(বই#৯১৭) [“إِبْلِيسَ” ‌‌ ‌ ” لاِإدَمَ” “ইবলিস” ও “আদম”] সূরা:- ত্বাহা। সুরা:২০ ১১৫-১২২ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯১৭)
[“إِبْلِيسَ” ‌‌ ‌ ” لاِإدَمَ”
“ইবলিস” ও “আদম”]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
১১৫-১২২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২০:১১৫
وَ لَقَدْ عَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اٰدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِیَ وَ لَمْ نَجِدْ لَهٗ عَزْمًا۠

আমি এর আগে আদমকে একটি হুকুম দিয়েছিলাম কিন্তু সে ভুলে গিয়েছে এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ় সংকল্প পাইনি।
২০:১১৬
وَ اِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰٓئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْۤا اِلَّاۤ اِبْلِیْسَ١ؕ اَبٰى

স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো, তারা সবাই সিজদা করলো কিন্তু একমাত্র ইবলীস অস্বীকার করে বসলো।
২০:১১৭
فَقُلْنَا یٰۤاٰدَمُ اِنَّ هٰذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَ لِزَوْجِكَ فَلَا یُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقٰى

এ ঘটনায় আমি আদমকে বললাম, “দেখো, এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, এমন যেন না হয় যে, এ তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দেয় এবং তোমরা বিপদে পড়ে যাও।
২০:১১৮
اِنَّ لَكَ اَلَّا تَجُوْعَ فِیْهَا وَ لَا تَعْرٰىۙ

এখানে তো তুমি এ সুবিধে পাচ্ছো যে, তুমি না অভুক্ত ও উলংগ থাকছো।

২০:১১৯

وَ اَنَّكَ لَا تَظْمَؤُا فِیْهَا وَ لَا تَضْحٰى

এবং না পিপাসার্ত ও রৌদ্রক্লান্ত হচ্ছো।”

২০:১২০
فَوَسْوَسَ اِلَیْهِ الشَّیْطٰنُ قَالَ یٰۤاٰدَمُ هَلْ اَدُلُّكَ عَلٰى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَ مُلْكٍ لَّا یَبْلٰى

কিন্তু শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল, বলতে থাকলো, “হে আদম! তোমাকে কি এমন গাছের কথা বলে দেবো যা থেকে অনন্ত জীবন ও অক্ষয় রাজ্য লাভ করা যায়?”
২০:১২১
فَاَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَ طَفِقَا یَخْصِفٰنِ عَلَیْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِ١٘ وَ عَصٰۤى اٰدَمُ رَبَّهٗ فَغَوٰى۪ۖ

শেষ পর্যন্ত দু’জন (স্বামী-স্ত্রী) সে গাছের ফল খেয়ে বসলো। ফলে তখনই তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং দু’জনাই জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেকে ঢাকতে লাগলো। আদম নিজের রবের নাফরমানী করলো এবং সে সঠিক পথ থেকে সরে গেল।
২০:১২২
ثُمَّ اجْتَبٰهُ رَبُّهٗ فَتَابَ عَلَیْهِ وَ هَدٰى

তারপর তার রব তাকে নির্বাচিত করলেন, তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথ নির্দেশনা দান করলেন।
১১৫-১২২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# যেমন এর আগে বলা হয়েছে, এখান থেকে আর একটা আলাদা ভাষণ শুরু হয়েছে। সম্ভবত ওপরের ভাষণের পর কোন এক সময় এটি নাযিল হয়েছিল এবং বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্যের কারণে এর সাথে মিলিয়ে একই সূরার মধ্যে উভয়কে একত্র করা হয়েছে। বিষয়বস্তুর সাদৃশ্য একাধিক। যেমনঃ

একঃ কুরআন যে ভুলে যাওয়া শিক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তা সেই একই শিক্ষা যা মানব জাতিকে তার সৃষ্টির সূচনায় দেয়া হয়েছিল, আল্লাহ‌ যা মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন এবং যা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য কুরআনের পূর্বে বারবার “স্মারক” আসতে থেকেছে।

দুইঃ শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ বারবার এ শিক্ষা ভুলে যায় এবং সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই বারবার সে এ দুর্বলতা দেখিয়ে আসছে। তাই মানুষ বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে থাকার মুখাপেক্ষী।

তিনঃ মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য পুরোপুরি নির্ভর করে তার এমন আচরণের ওপর যা আল্লাহ‌ প্রেরিত এই “স্মারকের” সাথে সে করবে। সৃষ্টির সূচনালগ্নে একথা পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছিল। আজ এটা কোন নতুন কথা বলা হচ্ছে না যে, এর অনুসরণ করলে গোমরাহী ও দুর্ভাগ্য থেকে সংরক্ষিত থাকবে অন্যথায় দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে বিপদে পড়বে।

চারঃ একটি জিনিস হচ্ছে, ভুল, সংকল্পের অভাব ও ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা। এরই কারণে মানুষ তার চিরন্তন শত্রুশয়তানের পরোচনায় পড়ে এবং ভুল করে বসে। মানুষের মনে ভুলের অনুভূতি জাগার সাথে সাথেই সে যদি নিজের দৃষ্টিভংগী ও কর্মনীতি সংশোধন করে নেয় এবং অবাধ্যতা পরিহার করে আনুগত্যের সাথে ফিরে আসে তাহলেই সে ক্ষমা লাভ করতে পারে। দ্বিতীয় জিনিসটি হচ্ছে, বিদ্রোহ ও সীমালঙ্ঘন এবং ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহর মোকাবিলায় শয়তানের দাসত্ব করা। ফেরাউন ও সামেরী এ কাজ করেছিল। এর ক্ষমার কোন সম্ভাবনা নেই। ফেরাউন ও সামেরী নিজেদের যে পরিণতি ভোগ করেছে এর পরিণতিও তাই হবে। যে ব্যক্তি এ কর্মনীতি অবলম্বন করবে সে-ই এ পরিণতির শিকার হবে।

# আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা এর আগে সূরা বাকারাহ, সূরা আ’রাফে (দুজায়গায়), সূরা হিজর, সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা কাহফে আলোচিত হয়েছে। এখানে সপ্তমবার এর পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। প্রত্যেক জায়গায় বর্ণনা পরম্পরার সাথে এর সম্পর্কে ভিন্নতর এবং প্রত্যেক জায়গায় এ সম্পর্কের ভিত্তিতেই এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করা হয়েছে। যে জায়গায় আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘটনার যে অংশের সম্পর্ক রয়েছে সে জায়গায় সেটুকুই বর্ণনা করা হয়েছে, অন্য জায়গায় তা পাওয়া যাবে না অথবা বর্ণনাভংগী সামান্য আলাদা হবে। পুরো ঘটনাটি বা এর পূর্ণ তত্ত্ব অনুধাবন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গাগুলোই পড়ে নেয়া উচিত। আমি সব জায়গায়ই এর সম্পর্ক ও সম্বন্ধ এবং এর ফলাফল টীকায় বর্ণনা করে দিয়েছি।

# তিনি পরবর্তী পর্যায়ে এ নির্দেশের সাথে যে আচরণ করেন তা অহংকার ও ইচ্ছাকৃত বিদ্রোহের ভিত্তিতে ছিল না বরং গাফলতি ও ভুলের শিকার হবার এবং সংকল্প ও ইচ্ছার দুর্বলতার কারণে ছিল। তিনি এ ধরনের কোন চিন্তা ও সংকল্পের ভিত্তিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করেননি যে, আমি আল্লাহর পরোয়া করতে যাবো কেন, তাঁর হুকুম হয়েছে তাতে কি হয়েছে, আমার মন যা চাইবে আমি তা করবো, আল্লাহ‌ আমার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন কেন? এর পরিবর্তে বরং তাঁর আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণ এই ছিল যে, তিনি আল্লাহর হুকুম মনে রাখার চেষ্টা করেননি, তিনি তাঁকে কি বুঝিয়েছিলেন তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছাশক্তি খুব বেশী মজবুত ছিল না যার ফলে যখন শয়তান তাঁকে প্ররোচিত করতে এলো তখন তিনি পূর্বাহ্ণে প্রদত্ত আল্লাহর সতর্কবাণী ও উপদেশ (যার আলোচনা এখনই সামনে আসছে) স্মরণ করতে পারলেন না এবং শয়তান প্রদত্ত লোভ ও লালসার কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হলেন না।

“আমি তার মধ্যে সংকল্প পাইনি” এ বাক্যের অর্থ কেউ কেউ এরূপ নিয়েছেন যে, “আমি তার মধ্যে নাফরমানীর সংকল্প পাইনি” অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছেন ভুল করে করেছেন, নাফরমানী করার সংকল্প নিয়ে করেননি। কিন্তু খামাখা এ ধরনের সংকোচ করার কোন প্রয়োজন নেই। একথা বলতে হলে لَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا عَلَى الْعِصْيَان বলা হতো, শুধুমাত্র لَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا বলা হতো না। আয়াতের শব্দাবলী পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, সংকল্পের অভাব মানে হুকুম মেনে চলার সংকল্পের অভাব, নাফরমানী করার সংকল্পের অভাব নয়। তাছাড়া পরিবেশ পরিস্থিতি ও পূর্বাপর বক্তব্যের প্রতি নজর দিলে পরিষ্কার অনুভূত হয় যে, এখানে আল্লাহ‌ আদম আলাইহিস সালামের ভূমিকা ও মর্যাদা কালিমামুক্ত করার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন না বরং তিনি একথা বলতে চান যে, তিনি যে মানবিক দুর্বলতা প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন এবং যে কারণে শুধু তিনি একাই নন বরং তাঁর সন্তানরাও আল্লাহর আগাম সতর্কবাণী সত্ত্বেও নিজের শত্রুর ফাঁদে পা দিয়েছিল এবং পরবর্তীকালে দিয়েই চলেছে সেটি কি ছিল। উপরন্তু যে ব্যক্তিই খোলা মনে এ আয়াতটি পড়বে তার মনে প্রথমে অর্থটিই ভেসে উঠবে যে, “আমি তার মধ্যে হুকুমের আনুগত্য করার সংকল্প বা মজবুত ইচ্ছাশক্তি পাইনি।” দ্বিতীয় অর্থটি তার মনে ততক্ষণ আসবে না যতক্ষণ না সে আদম আলাইহিস সালামের সাথে গোনাহের সম্পর্কে স্থাপন করা অসঙ্গত মনে করে আয়াতের অন্য কোন অর্থ খোঁজা শুরু করে দেবে। এ অবস্থায় এ অভিমত আল্লামা আলুসীও তাঁর তাফসীরে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

لكن لا يخفى عليك ان هذا التفسير غير متبادر ولاكثير المناسبة للمقام-

“একথা তোমার কাছে গোপন থাকা উচিত নয় যে, আয়াতের শব্দাবলী শুনে এ ব্যাখ্যা সঙ্গে সঙ্গেই মনে উদয় হয় না এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথেও এটা তেমন কোন সম্পর্ক রাখে না।” (দেখুন রুহুল মা’আনী, ১৬ খন্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা)

# আদম আলাইহিস সালামকে যে আসল হুকুম দেয়া হয়েছিল তা এখানে বর্ণনা করা হয়নি। সে হুকুমটি হচ্ছে এই যে, “এ বিশেষ গাছটির ফল খেয়ো না।” কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এ হুকুমটি বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে যেহেতু বলার আসল বিষয়টি হচ্ছে শুধুমাত্র এতটুকু যে, মানুষ কিভাবে আল্লাহর আগাম সতর্কবাণী ও উপদেশ দান সত্ত্বেও নিজের পরিচিতি শত্রুর কুমন্ত্রণায় প্রভাবিত হয় এবং তার এ দুর্বলতা কিভাবে তার থেকে এমন কাজ করিয়ে নেয় যা তার নিজের স্বার্থ বিরোধী হয়, তাই আল্লাহ‌ আসল হুকুম উল্লেখ করার পরিবর্তে এখানে কেবল মাত্র তার সাথে হযরত আদমকে (আ) যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল সেটির উল্লেখ করেছেন।

# শত্রুতার প্রদর্শনী তখনই হয়ে গিয়েছিল। আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম স্বচক্ষেই দেখে নিয়েছিলেন ইবলীস তাদেরকে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল এবং পরিষ্কার বলে দিয়েছিল।

أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ “আমি তার চাইতে ভালো, তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছো এবং তাকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে।” ( আ’রাফঃ ১২ এবং সাদঃ ৭৬) أَرَأَيْتَكَ هَذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ “একটু দেখো তো, এ সত্তাটিকে তুমি আমার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছো।” أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا এখন কি আমি তাকে সিজদা করবো যাকে তুমি বানিয়েছো মাটি থেকে? (বনী ইসরাঈলঃ ৬১-৬২ ) তারপর শুধুমাত্র প্রকাশ্যে নিজের ঈর্ষা প্রকাশ করেই সে ক্ষান্ত থাকেনি বরং আল্লাহর কাছে এই বলে নিজের জন্য অবকাশও চেয়ে নিয়েছিল যে, আমাকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব এবং তার অযোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ দিন, আমি তাকে পথভ্রষ্ট করে দেখিয়ে দেবো। সে আপনার কেমন ধরনের প্রতিনিধি। সূরা আ’রাফ, হিজর ও বনী ইসরাঈলে তার এই চ্যালেঞ্জ উচ্চারিত হয়েছে এবং সামনের দিকে সূরা সাদেও আসছে। তাই আল্লাহ‌ যখন বললেন, এ তোমাদের শত্রু তখন এটা নিছক একটা অজানা সংবাদ ছিল না বরং এমন একটা জিনিস ছিল যা ঠিক সময় মতো স্বামী-স্ত্রী উভয়ই স্বচক্ষে দেখে নিয়েছিল এবং স্বকর্ণে শুনেছেনও।

# এভাবে উভয়কে একথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, যদি প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে তোমরা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করো তাহলে তোমরা এখানে থাকতে পারবে না এবং তোমাদের যেসব নিয়ামত দান করা হয়েছে সেসব তোমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে।

# জান্নাত থেকে বের হবার পর মানুষকে যে বিপদের মুখোমুখি হতে হবে তার বিবরণ এখানে দেয়া হয়েছে। এ সময় জান্নাতের বড় বড় পূর্ণাংগ ও শ্রেষ্ঠ নিয়ামতগুলো উল্লেখ করার পরিবর্তে তার চারটি মৌলিক নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে তোমাদের জন্য খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও গৃহের ব্যবস্থা সরকারীভাবে করা হচ্ছে। এর কোন একটি অর্জন করার জন্য তোমাদের পরিশ্রম করতে ও প্রচেষ্টা চালাতে হচ্ছে না। এ থেকে আপনাআপনি একথা আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যদি তারা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সরকারী নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে জান্নাত থেকে বের হয়ে তারা এখানকার বড় বড় নিয়ামত তো দূরের কথা মৌলিক জীবন উপকরণও লাভ করবে না। নিজেদের প্রাথমিক প্রয়োজনের জন্যও তারা প্রচেষ্টা চালাতে এবং জীবনপাত করতে বাধ্য হবে। মাথার ঘাম পায়ে না ফেলা পর্যন্ত একবেলার আহারেরও সংস্থান করতে পারবে না। দুবেলা দু’মুঠো আহারের চিন্তা তাদের মনোযোগ, সময় ও শক্তির এমন বৃহত্তম অংশ টেনে বের করে নিয়ে যাবে যে, কোন উন্নতর উদ্দেশ্যের জন্য কিছু করার অবকাশ ও শক্তি তাদের থাকবে না।

# এখানে কুরআন পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছে যে, আদম ও হাওয়ার মধ্যে আসলে যাকে শয়তান প্ররোচিত করেছিল তিনি হাওয়া ছিলেন না বরং ছিলেন আদম আলাইহিস সালাম। যদিও সূরা আ’রাফের বক্তব্যে দু’জনকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং সেখানে দু’জনকেই প্ররোচিত বলা হয়েছে কিন্তু শয়তানের প্ররোচনার গতিমুখ ছিল মূলত হযরত আদমেরই দিকে। অন্যদিকে বাইবেলের বর্ণনা মতে সাপ প্রথমে মহিলা অর্থাৎ হযরত হাওয়ার সাথে কথা বলে এবং হাওয়া তার স্বামীকে প্ররোচিত করে তাঁকে গাছের ফল খাওয়ান। (আদি পুস্তকঃ৩)

# সূরা আ’রাফে আমরা শয়তানের কথাবার্তার আরো যে বিস্তারিত বিবরণ পাই তা হচ্ছে এই যে, وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ “আর সে বললো, তোমাদের রব তোমাদেরকে এ গাছটি থেকে শুধুমাত্র এ জন্য বিরত রেখেছেন, যাতে তোমরা দু’জন ফেরেশতা অথবা চিরঞ্জীব না হয়ে যাও।” (২০ আয়াত)
#অন্য কথায় নাফরমানীর প্রকাশ ঘটার সাথে সাথেই সরকারী ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে যেসব জীবনোপকরণ দেয়া হয়েছিল সেগুলো তাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হলো। আর এর প্রথম প্রকাশ ঘটলো পোশাক ছিনিয়ে নেবার মধ্যে দিয়েই। খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থান থেকে বঞ্চিত হওয়া তো ছিল পরবর্তীকালের ব্যাপার। ক্ষুধা ও পিপাসা লাগলে তবেই না খাদ্য ও পানীয়ের চাহিদা বুঝা যেতো এবং বাসস্থান থেকে বের করে দেবার ব্যাপারটিও ছিল পরবর্তীকালীন ব্যাপার। কিন্তু নাফরমাণীর প্রথম প্রভাব পড়লো সরকারী পোশাকের ওপর। কারণ তা সঙ্গে সঙ্গেই খুলে নেয়া হয়েছিল।

# এখানে আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে যে মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল তার প্রকৃতি স্বরূপ অনুধাবন করা উচিত। তিনি আল্লাহকে নিজের স্রষ্টা ও রব বলে জানতেন এবং অন্তর দিয়ে তা মানতেন। জান্নাতে তিনি যেসব জীবনোপকরণ লাভ করেছিলেন সেগুলো সব সময় তার সামনে ছিল। শয়তানের হিংসা ও শত্রুতার জ্ঞানও তিনি সরাসরি লাভ করেছিলেন। আল্লাহ‌ তাঁকে হুকুম দেবার সাথে সাথেই বলে দিয়েছিলেন, এ হচ্ছে তোমার শত্রু, তোমাকে নাফরমানী করতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবে ফলে এজন্য তোমাকে এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। শয়তান তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল যে, আমি তাকে পথভ্রষ্ট করতো এবং তার শিকড় উপড়ে ফেলবো। এসব সত্ত্বেও শয়তান যখন তার সামনে স্নেহশীল উপদেশ দাতা ও কল্যাণকামী বন্ধুর বেশে এসে তাঁকে একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থার (চিরন্তন জীবন ও অন্তহীন শাসন কর্তৃত্ব) লোভ দেখালো তখন তার লোভ দেখানোর মোকাবিলায় তিনি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। তার পা পিছলে গেলো। অথচ এখানে আল্লাহর প্রতি তাঁর বিশ্বাসে কোন পার্থক্য দেখা দেয়নি এবং তাঁর ফরমান আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়, এ ধরনের কোন ভাবনাও তার মনে জাগেনি। শয়তানী লালসাবৃত্তির আওতাধীনে যে একটি তাৎক্ষণিক আবেগ তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল তা তাঁকে ভুলের মধ্যে নিক্ষেপ করলো এবং আত্মসংযমের বাঁধন ঢিলে হবার সাথে সাথেই তিনি আনুগত্যের উন্নত স্থান থেকে গোনাহের নিম্নপংকে নেমে গেলেন। এ “ভুল” ও সংকল্প বিহীনতার উল্লেখ কাহিনীর শুরুতেই করা হয়েছিল। এ আয়াতের শুরুতে এরই ফলশ্রুতি হিসেবে নাফরমানী ও ভ্রষ্টতার কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টির সূচনাতেই মানুষের এ দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল এবং পরবর্তীতে এমন কোন যুগ আসেনি যখন তার মধ্যে এ দুর্বলতা পাওয়া যায়নি।

# শয়তানের মতো আল্লাহর দরবার থেকে বহিষ্কৃত করেননি। আনুগত্যের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যেখানে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন সেখানে তাঁকে পড়ে থাকতে দেননি বরং উঠিয়ে আবার নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন এবং নিজের খেদমতের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্রোহকারী এবং অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রকাশকারী ভৃত্যের সাথে এক ধরনের আচরণ করা হয়। শয়তান ছিল এক হকদার এবং এমন প্রত্যেক বান্দাও এর হকদার হয়ে পড়ে যে নিজের রবের নাফরমানী করে এবং তাঁকে চ্যালেঞ্জ কে সামনে দাঁড়ায়। আর এক ধরনের আচরণ করা হয় এমন বিশ্বস্ত বন্দার সাথে যে নিছক “ভুল” ও “সংকল্পহীনতা”র কারণে অপরাধ করে বসে এবং তারপর সজাগ হবার সাথে সাথেই নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়। হযরত আদম ও হাওয়ার সাথে এ আচরণ করা হয়েছিল। কারণ নিজেদের ভুলের অনুভূতি হবার সাথে সাথেই তারা বলে উঠেছিলেনঃ

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি এবং যদি তুমি আমাদের প্রতি করুণা না করো তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।” (আ’রাফঃ২৩)

# শুধু মাফই করেননি বরং ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথও বাতলে দিয়েছেন এবং তার ওপর চলার পদ্ধতিও শিখিয়েছেন।

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*শয়তানের প্রকরােচনায় আদম(আ.)-এর ভুল ও পরিণতি : এরপর আসছে আদম(আ.)-এর কিসসা, আল্লাহর সাথে তিনি যে ওয়াদা করেছিলেন তা রক্ষা করতে তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি চিরস্থায়ীভাবে বেঁচে থাকার ধোকাপূর্ণ আশ্বাসের কাছে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, আর এই কারণেই তিনি সেই ধোঁকাবাজ মরদূদ শয়তানের প্ররােচনাপূর্ণ কথায় কান দিয়েছিলেন। অথচ তাকে পৃথিবীতে খলীফা (প্রতিনিধি) হিসেবে নিযুক্ত করার পূর্বে আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিলাে এটা এক কঠিন পরীক্ষা, আর এ ঘটনা আদম সন্তানদের শিক্ষার জন্যে জানানাে হয়েছে। অতপর ইবলীসের এই ধোকাবাজির কাজকে উদাহরণ হিসেবে রেখে দিয়েছেন যাতে করে তারা নিসন্দেহভাবে বুঝতে পারে যে, আল্লাহর ইচ্ছা বিরােধী যে কোনাে কথা বা ইচ্ছা, যে কোনাে দিক থেকেই তা আসুক না কেন- তাই শয়তানী প্ররােচনা ও ধোকা, যার ফল ধ্বংসই ধ্বংস। অতএব আদম(আ.)-এর এ ঘটনা থেকে যেন তারা শিক্ষা নেয় এবং আর যেন ধোকা না খায়। তারপর পরীক্ষা যখন শেষ হলো, আদম(আ.) অনুতপ্ত হলেন এবং আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে মিনতি জানালেন, যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাঁকে পরবর্তীতে সত্য সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন। পবিত্র কোরআনে বর্নিত ঘটনাবলীর মাঝে পরস্পর একটা যােগসূত্র ও সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। এখানে আদম(আ.) সম্পর্কিত ঘটনাটি আলােচিত হয়েছে রসূলুল্লাহ(স.) সম্পর্কিত সেই ঘটনার পর, যেখানে আমরা রসূলুল্লাহ(স.)-কে দেখতে পাই যে, তিনি ভুলে যাওয়ার আশংকায় কোরআনের আয়াতগুলাে মুখস্থ করার ব্যাপারে তাড়াহুড়াে করছেন। এখানে আদম(আ.)-এর ঘটনায় ভুলে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হচ্ছে, সাথে সাথে আলােচ্য সূরায় এ কথাও বলা হচ্ছে যে, আল্লাহর মনােনীত ও প্রিয় বান্দাদের প্রতি তার বিশেষ অনুগ্রহ ও সাহায্য থাকে। কাজেই আদম(আ.) আল্লাহর একজন মনােনীত ও সত্য পথের অনুসারী বান্দা হিসেবে তার অনুগ্রহের হকদার। আর সে কারণেই, আল্লাহ তায়ালা আদম(আ.)-এর ত্রুটি বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন। এরপর কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে। এই দৃশ্যে আমরা আদম(আ.)-এর বাধ্য ও অবাধ্য সন্তানদের পরিণতি দেখতে পাই। এই দৃশ্যের মাধ্যমে মনে হচ্ছে যেন প্রতিটি প্রাণী তার কর্মফল ভােগ করার জন্যে পার্থিব জগত হতে পরকালের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে। এখন আমরা মূল ঘটনার প্রসংগে ফিরে যাচ্ছি। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি এর আগে আদমকে… দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ পাইনি।'(আয়াত ১১৫) আদম(আ.)-এর কাছ থেকে আল্লাহ তায়ালা যে প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন সেটা হচ্ছে, সব ধরনের ফলমূল খাবে, তবে একটি বিশেষ ফল বা বৃক্ষ খেতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়ােজন আছে। কারণ, এর মাধ্যমে মানবীয় ইচ্ছাশক্তির নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তিত্ব দৃঢ়করণ, রিপুর দমন ইত্যাদি মহৎ উদ্দেশ্য সধিত হয়। সাথে এর মাধ্যমে মানুষ নিজেকে প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে ততােটুকু মুক্ত রাখতে পারে যতােটুকু তার আত্মার উন্নতি ও স্বাধীন বিকাশের জন্যে প্রয়ােজন। ফলে প্রবৃত্তি ও রিপুর দাসত্ব থেকে তার আত্মা মুক্ত থাকবে। আর এটাই হচ্ছে মানব উন্নতি নিরূপণের নির্ভুল মাপকাঠি। যার মাঝে প্রবৃত্তি ও রিপুকে দমন করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা যতাে বেশী থাকবে সে মানব ততােই উন্নতির উচ্চতর পর্যায়ে অবস্থান করবে। অপরদিকে যার মাঝে এই গুণের যতাে বেশী অভাব দেখা দেবে সে ততােই পশুত্বের নিম্নতর স্তরে চলে যাবে। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা- যিনি মানব জাতির স্রষ্টা ও প্রতিপালক, মানুষের মাঝে ইচ্ছা শক্তি দান করেছেন এবং এই ইচ্ছাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও দান করেছেন। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্যে এই স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির প্রয়ােজন আছে। তবে আল্লাহ তায়ালা তার সামনে ভালাে ও মন্দের পার্থক্য তুলে ধরেছেন এবং প্রবৃত্তির তাড়না, শয়তানী প্ররােচনার সাথে সদিচ্ছা ও আল্লাহর সাথে করা প্রতিজ্ঞার মাঝে যে প্রচন্ড দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে সে কথাও তিনি সুস্পষ্টভাবে তাকে জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আসিছে পরীক্ষার পালা। প্রথম পরীক্ষা, কিন্তু এই পরীক্ষার ফলাফল কোরআনের ভাষায় নিম্নরূপ- ‘অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিলাে, আমি তার মাঝে দৃঢ়তা পাইনি’। এর পর ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এভাবে দেয়া হয়েছে, (আয়াত ১১৬-১১৯) এটা আল্লাহর অশেষ কৃপা ও অনুগ্রহ যে, তিনি আদমকে তার প্রকৃত শত্রুর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, সাবধান করে দিয়েছিলেন। আদমকে সিজদা করার আল্লাহর নির্দেশ যে অমান্য করতে পারে সে যে, আদমের চরম শত্রু, এতে কোনােই সন্দেহ নেই। সে কারণেই আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘সে যেন তােমাদের জান্নাত থেকে বের করে না দেয় ফলে তােমরা কষ্টে পতিত হবে।’ এই কষ্ট কিসের? এই কষ্ট হচ্ছে কাজের, পরিশ্রমের, বিতাড়নের, বিভ্রান্তির, বিচ্যুতির, উদ্বেগের, উৎকণ্ঠার, অপেক্ষার, বেদনার এবং হারানোর। জান্নাতের বাইরে এসব কষ্টই তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। অর্থাৎ, জান্নাতের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে যতােদিন তারা থাকবে ততােদিন এসব কষ্ট তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। এখানে ক্ষুধার্ত হওয়ার ভয় নেই। তৃষ্ণার্ত হওয়ার ভয় নেই। বস্ত্র হারানাের ভয় নেই। রােদে কষ্ট পাওয়ার ভয় নেই। অর্থাৎ যতােদিন পর্যন্ত এই জান্নাতের ছায়াতলে বাস করবে ততােদিন পর্যন্ত আমাদের জন্যে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হবে, কিন্তু আদম(আ.) খােদায়ী পরীক্ষার ব্যাপারে সচেতনতার অভাবে এবং চিরস্থায়ী জীবন ও ক্ষমতা লাভের মানবীয় দুর্বলতার কারণে শয়তানের চক্রান্তের শিকার হন। এই মানবীয় দুর্বলতার ছিদ্র দিয়েই তার মাঝে শয়তানের প্রবেশ ঘটে। বলা হচ্ছে, ‘কিন্তু এতাে সাবধান করা… কখনাে পতন হবে না!'(আয়াত ১২০)

*বিভ্রান্তি কেটে যাওয়ার পর আদমের প্রতিক্রিয়া : শয়তান আদম(আ.)-এর স্পর্শকাতর জায়গায়ই হাত দিয়েছিলাে। কারণ, মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। তার শক্তি সামর্থ্য ও সীমিত। কাজেই দীর্ঘ জীবন ও চিরস্থায়ী ক্ষমতার প্রতি সে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহী। এই আগ্রহের পথ ধরেই শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করতে প্রয়াস পায় । আমরা জানি, আদম(আ.)-কে মানবীয় স্বভাব ও মানবীয় দুর্বলতা দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনাে উদ্দেশ্য ও রহস্য রয়েছে যা আমাদের জ্ঞানের আওতার বাইরে। এই মানবীয় দুর্বলতার কারণেই তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ পথে পা বাড়িয়েছিলেন। ঘটনার প্রতি ইংগিত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘অতপর তারা… তাকে সঠিক পথনির্দেশ দিলেন।'(আয়াত ১২১-১২২) আলােচ্য আয়াতের বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, লজ্জাস্থান বলতে উভয়ের বাহ্যিক ও দৃষ্টি গােচর লজ্জাস্থানই বুঝানাে হয়েছে, যা পরস্পরের কাছে গােপন ছিলাে। উভয়ের কাছেই এই লজ্জাস্থান নিজেদের শরীরের সর্বাধিক গােপনীয় অংগ হিসেবে বিবেচিত ছিলাে। সে জন্যে তা উন্মুক্ত ও নিরাভরণ হয়ে পড়লে উভয়ই বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তা পুনরায় আবৃত করার জন্যে গাছের লতা পাতা ব্যবহার করে। এর দ্বারা বুঝা যায়, লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে উভয়ের মনে কামভাব জন্ম নিয়েছিলাে। কারণ, কামভাব জন্ম না নিলে সাধারণত মানুষ লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হলে কোনো প্রকার লজ্জা অনুভব করে না, এমনকি এদিকে ভ্রুক্ষেপও করে না, কিন্তু কামভাব জাগ্রত হলেই মানুষ লজ্জাস্থান সম্পর্কে সতর্ক হয় এবং তা অনাবৃত হয়ে গেলে লজ্জাবােধ করে। খুব সম্ভবত নিষিদ্ধ বৃক্ষটির ফল কামোদ্দীপক ছিল। আল্লাহ তায়ালা চাচ্ছিলেন, উভয়ের মাঝে এই কামভাব বিলম্বে জাগ্রত হােক। তাই তিনি তাদের সেই বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছিলেন। অথবা, আল্লাহর সাথে করা প্রতিজ্ঞা ভুলে যাওয়া এবং তার নির্দেশ অমান্য করার ফলে নিজেদের প্রভু ও সৃষ্টিকর্তার সাথে তাদের যে সম্পর্কচ্যুতি ঘটে, তারই অনিবার্য কারণ হিসেবে দৈহিক চাহিদার উদ্ভব ঘটে এবং এরই চরম পরিণতি হিসেবে তাদের মাঝে কামভাব জাগ্রত হয়। অথবা এমনও হতে পারে যে, যখন উভয়ের মাঝে অমর হয়ে থাকার আগ্রহ জাগে তখনই তাদের মাঝে বংশ বিস্তারের উপায় হিসেবে কামভাবও জন্ম নেয়। কারণ, সীমিত ও নির্ধারিত আয়ু অতিক্রম করে পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকার এটাই একমাত্র সহজ উপায় । তবে আলােচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় এই যা কিছু বলা হলাে তা নিতান্তই অনুমানভিত্তিক। আর অনুমানের আশ্রয় নিতে হয়েছে আলােচ্য আয়াতে বর্ণিত লজ্জাস্থান অনাবৃত হয়ে গেলাে বক্তব্যটির কারণে। আয়াতটিতে এ কথা বলা হয়নি যে, তাদের লজ্জাস্থান অনাবৃত হয়ে গেলাে । বরং বলা হয়েছে, তাদের জন্যে তাদের লজ্জাস্থান অনাবৃত হয়ে গেলে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, উভয়ের লজ্জাস্থান উভয়ের দৃষ্টির আড়ালে ছিলাে। পরে তাদের উভয়ের কামভাবের কারণে তা দৃশ্যমান হয়ে পড়লাে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, যেন শয়তান তাদের গােপন লজ্জাস্থান তাদের জন্যে প্রকাশ করে দিতে পারে। অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, তাদের পােশাক তাদের থেকে খুলে দিয়েছে যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। শয়তান যে পােশাক খুলে ফেলেছে সেটা বস্তুগত পােশাক না হয়ে কোনাে গােপন অনুভূতি হতে পারে। এমনকি তা পবিত্রতা, পাপহীনতা ও আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অনুভূতিও হতে পারে। যা হােক, এগুলাে নিতান্তই অনুমানভিত্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। এগুলাের একটিও আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত নয়। এখানে কেবল মানব জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতার বিষয়টি বােধগম্য করে তােলার জন্যেই এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অমনযােগী হওয়ার ফলে তার বিরাগভাজন হওয়ার পর পুনরায় আদম ও তাঁর স্ত্রীর ভাগ্যে আল্লাহর রহমত ও দয়া জুটে। এটা ছিলাে তাদের জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। এ প্রসংগ উল্লেখ করে আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কিন্তু তার ক্ষমা প্রার্থনার… সঠিক পথ নির্দেশ দিলেন।'(আয়াত ১২২) আল্লাহর এই অপার করুণা ও অনুগ্রহ তারা তখন লাভ করতে সক্ষম হয় যখন তারা অনুতপ্ত হয়, দুঃখিত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। তবে এই বিষয় এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এর পেছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর রহমতকে এর নিজস্ব পরিবেশেই উদ্ভাসিত করা।

 

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

 

উক্ত আয়াতগুলোতে আদম (عليه السلام)-কে আল্লাহ তা‘আলা যে ওসিয়ত ও নির্দেশ দিয়েছিলেন, শয়তান যেভাবে তাঁকে কুমন্ত্রণা দিয়ে জান্নাত থেকে তার পদস্খলন ঘটিয়েছিল তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

(وَلَقَدْ عَهِدْنَآ)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام)-কে নির্দেশ করেছিলেন জান্নাতের ঐ নির্দিষ্ট গাছের কাছে যাবে না। যেমন সূরা বাকারার ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে। আদম (عليه السلام) নির্দেশ মেনে নিয়েছিলেন এবং তা পালন করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা ভুলে যান এবং নিষিদ্ধ গাছের ফল উভয়ে খেয়ে নেন। ফলে যা হওয়ার হয়ে গেল।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা সে সময়ের কথা স্মরণ করতে বললেন যখন তিনি স্বহস্তে আদম (عليه السلام)-কে পূর্ণরূপে সৃষ্টি করে সকল কিছুর নাম শিক্ষা দিলেন এবং অন্যান্য সকলের উপর ফযীলত দিলেন তখন সকল ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন তাঁকে সিজদা করার জন্য; সকলেই সিজদা করেছে কিন্তু ইবলীস সিজদা করতে অবাধ্য হয়। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার ৩৪ নং, সূরা আ‘রাফের ১১ নং এবং সূরা হিজরে আলোচনা করা হয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام)-কে সতর্ক করে দিলেন যে, এ ইবলীস তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্র“, অতএব কোনক্রমেই যেন তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকো।

فَتَشْقٰی অর্থ কষ্ট, পরিশ্রম ইত্যাদি। অর্থাৎ জান্নাতে খাওয়া, পান করা, পরা ও থাকার জন্য কোন পরিশ্রম করতে হয় না। কিন্তু যদি শয়তানের প্ররোচনায় জান্নাত থেকে বের হও তাহলে থাকা, খাওয়া ও পরার জন্য কষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় যে, কষ্ট ও পরিশ্রমের কথা শুধু আদম (عليه السلام)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে বলা হয়নি। অথচ নিষিদ্ধ কাজ হতে উভয়কে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। এর কারণ হল প্রথমত: মূল সম্বোধনযোগ্য আদমই ছিলেন। দ্বিতীয়ত: পরিশ্রম ও কষ্ট করে মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার দায়িত্ব কেবল পুরুষের, নারীর নয়। আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে এ মেহনত ও পরিশ্রম থেকে বাঁচিয়ে “ঘরের রানী” র মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে সেই আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সম্মানকে দাসত্বের বেড়ি মনে করা হ্েচ্ছ। যার থেকে মুক্তি লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে আন্দোলন করছে। শয়তানের প্ররোচনা কত প্রভাবশালী, আর এসব নারীরা কতই না নির্বোধ।

তারপর জান্নাতে যে সকল নিয়মত দান করেছেন তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

ইবলীস শয়তান তাদেরকে জান্নাতে চিরস্থায়ী বসবাসের প্ররোচনা দিয়ে গাছের ফল খাওয়াতে সক্ষম হল। এমনকি যাতে বিশ্বাস করতে কোন দ্বিধা না হয় সেজন্য সে শপথ করে বলেছিল, আমি তোামদের কল্যাণকামী। ফল খাওয়ার সাথে সাথে জান্নাতী পোশাক খুলে গেল। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ২২ নং আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ

এ সম্পর্কে সূরা বাকারাহ ও সূরা আ‘রাফে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং যে শয়তান আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (عليه السلام)-কে প্ররোচনা দিয়ে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে তার থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। আমরা যেন তার প্ররোচনায় পড়ে জাহান্নামের দিকে পা না বাড়াই। বিশেষ করে নারীদেরকে শয়তান সহজেই প্ররোচিত করতে সক্ষম হয়, তাদেরকে প্ররোচিত করে সমাজে অনেক অশালীন কার্যকলাপ করে থাকে। তাই নারীদের বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া আবশ্যক। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(یٰبَنِیْٓ اٰدَمَ لَا یَفْتِنَنَّکُمُ الشَّیْطٰنُ کَمَآ اَخْرَجَ اَبَوَیْکُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ یَنْزِعُ عَنْھُمَا لِبَاسَھُمَا لِیُرِیَھُمَا سَوْاٰتِھِمَاﺚ اِنَّھ۫ یَرٰٿکُمْ ھُوَ وَقَبِیْلُھ۫ مِنْ حَیْثُ لَا تَرَوْنَھُمْﺚ اِنَّا جَعَلْنَا الشَّیٰطِیْنَ اَوْلِیَا۬ئَ لِلَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ)‏

“হে বানী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই ধোঁকায় না ফেলে- যেভাবে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আদম-হাওয়া) সে জান্নাত হতে বহিষ্কার করেছিল, তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। যারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক করেছি।” (সূরা আ‘রাফ ৭:২৭)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্র“, তাই তার থেকে সর্বদা সাবধান থাকতে হবে।
২. জান্নাতে মানুষ ক্ষুধার্ত হবে না, নগ্ন হবে না, পিপাসিত হবে না এবং রৌদ্রেক্লিষ্টও হবে না।
৩. অপরাধ করার পর ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১৫-১২২ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত ইবুন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ইনসান’কে (মানুষকে) ইনসান বলার কারণ এই যে, তাকে সর্বপ্রথম যে হুকুম দেয়া হয়েছিল তা সে ভুলে গিয়েছিল। হযরত মুজাহিদ (রঃ) ও হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, ঐ হুকুম হযরত আদম (আঃ) ভুলে গিয়েছিলেন। এরপর হযরত আদমের (আঃ) মর্যাদার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। সূরায়ে বাকারা সূরায়ে আরাফ, সূরায়ে হিজর এবং সূরায়ে কাফে শয়তানের (হযরত আদমকে আঃ) সিজদা না করার ঘটনার পূর্ণ তাফসীর গত হয়েছে। সূরায়ে (আরবী) এও এর বর্ণনা আসবে ইনশা আল্লাহ। এ সব সূরায় হযরত আদমের (আঃ) জন্মবৃত্তান্ত, অতঃপর তার আভিজাত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশার্থে ফেরেশতাদেরকে তাঁর প্রতি সিজদাবনত। হওয়ার নির্দেশ দান এবং ইবলীসের গোপন শত্রুতা প্রকাশ ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। সে অহংকার করতঃ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে। ঐ সময় হযরত আদমকে বুঝানো হয়ঃ “দেখো, এই শয়তান তোমার ও তোমার স্ত্রী। হযরত হাওয়ার (আঃ) শত্রু। সে যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, অন্যথায় তোমরা বঞ্চিত হয়ে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত হবে এবং কঠিন বিপদে পড়ে যাবে। তোমাদেরকে জীবিকা অন্বেষণে মাথা ঘামাতে হবে। এখানে তো তোমরা বিনা পরিশ্রমে ও বিনা কষ্টে জীবিকা প্রাপ্ত হচ্ছে। এখানে যে তোমরা ক্ষুধার্ত থাকবে এটা অসদ্ধ এবং উলঙ্গ থাকবে এটাও অসম্ভ। এই ভিতরের ও বাইরের কষ্ট হতে এখানে বেঁচে আছ। আর এখানে না তোমরা আভ্যন্তরীণ ভাবে পিপাসার তীব্রতায় শাস্তি পাচ্ছ, না বাহ্যিকভাবে রৌদ্রের প্রখরতায় শাস্তি পাচ্ছ। যদি শয়তান তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলে তবে তোমাদের থেকে এই আরাম ও শান্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং তোমরা বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদে ও কষ্টের সম্মুখীন হয়ে পড়বে।” কিন্তু শেষে তারা শয়তানের ফাদে পড়েই যান। সে তাদেরকে শপথ করে বলেঃ “আমি তোমাদের শুভাকাংখী।” পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “তোমরা জান্নাতের সব গাছেরই ফল খেতে থাকো। কিন্তু সাবধান! এই গাছটির নিকটেও যেয়ো না। কিন্তু শয়তান তাঁদেরকে মিষ্টি কথায় এমন ভাবে ভুলিয়ে দেয় যে, শেষ পর্যন্ত তারা ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। সে প্রতারণা করে তাদেরকে বলেঃ “যে এই গাছের ফল খেয়ে নেয় সেই এখানেই চিরকাল অবস্থান করে।”

সত্যবাদী ও সত্যায়িত রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ায় আরোহী একশ’ বছর চলতে থাকবে, তথাপি তা শেষ হবে না। ঐ বৃক্ষের নাম হলো ‘শাজারাতুল খুলদ।’ (এই হাদীস আবুদ দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

তারা দুজন ঐ নিষিদ্ধ গাছটির ফল খাওয়া মাত্রই তাদের পরিধেয় পোশাক খসে পড়ে ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ উলঙ্গ হয়ে যায় এবং লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে।

হযরত উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত আদমকে (অঃ) গোধূম বর্ণ, দীর্ঘ দেহ এবং ঘন চুল বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছিলেন। দেহ খেজুরের গাছের সমান দীর্ঘ ছিল। নিষিদ্ধ গাছের ফল যেমনই খেয়েছেন তেমনই পরিধেয় পোশাক ছিনিয়ে নিয়েছেন। লজ্জাস্থানের দিকে নযর পড়া মাত্রই শরমে এদিক ওদিক লুকাতে থাকেন। একটি গাছে চুল জড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি চুল ছুটাবার চেষ্টা করলেন আল্লাহ তাআলা ডাক দিয়ে বলেনঃ “হে আদম (আঃ)! আমা হতে পালিয়ে যাচ্ছ?” আল্লাহর কালাম শুনে অত্যন্ত আদবের সাথে আরজ করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! লজ্জায় আমি মাথা লুকাবার চেষ্টা করছি। আচ্ছা বলুন তো, তাওবা করার পরেওকি জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারবো?” উত্তরে বলা হয়ঃ “হা।” “অতঃপর আদম (আঃ) তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বানী প্রাপ্ত হলেন আল্লাহ তাআলার এই উক্তির ভাবার্থ এটাই। (এ হাদীসটি মুসনাদে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। তবে এ রিওয়াইয়াতটি মুনকাতা বা ছেদ কাটা। এর মারফু হওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা হয়েছে)

যখন হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) হতে পোশাক ছিনিয়ে নেয়া হয় তখন তারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদের দেহকে আবৃত করতে থাকেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ডুমুর জাতীয় গাছের পাতা দ্বারা তারা নিজেদের লজ্জা স্থান আবৃত করেন। আল্লাহ তাআলার নাফরমানীর কারণে তারা সঠিক পথ হতে সরে পড়েন। কিন্তু অবশেষে মহান আল্লাহ তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন। তিনি তাদের তওবা কবুল করে নেন এবং নিজের বিশিষ্ট বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত আদমের (আঃ) মধ্যে পরস্পর বাক্যালাপ হয়। হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “আপনি তো আপনার পাপের কারণে সমস্ত মানুষকে জান্নাত হতে বের করেছেন এবং তাদেরকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন?” উত্তরে হযরত আদম (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! আল্লাহ তাআলা আপনাকে স্বীয় রিসালাত ও কালাম দ্বারা বিশিষ্ট মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আমাকে এমন কাজের সাথে দোষারোপ করছেন যা আল্লাহ তাআলা আমার জন্মের পূর্বেই আমার ভাগ্যে লিখে রেখেছিলেন?” অতএব, হযরত আদম (আঃ) হযরত মূসার (আঃ) অভিযোগ খণ্ডন করে বিজয়ী হলেন। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত মূসা (আঃ) হযরত আদমকে (আঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আপনাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। আর আপনার সামনে তিনি তার ফেরেশতামণ্ডলীকে সিজদা করিয়েছেন। অতঃপর তিনি আপনাকে জান্নাতে। স্থান দিয়েছিলেন। তারপর আপনার পাপের কারণে মানব জাতিকে তিনি যমীনে নামিয়ে দিয়েছেন?” জবাবে হযরত আদম (আঃ) তাঁকে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আপনাকে স্বীয় রিসালাত ও কালামের মাধ্যমে মনোনীত করেছেন। আর আপনাকে তিনি ঐ ফলক দান করেছেন যাতে সব জিনিসেরই বর্ণনা রয়েছে এবং তিনি আপনার সাথে গোপনীয়ভাবে কথা বলে আপনাকে নিজের নৈকট্য দান করেছেন। আচ্ছা বলুন তো, আল্লাহ তাআলা আমার জন্মের কতদিন পূর্বে তাওরাত লিখেছিলেন?” উত্তরে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ চল্লিশ বছর পূর্বে।” তখন হযরত আদম (আঃ) তাকে প্রশ্ন করেনঃ “আদম (আঃ) তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করলো, ফলে সে ভ্রমে পতিত হলো একথা কি আপনি তাওরাতে লিপিবদ্ধ পেয়েছেন?” জবাবে হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হা হযরত আদম (আঃ) তখন হযরত মূসাকে (আঃ) বলেনঃ “তাহলে আপনি কেন আমাকে এমন কাজের জন্যে দোষারোপ করছেন যা আল্লাহ তাআলা আমার জন্মেরও চল্লিশ বছর পূর্বে আমার ভাগ্যে লিখে দিয়েছিলেন?” সুতরাং এই বিতর্কে হযরত আদম (আঃ) হযরত মূসার (আঃ)। উপর বিজীয় হন।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#917)
[“إِبْلِيسَ” ‌‌ ‌ ” لاِإدَمَ”
“Iblees” V “Adam”]
Sura:20
Sura: Taa-Haa
Ayat: 115-122
www.motaher21.net

20:115

وَ لَقَدۡ عَہِدۡنَاۤ اِلٰۤی اٰدَمَ مِنۡ قَبۡلُ فَنَسِیَ وَ لَمۡ نَجِدۡ لَہٗ عَزۡمًا ﴿۱۱۵﴾٪

And We had already taken a promise from Adam before, but he forgot; and We found not in him determination.

 

The Story of Adam and Iblis

Allah tells,

وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى ادَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا

And indeed We made a covenant with Adam before, but he forgot, and We found on his part no firm willpower.

Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas said,

“Verily, man was named Insan only because he was given a covenant, but he forgot it (Nasiya).”

Ali bin Abi Talhah reported the same from Ibn Abbas.

Mujahid and Al-Hasan said that he forgot means,

“He abandoned it.”

Concerning Allah’s statement

20:116

وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی ﴿۱۱۶﴾

And [mention] when We said to the angels, “Prostrate to Adam,” and they prostrated, except Iblees; he refused.

 

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَإيِكَةِ اسْجُدُوا لاِإدَمَ

And when We said to the angels:”Prostrate yourselves to Adam.”

He, Allah mentions how Adam was honored and what respect was given to him. He mentions how He favored him over many of those whom He created.

A discussion of this story has already preceded in Surah Al-Baqarah, Surah Al-A`raf, Surah Al-Hijr and Surah Al-Kahf. It will also be mentioned again at the end of Surah Sad.

In this story, Allah mentions the creation of Adam and that He commanded the angels to prostrate to Adam as a sign of honor and respect. He also explains the enmity of Iblis for the Children of Adam and for their father, Adam, before them.

Due to this Allah says,

فَسَجَدُوا إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى

They prostrated themselves (all) except Iblis; he refused.

This means that he refrained from prostrating and became arrogant

20:117

فَقُلۡنَا یٰۤـاٰدَمُ اِنَّ ہٰذَا عَدُوٌّ لَّکَ وَ لِزَوۡجِکَ فَلَا یُخۡرِجَنَّکُمَا مِنَ الۡجَنَّۃِ فَتَشۡقٰی ﴿۱۱۷﴾

So We said, “O Adam, indeed this is an enemy to you and to your wife. Then let him not remove you from Paradise so you would suffer.

 

فَقُلْنَا يَا ادَمُ إِنَّ هَذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَلِزَوْجِكَ

Then We said:”O Adam! Verily, this is an enemy to you and to your wife…”

here wife refers to Hawwa’.

فَلَ يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقَى

So let him not get you both out of Paradise, so that you will be distressed.

meaning, `Do not be hasty in doing something that will get you expelled from Paradise, or else you will be fatigued, discomforted and worried, seeking your sustenance. But here, in Paradise, you live a life of ease with no burdens and no difficulties.’

إِنَّ لَكَ أَلاَّ تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَى

20:118

اِنَّ لَکَ اَلَّا تَجُوۡعَ فِیۡہَا وَ لَا تَعۡرٰی ﴿۱۱۸﴾ۙ

Indeed, it is [promised] for you not to be hungry therein or be unclothed.

 

Verily, you will never be hungry therein nor naked.

The reason that Allah combined hunger and nakedness is because hunger is internal humiliation, while nakedness is external humiliation.

وَأَنَّكَ لَاأ تَظْمَأُ فِيهَا وَلَاأ تَضْحَى

20:119

وَ اَنَّکَ لَا تَظۡمَؤُا فِیۡہَا وَ لَا تَضۡحٰی ﴿۱۱۹﴾

And indeed, you will not be thirsty therein or be hot from the sun.”

 

And you (will) suffer not from thirst therein nor from the sun’s heat.

These two characteristics are also opposites. Thirst is the internal heat and being parched from lack of water, while the suns heat is the external heat.

فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا ادَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لاَّ يَبْلَى

20:120

فَوَسۡوَسَ اِلَیۡہِ الشَّیۡطٰنُ قَالَ یٰۤـاٰدَمُ ہَلۡ اَدُلُّکَ عَلٰی شَجَرَۃِ الۡخُلۡدِ وَ مُلۡکٍ لَّا یَبۡلٰی ﴿۱۲۰﴾

Then Satan whispered to him; he said, “O Adam, shall I direct you to the tree of eternity and possession that will not deteriorate?”

 

Then Shaytan whispered to him, saying:”O Adam! Shall I lead you to the Tree of Eternity and to a kingdom that will never waste away!’

It has already been mentioned that he caused them to fall through deception.

وَقَاسَمَهُمَأ إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّـصِحِينَ

And he swore by Allah to them both:”Verily, I am one of the sincere well-wishers for you both.” (7:21)

It has already preceded in our discussion that Allah took a promise from Adam and his wife that although they could eat from every fruit, they could not come near a specific tree in Paradise. However, Iblis did not cease prodding them until they both had eaten from it. It was the Tree of Eternity (Shajarat Al-Khuld). This meant that anyone who ate from it would live forever and always remain.

A Hadith has been narrated which mentions this Tree of Eternity. Abu Dawud At-Tayalisi reported from Abu Hurayrah that the Prophet said,

إِنَّ فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِايَةَ عَامٍ مَا يَقْطَعُهَا وَهِيَ شَجَرَةُ الْخُلْد

Verily, in Paradise there is a tree which a rider can travel under its shade for one hundred years and still not have passed it. It is the Tree of Eternity.

Imam Ahmad also recorded this narration.

Concerning Allah’s statement

20:121

فَاَکَلَا مِنۡہَا فَبَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ۫ وَ عَصٰۤی اٰدَمُ رَبَّہٗ فَغَوٰی ﴿۱۲۱﴾۪ۖ

And Adam and his wife ate of it, and their private parts became apparent to them, and they began to fasten over themselves from the leaves of Paradise. And Adam disobeyed his Lord and erred.

 

فَأَكَلَأ مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْاتُهُمَا

Then they both ate of the tree, and so their private parts became manifest to them,

Ibn Abi Hatim recorded that Ubayy bin Ka`b said that the Messenger of Allah said,

إِنَّ اللهَ خَلَقَ ادَمَ رَجُلً طُوَالاً كَثِيرَ شَعْرِ الرَّأْسِ كَأَنَّهُ نَخْلَةُ سَحُوقٍ فَلَمَّا ذَاقَ الشَّجَرَةَ سَقَطَ عَنْهُ لِبَاسُهُ فَأَوَّلُ مَا بَدَا مِنْهُ عَوْرَتُهُ فَلَمَّا نَظَرَ إِلَى عَوْرَتِهِ جَعَلَ يَشْتَدُّ فِي الْجَنَّةِ فَأَخَذَتْ شَعْرَهُ شَجَرَةٌ فَنَازَعَهَا فَنَادَاهُ الرَّحْمَنُ يَا ادَمُ مِنِّي تَفِرُّ فَلَمَّا سَمِعَ كَلَمَ الرَّحْمَنِ قَالَ يَا رَبِّ لَا وَلَكِنِ اسْتِحْيَاءً أَرَأَيْتَ إِنْ تُبْتُ وَرَجَعْتُ أَعَايِدِي إِلَى الْجَنَّةِ قَالَ نَعَم

Verily, Allah created Adam as a tall man with an abundance of hair on his head. He looked like a clothed palm tree. Then, when he tasted (the fruit of) the tree, his clothes fell off of him. The first thing that became exposed was his private parts. So when he noticed his nakedness, he tried to run back into Paradise. However, in the process a tree caught hold of his hair (i.e. his hair was tangled in a tree), so he ripped his hair out. Then, the Most Beneficent called out to him saying, “O Adam, are you fleeing from me!”

When he heard the Words of the Most Beneficent, he said, “No my Lord, but I am ashamed. If I repent and recant would You let me return to Paradise!”

Allah replied, “Yes.”

This is the meaning of Allah’s statement,

فَتَلَقَّى ءَادَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ

Then Adam received from his Lord Words. And his Lord pardoned him. (2:37)

However, this narration has a break in the chain of transmission between Al-Hasan and Ubayy bin Ka`b. Al-Hasan did not hear this Hadith from Ubayy.

It is questionable as to whether this narration can be correctly attributed to the Prophet.

Allah said,

وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ

And they began to cover themselves with the leaves of the Paradise for their covering.

Mujahid said,

“They patched the leaves on themselves in the form of a garment.”

Qatadah and As-Suddi both said the same.

Concerning Allah’s statement,

وَعَصَى ادَمُ رَبَّهُ فَغَوَى

ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَى

20:122

ثُمَّ اجۡتَبٰہُ رَبُّہٗ فَتَابَ عَلَیۡہِ وَ ہَدٰی ﴿۱۲۲﴾

Then his Lord chose him and turned to him in forgiveness and guided [him].

 

Thus Adam disobeyed his Lord, so he went astray. Then his Lord chose him, and turned to him with forgiveness, and gave him guidance.

Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah said that the Prophet said,

حَاجَّ مُوسَى ادَمَ فَقَالَ لَهُ أَنْتَ الَّذِي أَخْرَجْتَ النَّاسَ مِنَ الْجَنَّةِ بِذَنْبِكَ وَأَشْقَيْتَهُمْ قَالَ ادَمُ يَا مُوسَى أَنْتَ الَّذِي اصْطَفَاكَ اللهُ بِرِسَالَااتِهِ وَبِكَلَامِهِ أَتَلُومُنِي عَلَى أَمْرٍ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَنِي أَوْ قَدَّرَهُ اللهُ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَنِي قال رسول اللهصلى الله عليه وسلّم فَحَجَّ ادَمُ مُوسَى

Musa argued with Adam and he said to him, “Are you the one who got mankind expelled from Paradise because of your sin and you caused them grief!”

Adam replied, “Are you the one whom Allah chose for His Divine Messages and His direct Speech! Are you blaming me for a matter that Allah wrote upon me before He created me!”

Then, the Messenger of Allah said, (Thus, Adam defeated Musa.

This Hadith has various routes of transmission in the Two Sahihs as well as the Musnad collections

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply