(বই#৯০২) সূরা:- মরিয়ম। সুরা:১৯ ৬৪-৬৫ নং আয়াত:- [ مَا كَانَ رَبُّكَ نَسِیًّاۚ আপনার রব ভুলে যান না।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯০২)
সূরা:- মরিয়ম।
সুরা:১৯
৬৪-৬৫ নং আয়াত:-
[ مَا كَانَ رَبُّكَ نَسِیًّاۚ
আপনার রব ভুলে যান না।]
www.motaher21.net
১৯:৬৪
وَ مَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَ١ۚ لَهٗ مَا بَیْنَ اَیْدِیْنَا وَ مَا خَلْفَنَا وَ مَا بَیْنَ ذٰلِكَ١ۚ وَ مَا كَانَ رَبُّكَ نَسِیًّاۚ

হে মুহাম্মাদ! আমি আপনার রবের হুকুম ছাড়া অবতরণ করি না। যা কিছু আমাদের সামনে ও যা কিছু পেছনে এবং যা কিছু এর মাঝখানে আছে তার প্রত্যেকটি জিনিসের তিনিই মালিক এবং আপনার রব ভুলে যান না।
১৯:৬৫
رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ مَا بَیْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَ اصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖ١ؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِیًّا۠

তিনি আসমান ও যমীনের এবং এ দূয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে সবকিছুর রব। কাজেই আপনি তার বন্দেগী করুন এবং তার বন্দেগীর ওপর অবিচল থাকুন। আপনার জানা মতে তাঁর সমকক্ষ কোন সত্তা আছে কি?

৬৪-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# এ সম্পূর্ণ প্যারাগ্রাফটি একটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। একটি ধারাবাহিক বক্তব্য শেষ করে অন্য একটি ধারাবাহিক বক্তব্য শুরু করার আগে এটি বলা হয়েছে। বক্তব্য উপস্থাপনার ধরন পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ সূরাটি দীর্ঘকাল পরে এমন এক সময় নাযিল হয় যখন নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ অত্যন্ত দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তার সময় অতিবাহিত করেছিলেন। নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ সর্বক্ষণ অহীর অপেক্ষা করতেন। এর সাহায্যে তাঁরা নিজেদের পথের দিশা পেতেন এবং মানসিক প্রশান্তি ও সান্ত্বনাও লাভ করতেন। অহীর আগমনে যতই বিলম্ব হচ্ছিল ততই তাদের অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় জিব্রীল আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের সাহচর্যে আগমন করলেন। প্রথমে তিনি তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কিত ফরমান শুনালেন তারপর সামনের দিকে অগ্রসর হবার আগে আল্লাহর ইঙ্গিতে নিজের পক্ষ থেকে একথা ক’টি বললেন। একথা ক’টির মধ্যে রয়েছে এত দীর্ঘকাল নিজের গরহাজির থাকার ওজর, আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা বাণী এবং এ সঙ্গে সবর ও সংযম অবলম্বন করার উপদেশ ও পরামর্শ।

বক্তব্যের অভ্যন্তর থেকেই শুধু এ সাক্ষ্যের প্রকাশ হচ্ছে না বরং বিভিন্ন হাদীসও এর সমর্থন করেছে। ইবনে জারীর, ইবনে কাসীর ও রুহুল মা’আনী ইত্যাদির লেখকগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এ হাদীসগুলো উদ্ধৃত করেছেন।
# তাঁর বন্দেগীর পথে মজবুতভাবে এগিয়ে চলো এবং এ পথে যে সব সংকট, সমস্যা ও বিপদ আসে সবরের সাথে সেসবের মোকাবিলা করো। যদি তাঁর পক্ষ থেকে স্মরণ করা এবং সাহায্য ও সান্ত্বনা দেবার ব্যাপারে কখনো বিলম্ব হয় তাহলে তাতে ভীত হয়ো না। একজন অনুগত বান্দার মতো সব অবস্থায় তাঁর ইচ্ছার হয় তাহলে ওপর সন্তুষ্ট থাকো এবং একজন বান্দা ও রাসূল হিসেবে তোমার ওপর যে দায়িত্বভার হয়েছে দৃঢ় সংকল্প সহকারে তা পালন করতে থাকো।
# মূলে سَمِيًّ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “সমনাম” অর্থাৎ আল্লাহ‌ তো হচ্ছেন ইলাহ, তোমাদের জানা মতে দ্বিতীয় কোন ইলাহ আছে কি? যদি না থেকে থাকে এবং তোমরা জানো যে নাই, তাহলে তোমাদের জন্য তারই বন্দেগী করা এবং তারই হুকুমের দাস হয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন পথ থাকে কি”

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
#   *আল্লাহর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব : পরিশেষে আলােচ্য পাঠটির সমাপ্তি টানা হচ্ছে মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত বা প্রভুত্ব কর্তৃত্বের চুড়ান্ত ঘােষণা দানের সাথে। এ পর্যায়ে তাদেরকে আল্লাহর নিরংকুশ ও সার্বিক আনুগত্য করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং এপথে আগত সকল বাধা বিঘ্ন ও সংকট সমস্যার মধ্যে সবর করার জন্যে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে, ফেরেশতাদের কথা উদ্ধৃত করতে গিয়ে এরশাদ হচ্ছে, ‘আর আমরা তােমার রবের হুকুম ছাড়া কখনও অবতীর্ণ হই না। আমাদের সামনে, পেছনে এবং এই দুই স্থানের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিক তাে একমাত্র তিনি, আর তােমার রব কোনাে কিছু ভুলে যান না। আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী ও দুইয়ের মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে সেসব কিছুর মালিকও একমাত্র তিনি, অতএব, নিরংকুশভাবে একমাত্র আমার দাসত্ব করাে এবং একমাত্র তারই অনুগত্য করার ব্যাপারে তুমি চূড়ান্তভাবে মযবুত হয়ে থাক । তাঁর (শক্তি ক্ষমতা প্রকাশক) যেসব নাম আছে অনুরূপ (শক্তি-ক্ষমতা প্রকাশক) নাম আর কারাে আছে বলে কি তােমার জানা আছে?’ এই আয়াতাংশ নাযিল হওয়া সম্পর্কে যেসব রেওয়ায়েত পাওয়া যায় তা একটা আর একটার সাথে মিশে থাকার কারণে সেগুলাে থেকে সঠিক অর্থ উদ্ধার করা বড়ই মুশকিল। কিছু দিন ওহী আসা বিলম্বিত হওয়ার কারণে জিবরাঈলের আগমনও স্থগিত থাকে এবং তার এই না আসার কারণ জানাতে গিয়ে উপরােক্ত আয়াতগুলাে অবতীর্ণ হয়। এ সময় মােহাম্মদ(স.)-এর অন্তরে এক দারুণ ভয়ের সঞ্চার হয় এবং তিনি প্রিয়তম মালিকের সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপনের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তখন আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালা জিবরাঈলকে ওপরে বর্ণিত কথাগুলাে নবী(স.)-কে বলার নির্দেশ দেন, ‘আমরা তাে তােমার রবের হুকুমেই নাযিল হই’, অর্থাৎ আমাদের সকল কাজের মালিক একমাত্র তিনি। এরশাদ হচ্ছে, ‘আমাদের সামনে, পেছনে এবং এই দুই স্থানের মধ্যবর্তী স্থানে যতাে কিছু আছে, সব কিছুর মালিক একমাত্র তিনি। তিনি কিছুই ভুলে যান না। তিনি ওহী তখনই নাযিল করেন যখন তার প্রয়ােজন তিনি বােধ করেন। ‘আর তােমার রব কখনও ভুলে যান না।’ এর দ্বারা বুঝানাে হচ্ছে ও স্মরণ করানাে হচ্ছে যেন তিনি আল্লাহর হুকুম পালনের কাজে দৃঢ়তার সাথে লেগে থাকেন এবং একমাত্র আল্লাহরই প্রভুত্ব-কর্তৃত্ব সম্পর্কে ঘােষণা দেয়ার কাজ জারি রাখেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আকাশমন্ডলী ও যমীনের এবং এ দুইস্থানের মধ্যবর্তী স্থানগুলােরও সবটুকুর মালিকও একমাত্র তিনি।’ তিনি ছাড়া প্রভুত্ব-কর্তৃত্ব আর কারাে নয়। এই ঘােষণা দেয়ার পর জনগণকে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারাে প্রভুত্ব কর্তৃত্ব মানতে নিষেধ করে দেয়া হলো এবং তাঁর সাথে এই মহা বিশ্বের কোনাে কিছুকে অংশীদার মনে করতেও মানা করা হলাে। এজন্যে এরশাদ হচ্ছে, ‘তার আনুগত্য করাে এবং তাঁর এবাদাত করতে গিয়ে মযবুত হয়ে থাকো।’ অর্থাৎ, তাঁর এবাদাত করাে পূর্ণাংগ ও নিঃশর্তভাবে তাঁর যাবতীয় বিধি নিষেধ মেনে চলে এবং এইভাবে জীবন যাপন করতে গিয়ে দুঃখ দৈন্য সংকট সমস্যা যাই আসুক না কেন তার মধ্যে মযবুত হয়ে থাকো। মাবুদ পরওয়ারদেগারের যাবতীয় হুকুম পালন করার জন্যে বদ্ধপরিকর হয়ে যে কোনাে পরিস্থিতির মােকাবেলা করতে প্রস্তুত হওয়া এবং আনুগত্যের এ মহান ব্রতে দৃঢ়তার সাথে টিকে থাকাই হচ্ছে বান্দাদের কর্তব্য। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বলছেন পূর্ণাংগভাবে তােমার মনিবের আনুগত্য করাে এবং তােমার শক্তি ও সাধ্য অনুযায়ী তােমার মালিকের সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্যে মনকে গুছিয়ে নাও, চেষ্টা সাধনা করো কিন্তু অবশ্যই এটা একটা দুঃসাধ্য ও কষ্টকর কাজ। সকল কিছু থেকে মনকে সরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর দিকে হৃদয় মনকে রুজু করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। বড় কষ্ট করেই এভাবে মনকে তার লাগাম ছাড়া চাহিদার বস্তু থেকে সরিয়ে নিতে হয়। এতে কি যে কষ্ট হয় তা সেই ব্যক্তিই বুঝতে পারে যে আন্তরিকভাবে এ চেষ্টা সাধনায় আত্মনিয়ােগ করে। পৃথিবীর অসংখ্য লােভনীয় জিনিসের হাতছানি থেকে নিজেকে বাঁচানাের চেষ্টা করতে গিয়ে হৃদয়মন ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যেতে চায়, কিন্তু একবার এ সাধনা শুরু করলেই এর মধ্যে এক রহস্যময় তৃপ্তি অনুভূত হয়। কষ্ট করেও দুঃখ সয়ে যারা নিজেদের প্রবৃত্তিকে দমন করতে পারে তারাই আল্লাহর বিশেষ রহমতের হকদার হয়। দুঃখ কষ্ট ছাড়া ও ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া এবাদাতের স্বাদ ও সাফল্যের খুশী লাভ করা কিছুতেই সম্ভব নয় এর রহস্যময় কারণ একমাত্র তারাই জানতে পারে এবং আল্লাহর রহমতের খুশবু একমাত্র তারাই পেতে পারে যারা পুরােপুরিভাবে নিজেদেরকে আল্লাহর হাতে সােপর্দ করে দেয় এবং আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা বানিয়ে নেয়। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে সর্বপ্রকার কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত হয়ে যায় সত্য উপলব্ধির জন্যে তাদেরই হৃদয় দ্বার খুলে যায় এবং তাদের অনুভূতির বাতায়নসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়। এরশাদ হচ্ছে, আনুগত্য করাে নিঃশর্ত ও নিরংকুশভাবে একমাত্র তার এবং চরমভাবে ধৈর্য অবলম্বন করাে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে…’ আর একথা ভালাে করে বুঝে নিতে হবে যে ইসলামের এবাদাত শুধুমাত্র অন্তরে বিদ্যমান নিছক কোনাে অনুভূতির নাম নয়। ইসলাম গ্রহণ করতে গেলে এবং আল্লাহর কাছে মুসলমান বলে স্বীকৃতি পেতে হলে প্রয়ােজন চূড়ান্ত প্রচেষ্টা, এ চেষ্টাকালে প্রতিটি কর্মকাণ্ড, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি ব্যস্ততা, প্রতিটি ইচ্ছা এরাদা, প্রতিটি ঝোক প্রবণতা আল্লাহর কাছে পুরস্কারের নিশ্চয়তা এনে দেয়। তবে একথা স্থির নিশ্চিত আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি লাভ করতে হলে এবং চূড়ান্ত সাফল্যের দ্বারে উপনীত হতে হলে অবশ্য অবশ্যই কিছু না কিছু কষ্ট স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে একটা স্বত-সিদ্ধ কথা রয়েছে, মূল্য দিয়েই মূল্যবান কিছু লাভ করা যায় এবং কষ্ট করেই কষ্ট দূর করার পথ উন্মুক্ত হয়। সেজন্য পুরােপুরি আল্লাহমুখী হতে হবে এবং সবাইকে ছেড়ে এবং সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র আল্লাহকেন্দ্রিক হতে হবে। এপথে যে কষ্ট আসবে তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে করে পৃথিবীর সকল মােহ থেকে মুক্ত হয়ে আকাশের মালিকের নৈকট্য লাভ করা যায়। যাবতীয় প্রয়ােজন ও লোভ-লালসার ফাঁদ থেকে এবং প্রবৃত্তির বল্গাহীন চাহিদা ও ভােগ বিলাস থেকে মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলেই আখেরাতের চিরন্তন সুখ এবং চরম ও পরম শান্তির আশা করা যেতে পারে। আল্লাহর এবাদাত বা আল্লাহকে মনিব মালিক প্রভু মেনে তার হুকুম মতাে যে জীবন যাপন তাই হচ্ছে আল্লাহর জীবনের পূর্ণাংগ দেয়া ব্যবস্থা। এই জীবন ব্যবস্থা অবলম্বন করেই মানুষ সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ে তুলতে পারে এবং এ ব্যবস্থা মতাে চলতে গিয়ে মানুষ অনুভব করে যে তার জীবনের ছোট বড় সব কিছুর মধ্যে সে আল্লাহরই দাসত্ব করছে, এভাবে সে তার সকল কর্ম প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে নিজের জীবনকে আল্লাহর বিধান পালনকারী হিসাবে দেখতে পায় এবং জীবনকে ধাপে ধাপে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, আর এভাবেই তার জীবনকে সে সুখী ও সুন্দর বানাতে সক্ষম হয়। তবে এ জীবন পথে প্রয়ােজন অনেক সবর, প্রচেষ্টা এবং পারস্পরিক সহযােগিতা। অতএব তাঁর দাসত্ব করাে এবং তার হুকুমমতাে চলার জন্যে ধৈর্য অবলম্বন করাে ও দৃঢ়তা গ্রহণ করো, কারণ তিনিই হচ্ছেন একমাত্র সেই সত্ত্বা এই সৃষ্টির সব কিছু যাঁর আনুগত্য করে চলেছে এবং সবাই প্রকৃতিগতভাবে যার মুখাপেক্ষী এবং সকল অন্তর যার দিকে ঝুঁকে থাকে তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘তার সমকক্ষ ক্ষমতাবান অন্য কোনাে নাম তােমার জানা আছে কি?’ অর্থাৎ তার মতাে আরাে কেউ ক্ষমতাধিকারী আছে বলে কি তােমার জানা আছে? যতােপ্রকার গুণ মানুষের হতে পারে এবং যতাে দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে সব কিছু থেকেই তিনি ঊর্ধে।

 

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৬৪-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

(وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلَّا…… نَسِيًّا) শানে নুযূল:

ইবনু আব্বাস < থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (عليه السلام)-কে বললেন: আপনি আমার কাছে যতবার আসেন তার চেয়ে আরো বেশি আসতে কিসে বাধা দেয়? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: তখন

(وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلَّا…… نَسِيًّا)

এ আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী: ৩২১৮, ৪৭৩১) এ কথা বলার কারণ হল একদা জিবরীল (عليه السلام) আসতে বিলম্ব করেন। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথে বেশি বেশি সাক্ষাত লাভের কামনা করে এ উক্তি করেন।

অর্থাৎ জিবরীল (عليه السلام) সহ যে কোন ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ব্যতীত কোন কাজ করেন না। যদি কোন কাজের নির্দেশ পান তা হলে দ্রুত তা পালন করেন, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের অবাধ্য হন না। যেমন ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَّا يَعْصُوْنَ اللّٰهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ)

“যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হন তাই করেন।” (সূরা তাহরীম ৬৬:৬)

(لَه مَا بَيْنَ أَيْدِيْنَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذٰلِكَ)
অর্থাৎ আমাদের সম্মুখে দুনিয়াতে ও পরকালের যা কিছু রয়েছে, দুনিয়াতে অতীতে যা পার করে এসেছি এবং দুনিয়াতে ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানায়ত্ব। আল্লাহ তা‘আলা কিছুই ভুলে যান না, স্থান কাল সব কিছুই সমান। মানুষের দৃষ্টিতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত রয়েছে কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কাছে সবই সমান।

অর্থাৎ যেহেতু তিনি সবকিছুর মালিক সেহেতু একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর এবং ইবাদতে ধৈর্য ধারণ কর ও অবিচল থাক। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا)

“এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তাতে অবিচল থাক” (সূরা ত্বা-হা- ২০:১৩২)

সুতরাং আমাদের উচিত একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা এবং ইবাদতে ধৈর্য ধারণ করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ব্যতীত ফেরেশতারা কোথাও গমনাগমন করেন না।
২. আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য, অন্য কেউ নয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৬৪-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একবার হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) বলেনঃ “আপনি আমার কাছে যত বার আসেন, এর চেয়ে বেশীবার আসেন না কেন? এর উত্তরে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (ইমাম আহমাদ (রঃ) এটা স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী (রঃ) একাকী এটা তাখরীজ করেছেন) এটাও বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত জিবরাঈলের (আঃ) আগমনের বিলম্ব হয়। ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বড়ই বিচলিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) এই আয়াত নিয়ে অবতরণ করেন। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) বারো দিন বা এর চেয়ে কম দিন পর্যন্ত আগমন করেন নাই। অতঃপর তিনি আসলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনার আগমনে এতো বিলম্ব হলো কেন? মুশরিকরা তো বহু কিছু গুজব রটাতে শুরু করেছিল। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। সুতরাং এই আয়াত (আরবী) এই সূরার আয়াতের মতই।

বর্ণিত আছে যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাদের দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ ঘটে নাই। সাক্ষাৎ হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) বলেনঃ “আপনি আগমনে বিলম্ব করায় আমি তো বড়ই বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম।” হযরত জিবরাঈল (আঃ) জবাবে তাকে বলেনঃ “আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্যে আমিই বেশী আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু আমি আল্লাহ তাআলার হুকুমের অনুগত। যখন তিনি নির্দেশ দেন তখনই শুধু আমি আসতে পারি। (কিন্তু এই রিওয়াইয়াতটি গারীব বা দুর্বল)

বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমনে বিলম্ব করেন। অতঃপর তিনি আগমন করলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “যখন লোকেরা তাদের নখ কাটে না, অঙ্গুলী পরিষ্কার করে না, গোফ ছোট করে না এবং মিসওয়াক করে না, তখন আমি কিরূপে আসতে পারি?” অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন। (এটা মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে)

হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমাদের মজলিস ঠিকঠাক করে নাও। আজ ঐ ফেরেশতা আগমন করছেন যিনি আজকের পূর্বে যমীনে কখনো অবতরণ করেন নাই।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে ও যা এই দু’এর অন্তর্বর্তী তা তারই। অর্থাৎ আগমনকারী পারলৌকিক বিষয়সমূহ, অতীত হয়ে যাওয়া পার্থিব বস্তুরাজি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যস্থিত সমস্ত কিছুর অধিকারী তিনিই। হে নবী (সঃ) ! তোমার প্রতিপালক কিছুই ভুলবার নন। তিনি তোমাকে ভুলে যাবেন এটা তাঁর বিশেষণ নয়। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শপথ পূর্বাহ্নে, শপথ রজনীর যখন তা হয় নিঝুম। তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেন নাই এবং তোমার প্রতি বিরূপও হন। নাই।” (৯৩:১-৩)

হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা হারাম এবং যা থেকে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমার্হ। সুতরাং যা ক্ষমাহঁ তা তোমরা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে গ্রহণ কর। আল্লাহ তাআলা কোন কিছু ভুলেন না।” অতঃপর তিনি, (আরবী) এই বাক্যটিই পাঠ করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তিনি আকাশসমূহ, পৃথিবী ও এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুরই প্রতিপালক। এমন কেউ নেই, যে তার হুকুম টলাতে পারে। সুতরাং হে নবী (সঃ) ! তুমি তাঁরই ইবাদত করতে থাকো এবং তাঁরই উপাসনায় ধৈর্যশীল থাকো তার সমতুল্য ও সমকক্ষ কেউই নেই। তিনি বরকতময়। তিনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাঁর নামে সমস্ত গুণ ও বিশেষণ বিদ্যমান। তিনি মহামহিমান্বিত।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#902)
Sura:19
Sura: Maryam.
Ayat: 64-65
وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا ]
Your Lord is never forgetful.]

www.motaher21.net

19:64

وَ مَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمۡرِ رَبِّکَ ۚ لَہٗ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡنَا وَ مَا خَلۡفَنَا وَ مَا بَیۡنَ ذٰلِکَ ۚ وَ مَا کَانَ رَبُّکَ نَسِیًّا ﴿ۚ۶۴﴾

[Gabriel said], “And we [angels] descend not except by the order of your Lord. To Him belongs that before us and that behind us and what is in between. And never is your Lord forgetful –

 

The Angels do not descend, except by Allah’s Command

Imam Ahmad recorded that Ibn Abbas said that the Messenger of Allah said to Jibril,

مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَزُورَنَا أَكْثَرَ مِمَّا تَزُورُنَا

What prevents you from visiting us more than you do?

Then this Ayah was revealed,

وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلاَّ بِأَمْرِ رَبِّكَ

And we descend not except by the command of your Lord.

Al-Bukhari was alone in recording it and he related it with the Tafsir of this Ayah.

Al-Awfi reported from Ibn Abbas that he said,

“Jibril was kept from visiting the Messenger of Allah, so he was disturbed and grieved because of this.

Then, Jibril came to him and said, `O Muhammad,
وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلاَّ بِأَمْرِ رَبِّكَ
(And we descend not except by the command of your Lord).”‘

Allah said,

لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا خَلْفَنَا

To Him belongs what is before us and what is behind us,

It has been said that the meaning of “what is before us” refers to that which is in this life and “what is behind us” refers to the Hereafter.

وَمَا بَيْنَ ذَلِكَ

and what is between those two;

This means what is between two blows of the Sur.

This is the opinion of Abu Al-Aliyah, Ikrimah and Mujahid.

This was also stated by Sa`id bin Jubayr and Qatadah in one narration from them.

As-Suddi and Ar-Rabi` bin Anas held this opinion as well.

It has also been said,
مَا بَيْنَ أَيْدِينَا
(what is before us),

means the future matters of the Hereafter.

وَمَا خَلْفَنَا
(what is behind us),

means what has taken place in this life,

وَمَا بَيْنَ ذَلِكَ

what is between those two;

means what happens between this life and the Hereafter.

A statement like this explanation has been reported from Ibn Abbas, Sa`id bin Jubayr, Ad-Dahhak, Qatadah, Ibn Jurayj and Ath-Thawri.

Ibn Jarir also preferred this latter interpretation.

And Allah knows best.

Concerning Allah’s statement,

وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا

and your Lord is never forgetful.

Mujahid said,

“This means that your Lord has not forgotten you.”

Allah said

19:65

رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَہُمَا فَاعۡبُدۡہُ وَ اصۡطَبِرۡ لِعِبَادَتِہٖ ؕ ہَلۡ تَعۡلَمُ لَہٗ سَمِیًّا ﴿٪۶۵﴾

Lord of the heavens and the earth and whatever is between them – so worship Him and have patience for His worship. Do you know of any similarity to Him?”

 

رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا

Lord of the heavens and the earth, and all that is between them,

He created all of that, He is the Disposer of its affairs, He is the Legislator over it and He is in absolute control of it, having no one to oppose His decisions.

فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ

هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا

so worship Him and abide patiently in his worship. Do you know of any who is similar to Him!

Ali bin Abi Talhah related that Ibn Abbas said that this means,

“Do you know any comparison or something similar to the Lord!”

Mujahid, Sa`id bin Jubayr, Qatadah, Ibn Jurayj and others all said the same.

Ikrimah related that Ibn Abbas said,

“There is no one named Ar-Rahman (the Most Beneficent) other than Him, Blessed and Exalted is He. Most Holy is His Name.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply