أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯২৩)
[ کِتٰبًا فِیۡہِ ذِکۡرُکُمۡ ؕ
এখানে সবার কথা হয়েছে।]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
১০-১৫ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:১০
لَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكُمْ كِتٰبًا فِیْهِ ذِكْرُكُمْ١ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ۠
হে লোকেরা! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তোমরা কি বুঝ না?
২১:১১
وَ كَمْ قَصَمْنَا مِنْ قَرْیَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً وَّ اَنْشَاْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا اٰخَرِیْنَ
কত অত্যাচারী জনবসতিকে আমি বিধ্বস্ত করে দিয়েছি এবং তাদের পর উঠিয়েছি অন্য জাতিকে।
২১:১২
فَلَمَّاۤ اَحَسُّوْا بَاْسَنَاۤ اِذَا هُمْ مِّنْهَا یَرْكُضُوْنَؕ
যখন তারা আমার আযাব অনুভব করলো, পালাতে লাগলো সেখান থেকে।
২১:১৩
لَا تَرْكُضُوْا وَ ارْجِعُوْۤا اِلٰى مَاۤ اُتْرِفْتُمْ فِیْهِ وَ مَسٰكِنِكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْئَلُوْنَ
(বলা হলো) “পালায়ও না, চলে যাও তোমাদের গৃহে ও ভোগ্য সামগ্রীর মধ্যে, যেগুলোর মধ্যে তোমরা আরাম করছিলে, হয়তো তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
২১:১৪
قَالُوْا یٰوَیْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظٰلِمِیْنَ
বলতে লাগলো, “হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী ছিলাম।”
২১:১৫
فَمَا زَالَتْ تِّلْكَ دَعْوٰىهُمْ حَتّٰى جَعَلْنٰهُمْ حَصِیْدًا خٰمِدِیْنَ
আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত না করি, জীবনের একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি।
১০-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
। *কোরআনই আরব জাতির উত্থান ঘটিয়েছে : ‘নিশ্চয় আমি তােমাদের কাছে এমন এক কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তােমাদের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে কি তােমরা বুঝবে না?’ কোরআন এমন একটা মােজেযা, এমন একটা অলৌকিক নিদর্শন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অবধি সমগ্র মানব জাতির জন্যে উন্মুক্ত, অন্যান্য ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অলৌকিক নিদর্শনের মতাে নয়, যা একই প্রজন্মে শেষ হয়ে যায় এবং সে প্রজন্মের যারা তা দেখে, তারা ছাড়া আর কেউ তা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। বস্তুত এই কোরআন দ্বারাই বিশ্বের দিকে দিকে আরবদের সম্মান ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে যখন তারা তাকে বহন করে সমগ্র প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে আরবদের কোথাও কোনাে উল্লেখ ছিল না, মানব জাতিকে দেয়ার মতাে কোনাে অবদানও তাদের ছিলাে না, যা তাদের পরিচিতি ও সুনাম সুখ্যাতির বিস্তার ঘটাতে পারে। এই কিতাবকে যতােদিন তারা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাে, ততদিন মানব জাতি তাদেরকে স্মরণ করেছে ও সম্মান করেছে। মানবজাতিকে তারা বহু শতাব্দী যাবত নেতৃত্ব দিয়েছে। এ কিতাব যতােদিন তাদের জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছে, ততােদিন তাদের ও বিশ্ববাসীর জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির ঢল নেমেছে। কিন্তু যখনই তারা কোরআনকে ত্যাগ করেছে, বিশ্ববাসীও তাদেরকে বর্জন করেছে, তাদের সুনাম ও সুখ্যাতি উধাও হয়ে গেছে, তারা অন্যান্য জাতির অত্যাচারের শিকার হয়েছে। অথচ যখন তারা এই কিতাবের অনুসরণ করতাে, তখন বিশ্বের অনান্য জাতি নির্যাতিত হতাে, আর মুসলমানরা থাকতো নিরাপদ। আরবদের কাছে এই কোরআন ছাড়া বিশ্ববাসীকে দেয়ার মতাে আর কোনাে সম্পদ নেই। আজ তারা যদি বিশ্ববাসীকে এই সম্পদটা দিতে পারে, তবে পুনরায় তাদের পরিচিতি, সুনাম বিস্তার লাভ করবে। কেননা বিশ্ব এতে এমন জিনিস পাবে, যা তার জন্যে উপকারী ও কল্যাণকর। কিন্তু তারা যদি বিশ্ববাসীকে কেবল আরব জাতীয়তা উপহার দিতে চায়। তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, এ জিনিসটার কোনােই মূল্য নেই। এই কিতাব ছাড়া আরব জাতীয়তা মূল্যহীন। বিশ্ববাসী আরবদেরকে যদি চিনে থাকে, তবে তাদের এই কিতাব, এই আকীদা বিশ্বাস এবং এই কেতাব থেকে আহরিত আদর্শ জীবন ব্যবস্থার জন্যেই চিনেছে। নিছক আরব হিসেবে তাদেরকে চিনেনি। কেননা মানবেতিহাসে এর কোনােই গুরুত্ব নেই। সভ্যতার অভিধানে এই জিনিসটা অর্থহীন। আরবরা ইসলামী সভ্যতা ও তার চিন্তাধারার বিস্তার ঘটিয়ে বিশ্বময় পরিচিতি ও সুনাম কুড়িয়েছে। এ জিনিসটা এমন যে, মানবেতিহাসে ও সভ্যতার অভিধানে এর অর্থ আছে। আলোচ্য আয়াতটিতে (আমি তােমাদের কাছে একখানা কিতাব পাঠিয়েছি…) কোরআন এ দিকেই ইংগিত করেছে। প্রত্যেক নতুন জিনিসকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে, উদাসীনতা উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও উপহাসের মাধ্যমে প্রতিরােধ করতে অভ্যস্ত মােশরেকদেরকে সম্বােধন করে সে একথা বলেছে। আল্লাহ তায়ালা এ কোরআনকে আরবদের মধ্যে নাযিল করেছেন, এটাও তাদের জন্যে একটা করুণা স্বরূপ। তাদের কাছে তাদের চাহিদা মােতাবেক কোনাে বস্তুগত মােজেযা নাযিল না করে তাদের ওপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। নচেৎ পূর্ববর্তী জাতিগুলাের মতােই দশা হতাে তাদেরও যারা মােজেযাকে অস্বীকার করার পর তাৎক্ষণিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি ধ্বংস করে দিয়েছি কতাে জনপদকে, যার অধিবাসীরা অত্যাচারী ছিলাে…'(আয়াত ১১-১৫) এখানে যে কাসম শব্দটা ব্যবহার হয়েছে, তা ধ্বংসের ভয়াবহতম রূপকে ফুটিয়ে তােলে। ‘কাসম’ জড় ও জীবসহ যাবতীয় জিনিসকে সর্বতােভাবে ধ্বংস করা বুঝায়। আর ‘ইনশা’ বুঝায়, শুধু গঠনকামী ও পুনরুত্থানকামী লােকদের গঠনমূলক কাজকে। ধ্বংসযজ্ঞ যখন ঘটে, তখন তা নগর ও নগরবাসী উভয়কেই ধ্বংস করে। কিন্তু গঠন কাজটা অধিবাসীদেরকে দিয়েই শুরু হয় এবং তারা গৃহ নির্মাণ পুনরারম্ভ করে। তবে বিষয়টা এখানে যেভাবে পেশ করা হয়েছে তা ধ্বংসযজ্ঞকে অধিকতর ভয়াবহ আকারে প্রতিফলিত করে। আর কোরআনের চিরাচিরিত শৈল্পিক বর্ণনাভংগী অনুসারে এই বিশেষ ভাবটা বােঝানােই এখানে উদ্দেশ্য। এরপর আমরা দৃষ্টি দেব আল্লাহর আযাবে নিপতিত সেইসব জনপদের দিকে। আযাব এসে যাওয়ার পর পুরােপুরি নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগে সে জনপদের অধিবাসীরা ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরের মতাে ছুটোছুটি করছিলাে। ‘যখন তারা আমার আযাব টের পেলাে, অমনি তারা সেখান থেকে ছুটে পালাতে লাগলাে।'(আয়াত ১২) অর্থাৎ তারা যখন বুঝতে পেরেছে যে, তারা আল্লাহর আযাবের কবলে পড়তে যাচ্ছে, তখন তারা ছুটাছুটি করে জনপদ থেকে পালাতে লাগলাে। তারা ভেবেছিলাে যে, ছুটে পালালে আযাব থেকে বাঁচা যাবে। তারা এতাে জোরে দৌড়াবে যে, আযাব তাদেরকে ধরতেই পারবে না। অথচ আসলে দৌড়াদৌড়ি খাঁচার ভেতরে ইদুরের দৌড়াদৌড়ির মতাে, যার পেছনে কোনাে চিন্তা ও বিচার বিবেচনা নেই। এই পর্যায়ে তারা শুনতে পায় অত্যন্ত রুঢ় ভাষায় উচ্চারিত পরিহাস। ‘পালিয়ােনা, বরং যে স্থানে তােমরা বাড়াবাড়ি করেছিলে সেখানে ও তােমাদের বাসস্থানেই ফিরে যাও, হয়তাে তােমরা জিজ্ঞাসিত হবে।'(আয়াত ১৩) অর্থাৎ তােমাদের জনপদ থেকে চলে যেয়াে না, বরং তােমাদের সুখময় ও আনন্দময় বাসস্থানে ফিরে যাও। হয়তাে তােমাদেরকে সে সব জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, কিভাবে ওগুলােকে কাজে লাগিয়েছো। প্রকৃত পক্ষে সেখানে কোনাে প্রশ্নোত্তরের অবকাশ ছিলাে না। এটা ছিলাে নিছক এক নির্মম পরিহাস! এই সময় তাদের হুশ ফিরে আসে এবং তারা বুঝতে পারে যে, আল্লাহর আযাব থেকে পালানােরও পথ নেই। এ আযাব তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। কোনাে ছুটোছুটিতে লাভ হবে না। পালিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তাই তারা তাওবা ও ইসতেগফারের চেষ্টা করবে। ‘তারা বললো, হায়! পােড়া কপাল! আমরা তাে যুলুম করে ফেলেছি।’ কিন্তু তখন আর সময় নেই। তারা যতাে বিলাপই করুক, তাতে আর কোনাে লাভ হবে না। তাদের এই সব বিলাপ চলতে থাকলাে যতােক্ষণ না আমি তােমাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত আগুনের মতাে বানিয়ে ফেললাম। কর্তিত শস্য! কী সাংঘাতিক দৃশ্য! জীবন নেই, নড়াচড়া নেই। একেবারেই নিঝুম ও নিস্তব্ধ! অথচ এক মুহূর্ত আগেও সেখানে জীবনের কতাে চাঞ্চল্য ছিলাে!
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# মক্কার কাফেররা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অবিন্যস্তভাবে যেসব কথা বলে চলছিল যে, তিনি যা এনেছেন তা কবিত্ব, যাদু, বিভ্রান্ত স্বপ্ন, মনগড়া কাহিনী ইত্যাদি। এটি হচ্ছে সেগুলোর একটি সম্মিলিত জবাব। এতে বলা হচ্ছে, এ কিতাবে এমন কি অভিনব কথা বলা হচ্ছে যা তোমরা বুঝতে পারছো না, যে কারণে সে সম্পর্কে তোমরা এত বেশী বিপরীতধর্মী মত গঠন করছো? এর মধ্যে তো তোমাদের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তোমাদেরই মনস্তত্ব ও তোমাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদেরই স্বভাব, প্রকৃতি, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তোমাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে করে পেশ করা হয়েছে যা প্রকৃত সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে। তোমাদেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকে দোষ-গুণের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখানো হচ্ছে, যা সঠিক বলে তোমাদের নিজেদের বিবেকই সাক্ষ্য দেয়। এসব কথার মধ্যে কী এমন জটিল বিষয় আছে, যা বুঝতে তোমাদের বুদ্ধিবৃত্তি অক্ষম?
# যখন আল্লাহর আযাব মাথার ওপর এসে পড়েছে এবং তারা জানতে পেরেছে যে, তাদের ধ্বংস এসে গেছে।
# এটি বড়ই অর্থবহ বাক্য। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। যেমন একটু ভালোভাবে এ শাস্তিটি প্রত্যক্ষ করো, যাতে কাল যদি কেউ এর অবস্থা জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন ভালোভাবে বলতে পারো। নিজের আগের ঠাটবাট বজায় রেখে সাড়ম্বরে আবার মজলিস গরম করো। হয়তো এখনো তোমাদের চাকরেরা বুকে হাত বেঁধে জিজ্ঞেস করবে, হুজুর, বলুন কি হুকুম। নিজের আগের পরিষদ ও কমিটি নিয়ে বসে যাও, হয়তো এখনো তোমার বুদ্ধিবৃত্তিক পরামর্শ ও জ্ঞানপুষ্ট মতামত থেকে লাভবান হবার জন্য দুনিয়ার লোকেরা তৈরী হয়ে আছে।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১০-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
কুরআন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সহ সকল মুসলিমদের জন্য সম্মান, মর্যাদা ও গৌরবের বস্তু। كِتٰبًا দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন, যিকর দ্বারা উদ্দেশ্য সম্মান। অর্থাৎ আমি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য যে কুরআন নাযিল করেছি তাতো তোমাদের সম্মান ও মর্যাদার বস্তু। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মান ও মর্যাদা হল, এটা তাঁর ওপর নাযিল করা হয়েছে, এটা তাঁর চিরস্থায়ী মু‘জিযাহ। আর মুসলিমদের জন্য সম্মান হল যদি মুসলিমরা এ কুরআন অনুসরণ করে তাহলে দুনিয়াতে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, তারা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে যেমন অধিষ্ঠিত হয়েছিল সাহাবায়ে কেরাম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ اللّٰهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا، وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ)
আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবের মাধ্যমে একজাতিকে মর্যাদার আসনে উন্নীত করেন আরেক জাতিকে করেন অপমানিত। (সহীহ মুসলিম হা: ৮১৭) আখিরাতের সম্মান হল, কুরআন আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিবে যদি তা মেনে চলি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ
কুরআন তোমার পক্ষে দলীল হবে অথবা তোমার বিপক্ষে দলীল হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ২২৩)
সুতরাং মুসলিমরা যদি এ কুরআন মেনে চলে তাহলে তারা মর্যাদার আসনে সমাসীন হতে পারবে যে মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছিল সাহাবায়ে কেরাম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি অনেক জনপদকে তাদের জুলুমের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছেন, তারপর অন্যজাতি নিয়ে এসেছেন। قصم অর্থ ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা। যেমন সূরা মু’মিনূনে বলা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা নূহ (عليه السلام)-এর অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতি তথা সামুদ জাতি নিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে যারা অবাধ্য হয়েছিল তাদেরকে ধ্বংস করে অন্য জাতি তথা লূত, শু‘আইব ও আইয়ূব প্রমুখ নাবীদের জাতি নিয়ে এসেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُوْنِ مِنْۭ بَعْدِ نُوْحٍ ط وَكَفٰي بِرَبِّكَ بِذُنُوْبِ عِبَادِه۪ خَبِيْرًاۭبَصِيْرًا)
“নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করেছি! তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:১৭)
ركض অর্থ ঘোড়ার ওপর চড়ে তাকে দৌড়ানোর জন্য পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করা। অর্থাৎ যখন তারা চোখ দ্বারা আযাব দেখল এবং কান দ্বারা গর্জন শুনতে পেল তখন খুব দ্রুতগতিতে পলায়ন করার চেষ্টা করল। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তিরস্কার করে বলছেন, তোমরা পলায়ন করা না বরং সুখ-শান্তি ও ভোগ-বিলাসের জন্য যে উপকরণ তৈরি সংগ্রহ, জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ তৈরি করেছ সেগুলোর দিকে ফিরে এসো। কিন্তু তাদের পরিত্রাণের কোন উপায় নেই যেখানেই যাক না কেন।
خامد অর্থ নিভে যাওয়া আগুন। অর্থাৎ তাদেরকে শেষ পর্যন্ত কাটা ফসল ও নিভে যাওয়া আগুনের মত ভষ্মস্তুপে পরিণত না করা পর্যন্ত দুঃখ, অকল্যাণ ও আফসোসের আর্তনাদ করতেই থাকবে।
অতএব বোঝা গেল যে, আল্লাহ তা‘আলা কোন জনপদকে অযথা ধ্বংস করবেন না বরং তারা যখন জুলুমের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখনই তাদের ওপর নেমে আসে শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি নেমে আসার পর আর্তনাদ করে কোন উপকার হবে না। সুতরাং মক্কাবাসী তোমরা কেন এসব উপদেশ বাণী পাওয়ার পরেও সতর্ক হচ্ছো না?
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন মুসলিমের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাধ্যম।
২. কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ এক জাতিকে সম্মানিত করেন, অপর জাতিকে অপমানিত করেন।
৩. যুগে যুগে অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতি নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশরাই নাবীদের বিরোধিতা করেছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১০-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় পাক কালামের ফজিলত বর্ণনা করতঃ ওর মর্যাদার প্রতি আগ্রহ উৎপদিনের নিমিত্তে বলেনঃ তোমাদের উপর আমি এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। এতে তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব, তোমাদের দ্বীন, তোমাদের শরীয়ত এবং তোমাদের কথা আলোচিত হয়েছে। তবুও কি তোমরা বুঝবে না ও জ্ঞান লাভ করবে না? তোমরা কি এই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামতের কদর করবে না? যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার জন্যে ও তোমার কওমের জন্যে এটা উপদেশ এবং সত্বরই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।” (৪৩:৪৪)।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি ধ্বংস করেছি কতজনপদ, যার অব্বিাসীরা ছিল যালিম। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “নূহের (আঃ) পরে আমি বহু জনপদকে ধ্বংস করে দিয়েছি।” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “এমন বহু জনপদ, যা পূর্বে উন্নতি ও জঁকজমকপূর্ণ ছিল, কিন্তু পরে জনগণের জুলুমের কারণে আমি ওগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছি।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর আমি তাদের স্থলে সৃষ্টি করেছি অপর জাতিকে। এক কওমের পর অন্য কওম এবং এরপর আর এক কওম, এভাবেই একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হতে থেকেছে।
যখন ঐ লোকগুলি শাস্তি আসতে দেখে নেয় তখন তাদের বিশ্বাস হয়ে যায় যে, আল্লাহর নবীর ফরমান মোতাবেক আল্লাহর শান্তি এসে গেছে। তখন তারা হতবুদ্ধি হয়ে পালাবার পথ খুঁজতে থাকে। এদিক ওদিক তারা দৌড়তে শুরু করে। তখন তাদেরকে বলা হয়ঃ পলায়ন করো না, বরং নিজেদের প্রাসাদের দিকে এবং আরাম আয়েশ ও সুখ-সামগ্রীর দিকে ফিরে এসো। তোমাদের সাথে প্রশ্নোত্তর চলবে যে, তোমরা আল্লাহর নিয়ামত রাজির জন্যে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলে কি না। এই নির্দেশ হবে তাদেরকে ধমক দেয়া এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হিসেবে। ঐ সময় তারা নিজেদের পাপরাশির কথা স্বীকার করে নেবে। তারা স্পষ্টভাবে বলবেঃ “আমরা তো ছিলাম অত্যাচারী। কিন্তু তখনকার স্বীকার করে কোনই লাভ হবে না। আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদের এই আর্তনাদ চলতে থাকে যতক্ষণ না আমি তাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি সদৃশ না করি।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#923)
[ کِتٰبًا فِیۡہِ ذِکۡرُکُمۡ ؕ
It is mention of you all.]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 10-15
www.motaher21.net
21:10
لَقَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکُمۡ کِتٰبًا فِیۡہِ ذِکۡرُکُمۡ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿٪۱۰﴾
We have certainly sent down to you a Book in which is your mention. Then will you not reason?
The Virtue of the Qur’an Here
Allah points out the noble status of the Qur’an and urges them to recognize its worth:
لَقَدْ أَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ
Indeed, We have sent down for you a Book in which there is Dhikrukum.
Ibn Abbas said:
“Honor for you.”
أَفَلَ تَعْقِلُونَ
Will you not then understand!
means, will you not understand this blessing, and accept it!
This is like the Ayah:
وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ وَسَوْفَ تُسْـَلُونَ
And verily, this is indeed a Reminder for you and your people, and you will be questioned. (43:44)
How the Evildoers were destroyed
Allah tells
21:11
وَ کَمۡ قَصَمۡنَا مِنۡ قَرۡیَۃٍ کَانَتۡ ظَالِمَۃً وَّ اَنۡشَاۡنَا بَعۡدَہَا قَوۡمًا اٰخَرِیۡنَ ﴿۱۱﴾
And how many a city which was unjust have We shattered and produced after it another people.
وَكَمْ قَصَمْنَا مِن قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً
How many a town given to wrongdoing, have We destroyed,
meaning, they were very many.
This is like the Ayah:
وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُونِ مِن بَعْدِ نُوحٍ
And how many generations have We destroyed after Nuh! (17:17)
فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا
And many a township did We destroy while they were given to wrongdoing, so that it lie in ruins. (22:45)
وَأَنشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا اخَرِينَ
and raised up after them another people!
means, another nation which came after them
21:12
فَلَمَّاۤ اَحَسُّوۡا بَاۡسَنَاۤ اِذَا ہُمۡ مِّنۡہَا یَرۡکُضُوۡنَ ﴿ؕ۱۲﴾
And when its inhabitants perceived Our punishment, at once they fled from it.
فَلَمَّا أَحَسُّوا بَأْسَنَا
Then, when they sensed Our torment,
when they realized that the torment would undoubtedly come upon them, just as their Prophet had warned them,
إِذَا هُم مِّنْهَا يَرْكُضُونَ
behold, they (tried to) flee from it.
they tried to run away
21:13
لَا تَرۡکُضُوۡا وَ ارۡجِعُوۡۤا اِلٰی مَاۤ اُتۡرِفۡتُمۡ فِیۡہِ وَ مَسٰکِنِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تُسۡـَٔلُوۡنَ ﴿۱۳﴾
[Some angels said], “Do not flee but return to where you were given luxury and to your homes – perhaps you will be questioned.”
لَاا تَرْكُضُوا وَارْجِعُوا إِلَى مَا أُتْرِفْتُمْ فِيهِ وَمَسَاكِنِكُمْ
Flee not, but return to that wherein you lived a luxurious life, and to your homes,
This is a way of ridiculing them.
It will be said to them by way of ridicule:”Do not run away from the coming torment; go back to the delights and luxuries and fine homes in which you were living.”
Qatadah said,
“Mocking them.”
لَعَلَّكُمْ تُسْأَلُونَ
in order that you may be questioned.
about whether you gave thanks for what you had.
قَالُوا يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ
21:14
قَالُوۡا یٰوَیۡلَنَاۤ اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۱۴﴾
They said, “O woe to us! Indeed, we were wrongdoers.”
They cried:”Woe to us! Certainly we have been wrong- doers.”
They will confess their sins when it will be of no benefit to them.
فَمَا زَالَت تِّلْكَ دَعْوَاهُمْ حَتَّى جَعَلْنَاهُمْ حَصِيدًا خَامِدِينَ
21:15
فَمَا زَالَتۡ تِّلۡکَ دَعۡوٰىہُمۡ حَتّٰی جَعَلۡنٰہُمۡ حَصِیۡدًا خٰمِدِیۡنَ ﴿۱۵﴾
And that declaration of theirs did not cease until We made them [as] a harvest [mowed down], extinguished [like a fire].
And that cry of theirs ceased not, till We made them as a field that is reaped, extinct.
meaning, “they will keep on saying that, admitting their wrong-doing, until We harvest them as it were, and their movements and voices come to a stop.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran