أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯০৮)
[কোরআন মানুষের দুর্ভোগের জন্যে নাযিল হয়নি :]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
০১-৮ নং আয়াত:-
[ مَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَیْكَ الْقُرْاٰنَ لِتَشْقٰۤىۙ
আমি এ কুরআন তোমার প্রতি এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি বিপদে পড়বে।]
www.motaher21.net
সুরা: ত্ব-হা
আয়াত নং :- ১
২০:১
طٰهٰۚ
ত্বা-হা।
২০:২
مَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَیْكَ الْقُرْاٰنَ لِتَشْقٰۤىۙ
আমি এ কুরআন তোমার প্রতি এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি বিপদে পড়বে।
২০:৩
اِلَّا تَذْكِرَةً لِّمَنْ یَّخْشٰىۙ
এ তো একটি স্মারক এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে ভয় করে।
২০:৪
تَنْزِیْلًا مِّمَّنْ خَلَقَ الْاَرْضَ وَ السَّمٰوٰتِ الْعُلٰىؕ
যে সত্তা পৃথিবী ও সুউচ্চ আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে এটি নাযিল করা হয়েছে।
২০:৫
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
তিনি পরম দয়াবান। শাসন কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন।
২০:৬
لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ وَ مَا بَیْنَهُمَا وَ مَا تَحْتَ الثَّرٰى
যা কিছু পৃথিবীতে ও আকাশে আছে, যা কিছু পৃথিবী ও আকাশের মাঝখানে আছে এবং যা কিছু ভূগর্ভে আছে সবকিছুর মালিক তিনিই।
২০:৭
وَ اِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَاِنَّهٗ یَعْلَمُ السِّرَّ وَ اَخْفٰى
তুমি যদি নিজের কথা উচ্চকণ্ঠে বলো, তবে তিনি তো চুপিসারে বলা কথা বরং তার চাইতেও গোপনে বলা কথাও জানেন।
২০:৮
اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ؕ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى
তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ।
০১- ৮ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা : এই সূরার শুরু ও সমাপ্তি দুটোই হয়েছে রসূল(স.)-কে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। বলা হয়েছে যে, তার ওপর কোনাে দুর্ভাগ্যও চাপিয়ে দেয়া হয়নি, তাকে কোনাে শাস্তিও দেয়া হয়নি। তার দায়িত্ব হচ্ছে দাওয়াত দেয়া ও স্মরণ করানাে, সুসংবাদদান ও ভীতি প্রদর্শন, তারপর সমগ্র মানব জাতিকে একমাত্র সেই আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া, যিনি ছাড়া আর কোনাে ইলাহ নেই, যিনি সৃষ্টিজগতের গােপন ও প্রকাশ্য সব কিছুর ওপর নিরংকুশ কর্তৃত্বের অধিকারী, যিনি অন্তর্যামী, সমগ্র সৃষ্টি যার বশীভূত এবং অবাধ্য ও অনুগত নির্বিশেষে সকল মানুষ যার কাছে ফিরে যেতে বাধ্য। রসূল(স.) এ দায়িত্ব পালন করার পরও যারা আল্লাহর অবাধ্য থাকবে এবং রসূল(স.)-কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে, তাদের জন্যে তিনি দায়ী থাকবে না এবং তাদের মিথ্যা আরােপ ও অবাধ্যতার কারণে কোনাে ভাগ্য বিপর্যয়ও ঘটবে না। উক্ত সূচনা ও সমাপ্তির মাঝখানে কয়েকটা বিষয় আলােচিত হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ ও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে হযরত মূসা(আ.)-এর কাহিনী, তাঁর নবুওতলাভ থেকে শুরু করে বনী ইসরাঈলের মিসর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাছুর পূজায় লিপ্ত হওয়া, বিশেষত আল্লাহ তায়ালা ও মূসা(আ.)-এর মাঝ কথােপকথন, মূসা ও ফেরাউনের বিতর্ক এবং মুসা ও যাদুকদের মাঝে যাদুর প্রতিযােগিতার বিবরণ। এই কাহিনীর বিবরণের মধ্য দিয়ে হযরত মূসা(আ.)-এর প্রতি আল্লাহর অনুকম্পা ও সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, তােমাকে আমি নিজ তত্ত্বাবধানে লালন পালন করিয়েছি এবং নিজের জন্যেই করিয়েছি। তারপর তাকে ও তার ভাইকে বলেছেন, ‘তােমরা দুজন ভয় পেয়াে না, আমি তােমাদের সাথেই আছি, সব কিছুই দেখছি ও শুনছি।’ এ সূরায় হযরত আদমের কাহিনীও আলােচিত হয়েছে সংক্ষেপে ও ক্ষুদ্র আকারে। সেখানে দেখানাে হয়েছে একটা ভুল কাজ করেও কিভাবে হযরত আদম আল্লাহর অনুগ্রহ ও হেদায়াত লাভ করলেন। সেই সাথে এ কথাও জানানাে হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা আদমের বংশধরকে সদুপদেশ দান ও ভীতি প্রদর্শনের পর হেদায়াত ও গােমরাহী- এই দুটোর যেটাই গ্রহণ করতে চাইবে, করার স্বাধীনতা দেবেন। পুরাে কাহিনীটা কেয়ামতের দৃশ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটা হযরত আদমের বেহেশতে থাকাকালীন কাহিনীর প্রাথমিক অংশের পরিশিষ্ট স্বরূপ। আল্লাহর অনুগত বান্দারা সে বেহেশতে প্রত্যাবর্তন করবে এবং অবাধ্যরা যাবে দোযখে। হযরত আদম যখন সেই অবাঞ্ছিত ঘটনার পর পৃথিবীতে নেমে আসেন, তখন তাকে এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছিলাে। এ জন্যে সূরাটা দুই অংশে বিভক্ত। রসূল(স.)-কে সম্বােধন করে যে কথা সূরার শুরুতেই বলা হয়েছে সেটা রয়েছে প্রথম অংশে, সে কথাটা হলাে, ‘আমি তােমার কাছে এ জন্যে কোরআন নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে; বরং আল্লাহভীরুদের উপদেশ দেয়ার জন্যে নাযিল করেছি।’ এর অব্যবহিত পরই মূসা(আ.)-এর কাহিনী বর্ণনা করে এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা যাদের তার দ্বীনের দাওয়াতের জন্যে নির্বাচিত করেন, তারা তার তত্ত্বাবধানেই থাকে। তাই তার তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় তারা দুর্ভোগ পােহায় না। আর দ্বিতীয় অংশে কেয়ামতের দৃশ্যাবলী ও হযরত আদম(আ.)-এর কাহিনী সূরার প্রথমাংশ ও হযরত মূসা(আ.)-এর কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অবস্থান করছে। এরপর রয়েছে সূরার সমাপনী বক্তব্য, যা সূরার প্রারম্ভিক বক্তব্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ও সুরার পটভূমির সাথে সুসমন্বিত। সুরার একটা বিশেষ তাৎপর্যময় প্রভাব রয়েছে। সে প্রভাব গােটা প্রেক্ষাপটকে বেষ্টন করে রেখেছে। অতি উচ্চস্তরের এই প্রভাবের কাছে সকলের মনমস্তিষ্ক নতিস্বীকার করে রয়েছে। এই প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে পবিত্র তুয়া ময়দানে নিস্তব্ধ নিশীথে একাকী হযরত মূসা(আ.)-এর সাথে আল্লাহর সুদীর্ঘ একান্ত সংলাপে। কেয়ামতের মাঠেও মহান আল্লাহর অলৌকিক আবির্ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এই প্রভাব। দয়াময় আল্লাহর সামনে সকল শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং তুমি ক্ষীণ পায়ের আওয়ায ছাড়া আর কিছু শুনতে পাবে না।… সেদিন সব মুখমন্ডলই সেই চিরস্থায়ী আল্লাহর সামনে অবনমিত থাকবে।'(আয়াত ১০৮-১১১) সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক আয়াতের শেষে আলিফ মাকসূরা বিশিষ্ট শব্দের অবস্থানে এক সুমধুর ছন্দময় ঐকতান সৃষ্টি হয়েছে।
*কোরআন মানুষের দুর্ভোগের জন্যে নাযিল হয়নি : ‘ত্ব-হা, আমি তােমার কাছে কোরআন এ জন্যে নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে…'(আয়াত ১-৮) অত্যন্ত শ্রুতিমধুর সূচনা। শুরুতেই রয়েছে দুটো বর্ণ ত্ব-হা। এর অর্থ হলাে, সমগ্র কোরআনের মতাে এই সুরাটাও এই ধরনের আরবী বর্ণমালা দিয়েই রচিত। এর আগের কয়েকটা সূরার শুরুতে আমি এরূপ তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছি। এখানে এমন দুটো বর্ণ চয়ন করা হয়েছে, যা সূরার সাথে এক সুরে গাঁথা হ্রস্ব তাল ও লয় বিশিষ্ট। এই দুটো বর্ণের অব্যবহিত পর রয়েছে কোরআন সংক্রান্ত আলােচনা। বর্ণমালা দিয়ে শুরু হওয়া সুরাগুলো সাধারণত এভাবেই রসূল(স.)-কে সম্বোধন করে কোরআন সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। ত্ব-হা, আমি তােমার কাছে কোরআন এ জন্যে নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পােহাবে। অর্থাৎ এ জন্যে কোরআন নাযিল করিনি যে, তা তােমার কষ্ট ও দুর্ভোগের কারণ হবে। কোরআন তেলাওয়াত ও তা দ্বারা এবাদাত করতে গিয়ে তােমাকে সাধ্যের অতিরিক্ত কোনাে কষ্ট করতে হবে, এ জন্যে কোরআন নাযিল করিনি; বরং কোরআন পাঠ করা ও তদনুসারে কাজ করা খুবই সহজ । মানবীয় শক্তি সামর্থের বাইরের কাজ নয়। আল্লাহ তায়ালা তােমাকে তােমার সাধ্যাতীত কোনাে কাজ করতে বাধ্য করেননি। সাধ্যমত কাজ করা কষ্ট নয় বরং নেয়ামত, আল্লাহর নৈকটালাভের সুযােগ; শক্তি ও শক্তি আহরণের উপায় এবং আল্লাহর সন্তোষ ও ভালােবাসা লাভের পথ। কোরআন আমি এ জন্যেও নাযিল করিনি যে, জনগণ তার প্রতি ঈমান না আনলে তুমি দুঃখ কষ্টে জর্জরিত হবে। তাদের ঈমান আনতে বাধ্য করা তােমার দায়িত্ব নয়। আক্ষেপ ও পরিতাপ করে নিজের জীবনীশক্তি নিঃশেষ করাও বাঞ্ছনীয় নয়। মানুষকে সতর্ক করা ও স্মরণ করানাে ছাড়া কোরআনের আর কোনাে উদ্দেশ্য নেই। ‘কেবল আল্লাহর ভয়ে ভীরুদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে নাযিল করেছি।'(আয়াত ৩) যার মধ্যে আল্লাহর ভয় ভীতি আছে, তাকে যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন সে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এ পর্যন্তই রসূলের দায়িত্ব শেষ । মনের রুদ্ধ দ্বারগুলাে খুলে দেয়া এবং মন জয় করা রসূলের কাজ নয়। এটা আল্লাহর কাজ, যিনি কোরআন নাযিল করেছেন। তিনিই সমগ্র বিশ্ব জগতের ওপর আধিপত্যশীল ও পরাক্রান্ত তিনিই অন্তর্যামী। ‘এই কোরআন সেই সত্ত্বার পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে, যিনি পৃথিবী ও সুউচ্চ আকাশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি দয়াময় আল্লাহ, আরশের ওপর আসীন। আকাশে, পৃথিবীতে, এতদুভয়ের মাঝখানে ও ভূগর্ভে যা কিছু আছে, তিনিই সেসবের অধিপতি।’ বস্তুত যিনি এই কোরআন নাযিল করেছেন, তিনিই সুউচ্চ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। কোরআন আকাশ ও পৃথিবীর মতােই একটা জাগতিক বিষয়। উচ্চতর জগত থেকে এটা নাযিল হয়েছে। এখানে আয়াতে প্রাকৃতিক বিধান ও কোরআন নাযিলের বিধানের মাঝে সংযােগ স্থাপন করা হয়েছে, যেমনটি সমন্বয় সাধন করা হয়েছে পৃথিবীর সাথে উচ্চ আকাশের এবং আল্লাহর কাছ থেকে পৃথিবীতে নাযিল হওয়া কোরআনের। যিনি উর্ধ্বজগত থেকে কোরআন নাযিল করেছেন এবং পৃথিবী ও উচ্চ আকাশকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি হচ্ছেন দয়াময় আল্লাহ তায়ালা । সুতরাং তিনি তার বান্দার দুর্ভোগ সৃষ্টি করার জন্যে তার কাছে কোরআন নাযিল করেননি। এখানেই দয়া নামক গুণটির নিগূঢ় অর্থ স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। তিনি সমগ্র বিশ্বের ওপর পরাক্রান্ত। ‘আরশের ওপর আসীন।’ আরশে আসীন হওয়ার অর্থ সর্বময় কর্তৃত্ব, পরাক্রম ও সর্বোচ্চ আধিপত্য। সুতরাং মানব জাতির চূড়ান্ত দায় দায়িত্ব তার হাতেই নিবন্ধ। আল্লাহভীরু মানুষকে সুপথ দেখানাে ও পরিণাম স্মরণ করিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোনাে দায়িত্ব নেই। আর অধিকার ও আধিপত্য যে সর্বময় কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের সাথেই সংশ্লিষ্ট, সে কথা বলা হয়েছে ৬ নং আয়াতে, ‘আকাশে, পৃথিবীতে, এতদুভয়ের মধ্যে ও ভূগর্ভে যা কিছু আছে, তিনিই সে সবের মালিক।’ আর বিশ্ব প্রকৃতির দৃশ্যাবলীকে সার্বভৌমত্ব ও মালিকানা বুঝানাের জন্যে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যাতে মানবীয় কল্পনাশক্তি তা উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এর চেয়েও অনেক বড়। সমগ্র সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে, সে সবেরই মালিক আল্লাহ। আর এই সৃষ্টি জগত, আকাশ, পৃথিবী, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু এবং ভূগর্ভস্থ সব কিছুর সমষ্টির চেয়েও বড়। আল্লাহর মালিকানা যতখানি ব্যাপক, তার জ্ঞান ও ততোই ব্যাপক। যদি প্রকাশ্যে কথা বলাে, তবে তিনি গােপন ও অধিকতর গােপন সবই জানেন। এই আয়াতের বক্তব্য ও এর পূর্ববর্তী আয়াতের বক্তব্য বিশ্ব প্রকৃতির অভ্যন্তরে বিরাজমান প্রকাশ্য বস্তুরাজি ও প্রকাশ্য কথার মাঝে এবং ভূগর্ভস্থ গােপন বিষয় ও মনের গােপন বিষয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করে। গােপন ও অধিকতর গােপন দ্বারা যথাক্রমে শেষােক্ত দুটো গােপন বিষয়কেই বুঝানাে হয়েছে। বস্তুত গােপন ও অধিকতর গােপনের ভেতরে গোপনীয়তার যেমন স্তরভেদ রয়েছে, ভূগর্ভের স্তরসমূহের মধ্যেও তেমনি গোপনীয়তার স্তরভেদ রয়েছে। এখানে রাসূল(স.)-কে সম্বোধন করে এই মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তার প্রতিপালক তার সাথেই রয়েছেন, তার সব কথা শুনছেন, তাকে একাকী অসহায় ছেড়ে দেননি যে, এই কোরআন নিয়ে দুর্ভোগ পােহাবেন এবং কোনাে প্রমাণ ছাড়া কাফেরদের মােকাবেলা করবেন। তিনি যখন আল্লাহকে প্রকাশ্যে ডাকেন, তখন সেটা তো তিনি শােনেনই, উপরন্তু গােপনে ও অধিকতর গােপনে ডাকলেও শােনেন। তার মন যখন বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা তার কাছেই আছেন এবং তার গােপন ও প্রকাশ্য সকল তৎপরতারই খবর রাখেন, তখন আশ্বস্ত ও সন্তুষ্ট হয়ে যায় । ফলে পথিবীতে কাফেরদের দ্বারা কোণঠাসা হয়ে তিনি নিজেকে অসহায় বােধ করবেন মা। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আধিপত্য ও সর্বব্যাপী জ্ঞান সংক্রান্ত ঘােষণার পর আল্লাহর একত্বের ঘােষণা দিয়ে সূরার প্রারম্ভিক বক্তব্যের সমাপ্তি টানা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনাে মাবুদ নেই। তার রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ।'(আয়াত ৮) এখানে আয়াতের শেষে ‘আল হুসনা’ শব্দটার সুর ও মর্ম দুটোই সুসমন্বিত। এর মর্ম হলাে দয়া, নৈকট্য ও তদারকী, যা এই প্রারম্ভিক বক্তব্য ও গােটা সূরার পরিবেশকেই বেষ্টন করে রেখেছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
(২০-ত্বহা): নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
সূরা মারয়াম যে সময় নাযিল হয় এ সূরাটি তার কাছাকাছি সময়েই নাযিল হয়। সম্ভবত হাবশায় হিজরতকালে অথবা তার পরবর্তীকালে এটি নাযিল হয়। তবে হযরত উমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই যে এটি নাযিল হয় তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশী প্রচলিত ও নির্ভরযোগ্য হাদীসটি হচ্ছেঃ যখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করার সংকল্প নিয়ে বের হলেন তখন পথে এক ব্যক্তি তাঁকে বললো, প্রথমে নিজের ঘরের খবর নাও, তোমার নিজের বোন ও ভগিনীপতি এ নতুন ধর্ম গ্রহণ করে বসে আছে। একথা কথা শুনে ওমর সোজা নিজের বোনের বাড়িতে চলে গেলেন। সেখানে তাঁর বোন ফাতিমা (রা.) বিনতে খাত্তাব ও ভগিনীপতি সাঈদ যায়েদ (রা.) বসে ছিলেন। তাঁরা হযরত খাব্বাব ইবনে আরতের (রা.) কাছে কুরআনের কোন একটি অংশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। হযরত উমরের আসার সাথে সাথেই তার ভগিনী ঐ অংশটি লুকিয়ে ফেললেন। কিন্তু হযরত উমর তা পড়ার আওয়াজ শুনে ফেলেছিলেন। তিনি প্রথমে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারপর ভগিনীপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তাঁকে মারতে শুরু করলেন। বোন তাঁকে বাঁচাতে চাইলেন। ফলে তাঁকেও মারলেন। এমনকি তার মাথা ফেটে গেলো। শেষে বোন ও ভগিনীপতি দু’জনই বললেন, হাঁ আমরা মুসলমান হয়ে গেছি, তুমি যা করতে পারো করো। নিজের বোনের রক্ত প্রবাহিত হতে দেখে হযরত উমর কিছুটা লজ্জিত হলেন। এবং বলতে লাগলেন, ঠিক আছে, তোমরা যা পড়ছিলে তা আমাকে দেখাও। বোন প্রথমে তা ছিঁড়ে না ফেলে দেবার জন্য শপথ নিলেন, তুমি গোসল না করা পর্যন্ত এ পবিত্র সহীফায় হাত লাগাতে পারবে না। হযরত উমর (রা.) গোসল করলেন তারপর সে সহীফা নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। সেখানে এই সূরা ত্বা-হা লেখা ছিল। পড়তে পড়তে হঠাৎ তাঁর মুখ থেকে বের হয়ে পড়লো, “বড় চমৎকার কথা” একথা শুনতেই হযরত খাব্বাব ইবনে আরত বের হয়ে এলেন। এতক্ষণ তিনি হযরত উমরের আগমনের শব্দ শুনেই লুকিয়ে পড়েছিলেন। হযরত খাব্বাব (রা.) বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি আশা করি আল্লাহ তাঁর নবীর দাওয়াত ছড়াবার ক্ষেত্রে তোমার সাহায্যে বিরাট দায়িত্ব সম্পাদন করবেন। গতকালই আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! আবুল হাকাম ইবনে হিশাম (আবু জেহেল) অথবা উমর ইবনুল খাত্তাব, এ দু’জনের মধ্য থেকে কোন একজনকে ইসলামের সাহায্যকারী বানিয়ে দাও। কাজেই হে উমর! আল্লাহর দিকে চলো, আল্লাহর দিকে চলো” ওমরের মনে পরিবর্তন ঘটতে যেটুকু বাকি ছিল খাব্বাবের এ উক্তি তাও পূর্ণ করে দিল। তখনই হযরত ওমর খাব্ববের সংগে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এটি হাবশায় হিজরত অনুষ্ঠানের কিছুকাল পরের ঘটনা।
(২০-ত্বহা) : বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষয় :
সূরাটি এভাবে শুরু হয়েছে, হে মুহাম্মাদ! অযথা তোমাকে একটি বিপদের সম্মুখীন করার জন্য তোমার ওপর এ কুরআন নাযিল হয়নি। তোমার কাছে এ দাবি করা হয়নি যে, পাথরের বুক চিরে দুধের নহর বের করে আনো, অস্বীকারকারীদেরকে স্বীকার করিয়ে ছাড়ো এবং হঠকারীদের অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে দেখিয়ে দাও। এটি তো শুধুমাত্র একটি উপদেশ ও স্মারক, যার ফলে অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগবে এবং তাঁর পাকড়াও থেকে যে নিষ্কৃতি পেতে চায় সে এটি শুনে সংশোধিত হয়ে যাবে। এটি আকাশ ও পৃথিবীর মালিকের কালাম এবং তিনি ছাড়া আর কেউ প্রভুত্বের কর্তৃত্বের অধিকারী নয়। কেউ মানুক না মানুক এ দু’টি কথা চিরন্তন ও অমোঘ সত্য।
। এ ভূমিকার পর হঠাৎ হযরত মুসার কাহিনী শুরু করা হয়েছে। বাহ্যত একটি কাহিনী আকারে এটি বর্ণিত হয়েছে। সমকালীন অবস্থার প্রতি কোন ইঙ্গিতও এতে নেই। কিন্তু যে পরিবেশে এ কাহিনী শুনানো হয়েছে তার অবস্থার সাথে মিলেমিশে এটি মক্কাবাসীদের সাথে কিছু ভিন্নতর কথা বলছে বলে মনে হয়। এর শব্দ ও বাক্যগুলো থেকে নয় বরং দুই বাক্যের মধ্যস্থিত অনুচ্চারিত ভাবার্থ থেকেই সে কথা প্রকাশিত হচ্ছে। সে কথা প্রকাশের আগে আর একটি কথা ভালোভাবে বুঝে নেয়া উচিত যে, আরব দেশে বিপুল সংখ্যক ইহুদীদের উপস্থিতি এবং আরববাসীদের ওপর ইহুদীদের জ্ঞানগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের কারণে, তাছাড়া রোমের ও হাবশায় খৃষ্টীয় শাসনের প্রভাবেও আরবদের মধ্যে সাধারণভাবে হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করা হতো। এ সত্যটি দৃষ্টি সমক্ষে রাখার পর এখন আসুন এ কাহিনীর মধ্যে যে অব্যক্ত কথাগুলো মক্কাবাসীদেরকে বুঝানো হয়েছে সেদিকে দৃষ্টিপাত করিঃ
। একঃ কাউকে নবুয়াত দান করার জন্য আল্লাহ ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিপুল সংখ্যক জনতাকে একত্র করে যথারীতি একটি উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ঘোষণা বাণী শুনিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেননি যে, আজ থেকে অমুক ব্যক্তিকে আমি তোমাদের জন্য নবী নিযুক্ত করেছি। নবুয়াত যাকেই দেয়া হয়েছে হযরত মুসার মত গোপনীয়তা রক্ষা করেই দেয়া হয়েছে। কাজেই আজ তোমরা অবাক হচ্ছো কেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অকস্মাৎ তোমাদের সামনে নবী হিসেবে হাযির হয়ে গেছেন, আকাশ থেকেও এর ঘোষণা বাণী উচ্চারিত হলো না। আর ফেরেশতারাও পৃথিবীতে এসে ঢাক ঢোল পিটিয়ে একথা ঘোষণা করলেন না? ইতিপূর্বে যাদেরকে নবী নিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের নিযুক্তি কালে কবে এ ধরনের ঘোষণা হয়েছিল যে, আজ তা হবে?
। দুইঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজ যে কথা পেশ করছেন (অর্থাৎ তাওহীদ ও আখেরাত) ঠিক একই কথা নবুয়াতের দায়িত্ব দান করার সময় আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালামকে শিখিয়েছিলেন।
। তিনঃ তারপর আজ যেভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোনো প্রকার সাজসরঞ্জাম ও সৈন্য সামন্ত ছাড়াই কুরাইশদের মোকাবিলায় সত্যের দাওয়াতের পতাকাবাহী করে একাকী দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে মুসা আলাইহিস সালামকেও ফেরাউনের মতো মহা পরাক্রমশালী বাদশাহকে অবাধ্যতা ও বিদ্রোহের পথ পরিহার করার আহ্বান জানাবার গুরুদায়িত্বে আকস্মিকভাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর সাথেও কোন সেনাবাহিনী পাঠানো হয়নি। আল্লাহর যাবতীয় কর্মকাণ্ড এমনি অদ্ভুত ও বিস্ময়কর। তিনি মাদয়ান থেকে মিসর গমনকারী একজন পথিককে পথ চলাকালে ধরে নিজের কাছে ডেকে নেন এবং বলেন, যাও, সমকালের সবচেয়ে পরাক্রমশালী ও জালেম শাসকের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও। কিছু সাহায্য করে থাকলে এতটুকু করেছেন যে, তাঁর আবেদন ক্রমে তাঁর ভাইকে সাহায্যকারী হিসেবে দিয়েছেন। কোন দুর্দান্ত সেনাবাহিনী এবং হাতি, ঘোড়া ইত্যাদি দিয়ে এ কঠিন কাজে তাঁকে সাহায্য করা হয়নি।
। চারঃ মক্কাবাসীরা আজ মুহাম্মাদ সাল্লামের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, সংশয়-সন্দেহ, অপবাদ-দোষারোপ, প্রতারণা ও জুলুমের অস্ত্র ব্যবহার করছে ফেরাউন এসব অস্ত্র আরো অনেক বেশী করে মুসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু দেখো কিভাবে তার সমস্ত কৌশল ব্যর্থ হয়ে গেলো এবং শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হলো? আল্লাহর সেই সাজসরঞ্জাম হীন নবী, না সৈন্য বলে বলীয়ান ফেরাউন? এ প্রসংগে মুসলমানদেরকে এ একটি অব্যক্ত সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সাজসরঞ্জাম ও উপায়-উপকরণের ক্ষেত্র নিজেদের সৈন্য ও কাফেরদের প্রাচুর্যের প্রতি লক্ষ্য করো না, বরং যে কাজের পেছনে আল্লাহর হাত থাকে শেষ পর্যন্ত কারই বিজয় সূচিত হয়। এ সংগে মুসলমানদের সামনে মিসরের যাদুকরদের দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। যখন সত্য তাদের কাছে আবরণমুক্ত হয়ে গেলো কথন তারা নির্দ্বিধায় তার প্রতি ঈমান আনলো। তারপর ফেরাউনের প্রতিশোধ গ্রহণের ভয় তাদেরকে ঈমানের পথ থেকে এক চুল পরিমাণও সরিয়ে আনতে পারলো না।
। পাঁচঃ শেষে বনী ইসরাঈলের ইতিহাস থেকে একটি সাক্ষ্য পেশ করতে গিয়ে দেবতা ও উপাস্য তৈরীর সূচনা কেমন হাস্যকর পদ্ধতিতে হয়ে থাকে তা বর্ণনা করা হয়েছে। এই সংগে একথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহর নবী কখনো এ ধরনের ঘৃণ্য জিনিসের নামগন্ধও বাকি রাখার পক্ষপাতী হন না। কাজেই আজ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে শির্ক ও মূর্তিপূজার বিরোধিতা করছেন তা নবুয়াতের ইতিহাসরে কোন নতুন ঘটনা নয়।
। এভাবে মুসার কাহিনীর মোড়কে এমন সমস্ত বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে যা সে সময় তাদের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যকার পারস্পরিক সংঘাতের সাথে সম্পর্ক রাখতো। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছেঃ এ কুরআন একটি উপদেশ ও স্মারক। তোমাদের নিজেদের ভাষায় তোমাদের বুঝাবার জন্য এটি পাঠানো হয়েছে। এর বক্তব্য শুনলে এবং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে তোমরা নিজেদেরই কল্যাণ করবে। আর এর কথা না মানলে অশুভ পরিণামের সম্মুখীন হবে।
। তারপর আদম আলাইহিস সালামের কাহিনী বর্ণনা করে একথা বুঝানো হয়েছে যে, তোমরা যে পথে এগিয়ে যাচ্ছো এটা হচ্ছে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ। কখনো কখনো শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হওয়া অবশ্যি একটি সাময়িক দুর্বলতা। মানুষের পক্ষে এর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার। কিন্তু মানুষের জন্য সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, যখনই তার সামনে তার ভুল সুস্পষ্ট করে দেয়া হবে তখনই সে তার পিতা আদমের মতো পরিষ্কার ভাষায় তা স্বীকার করে নেবে, তাওবা করবে এবং আবার আল্লাহর বন্দেগীর দিকে ফিরে আসবে। ভুল করা ও তার ওপর অবিচল থাকা এবং একের পর এক উপদেশ দেবার পরও তা থেকে বিরত না হওয়া নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। এর পরিণামে নিজেকে ভুগতে হবে, অন্যের এতে কোন ক্ষতি নেই।
। সব শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানদেরকে এ মর্মে বুঝানো হয়েছে যে, এ সত্য অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না এবং বে সবর হবেন না। আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে, তিনি কোন জাতিকে তার কুফরী ও অস্বীকারের কারণে সংগে সংগেই পাকড়াও করেন না। ধৈর্য সহকারে এদের বাড়াবাড়ি ও জুলুম অত্যাচার বরদাশত করতে এবং উপদেশ দেবার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে যেতে থাকুন।
। প্রসঙ্গক্রমে নামাযের ওপর জোর দোয়া হয়েছে, যাতে মু’মিনদের মধ্যে সবর, সংযম, সহিঞ্চুতা, অল্পে তুষ্টি, আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্টি এবং আত্নপর্যালোচনার এমন গুণাবলী সৃষ্টি হয় যা সত্যের দাওয়াত দেবার দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন।)
# এ বাক্যটি নিজেই পূর্ববর্তী বাক্যের অর্থের ওপর আলোকপাত করছে। উভয় বাক্য মিলিয়ে পড়লে এ পরিষ্কার অর্থটি বুঝা যায় যে, কুরআন নাযিল করে আমি তোমার দ্বারা এমন কোনো কাজ করাতে চাই না যা তোমার পক্ষে করা অসম্ভব। তোমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি যে, যারা মেনে নিতে চায় না তাদেরকে মানাতেই হবে এবং যাদের অন্তরের দুয়ার ঈমানের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে তাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করাতেই হবে। এটা তো একটা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং এটা এজন্য পাঠানো হয়েছে যে, যার মনে আল্লাহর ভয় আছে সে এটা শুনে সজাগ হবে। এখন যদি কিছু লোকের মনে আল্লাহর ভয় একদম না থেকে থাকে এবং তাদের হক ও বাতিলের কোন পরোয়াই না থাকে তাহলে তাদের পেছনে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজনই তোমার নেই।
# সৃষ্টি করার পর তিনি কোথাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েননি। বরং সৃষ্টিজগতে সমস্ত ব্যবস্থা নিজেই পরিচালনা করছেন। এই সীমাহীন রাজ্যে তিনি নিজেই রাজত্ব করছেন। তিনি কেবল স্রষ্টাই নন, কার্যত শাসকও।
,# তোমার ও তোমার সাথীদের ওপর যেসব জুলুম নিপীড়ন চলছে এবং যেসব দুষ্কৃতি ও শয়তানী কার্যকলাপের মাধ্যমে তোমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেগুলোর জন্য তোমার উচ্চ কন্ঠে ফরিয়াদ জানানোর তেমন কোন দরকার নেই। তুমি কোন্ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হয়েছো তা আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন। তিনি তোমাদের অন্তরের ডাকও শুনছেন।
# তিনি সর্বোত্তম গুণাবলীর অধিকারী।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
নামকরণ:
এ সূরার প্রথম আয়াত হল طٰهٰ । طٰهٰ শব্দ অর্থাৎ প্রথম আয়াত অনুসারেই এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরার শুরুতে কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য, তারপর মূসা (عليه السلام)-এর তুর পাহাড়ে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা বলা, ফির‘আউনের কাছে দাওয়াত, হারূন (عليه السلام)-কে নবুওয়াত প্রদান, ফির‘আউনের জাদুকরদের মুকাবেলা করা ও জাদুকরদের ঈমান আনয়ন, সামিরী কর্তৃক প্রবর্তিত বানী ইসরাঈলের গো-বাছুর পূজার কাহিনী ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরার শেষের দিকে যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান না এনে তাঁর যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন পরিণতি এবং নিজে সালাত আদায় ও পরিবারের সকলকে সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
১-৮ নং আয়াতের তাফসীর:
(طٰھٰ ) ‘ত্বা-হা-’ এ গুলো হচ্ছে “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য বা অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
لِتَشْقٰٓي অর্থাৎ ও কুরআন নাযিল ও শরীয়ত প্রদান করার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তুমি কষ্ট পাও। বরং তা প্রদান করা হয়েছে যাতে এর মাধ্যমে সৌভাগ্য ও সফলতা অর্জন করতে পার। (তাফসীর সা‘দী)
পরের আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে তারা যেন উপদেশ গ্রহণ করতে পারে এজন্য কুরআন নাযিল করা হয়েছে । যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَّخْشٰي وَيَتَجَنَّبُهَا الْأَشْقٰي)
“যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহণ করবে। আর তা উপেক্ষা করবে সে, যে নিতান্ত হতভাগ্য।” (সূরা আ‘লা ৮৭:১০-১১)
তাফসীর আযওয়াউল বায়ানে এ আয়াতের দু’টি তাফসীর উল্লেখ করা হয়েছে:
১. কাফির-মুশরিকরা ঈমান না আনার কারণে তুমি আফসোস ও দুশ্চিন্তা করবে, নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে এজন্য কুরআন নাযিল করিনি। এ দিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰٓي اٰثَارِهِمْ إِنْ لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِيْثِ أَسَفًا )
“তারা এ হাদীসকে (কুরআনকে) বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পেছনে ঘুরে তুমি দুঃখে নিজেকে ধ্বংস করে দেবে।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৬)
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাত্রিকালে সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর পদদ্বয় ফুলে যেত। উক্ত আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা‘আলা বললেন: ‘তুমি কষ্ট পাও এজন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি’।
(اَلرَّحْمٰنُ عَلَي الْعَرْشِ اسْتَوٰي)
‘দয়াময় ‘র্আশে সমুন্নত’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা স্বসত্তায় আরশে সমুন্নত যেভাবে তাঁর সত্তার জন্য উপযোগী। কিভাবে কিরূপে জানা নেই। যেমন ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন:
الاستواء معلوم، والكَيْف مجهول ، والإِيمان به واجب، والسؤال عنه بدعة
আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপরে রয়েছেন তা জ্ঞাত, কিভাবে আছেন তা অজ্ঞাত, এ ব্যাপারে ঈমান রাখা ওয়াজিব, কোনরূপ প্রশ্ন করা বিদ‘আত। (সফওয়াতুত তাফাসীর ১/৪১৮)
এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সব কিছুর মালিক, এমনকি মাটির নিচে যা কিছু আছে তারও তিনি মালিক। অর্থাৎ সব কিছুর সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি মানুষের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য, স্বশব্দ ও নীরবের সকল কথা শুনতে পান, এমনকি তাদের অন্তরে যে বাসনা জাগে তাও জানেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَأَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوْا بِه۪ط إِنَّه عَلِيْمٌ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ)
“তোমরা তোমাদের কথা চুপে চুপে বল অথবা উচ্চৈঃস্বরে বল: তিনি তো অন্তরযামী।” (সূরা মুলক ৬৭:১৩)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা থেকে কোন কিছু আড়াল করা সম্ভব নয়। তাই তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় কাজ বর্জন করা উচিত।
(اَللّٰهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ)
অর্থাৎ সকল প্রকার ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর সুন্দর সুন্দর অনেক নাম রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَا۬ءُ الْحُسْنٰي)
“তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই।” (সূরা হাশর ৫৯:২৪)
আল্লাহ তা‘আলার এ সুন্দর নামসমূহ ৯৯টির মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অসংখ্য যা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানেনা। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ১৮০ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন কাউকে কষ্ট বা সমস্যায় নিপতিত করার জন্য নাযিল করা হয়নি। বরং মানুষকে উপদেশ দান করার জন্য নাযিল হয়েছে।
২. আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপর সমুন্নত।
৩. আকাশ-জমিনসহ যা কিছু আছে সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৪. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।
৫. আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। ৬. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এই সূরা মক্কায় অবতারিত। ইমামদের ইমাম হযরত মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক ইবনু খুযাইমা (রাঃ) স্বীয় কিতাব ‘আতাওহীদ’ এ হাদীস এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করার এক হাজার বছর পূর্বে সূরায়ে তা-হা ও সূরায়ে ইয়াসীন পাঠ করেন, যা শুনে ফেরেশতারা মন্তব্য করেনঃ “ঐ উম্মত বড়ই ভাগ্যবান যাদের উপর এই কালাম অবতীর্ণ হবে। নিশ্চয় ঐ ভাষা কল্যাণ ও বরকত প্রাপ্তির হকদার যা দ্বারা আল্লাহর কালামের এই শব্দগুলি আদায় করা হবে।” (এই রিওয়াইয়াতটি গারীব এবং এতে নাকারত বা অস্বীকৃতিও রয়েছে। এর কর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনু মুহাজির এবং তার শায়েখের সমালোচনা করা হয়েছে)
১-৮ নং আয়াতের তাফসীর:
সূরায়ে বাকারার প্রারম্ভে হুরূফে মুকাত্তাআ’র পূর্ণ তাফসীর গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। তবে এটাও বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হচ্ছে ‘হে ব্যক্তি! এটা মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ), আতা (রঃ), মুহাম্মদ ইবনু কাব (রঃ), আবু মালিক (রঃ), আতিয়্যা আওফী (রঃ), হাসান (রঃ), যহ্হাক (রঃ), সুদ্দী (রঃ) এবং ইবনু আবাযীর (রঃ) উক্তি। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) এবং সাওরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এটা নাতিয়া কালেমা। এর অর্থ হচ্ছে ‘হে লোকটি!’ আবু সালেহ (রঃ) বলেন যে, এটা কালেমায়ে মুরাব।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ) যখন নামায পড়তেন তখন এক পায়ের উপর দাড়াতেন ও অপর পাটি উঠিয়ে রাখতেন। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তুমি দু’পায়ের উপরই দাড়াও। আমি তোমাকে কেশ দিবার জন্যে তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করি নাই।
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ যখন কুরআন কারীমের উপর আমল শুরু করে দেন তখন মুশরিকরা বলতে লাগেঃ “এই লোকগুলি তো বেশ বিপদে পড়ে গেছে।” তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করে জানিয়ে দেন যে, কুরআন মানুষকে কষ্ট ও বিপদে ফেলার জন্যে অবতীর্ণ হয় নাই। বরং এটা সৎ লোকদের জন্যে শিক্ষনীয় বিষয়। এটা খোদায়ী জ্ঞান। যে এটা লাভ করেছে সে খুব বড় সম্পদ লাভ করেছে। যেমন হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যার প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে তিনি বোধ শক্তি দান করেন। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)
হযরত সা’লাবা ইবনু হাকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যখন স্বীয় বান্দাদের মধ্যে ফায়সালার জন্যে কুরসীর উপর উপবেশন করবেন তখন তিনি আলেমদেরকে বলবেনঃ “আমি আমার ইলম ও হিকমত তোমাদেরকে এ জন্যেই দান করেছিলাম যে, তোমাদের পাপসমূহ আমি মার্জনা করে দেবো এবং তোমরা কি করেছে তার কোন পরওয়া করো না।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসেম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
প্রথম দিকে লোকেরা আল্লাহর ইবাদত করার সময় নিজেদেরকে রশিতে লটকিয়ে দিতো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় কালাম পাকের মাধ্যমে তাদের ঐ কষ্ট দূর করে দেন এবং বলেনঃ “এই কুরআন তোমাদেরকে কষ্ট ও বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করতে চায় না। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ “যত সহজে পাঠ করা যায় সে ভাবেই তা পাঠ কর।” এ কুরআন কেশ ও কষ্টদায়ক জিনিস নয়। রং এটা হচ্ছে করুণা, জ্যোতি, দলীল এবং জান্নাত। এই কুরআন সৎ লোকদের জন্যে ও খোদাভীরু লোকদের জন্যে উপদেশ, হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ। এটা শ্রবণ করে আল্লাহ তাআলার সৎ বান্দারাহারাম ও হালাল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। ফলে তাদের উভয় জগত সুখময় হয়। হে নবী (সঃ)! এই কুরআন তোমার প্রতিপালকের কালাম এটা তারই পক্ষ হতে অবতারিত, যিনি সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা, মালিক, আহার্যদাতা এবং ব্যাপক ক্ষমতাবান। যিনি যমীনকে নীচু ও ঘন করেছেন এবং আকাশকে করেছেন উঁচু ও সূক্ষ্ম।
জামে তিরমিযী প্রভৃতি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, প্রত্যেক আকাশের পুরুত্ব হচ্ছে পাঁচ শ’ বছরের পথ। আর এক আকাশ হতে অপর আকাশের ব্যবধানও হলো পাঁচ শ’ বছরের রাস্তা। ইমাম ইবনু আবি হাতিম (রঃ) হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি এই আয়াতের তাফসীরেই আনয়ন করেছেন।
ঐ দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন রয়েছেন। এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে আ’রাফে গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন দরকার নেই। নিরাপত্তাপূর্ণ পন্থা এটাই যে, আয়াত সমূহ ও হাদীস সমূহের সিফাতকে পূর্ব যুগীয় গুরুজনদের নীতি অনুসারেই ওগুলোর বাহ্যিক শব্দ হিসেবেই মানতে হবে।
সমস্ত জিনিস আল্লাহ তাআলার অধিকারে রয়েছে। সবই তার দখল, চাহিদা,ও ইচ্ছাধীন। তিনিই সবারই সৃষ্টিকর্তা, অধিকর্তা উপাস্য ও পালনকর্তা। কারো তার সাথে কোন প্রকারের কোন অংশ নেই। সপ্ত যমীনের নীচেও যা আছে তারও মালিক তিনিই।
হযরত কা’ব (রাঃ) বলেন যে, যমীনের নীচে আছে পানি, পানির নীচে আছে যমীন, আবার যমীনের নীচে আছে পানি। এভাবে ক্রমান্বয়ে চলে গেছে। তারপর এর নীচে একটি পাথর আছে। তার নীচে এক ফেরেশতা আছেন। তাঁর নীচে একটি মাছ আছে যার দুটি ডানা আশ পর্যন্ত চলে গেছে। তার নীচে আছে বায়ু ও অন্ধকার। মানুষের জ্ঞান এখান পর্যন্তই আছে। এরপর কি আছে না আছে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। হাদীসে রয়েছে যে, প্রতি দুই যমীনের মাঝে পঁাচ শ’ বছরের পথের ব্যবধান রয়েছে। সর্বোপরি যমীনটি মাছের পিঠের উপর রয়েছে, যার দুটি ডানা আসমানের সাথে মিলিত আছে। এই মাছটি আছে একটি পাথরের উপর। ঐ পাথরটি ফেরেশতার হাতে আছে। দ্বিতীয় যমীনটি হলো বায়ুর ভাণ্ডার। তৃতীয় যমীনে আছে জাহান্নামের পাথর। চতুর্থ যমীনে জাহান্নামের গন্ধক রয়েছে। পঞ্চম যমীনে আছে জাহান্নামের সর্প। ষষ্ঠ যমীনে রয়েছে জাহান্নামী বৃশ্চিক বা বিচ্ছু। সপ্তম যমীনে আছে জাহান্নাম। সেখানে ইবলীস শৃংখলিত অবস্থায় আছে। তার একটি হাত আছে সামনে এবং একটি আছে পিছনে। আল্লাহ তাআ’লাই যখন ইচ্ছা করেন তখন তাকে ছেড়ে দেন। (এ হাদীসটি খুবই গরীব। এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণিত কিনা এ ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে)
হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ “আমরা তাবুকের যুদ্ধ শেষে ফিরে আসছিলাম। কঠিন গরম পড়ছিল। দুজন দুজন এবং চারজন চারজন করে লোক বিচ্ছিন্ন ভাবে পথ চলছিলেন। আমি সৈন্যদের শুরুতে ছিলাম। অকস্মাৎ একজন আগন্তুক এসে সালাম করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনাদের মধ্যে মুহাম্মদ (সঃ) কোন ব্যক্তি?” আমি তখন তার সঙ্গে চললাম। আমার সঙ্গী আগে বেড়ে গেল। যখন সেনাবাহিনীর মধ্যভাগ আসলো তখন দেখা গেল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ দলেই রয়েছেন। আমি ঐ আগন্তুককে বললামঃ ইনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তিনি লাল বর্ণের উস্ত্রীর উপর সওয়ার ছিলেন। রৌদ্রের কারণে তিনি মাথায় কাপড় বেঁধে ছিলেন। ঐ লোকটি তার সওয়ারীর কাছে গেলেন এবং ওর লাগাম ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনিই কি মুহাম্মদ (সঃ)?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ” লোকটি তখন তাকে বললেনঃ “আমি এমন কতকগুলি প্রশ্ন করতে চাই যার উত্তর দুনিয়াবাসীদের দু একজন ছাড়া কেউ দিতে পারে না। তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, যা প্রশ্ন করতে চান করুন। আগন্তুক বললেনঃ “নবীগণ ঘুম যান কি?” উত্তরে নবী (সঃ) বললেনঃ “তাদের চক্ষু ঘুমায় বটে, কিন্তু তাঁদের অন্তর জাগ্রত থাকে। লোকটি বললেনঃ “আপনি সঠিক উত্তরই দিয়েছেন। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ “আচ্ছা বলুন তো, শিশু কখনো পিতার সাথে সাদৃশ্য যুক্ত হয় এবং কখনো মাতার সাথে হয়, এর কারণ কি?” তিনি জবাবে বলেনঃ“জেনে রাখুন যে, পুরুষ লোকের মণি বা বীর্য সাদা ও গাঢ় হয়। আর স্ত্রী লোকের বীর্য হয় পাতলা। যার বীর্য প্রাধান্য লাভ করে, শিশু তারই সাদৃশ্যযুক্ত হয়ে থাকে। লোকটি বলেনঃ “আপনার এ উত্তরও সঠিক হয়েছে। পুণরায় লোকটি বললেনঃ “আচ্ছা বলুনতো, শিশুর কোন কোন অঙ্গ পুরুষের বীর্য দ্বারা এবং কোন কোন অঙ্গ স্ত্রীর বীর্য দ্বারা গঠিত হয়?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “পুরুষের বীর্য দ্বারা অস্থি, শিরা এবং পাছা গঠিত হয়, আর স্ত্রীর বীর্য দ্বারা গঠিত হয় গোশত, রক্ত ও চল। লোকটি বললেনঃ “এটাও সঠিক উত্তর হয়েছে।” অতঃপর বলেনঃ “বলুন তো, এই যমীনের নীচে কি আছে?” তিনি বলেনঃ “একটি মাখলুক রয়েছে। লোকটি প্রশ্ন করেনঃ “তার নীচে কি আছে?” তিনি উত্তর দেনঃ “যমীন।” লোকটি জিজ্ঞেস করেনঃ “এর নীচে কি আছে?” তিনি জবাব দেনঃ “পানি। আবার লোকটি প্রশ্ন করেনঃ “পানির নীচে কি আছে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “অন্ধকার।” লোকটি পুণরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “এর নীচে কি আছেঃ” তিনি জবাব দেনঃ “বায়ু।” লোকটি প্রশ্ন করেনঃ “বায়ুর নীচে কি আছে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “মাটি। লোকটি জিজ্ঞেস করেনঃ “তার নীচে কি আছে?” এবার রাসূলুল্লাহর (সঃ) চক্ষু দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেনঃ “মানুষের জ্ঞান তো এখন পর্যন্ত পৌঁছেই শেষ হয়ে গেছে। এরপরে কি আছে তার জ্ঞান একমাত্র সৃষ্টিকর্তারই আছে। হে প্রশ্নকারী! এই ব্যাপারে আপনি যাকে প্রশ্ন করলেন তিনি আপনার চেয়ে তা বেশী জানে না।” আগন্তুক ব্যক্তি তার সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এটা কে তা তোমরা জান কি?” সাহাবীগণ বললেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত জিবরাঈল (আঃ)।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আবি ইয়ালাতে বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসটি খুবই গরীব। ঘটনাটি বড়ই বিস্ময়কর। এর বর্ণনাকারীদের একজন কাসেম ইবনু আবদুর রহমান রয়েছেন। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মুঈন (রঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম আবু হাতিম রাযী (রঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম ইবনু আদী (রঃ) বলেছেন যে, তিনি অপরিচিত লোক। তিনি এতে গড়বড় করে দিয়েছেন। তিনি এটা ইচ্ছা করেই করুন বা এভাবেই পেয়ে থাকুন)
আল্লাহ তিনিই যিনি প্রকাশ্য, গোপনীয়, উঁচু, নীচু, ছোট ও বড় সব কিছুই জানেন। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ তিনিই এটা অবতীর্ণ করেছেন যিনি আসমান সমূহ ও যমীনের গোপন বিষয়ের খবর রাখেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
ইবনু আদম যা কিছু গোপন করে এবং স্বয়ং তার উপর যা কিছু গোপন রয়েছে, তা সবই আল্লাহ তাআলার নিকট প্রকাশমান। তার আমলকে তার জানার পূর্বেও আল্লাহ জানেন। সমস্ত অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মাখলুকের সম্পর্কে জ্ঞান তার কাছে এমনই যেমন একজন লোকের সম্পর্কে জ্ঞান। সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টি এবং তাদেরকে মেরে পুনরুজ্জীবিত করাও তাঁর কাছে একটি মানুষকে সৃষ্টি করা এবং তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করার মতই (সহজ)। মানুষের অন্তরের ধারণা ও কল্পনার খবরও তিনি রাখেন। মানুষ বড় জোর আজকের গোপন আমলের খবর রাখে। আর সে কাল কি গোপনীয় কাজ করবে সেই খবরও আল্লাহ তাআলা রাখেন। শুধু ইচ্ছা নয়, বরং কুমন্ত্রণাও তার কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। কৃতকর্ম এবং যে আমল সে পরে করবে সেটাও তাঁর কাছে প্রকাশমান। তিনি সত্য ও যোগ্য উপাস্য। সমস্ত উত্তম নাম তারই।
সূরায়ে আরাফের তাফসীরের শেষে (আরবী) সম্পর্কে হাদীস সমূহ গত হয়েছে। সুতরাং প্রশংসা ও শুকরিয়া আল্লাহরই জন্যে।
Engr Motaher: Requested for your feedback.
بِسْمِ اللّهِ রয়েছেالرَّحْمـَنِ الرَّحِيم
আসসালামুয়ালাইকুম।
মুহতারাম,
মহান আল্লাহ তায়ালা শুকরিয়া জানাই, আল্ হাম্ দু লিল্লাহ।
……..……………………
শুধু ১ টি কোটেসান বলা হয়ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়।
কিন্তু তাতে মানুষ পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে না।
তাই চেষ্টা করছি মুল বিষয় যাতে সবাই বুঝতে পারে।
এতে আমি কম-বেশি এক ডজন (+/-) তাফসীর সহাযোগিতা নিচ্ছি।
যেমন:- ইবনে কাসীর, ফী যিলালিল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন, কুরআনুল কারীম, মাও: আশরাফ আলী, আবুবকর যাকারিয়া, আহসানুল বায়ান, তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ,
English Tafsir Ibn Kathir,
The Noble Quran…..
………………..
আসসালামুয়ালাইকুম।
দোস্ত তোমরা কয়েকজন হয়তো বুঝতে পারছো।
কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারছি না।
আমি ধারাবাহিক কুরআন শরীফ এর আলোচনা করছি।
বাংলা, English এবং عرب তিন ভাষায় লিখিত।
তাই একটু সময় দিতে হবে। এবং একটু লম্বা হতে পারে।
যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা ও সবাই মিলে বুঝতে পারে।
তোমরা নিজেদের অবস্থান ও সময় মত সবাই দেখতে পাবে।
১) সুরা ফাতিহা,২)বাকারা, ৩) আলে ইমরান,৪) নিছা,৫)মায়েদা,৬)আল আনআম, ৭)আল্ আরাফ, ৮)আল্ আন্ ফাল,৯) আত্ তাওবা, আলোচনা করা হয়েছে। ১০) সুরা ইউনুস ১১) সুরা হুদ ১২)সুরা ইউসুফ ১৩) সুরা রাদ ১৪) সুরা ইব্রাহিম ১৫)সুরা হিজর ১৬) সুরা নহল ১৭)সুরা বনি ইসরাইল ১৮)সূরা আল-কাহাফা।
১৯)সুরা মরিয়ম।
২০) সুরা طٰهٰۚ চলছে…।
ধারাবাহিক কুরআন এর আলোচনা করা হচ্ছে..
এর আগেও সুরা হুজরাত(৪৯) সুরা সফ (৬১)
সুরা মুজাম্মাল (৭৩)
সুরা আসর وَ الْعَصْرِۙ। (১০৩)
সুরা: আল-মাউন الْمَاعُوْنَ۠ (১০৭)
ইত্যাদি আরো কয়েকটি সুরা আলোচনা করা হয়েছে।
আমি মনে করি সবাই বুদ্ধিমান।
এটা সবাই বুঝতে পারে।
………
একটা বিষয় লিখা হলে Facebook-এ ১০,০০,০০০/(দশ লক্ষ +/- ) এর বেশি লোক কে পাঠানো হয়।
What’s app তে ৪০(+/-) টি গ্রুপে ও tweete-এ পাঠানো হয়।
………………
আমার প্রকাশের অপেক্ষায় ৫টি
বই কেন আপনি ছাপাবেন ইনশাআল্লাহ :-
১) আল্ হাম্ দু লিল্লাহ, আমি এখন পর্যন্ত ৯০৭ টি বই লিখেছি।
২) এখন পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে ১০
টি বই ।
৩) Durban R S A থেকে Ahmed Hossen Deedat (2004 সালে) প্রকাশ করেছেন।
তিনি এই বইগুলো ৫৬ টি দেশে পাঠিয়ে ছিলেন।
৪) ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়াম) ২০০৭ সালে প্রকাশ করেছেন ।
ওয়ামী বই সিরিজ ২৬।
৫) Australian Islamic Library
2015 সালে প্রকাশ করেছেন
৬) এই পর্যন্ত কম বা বেশি ১০ লক্ষ (+/-) বই বিতরণ বা বিক্রয় করা হয়েছে।
৭) প্রকাশিতব্য বই ৫টি ছাপানো হলে আমি ইনশাআল্লাহ ১০০০ এক হাজার বই ক্রয় করবো।
………….
বই ৫টি পছন্দ করেছি :-
আমার লেখা ৯০৭ টি বই এর মধ্যে এগুলো সর্ব উত্তম ৫টি।
১) কুরআন এর আলোকে আমাদের প্রতি দিন কেমন কাজকর্ম করতে হবে এই বিষয়ে বলা হয়েছে।
“ঘুম থেকে কাজ উত্তম ” এই বইতে পাঠকগণ ইনশাআল্লাহ বুঝতে পারবেন।
২) আমরা অনেকেই আল্লাহ তায়ালা কে ভালোবাসার দাবি করি।
আর আখেরাতে নাজাত পেতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে বাস্তব জীবনে ভালোবাসতে হবে।
“আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসি”?
এই বইতে সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৩) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বার বার বলেছেন যে আমাদের সঠিক কথা বলতে হবে,
সঠিক কাজটি করতে হবে।
“এমন কথা কেন বল?”
এই বইতে পাঠকগণকে সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৪) সুরা বনি ইসরাইলে ২৩ নং আয়াত থেকে ৩৯ নং আয়াত পর্যন্ত (৩ তৃতীয় রুকু ও ৪ চতুর্থ রুকু তে) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন :-
আমাদের সমাজ ও জীবন কিভাবে পরিচালিত করা দরকার !
এই বিষয়ে চমৎকারভাবে বলেছেন।
“আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন”
বইতে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৫) “ইসলামের বিজয়” বইটিতে
ক) আমাদের অধ্যায়ন, খ)বই পড়া ও বিতরণ, গ) মুমিন, কাফের,মুনাফীক ও মানুষ ঘ) লেনদেন । ঙ) ২৪ ঘন্টার রুটিন । চ) ইসলামের বিজয় কি ভাবে করা যাবে। ছ) আল্লাহকে ভালোবাসা, জ) আন্তর্জাতিক বিশ্বে দাওয়াত ।
এই সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তাই এটা অবশ্যই পড়া প্রয়োজন।
আমরা সবাই ইনশাআল্লাহ নিজে পড়ব , অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করব।
…….
ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোতাহার হোসেন
House # 12
Road # 03, Block-B
Pink city Model Town,
Khilkhet, Dhaka1229, Bangladesh.
Phone: +88-01883385800/01827764252 email: motaher7862004@ya hoo.com/engrmotaher440@gmail.com
FB:Muhammed Motaher Hossain/ Motaher’s Fan Page
Engr Motaher: https://motaher21.net/about-author/
Engr Motaher: Motaher21.net
SEARCH RESULTS FOR: মুনাফিক
(Book# 744)[মুনাফিক কি?বই নং ২২] (Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক।]{মুনাফিক কি? ১৯ নং বই} www.motaher21.net Sura: 13 Verses :- 25
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 744)[মুনাফিক কি?বই নং ২২] (Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ[…]
READ MORE
(Book# 647){মুনাফিক কি? ২১ নং বই} [أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ মুনাফিক কি লক্ষ্য করে না যে? See they not that they are put in trial?] www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 647){মুনাফিক কি? ২১ নং বই} [أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ মুনাফিক কি লক্ষ্য করে না[…]
READ MORE
Book# 640){মুনাফিক কি? ২০ নং বই}[মসজিদে জিরার।] www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 640){মুনাফিক কি? ২০ নং বই}[মসজিদে জিরার।] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ১০৭-১১০ নং আয়াত:-[…]
READ MORE
(Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফেক।]{মুনাফিক কি? ১৯ নং বই} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফেক।]{মুনাফিক কি? ১৯ নং বই} www.motaher21.net সুরা: আত্[…]
READ MORE
(Book# 632)[মুনাফিক কি? ১৮ নং বই]{তারা তোমাদের কাছে অজুহাত পেশ করবে।} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 632)[মুনাফিক কি? ১৮ নং বই]{তারা তোমাদের কাছে অজুহাত পেশ করবে।} www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ[…]
READ MORE
(Book# 630)[মুনাফিক কি?১৭ নং বই] {‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 630)[মুনাফিক কি?১৭ নং বই] {‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..} www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ[…]
READ MORE
(Book# 629)[মুনাফিক কি? ১৬ নং বই] {তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য জানাযার সালাত পড়বেন না।} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 629)[মুনাফিক কি? ১৬ নং বই] {তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য[…]
READ MORE
(Book# 628)[মুনাফিক কি? ১৫ নং বই]{তুমি বল, তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং আমার সাথী হয়ে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করবে না।} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 628)[মুনাফিক কি? ১৫ নং বই]{তুমি বল, তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং[…]
READ MORE
(Book# 627)[মুনাফিক কি? ১৪ নং বই]{ মুনাফিককে আল্লাহ কখনই ক্ষমা করবেন না।}
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 627)[মুনাফিক কি? ১৪ নং বই]{ মুনাফিককে আল্লাহ কখনই ক্ষমা করবেন না।} www.motaher21.net সুরা: আত্[…]
READ MORE
(Book# 626)[মুনাফিক কি? ১৩ নং বই]{মু’মিনদের নিয়ে কটাক্ষ করা, উপহাস করা ও অপবাদ দেয়া মুনাফিকদের নিদর্শন।}
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 626)[মুনাফিক কি? ১৩ নং বই]{মু’মিনদের নিয়ে কটাক্ষ করা, উপহাস করা ও অপবাদ দেয়া মুনাফিকদের[…]
READ MORE
(Book# 625)[মুনাফিক কি? ১২ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 625)[মুনাফিক কি? ১২ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৭৫-৭৮ নং আয়াত:- مِن[…]
READ MORE
(Book# 624)[কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর।]{মুনাফিক কি?বই নং ১১} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 624)[কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর।]{মুনাফিক কি?বই নং ১১} www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯[…]
READ MORE
(Book# 622)[মুনাফিক কি? ১০ নং বই] www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 622)[মুনাফিক কি? ১০ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৬৭-৭০ নং আয়াত:- الْمُنَافِقُونَ[…]
READ MORE
(Book# 621)[মুনাফিক কি? ৯ নং বই ]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 621)[মুনাফিক কি? ৯ নং বই ] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৬৫- ৬৬[…]
READ MORE
(Book# 620)[মুনাফিক কি? ৮ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 620)[মুনাফিক কি? ৮ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৬১-৬৪ নং আয়াত:- يَحْلِفُونَ[…]
READ MORE
(Book# 618) [মুনাফিক কি? ৭ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 618) [মুনাফিক কি? ৭ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৫৬-৫৯ নং আয়াত:-[…]
READ MORE
(Book# 617)[মুনাফিক কি? ৬ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 617)[মুনাফিক কি? ৬ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৫০-৫৫ নং আয়াত:- Sura[…]
READ MORE
(Book# 114/١٦٢)-৩৬৪ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّار নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। Verily, the hypocrites will be in the lowest depths of the Fire; সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪৪-১৪৭
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 114/١٦٢)-৩৬৪ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّار নিশ্চয়[…]
READ MORE
(Book# 114/١٦١)-৩৬৩ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ Verily, the hypocrites seek to deceive Allah, but it is He Who deceives them. নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪২-১৪৩
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 114/١٦١)-৩৬৩ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ Verily, the[…]
READ MORE
(Book# 114/١٤١)-৩৪৩ www.motaher21.net فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِيَتَيْنِ মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমাদের কী হল যে, তোমরা দু’ দল হয়ে গেলে? What is the matter with you that you are divided into two parties about the hypocrites? সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-৮৮-৯১
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 114/١٤١)-৩৪৩ www.motaher21.net فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِيَتَيْنِ মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমাদের[…]
READ MORE
(Book# 114/ন) মুনাফিকদের চরিত্র । The character of hypocrites . وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ
The character of hypocrites
READ MORE