(বই#৯২৭) [ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْنِ আমাকে তাড়াহুড়া করতে বলো না।] সূরা:- আল্ আম্বিয়া। সুরা:২১ ৩৬-৪৩ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯২৭)
[ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْنِ
আমাকে তাড়াহুড়া করতে বলো না।]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
৩৬-৪৩ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:৩৬
وَ اِذَا رَاٰكَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اِنْ یَّتَّخِذُوْنَكَ اِلَّا هُزُوًا١ؕ اَهٰذَا الَّذِیْ یَذْكُرُ اٰلِهَتَكُمْ١ۚ وَ هُمْ بِذِكْرِ الرَّحْمٰنِ هُمْ كٰفِرُوْنَ

এ সত্য অস্বীকারকারীরা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। বলে, “এ কি সেই ব্যক্তি যে তোমাদের দেব-দেবীদের সমালোচনা করে?” অথচ তাদের নিজেদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা করুণাময়ের যিকরের অস্বীকারকারী।
২১:৩৭
خُلِقَ الْاِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍ١ؕ سَاُورِیْكُمْ اٰیٰتِیْ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْنِ

মানুষ দ্রুততাপ্রবণ সৃষ্টি। এখনই আমি তোমাদের দেখিয়ে দিচ্ছি নিজের নিদর্শনাবলী, আমাকে তাড়াহুড়া করতে বলো না।
২১:৩৮
وَ یَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْوَعْدُ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ

—এরা বলে, “এ হুমকি কবে পূর্ণ হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?”
২১:৩৯
لَوْ یَعْلَمُ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا حِیْنَ لَا یَكُفُّوْنَ عَنْ وُّجُوْهِهِمُ النَّارَ وَ لَا عَنْ ظُهُوْرِهِمْ وَ لَا هُمْ یُنْصَرُوْنَ

হায়! যদি এ কাফেরদের সেই সময়ের কিছু জ্ঞান থাকতো যখন এরা নিজেদের মুখ ও পিঠ আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং এদেরকে কোথাও থেকে সাহায্যও করা হবে না।
২১:৪০
بَلْ تَاْتِیْهِمْ بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا یَسْتَطِیْعُوْنَ رَدَّهَا وَ لَا هُمْ یُنْظَرُوْنَ

সে আপদ তাদের ওপর আকস্মিকভাবে এসে পড়বে এবং তাদেরকে হঠাৎ এমনভাবে চেপে ধরবে যে, তারা তার প্রতিরোধও করতে পারবে না। এবং মুহূর্তকালের অবকাশও লাভ করতে সক্ষম হবে না।
২১:৪১
وَ لَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِیْنَ سَخِرُوْا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ یَسْتَهْزِءُوْنَ۠

তোমার পূর্বের রসূলদেরকেও বিদ্রূপ করা হয়েছে কিন্তু বিদ্রূপকারীরা যা নিয়ে বিদ্রূপ করতো, শেষ পর্যন্ত তারই কবলে তাদেরকে পড়তে হয়েছে।
২১:৪২
قُلْ مَنْ یَّكْلَؤُكُمْ بِالَّیْلِ وَ النَّهَارِ مِنَ الرَّحْمٰنِ١ؕ بَلْ هُمْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِمْ مُّعْرِضُوْنَ

হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, কে তোমাদের রাতে ও দিনে রহমানের হাত থেকে বাঁচাতে পারে? কিন্তু তারা নিজেদের রবের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
২১:৪৩
اَمْ لَهُمْ اٰلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِّنْ دُوْنِنَا١ؕ لَا یَسْتَطِیْعُوْنَ نَصْرَ اَنْفُسِهِمْ وَ لَا هُمْ مِّنَّا یُصْحَبُوْنَ

তাদের কাছে কি এমন কিছু ইলাহ আছে যারা আমার মুকাবিলায় তাদেরকে রক্ষা করবে? তারা না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে, না আমার সমর্থন লাভ করে।

৩৬-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*অবিশ্বাসীদের ঘৃণ্য চরিত্র ও তার পরিণতি : এ অধ্যায়ে প্রাকৃতিক বিধান, মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদান, দাওয়াত ও আন্দোলনের গতি প্রকৃতি, মানুষের শেষ পরিণতি, কাফেরদের ধ্বংসের ইতিবৃত্ত ইত্যাদি সম্বলিত সুদীর্ঘ আলােচনার পর পুনরায় সেই বিষয়ে প্রত্যাবর্তন করা হচ্ছে, যা সূরার শুরুতে আলােচিত হয়েছে। সেটা হচ্ছে, রসূল(স.) ও তার কাছে আগত ওহীর সাথে মােশরেকদের আচরণ, ঠাট্টা বিদ্রুপ ও শিরকের ওপর জিদ ইত্যাদি। এরপর মানুষের দ্রুত প্রীতিজনিত স্বভাব ও তাড়াতাড়ি আযাব নিয়ে আসার দাবী নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তারপর তাদেরকে সাবধান করা হয়েছে রসূল(স.)-এর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপের পরিণতি সম্পর্কে, পৃথিবীতে যারা প্রতাপশালী এবং রসূলের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারী তাদের পরকালের আযাবের দৃশ্যও দেখানাে হয়েছে। অতপর এ অধ্যায়টার শেষ পর্যায়ে কেয়ামতের হিসাব নিকাশ ও কর্মফলের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং এই হিসাব ও কর্মফলকে প্রাকৃতিক বিধান মানুষের স্বভাব প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনে ও আন্দোলনে আল্লাহর বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। ‘যখন তারা তােমাকে দেখে, অমনি উপহাস করে…'(আয়াত ৩৬) এই কাফেররা সেই মহা দয়াবান আল্লাহর প্রতি কুফরী করে, যিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও প্রতিপালক, তারা রাসূল(স.)-এর কাজের নিন্দা-সমালােচনা করে, কেননা তিনি তাদের দেব-দেবীর সমালােচনা করেন। অথচ তারা আল্লাহর প্রতি কুফরী করেও কোনাে অনুশােচনা বােধ করে না। এটা যথার্থই বিস্ময়ের ব্যাপার। তারা রসূল(স.)-এর সাথে দেখা হলেই ব্যংগ বিদ্রুপ করে এবং বলে, ‘এই নাকি সেই ব্যক্তি, যিনি তােমাদের দেব-দেবী সম্পর্কে কথা বলেন?’ তারা এটা করে শুধু রসূল(স.)-এর ওপর চাপ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, যাতে তিনি তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ভেবে নীরবতা অবলম্বন করেন। অথচ তারা নিজেরা আল্লাহর বান্দা হয়েও তার উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে একটুও সচেতন হয় না, তার প্রতি কুফরী থেকে বিরত হয় না এবং কোরআনের প্রতি বিমুখ থাকে। এ এক বিস্ময়কর চারিত্রিক বৈষম্য, যা থেকে বুঝা যায় যে, তাদের স্বভাব প্রকৃতি একেবারেই বিকৃত হয়ে গেছে এবং তারা কোনাে বিষয়েরই সঠিক মূল্যায়ন করে না। তাছাড়া রসূল(স.) তাদেরকে যে আযাবের হুশিয়ারী দেন, সেই আযাবকে দ্রুত সংঘটিত করার জন্যেও তারা আবদার ধরে। কারণ মানুষ স্বভাবতই দ্রুততা প্রিয়, ‘মানুষ দ্রুততা থেকেই সৃষ্ট হয়েছে। আমার নিদর্শনাবলী অচিরেই দেখাবো…'(আয়াত ৩৭-৩৮) ‘মানুষ দ্রুততা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে’ এ উক্তি থেকে বুঝা গেলাে, দ্রুততা প্রীতি মানুষের মজ্জাগত স্বভাব, তার দৃষ্টি সবসময় উঁকি দিয়ে থাকে বর্তমান মুহূর্তের ওপারে কী আছে, তা নাগালে পাওয়ার জন্যে, কোনাে জিনিস তার কল্পনায় উপস্থিত হলেই সে উন্মুখ হয়ে ওঠে তাকে তৎক্ষণাত বাস্তবায়িত দেখার জন্যে, তাকে দেয়া যে কোনাে প্রতিশ্রুতির তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন দেখতে সে উৎসুক হয়ে ওঠে- এমনকি তাতে যদি তার ক্ষতি ও কষ্ট অনিবার্য হয় তবুও। তবে কেউ যদি আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে, তবে সে সর্বাবস্থায় নিশ্চিন্ত ও স্থির থাকে। সব কিছুকে সে আল্লাহর ওপর সােপর্দ করে। তাই আল্লাহর ফয়সালা লাভের জন্যে তাড়াহুড়াে করে না। কেননা আস্থা ও ধৈর্যেরই নাম ঈমান। মক্কার মােশরেকরা আযাবের জন্যে তাড়াহুড়ো করতাে এবং জিজ্ঞেস করতাে কবে পূর্ণ হবে দুনিয়া ও আখেরাতে আযাব নাযিল হওয়ার প্রতিশ্রুতি। এর জবাবে কোরআন তাদের সামনে আখেরাতের আযাবের একটা দৃশ্য তুলে ধরেছে এবং পূর্ববর্তী ব্যংগ বিদ্রুপকারীরা দুনিয়াতে যে ভয়াবহ আযাব ভােগ করেছে, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হুঁশিয়ার করেছে, কাফেররা যদি জানত, ‘যেদিন তারা তাদের সামনে থেকে ও পেছন থেকে আগত আগুনকে ফেরাতে পারবে না…'(আয়াত ৩৯-৪১) অর্থাৎ আখেরাতে যা ঘটবে তা জানলে তাদের আচরণ অন্যরকম হতাে এবং তারা ঠাট্টা-মস্করা ও তাড়াহুড়াে করতাে না। ঠিক আছে, যা হবে তার অপেক্ষায় বসে থাকুক। এখানে যে দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, আগুন যেন তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। তারা মরিয়া হয়ে তা ঠেকাতে চেষ্টা করছে, কিন্তু সে আগুনকে না পারছে সামনের দিক থেকে ঠেকাতে, না পারছে পেছন দিক থেকে ঠেকাতে, না পারছে আগুনকে ক্ষনিকের জন্যে হলেও দূরে সরিয়ে রাখতে। আখেরাতে আগুনের এই আকস্মিক ও সর্বাত্মক আক্রমণ হলে তাদের ত্বরিত আযাব কামনার শাস্তি। তারা জিজ্ঞেস করতাে আযাব কবে আসবে। এর জবাব দেয়া হবে এই ভয়াবহ আকস্মিক শাস্তি দিয়ে, যা তাদেরকে দিশেহারা করে ছাড়বে, তাদের চিন্তা ও কর্মশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দেবে এবং বিন্দুমাত্রও অবকাশ দেবে না। ওটা তাে আখেরাতের আযাব। বাকী রইলাে দুনিয়ার আযাবের ব্যাপারটা। দুনিয়ার আযাব পূর্ববর্তী বিদ্রুপকারীদের ওপর এসেছে। বর্তমান কাফেরদের ওপর যদি পূর্ববর্তীদের মতাে নিশ্চিহ্নকারী আযাব নাও আসে, তবে নিহত হওয়া, বন্দী হওয়া ও পরাজিত হওয়ার মতাে আযাব তাকে অবশ্যই আসতে পারে। নবী রাসূলের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত। নচেৎ বিক্ৰপকারীদের শাস্তি কেমন, তা কারাে অজানা নেই। অতীতের ইতিহাসই এর সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। সেই ঐতিহ্য কখনাে বদলাবে না। এ প্রসংগে প্রশ্ন করা হচ্ছে যে, ‘সেই পার্থিব আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্যে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ আছে কি, যিনি তাদেরকে সারা দিন রাত পাহারা দিয়ে চলেছেন'(আয়াত ৪২-৪৩) অর্থাৎ আল্লাহই প্রত্যেক প্রাণীর জন্যে দিনে রাতে একমাত্র প্রহরী। তার বৈশিষ্ট্য হলাে সর্বোচ্চ মানের দয়া ও করুণা। তিনি ছাড়া আর কোনাে রক্ষক ও প্রহরী নেই। অতএব তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তাদের আর কোনাে রক্ষক আছে কি? আসলে এটা নেতিবাচক প্রশ্ন। তিনি ছাড়া কোনাে রক্ষক নেই এবং এ কারণে তার স্মরণ থেকে তাদের উদাসীন হওয়ার কোনাে যুক্তি নেই- এ কথা বুঝানাের জন্যেই এ প্রশ্ন করা হয়েছে। বরং তারা তাদের প্রতিপালকের স্মরণ থেকে উদাসীন। পুনরায় তাদেরকে নতুনভাবে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তাদের এমন কিছু ‘ইলাহ’ আছে নাকি, যারা তাদেরকে আমার পাকড়াও থেকে বাঁচাতে পারে? না কখনাে নয়। ওরা তাে নিজেদেরই সাহায্য করতে পারে না। সুতরাং অন্যের সাহায্য করার তাে প্রশ্নই ওঠে না। তারা আমার সাহচর্যেও থাকে না। কাজেই সাহচর্য দ্বারা যে শক্তি ও সাহায্য পাওয়া যায় তাও তারা পায় না, যেমন পেয়েছিলেন হযরত মূসা ও হারুন। আল্লাহ তাদেরকে বলেছিলেন, ‘আমি তােমাদের সাথে আছি, দেখছি ও শুনছি।’ বস্তুত মােশরেকদের দেব-দেবী ও মূর্তির না আছে নিজস্ব কোনাে শক্তি, না আছে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া কোনো শক্তি। কাজেই তারা একেবারেই অক্ষম ও অথর্ব।

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# তাদের সম্পর্কে বিরূপ কথা বলে। এখানে আরো এতটুকু কথা বুঝে নিতে হবে যে, এ বাক্যটি তাদের বিদ্রূপের বিষয়বস্তু বর্ণনা করছে না বরং বিদ্রূপ করার কারণ ও ভিত্তিভূমির ওপর আলোকপাত করছে। একথা সুস্পষ্ট যে, এ বাক্যটি মূলত কোন বিদ্রূপাত্মক বাক্য নয়। বিদ্রূপ তারা অন্যভাবে করে থাকবে এবং এজন্য কোন অন্য ধরনের ধ্বনি দিয়েও বাক্য উচ্চারণ করে থাকবে। তবে তিনি তাদের মনগড়া উপাস্যদের প্রভুত্ব কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করতেন বলেই তারা এভাবে মনের ঝাল মিটাতো।

# মূর্তি ও বানোয়াট ইলাহদের বিরোধিতা তাদের কাছে এত বেশী অপ্রীতিকর যে, এর প্রতিশোধ নেবার জন্য তোমার প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও অবমাননা করে, কিন্তু তারা যে আল্লাহ‌ বিমুখ এবং আল্লাহর নামোল্লেখে তারা ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়, নিজেদের এ অবস্থার জন্য তাদের লজ্জাও হয় না।
# মূলে خُلِقَ الْإِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍ বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এর শাব্দিক অনুবাদ হয়, “মানুষকে দ্রুততা প্রবণতা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” কিন্তু এই শাব্দিক অর্থ বাক্যের উদ্দেশ্য নয়। আমরা যেমন নিজের ভাষায় বলি, অমুক ব্যক্তি জ্ঞানের সাগর এবং লোকটি পাষাণ হৃদয়, ঠিক তেমনি আরবী ভাষায় বলা হয়, তাকে অমুক জিনিস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এর অর্থ হয়, অমুক জিনিসটি তার প্রকৃতিগত। এখানে خُلِقَ الْإِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍ বলে যে অর্থ নেয়া হয়েছে অন্য জায়গায় وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا “মানুষ দ্রুততা প্রবণ প্রমাণিত হয়েছে” ( বনী ইসরাঈলঃ ১১ ) বলে সেই একই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।

# পরবর্তী ভাষণ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, এখানে “নিদর্শনাবলী” বলতে কি বুঝাচ্ছে। তারা যেসব কথা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো তার মধ্যে আল্লাহর আযাব, কিয়ামত ও জাহান্নামের বিবরণও ছিল। তারা বলতো, এ ব্যক্তি প্রতিদিন আমাদের ভয় দেখায়, বলে আমাকে অস্বীকার করলে আল্লাহর আযাব আপতিত হবে, কিয়ামতে তোমাদের শাস্তি দেয়া হবে এবং তোমাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করা হবে। কিন্তু আমরা প্রতিদিন অস্বীকার করছি এবং হেসে কুঁদে বেড়াচ্ছি, কোন আযাব আসতে দেখা যাচ্ছে না এবং কোন কিয়ামতও হচ্ছে না। এ আয়াতগুলোয় এরই জবাব দেয়া হয়েছে।

# যদি রাতের বা দিনের কোন সময় অকস্মাৎ আল্লাহর মহাপরাক্রমশালী হাত তোমাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে তাহলে তখন তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে পারে এমন শক্তিশালী সহায়ক ও সাহায্যকারী তোমাদের কে আছে?

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:

কাফির-মুশরিকরা তাদের চরম কুফরীর কারণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলেই ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত। আর বলত, এ নগণ্য ব্যক্তি তোমাদের মা‘বূদদের সমালোচনা করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য জায়গায় বলেন,

(وَإِذَا رَأَوْكَ إِنْ يَّتَّخِذُوْنَكَ إِلَّا هُزُوًا ط أَهٰذَا الَّذِيْ بَعَثَ اللّٰهُ رَسُوْلًا -‏ إِنْ كَادَ لَيُضِلُّنَا عَنْ اٰلِهَتِنَا لَوْلَآ أَنْ صَبَرْنَا عَلَيْهَا ط وَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ حِيْنَ يَرَوْنَ الْعَذَابَ مَنْ أَضَلُّ سَبِيْلًا)‏

“তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে কেবল ঠাট্টা-বিদ্রƒপের পাত্ররূপে গণ্য করে এবং বলে, ‘এ-ই কি সে, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন? ‘সে তো আমাদেরকে আমাদের মা‘বূদদের হতে গুমরাহ করেই ফেলত, যদি না আমরা তাদের আনুগত্যে ধৈর্যের সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকতাম।’ যখন তারা শাস্তি‎ প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অচিরেই জানবে কে অধিক পথভ্রষ্ট।” (সূরা ফুরক্বান ২৫:৪১-৪২)

মূলত এর দ্বারা তারা এ কথা বুঝাত যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে না এবং এক আল্লাহ তা‘আলাতেও তারা বিশ্বাসী নয়। যার ফলে তারা এরূপ আচরণ করত।

الرَّحْمٰنِ অর্থাৎ মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার রহমান গুণকে অস্বীকার করত। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَإِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ ج قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُ)

“যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘রহমান’-কে সাজদাহ কর, তখন তারা বলে: ‘রহমান আবার কে?” (সূরা ফুরক্বান ২৫:৬০)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই তাড়াহুড়াপ্রবণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُوْلًا)

“মানুষ অতি মাত্রায় ত্বরাপ্রিয়।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:১১) তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ, তাই আমাদের উচিত এরূপ তাড়াহুড়াপ্রবণ অভ্যাস পরিবর্তন করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কুরআন, হাদীস ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সহ ইসলামের কোন নিদর্শন নিয়ে হাসি-তামাশা করা যাবে না।
২. যে কোন ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:

কাফিরদেরকে যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করতেন তখন তারা উপহাস করে বলত: এ শাস্তি কখন আসবে? তাদের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা যদি এ শাস্তি সম্পর্কে অবগত থাকত তাহলে এ ব্যাপারে তারা তাড়াহুড়া করত না। সেদিন তারা কোন সাহায্যকারী পাবে না, যে তাদেরকে এ শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। আর এ শাস্তি অতর্কিতভাবে আসবে। তখন তাদেরকে আর অবকাশ দেয়া হবে না। সেখানে সর্বদিক থেকে তারা আগুনের শাস্তি ভোগ করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَهُمْ مِّنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ)

“তাদের জন্য তাদের ওপর দিক থেকে ঘিরে ধরবে আগুনের শিখা এবং তাদের নীচের দিক থেকেও ঘিরে ধরবে আগুনের শিখা।” (সূরা যুমার ৩৯:৪)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(لَهُمْ مِّنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَّمِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ)

“তাদের শয্যা হবে জাহান্নামের এবং তাদের ওপরে আচ্ছাদনও।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৪১)

সুতরাং বুঝা গেল যে, জাহান্নামের শাস্তি বড়ই যন্ত্রণায়ক। এ শাস্তি থেকে পরিত্রাণের কোনই পথ নেই একনিষ্ঠ ঈমান ও আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে কৃত সৎ আমল ব্যতীত। তাই আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফীক দিন। আমীন!

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. শাস্তির ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা যাবে না।
২. জাহান্নামে জাহান্নামীরা সর্বদিক থেকে আগুনের শাস্তি ভোগ করবে।
৩. শাস্তি এসে গেলে কাউকে অবকাশ দেয়া হবে না।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: হে নাবী! মুশরিকরা যে তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করছে সে কারণে তুমি মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না, তোমার পূর্ববর্তী নাবীদেরকেও এরূপ ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হয়েছে। সুতরাং তুমি এদের এরূপ কথাবার্তা উপেক্ষা করে চল এবং ধৈর্য ধারণ কর যেমনভাবে ধৈর্য ধারণ করেছিল পূর্ববর্তী নাবী-রাসূলগণ। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰي مَا كُذِّبُوْا وَأُوْذُوْا حَتّٰي أَتٰهُمْ نَصْرُنَا ج وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِ اللّٰهِ ج وَلَقَدْ جَا۬ءَكَ مِنْ نَّبَاْئِ الْمُرْسَلِيْنَ)‏

“তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে অবশ্যই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল; কিন্তু তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। আল্লাহর আদেশ কেউ পরিবর্তন করতে পারে না, রাসূলগণের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ তো তোমার নিকট এসেছেই।” (সূরা আন‘আম ৬:৩৪)

অতএব এখনো যদি দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখিন হতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রেও ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। কোনভাবেই বিচলিত হওয়া যাবে না।

(أَمْ لَهُمْ اٰلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِّنْ دُوْنِنَا)

অর্থাৎ তোমাদের কাজ এমন যে, দিন-রাতের যেকোন সময়ে তোমাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার আযাব আসতে পারে। সে আযাব হতে তোমাদেরকে দিনে-রাতে কে রক্ষা করছে? আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কেউ আছে কি, যে তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার আযাব হতে রক্ষা করতে পারে?

(وَلَا هُمْ مِّنَّا يُصْحَبُوْنَ)

এর অর্থ হল- তারা আমার আযাব হতে রক্ষা পাবে না, অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে সাহায্য করতে ও আল্লাহ তা‘আলার আযাব হতে মুক্ত করতে সক্ষম নয়, তাহলে তারা অপরকে সাহায্য করবে কিভাবে? অথবা অপরকে আযাব থেকে বাঁচাবে কিভাবে?

(بَلْ مَتَّعْنَا هٰٓؤُلَا۬ءِ وَاٰبَا۬ءَهُمْ)

অর্থাৎ যদি তাদের বা তাদের পূর্বপুরুষদের জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ-বিলাসে অতিবাহিত হয় তাহলে কি তারা মনে করে যে, তারা সঠিক পথে আছে এবং ভবিষ্যতেও তাদের কোন কষ্ট হবে না? বরং তাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনের সুখ-বিলাস তো আমার ঢিল দেয়া নীতির অংশবিশেষ। এতে কারো ধোঁকায় পড়া উচিত নয়।

(نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا)

কুফরীর এলাকা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে আর ইসলামের এলাকা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। কুফরীর পায়ের তলা হতে মাটি সরে যাচ্ছে এবং ইসলামের বিজয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মুসলিমরা দেশের পর দেশ জয় করে যাচ্ছে।

(أَفَهُمُ الْغٰلِبُوْنَ)

কুফরীর অনগ্রসরতা ও ইসলামের অগ্রসরতা দেখেও কি কাফিররা মনে করে যে, তারাই বিজয়ী? অর্থাৎ কক্ষনো নয়, তারা কোনদিন জয়ী হতে পারবে না, হয়তো মুসলিমদের ভুলের জন্য ক্ষণিক সময়ের জন্য জয়ী হতে পারে।

(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ….)

‘এবং ক্বিয়ামাত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড’ আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসে ন্যায় বিচারের মানদণ্ড দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবেন। প্রত্যেকের আমল ওজন করে দেখবেন, যার সৎ আমলের পাল্লা ভারি হবে সে চিরসুখে থাকবে। পক্ষান্তরে যার সৎ আমলের পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বিন্দু পরিমাণও জুলুম করবেন না।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا)

“তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি জুলুম করেন না।” (সূরা ক্বাহ্ফ ১৮:৪৯)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(يٰبُنَيَّ إِنَّهَآ إِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمٰوٰتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللّٰهُ ط إِنَّ اللّٰهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ)

“হে আমার ছেলে! কোন কিছু যদি সরিষার দানার পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে পাথরের ভিতরে অথবা আসমানে কিংবা ভূ-গর্ভে, তথাপি তাও আল্লাহ উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (সূরা লুক্বমান ৩১:১৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(فَاَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِیْنُھ۫ﭕﺫ فَھُوَ فِیْ عِیْشَةٍ رَّاضِیَةٍﭖﺚ وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِیْنُھ۫ﭗﺫ فَاُمُّھ۫ ھَاوِیَةٌﭘ) ‏‏

“অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে সন্তোষজনক জীবন যাপন করবে আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া।” (সূরা ক্বারিয়াহ ১০১:৬-৯)

কিয়ামতের দিন আমল, আমলকারী ও আমলনামা তিনটিই ওজন করা হবে। (আক্বীদাহ ওয়াসিতিয়্যাহ)

মানুষের আমল ও কর্মসমূহ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অনুভূত নয়, তার বাহ্যিক কোন রূপ বা অস্তিত্ব নেই। তাহলে তার ওজন কিভাবে সম্ভব? আধুনিক যুগে এ প্রশ্নের কোন গুরুত্ব নেই। যেহেতু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক আবিস্কার এ প্রশ্নের উত্তর সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে নিরাকার বস্তুও ওজন করা যাচ্ছে। যখন মানুষ দ্বারা এটা সম্ভব তখন আল্লাহ তা‘আলা র জন্য আকারহীন জিনিসকে ওজন করা কেমন করে কঠিন হতে পারে?

সুতরাং প্রত্যেক আমল, আমলকারী ও যে দফতরে আমল লিখে রাখা হয় তা ওজন করা হবে। যাদের ভাল আমলের পাল্লা ভারী হবে তাদের সুখের সীমা থাকবে না, অন্যথায় দুখের সীমা থাকবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন রক্ষণাবেক্ষণকারী নেই।
৩. মানুষকে রিযিক দিয়ে থাকেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৪. কিয়ামতের দিন ন্যায়ের মানদণ্ড স্থাপন করা হবে এবং ন্যায় বিচার করা হবে।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সাঃ) সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! কাফিররা যখন তোমাকে দেখে অর্থাৎ কুরায়েশ কাফিররা, যেমন আবু জেহেল প্রভৃতি, তখন তারা তোমাকে শুধু বিদ্রুপের পাত্র রূপেই গ্রহণ করে এবং তোমার সাথে বেআদবী শুরু করে দেয়। তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ দেখো, এই কি ঐ ব্যক্তি, যে আমাদের দেবদেবীগুলির সমালোচনা করে? একে তো এটা তাদের হঠকারিতা, দ্বিতীয়তঃ তারা নিজেরাই ‘রহমান’ (দয়াময় আল্লাহ) এর উল্লেখের বিরোধিতাকারী ও তাঁর রাসূলকে (সঃ) অস্বীকারকারী। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে শুধু ঠাট্টা বিদ্রুপের পাত্ররূপে গণ্য করে এবং বলেঃ এই কি সে, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন? সে তো আমাদেরকে আমাদের দেবতাগণ হতে সরিয়েই দিতে যদি না আমরা তাদের আনুগত্যে দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত থাকতাম; যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা জানবে কে সর্বাধিক পথভ্রষ্ট।” (২৫:৪১-৪২)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরা প্রবণ। যেমন অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়।” (১৭:১১) হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করার পর হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করতে শুরু করেন। সন্ধ্যায় নিকটবর্তী সময়ে যখন তার মধ্যে রূহ্ ফুঁক দেয়া হয়, মাথা, চক্ষু ও জিহ্বায় যখন রূহ্ চলে আসে তখন তিনি বলে ওঠেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! মাগরিব হওয়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি করে আমার সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত করুন।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সমস্ত দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে শুক্রবারের দিন। ঐ দিনেই হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করা হয়। সেই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। ঐদিনেই তাঁকে জান্নাত হতে বের করে দুনিয়ায় নামিয়ে দেয়া হয়। ঐ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। ঐদিনের মধ্যে এমন এক সময় রয়েছে যে, ঐ সময়ে যে বান্দা নামাযে থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট যা চায় তিনি তাকে তা প্রদান করে থাকেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর অঙ্গুলীগুলি দ্বারা ইশারা করে বলেনঃ “ওটা অতি অল্প সময়।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেনঃ “ঐ সময়টুকু কোন সময় তা আমার জানা আছে। ওটা হলো জুমআর দিনের শেষ সময়টুকু। ঐ সময়েই আল্লাহ তাআলা হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি এই আয়াতটিই পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

প্রথম আয়াতে কাফিরদের হঠকারিতার বর্ণনা দেয়ার পর পরই দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানব জাতির ত্বরা প্রবণতার বর্ণনা দিয়েছেন। এতে নিপুণতা এই রয়েছে যে, কাফিরদের হঠকারিতার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ দেখা মাত্রই মুসলমানরা প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং তারা অতি তাড়াতাড়ি বদলা নেয়ার ইচ্ছা করে। কেননা, মানুষ সৃষ্টিগত ভাবেই ত্বরা প্রবণ। কিন্তু মহান আল্লাহর নীতি এই যে, তিনি অত্যাচারীদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদেরকে পাকড়াও করেন তখন আর ছেড়ে দেন না। এজন্যেই তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাবো। তাদের শাস্তি কত কঠোর তা তোমরা অবশ্যই দেখতে পাবে। তোমরা অপেক্ষা করতে থাকে এবং আমাকে তাদের শাস্তির ব্যাপারে ত্বরা করতে বলো না।

৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:

মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তারা কিয়ামত সংঘটিত হওয়াকে অসত্ব মনে করতে বলে আম্পর্ধা দেখিয়ে বলতোঃ “তুমি আমাদেরকে যা থেকে ভয় প্রদর্শন করছে তা কখন সংঘটিত হবে এবং এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে? মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাদেরকে জবাব দিচ্ছেনঃ তোমরা যদি বিবেকবান হতে এবং ঐ দিনের ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে তবে কখনো এর জন্যে তাড়াহুড়া করতে না! ঐ সময় শাস্তি তোমাদেরকে তোমাদের উপর হতে ও তোমাদের পায়ের নীচে হতে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। তখন তোমরা তোমাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে ঐ শাস্তিকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ঐ দিন তোমরা গন্ধকের পোশাক পরিহিত থাকবে এবং ঐ অবস্থায় তোমাদের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে। তোমাদেরকে চতুর্দিক হতে জাহান্নাম পরিবেষ্টন করে ফেলবে। কেউই তোমাদেরকে সাহায্য করার জন্যে এগিয়ে আসবে না।

ঐ শাস্তি তাদের উপর অতর্কিতভাবে এসে পড়বে এবং তাদেরকে হতভম্ব ও হতবুদ্ধি করে দিবে। ফলে তারা তা রোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে মোটেই অবকাশও দেয়া হবে না।

৪১-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:

মুশরিকরা যে আল্লাহর রাসূলকে (সঃ) ঠাট্টা বিদ্রুপ করে ও মিথ্যা প্রতিপাদন করে কষ্ট দেয় সেজন্যে তিনি তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ হে নবী (সঃ) মুশরিকরা যে তোমাকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করছে এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে সে কারণে তুমি উদ্বিগ্ন ও মনঃক্ষুন্ন হয়ো না। কাফিরদের এটা পুরাতন অভ্যাস। পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) সাথেও তারা এরূপ ব্যবহারই করেছে। ফলে, অবশেষে তারা আল্লাহর শাস্তির কবলে পতিত হয়। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপাদন করা হয়েছিল, অতঃপর তারা ওর উপর ধৈর্য ধারণ করেছিল, আর তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আমার সাহায্য এসেছিল; আল্লাহর কথার কেউ পরিবর্তনকারী নেই। আর তোমার কাছে রাসূলদের খবর এসে গেছে।” (৬:৩৪)

এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তিনিই তোমাদের সবারই হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে রয়েছেন। তিনি কখনও ক্লান্ত হন না এবং কখনও নিদ্রা যান না। এখানে দ্বারা (আরবী) অর্থ নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রহমানের পরিবর্তে বা রহমান ছাড়া দিন-রাত তোমাদেরকে কে রক্ষণাবেক্ষণ করছে? অর্থাৎ তিনিই করছেন। যেমন কোন কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “দাসী ‘মিরফাক পরিধান করে নাই এবং সজীর পরিবর্তে পেস্তার স্বাদ গ্রহণ করে নাই।” এখানেও (আরবী) দ্বারা (আরবী) বুঝানো হয়েছে।

মুশরিক ও কাফিররা শুধু যে, আল্লাহর একটা নিয়ামত ও অনুগ্রহকে অস্বীকার করছে তা নয়; বরং তারা তার সমস্ত নিয়ামতকেই অস্বীকার করে থাকে।

এরপর তাদেরকে ধমকের সুরে বলা হচ্ছেঃ তবে কি আল্লাহ ব্যতীত তাদের এমন দেব-দেবীও আছে যারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? অর্থাৎ তারা এরূপ করার ক্ষমতা রেখে না। তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এমনকি তাদের এই বাজে মা’বৃদরা নিজেদেরকেই তো সাহায্য করতে পারে না এবং তারা আল্লাহ থেকে বাচতেও পারে না। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কোন খবর তাদের কাছে নেই। এ বাক্যের একটি অর্থ এটাও যে, তারা কাউকেও বাচাতেও পারে না এবং নিজেরাও বাঁচতে পারে না।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#927)
[ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْنِ
So ask Me not to hasten.]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 36-43
www.motaher21.net

21:36

وَ اِذَا رَاٰکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِنۡ یَّتَّخِذُوۡنَکَ اِلَّا ہُزُوًا ؕ اَہٰذَا الَّذِیۡ یَذۡکُرُ اٰلِہَتَکُمۡ ۚ وَ ہُمۡ بِذِکۡرِ الرَّحۡمٰنِ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ ﴿۳۶﴾

And when those who disbelieve see you, [O Muhammad], they take you not except in ridicule, [saying], “Is this the one who insults your gods?” And they are, at the mention of the Most Merciful, disbelievers.

 

How the Idolators mocked the Prophet, Allah tells His Prophet

Allah says:

وَإِذَا رَاكَ الَّذِينَ كَفَرُوا

And when those who disbelieved see you,

meaning, the disbelievers of the Quraysh, such as Abu Jahl and his like.

إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلاَّ هُزُوًا

they take you not except for mockery,

means, they make fun of you and insult you, saying,

أَهَذَا الَّذِي يَذْكُرُ الِهَتَكُمْ

“Is this the one who talks about your gods!”

meaning, is this the one who insults your gods and ridicules your intelligence!

Allah says:

وَهُم بِذِكْرِ الرَّحْمَنِ هُمْ كَافِرُونَ

While they disbelieve at the mention of the Most Gracious.

meaning, they disbelieve in Allah and yet they mock the Messenger of Allah.

As Allah says:

وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلاَّ هُزُواً أَهَـذَا الَّذِى بَعَثَ اللَّهُ رَسُولاً

إِن كَادَ لَيُضِلُّنَا عَنْ ءَالِهَتِنَا لَوْلَا أَن صَبْرَنَا عَلَيْهَا وَسَوْفَ يَعْلَمُونَ حِينَ يَرَوْنَ الْعَذَابَ مَنْ أَضَلُّ سَبِيلً

And when they see you, they treat you only in mockery (saying):”Is this the one whom Allah has sent as a Messenger He would have nearly misled us from our gods, had it not been that we were patient and constant in their worship!”

And they will know, when they see the torment, who it is that is most astray from the path! (25:41-42)

خُلِقَ الاِْنسَانُ مِنْ عَجَلٍ سَأُرِيكُمْ ايَاتِي فَلَ تَسْتَعْجِلُونِ

21:37

خُلِقَ الۡاِنۡسَانُ مِنۡ عَجَلٍ ؕ سَاُورِیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ فَلَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنِ ﴿۳۷﴾

Man was created of haste. I will show you My signs, so do not impatiently urge Me.

 

Man is created of haste. I will show you My Ayat. So ask Me not to hasten (them)

21:38

وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۳۸﴾

And they say, “When is this promise, if you should be truthful?”

 

The Idolators seek to hasten on the Punishment

Allah also tells us how the idolators seek to hasten punishment upon themselves, out of denial, rejection, disbelief, stubbornness and a belief that it will never happen.

He says:

وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

And they say:”When will this promise (come to pass), if you are truthful”.

And Allah says
21:39

لَوۡ یَعۡلَمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا حِیۡنَ لَا یَکُفُّوۡنَ عَنۡ وُّجُوۡہِہِمُ النَّارَ وَ لَا عَنۡ ظُہُوۡرِہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۳۹﴾

If those who disbelieved but knew the time when they will not avert the Fire from their faces or from their backs and they will not be aided…

 

لَوْ يَعْلَمُ الَّذِينَ كَفَرُوا حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ

If only those who disbelieved knew (the time) when they will not be able to ward off the Fire from their faces, nor from their backs,

meaning, if only they knew for certain that it will inevitably come to pass, they would not seek to hasten it. If only they knew how the torment will overwhelm them from above them and from beneath their feet.

لَهُمْ مِّن فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَمِن تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ

They shall have coverings of Fire, above them and coverings (of Fire) beneath them. (39:16)

لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ

Theirs will be a bed of Hell (Fire), and over them coverings (of Hellfire). (7:41)

And in this Ayah Allah says:

حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ

when they will not be able to ward off the Fire from their faces, nor from their backs,

And Allah says:

سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمْ النَّارُ

Their garments will be of tar, and fire will cover their faces. (14:50)

The torment will surround them on all sides,

وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ

and they will not be helped.

means, and they will have no helper.

This is like the Ayah:

وَمَا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِن وَاقٍ

And they have no guardian against Allah. (13:34)

21:40

بَلۡ تَاۡتِیۡہِمۡ بَغۡتَۃً فَتَبۡہَتُہُمۡ فَلَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ رَدَّہَا وَ لَا ہُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ ﴿۴۰﴾

Rather, it will come to them unexpectedly and bewilder them, and they will not be able to repel it, nor will they be reprieved.

 

بَلْ تَأْتِيهِم بَغْتَةً

Nay, it will come upon them all of a sudden,

means, the Fire will come upon them suddenly, i.e., it will take them by surprise.

فَتَبْهَتُهُمْ

and will perplex them,

means, it will scare them, and they will succumb to it in confusion, not knowing what they are doing.

فَلَ يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا

and they will have no power to avert it,

means, they will have no means of doing so.

وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ

nor will they get respite.

means, it will not be delayed for them even for an instant.

21:41

وَ لَقَدِ اسۡتُہۡزِئَ بِرُسُلٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ فَحَاقَ بِالَّذِیۡنَ سَخِرُوۡا مِنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا بِہٖ یَسۡتَہۡزِءُوۡنَ ﴿٪۴۱﴾

And already were messengers ridiculed before you, but those who mocked them were enveloped by what they used to ridicule.

 

The Lessons to be learned from Those Who mocked the Messengers in the Past

Allah says consoling His Messenger for the pain and insult caused by the mockery and disbelief of the idolators,

وَلَقَدِ اسْتُهْزِيَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِوُون

Indeed (many) Messengers were mocked before you, but the scoffers were surrounded by what they used to mock.

meaning, the punishment which they thought would never come to pass.

This is like the Ayah:

وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُواْ عَلَى مَا كُذِّبُواْ وَأُوذُواْ حَتَّى أَتَـهُمْ نَصْرُنَا وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَـتِ اللَّهِ وَلَقدْ جَأءَكَ مِن نَّبَإِ الْمُرْسَلِينَ

Verily, Messengers were denied before you, but with patience they bore the denial, and they were hurt; till Our help reached them, and none can alter the Words of Allah. Surely, there has reached you the information (news) about the Messengers (before you). (6:34)
Then Allah mentions His favor for His creatures; He protects them by night and by day, taking care of them and watching over them with His Eye that never sleeps.

21:42

قُلۡ مَنۡ یَّکۡلَؤُکُمۡ بِالَّیۡلِ وَ النَّہَارِ مِنَ الرَّحۡمٰنِ ؕ بَلۡ ہُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ رَبِّہِمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ ﴿۴۲﴾

Say, “Who can protect you at night or by day from the Most Merciful?” But they are, from the remembrance of their Lord, turning away.

 

قُلْ مَن يَكْلَوُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمَنِ

Say:”Who can guard and protect you in the night or in the day from the Most Gracious!”

means, other than the Most Gracious Himself.

بَلْ هُمْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِم مُّعْرِضُونَ

Nay, but they turn away from the remembrance of their Lord.

means, they do not recognize the blessings and favor of Allah towards them; they turn away from His signs and blessings.

21:43

اَمۡ لَہُمۡ اٰلِہَۃٌ تَمۡنَعُہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِنَا ؕ لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ نَصۡرَ اَنۡفُسِہِمۡ وَ لَا ہُمۡ مِّنَّا یُصۡحَبُوۡنَ ﴿۴۳﴾

Or do they have gods to defend them other than Us? They are unable [even] to help themselves, nor can they be protected from Us.

 

أَمْ لَهُمْ الِهَةٌ تَمْنَعُهُم مِّن دُونِنَا

Or have they gods who can guard them from Us!

This is a rhetorical question aimed at denouncing and rebuking.

The meaning is, do they have any gods who can protect them and take care of them other than Us. It is not as they imagine or as they claim.

Allah says:

لَاا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَ أَنفُسِهِمْ

They have no power to help themselves,

these gods on whom they rely instead of Allah cannot even help themselves.

وَلَا هُم مِّنَّا يُصْحَبُونَ

nor can they be protected from Us.

Al-`Awfi reported from Ibn Abbas,

“Nor can they be guarded from Us.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply