أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯২৫)
[ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ
প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
৩০-৩৩ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:৩০
সুরা: আল-আম্বিয়া
আয়াত নং :-৩০
اَوَ لَمْ یَرَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا١ؕ وَ جَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَیْءٍ حَیٍّ١ؕ اَفَلَا یُؤْمِنُوْنَ
যারা (নবীর কথা মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা কি চিন্তা করে না যে, এসব আকাশ ও পৃথিবী এক সাথে মিশে ছিল, তারপর আমি তাদেরকে আলাদা করলাম এবং পানি থেকে সৃষ্টি করলাম প্রত্যেকটি প্রাণীকে। তারা কি (আমার এ সৃষ্টি ক্ষমতাকে) মানে না?
২১:৩১
وَ جَعَلْنَا فِی الْاَرْضِ رَوَاسِیَ اَنْ تَمِیْدَ بِهِمْ١۪ وَ جَعَلْنَا فِیْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ یَهْتَدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীতে পাহাড় বসিয়ে দিয়েছি, যাতে সে তাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং তার মধ্যে চওড়া পথ তৈরি করে দিয়েছি, হয়তো লোকেরা নিজেদের পথ জেনে নেবে।
২১:৩২
وَ جَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًا١ۖۚ وَّ هُمْ عَنْ اٰیٰتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আর আমি আকাশকে করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদ, কিন্তু তারা এমন যে, এ নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টিই দেয় না।
২১:৩৩
وَ هُوَ الَّذِیْ خَلَقَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ وَ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ١ؕ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ
আর আল্লাহই রাত ও দিন তৈরি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।
৩০-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# মূলে رَتْقً ও فَتَقْ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘রতক’ মানে হচ্ছে একত্র হওয়া, একসাথে থাকা, একজন অন্য জনের সাথে জুড়ে থাকা। আর “ফাতক” মানে ফেড়ে ফেলা, ছিঁড়ে ফেলা, আলাদা করা। বাহ্যত এ শব্দগুলো থেকে যে কথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, বিশ্ব-জাহান প্রথমে একটি পিণ্ডের (MASS) আকারে ছিল। পরবর্তীকালে তাকে পৃথক পৃথক অংশে বিভক্ত করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নীহারিকা ইত্যাদি স্বতন্ত্র জগতে পরিণত করা হয়েছে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ ১৩, ১৪, ১৫ টীকা)
# এ থেকে যে অর্থ বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ পানিকে জীবনের উৎপাদক (Cause Of Life) ও প্রাণের উৎসে পরিণত করেছেন। এরই মধ্যে এবং এ থেকে করেছেন জীবনের সূচনা। কুরআনের অন্য জায়গায় এ বক্তব্যকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ وَاللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِنْ مَاءٍ “আর আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন।” ( সূরা নূরঃ ৪৫ )
# এ থেকে জানা যায়, ভূপৃষ্ঠে পর্বত শ্রেণী স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠু ও সুশৃংখল হয়। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের এ উপকারিতা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যে সমস্ত উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মুখ্য উদ্দেশ্য।
# পাহাড়ের মধ্যে এমন গিরিপথ, ঝরণা ও নদী তৈরী করে দিয়েছি যার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করার ও পৃথিবীর এক অংশ থেকে আর এক অংশে চলাফেরা করার জন্য রাস্তা তৈরী হয়ে গেছে। এভাবে পৃথিবীর অন্যান্য অংশকে এমনভাবে গঠন করা হয়েছে যার ফলে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার পথ তৈরী হয়ে যায় বা তৈরী করে নেয়া যেতে পারে।
# এটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বাক্য। এর এ অর্থও হয় যে, লোকেরা পৃথিবীতে চলাফেরা করার পথ পাবে, আবার এ অর্থও হয় যে, তারা এই জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, কলাকৌশল, কারিগরি দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা দেখে মূল সত্যে পৌঁছে যাবার পথ পাবে।
# সুরা: আল-হিজর
আয়াত নং :-১৬
وَ لَقَدْ جَعَلْنَا فِی السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّ زَیَّنّٰهَا لِلنّٰظِرِیْنَۙ
আকাশে আমি অনেক মজবুত দূর্গ নির্মাণ করেছি, দর্শকদের জন্য সেগুলো সুসজ্জিত করেছি,
# আরবী ভাষায় দূর্গ, প্রাসাদ ও মজবুত ইমারতকে বুরুজ বলা হয়। প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যায় সূর্যের পরিভ্রমণ পথকে যে বারটি স্তরে বা রাশিচক্রে বিভক্ত করা হয়েছিল ‘বুরুজ’ শব্দটিকে পারিভাষিক অর্থে সেই বারটি স্তরের জন্য ব্যবহার করা হতো। এ কারণে কুরআন ঐ বুরুজগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছে বলে কোন কোন মুফাস্সির মনে করেছেন। আবার কোন কোন মুফাস্সির এটিকে গ্রহ অর্থে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পরবর্তী বক্তব্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মনে হবে, এর অর্থ সম্ভবত উর্ধ্বজগতের এমন সব অংশ যার মধ্যকার প্রত্যেকটি অংশকে অত্যন্ত শক্তিশালী সীমান্ত অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে রেখেছে। যদিও এ সীমান্তরেখা মহাশূন্যে অদৃশ্যভাবে অঙ্কিত হয়ে আছে তবুও সেগুলো অতিক্রম করে কোন জিনিসের এক অংশ থেকে অন্য অংশে যাওয়া খুবই কঠিন। এ অর্থের প্রেক্ষিতে আমি বুরুজ শব্দটিকে সংরক্ষিত অঞ্চলসমূহ (Fortified spheres) অর্থে গ্রহণ করা অধিকতর নির্ভুল বলে মনে করি।
# প্রত্যেক অঞ্চলে কোন না কোন উজ্জ্বল গ্রহ বা তারকা রেখে দিয়েছেন এবং এভাবে সমগ্র জগত ঝলমলিয়ে উঠেছে। অন্যকথায়, আমি দৃশ্যত কুলকিনারাহীন এ বিশ্ব জগতকে একটি বিশাল পরিত্যক্ত ভূতুড়ে বাড়ি বানিয়ে রেখে দেইনি। বরং তাকে এমন একটি সুন্দর সুসজ্জিত জগৎ বানিয়ে রেখেছি যার মধ্যে সর্বত্র সবদিকে নয়নাভিরাম দীপ্তি ছাড়িয়ে রয়েছে। এ শিল্পকর্মে শুধুমাত্র একজন মহান কারিগরের অতুলনীয় শিল্প নৈপুণ্য এবং একজন মহাবিজ্ঞানীর অনুপম বৈজ্ঞানিক কুশলতাই দৃষ্টিগোচর হয় না বরং এই সঙ্গে একজন অতীব পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রুচির অধিকারী শিল্পীর শিল্পও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ বিষয়বস্তুটিই অন্য এক স্থানে এভাবে বলা হয়েছেঃ الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ (আল্লাহ, যে জিনিসই বানিয়েছেন, চমৎকার বানিয়েছেন।) আস-সাজদাহঃ
# আকাশে যে নিদর্শনগুলো আছে সেগুলোর দিকে।
# كُلٌّ ও يَسْبَحُونَ শব্দগুলোই একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, এর অর্থ শুধুমাত্র সূর্য ও চন্দ্র নয় বরং মহাশূন্যের অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রও। নয়তো বহুবচনের পরিবর্তে একবচন ব্যবহার করা হতো। فلك শব্দটি আমাদের ভাষায় চক্র শব্দের সমার্থক। আরবী ভাষায় এটি আসমান বা আকাশ শব্দের পরিচিত অর্থই প্রকাশ করে। “সবাই এক একটি ফালাকে (কক্ষপথে) সাঁতরে বেড়াচ্ছে”—এ থেকে দু’টি কথা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। এক, প্রত্যেকের ফালাক বা কক্ষপথ আলাদা। দুই, ফালাক এমন কোন জিনিস নয় যেখানে এ গ্রহ-নক্ষত্রগুলো খুঁটির মতো প্রোথিত আছে এবং তারা নিজেরাই এ খুঁটিগুলো নিয়ে ঘুরছে। বরং তারা কোন প্রবাহমান অথবা আকাশ ও মহাশূন্য ধরনের কোন বস্তু, যার মধ্যে এই গ্রহ-নক্ষত্রের চলা ও গতিশীলতা সাঁতার কাঁটার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইয়াসীন ৩৭ টীকা দেখুন)। প্রাচীন যুগে লোকদের কাছে আকাশ ও পৃথিবীর একত্র হওয়া (رتق) ও পৃথক হয়ে যাওয়া (فتق) পানি থেকে প্রত্যেক সজীব সত্তাকে সৃষ্টি করা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের এক একটি ‘ফালাকে’ সাঁতার কাটার ভিন্ন অর্থ ছিল। বর্তমান যুগে পদার্থবিদ্যা (Physics) জীববিদ্যা (Biology) ও জ্যোতির্বিদ্যার (Astronomy) অত্যাধুনিক তথ্যাবলী আমাদের কাছে তাদের অর্থ ভিন্নতর করে দিয়েছে। আমরা বলতে পারি না, আগামীতে মানুষ যেসব তথ্য সংগ্রহ করবে তার ফলে এ শব্দগুলোর অর্থ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। মোট কথা বর্তমান যুগের মানুষ এ তিনটি আয়াতকে সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক তথ্যাবলী অনুযায়ী পাচ্ছে।
এখানে একথটি অনুধাবন করে নিতে হবে যে, وَلَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ থেকে নিয়ে كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ পর্যন্ত ভাষণে শিরক খণ্ডন করা হয়েছে এবং أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا ) থেকে নিয়ে فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ পর্যন্ত যা কিছু বলা হয়েছে তার মধ্যে তাওহীদের জন্য ইতিবাচক (Positive) যুক্তি দেয়া হয়েছে। মূল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের সামনে বিশ্ব-জাহানের এই যে ব্যবস্থা আছে, এর মধ্যে কি কোথাও এক আল্লাহ রব্বুল আলামীন ছাড়া আর কারো কোন সৃষ্টি কৌশল তোমরা দেখতে পাচ্ছো? একাধিক ইলাহদের কর্মকূশলতায় কি এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে এবং এমন শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার সাথে বিশ্ব-জাহান চলতে পারে? এ জ্ঞানগর্ভ ব্যবস্থাটি সম্পর্কে কি কোন বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি একথা কল্পনা করতে পারেন যে, এটা একজন খেলোয়াড়ের খেলা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তিনি নিছক নিজের ফূর্তি ও আনন্দ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য কয়েকটি পুতুল বানিয়ে নিয়েছেন, কিছুক্ষণ খেলা করার পর আবার সেগুলো ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেবেন? এসব কিছু তোমরা নিজেদের চোখে দেখছো এবং এরপরও নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করছো? তোমরা কি দেখতে পাচ্ছো না, পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি জিনিস নবী তোমাদের সামনে যে তাওহীদী মতবাদ পেশ করছেন তার সাক্ষ্য দিচ্ছে? এসব নিদর্শনের উপস্থিতিতে তোমরা বলছো فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ (এ নবী কোন নিদর্শন নিয়ে আসুক)। নবী তাওহীদের দাওয়াতের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার জন্য এ নিদর্শনগুলো কি যথেষ্ট নয়?
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী : বর্তমান আলােচনার মধ্যে ওদের হঠকারিতা, জেদ এবং নিজেদের স্বার্থের জন্যে নির্লজ্জ বিরােধিতার যে উপমা তুলে ধরা হয়েছে তা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। এ উদাহরণগুলাে পেশ করার পর যে কোনাে বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে ওদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ঘৃণার সঞ্চার হবে। ওদের সত্যবিরােধী জেদী মনোভাব বুঝাতে গিয়ে আকাশের দৃশ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, গােটা সৃষ্টিজগতকেই ব্যবহার করা হয়েছে এই সব মানুষকে জ্ঞান দানের পুস্তক হিসাবে এবং এ ব্যাপারে শুরু করা হয়েছে আকাশের রহস্যপূর্ণ দৃশ্যাবলীর উল্লেখ দ্বারা, তারপর পৃথিবীর বিভিন্ন বস্তুর নযির তুলে ধরা হয়েছে, যেমন পানি ভর্তি বায়ু, জীবন মৃত্যু, মরণের পর পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠা ও আল্লাহর দরবারে সবার হাযির হওয়া ইত্যাদি, কিন্তু এসব উদাহরণ দ্বারাও যাদের বিবেকে সাড়া জাগে না, তাদের হঠকারিতা বুঝানাের জন্যে চূড়ান্ত এই উপমা তুলে ধরা হয়েছে যে তারা এতাে বেশী সত্যবিরােধী এবং নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে এতাে বেশী অন্ধ যে তাদের সামনে যদি আকাশে ওঠে যাওয়ার জন্যে কোনাে দরজাও খুলে দেয়া হতাে এবং আল্লাহর রহস্য ভান্ডার অবলােকন করতে করতে সম্মুখ পানে এগিয়ে গিয়ে তারা আল্লাহর ক্ষমতাসমূহ প্রত্যক্ষ করতাে তবুও তারা নবী(স.)-এর কথা ও কোরআনের বাণীকে সত্য বলে মেনে নিতে না। বরং তারা বলতো, আমাদেরকে নযরবন্দী করে ফেলা হয়েছে। এতেও তৃপ্ত না হয়ে তারা আরাে বলে উঠতাে, আমরা গােটা জাতি এই মারাত্মক যাদুর স্পর্শে হয়ে গিয়েছি মন্ত্রমুগ্ধ। সে আমাদেরকে যা দেখাচ্ছে ইচ্ছায় অনিচ্ছায়, বাধ্য হয়ে আমরা তাই দেখছি। এ অবস্থাটাকে তুলে ধরার জন্যে আরাে বলা হচ্ছে, ‘আর অবশ্যই আমি, বানিয়েছি আকাশের মধ্যে সুউচ্চ গম্বুজ বিশিষ্ট কেল্লাসমূহ… তাকে তাড়া করে নিয়ে যায় উজ্জল উল্কা পিন্ড।’ এটাই হচ্ছে সুপ্রশস্ত ও চিরস্থায়ী সুরক্ষিত ফলকের মধ্যে লিখিত প্রথম অংশ। অবশ্যই এটা মহান আল্লাহর অদৃশ্য হাতের ইশারায় অংকিত রহস্যে ভরা সেই চিরস্থায়ী ফলকের লিখন। আর আল কোরআন এর ভাষাই এমন এক মােজযা যা ফেরেশতাদের আগমন থেকেও অনেক বেশী আশ্চর্যজনকভাবে আল্লাহ তায়ালা ও তার রসূল সম্পর্কে সাক্ষ্য বহন করছে এবং বিশ্ব সৃষ্টির পরিকল্পনা ও পরিচালনার জটিলতা সম্পর্কেও আমাদেরকে অবহিত করছে এবং এ মহা সৃষ্টির বিশালত্ব সম্পর্কে জানাচ্ছে। এখানে বুরূজ বা কেল্লাসমূহের যে উল্লেখ হয়েছে তার দ্বারা তারকারাজি ও সুবিশাল ছায়ালােককে বুঝানাে হয়েছে । এটাও জানানাে হয়েছে যে, এসব গ্রহ-নক্ষত্র এক মুহূর্তের জন্যেও স্থির হয়না, বরং প্রত্যেকটি নিজ নিজ গতি পথে সদা সর্বদা পরিভ্রমণ করছে, কিন্তু গতিহীন বা গতিপূর্ণ যাই হােক না কেন, উভয় অবস্থাতেই এ মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়কর প্রতিটি সৃষ্টি স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে সর্বদাই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আরাে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালাই এসব কিছুর মধ্যে অপরূপ সৌন্দর্য বিধান করেছেন, যে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলছেন, ‘আর অবশ্য অবশ্যই আমি এগুলােকে সুন্দর করেছি দর্শকদের জন্যে।’ সৃষ্টির অনুপম সৌন্দর্যের বর্ণনায় এ হচ্ছে একটি চমৎকার ঝলক, বিশেষ করে এর দ্বারা অতি উজ্জ্বল ও চরম সুন্দর উর্ধাকাশের দিকে ইংগিত করা হয়েছে। এই বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি লগ্ন থেকেই তাঁর এই প্রিয়তম সৃষ্টিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে চেয়েছেন এবং সবকিছুকে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের রশিতে আবদ্ধ করেছেন। এসব কিছুর বর্ণনায় দেখা যায় মানুষের দৃষ্টি ও মনমগযে গােটা সৃষ্টি সম্পর্কে বিরাজমান নিয়ম শৃংখলা, এর বিশালত্ব, ব্যাপকত্ব ও সূক্ষতার ধারণা দেয়ার মাধ্যমে তাদের কাছে এর রূপ মাধুৰ্য্য ও সৌন্দর্যের দৃশ্যাবলীই তুলে ধরা হয়েছে। আহ্, বিদগ্ধ চিত্তে এই মহা সৃষ্টির রাশি-রাশি সৌন্দর্য যখন দোলা দিতে থাকে তখন খুশীতে সে আত্মহারা হয়ে যায় এবং উদাত্ত কষ্ঠে সে গেয়ে ওঠে পরম করুণাময় আল্লাহর জয়গান। তাই তাে দেখা যায় অন্ধকার রাত্রির পর্দাকে ছিন্ন করে আল্লাহ প্রেমিক যখন আরামের বিছানা পরিত্যাগ করে পরম প্রেমময়ের দরবারে হাযির হয়, যখন তার নযর নিবদ্ধ হয় ঘনান্ধকারে ছাওয়া বিশ্ব প্রকৃতির মধ্যে কোটি কোটি প্রদীপ-সাজানাে উর্ধাকাশের দিকে, তখন রাশি রাশি ফুল সম ওই গ্রহ-নক্ষত্র তারকারাজি যেন হাতছানি দিয়ে তাকে কাছে থেকে আরাে কাছে টেনে নিতে চায় । তখন এসব কিছুর মধ্যে আল্লাহর নূরের জ্যোতি তাকে মনমুগ্ধ করে ফেলে, আর তখন তার অন্তরাত্মা তার পরম প্রেমময় প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করার জন্যে পাগলপারা হয়ে ওঠে এবং তখন সে যেন আল্লাহর মহব্বত ভরা আহ্বান তার হৃদয়ের গভীরে অনুভব করে। আবার, চাঁদনী রাতের রূপালী-রূপ এমনইভাবে তার হৃদয়কে উদ্বেলিত করে, বিশেষ করে পূর্ণিমা রাতের স্বর্ণালী সন্ধ্যার আগমনে তার হৃদয় যেন ময়ুরের মতাে নেচে ওঠে, তারপর রাত যত গভীর হয়, ধীরে ধীরে জাগ্রত ধরা ঢলে পড়ে নিদ্রার প্রশান্ত কোলের মাঝে তখন আল্লাহপ্রেমিক ব্যক্তিরা যেন পদার্পন করে এক স্বর্নালী রাজ্যে আর তখনই তারা এক অনির্বচনীয় সুখ স্বপ্নে মেতে ওঠে। এমনই এক মােহময় মুহূর্তে আল্লাহ প্রেমিক হৃদয় গভীরভাবে অনুভব করে মহিমাময় মালিকের প্রাণস্পর্শী ও মধুময় বাণীর তাৎপর্য, আর অবশ্যই আমি বড় সুন্দর করে সাজিয়েছি…
*আল কোরআনে প্রাকৃতিক ও প্রাণী জগতের সৃষ্টিতত্ত্ব : ‘যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিলো, তারপর আমি উভয়কে পৃথক করেছিলাম'(আয়াত ৩০-৩৩) এ হচ্ছে দৃশ্যমান প্রাকৃতিক জগতে পরিভ্রমণ । অনেকের মন প্রকৃতির বড়াে বড়ো নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন। অথচ মুক্ত মন, বুদ্ধি বিবেক ও সচেতন অনুভূতি নিয়ে চিন্তা গবেষণা করলে প্রকৃতিতে মানুষের হৃদয়কে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেয়ার মতাে বহু জিনিস রয়েছে। আকাশ ও পৃথিবীর প্রথমে যুক্ত থাকা এবং পরে উভয়কে পৃথক করে দেয়ার বিষয়টা গভীর চিন্তা গবেষণার দাবী রাখে। প্রাকৃতিক উপাদানসমূহের ব্যাখ্যার চেষ্টায় মহাশূন্য সংক্রান্ত মতবাদগুলাে ক্রমবিকাশের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমানে কোরআন বর্ণিত এই তত্ত্বের চারপাশেই ঘুরপাক খাচ্ছে। অধুনা যে মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটা হলাে, নক্ষত্র মন্ডল- বিশেষত সূর্য ও সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণরত গ্রহ উপগ্রহসমূহ যথা পৃথিবী ও চাঁদ ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত সৌরমন্ডল আগে ছিলাে অস্পষ্ট মেঘমালার মতাে। পরে পৃথক পৃথকভাবে গােলাকার পিন্ডের আকৃতি ধারণ করে। আর পৃথিবী ছিলাে সূর্যের অংগীভূত। পরে তা থেকে বিচ্ছিন্ন ও ঠান্ডা হয়ে ক্রমান্বয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করে। কিন্তু এটা মহাশূন্য সংক্রান্ত নিছক একটা মতবাদ ছাড়া আর কিছু নয় । আজ এ মতবাদ প্রচলিত হয়েছে কিন্তু আগামীকাল এটা বাতিল বলে গণ্য হতে পারে এবং এর স্থলে অন্য একটা মতবাদও চালু হয়ে যেতে পারে, যা হয়তাে ভিন্ন কোনাে অনুমানের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক জিনিসগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার যােগ্যতা লাভ করবে, আর সেই অনুমান একটা মতবাদে পরিণত হতে পারে। আমরা যারা ইসলামী আকীদায় বিশ্বাসী, কোরআনের সুনিশ্চিত বক্তব্যকে কোনাে অনিশ্চিত ও সন্দেহপূর্ণ মতবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করতে পারি না, যা আজ স্বীকৃত ও সমাদৃত হলেও কাল প্রত্যাখ্যাত হয়ে যেতে পারে। এ জন্যে আমি আমার এ তাফসীর গ্রন্থে বৈজ্ঞানিক মতবাদ ও কোরআনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করি না। কেননা বৈজ্ঞানিক মতবাদ এক জিনিস, আর বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা আর এক জিনিস। বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত ও পরীক্ষিত, যেমন উত্তাপ দ্বারা ধাতব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়া ও পানির বাষ্পে পরিণত হওয়া এবং ঠান্ডায় পানি বরফ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এগুলাে বৈজ্ঞানিক মতবাদ থেকে ভিন্ন, একথাগুলােই আমি যিলালীল কোরআনে ইতিপূর্বে বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছি। কোরআন বৈজ্ঞানিক মতবাদের গ্রন্থ নয়। এটা কোনাে অভিজ্ঞতার ভান্ডার হয়েও আসেনি। কোরআন হলাে সমগ্র জীবনের বিধান। এটা হচ্ছে মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে বিশুদ্ধি করণের পদ্ধতি, যাতে বিবেক নিজ সীমানার ভেতরে থেকে সঠিকভাবে নিজ ভূমিকা পালন করতে পারে। কোরআন গোটা সমাজের বিশুদ্ধি করণেরও পদ্ধতি, যাতে সমাজ বিবেককে কাজ করার সুযােগ ও স্বাধীনতা দেয় এবং নিছক তাত্ত্বিক খুঁটিনাটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে। কেননা বিবেককে বিশুদ্ধ ও স্বাধীন করে দেয়ার পর এ কাজটা বিবেকের ওপরই ন্যস্ত হবে। কখনাে কখনাে কোরআন কিছু কিছু প্রাকৃতিক তথ্য উপস্থাপন করে থাকে, যেমন এখানে করেছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী পরম্পর যুক্ত ছিলাে, পরে আমি উভয়কে পৃথক করেছি।’ এ তথ্যটা কেবলমাত্র কোরআনে উপস্থাপিত হওয়ার কারণেই আমরা বিশ্বাস করি। যদিও এ দ্বারা আমরা এটা জানতে পারছিলাম না যে, কিভাবে আকাশ ও পৃথিবীকে আলাদা করা হয়েছিলাে। কোরআনের বিঘােষিত এই সামগ্রিক তথ্যের বিরােধিতা করেনা- এমন সকল বৈজ্ঞানিক মতবাদকেও আমরা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু আমরা কোরআনকে নিয়ে যে কোনাে মহাশূন্য তত্ত্বের পেছনে ছুটতে পারি না এবং মানবীয় মতবাদসমূহের মধ্যে কোরআনের সমর্থন খুঁজে বেড়াতে পারি না। কেননা কোরআন হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত সত্য। বড়াে জোর যে কথাটা বলতে পারি তা হলাে, আজকের প্রচলিত মহাশূন্য তত্ত্ব কোরআনের এই আয়াতের সার্বিক মর্মের বিরােধী নয়। অথচ কোরআনের এই বক্তব্য এসেছে বহু প্রজন্ম আগে। *পানি থেকে প্রত্যেক বস্তুর জীবন দান করা : আয়াতের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, ‘আর আমি পানি থেকে প্রত্যেক জীবন্ত বস্তুকে তৈরী করেছি।’ এ থেকেও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। বিজ্ঞানীরা এ তথ্যটার প্রকাশকেও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অভিহিত করেছেন। এ তথ্যটার সন্ধান লাভের জন্যে তারা ডারউইনকে অভিনন্দিত করেন। কেননা ডারউইন ঘােষণা করেছেন যে, জীবনের প্রথম উৎস হলাে পানি। এটা যথার্থই একটা সাড়া জাগানাে তথ্য, যদিও কোরআনে এটার উল্লেখ থাকায় আমরা তেমন বিস্মিত হই না এবং কোরআনের সত্যতা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এর ওপর নির্ভর করে না। বস্তুত এ তথ্য যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এই বিশ্বাসই এর সত্যতা সম্পর্কে আমাদের মনে অটুট প্রত্যয় সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট- বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উদ্ভাবন ও মতবাদের সাথে কোরআনের বক্তব্যের মিল খাওয়ার ওপর তা নির্ভরশীল নয়। এ ক্ষেত্রে বড়াে জোর এতােটুকু বলা যায় যে, এই বিশেষ কথাটার ব্যাপারে বিবর্তনবাদ ও ক্রমবিকাশবাদ কোরআনের বক্তব্যের পরিপন্থী নয়। {মহাশূন্য বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত অতি সাম্প্রতিক তথ্যে এটা জানা গেছে যে, মংগলগ্রহ সহ আরাে দু’ একটি গ্রহে পানির কিছু উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার ওপর ভিত্তি করে এখন অনেকেই বলছেন, যেহেতু মংগল গ্রহে পানির একটা দূরতম সন্ধান পাওয়া গেছে তাই আধুনিক বিজ্ঞানের স্বাভাবিক দাবী অনুযায়ীই এটা বলা চলে যে, কোনাে না কোনাে দূর অতীতে এখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিলাে। বিজ্ঞানীরা বলছেন আজ থেকে প্রায় দশ বিলিয়ন বছর আগে এসব জায়গায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিলাে। জানা কথাই যে সূত্র ধরে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা হচ্ছে এই যে, ‘যেখানেই পানি থাকবে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে।’ কোরআনে বর্ণিত এই সুত্র ধরে ভবিষ্যতে আমরা আরাে অনেক কিছুই হয়তাে জানতে পারবাে। উৎসাহী পাঠকদের এ ব্যাপারে আরাে পড়া শােনা করার অনুরােধ করছি -সম্পাদক} তেরাে শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে কোরআন কাফেরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে বিশ্ব প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টির প্রতি এবং এতাে প্রকাশ্যভাবে ও স্বচ্ছভাবে দৃশ্যমান নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস স্থাপন না করায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে। কোরআন বলেছে, ‘তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?’ অর্থাৎ তাদের চারপাশের প্রকৃতিতে বিদ্যমান প্রতিটি জিনিস মহাবিজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী স্রষ্টার প্রতি ঈমান আনতে উদ্বুদ্ধ করা সত্তেও তারা ঈমান আনবে না? এরপর প্রকৃতির অন্যান্য বৃহৎ দৃশ্যাবলী উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, ‘আর পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি, যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুকে না পড়ে…’ এখানে বলা হচ্ছে যে, বড়ো বড়াে পাহাড় পর্বত পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করছে বলে পৃথিবী একদিকে ঝুঁকে পড়ছে না এবং নড়বড় করছে না। ভারসাম্য নানাভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। পৃথিবীর ওপর বহিরাগত চাপ ও আভ্যন্তরীণ চাপের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা, যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিভিন্ন রকমের হতে পারে অথবা, পৃথিবীর একস্থানে পর্বত সৃষ্টি দ্বারা অন্য জায়গায় ভূমির নিম্নতার সমতা বিধান করা। যেভাবেই হােক, আয়াতের এ অংশ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর স্থীতিশীলতা ও ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়-পর্বতের ভূমিকা রয়েছে। এখন কোন পন্থায় এই ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে, সেটা উদ্ঘাটন করার কাজটা আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর ন্যস্ত করতে পারি। কেননা ওটাই তার আসল কর্মক্ষেত্র। কোরআনের কাছ থেকে আমরা শুধু এতােটুকু জানাই যথেষ্ট মনে করতে পারি যে, এই মহাবিশ্বের ওপর তার মহাশক্তিশালী হাত নিরন্তর সক্রিয় অবদান রেখে চলেছে, ‘আর এখানে আমি প্রশস্ত রাস্তাসমূহ তৈরী করেছি, যাতে তারা গন্তব্যের সন্ধান পায়।’ পাহাড় পর্বতে প্রশস্ত রাস্তার উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলাে হচ্ছে পর্বতের উচ্চন্তরগুলাতে বিদ্যমান ফাকা জায়গা, যাকে রাস্তা বা গিরিপথে পরিণত করা হয়। এই প্রশস্ত রাস্তাগুলাে উল্লেখের পাশাপাশি গন্তব্যের সন্ধান লাভের কথা বলে প্রথমত বাস্তব সত্যকে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। অতপর সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে আকীদা ও বিশ্বাসের জগতে একটা তাৎপর্যময় ইংগিত করা হয়েছে যে, গিরিপথে যেমন তারা গন্তব্যের সন্ধান পায়, তেমনি আশা করা যায় যে তারা ঈমানের পথেরও সন্ধান পাবে। ‘আর আমি আকাশকে বানিয়েছি সুরক্ষিত ছাদ।’ আরবী ‘সামা’ শব্দটার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে যে কোনাে উর্ধের বস্তু। আমাদের মাথার ওপর আমরা ছাদ সদৃশ একটা জিনিস দেখতে পাই। কোরআন জানাচ্ছে যে, আকাশ একটা সুরক্ষিত ছাদ। অর্থাৎ প্রাকৃতিক জগতের যে কোনাে বিকৃতি ও বৈকল্য থেকে সুরক্ষিত অথবা আল্লাহর ওহী নাযিলের উৎসস্থলের প্রতীক হিসেবে আকাশ সব রকমের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত ও সুরক্ষিত। আয়াতের শেষাংশে এ দিকেই ইংগিত করে বলা হয়েছে, ‘তারা আমার নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।’ ‘তিনি সেই সত্ত্বা, যিনি রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন। সবাই এক আকাশে সাঁতার কেটে চলেছে।’ রাত ও দিন দুটো প্রাকৃতিক উপাদান। সূর্য ও চন্দ্র দুটো বিশাল বিশাল পিন্ড, যার মানুষের পার্থিব জীবনের সাথে এবং সমগ্র জীবনের সাথে গভীর ও অটুট সম্পর্ক রয়েছে। রাত ও দিনের এই অবিরত আবর্তন, যা এক মুহূর্তের জন্যে বিশংখলার শিকার হয় না এবং সূর্য ও চন্দ্রের এই বিরামহীন ও ত্রুটিহীন আনাগােনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে মহা শক্তিশালী ও প্রাজ্ঞ স্রষ্টার একত্ব, তার ইচ্ছার একত্ব ও প্রাকৃতিক নিয়মের একত্ব বিশ্বাস গড়ে ওঠার আশা করা যায় ।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩০-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার অসীম ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করে, একমাত্র তাঁর ইবাদত করতে লজ্জাবোধ করে তাদেরকে লক্ষ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা এ কথা চিন্তা-ভাবনা করে না যে, আকাশ ও জমিন প্রথমে মিলিত অবস্থায় ছিল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে পৃথক পৃথক করে দিয়েছেন। رتق অর্থ বন্ধ, মিলিত। আর فتق অর্থ খুলে দেয়া, আলাদা করা। অর্থাৎ আকাশ-জমিন প্রথমে মিলিত ছিল, অতঃপর উভয়কে পৃথক করে দেয়া হয়েছে। এ আয়াত থেকে মহাবিশ্বের মহাবিস্ফোরণ তথা বিগ ব্যাঙ (ইরম নধহম) এর তথ্য পাওয়া যায়। কিয়ামতের পূর্বে আকাশকে আবার গুটিয়ে নেয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ نَطْوِي السَّمَا۬ءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ ط كَمَا بَدَأْنَآ أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُه۫ ط وَعْدًا عَلَيْنَا ط إِنَّا كُنَّا فٰعِلِيْنَ)
“সোদিন আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে ফেলবো যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর; যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; এ আমার কৃত ওয়াদা, আমি এটা পালন করবই।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৪)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনি সমস্ত জীব পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা তরুলতা সৃষ্টি হয় বৃষ্টির পানি বা ঝরণার পানি দ্বারা, আর মানুষসহ সকল জীব স্থলচর হোক আর জলচর হোক তাও পানি দ্বারা সৃষ্টি। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, পিতার পৃষ্ঠদেশ থেকে নির্গত শুক্রকীট আর মায়ের বক্ষদেশ থেকে নির্গত ডিম্বানু যা এক প্রকার তরল পানি। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَاللّٰهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّا۬ءٍ)
“আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে।” (সূরা নূর ২৪:৪৫)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ভূ-ত্বক বিজ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৩৭৫০ মাইল এবং ভূ-পৃষ্ঠের শক্ত যে উপরিভাগে আমরা বাস করি তা অত্যন্ত পাতলা- এর বিস্তার ১ মাইল থেকে ৩০ মাইল পর্যন্ত। যেহেতু ভূ-পৃষ্ঠের শক্ত আবরণটি পাতলা সেহেতু এর আন্দোলিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পাহাড়গুলো খুঁটি কিংবা তাঁবুর পেরেকের মত ভূ-পৃষ্ঠকে ধারণ করে এবং একে স্থিতি দান করে। পৃথিবী নড়াচড়া করলে পৃথিবীর বুকে বসবাস করা অসম্ভব। তাই আল্লাহ তা‘আলা পাহাড়গুলোকে পেরেকস্বরূপ দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالْـجِبَالَ أَرْسٰهَا)
“আর পাহাড়সমূহকে তিনি দৃঢ়ভাবে গেড়ে দিয়েছেন” (সূরা নাযিআত ৭৯:৩২) এ সম্পর্কে সূরা নাহলের ১৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
سقف অর্থ ছাদ, আর محفوظ অর্থ সুরক্ষিত। অর্থাৎ পৃথিবীর জন্য সুরক্ষিত ছাদ যেমন তাঁবু বা গম্বুজের ছাদ হয়। অথবা এ অর্থে সুরক্ষিত যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে পৃথিবীর ওপর পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। নচেৎ আকাশ যদি পৃথিবীর ওপর ভেঙ্গে পড়ে তাহলে পৃথিবীর সমস্ত শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে পড়বে। অথবা তা শয়তানসমূহ হতে সুরক্ষিত, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَحَفِظْنٰهَا مِنْ كُلِّ شَيْطٰنٍ رَّجِيْمٍ)
“এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমি তা রক্ষা করে থাকি” (সূরা হিজর ১৫:১৭) কিন্তু কাফিররা চন্দ্র, সূর্য, তারকা ইত্যাদি নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা করা থেকে গাফেল। যদি তারা এসব নিয়ে চিন্তা করত তাহলে আল্লাহ তা‘আলাকে চিনতে পারত।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরো ক্ষমতার কথা বর্ণনা করছেন যে, তিনি দিবস ও রাত্রিকে সৃষ্টি করেছেন। একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন আরামের জন্য এবং একটি অলোকিত করেছেন কর্মের জন্য, আর তিনি চন্দ্র ও সূর্যকেও সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানুষ মাস ও বছর তথা দিন-তারিখ গণনা করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَالِقُ الْإِصْبَاحِ ج وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ط ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ)
“তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাতকে সৃষ্টি করেছেন এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ।” (সূরা আন‘আম ৬:৯৬)
سبح অর্থ সাঁতার কাটা, অর্থাৎ একজন সাঁতারু যেমন পানিতে সাঁতার কাটে তেমনি চন্দ্র, সূর্য প্রত্যেকটিই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে। কেউ কারো কক্ষপথ অতিক্রম করে যায় না। সুতরাং এসব সৃষ্টির মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষা। যারা আল্লাহ তা‘আলার এসব সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করবে তারা আল্লাহ তা‘আলাকে সহজেই চিনতে পারবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আকাশ-জমিন প্রথমে একত্রিত ছিল, পরে আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে পৃথক করে দিয়েছেন।
২. আল্লাহ তা‘আলা সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে।
৩. পর্বত সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পৃথিবী নড়াচড়া না করে।
৪. আকাশকে জমিনের ওপর ছাদ করা হয়েছে।
৫. উপাস্য ও মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৬. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তা করলে আল্লাহ তা‘আলাকে চেনা যায়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩০-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, তার শক্তি অসীম এবং প্রভূত্ব ও ক্ষমতা অপরিসীম। তিনি বলেনঃ যে সব কাফির আল্লাহ ছাড়া অন্যদের পা করছে তাদের কি এটুকুও জ্ঞান নেই যে, সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা হলেন একমাত্র আল্লাহ? আর সব জিনিসের রক্ষক তিনিই? সুতরাং হে কাফিরদের দল! তোমরা তার সাথে অন্যদের ইবাদত করছো কেন? প্রথমে আসমান ও যমীন পরস্পর মিলিতভাবে ছিল। একটি অপরটি হতে পৃথক ছিল না। অল্লিাহ তাআলা পরে ওগুলিকে পৃথক পৃথক করে দিয়েছেন। যমীনকে নীচে ও অসিমানকে উপরে রেখে উভয়ের মধ্যে বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি করতঃ অত্যন্ত কৌশলের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সাতটি যমীন ও সাতটি আসমান বানিয়েছেন। যমীন ও প্রথম আসমানের মধ্যবর্তী স্থান ফাকা রেখেছেন। আকাশ হতে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং যমীন হতে ফসল উৎপন্ন করেন। প্রত্যেক জীবন্ত জিনিস তিনি পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। এই সমুদয় জিনিস, যে গুলির প্রত্যেকটি, কারিগরের একচেটিয়া ক্ষমতা ও একত্ব প্রমাণ করে না কি? এ লোকগুলি নিজেদের সামনে এসব কিছু বিদ্যমান পাওয়া সত্ত্বেও এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকারোক্তি করেই শিক পরিত্যাগ করছে না।
(আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক জিনিসের মধ্যেই তাঁর (আল্লাহর) অস্তিত্বের নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে যা প্রমাণ করছে যে, তিনি এক।”
হযরত ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আব্বাসকে (রঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “পূর্বে রাত ছিল, না দিন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ (আরবী) “প্রথমে যমীন ও আসমান মিলিত ও সংযুক্ত ছিল। তা হলে এটাতো প্রকাশমান যে, তাতে অন্ধকার ছিল। আর অন্ধকারের নামইতো রাত। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পূর্বে রাতই ছিল।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাকের এই উক্তি সম্পর্কে একটি লোক হযরত ইবনু উমারকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বলেনঃ “এ সম্পর্কে তুমি হযরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস কর। তিনি উত্তরে যা বলবেন তা আমাকে জানাবে।” তখন লোকটি হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে। তিনি জবাবে বলেনঃ “যমীন ও আসমান সব এক সাথেই ছিল। না বৃষ্টি বর্ষিত হতো, না ফসল উৎপন্ন হতো। যখন আল্লাহ তাআলা আত্মা বিশিষ্ট মাখলুক সৃষ্টি করলেন তখন তিনি আকাশকে ফেড়ে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন এবং যমীনকে ফেড়ে তা হতে ফসল উৎপন্ন করলেন। প্রশ্নকারী লোকটি এটা হযরত ইবনু উমারের (রাঃ) সামনে বর্ণনা করলে তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং বলে ওঠেনঃ “আজকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কুরআনের জ্ঞান সবারই উর্ধ্বে। মাঝে মাঝে আমার ধারণা হতো যে, হয়তো বা হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) এ ব্যাপারে সাহসিক উদ্যম বেড়ে গেছে। কিন্তু আজ ঐ কুধারণা আমার মন থেকে দূর হয়ে গেল।” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা আসমান ফেড়ে সাতটি আসমান বানিয়ে দেন এবং যমীনকে ফেড়ে সাতটি যমীন বানিয়ে দেন। হযরত মুজাহিদের (রাঃ) তাফসীরে এও রয়েছে যে, এগুলি মিলিত ভাবে ছিল। অর্থাৎ পূর্বে সাত আসমান এক সাথেই ছিল এবং অনুরূপভাবে সাত যমীনও একটাই ছিল। তারপর পৃথক পৃথক করে দেয়া হয়। হযরত সাঈদের (রঃ) তাফসীরে আছে যে, এ দুটো পূর্বে একটাই ছিল, পরে পৃথক পৃথক করে দেয়া হয়েছে। যমীন ও আসমানের মধ্যবর্তী স্থান ফঁকা রাখা হয়েছে। পানিকে সমস্ত প্রাণীর আসল বা মূল করে দেয়া হয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর নবী (সঃ)! যখন আমি আপনাকে দেখি তখন আমার মন খুব খুশী হয় এবং আমার চক্ষু ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আপনি আমাদেরকে সমস্ত জিনিসের মূল সম্পর্কে অবহিত করুন! তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “হে আবু হুরাইরা (রাঃ)! জেনে রেখো যে, সমস্ত জিনিস পানি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যখন আমি অপনাকে দেখি তখন আমার প্রাণ খুশী হয় ও চক্ষু ঠাণ্ডা হয়। আপনি আমাদেরকে প্রত্যেক জিনিস (এর মূল) সম্পর্কে খবর দিন।’ তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক জিনিস পানি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে।” আমি পুনরায় বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যে, যখন আমি তা করবো তখন আমি বেহেশতে প্রবেশ করবো। তিনি বলেনঃ “লোকদেরকে সালাম দিতে থাকো, (দরিদ্রদেরকে) খাদ্য খেতে দাও এবং রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড় যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণনা করা হয়েছে)
যমীনকে আল্লাহ তাআলা পর্বতরূপ পেরেক দ্বারা দৃঢ় করে দিয়েছেন যাতে তা হেলে দুলে মানুষকে পেরেশান করে না তুলে এবং তাদেরকে প্রকম্পিত না করে। যমীনের তিন ভাগ পানিতে ভোলা আছে, যাতে মানুষে আকাশ ও ওর বিস্ময়কর বস্তুরাজি চক্ষু দ্বারা অবলোকন করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমতের গুণে যমীনে রাস্তাপথ বানিয়ে দিয়েছেন। যাতে মানুষ সহজে তাদের সফরের কাজ চালিয়ে যেতে পারে এবং দূর দূরান্তে পৌঁছতে পারে। আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, এক শহর হতে অন্য শহরের মাঝে পর্বত রাজি প্রতিবন্ধক রূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং এর ফলে চলাফেরা বাহ্যতঃ কষ্টকর মনে হচ্ছে। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ স্বীয় ক্ষমতা বলে ঐ পর্বত রাজির মধ্যেও পথ বানিয়ে দিয়েছেন, যাতে এখানকার লোক সেখানে এবং সেখানকার লোক এখানে পৌঁছতে পারে এবং নিজেদের কাজ কারবার চালিয়ে যেতে পারে। তিনি আসমানকে যমীনের উপর ছাদরূপে বানিয়ে রেখেছেন। যেমন- (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি এবং আমি প্রশস্ত জ্ঞান ও শক্তির অধিকারী।” (৫১:৪৭) আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শপথ আকাশের এবং যিনি ওটা নির্মাণ করেছেন তার।” (৯১:৫) আরো বলেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ “তারা কি তাদের উধ্বস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমি কিভাবে ওটা নির্মাণ করেছি ও ওকে সুশোভিত করেছি এবং ওতে কোন ফাটলও নেই?” (৫০:৬)
(আরবী) বলা হয় ছাদ ও তাবু খাড়া করাকে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইসলামের ‘বেনা বা ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর রাখা হয়েছে।” যেমন পাঁচটি স্তম্ভের উপর কোন ছাদ বা তাঁবু দাড়িয়ে থাকে। অতঃপর এই যে আকাশ, যা ছাদের মত, তা আবার সুরক্ষিত ও প্রহরীযুক্ত, যাতে ওর কোন জায়গায় কোন ক্ষতি না হয়। ওটা সুউচ্চ ও নির্মল।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক জিজ্ঞেস করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই আকাশ কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “এটা হচ্ছে তরঙ্গ, যা তোমাদের হতে বন্ধ রাখা হয়েছে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। এর ইসনাদ গারীব)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আসমান ও যমীনে এমন বহু নিদর্শন রয়েছে যে গুলি মানুষের চোখের সামনে বিদ্যমান, অথচ তারা সেগুলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” অর্থাৎ তারা মোটেই চিন্তা গবেষণা করে না যে, কত প্রশস্ত, সুউচ্চ ও বিরাট এই আকাশ তাদের মাথার উপর বিনা স্তম্ভে আল্লাহ তাআলা প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। অতঃপর ওকে সুন্দর সুন্দর তারকারাজি দ্বারা সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছেন। ওগুলির কিছু কিছু স্থির আছে এবং কিছু কিছু চলমান। রয়েছে। সূর্যের কক্ষপথ নির্দিষ্ট আছে। যখন ওটা বিদ্যমান থাকে তখন দিন হয় এবং যখন ওটা দৃষ্টির অন্তরালে চলে যায় তখন রাত্রি হয়। এই সূর্য শুধু মাত্র একদিন ও রাতে সারা আকাশকে প্রদক্ষিণ করে। ওর চলন ও তীব্রতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। শুধু অনুমানের উপর বলা হয়ে থাকে সেটা অন্যকথা।
বর্ণিত আছে যে, বানী ইসরাঈলের আবেদদের মধ্যে কোন একজন আবেদ তার ত্রিশ বছরের ইবাদতের সময় পূর্ণ করেছিলেন। কিন্তু অন্যান্য আবেদদের উপর যেমন ত্রিশ বছরের ইবাদতের পর মেঘের দ্বারা ছায়া করা হতো, তাঁর উপর তা হলো না। তখন তিনি তাঁর ঐ অবস্থার কথা তাঁর মায়ের নিকট বর্ণনা করেন। তখন তাঁর মা বলেন “হে আমার প্রিয় বৎস! হয় তো তুমি তোমার এই ইবাদতের যুগে কোন পাপকার্য করে থাকবে। তিনি বললেনঃ “আম্মা! আমি তো এরূপ কোন কার্য করি নাই।” মা বললেনঃ “তা হলে তুমি অবশ্যই কোন পাপ কার্যের পূর্ণ সংকল্প গ্রহণ করে থাকবে।” তিনি বললেনঃ খুব স তুমি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেছে, কিন্তু কোন চিন্তা গবেষণা না করেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে। আবেদ তখন বললেনঃ “এরূপতো বরাবরই হতে আছে।” মা বললেনঃ “তা হলে কারণ এটাই।”
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর ব্যাপক ক্ষমতার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করছেনঃ তোমরা রাত্রি ও অন্ধকারের প্রতি লক্ষ্য কর এবং দিন ও ওর আলোর প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তারপর এ দুটোর পুরস্পর ক্রমাগত সুশৃংখলভাবে গমনাগমনের প্রতি লক্ষ্য কর এবং একটি কমে যাওয়া ও অপরটি বেড়ে যাওয়া। দেখো। আরো দেখো সূর্য ও চন্দ্রের দিকে। সূর্যের আলো এক বিশেষ আলো এবং ওর আকাশ, ওর যামানা, ওর নড়াচড়া এবং ওর চলনগতি পৃথক। চন্দ্রের আলো পৃথক ওর কক্ষপথ পৃথক এবং চলনগতি পৃথক। প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিমগ্ন রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তিনিই সকালকে উজ্জ্বলকারী, তিনিই রাত্রিকে শান্তিময় করেন, তিনিই সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।”
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#925)
[ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ
Each in an orbit floating.]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 30-33
www.motaher21.net
21:30
اَوَ لَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰہُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳۰﴾
Have those who disbelieved not considered that the heavens and the earth were a joined entity, and We separated them and made from water every living thing? Then will they not believe?
The Signs of Allah in the Heavens and the Earth and in the Night and the Day
Here Allah tells of His perfect might and power in His creation and subjugation of all things.
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا
Have not those who disbelieve known,
means, those who deny His Divine nature and worship others instead of Him, do they not realize that Allah is the One Who is Independent in His powers of creation and is running the affairs of all things with absolute power. So how can it be appropriate to worship anything else beside Him or to associate others in worship with Him!
أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا
known that the heavens and the earth were joined together as one united piece, then We parted them!
Do they not see that the heavens and the earth were joined together, i.e. in the beginning they were all one piece, attached to one another and piled up on top of one another, then He separated them from one another, and made the heavens seven and the earth seven, placing the air between the earth and the lowest heaven. Then He caused rain to fall from the sky and vegetation to grow from the earth.
He says:
وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَ يُوْمِنُونَ
And We have made from water every living thing. Will they not then believe!
meaning, they see with their own eyes how creation develops step by step. All of that is proof of the existence of the Creator Who is in control of all things and is able to do whatever He wills.
In everything there is a Sign of Him, showing that He is One
Sufyan Ath-Thawri narrated from his father from Ikrimah that Ibn Abbas was asked;
“Did the night come first or the day?”
He said,
“Do you think that when the heavens and the earth were joined together, there was anything between them except darkness! Thus you may know that the night came before the day.
Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Umar said that;
a man came to him and questioned him about when the heavens and earth were joined together then they were parted.
He said, “Go to that old man (Sheikh) and ask him, then come and tell me what he says to you.”
So he went to Ibn Abbas and asked him. Ibn Abbas said:
“Yes, the heavens were joined together and it did not rain, and the earth was joined together and nothing grew. When living beings were created to populate the earth, rain came forth from the heavens and vegetation came forth from the earth.”
The man went back to Ibn Umar and told him what had been said.
Ibn Umar said, “Now I know that Ibn Abbas has been given knowledge of the Qur’an. He has spoken the truth, and this is how it was.”
Ibn Umar said:”I did not like the daring attitude of Ibn Abbas in his Tafsir of the Qur’an, but now I know that he has been given knowledge of the Qur’an.”
Sa`id bin Jubayr said:
“The heavens and the earth were attached to one another, then when the heavens were raised up, the earth became separate from them, and this is their parting which was mentioned by Allah in His Book.”
Al-Hasan and Qatadah said,
“They were joined together, then they were separated by this air.”
وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ
..
And We have made from water every living thing.
meaning, the origin of every living thing is in water.
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said,
“I said:O Messenger of Allah, when I see you I feel happy and content, tell me about everything.”
He said,
كُلُّ شَيْءٍ خُلِقَ مِنْ مَاء
“Everything was created from water.”
I said, tell me about something which, if I do it, I will enter Paradise.”
He said:
أَفْشِ السَّلَمَ
وَأَطْعِمِ الطَّعَامَ
وَصِلِ الاَْرْحَامَ
وَقُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ
ثُمَّ ادْخُلِ الْجَنَّةَ بِسَلَم
Spread (the greeting of) Salam,
feed others,
uphold the ties of kinship, and
stand in prayer at night when people are sleeping.
Then you will enter Paradise in peace.
This chain of narration fulfills the conditions of the Two Sahihs, apart from Abu Maymunah, who is one of the men of the Sunans, his first name was Salim; and At-Tirmidhi classed him as Sahih.
21:31
وَ جَعَلۡنَا فِی الۡاَرۡضِ رَوَاسِیَ اَنۡ تَمِیۡدَ بِہِمۡ ۪ وَ جَعَلۡنَا فِیۡہَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّہُمۡ یَہۡتَدُوۡنَ ﴿۳۱﴾
And We placed within the earth firmly set mountains, lest it should shift with them, and We made therein [mountain] passes [as] roads that they might be guided.
وَجَعَلْنَا فِي الاَْرْضِ رَوَاسِيَ
And We have placed on the earth firm mountains,
means, mountains which stabilize the earth and keep it steady and lend it weight, lest it should shake with the people, i.e., move and tremble so that they would not be able to stand firm on it — because it is covered with water, apart from one-quarter of its surface. So the land is exposed to the air and sun, so that its people may see the sky with its dazzling signs and evidence.
So Allah says,
أَن تَمِيدَ بِهِمْ
lest it should shake with them,
meaning, so that it will not shake with them.
وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلً
and We placed therein broad highways for them to pass through,
means, mountain passes through which they may travel from region to region, country to country. As we can see, the mountains form barriers between one land and another, so Allah created gaps — passes — in the mountains so that people may travel from here to there.
So He says:
لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
that they may be guided
21:32
وَ جَعَلۡنَا السَّمَآءَ سَقۡفًا مَّحۡفُوۡظًا ۚۖ وَّ ہُمۡ عَنۡ اٰیٰتِہَا مُعۡرِضُوۡنَ ﴿۳۲﴾
And We made the sky a protected ceiling, but they, from its signs, are turning away.
وَجَعَلْنَا السَّمَاء سَقْفًا مَّحْفُوظًا
And We have made the heaven a roof, safe and well-guarded.
means, covering the earth like a dome above it.
This is like the Ayah,
وَالسَّمَأءَ بَنَيْنَـهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
With Hands We constructed the heaven. Verily, We are able to extend the vastness of space thereof. (51:47)
وَالسَّمَأءِ وَمَا بَنَـهَا
By the heaven and Him Who built it. (91:5)
أَفَلَمْ يَنظُرُواْ إِلَى السَّمَأءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَـهَا وَزَيَّنَّـهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍ
Have they not looked at the heaven above them, how We have made it and adorned it, and there are no rifts in it. (50:6)
The building and making described here refers to the raising of the dome, as when the Messenger of Allah said,
بُنِيَ الاِْسْلَمُ عَلَى خَمْس
Islam is built on five.
i.e., five pillars, which can only refer to a tent as familiar among the Arabs.
مَّحْفُوظًا
safe and well-guarded.
means, high and protected from anything reaching it.
Mujahid said,
“Raised up.”
وَهُمْ عَنْ ايَاتِهَا مُعْرِضُونَ
Yet they turn away from its signs.
This is like the Ayah:
وَكَأَيِّن مِّن ءَايَةٍ فِى السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ
And how many a sign in the heavens and the earth they pass by, while they are averse therefrom. (12:105)
They do not think about how Allah has created it, so vast and high, and adorned it with heavenly bodies both stationary and moving by night and day, such as the sun which completes its circuit in one day and night, until it completes its allotted time, which no one knows except Allah, Who created it and subjugated it and directed its course.
Then Allah says, drawing attention to some of His signs
21:33
وَ ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ وَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ ﴿۳۳﴾
And it is He who created the night and the day and the sun and the moon; all [heavenly bodies] in an orbit are swimming.
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
And He it is Who has created the night and the day,
meaning, the one with its darkness and stillness, and the other with its light and human interaction; sometimes the one is longer while the other is shorter, then they switch.
وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ
and the sun and the moon,
the sun with its own light and its own path and orbit and allotted time, and the moon which shines with a different light and travels on a different path and has its own allotted time.
كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
each in an orbit floating.
means, revolving.
Ibn Abbas said,
“They revolve like a spinning wheel, in a circle.”
This is like the Ayah:
فَالِقُ الاِصْبَاحِ وَجَعَلَ الَّيْلَ سَكَناً وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَاناً ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
(He is the) Cleaver of the daybreak. He has appointed the night for resting, and the sun and the moon for reckoning. Such is the measuring of the All-Mighty, the All-Knowing. (6:96
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran