(বই#৯২২) [ فَسْئَلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।] সূরা:- আল্ আম্বিয়া। সুরা:২১ ০৭-০৯ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯২২)
[ فَسْئَلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
০৭-০৯ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:০৭
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ اِلَّا رِجَالًا نُّوْحِیْۤ اِلَیْهِمْ فَسْئَلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ

আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম। তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো।
২১:০৮
وَ مَا جَعَلْنٰهُمْ جَسَدًا لَّا یَاْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَ مَا كَانُوْا خٰلِدِیْنَ

সেই রসূলদেরকে আমি এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খেতো না এবং তারা চিরজীবিও ছিল না।
২১:০৯
ثُمَّ صَدَقْنٰهُمُ الْوَعْدَ فَاَنْجَیْنٰهُمْ وَ مَنْ نَّشَآءُ وَ اَهْلَكْنَا الْمُسْرِفِیْنَ

তারপর দেখে নাও আমি তাদের সাথে আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছি এবং তাদেরকে ও যাকে যাকে আমি চেয়েছি রক্ষা করেছি এবং সীমালংঘনকারীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি।

০৭-০৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর:

এ আয়াতে মক্কার কাফির-মুশরিকসহ সকল যুগের রাসূলের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা পোষণকারীদের জবাব দেয়া হয়েছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে মক্কার মুশরিকরা বলছিল এ কেমন রাসূল! যে খাবার খায়, বাজারে যায়। রাসূল তো এমন হওয়া দরকার যার আমাদের মত খাওয়া, পান করা এবং বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন হবেনা, বরং রাসূল হবেন একজন ফেরেশতা বা তার সাথে ফেরেশতা থাকবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: ‘তোমার পূর্বে রাসূল হিসেবে আমি পুরুষ মানুষই পাঠিয়েছিলাম’ অর্থাৎ যত রাসূল দুনিয়াতে আগমন করেছে সবাই পুরুষ মানুষ ছিলেন। তাদের এমন শরীর দিয়েছিলেন যা খাবারের মুখাপেক্ষী ছিল, তারা চিরস্থায়ীও ছিলনা। অতএব হে মক্কাবাসী! তোমাদের যদি এ কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে যারা জ্ঞানী তথা তোমাদের মাঝে আসমানী কিতাবের জ্ঞান রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস কর। যেমন আহলে কিতাবরা, যারা তাওরাত ও ইনজিল পেয়েছে এবং সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এখান থেকে আরেকটি বিষয় বুঝা গেল যে, কোন নারী নাবী হননি। কারণ নবুআতের দায়িত্ব ও কর্তব্য এমন, যা কোন নারীর স্বভাব ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْٓ إِلَيْهِمْ مِّنْ أَهْلِ الْقُرٰي)

“তোমার পূর্বেও জনপদবাসীর মধ্য হতে পুরুষকেই প্রেরণ করেছিলাম, যাদের নিকট ওয়াহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসুফ ১২:১০৯)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَ ط أَفَاْئِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْخٰلِدُوْنَ)‏

“আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত‎ জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে?” (সূরা আম্বিয়া ২১:৩৪)

যদি দুনিয়াতে ফেরেশতা বসবাস করত তাহলে ফেরেশতাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করতেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ لَّوْ كَانَ فِي الْأَرْضِ مَلَا۬ئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَا۬ءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا‏)‏

“বল:‎ ‘ফেরেশতাগণ যদি নিশ্চিন্ত‎ হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত তবে আমি আকাশ হতে তাদের নিকট অবশ্যই ফেরেশ্তা রাসূল করে পাঠাতাম।’’ (সূরা ইসরা ১৭:৯৫)

أَهْلَ الذِّكْرِ

অর্থ আহলুল ইলম বা জ্ঞানী, এখানে আহলে কিতাবদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের জ্ঞান রাখত। এ আয়াত থেকে অনেকে তাকলীদের দলীল পেশ করতে অপচেষ্টা করে থাকে। বরং এ আয়াত তাকলীদের বিরুদ্ধে দলীল। বলা হয়েছে না জানা থাকলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করতে। আর জ্ঞানী তো একজন নয়, জ্ঞানী ব্যক্তি অনেক থাকেন। সুতরাং কোন বিষয়ে না জানা থাকলে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য একাধিক জ্ঞানীর কাছে জিজ্ঞাসা করবে।

অতএব মানুষকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা মানুষদের জন্য উপযোগী ও যুক্তিযুক্ত। যেহেতু সাধারণ মানুষের মতই নাবী-রাসূলগণ মাটির তৈরী, সেহেতু তারাও আহার গ্রহণ করা, বাজারে যাতায়াত করার মুখাপেক্ষী ছিল, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এসব প্রমাণাদি পেশ করার পরেও যারা সঠিক বিষয়ে ঈমান আনবে না তাদের ধ্বংস অনিবার্য, যেমন পূর্ববর্তীরা হয়েছিল।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সকল রাসূল মাটির তৈরি ছিলেন, মানুষের যা প্রয়োজন হত তাদেরও তাই হত।
২. জানা না থাকলে যারা জানে তাদের নিকট মানার উদ্দেশ্যে জেনে নিতে হবে।
৩. কোন মানুষ দুনিয়াতে চিরস্থায়ী নয়, এমন কি নাবী-রাসূলগণও নন।
৪. কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা আলেমের তাকলীদ করা বৈধ নয়, বরং যিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক ফায়সালা দেবেন তার কথাই গ্রহণ করতে হবে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*মানব জাতির মাঝ থেকে রাসূল নির্বাচনের কারণ : ‘আমি তােমার পূর্বে মানুষের মাধ্যমেই তাদের কাছে ওহী নাযিল করতাম। তােমরা যদি এসব না জানাে, তবে যাদের ঐশী গ্রন্থ আছে, তাদের কাছে জিজ্ঞেস করাে। আমি তাদের দেহকে এমনভাবে বানাইনি যে, তারা পানাহার করবে না। তারা চিরঞ্জীবও ছিলাে না।’ বস্তুত আল্লাহর নিয়ম এটাই ছিলাে যে, রসূলরা মানুষের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবেন এবং ওহী পাওয়া মাত্রই মানুষকে তার দিকে দাওয়াত দিবেন। পূর্ববর্তী নবীরাও দেহধারী মানুষ হতেন। আর দেহধারীরূপে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পানাহারেরও মুখাপেক্ষী করেছেন। ফলে তারা খাওয়া দাওয়া না করে পারতেন না। খাওয়া দাওয়া দেহের অনিবার্য দাবী। আর এ ধরনের দেহধারী হওয়া মনুষত্বেরই অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। অনুরূপভাবে সৃষ্ট মানুষ হিসেবে তারা চিরঞ্জীবও নন। এটাই আল্লাহর শাশ্বত রীতি ও প্রথা। এ সত্য যদি মােশরেকদের অজানা থেকে থাকে, তাহলে কিতাবধারী-ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে জিজ্ঞেস করা তাদের কর্তব্য। কেননা সে দুই জাতি পূর্বতন নবীদের বিষয়ে জানতাে। নবীদেরকে মানুষের মধ্য থেকেই পাঠানাে হতাে। এর উদ্দেশ্য ছিলাে তারা যেন মানুষের মতাে জীবন যাপন করে। তাদের বাস্তব জীবনই হতাে তাদের জন্যে শরীয়তের বিধান। তাদের সামাজিক জীবন হতো তারা মানুষকে যে জীবন ব্যবস্থার দিকে ডাকতাে, তার বাস্তব নমুনা। জীবন ও বাস্তব উপদেশই মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সুপথে চালিত করে। কেননা জনগণ তাকে একজন মানুষের জীবনে জীবন্তভাবে মূর্ত ও বাস্তবায়িত দেখতে পায়। নবী ও রসূলরা যদি মানুষ না হতেন, তারা যদি খাবার না খেতেন, হাট বাজারে না যেতেন এবং নারীদের সাহচর্যে জীবন যাপন না করতেন, তাহলে তাদের হৃদয়ে মানুষ সুলভ আবেগ-অনুভূতির সৃষ্টি হতাে না এবং তাদের ও সাধারণ মানুষের মাঝে কোনাে সম্পর্কও গড়ে উঠতাে না। এর ফল দাঁড়াতাে যে, নবীরা এমনে কোনাে মানবীয় আবেগ উদ্দীপনা অনুভবই করতেন না, যা তাদেরকে উদ্দীপিত ও পরিচালিত করতে পারে। আর সে কারণে জনগণও তাদের অনুকরণ ও অনুসরণ করতে পারতাে না। যিনি জনগণকে ইসলামের দাওয়াত দেন, তিনি যদি জনগণের ইচ্ছা ও আবেগ অনুভব না করেন এবং জনগণও যদি তার ইচ্ছা ও আবেগ অনুভব না করে, তাহলে তিনি জনগণের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করতে বাধ্য হবেন। তিনিও জনগণের ইচ্ছা আকাংখায় সাড়া দেন না। আর জনগণও তাদের ডাকে সাড়া দেয় না। জনগণ তার কোনাে কথা শুনলেও তদানুসারে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় না। কেননা তাদের ও তার মাঝে আবেগ ও অনুভূতির কোনাে সংযােগ থাকে । অনুরূপ, যিনি ইসলামের দাওয়াত দেন, তার কথা ও কাজে যদি মিল না থাকে, তাহলে তার কথা শ্রোতার কানের দরজা পর্যন্ত গিয়েই থেমে যায়, হৃদয় পর্যন্ত পৌছে না, তা সে কথা যতােই বিজ্ঞসুলভ ও অলংকারসমৃদ্ধ হােক না কেন। পক্ষান্তরে একেবারে সরল সহজ কথাও যদি আবেগ ও দরদ সহকারে বলা হয় বক্তার কাজ তার কথাকে সমর্থন করে, তাহলে সেই কথাই সবচেয়ে ফলপ্রসু হয়ে থাকে এবং অন্যদেরকেও কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। যারা এক সময় দাবী জানাতে যে, নবী ও রসূল ফেরেশতাদের মধ্য থেকে হওয়া উচিত এবং আজকাল যারা বলে যে, নবী ও রসূলের মানুষ সুলভ আবেগ অনুভূতি থেকে মুক্ত থাকা উচিত-এই উভয় শ্রেণীর লােকেরাই নিছক গােয়ার্তুমির পরিচয় দিয়ে থাকে। তারা এই সত্য সম্পর্কে উদাসীন যে, ফেরেশতারা তাদের জন্মগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষের মতাে জীবন যাপন করে না এবং করতে পারে না। অনুরূপভাবে দেহের দাবী ও চাহিদা কী এবং বিশিষ্ট মানুষের আবেগ-অনুভূতি কেমন তাও ফেরেশতাদের অনুধাবন করা সম্ভব নয়। অথচ যিনি নবী বা রসূল হবেন, তার পক্ষে এইসব আবেগ অনুভূতি ও চাহিদা অনুধাবন করা একান্ত জরুরী। তার বাস্তব জীবনে সেসব আবেগ অনুভূতি ও চাহিদার প্রতিফলন ঘটাও আবশ্যক-যাতে তিনি তার অনুসারী জনগণের বাস্তব জীবনের অনুসরণীয় নীতিমালাকে নিজ জীবনে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এখানে আরাে একটা বিষয় বুঝে নেয়া দরকার, মানুষ যদি জানতে পারে যে, রসূল তার মতাে কোনাে মানুষ নয়, বরং ফেরেশতা, তাহলে সে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে তার অনুকরণ ও অনুসরণে আগ্রহী হবে না। কেননা তিনি ভিন্ন জাতের ও ভিন্ন স্বভাবের ব্যক্তিত্ব। তাই তার দৈনন্দিন জীবনে নবীর তরিকা ও পদ্ধতির আনুগত্য করার আগ্রহ তার থাকা সম্ভব নয়। অথচ নবীর জীবন হচ্ছে অন্য মানুষের জন্যে একটা উদ্বুদ্ধকারী মডেল বা আদর্শ। যারা নবীদের সম্পর্কে উপরােক্ত মতামত পােষণ করে থাকেন, তারা এই সত্যও ভুলে গেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের মধ্য থেকে রাসূল পাঠানাের ব্যবস্থা করে মানব জাতিকে কিরূপ সম্মানিত করেছেন, যাতে তারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাদের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারেন এবং তাদের কাছ থেকে ওহী গ্রহণ করতে পারেন। এসব কারণেই আল্লাহ তায়ালা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা চালু করেছেন যে, মানুষের মধ্য থেকে নবী ও রসূল মনােনীত করবেন। তাদেরকে মানুষের মতােই জন্ম ও মৃত্যুর বিধানের আওতাভুক্ত করবেন। তাদেরই মতাে আবেগ অনুভূতির অধিকারী করবেন। তাদেরই মতাে সুখ-দুঃখ ও আশা আকাংখার অংশীদার করবেন এবং তাদেরই মতাে আহার বিহার ও নারী সংসর্গের বৈশিষ্ট্যে ভূষিত করবেন। আর সবচেয়ে বড়ো, সবচেয়ে পূর্ণাংগ ও সর্বশেষ নবী যার নবুওত কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী, তাকে বানিয়েছেন পৃথিবীতে মানব জাতির জন্যে সবচেয়ে পূর্ণাংগ আদর্শ, যদিও তিনি ছিলেন মনুষ্য সুলভ যাবতীয় জৈবিক বৈশিষ্ট্য, দাবী, চাহিদা, ও আবেগ অনুভূতিসম্পন্ন। এ হচ্ছে নবী ও রসূল মনােনয়নে আল্লাহর শাশ্বত নীতি। অনুরূপভাবে নবী-রসূলদেরকে ও তার অনুসারীদেরকে রক্ষা করা এবং অত্যাচারী, মিথুক সাব্যস্তকারী ও সীমালংঘনকারী সবাইকে ধ্বংস করাও আল্লাহর চিরন্তন নীতি। ‘তারপর আমি তাদের সাথে করা ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছি, তাদেরকে ও অন্য যাদেরকে ইচ্ছা করেছি রক্ষা করেছি এবং সীমালংঘনকারীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি।’ বস্তুত নবী রসূলদের নিয়ােগের মতাে এটাও একটা শাশ্বত নীতি। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ও তাদের সেই সব মােমেন সাথীদেরকে রক্ষা করার ওয়াদা করেছেন, যারা যথার্থ ও সত্যিকার ঈমানদার এবং যাদের বাস্তব কাজ তাদের ঈমানের অনুরূপ। আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে করা ওয়াদা পূরণ করেছেন এবং সীমালংঘনকারীদেরকে ধ্বংস করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার এই নীতির ঘোষণা দিয়ে সেই সব মােশরেককে সতর্ক করেছেন, যারা রাসূল(স.) ও মােমেনদেরকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করে, নির্যাতন করে এবং তাদের সাথে আচরণে সীমালংঘন করে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন যে, রসূল(স.) তাদের জন্যে রহমতস্বরূপ। তাকে কোনাে বস্তুগত অলৌকিক নিদর্শন দিয়ে পাঠাননি, যাতে তা প্রত্যাখ্যান করলে তাদেরকে পূর্ববর্তীদেরকে সমূলে ধ্বংস হয়ে যেতে না হয়। তাকে শুধু এমন একখানা কেতাব দেয়া হয়েছে- যা তাদেরকে সম্মানিত করে। কেননা সেই কতাব তাদেরই ভাষায় নাযিল হয়েছে, তাদের জীবনকে তা সুগঠিত ও পরিশীলিত করে, তাদের মধ্য থেকে এমন একটা উম্মাত গড়ে তােলে, যা বিশ্ব নেতৃত্বের অধিকারী এবং যা সমগ্র মানব জাতির কাছে একটা উল্লেখযােগ্য উম্মাহ। আর এই কিতাব মানুষের বিবেকবুদ্ধির আয়ত্তাধীন। তা নিয়ে সে চিন্তা গবেষণা করতে পারে এবং মনুষ্যত্বের উচ্চতর সােপানে উন্নীত হতে পারে।

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# এটি হচ্ছে, “এ ব্যক্তি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ” তাদের এ উক্তির জবাব। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মানবিক সত্তাকে তাঁর নবী না হওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে পেশ করতো। জবাব দেয়া হয়েছে যে, পূর্ব যুগের যেসব লোককে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে বলে তোমরা মানো তাঁরা সবাই-ই মানুষ ছিলেন এবং মানুষ থাকা অবস্থায়ই তাঁরা আল্লাহর অহী লাভ করেছিলেন। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইয়াসীন, ১১ টীকা)

# যে ইহুদীরা ইসলাম বৈরিতার ক্ষেত্রে আজ তোমাদের সাথে গলা মিলিয়ে চলছে এবং তোমাদেরকে বিরোধিতা করার কায়দা কৌশল শেখাচ্ছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, মূসা ও বনী ইসরাঈলের অন্যান্য নবীগণ কী ছিলেন? মানুষ ছিলেন, না অন্য কোন জীব?

 

# পূর্ববর্তী ইতিহাসের শিক্ষা শুধুমাত্র এতটুকু কথা বলে না যে, পূর্বে যেসব রসূল পাঠানো হয়েছিল তারা মানুষ ছিলেন বরং একথাও বলে যে, তাদের সাহায্য ও সমর্থন করার এবং তাদের বিরোধিতাকারীদেরকে ধ্বংস করে দেবার যতগুলো অঙ্গীকার আল্লাহ তাদের সাথে করেছিলেন সবই পূর্ণ হয়েছে এবং যেসব জাতি তাদের প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছিল তারা সবাই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই এখন নিজেদের পরিণতি তোমরা নিজেরাই চিন্তা করে নাও।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর:

মানুষের মধ্য হতে কেউ যে রাসূল হতে পারেন কাফিররা এটা অস্বীকার করতো। তাদের এই বিশ্বাস খণ্ডন করার জন্যে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (সাঃ) তোমার পূর্বে যত নবী ও রাসূল এসেছিল সবাই তো মানুষই ছিল, তাদের কেউই ফেরেশতা ছিল না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যত সব রাসূল পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে ওয়াহী করেছিলাম তারা সূবাই শহরবাসী মানুষই ছিল।” (১২৪ ১০৯) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ) ! তুমি বলঃ আমি তো নতুন অসাধারণ এবং প্রথম নবী নই।” (৪৬:১) এই কাফিরদের পূর্ববর্তী কাফিররাও তাদের নবীদেরকে মান্য করার ব্যাপারে এই কৌশলই অবলম্বন করেছিল। যেমন কুরআন কারীমে এই বর্ণনা রয়েছে যে, তারা বলেছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “একজন মানুষই কি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করবে?” (৬৪:৬) এখানে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আচ্ছা, তোমরা আহলে ইলম অর্থাৎ ইয়াহুদী, খৃস্টান ও অন্যান্য দলকে জিজ্ঞেস করে দেখো তো যে, তাদের কাছে কি মানুষই রাসূল হয়ে এসেছিল, না ফেরেশতা?” এটাও আল্লাহ তাআলার একটা অনুগ্রহ যে, মানুষের কাছে তাদেরই মত মানুষকে রাসূলরূপে প্রেরণ করে থাকেন যাতে তারা তাদের সাথে উঠা বসা করতে পারে এবং তাদের নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। আর যাতে তারা তাদের কথাই বুঝতে পারে। তাদের কেউই এরূপ দেহ বিশিষ্ট ছিল না যে, তাদের পানা হারের প্রয়োজন হতো না। বরং তারা সবাই পানাহারের মুখাপেক্ষী ছিল যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার পূর্বে যতগুলি রাসূল পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই খাদ্য খেতো এবং বাজারে চলাফেরাও করতো।” (২৫:২০) অর্থাৎ তারা সবাই মানুষই ছিল। মানুষের মতই তারা পানাহার করতো এবং কাজকর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যে বাজারে গমনাগমন করতে থাকতো।
সুতরাং এগুলো তাদের পয়গম্বরীর পরিপন্থী নয়। যেমন মুশরিকরা বলতোঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটা কেমন রাসূল যে, সে খাদ্য খায় ও বাজারে গমনাগমন করে? তার কাছে কোন ফেরেশতা আসে না কেন, যে তার সংগে থাকত সতর্ককারীরূপে? আচ্ছা এটা না হয় না-ই হলো, তা হলে তাকে কোন ধন ভাণ্ডারের মালিক বানিয়ে দেয়া হয় নাই কেন? কেনই বা তাকে কোন বাগান প্রদান করা হয় নাই। যদ্ধারা সে স্বচ্চলভাবে জীবন যাপন করতো?” (২৫:৭-৮) অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী নবীরাও দুনিয়ায় চিরস্থায়ী ভাবে অবস্থান করে নাই। এসেছে ও গিয়েছে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের পূর্বে কোন মানুষের জন্যে আমি চিরস্থায়ী জীবন করি নাই।” (২১৪ ৩৪) তাদের কাছে অবশ্যই আল্লাহর ওয়াহী আসতো এবং ফেরেশতারা তাঁর আহ্কাম পৌঁছিয়ে দিতেন। ফুমের কারণে ধ্বংস হয়ে যায় এবং তারা পরিত্রাণ পায়। তাদের অনুসারীরাও সফলকাম হয় এবং সীমা অতিক্রমকারীদেরকে অর্থাৎ নবীদেরকে যারা মিথ্যা প্রতিপাদন করেছিল তাদেরকে তিনি ধ্বংস করে দেন।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#922)
[ فَسْئَلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
So ask the people of the Reminder if you do not know.]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 07-09
www.motaher21.net

21:7

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا قَبۡلَکَ اِلَّا رِجَالًا نُّوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِمۡ فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۷﴾

And We sent not before you, [O Muhammad], except men to whom We revealed [the message], so ask the people of the message if you do not know.

 

The Messengers are no more than Human Beings

Here Allah refutes those who denied that human Messengers could be sent:

وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِمْ

And We sent not before you but men to whom We revealed.

meaning, all the Messengers who came before you were men, human beings. There were no angels among them.

This is like the Ayat:

وَمَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِى إِلَيْهِمْ مِّنْ أَهْلِ الْقُرَى

And We sent not before you any but men unto whom We revealed, from among the people of townships. (12:109)

قُلْ مَا كُنتُ بِدْعاً مِّنَ الرُّسُلِ

Say:”I am not a new thing among the Messengers… (46:9)

Allah tells us that the previous nations denied that and said:

أَبَشَرٌ يَهْدُونَنَا

“Shall mere men guide us!” (64:6)

So Allah says here:

فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

So ask the people of the Reminder if you do not know.

meaning, ask the people of knowledge among the nations such as the Jews and Christians and other groups:`were the Messengers who came to you human beings or angels!’ Indeed they were human beings.

This is a part of the perfect blessing of Allah towards His creation:He sent to them Messengers from among themselves so that they could receive the Message from them and learn from them

21:8

وَ مَا جَعَلۡنٰہُمۡ جَسَدًا لَّا یَاۡکُلُوۡنَ الطَّعَامَ وَ مَا کَانُوۡا خٰلِدِیۡنَ ﴿۸﴾

And We did not make the prophets forms not eating food, nor were they immortal [on earth].

 

وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لاَّ يَأْكُلُونَ الطَّعَامَ

And We did not place them in bodies that did not eat food…

meaning, rather they had bodies that ate food, as Allah says:

وَمَأ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلاَّ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِى الاٌّسْوَاقِ

And We never sent before you any of the Messengers but verily, they ate food and walked in the markets. (25:20)

meaning, they were human beings who ate and drank like all other people, and they went to the marketplaces to earn a living and engage in business; that did not affect them adversely or reduce their status in any way, as the idolators imagined.

مَا لِهَـذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِى فِى الاٌّسْوَاقِ لَوْلا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِير

اًأَوْ يُلْقَى إِلَيْهِ كَنْزٌ أَوْ تَكُونُ لَهُ جَنَّةٌ يَأْكُلُ مِنْهَا

And they say:”Why does this Messenger eat food, and walk about in the markets. Why is not an angel sent down to him to be a warner with him Or (why) has not a treasure been granted to him, or why has he not a garden whereof he may eat!” (25:7-8)

وَمَا كَانُوا خَالِدِينَ

nor were they immortals.

meaning, in this world; on the contrary, they lived, then they died.

وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ

And We granted not to any human being immortality before you. (21:34)

But what distinguished them from others was that they received revelation from Allah, and the angels brought down to them from Allah His rulings concerning His creation, what He commanded and what He prohibited

21:9

ثُمَّ صَدَقۡنٰہُمُ الۡوَعۡدَ فَاَنۡجَیۡنٰہُمۡ وَ مَنۡ نَّشَآءُ وَ اَہۡلَکۡنَا الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۹﴾

Then We fulfilled for them the promise, and We saved them and whom We willed and destroyed the transgressors.

 

ثُمَّ صَدَقْنَاهُمُ الْوَعْدَ

Then We fulfilled to them the promise.

the promise that their Lord made to destroy the evildoers. Allah fulfilled His promise and did that.

He says:

فَأَنجَيْنَاهُمْ وَمَن نَّشَاء

So We saved them and those whom We willed,

meaning, their followers among the believers,

وَأَهْلَكْنَا الْمُسْرِفِينَ

but We destroyed Al-Musrifin.

meaning, those who disbelieved the Message brought by the Messengers

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply