(বই#৯০৭) সূরা:- মরিয়ম। সুরা:১৯ ৯৬-৯৮ নং আয়াত:- সূরা মারইয়াম-এর তাফসীর সমাপ্ত [ فَاِنَّمَا یَسَّرۡنٰہُ بِلِسَانِکَ আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি;] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯০৭)
সূরা:- মরিয়ম।
সুরা:১৯
৯৬-৯৮ নং আয়াত:-
সূরা মারইয়াম-এর তাফসীর সমাপ্ত
[ فَاِنَّمَا یَسَّرۡنٰہُ بِلِسَانِکَ
আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি;]
www.motaher21.net
১৯:৯৬
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَیَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا

নিঃসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে শীঘ্রই রহমান তাদের জন্য অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন।
১৯:৯৭
فَاِنَّمَا یَسَّرْنٰهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِیْنَ وَ تُنْذِرَ بِهٖ قَوْمًا لُّدًّا

বস্তুত হে মুহাম্মাদ! এ বাণীকে আমি সহজ করে তোমার ভাষায় এজন্য নাযিল করেছি যাতে তুমি মুত্তাকীদেরকে সুখবর দিতে ও হঠকারীদেরকে ভয় দেখাতে পারো।
১৯:৯৮
وَ كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ١ؕ هَلْ تُحِسُّ مِنْهُمْ مِّنْ اَحَدٍ اَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزًا۠

এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। আজ কি কোথাও তাদের নাম-নিশানা দেখতে পাও অথবা কোথাও শুনতে পাও তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ?

৯৬-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৯৬-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:

ঈমানদার সৎ আমলকারী বান্দাদের মাঝে আল্লাহ ভালবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দেন। তাই পৃথিবীর যে প্রান্তে একজন মু’মিন থাকুক না কেন, দেখা হলে সালাম মুসাফাহ ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি করে থাকে। বিপদে পড়লে সহযোগিতা করে থাকে। এসব কিছুর মূলে একটিই জিনিস সেটা হল ঈমান। হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ভালবাসা ও দয়াদ্রতায় মু’মিনদের উপমা হল একটি দেহের ন্যায়, দেহের কোন স্থানে ক্ষত হলে সারা শরীর জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৮৬)

অন্য একটি হাদীসে এসেছে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিবরীল (عليه السلام)-কে ডেকে বলেন: আমি অমুক বান্দাকে ভালবাসি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিবরীল (عليه السلام) তাকে ভালবাসেন। অতঃপর জিবরীল (عليه السلام) আকাশে ঘোষণা দিয়ে বলেন: আল্লাহ তা‘আলা অমুক বান্দাকে ভালবাসেন সুতরাং তোমরাও তাকে ভালবাস। তখন সমস্ত আকাশবাসী তাকে ভালবাসে। তারপর দুনিয়াবাসীর অন্তরে তার কবুলিয়াত রেখে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৬৪০)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি যেন মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পারো আর যারা মন্দ তাদেরকে সতর্ক করতে পারো।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَإِنَّمَا يَسَّرْنٰهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ) ‏

“আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা দুখান ৪৪:৫৮)

لُّدًّا শব্দটি الد শব্দের বহুবচন। অর্থ ঝগড়াটে, বিতর্ক-প্রিয়। এর দ্বারা কাফির মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে।

تُحِسُّ অর্থ ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা। অর্থাৎ তুমি কি তাদেরকে চোখ দিয়ে দেখতে পাও, হাত দিয়ে ছুঁতে পাও? না, কিছুই পাও না। পৃথিবীতে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। অথবা তাদের ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَهَلْ تَرٰي لَهُمْ مِّنْمبَاقِيَةٍ)‏

“তুমি কি তাদের কাউকেও অবশিষ্ট দেখতে পাও?” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৮) رِكْزًا শব্দের অর্থ ক্ষীণতম শব্দ।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার মহব্বত নামে একটি সিফাত রয়েছে।
২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভালবাসেন তাকে সমগ্র দুনিয়াবাসী ও আকাশবাসী ভালবাসে।
৩. মু’মিনরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন তারা সকলেই একটি দেহের মত।
সূরা মারইয়াম-এর তাফসীর সমাপ্ত

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

আজ মক্কার পথেঘাটে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী নয়। সে সময় নিকটবর্তী যখন তারা সৎকাজ ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠবেই। মানুষের মন তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। দুনিয়াবাসী তাদের পথে ফুল বিছিয়ে দেবে। খোদাদ্রোহীতা, পাপ অশ্লীলতা, ঔদ্ধত্য অহংকার, মিথ্যা ও লোক দেখানো কার্যকলাপের ভিত্তিতে যে নেতৃত্ব এগিয়ে চলে তা মানুষের মাথা নত করাতে পারে কিন্তু হৃদয় জয় করতে পারে না। অপরদিকে যারা সত্য, ন্যায়নীতি, বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা ও সদাচার সহকারে সত্য-সঠিক পথের দিকে মানুষকে আহ্বান জানাতে থাকে দুনিয়াবাসী প্রথম প্রথম তাদের প্রতি যতই বিরূপ থাকুক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা মানুষের মন জয় করে নেয়া এবং অবিশ্বস্ত ও পাপাচারীদের মিথ্যা বেশীক্ষণ তাদের পথ রোধ করতে পারে না।

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
এই ভয়ংকর একাকীত্বের পরিবেশে সহসা মােমেন বান্দাদের প্রীতিসিক্ত পরিবেশে নিয়ে আসা হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে, দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে ভালােবাসা সৃষ্টি করে দেবেন।’ এ ভালােবাসা প্রথমে সর্বোচ্চ ফেরেশতাদের মধ্যে জন্ম নেয় এবং তারপর সেখান থেকে মানুষের ভেতরে চলে আসে, তারপর তা গােটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। হযরত আবু হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(স.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ তায়ালা কোনাে বান্দাকে ভালােবাসেন তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন, হে জিবরীল, আমি অমুককে ভালােবাসি। কাজেই তুমিও তাকে ভালােবাসাে। তখন জিবরাঈল তাকে ভালােবাসে। তারপর তিনি আকাশবাসীকে ডেকে বলেন, আল্লাহ তায়ালা অমুককে ভালােবেসেছেন। কাজেই তােমরাও তাকে ভালােবাস। তখন আকাশবাসী তাকে ভালােবাসে। অতপর পৃথিবীতে সে জনপ্রিয় হয়ে যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা যখন কোনাে বান্দার প্রতি ক্রুদ্ধ হন। তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ঘৃণা করি। কাজেই তুমিও তাকে ঘৃণা করাে। তখন জিবরীল তাকে ঘৃণা করেন। অতপর তিনি আকাশবাসীকে ডেকে বলেন, আল্লাহ তায়ালা অমুককে ঘৃণা করেন কাজেই তােমরাও তাকে ঘৃণা করো। তখন আকাশবাসী তাকে ঘৃণা করে। অতপর সে পৃথিবীতেও ঘৃণিত হয়ে যায়।'(বােখারী, মুসলিম, আহমদ) উল্লেখ্য যে, আল্লাহভীরু মােমেনদের জন্যে এই সুসংবাদ এবং বিদ্রোহীদের জন্যে উক্ত সতর্কবাণী ও হুমকি এই দুটোই কোরআনের মূল মর্মবাণী। আল্লাহ তায়ালা একে আরবী ভাষায় নাযিল করে আরবদের জন্যে সহজ করে দিয়েছেন যাতে তারা কোরআন অধ্যয়ন করে। ‘আমি এই কোরআনকে তােমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি…'(আয়াত ৯৭)।

অতপর এমন একটা দৃশ্য তুলে ধরার মাধ্যমে সূরার সমাপ্তি ঘটানাে হচ্ছে, যা নিয়ে মানুষ দীর্ঘদিন চিন্তা ভাবনা করতে পারে । চেতনা দীর্ঘ সময় তাদের কম্পমান থাকতে পারে এবং এর পর্যালােচনা থেকে মন এক মুহূর্তও নিরস্ত থাকে না, ‘তাদের পূর্বে বহু জাতিকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি'(আয়াত ৯৮) এ দৃশ্য পাঠককে প্রথমে কাঁপিয়ে তােলে। তারপর গভীর নীরবতায় ডুবিয়ে দেয়। মনে হয় যেন তা তাকে ধ্বংসের বধ্যভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। সেই জগত যেন দৃষ্টির সীমার বাইরে বিরাজমান তার কল্পনা যেন চলমান জগতের সাথে এবং চলমান জীবনের সাথে ভেসে চলে। তার কল্পনা যেন জীবন্ত আশা আকাংখার বিমূর্ত রূপ। তারপর সেখানে আসে নিস্তব্ধতা, আসে মৃত্যু, দেখা যায় লাশের ছড়াছড়ি, বিরাজ করে ধ্বংসাবশেষ। আর কোনাে সাড়া শব্দ যেন পাওয়া যায় না সেখানে। ‘তুমি কি তাদের মধ্য থেকে কারাে কোনাে সাড়া পাও অথবা কোনাে ক্ষীণতম শব্দ শুনতে পাও!’ কান পেতে শােননা। দেখবে গভীর নীরবতা ও ভয়াল নিস্তব্ধতা ছাড়া সেখানে আর কিছু নেই। সেখানে চিরঞ্জীব অদ্বিতীয় আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ নেই।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৯৬-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যারা একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং যাদের আমলে সুন্নাতের নুর রয়েছে, তিনি তাঁর বান্দাদের অন্তরে তাদের মুহব্বত সৃষ্টি করে দেন। যেমন হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মুহব্বত করেন তখন হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) ডেকে বলেনঃ “আমি অমুক বান্দাকে মুহব্বত করি, সুতরাং তুমিও তাকে মুহব্বত কর। তখন জিবরাঈলও (আঃ) তাকে মুহববত করেন। তারপর জিবরাঈল (আঃ) আকাশে ঘোষণা দিয়ে বলেনঃ “আল্লাহ অমুক বান্দাকে মুহব্বত করেন, সুতরাং তোমরাও তাকে মুহব্বত কর।” তখন সমস্ত আকাশবাসী তাকে মুহব্বত করে। তারপর দুনিয়াবাসীর অন্তরে তার কবুলিয়ত রেখে দেয়া হয়। আর যখন কোন বান্দাকে দুশমন হিসেবে জানেন তখন জিবরাঈলকে ডেকে বলেনঃ “আমি অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেছি, সুতরাং তুমিও তাকে ঘৃণা কর।” তখন জিবরাঈল (আঃ) তাকে শত্রু ভাবেন এবং আকাশবাসীর নিকট এই ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে দুশমন ভেবেছেন, সুতরাং তোমরাও তাকে দুশমন মনে কর।” তখন সবাই তাকে দুশমন মনে করে। তারপর পৃথিবীতে তার শত্রুতাভাব মানুষের অন্তরে সৃষ্টি করে দেয়া হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে বান্দা মহামহিমান্বিত আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং তার সন্তোষের কাজে নিমগ্ন থাকে, তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) ডেকে বলেনঃ “আমার অমুক বান্দা আমাকে সন্তুষ্ট করতে চায়। জেনে রেখো যে, আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট আছি। তার উপর আমি আমার রহমত নাযিল করতে শুরু করেছি।” তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঘোষণা করেনঃ “অমুকের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছে। তারপর আরশ বহনকারী ফেরেশতারাও ঘোষণা করেন। এরপর তাদের পার্শ্ববর্তী ফেরেশতাগণও ঘোষণা করে দেন। মোট কথা সপ্ত আকাশে এই শব্দ গুঞ্জরিত হয়। তারপর যমীনে তার কবুলিয়ত রেখে দেয়া হয়। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। এটা গারীব বা দুর্বল হাদীস) এ ধরনের আর একটি গারীব হাদীস মুসনাদে আহমদেই রয়েছে, যাতে এও আছে যে, প্রেম ও প্রসিদ্ধি কারো নিকৃষ্টতা ও উৎকৃষ্টতার সাথে এটা আকাশ থেকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়। মুসনাদে আবি হাতিমে এই প্রকারের হাদীসের পরে রাসূলুল্লাহর (সঃ) কুরআনকারীমের এই আয়াতটি পড়াও বর্ণিত আছে। সুতরাং এই আয়াতের ভাবার্থ এই হলো যে, ভাল আমলকারী ঈমানদারের সাথে আল্লাহ তাআলা মুহব্বত করে থাকেন এবং যমীনের উপরেও তার মুহব্বত ও কবলিয়ত অবতীর্ণ হতে থাকে। মু’মিন তাকে ভালবাসতে থাকে। তার ভাল আলোচনা হয় এবং তার মৃত্যুর পরেও তার উত্তম খ্যাতি অবশিষ্ট থেকে যায়।

হারাম ইবনু হিব্বান (রঃ) বলেন যে, যে বান্দা সত্য ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে, আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের অন্তরকে তার দিকে ঝুঁকিয়ে দেন এবং তারা তাকে ভালবাসতে শুরু করে দেয়।

হযরত উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) বলেন যে, বান্দা যে ভাল-মন্দ কাজ করে, আল্লাহ তাকে তারই ঐ চাদর দ্বারা ঢেকে দেন।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ একটি লোক ইচ্ছা করে যে, সে আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন জনগণের মধ্যে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর সে আল্লাহ তাআলার ইবাদত শুরু করে দেয়। দেখা যায় যে, সে মসজিদে সবারই আগে যায় এবং সবারই পরে বেরিয়ে আসে। এভাবে সাত মাস কেটে যায়। কিন্তু সে শুনতে পায় যে, লোকেরা তাকে ‘রিয়াকার’ (লোক দেখানো ইবাদতকারী) বলছে। এই অবস্থা দেখে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যে, সে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আমল করবে। অতঃপর সে আন্তরিকতার সাথে আমল শুরু করে দেয়। ফল এই দাড়ায় যে, অল্পদিনের মধ্যেই সমস্ত লোক বলতে শুরু করেঃ অমুক ব্যক্তির উপর আল্লাহ তাআলা রহম করুন! এইভাবে সে প্রকৃত দ্বীনদার ও আল্লাহ ভক্ত হয়ে যায়।

তাফসীরে ইবনু জারীরে রয়েছে যে, এই আয়াতটি হযরত আবদুর রহমান ইবনু আউফের (রাঃ) ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। (কিন্তু এই উক্তিটি সঠিক নয়। কেননা, এই পূর্ণ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর কোন আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হওয়া প্রমাণিত নয়। আর ইমাম সাহেব (রঃ) যে হাদীসটি আনয়ন করেছেন, সনদের দিক দিয়ে সেটাও বিশুদ্ধ নয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)

মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি এই কুরআনকে তোমার ভাষায় অর্থাৎ আরবী ভাষায় সহজ করে দিয়েছি। এই ভাষা বাকরীতি ও বাক্যালংকারের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ভাষা। হে নবী (সঃ)! এই কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করার কারণ এই যে যেন তুমি খোদাভীরু ও ঈমানদার লোকদেরকে আল্লাহর সুসংবাদ শুনিয়ে দিতে পার। আর যারা বিতণ্ডাপ্রবণ ও সত্য থেকে বিমুখ তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও ও তার শাস্তি থেকে সতর্ক করতে পার। যেমন কুরায়েশ কাফিরদেরকে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাদের পূর্বে আমি কত মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং নবীদেরকে অস্বীকার করেছিল। তুমি তাদের কাউকেও দেখতে পাওকি? অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও কি? অর্থাৎ তাদের কেউই অবশিষ্ট নেই, সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে হালকা ও ধীর শব্দ।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#907)
Sura:19
Sura: Maryam.
Ayat: 96-98
[ فَاِنَّمَا یَسَّرۡنٰہُ بِلِسَانِکَ
So, We have made this easy,in your own tongue,]
www.motaher21.net
19:96

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَیَجۡعَلُ لَہُمُ الرَّحۡمٰنُ وُدًّا ﴿۹۶﴾

Indeed, those who have believed and done righteous deeds – the Most Merciful will appoint for them affection.

 

Allah places Love of the Righteous People in the Hearts

Allah said;

إِنَّ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا

Verily, those who believe and work deeds of righteousness, the Most Gracious will bestow love for them.

Allah, the Exalted, informs about His believing servants, who work righteous deeds — deeds that He is pleased with because they are in accordance with the legislation of Muhammad — that He plants love for them in the hearts of His righteous servants. This is something that is absolutely necessary and there is no avoiding it.

This has been reported in authentic Hadiths of the Messenger of Allah in various different ways.

Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Prophet said,

إِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ يَا جِبْرِيلُ إِنِّي أُحِبُّ فُلَنًا فَأَحِبَّهُ قَالَ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ

قَالَ ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ

قَالَ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الاْاَرْضِ

وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ يَا جِبْرِيلُ إِنِّي أُبْغِضُ فُلَإنًا فَأَبْغِضْهُ قَالَ فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ

ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ يُبْغِضُ فُلَنًا فَأَبْغِضُوهُ قَالَ فَيُبْغِضُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الاَْرْض

Verily, whenever Allah loves a servant of His, He calls Jibril and says, “O Jibril, verily I love so-and-so, so love him.” Thus, Jibril will love him.

Then, he (Jibril) will call out to the dwellers of the heavens, “Verily, Allah loves so-and-so, so you too must love him.”

Then the dwellers of the heavens love him and he will be given acceptance in the earth.

Whenever Allah hates a servant of His, He calls Jibril and says, “O Jibril, verily I hate so-and-so, so hate him.” Thus, Jibril will hate him.

Then, he (Jibril) will call out amongst the dwellers of the heavens, “Verily, Allah hates so-and-so, so you too must hate him.”

Then the dwellers of the heavens hate him and hatred for him will be placed in the earth.

Al-Bukhari and Muslim reported narrations similar to this.

Ibn Abi Hatim recorded that Abu Hurayrah said that the Prophet said,

إِذَا أَحَبَّ اللهُ عَبْدًا نَادَى جِبْرِيلَ إِنِّي قَدْ أَحْبَبْتُ فُلَنًا فَأَحِبَّهُ

فَيُنَادِي فِي السَّمَاءِ ثُمَّ يُنْزِلُ لَهُ الْمَحَبَّةَ فِي أَهْلِ الاَْرْضِ

فَذَلِكَ قَوْلُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ

إِنَّ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا

Whenever Allah loves a servant of His, He calls Jibril (saying), “Verily, I love so-and-so, so love him.”

Then, Jibril calls out into the heavens and love for him descends among the people of the earth.

That is the meaning of the statement of Allah, the Mighty and Sublime:

Verily, those who believe and work deeds of righteousness, the Most Gracious will bestow love for them.

This was also reported by Muslim and At-Tirmidhi and At-Tirmidhi said, “Hasan Sahih.”
The Qur’an descended to give Glad Tidings and to warn

Allah said

19:97

فَاِنَّمَا یَسَّرۡنٰہُ بِلِسَانِکَ لِتُبَشِّرَ بِہِ الۡمُتَّقِیۡنَ وَ تُنۡذِرَ بِہٖ قَوۡمًا لُّدًّا ﴿۹۷﴾

So, [O Muhammad], We have only made Qur’an easy in the Arabic language that you may give good tidings thereby to the righteous and warn thereby a hostile people.

 

فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ

So, We have made this easy, (meaning the Qur’an).

بِلِسَانِكَ

in your own tongue,

This is an address to Prophet Muhammad and it means that the Qur’an is in the pure, complete and eloquent Arabic language.

لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ

that you may give glad tidings to those who have Taqwa,

those who respond to Allah and believe in His Messenger,

وَتُنذِرَ بِهِ قَوْمًا لُّدًّا

and warn with it the people who are Ludda.

meaning, the people who have deviated away from the truth and are inclined towards falsehood.

His saying

19:98

وَ کَمۡ اَہۡلَکۡنَا قَبۡلَہُمۡ مِّنۡ قَرۡنٍ ؕ ہَلۡ تُحِسُّ مِنۡہُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ اَوۡ تَسۡمَعُ لَہُمۡ رِکۡزًا ﴿٪۹۸﴾

And how many have We destroyed before them of generations? Do you perceive of them anyone or hear from them a sound?

 

وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ

And how many a generation before them have We destroyed!

means from the nations that disbelieved in the signs of Allah and rejected His Messengers.

هَلْ تُحِسُّ مِنْهُم مِّنْ أَحَدٍ أَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزًا

Can you find a single one of them or hear even a whisper of them!

Meaning, `have you seen any of them or even heard a whisper from them.’

Ibn Abbas, Abu Al-Aliyah, Ikrimah, Al-Hasan Al-Basri, Sa`id bin Jubayr, Ad-Dahhak and Ibn Zayd all said,

“This means any sound.”

Al-Hasan and Qatadah both said that this means,

“Do you see with your eye, or hear any sound!”

This is the end of the Tafsir of Surah Maryam. All praises and thanks are due to Allah

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply