(বই#৯১৮) [ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیْتَهَا١ۚ এভাবেই তো। আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে !] সূরা:- ত্বাহা। সুরা:২০ ১২৩-১২৯ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯১৮)
[ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیْتَهَا١ۚ
এভাবেই তো। আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে !]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
১২৩-১২৯ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২০:১২৩
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِیْعًۢا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ١ۚ فَاِمَّا یَاْتِیَنَّكُمْ مِّنِّیْ هُدًى١ۙ۬ فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشْقٰى

আর বললেন, “তোমরা (উভয় পক্ষ অর্থাৎ মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু থাকবে। এখন যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন নির্দেশনামা পৌঁছে যায় তাহলে যে ব্যক্তি আমার সেই নির্দেশ মেনে চলবে সে বিভ্রান্তও হবে না, দুর্ভাগ্য পীড়িতও হবে না।
২০:১২৪
وَ مَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِیْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِیْشَةً ضَنْكًا وَّ نَحْشُرُهٗ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ اَعْمٰى

আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির” (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে।”
২০:১২৫
قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِیْۤ اَعْمٰى وَ قَدْ كُنْتُ بَصِیْرًا

-সে বলবে, “হে আমার রব! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম কিন্তু এখানে আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন?”
২০:১২৬
قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیْتَهَا١ۚ وَ كَذٰلِكَ الْیَوْمَ تُنْسٰى

আল্লাহ বলবেন, “হ্যাঁ, এভাবেই তো। আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে।”
২০:১২৭
وَ كَذٰلِكَ نَجْزِیْ مَنْ اَسْرَفَ وَ لَمْ یُؤْمِنْۢ بِاٰیٰتِ رَبِّهٖ١ؕ وَ لَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَ اَبْقٰى

-এভাবেই আমি সীমালঙ্ঘনকারী এবং নিজের রবের আয়াত অমান্যকারীকে (দুনিয়ায়) প্রতিফল দিয়ে থাকি এবং আখেরাতের আযাব বেশী কঠিন এবং বেশীক্ষণ স্থায়ী।
২০:১২৮
اَفَلَمْ یَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ یَمْشُوْنَ فِیْ مَسٰكِنِهِمْ١ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی النُّهٰى۠

তাহলে কি এদের (ইতিহাসের এ শিক্ষা থেকে) কোন পথ নির্দেশ মেলেনি যে, এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত বসতিগুলোতে আজ এরা চলাফেরা করে? আসলে যারা ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধি-বিবেকের অধিকারী তাদের জন্য রয়েছে এর মধ্যে বহু নিদর্শন।
২০:১২৯
وَ لَوْ لَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَّبِّكَ لَكَانَ لِزَامًا وَّ اَجَلٌ مُّسَمًّىؕ

যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে আগেই একটি সিদ্ধান্ত না করে দেয়া হতো এবং অবকাশের একটি সময়সীমা নির্ধারিত না করা হতো, তাহলে অবশ্যই এরও ফায়সালা চুকিয়ে দেয়া হতো।

১২৩-১২৯ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন হবার মানে এই নয় যে, দুনিয়ায় তাকে অভাব অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে এই যে, এখানে মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হলেও মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সাত মহাদেশের মহাপরাক্রমশালী সম্রাট হলেও মানসিক অস্থিরতা ও অতৃপ্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে না। তার পার্থিব সাফল্যগুলো হবে হাজারো ধরনের অবৈধ কলাকৌশল অবলম্বনের ফল। এগুলোর কারণে নিজের বিবেকসহ চারপাশের সমগ্র সামাজিক পরিবেশের প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে। যার ফলে সে কখনো মানসিক প্রশান্তি ও প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবে না।

# এখানে আদম আলাইহিস সালামের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। এ কাহিনী যেভাবে এখানে এবং কুরআনের অন্যান্য স্থানে বর্ণিত হয়েছে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে আমি একথা বুঝেছি যে, (অবশ্যি আল্লাহ‌ সঠিক জানেন) আদম আলাইহিস সালামকে শুরুতে জান্নাতে যা দেয়া হয়েছিল সেটিই ছিল যমীনের আসল খিলাফত। সে জান্নাত সম্ভবত আকাশে বা এ পৃথিবীতেই বানানো হয়েছিল। মোটকথা সেখানে আল্লাহর খলীফা তথা প্রতিনিধিকে এমনভাবে রাখা হয়েছিল যে, তার খাদ্য পানীয়, পোশাক ও বাসস্থানের যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারের দায়িত্বে ছিল এবং সেবকরা (ফেরেশতাগণ) তার হুকুমের অনুগত ছিলেন।

খিলাফতের বৃহত্তর ও উন্নততর দায়িত্ব পালন করার জন্য যাতে সচেষ্ট হতে পারেন এজন্য তার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূরণের আদৌ কোন চিন্তা তাকে করতে হতো না। কিন্তু পার্থিব যোগ্যতার অবস্থা সুস্পষ্ট হবার এবং তার দুর্বলতা ও সবলতাগুলো প্রকাশিত হবার জন্য এ পদে স্থায়ী নিযুক্তির পূর্বে তার পরীক্ষা নেয়া অপরিহার্য মনে করা হয়েছে। সে জন্যই এই পরীক্ষা হয়েছে। এর ফলে যে কথা সুস্পষ্ট হয়েছে তা এই ছিল যে, লোভ ও লালসা প্রদর্শনে প্রভাবিত হয়ে এ প্রার্থীর পা পিছলে যায়। আনুগত্যের সংকল্পের ওপর সে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকেনি। বিস্মৃতি তার জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এই পরীক্ষার পর আদম ও তার সন্তারদেরকে স্থায়ী খিলাফতে নিযুক্তির পরিবর্তে পরীক্ষামূলক খিলাফত দান করা হয়েছে এবং এ পরীক্ষার জন্য একটি সময়সীমা (নির্ধারিত, সময়সীমা, কিয়ামত পর্যন্ত যার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে) নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার সময় প্রার্থীদের জন্য জীবন ধারণের সরকারী ব্যবস্থাপনা খতম করে দেয়া হয়েছে। এখন নিজেদের জীবনোপকরণ তাদের নিজেদেরই সংগ্রহ করে নিতে হবে তবে পৃথিবী ও তার সৃষ্টিসমূহের ওপর তাদের ইখতিয়ার ও ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে। এখন এরই পরীক্ষা চলছে যে, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা আনুগত্য করে কিনা এবং ভুল হয়ে গেলে অথবা লোভ ও লালসার প্রভাবে পা পিছলে গেলে সতর্কবাণী, স্মারক ও শিক্ষার প্রভাব গ্রহণ করে আবার সঠিক পথে ফিরে আসে কি না? এবং তাদের শেষ ফয়সালা কি হয়, আনুগত্য না নাফরমানী? এ পরীক্ষামূলক খিলাফতের যুদ্ধে প্রত্যেকের কর্মধারার রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে এবং যে চিরন্তন জীবন ও অবিনশ্বর রাজত্বের লোভ দেখিয়ে শয়তান হযরত আদম ও হাওয়াকে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণে প্ররোচিত করেছিল শেষ বিচার ও হিসেবের দিন যারা সফলকাম হবে তাদেরকে আবার সেই স্থায়ী খিলাফত দান করা হবে। সে সময় এ সমগ্র পৃথিবীটিকে জান্নাতে পরিণত করা হবে। আল্লাহর এমন সব সৎ বান্দা এর উত্তরাধিকারী হবে যারা পরীক্ষামূলক খিলাফতের আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে অথবা ভুল করার পর শেষপর্যন্ত আবার আনুগত্যের দিকে ফিরে এসে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেবে। জান্নাতের এই জীবনকে যারা নিছক, পানাহার করা এ আয়েশ আরাম করে বুক ফুলিয়ে চলার জীবন মনে করে তাদের ধারণা সঠিক নয়। সেখানে অনবরত উন্নতি হতে থাকবে, অবনতির কোন ভয় থাকবে না। মানুষ সেখানে আল্লাহর খিলাফতের মহান দায়িত্ব পালন করবে এবং এ পথে আবার কোন প্রকার ব্যর্থতার সম্মুখীন তাকে হতে হবে না। কিন্তু সেই উন্নতি ও সেসব কার্যক্রমের কল্পনা করা আমাদের জন্য ঠিক ততটাই কঠিন যেমন একটি শিশুর জন্য সে বড় হয়ে যখন বিয়ে করবে তখন দাম্পত্য জীবনের অবস্থা কেমন হবে একথা কল্পনা করা কঠিন হয়। এজন্যই কুরআনে জান্নাতের জীবনের শুধুমাত্র এমনসব তৃপ্তি ও স্বাদ-আহলাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলোকে দুনিয়ার ভোগ ও স্বাদ-আহলাদের সাথে তুলনা করে সেগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুটা আন্দাজ অনুমান করতে পারি।

এ সুযোগে আদম ও হাওয়ার কাহিনী বাইবেলে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তার ওপরও একবার নজর বুলিয়ে নেয়া কম আকর্ষণীয় হবে না। বাইবেলের বর্ণনা হচ্ছে, “খোদা পৃথিবীর মাটি দিয়ে আদমকে তৈরী করেন। তার নাসিকায় ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু প্রবেশ করান। এভাবে মানুষ জীবন লাভ করে। আর খোদা পূর্বদিকে এদিনে একটি উদ্যান নির্মাণ করান এবং সেখানে নিজের তৈরী করা মানুষকে রাখেন।” “আর উদ্যানের মাঝখানে জীবন বৃক্ষ ও ভালো ও মন্দের জ্ঞান দায়ক বৃক্ষও উৎপন্ন করেন।” “আর খোদা আদমকে হুকুম দেন এবং বলেন, তুমি উদ্যানের প্রতিটি গাছের ফল নির্দ্বিধায় খেতে পারো কিন্তু ভালো মন্দের জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল কখনো খেয়ো না। কারণ যেদিন তুমি ওর মধ্য থেকে খাবে সেদিনই মারা পড়বে।” “আর খোদা আমাদের মধ্য থেকে যে পঞ্জর বের করেছিলেন তা থেকে এক নারী সৃষ্টি করে তাদের আদমের কাছে আনেন।” “আর আদম ও তার স্ত্রী উভয়ই উলংগ ছিলেন, তাদের লজ্জাবোধ ছিল না।” আর ইশ্বরের কি নির্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সাপ ছিল সবচেয়ে বেশী খল। সে ঐ নারীকে বললো ইশ্বর কি বাস্তবিকই বলেছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খেয়ো না? ” “সাপ নারীকে বললো, তোমরা কোনক্রমেই মরবে না, বরং ইশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা তা খাবে, তোমাদের চোখ খুলে যাবে এবং তোমরা ইশ্বরের সদৃশ হয়ে ভালো মন্দের জ্ঞানপ্রাপ্ত হবে।” “এজন্য নারী তার ফল তার ফল পেড়ে খেয়ে ফেললেন এবং নিজের স্বামীকেও খাওয়ালেন।” “তখন তাদের উভয়ের চোখ খুলে গেলো এবং তারা বুঝতে পারলো যে, তারা উলংগ। আর তারা ডুমুর গাছের পাতা সেলাই করে নিজেদের জন্য ঘাঘরা প্রস্তুত করলেন। আর তারা সদাপ্রভু ইশ্বরের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি দিবাবসানে উদ্যানে গমনাগমন করছিলেন। তাহাতে আদম ও তার স্ত্রী সদাপ্রভু ইশ্বরের সম্মুখ থেকে উদ্যানের বৃক্ষসমূহের মধ্যে লুকালেন।” তখন খোদা আদমকে ডেকে বললেন, তুমি কোথায়? তিনি বললেন, আমি উদ্যানে তোমার আওয়াজ শুনে ভীত হয়েছি এবং লুকিয়েছি, কারণ আমি উলংগ। খোদা বললেন, তুমি যে উলংগ তা তোমাকে কে বললো? যে বৃক্ষের ফল খেতে তোমাকে বারণ করেছিলাম নিশ্চয়ই তুমি তার ফল খেয়েছো। আদম বললেন, হাওয়া আমাকে তার ফল খেয়েছো। আদম বললেন, হাওয়া আমাকে তার ফল খাইয়েছে। আর হাওয়া বললো, আমাকে সাপ প্ররোচিত করেছিল। একথায় আল্লাহ‌ সাপকে বললেন, তুমি এই কাজ করেছো, তাই গ্রাম বন্য পশুদের মধ্যে তুমি অধিক শাপগ্রস্ত;তুমি বুকে হাঁটবে এবং যাবজ্জীবন ধূলি ভোজন করবে। আর আমি তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশে ও তার বংশে পরস্পর শত্রুতা সৃষ্টি করবো; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করবে এবং তুমি তার পাদমূল চূর্ণ করবে।” এবং নারীকে এ শাস্তি দিলেন শাস্তি দিলেন, “আমি তোমার গর্ভবেদনা অত্যন্ত বাড়িয়ে দেবো, তুমি বেদনাতে সন্তান প্রসব করবে এবং স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকবে ও সে তোমার ওপর কর্তৃত্ব করবে।” আর আদমের ব্যাপারে এ ফয়সালা করলেন যে, যেহেতু তুমি নিজের স্ত্রীর কথা মেনে নিয়েছো এবং আমার হুকুমের বিরুদ্ধাচারণ করেছো, তাই তোমার জন্য ভূমি অভিশপ্ত হলো, তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে তা ভোগ করবে…… তুমি ঘর্মাক্ত মুখে আহার করবে।” তারপর সদাপ্রভু ইশ্বর আদম ও তার স্ত্রীর জন্য চামড়ার পোশাক তৈরী করে তাদেরকে তা পরালেন।” আর সদাপ্রভু ইশ্বর বললেন, দেখো মানুষ ভালোমন্দের জ্ঞানপ্রাপ্ত হওয়ার ব্যাপারে আমাদের একের মতো হলো, এখন এমন যেমন না হয় যে, সে হাত বাড়িয়ে জীবন বৃক্ষের ফলও পেড়ে খায় এবং অনন্ত জীবী হয়। তাই সদাপ্রভু ইশ্বর তাকে এদনের উদ্যান থেকে বের করে দিলেন।” (আদপুস্তক ২: ৭-২৫ , ৩: ১-২৩ ) যারা একথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না যে, কুরআনে এ কাহিনী বনী ইসরাঈল থেকে নকল করা হয়েছে তাদের কাছে বাইবেলের এ বর্ণনা ও কুরআনের বর্ণনাকে একটু পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করার আবেদন জানাই।

# কিয়ামতের দিন নতুন জীবনের শুরু থেকে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করা পর্যন্ত অপরাধীদেরকে যেসব বিচিত্র অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সেগুলো আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি অবস্থা হচ্ছে,

لَقَدْ كُنْتَ فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ

“তুমি এ জিনিস থেকে গাফলতির মধ্যে পড়েছিলে, এখন আমি তোমার সামনে থেকে পরদা সরিয়ে দিয়েছি, আজ তোমার দৃষ্টি বড়ই তীক্ষ্ণ।” ( কাফঃ ২২ ) অর্থাৎ আজ তুমি খুব পরিষ্কার ও স্বচ্ছ দেখতে পাচ্ছো। দ্বিতীয় অবস্থা হচ্ছেঃ

إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ- مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ

“আল্লাহ তো তাদের আযাবকে সেদিনের জন্য পিছিয়ে দিচ্ছেন যেদিন অবস্থা এমন হবে যে, দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়েই থেকে যাবে, লোকেরা মাথা তুলে ছুটতেই থাকবে। চোখ উপরে তুলে তাকিয়েই থাকবে এবং মন দিশেহারা হয়ে যাবে।” (ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩ ) তৃতীয় অবস্থা হচ্ছেঃ

وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا – اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا

“আর কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য একটি লিখন বের করবো, যাকে সে পাবে উন্মুক্ত কিতাব হিসেবে। পড়ো নিজের আমলনামা! আজ নিজের হিসেব করার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।” (বনী ইসরাঈলঃ ১৩-১৪ )

আর আমাদের আলোচ্য আয়াতে এসব অবস্থার মধ্যে একটি অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, আল্লাহর অসীম ক্ষমতাবলে তারা আখেরাতের ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিজেদের দুষ্কৃতির ফল তো খুব ভালোভাবেই দেখবে কিন্তু তাদের দৃষ্টি শক্তি শুধুমাত্র এগুলোই দেখার যোগ্যতা সম্পন্ন হবে। বাদবাকি অন্যান্য দিক থেকে তাদের অবস্থা হবে এমন অন্ধের মতো যে নিজের পথ দেখতে পায় না। যার হাতে লাঠিও নেই, হাতড়ে চলার ক্ষমতাও নেই, প্রতি পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে, বুঝতে পারছে না সে কোন দিকে যাবে এবং নিজের প্রয়োজন কিভাবে পূর্ণ করবে। নিম্নলিখিত শব্দাবলীর মাধ্যমে এ অবস্থাটিকে তুলে ধরা হয়েছে। “যেভাবে তুমি আমার আয়াতগুলো ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তুমি কোথায় কোথায় হোচট খাচ্ছো, আঘাত পাচ্ছো এবং কেমনতর বঞ্চনার শিকার হচ্ছো আজ তার কোন পরোয়াই করা হবে না। কেউ তোমার হাত ধরবে না, তোমার অভাব ও প্রয়োজন কেউ পূর্ণ করবে না এবং তোমার কোনরকম দেখাশুনা করা হবে না। তুমি চরম উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও বিস্মৃতির অতল তলে নিক্ষিপ্ত হবে।
# এখানে আল্লাহ‌ “যিকির” অর্থাৎ তাঁর কিতাব ও তাঁর প্রেরিত উপদেশমালা থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের দুনিয়ায় যে “অতৃপ্ত জীবন” যাপন করানো হয় সেদিকে ইশারা করা হয়েছে।
# সে সময় মক্কাবাসীদেরকে সম্বোধন করে বক্তব্য রাখা হয়েছিল এবং এখানে তাদের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

# ইতিহাসের এ শিক্ষায়, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের এ পর্যবেক্ষণে, মানব জাতির এ অভিজ্ঞতায়।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

এরপর পরম দুই শত্রু আদম ও ইবলীসকে পৃথিবী নামক এক দীর্ঘ যুদ্ধ ময়দানে অবতীর্ণ হতে নির্দেশ দেয়া হয়। বলা হয়, তিনি বললেন… কোনাে কষ্ট পাবে।(আয়াত ১২৩) এই আয়াতের মাধ্যমে উভয় জাতির মধ্যকার শত্রুতার বিষয়টি ঘােষণা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হলাে। এর পর আদম বা তার কোনাে সন্তানের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে অজ্ঞতার কোনাে আপত্তিই চলবে না। সে আর বলতে পারবে না যে, শয়তান যে আমাদের শত্রু এ কথা আমার জানা ছিলাে । কারণ শয়তান যে মানব জাতির শত্ৰু এ ঘোষণা উর্ধ্বলােকেই দেয়া হয়েছে এবং সে ঘােষণা গোটা সৃষ্টি জগতের মাঝে ধ্বনিত হয়েছে। এই সুস্পষ্ট ও দ্বার্থহীন ঘােষণা স্বর্গে মর্তে, আকাশে-পাতালে ধ্বনিত হওয়া সত্তেও এবং এই ঘোষণার ব্যাপারে গােটা ফেরেশতা জাতি সাক্ষী থাকা সত্তেও কেবল বান্দার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির হেদায়াতের জন্যে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন । চির শত্রুতার বিষয়টি যে দিন ঘােষণা দেয়া হয়, সেদিনই এ ঘােষণা দেয়া হয় যে, মানুষের হেদায়াতের জন্যে তাদের মধ্য থেকেই পথপ্রদর্শকের আগমন ঘটবে। যারা তার নির্দেশ মানবে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে। যারা তার নির্দেশ অমান্য করবে তারা পথভ্রষ্ট হবে। নিচের আয়াতে এ কথাই বলা হয়েছে, ‘তিনি বললেন… আযাবই হচ্ছে বেশী কঠিন এবং অধিক স্থায়ী।'(আয়াত ১২৩-১২৭) কঠিন শাস্তির এই দৃশ্য ঘটনার শেষে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যেন এটাও এ ঘটনারই একটা অংশ। আদম ও হাওয়ার ঘটনার শেষে উর্ধ্বলােকেই এই শাস্তির কথা ঘােষণা করা হয়েছে। কাজেই এটা একটা খােদায়ী মীমাংসিত ও চূড়ান্ত বিষয়। এখানে পিছপা হওয়ারও কোনাে সুযােগ নেই এবং পরিবর্তনেরও কোনাে সুযােগ নেই। ‘এখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।’ অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশিত পথে চললে মানুষ পথভ্রষ্টতা ও কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। এ দুটো অমংগল জান্নাতের দোরগােড়ায় তার জন্যে অপেক্ষা করছে। তবে যারা আল্লাহর দেখানাে পথ অনুসরণ করে চলবে, তাদের তিনি এই দুটো অমংগল থেকে রক্ষা করবেন। কষ্ট বা দুর্ভাগ্য হচ্ছে পথভ্রষ্টতারই পরিণতি। পথভ্রষ্ট ভােগ বিলাসিতায় ডুবে থাকলেও তারা এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবে না। কারণ, এই ভোগ বিলাসিতাই হচ্ছে এক ধরনের অমংগল। ইহকালের জন্যেও অমংগল এবং পরকালের জন্যেও অমংগল । অবৈধ ও অনৈতিক সকল ভােগ বিলাসিতার পরিণতি অমংগল ও দুর্ভাগ্য ব্যতীত আর কিছুই হতে পারে না। যখনই কোনাে মানুষ আল্লাহর দেখানাে পথ থেকে দূরে সরে দাঁড়াবে, তখনই সে মানসিক দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তার মাঝে হাবুডুবু খাবে। তার প্রতিটি কাজে ও পদক্ষেপে জড়তা, ভারসাম্যহীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতার ছাপ প্রকট হয়ে দেখা দেবে। সত্য কথা হচ্ছে, অমংগল ও দুর্ভাগ্য পথভ্রষ্টতা ও লক্ষহীনতারই নামান্তর। এরপর চরম অমংলের পালা আসবে শেষ বিচারের পর, অনন্ত অসীম জগতে। অপরদিকে যারা আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলবে তারা এই অমংগল ও দুর্ভাগ্য হতে মুক্ত থাকবে এবং এর ফলে দুনিয়াতেই হারানাে জান্নাতের বিকল্প পেয়ে যাবে। আর পরকালে তাে আসল জান্নাত তাদের জন্যে থাকবেই।(আয়াত ১২৪) আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন জীবন, আল্লাহর রহমতের সাথে সম্পর্কহীন জীবন তাে কষ্টকর হবেই তা যতােই বিলাসী হােকনা কেন, যতােই সহায় সম্পদে পরিপূর্ণ হােক না কেন। এই কষ্ট আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীনতার কারণে, এই কষ্ট আসে আল্লাহর সান্নিধ্যজনিত প্রশান্তির অভাবে। এই কষ্ট হচ্ছে বিভ্রান্তিজনিত, উদ্বেগ জনিত, ভয় ও আশংকাজনিত। এই কষ্ট কামনা বাসনার পেছনে দৌড়ানাের ফলে। এই কষ্ট আসে প্রতিটি হারানাে বস্তুর জন্যে আহাজারির ফলে। মােটকথা, মনের সুখ-শান্তি এবং হৃদয়ের স্থিরতা কেবল আল্লাহর সান্নিধ্যেই লাভ হয়। মানুষ কেবল তখনই নিজের মাঝে আস্থা ও নৈতিক শক্তি অনুভব করতে পারে যখন আল্লাহর সাথে দৃঢ় ও অটুট সম্পর্ক থাকবে। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও অটুট সম্পর্ক দ্বারা যে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় তা গােটা জীবনকে কানায় কানায় ভরে দেয়। আর যখন সে এই অনাবিল মানসিক প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত হয় তখন তার জীবনে নেমে আসে হতাশা ও বঞ্চনার কালাে ছায়া, যা দারিদ্র্য ও ব্যর্থতাজনিত হতাশার চেয়েও মারাত্মক।(আয়াত ১২৫) আল্লাহর স্মরণ বা যিকির থেকে গাফেল হলে পার্থিব জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের শিকার হতে হবে। শুধু তাই নয়, পরকালে এমন ব্যক্তিকে অন্ধ করে ওঠানাে হবে। এই অন্ধত্ব হচ্ছে তার পার্থিব জীবনের ভ্রষ্টতারই স্বাভাবিক পরিণতি এবং তার গাফলত উদাসীনতার শাস্তি। তখন সে আল্লাহকে জিজ্ঞেস করবে যে, তাকে অন্ধ করে কেন উঠানাে হলাে, সে তো পৃথিবীতে দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ছিলো? তাই এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তিনি বলবেন… বেশী কঠিন এবং অধিক স্থায়ী।'(আয়াত ১২৬-১২৭) অর্থাৎ তার সীমালংঘন ও বাড়াবাড়ির শাস্তিস্বরূপ তাকে এভাবে অন্ধ করে ওঠানাে হয়েছে। আল্লাহকে ভুলে গিয়ে সে বাড়াবাড়ি করেছে। সরল ও সত্য পথকে প্রত্যাখ্যান করে বাড়াবাড়ি করেছে অথচ এটা ছিলাে তার জন্যে এক অমূল্য রত্ব অমূল্য সম্পদ। দৃষ্টিশক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সে বাড়াবাড়ি করেছে। কারণ, এই দৃষ্টি শক্তিকে আল্লাহর নিদর্শনাবলী অবলােকন করার পরিবর্তে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। কাজেই তার জীবন তাে কষ্টদায়ক হবেই। এমনকি পরকালেও তাকে অন্ধত্ব বরণ করতে হবে। বর্ণনাভংগি আর দৃশ্যের চিত্রায়নে এখানে আমরা একটা অপূর্ব মিল লক্ষ্য করছি। জান্নাত ত্যাগের ফলে দুর্ভাগ্য ও হতাশার সৃষ্টি। অপরদিকে জান্নাতে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে এই দুর্ভাগ্য ও হতাশা থেকে মুক্তি। পার্থিব জীবনের ভােগ বিলাসিতার বিপরীতে এসেছে দুঃখ-দুর্দশা। অপরদিকে হেদায়াতের বিপরীতে এসেছে অন্ধত্ব। আর এসব বর্ণনা এসেছে আদম(আ.)-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করেই। কারণ এই ঘটনা হচ্ছে মুলত গােটা মানব জাতিরই ঘটনা। তাই এর সূচনাও হয়েছে জান্নাতকে কেন্দ্র করে এবং সমাপ্তিও ঘটেছে জান্নাতকে কেন্দ্র করেই, যেমনটি ঘটেছে সূরা আ’রাফে। অবশ্য উভয় সূরার প্রাসংগিক বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

*দুনিয়ার জীবনে অপরাধের শাস্তি না দেয়ার রহস্য : ঘটনার উভয় প্রান্তের বর্ণনা শেষে এখন অতীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলাের বর্ণনা আসছে। সময়ের ব্যবধানে অতীতের এসব ঘটনা কেয়ামতের তুলনায় অনেকটা হাল যমানার ঘটনার মতােই। অনাগত কেয়ামতের দৃশ্য চাক্ষুষ না হলেও অতীতের এসব ঘটনা চাক্ষুষ । তাই বলা হচ্ছে, ‘এদের আগে আমি কতাে কতো……….. সন্তুষ্ট হয়ে যেতে পারাে।'(আয়াত ১২৮-১২৯) বাহ্যিক দৃষ্টি ও দিব্য দৃষ্টি দিয়ে যখন মানুষ অতীতের এসব ঘটনার দিকে তাকায়, যখন খুব কাছ থেকে এসব ধ্বংসযজ্ঞের নিদর্শনগুলাে প্রত্যক্ষ করে, যখন নির্জন ও পরিত্যক্ত এসব ঘর বাড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করে, যখন কল্পনায় এসব ঘর বাড়ির বাসিন্দাদের অস্তিত্ব অনুভব করে তখন সে ওদের আনাগোনা টের পায়। ওদের গতিবিধি লক্ষ্য করে। ওদের আশা আকাংখার কথা অনুভব করে। ওদের দুঃখ-সুখের বিষয়টি অনুভব করে। কল্পনায় এসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ যখন সে চোখ মেলে তাকায় তখন সে আর কিছুই দেখতে পায় না। বরং তার চোখের সামনে বিরাজ করে শূন্যতা ও নির্জনতা। তখন এই বিরাট শূন্যতার মাঝে অতীত ও বর্তমান বিলীন হয়ে যায়। আর ঠিক সে মুহর্তেই আল্লাহর অসীম ক্ষমতার বিষয়টি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন সে বুঝতে পারে, আল্লাহর জন্যে সবই সম্ভব। যিনি অতীতের জাতিগুলােকে ধ্বংস করতে পেরেছেন, তিনি বর্তমান যুগের জাতিগুলােকেও ধ্বংস করতে সক্ষম। এই উপলব্ধির সাথে সাথে সে সতর্ক করা, উপদেশ গ্রহণ করা ইত্যাদির তাৎপর্যও বুঝতে পারে। এটা শুভবুদ্ধিরই লক্ষণ। কারণ, অতীত থেকে কেবল বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ লােকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। বিশেষ কোনো হেকমত ও রহস্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা যদি পাপী বান্দাদের দুনিয়ার বুকেই নিশ্চিহ্ন না করার ওয়াদাবদ্ধ না হতেন, তাহলে অতীতকালের জাতিগুলাের বেলায় যা ঘটেছিলাে এদের বেলায়ও তাই ঘটতাে। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত ভিন্নরূপ হওয়াতে এবং একটা সময়সীমা নির্ধারণ করার ফলে এমনটি হয়নি। এ বিষয়টির দিকেই ইংগিত করে বলা হয়েছে । (আয়াত ১২৯)

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

 

কিয়ামতের দিন একশ্রেণির মানুষ অন্ধ হয়ে উত্থিত হবে, অথচ তারা দুনিয়ায় চোখবিশিষ্ট ছিল, তার কারণ এ আয়াতগুলোতে বর্ণনা করা হচ্ছে। যারা আল্লাহ তা‘আলার যিকির ذِكْرِيْ তথা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অমান্য করে, ইসলাম ও ঈমানের পরওয়া করে না তারাই কিয়ামতের দিন অন্ধ হয়ে উত্থিত হবে, তাদের জীবন হবে সংকটময়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰي وُجُوْهِهِمْ عُمْيًا وَّبُكْمًا وَّصُمًّا ط مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ط كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنٰهُمْ سَعِيْرًا ‏)‏

“কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, বোবা ও বধির করে। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবার উপক্রম হবে আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব” (সূরা ইসরা ১৭:৯৭)

(مَعِيْشَةً ضَنْكًا)

সংকীর্ণময় জীবন বলতে কেউ বলেছেন, কবরের জীবন উদ্দেশ্য। কেউ বলেছেন; দুনিয়াতে অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও ভয়-ভীতি অবস্থায় জীবন যাপন করবে।

কাফিররা কিয়ামতের দিন তাদের এ অন্ধত্বের কারণ জানতে চাইলে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমাদের কাছে দুনিয়াতে আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিতাব দিয়েছিলাম, রাসূল দিয়েছিলাম। তোমরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আমাকে ভুলে ছিলে আজ আমিও তোমাদেরকে ভুলে যাব। অর্থাৎ জাহান্নামে দেয়া হবে, তার কোন কথাই শোনা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَهُمْ لَهْوًا وَّلَعِبًا وَّغَرَّتْهُمُ الْحَيٰوةُ الدُّنْيَا ج فَالْيَوْمَ نَنْسٰهُمْ كَمَا نَسُوْا لِقَا۬ءَ يَوْمِهِمْ هٰذَا لا وَمَا كَانُوْا بِاٰيٰتِنَا يَجْحَدُوْنَ ‏)‏

“যারা তাদের দীনকে ক্রীড়া-কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছিল।’ সুতরাং আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাব, যেভাবে তারা তাদের এদিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেভাবে তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করেছিল।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫১)

(وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ)

অর্থাৎ যারা কুফরী করে নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনেনি তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তাদের জন্য পরকালে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি তো রয়েছেই।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা আশ্চর্যবোধক শব্দে বলছেন: তাদের পূর্বে কত জাতি ধ্বংস করেছি। তারা এখনও তাদের জনপদে হাঁটা-চলা করে, এগুলোও কি তাদেরকে হিদায়াত দিল না! নিশ্চয়ই জ্ঞানীদের জন্য এগুলোর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। একটু চিন্তা করলেই অনুধাবন করতে পারত আমাদের পূর্বের এসব জাতিকে কেন ধ্বংস করা হল? নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হয়েছিল, তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন ও জাহান্নামের শাস্তি পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করা না থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাথে সাথেই ধ্বংস করে দিতেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার বিধান থেকে যে বিমুখ হবে তাকে পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
২. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সাথে কথা বলবেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকের জন্য একটি নির্দিষ্ট কাল ঠিক করে রেখেছেন।
৪. বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১২৩-১২৬ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআ’লা হযরত আদম (আঃ), হযরত হাওয়া (আঃ) এবং ইবলীসকে বলেনঃ “তোমরা সবাই জান্নাত হতে বেরিয়ে যাও।’ সুরায়ে বাকারায় এর পূর্ণ তাফসীর গত হয়েছে। আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ তোমরা পরম্পর একে অপরের শত্রু। অর্থাৎ আদম সন্তনি ও ইবলীস সন্তান পরস্পর পরস্পরের শত্রু। তোমাদের কাছে আমার রাসূল ও কিতাব আসবে। যারা আমার প্রদর্শিত পথের অনুসরণ করবে তারা দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত হবে না এবং প্রকলেও অপমানিত হবে না। আর যারা আমার হুকুমের বিরোধিতা করবে, আমার রাসূলদের প্রদর্শিত পথ পরিত্যাগ করবে এবং অন্য পথে চলবে তারা দুনিয়াতে সংকীর্ণ অবস্থায় থাকবে। তারা প্রশান্তি ও স্বচ্ছলতা লাভ করবে না। নিজেদের গুমরাহীর কারণে সংকীর্ণ অবস্থায় কালাতিপাত করবে। যদিও বা হ্যতঃ পানাহার ও পরিধানের ব্যাপারে প্রশস্ততা পরিদৃষ্ট হবে কিন্তু অন্তরে ঈমান ও হিদায়াত না থাকার কারণে সদা সর্বদা সন্দেহ সংশয় এবং সংকীর্ণতা ও স্বল্পতার মধ্যেই জড়িয়ে পড়বে। তারা হবে হতভাগ্য, আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত এবং কল্যাণ শূন্য। কেননা, তাদের মহান আল্লাহর উপর ঈমান নেই, তার প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস নেই, মৃত্যুর পরে তাঁর নিয়ামতের মধ্যে কোন অংশ নেই। আল্লাহর প্রতি তারা খারাপ ধারণা পোষণ করে, তাদের রিক অপবিত্র, আমল তাদের জঘন্য, তাদের কবর হবে সংকীর্ণ ও অন্ধকার। কবরে তাদেরকে এমন চাপ দেয়া হবে যে, তাদের ডান দিকের পাজর বাম দিকে এবং বাম দিকের পাজর ডান দিকে হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনের কবর হবে শ্যামল-সবুজ-বাগীচা। ওটা হবে সত্তর হাত প্রশস্ত। মনে হবে যেন ওর মধ্যে চন্দ্র রয়েছে। খুবই উজ্জ্বল হয়ে থাকবে, যেন চৌদ্দ তারিখের চাদ কিরণ দিচ্ছে। (আরবী) এই আয়াতটির শানে নুযূল তোমরা জান কি? এর দ্বারা কাফিরের তার কবরের মধ্যে শাস্তি হওয়া বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর শপথ! তার কবরে নিরানব্বইটি অজগর সাপ মোতায়েন করা হবে, যাদের প্রত্যেকের হবে সাতটি করে মাথা, যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাকে দংশন করতে থাকবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। কিন্তু এর মারফু হওয়া স্বীকৃত নয়। একটি উত্তম সনদেও এটা বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা কবরের আযাবকেই বুঝানো হয়েছে) মহান আল্লাহ বলেন যে, তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠানো হবে। জা হান্নাম ছাড়া অন্য কিছু তার ন্যরে পড়বে না। অন্ধ করেই তাকে হাশরের মাঠে নিয়ে আসা হবে এবং জাহান্নামের সামনে দাড় করিয়ে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে মুখের ভরে অন্ধ মূক ও বধির করে হাশরের মাঠে একত্রিত করবো এবং তাদের আবাস স্থল হবে জাহান্নাম।” (১৭:৯৭)।

সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উখিত করলেন? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মন? উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ ‘এইরূপই আমার আয়াত সমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেইভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হলে। যেমন আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আজ তাদেরকে তেমনিভাবেই ভুলে যাবে যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল।”(৭:৫১) সুতরাংএটা তাদের কৃতকর্মেরই সমান প্রতিফল।

যে ব্যক্তি কুরআন কারীমের উপর বিশ্বাস রাখে এবং ওর হুকুম অনুযায়ী আমলও করে, সে যদি ওর শব্দ ভুলে যায় তবে সে এই প্রতিশ্রুত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তার জন্যে অন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন হযরত সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কুরআন পড়লো অতঃপর তা ভুলে গেল সে কুষ্ঠরোগী রূপে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যারা আল্লাহর সীমারেখার পরওয়া করে না এবং তার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপাদন করে তাকে আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি। অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতের আযাবে জড়িয়ে থাকি। বিশেষ করে আখেরাতের শাস্তি তো খুবই কঠিন এবং সেখানে এমন কেউ হবে না যে তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে। দুনিয়ার শাস্তি কঠোরতা ও দীর্ঘ মিয়াদী হিসেবে আখেরাতের শাস্তির সাথে তুলনীয় হতে পারে না। আখেরাতের শাস্তি চিরস্থায়ী ও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। পরস্পর পরস্পরের উপর লা’নতকারীদের বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আখেরাতের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার শাস্তি খুবই হালকা ও অতি নগন্য।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যারা তোমাকে মানে না এবং তোমার শরীয়তকে অস্বীকার করে তারা কি এর দ্বারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে না যে, তাদের পূর্বে যারা এইরূপ আচরণ করেছিল, আমি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম? আজ তাদের মধ্যে চোখ দিয়ে দেখার মত, শ্বাস গ্রহণ করার মত এবং মুখে কিছু বলার মত কেউ অবশিষ্ট আছে কি? তাদের সুউচ্চ, সুদৃশ্য এবং আঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ গুলির ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে মাত্র। সেখান দিয়ে তো এরা চলা ফেরা করে থাকে। তাদের যদি জ্ঞান বুদ্ধি থাকতো তবে এর দ্বারা তারা বহু কিছু শিক্ষাগ্রহণ করতে পারতো। তারা কি যমীনে ঘোরাফেরা করে আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলীর উপর চিন্তা গবেষণা করে না? কাফিরদের এ সব যন্ত্রণাদায়ক কাহিনী শুনে কি তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না? তাদের বস্তিগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখেও কি তাদের চক্ষু খুলে না? এরা চোখের অন্ধ নয়, বরং অন্তরের অন্ধ। সূরায়ে আলিফ-লাম-মীম সিজদায়ও উপরোল্লিখিত আয়াতের মত আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের উপর একটা কাল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই কাল নির্ধারিত কাল না থাকলে তাদের প্রতি আশু শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়তো। ঐ নির্ধারিত কাল এসে গেলেই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তারা যে তোমাকে মিথ্যা প্রতিপাদন করছে তার উপর ধৈর্য ধারণ কর। জেনে রেখো যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে নয়।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#918)
[ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیْتَهَا١ۚ
“Thus did Our Ayat come to you, and you forgot them;]
Sura:20
Sura: Taa-Haa
Ayat: 123-129
www.motaher21.net
20:123

قَالَ اہۡبِطَا مِنۡہَا جَمِیۡعًۢا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ ہُدًی ۬ۙ فَمَنِ اتَّبَعَ ہُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشۡقٰی ﴿۱۲۳﴾

[ Allah ] said, “Descend from Paradise – all, [your descendants] being enemies to one another. And if there should come to you guidance from Me – then whoever follows My guidance will neither go astray [in the world] nor suffer [in the Hereafter].

 

The Descent of Adam to the Earth and the Promise of Good for the Guided and Evil for the Transgressors

Allah says;

قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ

He (Allah) said:”Get you down, both of you, together, some of you are an enemy to some others.

Allah says to Adam, Hawwa’ and Iblis, “Get down from here, all of you.” This means each of you should get out of Paradise.

We expounded upon this in Surah Al-Baqarah.

بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ

Some of you as enemies to others. (2:36)

He (Allah) was saying this to Adam and his progeny and Iblis and his progeny.

Concerning Allah’s statement,

فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى

Then if there comes to you guidance from Me,

Abu Al-Aliyyah said,

“This (guidance) means the Prophets, the Messengers and the evidence.”

فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَ يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى

Then whoever follows My guidance he shall neither go astray nor shall be distressed.

Ibn Abbas said,

“He will not be misguided in this life and he will not be distressed in the Hereafter.
20:124

وَ مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِکۡرِیۡ فَاِنَّ لَہٗ مَعِیۡشَۃً ضَنۡکًا وَّ نَحۡشُرُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اَعۡمٰی ﴿۱۲۴﴾

And whoever turns away from My remembrance – indeed, he will have a depressed life, and We will gather him on the Day of Resurrection blind.”

 

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي

But whosoever turns away from My Reminder,

This means, “Whoever opposes my command and what I have revealed to My Messenger, then he has turned away from it, neglected it and taken his guidance from other than it.”

فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا

verily, for him is a life of hardship,

meaning, his life will be hard in this world. He will have no tranquility and no expanding of his breast (ease). Rather, his chest will be constrained and in difficulty due to his misguidance. Even if he appears to be in comfort outwardly and he wears whatever he likes, eats whatever he likes and lives wherever he wants, he will not be happy. For verily, his heart will not have pure certainty and guidance. He will be in agitation, bewilderment and doubt. He will always be in confusion and a state of uncertainty. This is from the hardship of life.

Concerning His statement,

وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

and We shall raise him up blind on the Day of Resurrection.

Mujahid, Abu Salih and As-Suddi said,

“This means he will have no proof.”

Ikrimah said,

“He will be made blind to everything except Hell.”

This is as Allah says,

وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَّأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ

And We shall gather them together on the Day of Resurrection on their faces, blind, dumb and deaf; their abode will be Hell. (17:97)

This is why Allah says,

قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا

20:125

قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِیۡۤ اَعۡمٰی وَ قَدۡ کُنۡتُ بَصِیۡرًا ﴿۱۲۵﴾

He will say, “My Lord, why have you raised me blind while I was [once] seeing?”

 

He will say:O my Lord! Why have you raised me up blind, while I had sight (before).

This means in the life of this world.

قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ ايَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنسَى

20:126

قَالَ کَذٰلِکَ اَتَتۡکَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیۡتَہَا ۚ وَکَذٰلِکَ الۡیَوۡمَ تُنۡسٰی ﴿۱۲۶﴾

[ Allah ] will say, “Thus did Our signs come to you, and you forgot them; and thus will you this Day be forgotten.”

 

(Allah) will say:”Like this Our Ayat came unto you, but you disregarded them, and so this Day, you will be neglected.

Meaning, “When you turned away from the signs of Allah and dealt with them in the manner of one who does not remember them after they were conveyed to you. You neglected them, turned away from them and were heedless of them. Therefore, today We will treat you in the manner of one who has forgotten you.”

فَالْيَوْمَ نَنسَـهُمْ كَمَا نَسُواْ لِقَأءَ يَوْمِهِمْ هَـذَا

So this Day We shall forget them as they forgot their meeting of this Day. (7:51)

For verily, the punishment will be a retribution that is based upon the type of deed that was done. However, forgetting the words of the Qur’an, while understanding its meaning and acting upon its legislation, is not included in the meaning of this specific threat. Yet, forgetting the words of the Qur’an has been warned against from a different aspect. It has been reported in the Sunnah that it is absolutely forbidden and there is a serious threat against one who forgets Qur’an (that he previously memorized)

20:127

وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِیۡ مَنۡ اَسۡرَفَ وَ لَمۡ یُؤۡمِنۡۢ بِاٰیٰتِ رَبِّہٖ ؕ وَ لَعَذَابُ الۡاٰخِرَۃِ اَشَدُّ وَ اَبۡقٰی ﴿۱۲۷﴾

And thus do We recompense he who transgressed and did not believe in the signs of his Lord. And the punishment of the Hereafter is more severe and more enduring.

 

Severe Torment for Him Who transgresses beyond bounds

Allah says:

وَكَذَلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُوْمِن بِأيَاتِ رَبِّهِ

And thus do We requite him who transgresses beyond bounds and believes not in the Ayat of his Lord;

Allah says:`Thus We do requite those who transgress beyond bounds and belie the Ayat of Allah in this world and in the Hereafter.’

لَّهُمْ عَذَابٌ فِى الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَلَعَذَابُ الاٌّخِرَةِ أَشَقُّ وَمَا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِن وَاقٍ

For them is a torment in the life of this world, and certainly, harder is the torment of the Hereafter. And they have no defender or protector against Allah. (13:34)

Therefore Allah said,

وَلَعَذَابُ الاْخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى

and the torment of the Hereafter is far more severe and more lasting.

meaning:a more grievous and more painful penalty than of this world they will remain therein, they will abide forever in such torment.

Allah’s Messenger said to both husband and wife who took an oath, when the husband accused his wife of committing illegal sexual intercourse:

إِنَّ عَذَابَ الدُّنْيَا أَهْوَنُ مِنْ عَذَابِ الاْخِرَة

Verily, the torment of this worldly life is more insignificant, compared to the punishment of the Hereafter

20:128

اَفَلَمۡ یَہۡدِ لَہُمۡ کَمۡ اَہۡلَکۡنَا قَبۡلَہُمۡ مِّنَ الۡقُرُوۡنِ یَمۡشُوۡنَ فِیۡ مَسٰکِنِہِمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی النُّہٰی ﴿۱۲۸﴾٪

Then, has it not become clear to them how many generations We destroyed before them as they walk among their dwellings? Indeed in that are signs for those of intelligence.

 

Many Nations were destroyed and in Them is a Lesson

Allah, the Exalted, says,

أَفَلَمْ يَهْدِ

Is it not a guidance for them…

This is addressed to those who reject what the Prophet came to them with:

لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ

(to know) how many generations We have destroyed before them, in whose dwellings they walk!

`We destroyed those who denied the Messengers from the previous nations before them. They showed open hostility, so now there is not trace of them and none of them are left. This is witnessed by the empty homes that these people left behind, and which others have now inherited, moving about in the dwellings of those of the past.’

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لاُِّوْلِي النُّهَى

Verily, in this are signs indeed for men of understanding.

This means those who have sound intellect and correct understanding.

This is as Allah says,

أَفَلَمْ يَسِيرُواْ فِى الاٌّرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَأ أَوْ ءَاذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الاٌّبْصَـرُ وَلَـكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِى فِى الصُّدُورِ

Have they not traveled through the land, and have they hearts wherewith to understand and ears wherewith to hear! Verily, it is not the eyes that grow blind, but it is the hearts which are in the breasts that grow blind. (22:46)

Allah also said in Surah Alif Lam Mim As-Sajdah,

أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِى مَسَاكِنِهِمْ

Is it not a guidance for them:how many generations We have destroyed before them in whose dwellings they walk about. (32:26)

Then, Allah, the Exalted, says,

وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَكَانَ لِزَامًا وَأَجَلٌ مُسَمًّى

20:129

وَ لَوۡ لَا کَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّکَ لَکَانَ لِزَامًا وَّ اَجَلٌ مُّسَمًّی ﴿۱۲۹﴾ؕ

And if not for a word that preceded from your Lord, punishment would have been an obligation [due immediately], and [if not for] a specified term [decreed].

 

And had it not been for a Word that went forth before from your Lord, and a term determined (their punishment), must necessarily have come (in this world).

This means that if it were not for the Word that had already preceded from Allah — that He would not punish anyone until the proof had been established against him and the punishment would take place at an appointed time that He has already determined for these rejecters — then the punishment would certainly seize them immediately.
The Command to be patient and perform the Five daily Prayers

Allah comforts His Prophet by saying to him

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply