أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯০৪)
সূরা:- মরিয়ম।
সুরা:১৯
৭৩- ৮০ নং আয়াত:-
[ خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّ
কোন্টি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসাবে কোনটি উত্তম?’ ]
www.motaher21.net
১৯:৭৩
وَ اِذَا تُتْلٰى عَلَیْهِمْ اٰیٰتُنَا بَیِّنٰتٍ قَالَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا١ۙ اَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ خَیْرٌ مَّقَامًا وَّ اَحْسَنُ نَدِیًّا
এদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন অস্বীকারকারীরা ঈমানদারদেরকে বলে, “বলো, আমাদের দু’দলের মধ্যে কে ভালো অবস্থায় আছে এবং কার মজলিসগুলো বেশী জাঁকালো?”
১৯:৭৪
وَ كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ هُمْ اَحْسَنُ اَثَاثًا وَّ رِءْیًا
অথচ এদের আগে আমি এমন কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা এদের চেয়ে বেশী সাজ-সরঞ্জামের অধিকারী ছিল এবং বাহ্যিক শান-শওকতের দিক দিয়েও ছিল এদের চেয়ে বেশী অগ্রসর।
১৯:৭৫
قُلْ مَنْ كَانَ فِی الضَّلٰلَةِ فَلْیَمْدُدْ لَهُ الرَّحْمٰنُ مَدًّا١ۚ۬ حَتّٰۤى اِذَا رَاَوْا مَا یُوْعَدُوْنَ اِمَّا الْعَذَابَ وَ اِمَّا السَّاعَةَ١ؕ فَسَیَعْلَمُوْنَ مَنْ هُوَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّ اَضْعَفُ جُنْدًا
এদেরকে বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহীতে লিপ্ত হয় করুণাময় তাকে ঢিল দিতে থাকেন, এমনকি এ ধরনের লোকেরা যখন এমন জিনিস দেখে নেয় যার ওয়াদা তাদের সাথে করা হয়- তা আল্লাহর আযাব হোক বা কিয়ামতের সময়- তখন তারা জানতে পারে, কার অবস্থা খারাপ এবং কার দল দুর্বল!
১৯:৭৬
وَ یَزِیْدُ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اهْتَدَوْا هُدًى١ؕ وَ الْبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَّ خَیْرٌ مَّرَدًّا
বিপরীত পক্ষে যারা সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে উন্নতি দান করেন এবং স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের প্রতিদান ও পরিণামের দিক দিয়ে ভালো।
১৯:৭৭
اَفَرَءَیْتَ الَّذِیْ كَفَرَ بِاٰیٰتِنَا وَ قَالَ لَاُوْتَیَنَّ مَالًا وَّ وَلَدًاؕ
তারপর তুমি কি দেখেছো সে লোককে যে আমার আয়াতসমূহ মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং বলে, আমাকে তো ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করা হতে থাকবেই?
১৯:৭৮
اَطَّلَعَ الْغَیْبَ اَمِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًاۙ
সে কি গায়েবের খবর জেনে গেছে অথবা সে রহমানের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়ে রেখেছে?
১৯:৭৯
كَلَّا١ؕ سَنَكْتُبُ مَا یَقُوْلُ وَ نَمُدُّ لَهٗ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّاۙ
-কখখনো নয়, সে যা কিছু বলছে তা আমি লিখে নেবো। এবং তার জন্য আযাবের পসরা আরো বাড়িয়ে দেবো।
১৯:৮০
وَّ نَرِثُهٗ مَا یَقُوْلُ وَ یَاْتِیْنَا فَرْدًا
যে সাজ-সরঞ্জাম ও জনবলের কথা এ ব্যক্তি বলছে তা সব আমার কাছেই থেকে যাবে এবং সে একাকী আমার সামনে হাযির হয়ে যাবে।
৭৩-৮০ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*মােমেন ও কাফেরদের বিপরিতমুখী অবস্থান : ‘আল্লাহর অবাধ্যদের এই লাঞ্ছনাময় ও অবমাননাকর যন্ত্রণা ভােগ করার ভয়াবহ দৃশ্য এবং আল্লাহভীরুদের তা থেকে মুক্তি লাভের দৃশ্য তুলে ধরার পর তাদের পার্থিব জীবনের একটা ভিন্ন রকম দৃশ্য দেখানাে হচ্ছে। এটা হলাে মােমেনদের ওপর কাফেরদের দম্ভ প্রকাশ, নিজেদের ক্ষণস্থায়ী বিত্তবৈভবের জন্যে অহংকার ও বড়াই এবং মােমেনদের দারিদ্র ও অভাব অনটনের জন্যে তাদেরকে ধিক্কার দেয়ার দৃশ্য, ‘তাদের সামনে যখন আমার আয়াতগুলােকে স্পষ্টভাবে পাঠ করা হয় তখন কাফেররা মােমেনদেরকে বলে, এই দু’দলের মধ্যে কারা উৎকৃষ্টতর জীবন মানের অধিকারী এবং কারাই বা উৎকৃষ্টতর সমাজের অধিবাসী?’ একদিকে বিপুল জাঁকজমক, শান শওকত ও বিলাবহুল জীবন যাপন করে দোর্দণ্ড প্রতাপে প্রতিষ্ঠিত বিত্তশালী লােকেরা অপ্রতিহত গতিতে যুলুম দুর্নীতি ও স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে তারই পাশাপাশি অবস্থান করছে মুসলমানদের জাঁকজমকহীন ও দারিদ্র পীড়িত সমাজ, যাদের হাতে ঈমানদারী ও সততা ছাড়া আর কোনাে সম্পদ নেই, তাদের না আছে অঢেল অর্থ, না আছে ভােগ বিলাসের উপকরণ এবং না আছে ক্ষমতার দৌরাত্ম্য ও আধিপত্য, এই দুই ধরনের সমাজ এই পৃথিবীতে পরস্পরের মুখােমুখি হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে। প্রথম গােষ্ঠীটার রয়েছে অত্যন্ত বড় বড় ও জাঁকালাে সম্পদ সম্পত্তি, ক্ষমতা ও পদমর্যাদা। ওই সম্পদ সম্পত্তি ও পদমর্যাদাকে সংরক্ষণ ও কার্যকর করনের নিমিত্তে রয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও বিপুল ভােগ বিলাসের উপকরণ। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় গােষ্ঠীটা চরম দরিদ্র ও অভাবী। ক্ষমতার দাপট, প্রভাব প্রতিপত্তি ও বিত্ত বৈভবের অভাবের কারণে তারা ব্যাংগ বিদ্রুপ ও উপহাসের পাত্র। তারা কোনাে পার্থিব ধন ঐশ্বর্য, স্বার্থ বা শাসকদের নৈকট্য, আনুকুল্য ও শুভ দৃষ্টি লাভের জন্যে মানুষকে আহ্বান জানায় না। তারা আহ্বান জানায় ইসলামের আকীদা বিশ্বাস ও নীতি আদর্শের দিকে যা সর্ব প্রকারের সাজ সজ্জা, জাকজমক ও পার্থিব স্বার্থ থেকে বঞ্চিত থেকেই অর্জন করতে হয়। এ আদর্শ লাভ করা আর কারাে কাছ থেকে নয়, বরং শুধু আল্লাহর কাছ থেকেই সম্মান ও মর্যাদা লাভের আশা করা যায়। বরং এ আদর্শ তাদেরকে দুঃখ কষ্ট, সংগ্রাম ও শত্রুর গােয়ার্তুমির মােকাবেলা করতে বাধ্য করে। অথচ এসবের জন্যে ইহকালীন জীবনে তাকে প্রতিদানও দিতে পারে না। এর প্রতিদান হিসেবে সে পায় আল্লাহর নৈকট্য ও আখেরাতের বিপুল পুরস্কার। রসূল(স.)-এর যুগে কোরায়শ নেতাদের সামনে যখন কোরআন পড়া হতাে, তখন তারা দরিদ্র মােমেনদেরকে বলতাে, দুদলের মধ্যে কারা উচ্চতর মর্যাদা ও উৎকৃষ্টতর বিলাস ব্যসনের অধিকারী?’ অর্থাৎ যেসব বড় বড় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মােহাম্মদ(স.)-এর ওপর ঈমান আনেনি, তারা, না মােহাম্মদ(স.) চার পাশে সমবেত দরিদ্র লােকগুলাে? এ দুই গােষ্ঠীর মধ্যে কোনােটি অধিকতর মর্যাদাবান এবং কোন দলে সমাজের গণ্যমান্য লােকেরা রয়েছে। নাযার ইবনুল হারিস, আমর ইবনে হিশাম, (আবু জাহল) ওলীদ ইবনে মুগীরা এবং তাদের সমমনারা, না বেলাল, আম্মার, খাব্বাব এবং তাদের সর্বহারা দ্বীনী ভাইয়েরা? মুহাম্মদ(স.)-এর দাওয়াত যদি ভালােই হতাে, তাহলে তার অনুসারী এই দরিদ্র লােকগুলাে হবে কেন, যাদের কোরায়শ সমাজে কোনােই গুরুত্ব নেই। কেনই বা তারা খাব্বাবের মতাে দরিদ্র লােকের বাড়ীতে জমায়েত হয় আর তাদের বিরোধীরা বড় বড় জৌলুসপূর্ণ সভা-সমিতি ও উচ্চ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী কেন হয়। এ হচ্ছে বস্তুবাদীজগতের খোঁড়া যুক্তি। উচ্চতর জগতের ব্যাপারে যাদের কোনােই ধারণা নেই, তাদের যুক্তি সর্বকালে ও সর্বত্র এ রকমই হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে ইসলামী আকীদা ও আদর্শ সম্পর্কে আল্লাহর প্রাজ্ঞ নীতি হলাে, তা সর্ব প্রকারের বাহ্যিক সাজ-সজ্জা ও আকর্ষণ থেকে এবং সর্ব প্রকারের প্রলুব্ধকারী উপকরণসমূহ থেকে মুক্ত থাকবে, যাতে এ আদর্শকে যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে মনেপ্রাণে একনিষ্ঠভাবে কামনা করে তারাই গ্রহণ করে, গ্রহণ করে সব ধরনের পার্থিব স্বার্থ ও মােহ বিসর্জন দিয়ে। অপরদিকে পার্থিব স্বার্থ ও লাভের প্রত্যাশীরা এবং বিলাস ব্যসন, বাহ্যিক সৌন্দর্যের মােহ ও ধনৈশ্বর্যের অভিলাষ এর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। পরবর্তী আয়াতে নিজের ধনৈশ্বর্যের গর্বে গর্বিত কাফেরদের উল্লেখিত দম্ভোক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে। এ মন্তব্যে তাদেরকে অতীতের বিপুল বিত্তশালী ও প্রাচূর্যবান কাফেরদের ধ্বংসের কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি তাদের পূর্বে এমন বহু জাতিকে ধ্বংস | করে দিয়েছি, যারা তাদের চেয়ে অধিকতর সম্পদশালী ও ঐশ্বর্যশালী ছিলো। আল্লাহ তায়ালা যখন তাদেরকে ধ্বংস করার ফয়সালা করলেন, তখন তাদের ধনৈশ্বর্য তাদের ধ্বংসকে রােধ করতে পারেনি। অতীতকে ভুলে যাওয়া মানুষের অভ্যাস। যদি সে মনে রাখতো এবং চিন্তা করতাে, তাহলে অতীতের জাতিগুলাের ধ্বংসের কাহিনী তাদেরকে সতর্ক ও সচকিত করতাে। ধনে জনে তাদের চেয়ে শক্তিশালী অতীতের জাতিগুলাে যে পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে, তা তাদের উদাসীনতা দূর করে দিতে পারতাে এবং তারা তাদের অপকর্মগুলাে অব্যাহত রাখতাে না। এই মনােযােগ আকর্ষণমূলক মন্তব্যের পর পরবর্তী আয়াতে রাসূল(স.)-কে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন তিনি কাফেরদেরকে চ্যালেঞ্জ দেন যে, কাফের ও মুসলমানদের মধ্যে যে দলটা বিপথগামী, আল্লাহ তায়ালা যেন তাদেরকে আরাে বেশী করে বিপথগামী করেন। অবশেষে একদিন তারা দুনিয়ায় বা আখেরাতে তাদের প্রতিশ্রুত পরিণতি দেখতে পাবে। ‘বলাে, যে দল বিপথগামী, আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে আরাে বেশী অবকাশ দেন…’আয়াত ৭৫-৭৬ তারা দাবী করে যে, তারা মােহাম্মদ(স.)-এর অনুসারীদের চেয়ে বেশী সুপথগামী। কেননা তারা অধিকতর বিত্তশালী ও প্রতাপশালী। বেশ, তারা ধনবান ও প্রতাপশালী থাকুক। আর মুহাম্মদ(সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করুক যে, উভয় দলের মধ্যে যে দল বিপথগামী, তাদেরকে আরাে বিপথগামী করুন। আর যারা সুপথগামী, তাদেরকে আরাে সুপথগামী করুন, যতক্ষণ না তাদের জন্যে প্রতিশ্রুত আযাব সংঘটিত হয়। বিপথগামীদের এই আযাব দুনিয়াতে মোমেনের হাতে সংঘটিত হতে পারে, আবার তা কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতম আযাব দিয়েও হতে পারে। সেই আযাবের সম্মুখীন হলেই তারা বুঝবে কোন দল নিকৃষ্টতর এবং দুর্বলতর। সেই দিন মােমেনরা খুশী হবে সম্মানিত হবে। ‘আর চিরস্থায়ী সৎকর্মগুলো তোমার প্রতিপালকের কাছে প্রতিদানের দিক দিয়েও উত্তম, লাভের দিক দিয়েও শ্রেষ্ঠ।’ অর্থাৎ বস্তুবাদী ও ভােগবাদী দুনিয়াদাররা যেসব জিনিস নিয়ে দম্ভ করে, তার চেয়ে উত্তম।
পরবর্তী আয়াতে কাফেরদের আরাে এক ধরনের দম্ভোক্তির উল্লেখ ও পর্যালাচনা করে তার প্রতি বিস্ময় ও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে, ‘আমার আয়াতগুলােকে যে অস্বীকার করে এবং বলে যে, আমাকে অবশ্যই সন্তান ও ধন সম্পদ দান করা হবে তাকে কি তুমি দেখেছো?…’ (আয়াত ৭৭) এ আয়াতের শানে নুযুল প্রসংগে হযরত খাব্বাব ইবনুল আরত(রা.) বলেন, আমি একজন কামার ছিলাম। আস ইবনে ওয়ায়েলের কাছে আমার কিছু টাকা পাওনা ছিলাে। তার কাছে পাওনা আদায় করতে গেলে সে বললাে, “তুমি মােহাম্মদ(স.)-কে অস্বীকার না করা পর্যন্ত আমি তােমার পাওনা দেবাে না। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, তুমি মরে আবার জীবিত হলেও আমি মােহাম্মদ(স.)-কে অস্বীকার করবাে না। সে বলল, আমি যদি মরে আবার জীবিত হই, তাহলে তখন আমার কাছে এসাে। তখন আমার অনেক সন্তান ও ধন সম্পদ হবে। তখন আমি তােমার পাওনা দিয়ে দেবাে। তখন আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করলেন। (বােখারী ও মুসলিম)। আসলে আ’স ইবনে ওয়ালের এই উক্তি কাফেরদের দম্ভ ও আখেরাতকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টারই নমুনা। কোরআন তার এই মনােভাবের বিস্ময় প্রকাশ করেছে এবং তার দম্ভোক্তির নিন্দা করেছে। ‘সে কি অদৃশ্য জেনে ফেলেছে?’ অর্থাৎ সেখানে তার জন্যে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে, তা কি সে জেনে ফেলেছে। ‘নাকি সে দয়াময়ের কাছ থেকে কোনাে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে।’ আর এই প্রতিশ্রুতি লাভের সুবাদেই কি সে আস্থাশীল যে, সে সন্তান ও সম্পদ লাভ করবে? ‘কখনাে নয়।’ অর্থাৎ সে অদৃশ্যও জানতে পারেনি এবং আল্লাহর কাছ থেকে কোনাে অংগিকারও আদায় করেনি। বরঞ্চ সে কুফরী ও ব্যংগ বিদ্রুপে লিপ্ত।’ এই হুমকি ও সতর্কবাণী হঠকারী কাফেরদেরকে শিক্ষা দানের জন্য যথার্থ উপযােগী। কখনাে নয়। তার উক্তি আমি লিখে রাখবাে এবং তার আযাব আরাে বাড়িয়ে দেবাে।’ অর্থাৎ তার উক্তিকে হিসাবের দিনের জন্যে লিপিবদ্ধ করে রাখবাে, ফলে তা ভুলে যাওয়াও যাবে না এবং কোনাে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশও থাকবে না। এ উক্তিটাতে আসলে হুমকির একটা দৃশ্যমান রূপ তুলে ধরা হয়েছে। নচেৎ ভুল বুঝাবুঝি এমনিতেই অসম্ভব। আল্লাহর জ্ঞান যে ছােট বড় জিনিসকে নিজের আওতাধীন রাখে। আর তার আযাব বাড়িয়ে দেই।’ অর্থাৎ তাকে চিরস্থায়ী করে দেই এবং কখনাে বন্ধ করি না। ‘আর আমি তার কথাবার্তার উত্তরাধিকারী হই।’ এ আয়াতে হুমকিকে অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং তা ছবি দেখানাের ভংগিতে । অর্থাৎ নিজের যে সব ধন সম্পদ ও সন্তান সন্তুতির কথা সে বলে থাকে, তা থেকে সে যতােখানি রেখে যায়, তা আমি গ্রহণ করি, ঠিক যেমন উত্তরাধিকারী গ্রহণ করে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে ‘এবং আমার কাছে সে একাকীই আসে।’ অর্থাৎ সহায় সম্পদ, সন্তানাদি ও সাহায্যকারী ছাড়াই একেবারে একাকী, দুর্বল ও অসহায়ভাবে আসে। বলা হয়েছে যে, যে আল্লাহর আয়াতগুলােকে অস্বীকার করে, আসলে এমন একটা দিনের অপেক্ষা করে, যে দিনে তার কাছে কিছুই থাকবে না এবং তার কাছ থেকে তার যাবতীয় ইহলৌকিক সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে কি তুমি দেখেছাে। সে আসলে কাফেরের একটা নমুনা। তার আচরণ কাফের দম্ভ ও ধৃষ্টতার নমুনা।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৭৩-৮০ নং আয়াতের তাফসীর:
(أَيُّ الْفَرِيْقَيْنِ خَيْرٌ)
কোন দল বলতে মু’মিন ও কাফিরদের দুটি দলকে বুঝানো হয়েছে। কাফিররা দুনিয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে ও আরাম-আয়েশে জীবন যাপন করে থাকে আর মু’মিনরা কষ্টে বসবাস করে থাকে, যার ফলে কাফিররা মু’মিনদেরকে বলত, আমরাই (কাফিররা) শ্রেষ্ঠ দল। যদি তাই না হত তাহলে আমরা দুনিয়ায় আনন্দে থাকতাম না।
তারা বলত:
(وَقَالُوْا نَحْنُ أَكْثَرُ أَمْوَالًا وَّأَوْلَادًا لا وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِيْنَ)
“তারা বলত: আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেয়া হবে না।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৫)
তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সম্পদে ও ক্ষমতায় অধিক হলেই তারা শ্রেষ্ঠ নয়। বরং এরূপ অনেক সম্পদশালী জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করে দিয়েছেন। সুতরাং এরাও যখন শাস্তি প্রাপ্ত হবে তখন বুঝতে পারবে কারা ছিল মান-মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ ও কাদের প্রতিদান উত্তম। দুনিয়াতে তাদেরকে অপরাধ করার জন্য অবকাশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْآ أَنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنْفُسِهِمْ ط إِنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ لِيَزْدَادُوْآ إِثْمًا ج وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ)
“যারা কুফরী করেছে তারা যেন এটা ধারণা না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছি, তা তাদের জীবনের জন্য কল্যাণকর; বরং এ জন্যই আমি তাদেরকে অবকাশ প্রদান করি যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জন্য অপমানকর শাস্তি রয়েছে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৭৮)
(وَالْبٰقِيٰتُ الصّٰلِحٰتُ)
অর্থাৎ দুনিয়ার সকল বস্তু শেষ হয়ে যাবে শুধু অবশিষ্ট থাকবে মানুষের সৎ আমল। যেমনটি সূরা কাহফের ৪৬ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
আর এখানে সৎ আমল বলতে বুঝানো হয়েছে সালাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাত যাবতীয় ভাল কাজগুলোকে।
(عَهْدًا….. أَفَرَأَيْتَ الَّذِيْ) শানে নুযূল:
সাহাবী খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাহেলি যুগে আমি একজন কর্মকার (কামার) ছিলাম। ‘আস বিন অয়েলের নিকট আমার কিছু ঋণ পাওনা ছিল। আমি তার নিকট আসলাম তা নেয়ার জন্য। সে বলল: তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার না করা পর্যন্ত আমি এ পাওনা শোধ করব না। তখন আমি বললাম: আমি অস্বীকার করব না আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে মৃত্যু দিয়ে পুনরায় জীবিত না করা পর্যন্ত। তখন সে বলল: আমাকে ছেড়ে দাও মৃত্যুর পর জীবিত না হওয়া পর্যন্ত। তখন আমাকে সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে আর তা দিয়ে তোমার পাওনা শোধ করব। তখন এ আয়াতদ্বয় নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী: ২০৯১, ২২৭৫, সহীহ মুসলিম: ২৭৯৫)
তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা মোটেও সত্য নয়। বরং তারা কিয়ামতের দিনে আমার নিকট একা একা আসবে। সেখানে তাদের কোন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি থাকবে না।
সুতরাং যারা এরূপ বিশ্বাস রাখবে বুঝতে হবে তাদের ধারণা বা বিশ্বাস ভুল। তাই আমাদেরকে এরূপ বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াতে আরাম-আয়েশে থাকা মানে এ নয় যে, সে-ই শ্রেষ্ঠ।
২. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের জন্য হিদায়াত আরো বৃদ্ধি করে দেন।
৩. কিয়ামতের মাঠে মানুষ একা একা আসবে, কেউ তার সঙ্গে থাকবে না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# তাদের যুক্তি ছিল এ রকমঃ দেখে নাও দুনিয়ায় কার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও নিয়ামত বর্ষণ করা হচ্ছে? কার গৃহ বেশী জমকালো? কার জীবন যাত্রার নাম বেশী উন্নত? কার মজলিসগুলো বেশী আড়ম্বরপূর্ণ? যদি আমরা এসব কিছুর অধিকারী হয়ে থাকে এবং তোমরা এসব থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকো তাহলে তোমরা নিজেরাই চিন্তা করে দেখো, এটা কেমন করে সম্ভবপর ছিল যে, আমরা বাতিলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেও এভাবে দুনিয়ার কাজ লুটে যেতে থাকবো আর তোমরা হকের পথে অগ্রসর হয়েও এ ধরনের ক্লান্তিকর জীবন যাপন করে যেতে থাকবে?
# যদি পরকাল থেকেই থাকে তাহলে আমি সেখানে এখানকার চেয়েও বেশী সচ্ছল থাকবো। কারণ এখানে আমার সচ্ছল ও ধনাঢ্য হওয়া একথাই প্রমাণ করে যে, আমি আল্লাহর প্রিয়।
# প্রত্যেক পরীক্ষার সময় আল্লাহ তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার এবং সঠিক পথে চলার সুযোগ দান করেন। তাদেরকে অসৎ কাজও ভুল-ভ্রান্তি থেকে বাঁচান। তাঁর হেদায়াত ও পথ নির্দেশনার মাধ্যমে তারা অনবরত সত্য-সঠিক পথে এগিয়ে চলে।
# সে বলে তোমরা আমাকে যতই পথভ্রষ্ট ও দূরাচার বলতে এবং আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাতে থাকো না কেন আমি তো আজো তোমাদের চাইতে অনেক বেশী সচ্ছল এবং আগামীতেও আমার প্রতি অনুগ্রহ ধারা বর্ষিত হতে থাকবে। আমরার ধন-দৌলত, প্রভাব,-প্রতিপত্তি ও বৈষয়িক ক্ষমতা এবং আমার খ্যাতিমান সন্তানদেরকে দেখো। আমার জীবনের কোথায় তোমরা আমার প্রতি আল্লাহর ক্রোধ ও অভিশাপের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছো?–এটা মক্কার কোন একজন মাত্র লোকের চিন্তাধারা ছিল না বরং মাক্কার কাফেরদের প্রত্যেক সরদার ও মাতব্বর এ বিকৃত চিন্তায় ভুগছিল।
#তার অপরাধের ফিরিস্তিতে তার এ দাম্ভিক উক্তিও শামিল করা হবে এবং এর মজাও তাকে টের পাইয়ে দেয়া হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৭৩-৭৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা কাফিরদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তারা আল্লাহর স্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং দলীল প্রমাণাদি বিশিষ্ট কালাম দ্বারা কোন উপকার লাভ করে না। তারা এগুলো হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও চক্ষু ঘুরিয়ে থাকে। তারা তাদের বাহ্যিক শান শওকত ও জাকজমক দ্বারা মু’মিনদেরকে প্রভাবিত করতে চায়। মু’মিনদেরকে তারা বলেঃ “বল তো, ঘরবাড়ী সুন্দর ও জাকজমক পূর্ণ কাদের? কাদের মজলিসগুলি গুল্যার? সুতরাং আমরা যখন ধন দৌলতে, শান শওকতে, ও মান মর্যাদায় তোমাদের চেয়ে উন্নত, তখন আমরাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা, না তোমরা? তোমরা তো বাস করছো কুঁড়ে ঘরে। তোমরা ভাল ভাল খাবার খেতে, উত্তম পানীয় পান করতে পাও না। কখনো তোমরা আরকাম ইবনু আবি আরকামের ঘরে লুকিয়ে থাকো এবং কখনো কখনো এদিক ওদিক পালিয়ে থাকে। যেমন অন্য আয়াতে আছে। যে, কাফিররা বলেছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি এই দ্বীন ভাল হতো তবে এরা (মু’মিনরা) এটা মানার ব্যাপারে আমাদের অগ্রগামী হতো না।” (৪৬:১১) হযরত নূহের (আঃ) কওমও একথাই বলেছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা কি তোমার উপর এমন অবস্থায় ঈমান আনতে পারি যে, হীন প্রকৃতির লোকেরা তোমার অনুসরণ করেছে?” (২৬:১১১) আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ “এভাবেই তারা প্রতারিত হয়েছে এবং বলছেঃ এরাই কি ওরাই যাদের উপর আমাদের মধ্য হতে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন? কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে কি আল্লাহ অবগত নন?” কাফিরদের একথার প্রতিবাদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তাদের পূর্বে আমি কত মানব গোষ্ঠীকে বিনাশ করেছি, যারা তাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্য দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল।” অর্থাৎ তাদের দুঙ্কার্যের দরুণ তাদেরকে আমি ধ্বংস ও তচনচ করে দিয়েছি। তারা এই কাফিরদের তুলনায় বেশী সম্পদের অধিকারী ছিল। তারা ধন দৌলত, গাড়ীবাড়ী এবং শক্তি সামর্থে এদের চেয়ে বহু গুণে বেড়ে ছিল। কিন্তু তাদের অহংকার ও ঔদ্ধত্যের কারণে তাদের মূলোৎপাটন করে দিয়েছি। ফিরআউন এবং তার লোকদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করো, তাদের বাগান, প্রস্রবণ, জমিজমা, আঁকজমক পূর্ণ অট্টালিকা এবং সুউচ্চ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান রয়েছে। তাদের অন্যায়াচরণের কারণে তাদের ঐ সব কিছুই আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। মাছ সমূহ তাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে।
(আরবী) দ্বারা বাসভূমি ও নিয়ামত রাজিকে বুঝানো হয়েছে। (আরবী) দ্বারা মজলিস ও বৈঠককে বুঝানো হয়েছে। আরবে বৈঠক ও লোকদের একত্রিত। হওয়ার জায়গাকে (আরবী) এবং (আরবী) বলা হয়। যেমন একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের অপছন্দনীয় মজলিসে এসে থাকো।” (২৯:২৯)। মুশরিকরা বলতোঃ “পার্থিব দিক দিয়ে আমরা তোমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি। পোষাক পরিচ্ছদে, ধনে, মালে এবং রূপ ও আকারে আমরা তোমাদের (মু’মিনদের) চেয়ে উত্তম।”
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! যে সব কাফির দাবী করছে যে, তুমি অন্যায় পথে আছ এবং তারা ন্যায়ের পথে রয়েছে এবং নিজেদের স্বচ্ছল জীবনকে নিরাপদ ও শান্তিময় জীবন মনে করে নিয়েছে, তাদেরকে বলে দাওঃ বিভ্রান্তদের রশি দীর্ঘ হয়ে থাকে। তাদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবকাশ দেয়া হয়ে থাকে। যে পর্যন্ত না কিয়ামত সংঘটিত হয় বা তারা মৃত্যু মুখে পতিত হয়। প্রকৃতপক্ষে কারা মন্দ লোক ছিল এবং কাদের সাথী দুর্বল ছিল, ঐ সময় তারা তা পূর্ণরূপে জানতে পারবে। দুনিয়া তো কচুর পাতার পানির ন্যায় টলমলে। না ওর নিজের কোন নিশ্চয়তা আছে, না ওর আসবাবপত্রের কোন স্থায়ীত্ব রয়েছে। এই আয়াতে যেন মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কারা সঠিক পথে আছে এবং কারা ভুল পথে আছে এটা প্রমাণ করার জন্যে তাদেরকে মুবাহালায় (দু’ দলে নিজেদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী পরিজনকে নিয়ে মাঠে হাজির হয়ে পরস্পর এই দুআ করা যে, দু’দলের মধ্যে যারা ভুল পথে আছে তাদেরকে যেন আল্লাহ তাআলা ধবংস করে দেন। এটাকেই মুবাহালা বলা হয়) আসতে বলা হয়েছে। সুরায়ে জুমআয় যেমন ইয়াহুদীদেরকে মুবাহালায় অবতীর্ণ হতে বলা হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিলঃ “(হে নবী সঃ)! তাদেরকে বলে দাওঃ যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানব গোষ্ঠী নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”অনুরূপভাবে সুরায়ে আল-ইমরানে মুবাহালার উল্লেখ করে বলা হয়েছেঃ “যখন তোমরা তোমাদের মতের বিপরীত দলীল শুনেও ঈসাকে (আঃ) আল্লাহর পুত্র বলেই দাবী করছো তখন এসো, হাযির হও এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত পড়ার প্রার্থনা কর। তখন এই মুবহালায় মুশরিক, ইয়াহূদী এবং খৃস্টান কেউই অবতীর্ণ হতে সম্মত হয় নাই।
আল্লাহ তাআলা বলেন যে, যেমনভাবে বিভ্রান্তদের বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পেতে। থাকে, তেমনিভাবে হিদায়াত প্রাপ্তদের হিদায়াত বাড়তে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন কেনি সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের মধ্য হতে কেউ বলেঃ এটা তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি করেছে?” (৯:১২৪) (আরবী) এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে কাফে গত হয়েছে। এখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই স্থায়ী সৎকর্ম পুরস্কার প্রাপ্তির জন্যে শ্রেষ্ঠ এবং প্রতিদান হিসেবেও শ্রেষ্ঠ। হযরত আবু সালমা ইবনু আবদির রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি শুষ্ক গাছের নীচে উপবেশন করেন। ঐ গাছের একটি শাখা ধরে তিনি নাড়া দিলে ওর শুষ্ক পাতাগুলি ঝরে পড়ে। তখন তিনি বলেনঃ “দেখো, এভাবেই “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘সুবহানাল্লাহ এবং “আলহামদু লিল্লাহ’ বলার দ্বারা মানুষের পাপরাশি ঝরে পড়ে। হে আবুদ-দারদা (রাঃ)! এগুলি তুমি পাঠ করতে থাকো ঐ সময় আসার পূর্বে যখন তুমি এগুলি পাঠ করতে পারবে না।” এটা হচ্ছে (আরবী) বা স্থায়ী সৎকর্ম এবং এটাই হচ্ছে জান্নাতের ধন ভাণ্ডার।” এটা শুনে হযরত আবু দারদার (রাঃ) এই অবস্থা হয়েছিল যে, যখনই তিনি এই হাদীসটি বর্ণনা করতেন, তখনই বলতেনঃ “আল্লাহর শপথ! আমি এই কালেমাগুলি পাঠ করতেই থাকবে এবং কখনো এ গুলো পাঠ করা হতে যুবানকে বন্ধ করবো না, যদিও মানুষ আমাকে পাগল বলতে থাকে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আবদির রাযযাকে রয়েছে। সুনানে ইবনু মাজাহতেও এটা অন্য সনদে বর্ণিত আছে)
৭৭-৮০ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত খাব্বাব ইবনু আরত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি একজন কর্মকার ছিলাম। আ’স ইবনু ওয়ায়েলের উপর আমার কিছু ঋণ ছিল। আমি তাকে তাগাদা করতে গেলে সে বলেঃ “আমি তো তোমার ঋণ ঐ পর্যন্ত পরিশোধ করবো না, যে পর্যন্ত না তুমি হযরত মুহাম্মদের (সঃ) আনুগত্য পরিত্যাগ করবে।” আমি বললামঃ আমি তো এই কুফরী ঐ পর্যন্ত করতে পারবো না, যে পর্যন্ত না তুমি মরে গিয়ে পুনরুজ্জীবিত হবে। ঐ কাফির তখন বললোঃ “ঠিক আছে, তাই হলো। যখন আমি মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত হবো, তখন আমি আমার মাল ও সন্তান সন্ততি অবশ্যই প্রাপ্ত হবো। তখন তুমি এসো, তোমার ঋণ পরিশোধ করে দেবো।” ঐ সময়। এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম আহমদ (রঃ) কানা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তখেরীজ করেছেন) অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত খাব্বাব ইবনু আরত (রাঃ) বলেছিলেনঃ “আমি মক্কায় আস ইবনু ওয়ায়েলের একটি তরবারী বানিয়ে দিয়েছিলাম। আমার পারিশ্রমিক ধারে ছিল।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? আর একটি বর্ণনায় আছে যে, হযরত খাব্বাব (রাঃ) বলেনঃ “তার উপর আমার বহু দিরহাম পাওনা হয়ে গিয়েছিল। সে আমাকে যে উত্তর দেয়, তা আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট বর্ণনা করলে এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়।
আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, কয়েকজন মুসলমানের ঋণ তার উপর ছিল। তারা ঐ ঋণের তাগাদা করলে সে বলেঃ “তোমাদের ধর্মে কি এটা নেই যে, জান্নাতে স্বর্ণ, রৌপ্য, রেশম, ফল, ফুল ইত্যাদি পাওয়া যাবে?” উত্তরে তারা বলেঃ “হাঁ, আছে তো।” সে তখন বলেঃ “তা হলে তো আমি সেখানে এ সব জিনিস অবশ্যই পাবো। সেখানে আমি তোমাদের পাওনা পরিশোধ করে দেবো।’ তখন (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়।
(আরবী) শব্দের দ্বিতীয় কিরআত (আরবী) এর উপর পেশ দিয়েও রয়েছে। দুটোরই একই অর্থ। এটাও বলা হয়েছে যে, যবর দ্বারা এক বচন ও পেশ দ্বারা বহু বচনের অর্থ দেয়। কয়েস গোত্রের অভিধান এটাই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে ঐ অহংকারকারীকে জবাব দেয়া হচ্ছেঃ তার কি অদৃশ্যের খবর রয়েছে? তার পরকালের পরিণাম সম্পর্কে সে কি কোন সংবাদ রেখেছে? সে কি করুণাময় আল্লাহর নিকট হতে কোন প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? সে কি আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করে নিয়েছে যে, এই কারণে তার জান্নাতী হওয়ার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে?
(আরবী) এ বাক্য দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নেয়াই উদ্দেশ্য।
এরপর মহান আল্লাহ তার কথাকে গুরুত্বের সাথে অস্বীকার করে বলছেনঃ কখনই নয়! সে যা বলে, আমি তা লিখে রাখবো এবং তার শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকবো। তার সেখানে ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততি প্রাপ্তি তো দূরের কথা, বরং তার দুনিয়ার ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিও ছিনিয়ে নেয়া হবে। সে একাকী আমার এখানে হাজির হবে।
হযরত ইবনু মাসউদের (রাঃ) কিরআতে (আরবী) রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ সে যে বিষয়ের কথা বলে তা আমার অধিকারে থাকবে এবং তার আমলও আমার দখলে থাকবে। সে সবকিছু ছেড়ে শূন্য হস্তে একাকী আমার নিকট আসবে।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#904)
Sura:19
Sura: Maryam.
Ayat: 73-80
خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا ]
Best dwellings and the finest Nadiyyan.]
www.motaher21.net
19:73
وَ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتُنَا بَیِّنٰتٍ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا ۙ اَیُّ الۡفَرِیۡقَیۡنِ خَیۡرٌ مَّقَامًا وَّ اَحۡسَنُ نَدِیًّا ﴿۷۳﴾
And when Our verses are recited to them as clear evidences, those who disbelieve say to those who believe, “Which of [our] two parties is best in position and best in association?”
The Disbelievers boast over Their good Fortune in the World
Allah says,
وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ ايَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ امَنُوا أَيُّ الْفَرِيقَيْنِ
And when Our clear Ayat are recited to them, those who disbelieve say to those who believe:”Which of the two groups has the,
Allah, the Exalted, informs that when the clear, evident Ayat of Allah are recited to the disbelievers, they reject them and turn away. They say about those who believe, while boasting to them and arguing that their false religion is correct,
خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا
best dwellings and the finest Nadiyyan.
This means the best houses, with the loftiest levels and the finest Nadiyyan, which are meeting rooms for men to gather and discuss matters.
Thus, this means that their meeting rooms are full of more people who come to attend. In this they were saying, “How can we be upon falsehood while we are in this manner of successful living!”
These people were actually those who were concealed in the house of Al-Arqam bin Abi Al-Arqam and its likes from the other houses.
This is as Allah says about them,
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَوْ كَانَ خَيْراً مَّا سَبَقُونَأ إِلَيْهِ
And those who disbelieve say of those who believe:”Had it been a good thing, they (the weak and the poor) would not have preceded us thereto!” (46:11)
Nuh’s people said,
أَنُوْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الاٌّرْذَلُونَ
“Shall we believe in you, when the weakest (of the people) follow you!” (26:111)
And Allah says,
وَكَذلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِّيَقُولواْ أَهَـوُلاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّن بَيْنِنَأ أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّـكِرِينَ
Thus We have tried some of them with others, that they might say:”Is it these (poor believers) whom Allah has favored among us!” Does not Allah know best those who are grateful! (6:53)
19:74
وَ کَمۡ اَہۡلَکۡنَا قَبۡلَہُمۡ مِّنۡ قَرۡنٍ ہُمۡ اَحۡسَنُ اَثَاثًا وَّ رِءۡیًا ﴿۷۴﴾
And how many a generation have We destroyed before them who were better in possessions and [outward] appearance?
This is why Allah refuted their doubts:
وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ
And how many a generations have We destroyed before them!
This means, “How many nations and generations did We destroy of those who denied (this message) due to their disbelief.”
…
هُمْ أَحْسَنُ أَثَاثًا وَرِيْيًا
who were better in wealth, goods and outward appearance.
This means that they were better than these present people in wealth, possessions, looks and appearance.
Al-A`mash reported from Abu Zibyan, who reported from Ibn Abbas that he said concerning the Ayah,
خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا
(best dwellings and finest Nadiyyan),
“Position (Maqam) means home,
Nadi means place of gathering,
wealth refers to material possessions and
outward appearance is how they look physically.”
Al-Awfi said that Ibn Abbas said,
“Position (Maqam) means dwelling,
Nadi means place of gathering and the blessing and happiness that they were living in.
This is as Allah says about the people of Fir`awn when He destroyed them and related the story of their situation in the Qur’an,
كَمْ تَرَكُواْ مِن جَنَّـتٍ وَعُيُونٍ
وَزُرُوعٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ
How many gardens and springs that they (Fir`awn’s people) left behind, and green crops and honored places (Maqam). (44:25-26)
Therefore,
position (Maqam) refers to their dwellings and splendid bounties, and
Nadi is the places of gathering and meeting where they used to congregate.
Allah said while relating the story to His Messenger of what happened with the people of Lut,
وَتَأْتُونَ فِى نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ
And practice Al-Munkar (evil deeds) in your meeting places (Nadiyakum). (29:29)
The Arabs call a place of gathering a Nadi.”
19:75
قُلۡ مَنۡ کَانَ فِی الضَّلٰلَۃِ فَلۡیَمۡدُدۡ لَہُ الرَّحۡمٰنُ مَدًّا ۬ۚ حَتّٰۤی اِذَا رَاَوۡا مَا یُوۡعَدُوۡنَ اِمَّا الۡعَذَابَ وَ اِمَّا السَّاعَۃَ ؕ فَسَیَعۡلَمُوۡنَ مَنۡ ہُوَ شَرٌّ مَّکَانًا وَّ اَضۡعَفُ جُنۡدًا ﴿۷۵﴾
Say, “Whoever is in error – let the Most Merciful extend for him an extension [in wealth and time] until, when they see that which they were promised – either punishment [in this world] or the Hour [of resurrection] – they will come to know who is worst in position and weaker in soldiers.”
The Rebellious Person is given Respite but He is not forgotten
Allah, the Exalted, says,
قُلْ
Say:
This means, “O Muhammad, say to these people who are associating partners with their Lord, while claiming to follow the truth, that they are really following falsehood.”
مَن كَانَ فِي الضَّلَلَةِ
whoever is in error,
This means, `be they from us or from you.’
فَلْيَمْدُدْ لَهُ الرَّحْمَنُ مَدًّا
the Most Gracious will extend (circumstances) for him.
This means that the Most Beneficent will give him respite in that which he is in, until he meets his Lord and his appointed time will have arrived.
حَتَّى إِذَا رَأَوْا مَا يُوعَدُونَ إِمَّا الْعَذَابَ
until, when they see that which they were promised, either the torment, (that will strike him),
وَإِمَّا السَّاعَةَ
or the Hour, (that will come suddenly),
فَسَيَعْلَمُونَ
they will come to know, (at that time),
مَنْ هُوَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضْعَفُ جُندًا
who is worst in position, and who is weaker in forces.
This is in refutation of their argument about their nice dwellings and splendid places of gathering. This is a challenge against the idolators who claim that they were following guidance in what they were doing.
This is similar to the challenge that Allah mentions about the Jews when He says,
يأَيُّهَا الَّذِينَ هَادُواْ إِن زَعمْتُمْ أَنَّكُمْ أَوْلِيَأءُ لِلَّهِ مِن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُاْ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَـدِقِينَ
O you Jews! If you pretend that you are friends of Allah, to the exclusion of (all) other people, then long for death if you are truthful. (62:6)
Meaning, `Supplicate for death to come to those who are following falsehood among us if you truly claim to be upon the truth. If you are true, then this supplication will not harm you.’ But they refused to do so. An extensive discussion of this has already preceded in Surah Al-Baqarah, and to Allah is the praise.
Likewise, Allah mentioned the challenge that was given to the Christians in Surah Al Imran, when they were persistent in their disbelief and continued in their transgression. They refused to give up their exaggerating claim that `Isa was the son of Allah. Therefore, Allah mentioned His arguments and proofs against the worship of `Isa, and that he was merely a creature like Adam.
After this, Allah said,
فَمَنْ حَأجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَأءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَأءَنَا وَأَبْنَأءَكُمْ وَنِسَأءَنَا وَنِسَأءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتُ اللَّهِ عَلَى الْكَـذِبِينَ
Then whoever disputes with you about him after (all this) knowledge that has come to you, say:”Come, let us call our sons and your sons, our women and your women, ourselves and yourselves – then we pray and invoke (sincerely) the curse of Allah upon those who lie.” (3:61)
However, they (the Christians) also retreated from this challenge
19:76
وَ یَزِیۡدُ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اہۡتَدَوۡا ہُدًی ؕ وَ الۡبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیۡرٌ عِنۡدَ رَبِّکَ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ مَّرَدًّا ﴿۷۶﴾
And Allah increases those who were guided, in guidance, and the enduring good deeds are better to your Lord for reward and better for recourse.
Increasing Guidance of Those Who are guided
Allah says:
وَيَزِيدُ اللَّهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى
And Allah increases in guidance those who walk aright.
After Allah mentions the extended time and respite that is allowed to those who are in misguidance, increasing them in misguidance, He informs of the increase in guidance of those who are rightly guided.
Similarly He says,
وَإِذَا مَأ أُنزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُمْ مَّن يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَـذِهِ إِيمَـناً
And whenever there comes down a Surah, some of them say:”Which of you has had his faith increased by it!” (9:124)
And the following Ayah also shows this.
Concerning Allah’s statement,
وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ
And the righteous good deeds that last,
Its explanation has already preceded in Surah Al-Kahf, along with a lengthy discussion concerning it and the related Hadiths.
خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا
(they) are better with your Lord for reward.
meaning the recompense and reward.
وَخَيْرٌ مَّرَدًّا
and better for resort.
meaning in the final outcome, the result for its doer
19:77
اَفَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ کَفَرَ بِاٰیٰتِنَا وَ قَالَ لَاُوۡتَیَنَّ مَالًا وَّ وَلَدًا ﴿ؕ۷۷﴾
Then, have you seen he who disbelieved in Our verses and said, “I will surely be given wealth and children [in the next life]?”
Refuting the Disbelievers Who claim that They will be given Wealth and Children in the Hereafter
Imam Ahmad reported from Khabbab bin Al-Aratt that he said,
“I was a blacksmith and `As bin Wa’il owed me a debt. So I went to him to collect my debt from him. He said to me, `No, by Allah, I will not pay my debt to you until you disbelieve in Muhammad.’
I replied to him, `No, by Allah, I will not disbelieve in Muhammad until you die and are resurrected again.’
He then said to me, `Verily, if I die and am resurrected, and you come to me, I will also have abundance of wealth and children and I will repay you then.’
Then, Allah revealed these Ayat,
أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ بِأيَاتِنَا وَقَالَ لَاُوتَيَنَّ مَالاً وَوَلَدًا
Have you seen him who disbelieved in Our Ayat and said:”I shall certainly be given wealth and children.” until,
وَيَأْتِينَا فَرْدًا
(and he shall come to Us alone. Ayah 80).
This was also recorded by the two compilers of the Sahihs and other collections as well.
In the wording of Al-Bukhari it states that Khabbab said,
“I used to be a blacksmith in Makkah and I made a sword for `As bin Wa’il. So I went to him to collect my pay from him…”
then he mentioned the rest of the Hadith and he said,
أَمِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
(or has he taken a covenant from the Most Gracious),
“This means an agreement. ”
Concerning Allah’s statement,
لَاأُوتَيَنَّ مَالاًأ وَوَلَدًا
I shall certainly be given wealth and children.
Meaning, on the Day of Resurrection.
In other words, “Does he know what he will have in the Hereafter, to such an extent that he can swear to it!
19:78
اَطَّلَعَ الۡغَیۡبَ اَمِ اتَّخَذَ عِنۡدَ الرَّحۡمٰنِ عَہۡدًا ﴿ۙ۷۸﴾
Has he looked into the unseen, or has he taken from the Most Merciful a promise?
أَاطَّلَعَ الْغَيْبَ
Has he known the Unseen,
This is a rejection of the person who says,
أَمِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
or has he taken a covenant from the Most Gracious!
Or has he received a promise from Allah that he will be given these things It has already been stated that in Sahih Al-Bukhari it is mentioned that covenant means an agreement.
Concerning Allah’s statement
19:79
کَلَّا ؕ سَنَکۡتُبُ مَا یَقُوۡلُ وَ نَمُدُّ لَہٗ مِنَ الۡعَذَابِ مَدًّا ﴿ۙ۷۹﴾
No! We will record what he says and extend for him from the punishment extensively.
كَلَّ
Nay,
This is a participle that opposes what came before it and gives emphasis to what follows it.
سَنَكْتُبُ مَا يَقُولُ
We shall record what he says,
what he is seeking, and his idea that he has given himself about what he hopes for, and his disbelief in Allah the Most Great.
وَنَمُدُّ لَهُ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا
We shall increase his torment.
This is referring to what will happen in the abode of the Hereafter, because of his saying his disbelief in Allah in this life
19:80
وَّ نَرِثُہٗ مَا یَقُوۡلُ وَ یَاۡتِیۡنَا فَرۡدًا ﴿۸۰﴾
And We will inherit him [in] what he mentions, and he will come to Us alone.
وَنَرِثُهُ مَا يَقُولُ
And We shall inherit from him all that he speaks of, (His wealth and children).
It means, “We will take all of this from him, in opposition to his claim that he will be given more wealth and children in the Hereafter than he had in this life.”
To the contrary, in the Hereafter that which he had in this life will be taken from him.
This is why Allah says,
وَيَأْتِينَا فَرْدًا
And he shall come to Us alone.
without wealth or children
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran