যুলকারনাইনের প্রাচীর মনে করে। অথচ এ প্রাচীরটি ককেশাসের দাগিস্তান অঞ্চলের দরবন্দ ও দারিয়ালের (Darial) মাঝখানে নির্মীত হয়। ককেশীয় অঞ্চল বলতে বুঝায় কৃষ্ণ সাগর ( Black sea ) ও কাস্পিয়ান সাগরের ( Caspian sea ) মধ্যবর্তী এলাকা। এ এলাকায় কৃষ্ণ সাগর থেকে দারিয়াল পর্যন্ত রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়। এর মাঝখানে যে সংকীর্ণ গিরিপথ রয়েছে কোন দুর্ধর্ষ হানাদার সেনাবাহিনীর পক্ষেও তা অতিক্রম করা সম্ভব নয়। তবে দরবন্দ ও দারিয়ালের মধ্যবর্তী এলাকায় পর্বত শ্রেণীও বেশী উঁচু নয় এবং সেখানকার পার্বত্য পথগুলোও যথেষ্ট চওড়া। প্রাচীন যুগে উত্তরের বর্বর জাতিরা এ দিক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে হত্যা ও লুটতরাজ চালাতো। ইরানী শাসকগণ এ পথেই নিজেদের রাজ্যের ওপর উত্তরের হামলার আশঙ্কা করতেন। এ হামলাগুলো রুখবার জন্য একটি অত্যন্ত মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। এ প্রাচীর ছিল ৫০ মাইল লম্বা, ২৯০ ফুট উঁচু এবং ১০ ফুট চওড়া। এখনো পর্যন্ত ঐতিহাসিক গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি যে, এ প্রাচীর শুরুতে কে এবং কবে নির্মাণ করেছিল। কিন্তু মুসলমান ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদগণ এটিকেই যুলকারনাইনের প্রাচীর বলে অভিহিত করেছেন। কুরআন মজীদে এ প্রাচীর নির্মাণের যে প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে তার চিহ্নসমূহ এখনো এখানে পাওয়া যায়।
ইবনে জারীর তাবারী ও ইবনে কাসীর তাদের ইতিহাস গ্রন্থে এ ঘটনাটি লিখেছেন। ইয়াকুতী তাঁর মু’জামূল বুলদান গ্রন্থে এরই বরাত দিয়ে লিখেছেন, হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আজারবাইজান বিজয়ের পর ২২ হিজরীতে সুরাকাহ্ ইবনে আমরকে বাবুল আবওয়াব (দরবন্দ) অভিযানে রওয়ানা করেন। সূরাকাহ আবদুর রহমান ইব্ন রবী’আহকে নিজের অগ্রবর্তী বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে সামনের দিকে পাঠিয়ে দেন। আবদুর রহমান যখন আর্মেনীয়া এলাকায় প্রবেশ করেন তখন সেখানকার শাসক শারবরায যুদ্ধ ছাড়াই আনুগত্য স্বীকার করেন। এরপর তিনি বাবুল আবওয়াবের দিকে অগ্রসর হবার সংকল্প করেন। এ সময় শারবরায তাঁকে বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে যুলকারনাইনের প্রাচীর পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য পাঠিয়েছিলাম। সে আপনাকে এর বিস্তারিত বিবরণ শুনাতে পারে। তদানুসারে তিনি আবদুর রহমানের সামনে সেই ব্যক্তিকে হাযির করেন। (তাবারী, ৩ খণ্ড, ২৩৫-৩৩৯ পৃঃ; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ খণ্ড; ১২২-১২৫ পৃঃ এবং মু’জামুল বুলদান, বাবুল আবওয়াব প্রসঙ্গ)।
এ ঘটনার দুশো’ বছর পর আব্বাসী খলীফা ওয়াসিক বিল্লাহ (২২৭-২৩৩ হিঃ) যুলকারনাইনের প্রাচীর পরিদর্শন করার জন্য সাল্লামুত তারজুমানের নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি অভিযাত্রী দল পাঠান। ইয়াকুত তাঁর মু’জামুল বুলদান এবং ইবনে কাসীর তার আল বিদায়া ওয়ান নিহারা গ্রন্থে এর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদের বর্ণনা মতে, এ অভিযাত্রী দলটি সামর্রাহ থেকে টিফলিস, সেখান থেকে আস্সারীর, ওখান থেকে আল্লান হয়ে দীলান শাহ এলাকায় পৌঁছে যায়। তারপর তারা খাযার (কাস্পিয়ান) দেশে প্রবেশ করেন। এরপর সেখান থেকে দরবন্দে পৌঁছে যুলকারনাইনের প্রাচীর পরিদর্শন করে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২ খণ্ড, ১১১ পৃঃ ; ৭ খণ্ড, ১২২-১২৫ পৃঃ, মু’জামুল বুলদান, বাবুল আবওয়াব) এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, হিজরী তৃতীয় শতকেও মুসলমানরা ককেশাসের এ প্রাচীরকেই যুলকারনাইনের প্রাচীর মনে করতো।
ইয়াকুত মু’জামুল বুলদানের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টিকেই সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। খাযার শিরোনামে তিনি লিখেছেনঃ আরবী——————————— “এটি তুরস্কের এলাকা। যুলকারনাইন প্রাচীরের সন্নিকটে দরবন্দ নামে খ্যাত বাবুল আবওয়াবের পেছনে এটি অবস্থিত।” এ প্রসঙ্গে তিনি খলীফা মুকতাদির বিল্লাহর দূত আহমদ ইব্ন ফুদলানের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করেছেন। তাতে খাযার রাজ্যের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, খাযার একটি রাজ্যের নাম এর রাজধানী ইতল। ইতল নদী এ শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদীটি রাশিয়া ও বুলগার থেকে এসে খাযার তথা কাম্পিয়ান সাগরে পড়েছে। বাবুল আবওয়াব শিরোনামে তিনি লিখছেন, তাকে আলবাব এবং দরবন্দও বলা হয়। এটি খাযার (কাস্পিয়ান) সাগর তীরে অবস্থিত। কুফরীর রাজ্য থেকে মুসলিম রাজ্যের দিকে আগমনকারীদের জন্য এ পথটি বড়ই দুর্গম ও বিপদ সংকুল। এক সময় এটি নওশেরেওঁয়ার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ইরানের বাদশাহগণ এ সীমান্ত সংরক্ষণের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দিতেন।
# যুলকারনাইনের কাহিনী এখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কাহিনীটি যদিও মক্কার কাফেরদের পরীক্ষামূলক প্রশ্নের জবাবে শুনানো হয় তবুও আসহাবে কাহফ এবং মূসা ও খিযিরের কাহিনীর মতো এ কাহিনীটিকেও কুরআন নিজের রীতি অনুযায়ী নিজের উদ্দেশ্য সাধনে পুরোপুরি ব্যবহার করেছে। এতে বলা হয়েছে, যে যুলকারনাইনের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তোমরা আহলি কিতাবদের মুখে শুনেছো সে নিছক একজন বিজেতা ছিল না বরং সে ছিল তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসী মু’মিন। সে তার রাজ্যে আদল, ইনসাফ ও দানশীলতার নীতি কার্যকর করেছিল। সে তোমাদের মতো সংকীর্ণচেতা ছিল না। সামান্য সরদারী লাভ করে তোমরা যেমন মনে করো, আমি অদ্বিতীয়, আমার মতো আর কেউ নেই, সে তেমন মনে করতো না।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*ইয়াজুজ মাজুজ : পবিত্র কোরআনের শৈল্পিক ও সুবিন্যাস্ত উপস্থাপনা ও বর্ণনা ভংগীর বিষয়টি অনুধাবন করার জন্যে এখানে আমাদেরকে একটু বিরতি নিতে হচ্ছে। আলােচ্য আয়াতে যে চিত্রটি আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, তা প্রকৃতির মাঝে উন্মুক্ত ও বিকশিত হয়ে আছে। চিত্রটিতে উজ্জ্বল ও দীপ্তমান সূর্যকে দেখতে পাচ্ছি। এই সূর্যের মাঝে এবং আয়াতে বর্ণিত সম্প্রদায়ের মাঝে কোনাে আড়াল নেই, কোনাে বাধা নেই। তদ্রুপ যুলকারনাইনের অন্তর ও অন্তর্নিহিত বাসনা ও ইচ্ছা আল্লাহর কাছে উন্মুক্ত। ফলে কোরআনের অপূর্ব বর্ণনাভংগীর মাধ্যমে প্রকৃতি ও হৃদয়ের অবস্থা চিত্রায়নে এক বিস্ময়কর সামঞ্জস্য আমরা দেখতে পাই। যুলকারনাইন কোন স্থানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন তার সুনির্দিষ্ট ভৌগােলিক পরিচয় নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তদ্রুপ দুই বাঁধ বলতে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন তাও নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনের বক্তব্য দ্বারা আমরা শুধু এতােটুকু বুঝতে পারছি যে, তিনি দুটো প্রাকৃতিক প্রাচীর অথবা দুটো কৃত্রিম বাঁধের মধ্যবর্তী একটা এলাকায় গিয়েছিলেন। এই উভয় প্রাচীর অথবা বাধের মাঝখান দিয়ে একটি পথ অথবা ফাঁকা জায়গা অতিক্রম করছিলাে। সেখানে তিনি এমন এক পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের সাক্ষাত পান যারা তার কথাও বুঝতে পারছিলাে না। এই সম্প্রদায় যখন যুল কারনাইনের মতাে একজন দিগ্বিজয়ী ও শক্তিধর ব্যক্তিকে তাদের সামনে উপস্থিত পেলাে এবং তার মাঝে ক্ষমতা ও গঠনমূলক কাজের পরিচয় পেলাে তখন তারা ইয়াজুজ মাজুজ এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে একটা মযবুত প্রাচীর নির্মাণ করার জন্যে প্রস্তাব পেশ করলাে। কারণ ইয়াজুজ অপর প্রান্ত থেকে তাদের ওপর আক্রমণ করতাে এবং তাদের শস্যাদি বিনষ্ট করে ফেলে। তাদের প্রতিহত করার মতাে ক্ষমতা ও সামর্থ্য তাদের ছিলাে না। তাই তারা যুল কারনাইনকে একটা প্রাচীর নির্মাণ করে দেয়ার জন্যে অনুরােধ জানালো। এ কাজের জন্যে আর্থিক সহায়তা দানের প্রস্তাবও তারা পেশ করলাে। একজন ন্যায় পরায়ন ও সৎ শাসক হিসেবে পৃথিবী থেকে সকল অন্যায় ও অবিচারের মূলােৎপাটন করায় যে মহৎ আদর্শ যুলকারনাইন অনুসরণ করতেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ওদের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবটি নাকচ করে দিলেন। তিনি স্বেচ্ছায় একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিতে সম্মতি জানালেন, তবে এই কঠিন ও দুরূহ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সমাধা করার উদ্দেশ্যে ওদের দৈহিক শ্রম ও প্রয়ােজনীয় সামগ্রী সরবরাহের জন্য তিনি ওদেরকে পরামর্শ দেন। ফলে তারা অনেকগুলাে লােহার পাত সংগ্রহ করে দুই প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাটিতে স্তূপ আকারে রেখে দিলাে। তখন প্রাচীর দুটো দেখতে মনে হচ্ছিলাে যেন ঝিনুকের দুটো খােল। আর এই খােল দুটো স্তূপটিকে আবৃত করে রেখেছে। স্তূপটি যখন প্রাচীর দুটোর সমান সমান হয়ে গেলাে তখন লােহার পাতগুলাে আগুনে পােড়ানাের জন্যে তাদেরকে হাপরে দম দিতে বলা হলাে। এতে লােহার পাতগুলাে আগুনে পরিণত হয়ে গেলাে। তখন যুলকারনাইন তাদেরকে গলিত তামা আনতে বললেন। এই তামা তিনি লােহার উত্তপ্ত পাতগুলাের ওপর ঢেলে দিলেন। ফলে লােহার প্রাচীরটি আরাে দৃঢ় এবং আরাে মযবুত হয়ে গেলাে। লােহাকে মযবুত করার জন্যে বর্তমান যুগেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, লােহার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে তামার সংমিশ্রণ ঘটলে তাতে লােহার দৃঢ়তা ও কাঠিণ্য বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তায়ালা এই পদ্ধতির সন্ধানই দিয়েছিলেন যুলকারনাইনকে। শুধু তাই নয়, বরং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উদ্ভবের হাজার হাজার বছর আগেই আল্লাহ তায়ালা তার অমর গ্রন্থে এই পদ্ধতিটি উল্লেখ করেছেন। উত্তপ্ত লােহারপাত এবং গলিত তামার সাথে প্রাচীর দুটো সেঁটে গেলাে। ফলে ইয়াজুজ মাজুজদের আক্রমণের পথও বন্ধ হয়ে গেলাে, এই লােহার প্রাচীর এতােই মযবুত ও উঁচু ছিলাে যে, এটা অতিক্রম করা বা এটাকে ছিদ্র করার মতাে শক্তি-সামর্থ্য তাদের ছিলাে না। যার কারণে ওই দূর্বল ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করাও তাদের জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়লাে। ফলে দুর্বল ও অসহায় লােকগুলাে তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে পেলাে। এ ধরনের একটি বিরাট কাজ আঞ্জাম দিয়ে জুলকারনাইনের মনে বিন্দুমাত্র গর্ব ও অহংকারের সৃষ্টি হয়নি। শক্তি জ্ঞানের নেশায়ও তিনি মত্ত হননি। বরং আল্লাহর কুদরতকে স্মরণ করে তার দরবারে শােকর আদায় করেছেন জনকল্যাণমূলক একটি কাজ করে তিনি বরং আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির সদ্ব্যবহারই করেছেন। তিনি নিজের শক্তির পরিবর্তে আল্লাহর শক্তিকে স্বীকার করেছেন। নিজেকে তার চরণেই সঁপে দিয়েছেন, একজন মােমেন বান্দার পক্ষে যা বিশ্বাস করা উচিত তাই ঘােষণা দিয়ে জানিয়েছেন যে, এই সকল পাহাড়-পর্বত এই সকল নির্মিত বাঁধ ও প্রাচীর কেয়ামতের পূর্ব-মুহূর্তে-ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে। কোনাে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। গােটা পৃথিবী তখন শূন্য ও সমতল একটা ভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে। আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে। এখানে এসে যুলকারনায়ন এর ঘটনাবহুল জীবনের একটা খন্ড চিত্রের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ন শাসকের বাস্তব ও জীবন্ত নমুনা। এই শ্রেণীর শাসকদেরকে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর কর্তৃত্ব দান করলে তাদের জন্যে সকল ধরনের উপায় উপকরণ সহজলভ্য করে দেন। ফলে তারা গােটা পৃথিবী জয় করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর ফলে তারা অত্যাচারী ও অহংকারী হয়ে ওঠে না, স্বৈরাচারী ও দাম্ভিক হয়ে ওঠে না। তাদের বিজয়কে তারা নিছক আর্থিক ফায়দা লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে না, ব্যক্তি, সমাজ ও দেশকে শােষণ করার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে না। বিজিত দেশের বাসিন্দাদের সাথে দাস সুলভ আচরণ করে না, তাদেরকে ব্যক্তিস্বার্থ ও লােভ-লালসা চরিতার্থ করার জন্যে ব্যবহার করে না, বরং যেখানেই তাদের আগমন ঘটে সেখানেই ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়, অসহায় ও দুর্বলদের সাহায্য-সহযােগিতায় তারা এগিয়ে আসে। কোনরূপ প্রতিদান ব্যতীতই দুর্বলদেরকে সকল অনাচার ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করে, আল্লাহর দেয়া শক্তিকে তারা গঠনমূলক ও সংস্কারমূলক কাজে নিয়ােজিত করে। তারা অন্যায়কে প্রতিহত করে, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করে। আর এই সকল কল্যাণ ও মংগলজনক কাজ সমাধা করার পর তারা এর পেছনে আল্লাহর দয়া ও করুণাকেই ক্রিয়াশীল মনে করে। তারা ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেও আল্লাহর শক্তি, ক্ষমতা ও সামর্থ্যের কথা বিন্দুমাত্রও বিস্মৃত হয় না। তারা সর্বক্ষণ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইয়াজুজ মাজুজ কারা? এরা এখন কোথায় আছে? অতীতে এদের অবস্থা কেমন ছিলাে এবং ভবিষ্যতে কেমন হবে? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। পবিত্র কোরআনে এবং হাদীস শরীফে যতােটুকু বলা হয়েছে ততােটুকুই আমরা জানি; এর বেশী আর কিছুই আমাদের জানা নেই। যুলকারনাইনের বরাত দিয়ে পবিত্র কোরআনে যে বক্তব্য এসেছে তাতে বলা হয়েছে, ‘যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন। এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।’ এই বক্তব্যে নির্দিষ্ট কোনাে সময়ের কথা বলা হয়নি। তাই এটাও সম্ভব হতে পারে যে, হিংস্রতর সম্প্রদায় যেদিন থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখন্ড আক্রমণ করে সব কিছু লন্ড-ভন্ড করে দিচ্ছিলাে সেদিন থেকেই জুলকারনাইন নির্মিত বাঁধটা ভেংগে ফেলা হয়েছিলাে। সূরায়ে আম্বিয়ার একটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চ ভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে, আমাদের প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে…’ ওই আয়াতটিতেও ইয়াজুজ ও মাজুজ-এর বন্ধনমুক্ত করার কোনাে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা হয়নি। আল্লাহর প্রতিশ্রুত সময় বলতে কেয়ামতের আগমনের সময়টি বুঝানাে হয়েছে। আলােচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, কেয়ামতের সময় নিকটবর্তী হয়েছে বা ঘনিয়ে এসেছে। কথাটি কিন্তু বলা হয়েছে হযরত মােহাম্মদ(স.)-এর যুগে, অর্থাৎ আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খােদায়ী হিসাব আর মানবীয় হিসাবের মাঝে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। মানুষের হিসাব অনুযায়ী যা কোটি বছর, আল্লাহর কাছে তা একটা নগণ্য মুহূর্ত মাত্র। সে কারণেই কেয়ামত সংঘটিত হতে সম্ভবত এখনও কোটি কোটি বছর বাকী থাকা সত্তেও আল্লাহর হিসাব অনুযায়ী তা নিকটবর্তী। কাজেই কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় এবং আমাদের বর্তমান সময়ের মধ্যবর্তী যে কোনাে এক সময়ে আলােচ্য বাঁধটি উনুক্ত হয়ে গিয়ে থাকলে তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। যদি তাই হয়, তাহলে তা তার ও মংগােলীয়গােষ্ঠীর লােকদেরকে ইয়াজুজ ও মাজুজ হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে যাদের হিংস্র ও দানবীয় তান্ডবলীলা গােটা প্রাচ্যের দেশগুলােকে লন্ড-ভন্ড করে দিয়েছিলাে। ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীসে জানা যায় রসূলুল্লাহ(স.)-এর স্ত্রী যয়নব বিনতে জাহল বলেন যে, একদিন রাসূল(স.) ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং তার চেহারা রক্তিম দেখাচ্ছিলাে। তিনি বললেন ‘আরবদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এক মহাবিপদ তাদের জন্যে ঘনিয়ে এসেছে। আজ বাঁধের বন্ধন থেকে ইয়াজুজ ও মাজুজকে এভাবে মুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি তাঁর শাহাদাতের আংগুল এবং বৃদ্ধাংতুলি দুটো দ্বারা কড়ার ন্যায় বানিয়ে দেখালেন। আমি বললাম, ‘সৎ লােকগুলাে আমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা সত্তেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবাে?’ তিনি উত্তরে বললেন, হাঁ, যদি অনাচার বেড়ে যায়।’ এই স্বপ্নটি আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে রসূল(স.) দেখেছিলেন। আর তাতার গােষ্ঠীর ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয় এর বেশ কয়েক যুগ পর। হালাকুখানের হিংস্র সেনাদলের আক্রমণে আব্বাসীয় বংশের সর্বশেষ খলিফা আল মােতাসেস-এর শাসনাধীন গােটা আরব সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়, আর এটাই সম্ভবত রসূল(স.)-এর স্বপ্নের প্রতিফলন। তবে এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। আমরা যেটা বলছি সেটা চুড়ান্ত বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে নয়; বরং দৃঢ় অনুমানের ওপর নির্ভর করে বলছি। এখন পুনরায় আলােচ্য সূরার মূল প্রসংগে ফিরে যাই।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
ইয়া’জূজ ও মা’জূজের বিবরণ:
ইয়া’জূজ ও মা’জূজ মূলত মানুষ। তারা আদম ও হাওয়ারই সন্তান। সাহাবী আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ইয়া’জূজ ও মা’জূজ হচ্ছে আদম (عليه السلام)-এর সন্তান। তাদেরকে যদি সাধারণ মানব সমাজে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে তারা ওদের স্বাভাবিক জীবন যাপন বিনষ্ট করে দেবে। তাদের কেউ মরবে না যতক্ষণ না তার সন্তান-সন্ততি এক হাজার বা তার বেশিতে পৌঁছে। (মিনহাতুল মা‘বূদ ফী তারবীবি মুসনাদিত তায়ালিসী ২/২১৯.)
তাদের গঠন প্রকৃতি: তাদের গঠন বর্ণনা দিয়ে যে সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, তাদেরকে দেখতে মোঘল তুর্কীদের মতো মনে হবে। তাদের চোখ হবে ছোট। নাক হবে ছোট ও চ্যাপটা। চুল হবে লাল-সাদা মিশ্রিত হলুদ বর্ণের। তাদের চেহারা যেন চামড়া মোড়ানো ঢালের ন্যায় তথা চওড়া ও ঝুলে পড়া গণ্ডদেশবিশিষ্ট। (নিহায়া/আল ফিতান ওয়াল মালাহিম ১/১৫৩.)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) ইবনু হারমালাহ থেকে তিনি তাঁর খালা থেকে বর্ণনা করেন, তাঁর খালা বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর খুৎবায় বলেন, তোমরা বলছ যে, কোন শত্র“ নেই, অথচ তোমরা ইয়া’জূজ ও মা’জূজ আসা পর্যন্ত শত্র“র মোকাবেলা করেই যাবে। যাদের চেহারা হবে প্রশস্ত। চোখ হবে ছোট, চুল হবে লাল-সাদা মিশ্রিত হলুদ বর্ণের। তারা প্রত্যেক উঁচু জায়গা থেকে দ্রুত নিচে পদার্পন করবে। তাদের চেহারা যেন চামড়া মোড়ানো ঢালের ন্যায় তথা চওড়া ও ঝুলে পড়া গণ্ডদেশবিশিষ্ট। (আহমাদ হা: ২২৩৩১.)
ইয়াজূজ ও মা’জূজের আবির্ভাবের প্রমাণসমূহ:
শেষ যুগে ইয়া’জূজ ও মা’জূজের আবির্ভাব কিয়ামতের বড় বড় আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। তাদের আবির্ভাবের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহয় প্রমাণ রয়েছে। যেমন উক্ত আয়াতগুলোতে রয়েছে।
ইয়া’জূজ ও মা’জূজ সংক্রান্ত হাদীসের সংখ্যা অনেক, যা মুতাওয়াতির পর্যায়ে চলে যাবে।
সাহাবী আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইসরা তথা মিরাজ হয় সে রাতে তিনি ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা (عليه السلام)-এর সাথে সাক্ষাত করেন। তাঁরা সবাই তখন পরস্পর কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তাঁরা উক্ত আলোচনার জন্য ঈসা (عليه السلام) কে আবেদন করলে তিনি দাজ্জালের হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করার পর বলেন: এরপর মানুষ তাদের নিজ নিজ শহরে চলে যাবে। তখন হঠাৎ তাদের সম্মুখীন হবে ইয়া’জূজ ও মা’জূজ। তারা প্রত্যেক উঁচু জায়গা থেকে নিচের দিকে দ্রুত অবতরণ করবে। তারা কোন পানির পাশ দিয়ে যেতে না যেতেই তা পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে এবং কোন বস্তুর পাশ দিয়ে যেতে না যেতেই তা ধ্বংস করে দেবে। তখন মানুষেরা আমার নিকট আশ্রয় নিলে আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করব। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মেরে ফেলবেন। তখন পুরো পৃথিবী তাদের দুর্গন্ধে গন্ধময় হয়ে যাবে। পুনরায় তারা আবারো আমার নিকট আশ্রয় নেবে। তখন আমি তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করলে আকাশ ভারী বৃষ্টি বর্ষণ করবে। অতঃপর বৃষ্টির পানি তাদের শরীরগুলোকে স্থল ভাগ থেকে ভাসিয়ে নিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করবে। (আহমাদ ৪/১৮৯-১৯০, হাকিম ৪/৪৮৮-৪৮৯)
ইয়া’জূজ মা’জূজের প্রাচীর:
যুল-কারনাইন বাদশা উক্ত প্রাচীর নির্মাণ করেন। যাতে ইয়া’জূজ-মা’জূজ ও তাদের প্রতিবেশির মাঝে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় যারা যুল-কারনাইনের কাছে সাহায্য কামনা করছিল। যেমন আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
তবে উক্ত প্রাচীরের সঠিক স্থান এখনো কেউ নির্ণয় করতে পারেনি। কতক রাজা-বাদশা ও ঐতিহাসিকগণ সে স্থানের পরিচয় দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল আব্বাসীয় খলীফা ওয়াসিক (মৃত্যু ২৩২ হি:) কতক আমীরদেরকে সৈন্যদলসহ সে প্রাচীর দেখার জন্য প্রেরণ করেছেন যাতে তার কাছে সে প্রাচীরের বর্ণনা দিতে পারে। তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পৌঁছল এমনকি সে প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তারা দেখতে পেলো, সে প্রাচীরটি লোহা ও পিতল দিয়ে নির্মিত। তারা আরো উল্লেখ করলেন যে, সেখানে একটি বিরাট দরজা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাতে বড় বড় কয়েকটি তালা রয়েছে। তারা আরো দেখতে পেলেন, একটি দুর্গে দুধ ও মধুর অবশিষ্টাংশ রয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী বাদশার পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত রয়েছে, যিনি সুউচ্চ ও সুঠাম দেহের অধিকারী যা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ও তার সমান হবে না। তারপর তারা দেশে ফিরে আসলেন, তাদের ভ্রমণ ৬০ দিনের অধিক ছিল এবং তারা আরো অনেক ভয়ংকর ও আশ্চর্যজনক জিনিস দেখলেন।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) এ ঘটনা তার স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, তবে তার কোন সনদ উল্লেখ করেননি। আল্লাহ তা‘আলাই তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ভাল জানেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৫/১৯৩.)
অনেকে মনে করেন ইয়া’জূজ ও মা’জূজের আর্বিভাব হয়ে গেছে। মূলত তাদের আর্বিভাব এখনো হয়নি। কিয়ামতের আলামতস্বরূপ যে ইয়া’জূজ ও মা’জূজ আগমন করবে তারা শেষ যুগে আসবে। কারণ সহীহ হাদীস প্রমাণ করে তাদের আগমন ঈসা (عليه السلام)-এর অবতরণের পর হবে। তিনিই তাদের প্রতি বদদু‘আ করবেন, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারপর তাদেরকে সাগরে নিক্ষেপ করবেন এবং মানুষ ও জমিনকে তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
#শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়া শরীয়তসম্মত।
# ইয়া’জূজ ও মা’জূজের অস্তিত্ব রয়েছে, এখনো তারা প্রাচীরের মধ্যে আবব্ধ।
# ইয়া’জূজ ও মা’জূজের আর্বিভাব কিয়ামতের আলামত, তারা প্রাচীর থেকে বের হয়ে দুনিয়াতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৯২-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিতে গিয়ে বলেন যে, যুলকারনাইন পূর্ব দিকে সফর শেষ করে একপথ ধরে চলতে থাকেন। চলতে চলতে দেখতে পান যে, দু’টি পাহাড় পরস্পর মিলিতভাবে রয়েছে কিন্তু ঐ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে একটি ঘাঁটি রয়েছে, যেখান দিয়ে ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হয়ে তুর্কীদের উপর ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে থাকে। তারা তাদেরকে হত্যা করে, তাদের বাগান ও ক্ষেত খামার নষ্ট করে, শিশুদেরকেও মেরে ফেলে এবং সবদিক দিয়েই তাদের সর্বনাশ সাধন করে। ইয়াজুজ মাজুজও মানুষ, যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত আদমকে (আঃ) বলবেনঃ “হে আদম (আঃ) !” তিনি তখন বলবেনঃ “লাব্বায়কা ওয়া সা’দাইকা (এই তো আমি হাযির আছি)। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “আগুনের অংশ পৃথক কর।”তিনি বলবেনঃ “কতটা অংশ পৃথক করবো?” জবাবে মহান আল্লাহ বলবেনঃ “প্রতি হাযার হতে নয়শ’ নিরানব্বই জনকে পৃথক কর (অর্থাৎ হাযারের মধ্যে নয়শ’ নিরানব্বই জন জাহান্নামী এবং একজন জান্নাতী)।”
এটা ঐ সময় হবে যখন শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে দুটি দল এমন রয়েছে যে, তারা যার মধ্যে থাকবে তাকে বেশী করে দিবে। অর্থাৎ ইয়াজুজ ও মাজুজ।” ইমাম নওয়াভী (রঃ) সহীহ মুসলিমের শরাহতে এক অতি বিস্ময়কর কথা লিখেছেন যে, হযরত আদমের (আঃ) বিশেষ শুক্রের (বীর্যের কয়েক ফোঁটা যা মাটিতে পড়েছিল তা থেকেই ইয়াজুজমাজুজকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ঐ শুক্রের সাথে হযরত হাওয়ার (আঃ) শুক্র মিশ্রিত হয় নাই। কিন্তু এটা স্মরণ রাখার যোগ্য যে, এই উক্তিটি খুবই গরীব বা দুর্বল। এর উপর আলী (জ্ঞান সম্পর্কীয়) ও নকলী (শরীয়ত সম্পৰ্কীয়) কোনই দলীল নেই। আহলে কিতাব হতে এরূপ কথা এসেছে যা মানার যোগ্য মোটেই নয়। তারা এ ধরণের কথা নিজেরাই বানিয়ে নিয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
হযরত সুমরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত নূহের (আঃ) তিনটি পুত্র ছিল। সাম, হা’ম এবং ইয়াফিস। সমস্ত আরব সা’মের বংশধর। সমস্ত হাবশী হা’মের বংশধর। সমস্ত তূর্কী ইয়াফিসের বংশধর।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদের (রঃ) মুসনাদে বর্ণিত হয়েছে)
কোন কোন আলেমের উক্তি এই যে, ইয়াজুজ-মাজুজ তূর্কীদের পূর্ব পুরুষ ইয়াফিসের সন্তানদেরই অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে তুর্কী বলার কারণ এই যে, তাদের ফাসাদ ও দুষ্টামির কারণে তাদেরকে মানুষের জনবসতির পিছনে পাহাড়ের আড়ালে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) যুলকারনাইনের সফর সম্পর্কে, ঐ প্রাচীর নির্মাণ সম্পর্কে এবং ইয়াজুজ-মাজুজের দেহাকৃতি ও কান ইত্যাদি সম্পর্কে ওহাব ইবন মনাবাহ (রঃ) হতে একটি অতিলম্বা চওড়া ঘটনা স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ওটা বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক হওয়া ছাড়াও বিশুদ্ধতা হতে বহু দূরে রয়েছে। মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমেও এ ধরনের বহু ঘটনা উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু ঐ গুলিও গারীব ও বেঠিক। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
যুলকারনাইন যখন পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছলেন তখন তিনি তথায় এমন এক সম্প্রদায়কে পেলেন যারা দুনিয়ার অন্যান্য লোকদের হতে বহু দূরে অবস্থান করার কারণে এবং তাদের একটা নির্দিষ্ট ভাষা হওয়ার কারণে অন্যদের ভাষা প্রায়ই বুঝতে পারতো না। ঐ লোকগুলি যুলকারনাইনের শক্তি সামর্থ এবং জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে তার নিকট আবেদন জানিয়ে বলেঃ “যদি আপনি সম্মত হন তবে আমরা কর হিসেবে আপনার জন্যে বহু মালধন ও আসবাবপত্র জমা করবো এবং এর বিনিময়ে আপনি ঐ পর্বত দ্বয়ের মধ্যবর্তী ঘাটিকে কোন সুদৃঢ় প্রাচীর দ্বারা বন্ধ করে দিবেন, যাতে আমরা ঐ বিবাদ ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের প্রতি দিনের অত্যাচার হতে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারি। তাদের একথার জবাবে হযরত যুলকারনাইন বললেনঃ “তোমাদের মাল ধনের আমার কোনই প্রয়োজন নেই। আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দান করেছেন তা তোমাদের ধন দৌলত অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম ও উৎকৃষ্ট।” যেমন হযরত সুলাইমান (আঃ) সাবা দেশের রানীর দূতদেরকে বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কি আমাকে ধন সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে শ্রেষ্ঠ।” (২৭:৩৬) অতঃপর যুলকারনাইন ঐ লোকদেরকে বললেনঃ “তোমরা আমাকে তোমাদের দৈহিক শক্তি ও শ্রম দ্বারা সাহায্য কর। তাহলে আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দিচ্ছি।” (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হলো খণ্ড। যুলকারনাইন তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা আমার নিকট লৌহখণ্ডসমূহ নিয়ে এসো।” তখন তারা তার কাছে ওগুলি আনয়ন করলো। তখন তিনি প্রাচীর নির্মাণ কার্যে লেগে। পড়লেন। ওটা দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে এমন হলো যে, সমস্ত জায়গাকে ঘিরে ফেললো এবং পর্বত শিখর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। প্রাচীরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্বের বর্ণনায় বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। যখন প্রাচীরটির নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়ে গেল তখন তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেনঃ “এখন তোমরা এই প্রাচীরের চতুষ্পর্শ্বে আগুন জ্বালিয়ে দাও এবং হাঁপরে দম দিয়ে থাকো।” যখন ওটা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত ‘ হলো তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ “এখন তোমরা গলিত তাম্র আনয়ন কর এবং ওর চতুর্দিকে সম্পূর্ণরূপে বহিয়ে দাও।” এ কাজও করা হলো। সুতরাং ঠাণ্ডা হওয়ার পর প্রাচীরটি অত্যন্ত মযবুত হয়ে গেল। প্রাচীরটি দেখে মনে হলো যেন তা রেখা যুক্ত চাদর।
বর্ণিত আছে যে, একজন সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) খিদমতে আর করেনঃ “আমি ঐ প্রাচীরটি দেখেছি। তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে প্রশ্ন করেনঃ “ওটা কিরূপ?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যেন তা রেখাযুক্ত চাদর, যাতে লাল ও কালো রেখা রয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তুমি ঠিকই বলেছো।”। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ রিওয়াইয়াতটি মুরসাল)
খলীফা ওয়াসিক স্বীয় খিলাফত কালে তার কোন এক আমীর বা সভাষদকে এক সেনাবাহিনী ও বহু সাজ-সরঞ্জামসহ এই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন যে, তারা যেন ঐ প্রাচীরটি দেখে এসে তাঁর নিকট ওর বর্ণনা দেন ঐ সেনাবাহিনী দুই বছরেরও অধিক কাল সফর করেন এবং তাঁরা ঐ প্রাচীরের নিকট পৌঁছে যান। তারা দেখতে পান যে, প্রাচীরটি লৌহ ও তাম্র দ্বারা নির্মিত। তাতে একটি বিরাট দর রয়েছে এবং তাতে একটি বৃহৎ তালা লাগানো আছে। প্রাচীরটির নির্মাণ কার্য শেষ করার পর যে মসল্লা অবশিষ্ট ছিল তা একটি বুরুজে রক্ষিত আছে। সেখানে প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে। প্রাচীর অত্যন্ত উচ্চ। যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ওর উপরে আরোহন করা সম্ভম্বপর নয়। ওর সাথে মিলিত পাহাডগুলি দু”দিক দিয়ে বরাবর চলে গিয়ে তারা আরো বহু বিস্ময়কর জিনিস অবলোকন করেন এবং ফিরে এসে খলীফার নিকট সব বিবরণ বর্ণনা করেন।
৯৭-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআ’লী খবর দিতে গিয়ে বলছেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের ক্ষমতা নেই যে, তারা ঐ প্রাচীরের উপর উঠে তা অতিক্রম করতে পারে এবং এই শক্তিও নেই যে, তাতে ছিদ্র করে ওর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। উপরে চড়া তা ভেঙ্গে দেয়া তুলনায় সহজ বলে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষেত্রে (আরবী) শব্দ আনয়ন করা হয়েছে। মোট কথা, তারা ঐ প্রাচীরের উপর উঠতেও পারে না এবং ওতে ছিদ্র করতেও সক্ষম নয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াজুজ ও মাজুজ প্রত্যহ প্রাচীরটিকে খনন। করতে থাকে এবং এই পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তারা যেন সূর্যের আলো দেখেই ফেলবে। তারপর দিন অতিবাহিত হয়ে যায় এবং তাদের নেতা তাদেরকে হুকুম করেঃ “আজকের মত এখানেই শেষ কর, আগামীকাল এসে আবার ভাঙ্গা যাবে। কিন্তু পরের দিন এসে তারা ওটাকে পূর্বাপেক্ষা বেশী শক্ত পায়। কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় যখন তাদের বের হওয়া আল্লাহ চাবেন, তখন তারা ওটা খনন করতে করতে চোকলা বা বাকলের মত করে ফেলবে। ঐ সময় তাদের নেতা তাদেরকে বলবেঃ “এখন ছেড়ে দাও, আগামীকাল ইনশা আল্লাহ আমরা এটা ভেঙ্গে ফেলবো।” সুতরাং ইশাআল্লাহ বলার বরকতে পরের দিন যখন তারা আসবে, তখন ওটাকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিল ঐ অবস্থাতেই পাবে। ফলে, তৎক্ষণাৎ তারা ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলবে ও বাইরে বেরিয়ে পড়বে। বেরিয়ে এসেই তারা সমস্ত পানি অবলেহন করবে। জনগণ ব্রিত হয়ে দূর্গে আশ্রয় নেবে। তারা তাদের তীরগুলি আকাশের দিকে ছুড়বে। তীরগুলি রক্ত মাখানো অবস্থায় তাদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তারা তখন বলবেঃ আকাশবাসীদের উপরও আমরা বিজয় লাভ করেছি। অতঃপর তাদের ঘাড়ে গুটি বের হবে এবং সবাই আল্লাহর হুকুমে ঐ প্লেগেই ধ্বংস হয়ে যাবে। যার হাতে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তাদের দেহ ও রক্ত হবে জন্তুরখাদ্য, যার ফলে তারা খুব মোটা তাজা হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। সুনানে ইবনু মাজাহতেও এ রিওয়াইয়াতটি রয়েছে। ইমাম তিরমিযীও (রঃ) এটা আনয়ন করেছেন এবং বলেছেন যে, এ রিওয়াইয়াতটি গারীব। এর সনদ খুব মজবুত)
কা’ব আহ্বার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াজুজ-মাজুজ দৈনিক প্রাচীরটিকে চাটতে থাকে এবং ওটাকে একেবারে ছালের মত করে দেয়। তারপর তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “আজ চলো, আগামীকাল এটা ভেঙ্গে দেবো।” কিন্তু পরের দিন এসে দেখতে পায় যে, ওটা পূর্বে যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে অর্থাৎ আসল অবস্থাতেই ফিরে গেছে। অবশেষে তাদের উপর আল্লাহর ইলহাম হবে এবং তারা যাওয়ার সময় ইনশা-আল্লাহ বলে ফেলবে। সুতরাং তারা ওটাকে গত দিন যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিল ঐ অবস্থাতেই পাবে। কাজেই তারা ওটা ভেঙ্গে ফেলবে। (খুব সম্ভব এই কা’ব (রাঃ) থেকেই হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) এটা শুনে থাকবেন এবং তা বর্ণনা করে থাকবেন। তারপর কোন বর্ণনাকারী ধারণা বশতঃ এটাকে রাসূলুল্লাহর (সঃ) উক্তি মনে করে মারফুরূপে বর্ণনা করে দিয়েছেন। এ সব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী) আমরা যে এটা বর্ণনা করলাম এর পৃষ্ঠপোষকতা ঐ হাদীস দ্বারাও হয় যা মুসনাদে আহমাদে রয়েছে। হাদীসটি হলোঃ নবীর (সঃ) স্ত্রী হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, একদা নবী (সঃ) ঘুম হতে জাগ্রত। হন। তাঁর চেহারা মুবারক রক্তিম বর্ণ ধারণ করছিল এবং তিনি বলতে ছিলেনঃ “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ! আরবের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার সময় নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে এই পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গেছে।” অতঃপর তিনি স্বীয় অঙ্গুলীগুলি দ্বারা বৃত্ত করে তা দেখিয়ে দিলেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! আমাদের মত ভাল লোকগুলি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি ধ্বংস করে দেয়া হবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হাঁ যখন খারাপ ও কলুষিত লোকদের সংখ্যা বেশী হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় গ্রন্থেই এটা বর্ণিত হয়েছে। তবে সহীহ বুখারীতে বর্ণনাকারীদের তালিকায় হযরত উম্মে হাবীবার (রাঃ) উল্লেখ নেই। শুধু সহীহ মুসলিমে রয়েছে। এর সনদে এ ধরনের আরো অনেক কথা রয়েছে যা খুবই কম পাওয়া গেছে। যেমন যুহরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন উরওয়া (রাঃ) হতে। অথচ এ দুজন মনীষী হলেন তাবেয়ী। আবার চারজন মহিলা একে অপর হতে বর্ণনা করেছেন এবং তারা চারজনই সাহাবিয়্যাহ (রাঃ)। তাঁদের মধ্যে দুজন আবার নবীর (সঃ) স্ত্রীর কন্যা এবং বাকী দু’জন তার স্ত্রী! মুসনাদে বায্যারেও এই রিওয়াইয়াতটি হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে)
ঐ প্রাচীরের নির্মাণ কার্য সমাপ্ত করে ফুলকারনাইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এবং মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেনঃ “এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যে, তিনি দুষ্টদের দুষ্টামী হতে সৃষ্টজীবকে নিরাপত্তা দান করলেন। তবে যখন তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়ে যাবে তখন তিনি ওকে চুর্ণবিচর্ণ করে ফেলবেন। তখন এর দৃঢ়তা কোনই কাজে আসবে না। উষ্টীর ঔজ যখন ওর পিঠের সাথে সমানভাবে মিলে থাকে, উঁচু হয়ে থাকে না তখন আরববাসী ওকে (আরবী) বলে থাকে। অন্য আয়াতে রয়েছে যে, যখন হযরত মূসার (আঃ) সামনে আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের উপর ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ করেন তখন ঐ পাহাড় যমীনের সমান হয়ে যায়। সেখানেও শব্দ রয়েছে। সুতরাং কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ঐ প্রাচীরটিও চূর্ণ বিচূর্ণ। হয়ে যাবে এবং ইয়াজুজ ও মাজুজের বের হবার পথ বেরিয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআ’লার ওয়াদা অটল ও সত্য। কিয়ামতের আগমনও সত্য। ঐ প্রাচীর ভাঙ্গা মাত্রই ইয়াজুজ-মাজুজ বেরিয়ে পড়বে এবং জনগণের মধ্যে ঢুকে পড়বে। আপন পরের কোন পার্থক্য থাকবে না। এই ঘটনা দাজ্জালের আগমনের পর কিয়ামত সংঘটনের পূর্বে ঘটবে। এর পূর্ণ বর্ণনা (আরবী) (২১:৯৬)
এই আয়াতের তাফসীরে আসবে ইনশা আল্লাহ। এরপরে শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং সবাই একত্রিত হয়ে যাবে। একথাও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ কিয়ামতের দিন মানব ও দানব সবাই মিশ্রিত হয়ে যাবে।
তাফসীরে ইবনু জারীরে বানু খুযায়া গোত্রের একজন শায়েখের বর্ণনা রয়েছে যে, দানব ও মানব যখন পরস্পর মিলিত হয়ে যাবে, তখন ইবলীস বলবেঃ “আমি যাচ্ছি এবং ব্যাপার কি তা জেনে আসছি।” অতঃপর সে পূর্ব দিকে পালাবে। কিন্তু সেখানে ফেরেশতাদের দল দেখে সে থমকে দাড়াবে এবং ফিরে গিয়ে পশ্চিম দিকে যাবে। সেখানেও ঐ একই অবস্থা দেখে ডানে-বামে পালাবে। কিন্তু চতুর্দিকেই ফেরেশতাদের পরিবেষ্টন দেখে নিরাশ হয়ে গিয়ে চীৎকার শুরু করে দেবে। অকস্মাৎ একটা ছোট রাস্তা তার দৃষ্টি গোচর হবে। তখন সে তার সমস্ত সন্তানদেরকে নিয়ে ঐ পথ ধরে চলতে থাকবে। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখবে যে, দুযখের অগ্নি প্রজ্জ্বলিত রয়েছে। জাহান্নামের একজন দারোগা তাকে বলবেঃ “ওরে কষ্টদায়ক কলুষিত শয়তান! আল্লাহ তাআলা কি তোর মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন না? তুই কি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলি ?” সে উত্তরে বলবেঃ “আজ শাসন-গর্জন করছো কেন? আজ পরিত্রাণের পথ বাতলিয়ে দাও। আমি আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্যে প্রস্তুত রয়েছি। যদি আল্লাহর হুকুম হয় তবে আমি এমন ইবাদত করবো যা ভূ-পৃষ্ঠে কেউ কখনো করে নাই।” তরি এ কথা শুনে দারোগা বলবেনঃ “আল্লাহ তাআলা তোর জন্যে একটা নির্দেশনামা নির্ধারণ করছেন।”সে তখন খুশী হয়ে বলবেঃ “ আমি তার হুকুম পালনের জন্যে সর্বপ্রকারের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।” তখন হুকুম দেয়া হবেঃ “ঐ নির্দেশনামা এটাই যে, তোরা সবাই জাহান্নামে চলে যা।” এই কলুষিত শয়তান তখন হতভম্ব হয়ে পড়বে। সেখানে ফেরেশতা নিজের পালক দ্বারা তাকে ও তার সন্তানদেরকে ছেচড়াতে ছেচড়াতে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। জাহান্নাম তাদেরকে নিয়ে এমনভাবে তর্জন গর্জন করতে থাকবে যে, সমস্ত নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতা, সমস্ত রাসূল হাঁটুর ভরে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহর সামনে পড়ে যাবেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “ইয়াজুজ-মাজুজ হযরত আদমের (আঃ) বংশধর। যদি তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় তবে তারা মানুষের জীবিকার উপর ফাসাদ সৃষ্টি করবে। তাদের এক একজন নিজের পিছনে হাজার জন ছেড়ে মারা যায়, বরং এর চেয়েও বেশী। এদের ছাড়া আরো তিনটি দল রয়েছে। তারা হলোঃ তাভীল, তায়েস ও মানসক।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা গারীব এমন কি অস্বীকার্য ও দুর্বল)
আউস ইবনু আবি আউস (রাঃ) হতে মার’ রূপে বর্ণিত আছে যে, ইয়াজুজ ও মাজুজের স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। এক একজন নিজের পিছনে হাজার বা তারও বেশী রেখে মারা যায়। (এ হাদীসটি সুনানে নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে)
মহান আল্লাহ বলেনঃ শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। হাদীসে আছে যে, ওটা একটা যুগ যাতে শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফুকারদাতা হবেন হযরত ইসরাফীল (আঃ)। যেমন এটা প্রমাণিত। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কি করে আমি শান্তিতে ও আরামে বসে থাকতে পারি? অথচ শিংগার অধিকারী ফেরেশতা শিংগা মুখে লাগিয়ে, কপাল কুঁকিয়ে এবং কান খাড়া করে বসে রয়েছেন যে, কখন আল্লাহর নির্দেশ হবে এবং তিনি শিংগায় ফুৎকার দিবেন।” জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাহলে আমরা কি বলবো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তোমরা বলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কতইনা উত্তম কার্য নির্বাহক! আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করেছি।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্রিত করবো। অর্থাৎ তিনি সকলকেই হিসাবের জন্যে জমা করবেন। সবারই হাশর তাঁর সামনে হবে। যেমন সূরায়ে ওয়াকেআ’য় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)!) তুমি বলে দাওঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ, সকলকে সমবেত করা হবে, এক স্থীরিকৃত দিবসে নির্দিষ্ট সময়ে।” (৫৬:৪৯) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি সকলকেই একত্রিত করবো এবং তাদের একজনকেও অবশিষ্ট ছেড়ে দেবো না।” (১৮:৪৭)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#892)[إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ
Ya’juj and Ma’juj.]
Sura:18
Sura: Kahaf
Ayat: 93-98
[إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ
Verily, Ya’juj and Ma’juj are doing great mischief .]
www.motaher21.net
18:93
حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ بَیۡنَ السَّدَّیۡنِ وَجَدَ مِنۡ دُوۡنِہِمَا قَوۡمًا ۙ لَّا یَکَادُوۡنَ یَفۡقَہُوۡنَ قَوۡلًا ﴿۹۳﴾
Until, when he reached [a pass] between two mountains, he found beside them a people who could hardly understand [his] speech.
18:94
قَالُوۡا یٰذَاالۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَ مَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَہَلۡ نَجۡعَلُ لَکَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَہُمۡ سَدًّا ﴿۹۴﴾
They said, “O Dhul-Qarnayn, indeed Gog and Magog are [great] corrupters in the land. So may we assign for you an expenditure that you might make between us and them a barrier?”
18:95
قَالَ مَا مَکَّنِّیۡ فِیۡہِ رَبِّیۡ خَیۡرٌ فَاَعِیۡنُوۡنِیۡ بِقُوَّۃٍ اَجۡعَلۡ بَیۡنَکُمۡ وَ بَیۡنَہُمۡ رَدۡمًا ﴿ۙ۹۵﴾
He said, “That in which my Lord has established me is better [than what you offer], but assist me with strength; I will make between you and them a dam.
18:96
اٰتُوۡنِیۡ زُبَرَ الۡحَدِیۡدِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا سَاوٰی بَیۡنَ الصَّدَفَیۡنِ قَالَ انۡفُخُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَعَلَہٗ نَارًا ۙ قَالَ اٰتُوۡنِیۡۤ اُفۡرِغۡ عَلَیۡہِ قِطۡرًا ﴿ؕ۹۶﴾
Bring me sheets of iron” – until, when he had leveled [them] between the two mountain walls, he said, “Blow [with bellows],” until when he had made it [like] fire, he said, “Bring me, that I may pour over it molten copper.”
18:97
فَمَا اسۡطَاعُوۡۤا اَنۡ یَّظۡہَرُوۡہُ وَ مَا اسۡتَطَاعُوۡا لَہٗ نَقۡبًا ﴿۹۷﴾
So Gog and Magog were unable to pass over it, nor were they able [to effect] in it any penetration.
18:98
قَالَ ہٰذَا رَحۡمَۃٌ مِّنۡ رَّبِّیۡ ۚ فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ رَبِّیۡ جَعَلَہٗ دَکَّآءَ ۚ وَ کَانَ وَعۡدُ رَبِّیۡ حَقًّا ﴿ؕ۹۸﴾
[Dhul-Qarnayn] said, “This is a mercy from my Lord; but when the promise of my Lord comes, He will make it level, and ever is the promise of my Lord true.”
Tafsir Ibne Kasir Said:-
حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ
Then he followed (another) way. Until, when he reached between two mountains,
meaning, he traveled from the east of the earth until he reached a place between the two mountains which were next to one another with a valley in between, from which Ya’juj and Ma’juj (Gog and Magog) will emerge into the land of the Turks and spread mischief there, destroying crops and people.
Ya’juj and Ma’juj are among the progeny of Adam, peace be upon him, as was recorded in the Two Sahihs;
إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ادَمُ
فَيَقُولُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ
فَيَقُولُ ابْعَثْ بَعْثَ النَّارِ
فَيَقُولُ وَمَا بَعْثُ النَّارِ
فَيَقُولُ مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعُمِايَةٍ وَتِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ إِلَى النَّارِ وَوَاحِدٌ إِلَى الْجَنَّةِ
فَحِينَيِذٍ يَشِيبُ الصَّغِيرُ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا فَقَالَ إِنَّ فِيكُمْ أُمَّتيْنِ مَا كَانَتَا فِي شَيْءٍ إِلاَّ كَثَّرَتَاهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوج
“Allah said:”O Adam.”
Adam said, “Here I am at Your service.”
Allah said, “Send forth the group of Hellfire.”
Adam said, “What is the group of Hellfire?”
Allah said:”Out of every thousand, nine hundred and ninety-nine will go to Hell and one will go to Paradise.”
At that time young men will turn grey and every pregnant female will drop her load. Among you are two nations who never come to anything but they overwhelm it with their huge numbers. (They are) Ya’juj and Ma’juj.”
وَجَدَ مِن دُونِهِمَا قَوْمًا لاَّ يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلاً
he found before them a people who scarcely understood a word.
he could not understand their speech, because they were so isolated from other people
قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الاْاَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا
They said:”O Dhul-Qarnayn! Verily, Ya’juj and Ma’juj are doing great mischief in the land. Shall we then pay you a tribute”
Ibn Jurayj reported from Ata’ from Ibn Abbas that;
this meant a great reward, i.e., they wanted to collect money among themselves to give to him so that he would create a barrier between them and Ya’juj and Ma’juj.
عَلَى أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا
in order that you might erect a barrier between us and them”
Dhul-Qarnayn said with kindness, righteousness and good intentions
قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ
He said:”That in which my Lord had established me is better (than your tribute).
meaning, the power and authority that Allah has given me is better for me than what you have collected.
This is like when Suleiman (Solomon), peace be upon him, said:
أَتُمِدُّونَنِ بِمَالٍ فَمَأ ءَاتَـنِى اللَّهُ خَيْرٌ مِّمَّأ ءَاتَـكُمْ
Will you help me in wealth What Allah has given me is better than that which He has given you! (27:36)
Similarly, Dhul-Qarnayn said:
`What I have is better than what you want to give me, but help me with strength,� i.e., with your labor and construction equipment,
فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ
So help me with strength,
أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا
اتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ
I will erect between you and them a barrier. Give me Zubar of iron,
Zubar is the plural of Zubrah, which means pieces or chunks of something.
This was the view of Ibn Abbas, Mujahid and Qatadah.
These pieces were like bricks or blocks, and it was said that each block weighed one Damascene Qintar or more.
حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ
then, when he had filled up the gap between the two mountain-cliffs,
means, he put the blocks on top of one another, starting at the bottom, until he reached the tops of the mountains, filling the width and height of the gap.
The scholars differed about the precise width and height.
قَالَ انفُخُوا
he said:�Blow;��
means, he lit a fire until the whole thing was burning hot.
حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا
then when he had made them (red as) fire,
قَالَ اتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا
he said:�Bring me Qitran to pour over them.��
Ibn Abbas, Mujahid, `krimah, Ad-Dahhak, Qatadah and As-Suddi said:
it was copper.
Some of them added that it was molten.
This is similar to the Ayah:
وَأَسَلْنَا لَهُ عَيْنَ الْقِطْرِ
And We caused a fount of Qitran to flow for him. (34:12)
So it resembled a striped cloak
The Barrier restrains Them, but It will be breached when the Hour draws nigh
Allah tells us that Ya’juj and Ma’juj could not climb over the barrier or penetrate its lower portion. Varying forms of the verb are used here in the Arabic text to reflect the difficulty of the action referred to.
فَمَا اسْطَاعُوا أَن يَظْهَرُوهُ وَمَا اسْتَطَاعُوا لَهُ نَقْبًا
So they (Ya’juj and Ma’juj) could not scale it or dig through it.
This indicates that they could not penetrate it or dig through it.
Imam Ahmad recorded that Zaynab bint Jahsh, the wife of the Prophet said,
“The Prophet woke from sleep, and he was red in the face.
He said,
لَاا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرَ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذَا
La ilaha illallah! Woe to the Arabs from the evil that has approached (them). Today a hole has been opened in the barrier of Ya’juj and Ma’juj like this.
and he made a circle with his index finger and thumb. I (Zaynab) said, `O Messenger of Allah, will we be destroyed even though there will be righteous people among us?’
He said:
نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَث
Yes, if evil increases.”
This is a Sahih Hadith, both Al-Bukhari and Muslim recorded it
قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي
(Dhul-Qarnayn) said:”This is a mercy from my Lord…”
meaning, after it was built by Dhul-Qarnayn.
قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي
He said:This is a mercy from my Lord,
for the people, when he placed a barrier between them and Ya’juj and Ma’juj, to stop them from spreading evil and corruption on earth.
فَإِذَا جَاء وَعْدُ رَبِّي
but when the promise of my Lord comes,
means, when the true promise comes.
جَعَلَهُ دَكَّاء
He shall Dakka’ it down to the ground.
means, will make it flat.
The Arabs use Dakka’ to describe a female camel whose back is flat and has no hump.
And Allah says:
فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا
So when his Lord appeared to the mountain, He made it Dakkan. (7:143)
meaning, level to the ground.
وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا
And the promise of my Lord is ever true.
means, it will come to pass without a doubt
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran