أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯০১)[ فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ
তাদের পঅরে আসলো অযোগ্য উত্তরসূরিরা।]
সূরা:- মরিয়ম।
সুরা:১৯
৫৬-৬৩ নং আয়াত:-
[ فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ
তাদের পঅরে আসলো অযোগ্য উত্তরসূরিরা।]
www.motaher21.net
১৯:৫৬
وَ اذْكُرْ فِی الْكِتٰبِ اِدْرِیْسَ١٘ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّیْقًا نَّبِیًّاۗۙ
আর এ কিতাবে ইদরিসের কথা স্মরণ করো। সে একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ এবং একজন নবী।
১৯:৫৭
وَّ رَفَعْنٰهُ مَكَانًا عَلِیًّا
আর তাকে আমি উঠিয়েছিলাম উন্নত স্থানে।
১৯:৫৮
اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ مِنْ ذُرِّیَّةِ اٰدَمَ١ۗ وَ مِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوْحٍ١٘ وَّ مِنْ ذُرِّیَّةِ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْرَآءِیْلَ١٘ وَ مِمَّنْ هَدَیْنَا وَ اجْتَبَیْنَا١ؕ اِذَا تُتْلٰى عَلَیْهِمْ اٰیٰتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّ بُكِیًّا۩
এরা হচ্ছে এমন সব নবী, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন আদম সন্তানদের মধ্য থেকে এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশধরদের থেকে, আর ইবরাহীমের বংশধরদের থেকে ও ইসরাঈলের বংশধরদের থেকে, আর এরা ছিল তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমি সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছিলাম এবং বাছাই করে নিয়েছিলাম। এদের অবস্থা এই ছিল যে, যখন করুণাময়ের আয়াত এদেরকে শুনানো হতো তখন কান্নারত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তো।
১৯:৫৯
فَخَلَفَ مِنْۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوةَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوْفَ یَلْقَوْنَ غَیًّاۙ
তারপর এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা নামায নষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো। তাই শীঘ্রই তারা গোমরাহীর পরিণামের মুখোমুখি হবে।
১৯:৬০
اِلَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ یَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَ لَا یُظْلَمُوْنَ شَیْئًاۙ
তবে যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের সামান্যতম অধিকারও ক্ষুণ্ন হবে না।
১৯:৬১
جَنّٰتِ عَدْنِ اِ۟لَّتِیْ وَعَدَ الرَّحْمٰنُ عِبَادَهٗ بِالْغَیْبِ١ؕ اِنَّهٗ كَانَ وَعْدُهٗ مَاْتِیًّا
তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি করুণাময় নিজের বান্দাদের কাছে অদৃশ্য পন্থায় দিয়ে রেখেছেন। আর অবশ্যই এ প্রতিশ্রুতি পালিত হবেই।
১৯:৬২
لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا اِلَّا سَلٰمًا١ؕ وَ لَهُمْ رِزْقُهُمْ فِیْهَا بُكْرَةً وَّ عَشِیًّا
সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবে না, যা কিছুই শুনবে ঠিকই শুনবে।৩৮ আর সকাল-সন্ধ্যায় তারা অনবরত নিজেদের রিযিক লাভ করতে থাকবে।
১৯:৬৩
تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِیْ نُوْرِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَنْ كَانَ تَقِیًّا
এ হচ্ছে সেই জান্নাত, যার উত্তরাধিকারী করবো আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মুত্তাকীদেরকে।
৫৬-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫৬-৫৮ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইদরীস (عليه السلام)-এর বর্ণনা দিচ্ছেন।
ইদরীস (عليه السلام) হলেন প্রথম মানব যাঁকে মু‘জিযাহ হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতবিজ্ঞান দান করা হয়েছিল। তিনিই সর্বপ্রথম মানব, যিনি আল্লাহ তা‘আলার ইলহাম মতে কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতি ও বস্ত্র সেলাই শিল্পের সূচনা করেন। তাঁর পূর্বে মানুষ সাধারণতঃ পোশাক হিসেবে জীবজন্তুর চামড়া ব্যবহার করেন। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতি তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন এবং লোহা দ্বারা অস্ত্র-শস্ত্র তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার তাঁর আমল থেকেই শুরু হয়। তিনি অস্ত্র তৈরি করে কাবীল গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন।
ইদরীস (عليه السلام) একজন বিখ্যাত নাবী। তিনি নূহ (عليه السلام) এর আগের নাবী, না-পরের নাবী এ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশের মতে তিনি নূহ (عليه السلام) এর পরের নাবী। ইমাম কুরতুবী (عليه السلام) বলেন: তিনি যে নূহের পরের নাবী তার বড় প্রমাণ হল, মি‘রাজের রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ১ম আসমানে আদম (عليه السلام) এর সাক্ষাত হয়, তিনি রাসূলকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন:
مرحبا بالابن الصالح والنبي الصالح
‘নেককার সন্তান ও নেককার নাবীর জন্য সাদর সম্ভাষণ।’ অতঃপর ৪র্থ আসমানে ইদরীস (عليه السلام)-এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি রাসূলকে বলেন:
مرحبا بالاخ الصالح والنبي الصالح
‘নেককার ভাই ও নেককার নাবীর জন্য সাদর সম্ভাষণ।’ কাযী ইয়ায বলেন: যদি ইদরীস (عليه السلام) নূহ (عليه السلام) এর আগের নাবী হতেন তাহলে তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘নেককার ভাই’ না বলে ‘নেককার সন্তান’ বলে সম্ভাষণ জানাতেন। যেমন আদম, নূহ ও ইবরাহীম (عليه السلام) বলেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছিলেন, ফলে তিনি নৈকট্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কুরআনে এ কথা বর্ণনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা এ সকল নাবীদের কথা বর্ণনা করার পর বলছেন, এরাই হলেন সেই সকল নাবী, যাদেরকে নাবীগণের মধ্য হতে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে অনুগ্রহ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَمَنْ يُّطِعِ اللّٰهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَا۬ءِ وَالصّٰلِحِيْنَ ج وَحَسُنَ أُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا)
“আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নাবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎ কর্মপরায়ণ যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কতই না উত্তম সঙ্গী!” (সূরা নিসা ৪:৬৯)
৫৯-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর:
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এসকল নাবীদের যুগ অতীত হওয়ার পর এক সম্প্রদায় আসল যারা সৎ কাজের পরিবর্তে অসৎ কাজ করত। সালাত আদায় করত না এবং প্রবৃত্তির পূজা করত। তাদের জন্য রয়েছে মন্দ পরিণাম।
সালাত নষ্ট করার অর্থ সালাতকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা, অথবা সালাতে আহকাম-আরকান যথাযথভাবে আদায় না করা অথবা সালাত যথাসময়ে আদায় না করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَوَیْلٌ لِّلْمُصَلِّیْنَﭓﺫالَّذِیْنَ ھُمْ عَنْ صَلَاتِھِمْ سَاھُوْنَﭔﺫالَّذِیْنَ ھُمْ یُرَا۬ءُوْنَﭕﺫ)
“সুতরাং দুর্ভোগ সেসব মুসল্লীদের জন্য। যারা নিজেদের সালাতের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। তারা যাবতীয় কাজ-কর্ম শুধু মানুষ দেখানোর জন্যই করে।” (সূরা মাউন ১০৭:৪-৭)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল কোন্ আমল উত্তম? তিনি বললেন:
الصَّلَاةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا
সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। (তিরমিয়ী হা: ১৭০, সহীহ)
তৎপরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তবে যারা এসকল খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে আসবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সেখানে তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না। আর তারা তথায় কোন প্রকার বেহুদা কথাবার্তা শুনতে পাবে না। তথায় শুধু তারা শান্তিপূর্ণ বাণীই শুনে থাকবে। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা সর্বোত্তম আমল।
২. খারাপ কাজের প্রতি লালসাপূর্ণ মনের অনুসরণ করাই হল প্রবৃত্তিপূজা করা।
৩. জান্নাতে শুধু শান্তিপূর্ণ বাক্য শুনতে পাওয়া যাবে, কোন বেহুদা কথাবার্তা সেখানে শুনতে পাওয়া যাবে না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# হযরত ইদরীসের (আ) ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। কারোর মতে তিনি বনী ইসরাঈলের নবী ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশের মতে তিনি নূহের (আ) ও পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছেন। নবী ﷺ থেকে এমন কোন সহী হাদীস আমরা পাইনি যা তাঁর সঠিক পরিচয় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সাহায্য করতে পারে। তবে হাঁ, কুরআনের একটি ইঙ্গিত এ ধারণার প্রতি সমর্থন যোগায় যে, তিনি নূহের (আ) পূর্বগামী ছিলেন। কারণ পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, এ নবীগণ (উপরে যাদের কথা বালা হয়েছে) আদমের সন্তান, নূহের সন্তান, ইবরাহীমের সন্তান এবং ইসরাঈলের সন্তান। এখন একথা সুস্পষ্ট যে, হযরত ইয়াহইয়া, হযরত ঈসা ও হযরত মূসা আলাইহিমুস্ সালাম বনী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত, হযরত ইসমাঈল, হযরত ইসহাক ও হযরত ইয়াকুব আলাইহিমুস সালাম ইবরাহীমের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত এবং হযরত ইবরাহীম (আ) নূহের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত এরপর থেকে যান কেবলমাত্র হযরত ইদ্রীস। তাঁর সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে যে, তিনি আদমের (আ) সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত।
মুফাসসিরগণ সাধারণভাবে একথা মনে করেন যে, বাইবেলে যে মনীষীকে হনোক (Enoch) বলা হয়েছে তিনিই হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম। তাঁ সম্পর্কে বাইবেলের বর্ণনা হচ্ছেঃ “আর হনোক পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে মথুশেলহের জন্ম দিলেন। মথুশেলহের জন্ম দিলে পর হনোক তিন শত বৎসর ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন। …… পরে তিনি আর রহিলেন না, কেন না ঈশ্বর তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন।” (আদিপুস্তক ৫: ২১-২৪)
তালমূদের ইসরাঈলী বর্ণনায় তাঁর অবস্থা আরো বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। এই বর্ণনার সংক্ষিপ্তসার হচ্ছেঃ হযরত নূহের পূর্বে যখন আদম সন্তানদের মধ্যে বিকৃতির সূচনা হলো তখন আল্লাহর ফেরেশতারা হনোককে, যিনি জনসমাজ ত্যাগ করে নির্জনে ইবাদাত বন্দেগী করে জীবন অতিবাহিত করছিলেন, ডেকে বললেন, “হে হনোক!ওঠো, নির্জনবাস থেকে বের হও এবং পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে চলাফেরা এবং তাদের সাথে ওঠাবসা করে যে পথে তাদের চলা উচিত এবং যেভাবে তাদের কাজ করতে হবে তা তাদেরকে জানিয়ে দাও।” এ হুকুম পেয়ে তিনি বের হলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় লোকদেরকে একত্র করে নসীহত করলেন ও নির্দেশ দিলেন এবং মানব সন্তানরা তাঁর আনুগত্য করে আল্লাহর বন্দেগীর পথ অবলম্বন করলো। হনোক ৩৫৩ বছর পর্যন্ত মানব সম্প্রদায়ের ওপর শাসন কর্তৃত্ব চালান। তাঁর শাসন ছিল ইনসাফ ও সত্য প্রীতির শাসন। তাঁর শাসনামলে পৃথিবীর উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকে।”( The Talmud Selections, Pp 18-21)
# এর সোজা অর্থ হচ্ছে আল্লাহ হযরত ইদরীসকে (আ) উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন। ইসরাঈলী বর্ণনাসমূহ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে একথা আমাদের এখানেও প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে যে, আল্লাহ হযরত ইদরীসকে (আ) আকাশে তুলে নিয়েছিলেন, বাইবেলে তো শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, তিনি অদৃশ্য হয়ে গেছেন কারণ “আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন।” কিন্তু তালমুদে তার সম্পর্কে একটি দীর্ঘ কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। কাহিনীটি এভাবে শেষ করা হয়েছে যে, “হনোক একটি ঘূর্ণির মধ্যে অগ্নিরথ ও অশ্বসহ আকাশে আরোহণ করলেন।”
# নামায পড়া ত্যাগ করলো অথবা নামায থেকে গাফেল ও বেপরোয়া হয়ে গেলো। এটি প্রত্যেক উম্মতের পতন ও ধ্বংসের প্রথম পদক্ষেপ। নামায আল্লাহর সাথে মু’মিনের প্রথম ও প্রধানতম জীবন্ত ও কার্যকর সম্পর্ক জুড়ে রাখে। এ সম্পর্ক তাকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের কেন্দ্র বিন্দু থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না। এ বাঁধন ছিন্ন হবার সাথে সাথেই মানুষ আল্লাহ থেকে দূরে বহুদূরে চলে যায়। এমনকি কার্যকর সম্পর্ক খতম হয়ে গিয়ে মানসিক সম্পর্কেও অবসান ঘটে। তাই আল্লাহ একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে এখানে একথাটি বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববর্তী সকল উম্মতের বিকৃতি শুরু হয়েছে নামায নষ্ট করার পর।
# এটি আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অভাব ও এর শূন্যতার অনিবার্য ফল। নামায ছেড়ে দেবার পর যখন আল্লাহর স্মরণ থেকে মন গাফেল হয়ে যেতে থাকে তখন যতই এগাফলতি বাড়তে থাকে ততই প্রবৃত্তির কামনার পূজাও বেড়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নৈতিক চরিত্র ও ব্যবহারিক জীবনের সকল ক্ষেত্র আল্লাহর হুকুমের পরিবর্তে নিজের মনগড়া পদ্ধতির অনুসারী হয়ে যায়।
# যার প্রতিশ্রুতি করুণাময় এমন অবস্থায় দিয়েছেন যখন ঐ জান্নাতসমূহ তাদের দৃষ্টির অগোচরে রয়েছে।
# মূলে “সালাম” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে দোষ-ত্রুটিমুক্ত। জান্নাতে মানুষ যে সমস্ত নিয়ামত লাভ করবে তার মধ্যে একটি বড় নিয়ামত হবে এই যে, সেখানে কোন আজেবাজে অর্থহীন ও কটু কথা শোনা যাবে না। সেখানকার সমগ্র সমাজ হবে পাক-পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও ক্লেদমুক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রকৃতিই হবে ভারসাম্যপূর্ণ। সেখানকার বাসিন্দারা পরনিন্দা, পরচর্চা, গালি-গালাজ, অশ্লীল গান ও অন্যান্য অশালীন ধ্বনি একেবারেই শুনবে না। সেখানে মানুষ শুধুমাত্র ভালো, ন্যায়সঙ্গত ও যথার্থ কথাই শুনবে। এ দুনিয়ায় যে ব্যক্তি একটি যথার্থ পরিচ্ছন্ন ও শালীন, রুচির অধিকারী একমাত্র সে-ই এ নিয়ামতের কদর বুঝতে পারে। কারণ একমাত্র সে-ই অনুভব করতে পারে যে, মানুষের জন্য এমন একটি পূতিগন্ধময় সমাজে বাস করা কত বড় বিপদ যেখানে কোন মুহূর্তেই তার কান মিথ্যা, পরনিন্দা, ফিতনা, ফাসাদ, অশ্লীল অশালীন ও যৌন উত্তেজক কথাবার্তা থেকে সংরক্ষিত থাকে না।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*আরাে কয়েকজন নবী ও তাদের পথভ্রষ্ঠ জাতির কাহিনী : পরিশেষে ইদ্রিস(আ.)-এর উল্লেখ দ্বারা ওপরে বর্ণিত আলােচনা ধারার সমাপ্তি টানা হয়েছে। ‘আর স্মরণ করাে এই আল কিতাবের মধ্যে ইদ্রীস নবীকে, অবশ্যই সে ছিলাে সত্যনিষ্ঠ নবী এবং আমি মহান আল্লাহ সমুন্নত করেছিলাম তার মর্যাদা। ঠিক কোন সময়ে ইদ্রীস নবীর আগমন ঘটেছিলাে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না, তবে এটা বলা যায় যে, তিনি ইবরাহীম(আ.)-এর পূর্বে এসেছিলেন এবং তিনি বনু ইসরাঈল জাতির অন্তর্ভুক্ত কোনাে নবী ছিলেন না। এজন্যে বনী ইসরাঈল জাতির কাছে অবতীর্ণ কিতাবগুলাের মধ্যে তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায় না। একমাত্র আল কোরআনের মধ্যে তার বর্ণনা পাওয়া যায়। এ মহান কিতাব তার সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলছে যে, তিনি একজন সত্যনিষ্ঠ নবী ছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করেছিলেন, আর তার মর্যাদার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে আল কোরআন জানাচ্ছে যে মহান আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছিলেন এবং লােকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তার স্মৃতি ও শিক্ষাকে জাগরুক রেখেছিলেন। অবশ্য ইদ্রিস(আ.) সম্পর্কে কিছু লােকের ধারণা যে, শুধুমাত্র নবীদের একজন হওয়ার কারণেই আল কোরআনে তার উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা কোনাে মতামত প্রকাশ করতে চাই না। মিসরের পুরাতন কাহিনীর মধ্যে কিছু সংখ্যক লােকের মতামত জানা যায় যে, ইদ্রীস শব্দটি প্রাচীন মিশরের ভাষায় উচ্চারিত ‘ওযরেস’-এর আরবী প্রতিশব্দ, যেমন বলা হয়ে থাকে ‘ইউহেনা’-র আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে ইয়াহইয়া এবং ইলয়্যশা’র আরবী প্রতিশব্দ আল য়ামা’… আর এভাবে অনেক প্রাচীন কথা কিংবদন্তী আকারে চালু হয়ে রয়েছে। এসব প্রাচীন ইতিহাসবিদরা মনে করতাে এবং আরবের অনেকেও রসূলুল্লাহ(স.)-এর যামানাতেও বিশ্বাস করতাে যে ইদ্রীস(আ.) উর্ধাকাশে আরােহণ করেছিলেন এবং সেখানে তাকে এক মহা মর্যাদার আসনে বসানাে হয়েছিলাে। আর যে কোনাে ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার আমলনামা গুনাহের কাজের তুলনায় নেকীর কাজে বেশী ভারী হয়ে যাবেঅ সে ওযরেস-এর সাথে মিলিত হতে পারবে, যাকে আরববাসী দেবতা জ্ঞানে পূজা করতাে, আর এই নবী আকাশে আরােহণের পূর্বে তার অনুসারীদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু যে যাইই বলুক না কেন, আমরা ওইকথার ওপর টিকে থাকবাে যা আল কোরআনে উল্লেখ হয়েছে এবং এই কথাকেই গুরুত্ব দেবাে যে ইদ্রীস(আ.) বনী ইসরাঈল জাতির পূর্ব যামানাতে আগমন করেছিলেন। ওপরে বর্ণিত সে সকল নবীদের বর্ণনা এখানে পেশ করা হয়েছে যাতে করে নেককার মােমেন জনতা এবং আরবের মােশরেক ও বনী ইসরাঈলদের মােশরেকদের মধ্যে তুলনা করে তাদের অবস্থাকে পৃথক পৃথকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়। এই তুলনামূলক আলােচনায় দেখা গেছে এই দুই দলের মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। তাদের মধ্যে রয়েছে বহু দূরত্বের ব্যবধান- এমন এক গভীর খাদ দুই দলের মধ্যে বিরাজ করছে যে এক দলের সাথে আর এক দলের সম্প্রীতি গড়ে ওঠার কোনাে সুযোগ নেই। অতীতে এবং পরবর্তীতে একইভাবে এই দূরত্ব বিরাজ করবে এদের একত্রিত হওয়া কস্মিন কালেও সম্ভব নয়। এদের সম্পর্কে কালামে পাকে যে তুলনামূলক আলােচনা করা হয়েছে তার দিকে একবার খেয়াল করে দেখুন, ‘এরা হচ্ছে বনী আদমের মধ্য থেকে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত সেইসব নবী যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বহু নেয়ামত দান করেছেন। এসব নেয়ামতপ্ত বান্দাদের সারিতে তারাও আছে যাদেরকে আমি নূহের সাথে জাহাজে আরােহণ করিয়েছিলাম… এরপর তাদের পেছনে এলাে আর এক দল যারা নামায পড়া সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করলো ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করতে শুরু করে দিলাে যার ফলে অচিরেই তারা এর মন্দ পরিণতি ভােগ করবে।'(আয়াত ৫৮-৫৯) মানব জাতির ইতিহাসে নবুওতের পাতার মধ্যে রয়েছে মানবতার অতি উজ্জল বিশেষ বিশেষ চিহ্ন, যার পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা এখানে পেশ করা হয়েছে, বলা হচ্ছে, ‘আদম সন্তানদের মধ্য থেকে’ ‘আর নূহের সাথে যাদেরকে আমি জাহাজে আরােহণ করিয়েছিলাম, তাদের থেকে,’ ‘আর ইবরাহীম ও ইসরাঈল(আ.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে।’ আদম(আ.)-এর নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে আপনা থেকেই গােটা মানব জাতির বর্ণনা এসে যায়, তারপরই নূহ(আ.)-এর স্থান অর্থাৎ আদম(আ.)-এর পর তার নাম উল্লেখ করাতেও মানব জাতির চিত্র ফুটে উঠে। তারপর ইবরাহীম(আ.)-এর কথা বলার সাথে সাথে বড় বড় নবীদের একাংশের কথা বুঝা যায়, ইয়াকুব(আ.)-এর নাম উল্লেখ করায় মানব জাতির মধ্য থেকে বনী ইসরাঈল জাতির এক বিশেষ শাখার পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর আরব জাতি নামক আর একটি শাঁখার পরিচয় পাওয়া যায়, যারা হযরত ইসমাঈল(আ.)-এর বংশােদ্ভুত বলে জানা যায় এবং তাদের মধ্যেই আগমন হয়েছে শেষ নবী মুহাম্মদ(স.)-এর। এই নবীরা এবং এদের সংগী-সাথী, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত করেছেন এবং তাদের বংশধরদের যে সব নেক লোকদের আল্লাহ তায়ালা মানব মন্ডলীর মধ্য থেকে তাঁর নেক বান্দা রূপে বাছাই করে নিয়েছেন, তাদের দল এদের মধ্যে যে সব গুণ ছিলাে তা সবার সামনে প্রকাশিত ছিলাে। এদের সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ‘এরা এমন এক শ্রেণীর লােক যাদের সামনে দয়াময় আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হলে প্রকম্পিত হৃদয় নিয়ে তারা কাঁদতে কাদতে সিজদায় পড়ে যায়…’ এরাই হচ্ছে সেইসব আল্লাহভীরু, যারা আল্লাহ সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি রাখে, তাদের সামনে যখনই আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখনই তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে তাদের হৃদয় মনে যে প্রচন্ড আবেগ সৃষ্টি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, গভীর ভয় ও মহব্বতে তাদের দুনয়ন থেকে বিগলিত ধারায় ঝরতে থাকে অজস্র অশ্রু। এদের পরে এলাে আর এক জনপদ যারা আল্লাহ তায়ালা থেকে অনেক দূরে সরে পড়লাে, ‘তারা ধ্বংস করে দিলাে নামাযকে অর্থাৎ পরিত্যাগ করলাে নামায এবং ধ্বংস করে দিলাে নামাযের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পবিত্র পরিচ্ছন্ন জীবনের বুনিয়াদকে আর তারা তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করতে শুরু করলাে এবং ডুবে গেলাে প্রবৃত্তির দাসত্বের মধ্যে- হায়, কতাে যোজনব্যাপী দূরত্বের ব্যবধান রয়েছে এই দুই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে। এসব লােকদের জন্যে আযাবের ধর্ম কি দেয়া হয়েছে, অথচ তাদের বাপ দাদারা কতাে নেককার মানুষ ছিলাে-তাদেরকে জানানাে হচ্ছে যে, তারা গােমরাহীর পর্দা ছিন্ন করে আর বেরিয়ে আসতে পারবে না এবং পরিশেষে রয়েছে তাদের জন্যে ধ্বংস। বলা হচ্ছে, শীঘ্র তারা মুখােমুখি হবে গােমরাহীর পরিণতিতে চরম শান্তির। ‘গাইয়ু’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানাে এবং পথভ্রষ্টতা। আর দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানাের পরিণতি হলো ধ্বংস।
*জান্নাতের পরিবেশ ও তা পাওয়ার উপায় : এরপর তাওবার দরজাকে পুরােপুরি খুলে দেয়া হচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে আল্লাহর রহমত, তার মেহেরবানী ও অসংখ্য নেয়ামতের মৃদু সমীরণ প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তবে যে তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং ভালাে কাজ করবে তারাই জান্নাতে দাখিল হবে এবং তাদের প্রতি কিছু মাত্র যুলুম করা হবে না আমার সেসব বান্দাদেরকে যারা জীবনে তাকওয়া অবলম্বন করে চলেছে।'(আয়াত ৬০-৬৩) কিন্তু সে তাওবা এমন হতে হবে যা ঈমান ও ভালাে কাজ গড়ে তােলে। এভাবে তাওবার দ্বারা যে অবশ্যই ইতিবাচক ফল হয় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিতও হয়েছে। এইভাবে তাওবা দ্বারা সে ভয়াবহ পরিণতি থেকে মানুষ নাজাত পাবে এবং রােজ হাশরের সেই ভীষণ শাস্তি থেকে রেহাই পাবে যা নির্ধারিত রয়েছে অহংকারী ও হঠকারীদের জন্যে। তাওবাকারী ব্যক্তিরা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কিছুমাত্র যুলুম করা হবে না। তারা সাময়িকভাবে দাখিল হবে- তা নয়, বরং চিরস্থায়ীভাবে থাকার জন্যেই তারা সেখানে প্রবিষ্ট হবে। এ জান্নাত তাে ঠিক করে রাখা হয়েছে করুণাময় আল্লাহর সেইসব বান্দাদের জন্যে যারা না দেখে জান্নাতের কথা বিশ্বাস করেছে এবং এ জান্নাতে প্রবেশ করার জন্যে তারা পরম আগ্রহে নিজেদেরকে যাবতীয় অন্যায় কাজ ও মন্দ আচরণ থেকে রক্ষা করেছে। তাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহর ওয়াদাও সত্য, যা কিছুতেই নষ্ট হবার নয়, আর তাদের সম্পর্কে সর্বপ্রকার তুলনা ও দৃষ্টান্ত দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এরপর আঁকা হচ্ছে জান্নাত ও জান্নাতবাসীর এমন জীবন্ত ছবি যেন পাঠক জান্নাতকে তার চোখের সামনে বাস্তবে দেখতে পাচ্ছে। সেখানে সালাম সালাম ‘শান্তি- শান্তির এ মহা বাণী ছাড়া কোনাে বাজে কথা তারা সেখানে শুনতে পাবে না, শুনতে পাবে না কোনাে তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়া বিবাদ। শুধুমাত্র একটি শব্দই তারা শুনবে যার দ্বারা তাদের প্রাণ ঠান্ডা হয়ে যাবে আর তা হবে শান্তির বাণী । এ জান্নাতের মধ্যে তাদের প্রয়ােজনীয় সব কিছুই তারা পাবে, কোনাে কিছু চাওয়ার প্রয়ােজন হবে না বা কোনাে কিছু পাওয়ার জন্যে কোনাে পরিশ্রমও করা লাগবে না, হারিয়ে যাওয়ার বা শেষ হওয়ার চিন্তা তাদেরকে বিব্ৰত করবে না, আসবে না, কোনাে পেরেশানী বা ভয় । এরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্যে সেখানে থাকবে যাবতীয় প্রয়ােজনীয় সামগ্রী, যা তারা পাবে সকাল সন্ধায় সব সময়ে।’ এতে তাদের মনের চাহিদা মিটে যাবে। আর এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরাপদ ও সন্তোষজনক নেয়ামতে পরিপূর্ণ স্থানে তারা অনন্তকাল ধরে থাকবে। যেখানে কোনাে দিন আসবে কোনাে প্রকার পেরেশানী। ঐ অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে এরশাদ হচ্ছে, এ হচ্ছে সেই জান্নাত, যার উত্তরাধিকারী আমি আমার সেই সব বান্দাকে বানিয়েছি যারা জীবনে সদা-সর্বদা পরহেযগার ছিলাে। এখন সেই জান্নাতের উত্তরাধিকারী হওয়ার আকাংখী যে হতে চাইবে তার জন্যে সহজ পথ রয়েছে সবার কাছে সুপরিচিত, আর সে পথ হচ্ছে, তাওবা ঈমান ও আমলে সালেহ। বংশধর হিসাবে যে উত্তরাধিকার পাওয়ার কথা আমরা সাধারণভাবে বুঝতে পারি, সেই উত্তরাধিকার প্রাপ্তির সম্ভাবনা সেখানে নেই। হাঁ, উত্তরাধিকার সূত্রে যারা সম্পত্তি পাবে তারা হচ্ছে নবীদের নেককার অনুসারীরা, আর সেইসব লােক যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত করেছেন এবং তার প্রিয় বান্দা রূপে মানবমন্ডলীর মধ্য থেকে তাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন। কিন্তু হায়, তাদের পরবর্তী লােকেরা নামায পরিত্যাগ করলাে এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব গ্রহণ করে নিলাে, যার ফলে নবীদের বংশধর হওয়ার কোনাে সুবিধা তারা অর্জন করতে পারলাে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘অতপর, শীঘ্রই তারা সাক্ষাত লাভ করবে অভাবনীয় কঠিন শাস্তির।’
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইদরীসের (আঃ) বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তিনি সত্য নবী ছিলেন এবং আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দা ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছিলেন। হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, (মি’রাজে গিয়ে) রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইদরীসকে (আঃ) চতুর্থ আকাশে দেখতে পান।
এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এক অতি বিস্ময় কর হাদীস আনয়ন করেছেন। তা এই যে, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হযরত কা’বকে (রাঃ) (আরবী) এই আয়াতটির ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “হযরত ইদরীসকে (আঃ) আল্লাহ তাআলা ওয়াহী করেনঃ “সমস্ত বাণী আদমের আমলের সমান তোমার একার আমল আমি দৈনিক উঠিয়ে থাকি। সুতরাং আমি পছন্দ করি যে, তোমার আমল বেড়ে যাক।” অতঃপর তাঁর কাছে বন্ধু ফেরেশতা আগমন করলে তিনি তার কাছে বর্ণনা করেনঃ “আমার কাছে এরূপ ওয়াহী এসেছে। সুতরাং আপনি মালাকুল মাউতকে বলে দিন যে, তিনি যেন আমার জান কবয বিলম্বে করেন, যাতে আমার নেক আমল বৃদ্ধি পায়।” ঐ ফেরেশতা তখন তাকে নিজের পালকের উপর বসিয়ে নিয়ে আকাশে উঠে যান। চতুর্থ আকাশে পৌঁছে মালাকুল মাউতের সাথে সাক্ষাৎ হয়। ঐ ফেরেশতা মালাকুল মাউতকে হযরত ইদরীসের (আঃ) ব্যাপারে সুপারিশ করেন। মৃত্যুর ফেরেশতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “উনি কোথায় আছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এই যে, আমার পালকের উপর বসে রয়েছেন। মালাকুল মাউত বা মৃত্যুর ফেরেশতা তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেনঃ “সুবহানাল্লাহ! আমাকে এখনই হুকুম করা হলো যে, আমি যেন হযরত ইদরীসের (আঃ) রূহ চতুর্থ আকাশে কব্য করি। আমি চিন্তা করছিলাম যে, যিনি যমীনে রয়েছেন তাঁর রূহ আমি চতুর্থ আকাশে কি করে কবয করতে পারি।” সুতরাং তৎক্ষণাৎ তিনি হযরত ইদরীসের (আঃ) জান কবয করে নেন। (হযরত কাবের (রাঃ) এ বর্ণনাটি ইসরাঈলী রিওয়াইয়াত। এর কতক গুলি খবর স্বীকার্য নয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)
এই রিওয়াইয়াতই অন্য সনদে রয়েছে। তাতে এও আছে যে, হযরত ইদরীস (আঃ) ঐ ফেরেশতার মাধ্যমে মালাকুল মাউতকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমার বয়সের আর কতদিন বাকী আছে?” আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তার এই প্রশ্নের জবাবে মালাকুল মাউত বলেছিলেনঃ “আমি দেখছি যে, শুধু চক্ষুর একটা পলক ফেলার সময় বাকী আছে।” ফেরেশতা তার পরের নীচে তাকিয়ে দেখেন যে, হযরত ইদরীসের (আঃ) প্রাণবায়ু বহির্গত হয়ে গেছে।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হযরত ইদরীস (আঃ) দরজি ছিলেন। সূচের প্রতিটি ফেঁড়ের সময় তিনি সুবহানাল্লাহ পাঠ করতেন। সন্ধ্যার সময় তাঁর সমান কারো নেক আমল আকাশে উঠে নাই। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হযরত ইদরীসকে (আঃ) আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি মৃত্যুবরণ করেন নাই। বরং হযরত ঈসার (আঃ) মতই তাকে জীবিতই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আওফীর (রঃ) রিওয়াইয়াতের মাধ্যমে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাকে ষষ্ঠ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর সেখানেই তিনি মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছেন। হাসান (রাঃ) প্রভৃতি গুরুজন বলেন যে, (আরবী) দ্বারা জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন যে, এঁরাই হচ্ছেন নবীদের দল অর্থাৎ যাদের বর্ণনা এই সূরায় রয়েছে, কিংবা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে অথবা পরে বর্ণনা আসবে। তারা আল্লাহ তাআলার ইনআম প্রাপ্ত। সুতরাং এখানে ব্যক্তি বর্ণনা হতে জাতি বর্ণনার দিকে ফিরে যাওয়া হয়েছে।
এরা হলেন হযরত আদমের (আঃ) সন্তানের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ হযরত ইদরীসের (আঃ), বংশোদ্ভূত এবং তাদের বংশোদ্ভূত যাদেরকে হযরত নূহের (আঃ) সাথে নৌকায় আরোহণ করানো হয়েছিল। এর দ্বারা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে। আর হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বংশধর দ্বারা হযরত ইসহাক (আঃ) হযরত ইয়াকূব (আঃ) ও হযরত ইসমাঈলকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে। হযরত ইসরাঈলের (আঃ) বংশধর দ্বারা বুঝানো হয়েছে। হযরত মূসা (আঃ), হযরত হারূণ (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এবং হযরত ঈসাকে (আঃ)। হযরত সুদ্দী (রঃ) ও হযরত ইবনু জারীরের (রঃ) এটাই উক্তি। এজন্যেই তাদের বংশের কথা পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যদিও সবাই হযরত আদমের (আঃ) বংশধর। কিন্তু তাদের মধ্যে কতক এমনও রয়েছেন যারা ঐ মনীষীদের বংশোদ্ভূত নন। যারা হযরত নূহের (আঃ) সাথী ছিলেন। কেননা, হযরত ইদরীস (আঃ) তো হযরত নূহের (আঃ) দাদা ছিলেন। আমি বলিঃ বাহ্যতঃ এটাই সঠিক যে, হযরত ইদরীস (আঃ) হযরত নূহ (আঃ) ছাড়া অন্যের বংশোদ্ভূত। তবে কতকগুলি লোকের ধারণা এই যে, হযরত ইদরীস (আঃ) বাণী ইসরাঈলী নবী ছিলেন। তারা বলেন যে, মিরাজের হাদীসে হযরত ইদরীসের (আঃ) সাথে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাক্ষাতের সময় তাকে উত্তম নবী ও উত্তম ভাই বলে অভ্যর্থনা জানানো বর্ণিত আছে। তিনি উত্তম সন্তান বলেন নাই, যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত আদম (আঃ) বলেছিলেন। বর্ণিত আছে যে, হযরত ইদরীস (আঃ) হযরত নূহের (আঃ) পূর্ববর্তী নবী ছিলেন। তিনি স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ “তোমরা লা ইলাহা ইল্লাহ’ এর উক্তিকারী ও এর উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়ে যাও। তারপর যা ইচ্ছা তাই কর।” কিন্তু তাঁরা। তার কথা অমান্য করে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। আমরা এই আয়াতটিকে নবীদের শ্রেণীভুক্ত আয়াত বলেছি। এর দলীল হচ্ছে সূরায়ে আনআমের ঐ আয়াতগুলি যেগুলিতে হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত ইয়াকূব (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ), হযরত সুলাইমান (আঃ), হযরত আইয়ূব (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত হারূণ (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত ইয়াহইয়া (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ), হযরত ইলইয়সি (আঃ), হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইয়াসাআ (আঃ) এবং হযরত ইউনুস (আঃ) প্রভৃতি নবীদের বর্ণনা রয়েছে এবং তাঁদের প্রশংসা করার পর বলা হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এরা তারাই যাদেরকে আল্লাহ তাআলা হিদায়াত দান করেছিলেন। সুতরাং (হে নবী (সাঃ) তুমি তাদের হিদায়াতের অনুসরণ করো।” (৬:৯০) আল্লাহ তাআলা একথাও বলেছেনঃ “নবীদের মধ্যে কারো কারো ঘটনা আমি বর্ণনা করে দিয়েছি এবং কারো কারো ঘটনা তোমার কাছে বর্ণনা করি নাই।”
সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত মুজাহিদ (রঃ) হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “সূরায়ে সাদ’ এ কি সিজদা আছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ তারপর তিনি এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করে বলেনঃ “তোমাদের নবীকে (সঃ) তাদের অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” হযরত দাউদ (আঃ) অনুসৃত নবীদের একজন ছিলেন।
ঘোষণা করা হচ্ছেঃ যখন ঐ নবীদের (আঃ) সামনে আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তখন তারা ওর দলীল প্রমাণাদি শুনে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতঃ কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় পড়ে যেতেন। এ জন্যেই এই আয়াতে সিজদার হুকুমের ব্যাপারে আলেমগণ একমত, যাতে ঐ নবীদের অনুসরণ করা হয়। আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সূরায়ে মারইয়াম পাঠ করেন। যখন তিনি এই আয়াতে পৌঁছেন, তখন সিজদা করেন। অতঃপর বলেনঃ ‘সিজদা তো করলাম, কিন্তু ঐ কান্না কোথা হতে আনবো?” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) ও ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
৫৯-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ সৎলোকদের বিশেষ করে নবীদের (আঃ) বর্ণনা করলেন, যারা আল্লাহর হুদূদের রক্ষণাবেক্ষণকারী, সত্ত্বার্যের নমুনা স্বরূপ এবং মন্দকাজ থেকে দূরে অবস্থানকারী ছিলেন। এখন তিনি মন্দলোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন, যারা ঐ ভাল লোকদের পরে এমনই হয়ে যায় যে, তারা নামায থেকেও বেপরোয়া হয়ে যায়। নামাযের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ফরজকেও যখন তারা ভুলে বসে, তখন তো এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, অন্যান্য ফরজগুলিকে কি পরোয়া তারা করতে পারে? কেননা নামায তো হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি এবং সমস্ত আমল হতে এটা উত্তম ও মর্যাদা সম্পন্ন। ঐ লোকগুলি তাদের কুপ্রবৃত্তির পিছনে লেগে পড়ে। পার্থিব জীবনেই তারা সন্তুষ্ট হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নামাযকে নষ্ট করা দ্বারা উদ্দেশ্য হয়তো বা নামাযকে সম্পূর্ণরূপেই ছেড়ে দেয়। এ জন্যেই ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং পূর্ব যুগীয় ও পর যুগীয় অনেক গুরুজনের মাযহাব এটাই যে, নামায পরিত্যাগকারী কাফির। ইমাম শাফিয়ীরও (রঃ) একটি উক্তি এটাই। কেননা, হাদীসে রয়েছে যে, বান্দা ও কুফরীর (শিরকের) মধ্যে প্রভেদকারী হচ্ছে নামায। অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে প্রভেদকারী হলো নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেল। এই মাসআলা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার জায়গা এটা নয়। অথবা নামাযকে ছেড়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে সঠিকভাবে নামাযের সময়ের পাবন্দী না করা।
হযরত ইবনু মাসউদকে (আঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ কুরআনকারীমে নামাযের বর্ণনা খুবই বেশী রয়েছে। কোথাও রয়েছে নামাযের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকারীদের শাস্তির বর্ণনা, কোথাও রয়েছে নামাযে চিরকালীনব্যাপী লেগে থাকার নির্দেশ এবং কোথাও আছে নামাযে যত্নবান থাকার হুকুম (এর কারণ কি?) উত্তরে তিনি বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নামাযের সময়ের ব্যাপারে অবহেলা না করা এবং সময়ের পাবন্দী করা।” জনগণ বললোঃ “আমরা মনে করতাম যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযকে ছেড়ে দেয়া ও ছেড়ে না দেয়া।” হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) তখন বললেনঃ “নামায ছেড়ে দেয়া তো কুফরী।” হযরত মারূক (রঃ) বলেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি যত্নবান লোকেরা উদাসীনদের তালিকাভুক্ত নয়।
খলীফাতুল মুসলেমীন আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমার ইবনু আবদিল আযীয (রঃ) এই আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “এর দ্বারা উদ্দেশ্য সরাসরি নামাযকে ছেড়ে দেয়া নয়, বরং নামাযের সময়কে নষ্ট করে দেয়া উদ্দেশ্য। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এই সব অসৎ লোকের আবিভাব ঘটবে। এই লোকগুলি চতুষ্পদ জন্তুর মত লম্ফ ঝম্ফ করতে থাকবে। আতা ইবনু আবি রবাহ্ও একথাই বলেন যে, শেষ যামানায় এ সব লোকের আবির্ভাব হবে। তারা চতুষ্পদ জন্তু ও গাধার মত রাস্তাতেই লাফাতে থাকবে এবং যে আল্লাহ আকাশে রয়েছেন তাকে মোটেই ভয় করবে। তারা লোকদেরকে দেখে কোন লজ্জা শরমও করবে না।
মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই অপদার্থ পরবর্তী লোকেরা ষাট বছর পরে আসবে যারা নামাযকে নষ্ট করে দিবে এবং কুপ্রবৃত্তির পিছনে লেগে পড়বে। তারা কিয়ামতের দিন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতঃপর এদের পরে ঐ সব অযোগ্য লোক আসবে যারা কুরআন কারীমের পাঠ করবে বটে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠ থেকে নীচে নামবে না।
কুরআনের পাঠক তিন প্রকারের রয়েছে। তারা হচ্ছে মু’মিন, মুনাফিক ও পাপাচার।” এই হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত ওয়ালীদকে (রাঃ) তাঁর শিষ্য এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “মুমিন তো ওর সত্যতা স্বীকার করবে, মুনাফিক ওর উপর বিশ্বাস রাখবে না, আর পাপাচার এর দ্বারা নিজের পেট পূর্ণ করবে।”
মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে একটি গারীব হাদীসে রয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) যখন আসহাবে সুফফার নিকট কিছু সাদকী পাঠাতেন, তখন তিনি বলতেনঃ “কোন বারবারী পুরুষ ও বারবারিয়া স্ত্রী লোককে যেন এর থেকে কিছু না দেয়া হয়। কেননা, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আমি বলতে শুনেছিঃ “এরাই হচ্ছে ঐ পরবর্তী অপদার্থ লোক যাদের বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে। মুহাম্মদ ইবনু কা’ব কারাযী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা পশ্চিমের ঐ বাদশাহকে বুঝানো হয়েছে, যে চরম দুষ্ট বাদশাহ। হযরত কা’ব আহবার (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি মুনাফিকদের বিশেষণ কুরআনকারীমে পেয়ে থাকি। তা এই যে, তারা নেশাপানকারী, নামায পরিত্যাগকারী, দাবা ও চৌসির (ক্রীড়া বিশেষ) খেলোয়াড়, এশার নামাযের সময় শয়নকারী, পানাহারের ব্যাপারে বাড়াবাড়িকারী এবং জামাআত পরিত্যাগকারী।” হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মসজিদগুলি তাদের থেকে শূন্য দেখা যায় এবং তারা অত্যন্ত শান শওকতের সাথে চলাফেরা করে।
আবুল আশহাব আতারদী (রঃ) বলেন যে, হযরত দাউদের (আঃ) উপর ওয়াহী আসেঃ “তোমার সঙ্গীদেরকে সতর্ক করে দাও যে, তারা যেন কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ হতে বিরত থাকে। যার অন্তর কুপ্রবৃত্তির অনুসরণে পূর্ণ থাকে তাদের জ্ঞান ও বিবেকের উপর পর্দা পড়ে যায়। যখন কোন বান্দা প্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে অন্ধ হয়ে যায়, তখন তাকে আমি সবচেয়ে হালকা শাস্তি এই দেই যে, তাকে আমার আনুগত্য হতে বঞ্চিত রাখি। হযরত উবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি উম্মতের ব্যাপারে দুটি জিনিসকে ভয় করি। এক এই যে, তারা মিথ্যা কৃত্রিমতা ও প্রবৃত্তির পিছনে পড়ে যাবে এবং নামাযকে ছেড়ে দিবে। দ্বিতীয় এই যে, মুনাফিকরা দুনিয়াকে দেখাবার জন্যে কুরআনের উপর আমলকারী হয়ে খাটি মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
(আরবী) শব্দের অর্থ হলো ক্ষতি ও অকল্যাণ। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম য অত্যন্ত গভীর। এতে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ওটা রক্ত ও পুঁজে পরিপূর্ণ রয়েছে।
লুকমান ইবনু আমির (রঃ) বলেনঃ “আমি হযরত আবু উমামা সাদী ইবনু আজলানের (রাঃ) নিকট গমন করি। আমি তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলিঃ আপনি রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে যে হাদীস শ্রবণ করেছেন তা আমাকে শুনিয়ে দিন।” তিনি তখন বলেনঃ আচ্ছা তা হলে শুনো রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন দশ ওজনের একটি পাথর যদি জাহান্নামের ধার থেকে তাতে নিক্ষেপ করা হয় তবে পঞ্চাশ বছর ধরে পড়তে থাকলেও তা জাহান্নামের তলদেশে পৌঁছতে পারবে না। ওটা (আরবী) ও (আরবী) এর মধ্যে পৌঁছবে। (আরবী) ও (আরবী) হলো জাহান্নামের দুটি কূপ, যেখানে জাহান্নামীদের রক্ত পুঁজ জমা হয়। (আরবী) এর বর্ণনা (আরবী) এর মধ্যে রয়েছে। আর (আরবী) এর বর্ণনা আছে (আরবী) এই আয়াতের মধ্যে। (এটা ইমাম আবু জাফর ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করা মুনকার বা অস্বিকার্য। সনদের দিক দিয়েও এ হাদীসটি গারীব)
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে। অর্থাৎ নামাযে অবহেলা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ পরিত্যাগ করেছে, আল্লাহ তাআলা তাদের তাওবা কবুল করবেন, তাদের পরিণাম ভাল করবেন এবং তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। তাওবার মাধ্যমে পর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদীসে আছে যে, তাওবাকারী এমন হয়ে যায় যে, যেন সে নিস্পাপ। এই লোকগুলি যে সৎকর্ম করে তার প্রতিদান ও বিনিময় তারা অবশ্যই প্রাপ্ত হবে। কোন একটি পুণ্যের প্রতিদান কম হবে না। তাওবার পূর্ববর্তী পাপের জন্যে পাকড়াও করা হবে না। এটাই হচ্ছে ঐ দয়াময়ের দয়া ও সহনশীলের সহনশীলতা যে, তাওবা করার পর তিনি পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিচ্ছেন। সূরায়ে ফুরকানে গুনাহ সমূহের বর্ণনা দেয়ার পর ওর শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, অতঃপর ব্যতিক্রম দেখিয়ে বলেনঃ “আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
৬১-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর:
গুনাহ হতে তাওবা কারীরা যে জান্নাতে প্রবেশ করবে তা হবে চিরস্থায়ী যার ভবিষ্যতের ওয়াদা তাদের প্রতিপালক তাদের সাথে করেছেন। ঐ জান্নাতকে তারা দেখে নাই। তবুও তারা ওর উপর ঈমান এনেছে ও ওটাকে বিশ্বাস করেছে। সত্য কথা এটাই যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য ও অটল। জান্নাত লাভ বাস্তব কথা। এই জান্নাত সামনে এসেই যাবে। আল্লাহ তাআলা ওয়াদা খেলাফও করবেন না এবং ওয়াদার পরিবর্তনও করবেন না। এই লোকদেরকে তথায় অবশ্যই পৌঁছানো হবে। (আরবী) এর অর্থ (আরবী) ও এসে থাকে। ভাবার্থ এটাওঃ আমরা যেখানেই যাই ওটা আমাদের কাছে এসেই পড়ে। যেমন বলা হয়ঃ আমার উপর পঞ্চাশ বছর এসেছে অথব্য আমি পঞ্চাশ বছরে পৌঁছেছি। দুটো বাক্যের অর্থ একই হয়ে থাকে। ঐ জান্নাতীদের কানে কোন বাজে কথা, অপছন্দনীয় কথা আসবে এটা অসম্ব। তাদের কানে শুধু শান্তির বাণীই পৌঁছবে। চতুর্দিক থেকে বিশেষ করে ফেরেশতাদের পবিত্র মুখ থেকে শান্তিপূর্ণ কথাই বের হবে এবং তা তাদের কানে গুঞ্জরিত হবে। যেমন সূরায়ে ওয়াকেআ’তে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেথায় তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত।” (৫৬:২৫-২৬) এখানে এটা (আরবী) হয়েছে। সকাল ও সন্ধ্যায় উত্তম ও সুস্বাদু আহার্য বিনা কষ্টে ও পরিশ্রমে তাদের কাছে আসতে থাকবে। এটা মনে করা ঠিক হবে না যে, জান্নাতে দিন ও রাত হবে, বরং ঐ আলো বা জ্যোতি দেখে সময় চিনে নেবে যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত রয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রথম যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের মুখমণ্ডল চৌদ্দ তারিখের চাদের মত উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় হবে। সেখানে তাদের মুখে থুথুও আসবে না এবং নাকে শ্লেষ্মও আসবে না। তাদের পায়খানা ও প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না। তাদের পানপাত্র ও আসবাবপত্র গুলি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত। তাদের দেহের ঘর্ম হবে মিশক আম্বারের মত সুগন্ধময়। প্রত্যেক জান্নাতীর এমন দুটি স্ত্রী থাকবে যাদের পরিচ্ছন্ন পায়ের গোছা হতে হাড়ের মজ্জা বাইরে থেকে দেখা যাবে, ঐ বেহেশতীদের একে অপরের প্রতি কোন শত্রুতা থাকবে না, সবাই যেন একই হৃদয়ের লোক। তাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য থাকবে না। সকাল সন্ধ্যায় তারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “শহীদ লোকেরা ঐ সময় জান্নাতের একটি নহরের ধারে জান্নাতের দরজার পার্শ্বে রক্তিম বর্ণের খিলান করা ছাদের নীচে অবস্থান করবে। তাদের কাছে সকাল সন্ধ্যায় আহার্য পৌঁছানো হবে।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
তথাকার সকাল ও সন্ধ্যার কথা দুনিয়ার হিসেবে বলা হয়েছে। আসলে সেখানে রাত্রি হবেই না। বরং সদা আলো ও জ্যোতিই বিরাজ করবে। পর্দা পড়ে যাওয়া ও দরজা বন্ধ হওয়ার দ্বারা জান্নাতীরা সন্ধ্যা বুঝতে পারবে এবং অনুরূপভাবে সরে যাওয়া ও দরজা খুলে যাওয়া দ্বারা তারা সকাল জানতে পারবে। দর বন্ধ হওয়া ও খুলে যাওয়া জান্নাতীদের ইঙ্গিত ও নির্দেশক্রমেই। হবে। এই দরজগুলিও এতো পরিষ্কার ও ঝকঝকে হবে যে, বাইরের জিনিসগুলি ভিতর থেকে দেখা যাবে। দুনিয়ায় দিন রাত্রি ভোগ করা তাদের অভ্যাস ছিল বলে যে সময় তারা চাবে তাই পাবে। আরবের লোকেরা সকাল ও সন্ধ্যায় খাদ্য খেতে অভ্যস্ত ছিল বলেই জান্নাতীদের খাদ্য খাওয়ার ব্যাপারে সকাল ও সন্ধ্যার কথা বলা হয়েছে মাত্র। প্রকৃতপক্ষে তারা যা চাবে এবং যখন চাবে বক্ষ্যমান পেয়ে যাবে। যেমন একটি গারীব ও অস্বীকার্য হাদীসে রয়েছে যে, সকাল সন্ধ্যায় ঠিকানা নয়, বরং রিযক তো অসংখ্য এবং তা সব সময় বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহর বন্ধুদের পার্শ্বে ঐ সময় এমন সব হ্র আগমন করবে যাদের মধ্যে নিম্নমানের হৃরেরা শুধুমাত্র যাফরান দ্বারা সৃষ্ট হবে। এই সব নিয়ামত বিশিষ্ট জান্নাতগুলি ঐ সব লোক পাবে যারা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহর বাধ্য ও অনুগত, ক্রোধসম্বরণকারী এবং লোকদেরকে ক্ষমাকারী। যাদের গুণাবলী (আরবী) এর শুরুতে বর্ণিত। হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ তারাই ফিরদাউসের অধিকারী হবে যাতে তারা স্থায়ী হবে।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#901)[ فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ
But there came after them successors.]
Sura:19
Sura: Maryam.
Ayat: 56-63
[ فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ
But there came after them successors.]
www.motaher21.net
19:56
وَ اذۡکُرۡ فِی الۡکِتٰبِ اِدۡرِیۡسَ ۫ اِنَّہٗ کَانَ صِدِّیۡقًا نَّبِیًّا ﴿٭ۙ۵۶﴾
And mention in the Book, Idrees. Indeed, he was a man of truth and a prophet.
Mentioning Idris
Allah tells:
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيسَ
إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا
وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
19:57
وَّ رَفَعۡنٰہُ مَکَانًا عَلِیًّا ﴿۵۷﴾
And We raised him to a high station.
And mention in the Book, Idris. Verily, he was a man of truth, (and) a Prophet.And We raised him to a high station.
Allah complimented Idris for being a truthful Prophet and He mentioned that he raised him to a high station.
It has previously been mentioned that in the Sahih it is recorded that the Messenger of Allah passed by Idris on the night of the Isra (Night Journey) and he (Idris) was in the fourth heaven.
Sufyan reported from Mansur that Mujahid said,
وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
(And We raised him to a high station),
“This means the fourth heaven.”
Al-Hasan and others said concerning Allah’s statement,
وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
(And We raised him to a high station),
“This means Paradise.
19:58
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اٰدَمَ ٭ وَ مِمَّنۡ حَمَلۡنَا مَعَ نُوۡحٍ ۫ وَّ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ اِسۡرَآءِیۡلَ ۫ وَ مِمَّنۡ ہَدَیۡنَا وَ اجۡتَبَیۡنَا ؕ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتُ الرَّحۡمٰنِ خَرُّوۡا سُجَّدًا وَّ بُکِیًّا ﴿ٛ۵۸﴾
Those were the ones upon whom Allah bestowed favor from among the prophets of the descendants of Adam and of those We carried [in the ship] with Noah, and of the descendants of Abraham and Israel, and of those whom We guided and chose. When the verses of the Most Merciful were recited to them, they fell in prostration and weeping.
These Prophets are the Chosen Ones
Allah says;
أُوْلَيِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ ادَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَايِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا
Those were they unto whom Allah bestowed His grace from among the Prophets, of the offspring of Adam, and of those whom We carried (in the ship) with Nuh, and of the offspring of Ibrahim and Israel, and from among those whom We guided and chose.
Allah, the Exalted, says that these Prophets (were favored), but this does not mean only these Prophets who were mentioned in this Surah. Rather, it is referring to all of those who were Prophets. Allah merely changes the implication of the discussion from specific individuals to the entire group of Prophets.
الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ ادَمَ
they unto whom Allah bestowed His grace from among the Prophets, of the offspring of Adam.
As-Suddi and Ibn Jarir both said,
“That which is meant by the offspring of Adam is Idris,
and what is meant by the offspring of those `whom We carried with Nuh’ is Ibrahim,
and what is meant by the offspring of Ibrahim is Ishaq, Yaqub and Ismail,
and what is meant by the offspring of Ismail is Musa, Harun, Zakariyya, Yahya and `Isa bin Maryam.”
Ibn Jarir said,
“And that is the distinction of their genealogies, even though Adam gathers all of them (as their original father). This is because among them is he who was not a descendant of those who were on the ship with Nuh, and he that is Idris. For verily, he was the grandfather of Nuh.”
I say that this is the most apparent meaning, which concludes that Idris is amongst the pillars of Nuh’s ancestral lineage. The view that this Ayah refers to the ancestral lineage of the Prophets, is the fact that it is similar to Allah’s statement in Surah Al-An`am,
وَتِلْكَ حُجَّتُنَأ ءَاتَيْنَـهَأ إِبْرَهِيمَ عَلَى قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَـتٍ مَّن نَّشَأءُ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَـقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّ هَدَيْنَا وَنُوحاً هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَـنَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَـرُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِينَ
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّـلِحِينَ
وَإِسْمَـعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطاً وَكُلًّ فَضَّلْنَا عَلَى الْعَـلَمِينَ
وَمِنْ ءابَايِهِمْ وَذُرِّيَّـتِهِمْ وَإِخْوَنِهِمْ وَاجْتَبَيْنَـهُمْ وَهَدَيْنَـهُمْ إِلَى صِرَطٍ مُّسْتَقِيمٍ
And that was our proof which We gave Ibrahim against his people. We raise whom We will in degrees. Certainly your Lord is All-Wise, All-Knowing.
And We bestowed upon him Ishaq and Yaqub, each of them We guided; and before him We guided Nuh, and among his progeny Dawud, Suleiman, Ayub, Yusuf, Musa and Harun. Thus do We reward the doers of good.
And Zakariyya, and Yahya, and `Isa and Ilyas, each one of them was of the righteous.
And Ismail and Al-Yasa` and Yunus and Lut and each one of them We preferred above the `Alamin.
And also some of their fathers and their progeny and their brethren, We chose them, and We guided them to the straight path. (6:83-87)
Until Allah’s statement,
أُوْلَـيِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
They are those whom Allah had guided. So follow their guidance. (6:90)
Allah, the Exalted, says,
مِنْهُم مَّن قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّن لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ
Of some of them We have related to you their story. And of some We have not related to you their story. (40:78)
In Sahih Al-Bukhari it is reported from Mujahid that he asked Ibn Abbas,
“Is there a prostration in Surah Sad”
Ibn Abbas replied, “Yes.”
Then he recited,
أُوْلَـيِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
They are those whom Allah had guided. So follow their guidance. (6:90)
Ibn Abbas then said, “So your Prophet is one of those who have been commanded to follow them. And he is of those who should be followed.” — referring to Dawud.
Allah, the Exalted, said in this noble Ayah,
إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ ايَاتُ الرَّحْمَن خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا
When the Ayah of the Most Gracious were recited unto them, they fell down prostrate and weeping.
This means that when they heard the Words of Allah, mentioning His proofs and evidences, they prostrated to their Lord in humility, humbleness, praise and thanks for the great favors they were blessed with.
The word Bukiyan at the end of the Ayah means those who are crying, and it is the plural of Baki.
Due to this the scholars agree that it is legislated to prostrate upon reading this Ayah, in following them and adhering to their manner of worship
19:59
فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّہَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا ﴿ۙ۵۹﴾
But there came after them successors who neglected prayer and pursued desires; so they are going to meet evil –
They were succeeded by Wicked People and Good People
Allah says:
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ
فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
Then, there has succeeded them a posterity who have lost the Salah and have followed lusts. So they will meet Ghaiy.
After Allah mentioned the party of blessed ones — the Prophets and those who followed them by maintaining the limits set by Allah and His commandments, fulfilling what Allah ordered and avoiding His prohibitions — then He mentions,
خَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ
(there has succeeded them a posterity).
This means later generations.
أَضَاعُوا الصَّلَةَ
who have lost Salah,
Losing their prayers is when they do not consider the prayers obligatory. Therefore they lose, because the prayer is the pillar and foundation of the religion. It is the best of the servants’ deeds. Thus, these people will occupy themselves with worldly desires and delights, and they will be pleased with the life of this world. They will be tranquil and at ease in the worldly appetites. Therefore, these people will meet with Ghaiy, which means loss on the Day of Resurrection.
Al-Awza`i reported from Musa bin Sulayman, who reported from Al-Qasim bin Mukhaymirah that he said concerning Allah’s statement,
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَةَ
(Then, there has succeeded them a posterity who have lost the Salah),
“This means that they will not keep up with the proper times of the prayer, because if it meant complete abandonment of the prayer, this would be disbelief.”
It is also reported that it was said to Ibn Mas`ud,
“Allah often mentions the prayer in the Qur’an. He says,
الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَـتِهِمْ سَاهُونَ
Those who neglect their Salah. (107:5)
And He says,
عَلَى صَلَتِهِمْ دَايِمُونَ
Those who remain constant in their Salah. (70:23)
And He says,
عَلَى صَلَتِهِمْ يُحَافِظُونَ
Who guard their Salah.” (23:9)
Then, Ibn Mas`ud said,
“This means at its designated times.”
The people said, “We thought that this was referring to the abandonment of the prayer.”
He replied,
“That would be disbelief.”
Masruq said,
“No one who guards the five daily prayers will be written among the heedless. In their neglect is destruction. Their neglect is delaying them past their fixed times.”
Al-Awza`i reported from Ibrahim bin Zayd that Umar bin Abdul-`Aziz recited the Ayah,
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ
فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
Then, there has succeeded them a posterity who have lost the Salah and have followed lusts. So they will meet Ghayy.
Then, he said,
“Their loss was not their abandonment of the prayers, but it was by not offering them during their proper and prescribed times.”
Allah said,
فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
So they will meet Ghayy.
Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas that he said,
“This means loss.”
Qatadah said,
“This means evil.”
Sufyan Ath-Thawri, Shu`bah and Muhammad bin Ishaq all reported from Abu Ishaq As-Sabi`i, who reported from Abu Ubaydah, who reported from Abdullah bin Mas`ud that he said,
فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
(So they will meet Ghayy),
“This is a valley in the Hellfire which is very deep and its food is filthy.”
Al-A`mash reported from Ziyad, who reported from Abu Iyad, who commented Allah’s statement,
فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
(So they will meet Ghayy), He said,
“This is a valley in Hell made of puss and blood.”
Allah said
19:60
اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا ﴿ۙ۶۰﴾
Except those who repent, believe and do righteousness; for those will enter Paradise and will not be wronged at all.
إِلاَّ مَن تَابَ وَامَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا
Except those who repent and believe and work righteousness.
This means, “Except those who recant from giving up the prayers and following the desires, for verily, Allah will accept their repentance, give them a good end and make them of those who inherit the Garden of Delight (Paradise).”
For this reason Allah says,
فَأُوْلَيِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ
وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْيًا
Such will enter Paradise and they will not be wronged in aught.
This is because repentance wipes away that which was before it.
In another Hadith, the Prophet said,
التَّايِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَاذَنْبَ لَه
The one who repents from sin is like he who has no sin.
Because of this, those who repent will not lose anything from the (good) deeds that they did. They will not be held accountable for what they did before their repentance, thus causing a decrease in their reward for deeds that they do after their repentance. That is because whatever they did before repenting is lost, forgotten and not taken to account. This is an honor from the Most Generous and a kindness from the Most Gentle. This is an exception that is made for these people, similar to Allah’s statement in Surah Al-Furqan,
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَـهَا ءَاخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِى حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ
And those who invoke not any other god along with Allah, nor kill such person as Allah has forbidden, except for just cause…) until Allah’s statement,
وَكَانَ اللَّهُ غَفُوراً رَّحِيماً
and Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful. (25:68-70
19:61
جَنّٰتِ عَدۡنِۣ الَّتِیۡ وَعَدَ الرَّحۡمٰنُ عِبَادَہٗ بِالۡغَیۡبِ ؕ اِنَّہٗ کَانَ وَعۡدُہٗ مَاۡتِیًّا ﴿۶۱﴾
[Therein are] gardens of perpetual residence which the Most Merciful has promised His servants in the unseen. Indeed, His promise has ever been coming.
The Description of the Gardens of the Truthful and Those Who repent
Allah, the Exalted, says;
جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدَ الرَّحْمَنُ عِبَادَهُ بِالْغَيْبِ
They will enter `Adn Gardens which the Most Gracious has promised to His servants in the unseen.
Allah, the Exalted, says that the Gardens (of Paradise), which the penitent will enter, will be Gardens of `Adn, meaning, eternity.
These are Gardens that the Most Beneficent promises His servants in the unseen.
This means that these Gardens are from the unseen things that they believe in, even though they have never witnessed them. They believe in the unseen out of their strong conviction and the strength of their faith.
Concerning Allah’s statement,
إِنَّهُ كَانَ وَعْدُهُ مَأْتِيًّا
Verily, His promise must come to pass.
This affirms the fact that this will occur, and that it is a settled matter. Allah does not break His promise, nor does He change it.
This is similar to His statement,
كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُولاً
His promise is certainly to be accomplished. (73:18)
This means that His promise will be and there is no avoiding it.
Allah’s statement here,
مَأْتِيًّا
(must come to pass),
This means that it will come to His servants who are striving towards it and they will reach it.
There are those commentators who said,
مَأْتِيًّا
(must come to pass),
“This means it is coming, because everything that comes to you, you also come to it.
This is as the Arabs say, `Fifty years came to me, and I came to fifty years.’ They both mean the same thing (I’m fifty years old).”
Concerning Allah’s statement
19:62
لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡہَا لَغۡوًا اِلَّا سَلٰمًا ؕ وَ لَہُمۡ رِزۡقُہُمۡ فِیۡہَا بُکۡرَۃً وَّ عَشِیًّا ﴿۶۲﴾
They will not hear therein any ill speech – only [greetings of] peace – and they will have their provision therein, morning and afternoon.
لَاا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا
They shall not hear therein any Laghw.
This means that in these gardens of Paradise there is no ignorant, wasteful and useless speech, like there is in this life.
He said,
إِلاَّ سَلَمًا
but only Salam.
This is an indifferent exception, similar to Allah’s statement,
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْواً وَلَا تَأْثِيماً
إِلاَّ قِيلً سَلَـماً سَلَـماً
No Laghw will they hear therein, nor any sinful speech. But only the saying of:Salam! Salam! (56:25-26)
Concerning His statement,
وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا
And they will have therein their sustenance, morning and afternoon.
This means, in what is similar to mornings and evenings. This does not mean that there is a night and a day (in Paradise), but they will be living in times that alternate. They will know its lighted times from its lights and illumination.
This is as Imam Ahmad recorded from Abu Hurayrah, who said that the Messenger of Allah said,
أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَلِجُ الْجَنَّةَ صُوَرُهُمْ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَا يَبْصُقُونَ فِيهَا وَلَا يَتَمَخَّطُونَ فِيهَا وَلَايَتَغَوَّطُونَ انِيَتُهُمْ وَأَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ وَالْفِضَّةُ وَمَجَامِرُهُمُ الاَْلُوَّةُ وَرَشْحُهُمُ الْمِسْكُ وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ لَا اخْتِلَفَ بَيْنَهُمْ وَلَا تَبَاغُضَ قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ يُسَبِّحُونَ اللهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا
The first group to enter into Paradise will have forms like the form of the moon on a night when it is full. They will not spit, nor will they blow their noses therein. They also will not defecate. Their containers and combs will be made of gold and silver and their censers will be of aloes wood. Their sweat will be the fragrance of musk and each of them will have two wives. The marrow of their shins will be visible from beneath the skin due to their beauty. They will not have any disputes between them, or any hatred. Their hearts will be united like the heart of one man. They will glorify Allah in the morning and evening.
Al-Bukhari and Muslim both recorded this narration in the Two Sahihs.
Imam Ahmad also recorded that Ibn Abbas said that the Messenger of Allah said,
الشُّهَدَاءُ عَلَى بَارِقِ نَهْرٍ بِبَابِ الْجَنَّةِ فِي قُبَّةٍ خَضْرَاءَ يَخْرُجُ عَلَيْهِمْ رِزْقُهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ بُكْرَةً وَعَشِيًّا
The martyrs will be upon the banks of a river by the gates of Paradise. Over them will be a green dome. Their sustenance will be brought out to them from Paradise, morning and evening.
Ahmad is the only one who collected this narration.
Ad-Dahhak reported that Ibn Abbas said,
وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا
(And they will have therein their sustenance, morning and afternoon),
“This means the amount of time equal to night and day.”
Allah said,
تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَن كَانَ تَقِيًّا
19:63
تِلۡکَ الۡجَنَّۃُ الَّتِیۡ نُوۡرِثُ مِنۡ عِبَادِنَا مَنۡ کَانَ تَقِیًّا ﴿۶۳﴾
That is Paradise, which We give as inheritance to those of Our servants who were fearing of Allah .
Such is the Paradise which We shall give as an inheritance to those of Our servants who had Taqwa.
This means, `This Paradise that We have described with these magnificent attributes, it is that which We will cause are pious servants to inherit.’
They are those who obey Allah in happiness and times of hardship. They are those who suppress their anger and they pardon people’s offenses.
This is as Allah says at the beginning of Surah Al-Mu’minun,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُوْمِنُونَ
الَّذِينَ هُمْ فِى صَلَتِهِمْ خَـشِعُونَ
Successful indeed are the believers. Those who are humble in their Salah. (23:1-2) Until His saying,
أُوْلَـيِكَ هُمُ الْوَرِثُونَ
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَـلِدُونَ
These are indeed the inheritors. Who shall inherit the Firdaws. In it they shall dwell forever. (23:10-11
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran