(বই#৯২৪) [ وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَہُمَا لٰعِبِیۡنَ ﴿۱۶﴾ আকাশ ও পৃথিবী এবং যা উভয়ের অন্তর্বর্তী তা আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।] সূরা:- আল্ আম্বিয়া। সুরা:২১ ১৬-২৯ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯২৪)
[ وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَہُمَا لٰعِبِیۡنَ ﴿۱۶﴾
আকাশ ও পৃথিবী এবং যা উভয়ের অন্তর্বর্তী তা আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
১৬-২৯ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:১৬
وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَہُمَا لٰعِبِیۡنَ ﴿۱۶﴾
আকাশ ও পৃথিবী এবং যা উভয়ের অন্তর্বর্তী তা আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।
২১:১৭
لَوْ اَرَدْنَاۤ اَنْ نَّتَّخِذَ لَهْوًا لَّاتَّخَذْنٰهُ مِنْ لَّدُنَّاۤ١ۖۗ اِنْ كُنَّا فٰعِلِیْنَ

যদি আমি কোন খেলনা তৈরি করতে চাইতাম এবং এমনি ধরনের কিছু আমাকে করতে হতো তাহলে নিজেরই কাছ থেকে করে নিতাম।
২১:১৮
بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَى الْبَاطِلِ فَیَدْمَغُهٗ فَاِذَا هُوَ زَاهِقٌ١ؕ وَ لَكُمُ الْوَیْلُ مِمَّا تَصِفُوْنَ

কিন্তু আমি তো মিথ্যার ওপর সত্যের আঘাত হানি, যা মিথ্যার মাথা গুঁড়িয়ে দেয় এবং সে দেখতে দেখতে নিশ্চিহ্ন হয়। আর তোমাদের জন্য ধ্বংস! যেসব কথা তোমরা তৈরি করো সেগুলোর বদৌলতে।
২১:১৯
وَ لَهٗ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ؕ وَ مَنْ عِنْدَهٗ لَا یَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَ لَا یَسْتَحْسِرُوْنَۚ

পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে যে সৃষ্টিই আছে তা আল্লাহরই। আর যে (ফেরেশতারা) তাঁর কাছে আছে তারা না নিজেদেরকে বড় মনে করে তাঁর বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় এবং না ক্লান্ত ও বিষণ্ন হয়,
২১:২০
یُسَبِّحُوْنَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ لَا یَفْتُرُوْنَ

দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিরাম-বিশ্রাম নেয় না।
২১:২১
اَمِ اتَّخَذُوْۤا اٰلِهَةً مِّنَ الْاَرْضِ هُمْ یُنْشِرُوْنَ

এদের তৈরি মাটির দেবতাগুলো কি এমন পর্যায়ের যে, তারা (প্রাণহীনকে প্রাণ দান করে) দাঁড় করিয়ে দিতে পারে?
২১:২২
لَوْ كَانَ فِیْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا١ۚ فَسُبْحٰنَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا یَصِفُوْنَ

যদি আকাশে ও পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ হতো তাহলে (পৃথিবী ও আকাশ) উভয়ের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতো। কাজেই এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পাক-পবিত্র।
২১:২৩
لَا یُسْئَلُ عَمَّا یَفْعَلُ وَ هُمْ یُسْئَلُوْنَ

তাঁর কাজের জন্য (কারো সামনে) তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে না বরং তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে।
২১:২৪
اَمِ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً١ؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ١ۚ هٰذَا ذِكْرُ مَنْ مَّعِیَ وَ ذِكْرُ مَنْ قَبْلِیْ١ؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا یَعْلَمُوْنَ١ۙ الْحَقَّ فَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ

তাঁকে বাদ দিয়ে তারা কি অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রমাণ আনো। এ কিতাবও হাজির, যার মধ্যে আছে আমার যুগের লোকদের জন্য উপদেশ এবং সে কিতাবগুলোও হাজির, যেগুলোর মধ্যে ছিল আমার পূর্ববর্তী লোকদের জন্য নসিহত।” কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই প্রকৃত সত্য থেকে বেখবর, কাজেই মুখ ফিরিয়ে আছে।
২১:২৫
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْنِ

আমি তোমার পূর্বে যে রসূলই পাঠিয়েছি তাঁর প্রতি এ অহী করেছি যে, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই কাজেই তোমরা আমারই বন্দেগী করো।
২১:২৬
وَ قَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًا سُبْحٰنَهٗ١ؕ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُوْنَۙ

এরা বলে, “করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! তারা তো মর্যাদাশালী বান্দা।
২১:২৭
لَا یَسْبِقُوْنَهٗ بِالْقَوْلِ وَ هُمْ بِاَمْرِهٖ یَعْمَلُوْنَ

তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলে না এবং শুধুমাত্র তাঁর হুকুমে কাজ করে।
২১:২৮
یَعْلَمُ مَا بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَ مَا خَلْفَهُمْ وَ لَا یَشْفَعُوْنَ١ۙ اِلَّا لِمَنِ ارْتَضٰى وَ هُمْ مِّنْ خَشْیَتِهٖ مُشْفِقُوْنَ

যা কিছু তাদের সামনে আছে এবং যা কিছু আছে তাদের অগোচরে সবই তিনি জানেন। যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ‌ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত।
২১:২৯
وَ مَنْ یَّقُلْ مِنْهُمْ اِنِّیْۤ اِلٰهٌ مِّنْ دُوْنِهٖ فَذٰلِكَ نَجْزِیْهِ جَهَنَّمَ١ؕ كَذٰلِكَ نَجْزِی الظّٰلِمِیْنَ۠

আর তাদের মধ্যে যে বলবে, আল্লাহ‌ ছাড়া আমিও একজন ইলাহ, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দান করবো, আমার এখানে এটিই জালেমদের প্রতিফল।

১৬-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*বিশ্ব জগতকে অহেতুক সৃষ্টি করা হয়নি : ইতিপূর্বে আলােচিত ইসলামী আকীদা বিশ্বাস এবং সে আকীদা বিশ্বাস যে নিয়ম-বিধি অনুসারে চলে ও যে নিয়ম-বিধি অনুসারে আল্লাহ তায়ালা তা প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে শাস্তি দেন, এখানে তার মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সে আকীদা বিশ্বাসের সাথে সেই মহাসত্যের ও মহা বাস্তবতার সংযােগ স্থাপন করা হচ্ছে, যার ওপর গােটা বিশ্ব জগত প্রতিষ্ঠিত এবং যার সাথে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি ওতপ্রােতভাবে সম্পৃক্ত। যেহেতু মােশরেকরা কোরআনের যে কোনাে নতুন অংশ নাযিল হলেই তার প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাে এবং তাতে যতােই সত্য ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য থাকুক, তার তােয়াক্কা করতাে না, যেহেতু তারা আসন্ন হিসাব নিকাশ ও বিচারের দিনের প্রতি উদাসীন এবং কাফেরদের জন্যে কী শাস্তি অপেক্ষা করছে, তার প্রতি নির্বিকার, তাই মহাসত্যের ব্যাপারেও আল্লাহর নীতি চিরদিনই অক্ষুন্ন ও অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী তিনটি আয়াতে সেই কথাই বলেছেন, ‘আকাশ ও পৃথিবীকে আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি…'(আয়াত ১৬, ১৭, ১৮) বস্তুত আল্লাহ তায়ালা এই মহাবিশ্বকে একটা মহৎ ও নিগুঢ় উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, খেলাচ্ছলে বা তামাশাচ্ছলে নয়। সৃষ্টির পর বিশ্বজগতকে তিনি পরিচালনাও করেছেন বিজ্ঞতার সাথে, আবেগতাড়িত হয়ে নয়, কিংবা বিশৃংখলভাবেও নয়। আর যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে তিনি আকাশ, পৃথিবী ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন, সেই একই গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে তিনি নবী ও রসূলকে পাঠিয়েছেন কিতাব নাযিল করেছেন এবং শরীয়তের বিধান জারী করেছেন। বস্তুত মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূলে যেমন রয়েছে মহৎ উদ্দেশ্য, তেমনি তার পরিচালনার মূলেও রয়েছে মহৎ উদ্দেশ্য, আবার মানব জাতির জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে আকীদা ও আদর্শ মনােনীত করেছেন এবং তাদের মৃত্যুর পর যে বিচার ও হিসেব গ্রহণ করবেন তারও মূলে রয়েছে মহৎ, কল্যাণকর ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। তিনি যদি তামাশা করতেই চাইতেন, তবে নিজে নিজেই তা করতে পারতেন। তার কোনাে সৃষ্টিকে এর সাথে জড়িত করতেন না। এটা আসলে নিছক কল্পনা স্বর্বস্ব যুক্তি। ‘আমি যদি তামাশা করতে চাইতাম, তবে নিজে নিজেই তা করতাম।’ আরবী ব্যাকরণ বিদদের মতানুসারে ‘লাও’ হচ্ছে শর্তমূলক অব্যয়। শর্তে যে ক্রিয়ার উল্লেখ থাকে, তা অঘটিত হওয়ার শর্তাধীন ক্রিয়াকেও তা অঘটিত প্রতিপন্ন করে। যেহেতু আল্লাহতায়ালা তামাশা করতে চাননি, তাই আদৌ কোনাে তামাশা বা পরিহাস সংঘটিত হয়নি, নিজের পক্ষ থেকেও নয়, বাইরে থেকেও নয় তামাশা পরিহাস কখনাে সংঘটিত হবেও না। কেননা আল্লাহ কখনাে তা চাননি এবং কখনাে সেটা তার ইচ্ছা হয়নি। ‘আমি কখনাে তা করিনি।’ অর্থাৎ পরিহাস ও তামাশা করতে ইচ্ছা করিনি। একটা অকাট্য সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই এই কল্পনা সর্বস্ব উক্তি করা হয়েছে। এই অকাট্য সত্য হচ্ছে, মহান আল্লাহর সত্ত্বার সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছুই চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর। কাজেই আল্লাহ তায়ালা যদি পরিহাস করতে চাইতেন, তাহলে সেই পরিহাস কোনাে নশ্বর সৃষ্টি কিংবা নশ্বর সৃষ্টির সাথে সংশ্লিষ্ট যেমন আকাশ পৃথিবী এবং তার মধ্যকার কোনাে বস্তু হতাে না। কেননা এগুলাে সবই নশ্বর সৃষ্টি। সেটা হতো মহান আল্লাহর সত্ত্বাভুক্ত। তাই সেটা হতাে চিরন্তন, শাস্বত ও অবিনশ্বর। কেননা তা চিরন্তন ও অবিনশ্বর আল্লাহর সত্ত্বার সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর সৃষ্টির চিরন্তন নীতি হচ্ছে, কোথাও পরিহাসচ্ছলে কিছু করা হবে না। যাই করা হবে তা হবে গুরুত্বপূর্ণ, অকৃত্রিম ও অকাট্য সত্য। ফলে এই চিরন্তন আসল সত্য নশ্বর বাতিলের ওপর বিজয়ী হবে। ‘বরং আমি সত্যকে বাতিলের ওপর নিক্ষেপ করি, ফলে সত্য বাতিলের মগযকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতপর সহসাই বাতিল হয়ে যায় বিধ্বস্ত।’ এখানে বরং শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে আলােচনার মােড় পরিহাস বিষয়ক বক্তব্য থেকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যে এবং আল্লাহর নির্ধারিত চিরন্তন প্রাকৃতিক বিধান সম্পর্কে বক্তব্য রাখার জন্যে। এই বিধানটা হলাে, সত্যের বিজয় ও বাতিলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আয়াতে আল্লাহর এই প্রাকৃতিক বিধানটাকে কি একটি অনুভবযোগ্য, জীবন্ত ও চলন্ত আকৃতি দান করা হয়েছে। যেন সত্য আল্লাহর হাতের মুঠোয় ধারণ করা একটা বিস্ফোরক, যা বাতিলের ওপর নিক্ষেপ করা হয় এবং তা বাতিলের মগজ চূর্ণ করে দেয়, ফলে তা বিধ্বস্ত ও বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত মহাজাগতিক বিধি। বস্তুত সত্য ও ন্যায় হলাে মহাবিশ্বের আসল জন্মগত স্বভাব ও প্রকৃতি, মহাবিশ্বের অতলান্ত গভীরে তা উপ্ত, আর বাতিল বা অন্যায় হলাে বিশ্বজগতের মূল স্বভাব প্রকৃতি থেকে বিচ্যুত কৃত্রিম বিষয়। আল্লাহ তায়ালা একে সত্য দিয়ে আঘাত করে চুরমার করে দেন। আল্লাহ তায়ালা যাকে বিতাড়িত করেন, যাকে আঘাত করে চূর্ণ বিচূর্ণ করেন, তার আদৌ কোনাে স্থায়িত্ব থাকতে পারে না। কখনাে কখনাে মানুষের কাছে মনে হয়, জীবনের বাস্তবতা আল্লাহর নির্ধারিত এই সত্যের পরিপন্থী। সাধারণত সেই সময়েই এরূপ মনে হয়, যখন বাতিল বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হয় এবং সত্যকে পরজিত মনে হয়। তবে এটা নিতান্তই সাময়িক ও অস্থায়ী ব্যাপার। আল্লাহ কিছু সময়ের জন্যে পরীক্ষামূলকভাবে এরূপ সংঘটিত করেন। এই সময়টা কেটে গেলে আবার সেই চিরন্তন সত্য পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়, যার ওপর আকাশ ও পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপিত এবং একইভাবে যার ওপর আকীদা বিশ্বাস, দাওয়াত ও আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপিত। যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখেন, তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতির সত্যতায় কোনই সন্দেহ-সংশয় পােষণ করে না। তারা অবিচল বিশ্বাস রাখে যে, মহাবিশ্বের ও তার ব্যবস্থাপনার আসল ভিত্তিই হলাে সত্য ও ন্যায়। তারা বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তায়ালা শেষ পর্যন্ত বাতিলের মগয চুর্ণ করে তাকে পর্যুদস্থ করবেন ও সত্যকে বিজয়ী করবেন। আল্লাহ তায়ালা যখন সাময়িকভাবে বাতিলকে বিজয়ী করেন, তখন তারা বুঝতে পারে যে, এটা তাদের জন্যে পরীক্ষা স্বরূপ, আল্লাহ তায়ালা তাদের বিকাশ বৃদ্ধির স্বার্থে এরূপ করছেন। কেননা তাদের ভেতরে কিছু কিছু দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা চান তাদের এই দুর্বলতা দূরীভূত হয়ে সত্যকে বিজয়ী করার, বিজয়ী সত্যকে বরণ করে নেয়ার ও তার বিজয়কে স্থায়ী করার ক্ষমতা তাদের ভেতরে জন্ম নিক। তারা যখনই এই দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা দূর করার চেষ্টা চালাবে, তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের এই পরীক্ষার মেয়াদ কমিয়ে আনবেন এবং তাদের হাতে তিনি যা যা বাস্তবায়িত করতে চান করবেন তা করাবেন। চূড়ান্ত পরিণতি তাে নির্ধারিতই রয়েছে। সেটা হলাে, ‘বরং আমি বাতিলের ওপর সত্যকে নিক্ষেপ করি, তখন সত্য বাতিলের মগজ চূর্ণ করে এবং বাতিল হয়ে যায় বিধবস্ত ও বিলুপ্ত।’ এভাবে কোরআন মােশরেকদের সামনে সেই অকাট্য সত্য ঘােষণা করে। মুশরেকরা যতােই কোরআন ও রসূলের নামে অপবাদ রটাক, তাকে কবি, যাদুকর ও মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করুক তাতে কিছুই আসে যায় না। কেননা রসূলের আনীত সত্য বিধানই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে এবং বাতিলকে পরাভূত করবে। এভাবে বাতিল হবে বিলুপ্ত ও অপসৃত । অতপর তাদের অপবাদের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিয়ে বলছেন, ‘আর তোমার অপবাদের জন্যে তােমাদের ধ্বংস অনিবার্য।’

*সকল সৃষ্টিই আল্লাহর অনুগত : এরপর তাদের উপেক্ষা ও নাফরমানীর বিপরীতে এবাদাত এ আনুগত্যের কিছু নমুনা তুলে ধরা হচ্ছে। এই নমুনা যারা পেশ করেছে তারা সে মােশরেকদের চেয়ে আল্লাহর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও প্রিয়। তথাপি তারা অব্যাহতভাবে তার এবাদাত ও আনুগত্য করে চলেছে। এতে তাদের নেই কোনাে ক্লান্তি, নেই কোনাে বিরতি। আকাশ ও পৃথিবীতে কতাে কী আছে এবং কারা কারা আছে, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না, আর কেউ তার পরিসংখ্যান জানে না। মানুষ যা কিছু জানে, সেটা মানব জাতির সীমিত জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মােমেনরা জ্বিন ও ফেরেশতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কেননা এদের সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ আছে। কিন্তু আমরা এদের সম্পর্কে কেবল ততােটুকু জানি, যতােটুকু মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে জানিয়েছেন। এরা ছাড়াও পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে অন্য কোনাে বুদ্ধিমান সৃষ্টিও থাকতে পারে, যাদের আকৃতি ও স্বভাব সে সব গ্রহ-উপগ্রহের পরিবেশের সাথে সংগতিপূর্ণ। এ সম্পর্কে সঠিক সত্য এক আল্লাহ তায়ালাই জানেন। কাজেই আমরা যখন পাঠ করি, ‘আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার’ তখন এসবের মধ্যে যা কিছু আমাদের জানা চেনা আছে, তা ছাড়া অন্যদের জ্ঞান বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর যারা তার কাছে থাকে। খুব সম্ভবত এ দ্বারা ফেরেশতাদেরকে বুঝানাে হয়েছে। তবে যতােক্ষণ আয়াতে সুনির্দিষ্টভাবে নাম উল্লেখ করা হয়নি। ততক্ষণ ফেরেশতা এবং অন্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে আয়াতের ভাষা থেকে বুঝা যায় যে, তারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠতম ও নিকটতম বান্দা। ‘ইন্দা’ শব্দটা আল্লাহর সাথে যুক্ত হলে তা দ্বারা কোনাে নির্দিষ্ট স্থান ও নির্দিষ্ট গুণ বৈশিষ্ট্য বুঝায় না। যারা তার কাছ থাকে তারা তার এবাদাত থেকে অহংকারের সাথে মুখ ফেরায় না। যেমন মােশরেকরা অহংকার করে এবং অপরাধ করে। ফেরেশতারা এবাদাত ও আনুগত্যের কোনাে ত্রুটি করে না। তাদের গােটা জীবনই এবাদাত। তারা দিন রাত কোনাে বিরতি ছাড়াই আল্লাহর তাসবীহ ও গুণগান করে কাটায়। মানুষও তার গােটা জীবনকে ইবাদাতে পরিণত করতে পারে। এ জন্যে গােটা সমাজ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফেরেশতাদের মতাে সদা সর্বদা কেবল তাসবীহ জপার প্রয়ােজন নেই। কেননা ইসলাম মানুষের প্রতিটা কাজকে ও প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসকে ইবাদত রূপে গন্য করে, যদি সে প্রতিটা কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ও তার হুকুম অনুযায়ী করে। এ ধরনের কাজ যদি পবিত্র ও হালাল উপকরণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশের কাজও হয় তাহলেও তা এবাদাতে পরিণত হয়। আকাশ পৃথিবী ও অন্য যাবতীয় সৃষ্টির মালিক এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই অবিরত তাসবীহের প্রেক্ষাপটে মােশরেকদের বহু-ঈশ্বরবাদ ও পৌত্তলিকতাবাদ প্রতি ধিক্কার ও নিন্দা জানানাে হয়েছে পরবর্তী কয়েকটা আয়াতে। এতে প্রাকৃতিক দৃশ্য ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিগােচর নিয়মবিধিকে আল্লাহর একত্বের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেরও বরাত দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি পৃথিবীর বস্তুসমূহ থেকে কিছু মাবুদ গ্রহণ করে নিয়েছে, যারা কাউকে জীবন দান করতে পারে? যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনাে মাবুদ থাকতো, তাহলে আকাশ ও পৃথিবী উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেতো…'(আয়াত ২১-২৩) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যান্যদেরকে মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করা সংক্রান্ত প্রশ্ন হলাে তাদের বাস্তব অবস্থার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশমূলক প্রশ্ন। এতে তাদের গৃহীত দেব-দেবতাকে পরিহাস ও বিদ্রুপ করা হয়েছে। কেননা মাবুদ হবার যােগ্যতার প্রথম গুণটাই হলাে মৃতকে জীবন দান। তারা যে সব মাবুদকে গ্রহণ করেছে, তারা কি এ কাজ করতে সক্ষম? নিশ্চয়ই নয়। এমনকি স্বয়ং পৌত্তলিকরাও দাবী করে না যে, তাদের দেব-দেবীরা ও মূর্তিগুলাে কারাে জীবন সৃষ্টি বা পুনসৃষ্টি করতে পারে। এ থেকে বুঝা গেলাে যে, সেসব বাতিল মাবুদ প্রকৃত মাবুদ হবার প্রথম গুণ থেকে বঞ্চিত। এটা ছিলাে পৃথিবীতে বিদ্যমান ও দৃশ্যমান বাস্তবানুগ প্রমাণ। এ ছাড়া মহাবিশ্বের বাস্তবতা থেকে গৃহীত হয়েছে এর প্রাকৃতিক প্রমাণ, আকাশ ও পৃথিবীতে যদি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনাে মাবুদ থাকতাে, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেতাে। বস্তুত মহাবিশ্ব একটা মাত্র প্রাকৃতিক বিধির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এই একটা মাত্র প্রাকৃতিক বিধিই মহা বিশ্বের সকল অংশের মাঝে বন্ধন রক্ষা করে চলেছে, সকল অংশের মধ্যে সমন্বয় বিধান করে চলেছে এবং এই অংশগুলাের তৎপরতায় ও সমগ্র বিশ্ব জগতের তৎপরতায় ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। এই প্রাকৃতিক বিধান হচ্ছে একই বিশ্ব প্রভুর একক ইচ্ছার ফল। বিশ্ব প্রভু যদি একাধিক হতাে তাহলে তাদের ইচ্ছাও ভিন্ন ভিন্ন হতাে এবং স্বভাবতই প্রাকৃতিক নিয়মও ভিন্ন ভিন্ন হতাে। কেননা স্বাধীন ইচ্ছাই স্বাধীন সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য। আর প্রাকৃতিক বিধান হচ্ছে সক্রিয় ইচ্ছার ফল। এভাবে একাধিক বিশ্ব প্রভুর ইচ্ছার বিভিন্নতা ও মতের বিভিন্নতার ফলে প্রাকৃতিক নিয়ম একাধিক ও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হলে মহাবিশ্বের শৃংখলা ও ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে যেতাে। এর রীতিনীতি ও আচরণও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তাে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অরাজকতা ও ধ্বংস অনিবার্য হয়ে দেখা দিতো; বিশ্ব প্রকৃতিতে যে সমন্বয় ও ভারসাম্য একটা দিব্য সত্য এবং যাকে চরম নাস্তিকও অস্বীকার করতে পারে না, তার কোনাে অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যেতাে না। মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিবেক সমগ্র সৃষ্টিজগতে একক প্রাকৃতিক নিয়মের কর্তৃত্ব অনুভব করে। তাই সুস্থ বিবেক স্বাভাবিকভাবেই এই প্রাকৃতিক নিয়মের একত্ব, প্রাকৃতিক নিয়মের স্রষ্টার একত্ব এবং সুসমন্বিত ও ভারসাম্যপূর্ণ মহাবিশ্বের প্রাজ্ঞ স্রষ্টার একত্বের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। কেননা এ মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক কাঠামােতে এবং তার ব্যবস্থাপনায় কোথাও কোনো অরাজকতা ও বৈকল্য নেই। তাই আরশের অধিপতি আল্লাহ তাদের সমস্ত অপবাদ থেকে পবিত্র। তারা অপবাদ দেয় যে, আল্লাহর শরীক রয়েছে। অথচ আরশের অধিপতি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ এটা থেকে পবিত্র। ‘আরশ’ হচ্ছে রাজত্ব, আধিপত্য ও পরাক্রমের প্রতীক। আল্লাহ স্বয়ং যেমন এই অপবাদ থেকে নিজের পবিত্রতা ঘােষণা করছেন, তেমনি গােটা সৃষ্টি জগত তার সুশৃংখল, ত্রুটি মুক্ত ও নৈরাজ্য মুক্ত অবস্থান ছাড়া তাদের বক্তব্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। ‘তিনি যা করেন, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হন না, কিন্তু তারা জিজ্ঞাসিত হয়। যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের একচ্ছত্র অধিপতি ও সর্বময় কর্তা, তিনি কবেই বা জিজ্ঞাসিত হয়েছেন? তাকে কেইবা জিজ্ঞেস করবে? তিনি তাে তাঁর বান্দাদের ওপর পরাক্রান্ত, তার ইচ্ছা সম্পূর্ণ অবাধ ও স্বাধীন, অন্য কারাে ইচ্ছা তাকে প্রভাবিত বা সীমিত করে না, এমনকি যে প্রাকৃতিক নিয়ম তার ইচ্ছা দ্বারা অনুমােদিত এবং যে প্রাকৃতিক নিয়ম তার ইচ্ছা দ্বারা বিশ্ব জগতের শাসক ও পরিচালকে পরিণত হয়েছে, সেই প্রাকৃতিক নিয়ম বিধিও তাঁর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে না। জিজ্ঞাসা ও জবাবদিহিতা শুধু নির্দিষ্ট সীমা ও মাপকাঠির ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। এই সীমা ও মাপকাঠি কেবল অবাধ ও স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী কোনাে সর্বময় কর্তাই নির্ধারণ করে থাকেন অথচ সৃষ্টি জগতের জন্যে নির্ধারিত সীমা ও মাপকাঠি দ্বারা তিনি নিজে মােটেই সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত হন না। একমাত্র তিনি স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত হতে চাইলেই তার ব্যতিক্রম ঘটতে পারে । পক্ষান্তরে সৃষ্টিজগত তার নির্ধারিত সীমা ও বিধিনিষেধের অধীন, তাই তারা জিজ্ঞাসিত হবেই। অবশ্য সৃষ্টি কখনাে কখনাে সদম্ভ ধৃষ্টতা দেখিয়ে সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে, আল্লাহ কেন এটা সৃষ্টি করলেন? এ সৃষ্টির পেছনে কোনাে রহস্য ও যৌক্তিকতা নিহিত রয়েছে। যেন তারা বলতে চায়, এই সৃষ্টির পেছনে তারা কোনাে যৌক্তিকতা দেখতে পাচ্ছে না। অথচ এ ধরনের প্রশ্ন তুলে তারা একদিকে যেমন মহান আল্লাহর সাথে বেআদবী করে, অপরদিকে তেমনি মানবীয় বােধ শক্তির সীমা অতিক্রম করে যা কিনা একটা সীমাবদ্ধ গভীর মধ্যে থাকার কারণে সব কিছুর কারণ ও উদ্দেশ্য জানতে পারে না। যিনি সব কিছু জানেন, সব কিছুকে পরিচালিত করেন, সব কিছুকে নিয়ন্ত্রিত করেন, তিনিই সব কিছুর পরিমাণ নির্ধারণ করেন এবং শাসন করেন। কাজেই তিনি যা কিছু করেন, তার সম্পর্কে কোনাে জবাবদিহি করেন না, বরং তাঁর বান্দাদেরকেই জবাবদিহি করতে হয়।

*নিরংকুশ তাওহীদ প্রতিষ্ঠাই নবীদের মিশন : এই প্রাকৃতিক প্রমাণের পাশাপাশি তাদেরকে আল্লাহর সেই গতানুগতিক অনুকরণ সর্বস্ব প্রমাণ ও জিজ্ঞেস করেছেন, যাকে তারা তাদের শিরকের দাবীর ক্ষেত্রে নির্ভরযােগ্য মনে করে, অথচ শিরকের আদৌ কোনাে নির্ভরযােগ্য প্রমাণ নেই, ‘তারা কি আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবুদকে গ্রহণ করেছে। বলো, তােমরা তােমাদের প্রমাণ নিয়ে এসাে। এ হচ্ছে আমার সাথীদের স্মরণিকা এবং আমার পূর্ববর্তীদের স্মরণিকা।’ অর্থাৎ এ হচ্ছে কোরআন, যাতে রসূল(স.)-এর সমকালীনদের উল্লেখ রয়েছে এবং পূর্ববর্তী নবীদের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সে রসূলরা যেসব কিতাব নিয়ে এসেছেন, তাতে আল্লাহর কথিত শরীকদের কোনাে উল্লেখ নেই। কেননা সকল নবীই তাওহীদ বিশ্বাসভিত্তিক ধর্ম প্রচার করেছেন। কাজেই মােশরেকরা কিসের ভিত্তিতে রক্তের দাবী করে? বিশ্ব জগতের স্বভাব প্রকৃতিই তাে তাদের ও দাবী খন্ডন করে। আর পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থগুলােতেও এর সপক্ষে কোনাে প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরঞ্চ তাদের অধিকাংশই সত্যকে জানেন। তাই তাকে উপেক্ষা করে। ‘আর তােমার পূর্বে আমি যে রসূলই পাঠিয়েছি, তার কাছে ওহী করেছি যে, আমি ছাড়া আর কোনাে মাবুদ নেই । সুতরাং তােমরা আমারই এবাদাত করাে।’ বস্তুত পৃথিবীতে যেদিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্যে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, সেদিন থেকেই তাওহীদ সকল ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি ছিলো। এতে কোনাে পরিবর্তন হয়নি এবং কখনাে হবেও না। এই তাওহীদ বলতে বুঝানাে হয় ইলাহ এক, এবং মাবুদও এক। কাজেই প্রভুত্ব ও ইলাহত্বে কোনাে পার্থক্য নেই এবং ইলাহত্ব ও এবাদাতে শিরকের কোনাে অবকাশ নেই। তাই বলা যায়, তাওহীদ এমন এক অটুট ভিত্তি যা প্রাকৃতিক নিয়মগুলাের মতােই অটুট ও স্থিতিশীল। তাওহীদ এইসব প্রাকৃতিক নিয়মের সাথেই যুক্ত এবং তারই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এরপর উল্লেখ করা হচ্ছে মােশরেকদের এই উদ্ভট দাবী যে, আল্লাহর ছেলে আছে। এটা আরবের জাহেলী সমাজের একটা নির্বুদ্ধিতা পূর্ণ উক্তি, ‘তারা বলে, দয়াময় একটা সন্তান গ্রহণ করেছেন…'(আয়াত ২৬-২৯) বিভিন্ন যুগের জাহেলী সমাজে আল্লাহর সন্তান গ্রহণের এই দাবীটা বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। আরবের মােশরেকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর মেয়ে বলে আখ্যায়িত করতাে। ইহুদী মােশরেকরা বলতাে, হযরত ওযায়ের আল্লাহর ছেলে। আর খৃষ্টান মােশরেকরা বলে, হযরত ঈসা আল্লাহর ছেলে। অথচ এ সবই জাহেলিয়াতের বিকৃতি ও বিভ্রান্তি মাত্র, যা সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে মাত্র। এ আয়াতে আরবদের এই দাবীকেই বুঝানাে হয়েছে যে, ফেরেশতারা আল্লাহর মেয়ে। কোরআন তাদের এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে ফেরেশতাদের স্বভাব প্রকৃতি বর্ণনা করার মাধ্যমে। বলা হয়েছে যে, ‘তারা আল্লাহর মেয়ে নয়, বরং সম্মানিত বান্দা।’ অর্থাৎ আল্লাহর কাছে সম্মানিত। তারা আনুগত্য, সম্মান ও আদবের খাতিরে আল্লাহকে কোনাে পরামর্শ পর্যন্ত দেয় না। তারা কেবল আল্লাহর হুকুম মােতাবেক কাজ করে, কাজের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে না। আল্লাহর জ্ঞান তাদের জীবনকে চারদিক থেকে বেষ্টিত করে রেখেছে। আল্লাহর পূর্ব সম্মতি ছাড়া তাদের কেউ তার কাছে সুপারিশও করতে পারে না। তারা স্বাভাবিকভাবেই এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহকে ভয় করে। তারা অত্যন্ত পবিত্র, আল্লাহর ঘনিষ্ঠ সর্বাত্মক ও শর্তহীনভাবে আল্লাহর অনুগত। কখনাে এ ক্ষেত্রে কোনাে হেরফের হয় না। তারা কখনাে নিজেদেরকেই ইলাহ বলে দাবী করে না। যদি তা করতাে তবে তার জন্যে তাদের শাস্তি হতাে জাহান্নাম। এটাই অন্যায়কারীদের যথােপযুক্ত শাস্তি, যারা এমন অন্যায় দাবী করে। মুশরিকরা যদি এ ধরনের দাবী করতাে তবে তার জন্যে কঠিন শাস্তি ভােগ করতাে। তবে তারা এমন উদ্ভট, অন্যায় ও অসম্ভব দাবী করে না। সুস্থ বিবেক এটাও অনুভব করে যে, ফেরেশতারা আল্লাহর পরম অনুগত ও তার ভয়ে ভীত। অথচ মােশরেকরা দাম্ভিক ও বড়াে বড়া দাবী করে থাকে। আল্লাহর একত্বের প্রাকৃতিক প্রমাণ, একাধিক মাবুদের পক্ষে কোনাে প্রমাণ না থাকা এবং বিবেকগ্রাহ্য প্রমাণাদি পেশ করার পর পরবর্তী আয়াতসমূহ মানব হৃদয়কে প্রকৃতির বিশাল প্রান্তরে নিয়ে যায়, যাকে আল্লাহ তায়ালা গভীর প্রজ্ঞার সাথে পরিচালনা করেন। অথচ মােশরেকরা আল্লাহর সেইসব নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, যা হৃদয় ও চোখের সামনে সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান।

 

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# জীবন সম্পর্কে যে দৃষ্টিভংগীর কারণে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতো না এটি হচ্ছে সেই সমগ্র দৃষ্টিভংগীর ওপর মন্তব্য। তাদের ধারণা ছিল, মানুষকে দুনিয়ায় এমনটিই স্বাধীন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নিজের যা ইচ্ছা সে করবে। যেভাবে চাইবে করবে। তার কোন কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার কেউ নেই। কারো কাছে তাকে হিসেব দিতে হবে না। ভালো-মন্দ কয়েক দিনের এই জীবন যাপন করে সবাইকে ব্যস এমনিই ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। পরবর্তী কোন জীবন নেই, যেখানে ভালো কাজের পুরস্কার ও খারাপ কাজের শাস্তি দেয়া হবে। এসব ধারণা ও চিন্তা-ভাবনা আসলে একথাই ব্যক্ত করছিল যে, বিশ্ব-জাহানের এ সমগ্র ব্যবস্থা নিছক একজন খেলোয়াড়ের খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়, কোন গুরুগম্ভীর ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একে পরিচালিত করছে না। আর এ ধরনের চিন্তা-ভাবনাই তাদের নবীর দাওয়াত অবহেলা করার আসল কারণ ছিল।

# যদি আমি খেলা করতেই চাইতাম তাহলে খেলনা বানিয়ে নিজেই খেলতাম। এ অবস্থায় একটি অনুভূতিশীল, সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রাণী সৃষ্টি এবং তার মধ্যে সত্য-মিথ্যার এ দ্বন্দ্ব ও টানাহেঁচড়ার অবতারণা করে নিছক নিজের আনন্দ ও কৌতুক করার জন্য অন্যকে অনর্থক কষ্ট দেবার মতো জুলুম কখনোই করা হতো না। তোমাদের মহান প্রভু আল্লাহ এ দুনিয়াটাকে রোমান সম্রাটদের রংগভূমি (Colosseum) রূপে তৈরী করেননি। এখানে বান্দাদেরকে পরস্পরের মধ্যে লড়াই করিয়ে তাদের শরীরের গোশত ছিড়ে উৎক্ষিপ্ত করিয়ে আনন্দে অট্রহাসি হাসা হয় না।
# আমি বাজিকর নই। খেলা-তামাসা করা আমার কাজ নয়। আমার এ দুনিয়া একটা বাস্তবানুগ ব্যবস্থা। কোন মিথ্যা এখানে টিকে থাকতে পারে না। মিথ্যা যখনই এখানে মাথা উঠায় তখনই সত্যের সাথে তার অনিবার্য সংঘাত বাধে এবং শেষ পর্যন্ত মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েই থাকে। এ দুনিয়াকে যদি তুমি খেলাঘর মনে করে জীবন অতিবাহিত করো অথবা সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা মতবাদের ভিত্তিতে কাজ করে থাকো তাহলে এর ফল হবে তোমার নিজেরই ধ্বংস। মানবজাতির ইতিহাস দেখো, দুনিয়াকে নিছক একটি খেলাঘর, ভোগের সামগ্রীতে পরিপূর্ণ একটি থালা ও একটি ভোগ-বিলাসের লীলাভূমি মনে করে যেসব জাতি এখানে জীবন যাপন করেছে এবং নবীগণ কথিত সত্য বিমুখ হয়ে মিথ্যা মতবাদের ভিত্তিতে কাজ করেছে, তারা একের পর এক কোন্ ধরনের পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। তারপর বুদ্ধিমান যখন বুঝাতে থাকে তখন তাকে বিদ্রূপ করা এবং যখন নিজেদেরই কৃতকর্মের ফল আল্লাহর আযাবের আকারে মাথার ওপর এসে পড়ে তখন “হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! অবশ্যই আমরা অপরাধী ছিলাম” বলে গলা ফাটানো কোন্ ধরনের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে।

# এখান থেকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক বাতিলের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হচ্ছে। এটিই ছিল নবী ﷺ ও মক্কার মুশরিকদের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয়। এখন মুশরিকদেরকে একথা বলা হচ্ছে যে, বিশ্ব-জাহানের এই যে ব্যবস্থার মধ্যে তোমরা জীবন যাপন করছো (যে সম্পর্কে এখনই বলা হলো যে, এটা কোন খেলোয়াড়ের খেলনা নয়, যে সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে যে, এটা একটা বাস্তবানুগ, উদ্দেশ্যমুখীন ও সত্যভিত্তিক ব্যবস্থা এবং যে সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এখানে মিথ্যা সবসময় সত্যের সাথে সংঘাত করে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়) এর প্রকৃত স্বরূপ হচ্ছে এই য, এ সমগ্র ব্যবস্থার স্রষ্টা, মালিক, শাসক ও প্রতিপালক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। অন্যদিকে এ সমগ্র ব্যবস্থাকে বহু ইলাহর মিলিত সাম্রাজ্য মনে করা বা একজন বড় প্রভুর প্রভুত্বের মধ্যে অন্যান্য ছোট ছোট প্রভুদেরও কিছু শরীকানা আছে বলে মনে করে নেয়াই হচ্ছে এ সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যা।

# আরব মুশরিকরা যেসব ফেরেশতাকে আল্লাহর সন্তান অথবা প্রভুত্ব কর্তৃত্ব শামিল মনে করে মাবুদ বানিয়ে রেখেছিল।

# আল্লাহর বন্দেগী করা তাদের কাছে বিরক্তিকর নয়। এমন নয় যে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও আল্লাহর বন্দেগী করতে করতে তাদের মনে কোন প্রকার মলিনতার সৃষ্টি হয়। মূলে لَا يَسْتَحْسِرُونَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। استحسار এর মধ্যে ক্লান্তির বাহুল্য পাওয়া যায় এবং এর অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের ক্লান্তি যা বিরক্তিকর কাজ করার ফলে সৃষ্টি হয়।
# মূলে يُنْشِرُونَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি انشار থেকে উদ্ভূত। ‘ইনশার’ মানে হচ্ছে কোন পড়ে থাকা প্রাণহীন বস্তুকে তুলে দাঁড় করিয়ে দেয়া। যদিও এ শব্দটিকে কুরআন মজীদে সাধারণত মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে তবুও এর পারিভাষিক অর্থ বাদ দিলে মূল আভিধানিক অর্থের দিক দিয়ে এ শব্দটি নিষ্প্রাণ বস্তুর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে দেয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি এ শব্দটি এখানে এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে যেসব সত্তাকে তারা ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছে এবং যাদেরকে নিজেদের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে নিষ্প্রাণ বস্তুর বুকে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে? যদি এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো মধ্যে এ শক্তি না থেকে থাকে আর আরবের মুশরিকরা নিজেরাই একথা স্বীকার করতো যে, এ শক্তি কারো মধ্যে নেই— তাহলে তারা তাদেরকে ইলাহ ও মাবুদ বলে মনে নিচ্ছে কেন?
# এটি একটি সরল ও সোজা যুক্তি আবার গভীর তাৎপর্যপূর্ণও। এটি এত সহজ-সরল কথা যে, একজন মরুচারী বেদুঈন, সরল গ্রামবাসী এবং মোটা বুদ্ধির অধিকারী সাধারণ মানুষও একথা বুঝতে পারে। একথাটি হচ্ছে, একটি মামুলি ছোট্ট গৃহের যদি দু’জন গৃহকর্তা হয় তাহলে সে গৃহের ব্যবস্থাপনা চার দিনও ভালোভাবে চলতে পারে না। আর গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি হচ্ছে, বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থা পৃথিবীর ভূগর্ভ স্তর থেকে নিয়ে দূরবর্তী গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবকিছুই একটি বিশ্বজনীন নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এর অসংখ্য ও অগণিত জিনিসগুলোর মধ্যে যদি পারস্পরিক সামঞ্জস্য, ভারসাম্য, সমতা, সমঝোতা ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত না থাকতো তাহলে এ ব্যবস্থাটি এক মুহূর্তের জন্যও চলতে পারতো না। আর কোন প্রবল প্রতাপান্বিত আইন এ অসংখ্য বস্তু ও শক্তিকে পূর্ণ সমতা ও ভারসাম্য সহকারে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে বাধ্য না করতে থাকা পর্যন্ত এসব কিছু সম্ভব নয়। এখন এটা কেমন করে ধারণা করা যেতে পারে যে, বহু স্বতন্ত্র স্বাধীন শাসকের রাজ্যে একই আইন এ ধরনের নিয়মানুবর্তিতা সহকারে চলতে পারে? নিয়ম ও শৃংখলা যে বজায় আছে এটাই নিয়ম পরিচালকের একক অস্তিত্বকে অপরিহার্য করে তোলে। আইন ও শৃংখলার ব্যাপকতা ও বিশ্বজনীনতা নিজেই একথার সাক্ষ্য দেয় যে, ক্ষমতা একই সার্বভৌম কর্তৃত্বে কেন্দ্রীভূত রয়েছে এবং এ সার্বভৌম কর্তৃত্ব বিভিন্ন শাসকদের মধ্যে বিভক্ত নয় (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা বনী ইসরাইল, ৪৭ ও সূরা আল মু’মিনূন ৮৫ টিকা।)

# “রব্বুল আরশ” অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের শাসক ও মালিক।
# প্রথম যুক্তি দু’টি ছিল বুদ্ধিভিত্তিক এবং এখন এ যুক্তিটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ দর্শনভিত্তিক ও প্রামাণ্য। এর অর্থ হচ্ছে, আজ পর্যন্ত যতগুলো কিতাবই আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ার কোন দেশে কোন জাতির পয়গম্বরের প্রতি নাযিল হয়েছে তার মধ্য থেকে যে কোন একটি খুলে একথা দেখিয়ে দাও যে, পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ প্রভুত্বের কর্তৃত্বের সামান্যতম অধিকারী এবং অন্য কেউ ইবাদাত ও বন্দেগীর সামান্যতমও হকদার। তাহলে তোমরা এ কোন ধরনের ধর্ম তৈরী করে রেখেছো যার সমর্থনে বুদ্ধিবৃত্তিক কোন প্রমাণ নেই এবং আসমানী কিতাবগুলোও এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করে না?

# তারা জ্ঞানের নয়, অজ্ঞতার কারণে নবীর কথাকে আমল দেয় না। প্রকৃত সত্য তারা জানে না, তাই যারা বুঝাতে চায় তাদের কথার প্রতি দৃষ্টি দেবার দরকারই মনে করে না।

# এখানে আবার ফেরেশতাদেরই কথা বলা হয়েছে। আরবের মুশরিকরা তাদেরকে আল্লাহর মেয়ে গণ্য করতো। পরবর্তী ভাষণ থেকে একথা স্বতস্ফূর্তভাবে প্রকাশ হয়ে যায়।

# মুশরিকরা দু’টি কারণে ফেরেশতাদেরকে মাবুদে পরিণত করতো। এক, তাদের মতে তারা ছিল আল্লাহর সন্তান। দুই তাদেরকে পূজা (খোশামোদ তোশামোদ) করার মাধ্যমে তারা তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য শাফায়াতকারীতে (সুপারিশকারী) পরিণত করতে চাচ্ছিল। যেমন- وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ (يونس: ) (সূরা ইউনূস আয়াত ১৮ ) এবং مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى (الزمر:) এবং (সূরা যুমার আয়াত ৩ ) এ আয়াতগুলোতে এ দু’টি কারণই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ জায়গায় এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, কুরআন সাধারণত শাফায়াতের মুশরিকী আকীদা বিশ্বাস খণ্ডন করতে গিয়ে এ সত্যটির ওপর জোর দিয়ে থাকে যে, যাদেরকে তোমরা শাফায়াতকারী গণ্য করছো তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নয় এবং তাদের গোচরে ও অগোচরে যেসব কথা আছে আল্লাহ সেগুলো জানেন। এ থেকে একথা হৃদয়ঙ্গম করানোই উদ্দেশ্য যে, তারা যখন প্রত্যেক মানুষের সামনের-পেছনেরও গোপন-প্রকাশ্য অবস্থা জানে না তখন তারা শাফায়াত করার একচ্ছত্র ও শর্তহীন অধিকার কেমন করে লাভ করতে পারে? কাজেই ফেরেশতা, নবী সৎলোক প্রত্যেকের শাফায়াত করার এখতিয়ার অবশ্য আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষ। আল্লাহ তাঁদের কাউকে কোন ব্যক্তির পক্ষে শাফায়াত করার অনুমতি দিলে তবেই তিনি তার পক্ষে শাফায়াত করতে পারবেন। নিজেই অগ্রণী হয়ে তারা যে কোন ব্যক্তির শাফায়াত করতে পারেন না। আর যখন শাফায়াত শোনা বা না শোনা এবং তা কবুল করা বা না করা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল তখন এ ধরনের ক্ষমতাহীন শাফায়াতকারীর সামনে মাথা নোয়ানো এবং প্রার্থনার হাত পাতা কিভাবে সমীচীন ও উপযোগী হতে পারে? (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বা-হাঃ ৮৫ ও ৮৬ টীকা)

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১৬-২০ নং আয়াতের তাফসীর:

যারা দুনিয়াকে রঙ-তামাশার জায়গা মনে করে বলে থাকে ‘দুনিয়াতে আজকে আছি কালকে নাই হাসি-গানে ফুুর্তি করে যাই’ ‘দুনিয়াটা মস্ত বড় খাও-দাও ফুর্তি কর’ এমন বস্তুবাদীদের বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের উভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি” বরং পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সৃষ্টি করার পিছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য আছে। প্রথম উদ্দেশ্য হল পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহ তা‘আলার গোলামী করবে, তাঁর প্রশংসা করবে এবং তাঁর মহত্ব বর্ণনা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ -‏ مَآ أُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَآ أُرِيْدُ أَنْ يُّطْعِمُوْنِ)

“আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে কোন রিযিক চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমাকে খাওয়াবে।” (সূরা যারিআত ৫১:৫৬)

সুতরাং যারা তাঁর ইবাদত করবে তাদেরকে তিনি উত্তম প্রতিদান দেবেন আর যারা অসৎ আমল করবে তাদের কর্মের যথার্থ শাস্তি দেবেন।

যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(لِيَجْزِيَ الَّذِيْنَ أَسَا۬ءُوْا بِمَا عَمِلُوْا وَيَجْزِيَ الَّذِيْنَ أَحْسَنُوْا بِالْحُسْنٰي)‏

“যাতে করে যারা মন্দ আমল করে তাদেরকে তিনি দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎ আমল করে তাদেরকে তিনি দেন উত্তম প্রতিদান।” (সূরা নাজম ৫৩:৩১)

আরো অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হল এখানে ন্যায় ও অন্যায়ের যে দ্বন্দ্ব, ভালো ও মন্দের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলছে তার মধ্যে ন্যায় ও ভালোকে বিজয়ী করা ও অন্যায় এবং মন্দকে পরাজিত করা। সুতরাং আমি সত্য দ্বারা অসত্যের ওপর, ন্যায় দ্বারা অন্যায়ের ওপর এবং ভালো দ্বারা মন্দের ওপর আঘাত করি, যাতে অসত্য, অন্যায় ও মন্দের বিলুপ্তি ঘটে। دمغ মাথার ওপর এমন আঘাতকে বলা হয় যা মগজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। زهق এর অর্থ শেষ হওয়া, ধ্বংস হওয়া বা বিনষ্ট হওয়া।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি আমি ক্রীড়াচ্ছলে কোন কিছু গ্রহণ করতাম তাহলে আমার কাছে যা রয়েছে তা থেকেই গ্রহণ করতাম। কিন্তু আমি তা করিনি।

বরং আল্লাহ তা‘আলা এ সকল মিথ্যা উদ্ভট কথাবার্তাকে সত্য দ্বারা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন।

(وَلَه۫ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ)

অর্থাৎ আকাশ-জমিনে যারা আছে সবাই আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃত্বাধীন, মালিকানাধীন এবং সবাই তাঁর গোলাম, এমন কি যারা তাঁর নিকটে রয়েছে যেমন ফেরেশতা, তারাও আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃত্বাধীন এবং আল্লাহ তা‘আলার গোলাম। এরা সবাই আল্লাহর ইবাদত করতে, গোলামী করতে লজ্জাবোধ করে না এবং ক্লান্তি বোধ করে না। কাছের ফেরেশতারা সবাই দিবা-রাত্রিতে আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করে। তারা তাসবীহ পাঠে কোন প্রকার ঘাটতি করে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ)

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আল্লাহর।” (সূরা হাশর ৫৯:১)

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন যথার্থ কারণেই সৃষ্টি করেছেন এবং কেউ তাঁর দাসত্ব করতে লজ্জাবোধ করে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আকাশ-জমিনের কেউ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে লজ্জাবোধ করে না।
২. আকাশ-জমিন সৃষ্টির উদ্দেশ্য হল সবাই তাঁর ইবাদত করবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে অলসতা করা যাবে না।
৪. মানুষের দুনিয়ার কর্মের হিসাব আখিরাতে পুরিপরি নেয়া হবে।

২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অস্বীকৃতিমূলক জিজ্ঞাসা আকারে মুশরিকদেরকে ভর্ৎসনা করছেন যে, তারা এমন নির্বোধ যে, মাটির তৈরি মূর্তিগুলোকে মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে যারা মৃতকে জীবিত করতে পারে না। সুতরাং যারা মৃতকে জীবিত করতে না পারে তারা কেমন করে মা‘বূদ হল। মা‘বূদ হতে হলে তাকে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। তারা তো নিজেদের গা থেকে মাছি সরাতেও সক্ষম না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٰٓ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيٰوةً وَّلَا نُشُوْرًا)‏

“আর তারা তাঁর পরিবর্তে মা‘বূদরূপে গ্রহণ করেছে অন্যদেরকে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও পুনরুত্থানের ওপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।” (সূরা ফুরক্বান ২৫:৩)

সুতরাং মা‘বূদ হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি আকাশ-জমিনের একাধিক উপাস্য থাকত তাহলে পৃথিবী পরিচালনার ব্যাপারে বিপর্যয় সৃষ্টি হত, পৃথিবীতে শান্তি, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় থাকত না। এক মা‘বূদ চাইতো সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হোক, অন্য মা‘বূদ চাইতো পূর্ব দিকে উদিত হোক। এক মা‘বূদ বৃষ্টি দিতে চাইবে, অন্য মা‘বূদ দিতে চাইবে না ইত্যাদি ইত্যাদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(مَا اتَّخَذَ اللّٰهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَه۫ مِنْ إلٰهٍ إِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ إلٰهٍۭ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰي بَعْضٍ ط سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)‏

“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক মা‘বূদ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তা হতে আল্লাহ পবিত্র!” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৯১)

সুতরাং আকাশজমিনে একাধিক মা‘বূদ হতে পারে না। এটা মানুষের বিবেকও বলে। তাই আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য মা‘বূদ রয়েছে এ কথা হতে তিনি পবিত্র। তিনি একক, অদ্বিতীয়।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের মহত্ব্ ও বড়ত্ব এবং ক্ষমতার পূর্ণতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাঁকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা কারো নেই। কেউ বলতে পারবে না, আপনি এ কাজ করলেন কেন, এ কাজ করেন না কেন? বান্দা যা করে ও বলে, সে সকল কথা ও কাজের জন্য তাদেরকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও এগুতে পারবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ – عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)‏

“সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তাদের সকলকে প্রশ্ন করবই, সে বিষয়ে যা তারা করে।” (সূরা হিজর ১৫:৯২-৯৩)

অতঃপর যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যদের উপাসনা করে তাদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা যাবে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রমাণসমূহ নিয়ে এস। কিন্তু তারা কোন প্রমাণই পেশ করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, তাদের নিকট এ বিষয়ে কোনই দলীল প্রমাণ নেই। তারা নিজেদের খেয়াল-খুশির বশীভূত হয়ে এ সমস্ত বাতিল মা‘বূদদের উপাসনা করে। তাদের এ উপাসনা আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে কোন কাজে আসবে না।

(ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ)

এখানে যিকির বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।

(وَذِكْرُ مَنْ قَلْبِيْ)

এখানে যিকির বলতে পূর্ববর্তী নাবীদের গ্রন্থসমূহকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে তাদের দলিল-প্রমাণ কুরআনে রয়েছে এবং পূর্ববর্তী নাবীদের কিতাবেও তা রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত মুশরিকরা সত্য বিষয় সম্পর্কে অবগত নয়।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যত নাবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিধান ছিল একটাই, তা হল এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন সঠিক মা‘বূদ নেই, সুতরাং তাঁরই ইবাদত করতে হবে। তাঁর ইবাদত ব্যতীত মুক্তি পাওয়া যাবে না।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ)

“আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” (সূরা নাহল ১৬:৩৬)

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা, আল্লাহ ব্যতীত যত মা‘বূদ রয়েছে সকল মা‘বূদকে ঘৃণা করা ও তাদেরকে অস্বীকার করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. উপাস্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই।
২. সকল নাবী-রাসূলদের দীনের মূলনীতি ছিল একই যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে।
৩. প্রমাণ ছাড়া কোন আমল করা যাবে না।
৪. মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
৫. মা‘বূদ হওয়ার যোগ্যতা অন্য কোন কিছুর নেই, তাই যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে তারা ভ্রান্ত।
৬. আরশের অধিপতি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৭. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই।

২৬-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে কাফির-মুশরিকদের একটি ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার কন্যা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা আমার কন্যা নয়, বরং তারা শুধু আমার সম্মানিত বান্দা। তারা নিজে থেকে কোন কথা বলে না, তারা শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার আদেশের অনুসরণ করে। আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া তাদের কোন কিছুই করার ক্ষমতা নেই, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না, বরং যা নির্দেশ করা হয় তাই করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَّا يَعْصُوْنَ اللّٰهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ)

“যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তা-ই করে।” (সূরা তাহরীম ৬৬:৬)

(يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ)

অর্থাৎ অতীত, ভবিষ্যত সব কিছুই আল্লাহ জানেন, তাঁর জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই। এমনকি ফেরেশতাসহ কারো এতটুকু ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহর নিকট কারো জন্য শাফাআত করবে। তবে তিনি যার জন্য যাকে অনুমতি দেবেন তার জন্য সে সুপারিশ করতে পারবে। আল্লাহ কেবল ঐ ব্যক্তির জন্য অনুমতি দেবেন যার কথা ও কাজে তিনি সন্তুষ্ট। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার আয়াতুল কুরসীতে আলোচনা করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি আল্লাহকে ছেড়ে নিজেকে প্রভু বলে দাবী করে তাহলে তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ‏)‏

“যদি তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থির কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবেই এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা যুমার ৩৯:৬৫)

যদি তারা আল্লাহর সন্তান হত তাহলে তাদেরকে বলতেন না যে, প্রভু দাবী করলে কেন, তোমাদেরকে জাহান্নামে দিব। কারণ সাধারণ নিয়ম অনুসারে তারা যদি আল্লাহর সন্তানই হত তাহলে পিতার পরে তারাই প্রভু হওয়ার অধিকার রাখে। জাহান্নামে দেয়ার প্রশ্নই আসত না, আর আল্লাহ তা‘আলার জন্য এটি সমীচীনও নয় যে, তিনি সন্তান গ্রহণ করবেন। সুতরাং এতে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা কোন সন্তান গ্রহণ করেন না। তিনি এসব থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ ھُوَ اللہُ اَحَدٌﭐﺆ اَللہُ الصَّمَدُﭑﺆ لَمْ یَلِدْﺃ وَلَمْ یُوْلَدْﭒﺫ) (وَلَمْ یَکُنْ لَّھ۫ کُفُوًا اَحَدٌﭓﺟ)

“বল:‎ তিনিই আল্লাহ একক। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা ইখলাস ১১২:১-৪)

তাই আমাদের উচিত, আল্লাহ তা‘আলার শানে এমন কথা না বলা যাতে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণত্ন হয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা‘আলার কন্যা নন, বরং আল্লাহ তা‘আলার বান্দা।
৩. যে ব্যক্তি শিরক করবে তাকেই জাহান্নামে যেতে হবে ।
৩. আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবে না।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

১৬-২০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি আকাশ ও যমীনকে হক ও ন্যায়ের সাথে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি অসৎ লোকদেরকে শাস্তি এবং সৎলোকদের পুরস্কার দেন। এগুলিকে তিনি খেল তামাশা ও ক্রীড়াচ্ছিলে সৃষ্টি করেন নাই। অন্য আয়াতে এই বিষয়ের সাথে সাথেই এই বর্ণনা রয়েছে যে, এইরূপ ধারণা কাফিররা পোষণ করে থাকে যাদের জন্য জাহান্নামের অগ্নি প্রস্তুত রয়েছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি যদি খেল-তামাশা ও ক্রীড়ার উপকরণ চাইতাম তবে আমি আমার কাছে যা তা নিয়েই ওটা করতাম। এর একটি ভাবার্থ হচ্ছেঃ যদি আমি খেল-তামাশা চাইতাম তবে ওর উপকরণ বানিয়ে নিতাম। আমার কাছে যা আছে তা নিয়েই। আর তা হলে আমি জান্নাত, জাহান্নাম, মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং হিসাব সৃষ্টি করতাম না। ইবনু আবি নাজাহ (রাঃ) এই অর্থ করেছেন। হাসান (রাঃ) ও কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ যদি আমি স্ত্রীর ইচ্ছা করতাম তবে আমার কাছে যারা আছে তাদেরকেই করতাম। ইয়ামিন বাসীদের ভাষায় (আরবী) শব্দটি স্ত্রীর অর্থেও এসে থাকে। ইকরামা (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এখানে (আরবী) শব্দ দ্বারা সন্তান উদ্দেশ্য। কিন্তু এ দু’টি অর্থ পরম্পর সম্বন্ধ যুক্ত। স্ত্রীর সাথে সন্তানও রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছা করলে তার সষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করতে পারতেন; পবিত্র ও মহান তিনি। তিনি আল্লাহ, এক, প্রবল পরাক্রমশালী।” (৩৯:৪) সুতরাং তিনি সন্তান গ্রহণ করা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। হযরত ঈসা (আঃ) ও উযায়ের তাঁর পুত্র নন এবং ফেরেশতারা তাঁর কন্যাও নন। এই ইয়াহুদী, খৃস্টান ও মক্কার কাফিরদের এই বাজে কথা এবং অপবাদ হতে এক ও পরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্র ও উচ্চ। (আরবী) এর মধ্যে (আরবী) শব্দটি নেতিবাচক। অর্থাৎ ‘আমি এটা করি নাই।’ মুজাহিদের (রঃ) উক্তি তো এই যে, কুরআনকারীমের মধ্যে (আরবী) সর্বক্ষেত্রেই নেতিবাচক রূপে এসেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি সত্য দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ওটা বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। যারা আল্লাহর জন্যে সন্তান সাব্যস্ত করছে, তাদের এই বাজে ও ভিত্তিহীন কথার কারণে তাদের দুর্ভোগ পোহাতেই হবে।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে ফেরেশতাদেরকে তোমরা আল্লাহর কন্যা বলছে তাদের অবস্থা শুনো এবং আল্লাহ তাআলার বিরাটত্বের প্রতি লক্ষ্য করো যে, আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু তারই অধিকারভুক্ত। ফেরেশতারা তাঁরই ইবাদতে নিমগ্ন রয়েছে। তারা যে কোন সময় তাঁর অবাধ্য হবে এটা অস। হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার বান্দা হওয়াতে শরম করেন না এবং ফেরেশতারাও তার ইবাদত করতে লজ্জাবোধ করেন না। তাদের কেউই অহংকারবশে তার ইবাদত করা হতে বিমুখ হয় না। যে কেউ এরূপ করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, এমন একদিন আসছে যেই দিন সে হাশরের মাঠে সবারই সাথে তার সামনে হাজির হবে এবং স্বীয় কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। ঐ বুযুর্গ ফেরেশতামণ্ডলী দিবারাত্র আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তও হয় না এবং শৈথিল্যও করে না। দিন রাত তারা আল্লাহর আদেশ পালনে, তাঁর ইবাদতে এবং তার তাসবীহ পাঠ ও আনুগত্যের কাজে লেগে রয়েছে। তাদের মধ্যে নিয়াত ও আমল উভয়ই বিদ্যমান। না তারা কোন সময় আল্লাহর নাফরমানী করে, না কোন আদেশ পালনে বিমুখ হয়।

হযরত হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের মজলিসে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময় তিনি বলেনঃ “আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা তোমরাও শুনতে পাচ্ছ কি?” সাহাবীরা উত্তরে বলেনঃ “আমরা তো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।” তখন তিনি বলেনঃ “আমি আকাশের চড়ুচণ্ডু শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর সত্য ব্যাপার তো এটাই যে, ওতে চডুচড়ু হওয়া স্বাভাবিক। কেননা তাতে কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমিত স্থানও এমন নেই যেখানে কোন না কোন ফেরেশতার মস্তক সিজদায় পড়ে থাকে না।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু নাওফাল (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমি হযরত কা’ব আহবারের (রাঃ) কাছে বসেছিলাম। ঐ সময় আমি অল্প বয়স্ক বালক ছিলাম। আমি তাকে এই আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলাম যে, ফেরেশতাদেরকে কি তাদের চলা, ফেরা, আল্লাহর পয়গাম নিয়ে যাওয়া, আমল করা ইত্যাদি ও তাসবীহ পাঠ করতে বিরত রাখে না? আমার এ প্রশ্ন শুনে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এ ছেলেটি কে?” জনগণ উত্তরে বললেনঃ “এটা বানু আবদিল মুত্তালিব গোত্রের ছেলে। তিনি তখন আমার কপাল চুম্বন করে বললেনঃ “হে প্রিয় বৎস! ফেরেশতাদের এই তাসবীহ পাঠ ঠিক আমাদের নিঃশ্বাস গ্রহণের মত। দেখো, চলতে, ফিরতে, কথা বলতে সব সময়েই আমাদের নিঃশ্বাস আসা যাওয়া করে থাকে। অনুরূপভাবে ফেরেশতাদের তাসবীহ পাঠও অনবরত চলতে থাকে।”

২১-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা শিরকে খণ্ডন করতে গিয়ে বলেনঃ হে মুশরিকদের দল! আল্লাহ ছাড়া তোমরা যে সবের পূজা করে থাকে। তাদের মধ্যে একজনও এমন নেই যে মৃতকে জীবিত করতে পারে। একজন কেন, সবাই মিলিত হলেও তাদের এ ক্ষমতা হবে না। তা হলে যে আল্লাহ এ ক্ষমতা রাখেন তাদের তার সমান মর্যাদা দেয়া অন্যায় নয় কি?

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আচ্ছা, যদি বাস্তবে এটা মেনে নেয়া হয় যে, বহু মাবুদ রয়েছে তবে আসমান ও যমীনের ধ্বংস অপরিহার্য হয়ে পড়বে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “আল্লাহর সন্তান নেই এবং তাঁর সাথে অন্য কোন মাবুদও নেই; যদি এরূপ হতো তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৃষ্ট বস্তুকে নিয়ে ফিরতে এবং প্রত্যেকেই অন্যের উপর জয়যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতো। আল্লাহ তাআলা তাদের বর্ণনাকৃত বিশেষণ হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।” এখানে তিনি বলেনঃ তারা যা বলে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র ও মহান। অর্থাৎ ছেলে মেয়ে হতে তিনি পবিত্র ও মুক্ত। অনুরূপভাবে তিনি সঙ্গী সাথী, অংশীদার ইত্যাদি হতেও উর্ধ্বে। তাদের এ সব কিছু তার উপর অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। এগুলি থেকে আল্লাহর সত্ত্বা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তার মাহাত্মতো এই যে, সাধারণভাবে তিনি প্রকৃত শাহানশাহ। তার উপরে শাসনকর্তা হুকুমের কৈফিয়ত চাইতে পারে না এবং কেউ তার কোন ফরমনি টলাতেও পারে না। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা, বড়ত্ব, জ্ঞান, হিকমত, ন্যায় বিচার এবং মেহেরবানী অতুলনীয়। তাই, তার বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ তার সামনে টু শব্দটিও করতে পারে না। সবাই তার সামনে অপারগ ও নিরুপায়। কেউই কোন শক্তি রাখে না। কেউ এমন নেই যে, তার সামনে কথা বলার সাহস রাখে। এ কাজ কেন করলেন এবং কেন এটা হলো এরূপ প্রশ্ন তাঁকে করতে পারে এমন সাধ্য কারো নেই। তিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা এবং সবারই তিনি মালিক বলে তিনি যাকে ইচ্ছা যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন। প্রত্যেকের কাজের তিনি হিসাব গ্রহণ করবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই আমি তাদের সকলকেই তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।” (১৫:৯২-৯৩) যে তার, আশ্রয়ে এসে যাবে সে সমস্ত অকল্যাণ ও বিপদাপদ হতে বেঁচে যাবে। পক্ষান্তরে, এমন কেউ নেই যে তাঁর বিপক্ষে অপরাধীকে আশ্রয় দিতে পারে।

২৪-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ঐ লোকগুলি আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে মা’বুদ বানিয়ে রেখেছে, তাদের ইবাদতের উপর কোন প্রমাণ তাদের কাছে নেই। কিন্তু মু’মিনরা যে আল্লাহর ইবাদত করছে তাতে তারা সত্যের উপর রয়েছে। তাদের হাতে উচ্চতর দলীল হিসেবে আল্লাহর কালাম কুরআন বিদ্যমান রয়েছে। এর পূর্ববর্তী অসিমানী কিতাব গুলিতেও এর প্রমাণ মওজুদ রয়েছে, যা সশব্দে তাওহীদের স্বপক্ষে ও কাফিরদের আত্মপূজার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যে নবীর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাতে এই বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়। কিন্তু অধিকাংশ মুশরিক সত্য হতে উদাসীন হয়ে আল্লাহর কথাকে অস্বীকার করে বসেছে। সমস্ত রাসূলকে তাও হীদের শিক্ষা দেয়ারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল পাঠিয়েছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করতো আমি কি তাদের জন্যে দয়াময় (আল্লাহ) ছাড়া অন্যান্য মাবুদ সমূহ নির্ধারণ করেছিলাম যে, তারা তাদেরই ইবাদত করবে?” (৪৩:৪৫) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে এমন রাসূল পাঠিয়েছি যে জনগণের কাছে ঘোষণা করে দিয়েছেঃ তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তাগূতের (শয়তানের) ইবাদত হতে দূরে থাকো।” (১৬:৩৬) সুতরাং রাসূল ও নবীদের সাক্ষ্যও এটাই এবং স্বয়ং আল্লাহর প্রকৃতিও এরই সাক্ষী। আর মুশরিকদের কোন দলীল প্রমাণ নেই। তাদের সমস্ত হুজ্জত বৃথা। তাদের উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে এবং তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।

২৬-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:

মক্কার কাফিরদের ধারণা ছিল যে, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের এই ধারণা খণ্ডন করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ফেরেশতারা তার সম্মানিত বান্দা। তারা বড়ই মর্যাদা সম্পন্ন। কথায় ও কাজে তারা সদা আল্লাহর আনুগত্যের কাজে নিমগ্ন রয়েছে। কোন সময়েই তারা আগে বেড়ে কথা বলে না, কোন কাজে তারা তাঁর আদেশের বিপরীতও করে না। বরং যা তিনি আদেশ করেন তা-ই তারা পালন করে। তারা আল্লাহর জ্ঞানের মধ্যে পরিবেষ্টিত। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন নেই সামনের পিছনের ডানের ও বামের খবর তিনি রাখেন। অণু-পরমাণুর জ্ঞানও তার রয়েছে। এই পবিত্র ফেরেশতারাও এই সাহস রাখেন না যে, আল্লাহর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন অপরাধীর জন্যে সুপারিশ করেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?” (২৪ ২৫৫) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যাকে তিনি অনুমতি দিবেন তার শাফাআত ছাড়া তাঁর কাছে আর কারো শাফাআত চলবে না।” (৩৪:২৩) এই বিষয়েই আরো বহু আয়াত কুরআন কারীমের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। ফেরেশতা মণ্ডলী এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভকারী বান্দারা সবাই তার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় কাঁপতে থাকবেন। তাদের মধ্যে যে কেউই নিজে মা’বৃদ বলে দাবী করবে তাকে আল্লাহ প্রতিফল দিবেন জাহান্নাম। যালিমদেরকে তিনি এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহর একথাটি শর্ত সাপেক্ষ। আর শর্তের জন্যে ওটা সংঘটিত হওয়া জরুরী নয়। এটা জরুরী নয় যে, আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দাদের মধ্যে কেউ এই ঘৃণ্য দাবী করে ও এইরূপ কঠিন শাস্তি ভোগ করে। যেমন কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ যদি আল্লাহর সন্তান হতো তবে আমিই হতাম প্রথম সেই বান্দা।” (৪৩:৮১) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী (সঃ)!) যদি তুমি শিরু কর তবে অবশ্যই তোমার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (৩৯:৬৫) সুতরাং আল্লাহ তাআলার সন্তান হওয়াও যেমন সম্ভব নয় তেমনই রাসূলুল্লাহর (সঃ) শিকও অসম্ভ।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#924)
[ وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَہُمَا لٰعِبِیۡنَ ﴿۱۶﴾
Creation was made with Justice and Wisdom.]

Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 16-29
www.motaher21.net

21:16

وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَہُمَا لٰعِبِیۡنَ ﴿۱۶﴾

And We did not create the heaven and earth and that between them in play.

 

Creation was made with Justice and Wisdom

Allah tells:

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاء وَالاَْرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِينَ

We created not the heavens and the earth and all that is between them for play.

Allah tells us that He created the heavens and the earth in truth, i.e. with justice.

لِيَجْزِىَ الَّذِينَ أَسَاءُواْ بِمَا عَمِلُواْ وَيِجْزِى الَّذِينَ أَحْسَنُواْ بِالْحُسْنَى

that He may requite those who do evil with that which they have done, and reward those who do good, with what is best. (53:31)

He did not create all that in vain or for (mere) play:

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَأءَ وَالاٌّرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَـطِلً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُواْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنَ النَّارِ

And We created not the heaven and the earth and all that is between them without purpose! That is the consideration of those who disbelieve! Then woe to those who disbelieve from the Fire! (38:27)

لَوْ أَرَدْنَا أَن نَّتَّخِذَ لَهْوًا لاَّتَّخَذْنَاهُ مِن لَّدُنَّا إِن كُنَّا فَاعِلِينَ

21:17

لَوۡ اَرَدۡنَاۤ اَنۡ نَّتَّخِذَ لَہۡوًا لَّاتَّخَذۡنٰہُ مِنۡ لَّدُنَّاۤ ٭ۖ اِنۡ کُنَّا فٰعِلِیۡنَ ﴿۱۷﴾

Had We intended to take a diversion, We could have taken it from [what is] with Us – if [indeed] We were to do so.

 

Had We intended to take a pastime, We could surely have taken it from Us, if We were going to do (that).

Ibn Abi Najih said, narrating from Mujahid:
لَوْ أَرَدْنَا أَن نَّتَّخِذَ لَهْوًا لاَّتَّخَذْنَاهُ مِن لَّدُنَّا
(Had We intended to take a pastime, We could surely have taken it from Us),

“Meaning, `From Ourself,’ He is saying, `We would not have created Paradise or Hell or death or the resurrection or the Reckoning.”‘

إِن كُنَّا فَاعِلِينَ

if We were going to do (that).

Qatadah, As-Suddi, Ibrahim An-Nakha`i and Mughirah bin Miqsam said:

“This means, `We will not do that.”‘

Mujahid said,

every time the word
أَن
(if) is used in the Qur’an, it is a negation

21:18

بَلۡ نَقۡذِفُ بِالۡحَقِّ عَلَی الۡبَاطِلِ فَیَدۡمَغُہٗ فَاِذَا ہُوَ زَاہِقٌ ؕ وَ لَکُمُ الۡوَیۡلُ مِمَّا تَصِفُوۡنَ ﴿۱۸﴾

Rather, We dash the truth upon falsehood, and it destroys it, and thereupon it departs. And for you is destruction from that which you describe.

 

بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَى الْبَاطِلِ

Nay, We fling the truth against the falsehood,

means, `We explain the truth and thus defeat falsehood.’

Allah says:

فَيَدْمَغُهُ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٌ

so it destroys it, and behold, it disappears.

it is fading and vanishing.

وَلَكُمُ الْوَيْلُ

And woe to you!

O you who say that Allah has offspring.

مِمَّا تَصِفُونَ

for that which you ascribe.

that which you say and fabricate.

Then Allah informs of the servitude of the angels, and how they persevere in worship night and day:
Everything belongs to Allah and serves Him

Allah tells

21:19

وَ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَنۡ عِنۡدَہٗ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِہٖ وَ لَا یَسۡتَحۡسِرُوۡنَ ﴿ۚ۱۹﴾

To Him belongs whoever is in the heavens and the earth. And those near Him are not prevented by arrogance from His worship, nor do they tire.

 

وَلَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ وَمَنْ عِندَهُ

To Him belongs whosoever is in the heavens and on earth. And those who are near Him

i.e., the angels,
.
لَاا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ

are not too proud to worship Him,

they do not feel proud and do not refuse to worship Him.

This is like the Ayah:

لَّن يَسْتَنكِفَ الْمَسِيحُ أَن يَكُونَ عَبْداً للَّهِ وَلَا الْمَلَـيِكَةُ الْمُقَرَّبُونَ وَمَن يَسْتَنْكِفْ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيَسْتَكْبِرْ فَسَيَحْشُرُهُمْ إِلَيهِ جَمِيعاً
Al-Masih will never be proud to reject being a servant of Allah, nor the angels who are the near. And whosoever rejects His worship and is proud, then He will gather them all together unto Himself. (4:172)

وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ

nor are they weary.

means, they do not get tired or feel bored.

يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ

21:20

یُسَبِّحُوۡنَ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ لَا یَفۡتُرُوۡنَ ﴿۲۰﴾

They exalt [Him] night and day [and] do not slacken.

 

They glorify His praises night and day, they never slacken.

They persist in their worship night and day, obeying Allah to the utmost, and they are able to do this, as Allah says:

لااَّ يَعْصُونَ اللَّهَ مَأ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُوْمَرُونَ

who do not disobey Allah in what He commands them, but do what they are commanded. (66:6)
21:21

اَمِ اتَّخَذُوۡۤا اٰلِہَۃً مِّنَ الۡاَرۡضِ ہُمۡ یُنۡشِرُوۡنَ ﴿۲۱﴾

Or have men taken for themselves gods from the earth who resurrect [the dead]?

 

Refutation of false gods

Allah denounces those who take other gods instead of Him:

أَمِ اتَّخَذُوا الِهَةً مِّنَ الاَْرْضِ هُمْ يُنشِرُونَ

Or have they taken gods from the earth who raise the dead!

meaning, can they bring the dead back to life and bring them forth from the earth? They cannot do any of that, so how can they make them rivals to Allah and worship them alongside Him!

Then Allah tells us that if there were another god besides Him, the heavens and the earth would be ruined

21:22

لَوۡ کَانَ فِیۡہِمَاۤ اٰلِہَۃٌ اِلَّا اللّٰہُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعَرۡشِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿۲۲﴾

Had there been within the heavens and earth gods besides Allah, they both would have been ruined. So exalted is Allah, Lord of the Throne, above what they describe.

 

لَوْ كَانَ فِيهِمَا الِهَةٌ

Had there been therein gods,

means, in the heavens and the earth,

إِلاَّ اللَّهُ

besides Allah,

لَفَسَدَتَا

then verily, both would have been ruined.

This is like the Ayah:

مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِن وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَـهٍ إِذاً لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَـهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ سُبْحَـنَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ

No son did Allah beget, nor is there any god along with Him. Then each god would have taken away what he had created, and some would have tried to overcome others!

Glorified be Allah above all that they attribute to Him! (23:91)

And Allah says here:

فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ

Glorified be Allah, the Lord of the Throne, above all that they associate with Him!

meaning, glorified be He above what they say about Him having offspring or partners;

glorified and exalted and sanctified be He far above all the lies that they fabricate.

لَاا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ

21:23

لَا یُسۡـَٔلُ عَمَّا یَفۡعَلُ وَ ہُمۡ یُسۡـَٔلُوۡنَ ﴿۲۳﴾

He is not questioned about what He does, but they will be questioned.

 

He cannot be questioned about what He does, while they will be questioned.

He is the Ruler Whose rule cannot be overturned and none can object to it, because of His might, majesty, pride, knowledge, wisdom, justice and subtlety.

وَهُمْ يُسْأَلُونَ

while they will be questioned.

means, He is the One Who will ask His creation about what they did.

This is like the Ayah:

فَوَرَبِّكَ لَنَسْـَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ

عَمَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

So, by your Lord, We shall certainly call all of them to account. For all that they used to do. (15:92-93)

وَهُوَ يُجْيِرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ

And He protects (all), while against Whom there is no protector. (23:88)

21:24

اَمِ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اٰلِہَۃً ؕ قُلۡ ہَاتُوۡا بُرۡہَانَکُمۡ ۚ ہٰذَا ذِکۡرُ مَنۡ مَّعِیَ وَ ذِکۡرُ مَنۡ قَبۡلِیۡ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ۙ الۡحَقَّ فَہُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ ﴿۲۴﴾

Or have they taken gods besides Him? Say, [O Muhammad], “Produce your proof. This [Qur’an] is the message for those with me and the message of those before me.” But most of them do not know the truth, so they are turning away.

 

Allah says:

أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ الِهَةً قُلْ

Or have they taken for worship gods besides Him Say:(– O Muhammad –)

هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ

Bring your proof.

your evidence for what you are saying.

هَذَا ذِكْرُ مَن مَّعِيَ

This is the Reminder for those with me,

means, the Qur’an.

وَذِكْرُ مَن قَبْلِي

بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ فَهُم مُّعْرِضُونَ

and the Reminder for those before me.

means, the previous Books, unlike what you claim.

Each Book was revealed to each Prophet who was sent with the message that there is no god except Allah, but you idolators do not recognize the truth, so you turn away from it.

Allah says:

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلاَّ نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدُونِ
21:25

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ ﴿۲۵﴾

And We sent not before you any messenger except that We revealed to him that, “There is no deity except Me, so worship Me.”

 

And We did not send any Messenger before you but We revealed to him (saying):”There is no God but I, so worship Me.”

This is like the Ayat:

وَاسْيلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَأ أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّحْمَـنِ ءَالِهَةً يُعْبَدُونَ

And ask those of Our Messengers whom We sent before you:”Did We ever appoint gods to be worshipped besides the Most Gracious!” (43:45)

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِى كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللَّهَ وَاجْتَنِبُواْ الْطَّـغُوتَ

And verily, We have sent among every Ummah a Messenger (proclaiming):”Worship Allah, and avoid Taghut (all false deities).” (16:36)

Every Prophet who was sent by Allah called people to worship Allah Alone, with no partner or associate. The natural inclination of man (Al-Fitrah) also bears witness to that. The idolators have no proof and their dispute is of no use before their Lord; on them is wrath, and for them will be a severe torment

21:26

وَ قَالُوا اتَّخَذَ الرَّحۡمٰنُ وَلَدًا سُبۡحٰنَہٗ ؕ بَلۡ عِبَادٌ مُّکۡرَمُوۡنَ ﴿ۙ۲۶﴾

And they say, “The Most Merciful has taken a son.” Exalted is He! Rather, they are [but] honored servants.

 

The Refutation of Those Who claim that the Angels are the Daughters of Allah; description of their Deeds and Status

Allah says:

وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا

And they say:”The Most Gracious has begotten children.”

Here Allah refutes those who claim that He has offspring among the angels — exalted and sanctified be He. Some of the Arabs believed that the angels were the daughters of Allah, but Allah says:

سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ

Glory to Him! They are but honored servants.

meaning, the angels are servants of Allah who are honored by Him and who hold high positions of noble status. They obey Him to the utmost in all their words and deeds.

لَاا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ

21:27

لَا یَسۡبِقُوۡنَہٗ بِالۡقَوۡلِ وَ ہُمۡ بِاَمۡرِہٖ یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۷﴾

They cannot precede Him in word, and they act by His command.

 

They speak not until He has spoken, and they act on His command.

meaning, they do not initiate any matter before Him or go against His commands; on the contrary, they hasten to do as He commands, and He encompasses them with His knowledge so that nothing whatsoever is hidden from Him

21:28

یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ مَا خَلۡفَہُمۡ وَ لَا یَشۡفَعُوۡنَ ۙ اِلَّا لِمَنِ ارۡتَضٰی وَ ہُمۡ مِّنۡ خَشۡیَتِہٖ مُشۡفِقُوۡنَ ﴿۲۸﴾

He knows what is [presently] before them and what will be after them, and they cannot intercede except on behalf of one whom He approves. And they, from fear of Him, are apprehensive.

 

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ

He knows what is before them, and what is behind them,

وَلَا يَشْفَعُونَ إِلاَّ لِمَنِ ارْتَضَى

and they cannot intercede except for him with whom He is pleased.

This is like the Ayat:

مَن ذَا الَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ

Who is he that can intercede with Him except with His permission. (2:255)

وَلَا تَنفَعُ الشَّفَـعَةُ عِندَهُ إِلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ

Intercession with Him profits not except for him whom He permits. (34:23).

There are many Ayat which say similar things.

وَهُم مِّنْ خَشْيَتِهِ

And they for fear of Him,

means, because they fear Him.

مُشْفِقُونَ

21:29

وَ مَنۡ یَّقُلۡ مِنۡہُمۡ اِنِّیۡۤ اِلٰہٌ مِّنۡ دُوۡنِہٖ فَذٰلِکَ نَجۡزِیۡہِ جَہَنَّمَ ؕ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿٪۲۹﴾

And whoever of them should say, “Indeed, I am a god besides Him”- that one We would recompense with Hell. Thus do We recompense the wrongdoers.

 

وَمَن يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَهٌ مِّن دُونِهِ

And they stand in awe. And if any of them should say:”Verily, I am a god besides Him,”

meaning, whoever claims to be a god instead of Allah, i.e., alongside Allah,

فَذَلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ

such We should recompense with Hell. Thus We recompense the wrongdoers.

meaning, everyone who says this. This is a conditional sentence, and the condition stated does not necessarily have to take place.

This is like the Ayat:

قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَـنِ وَلَدٌ فَأَنَاْ أَوَّلُ الْعَـبِدِينَ

Say:”If the Most Gracious had a son, then I am the first of worshippers.” (43:81)

لَيِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَـسِرِينَ

If you join others in worship with Allah, (then) surely, (all) your deeds will be in vain, and you will certainly be among the losers. (39:65

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply