أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯১২)
[ وَ اِنِّیۡ لَغَفَّارٌ لِّمَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اہۡتَدٰی ﴿۸۲﴾
নিশ্চয় আমি তার জন্য বড় ক্ষমাশীল যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজ করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
৭৪- ৮২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২০:৭৪
اِنَّهٗ مَنْ یَّاْتِ رَبَّهٗ مُجْرِمًا فَاِنَّ لَهٗ جَهَنَّمَ١ؕ لَا یَمُوْتُ فِیْهَا وَ لَا یَحْیٰى
–প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি অপরাধী হয়ে নিজের রবের সামনে হাযির হবে তার জন্য আছে জাহান্নাম, যার মধ্যে সে না জীবিত থাকবে, না মরবে।
২০:৭৫
وَ مَنْ یَّاْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصّٰلِحٰتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجٰتُ الْعُلٰىۙ
আর যারা তার সামনে মু’মিন হিসেবে সৎকাজ করে হাযির হবে তাদের জন্য রয়েছে সুমহান মর্যাদা,
২০:৭৬
جَنّٰتُ عَدْنٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا١ؕ وَ ذٰلِكَ جَزٰٓؤُا مَنْ تَزَكّٰى۠
চির হরিৎ উদ্যান, যার পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এ হচ্ছে পুরস্কার সেই ব্যক্তির যে পবিত্রতা অবলম্বন করে।
২০:৭৭
وَ لَقَدْ اَوْحَیْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى١ۙ۬ اَنْ اَسْرِ بِعِبَادِیْ فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِیْقًا فِی الْبَحْرِ یَبَسًا١ۙ لَّا تَخٰفُ دَرَكًا وَّ لَا تَخْشٰى
আমি মূসার কাছে অহী পাঠালাম যে, এবার রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সাগরের বুকে শুকনা সড়ক বানিয়ে নাও। কেউ তোমাদের পিছু নেয় কিনা সে ব্যাপারে একটুও ভয় করো না এবং (সাগরের মাঝখান দিয়ে পার হতে গিয়ে) শংকিত হয়ো না।
২০:৭৮
فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُوْدِهٖ فَغَشِیَهُمْ مِّنَ الْیَمِّ مَا غَشِیَهُمْؕ
পিছন থেকে ফেরাউন তার সেনাবাহিনী নিয়ে পৌঁছলো এবং তৎক্ষণাত সমুদ্র তাদের উপর ছেয়ে গেলো যেমন ছেয়ে যাওয়া সমীচীন ছিল।
২০:৭৯
وَ اَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهٗ وَ مَا هَدٰى
ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছিল, কোন সঠিক পথ দেখায়নি।
২০:৮০
یٰبَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ قَدْ اَنْجَیْنٰكُمْ مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَ وٰعَدْنٰكُمْ جَانِبَ الطُّوْرِ الْاَیْمَنَ وَ نَزَّلْنَا عَلَیْكُمُ الْمَنَّ وَ السَّلْوٰى
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি এবং তূরের ডান পাশে তোমাদের উপস্থিতির জন্য সময় নির্ধারণ করেছি আর তোমাদের প্রতি মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেছি।
২০:৮১
كُلُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقْنٰكُمْ وَ لَا تَطْغَوْا فِیْهِ فَیَحِلَّ عَلَیْكُمْ غَضَبِیْ١ۚ وَ مَنْ یَّحْلِلْ عَلَیْهِ غَضَبِیْ فَقَدْ هَوٰى
–খাও আমার দেওয়া পবিত্র রিযিক এবং তা খেয়ে সীমালংঘন করো না, অন্যথায় তোমাদের ওপর আমার গযব আপতিত হবে। আর যার ওপর আমার গযব আপতিত হয়েছে তার পতন অবধারিত।
২০:৮২
وَ اِنِّیْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى
তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তারপর সোজা-সঠিক পথে চলতে থাকে তার জন্য আমি অনেক বেশী ক্ষমাশীল।
৭৪-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*ফেরাউনকে তার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন : এখানে অবশ্যই একথা বুঝতে হবে যে, যাদুকররা ঈমান আনার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের অন্তরে ‘ইলহাম’ নাযিল করে তাদের মযবুত করে দিয়েছিলেন এবং তাদের সে বিদ্রোহী বাদশাহর জন্যে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্যে নির্দেশ দান করেছিলেন। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই যে কোনাে ব্যক্তি তার রবের কাছে অপরাধী হয়ে হাযির হবে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নাম যেখানে সে মরবেও না, আর (প্রকৃত অর্থে) যিন্দাও থাকবে না।’ অর্থাৎ যেমন মৃত্যু এসে সে কঠিন আযাবের দুঃসহ জ্বালার অবসান ঘটাবে না, তেমনি জাহান্নামের মধ্যে এতাে কষ্ট হতে থাকবে যে, বেঁচে থাকার স্বাদও সে পাবে না। আর সেদিন যে সব মোমেন ব্যক্তি সর্বপ্রকার ভালাে কাজ করার রেকর্ড নিয়ে হাযির হবে, তাদের জন্যেই রয়েছে বড়াে বড়াে মর্যাদার আসন। চিরস্থায়ী এবং চির সবুজ সুষমাময় বাগ-বাগিচায় তারা বাস করবে, যার নীচু বা পাশ দিয়ে ছােট ছােট নদী কুলু কুলু নাদে প্রবাহিত হতে থাকবে, আর এটিই তাে সঠিক পুরস্কার সে সব ব্যক্তির জন্যে, যারা পবিত্র জীবন যাপন করেছে।’ কল্পনা ক্ষেত্রে একবার তাকিয়ে দেখুন ওই দৃশ্যের দিকে, ফেরাউন যাদুকরদের এই বলে ভয় দেখাচ্ছে যে, সে এক সংগে সবাইকে হত্যা করবে না এবং হঠাৎ করেও মেরে ফেলবে না; বরং সে এমন শাস্তি দেবে যা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং তিলে তিলে তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা দিতে থাকবে। এমন সময় সে ব্যক্তিদের জানানাে হচ্ছে, যে ব্যক্তি অপরাধী থাকা অবস্থায় আল্লাহর কাছে হাযির হবে তার জন্যে রয়েছে (দুনিয়ার এসব কষ্ট থেকে) আরও কঠিন এবং আরও স্থায়ী আযাব। তার জন্যে রয়েছে এমন জাহন্নাম, যেখানে সে মরবেও না, সত্যিকারে যিন্দাও থাকবে না। অর্থাৎ মৃত্যু এসে এ আযাবের অবসান ঘটাবে না বা আযাব শেষ হয়ে গিয়ে জীবনের শান্তি যে ফিরে আসবে তাও হবে না। অপরদিকে জান্নাতের জন্যে বাড়তি খােশখবর হচ্ছে যে, তাদের মহান মর্যাদার আসনে সমাসীন করা হবে। সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সেসব বাগ বাগিচাভরা বাসস্থানে যার নীচু বা পাশ দিয়ে কুলু কুলু স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হতে থাকবে। আর জীবনে যে পবিত্রতা অর্জন করবে তার জন্যেই রয়েছে এই প্রতিদান। তাদের সকল গুনাহ খাতা থেকে পবিত্র করা হবে। দেখুন সেই কঠিন দিনে মােমেন দিলগুলাে কেমন করে রাজার কথাগুলােকে প্রত্যাখ্যান করছে ও সে অহংকারী বিদ্রোহী বাদশাহর ভীতি প্রদর্শনের প্রতি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে। যেহেতু তাদের অন্তর নিশ্চিন্ত নির্লিপ্ত ও জান্নাতের আশায় ভরপুর, তাই তারা ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে সে যালেম শাসকের মােকাবেলা করছে তাদের সুমহান মর্যাদাপূর্ণ ঈমান নিজ শক্তিতে ভাস্বর হয়ে ওঠছে এবং গভীর ও খাঁটি বিশ্বাস আত্মপ্রকাশ করছে পর্বতসম দৃঢ়তা নিয়ে; বরং নবদীক্ষিত এই ঈমানদাররা ভীত হওয়ার পরিবর্তে সে বলদর্পী শাসককেই তার করুণ পরিণতি সম্পর্কে ভয় দেখাচ্ছে। আর মানব ইতিহাসের পাতায় এ দৃশ্য আজও অম্লান হয়ে আছে যে, মুক্ত হৃদয় মানুষ পৃথিবীর সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে, স্বৈরাচারী বলদর্পী শাসকের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে তাদের ঈমানের ঘােষণা দিয়েছে। শাসক শ্রেণীর পক্ষ থেকে দেয়া লােভ লালসা বা ভয় ভীতি কোনাে কিছুই তাদের দৃঢ়তাকে ভাঙতে পারেনি। আর এই বজ্ৰ কঠোর অবস্থানে উপনীত হওয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ঈমানের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে। এখানেই এ দৃশ্যের ওপর যবনিকা পাত হচ্ছে এবং নতুন আর একটি কাহিনীর দিকে পাঠকের মনােযােগ আকর্ষণ করা হচ্ছে, আসলে এ দৃশ্যের মধ্যে সত্য ও দৃশ্য জগতের বাস্তব ক্ষেত্রে ঈমানের বিজয় যাত্রা চিন্তা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্র পার হতে দেখা যাচ্ছে, এ দৃশ্যের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে এ বিজয় নেমে এসেছে। ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, যাদুর জারিজুরি বানচাল করে দিয়েছে আল্লাহর শক্তিরূপী নিদর্শন মূসা(আ.)-এর হাতের লাঠিটি। এ ছিলাে এমন এক মােজেযা যা যাদুকরদের অন্তরগুলােকে বশীভূত করে ফেলেছিলাে এবং তাদের আর না-হক পথে ফিরে যেতে দেয়নি। অপরদিকে ঈমানী শক্তির প্রতাপ বাতিলের ভয় ভীতি ও বাতিলের সকল আকর্ষণ খতম করে দিয়েছে, ভ্রুকুটি দেখিয়েছে ফেরাউনের রক্তচক্ষু ও শাস্তির ভীতি প্রদর্শনকে। অতপর দেখা যাচ্ছে হক এখানে বাতিলের ওপর বিজয়ী হল এবং গােমরাহীর ওপর ছেয়ে গেলাে সত্যের শুভ্র সমুজ্জল বাতি; বিজয়ী হল অহংকারী ও তাগূতী শক্তির ওপর ঈমানের দৃঢ়তা। আরাে দেখা যাচ্ছে, শেষের সাহায্যের সাথে প্রথম সাহায্যের পরিপূর্ণ সম্পৃক্ততা; সুতরাং এটা প্রতীয়মান হলাে যে, অন্তর জগতেই সত্য প্রথমে স্থান করে নেয় এবং তারপরই দেখা যায় বাস্তব জীবনের সর্বত্র এ বিজয় ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই সত্য পথের পথিকরা যখন জীবনের গােপন অংশগুলােতে মিথ্যার ওপর জয়ী হয়, একমাত্র তখনই জীবনের প্রকাশ্য বিষয়গুলােতে তাদের বিজয়ী হতে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে সত্য সঠিক হক পথ ও ঈমানের নিজস্ব কিছু তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য আছে, চেতনার মধ্যে যখন এসব বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে তখন সে বৈশিষ্ট্যগুলাে আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে ওঠে এবং এমনভাবে এর সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় যে, মানুষ এর মাধুরী বাস্তবে পায় অতপর যদি ঈমানের বাহ্যিক রূপ দেখা যায়, কিন্তু অন্তরে ছাপ না পড়ার কারণে এর বাস্তব ফায়দা পাওয়া না যায় তাহলে বাস্তবে মানুষ সে সত্যকে কোনাে সত্য বলে বুঝতে পারে না। আবার সত্য বলতে এমন কিছু বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত বস্তু বুঝায় যা মানুষের দৃষ্টিতে পড়ে, কিন্তু তা যদি বিবেক থেকে হতে থাকে তাহলে বিদ্রোহাত্মক মনােভাব ও মিথ্যাই জয়ী হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, পৃথিবীতে সাধারণত দেখা যায় মিথ্যা শক্তি ও আল্লাহদ্রোহীরা বস্তু শক্তির ওপর এমনভাবে কর্তৃত্ব করে চলেছে, মনে হয় এদের মোকাবেলা করার কোনাে উপায়ই নেই এবং এদের সামনে সত্য ও ঈমান দাড়াতেই সক্ষম নয়… এ জন্য প্রয়ােজন হচ্ছে ঈমানের মূল তাৎপর্য অন্তরের মধ্যে দৃঢ়ভাবে অনুভূত হতে হবে এবং হৃদয়ের গভীরে প্রবিষ্ট হতে হবে সত্যের প্রকৃত মর্ম, তাহলেই বাস্তব সত্য ও হৃদয়ের মধ্যে অবস্থিত ঈমানী শক্তি সে সকল স্থূল বস্তু শক্তির ওপর বিজয়ী হতে পারবে, যা নিয়ে বস্তুবাদীরা বড়াই করে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে। এই অবস্থাটাই মূসা(আ.)-এর সাথে সংঘটিত হয়েছিল। যাদুকরদের যাদুর উপস্থিত তেলেসমাত তাকে কাবু করতে চেয়েছিলাে, কারণ তাঁর কাছে বাহ্যিক বস্তু শক্তি ছিলাে না। অপর দিকে ফেরাউনের হাতে বস্তু শক্তি থাকাতে যাদুকররা তার ও তার অনুচরদের অনুগত গোলামে পরিণত হয়েছিলাে, এই কারণেই সত্যকে পৃথিবীর বুকে বিজয়ী বানানাে হল যার বিবরণ এই সূরার মধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি।
বলা হচ্ছে, ‘আর ওহীর মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাত্রে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে মূসাকে নির্দেশ দিয়েছিলােম… আর ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করলাে এবং নিজেও সে হেদায়াত পেলাে না।'(আয়াত ৭৭-৭৯) আবার দেখুন, বর্তমান আলােচনা প্রসংগে একথা জানানাে হয়নি যে বিদ্রোহী ও ক্ষমতাদর্পী বাদশাহ ফেরাউনের সাথে ঈমানের প্রতিযােগিতার পর যাদুকরদের সাথে ফেরাউন ও তার দরবারীরা কি ব্যবহার করেছিলাে। তারপর যখন তারা পরাজিত হয়ে ঈমান আনার ঘােষণা দিয়েছিলাে, তখন তাদের ফেরাউন বিপরীত দিক থেকে হাত পা কাটার ধমকে দিয়েছিলাে বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত ব্যক্তিদের সাথে বাস্তবে কি ব্যবহার করেছিলাে তার কোনাে বিবরণ পেশ করা হয়নি। এরা তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলাে দুনিয়ার জীবন ও দুনিয়ার সকল ভােগ বিলাসিতার বস্তুকে। তারা প্রতিযোগিতায় পরাজিত হওয়ার পরই দেখতে পেলাে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ক্ষমতার নিদর্শন এবং তখনই তাদের অন্তর ঝুকে ছিলাে সারা বিশ্বের মালিক মহান আল্লাহর দিকে। তারা বুঝতে পারলাে, আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার মােমেন বান্দাদের পরিচালনা করেন এবং প্রকৃতপক্ষে তিনিই তার নেক বান্দাদের সাহায্য করেন। তারপর যখন মূসা(আ.)-এর জাতি ঘর-বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে সাগরের কিনারায় পৌছে গেলাে এবং এ মহাসাগরের উত্তাল তরংগ তাদের গতি রােধ করলাে, তখন কি ঘটল তার বিস্তারিত বিবরণ এখানে দেয়া হয়নি। অন্য সূরাতে এসব বিবরণ কিছু জানা যাবে। এখানে বেশী কোনাে প্রকার ভূমিকা না দিয়ে শুধু আল্লাহর সাহায্যের কথাটাই তুলে ধরা হয়েছে, কেননা যেসব কারণে আল্লাহর সাহায্য আসে তা মােমেনের দিল-দেমাগের মধ্যে নিহিত রয়েছে। এখানে যে কথাটার দিকে বিশেষভাবে ইংগিত করা হয়েছে তা হচ্ছে মূসা(আ.) যেন আল্লাহর বান্দা বনী ইসরাঈলদের ফেরাউনের দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত করে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে নিয়ে যেতে পারেন এবং এজন্যে তাকে রাত্রের অন্ধকারে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে। তারপর মূসা(আ.) সাগরের বুকে এক শুকনা পথ রচনা করলেন, এতােটুকু বলেই অন্য প্রসংগে চলে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু এ সফরের আর বিস্তারিত কোনাে বিবরণ দেয়া হয়নি।এজন্যে আমরাও আয়াতে বর্ণিত কথার মধ্যে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তার ব্যাখ্যা দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছি। এখানে আমরা এতােটুকু জেনে নিশ্চিন্ত হয়েছি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য অবশ্যই মােমেনদের জন্যে অবধারিত। আল্লাহ তায়ালাই মূসা(আ.) এর দ্বারা তাদের নিয়ে গেলেন সাগরের দিকে। মূসা নবী নির্ভিক চিত্তে তার জাতিকে নিয়ে গেলেন। ফেরাউন বা তার বাহিনী তাদের কিছুতেই ধরতে পারবে না- এ ব্যাপারে তার মন ভয় ভাবনাহীন হয়ে রইলাে। সমুদ্রের উত্তাল তরংগ ও তার মনে কোনাে উৎকণ্ঠা জাগালাে না, কারণ আল্লাহর হুকুমেই তিনি এসব পদক্ষেপ নিতে অগ্রসর হয়েছেন। কাজেই (আল্লাহর হকুমে লাঠির আঘাত করায় পানি ভাগ হয়ে) শুকনা রাস্তা যখন বেরিয়ে গেলাে, তখন নিশ্চিন্ত মনে তিনি নিজ জাতিকে নিয়ে সেই পথে এগিয়ে গেলেন। তারপর তাদের পার হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহর কুদরত প্রবাহমান পানিকে তার প্রকৃতি অনুসারে আবারও মিলিয়ে দিলেন । অবশ্য মাঝে মাঝে যখনই ইচ্ছা হয়েছে তখনই আল্লাহ তায়ালা তারই দেয়া এই প্রকৃতি বদলে দিয়েছেন এবং পানির মধ্য থেকে শুকনা পথ বের করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারপর ফেরাউন তার লােক-লঙ্কর নিয়ে অনুসরণ করলাে তাদের, অতপর সাগরের উত্তাল তরংগ তাদের ঢেকে ফেলল পুরােপুরিভাবে। এভাবে ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করলাে এবং কিছুতেই সে তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করেনি।’ *ফেরাউন ও তার অনুসারীদের পরিণতি : এভাবে সংক্ষেপে ফেরাউন ও তার জাতির সলিল সমাধির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এখানে বিস্তারিত তথ্য পেশ করা হয়নি, এতে করে মানুষের স্মৃতিতে সংক্ষিপ্তভাবে তাদের সে কঠিন অবস্থার স্মৃতি জাগরূক থাকে। বিস্তারিত তথ্য সাধারণভাবে স্মৃতিতে ধরে রাখা মুশকিল বিধায় শুধুমাত্র নাফরমানীর শাস্তি সম্পর্কিত কথাগুলো এখানে বলা হয়েছে। হায় হতভাগা বিদ্রোহী অহংকারী বলদর্পী শাসক। ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় সে তার নিজের জাতিকে নিকৃষ্টভাবে পরিচালনা করেছে এবং জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও তার জাতিকে সে সাগরের দিকে এমন নিকৃষ্টভাবে পরিচালনা করলাে যে, সে নিজেও ধ্বংস হয়ে গেলাে এবং তার গোটা জাতিকেও ধ্বংস করে ছাড়লাে। ফেরাউনের কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে আমরাও শুধুমাত্র ততােটুকু আলােচনা করে ক্ষান্ত হয়েছি যতােটুকু আল কোরআনের আলােকে আমরা বুঝতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাকেই আমরা হেকমতের দাবী বলে বুঝেছি। আমরা তাে আল কোরআনে বর্ণিত ঘটনাবলী থেকে বাস্তব জীবনের জন্য শিক্ষা নিতে চাই। কাহিনীর বিস্তারিত বিবরণ অবগত হওয়া আমাদের কোনাে আসল উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই যেন আমাদের মনের ওপর অতীতের কোনাে ঘটনার বিবরণ এমনভাবে দাগ কেটে যায় যেন ভবিষ্যতে আমরা সতর্ক হতে পারি। আল কোরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলাে দ্বারা আল্লাহর কুদরত সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। সকল কাহিনীর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ঈমান ও আল্লাহ দ্রোহিতার মধ্যে বিরাজমান চিরন্তন বিরোধের কথাকে সুস্পষ্ট করে তােলা। সুতরাং আলােচ্য ঘটনায় ঈমানদারদের শুধুমাত্র ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত আল্লাহর নির্দেশ মানতে এবং রাত্রে মূসা(আ.)-এর সাথে ঘর বাড়ী ছেড়ে তাদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এই বেরিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে (আক্রমণকারী ও আক্রান্ত) শক্তিদ্বয় সমান নয় এবং বাস্তব মতবাদের দিক দিয়ে বিবেচনা করতে গেলে তারা পরস্পরের কাছাকাছিও নয় যে, একদল আর এক দলকে সহ্য করতে পারবে। মূসা ও তাঁর জাতি শক্তির দিক দিয়ে পুরােপুরিই দুর্বল এবং ফেরাউন ও তার লােক লস্কর সকল ধরনের অস্ত্রসহ সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী; সুতরাং বস্তুগত দিক দিয়ে চিন্তা করতে গেলে তাদের পারস্পরিক মুখােমুখি সংঘর্ষে অবতীর্ণ হওয়ার কোনাে প্রশ্নই আসে না এখানে দেখা যাচ্ছে সকল ক্ষমতার মালিক রাজাধিরাজ নিজেই যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন, কিন্তু ঈমান যখন স্থান করে নিলাে সেসব যাদুকরের অন্তরে, যাদের কাছে ঈমানের হাতিয়ার ছাড়া আর কোনাে হাতিয়ারই ছিলাে না, তারা এই হাতিয়ারই ব্যবহার করলাে এবং শক্তি ক্ষমতাদর্পী সে বাদশার মুখের ওপর ঈমানের ঘােষণা দিয়ে তারা বাদশাহকে আক্রমণের আহ্বান জানালাে। তারা জানালাে যে, তারা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না, বাদশাহকেও নয়, বাদশাহর অনুকম্পাও তারা আশা করে না, তার ধমকের কোনাে পরওয়াও তাদের নেই এবং তার কাছে কোনাে পদমর্যাদা, মান-সম্মান-স্বার্থ কোনাে কিছুই তারা কামনা করে না। এমতাবস্থায় দেখুন, অহংকারী বাদশাহ চূড়ান্তভাবে সতর্ক করতে গিয়ে তাদের জানিয়ে দিচ্ছে, অবশ্যই অবশ্যই আমি তােমাদের হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেবে এবং তােমাদের খেজুর গাছের সাথে বেঁধে শুলে চড়াবো। এর জওয়াবে ঈমান দৃঢ়তার সাথে জওয়াব দিলাে, ঠিক আছে, যে ফয়সালা করতে তােমার মন চায় সে ফয়সালাই করাে, তুমি তাে এই জীবনের ওপরই যা করতে চাও করবে… অর্থাৎ তাদের অন্তরের মধ্যে ঈমান ও না-ফরমানীর সংঘর্ষ যখন বেধে গেলাে। তখন পরিশেষে শক্তি ক্ষমতার আসল মালিক সত্যের ঝান্ডা এমনভাবে তুলে ধরলেন যেন তা সমুন্নত থাকে এবং ঈমানদারদের কোনাে চেষ্টা ছাড়াই যেন মিথ্যার পতাকা অবনমিত হয়ে যায় । আলােচ্য পাঠ থেকে অন্য যে শিক্ষাটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে, যখন ফেরাউনের হাতে বনী ইসরাঈলের ছেলে শিশু গুলাে নিহত হচ্ছিলাে আর তারা ওদের কন্যা সন্তানদের ছেড়ে দিচ্ছিলাে, তখন আল্লাহর কুদরতী হাত সক্রিয় হয়ে উঠেনি এবং তাদের ব্যাপারে কোনাে হস্তক্ষেপও করেনি। এর কারণ হচ্ছে, সে সময়ে বনী ইসরাঈলরা কিবতীদের ভয়ে হীনমন্য হয়ে ছিলাে এবং সদা-সর্বদা ভয়ে অস্থির হয়ে থাকতাে, কিন্তু যখন সে যাদুকররা ঈমান আনার ঘােষণা দিলাে, বনী ইসরাঈলরাও ঈমানদার হয়ে গিয়ে মূসা(আ.)-এর অনুগত হয়ে গেলাে এবং ফেরাউনের পক্ষ থেকে তাদের নির্যাতন করার পুরোপুরি সম্ভাবনা থাকা সত্তেও বিশ্ব সম্রাটের ওপর নির্ভর করে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেলাে এবং সকল প্রকার ভয়-ভীতি উপেক্ষা করেও দ্বিধাহীন চিত্তে ফেরাউনের মুখের ওপর কালেমায়ে তাওহীদের বাণী উচ্চারণ করলাে, তখনই সে সাক্ষাত-সমরের সমূহ সম্ভাবনার মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কুদরতী হাত বাস্তবে এগিয়ে এলাে। অবশ্যই বাস্তবে সাহায্য নেমে আসার আগে, তাদের অন্তরের মধ্যে তাদের অন্তরাত্মার গভীরে সাহায্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছিলাে। এই শিক্ষাটিকেই আলােচ্য প্রসংগে সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিলেও ওপরে বর্ণিত দুটি ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহর শক্তি-ক্ষমতার কথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। আশা করা যায়, এ কাহিনীর বিবরণী দ্বারা দাওয়াতদানকারী মােমেনরা এ বন্ধুর পথে কাজ করার জন্যে প্রচুর উৎসাহ পাবেন এবং বিরােধীদের শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে, মহাশক্তিমান আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তারা সত্যের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। অতপর পার্থিব বস্তুগত সহায় সম্পদ না থাকা সত্তেও তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির নিশ্চিত আশা নিয়ে সকল প্রকার সমরাস্ত্রে সজ্জিত শত্রুদের মােকাবেলায় বীরদর্পে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্তি ও শক্রদের হাত থেকে মুক্তি লাভের এই দৃশ্যের আলােকে আমরা সুস্পষ্টভাবে দুটি শিক্ষা পাচ্ছি এক. আল কোরআনে বর্ণিত অতীতের ঘটনাবলীর আলােকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। দুই. আমাদের সতর্কতার সাথে ফয়সালা নিতে হবে, আমরা কোন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নেবাে। আলােচ্য ঘটনাদ্বয়, ঈমানের ঘােষণাদান, বস্তুগত সাজ সরঞ্জামের কিছু জোগাড় না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষাত সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়া এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাতে নিজেদের সােপর্দ করা শিক্ষা দিচ্ছে। ঘটনায় আমাদের আরাে শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা আল্লাহকে ভুলে না যাই, তার সাহায্য ছাড়া অন্য কারাে সাহায্যের ওপর নির্ভর না করি এবং কোনাে অবস্থাতেই অহংকারী না হয়ে ওঠি। আরাে মনে রাখতে হবে; বাস্তব সমর ক্ষেত্রে যেসব বস্তুগত অস্ত্র ব্যবহৃত হবে তার কিছু না কিছুর অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত আমরা একেবারে খালি হাতে শত্রুর মােকাবেলায় যেন এগিয়ে না যাই। তবে শত্রুর ব্যবহৃত অস্ত্রের অনুরূপ অস্ত্র যদি কিছু থাকে এবং তুলনামূলকভাবে নিজেদের সংখ্যা যদি কমও থাকে তাহলে কোনাে অসুবিধা নেই। লােকসংখ্যা ও অস্ত্র সংখ্যা সমান সমান হওয়া কোনাে জরুরী নয়। আল কোরআন জানাচ্ছে, কত ছােট ছােট দল, আল্লাহর হুকুমে কত বড়ো বড় দলের ওপর জয় লাভ করেছে। সুতরাং সেনা সংখ্যা বা অন্ত্র সংখ্যা কম হলেও অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য ও সফলতা আশা করা যাবে।
এরশাদ হচ্ছে, ‘হে বনী ইসরাঈল জাতি, অবশ্যই আমি তােমাদেরকে তােমাদের দুশমনদের থেকে নাজাত দিয়েছি… আর অবশ্যই আমি ক্ষমাকারী তার জন্যে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং ভালাে কাজ করে, আর তারপর হেদায়াতের পথ গ্রহণ করে।'(আয়াত ৮০-৮২) ওপরের আয়াতগুলােতে আল্লাহ তায়ালা জানাচ্ছেন যে বনী ইসরাঈল জাতি (সাগর পাড়ি দেয়ার পর) বিপজ্জনক এলাকা পার হয়ে গেলাে, সেখান থেকে তারা ফেরাউন ও তার সৈন্য সামন্তকে ডুবে মরতে দেখলাে । অতপর তারা তুর পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাে। এখানে খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, মােমেনদের জন্যে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তি এমন এক বাস্তব সত্য, যা প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে জাগছে, কিন্তু এ সাহায্যের কথা বেশীর ভাগ মানুষ মনে রাখে না। এজন্যে আল্লাহর সাহায্যের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও জ্বলন্ত প্রমাণের কথা ঘােষণা করে দেয়া হচ্ছে সে অকৃতজ্ঞ জাতির সামনে। তার অপার মেহেরবানীর কথা তাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন তারা পেছনের কথা স্মরণ করে আল্লাহর নেয়ামতের অবদান ভালােভাবে বুঝতে পারে এবং সঠিকভাবে এর শােকরগগাযারী করতে পারে। ওদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছিলাে যে ওদের, ডান দিকে অবস্থিত তুর পর্বতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। একথা দ্বারা তুর পর্বতে মূসা(আ.)-এর সেই যাত্রার দিকে ইংগিত করা হয়েছে যার ওয়াদা আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মিসর থেকে বেরিয়ে আসার পর চল্লিশ দিনের মধ্যে তাঁকে তাঁর রব নিজ সান্নিধ্যে নিয়ে যাবেন। যাতে করে আল্লাহ তায়ালা তাদের সঠিক আকীদা ও জীবনের আইন কানুন সম্পর্কিত সেই কথাগুলাে শুনিয়ে দেন যা বিভিন্ন ফলকে লিখিত আকারে তার কাছে পাঠানাে হয়েছিলাে। মূসা(আ.)-এর জাতি বনী ইসরাঈলকে একটি আদর্শ জাতি হিসাবে গড়ে তােলার লক্ষ্যে সে ফলকগুলােতে লিখিতভাবে প্রেরিত হয়েছিলাে আল্লাহর মহাবাণী। আল্লাহ তায়ালা চেয়েছিলেন, মিসর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তুর পবর্তের পবিত্র উপত্যকায় পৌছে তারা এক সুগঠিত ও আদর্শ জাতি হিসাবে গড়ে ওঠবে এবং অন্য মানুষদের সত্য পথে আহ্বান জানাবে। এ লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্যে তারা নিজেদের জীবনকে আদর্শ জীবন হিসাবে পেশ করবে। এরপর মান নামক খাদ্য নাযিল হওয়া সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে তার তাৎপর্য হচ্ছে, এগুলাে একপ্রকার মিষ্টি খাদ্য, যা শিশিরবিন্দু আকারে পতিত হয়ে গাছের পাতার ওপর জড়াে হতাে। আর ‘সালওয়া’ বলতে বুঝায় খুবই চর্বিদার এক প্রকার পাখী, যা মরুভূমির মধ্যে তাদের কাছে পৌছে দেয়া হতাে। এগুলাে সহজেই তারা ধরতে পারতাে এবং খেতেও এগুলাে বড়ো সুস্বাদু ছিলাে। এগুলাে ছিলাে তাদের জন্যে মরুভূমির মধ্যে আল্লাহর মেহেরবানীর বহিঃপ্রকাশ। এগুলাে এমন একপ্রকার পাখী যাদের গায়ে পশম নেই। আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করে এদের বনী ইসরাঈল জাতির কাছে পৌছে দিতেন। এভাবে এগুলাে তাদের দৈনন্দিন খাবারে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। তিনিই তাদের জন্যে তা ধরা সহজ করে দিয়েছিলেন । এ পর্যায়ে মহান আল্লাহ তাদের এসকল সহজলভ্য নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের ব্যবহার করার হুকুম দিচ্ছেন এবং তাদের সকল প্রকার নাফরমানীমূলক কাজও ব্যবহার থেকে দূরে থাকার জন্যে সতর্ক করছেন। এ নেয়ামত ভােগ করার ব্যাপারে তারা দু-ধরনের বাড়াবাড়ি করতাে, কখনও তারা অতিমাত্রায় খেতাে, যার কারণে নানা প্রকার পেটের পীড়া দেখা দিতাে, আবার কখনও কখনও আরাে মুখােরােচক ও সুস্বাদু খাদ্য খাবারের দাবী জানাতে, অথচ যে মহান দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের মিসর থেকে বের করে এনে এই জনহীন বিয়াবানে আল্লাহ তায়ালা আশ্রয় দিয়েছিলেন সে দায়িত্ব তারা পালন করতাে না। আল্লাহ তায়ালা তাে তাদের এসব সহজলভ্য নেয়ামত দিয়ে চেয়েছিলেন যে, তারা পৃথিবীর বুকে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবে, আর এসব দায়িত্ব পালন না করায় আল্লাহ তায়ালা তাদের বিদ্রোহী জাতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা বিদ্রোহাত্বক নানা প্রকার কাজ করার দরুন তারা আল্লাহর বিরাগভাজন হয়ে গিয়েছিলাে এবং ইতিমধ্যে কিছু কিছু শাস্তিও পেয়ে গিয়েছিলাে। এভাবে এক চূড়ান্ত অবস্থায় উপনীত হওয়ার পর্যায়ে তারা পৌছে গিয়েছিলাে। এরশাদ হচ্ছে, ‘খবরদার পৃথিবীর বুকে তােমরা অহংকার করাে না, এর ফলে তােমাদের ওপর গযব নাযিল হওয়া অবধারিত হয়ে যাবে, আর যার ওপর গযব নাযিল হওয়া হয়ে যায় অবশ্যই সে ধ্বংস হয়।’ অর্থাৎ, শীঘ্রই ফেরাউনের পতন হলাে, রাজক্ষমতার আসন থেকে সে নেমে গেলাে এবং সাগরবক্ষে নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেলাে। আর ধ্বংস হওয়া বলতে বুঝায় মানুষের সেই পরিণতিকে যা তাকে সকল কিছুর নীচে নামিয়ে দেয়। এই অধপতনের মুখােমুখি হয় তারা, যারা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ এবং নিজেদের বড়ত্ব প্রদর্শন করে। এই বিদ্রাহ ও না-ফরমানীর বহু দৃষ্টান্ত আল কোরআনে পেশ করা হয়েছে এবং সে বর্ণনাগুলাে এমনই চমৎকার যে, মনে হয় সে ঘটনাগুলাে এখনও যেন আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠছে। এই সতর্কীকরণ ও ভীতিপ্রদর্শন হচ্ছে ওইসব বনী ইসরাঈলের জন্যে, যারা সাগর পার হয়ে সে মরুভূমিতে পৌছে গিয়েছিলাে। যে উদ্দেশ্যে তারা বের হয়েছিলাে সে কারণেই তাদের প্রতি সতর্কবাণী, যেন তারা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ না হয়, অহংকারী না হয়ে যায় এবং বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের কর্তব্য ভুলে না যায়, তা করলে তারা আল্লাহর রহমতপ্রাপ্তি থেকে পিছিয়ে যাবে। আর এটাও সত্য, সতর্কীকরণের সাথে সাথে যে কোনাে তাওবাকারী ব্যক্তির জন্যে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে, যে কোনাে ব্যক্তি অপরাধ করার পর ক্ষমাপ্রার্থী হবে এবং ভালোর দিকে ফিরে আসবে, অবশ্যই তাকে ক্ষমা করা হবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই আমি ক্ষমাশীল সেই ব্যক্তির জন্যে যে তাওবা করবে, ঈমান আনবে, ভালাে কাজ করবে এবং সত্য সঠিক পথ অবলম্বন করবে।’ তাওবা শুধুমাত্র মুখে উচ্চারিত কোনাে কথার নাম নয়। এটা হচ্ছে মনের মধ্যে গড়ে ওঠা এক সংকল্পের নাম, যার বহিপ্রকাশ ঘটে ঈমান ও নেক কাজের মাধ্যমে, আর তাওবাকারীর এ সংকল্পের লক্ষণ সমুজ্জল হয়ে ওঠে তার ব্যবহার এবং তার বাস্তব জীবনের কাজে কর্ম, আগের আচরণে। অতপর তাওবা করার পর ঈমান যখন সহীহ হয়ে যাবে এবং বাস্তব জীবনের কার্যকলাপ যখন তার তাওবার স্বাক্ষর বহন করবে, তখনই বুঝতে হবে সে ব্যক্তি সঠিক পথে আছে, ঈমান আনার পর হেদায়াতের ওপর টিকে আছে এবং তখনই তার নেক আমলের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। সুতরাং এখানে দেখা যাচ্ছে, চেষ্টা ও নেক কাজের ফলই হচ্ছে হেদায়াতপ্রাপ্তি।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# যাদুকরদের উক্তির সাথে এটা আল্লাহর বাড়তি উক্তি। বক্তব্যের ধরন থেকেই এ কথা বুঝা যাচ্ছে যে, এ বাক্য যাদুকরদের উক্তির অংশ নয়।
# জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। পুরোপুরি মৃত্যু হবে না। যার ফলে তার কষ্ট ও বিপদের সমাপ্তি সূচিত হবে না। আবার জীবনকে মৃত্যুর ওপর প্রাধান্য দেবার মতো জীবনের কোন আনন্দও লাভ করবে না। জীবনের প্রতি বিরূপ হবে কিন্তু মৃত্যু লাভ করবে না। মরতে চাইবে কিন্তু মরতে পারবে না। কুরআন মজীদে জাহান্নামের আযাবের যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এ অবস্থাটি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভয়াবহ। এর কল্পনায়ও হৃদয়-মন কেঁপে ওঠে।
# এরপর দীর্ঘদিন মিসরে অবস্থানকালে যা কিছু ঘটেছিল সেসব আলোচনা মাঝখানে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনাবলী বিস্তারিত জানার জন্য সূরা আ’রাফ ১৫-১৬ , সূরা ইউনুস ৯ , সূরা মু’মিন ৩-৫ এবং সূরা যুখরুফ ৫ রুকু দেখুন।
# এ সংক্ষিপ্ত কথাটির বিস্তারিত বিবরণ হচ্ছে এই যে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ একটি রাত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এ রাতে সমস্ত ইসরাঈলী ও অইসরাঈলী মুসলমানদের (যাদের জন্য ব্যাপক অর্থবোধক আমার বান্দাদের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে) মিসরের সকল এলাকা থেকে হিজরত করে বের হয়ে পড়ার কথা ছিল। তারা সবাই একটি পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হয়ে একটি কাফেলার আকারে রওয়ানা হলো। এ সময় সুয়েজ খালের অস্তিত্ব ছিল না। লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত সমস্ত এলাকাটাই উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু সে এলাকার সকল পথেই ছিল সেনানিবাস। ফলে সেখান দিয়ে নিরাপদে অতিক্রম করা সম্ভবপর ছিল না। তাই হযরত মূসা লোহিত সাগরের পথ ধরলেন। সম্ভবত তাঁর পরিকল্পনা ছিল, সাগরের তীরে ধরে এগিয়ে গিয়ে সিনাই উপদ্বীপের দিকে চলে যাবেন। কিন্তু সেদিক থেকে ফেরাউন একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে ঠিক এমন সময় পৌঁছে গেলো যখন এ কাফেলা সবেমাত্র সাগরের তীরেই উপস্থিত হয়েছিল। সূরা শূ’আরায় বলা হয়েছে, মুহাজিরদের কাফেলা ফেরাউনের সেনা দল ও সমুদ্র দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল। ঠিক এমনি সময় মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে হুকুম দিলেন اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ সমুদ্রের ওপর তোমার লাঠি মারো।”
فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ
তখনই সাগর ফেটে গেলো এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা একটি বড় পর্বত শৃংগের মতো দাঁড়িয়ে গেলো।”
আর মাঝখান দিয়ে শুধু কাফেলার পার হয়ে যাবার পথ তৈরী হয়ে গেলো না বরং উপরের আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী মাঝখানের এ অংশ শুকিয়ে খটখটে সড়কের আকার ধারণ করলো। এটি সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য মু’জিযার বর্ণনা। এ থেকে যারা একথা বলে থাকেন যে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বা জোয়ার ভাটার ফলে সমুদ্রের পানি সরে গিয়েছিল তাদের কথার গলদ সহজেই ধরে পড়ে। কারণ, এভাবে যে পানি সরে যায় তা দু’দিকে পর্বত শৃংগের মতো খাড়া হয়ে থাকে না এবং মাঝখানের পানি বিহীন অংশ শুকিয়ে রাস্তা তৈরী হয়ে যায় না। (আরো বেশী জানার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা শূ’আরা ৪৭ টীকা দেখুন)।
# সূরা শূ’আরায় বলা হয়েছে, মুহাজিরদের সাগর অতিক্রম করার পর পরই ফেরাউন তার সৈন্য সামন্তসহ সমুদ্রের বুকে তৈরী হওয়া এ পথে নেমে পড়লো। ( ৬৩-৬৪ আয়াত ) এখানে বলা হয়েছে, সমুদ্র তাকে ও তার সেনাদেরকে ডুবিয়ে মারলো। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈল সমুদ্রের অন্য তীর থেকে ফেরাউন ও তার সেনাদলকে ডুবে যেতে দেখেছিল। ( ৫০ আয়াত ) অন্যদিকে সূরা ইউনুসে বলা হয়েছে, ডুবে যাবার সময় ফেরাউন চিৎকার করে উঠলোঃ
آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“আমি মেনে নিয়েছি যে আর কোন ইলাহ নেই সেই ইলাহ ছাড়া যাঁর প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমিও মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।”
কিন্তু এ শেষ মুহূর্তের ঈমান গৃহীত হয়নি এবং জবাব দেয়া হলোঃ
آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ – فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً
“এখন ঈমান আনছো? আর ইতিপূর্বে এমন অবস্থা ছিল যে, নাফরমানীতেই ডুবে ছিলে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করেই চলেছিলে। বেশ, আজ আমি তোমার লাশটাকে রক্ষা করেছি, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।” ( ৯০-৯২আয়াত )
# অতি সূক্ষ্মভাবে মক্কার কাফেরদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে এই মর্মে যে, তোমাদের সরদার ও নেতারাও তোমাদের সেই একই পথে নিয়ে যাচ্ছে যে পথে ফেরাউন তার জাতিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এখন তোমরা নিজেরাই দেখে নাও যে, এটা কোন সঠিক পথ নির্দেশন ছিল না। এ কাহিনী শেষ করতে গিয়ে মনে হয় বাইবেলের বর্ণনাবলীও পর্যালোচনা করা দরকার। এভাবে যারা বলে থাকে কুরআনের এ কাহিনী বনী ইসরাঈলের থেকে নকল করা হয়েছে তাদের মিথ্যার হাটে হাঁড়ি ভেঙে যাবে। বাইবেলের যাত্রা পুস্তক () এ কাহিনীর যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তার নিন্মোক্ত অংশগুলো প্রণিধানযোগ্যঃ
একঃ ৪ অধ্যায়ের ২-৫ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ লাঠির মু’জিযা হযরত মূসাকে দেয়া হয়েছিল। আবার ১৭ শ্লোকে তাঁকেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর তুমি এ ষষ্টি হস্তে করিবে, ইহা দ্বারাই তোমাকে সেই সকল চিহ্ন-কার্য করিতে হইবে।” কিন্তু সামনের দিকে গিয়ে জানা গেলো না কেমন করে এ লাঠি হযরত হারুনের হাতে চলে গেলো এবং তিনিই এর সাহায্যে মু’জিযা দেখাতে থাকলেন। ৭ অধ্যায় থেকে নিয়ে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা অনবরত হযরত হারুনকেই লাঠির মু’জিযা দেখাতে দেখি। (তবে বর্তমানে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আধুনিক বাইবেলে যাত্রাপুস্তক অধ্যায় ৭ ও ৯ এ আমরা হযরত মূসাকেও লাঠির ব্যবহার করতে দেখি )
দুইঃ ৫ অধ্যায়ে ফেরাউনের সাথে হযরত মূসার প্রথম সাক্ষাতেরই অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আল্লাহর একত্ব ও রবুবিয়াত সম্পর্কে হযরত মূসা ও ফেরাউনের মধ্যে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল আদতে তার কোন উল্লেখই নেই। ফেরাউন বললো, সদা প্রভু কে যে, আমি তাহার কথা শুনিয়া ইসরাঈলকে ছাড়িয়া দিব? আমি সদা প্রভুকে জানি না।” কিন্তু মূসা ও হারুন এর এছাড়া আর কোন জবাব দিলেন না, “ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাদিগকে দর্শন দিয়াছেন।” (৫: ২-৩)
তিনঃ যাদুকরদের সাথে প্রতিযোগিতার সমগ্র কাহিনী নিচের মাত্র এই ক’টি বাক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছেঃ “পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোনকে কহিলেন, ফরৌন যখন তোমাদিগকে বলে, তোমরা আপনাদের পক্ষে অদ্ভুত লক্ষণ, দেখাও, তখন তুমি হারোনকে বলিও, তোমার যষ্টি লইয়া ফরৌনের সামনে নিক্ষেপ কর, তাহাতে তাহা সর্প হইবে। তখন মোশি ও হারোন ফেরাউনের নিকট গিয়ে সদা প্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম করিলেন, হারোন ফরৌনের ও তাঁহার দাসগণের সম্মুখে আপন যষ্টি নিক্ষেপ করিলেন, তাহাতে তাহা সর্প হইল। তখন ফরৌনও বিদ্বানদিগকে ও গুণীদিগকে ডাকিলেন, তাহাতে তাহারা অর্থাৎ মিস্রীয় মন্ত্রবেত্তারাও আপনাদের মায়াবলে সেই রূপ করিল। ফলত তাহারা আপন আপন যষ্টি নিক্ষেপ করিলে সে সকল সর্প হইল, কিন্তু হারোনের যষ্টি তাহাদের সকল যষ্টিকে গ্রাস করিল।” ( ৭: ৮-১২) কুরআনের বর্ণনার সাথে এ বর্ণনা মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। মূল কাহিনীর সমগ্র প্রাণশক্তি কি মারাত্মকভাবে এখানে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, উৎসবের দিন খোলা ময়দানে যথারীতি চ্যালেঞ্জের পর প্রতিযোগিতা হওয়া এবং তারপর পরাজয়ের পর যাদুগরদের ঈমান আনা ছিল মূলত এ কাহিনীর প্রাণ। কিন্তু এখানে তার কোন উল্লেখই করা হয়নি।
চারঃ কুরআন বলছে, বনী ইসরাঈলদের মুক্তি ও স্বাধীনতাই ছিল হযরত মূসার দাবী। বাইবেল বলছে, তাঁর দাবী কেবল এতটুকুই ছিলঃ “আমরা বিনয় করি, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করণার্থে আমাদিগকে তিন দিনের পথ প্রান্তরে যাইতে দিউন, (যাত্রা পুস্তক ৫: ৩)
পাঁচঃ মিসর থেকে বের হওয়া এবং ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার ঘটনা ১১ থেকে ১৪ অধ্যায়ের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বহু প্রয়োজনীয় তথ্য ও কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনার বিস্তারিত রূপও আমরা দেখতে পাই। আবার এই সঙ্গে অনেকগুলো অদ্ভুত কথাও জানা যায়। যেমন ১৪ অধ্যায়ের ১৫-১৬ শ্লোকে হযরত মূসাকে হুকুম দেয়া হচ্ছেঃ তুমি আপন যষ্টি (জি, হাঁ এখন যষ্টি হযরত হারুনের হাত থেকে নিয়ে হযরত মূসার হাতে দেয়া হয়েছে) তুলিয়া সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর, সমুদ্রকে দুই ভাগ কর; তাহাতে ইস্রায়েল সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্র মধ্যে প্রবেশ করিবে।” কিন্তু সামনের দিকে গিয়ে ২১-২২ শ্লোকে বলা হচ্ছেঃ “মোশি (মূসা)-সমুদ্রের উপর আপন হস্ত বিস্তার করিলেন, তাহাতে সদা প্রভু সেই সমস্ত রাত্রি ব্যাপী প্রবল পূর্বীয় বায়ু দ্বারা সমুদ্রকে সরাইয়া দিলেন ও তাহা শুষ্ক ভূমি করিলে, তাহাতে জল দুই ভাগ হইল। আর ইস্রায়েল সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্র মধ্যে প্রবেশ করিল এবং তাহাদের দক্ষিণে ও বামে জল প্রাচীর স্বরূপ হইল। বুঝতে পারা গেল না যে, এটা মুজিযা ছিল, না ছিল প্রাকৃতিক ঘটনা? যদি মুজিযা থেকে থাকে তাহলে তা লাঠির আঘাতেই সৃষ্ট হয়ে থাকবে, যেমন কুরআনে বলা হয়েছে। আর যদি সত্যি প্রাকৃতিক ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে পূর্বীয় বায়ু সমুদ্রকে মাঝখান থেকে ফেড়ে পানিকে দু’দিকে দেয়ালের মতো দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং মাঝখানে শুকনো পথ বানিয়ে দিয়েছে, এটা তো দস্তুর মতো বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাতাস কি কখনো এমনি ধরনের কোন আযব কাণ্ড ঘটিয়েছে? ( বাইবেলে দেখুন )
তালমূদের বর্ণনা বাইবেল থেকে তুলনামূলকভাবে বিভিন্ন এবং কুরআনের অনেকটা কাছাকাছি। কিন্তু উভয়ের মোকাবিলা করলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এক জায়গায় সরাসরি অহী জ্ঞানের ভিত্তিতে ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে এবং অন্য জায়গায় শত শত বছরের জনশ্রুতির মাধ্যমে প্রচলিত বর্ণনাই ঘটনার রূপ নিয়েছে। যার ফলে তা যথেষ্ট বিকৃত হয়েছে। দেখুনঃ The Talmud Selection, H. Polano, Pp, 150-54
# মাঝখানে সমুদ্র পার হওয়া থেকে নিয়ে সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে যাওয়ার ঘটনা বলা হয়নি। সূরা আরাফের ১৬-১৭ রুকূ’ তে এর বিস্তারিত বিবরণ এসে গেছে। সেখানে একথাও বলা হয়েছে যে, মিসর থেকে বের হয়েই সিনাই উপদ্বীপে একটি মন্দির দেখে বনী ইসরাঈল নিজেদের জন্য একজন কৃত্রিম খোদার দাবী করে বসেছিল। (তাফহীমুল কুরআন, সূরা আ’রাফ, ৯৮ টীকা )।
# সূরা বাকারার ৬ রুকূ’ ও সূরা আ’রাফের ১৭ রুকূ’ তে বলা হয়েছে, আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে শরীয়াতের নির্দেশনা দেবার জন্য চল্লিশ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। এর পর মূসা আলাইহিস সালামকে পাথরের ফলকে লিখিত বিধান দেয়া হয়েছিল।
# মান্না ও সালওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা বাকারাহ ৭৩ ও সূরা আ’রাফ ১১৯ টীকা। বাইবেলের বর্ণনা মতে মিসর থেকে বের হবার পর যখন বনী ইসরাঈল সীন মরুভূমিতে ইলীম ও সীনাইর মাঝখান দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল এবং মজুদ খাদ্য খতম হয়ে গিয়ে অনাহার অর্ধাহারের পালা শুরু হয়ে গিয়েছিল তখনই মান্না ও সালওয়ার অবতরণ শুরু হয় এবং ফিলিস্তীনের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত পুরো চল্লিশ বছর ধরে এ ধারাবাহিক কার্যক্রম চলতে থাকে। (যাত্রা পুস্তক ১৬ অধ্যায়, গণনা পুস্তক ১১: ৭-৯, যিহেশূয়৫: ১২) যাত্রা পুস্তকে মান্না ও সালওয়ার নিম্নোক্ত অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছেঃ
“পরে সন্ধ্যাকালে ভারুই পক্ষী উড়িয় আসিয়া শিবির স্থান আচ্ছাদান করিল এবং প্রাতঃকালে শিবিরের চারিদিকে শিশির পড়িল। পরে পতিত শিশির উর্দ্ধগত হইলে দেখ ভূমিস্থিত নীহারের ন্যায় সরু বীজাকার সূক্ষ্ম বস্তু বিশেষ প্রান্তরের উপর পড়িয়া রহিল। আর তাহা দেখিয়া ইস্রায়েল সন্তানগণ পরস্পর কহিল উহা কি? কেননা তাহা কি, তাহারা জানিল না।” (১৬: ১৩-১৫)
“আর ইস্রায়েল কুল ঐ খাদ্যের মান্না রাখিল, তাহা ধনিয়া বীজের মত, শুক্ল বর্ণ এবং তাহার আস্বাদ মধুমিশ্রিত পিষ্টকের ন্যায় ছিল।” (১৬: ৩১)
গণনা পুস্তকে আরো বেশী বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছেঃ “লোকেরা ভ্রমণ করিয়া তাহা কুড়াইত এবং যাঁতায় পিষিয়া কিংবা উখলিতে চূর্ণ করিয়া বহুগুণাতে সিদ্ধ করিত ও তদ্বারা পিষ্টক পুস্তক করিত; তৈলপক্ক পিষ্টকের ন্যায় তাহার আস্বাদ ছিল। রাত্রিতে শিবিরের উপরে শিশির পড়িলে ঐ মান্না তাহার উপরে পড়িয়া থাকিত।” (১১: ৮-৯)
এটাও ছিল একটি মু’জিযা। কারণ চল্লিশ বছর পরে বনী ইসরাঈল যখন খাদ্যের প্রাকৃতিক উপায়-উপকরণ লাভ করলো তখন খাদ্য সরবরাহের এ ধারাটি বন্ধ করে দেয়া হলো। এখন ঐ এলাকায় বাবুই পাখির প্রাচুর্য নেই এবং মান্নাও কোথাও পাওয়া যায় না। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী বনী ইসরাঈল যে এলাকায় চল্লিশ বছর মরুচারী জীবন যাপন করেছিল গবেষক ও অনুসন্ধানকারীরা সেই সমগ্র এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন। কোথাও তারা মান্নার সাক্ষাত পাননি। তবে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদেরকে বোকা বানাবার জন্য অবশ্যি মান্নার হালুয়া বিক্রি করে থাকে।
# মাগফিরাতের জন্য রয়েছে চারটি শর্ত। এক, তওবা। অর্থাৎ বিদ্রোহ, নাফরমানী অথবা শিরক ও কুফরী থেকে বিরত থাকা। দুই, ঈমান। অর্থাৎ আল্লাহ ও রসূল এবং কিতাব ও আখেরাতকে সাচ্চা দিলে মেনে নেয়া। তিন, সৎকাজ। অর্থাৎ আল্লাহ ও রসূলের বিধান অনুযায়ী ভালো কাজ করা। চার, সত্যপথাশ্রয়ী হওয়া। অর্থাৎ সত্য-সঠিক পথে অবিচল থাকা এবং তারপর ভুল পথে না যাওয়া।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
যখন তারা মূসা (عليه السلام) ও আল্লাহর এ সমস্ত নিদর্শনাবলী দেখতে পেল তখন তারা বুঝতে পারল যে, এটা জাদু নয়, বরং এটা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ প্রদত্ত মু‘জিযা। তখন তারা সাথে সাথে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং বলল যে, আমরা মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম। তখন ফির‘আউন তাদের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বলল যে, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা ঈমান নিয়ে আসলে। সুতরাং শাস্তিস্বরূপ আমি তোমাদের বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ একপার্শ্বের হাত আর অন্যপার্শ্বের পা কেটে ফেলব। আর অবশ্যই তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডে শূলবিদ্ধ করব।
যেমন ফির‘আউন বলেছিল:
(ققَالَ اٰمَنْتُمْ لَھ۫ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَکُمْﺆ اِنَّھ۫ لَکَبِیْرُکُمُ الَّذِیْ عَلَّمَکُمُ السِّحْرَﺆ فَلَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَﹽ لَاُقَطِّعَنَّ اَیْدِیَکُمْ وَاَرْجُلَکُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّکُمْ اَجْمَعِیْنَ)
“ফির‘আউন বলল: ‘আমি তাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাতে ঈমান আনলে? সে তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিখিয়েছে। শীঘ্রই তোমরা এর পরিণাম জানবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত এবং তোমাদের পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব এবং তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করবই।’’ (সূরা শু‘আরা ২৬:৪৯)
এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ১২৩-১২৪ নং আয়াতেও আলোচনা রয়েছে।
তখন জাদুকররা বলল: আমাদের নিকট যে স্পষ্ট বিধান এসেছে তার ওপর ও আমাদের রবের ওপর আমরা কখনো তোমাকে প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি তোমার ইচ্ছা মত যে শাস্তি দেয়ার দিতে থাক। আমরা আমাদের রবের প্রতি ঈমান আনলাম যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন। যেমন তাদের উক্তি:
(قَالُوْا لَا ضَيْرَ ز إِنَّآ إِلٰي رَبِّنَا مُنْقَلِبُوْنَ)
“তারা বলল: ‘কোন ক্ষতি নেই, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করব।” (সূরা শু‘আরা ২৬:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(قَالُوْآ إِنَّآ إِلٰي رَبِّنَا مُنْقلِبُوْنَ ج وَمَا تَنْقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ اٰمَنَّا بِاٰيٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَا۬ءَتْنَا ط رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ )
“তারা বলল: ‘আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব। ‘তুমি তো আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো শুধু এজন্য যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনে ঈমান এনেছি যখন সেটা আমাদের নিকট এসেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান কর এবং মুসলমানরূপে আমাদেরকে মৃত্যু দাও।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:১২৫-১২৬)
কেননা যারা অপরাধী হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে তারা তো তথায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর তারা তথায় মরবেও না আবার বাঁচবেও না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ ج لَا يُقْضٰي عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَا ط كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ ج )
“আর যারা কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও হালকা করা হবে না। আমি এরূপই শাস্তি দিয়ে থাকি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে।” (সূরা ফাতির ৩৫:৩৬)
পক্ষান্তরে যারা সৎ কাজ করবে ও ঈমান নিয়ে আসবে আর এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তাদের জন্য থাকবে উচ্চ মর্যাদা। আর তারা তথায় এমন জান্নাতে প্রবেশ করবে যা চিরস্থায়ী এবং যার নিচে দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنّٰتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا لا خٰلِدِيْنَ فِيْهَا لَا يَبْغُوْنَ عَنْهَا حِوَلًا )
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের উদ্যান, সেথায় তারা স্থায়ী হবে, তা হতে স্থানান্তর কামনা করবে না।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:১০৭-১০৮)
সুতরাং মানুষের অন্তরে যখন ঈমান প্রবেশ করে তখন যে কোন কিছু প্রতিহত করতে পারে, সেটা যত বড় হুমকি বা শাস্তিই হোক। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফির‘আউনের জাদুকর বাহিনী। তারা সত্য উপলদ্ধি করার পর ঈমান আনতে বিলম্ব করেনি এমনকি মর্মন্তুদ শাস্তিও তাদেরকে ঈমান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৭৪-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এটা প্রকাশ্যভাবে জানা যাচ্ছে যে, যাদুকররা ঈমান আনয়নের পর ফিরাউনকে যে সব উপদেশ দিয়েছিল, এই আয়াতগুলি ওরই অন্তর্ভুক্ত। তারা তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করছে এবং তার নিয়ামত রাজির লোভ দেখাচ্ছে। তারা তাকে বলছে যে, জাহান্নামীদের বাসস্থান জাহান্নাম, যেখানে মৃত্যু তো কখনো হবেই না, কিন্তু জীবনও হবে খুবই কষ্টপূর্ণ, মৃত্যু অপেক্ষাও কঠিনতর। যেমন আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “না মৃত্যু আসবে, না শাস্তি হালকা করা হবে, কাফিরদেরকে আমি এরূপ ভাবেই শাস্তি দিতে থাকি।” (৩৫:৩৬) অন্য জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওটা উপেক্ষা করবে যে নিতান্ত হতভাগ্য। যে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সেখানে সে মরবেও না বাঁচবেও না।” (৮৭:১১-১৩) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “জাহান্নামবাসী বলবেঃ হে জাহান্নামের রক্ষক! তুমি প্রার্থনা কর যেন আল্লাহ তাআলা তাড়াতাড়ি আমাদের মৃত্যুদান করেন।” তখন তিনি উত্তরে বলবেনঃ “ না তোমরা আর মৃত্যুবরণ করবে, না এর থেকে বের হতে পারবে।”
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রকৃত জাহান্নামী তো জাহান্নামে পড়েই থাকবে। সেখান তাদের মৃত্যু হবে, না তারা সুখের জীবন লাভ করবে। তবে এমন লোকও হবে যাদেরকে তাদের পাপের প্রতিফল হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে যেখানে তারা পুড়ে কয়লার মত হয়ে যাবে। অতঃপর শাফাআ’তে অনুমতির পরে তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তারপর তাদেরকে বেহেশতের ধারে বিক্ষপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হবে। জান্নাতীদেরকে বলা হবেঃ “তাদের উপর পানি ঢেলে দাও।” তোমরা যেমন নদীর ধারে জমিতে বীজ অংকুরিত হতে দেখে থাকো। তেমনিভাবে তারা অংকুরিত হয়ে যাবে।” একথা শুনে একটি লোক বলে উঠলোঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) এমন উদাহরণ দিলেন যে, যেন তিনি কিছু দিন জঙ্গলে বসবাস করেছেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) অন্য হাদীসে আছে যে, খুৎবায়। এই আয়াতটি পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) একথা বলেছিলেন।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে মু’মিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তারা উঁচু প্রাসাদ বিশিষ্ট জান্নাত লাভ করবে। হযরত উবায়দা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে একশ’ টি প্রকোষ্ঠ রয়েছে প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মাঝে ৩৩টা ব্যবধান রয়েছে যতটা ব্যবধান রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। সবচেয়ে উপরে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখান থেকে চারটি নহর প্রবাহিত হয়ে থাকে। ওর ছাদ হচ্ছে রহমানের (দয়াময় আল্লাহর) আরশ। তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করলে জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
ইয়াযীদ ইবনু আবি মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ “বলা হতো যে, বেহেশতে একশটি শ্রেণী রয়েছে। প্রতি দু’ শ্রেণীর মাঝে এতোটা দুরত্ব রয়েছে যতটা দুরত্ব রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। তাতে ইয়াকূত, মণিমুক্তা এবং অলংকারও রয়েছে। প্রত্যেক বেহেশতে আমীর বা নেতা রয়েছে যার নেতৃত্ব অন্যেরা স্বীকার করে থাকে। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃইল্লিয়্যিনে অবস্থানকারীদের এমনই দেখা যায় যেমন তোমরা আকাশের তারকাগুলি দেখে থাকো। জনগণ বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই উঁচু শ্রেণীগুলি তো নবীদের (আঃ) জন্যেই বিশিষ্ট হবে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তারা হবে ঐ সব লোক যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নবীদেরকে (আঃ) সত্যবাদীরূপে স্বীকার করে নেয়।” সুনানের হাদীসে এও রয়েছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ওটা হলো স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র। যারা অপবিত্রতা, পাপকার্য এবং শিরক ও কুফরী হতে দূরে থাকে। যারা এক আল্লাহরই ইবাদত করে এবং রাসূলদের (আঃ) আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। তাদেরই জন্যে রয়েছে এই লোভনীয় ও হিংসার যোগ্য বাসস্থান।
৭৭-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বলেন যে, ফিরাউন যেন বানী ইসরাঈলকে তার দাসত্ব হতে মুক্তি দিয়ে মূসার (আঃ) হাতে সমর্পণ করে দেয়, মূসার (আঃ) এই কথাও ফিরাউন প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই, মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে (আঃ) নির্দেশ দেনঃ “তুমি রাত্রেই তাদের অজান্তে অতিসন্তর্পণে বানী ইসরাঈলকে নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে পড়।”যেমন এর বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনকারীমের বহু জায়গায় রয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তাআলার নির্দেশানুসারে হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে মিসর হতে হিজরত করেন। সকালে ফিরাউনের লোকেরা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যখন দেখে যে, শহরে একজনও বানী ইসরাঈল নেই তখন তারা ফিরাউনকে এ সংবাদ দেয়। এ খবর শুনে ফিরাউন ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং চতুর্দিক হতে সৈন্য এনে একত্রিত করার নির্দেশ দেয়। রাগে গরগর করে সে বলেঃ “এই সামান্য দলটি আমাদেরকে চরম ব্যতিব্যস্ত করে ফেলেছে! আমি আজ তাদের সকলকেই তরবারী দ্বারা কচু কাটা করে ছাড়বো।” সূর্য উঠতে উঠতেই সেনাবাহিনী এসে একত্রিত হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ ফিরাউন স্বয়ং সমস্ত সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবনে বেরিয়ে পড়লো। বানী ইসরাঈল সমুদ্রের ধারে পৌঁছেই ফিরাউন ও তার সেনাবাহিনীকে পিছনে দেখতে পায়। হতবুদ্ধি হয়ে তারা তাদের নবীকে (আঃ) বলেঃ ” জনাব! এখন উপায় কি? সামনে সমুদ্র এবং পিছনে ফিরাউনের বাহিনী!” হযরত মূসা (আঃ) উত্তরে বলেনঃ “ভয়ের কোন কারণ নেই। আমার প্রতিপালকই আমাকে সাহায্য করবেন। তিনি এখনই আমাকে পথ দেখিয়ে দিবেন।” তৎক্ষণাৎ ওয়াহী আসলোঃ “সমুদ্রে তোমার লাঠি দ্বারা আঘাত কর। ওটা সাথে সাথেই সরে গিয়ে তোমাদের জন্যে পথ করে দেবে।” হযরত মূসা (আঃ) তখন সমুদ্রে লাঠি দ্বারা আঘাত করলেন এবং বললেনঃ “আল্লাহর নির্দেশক্রমে সরে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে ওর পানি পাথরের মত এদিকে ওদিকে জমে গেল এবং মধ্য দিয়ে পথ হয়ে গেল।
এদিকে ওদিকে পানির বড় বড় পাহাড়ের মত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং প্রখর ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়ে পথকে একেবারে শুষ্ক যমীনের মত করে দিলো সুতরাং না ফিরাউনীদের হাতে ধরা পড়ার ভয় থাকলো, না সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার আশংকা রইলো। ফিরাউন ও তার সেনাবাহিনী এই অবস্থা অবলোকন করছিল। ফিরাউন তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলোঃ “তোমরাও এই রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যাও।” একথা বলে স্বয়ং সে তার সেনাবাহিনীসহ ঐ পথে নেমে পড়লো। তারা নামা মাত্রই পানিকে প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো এবং চোখের পলকে সমস্ত ফিরাউনীকে ডুবিয়ে দেয়া হলো। সমুদ্রের তরঙ্গমালা তাদেরকে গোপন করে দিলো। এখানে যে বলা হয়েছে সমুদ্রের যে জিনিস তাদেরকে ঢেকে ফেলার ঢেকে ফেললো’ একথা বলার কারণ এই যে, এটা সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত বিষয়, নাম নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ সমুদ্রের তরঙ্গ তাদেরকে ঢেকে ফেললো। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি উৎপাটিত আবাস ভূমিকে উল্টিয়ে নিক্ষেপ করেছিলেন।ওকে আচ্ছন্ন করলো কী সর্বগ্রাসী শাস্তি!” (৫৩:৫৩-৫৪) কোন কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি হলাম অবুন নাজম্। আর আমার কবিতা আমার কবিতাই।” অর্থাৎ আমার কবিতা সুপরিচিত ও সুপ্রসিদ্ধ।
মোট কথা, ফিরাউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ প্রদর্শন করে নাই। দুনিয়া যেমন সে আগে বেড়ে তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছিল, অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিনেও সে সামনে থেকে তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে যা অত্যন্ত জঘন্য স্থান।
৮০-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলের উপর যে বড় বড় ইহান করেছিলেন তাই তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। ওগুলির মধ্যে একটি এই যে, তাদেরকে তিনি তাদের শত্রুদের কবল হতে মুক্তি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বরং তিনি তাদের শত্রুদেরকে তাদের চোখের সামনে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। তাদের একজনও রক্ষা পায় নাই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তোমাদের চোখের সামনে ফিরাউনীদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।” (২:৫০)
সহীহ্ বুখারীতে রয়েছে যে, মদীনার ইয়াহুদীদেরকে আশূরার দিন (১০ই মহররম) রোযা রাখতে দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। তারা উত্তরে বলেঃ “এই দিনেই আল্লাহ তাআলা হযরত মূসাকে (আঃ) ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তখন তিনি বলেনঃ “তোমাদের তুলনায় হযরত মূসা (আঃ) তো আমাদেরই বেশী নিকটে।” অতঃপর তিনি মুসলমানদেরকে ঐদিন রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহকে (আঃ) তূর পাহাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি সেখানে গমন করেন। আর। এদিকে তার অনুপস্থিতির সুযোগে বনী ইসরাঈল গো-বৎসের পূজা শুরু করে দেয়। এর বর্ণনা সত্বরই সামনে আসছে ইনশা আল্লাহ! অনুরূপভাবে আল্লাহ বানী ইসরাঈলের উপর আর একটি অনুগ্রহ এই করেন যে, তাদের আহার্য হিসেবে তাদেরকে মান্না’ ও ‘সালওয়া দান করেন। সূরায়ে বাকারা প্রভৃতির তাফসীরে এর পূর্ণ বর্ণনা গত হয়েছে। মান্না ছিল এক প্রকার মিষ্ট জিনিস, যা তাদের জন্যে আকাশ হতে অবতীর্ণ হতো। আর সালওয়া ছিল এক প্রকারের পাখী, যা আল্লাহর হুকুমে তাদের সামনে এসে পড়তো। ওগুলি হতে তারা। একদিনের খাদ্য পরিমাণে গ্রহণ করতো।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমার প্রদত্ত এই আহার্য হতে ভাল ভাল বস্তু তোমরা আহার কর, কিন্তু সীমালংঘন করো না। বিনা প্রয়োজনে বা। হারাম পন্থায় তা গ্রহণ করো না। অন্যথায় আমার ক্রোধ অবতারিত হবে। আর যার উপর আমার ক্রোধ অবতারিত হয়, বিশ্বাস রেখো যে, সে বড়ই হতভাগ্য।
হযরত শাফী ইবনু মা’নে (রঃ) বলেন যে, জাহান্নামের মধ্যে একটি উঁচু জায়গা নির্মিত আছে, যেখান হতে কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। জিঞ্জীর রাখার জায়গায় পর্যন্ত পৌঁছতে তার চল্লিশ বছর সময় লাগে। এই আয়াতের অর্থ এটাই যে, সে গর্তে পড়ে গেল।
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার উপর যে তাওবা করে,ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে।
বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা গো-বৎসের পূজা করেছিল, তাদের তাওবার পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মোট কথা, কেউ যদি কুফরী, শিরক, পাপকার্য এবং নাফরমানী করার পর আল্লাহর ভয়ে তা পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে অন্তরে বিশ্বাস রাখা এবং সৎ আমল করা অপরিহার্য কর্তব্য। আর থাকতে হবে সৎপথে এবং কোন সন্দেহ পোষণ করতে হবে না। সুন্নাতে রাসূল (সঃ) এবং সাহাবীদের (রাঃ) রীতি নীতির অনুসরণ করতে হবে এবং এতে সওয়াবের আশা রাখতে হবে।
এখানে (আরবী) শব্দটি খবরের (বিধেয়ের) উপর বিন্যস্ত করার জন্যে আনয়ন করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবী)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#912)
[ وَ اِنِّیۡ لَغَفَّارٌ لِّمَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اہۡتَدٰی ﴿۸۲﴾
But indeed, I am the Perpetual Forgiver of whoever repents and believes and does righteousness and continues in guidance.]
Sura:20
Sura: Taa-Haa
Ayat: 74-82
www.motaher21.net
20:74
اِنَّہٗ مَنۡ یَّاۡتِ رَبَّہٗ مُجۡرِمًا فَاِنَّ لَہٗ جَہَنَّمَ ؕ لَا یَمُوۡتُ فِیۡہَا وَ لَا یَحۡیٰی ﴿۷۴﴾
Indeed, whoever comes to his Lord as a criminal – indeed, for him is Hell; he will neither die therein nor live.
The Magicians admonish Fir`awn
The clear intent of this is to be a completion of what the magicians admonished Fir`awn with. They warned him of the vengeance of Allah and His eternal and everlasting punishment. They also encouraged him to seek Allah’s eternal and endless reward.
They said,
إِنَّهُ مَن يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا
Verily, whoever comes to his Lord as a criminal,
This means, whoever meets Allah on the Day of Judgment while being a criminal.
فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَاإ يَمُوتُ فِيهَا وَلَاإ يَحْيى
then surely, for him is Hell, wherein he will neither die nor live.
This is similar to Allah’s statement,
لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِى كُلَّ كَفُورٍ
Neither will it have a complete killing effect on them so that they die, nor shall its torment be lightened for them. Thus do We requite every disbeliever! (35:36)
Allah also said,
وَيَتَجَنَّبُهَا الاٌّشْقَى
الَّذِى يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرَى
ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَا
But it will be avoided by the wretched, who will enter the great Fire. There he will neither die nor live. (87:11-13)
وَنَادَوْاْ يمَـلِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ قَالَ إِنَّكُمْ مَّـكِثُونَ
And they will cry:”O Malik (Keeper of Hell)! Let your Lord made an end of us.”
He will say:”Verily, you shall abide forever.” (43:77)
Imam Ahmad bin Hanbal recorded that Abu Sa`id Al-Khudri said that the Messenger of Allah said,
أَمَّا أَهْلُ النَّارِ الَّذِينَ هُمْ أَهْلُهَا فَإِنَّهُمْ لَا يَمُوتُونَ فِيهَا وَلَا يَحْيَوْنَ وَلكِنْ أُنَاسٌ تُصِيبُهُمُ النَّارُ بِذُنُوبِهِمْ فَتُمِيتُهُمْ إِمَاتَةً حَتَّى إِذَا صَارُوا
فَحْمًا أُذِنَ فِي الشَّفَاعَةِ فَجِيءَ بِهِمْ ضَبَايِرَ ضَبَايِرَ فَبُثُّوا عَلَى أَنْهَارِ الْجَنَّةِ
فَيُقَالُ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ أَفِيضُوا عَلَيْهِمْ
فَيَنْبُتُونَ نَبَاتَ الْحِبَّةِ تَكُونُ فِي حَمِيلِ السَّيْل
The dwellers of Hellfire, who are those who deserve it, they will not die in it, nor will they be living. Rather, they will be a people who will be punished by the Fire due to their sins. It will be gradually killing them and devouring them until they become burnt coals.
Then, intercession will be allowed and they will be brought (out of Hell) group by group and they will be spread on the rivers of Paradise.
It will then be said, “O people of Paradise, pour (water) over them.”
Then, they will start to grow like the growing of a seed on the muddy banks of a flowing river.
A man among the people said, “It is as if the Messenger of Allah lived in the desert.”
This is how Muslim recorded this narration in his Sahih.
Concerning Allah’s statement
20:75
وَ مَنۡ یَّاۡتِہٖ مُؤۡمِنًا قَدۡ عَمِلَ الصّٰلِحٰتِ فَاُولٰٓئِکَ لَہُمُ الدَّرَجٰتُ الۡعُلٰی ﴿ۙ۷۵﴾
But whoever comes to Him as a believer having done righteous deeds – for those will be the highest degrees [in position]:
وَمَنْ يَأْتِهِ مُوْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ
But whoever comes to Him (Allah) as a believer, and has done righteous good deeds,
whoever meets his Lord on the Day of Judgment as a believer in his heart, then verily, his intentions in his heart will be affirmed to be true by his statements and deeds.
فَأُوْلَيِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَى
for such are the high ranks,
Paradise, which has the highest levels, the most tranquil rooms and the nicest homes.
Imam Ahmad reported from Ubadah bin As-Samit that the Prophet said,
الْجَنَّةُ مِايَةُ دَرَجَةٍ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالاَْرْضِ
وَالْفِرْدَوْسُ أَعْلَاهَا دَرَجَةً وَمِنْهَا تَخْرُجُ الاْاَنْهَارُ الاْاَرْبَعَةُ وَالْعَرْشُ فَوْقَهَا فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْس
Paradise has one hundred levels and between each level is a distance like the distance between the sky and the earth.
Al-Firdaws is the name of the highest of its levels. From it springs the four rivers and the Throne is above it. Therefore, when you ask Allah, then ask Him for Al-Firdaws.
This narration was also recorded by At-Tirmidhi.
In the Two Sahihs it is recorded that the Messenger of Allah said,
إِنَّ أَهْلَ عِلِّيِّينَ لَيَرَوْنَ مَنْ فَوْقَهُمْ كَمَا تَرَوْنَ الْكَوْكَبَ الْغَابِرَ فِي أُفُقِ السَّمَاءِ لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ
قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الاْاَنْبِيَاءِ
قَالَ بَلى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ رِجَالٌ امَنُوا بِاللهِ وَصَدَّقُوا الْمُرْسَلِين
Verily, the people of the `Illiyyin will see those who are above them just as you see the fading star in the horizon of the sky, due to the different status of virtue between them.
The people said, “O Messenger of Allah, these are the dwellings of the Prophets.”
He replied, (Of course. And I swear by the One Whom my soul is in His Hand, (it is for) men who had faith in Allah and they believed the Messengers.
In the Sunan collections this narration is mentioned with the additional wording,
وَإِنَّ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ لَمِنْهُمْ وَأَنْعَمَا
And verily Abu Bakr and Umar are of them and they will be most favored.
His saying
20:76
جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ وَ ذٰلِکَ جَزٰٓؤُا مَنۡ تَزَکّٰی ﴿٪۷۶﴾
Gardens of perpetual residence beneath which rivers flow, wherein they abide eternally. And that is the reward of one who purifies himself.
جَنَّاتُ عَدْنٍ
Adn Gardens,
meaning established as a residence.
It is merely used here in reference to the high ranks mentioned previously.
تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الاَْنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا
under which rivers flow, wherein they will abide forever,
meaning that they will abide in it for eternity.
وَذَلِكَ جَزَاء مَن تَزَكَّى
and such is the reward of those who purify themselves.
One who purifies himself from dirt, filth and associating partners with Allah. This is the person who worships Allah alone, without ascribing partners to Him, and he follows the Messengers in the good they came with all that they claim
20:77
وَ لَقَدۡ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰی مُوۡسٰۤی ۬ۙ اَنۡ اَسۡرِ بِعِبَادِیۡ فَاضۡرِبۡ لَہُمۡ طَرِیۡقًا فِی الۡبَحۡرِ یَبَسًا ۙ لَّا تَخٰفُ دَرَکًا وَّ لَا تَخۡشٰی ﴿۷۷﴾
And We had inspired to Moses, “Travel by night with My servants and strike for them a dry path through the sea; you will not fear being overtaken [by Pharaoh] nor be afraid [of drowning].”
The Children of Israel leave Egypt
Allah tells,
وَلَقَدْ أَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي
And indeed We revealed to Musa:”Travel by night with My servants,
Allah, the Exalted, informs that He commanded Musa to journey at night with the Children of Israel, when Fir`awn refused to release them and send them with Musa. He was to take them away from Fir`awn’s captivity.
Allah expounds upon this in Surahs other than this noble Surah.
Musa left with the Children of Israel, and when the people of Egypt awoke in the morning they found that not a single one of them remained in Egypt. Fir`awn became extremely furious. He sent callers into all of the cities to gather together his army from all of his lands and provinces. He said to them,
إِنَّ هَـوُلاءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيلُونَ
وَإِنَّهُمْ لَنَا لَغَأيِظُونَ
Verily, these indeed are but a small band. And verily, they have done what has enraged us. (26:54-55)
Then when he gathered his army and organized his troops, he set out after them and they followed them at dawn when the sun began to rise.
فَلَمَّا تَرَاءَا الْجَمْعَانِ
And when the two hosts saw each other. (26:61)
This means that each person of the two parties was looking at the other party.
فَلَمَّا تَرَاءَا الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَـبُ مُوسَى إِنَّا لَمُدْرَكُونَ
قَالَ كَلَّ إِنَّ مَعِىَ رَبِّى سَيَهْدِينِ
The companions of Musa said:”We are sure to be overtaken.”
(Musa) said:”Nay, verily, with me is my Lord. He will guide me.” (26:61-62)
Musa stopped with the Children of Israel and the sea was in front of them and Fir`awn was behind them. Then, at that moment, Allah revealed to Musa,
فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقًا فِي الْبَحْرِ يَبَسًا
And strike a dry path for them in the sea.
So Musa struck the sea with his stick and he said, “Split for me, by the leave of Allah.”
Thus, it split, and each separate part of the water became like a huge mountain.
Then, Allah sent a wind to the land of the sea and it burned the soil until it became dry like the ground that is on land.
For this reason Allah said,
فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقًا فِي الْبَحْرِ يَبَسًا لاَّ تَخَافُ دَرَكًا
and strike a dry path for them in the sea, fearing neither to be overtaken…
This means being caught by Fir`awn.
وَلَا تَخْشَى
nor being afraid.
meaning, “Do not be afraid of the sea drowning your people.”
Then, Allah, the Exalted, said
20:78
فَاَتۡبَعَہُمۡ فِرۡعَوۡنُ بِجُنُوۡدِہٖ فَغَشِیَہُمۡ مِّنَ الۡیَمِّ مَا غَشِیَہُمۡ ﴿ؕ۷۸﴾
So Pharaoh pursued them with his soldiers, and there covered them from the sea that which covered them,
فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُودِهِ فَغَشِيَهُم مِّنَ الْيَمِّ
Then Fir`awn pursued them with his hosts, but the sea (Al-Yamm) completely overwhelmed them,
Al-Yamm means the sea.
مَا غَشِيَهُمْ
and covered them up.
meaning, covered them up with a thing that was well-familiar to them in such a situation, as Allah states;
وَالْمُوْتَفِكَةَ أَهْوَى
فَغَشَّـهَا مَا غَشَّى
And He destroyed the overthrown cities. So there covered them that which did cover. (53:53-54)
وَأَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهُ وَمَا هَدَى
20:79
وَ اَضَلَّ فِرۡعَوۡنُ قَوۡمَہٗ وَ مَا ہَدٰی ﴿۷۹﴾
And Pharaoh led his people astray and did not guide [them].
And Fir`awn led his people astray, and he did not guide them.
As Fir`awn pursued them into the sea, misled his people and did not lead them to the path of correct guidance, likewise, he will go ahead of his people on the Day of Resurrection, and will lead them in to the Hellfire. And evil indeed is the place to which they are led
20:80
یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ قَدۡ اَنۡجَیۡنٰکُمۡ مِّنۡ عَدُوِّکُمۡ وَ وٰعَدۡنٰکُمۡ جَانِبَ الطُّوۡرِ الۡاَیۡمَنَ وَ نَزَّلۡنَا عَلَیۡکُمُ الۡمَنَّ وَ السَّلۡوٰی ﴿۸۰﴾
O Children of Israel, We delivered you from your enemy, and We made an appointment with you at the right side of the mount, and We sent down to you manna and quails,
A Reminder for the Children of Israel of Allah’s Favors upon Them
Allah reminds the Children of Israel;
يَا بَنِي إِسْرَايِيلَ قَدْ أَنجَيْنَاكُم مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّورِ الاْاَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَى
O Children of Israel! We delivered you from your enemy, and We made a covenant with you on the right side of the Mount, and We sent down to you manna and quail,
Allah reminds of His tremendous favors upon the Children of Israel and His numerous blessings. He saved them from their enemy, Fir`awn, and He relieved their eyes by drowning him and his hosts all at one time while they watched.
Allah said,
وَأَغْرَقْنَا ءَالَ فِرْعَوْنَ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
And We drowned Fir`awn people while you were looking. (2:50)
Al-Bukhari recorded that Ibn Abbas said,
“When the Messenger of Allah came to Al-Madinah, he found the Jews fasting the day of `Ashura’. Therefore he asked them about it and they said, `This is the day that Allah gave Musa victory over Fir`awn.’
Then, the Prophet said,
نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى فَصُومُوه
We have more right to Musa (than them), so fast it.
Muslim also recorded this narration in his Sahih.
Then, Allah made a covenant with Musa and the Children of Israel on the right side of the Mountain, after the destruction of Fir`awn.
This is the Mountain upon which Allah spoke to Musa and He told Musa’s people to look at it when they requested to see Allah.
It is also the same Mountain upon which Musa was given the Tawrah, while at the same time the Children of Israel began worshipping the (statue of a) calf, as Allah relates in the forth coming Ayat.
The manna and quails have previously been discussed in Surah Al-Baqarah and other Surahs.
Manna was a sweet substance that descended upon them from the sky and the quail (Salwa) was a type of bird that would fall down to them. They would fill every pot with them as ample provisions until the following day. This was a kindness and a mercy from Allah upon them. It was a manifestation of Allah’s good treatment of them. For this reason Allah says
20:81
کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَ لَا تَطۡغَوۡا فِیۡہِ فَیَحِلَّ عَلَیۡکُمۡ غَضَبِیۡ ۚ وَ مَنۡ یَّحۡلِلۡ عَلَیۡہِ غَضَبِیۡ فَقَدۡ ہَوٰی ﴿۸۱﴾
[Saying], “Eat from the good things with which We have provided you and do not transgress [or oppress others] therein, lest My anger should descend upon you. And he upon whom My anger descends has certainly fallen.”
كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِي
Eat of the Tayyibat wherewith We have provided you, and commit no transgression or oppression therein, lest My anger should justly descend on you.
This means, “Eat from this sustenance which I have provided for you, and do not transgress against My sustenance by taking it without necessity or you will be opposing what I have commanded you.”
فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِي
lest My anger should justly descend on you.
This means, “I will become angry with you.”
وَمَن يَحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِي فَقَدْ هَوَى
And he on whom My anger descends, he is indeed perished.
Ali bin Abi Talhah related that Ibn Abbas said,
“This means that he will indeed be made miserable.”
Concerning Allah’s statement
20:82
وَ اِنِّیۡ لَغَفَّارٌ لِّمَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اہۡتَدٰی ﴿۸۲﴾
But indeed, I am the Perpetual Forgiver of whoever repents and believes and does righteousness and then continues in guidance.
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَامَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا
And verily, I am indeed forgiving to him who repents, believes and does righteous good deeds,
meaning, “Whoever turns to Me in repentance, then I will accept his repentance regardless of whatever sin he did.”
Allah, the Exalted, even accepts the repentance of the Children of Israel who worshipped the calf.
Concerning Allah’s statement,
تَابَ
who repents,
This means to turn away from what one was involved in of disbelief, associating partners with Allah, disobedience of Allah or hypocrisy.
Concerning Allah’s statement,
وَامَنَ
(and believes),
This means the person’s belief in his heart.
وَعَمِلَ صَالِحًا
(and does righteous deeds),
his action with his bodily limbs.
Concerning Allah’s statement,
ثُمَّ اهْتَدَى
and then Ihtada.
Ali bin Abi Talhah related that Ibn Abbas said,
“This means that he then does not doubt.”
Qatadah said,
“This means he adheres to Islam until he dies.”
We see here that there is a specific order in which these things are presented.
This is similar to Allah’s saying,
ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَوَاصَوْاْ بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْاْ بِالْمَرْحَمَةِ
Then he became one of those who believed and recommended one another to perseverance and patience and recommended one another to pity and compassion. (90:17
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran